হাদিসটি ইমেইলে পাঠাতে অনুগ্রহ করে নিচের ফর্মটি পুরন করুন
security code
২৪৮৭

পরিচ্ছেদঃ ৭. প্রথম অনুচ্ছেদ - মৌলিক দু‘আসমূহ

২৪৮৭-[৬] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অধিকাংশ সময়ই এ দু’আ করতেন, ’’আল্ল-হুম্মা আ-তিনা- ফিদ্দুন্ইয়া- হাসানাতাওঁ ওয়াফিল আ-খিরাতি হাসানাতাওঁ ওয়াকিনা- ’আযা-বান্না-র’’ (অর্থাৎ- হে আল্লাহ! আমাদেরকে দুনিয়ায় এবং আখিরাতে কল্যাণ দান করো। আর জাহান্নামের ’আযাব [শাস্তি] হতে বাঁচাও)। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

بَابُ جَامِعِ الدُّعَاءِ

وَعَن أنسٍ قَالَ: كَانَ أَكْثَرُ دُعَاءِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ «اللَّهُمَّ آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الْآخِرَةِ حَسَنَةً وقنا عَذَاب النَّار»

ব্যাখ্যা: নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ দু‘আটি এজন্যে সবচেয়ে বেশি পড়তেন যে, এ দু‘আটি ব্যাপক অর্থবোধক ও কুরআন থেকে চয়নকৃত। দু‘আটির শুরু বিভিন্ন বর্ণনায় বিভিন্ন শব্দে এসেছে। কোথাও ‘‘আল্ল-হুম্মা আ-তিনা-’’, কোথাও ‘‘আল্ল-হুম্মা রব্বানা- আ-তিনা-’’, কোথাও ‘‘রব্বানা- আ-তিনা-’’ শব্দে এসেছে। সবগুলো বর্ণনাই সহীহ।

অত্র হাদীসে মৃত্যুর পূর্বে দুনিয়ায় হাসানাহ্ বলতে এবং মৃত্যুর পরে আখিরাতে হাসানাহ্ বলতে কী বুঝানো হয়েছে তা নিয়ে মুফাসসির ও ‘আলিমগণের বিভিন্ন মত পাওয়া যায়। নিম্নে মতসমূহ সংক্ষেপে উল্লেখ করা হলোঃ কারো মতে, দুনিয়ায় হাসানাহ্ বলতে দুনিয়ায় ব্যক্তির ইচ্ছা ও স্বভাব অনুযায়ী জীবনোপকরণ, স্বচ্ছলতা, সুস্থতা, সুন্দরী মহিলা; এছাড়াও তার মন হালাল যা চায় ও তার চোখ হালাল যা কিছুর স্বাদ নিতে চায় তা। আর আখিরাতে হাসানাহ্ বলতে ঐসব কিছুকে বুঝানো হচ্ছে যা কোন মাধ্যমে বা মাধ্যম ছাড়াই ব্যক্তি পাবে তা। কারো মতে দুনিয়ায় হাসানাহ্ বলতে নেক্কার স্ত্রী ও আখিরাতে হাসানাহ বলতে জান্নাতী হূর এবং জাহান্নামের আগুনের ‘আযাব বলতে খারাপ নারীকে বুঝানো হয়েছে।

হাসান বাসরী (রহঃ)-এর মতে, দুনিয়াতে হাসানাহ্ বলতে উপকারী জ্ঞান, ‘ইবাদাত, পবিত্র রিযক এবং আখিরাতে হাসানাহ্ বলতে জান্নাত বুঝানো হয়েছে। কাতাদাহ্’র মতে, এর দ্বারা দুনিয়া ও আখিরাতে সুস্থতা ও নিরাপত্তা বুঝানো হয়েছে।

সুদ্দী ও মুকাতিল-এর মতে, দুনিয়ার হাসানাহ্ দ্বারা প্রশস্ত হালাল রিযক (জীবিকা), সৎ ‘আমল এবং আখিরাতের হাসানাহ্ দ্বারা ক্ষমা ও সাওয়াব উদ্দেশ্য। ‘আত্বিয়্যাহ্-এর মতে আখিরাতের হাসানাহ দ্বারা হিসাব সহজকরণ ও জান্নাতে প্রবেশকে বুঝানো হয়েছে। কারো মতে দুনিয়ার হাসানাহ্ হলো, সুস্থতা, ন্যূনতম প্রয়োজন মেটানো ও চারিত্রিক নিষ্কলুষতা এবং আখিরাতের হাসানাহ্ হলো পরকালে আল্লাহর নিকট থেকে সাওয়াব ও রহমাতপ্রাপ্তি।

হাফেয ইবনু কাসীর (রহঃ) তাঁর তাফসীরে বলেন, এ দু‘আটির মধ্যে দুনিয়ার সকল কল্যাণকেও একত্র করা হয়েছে এবং সকল মন্দকে দূর করা হয়েছে। এখানে ‘দুনিয়ার হাসানাহ্’ শব্দ ঐ সবকিছুকেই শামিল করে যা দুনিয়ার কাঙ্ক্ষিত বিষয় ও বস্ত্ত। যেমন- সুস্থতা বা সুস্বাস্থ্য, প্রশস্ত ঘর, সুন্দরী স্ত্রী, সৎকর্মশীল সন্তান, প্রশস্ত রিযক, উপকারী জ্ঞান, সৎ ‘আমল, হালকা বাহন, উত্তম প্রশংসা ইত্যাদি। এর কোনটিই দুনিয়ার হাসানার বাইরে নয়। অপরদিকে আখিরাতের হাসানাহ্ বলতে যা বুঝাচ্ছে তার সর্বোচ্চ হচ্ছে জান্নাতে প্রবেশের সুযোগ। এছাড়াও যা বুঝাচ্ছে তা হলো, খোলা মাঠে সর্বাধিক ভীতিপ্রদ চিৎকার থেকে নিরাপদ থাকা, হিসাব সহজ করা এবং আখিরাতের উত্তম কর্মসমূহ ও জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি। জাহান্নামের আযাব থেকে রক্ষার অর্থ হলো তা থেকে রক্ষাকারী কাজ। যেমন- হারাম ও গুনাহের কাজ থেকে দূরে থাকা এবং হারাম ও সন্দেহপূর্ণ বিষয়াবলী বর্জন করা।

ইমাম কুরতুবী বলেন, বেশিরভাগ ‘আলিমের মতে দুনিয়া ও আখিরাতের হাসানাহ্ বলতে এ দু’ স্থানের নিয়ামতসমূহ বুঝানো হচ্ছে। উল্লেখ্য যে, ‘আল্লামা কারী (রহঃ) বলেন, সম্ভবত নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এজন্য এ দু‘আটি সর্বাধিক পড়তেন যে, এটি ছিল একটি ব্যাপক দু‘আ; যা দুনিয়া ও আখিরাতের সকল কল্যাণকে শামিল করেছে। আর দু‘আর শেষাংশে জাহান্নামের আগুন থেকে আশ্রয় চাওয়ার দু‘আ করা হয়েছে যার অর্থ হচ্ছে হে আল্লাহ! তুমি আমাদেরকে ঐ আগুন থেকে রক্ষা করো এবং যেসব বিষয় আগুনের নিকটবর্তী করে তা থেকেও আমাদের রক্ষা করো।