পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ

২১৬৫-[৫৭] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কুরআন স্পষ্ট ও শুদ্ধ করে পড়ো। এর ’গারায়িব’ অনুসরণ করো। আর কুরআনের ’গারায়িব’ হলো এর ফারায়িয ও হুদূদ (সীমা ও বিধানসমূহ)। (ইমাম বায়হাক্বী তাঁর শু’আবূল ঈমান-এ বর্ণনা করেছেন)[1]

اَلْفَصْلُ الثَّالِثُ

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَعْرِبُوا الْقُرْآنَ وَاتَّبِعُوا غَرَائِبَهُ وَغَرَائِبُهُ فَرَائِضُهُ وَحُدُودُهُ» . رَوَاهُ الْبَيْهَقِيّ فِي شعب الْإِيمَان

وعن ابي هريرة رضي الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم اعربوا القران واتبعوا غراىبه وغراىبه فراىضه وحدوده رواه البيهقي في شعب الايمان

ব্যাখ্যা: (أَعْرِبُوا الْقُرْاٰنَ) দ্বারা উদ্দেশ্য হলো কুরআনের শব্দের অর্থ উপলব্ধি করা এবং তা প্রকাশ করা। এখানে বৈয়াকারণিক পরিভাষায় যা বুঝায় তা নয়। লুম্‘আত গ্রন্থকার বলেন, এর অর্থ হলো : তার অর্থসমূহ প্রকাশ করো এবং প্রচার করো। الاعراب-এর অর্থ الابانة والافصاح প্রকাশ করা, স্পষ্ট করা। ‘আরাবী ভাষা যারা পড়তে পারে সকলের জন্য এ হুকুম। অতঃপর আহ্লে শারী‘আতদের বিশেষভাবে বলা হয়েছে যে, (وَاتَّبِعُوا غَرَائِبَه) তার গারায়িব-এ অনুসরণ করো। গারায়িব-এর ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে যে, তা হলো কুরআনের ফারায়িয এবং ওয়াজিবাতসমূহ আর হুদূদ হলো আল কুরআনের নিষিদ্ধসমূহ।

‘আল্লামা ত্বীবী ফারায়িযের দ্বারা মীরাসসমূহ এবং হুদূদ দ্বারা হুদূদুল আহকাম বুঝিয়েছেন।

অথবা ফারায়িয দ্বারা উদ্দেশ্য হলো ما يجب على المكلف একজন মুকাল্লাফের ওপর যা করণীয়। আর হুদূদ দ্বারা আল কুরআনের সূক্ষ্ম তত্ত্ব ও গূঢ় রহস্য এবং ভেদ কথা সম্পর্কে অবহিত হওয়া।

এ ব্যাখ্যাটি আল কুরআন সম্পর্কে বর্ণিত এ হাদীসের অতীব নিকটবর্তী; হাদীসঃ (أنزل القرآن على سبعة أحرف لكل آية منها ظهر وبطن) আল কুরআনকে সাতটি ভাষায় নাযিল করা হয়েছে, প্রত্যেকটি আয়াতের বাহির এবং ভিতর রয়েছে। (أَعْرِبُوا الْقُرْآنَ) এ কথার দিকেই ইশারা করছে যে, এর একটি বাহির আছে। এর ফারায়িয ও হুদূদ হলো ওর ভিতরের বস্ত্ত।

মুল্লা ‘আলী আল কারী (রহঃ) বলেন, এর অর্থ হলোঃ আল কুরআনের আয়াতসমূহের দুর্লভ দিকদর্শন, গারায়িবুল আহকাম, বিস্ময়কর নির্দেশ, সকল মু‘জিযার উপর চ্যালেঞ্জময় এর মু‘জিযা, সর্বোত্তম শিষ্টাচার, পরকালীন জীবন-জীনদেগী ও অবস্থার উপর ভয়ভীতি প্রদর্শন এবং জান্নাতের সুখ-সামগ্রীর উপর অতীব নির্ভরযোগ্য প্রতিশ্রুতি সম্বলিত বর্ণনা বিশ্বজাতির কাছে তুলে ধরো।


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৮: কুরআনের মর্যাদা (كتاب فضائل القراٰن) 8. The Excellent Qualities of the Quran

পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ

২১৬৬-[৫৮] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সালাতে কুরআন পাঠ সালাতের বাইরে কুরআন পাঠের চেয়ে উত্তম। সালাতের বাইরে কুরআন পড়া, তাসবীহ ও তাকবীর পড়ার চেয়ে উত্তম। আর তাসবীহ পড়া দান করা হতে উত্তম। দান করা (নফল) সওম হতে উত্তম। আর সওম হলো জাহান্নাম থেকে বাঁচার ঢাল। (ইমাম বায়হাক্বী তাঁর শু’আবূল ঈমান-এ বর্ণনা করেছেন)[1]

اَلْفَصْلُ الثَّالِثُ

وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا: أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «قِرَاءَةُ الْقُرْآنِ فِي الصَّلَاةِ أَفْضَلُ مِنْ قِرَاءَةِ الْقُرْآنِ فِي غَيْرِ الصَّلَاةِ وَقِرَاءَةُ الْقُرْآنِ فِي غَيْرِ الصَّلَاةِ أَفْضَلُ مِنَ التَّسْبِيحِ وَالتَّكْبِيرِ وَالتَّسْبِيحُ أَفْضَلُ مِنَ الصَّدَقَةِ وَالصَّدَقَةُ أَفْضَلُ مِنَ الصَّوْمِ وَالصَّوْمُ جُنَّةٌ مِنَ النَّارِ» . رَوَاهُ الْبَيْهَقِيُّ فِي شُعَبِ الْإِيمَانِ

وعن عاىشة رضي الله عنها ان النبي صلى الله عليه وسلم قال قراءة القران في الصلاة افضل من قراءة القران في غير الصلاة وقراءة القران في غير الصلاة افضل من التسبيح والتكبير والتسبيح افضل من الصدقة والصدقة افضل من الصوم والصوم جنة من النار رواه البيهقي في شعب الايمان

ব্যাখ্যা: সালাতের মধ্যে কুরআন তিলাওয়াত বাহিরে কুরআন তিলাওয়াত হতে উত্তম। এ সালাত ফরয, নফল যাই হোক না কেন। কেননা এটি অন্য একটি ‘ইবাদাতের সাথে মিলিত হয়ে শক্তিমান হয়েছে। সালাত হলো রবের সাথে মুনাজাত করা বা কানে কানে গোপন কথা বলা এবং মানুষের শারীরিক ‘ইবাদাতের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ‘ইবাদাত। সুতরাং সেখানে কিরাআত পাঠ করা নিঃসন্দেহে আল্লাহর নৈকট্য লাভের শ্রেষ্ঠ পন্থা।

আবার সালাতের বাহিরে কুরআন তিলাওয়াত তাসবীহ-তাকবীরের চেয়ে উত্তম যদিও ঐ তাকবীর ও তাসবীহ পাঠ সালাতের ভিতরে হয়।

তাসবীহ ও তাকবীর বা অনুরূপ বিষয়গুলো দ্বারা উদ্দেশ্য যাবতীয় জিকির-আযকার। এগুলো থেকে কুরআন তিলাওয়াতের শ্রেষ্ঠত্বের কারণ হলো এটি আল্লাহর কালাম। এতে রয়েছে আল্লাহর হুকুম-আহকাম, সুতরাং তা শ্রেষ্ঠ।

কেউ কেউ বলেছেন, তাসবীহ, তাকবীর, তাহমীদ, তাহলীল ইত্যাদি হলো কুরআনের ক্ষুদ্র অংশমাত্র আর তিলাওয়াত তা নয়। সুতরাং তিলাওয়াত তাসবীহ-তাহলীল থেকে শ্রেষ্ঠ। এজন্যই সালাতের মধ্যে কিয়াম রুকূ'-সিজদা্ ইত্যাদি থেকে বেশী ফাযীলাতপূর্ণ; আর সেটা এ বিচারে যে, কিয়ামের মধ্যে কুরআন তিলাওয়াতের স্থান বা সুযোগ রয়েছে। এগুলো অনির্দিষ্ট জিকির এর ক্ষেত্রে বলা হয়েছে অন্যথায় সুনির্দিষ্ট জিকির-আযকার কখনো কখনো কুরআন তিলাওয়াতের চেয়েও উত্তম যেমন ফরয সালাত আদায়ের পর হাদীসে বর্ণিত নির্ধারিত জিকির-আযকার।

