মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) সর্বমোট হাদিসঃ ৬২৯১ টি

পরিচ্ছেদঃ ৬. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - আশ্রয় প্রার্থনা করা

২৪৮১-[২৫] আবূ সা’ঈদ আল খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, ’’আ’ঊযুবিল্লা-হি মিনাল কুফরি ওয়াদ্দায়নি’’ (অর্থাৎ- হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে কুফরী ও ঋণ হতে আশ্রয় চাই)। এটা শুনে জনৈক ব্যক্তি বলে উঠলো, হে আল্লাহ রসূল! আপনি ঋণকে কুফরীর সমান মনে করেছেন? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, হ্যাঁ। অন্য এক বর্ণনায় আছে, ’’আল্ল-হুম্মা ইন্নী আ’ঊযুবিকা মিনাল কুফরি ওয়াল ফাকরি’’ (অর্থাৎ- হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে কুফরী ও পরমুখাপেক্ষিতা হতে আশ্রয় চাই)। তখন এক ব্যক্তি বললো, হে আল্লাহর রসূল! এ দু’টো কি সমান (এক বিষয়)? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, হ্যাঁ। (নাসায়ী)[1]

وَعَنْ أَبِي سَعِيدٍ قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «أَعُوذُ بِاللَّهِ مِنَ الْكُفْرِ وَالدَّيْنِ» فَقَالَ رَجُلٌ: يَا رَسُولَ اللَّهِ أَتَعْدِلُ الْكُفْرَ بِالدَّيْنِ؟ قَالَ: «نَعَمْ» . وَفِي رِوَايَةٍ «اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْكُفْرِ وَالْفَقْرِ» . قَالَ رَجُلٌ: وَيُعْدَلَانِ؟ قَالَ: «نَعَمْ» . رَوَاهُ النَّسَائِيّ

ব্যাখ্যা: প্রশ্নকারী ব্যক্তি স্পষ্টভাবে বুঝতে চেয়েছেন যে, কুফরী ও ঋণকে কেন একসাথে উল্লেখ করা হলো? এ দু’টোর মধ্যে কি সমান অনিষ্ট বিরাজমান যা দু’টিকে সমান করেছে? ঋণের দায় কি এতই কঠিন যে, সেটা কুফরীর সমান হলো? তখন রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার কৌতুহল দূর করে উত্তর বুঝিয়ে দিলেন, হ্যাঁ। ঋণ ঋণী ব্যক্তির জন্য কুফরীর মতো জান্নাতে প্রবেশের পথে স্থায়ী বাধা যতক্ষণ না ঋণগ্রহীতা ব্যক্তি তা ঋণদাতাকে পরিশোধ না করে। (অর্থাৎ- ঋণী ব্যক্তি যতক্ষণ না ঋণদাতাকে ঋণ পরিশোধ না করবে ততক্ষণ ঋণগ্রহীতা ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না।)

ঋণগ্রহীতা ব্যক্তি কাফির ও মুনাফিক্বের মতো। কারণ যখন ব্যক্তির ওপর ঋণের বোঝা থাকে তখন সে মিথ্যা বলে এবং ওয়া‘দা দিলে তা ভঙ্গ করে। এগুলো মুনাফিক্বের বৈশিষ্ট্য ও নিফাক্বের চিহ্ন। আর দরিদ্র ব্যক্তি (ফকীর) কখন অধৈর্য হয়ে যায়। ফলে তার দারিদ্র্যই তাকে কুফরীর দিকে নিয়ে যায়। এর এটা ঋণী ব্যক্তির থেকেও খারাপ অবস্থা।


পরিচ্ছেদঃ ৭. প্রথম অনুচ্ছেদ - মৌলিক দু‘আসমূহ

২৪৮২-[১] আবূ মূসা আল আশ্’আরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কোন কোন সময় এরূপ দু’আ করতেন,

’’আল্ল-হুম্মাগ্ ফিরলী খত্বীআতী ওয়া জাহলী ওয়া ইস্‌রা-ফী ফী আম্‌রী ওয়ামা- আন্‌তা আ’লামু বিহী মিন্নী, আল্ল-হুম্মাগ্ ফির্‌লী জিদ্দী ওয়া হাযলী ওয়া খত্বায়ি ওয়া ’আম্‌দী ওয়া কুল্লু যা-লিকা ’ইনদী, আল্ল-হুম্মাগ্ ফিরলী মা- কদ্দামতু ওয়ামা- আখখারতু ওয়ামা- আসরারতু ওয়ামা- আ’লানতু ওয়ামা- আনতা বিহী আ’লামু বিহী মিন্নী আনতাল মুকদ্দিমু ওয়া আনতাল মুআখখিরু ওয়া আনতা ’আলা- কুল্লি শাইয়িন কদীর’’

(অর্থাৎ- হে আল্লাহ! তুমি আমার গুনাহসমূহ মাফ করো, আমার অজ্ঞতা ও আমার কাজে সীমালঙ্ঘন, আর যা তুমি আমার চেয়েও বেশি জানো। হে আল্লাহ! আমার গুনাহসমূহ মাফ করো যা আমার ঐকান্তিক প্রচেষ্টা, খামখেয়ালী করা, ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় করা আর যা সবগুলোই আমার মধ্যে পরিলক্ষিত হয়। হে আল্লাহ! তুমি আমার পূর্বের ও পরের গুনাহ, প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য গুনাহ মাফ করে দাও, আর যা তুমি আমার চেয়েও বেশি জানো। তুমিই আগে বাড়াও, তুমিই পেছনে হটাও এবং প্রত্যেকটি ব্যাপারেই তুমি সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী।)। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

بَابُ جَامِعِ الدُّعَاءِ

عَنْ أَبِي مُوسَى الْأَشْعَرِيِّ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: أَنَّهُ كَانَ يَدْعُو بِهَذَا الدُّعَاءِ: «اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي خَطِيئَتِي وَجَهْلِي وَإِسْرَافِي فِي أَمْرِي وَمَا أَنْتَ أَعْلَمُ بِهِ مِنِّي اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي جَدِّي وَهَزْلِي وَخَطَئِي وَعَمْدِي وكلُّ ذلكَ عِنْدِي اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي مَا قَدَّمْتُ وَمَا أَخَّرْتُ وَمَا أَسْرَرْتُ وَمَا أعلنت وَمَا أَنْت بِهِ أَعْلَمُ بِهِ مِنِّي أَنْتَ الْمُقَدِّمُ وَأَنْتَ الْمُؤَخِّرُ وَأَنت على كل شَيْء قدير»

ব্যাখ্যা: হাদীসে উল্লিখিত দু‘আটি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখন পড়তেন তার নিশ্চিত কোন বর্ণনা পাওয়া যায় না। তবে বিভিন্ন বর্ণনায় যা পাওয়া যায় তার সারমর্ম হলো, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এ দু‘আটি সালাতের শেষ বৈঠকে পড়তেন। তবে সালামের পূর্বে না পরে পড়তেন তাও নিশ্চিতভাবে জানা যায় না। পূর্বে বা পরে যে কোন সময়ে পড়ার সম্ভাবনার কথাই হাদীসের বর্ণনায় পাওয়া যায়।

রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পূর্ণ মা‘সূম তথা নিষ্পাপ এবং তার আগের এবং পরের সকল গুনাহ থেকে তাকে মুক্ত বা ক্ষমাপ্রাপ্ত ঘোষণার পরেও তিনি এরূপ দু‘আ কেন করতেন? এর উত্তরে বলা যায়, প্রথমত তিনি আল্লাহর প্রতি বিনয় ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করণার্থে এরূপ দু‘আ করতেন। দ্বিতীয়ত তিনি এর মাধ্যমে তার দ্বারা কৃত অনিচ্ছাকৃত ভুল বা অলসতা থেকে মাফ চাইতেন। তৃতীয়ত তিনি নবূওয়াত প্রাপ্তির পূর্বে কৃতকর্মের প্রতি ইশারা করেছেন। চতুর্থত তিনি শুধু তার উম্মাতকে শিক্ষা দেয়ার জন্য এ দু‘আ করেছিলেন। মূলকথা হলো তিনি এ দু‘আ আল্লাহর প্রতি বিনয় প্রকাশ করণার্থেই করেছিলেন। কারণ দু‘আও ‘ইবাদাত। ইমাম নাবাবী (রহঃ) এরূপ মত পোষণ করেছেন।

এ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, আল্লাহ তা‘আলা সকল রকমের গুনাহ পূর্বের এবং পরের গোপন ও প্রকাশ্য জ্ঞাতসারে বা অজ্ঞাতসারে যেভাবেই সংঘটিত হোক না কেন তা ক্ষমা করার জন্য ক্ষমার ডালি নিয়ে সকল গুনাহকে ঘিরে রেখেছেন। অর্থাৎ- কোন গুনাহই আল্লাহর ক্ষমার আওতার বাইরে নয়।


পরিচ্ছেদঃ ৭. প্রথম অনুচ্ছেদ - মৌলিক দু‘আসমূহ

২৪৮৩-[২] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (দু’আ) বলতেন,

’’আল্ল-হুম্মা আস্‌লিহ লী দীনিল্লাযী হুওয়া ’ইস্‌মাতু আম্‌রী ওয়া আস্‌লিহ লী দুন্ইয়া- ইয়াল্লাতী ফীহা- মা’আ-শী ওয়া আস্‌লিহ লী আ-খিরাতিল্লাতী ফীহা- মা’আ-দী ওয়াজ্’আলিল হায়া-তা যিয়া-দাতান লী ফী কুল্লি খয়রিন ওয়াজ্’আলিল মাওতা রা-হাতান লী মিন কুল্লি শাররিন’’

(অর্থাৎ- হে আল্লাহ! তুমি আমার জন্য আমার দীন [ধর্ম]-কে ঠিক করে দাও, যা ঠিক করে দেবে আমার কার্যাবলী। তুমি ঠিক করে দাও আমার দুনিয়া [ইহকাল], যাতে রয়েছে আমার জীবন। তুমি ঠিক করে দাও আমার আখিরাত [পরকাল], যেখানে আমি [অবশ্যই] ফিরে যাবো। আমার হায়াত [আয়ুষ্কাল] প্রত্যেক কল্যাণকর কাজের জন্য বাড়িয়ে দাও, আর আমার মৃত্যুকে আমার জন্য প্রত্যেক অকল্যাণ হতে শান্তিস্বরূপ কর।)। (মুসলিম)[1]

بَابُ جَامِعِ الدُّعَاءِ

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «اللَّهُمَّ أَصْلِحْ لِي دِينِي الَّذِي هُوَ عِصْمَةُ أَمْرِي وَأَصْلِحْ لِي دُنْيَايَ الَّتِي فِيهَا مَعَاشِي وَأَصْلِحْ لِي آخِرَتِي الَّتِي فِيهَا مَعَادِي وَاجْعَلِ الْحَيَاةَ زِيَادَةً لِي فِي كُلِّ خَيْرٍ وَاجْعَلِ الْمَوْتَ رَاحَةً لِي مِنْ كُلِّ شَرٍّ» . رَوَاهُ مُسلم

ব্যাখ্যা: আমার দীনকে ঠিক করে দাও যাতে তা আমাকে জাহান্নামের আগুন ও আল্লাহর অসন্তোষ থেকে আমাকে রক্ষা করে। ইমাম মানাবী বলেন, যার দীন-ধর্ম ঠিক থাকে না তার সমস্ত কর্মই নষ্ট হয়ে যায়। ফলে সে দুনিয়া ও আখিরাতে ধ্বংসের মুখোমুখি ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

আমার ইহকালকে ঠিক করে দাও যাতে রয়েছে আমার জীবনোপকরণ। এর অর্থ হলো আমার প্রয়োজনীয় বিষয় ও দ্রব্যাদি যথেষ্ট পরিমাণে এবং হালাল উপায়ে প্রদান করে আমার ইহকালকে ঠিক করে দাও। এর অর্থ এও হতে পারে যে, দুনিয়ায় আমার প্রয়োজনীয় বিষয়াদিতে বিদ্যমান সকল অনিষ্ট থেকে রক্ষা করো।

‘ইবাদাত করার তাওফীক (শক্তি), আনুগত্যে ইখলাস ও সুন্দর সম্মতির মাধ্যমে আমার আখিরাতকে ঠিক করে দাও। অর্থাৎ- আমার প্রত্যাবর্তনস্থল তথা আখিরাতের স্বার্থে তোমার আনুগত্য করার তাওফীক আমাকে দান করো।

