২৪৯৭

পরিচ্ছেদঃ ৭. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - মৌলিক দু‘আসমূহ

২৪৯৭-[১৬] ’আত্বা ইবনুস্ সায়িব (রহঃ) তার পিতা সায়িব হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, একদিন সাহাবী ’আম্মার ইবনু ইয়াসির আমাদেরকে এক সালাত আদায় করালেন। এতে তিনি (সূরা-কিরাআত) সংক্ষেপ করলেন। তখন সালাত আদায়কারীদের মধ্যে একজন বলে উঠলো, আপনি এত তাড়াতাড়ি সালাত আদায় করালেন ও সংক্ষেপ করলেন। তিনি বললেন, এতে আমার অসুবিধা হবে না। কেননা এতে আমি যেসব দু’আ পড়েছি তা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে শুনেছি। অতঃপর জনৈক ব্যক্তি তার অনুকরণ করলো। ’আত্বা বলেন, তিনি হলেন আমারই পিতা সায়িব, তবে তিনি নিজের নাম প্রকাশ না করে ইশারায় বললেন। তিনি ’আম্মারকে দু’আটির বিষয়ে জিজ্ঞেস করলেন এবং পরে এসে লোকদেরকে তা জানালেন। দু’আটি হলো,

’’আল্ল-হুম্মা বি’ইলমিকাল গয়বা ওয়া ক্বুদরতিকা ’আলাল খলকি আহয়িনী মা- ’আলিমতাল হায়া-তা খয়রল লী, আল্ল-হুম্মা ওয়া আস্আলুকা খশ্ইয়াতাকা ফিল গয়বি ওয়াশ্ শাহা-দাতি ওয়া আস্আলুকা কালিমাতাল হাক্কি ফিররিযা- ওয়াল গযাবি ওয়া আস্আলুকাল কসদা ফিল ফাকরি ওয়াল গিনা- ওয়া আস্আলুকা না’ঈমাল লা- ইয়ানফাদু ওয়া আস্আলুকা ক্বুররতা ’আয়নিল লা- তানক্বত্বি’উ ওয়া আস্আলুকার্ রিযা- বা’দাল কযা-য়ি ওয়া আস্আলুকা বার্‌দাল ’আয়শি বা’দাল মাওতি ওয়া আস্আলুকা লায্যাতান্ নাযারি ইলা- ওয়াজহিকা ওয়াশ্ শাওকা ইলা- লিকা-য়িকা ফী গয়রি যররা-আ মুযির্‌রতিন ওয়ালা- ফিত্‌নাতিন মুযিল্লাতিন, আল্ল-হুম্মা যায়ইয়ানা- বিযীনাতিল ঈমা-নি ওয়াজ্’আলনা- হুদা-তান মাহদীয়্যিন’’

(অর্থাৎ- হে আল্লাহ! আমি তোমার গায়বের ’ইলম ও সৃষ্টির উপর তোমার ক্ষমতা রাখার দোহাই দিয়ে বলছি, তুমি আমাকে ততদিন জীবিত রাখবে, যতদিন আমার জীবন আমার জন্য কল্যাণকর বলে মনে করবে। আর আমাকে মৃত্যুদান করবে, যখন তুমি মৃত্যুকে আমার জন্য কল্যাণকর বলে মনে করবে। হে আল্লাহ! আমি গোপনে ও প্রকাশ্যে যেন তোমাকে ভয় করি, তোমার কাছে সন্তুষ্ট ও অসন্তুষ্ট অবস্থায় সত্য বলার সাহস চাই। হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে স্বচ্ছলতা ও অভাবে মধ্যপন্থা অবলম্বনের তাওফীক চাই। তোমার নিকট চাই এমন নিয়ামত যা কক্ষনো নিঃশেষ হবে না। আমি তোমার কাছে আরো চাই চোখ জুড়াবার বিষয়, যা কক্ষনো বন্ধ হবে না। হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে তোমার হুকুমের উপর পরিতুষ্ট থাকতে চাই। তোমার কাছে চাই মৃত্যুর পরের উত্তম জীবন। হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে (জান্নাতে) তোমার প্রতি দৃষ্টি দেবার স্বাদ গ্রহণ করতে চাই এবং ক্ষতিকর কষ্ট ও পথভ্রষ্টকারীর ফাসাদে পড়া ছাড়া তোমার সাক্ষাতের আশা-আকাঙ্খা করি। হে আল্লাহ! আমাদেরকে ঈমানের বলে বলীয়ান করো আর হিদায়াতপ্রাপ্ত ও হিদায়াত প্রদর্শনকারী করো।)। (নাসায়ী)[1]