জিকির-আযকার সদাকাহ্ থেকে উত্তম, এর ব্যাখ্যায় বলা হয় সকর্মক ‘ইবাদাত ‘ইবাদাতে লাযেমা বা অকর্মক ‘ইবাদাত থেকে উত্তম, কিন্তু এ হুকুম আল্লাহর জিকির বাদে অন্যান্য ‘ইবাদাতের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। মুল্লা ‘আলী কারী (রহঃ) বলেন, সদাকাহ্ দ্বারা নিসক সদাকায়ে মালী উদ্দেশ্য। আবার বলা হয়েছে সদাকাহ্ সওম থেকে উত্তম। এ সওম বলতে নফল সওম উদ্দেশ্য। তাও অবস্থাভেদে, সর্বসময়ের জন্য নয়। কেননা সওমের ব্যাপারে হাদীসে বলা হয়েছে আদম সন্তানের সকল ‘আমলের বিনিময় দশগুণে বর্ধিত করে দেয়া হয় তবে সওম ব্যতীত। আল্লাহ বলেন, কেননা সওম আমার জন্যই রাখা হয়। সুতরাং আমি নিজেই সেটার প্রতিদান প্রদান করব।

এ উত্তমতা বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার্য। যেমন স্থান-কাল-পাত্র রয়েছে, ঠিক তেমনি ‘ইবাদাতের বিভিন্ন বিভাগও রয়েছে। যেমন কোনটি ‘ইবাদাতে বাদানী- যা দৈহিক ‘ইবাদাত (যেমন- সালাত, সিয়াম), কোনটি ‘ইবাদাতে মালী বা আর্থিক ‘ইবাদাত (যেমন- হজ, যাকাত), আবার কোনটি উভয়ের সমন্বয়ে সম্পাদিত হয়ে থাকে।

(الصَّوْمُ جُنَّةٌ) সওম হলো ঢাল, এর অর্থ হলো তা জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষাকারী। অর্থাৎ- দুনিয়ার যে সমস্ত জিনিস মানুষকে আল্লাহর শাস্তি এবং ‘আযাবের দিকে নিয়ে যাবে সওম সেখানে ঢাল হিসেবে তাকে রক্ষা করবে।


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৮: কুরআনের মর্যাদা (كتاب فضائل القراٰن) 8. The Excellent Qualities of the Quran

পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ

২১৬৭-[৫৯] ’উসমান ইবনু ’আবদুল্লাহ ইবনু আওস আস্ সাকাফী (রহঃ) তাঁর দাদা আওস (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন ব্যক্তির মাসহাফ ছাড়া (অর্থাৎ- কুরআন দেখা ছাড়া) মুখস্থ কুরআন পড়া এক হাজার গুণ মর্যাদা সম্পন্ন। আর কুরআন মাসহাফে পড়া (অর্থাৎ- কুরআন খুলে দেখে দেখে পড়া) মুখস্থ পড়ার দু’ গুণ থেকে দু’ হাজার গুণ পর্যন্ত মর্যাদা রাখে। (বায়হাক্বী- শু’আবূল ঈমান)[1]

اَلْفَصْلُ الثَّالِثُ

وَعَنْ عُثْمَانَ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ أَوْسٍ الثَّقَفِيِّ عَنْ جَدِّهِ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «قِرَاءَةُ الرَّجُلِ الْقُرْآنَ فِي غَيْرِ الْمُصْحَفِ أَلْفُ دَرَجَةٍ وَقِرَاءَتُهُ فِي الْمُصحف تضعف عل ذَلِك إِلَى ألفي دَرَجَة» . رَوَاهُ الْبَيْهَقِيّ فِي شعب الْإِيمَان

وعن عثمان بن عبد الله بن اوس الثقفي عن جده قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم قراءة الرجل القران في غير المصحف الف درجة وقراءته في المصحف تضعف عل ذلك الى الفي درجة رواه البيهقي في شعب الايمان

ব্যাখ্যা: না দেখে মুখস্থ কুরআন তিলাওয়াতকারীর মর্যাদা বা সাওয়াব এক হাজার গুণ, কিন্তু দেখে কুরআন পাঠের সাওয়াব হলো তার দ্বিগুণ অর্থাৎ- দু’ হাজার গুণ। এটা এজন্য যে, কিতাবের দিকে তাকে তাকাতে হয়, নযর করতে হয়, তা বহন করতে হয়, নাড়াচাড়া করতে হয় ইত্যাদি। কেউ কেউ বলেছেন, এটা এজন্য যে, মুখস্থ পড়ার চেয়ে দেখে পড়া কঠিন এবং এতে অন্তর অধিক ভীত হয়। ইমাম নাবাবী তার আল আযকার গ্রন্থে বলেছেনঃ ‘‘আমাদের সাথীগণ কুরআনুল কারীমকে মুখস্থ পড়ার চেয়ে দেখে পড়া উত্তম মনে করেন; সাহাবী তথা সালাফে সালিহীনদের প্রসিদ্ধ মত এটাই। অবশ্য এটা মুত্বলাক বা সাধারণ কথা নয়, কেননা যদি মুখস্থ পাঠকারী আল কুরআনের অর্থ অনুধাবন পূর্বক, তাতে গভীর চিন্তা-ভাবনাপূর্বক এবং অন্তরের দৃঢ়তা ও স্থিরতা নিয়ে মুখস্থ তিলাওয়াত করেন তবে তা অবশ্যই উত্তম। কিন্তু সমান সমান গুণাবলী নিয়ে যদি কুরআন দেখে দেখে পাঠ করা হয় তবে তা নিঃসন্দেহে আরো উত্তম।


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৮: কুরআনের মর্যাদা (كتاب فضائل القراٰن) 8. The Excellent Qualities of the Quran

পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ

২১৬৮-[৬০] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ নিশ্চয় হৃদয়ে মরিচা ধরে, যেভাবে পানি লাগলে লোহায় মরিচা ধরে। তাঁকে জিজ্ঞেস করা হলো, হে আল্লাহর রসূল! এ মরিচা দূর করার উপায় কী? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, বেশি বেশি মৃত্যুকে স্মরণ করা ও কুরআন তিলাওয়াত করা। (উপরে বর্ণিত এ চারটি হাদীস ইমাম বায়হাক্বী তাঁর ’’শু’আবূল ঈমান’’-এ বর্ণনা করেছেন)[1]

اَلْفَصْلُ الثَّالِثُ

وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ هَذِهِ الْقُلُوبَ تَصْدَأُ كَمَا يَصْدَأُ الْحَدِيدُ إِذَا أَصَابَهُ الْمَاءُ» . قِيلَ يَا رَسُولَ اللَّهِ وَمَا جِلَاؤُهَا؟ قَالَ: «كَثْرَةُ ذِكْرِ الْمَوْتِ وَتِلَاوَةِ الْقُرْآنِ» . رَوَى الْبَيْهَقِيُّ الْأَحَادِيثَ الْأَرْبَعَةَ فِي شُعَبِ الْإِيمَانِ

وعن ابن عمر رضي الله عنهما قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم ان هذه القلوب تصدا كما يصدا الحديد اذا اصابه الماء قيل يا رسول الله وما جلاوها قال كثرة ذكر الموت وتلاوة القران روى البيهقي الاحاديث الاربعة في شعب الايمان

ব্যাখ্যা: মানুষের অন্তরের জমাকৃত পাপকে লোহার মরিচার সাথে সাদৃশ্য দেয়া হয়েছে। লোহায় পানি বা আর্দ্রতা স্পর্শ করলে তা ধীরে ধীরে লালচে মরিচা যুক্ত হয়ে যায়। লোহার ঐ মরিচা দূর করার জন্য রেত ইত্যাদি যন্ত্র রয়েছে যা ছুরি, চাকু ইত্যাদির মুখকে চকচকে করে ফেলে, অনুরূপভাবে কলব বা অন্তর পরিষ্কার করার যন্ত্র হলো অধিক হারে মৃত্যুকে স্মরণ করা এবং কুরআন তিলাওয়াত করা।


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৮: কুরআনের মর্যাদা (كتاب فضائل القراٰن) 8. The Excellent Qualities of the Quran

পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ

২১৬৯-[৬১] আয়ফা’ ইবনু ’আবদিল কালা’ঈ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি আরয করল, হে আল্লাহর রসূল! কুরআনের কোন্ সূরা বেশি মর্যাদাপূর্ণ? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, ক্বুল হুওয়াল্ল-হু আহাদ। সে আবার জিজ্ঞেস করল, কুরআনের কোন্ আয়াত বেশি মর্যাদার? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, আয়াতুল কুরসী- ’’আল্ল-হু লা ইলা-হা ইল্লা- হুওয়াল হাইয়্যূল কইয়্যূম’’। সে পুনরায় বলল, হে আল্লাহর নবী! কুরআনের কোন্ আয়াত এমন, যার বারাকাত আপনার ও আপনার উম্মাতের কাছে পৌঁছতে আপনি ভালবাসেন? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, সূরা আল বাকারাহ্’র শেষাংশ। কেননা আল্লাহ তা’আলা তাঁর ’আরশের নীচের ভাণ্ডার হতে তা এ উম্মাতকে দান করেছেন। দুনিয়া ও আখিরাতের এমন কোন কল্যাণ নেই যা এতে নেই। (দারিমী)[1]