ইখলাস, আনুগত্য ও ‘ইবাদাতে অধিক কল্যাণ অর্জনে আমার জীবনকে ব্যাপৃত রাখো। অর্থাৎ- যে কাজ তুমি ভালোবাস ও পছন্দ করো সে কাজ আমার জীবনকে ব্যস্ত রাখো আর যে কাজ তুমি অপছন্দ করো তা থেকে আমাকে দূরে রাখো।

আমার মৃত্যুকে আমার পক্ষে প্রত্যেক অকল্যাণ হতে শান্তিস্বরূপ করো। এর অর্থ হলো, আমার মৃত্যুর সময় আমাকে সঠিক বিশ্বাস, সাক্ষ্য ও তাওবার উপরে রাখো। যাতে করে আমার মৃত্যু দুনিয়ার কষ্ট থেকে পরিত্রাণের ও চূড়ান্ত প্রশান্তি অর্জনের উপায় হয়।

ইমাম শাওকানী (রহঃ) তাঁর ‘‘তুহফাতুয যাকিরীন’’ গ্রন্থে (পৃঃ ২৮৪) এ হাদীস সম্পর্কে লিখেছেনঃ

এ হাদীসটি ব্যাপক অর্থবোধক একটি হাদীস। কারণ এর মধ্যে দীন ও দুনিয়া উপকারিতার সকল দিক আলোচিত হয়েছে। দীনের সঠিক বুঝ ও ‘আমল হলো বান্দার সকল সম্পদের মূল এবং তার উদ্দিষ্ট লক্ষ্য। অত্র হাদীসে দুনিয়াকে জীবনোপকরণের ক্ষেত্র হিসেবে উল্লেখ করে আখিরাতের উপকারিতা অর্জনের দু‘আ করা হয়েছে যে, আখিরাতই হচ্ছে চূড়ান্ত প্রত্যাবর্তনস্থল। দীনের সঠিকতার প্রার্থনা এজন্যই করা হয়েছে যে, আল্লাহ যখন কারো দীনকে ঠিক করে দেন তখন তার আখিরাতকেও ঠিক করে দেন। এখানে প্রত্যেক ভাল কাজে জীবনকে বৃদ্ধি করে দেয়ার দু‘আ করা হয়েছে এজন্য যে, যার জীবনকে আল্লাহ অধিক কল্যাণ দ্বারা সমৃদ্ধ করেন তার জীবন কল্যাণ ও সফলতায় ভরপুর হয়। আর মৃত্যুকে সকল অকল্যাণ থেকে পরিত্রাণের উপায় করার অর্থ হলো মৃত্যুর মাধ্যমেই অকল্যাণের দরজা বন্ধ হয়। এর মধ্যে বান্দার জন্যে অনেক কল্যাণ রয়েছে। তবে এ জন্যে সরাসরি মৃত্যু কামনা না করে, বরং এ দু‘আ করা উচিত যা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের শিক্ষা দিয়েছেন,

(اَللّٰهُمَّ أَحْيَنِيْ مَا كَانَتِ الْحَيَاةُ خَيْرًا لِّيْ، وَتَوَفَّنِيْ إِذَا كَانَتِ الْوَفَاةُ خَيْرً لِّيْ)

অর্থাৎ- ‘‘হে আল্লাহ! আমাকে ততক্ষণ জীবিত রাখো যতক্ষণ পর্যন্ত জীবন আমার জন্য কল্যাণকর। আর আমাকে মৃত্যু দান করো যখন আমার জন্য মৃত্যু কল্যাণকর।’’ (সহীহ মুসলিম হাঃ ২৬৮০)

এ দু‘আটি সবকিছুকে শামিল করে। আর এ কথা সবারই জানা যে, যার সারাটা জীবন শুধু অকল্যাণে ভরপুর তার জন্য জীবিত থাকার চেয়ে মৃত্যুই উত্তম ও প্রশান্তিদায়ক।


পরিচ্ছেদঃ ৭. প্রথম অনুচ্ছেদ - মৌলিক দু‘আসমূহ

২৪৮৪-[৩] ’আবদুল্লাহ ইবনু মাস্’ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (দু’আয়) বলতেন,

’’আল্ল-হুম্মা ইন্নী আস্আলুকাল হুদা- ওয়াত্তুকা- ওয়াল ’আফা-ফা ওয়াল গিনা-’’

(অর্থাৎ- হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে হিদায়াত [সঠিক পথ], তাকওয়া [পরহেযগারিতা], হারাম থেকে বেঁচে থাকা ও অমুখাপেক্ষিতা প্রত্যাশা করি)। (মুসলিম)[1]

بَابُ جَامِعِ الدُّعَاءِ

وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّهُ كَانَ يَقُولُ: «اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ الْهُدَى وَالتُّقَى وَالْعَفَافَ وَالْغِنَى» . رَوَاهُ مُسلم

ব্যাখ্যা: হাদীসে (الْهُدٰى) ‘‘হুদা-’’ বলতে হিদায়াত এবং (التُقٰى) ‘‘তুকা-’’ বলতে তাকওয়া বুঝানো হয়েছে। (الْعَفَافَ) ‘‘আফাফ’’ বলতে গুনাহ ও অনুচিত কর্ম থেকে বিরত থাকাকে বুঝানো হয়েছে। (الْغِنٰى) ‘‘গিনা-’’ বলতে মূলত অন্তরের ধনাঢ্যতা বা প্রাচুর্যতা বুঝানো হয়েছে; সম্পদের ধনাঢ্যতা নয়। অন্তরের প্রাচুর্যতা এমন সম্পদ থেকে ব্যক্তিকে আড়ালে রাখে যে সম্পদ ব্যক্তিকে আল্লাহর আনুগত্য থেকে বিচ্ছিন্ন রাখে এবং আল্লাহ তা‘আলা থেকে ভিন্ন কাজে অন্তরকে ব্যস্ত রাখে। তবে প্রশংসিত ধনাঢ্যতা হলো ঐ ধনাঢ্যতা যা ব্যক্তিকে দুনিয়ামুখী হওয়া ও দুনিয়ার প্রতি বেশি গুরুত্ব প্রদান থেকে বিরত রাখে।

তিনি বলেন, সাধারাণত ‘হুদা-’ ও ‘তুকা’ বলতে দুনিয়ার জীবনোপকরণ, আখিরাতের উপকরণ ও চরিত্রের মহৎ দিকসমূহ যা অর্জন করা উচিত তার সন্ধান পাওয়া এবং শির্ক, অবাধ্যতা ও চরিত্রের খারাপ দিকসমূহ যা বর্জন করা উচিত তা বর্জনে করাকে বুঝায়।


পরিচ্ছেদঃ ৭. প্রথম অনুচ্ছেদ - মৌলিক দু‘আসমূহ

২৪৮৫-[৪] ’আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, তুমি (দু’আ) বল,

’’আল্ল-হুম্মাহদিনী ওয়া সাদ্দিদনী ওয়াযকুর বিলহুদা- হিদা-য়াতাকাত্ব ত্বরীকা ওয়াবিস্ সাদা-দি সাদা-দাস্ সাহমি’’

(অর্থাৎ- ’হে আল্লাহ! আমাকে হিদায়াতের পথ দেখাও এবং আমাকে সরল-সোজা রাখো।’ আর ’হিদায়াত’ বলতে মনে করবে তুমি আল্লাহর পথ, আর ’সোজা’ বলতে খেয়াল করবে তীরের মতো সোজা।)। (মুসলিম)[1]

بَابُ جَامِعِ الدُّعَاءِ

وَعَنْ عَلِيٍّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «قُلْ اللَّهُمَّ اهْدِنِي وَسَدِّدْنِي وَاذْكُرْ بِالْهُدَى هِدَايَتَكَ الطَّرِيقَ وبالسداد سداد السهْم» . رَوَاهُ مُسلم

ব্যাখ্যা: ‘‘হে আল্লাহ! তুমি আমাকে হিদায়াত দান করো’’ এর অর্থ হলো কল্যাণকর কাজে আমাকে পথ দেখাও। এর অর্থ এও হতে পারে সিরাতে মুস্‌তাক্বীম-এর দিকে হিদায়াতের উপর আমাকে দৃঢ় রাখো অথবা আমাকে কামালিয়্যাত তথা পূর্ণ মু’মিন হওয়ার পথে অতিরিক্ত যোগ্যতা ও গুণাবলী দান করো।

‘‘আমাকে সোজা রাখো’’ এর অর্থ হলো আমার সকল কর্মে দৃঢ়তার সাথে সঠিক পথ অবলম্বনকারী বানাও। ইমাম ত্বীবী (রহঃ) বলেন, এর মধ্যেই আল্লাহর ঐ কথার অর্থ পাওয়া যায় যেখানে আল্লাহ বলেছেন, فَاسْتَقِمْ كَمَا أُمِرْتَ অর্থাৎ- ‘‘সুতরাং তুমি যেভাবে আদিষ্ট হয়েছ তাতে স্থির থাকো’’- (সূরা হূদ ১১ : ১১২)।

আল্লাহ তা‘আলা অন্যত্র বলেন, اهْدِنَا الصِّرَاطَ الْمُسْتَقِيمَ ‘‘আমাদেরকে সরল পথ প্রদর্শন করো’’- (সূরা আল ফাতিহাহ্ ১ : ৫)। অর্থাৎ- আমাকে এমন হিদায়াত দান করো যাতে করে আমি বাড়াবাড়ি বা সীমালঙ্ঘন এবং অতিরিক্ত শৈথিল্য বা অলসতা এ দু’টির কোনটির দিকে ঝুঁকে না পড়ি।


পরিচ্ছেদঃ ৭. প্রথম অনুচ্ছেদ - মৌলিক দু‘আসমূহ

২৪৮৬-[৫] আবূ মালিক আল আশ্’জা’ঈ (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি তার পিতা হতে বর্ণনা করেন। তার পিতা বলেন, যখন কোন লোক ইসলাম গ্রহণ করতেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে প্রথম সালাত শিক্ষা দিতেন। তারপর তাকে এ পূর্ণ বাক্যগুলো পড়ে দু’আ করতে আদেশ করতেন,

’’আল্ল-হুম্মাগফিরলী, ওয়ারহামনী, ওয়াহদিনী, ওয়া ’আ-ফিনী, ওয়ারযুকনী’’

(অর্থাৎ- হে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা করো, আমাকে দয়া করো, আমাকে পথ দেখাও, আমাকে শান্তিতে রাখো এবং আমাকে রিযক দান করো)। (মুসলিম)[1]

بَابُ جَامِعِ الدُّعَاءِ

وَعَنْ أَبِي مَالِكٍ الْأَشْجَعِي عَنْ أَبِيهِ قَالَ: كَانَ الرجل إِذا أسلم علمه النَّبِي صلى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الصَّلَاةَ ثُمَّ أَمَرَهُ أَنْ يَدْعُوَ بِهَؤُلَاءِ الْكَلِمَاتِ: «اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي وَارْحَمْنِي وَاهْدِنِي وَعَافِنِي وَارْزُقْنِي» . رَوَاهُ مُسلم

ব্যাখ্যা: কোন ব্যক্তি ইসলাম গ্রহণ করলে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বপ্রথম তাকে সালাতের শর্ত ও রুকনসমূহ শিক্ষা দিতেন অথবা যে সালাত তার তৎকালে উপস্থিত সে সালাত শিক্ষা দিতেন কারণ তখন সালাত আদায় করা তার জন্য ফারযে আইন। অতঃপর তাকে হাদীসে উল্লিখিত শব্দগুলো শিক্ষা দিতেন এজন্য যে, এ শব্দসমূহ দুনিয়া ও আখিরাতের সমস্ত কল্যাণকে ধারণ করে। সে শব্দসমূহ হলো, হে আল্লাহ! তুমি আমার গুনাহসমূহ মুছে দেয়ার মাধ্যমে আমাকে ক্ষমা করো, আমার দোষ-ত্রুটিসমূহ ঢেকে রাখার মাধ্যমে আমার ওপর দয়া করো, আমাকে শান্তি ও নিরাপত্তার পথে পরিচালিত করো অথবা সরল প্রশস্ত পথের উপর আমাকে দৃঢ় রাখো, সমস্ত বিপদ ও ভুল-ভ্রান্তি থেকে আমাকে মুক্ত রাখো এবং আমাকে হালাল রিযক (জীবিকা) দান করো।