وَعَنْ عَطَاءِ بْنِ السَّائِبِ عَنْ أَبِيهِ قَالَ: صَلَّى بِنَا عَمَّارُ بْنُ يَاسِرٍ صَلَاةً فَأَوْجَزَ فِيهَا فَقَالَ لَهُ بَعْضُ الْقَوْمِ: لَقَدْ خَفَّفْتَ وَأَوْجَزْتَ الصَّلَاةَ فَقَالَ أَمَا عَلَيَّ ذَلِكَ لَقَدْ دَعَوْتُ فِيهَا بِدَعَوَاتٍ سَمِعْتُهُنَّ مِنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَلَمَّا قَامَ تَبِعَهُ رَجُلٌ مِنَ الْقَوْمِ هُوَ أَبِي غَيْرَ أَنَّهُ كَنَّى عَنْ نَفْسِهِ فَسَأَلَهُ عَنِ الدُّعَاءِ ثُمَّ جَاءَ فَأَخْبَرَ بِهِ الْقَوْمَ: «اللَّهُمَّ بِعِلْمِكَ الْغَيْبَ وقُدرتِكَ على الخَلقِ أَحْيني مَا عَلِمْتَ الْحَيَاةَ خَيْرًا لِي وَتَوَفَّنِي إِذَا عَلِمْتَ الْوَفَاةَ خَيْرًا لِي اللَّهُمَّ وَأَسْأَلُكَ خَشْيَتَكَ فِي الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ وَأَسْأَلُكَ كَلِمَةَ الْحَقِّ فِي الرِّضَى وَالْغَضَبِ وَأَسْأَلُكَ الْقَصْدَ فِي الْفَقْرِ وَالْغِنَى وَأَسْأَلُكَ نَعِيمًا لَا يَنْفَدُ وَأَسْأَلُكَ قُرَّةَ عَيْنٍ لَا تَنْقَطِعُ وَأَسْأَلُكَ الرِّضَى بَعْدَ الْقَضَاءِ وَأَسْأَلُكَ بَرْدَ الْعَيْشِ بَعْدَ الْمَوْتِ وَأَسْأَلُكَ لَذَّةَ النَّظَرِ إِلَى وَجْهِكَ وَالشَّوْقِ إِلَى لِقَائِكَ فِي غَيْرِ ضَرَّاءَ مُضِرَّةٍ وَلَا فِتْنَةٍ مُضِلَّةٍ اللَّهُمَّ زِيِّنَا بِزِينَةِ الْإِيمَانِ وَاجْعَلْنَا هُدَاةً مَهْدِيِّينَ» . رَوَاهُ النَّسَائِيُّ

وعن عطاء بن الساىب عن ابيه قال صلى بنا عمار بن ياسر صلاة فاوجز فيها فقال له بعض القوم لقد خففت واوجزت الصلاة فقال اما علي ذلك لقد دعوت فيها بدعوات سمعتهن من رسول الله صلى الله عليه وسلم فلما قام تبعه رجل من القوم هو ابي غير انه كنى عن نفسه فساله عن الدعاء ثم جاء فاخبر به القوم اللهم بعلمك الغيب وقدرتك على الخلق احيني ما علمت الحياة خيرا لي وتوفني اذا علمت الوفاة خيرا لي اللهم واسالك خشيتك في الغيب والشهادة واسالك كلمة الحق في الرضى والغضب واسالك القصد في الفقر والغنى واسالك نعيما لا ينفد واسالك قرة عين لا تنقطع واسالك الرضى بعد القضاء واسالك برد العيش بعد الموت واسالك لذة النظر الى وجهك والشوق الى لقاىك في غير ضراء مضرة ولا فتنة مضلة اللهم زينا بزينة الايمان واجعلنا هداة مهديين رواه النساىي

ব্যাখ্যা: এ হাদীসে উল্লিখিত দু‘আর মধ্যে আল্লাহর বেশ কিছু গুণের কথা উল্লেখ রয়েছে। যার ওয়াসীলায় দু‘আ করা হয়েছে। তাই এ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, আল্লাহর গুণাবলী দ্বারা তাঁর নিকট ওয়াসীলা করে দু‘আ করা বৈধ।

হাদীসের উল্লিখিত দু‘আয় যে চোখ জুড়াবার বিষয় কামনা করা হয়েছে এর দ্বারা কী বুঝানো হয়েছে তা নিয়ে একাধিক মত রয়েছে। কারো মতে এখানে সন্তানাদির কথা বুঝানো হয়েছে, যার প্রসঙ্গ কুরআনের এ দু‘আয় বর্ণিত হয়েছে, ‘‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের জন্য এমন স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততি দান করো যারা হবে আমাদের জন্য নয়নপ্রীতিকর।’’ (সূরা আল ফুরকা-ন ২৫ : ৭৪)

কারো মতে এর দ্বারা নিয়মিত সালাত আদায় করা ও তা সংরক্ষণ করাকে বলা হয়েছে। যেমনটি হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, وجعلت قرة عيني في الصلاة ‘‘এবং সালাতে আমার চোখ জুড়াবার ব্যবস্থা করা হয়েছে।’’ কারো মতে এর দ্বারা জান্নাতের নিয়ামত বুঝানো হয়েছে যা কখনো শেষ হবে না। কারো মতে এর দ্বারা সর্বদা আল্লাহর জিকির করা, তাকে পূর্ণভাবে ভালোবাসা বুঝানো হচ্ছে।

এ দু‘আয় পরকালে আল্লাহকে দেখার কামনা করার দ্বারা প্রমাণ হয় যে, আখিরাতে নির্বাচিত কিছু মানুষ আল্লাহকে দেখতে পারবে। আর এটাই আহলুস্ সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের ‘আক্বীদাহ্।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১০: আল্লাহ তা‘আলার নামসমূহ (كتاب اسماء الله تعالٰى)