اَلْفَصْلُ الثَّالِثُ

وَعَنْ أَيْفَعَ بْنِ عَبْدٍ الْكَلَاعِيِّ قَالَ: قَالَ رَجُلٌ: يَا رَسُولَ اللَّهِ أَيُّ سُورَةِ الْقُرْآنِ أَعْظَمُ؟ قَالَ: (قُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَدٌ)
قَالَ: فَأَيُّ آيَةٍ فِي الْقُرْآنِ أَعْظَمُ؟ قَالَ: آيَةُ الْكُرْسِيِّ (اللَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّومُ)
قَالَ: فَأَيُّ آيَةٍ يَا نَبِيَّ اللَّهِ تُحِبُّ أَنْ تُصِيبَكَ وَأُمَّتَكَ؟ قَالَ: «خَاتِمَةُ سُورَةِ الْبَقَرَةِ فَإِنَّهَا مِنْ خَزَائِنِ رَحْمَةِ اللَّهِ تَعَالَى مِنْ تَحْتِ عَرْشِهِ أَعْطَاهَا هَذِهِ الْأُمَّةَ لَمْ تتْرك خيرا من يخر الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ إِلَّا اشْتَمَلَتْ عَلَيْهِ» . رَوَاهُ الدَّارِمِيُّ

وعن ايفع بن عبد الكلاعي قال قال رجل يا رسول الله اي سورة القران اعظم قال قل هو الله احدقال فاي اية في القران اعظم قال اية الكرسي الله لا اله الا هو الحي القيومقال فاي اية يا نبي الله تحب ان تصيبك وامتك قال خاتمة سورة البقرة فانها من خزاىن رحمة الله تعالى من تحت عرشه اعطاها هذه الامة لم تترك خيرا من يخر الدنيا والاخرة الا اشتملت عليه رواه الدارمي

ব্যাখ্যা: এক ব্যক্তি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে প্রশ্ন করলেন, কুরআনের কোন্ সূরাটি সবচেয়ে বড়? রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উত্তর দিলেন সূরা ‘‘কুল হুওয়াল্ল-হু আহাদ’’ বা সূরা আল ইখলাস। প্রশ্নকারীর এ প্রশ্নটি ছিল তাওহীদের দিক থেকে। এ ভিত্তিতে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জওয়াবও ছিল। কিন্তু এটি ঐ হাদীসের বিরোধী নয় যাতে বলা হয়েছে সূরা আল ফাতিহাহ্ হলো আল কুরআনের সবচেয়ে বড় সূরা। অথবা বলা হয় সূরা আল ফাতিহাহ্’র পরে সূরা আল ইখলাস হলো আল কুরআনের সবচেয়ে বড় সূরা। ইবনু হাজার আসকালানী (রহঃ) বলেন, সূরা আল ফাতিহাহ্ সবচেয়ে বড় হওয়া সংক্রান্ত সবগুলো হাদীস সহীহ, কিন্তু আল ইখলাস সংক্রান্ত হাদীসটি তা নয়।

লুম্‘আত গ্রন্থকার স্বীয় গ্রন্থে বলেন, ইতিপূর্বে অতিবাহিত হয়েছে যে, আল কুরআনের সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ সূরা হলো সূরা আল ফাতিহাহ্, এ শ্রেষ্ঠত্ব কয়েকটি দিক থেকে। (১) পবিত্র কুরআনুল কারীমের মূল উদ্দেশ্য এটাতে বিদ্যমান। (২) সালাতে সেটা পাঠ করা (সর্বসম্মতভাবে) ওয়াজীব, (কেননা সূরা আল ফাতিহাকেই সালাত বলা হয়েছে)। পক্ষান্তরে সূরা আল ইখলাস আল্লাহ তা‘আলার তাওহীদ বর্ণনার ক্ষেত্রে শ্রেষ্ঠ, আয়াতুল কুরসী আল্লাহ তা‘আলার চিরন্তন ও চিরস্থায়ী গুণাবলী বর্ণনার ক্ষেত্রে শ্রেষ্ঠ, আর সূরা আল বাকারার শেষ আয়াত দু’টি আল্লাহর নিকট দুনিয়া-আখিরাতের কল্যাণ চাওয়ার ক্ষেত্রে শ্রেষ্ঠ।

আল কুরআনের কোন্ আয়াতটি শ্রেষ্ঠ আয়াত? এ প্রশ্নের উত্তরে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ...اللَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّومُ অর্থাৎ- আয়াতুল কুরসী শ্রেষ্ঠ আয়াত। লোকটি আবার যখন প্রশ্ন করলেন যে, হে আল্লাহর রসূল! আল কুরআনের কোন্ আয়াতটির কল্যাণ ও সাওয়াব আপনার জন্য এবং আপনার উম্মাতের জন্য পছন্দ করেন? এর উত্তরে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, সূরা আল বাকারাহ্’র শেষ আয়াত, অর্থাৎ- ...آمَنَ الرَّسُولُ بِمَا أُنْزِلَ إِلَيْهِ থেকে শেষ পর্যন্ত। এটা আল্লাহ তা‘আলার ‘আরশে ‘আযীমের নিচে রহমাতের ভাণ্ডার থেকে উৎসারিত হয়েছে, বান্দার জন্য দুনিয়া আখিরাতের সকল কল্যাণ এতে নিহিত।


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৮: কুরআনের মর্যাদা (كتاب فضائل القراٰن) 8. The Excellent Qualities of the Quran

পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ

২১৭০-[৬২] ’আবদুল মালিক ইবনু ’উমায়র (রহঃ) হতে মুরসাল হাদীসরূপে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সূরা আল ফাতিহার মধ্যে সকল রোগের আরোগ্য রয়েছে। (দারিমী, বায়হাক্বী- শু’আবূল ঈমান)[1]

اَلْفَصْلُ الثَّالِثُ

وَعَنْ عَبْدِ الْمَلِكِ بْنِ عُمَيْرٍ مُرْسَلًا قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «فِي فَاتِحَةِ الْكِتَابِ شِفَاءٌ مِنْ كُلِّ دَاءٍ» . رَوَاهُ الدَّارمِيّ وَالْبَيْهَقِيّ فِي شعب الْإِيمَان

وعن عبد الملك بن عمير مرسلا قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم في فاتحة الكتاب شفاء من كل داء رواه الدارمي والبيهقي في شعب الايمان

ব্যাখ্যা: রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণীঃ ‘‘সূরা আল ফাতিহায় সকল রোগের আরোগ্য রয়েছে’’। এ রোগ দৈহিক ও আত্মিক উভয়ই হতে পারে, অর্থাৎ- সূরা আল ফাতিহাহ্ মানুষের শরীর ও রূহের সকল ব্যাধি নিরাময় করতে পারে। এমনকি সর্প দংশনের বিশ বিধ্বংসেও এটা অমোঘ চিকিৎসা।

‘আল্লামা ত্বীবী বলেনঃ কুফর, অজ্ঞতা এবং গুনাহের রোগ সহ অন্যান্য বাহ্যিক রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসাও এর অন্তর্ভুক্ত।

হাফেয ইবনুল কইয়্যূম আল জাওযী (রহঃ) স্বীয় ‘ত্বীববুন্ নাবী’ গ্রন্থে বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় সূরা আল ফাতিহার ভূমিকা আলোচনা করেছেন। বিশেষ করে বিষক্রিয়া বিনষ্টের বিষয় বিস্তারিত আলোচনা সেখানে রয়েছে। তিনি (সহীহুল বুখারীতে বর্ণিত) সূরা আল ফাতিহাহ্ দিয়ে ঝাড়ফুঁক দিয়ে সাপের বিষ নামানোর হাদীস উল্লেখ করেছেন। এছাড়াও সূরা আল ফাতিহাহ্ কোন পাত্রে লিখে তা ধুয়ে অসুস্থ ব্যক্তিকে পান করানো সংক্রান্ত বিস্তারিত মাসআলাহ্ সেখানে লিপিবদ্ধ রয়েছে, প্রয়োজনে উক্ত গ্রন্থ সংগ্রহ করুন এবং দেখে নিন।


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৮: কুরআনের মর্যাদা (كتاب فضائل القراٰن) 8. The Excellent Qualities of the Quran

পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ

২১৭১-[৬৩] ’উসমান ইবনু ’আফফান (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যে ব্যক্তি রাতে সূরা আ-লি ’ইমরানের শেষের অংশ পড়বে, তার জন্য সমস্ত রাত সালাতে অতিবাহিত হবার সাওয়াব লিখা হবে। (দারিমী)[1]

اَلْفَصْلُ الثَّالِثُ

وَعَنْ عُثْمَانَ بْنِ عَفَّانَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: مَنْ قَرَأَ آخِرَ آلِ عِمْرَانَ فِي لَيْلَة كتب لَهُ قيام لَيْلَة. رَوَاهُ الدَّارمِيّ