পরিচ্ছেদঃ ৭. প্রথম অনুচ্ছেদ - মৌলিক দু‘আসমূহ

২৪৮৭-[৬] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অধিকাংশ সময়ই এ দু’আ করতেন, ’’আল্ল-হুম্মা আ-তিনা- ফিদ্দুন্ইয়া- হাসানাতাওঁ ওয়াফিল আ-খিরাতি হাসানাতাওঁ ওয়াকিনা- ’আযা-বান্না-র’’ (অর্থাৎ- হে আল্লাহ! আমাদেরকে দুনিয়ায় এবং আখিরাতে কল্যাণ দান করো। আর জাহান্নামের ’আযাব [শাস্তি] হতে বাঁচাও)। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

بَابُ جَامِعِ الدُّعَاءِ

وَعَن أنسٍ قَالَ: كَانَ أَكْثَرُ دُعَاءِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ «اللَّهُمَّ آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الْآخِرَةِ حَسَنَةً وقنا عَذَاب النَّار»

ব্যাখ্যা: নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ দু‘আটি এজন্যে সবচেয়ে বেশি পড়তেন যে, এ দু‘আটি ব্যাপক অর্থবোধক ও কুরআন থেকে চয়নকৃত। দু‘আটির শুরু বিভিন্ন বর্ণনায় বিভিন্ন শব্দে এসেছে। কোথাও ‘‘আল্ল-হুম্মা আ-তিনা-’’, কোথাও ‘‘আল্ল-হুম্মা রব্বানা- আ-তিনা-’’, কোথাও ‘‘রব্বানা- আ-তিনা-’’ শব্দে এসেছে। সবগুলো বর্ণনাই সহীহ।

অত্র হাদীসে মৃত্যুর পূর্বে দুনিয়ায় হাসানাহ্ বলতে এবং মৃত্যুর পরে আখিরাতে হাসানাহ্ বলতে কী বুঝানো হয়েছে তা নিয়ে মুফাসসির ও ‘আলিমগণের বিভিন্ন মত পাওয়া যায়। নিম্নে মতসমূহ সংক্ষেপে উল্লেখ করা হলোঃ কারো মতে, দুনিয়ায় হাসানাহ্ বলতে দুনিয়ায় ব্যক্তির ইচ্ছা ও স্বভাব অনুযায়ী জীবনোপকরণ, স্বচ্ছলতা, সুস্থতা, সুন্দরী মহিলা; এছাড়াও তার মন হালাল যা চায় ও তার চোখ হালাল যা কিছুর স্বাদ নিতে চায় তা। আর আখিরাতে হাসানাহ্ বলতে ঐসব কিছুকে বুঝানো হচ্ছে যা কোন মাধ্যমে বা মাধ্যম ছাড়াই ব্যক্তি পাবে তা। কারো মতে দুনিয়ায় হাসানাহ্ বলতে নেক্কার স্ত্রী ও আখিরাতে হাসানাহ বলতে জান্নাতী হূর এবং জাহান্নামের আগুনের ‘আযাব বলতে খারাপ নারীকে বুঝানো হয়েছে।

হাসান বাসরী (রহঃ)-এর মতে, দুনিয়াতে হাসানাহ্ বলতে উপকারী জ্ঞান, ‘ইবাদাত, পবিত্র রিযক এবং আখিরাতে হাসানাহ্ বলতে জান্নাত বুঝানো হয়েছে। কাতাদাহ্’র মতে, এর দ্বারা দুনিয়া ও আখিরাতে সুস্থতা ও নিরাপত্তা বুঝানো হয়েছে।

সুদ্দী ও মুকাতিল-এর মতে, দুনিয়ার হাসানাহ্ দ্বারা প্রশস্ত হালাল রিযক (জীবিকা), সৎ ‘আমল এবং আখিরাতের হাসানাহ্ দ্বারা ক্ষমা ও সাওয়াব উদ্দেশ্য। ‘আত্বিয়্যাহ্-এর মতে আখিরাতের হাসানাহ দ্বারা হিসাব সহজকরণ ও জান্নাতে প্রবেশকে বুঝানো হয়েছে। কারো মতে দুনিয়ার হাসানাহ্ হলো, সুস্থতা, ন্যূনতম প্রয়োজন মেটানো ও চারিত্রিক নিষ্কলুষতা এবং আখিরাতের হাসানাহ্ হলো পরকালে আল্লাহর নিকট থেকে সাওয়াব ও রহমাতপ্রাপ্তি।

হাফেয ইবনু কাসীর (রহঃ) তাঁর তাফসীরে বলেন, এ দু‘আটির মধ্যে দুনিয়ার সকল কল্যাণকেও একত্র করা হয়েছে এবং সকল মন্দকে দূর করা হয়েছে। এখানে ‘দুনিয়ার হাসানাহ্’ শব্দ ঐ সবকিছুকেই শামিল করে যা দুনিয়ার কাঙ্ক্ষিত বিষয় ও বস্ত্ত। যেমন- সুস্থতা বা সুস্বাস্থ্য, প্রশস্ত ঘর, সুন্দরী স্ত্রী, সৎকর্মশীল সন্তান, প্রশস্ত রিযক, উপকারী জ্ঞান, সৎ ‘আমল, হালকা বাহন, উত্তম প্রশংসা ইত্যাদি। এর কোনটিই দুনিয়ার হাসানার বাইরে নয়। অপরদিকে আখিরাতের হাসানাহ্ বলতে যা বুঝাচ্ছে তার সর্বোচ্চ হচ্ছে জান্নাতে প্রবেশের সুযোগ। এছাড়াও যা বুঝাচ্ছে তা হলো, খোলা মাঠে সর্বাধিক ভীতিপ্রদ চিৎকার থেকে নিরাপদ থাকা, হিসাব সহজ করা এবং আখিরাতের উত্তম কর্মসমূহ ও জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি। জাহান্নামের আযাব থেকে রক্ষার অর্থ হলো তা থেকে রক্ষাকারী কাজ। যেমন- হারাম ও গুনাহের কাজ থেকে দূরে থাকা এবং হারাম ও সন্দেহপূর্ণ বিষয়াবলী বর্জন করা।

ইমাম কুরতুবী বলেন, বেশিরভাগ ‘আলিমের মতে দুনিয়া ও আখিরাতের হাসানাহ্ বলতে এ দু’ স্থানের নিয়ামতসমূহ বুঝানো হচ্ছে। উল্লেখ্য যে, ‘আল্লামা কারী (রহঃ) বলেন, সম্ভবত নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এজন্য এ দু‘আটি সর্বাধিক পড়তেন যে, এটি ছিল একটি ব্যাপক দু‘আ; যা দুনিয়া ও আখিরাতের সকল কল্যাণকে শামিল করেছে। আর দু‘আর শেষাংশে জাহান্নামের আগুন থেকে আশ্রয় চাওয়ার দু‘আ করা হয়েছে যার অর্থ হচ্ছে হে আল্লাহ! তুমি আমাদেরকে ঐ আগুন থেকে রক্ষা করো এবং যেসব বিষয় আগুনের নিকটবর্তী করে তা থেকেও আমাদের রক্ষা করো।


পরিচ্ছেদঃ ৭. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - মৌলিক দু‘আসমূহ

২৪৮৮-[৭] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’আ করতেন,

’’রব্বি আ’ইন্নী ওয়ালা- তু’ইন্ ’আলাইয়্যা ওয়ানসুরনী ওয়ালা- তানসুর ’আলাইয়্যা ওয়াম্‌কুরলী ওয়ালা- তাম্‌কুর ’আলাইয়্যা ওয়াহদিনী ওয়া ইয়াস্‌সিরিল হুদা- লী ওয়ানসুরনী ’আলা- মান্ বাগা- ’আলাইয়্যা রব্বিজ্’আলনী লাকা শা-কিরান লাকা যা-কিরান লাকা র-হিবান লাকা মিত্বওয়া-’আন লাকা মুখবিতান ইলায়কা আও্ওয়া-হান মুনীবান রব্বি তাকব্বাল তাওবাতী ওয়াগসিল হাওবাতী ওয়াআজিব্ দা’ওয়াতী ওয়া সাব্বিত্ হুজ্জাতী ওয়া সাদ্দিদ্ লিসা-নী ওয়াহদি কলবী ওয়াসলুল সাখীমাতা সদরী’’

(অর্থাৎ- হে রব! আমাকে সাহায্য করো, আমার বিপক্ষে সাহায্য করো না। আমাকে সহযোগিতা করো আমার বিরুদ্ধে সহযোগিতা করো না। আমার পক্ষে উপায়-উপকরণ উদ্ভাবন করো, আমার বিরুদ্ধে উপায়-উপকরণ উদ্ভাবন করো না। আমাকে পথ দেখাও, আমার জন্য পথ সহজ করে দাও। যে আমার ওপর জবরদস্তি করে, তার ওপর আমাকে বিজয়ী করো। হে রব! আমাকে তোমার প্রতি কৃতজ্ঞ বানাও। আমাকে তোমার জিকিরকারী করো, তোমার ভয়ে আমাকে ভীত-সন্ত্রস্ত করো। তোমার প্রতি অনুগত করো, তোমারই প্রতি বিনম্র করো। [অনুতপ্তের জন্য] তোমার কাছে মনের দুঃখ জানাতে শিখাও, তোমার প্রতি আমাকে ঝুকাও। হে রব! তুমি আমার তওবা্ কবূল করো, আমার গুনাহ ধুয়ে দাও। আমার ডাকে সাড়া দাও, আমার ঈমান দৃঢ় করো, আমার মুখ ঠিক রাখো, আমার অন্তরকে হিদায়াত দান করো এবং আমার অন্তরের কলুষতা দূরীভূত করো।)। (তিরমিযী, আবূ দাঊদ ও ইবনু মাজাহ)[1]

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَدْعُو يَقُولُ: «رَبِّ أَعِنِّي وَلَا تُعِنْ عَلَيَّ وَانْصُرْنِي وَلَا تَنْصُرْ عَلَيَّ وَامْكُرْ لِي وَلَا تَمْكُرْ عَلَيَّ وَاهْدِنِي وَيَسِّرِ الْهُدَى لِي وَانْصُرْنِي عَلَى مَنْ بَغَى عَلَيَّ ربِّ اجعَلني لكَ شَاكِرًا لَكَ ذَاكِرًا لَكَ رَاهِبًا لَكَ مِطْوَاعًا لَكَ مُخْبِتًا إِلَيْكَ أَوَّاهًا مُنِيبًا رَبِّ تَقَبَّلْ تَوْبَتِي وَاغْسِلْ حَوْبَتِي وَأَجِبْ دَعْوَتِي وَثَبِّتْ حُجَّتِي وَسَدِّدْ لِسَانِي وَاهْدِ قَلْبِي وَاسْلُلْ سَخِيمَةَ صَدْرِي» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ وَأَبُو دَاوُد وَابْن مَاجَه

ব্যাখ্যা: দীন ও দুনিয়া উভয় ক্ষেত্রে অন্তর, শয়তান, জিন্, মানুষ যে কারো পক্ষ থেকে আসা শত্রুতার মুকাবেলায় আমাকে সাহায্য করো। নিজের বিরুদ্ধে আল্লাহ কর্তৃক কৌশল উদ্ভাবন অর্থ হলো কোন ব্যক্তি হয়তো বাহ্যিকভাবে দেখবে যে, সে আল্লাহর নিয়ামত পাচ্ছে, দীর্ঘ জীবন, সুস্থতা ইত্যাদি পাচ্ছে। সে মনে করবে এগুলো তার ভাল কর্মের বিনিময়ে পাচ্ছে। মূলত সর্বদা তা নয়। সে যদিও ধারণা করছে যে, তার ‘ইবাদাত কবূল হয়েছে। বাস্তবে তার ‘ইবাদাতে রিয়া (লোক দেখানো), সুম্‘আহ (লোক শুনানো) ইত্যাদি থাকার কারণে তা আল্লাহর নিকট কবূল হয়নি। এর মাধ্যমে সে আল্লাহর কৌশলের শিকার হচ্ছে।

অন্যের প্রতি কৃতজ্ঞতা সর্বদা প্রকাশ করতে হয়। আল্লাহর নিয়ামতসমূহের কৃতজ্ঞতা জানানো জরুরী। সাথে সাথে গুনাহের কাজ, আল্লাহর রাগ ও অসন্তোষ থেকে সর্বদা ভীত-সন্ত্রস্ত থাকা উচিত। কৃতজ্ঞতা তিনভাবে প্রকাশ করা যায়-

[এক] অন্তরের মাধ্যমে, আর তা হলো মনে মনে এ কথা জানা যে, আমার ওপর আসা সকল নিয়ামত আল্লাহর পক্ষ থেকে এসেছে।

[দুই] কর্মের মাধ্যমে কৃতজ্ঞতা; আর তা হলো আল্লাহর আদেশ অনুযায়ী প্রতিটি নিয়ামত তার যথাযথ স্থানে রাখা।

[তিন] মুখের মাধ্যমে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার পর আল্লাহর প্রশংসাসূচক কথা মুখে উচ্চারণের মাধ্যমে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা।

(مِطْوَاعًا) ‘‘মিত্বওয়া-‘আন’’ অর্থ হলো আল্লাহর আদেশের বেশি বেশি আনুগত্য করা, তার আদেশসমূহ যথাযথভাবে পালন করা আর নিষেধ থেকে দূরে থাকা।

(مُخْبِتًا) ‘‘মুখবিতান’’ অর্থ হলো চরম বিনয়ী, বিনম্র ও ভীত হওয়া। এ শব্দটি কুরআনে এসেছে সূরা আল হজ ২২ : ৩৫ আয়াতে। মুনীব অর্থ হলো তাওবাহকারী, অবাধ্যতা থেকে আনুগত্যে ফিরে আসা, গাফলতি ছেড়ে আল্লাহর স্মরণে ফিরে আসা। কুরআনে ইব্রাহীম (আঃ)-কে মুনীব বলে আখ্যায়িত করা হয়- (দ্রঃ সূরা হূদ ১১ : ৭৫)। আমার ঈমান দৃঢ় রাখো দুনিয়া ও আখিরাতে আমার শত্রুর বিরুদ্ধে এবং কবরে সওয়াল-জবাবে। সত্য বলার ক্ষেত্রে আমার মুখকে ঠিক রাখো এবং আমার অন্তরকে সিরাতে মুস্তাক্বীমের প্রতি পরিচালিত করো।


পরিচ্ছেদঃ ৭. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - মৌলিক দু‘আসমূহ

২৪৮৯-[৮] আবূ বকর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন মিম্বারের উপর দাঁড়িয়ে কেঁদে ফেললেন, অতঃপর বললেনঃ তোমরা আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো এবং শান্তি চাও। কেননা ঈমান আনার পর কাউকেও শান্তির চেয়ে উত্তম আর কিছু দেয়া হয় না। (তিরমিযী ও ইবনু মাজাহ; ইমাম তিরমিযী বলেন, হাদীসটি হাসান তবে সানাদ হিসেবে গরীব)[1]

وَعَن أبي بكرٍ قَالَ: قَامَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى الْمِنْبَرِ ثُمَّ بَكَى فَقَالَ: «سَلُوا اللَّهَ الْعَفْوَ وَالْعَافِيَةَ فَإِنَّ أَحَدًا لَمْ يُعْطَ بَعْدَ الْيَقِينِ خَيْرًا مِنَ الْعَافِيَةِ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَابْنُ مَاجَهْ وَقَالَ التِّرْمِذِيُّ: هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ غَرِيب إِسْنَادًا

ব্যাখ্যা: রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এজন্যে কাঁদলেন যে, তিনি জানতে পেরেছিলেন তার উম্মাত বিভিন্ন ফিতনা, মনোবৃত্তি পূরণ, সম্পদ জমা করার লোভ ও সম্মান-মর্যাদা, খ্যাতি অর্জনের ভুল পথে পতিত হবে। তাই তিনি ফিতনা থেকে বাঁচার জন্য আল্লাহর নিকট ক্ষমা ও শান্তি কামনা করতে আদেশ দিয়েছেন।

(الْعَفْوَ) ‘‘আফ্ওয়া’’ অর্থ হচ্ছে গুনাহ থেকে বাঁচা, গুনাহের ক্ষমা পাওয়া ও গুনাহের শাস্তি থেকে পরিত্রাণ পাওয়া। (الْعَافِيَةَ) ‘‘আ-ফিয়াহ্’’ অর্থ হলো দীনের ক্ষেত্রে সকল ফিতনাহ্, পরীক্ষা থেকে এবং শারীরিকভাবে সকল রোগ ও ক্লান্তি থেকে নিরাপদ থাকা।

‘আ-ফিয়াহ্’ অর্থ এও হয় যে, আল্লাহ স্বয়ং বান্দার পক্ষ থেকে সকল বিপদ, বালা-মুসীবাত, রোগ-শোককে প্রতিরোধ করবেন। এর অর্থ এটাও হতে পারে যে, দুনিয়ার সকল কাজ সঠিকভাবে করতে পারা এবং দুনিয়ার অনিষ্ট থেকে নিরাপদ থাকা। এ দু‘আটি অন্যতম ব্যাপক দু‘আ। অনেক দু‘আতেই ‘আ-ফিয়াহ্ বা চাওয়ার কথা বলা হয়েছে। যার মাধ্যমে বুঝা যায়, প্রত্যেক বান্দার উচিত আল্লাহর কাছে বেশি বেশি ‘আ-ফিয়াহ্ (চাওয়া)। এ দু‘আতে অনেক ফায়দা রয়েছে।


পরিচ্ছেদঃ ৭. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - মৌলিক দু‘আসমূহ

২৪৯০-[৯] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন জনৈক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে বললো, হে আল্লাহর রসূল! কোন্ দু’আ সর্বোত্তম? উত্তরে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তোমার রবের কাছে দুনিয়া ও আখিরাতের শান্তি ও নিরাপত্তা কামনা করো। অতঃপর সেই ব্যক্তি আবার দ্বিতীয় দিন এসে বললো, হে আল্লাহর রসূল! কোন্ দু’আ সর্বোত্তম? তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাকে আগের মতো বললেন। আবার সেই ব্যক্তি তৃতীয় দিন আসলো (একই প্রশ্ন করলে), তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আগের মতই উত্তর দিলেন। অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, দুনিয়া ও আখিরাতে যখন শান্তি ও নিরাপত্তা লাভ করলে, তখন মুক্তি লাভ করলে। (তিরমিযী ও ইবনু মাজাহ; ইমাম তিরমিযী বলেন, হাদীসটি হাসান তবে সানাদের দিক দিয়ে তা গরীব)[1]

وَعَنْ أَنَسٍ أَنَّ رَجُلًا جَاءَ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ أَيُّ الدُّعَاءِ أَفْضَلُ؟ قَالَ: «سَلْ رَبَّكَ الْعَافِيَةَ وَالْمُعَافَاةَ فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ» ثُمَّ أَتَاهُ فِي الْيَوْمِ الثَّانِي فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ أَيُّ الدُّعَاءِ أَفْضَلُ؟ فَقَالَ لَهُ مِثْلَ ذَلِكَ ثُمَّ أَتَاهُ فِي الْيَوْمِ الثَّالِثِ فَقَالَ لَهُ مِثْلَ ذَلِكَ قَالَ: «فَإِذَا أُعْطِيتَ الْعَافِيَةَ وَالْمُعَافَاةَ فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ فَقَدْ أَفْلَحْتَ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَابْنُ مَاجَهْ وَقَالَ التِّرْمِذِيُّ: هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ غَرِيب إِسْنَادًا

ব্যাখ্যা: (الْعَافِيَةَ) ‘‘আ-ফিয়াহ্’’-এর চেয়ে যে দু‘আ করা হয় সে দু‘আ সকল দু‘আর মধ্যে শ্রেষ্ঠ দু‘আ। কারণ এ দু‘আর মধ্যে সকল কল্যাণ ও উপকারিতা অর্জন ও সকল অনিষ্ট ও খারাপী বর্জনের কামনা রয়েছে। জাযারী তাঁর নিহায়াহ্ গ্রন্থে বলেছেন, ‘আ-ফিয়াহ্ হলো সকল রোগ ও বিপদ থেকে নিরাপদ থেকে সুস্থ থাকা। (الْمُعَافَاةَ) ‘‘মু‘আ-ফা-হ্’’ অর্থ হলো অন্যান্য মানুষের অনিষ্টতা থেকে নিজেকে রক্ষা করা, অন্যের থেকে নিজেকে অমুখাপেক্ষী রাখা, অন্যরা যেন আমার থেকে কষ্ট না পায় এবং আমিও যেন অন্যদের থেকে কষ্ট না পাই এমন অবস্থা। লুম্‘আত গ্রন্থকার বলেন, এখানে ‘আ-ফিয়াহ্ বলতে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সকল প্রকাশ্য ও গোপন বিপদাপদ থেকে নিরাপদ থাকার কথা বুঝিয়েছেন।

এ হাদীস স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে যে, ‘আ-ফিয়াহ্ চেয়ে দু‘আ করা সর্বোত্তম দু‘আ। বিশেষ করে প্রশ্নকারী ব্যক্তি তিনদিন সর্বোত্তম দু‘আ কোনটি তা জিজ্ঞেস করলে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতিবারই এ দু‘আটির কথা বলেছেন। বারবার এ দু‘আটিকে সর্বোত্তম দু‘আ হিসেবে বলাই প্রমাণ করে এটি সর্বোত্তম দু‘আ। তাছাড়া হাদীসের শেষাংশে ‘‘যখন তোমাকে ‘আ-ফিয়াহ্ দেয়া হলো তখন তুমি সফলতা লাভ করলে’’ এ বক্তব্য দ্বারা স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয় যে, ‘আ-ফিয়াহ্ চেয়ে যে দু‘আ করা হয় সে দু‘আ দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণকে শামিল করে।


পরিচ্ছেদঃ ৭. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - মৌলিক দু‘আসমূহ

২৪৯১-[১০] ’আবদুল্লাহ ইবনু ইয়াযীদ আল খত্বমী (রাঃ) রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) দু’আ করার সময় বলতেন, ’’আল্ল-হুম্মার্ যুকনী হুব্বাকা ওয়াহুব্বা মান্ ইয়ানফা’উনী হুব্বুহূ ’ইন্‌দাকা, আল্ল-হুম্মা মা- রযাকতানী মিম্মা- উহিব্বু ফাজ্’আলহু ক্যুওয়াতান লী ফীমা- তুহিব্বু, আল্ল-হুম্মা মা যাওয়াইতা ’আন্নী মিম্মা- উহিব্বু ফাজ্’আলহু ফারা-গান লী ফীমা- তুহিব্বু’’

(অর্থাৎ- হে আল্লাহ! তুমি আমাকে তোমার ভালোবাসা এবং যার ভালোবাসা তোমার কাছে আমার জন্য কল্যাণকর হবে মনে করো তার ভালোবাসা আমাকে দান করো। হে আল্লাহ! আমি ভালোবাসি এমন যা তুমি আমাকে দিয়েছো, একে তুমি আমার অনুকূল করে দাও যা তুমি তার জন্য ভালোবাসো। হে আল্লাহ! আমি যা ভালোবাসি তার যতখানি তুমি আমার কাছ হতে দূরে রেখেছো, তাকে তুমি যা আমার পক্ষে ভালোবাসো তা করার জন্য সুযোগ-সুবিধা দান করো।)। (তিরমিযী)[1]

وَعَن عبد الله يزِيد الخطمي عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّهُ كَانَ يَقُولُ فِي دُعَائِهِ: «اللَّهُمَّ ارْزُقْنِي حُبَّكَ وَحُبَّ مَنْ يَنْفَعُنِي حُبُّهُ عِنْدَكَ اللَّهُمَّ مَا رَزَقْتَنِي مِمَّا أُحِبُّ فَاجْعَلْهُ قُوَّةً لِي فِيمَا تُحِبُّ اللَّهُمَّ مَا زَوَيْتَ عَنِّي مِمَّا أحب فاجعله فراغا ي فِيمَا تحب» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ

ব্যাখ্যা: হে আল্লাহ! তুমি আমাকে তোমার ভালবাসা দান করো। কারণ কোন সৌভাগ্য, স্বাদ, নিয়ামত অনুগ্রহ কোন কিছুই কোন মু’মিন বান্দার নিকট আল্লাহর ভালবাসার থেকে অধিক প্রিয় হতে পারে না। তাই সবকিছুর ঊর্ধ্বে আল্লাহর ভালবাসা। আল্লাহর ভালবাসাই মু’মিনের একান্ত কাম্য বিষয়। তোমার নিকট যার ভালবাসা আমার জন্য উপকারে আসবে তার ভালবাসা আমাকে দান করো। যেমন- মালাক (ফেরেশতা), নাবীগণ, আল্লাহর বন্ধু ও মুত্তাক্বীদের ভালবাসা।