وعن عثمان بن عفان رضي الله عنه قال من قرا اخر ال عمران في ليلة كتب له قيام ليلة رواه الدارمي

ব্যাখ্যা: আ-লি ‘ইমরান-এর শেষ আয়াত হলো ...إِنَّ فِىْ خَلْقِ السَّمٰوٰتِ وَالْأَرْضِ থেকে শেষ পর্যন্ত। রাতের প্রথমভাগে পড়া হোক অথবা শেষভাগে হোক তাতে কোন দোষ নেই, তবে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে যখন তাহাজ্জুদের জন্য জাগতেন তখন এ আয়াত পাঠ করতেন। এ আয়াত পাঠ করলে তার ‘আমলনামায় ঐ রাতে তাহাজ্জুদ সালাতের সমপরিমাণ হওয়ার লেখা হয়।


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৮: কুরআনের মর্যাদা (كتاب فضائل القراٰن) 8. The Excellent Qualities of the Quran

পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ

২১৭২-[৬৪] মাকহূল (রহঃ) বলেছেন, যে লোক জুমার দিনে সূরা আ-লি ’ইমরান পড়বে মালায়িকাহ্ (ফেরেশতাগণ) তার জন্য রাত পর্যন্ত সালাত বা দু’আ করতে থাকবেন। (দারিমী)[1]

اَلْفَصْلُ الثَّالِثُ

وَعَنْ مَكْحُولٍ قَالَ: مَنْ قَرَأَ سُورَةَ آلِ عِمْرَانَ يَوْمَ الْجُمُعَةِ صَلَّتْ عَلَيْهِ الْمَلَائِكَةُ إِلَى اللَّيْل. رَوَاهُ الدَّارمِيّ

وعن مكحول قال من قرا سورة ال عمران يوم الجمعة صلت عليه الملاىكة الى الليل رواه الدارمي

ব্যাখ্যা: জুমার দিনে যে ব্যক্তি সূরা আ-লি ‘ইমরান পাঠ করে মালায়িকাহ্ (ফেরেশতা) সন্ধ্যা পর্যন্ত তার জন্য সালাত পাঠ করে, এর অর্থ হলো মালায়িকাহ্ (ফেরেশতা) তার জন্য দু‘আ-ইস্তিগফার করে থাকে।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৮: কুরআনের মর্যাদা (كتاب فضائل القراٰن) 8. The Excellent Qualities of the Quran

পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ

২১৭৩-[৬৫] জুবায়র ইবনু নুফায়র (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সূরা আল বাকারাকে আল্লাহ তা’আলা এমন দু’টি আয়াত দ্বারা শেষ করেছেন, যা আমাকে আল্লাহর ’আরশের নীচের ভাণ্ডার হতে দান করা হয়েছে। তাই তোমরা এ আয়াতগুলোকে শিখবে। তোমাদের রমণীকুলকেও শিখাবে। কারণ এ আয়াতগুলো হচ্ছে রহমত, (আল্লাহর) নৈকট্য লাভের উপায়। (দীন দুনিয়ার সকল) কল্যাণলাভের দু’আ। (মুরসালরূপে দারিমী বর্ণনা করেছেন)[1]

اَلْفَصْلُ الثَّالِثُ

وَعَن جُبَير بن نفير رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «إِنَّ اللَّهَ خَتَمَ سُورَةَ الْبَقَرَةِ بِآيَتَيْنِ أُعْطِيتُهُمَا مِنْ كَنْزِهِ الَّذِي تَحْتَ الْعَرْشِ فَتَعَلَّمُوهُنَّ وَعَلِّمُوهُنَّ نِسَاءَكُمْ فَإِنَّهَا صَلَاةٌ وقربان وَدُعَاء» . رَوَاهُ الدِّرَامِي مُرْسلا

وعن جبير بن نفير رضي الله عنه ان رسول الله صلى الله عليه وسلم قال ان الله ختم سورة البقرة بايتين اعطيتهما من كنزه الذي تحت العرش فتعلموهن وعلموهن نساءكم فانها صلاة وقربان ودعاء رواه الدرامي مرسلا

ব্যাখ্যা: সূরা আল বাকারার শেষ দু’টি আয়াত অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ, সুতরাং প্রত্যেকের উচিত সেটা নিজে শিক্ষা করা এবং স্বীয় স্ত্রীকে শিক্ষা দেয়া। হাকিম-এর এক বর্ণনায় নিজের সন্তানদের শিক্ষা দেয়ার কথাও এসেছে। এটা ‘আরশে ‘আযীমের নিচের বিশেষ ধন-ভাণ্ডার থেকে অবতীর্ণ হয়েছে।

এ দু’টি আয়াতকে সালাত বলা হয়েছে, সালাত অর্থ এখানে ‘রহমতুন খাসসাতুন’, অর্থাৎ- বিশেষ রহমাত, অথবা রহমাতুন ‘আযীমাতুন মহা-রহমাত। কেউ কেউ এটাকে ইস্তিগফার অর্থেও ব্যবহার করেছেন। মুল্লা ‘আলী কারী এটাকেই প্রাধান্য দিয়েছেন। কেননা ইস্তিগফার অর্থ হলো ক্ষমার জন্য দু‘আ। এ দু’টি আয়াতকে আরো বলা হয়েছে (قُرْبَانٌ) কুরবা-নুন, (وَدُعَاءٌ) ওয়া দু‘আউন।

‘কুরবান’ এর অর্থ নিকটে হওয়া অথবা ما يتقرب به إلى الله تعالى অর্থাৎ- এমন জিনিস যার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করা যায়। কোন কোন হাদীসে قُرْبَانٌ এর স্থলে قُرْاٰنٌ শব্দ রয়েছে।

মোটকথা মুসল্লি এ দু’টি আয়াত সালাতে পাঠ করবে, আর সালাতের বাইরে কুরআন তিলাওয়াতকালে এ দু’টি আয়াত তিলাওয়াত করবে। দু‘আকারী এর মাধ্যমে আল্লাহর কাছে দু‘আও করবে।


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৮: কুরআনের মর্যাদা (كتاب فضائل القراٰن) 8. The Excellent Qualities of the Quran

পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ

২১৭৪-[৬৬] কা’ব ইবনু মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ জুমার দিনে সূরা হূদ পড়বে। (দারিমী হতে মুরসালরূপে বর্ণিত)[1]

اَلْفَصْلُ الثَّالِثُ

وَعَن كَعْب رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسلم قَالَ: «اقرؤوا سُورَة هود يَوْم الْجُمُعَة» . رَوَاهُ الدِّرَامِي مُرْسلا

وعن كعب رضي الله عنه ان رسول الله صلى الله عليه وسلم قال اقرووا سورة هود يوم الجمعة رواه الدرامي مرسلا

ব্যাখ্যা: জুমাহ্ দিবসে সূরা হূদ পড়ার নির্দেশ হলেও কোন সাওয়াবের উল্লেখ নেই, এ সাওয়াবের কথা হয়তো সবাই জানে অথবা এর সাওয়াব অগণিত, সুতরাং নির্দিষ্ট সংখ্যা বর্ণিত হয়নি।


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৮: কুরআনের মর্যাদা (كتاب فضائل القراٰن) 8. The Excellent Qualities of the Quran

পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ

২১৭৫-[৬৭] আবূ সা’ঈদ আল্ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি জুমার দিন সূরা আল কাহাফ পড়বে, তার (ঈমানের) নূর এ জুমাহ্ হতে আগামী জুমাহ্ পর্যন্ত চমকাতে থাকবে। (বায়হাক্বী- দা’ওয়াতুল কাবীর)[1]

اَلْفَصْلُ الثَّالِثُ

وَعَنْ أَبِي سَعِيدٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «من قَرَأَ سُورَة الْكَهْف فِي يَوْم الْجُمُعَة أَضَاء لَهُ النُّور مَا بَيْنَ الْجُمْعَتَيْنِ» . رَوَاهُ الْبَيْهَقِيُّ فِي الدَّعَوَاتِ الْكَبِير

وعن ابي سعيد رضي الله عنه ان النبي صلى الله عليه وسلم قال من قرا سورة الكهف في يوم الجمعة اضاء له النور ما بين الجمعتين رواه البيهقي في الدعوات الكبير

ব্যাখ্যা: জুমার দিনে যে সূরা আল কাহাফ পাঠ করবে তার নূর এক জুমাহ্ হতে অন্য জুমাহ্ পর্যন্ত আলোকজ্জ্বল হয়ে থাকবে। এ উজ্জ্বলতা তার কলবে হবে, না হয় তার কবরে হবে, অথবা তার হাশরে হবে। এ নূর কি ঐ সূরার নূর না তা সাওয়াবের নূর? কেউ বলেছেন, হিদায়াতের নূর এবং ঈমানের নূর। হিদায়াতের নূর হওয়াই অধিক যুক্তিযুক্ত।