হে আল্লাহ! তুমি আমাকে দান করেছ এমন যা কিছু আমি ভালবাসী, যেমন- শারীরিক সুস্থতা ও শক্তি-সামর্থ্য, পার্থিব ভোগের সামগ্রী, সম্পত্তি, সম্মান, খ্যাতি, সন্তান-অবসর ও অন্যান্য সমস্ত নিয়ামত। এগুলোকে তুমি যা ভালবাস যেমন তোমার আনুগত্য ও ‘ইবাদাত ইত্যাদির জন্য আমার পক্ষে অবলম্বনস্বরূপ করো। (অর্থাৎ- এসব পার্থিব নিয়ামতকে ব্যবহার করে আমি যেন তোমার ‘ইবাদাত ও আনুগত্যমূলক কাজ যথাযথভাবে করতে পারি সে তাওফীক দাও।)

হে আল্লাহ! তুমি আমার থেকে যা দূরে রেখেছ বা আমাকে দাওনি অথচ আমি তা ভালবাসি; তুমি সেগুলোকে আমার অবসরে তোমার আনুগত্য, ‘ইবাদাত, জিকির-আযকার করার উপায় হিসেবে গ্রহণ করো, যা করা তুমি ভালবাস।


পরিচ্ছেদঃ ৭. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - মৌলিক দু‘আসমূহ

২৪৯২-[১১] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন মাজলিস (বৈঠক) হতে খুব কমই উঠতেন, যতক্ষণ পর্যন্ত তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তার সাহাবীগণের জন্য এ দু’আ না করতেন-

’’আল্ল-হুম্মাকসিম লানা- মিন্ খশ্ইয়াতিকা মা- তাহূলু বিহী বায়নানা- ওয়া বায়না মা’আ-সীকা ওয়ামিন্ ত্ব-’আতিকা মা- তুবাল্লিগুনা- বিহী জান্নাতাকা ওয়ামিনাল ইয়াক্বীনি মা- তুহাওবিনু বিহী ’আলায়না- মুসীবা-তিদ্ দুন্ইয়া- ওয়া মাত্তি’না- বিআসমা-’ইনা- ওয়া আবস-রিনা- ওয়া ক্যুওয়াতিনা- মা- আহ্ইয়াইতানা- ওয়াজ্’আলহুল ওয়া-রিসা মিন্না- ওয়াজ্’আল সা’রানা- ’আলা- মান্ যলামনা- ওয়ানসুরনা- ’আলা- মান ’আ-দা-না ওয়ালা- তাজ্’আল মুসীবাতানা- ফী দীনিনা- ওয়ালা- তাজ্’আলিদ্ দুন্ইয়া- আকবারা হাম্মিনা- ওয়ালা- মাব্‌লাগা ’ইলমিনা- ওয়ালা- তুসাল্লিত্ব ’আলায়না- মান্ লা- ইয়ার্‌হামুনা-’’

(অর্থাৎ- হে আল্লাহ! তুমি আমাদের মধ্যে ঐ পরিমাণ তোমার ভীতি-সঞ্চার করো যা দিয়ে তুমি আমাদের মাঝে ও তোমার নাফরমানীর মধ্যে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করবে। তোমার ’ইবাদাত-আনুগত্যের ঐ পরিমাণ আমাদেরকে দান করো, যা দিয়ে তুমি আমাদেরকে তোমার জান্নাতে প্রবেশ করাবে এবং তোমার ওপর ঈমানের ঐ পরিমাণ দান করো যা দিয়ে তুমি দুনিয়ার বিপদাপদ সহজ করে দেবে। হে আল্লাহ! আমাদের উপকার সাধন করো আমাদের কানের মাধ্যমে, আমাদের চোখের মাধ্যমে ও আমাদের শক্তির মাধ্যমে, যতক্ষণ না তুমি আমাদেরকে বাঁচিয়ে রাখো। হে আল্লাহ! তুমি আমাদের উত্তরাধিকারী জারী রাখো। হে আল্লাহ! তুমি আমাদের প্রতিশোধ-প্রতিরোধকে সীমাবদ্ধ রাখো তাদের ওপর, যারা আমাদের ওপর যুলম [অত্যাচার-অবিচার] করেছে এবং আমাদের সাহায্য-সহযোগিতা করো তাদের বিরুদ্ধে, যারা আমাদের সাথে শত্রুতা করেছে। হে আল্লাহ! আমাদের দীন সম্পর্কে আমাদেরকে কোন বিপদে ফেলো না এবং দুনিয়াকে আমাদের মৌলিক চিন্তার বিষয় ও জ্ঞানের পরিসীমা করো না। হে আল্লাহ! যারা আমাদের ওপর দয়া প্রদর্শন করবে না, তাদেরকে আমাদের ওপর চাপিয়ে দিও না।)। (তিরমিযী; তিনি বলেন, হাদীসটি হাসান গরীব)[1]

وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ: قَلَّمَا كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُومُ مِنْ مَجْلِسٍ حَتَّى يَدْعُوَ بِهَؤُلَاءِ الدَّعَوَاتِ لِأَصْحَابِهِ: «اللَّهُمَّ اقْسِمْ لَنَا مِنْ خَشْيَتِكَ مَا تَحُولُ بِهِ بَيْنَنَا وَبَيْنَ مَعَاصِيكَ وَمِنْ طَاعَتِكَ مَا تُبَلِّغُنَا بِهِ جَنَّتَكَ وَمِنَ الْيَقِينِ مَا تُهَوِّنُ بِهِ عَلَيْنَا مُصِيْبَاتِ الدُّنْيَا وَمَتِّعْنَا بِأَسْمَاعِنَا وَأَبْصَارِنَا وَقُوَّتِنَا مَا أَحْيَيْتَنَا وَاجْعَلْهُ الْوَارِثَ مِنَّا وَاجْعَلْ ثَأْرَنَا عَلَى مَنْ ظَلَمَنَا وَانْصُرْنَا عَلَى مَنْ عَادَانَا وَلَا تَجْعَلْ مُصِيبَتَنَا فِي دِينِنَا وَلَا تَجْعَلِ الدُّنْيَا أَكْبَرَ هَمِّنَا وَلَا مَبْلَغَ عِلْمِنَا وَلَا تُسَلِّطْ عَلَيْنَا مَنْ لَا يَرْحَمُنَا» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَقَالَ: هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ غَرِيبٌ

ব্যাখ্যা: বলা হয়, অন্তর যখন আল্লাহর ভয়ে পরিপূর্ণ থাকে তখন শরীরের সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ আল্লাহর অবাধ্যমূলক কাজ থেকে বিরত থাকে। আল্লাহর ভয়ের অনুপাতে গুনাহের কাজ থেকেও বিরত থাকা বাড়ে-কমে। যখন ভয় একেবারে কমে যায় এবং চরম গাফলতিতে অন্তর নিমজ্জিত হয় তখন তা ব্যক্তির দুর্ভাগ্যের চিহ্ন প্রকাশ করে। এজন্যই বিদ্বানগণ বলেছেন যে, আল্লাহর অবাধ্যতামূলক কাজ মূলত কুফরীর দূত যেমনভাবে চুম্বন হচ্ছে যৌনমিলনের দূত, গান হচ্ছে যিনার (ব্যভিচার) দূত, দৃষ্টি হচ্ছে যৌন উত্তেজনার দূত, রোগ হচ্ছে মৃত্যুর দূত। দুনিয়া ও আখিরাতে এবং ব্যক্তির শরীর ও বুদ্ধি-বিবেচনাশক্তির উপর গুনাহের খুবই খারাপ ও ক্ষতিকারক প্রভাব রয়েছে, যে প্রভাব আল্লাহ ছাড়া কেউ গণনা করতে পারবে না।

এখানে দুনিয়ার মুসীবাত বা বিপদাপদসমূহ বলতে, রোগ-বালাই, আঘাত, সম্পদ বিনষ্ট হওয়া, সন্তান মারা যাওয়া ইত্যাদি বুঝাচ্ছে। যে ব্যক্তি সত্যিকার অর্থে নিশ্চিতভাবে জানবে যে, আল্লাহ তা‘আলা তাকে দুনিয়ায় যে বিপদাপদ দিচ্ছেন তার বিনিময়ে আখিরাতে তাকে সাওয়াব দান করবেন, তার গুনাহসমূহ মাফ করবেন এবং তার মর্যাদা বৃদ্ধি করবেন। তাই কোন বিপদাপদে তার দুশ্চিন্তাগ্রস্ত ও হতাশ না হয়ে বরং শেষ পর্যন্ত এর বিনিময়ে সাওয়াব পাওয়ার কারণে তার খুশি হওয়া উচিত।

এ দু‘আর শেষ অংশে বলা হয়েছে- ‘‘তুমি দুনিয়াকে আমাদের জন্য সবচেয়ে বেশি চিন্তার কারণ বানাবেন না’’। এর অর্থ হলো, পার্থিব সম্পত্তি ও সম্মান অর্জনকে দুনিয়ার সবচেয়ে বড় চিন্তার কারণ বানিও না, বরং আখিরাতকেই আমাদের চিন্তার সবচেয়ে বড় কারণ বানাও।

এ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, দুনিয়ার জীবনে স্বাভাবিকভাবে জীবন-যাপন করার জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ অর্জনের যতটুকু চিন্তা না করলেই নয় ততটুকু করা অন্যায় নয় বরং অনুমোদিত এবং কোন কোন ক্ষেত্রে মুস্তাহাব বা ওয়াজিবও।

হাদীসের সর্বশেষ অংশে অত্যাচারী বা কাফিরদের অধীনস্ত না বানাতে দু‘আ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, কাফির ও যালিমদেরকে আমাদের ওপর শাসক বা বিচারক নিয়োগ করো না। কেননা যালিমরা অধীনস্তদের ওপর রহম বা দয়া করে না।


পরিচ্ছেদঃ ৭. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - মৌলিক দু‘আসমূহ

২৪৯৩-[১২] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (দু’আ) বলতেন,

’’আল্ল-হুম্মান্ ফা’নী বিমা- ’আল্লামতানী ওয়া ’আল্লিমনী মা- ইয়ানফা’উনী ওয়া যিদ্‌নী ’ইলমা-, আলহামদু লিল্লা-হি ’আলা- কুল্লি হা-লিন্ ওয়া আ’ঊযুবিল্লা-হি মিন হা-লি আহলিন্‌না-র’’

(অর্থাৎ- হে আল্লাহ! আমাদেরকে যা শিক্ষা দিয়েছো তা আমাদের উপকারে লাগাও এবং আমাদের উপকারে আসে এমন শিক্ষা দান করো, আর আমাদের জ্ঞান বৃদ্ধি করো। প্রত্যেক অবস্থায়ই আল্লাহর কৃতজ্ঞতা স্বীকার করছি জাহান্নামীদের অবস্থা হতে এবং আমি আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাই।)। (তিরমিযী ও ইবনু মাজাহ; ইমাম তিরমিযী বলেন, হাদীসটির সানাদ গরীব)[1]

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «اللَّهُمَّ انْفَعْنِي بِمَا عَلَّمْتَنِي وَعَلِّمْنِي مَا يَنْفَعُنِي وَزِدْنِي عِلْمًا الْحَمْدُ لِلَّهِ عَلَى كُلِّ حَالٍ وَأَعُوذُ بِاللَّهِ مِنْ حَالِ أَهْلِ النَّارِ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَابْنُ مَاجَهْ وَقَالَ التِّرْمِذِيُّ: هَذَا حَدِيثٌ غَرِيبٌ إِسْنَادًا

ব্যাখ্যা: ‘হে আল্লাহ! তুমি আমাকে এমন জ্ঞান দান করো যা আমার উপকার করবে’। এর দ্বারা বুঝা যায় যে, উপকারী জ্ঞান ছাড়া অন্য কোন জ্ঞান চাওয়া যাবে না। আর উপকারী জ্ঞান হলো দীনের জ্ঞান এবং দুনিয়ার ততটুকু জ্ঞান যতটুকু দীনের উপকারে আসবে। এ দু’টি ছাড়া বাকী সব জ্ঞান ঐ জ্ঞানের অন্তর্ভুক্ত হবে যে জ্ঞান অর্জনকারীদের সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,

وَيَتَعَلَّمُوْنَ مَا يَضُرُّهُمْ وَلَا يَنْفَعُهُمْ

‘‘তারা যা শিক্ষা করত তা তাদের ক্ষতি সাধন করত এবং কোন উপকারে আসত না।’’ (সূরা আল বাকারাহ্ ২ : ১০২)

এ আয়াতে যাদুবিদ্যা শিক্ষা করাকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কারণ এ বিদ্যা তো আখিরাতে তাদের উপকারে আসবেই না বরং তাদের ক্ষতি করবে। যদিও এ জ্ঞান দুনিয়ায় তাদেরকে উপকার করবে কিন্তু এ উপকার শারী‘আতের দৃষ্টিতে কোন উপকারই নয়।

হাদীসে জ্ঞান বৃদ্ধির দু‘আ দ্বারা ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, যে ব্যক্তি তার অর্জিত জ্ঞান অনুযায়ী ‘আমল করবে তাকে আল্লাহ এমন জ্ঞান দিবেন যা সে জানে না। এর দ্বারা আরো বুঝা যায় যে, জ্ঞান হলো ‘আমলের মাধ্যম। একটি অপরটির পরিপূরক।

এ দু‘আ দ্বারা আরো একটি বিষয় প্রমাণিত হয় যে, আল্লাহ এবং তাঁর রসূল জ্ঞান বৃদ্ধি করার দু‘আ ছাড়া অন্য কোন কিছু বৃদ্ধির বা অতিরিক্ত চাইতে দু‘আ করতে শিক্ষা দেননি। শুধু জ্ঞানই অতিরিক্ত বা বেশি চাওয়া মুস্তাহাব। (তাই সকল জিনিসের উপর জ্ঞানের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণিত)।

দুঃখ-কষ্টসহ সকল অবস্থায় আল্লাহর প্রশংসা এ জন্য করতে হবে যে, আল্লাহ এর চেয়ে কঠিন বিপদ বা কষ্ট দেননি। কখনো কখনো কষ্ট-দুর্দশার শেষ পরিণতি হয় সুখকর ও আনন্দময়। তখন ঐ ব্যাপারে প্রশংসা করা বাঞ্ছনীয় হয়। যেমন- মহান আল্লাহ বলেন,

وَعَسٰى أَنْ تَكْرَهُوْا شَيْئًا وَّهُوَ خَيْرٌ لَّكُمْ

‘‘সম্ভবত তোমরা এমন কিছুকে অপছন্দ করো যা তোমাদের জন্য কল্যাণকর।’’

(সূরা আল বাকারাহ্ ২ : ২১৬)

ইমাম গাযালী (রহঃ) বলেছেন, এমন কোন দুঃখণ্ডকষ্ট নেই যার অপর পাশে আল্লাহর অনুগ্রহ নেই। তাই ঐসব অনুগ্রহের কথা ভেবেই আল্লাহর প্রশংসা করা উচিত এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা উচিত। আর জাহান্নামীদের অবস্থা থেকে আশ্রয় চাওয়ার অর্থ হলো, দুনিয়ায় কুফরী ও ফাসিক্বী থেকে বেঁচে থাকা এবং আখিরাতে ‘আযাব বা শাস্তি থেকে বেঁচে থাকা।


পরিচ্ছেদঃ ৭. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - মৌলিক দু‘আসমূহ

২৪৯৪-[১৩] ’উমার ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ওপর যখন ওহী অবতীর্ণ হতো তাঁর মুখে মৌমাছির গুন্ গুন্ শব্দের মতো আওয়াজ শোনা যেতে। এভাবে একদিন তাঁর ওপর ওহী নাযিল করা হলো। আমরা কিছু সময় তাঁর কাছে অপেক্ষা করলাম। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) স্বাভাবিক হয়ে কিবলার দিকে ফিরলেন এবং হাত উঠিয়ে বললেন,

’’আল্ল-হুম্মা যিদনা- ওয়ালা- তানক্বুসনা- ওয়া আকরিমনা- ওয়ালা- তুহিন্না- ওয়া আ’ত্বিনা- ওয়ালা- তাহ্‌রিম্‌না- ওয়া আ-সির্‌না- ওয়ালা- তু’সির ’আলায়না- ওয়া আর্‌যিনা- ওয়ার্‌যা ’আন্না-’’

(অর্থাৎ- হে আল্লাহ! আমাদের জন্য [তোমার দান] বাড়িয়ে দাও, কম করো না। আমাদেরকে সম্মানিত করো, অপমানিত করো না। আমাদেরকে দান করো, বঞ্চিত করো না। আমাদেরকে ক্ষমতা দাও, কাউকেও আমাদের বিপক্ষে ক্ষমতা দিও না। তুমি আমাদেরকে খুশী করো, আমাদের প্রতিও তুমি খুশী থাকো।)।

অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, এখন আমার ওপর দশটি আয়াত নাযিল হলো, যে ব্যক্তি এ আয়াত বাস্তবায়ন করবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। এরপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তিলাওয়াত করতে লাগলেন, (সূরা মু’মিনূন-এর শুরু হতে) ’’কদ্ আফলাহাল মু’মিনূন’’ (অর্থাৎ- মু’মিনগণ কৃতকার্য হয়েছে)- এভাবে দশটি আয়াত (তিলাওয়াত) শেষ করলেন। (আহমাদ ও তিরমিযী)[1]

وَعَنْ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا أُنْزِلَ عَلَيْهِ الْوَحْيُ سُمِعَ عِنْدَ وَجْهِهِ دوِي كَدَوِيِّ النَّحْل فأنل عَلَيْهِ يَوْمًا فَمَكَثْنَا سَاعَةً فَسُرِّيَ عَنْهُ فَاسْتَقْبَلَ الْقِبْلَةَ وَرَفَعَ يَدَيْهِ وَقَالَ: «اللَّهُمَّ زِدْنَا وَلَا تَنْقُصْنَا وَأَكْرِمْنَا وَلَا تُهِنَّا وَأَعْطِنَا وَلَا تَحْرِمْنَا وَآثِرْنَا وَلَا تُؤْثِرْ عَلَيْنَا وَأَرْضِنَا وَارْضَ عَنَّا» . ثُمَّ قَالَ: «أُنْزِلَ عَلَيَّ عَشْرُ آيَاتٍ مَنْ أَقَامَهُنَّ دَخَلَ الْجَنَّةَ» ثُمَّ قَرَأَ: (قَدْ أَفْلَحَ الْمُؤْمِنُونَ)
حَتَّى خَتَمَ عَشْرَ آيَاتٍ. رَوَاهُ أَحْمَدُ وَالتِّرْمِذِيّ

ব্যাখ্যা: (دَوِىٌّ) ‘‘দাভিয়্যু’’ বলতে মূলত এমন আওয়াজকে বুঝায় যে আওয়াজ বুঝা যায় না। এটা ছিল জিবরীল (আঃ)-এর আওয়াজ। তিনি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট ওহী পৌঁছে দিতেন এবং এমতাবস্থায় রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আশে-পাশে উপস্থিত সাহাবীগণ ঐ আওয়াজের কিছুই বুঝতে পারতেন না।

তুমি আমাদের সম্মানিত করো। এর অর্থ হলো তুমি দুনিয়ায় আমাদের প্রয়োজন পূরণ ও আখিরাতে আমাদের স্থান উচ্চে উঠানোর মাধ্যমে আমাদেরকে সম্মানিত করো।

তুমি আমাদেরকে সন্তুষ্ট করো। অর্থাৎ- আমাদের পক্ষে এবং বিপক্ষে যা নির্ধারণ করেছ তার প্রতি ধৈর্য ধারণ, কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনের শক্তি, আনুগত্য বজায় রাখা ও আমাদের জন্য যা বণ্টন করে দিয়েছ তার প্রতি তুষ্ট হওয়ার মাধ্যমে আমাদেরকে তোমার প্রতি সন্তুষ্ট রাখো।

আমাদের সাধ্য অনুযায়ী যে সামান্য ও তুচ্ছ চেষ্টা ও আনুগত্য করি তার প্রতি তুমি সন্তুষ্ট থাকো এবং আমাদের খারাপ কাজের জন্য আমাদেরকে পাকড়াও করো না।

শেষে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যে ব্যক্তি এ সূরা আল মু’মিনূন-এর প্রথম দশটি আয়াত মুখস্থ করবে এবং এগুলোর বিধিবিধানের উপর স্থায়ীভাবে ‘আমল করবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।


পরিচ্ছেদঃ ৭. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - মৌলিক দু‘আসমূহ

২৪৯৫-[১৪] ’উসমান ইবনু হুনায়ফ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, জনৈক দৃষ্টিহীন ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এসে বললো, হে আল্লাহর রসূল! আমার জন্য আল্লাহর কাছে দু’আ করুন, তিনি যেন আমাকে আরোগ্য (দৃষ্টিশক্তি) দান করেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তুমি চাইলে আমি আল্লাহর কাছে দু’আ করবো। কিন্তু তুমি যদি চাও ধৈর্যধারণ করতে পারো, আর এটাই তোমার জন্য উত্তম হবে। লোকটি বললো, হে আল্লাহর রসূল! আমার জন্য দু’আ করুন। বর্ণনাকারী [’উসমান (রাঃ)] বলেন, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) লোকটিকে উত্তমরূপে উযূ করতে ও এ দু’আ পড়তে বললেন,

’’আল্ল-হুম্মা ইন্নী আস্আলুকা ওয়া আতাওয়াজ্জাহূ ইলায়কা বিনাবিয়্যিকা মুহাম্মাদিন নাবিয়্যির্ রহমতি ইন্নী তাওয়াজ্জাহতু বিকা ইলা- রব্বী লিইয়াকযিয়া লী ফী হা-জাতী হা-যিহী আল্ল-হুম্মা ফাশাফ্‌ফি’হু ফিয়্যা’’

(অর্থাৎ- হে আল্লাহ! তোমার নবী মুহাম্মাদ, যিনি রহমতের নবী। তাঁর ওয়াসীলায় আমি তোমার কাছে প্রার্থনা করছি ও তোমার দিকে ফিরছি। হে নবী! আমি আপনার ওয়াসীলায় আমার রবের দিকে ফিরছি, তিনি যেন আমার এ প্রয়োজন পূরণ করেন। হে আল্লাহ! তুমি আমার জন্যে তাঁর সুপারিশ কবূল করো।)। (তিরমিযী; তিনি বলেন, হাদীসটি হাসান সহীহ গরীব)[1]

عَن عثمانَ بنِ حُنَيفٍ قَالَ: إِنَّ رَجُلًا ضَرِيرَ الْبَصَرِ أَتَى النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: ادْعُ اللَّهَ أَنْ يُعَافِيَنِي فَقَالَ: «إِنْ شِئْتَ دَعَوْتُ وَإِنْ شِئْتَ صَبَرْتَ فَهُوَ خَيْرٌ لَكَ» . قَالَ: فَادْعُهُ قَالَ: فَأَمَرَهُ أَنْ يَتَوَضَّأَ فَيُحْسِنَ الْوُضُوءَ وَيَدْعُو بِهَذَا الدُّعَاءِ: «اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ وَأَتَوَجَّهُ إِلَيْكَ بِنَبِيِّكَ مُحَمَّدٍ نَبِيِّ الرَّحْمَةِ إِنِّي تَوَجَّهْتُ بِكَ إِلَى رَبِّي لِيَقْضِيَ لِي فِي حَاجَتِي هَذِهِ اللهُمَّ فشفّعْه فيَّ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَقَالَ: هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ غَرِيب

ব্যাখ্যা: হাদীসে উল্লিখিত ব্যক্তির চোখের অবস্থা সম্পর্কে বিভিন্ন বর্ণনায় বিভিন্ন অবস্থা দেখতে পাওয়া যায়। নাসায়ী’র বর্ণনায় ‘‘অন্ধ ব্যক্তি’’, মুসনাদে আহমাদণ্ডএর বর্ণনায় ‘‘এমন ব্যক্তি যার চোখের দৃষ্টি চলে গিয়েছে’’, ত্ববারানী ও ইবনুস্ সুন্নীর বর্ণনা মতে ‘‘রোগগ্রস্ত ব্যক্তি’’ এমন অভিধায় ব্যক্তিকে বর্ণনা করা হয়েছে। এ ব্যক্তি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে তার চোখের সমস্যা দূর করার নিমিত্তে আল্লাহর নিকট দু‘আ করার জন্য আবেদন জানালে তিনি তাকে উদ্দেশ্য করে বললেন, তুমি চাইলে দু‘আ করতে পারো কিংবা তুমি চাইলে ধৈর্য ধারণ করতে পারো, আর ধৈর্য ধারণ করাটাই তোমার জন্য উত্তম হবে। দু‘আ না করাটা তার জন্য উত্তম হবে- এমন কথা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এজন্য বললেন যে, অন্য হাদীসে কুদ্সীতে আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,

إذا ابتليت عبدي بحبيبتيه ثم صبر عوضته منهما الجنة

‘‘আমার কোন বান্দাকে যখন তার দু’ চোখ দ্বারা পরীক্ষা করি, অর্থাৎ- অন্ধ করি, অতঃপর সে এ বিপদে ধৈর্য ধারণ করে তাহলে তাকে আমি ঐ দু’ চোখের বিনিময়ে জান্নাত দান করি।’’