‘আল্লামা শাওকানী (রহঃ) বলেন, এক জুমাহ্ থেকে অন্য জুমাহ্ পর্যন্ত নূর বা আলোকদানের অর্থ হলো এ দীর্ঘ সময় তার কিরাআতের প্রভাব সে পাবে এবং এ এক সপ্তাহ পর্যন্ত তার সাওয়াব সে পেতে থাকবে।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৮: কুরআনের মর্যাদা (كتاب فضائل القراٰن) 8. The Excellent Qualities of the Quran

পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ

২১৭৬-[৬৮] খালিদ ইবনু মা’দান (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, তোমরা মুক্তিদানকারী সূরা ’আলিফ লাম মিম তানযীল’ (সূরা আস্ সিজদা্) পড়ো। কেননা নির্ভরযোগ্য সূত্রে এ কথা আমার নিকট পৌঁছেছে যে, এক ব্যক্তি এ সূরা পড়ত, এছাড়া আর কোন সূরা পড়ত না। সে ছিল বড় পাপী মানুষ। এ সূরা তার ওপর ডানা মেলে বলতে থাকত, হে রব! তাকে মাফ করে দাও। কারণ সে আমাকে বেশি বেশি তিলাওয়াত করত। তাই আল্লাহ তা’আলা তার ব্যাপারে এ সূরার সুপারিশ গ্রহণ করেন ও বলে দেন যে, তার প্রত্যেক গুনাহের বদলে একটি করে নেকী লিখে নাও। তার মর্যাদা বৃদ্ধি করো।

তিনি (রাবী) আরো বলেন, এ সূরা কবরে এর পাঠকের জন্য আল্লাহর নিকট নিবেদন করবে, হে আল্লাহ! আমি যদি তোমার কিতাবের অংশ হয়ে থাকি, তুমি তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ গ্রহণ করো। আর যদি আমি তোমার কিতাবের অংশ না হয়ে থাকি, আমাকে তোমার কিতাব হতে মুছে ফেলো। (অন্য বর্ণনায় আছে) তিনি বলেন, এ সূরা পাখীর রূপ ধারণ করে এর পাঠকারীর ওপর পাখা মেলে ধরবে ও তার জন্য সুপারিশ করবে। এর ফলে কবর ’আযাব হতে হিফাযাত করা হবে। বর্ণনাকারী সূরা তাবা-রকাল্লাযী’ (মুল্‌ক) সম্পর্কেও এ একই বর্ণনা করেছেন। খালিদ এ সূরা দু’টি না পড়ে ঘুমাতেন না।

ত্বাউস (রহঃ) বলেন, এ দু’টি সূরাকে কুরআনের অন্য সব সূরা হতে ষাটগুণ অধিক নেকী অর্জনের মর্যাদা দান করা হয়েছে। (দারিমী)[1]

[২১৭৬ নং উপরোক্ত হাদীসটি মির্’আতের মূল গ্রন্থে তিনটি আলাদা নম্বরে আনা হয়েছে]

اَلْفَصْلُ الثَّالِثُ

وَعَن خَالِد بن معدان قَالَ: اقرؤوا المنجية وَهِي (آلم تَنْزِيل)
فَإِن بَلَغَنِي أَنَّ رَجُلًا كَانَ يَقْرَؤُهَا مَا يَقْرَأُ شَيْئًا غَيْرَهَا وَكَانَ كَثِيرَ الْخَطَايَا فَنَشَرَتْ جَنَاحَهَا عَلَيْهِ قَالَتْ: رَبِّ اغْفِرْ لَهُ فَإِنَّهُ كَانَ يُكْثِرُ قِرَاءَتِي فَشَفَّعَهَا الرَّبُّ تَعَالَى فِيهِ وَقَالَ: اكْتُبُوا لَهُ بِكُلِّ خَطِيئَةٍ حَسَنَةٍ وَارْفَعُوا لَهُ دَرَجَةً . وَقَالَ أَيْضًا: إِنَّهَا تُجَادِلُ عَنْ صَاحِبِهَا فِي الْقَبْرِ تَقُولُ: اللَّهُمَّ إِنْ كُنْتُ مِنْ كِتَابِكَ فَشَفِّعْنِي فِيهِ وَإِنْ لَمْ أَكُنْ مِنْ كِتَابِكَ فَامْحُنِي عَنْهُ وَإِنَّهَا تَكُونُ كَالطَّيْرِ تَجْعَلُ جَنَاحَهَا عَلَيْهِ فَتَشْفَعُ لَهُ فَتَمْنَعُهُ مِنْ عَذَابِ الْقَبْر وَقَالَ فِي (تبَارك)
مثله. وَكَانَ خَالِد لَا يَبِيتُ حَتَّى يَقْرَأَهُمَا. وَقَالَ طَاوُوسُ: فُضِّلَتَا عَلَى كُلِّ سُورَةٍ فِي الْقُرْآنِ بِسِتِّينَ حَسَنَةً. رَوَاهُ الدَّارمِيّ

وعن خالد بن معدان قال اقرووا المنجية وهي الم تنزيلفان بلغني ان رجلا كان يقروها ما يقرا شيىا غيرها وكان كثير الخطايا فنشرت جناحها عليه قالت رب اغفر له فانه كان يكثر قراءتي فشفعها الرب تعالى فيه وقال اكتبوا له بكل خطيىة حسنة وارفعوا له درجة وقال ايضا انها تجادل عن صاحبها في القبر تقول اللهم ان كنت من كتابك فشفعني فيه وان لم اكن من كتابك فامحني عنه وانها تكون كالطير تجعل جناحها عليه فتشفع له فتمنعه من عذاب القبر وقال في تباركمثله وكان خالد لا يبيت حتى يقراهما وقال طاووس فضلتا على كل سورة في القران بستين حسنة رواه الدارمي

ব্যাখ্যা: তোমরা মুক্তি দানকারী সূরা অর্থাৎ- আলিফ-লাম-মীম, তানযীল সূরা পাঠ করো। মুক্তি দানকারী হলো কবরের ‘আযাব থেকে এবং হাশরের শাস্তি থেকে মুক্তি দানকারী। কেউ কেউ বলেছেন, দুনিয়ার ‘আযাব এবং আখিরাতের ‘আযাব থেকে মুক্তিদানকারী।

বিশিষ্ট তাবি‘ঈ ত্বাউস বলেন, আলিফ লা-ম মীম তানযীল এবং সূরা তাবা-রকাল্লাযী-কে অন্যান্য সকল সূরা হতে ষাটগুণ মর্যাদা বেশী দান করা হয়েছে।

ইবনু হাজার আসকালানী (রহঃ) বলেন, এটা ঐ হাদীসের পরিপন্থী নয় যে, সহীহ হাদীসে সূরা আল বাকারাকে সূরা আল ফাতিহার পর কুরআনের সর্বোত্তম সূরা বলে অভিহিত করা হয়েছে। কেননা অনেক সময় তুলনামূলক কম উত্তম বস্ত্তর মধ্যেও এমন কতক গুণ ও বৈশিষ্ট্য পাওয়া যায় যা অধিক উত্তমের মধ্যে পাওয়া যায় না। তোমরা কি দেখো না অনেক উত্তম উত্তম সূরা থাকা সত্ত্বেও বিতর সালাতে সূরা সাব্বিহিসমা, সূরা আল কা-ফিরূন এবং সূরা আল ইখলাস পড়া উত্তম? অনুরূপ সূরা আস্ সিজদা্, সূরা আদ্ দাহর জুমার দিনে ফজরের সালাতে পাঠ করা অন্যান্য সূরা থেকে উত্তম?