তারপর লোকটি ধৈর্য ধারণ না করে তার জন্য দু‘আ করতে বললেন। আহমাদ, ইবনু মাজাহ্ ও হাকিম-এর বর্ণনা মতে, এরপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে উত্তমরূপে উযূ করে দু’ রাক্‘আত নফল সালাত আদায় করে হাদীসে উল্লিখিত দু‘আটি পড়তে বললেন। এ হচ্ছে হাদীসের সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা।

এ হাদীস দ্বারা অনেকে দলীল পেশ করতে চান যে, নাবী, সৎ ব্যক্তি বা মৃত কোন ব্যক্তির সত্তাকে ওয়াসীলাহ্ করে অল্লাহর কাছে কিছু চাওয়া বৈধ। অথচ তাদের এ দাবী সার্বিক বিবেচনায় অসত্য। কারণ নাবী বা সৎ ব্যক্তিগণ জীবিত থাকা অবস্থায় তাদের ওয়াসীলায় দু‘আ করা বৈধ হলেও তাদের মৃত্যুর পর তাদের ওয়াসীলাহ্ ব্যবহার করা বৈধ নয়। যেমন- ‘উমার (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মৃত্যুর পর বৃষ্টির জন্য তাঁর চাচা ‘আব্বাস (রাঃ)-এর ওয়াসীলায় দু‘আ চেয়েছেন; নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ওয়াসীলায় নয়। যদি মৃত ব্যক্তির ওয়াসীলায় দু‘আ করা বৈধ হত তাহলে ‘উমার (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ওয়াসীলায় দু‘আ চাইতেন। তাছাড়া গুহায় আটকে পড়া তিন ব্যক্তি তাদের নিজ নিজ ‘আমলের ওয়াসীলাহ্ করে দু‘আ করে মুক্তি পেয়েছিলেন। তারা অন্য কোন ব্যক্তির বা কারো ‘আমলের ওয়াসীলাহ্ করে দু‘আ করেননি।

উপরোক্ত দু’টি দলীল ছাড়াও আরো দলীল, যুক্তি ও বিশ্লেষণ লেখক মূল গ্রন্থে আলোচনা করেছেন যার সার কথা হলো নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ইন্তিকালের পর তার ওয়াসীলাহ্ ব্যবহার করে দু‘আ করা বৈধ নয়। বিস্তারিত জানতে মূল গ্রন্থ দেখুন।


পরিচ্ছেদঃ ৭. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - মৌলিক দু‘আসমূহ

২৪৯৬-[১৫] আবূ দারদা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ দাঊদ (আঃ)-এর দু’আ ছিল এটা, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলতেন,

’’আল্ল-হুম্মা ইন্নী আস্আলুকা হুব্বাকা ওয়াহুব্বা মান্ ইউহিব্বুকা ওয়াল ’আমলাল্লাযী ইউবাল্লিগুনী হুব্বাকা, আল্ল-হুম্মাজ্’আল হুব্বাকা আহাব্বা ইলাইয়্যা মিন্ নাফসী ওয়ামা- লী ওয়া আহলী ওয়ামিনাল মা-য়িল বা-রিদ’’

(অর্থাৎ- হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে তোমার ভালোবাসা প্রত্যাশা করি, আর যে তোমাকে ভালোবাসে, তার ভালোবাসা চাই এবং আমি ঐ কাজের শক্তি চাই, যে শক্তি আমাকে তোমার ভালোবাসার দিকে নিয়ে যাবে। হে আল্লাহ! তোমার ভালোবাসাকে আমার কাছে আমার জীবন, আমার ধন-সম্পদ, আমার পরিবার-পরিজন ও ঠাণ্ডা পানির চেয়েও বেশি পছন্দনীয় করে তোলো।)

বর্ণনাকারী [আবূ দারদা (রাঃ)] বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন দাঊদ (আঃ)-কে স্মরণ করতেন, তাঁর ঘটনা বর্ণনা করতেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলতেন, দাঊদ (আঃ) তাঁর যুগের সর্বাধিক ’ইবাদাতগুজার ছিলেন। (তিরমিযী; তিনি বলেন, হাদীসটি হাসান গরীব)[1]

وَعَنْ أَبِي الدَّرْدَاءِ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ مِنْ دُعَاءِ دَاوُدَ يَقُولُ: «اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ حُبَّكَ وَحُبَّ مَنْ يُحِبُّكَ وَالْعَمَلَ الَّذِي يُبَلِّغُنِي حُبَّكَ اللَّهُمَّ اجْعَلْ حُبَّكَ أَحَبَّ إِلَيَّ مِنْ نَفْسِي وَمَالِي وَأَهْلِي وَمِنَ الْمَاءِ الْبَارِدِ» . قَالَ: وَكَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا ذَكَرَ دَاوُدَ يُحَدِّثُ عَنْهُ يَقُولُ: «كَانَ أَعْبَدَ الْبَشَرِ» رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَقَالَ: هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ غَرِيبٌ

ব্যাখ্যা: ইমাম ত্বীবী (রহঃ) বলেন, দাঊদ (আঃ) তার সমসাময়িক যুগের মানুষদের মধ্যে সর্বাধিক ‘ইবাদাতকারী ব্যক্তি ছিলেন। তবে কারী বলেন, তিনি শুধু তার যুগেরই নন বরং সকল যুগের সর্বাধিক ‘ইবাদাতকারী ব্যক্তি ছিলেন। তবে কারো কারো মতে, তিনি সর্বাধিক কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনকারী ব্যক্তি ছিলেন।

যেমন- আল্লাহ তা‘আলা বলেন, اعْمَلُوا آلَ دَاوُوْدَ شُكْرًا

‘‘হে দাঊদ পরিবার! কৃতজ্ঞতার সঙ্গে তোমরা কাজ করতে থাকো’’- (সূরা সাবা ৩৪ : ১৩)। অর্থাৎ- আমার কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনে চূড়ান্ত স্তরে পৌঁছ এবং এ ক্ষেত্রে তোমার সর্বাত্মক চেষ্টা অব্যাহত রাখো।


পরিচ্ছেদঃ ৭. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - মৌলিক দু‘আসমূহ

২৪৯৭-[১৬] ’আত্বা ইবনুস্ সায়িব (রহঃ) তার পিতা সায়িব হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, একদিন সাহাবী ’আম্মার ইবনু ইয়াসির আমাদেরকে এক সালাত আদায় করালেন। এতে তিনি (সূরা-কিরাআত) সংক্ষেপ করলেন। তখন সালাত আদায়কারীদের মধ্যে একজন বলে উঠলো, আপনি এত তাড়াতাড়ি সালাত আদায় করালেন ও সংক্ষেপ করলেন। তিনি বললেন, এতে আমার অসুবিধা হবে না। কেননা এতে আমি যেসব দু’আ পড়েছি তা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে শুনেছি। অতঃপর জনৈক ব্যক্তি তার অনুকরণ করলো। ’আত্বা বলেন, তিনি হলেন আমারই পিতা সায়িব, তবে তিনি নিজের নাম প্রকাশ না করে ইশারায় বললেন। তিনি ’আম্মারকে দু’আটির বিষয়ে জিজ্ঞেস করলেন এবং পরে এসে লোকদেরকে তা জানালেন। দু’আটি হলো,

’’আল্ল-হুম্মা বি’ইলমিকাল গয়বা ওয়া ক্বুদরতিকা ’আলাল খলকি আহয়িনী মা- ’আলিমতাল হায়া-তা খয়রল লী, আল্ল-হুম্মা ওয়া আস্আলুকা খশ্ইয়াতাকা ফিল গয়বি ওয়াশ্ শাহা-দাতি ওয়া আস্আলুকা কালিমাতাল হাক্কি ফিররিযা- ওয়াল গযাবি ওয়া আস্আলুকাল কসদা ফিল ফাকরি ওয়াল গিনা- ওয়া আস্আলুকা না’ঈমাল লা- ইয়ানফাদু ওয়া আস্আলুকা ক্বুররতা ’আয়নিল লা- তানক্বত্বি’উ ওয়া আস্আলুকার্ রিযা- বা’দাল কযা-য়ি ওয়া আস্আলুকা বার্‌দাল ’আয়শি বা’দাল মাওতি ওয়া আস্আলুকা লায্যাতান্ নাযারি ইলা- ওয়াজহিকা ওয়াশ্ শাওকা ইলা- লিকা-য়িকা ফী গয়রি যররা-আ মুযির্‌রতিন ওয়ালা- ফিত্‌নাতিন মুযিল্লাতিন, আল্ল-হুম্মা যায়ইয়ানা- বিযীনাতিল ঈমা-নি ওয়াজ্’আলনা- হুদা-তান মাহদীয়্যিন’’

(অর্থাৎ- হে আল্লাহ! আমি তোমার গায়বের ’ইলম ও সৃষ্টির উপর তোমার ক্ষমতা রাখার দোহাই দিয়ে বলছি, তুমি আমাকে ততদিন জীবিত রাখবে, যতদিন আমার জীবন আমার জন্য কল্যাণকর বলে মনে করবে। আর আমাকে মৃত্যুদান করবে, যখন তুমি মৃত্যুকে আমার জন্য কল্যাণকর বলে মনে করবে। হে আল্লাহ! আমি গোপনে ও প্রকাশ্যে যেন তোমাকে ভয় করি, তোমার কাছে সন্তুষ্ট ও অসন্তুষ্ট অবস্থায় সত্য বলার সাহস চাই। হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে স্বচ্ছলতা ও অভাবে মধ্যপন্থা অবলম্বনের তাওফীক চাই। তোমার নিকট চাই এমন নিয়ামত যা কক্ষনো নিঃশেষ হবে না। আমি তোমার কাছে আরো চাই চোখ জুড়াবার বিষয়, যা কক্ষনো বন্ধ হবে না। হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে তোমার হুকুমের উপর পরিতুষ্ট থাকতে চাই। তোমার কাছে চাই মৃত্যুর পরের উত্তম জীবন। হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে (জান্নাতে) তোমার প্রতি দৃষ্টি দেবার স্বাদ গ্রহণ করতে চাই এবং ক্ষতিকর কষ্ট ও পথভ্রষ্টকারীর ফাসাদে পড়া ছাড়া তোমার সাক্ষাতের আশা-আকাঙ্খা করি। হে আল্লাহ! আমাদেরকে ঈমানের বলে বলীয়ান করো আর হিদায়াতপ্রাপ্ত ও হিদায়াত প্রদর্শনকারী করো।)। (নাসায়ী)[1]

وَعَنْ عَطَاءِ بْنِ السَّائِبِ عَنْ أَبِيهِ قَالَ: صَلَّى بِنَا عَمَّارُ بْنُ يَاسِرٍ صَلَاةً فَأَوْجَزَ فِيهَا فَقَالَ لَهُ بَعْضُ الْقَوْمِ: لَقَدْ خَفَّفْتَ وَأَوْجَزْتَ الصَّلَاةَ فَقَالَ أَمَا عَلَيَّ ذَلِكَ لَقَدْ دَعَوْتُ فِيهَا بِدَعَوَاتٍ سَمِعْتُهُنَّ مِنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَلَمَّا قَامَ تَبِعَهُ رَجُلٌ مِنَ الْقَوْمِ هُوَ أَبِي غَيْرَ أَنَّهُ كَنَّى عَنْ نَفْسِهِ فَسَأَلَهُ عَنِ الدُّعَاءِ ثُمَّ جَاءَ فَأَخْبَرَ بِهِ الْقَوْمَ: «اللَّهُمَّ بِعِلْمِكَ الْغَيْبَ وقُدرتِكَ على الخَلقِ أَحْيني مَا عَلِمْتَ الْحَيَاةَ خَيْرًا لِي وَتَوَفَّنِي إِذَا عَلِمْتَ الْوَفَاةَ خَيْرًا لِي اللَّهُمَّ وَأَسْأَلُكَ خَشْيَتَكَ فِي الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ وَأَسْأَلُكَ كَلِمَةَ الْحَقِّ فِي الرِّضَى وَالْغَضَبِ وَأَسْأَلُكَ الْقَصْدَ فِي الْفَقْرِ وَالْغِنَى وَأَسْأَلُكَ نَعِيمًا لَا يَنْفَدُ وَأَسْأَلُكَ قُرَّةَ عَيْنٍ لَا تَنْقَطِعُ وَأَسْأَلُكَ الرِّضَى بَعْدَ الْقَضَاءِ وَأَسْأَلُكَ بَرْدَ الْعَيْشِ بَعْدَ الْمَوْتِ وَأَسْأَلُكَ لَذَّةَ النَّظَرِ إِلَى وَجْهِكَ وَالشَّوْقِ إِلَى لِقَائِكَ فِي غَيْرِ ضَرَّاءَ مُضِرَّةٍ وَلَا فِتْنَةٍ مُضِلَّةٍ اللَّهُمَّ زِيِّنَا بِزِينَةِ الْإِيمَانِ وَاجْعَلْنَا هُدَاةً مَهْدِيِّينَ» . رَوَاهُ النَّسَائِيُّ

ব্যাখ্যা: এ হাদীসে উল্লিখিত দু‘আর মধ্যে আল্লাহর বেশ কিছু গুণের কথা উল্লেখ রয়েছে। যার ওয়াসীলায় দু‘আ করা হয়েছে। তাই এ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, আল্লাহর গুণাবলী দ্বারা তাঁর নিকট ওয়াসীলা করে দু‘আ করা বৈধ।

হাদীসের উল্লিখিত দু‘আয় যে চোখ জুড়াবার বিষয় কামনা করা হয়েছে এর দ্বারা কী বুঝানো হয়েছে তা নিয়ে একাধিক মত রয়েছে। কারো মতে এখানে সন্তানাদির কথা বুঝানো হয়েছে, যার প্রসঙ্গ কুরআনের এ দু‘আয় বর্ণিত হয়েছে, ‘‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের জন্য এমন স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততি দান করো যারা হবে আমাদের জন্য নয়নপ্রীতিকর।’’ (সূরা আল ফুরকা-ন ২৫ : ৭৪)

কারো মতে এর দ্বারা নিয়মিত সালাত আদায় করা ও তা সংরক্ষণ করাকে বলা হয়েছে। যেমনটি হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, وجعلت قرة عيني في الصلاة ‘‘এবং সালাতে আমার চোখ জুড়াবার ব্যবস্থা করা হয়েছে।’’ কারো মতে এর দ্বারা জান্নাতের নিয়ামত বুঝানো হয়েছে যা কখনো শেষ হবে না। কারো মতে এর দ্বারা সর্বদা আল্লাহর জিকির করা, তাকে পূর্ণভাবে ভালোবাসা বুঝানো হচ্ছে।

এ দু‘আয় পরকালে আল্লাহকে দেখার কামনা করার দ্বারা প্রমাণ হয় যে, আখিরাতে নির্বাচিত কিছু মানুষ আল্লাহকে দেখতে পারবে। আর এটাই আহলুস্ সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের ‘আক্বীদাহ্।


পরিচ্ছেদঃ ৭. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - মৌলিক দু‘আসমূহ

২৪৯৮-[১৭] উম্মু সালামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের সালাত আদায় করে বলতেন,

’’আল্ল-হুম্মা ইন্নী আস্আলুকা ’ইলমান না-ফি’আন ওয়া ’আমলান মুতাকব্বালান ওয়া রিযকন ত্বইয়্যিবা-’’

(অর্থাৎ- হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে উপকারী জ্ঞান, কবূলযোগ্য ’আমল ও হালাল রিযক চাই)। (আহমাদ, ইবনু মাজাহ ও বায়হাক্বী- দা’ওয়াতুল কাবীর)[1]

وَعَنْ أُمِّ سَلَمَةَ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يَقُولُ فِي دُبُرِ صَلَاةِ الْفَجْرِ: «اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ عِلْمًا نَافِعًا وَعَمَلًا مُتَقَبَّلًا وَرِزْقًا طَيِّبًا» . رَوَاهُ أَحْمَدُ وَابْنُ مَاجَهْ وَالْبَيْهَقِيّ فِي الدَّعوات الْكَبِير

ব্যাখ্যা: নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের সালাতের সালাম ফিরানোর পরে এ দু‘আ করতেন যে, হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট উপকারী জ্ঞান; যে জ্ঞান অনুযায়ী করা ‘আমল আখিরাতে আমার পক্ষে দলীল হবে; বিপক্ষে নয়, এমন জ্ঞান কামনা করছি এবং এমন ‘আমল করার শক্তি চাচ্ছি যে, ‘আমল ইখলাসপূর্ণ হবে এবং তোমার নিকট গ্রহণযোগ্য হবে এবং হালাল রিযক চাই, যে রিযক শক্তি যোগাবে এবং তোমার আনুগত্যমূলক কাজে সহায়ক হবে।

ইমাম শাওকানী (রহঃ) বলেনঃ জ্ঞানকে উপকারের সাথে, রিযককে হালাল হওয়ার সাথে এবং ‘আমলকে মাকবূল হওয়ার সাথে শর্তযুক্ত করা হয়েছে এজন্য যে, যে জ্ঞান উপকারে আসে না সে জ্ঞান আখিরাতের কোন কাজে আসবে না। কখনো কখনো এ অনুপকারী জ্ঞান দুর্ভাগ্যের কারণ হয়। এজন্যই নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অনুপকারী জ্ঞান থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় চেয়েছেন। আর প্রত্যেক হালাল নয় এমন রিযক শাস্তির মুখোমুখি করবে এবং আল্লাহর নিকট মাকবূল নয় এমন ‘আমল করে শুধু আত্মাকেই কষ্ট দেয়া হয়, শেষ পর্যন্ত তা উপকারে আসে না।

এ হাদীস দ্বারা স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো যে, ফরয সালাতের সালামের পরে দু‘আ করা শারী‘আহ্ সম্মত।


পরিচ্ছেদঃ ৭. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - মৌলিক দু‘আসমূহ

২৪৯৯-[১৮] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে একটি দু’আ মুখস্থ করেছি, যা আমি কক্ষনো পরিত্যাগ করি না- (দু’আটি হলো) ’’আল্ল-হুম্মাজ্’আলনী উ’যিমু শুক্‌রাকা ওয়া উকসিরু যিক্‌রাকা ওয়া আত্তাবি’উ নুস্‌হাকা ওয়া আহফাযু ওয়াসিয়্যাতাকা’’ (অর্থাৎ- হে আল্লাহ! তুমি আমাকে এমন তাওফীক দাও, যাতে আমি তোমার শুকর-গুজার হতে পারি, বেশি বেশি তোমার জিকির [স্মরণ] করতে পারি, তোমার নাসীহাত [উপদেশ] পালন করতে পারি এবং তোমার হুকুম রক্ষা করতে পারি।)। (তিরমিযী)[1]

وَعَن أبي هريرةَ قَالَ: دُعَاءٌ حَفِظْتُهُ مِنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَا أَدَعُهُ: «اللَّهُمَّ اجْعَلْنِي أُعْظِمُ شُكْرَكَ وَأُكْثِرُ ذِكْرَكَ وَأَتَّبِعُ نُصْحَكَ وَأَحْفَظُ وصيتك» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ

ব্যাখ্যা: হে আল্লাহ! তোমার কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনের কারণে আমাকে মহান করো। অর্থাৎ- বেশি বেশি তোমার কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনের এবং সর্বদা তোমাকে স্মরণে রাখার তাওফীক দান করো। তোমার প্রদত্ত অগণিত নিয়ামতের কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনকারীর উপর যেসব কাজ করা আবশ্যক সেসব কাজ যথাযথভাবে সম্পন্ন করার তাওফীক দাও।

তোমার নাসীহাতের অনুসরণ করার তাওফীক দাও। অর্থাৎ- তোমার সন্তুষ্টির নিকটবর্তী করে দেয় এমন কাজ যথাযথভাবে করা এবং তোমার অসন্তোষ সৃষ্টি করে এমন সবকিছু থেকে দূরে থাকার তাওফীক দাও। নাসীহাত বলতে মূলত আন্তরিকতা ও বিশুদ্ধতা এবং কারো জন্য কল্যাণ কামনা করাকে বুঝায়।

তোমার ওয়াসিয়্যাতসমূহ সংরক্ষণ তথা আদেশসমূহ প্রতিপালন ও নিষেধাজ্ঞাসমূহ বর্জন যেন আমি করতে পারি সে তাওফীক দাও।

তাছাড়া নিমেণাক্ত আয়াতে যা বলা হয়ে তা পালনের তাওফীক দাও। মহান আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

وَلَقَدْ وَصَّيْنَا الَّذِيْنَ أُوْتُوا الْكِتَابَ مِنْ قَبْلِكُمْ وَإِيَّاكُمْ أَنِ اتَّقُوا اللهِ

‘‘তোমাদের পূর্বে যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে তাদেরকে এবং তোমাদেরকেও নির্দেশ দিয়েছি যে, তোমরা আল্লাহকে ভয় করবে।’’ (সূরা আন্ নিসা ৪ : ১৩১)

পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সকল মানুষের জন্য একটিই ওয়াসিয়্যাত। আর তা হলো তাকওয়া অথবা সকল সময়ে সকল কাজ-কর্মে আল্লাহর নিকট সম্পূর্ণ আত্মসমর্পণ করা এবং তার বণ্টন ব্যবস্থার (তাকদীরের) উপর সন্তুষ্ট থাকা।

ইমাম ত্বীবী বলেন, নাসীহাত হলো কারো জন্য কল্যাণ কামনা করা। এর দ্বারা বান্দার হককে বুঝানো হচ্ছে। অপরদিকে ওয়াসিয়্যাত দ্বারা আল্লাহর হাক্বের অন্তর্ভুক্ত আদেশ পালন এবং নিষেধ বর্জন করাকে বুঝায়। আল্লাহ তা‘আলাই সর্বাধিক জ্ঞাত।


পরিচ্ছেদঃ ৭. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - মৌলিক দু‘আসমূহ

২৫০০-[১৯] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (দু’আয়) বলতেন,

’’আল্ল-হুম্মা ইন্নী আস্আলুকাস্ সিহহাতা ওয়াল ’ইফফাতা ওয়াল আমা-নাতা ওয়া হুস্‌নাল খুলুকি ওয়ার্ রিযা- বিল কদার’’

(অর্থাৎ- হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে সুস্বাস্থ্য, পবিত্রতা, আমানাতদারী, উত্তম চরিত্র এবং তাকদীরের উপর সন্তুষ্ট থাকার তাওফীক কামনা করছি)।[1]

وَعَن عبدِ الله بنِ عَمْروٍ قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ الصِّحَّةَ وَالْعِفَّةَ والأمانةَ وحُسنَ الْخلق والرضى بِالْقدرِ»

ব্যাখ্যা: হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট সকল রোগ-ব্যাধি থেকে শারীরিক সুস্থতা চাই অথবা সর্বাবস্থায় সুস্থ থাকা, সঠিক কথা বলা এবং সঠিক কাজ করার তাওফীক চাই।

অত্র হাদীসে সংযম অর্থ হচ্ছে অবৈধ সকল কিছু পরিত্যাগ করা ও তা থেকে বিরত থাকা। মানাবী বলেন, এখানে সকল হারাম ও মাকরূহ এবং মুরুয়াহ্’র (শিষ্টাচারিতা বা আমানাতদারিতার) ঘাটতি তৈরি করে এমন সকল বস্ত্ত ও বিষয় থেকে সংযম চাই।

এখানে (الأمانةَ) ‘‘আমা-নাহ্’’ বলতে ব্যক্তির কাছে থাকা আল্লাহ ও জনগণ; উভয়ের আমানাত সংরক্ষণের কথা বুঝানো হয়েছে।

(حُسنَ الْخلق) ‘‘হুসনুল খুলক্ব’’ বা সচ্চরিত্র বলতে সৃষ্টির সাথে সহৃদয় আচরণ ও তাদের দেয়া কষ্টে ধৈর্যধারণ করা। কারী বলেন, এর উদ্দেশ্য হলো, মুসলিমদের সাথে সদাচরণ করা। আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত ভাগ্যের প্রতি সন্তুষ্ট না থাকলে বান্দা ‘ইবাদাত করার সময়ে মনোযোগী হতে পারবে না। কারণ ‘ইবাদাতের সময় তার মাথায় বারবার চিন্তা আসবে যে, এটি কেন সে পেল না? ঐ কাজটি কেন এমন হলো? ইত্যাদি। তাই সে যদি তার পাওয়া না পাওয়া আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত- এমন বিশ্বাস রাখে এবং তার প্রতি সন্তুষ্ট থাকে তাহলে সে ‘ইবাদাতে মশগুল থাকতে পারবে।


দেখানো হচ্ছেঃ ২৪৮১ থেকে ২৫০০ পর্যন্ত, সর্বমোট ৬২৯১ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে পাতা নাম্বারঃ « আগের পাতা 1 2 3 4 · · · 122 123 124 125 126 · · · 312 313 314 315 পরের পাতা »