কেউ কেউ বলেছেন ঐ দু’টি সূরা সার্বিক বিবেচনায় উত্তম নয় বরং কবরের ‘আযাব থেকে নিষ্কৃতিদানে এবং সেটা বাধাদানে অন্যান্য সকল সূরা থেকে উত্তম।


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৮: কুরআনের মর্যাদা (كتاب فضائل القراٰن) 8. The Excellent Qualities of the Quran

পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ

২১৭৭-[৬৯] ’আত্বা ইবনু আবূ রবাহ (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নির্ভরযোগ্য সূত্রে আমার কাছে এ কথা পৌঁছেছে যে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি দিনের প্রথম অংশে সূরা ইয়াসীন পড়বে, তার সব প্রয়োজন পূর্ণ হবে। (দারিমী মুরসাল হিসেবে বর্ণনা করেছেন)[1]

اَلْفَصْلُ الثَّالِثُ

وَعَنْ عَطَاءِ بْنِ أَبِي رَبَاحٍ قَالَ: بَلَغَنِي أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «مَنْ قَرَأَ (يس)
فِي صَدْرِ النَّهَارِ قضيت حَوَائِجه» رَوَاهُ الدَّارمِيّ مُرْسلا

وعن عطاء بن ابي رباح قال بلغني ان رسول الله صلى الله عليه وسلم قال من قرا يسفي صدر النهار قضيت حواىجه رواه الدارمي مرسلا

ব্যাখ্যা: ‘যে ব্যাক্তি দিনের শুরুভাগে সূরা ইয়াসীন পাঠ করবে তার যাবতীয় প্রয়োজন পূর্ণ করে দেয়া হবে’, এ প্রয়োজন বা হাজত দুনিয়া আখিরাতের উভয়েরই হতে পারে অথবা মুত্বলাক দীনী প্রয়োজনই উদ্দেশ্য।

অন্য এক বর্ণনায় এসেছে যে, ব্যক্তি দিনের শুরুতে সূরা ইয়াসীন পাঠ করবে তার সারাদিনে যত প্রয়োজন দেখা দিবে আল্লাহ তা‘আলা তা পূর্ণ করে দিবেন।


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৮: কুরআনের মর্যাদা (كتاب فضائل القراٰن) 8. The Excellent Qualities of the Quran

পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ

২১৭৮-[৭০] মা’কাল ইবনু ইয়াসার আল মুযানী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশে সূরা ইয়াসীন পড়বে, তার আগের গুনাহসমূহ (সগীরাহ্) মাফ করে দেয়া হবে। তাই তোমরা তোমাদের মৃত্যু (আসন্ন) ব্যক্তিদের কাছে এ সূরা পড়বে। (বায়হাক্বী- শু’আবূল ঈমান)[1]

اَلْفَصْلُ الثَّالِثُ

وَعَن معقل بن يسَار الْمُزنِيّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «مَنْ قَرَأَ (يس)
ابْتِغَاءَ وَجْهِ اللَّهِ تَعَالَى غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنبه فاقرؤوها عِنْدَ مَوْتَاكُمْ» . رَوَاهُ الْبَيْهَقِيُّ فِي شُعَبِ الْإِيمَانِ

وعن معقل بن يسار المزني رضي الله عنه ان النبي صلى الله عليه وسلم قال من قرا يسابتغاء وجه الله تعالى غفر له ما تقدم من ذنبه فاقرووها عند موتاكم رواه البيهقي في شعب الايمان

ব্যাখ্যা: (اِبْتِغَاءَ وَجْهِ اللّٰهِ تَعَالٰى) আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য, এ বাক্যের ব্যাখ্যায় বলা হয় أي طلباً لرضاه তার রেজামন্দির জন্যই, অন্য কোন উদ্দেশে নয়। মানাবী বলেন, এর অর্থ হলো আখিরাতে একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন; জান্নাত অর্জন নয় এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তিও নয়। আল্লাহ তা‘আলাই যদি সন্তুষ্ট হয়ে যান তাহলে তার জান্নাতের আর কি প্রয়োজন? ঠিক অনুরূপভাবে জাহান্নামেরই বা তার কিসের ভয়?

সূরা ইয়াসীন পাঠকারীর পূর্বের সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে, এ গুনাহ হলো সগীরাহ্ গুনাহ। মুল্লা ‘আলী আল কারী বলেন, আল্লাহ যাকে চাইবেন তার কাবীরাহ্ গুনাহ-ও মাফ করে দিবেন। মৃত ব্যক্তির নিকট সূরা ইয়াসীন পড়ার অর্থ হলো মৃত পথযাত্রীর নিকট পড়া অর্থাৎ- যার মৃত্যু আসন্ন হয়েছে এমন ব্যক্তির নিকট।

‘আল্লামা ত্বীবী বলেন, فاقرؤوها শব্দের মধ্যে ف বর্ণটি একটি উহ্য শর্তের জওয়াবে ব্যবহার হয়েছে। অর্থাৎ- ইখলাসের সাথে সূরা ইয়াসীন পাঠ করলে সমস্ত গুনাহ যখন মাফ হয়ে যায় সুতরাং মৃত্যুর মুখোমুখি ব্যক্তির নিকট সেটা পাঠ করো যাতে সে সেটা শুনতে পারে এবং তার অন্তরে ওটা জারি হতে পারে, ফলে আল্লাহ তা‘আলা তার পূর্বের যাবতীয় গুনাহ ক্ষমা করে দেন।


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৮: কুরআনের মর্যাদা (كتاب فضائل القراٰن) 8. The Excellent Qualities of the Quran

পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ

২১৭৯-[৭১] ’আবদুল্লাহ ইবনু মাস্’ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, প্রত্যেকটি বস্তুর একটি শীর্ষস্থান রয়েছে। কুরআনের শীর্ষস্থান হলো সূরা আল বাকারাহ্। প্রত্যেক বস্তুরই একটি ’সার’ রয়েছে। কুরআনের সার হলো মুফাস্‌সাল সূরাহগুলো। (দারিমী)[1]

اَلْفَصْلُ الثَّالِثُ

وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ أَنَّهُ قَالَ: إِنَّ لِكُلِّ شَيْءٍ سَنَامًا وَإِنَّ سَنَامَ الْقُرْآنِ سُورَةُ الْبَقَرَةِ وَإِنَّ لِكُلِّ شَيْءٍ لُبَابًا وَإِنَّ لباب الْقُرْآن الْمفصل. رَوَاهُ الدَّارمِيّ

وعن عبد الله بن مسعود انه قال ان لكل شيء سناما وان سنام القران سورة البقرة وان لكل شيء لبابا وان لباب القران المفصل رواه الدارمي

ব্যাখ্যা: প্রত্যেকটি বস্ত্তর একটি চূড়া বা শীর্ষস্থান রয়েছে, ‘‘চূড়া বা শীর্ষ স্থান’’, এর মূলে ‘আরাবীতে سَنَامٌ শব্দ রয়েছে, এর অর্থ উটের পীঠের কুঁজ, যা তার দেহের সকল অঙ্গের শীর্ষ বা চূড়ায় থাকে; সূরা আল বাকারাহ্ আল কুরআনের শীর্ষ বা চূড়া মণি। সূরা আল বাকারার এ শীর্ষতা তার দীর্ঘতার কারণে হতে পারে, কেননা সূরা আল বাকারাহ্ আল কুরআনের সূরাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় সূরা। এতে শারী‘আতের হুকুম-আহকাম খুব বেশী অন্তর্ভুক্ত হয়েছে, বিশেষ করে জিহাদের মতো অতীব গুরুত্বপূর্ণ একটি হুকুম অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।

ইমাম শাওকানী (রহঃ) বলেন, سَنَامٌ হলো বস্ত্তর সর্বোচ্চ শৃঙ্গ, সূরা আল বাকারাহ্ হলো আল কুরআনের শৃঙ্গ ও শীর্ষদেশ, এতে যত আহকাম একত্রিত হয়েছে অন্য কোন সূরায় তা হয়নি। এজন্য এ সূরা মুখস্থ করার বিশেষ ফাযীলাত ও বারাকাত রয়েছে। যে বাড়ীতে সূরা আল বাকারাহ্ পাঠ করা হয় শয়তান সে বাড়ী থেকে পলায়ন করে।

অত্র হাদীসে আরো বলা হয়েছে, প্রত্যেক বস্ত্তর একটি সারনির্যাস রয়েছে, আর আল কুরআনের সার নির্যাস হলো মুফাসসাল সূরাসমূহ। এ মুফাসসাল সূরাহসমূহে যে বিষয় বিস্তারিত বর্ণনা করা হয়েছে সেগুলো অন্যান্য সূরায় ইজমালীভাবে এসেছে। মুফাসসাল হলো সূরা আল হুজুরা-ত থেকে সূরা আন্ নাস পর্যন্ত।


হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৮: কুরআনের মর্যাদা (كتاب فضائل القراٰن) 8. The Excellent Qualities of the Quran

পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ

২১৮০-[৭২] ’আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, প্রত্যেকটি জিনিসের সৌন্দর্য আছে। কুরআনের সৌন্দর্য সূরা আর্ রহমান। (ইমাম বায়হাক্বী শু’আবূল ঈমান-এ বর্ণনা করেছেন)[1]

اَلْفَصْلُ الثَّالِثُ

وَعَنْ عَلِيٍّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم يَقُول: «لكل شَيْء عروس وعروس الْقُرْآن الرَّحْمَن» . رَوَاهُ الْبَيْهَقِيّ فِي شعب الْإِيمَان

وعن علي رضي الله عنه قال سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول لكل شيء عروس وعروس القران الرحمن رواه البيهقي في شعب الايمان

ব্যাখ্যা: নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণীঃ ‘‘প্রত্যেক বস্ত্তর একটি সৌন্দর্যতা রয়েছে, আল-কুরআনের শোভা বা সৌন্দর্যতা হলো সূরা আর রহমান।’’ অত্র হাদীসে عَرُوْسٌ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে যার অর্থ সৌন্দর্যতা, শোভিত হওয়া, অলংকারমণ্ডিত হওয়া। সূরা আর রহমান এর সে সৌন্দর্যতা হলো فَبِأَيِّ آلَاءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ ‘‘অতঃপর তোমাদের প্রতিপালকের কোন্ অবদানকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করবে?’’

মুল্লা ‘আলী কারী (রহঃ) বলেন, এ সূরায় দুনিয়া-আখিরাতের নিয়ামত এবং জান্নাতের শান্তি ও নানা আরাম-আয়েশের উপকরণের বিবরণ এখানে রয়েছে, সাথে সাথে হূরুন্‘ঈন-দের অলংকার, সাজ-সজ্জা, দেহকান্তির নানা বিবরণ এখানে রয়েছে। এতে আরো রয়েছে, জান্নাতীদের অলংকার ও রেশমের নানা মূল্যবান পোষাকের বিবরণ। সুতরাং এ দিক বিবেচনায় এ সূরাটি আল কুরআনের অলংকার ও সৌন্দর্য।

‘আল্লামা ত্বীবী বলেন, عَرُوْسٌ বলা হয় নারী-পুরুষের একান্তবাসকে। বিবাহোত্তর বাসর উদযাপনকে عَرُوْسٌ বলা হয়, যখন নারী-পুরুষ উভয়ে মূল্যবান পোষাক, দামী অলংকারে শোভিত হয়ে পরস্পরে সাক্ষাৎ লাভ করে থাকে।


হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৮: কুরআনের মর্যাদা (كتاب فضائل القراٰن) 8. The Excellent Qualities of the Quran

পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ

২১৮১-[৭৩] ’আবদুল্লাহ ইবনু মাস্’ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি প্রত্যেক রাতে ’’সূরা আল ওয়াকি’আহ্’’ তিলাওয়াত করবে, সে কখনো অভাব অনটনে পড়বে না। বর্ণনাকারী ’আবদুল্লাহ ইবনু মাস্’ঊদ তাঁর কন্যাদেরকে প্রত্যেক রাতে এ সূরা তিলাওয়াত করতে বলতেন। (ইমাম বায়হাক্বী শু’আবূল ঈমান-এ বর্ণনা করেছেন)[1]

اَلْفَصْلُ الثَّالِثُ

وَعَنِ ابْنِ مَسْعُودٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ قَرَأَ سُورَةَ الْوَاقِعَةِ فِي كُلِّ لَيْلَةٍ لَمْ تُصِبْهُ فَاقَةٌ أَبَدًا» . وَكَانَ ابْنُ مَسْعُودٍ يَأْمُرُ بَنَاتَهُ يَقْرَأْنَ بهَا فِي كل لَيْلَة. رَوَاهُ الْبَيْهَقِيّ فِي شعب الْإِيمَان

وعن ابن مسعود قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من قرا سورة الواقعة في كل ليلة لم تصبه فاقة ابدا وكان ابن مسعود يامر بناته يقران بها في كل ليلة رواه البيهقي في شعب الايمان

ব্যাখ্যা: এ হাদীসের ব্যাখ্যায় মুল্লা ‘আলী কারী (রহঃ) বলেন, অভাব এবং দারিদ্র্যতা তার কোন ক্ষতি করতে পারবে না। যদি অভাব এসেই পড়ে তবে তাকে সবরে জামীল দান করা হবে। আর এর বিনিময়ে তাকে মহান পুরস্কারের ওয়া‘দা দেয়া হয়। অথবা এর অর্থ হলো তাকে কখনো অন্তরের অভাবী করা হবে না, (বলা হয় অন্তরের ধনীই প্রকৃত ধনী)। যখন তার অন্তরের প্রশস্ততা দান করা হবে এবং তার রবের মারিফাত ও তার ওপর তাওয়াক্কুলের শক্তি দান করা হবে, তখন সে তার সকল কর্ম আল্লাহর দিকে সোপর্দ করবে এবং আল্লাহর দেয়া অবস্থাকে হাসি মনে গ্রহণ করে নিতে পারবে। ফরে তার অভাব আর অভাব মনে হবে না।


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৮: কুরআনের মর্যাদা (كتاب فضائل القراٰن) 8. The Excellent Qualities of the Quran

পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ

২১৮২-[৭৪] ’আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূরা ’’সাব্বিহিস্‌মা রব্বিকাল আ’লা-’’ ভালবাসতেন। (আহমদ)[1]

اَلْفَصْلُ الثَّالِثُ

وَعَنْ عَلِيٍّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عَلَيْهِ وَسلم يجب هَذِهِ السُّورَةَ (سَبِّحِ اسْمِ رَبِّكَ الْأَعْلَى)
رَوَاهُ أَحْمد

وعن علي رضي الله عنه قال كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يجب هذه السورة سبح اسم ربك الاعلىرواه احمد

ব্যাখ্যা: ‘নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূরা আল আ‘লা-কে ভালবাসতেন’, এর ব্যাখ্যায় মুল্লা ‘আলী কারী (রহঃ) বলেন, সহীহুল বুখারী সহ অন্যান্য গ্রন্থে ‘‘উমার  কর্তৃক বর্ণিত ঐ হাদীস যাতে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূরা আল ফাত্হ সম্পর্কে বলেছেন, (هي أحب إلي مما طلعت عليه الشمس) ঐ সূরাটি আমার নিকট পৃথিবীর সবচেয়ে প্রিয়; সূরা আল আ‘লা-এর প্রতি ভালবাসা ঐ সূরা আল ফাত্হ-এর প্রতি ভালবাসার সাথে অতিরিক্ত ভালবাসা হিসেবে এবং তারই সমকক্ষ ভালবাসা হিসেবে বিবেচিত হবে। কেননা সূরা আল ফাত্হ-কে অতিরিক্ত ভালবাসার কারণ হলো এতে রয়েছে মক্কা বিজয়ের সুসংবাদ এবং মাগফিরাতের ইশারা আর সূরা আল আ‘লা-য় রয়েছে সকল কঠিন কাজকে সহজ করে দেয়ার ওয়া‘দা, এজন্য নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিত্র সালাতের প্রথম রাক্‘আতে সর্বদাই সেটা পাঠ করতেন।

অথবা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর এ সূরাটি ভালবাসার কারণ হলো এ আয়াতটিঃ إِنَّ هٰذَا لَفِى الصُّحُفِ الْأُولٰى * صُحُفِ إِبْرَاهِيْمَ وَمُوسٰى এটি আহলে কিতাব ও মুশরিকদের ওপর এ কথার সাক্ষ্য দানকারী যে আল কুরআন হক বা সত্য এবং মানবমন্ডলীর জীবন পথের প্রামাণ্য দলীল।


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৮: কুরআনের মর্যাদা (كتاب فضائل القراٰن) 8. The Excellent Qualities of the Quran

পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ

২১৮৩-[৭৫] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আমর (রাঃ) বলেন, এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে আরয করল, হে আল্লাহর রসূল! আমাকে কিছু শিখিয়ে দিন। তিনি বললেন, আলিফ্ লা-ম রা- সম্পন্ন সূরাগুলো হতে তিনটি সূরা পড়বে। সে ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রসূল! আমি বুড়ো হয়ে গেছি। আমার ’কলব’ কঠিন ও ’জিহবা’ শক্ত হয়ে গেছে (অর্থাৎ- আমার মুখস্থ হয় না)। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ তাহলে তুমি হা-মীম যুক্ত সূরাগুলোর মধ্যকার তিনটি সূরা পড়বে। আবার সে ব্যক্তি আগের জবাবের মতো জবাব দিলো। তারপর বলল, হে আল্লাহর রসূল! আমাকে আপনি পরিপূর্ণ অর্থবহ একটি সূরা শিখিয়ে দিন। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন তাকে ’সূরা ইযা- যুলযিলাত’ শেষ পর্যন্ত পড়িয়ে দিলেন। তখন সে ব্যক্তি বলল, যিনি আপনাকে সত্য নবী করে পাঠিয়েছেন, তাঁর শপথ, আমি (আপনার শিখানো) সূরার উপর কখনো আর কিছু বাড়াব না। এরপর লোকটি ওখান থেকে চলে গেল। এ সময় রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, লোকটি সফলতা লাভ করল, লোকটি সফলতা লাভ করল। (আহমদ ও আবূ দাঊদ)[1]

اَلْفَصْلُ الثَّالِثُ

وَعَن عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو قَالَ: أَتَى رَجُلٌ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ أَقْرِئْنِي يَا رَسُولَ اللَّهِ فَقَالَ: اقْرَأْ ثَلَاثًا مِنْ ذَوَاتِ (ألر)
فَقَالَ: كَبُرَتْ سِنِّي وَاشْتَدَّ قَلْبِي وَغَلُظَ لِسَانِي قَالَ: فَاقْرَأْ ثَلَاثًا مِنْ ذَوَاتِ (حم)
فَقَالَ مِثْلَ مَقَالَتِهِ. قَالَ الرَّجُلُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ أَقْرِئْنِي سُورَةً جَامِعَةً فَأَقْرَأَهُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ (إِذَا زُلْزِلَتْ الأَرْض)
حَتَّى فَرَغَ مِنْهَا فَقَالَ الرَّجُلُ: وَالَّذِي بَعَثَكَ بِالْحَقِّ لَا أَزِيد عَلَيْهَا أبدا ثمَّ أدبر الرَّجُلُ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
أَفْلَحَ الرُّوَيْجِلُ مَرَّتَيْنِ. رَوَاهُ أَحْمَدُ وَأَبُو دَاوُدَ

وعن عبد الله بن عمرو قال اتى رجل النبي صلى الله عليه وسلم فقال اقرىني يا رسول الله فقال اقرا ثلاثا من ذوات الرفقال كبرت سني واشتد قلبي وغلظ لساني قال فاقرا ثلاثا من ذوات حمفقال مثل مقالته قال الرجل يا رسول الله اقرىني سورة جامعة فاقراه رسول الله صلى الله عليه وسلم اذا زلزلت الارضحتى فرغ منها فقال الرجل والذي بعثك بالحق لا ازيد عليها ابدا ثم ادبر الرجل فقال رسول الله صلى الله عليه وسلمافلح الرويجل مرتين رواه احمد وابو داود

ব্যাখ্যা: আগন্তুক লোকটির নাম জানা যায়নি, সে গ্রাম্য লোক ছিল তাই হয়তো তার নাম জানা ছিল না। তার কুরআন শিক্ষার আবেদনের প্রেক্ষিতে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে যাওয়াতুর্ রা- বা আলিফ্ লা-ম রা- দ্বারা শুরু তিনটি সূরা শিক্ষার কথা বললেন। এ অক্ষর দ্বারা শুরুকৃত সূরা মোট পাঁচটি। যথা- (১) সূরা ইউনুস, (২) সূরা হূদ, (৩) সূরা ইউসুফ, (৪) সূরা ইব্রা-হীম এবং (৫) সূরা আল হিজর।

লোকটি তার বার্ধক্যের কথা উল্লেখ করে বললেন যে, আমার অন্তর কঠিন এবং জিহ্বা শক্ত হয়ে গেছে, এগুলো মুখস্থ করতে পারব না। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে হা-মীম সম্বলিত তিনটি সূরা অর্থাৎ- যে সূরার শুরুতে হা-মীম রয়েছে তা পড়ার কথা বললেন। হা-মীম ওয়ালা সূরা মোট সাতটি, যথা- (১) সূরা গাফির (আল মু’মিন), (২) সূরা ফুসসিলাত, (৩) সূরা আশ্ শূরা-, (৪) সূরা যুখরুফ, (৫) সূরা আদ্ দুখান, (৬) সূরা আল জা-সিয়াহ্ এবং (৭) সূরা আল আহক্বা-ফ। এগুলোকেই হাদীসের ভাষায় যাওয়াতু হা-মীম বলা হয়। লোকটি পূর্বের ন্যায় আপত্তি জানালেন এবং বললেন, হে আল্লাহর রসূল! আমাকে একটি জামি', অর্থাৎ- ব্যাপক অর্থবোধক সূরা শিখিয়ে দিন। সুনানু আবী দাঊদ ও আহমাদ-এর বর্ণনায় নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে তিন মুসাব্বাহাত সূরা শিক্ষার কথা বললেন। মুসাব্বাহাত ঐ সূরাগুলোকে বলা হয় যার শুরু التسبيح-এর মাদ্দাহ বা মূল ধাতু থেকে গঠিত শব্দ দ্বারা করা হয়েছে। এটাও সাতটি সূরাতে আনা হয়েছে। লোকটি সবকিছুতেই অপারগতা প্রকাশ করলে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে সূরা ‘‘ইযা- যুলযিলাত’’ পড়তে বললেন। লোকটি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট যেন এমন একটি বিষয় চাচ্ছিলেন যা ‘আমল সহজ কিন্তু তার মাধ্যমেই তিনি সফলতা লাভ করতে পারেন। এজন্য তিনি বলেছিলেন আমাকে একটি ব্যাপক অর্থবোধক সূরা শিক্ষা দিন। এ সূরার মধ্যে এমন একটি অধিক অর্থ ও বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত আয়াত আছে যার চেয়ে অধিক অর্থবোধক আয়াত অন্য কোথাও নেই। সেটি হলোঃ

فَمَنْ يَعْمَلْ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ خَيْرًا يَرَهٗ

‘‘যে ব্যক্তি এক যার্রা বা অণু পরিমাণ নেকীর কাজ করবে সে তাও দেখতে পাবে।’’ (সূরা আয্ যিলযা-ল ৯৯ : ৮)

এ অসীম বৈশিষ্ট্যের কারণে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে এ সূরাটি সম্পূর্ণ পড়িয়ে শুনালেন।

লোকটি শপথ করে করে বলল, আমি কখনো এর বেশী করব না, এ শপথ ছিল তাকীদ এবং দৃঢ়তা প্রকাশার্থে যা মূলত বায়‘আত ও প্রতিশ্রুতির অর্থে ব্যবহৃত রয়েছে। ‘আল্লামা ত্বীবী (রহঃ) বলেন, এর অর্থ হলো ‘‘আমি যা শুনলাম সেটা আমার জন্য যথেষ্ট’’, এরপর আমি কিছু শুনতে পারি অথবা না পারি তাতে আমার কোন পরোয়া নেই। লোকটি চলে যেতে লাগলে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মন্তব্য ‘‘লোকটি সফলকাম’’, সফলকামের অর্থ হলো কৃতকার্য হওয়া, উদ্দেশ্য হাসিল করা, কামিয়াব হওয়া।

রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ বাক্যটি দু’বার বলেছেন, তাকীদ হিসেবে অর্থাৎ- কথাটির গুরুত্ব বুঝানোর জন্য। অথবা একবার বলেছেন, দুনিয়ার সফলতার জন্য, আরেকবার আখিরাতের সফলতা বুঝানোর জন্য।


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৮: কুরআনের মর্যাদা (كتاب فضائل القراٰن) 8. The Excellent Qualities of the Quran

পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ

২১৮৪-[৭৬] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন বললেন, তোমাদের কেউ কি দৈনিক (কুরআনের) এক হাজার আয়াত করে পড়তে পারে? সাহাবীগণ বললেন, কে আছে দৈনিক (কুরআনের) এক হাজার আয়াত করে পড়তে পারে? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তখন বললেন, তাহলে তোমাদের কেউ কি প্রত্যহ ’সূরা আল হা-কুমুত্ তাকা-সুর’ পড়তে পারে না? (বায়হাক্বী- শু’আবূল ঈমান)[1]

اَلْفَصْلُ الثَّالِثُ

وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَلَا يَسْتَطِيعُ أَحَدُكُمْ أَنْ يَقْرَأَ أَلْفَ آيَةٍ فِي كُلِّ يَوْمٍ؟» قَالُوا: وَمَنْ يَسْتَطِيعُ أَنْ يَقْرَأَ أَلْفَ آيَةٍ فِي كل يَوْم؟ قَالَ: أَمَا يَسْتَطِيعُ أَحَدُكُمْ أَنْ يَقْرَأَ: (أَلْهَاكُمُ التكاثر)
؟)
رَوَاهُ الْبَيْهَقِيّ فِي شعب الْإِيمَان

وعن ابن عمر قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم الا يستطيع احدكم ان يقرا الف اية في كل يوم قالوا ومن يستطيع ان يقرا الف اية في كل يوم قال اما يستطيع احدكم ان يقرا الهاكم التكاثررواه البيهقي في شعب الايمان

ব্যাখ্যা: এ প্রশ্নের অর্থ হলো প্রত্যেকের পক্ষে নিয়মিত এক হাজার আয়াত প্রতিদিন তিলাওয়াত সম্ভব হবে না। তবে তোমাদের কেউ কি প্রত্যহ সূরা আত্ তাকা-সুর তিলাওয়াত করতে পারবে না? হ্যাঁ, তা তো অবশ্যই পারবে, এ সূরা তিলাওয়াত হবে এক হাজার আয়াত তিলাওয়াতের (সাওয়াবের) স্থলাভিষিক্ত। অথবা এ সূরা পরকালীন হিসাবের প্রতি উৎসাহিত করা এবং দুনিয়া বিরাগী হওয়ার ক্ষেত্রে এক হাজার আয়াতের সমতুল্য।


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৮: কুরআনের মর্যাদা (كتاب فضائل القراٰن) 8. The Excellent Qualities of the Quran
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ২০ পর্যন্ত, সর্বমোট ২২ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে পাতা নাম্বারঃ 1 2 পরের পাতা »