২১৮৩

পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ

২১৮৩-[৭৫] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আমর (রাঃ) বলেন, এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে আরয করল, হে আল্লাহর রসূল! আমাকে কিছু শিখিয়ে দিন। তিনি বললেন, আলিফ্ লা-ম রা- সম্পন্ন সূরাগুলো হতে তিনটি সূরা পড়বে। সে ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রসূল! আমি বুড়ো হয়ে গেছি। আমার ’কলব’ কঠিন ও ’জিহবা’ শক্ত হয়ে গেছে (অর্থাৎ- আমার মুখস্থ হয় না)। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ তাহলে তুমি হা-মীম যুক্ত সূরাগুলোর মধ্যকার তিনটি সূরা পড়বে। আবার সে ব্যক্তি আগের জবাবের মতো জবাব দিলো। তারপর বলল, হে আল্লাহর রসূল! আমাকে আপনি পরিপূর্ণ অর্থবহ একটি সূরা শিখিয়ে দিন। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন তাকে ’সূরা ইযা- যুলযিলাত’ শেষ পর্যন্ত পড়িয়ে দিলেন। তখন সে ব্যক্তি বলল, যিনি আপনাকে সত্য নবী করে পাঠিয়েছেন, তাঁর শপথ, আমি (আপনার শিখানো) সূরার উপর কখনো আর কিছু বাড়াব না। এরপর লোকটি ওখান থেকে চলে গেল। এ সময় রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, লোকটি সফলতা লাভ করল, লোকটি সফলতা লাভ করল। (আহমদ ও আবূ দাঊদ)[1]

اَلْفَصْلُ الثَّالِثُ

وَعَن عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو قَالَ: أَتَى رَجُلٌ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ أَقْرِئْنِي يَا رَسُولَ اللَّهِ فَقَالَ: اقْرَأْ ثَلَاثًا مِنْ ذَوَاتِ (ألر)
فَقَالَ: كَبُرَتْ سِنِّي وَاشْتَدَّ قَلْبِي وَغَلُظَ لِسَانِي قَالَ: فَاقْرَأْ ثَلَاثًا مِنْ ذَوَاتِ (حم)
فَقَالَ مِثْلَ مَقَالَتِهِ. قَالَ الرَّجُلُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ أَقْرِئْنِي سُورَةً جَامِعَةً فَأَقْرَأَهُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ (إِذَا زُلْزِلَتْ الأَرْض)
حَتَّى فَرَغَ مِنْهَا فَقَالَ الرَّجُلُ: وَالَّذِي بَعَثَكَ بِالْحَقِّ لَا أَزِيد عَلَيْهَا أبدا ثمَّ أدبر الرَّجُلُ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
أَفْلَحَ الرُّوَيْجِلُ مَرَّتَيْنِ. رَوَاهُ أَحْمَدُ وَأَبُو دَاوُدَ

وعن عبد الله بن عمرو قال اتى رجل النبي صلى الله عليه وسلم فقال اقرىني يا رسول الله فقال اقرا ثلاثا من ذوات الرفقال كبرت سني واشتد قلبي وغلظ لساني قال فاقرا ثلاثا من ذوات حمفقال مثل مقالته قال الرجل يا رسول الله اقرىني سورة جامعة فاقراه رسول الله صلى الله عليه وسلم اذا زلزلت الارضحتى فرغ منها فقال الرجل والذي بعثك بالحق لا ازيد عليها ابدا ثم ادبر الرجل فقال رسول الله صلى الله عليه وسلمافلح الرويجل مرتين رواه احمد وابو داود

ব্যাখ্যা: আগন্তুক লোকটির নাম জানা যায়নি, সে গ্রাম্য লোক ছিল তাই হয়তো তার নাম জানা ছিল না। তার কুরআন শিক্ষার আবেদনের প্রেক্ষিতে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে যাওয়াতুর্ রা- বা আলিফ্ লা-ম রা- দ্বারা শুরু তিনটি সূরা শিক্ষার কথা বললেন। এ অক্ষর দ্বারা শুরুকৃত সূরা মোট পাঁচটি। যথা- (১) সূরা ইউনুস, (২) সূরা হূদ, (৩) সূরা ইউসুফ, (৪) সূরা ইব্রা-হীম এবং (৫) সূরা আল হিজর।

লোকটি তার বার্ধক্যের কথা উল্লেখ করে বললেন যে, আমার অন্তর কঠিন এবং জিহ্বা শক্ত হয়ে গেছে, এগুলো মুখস্থ করতে পারব না। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে হা-মীম সম্বলিত তিনটি সূরা অর্থাৎ- যে সূরার শুরুতে হা-মীম রয়েছে তা পড়ার কথা বললেন। হা-মীম ওয়ালা সূরা মোট সাতটি, যথা- (১) সূরা গাফির (আল মু’মিন), (২) সূরা ফুসসিলাত, (৩) সূরা আশ্ শূরা-, (৪) সূরা যুখরুফ, (৫) সূরা আদ্ দুখান, (৬) সূরা আল জা-সিয়াহ্ এবং (৭) সূরা আল আহক্বা-ফ। এগুলোকেই হাদীসের ভাষায় যাওয়াতু হা-মীম বলা হয়। লোকটি পূর্বের ন্যায় আপত্তি জানালেন এবং বললেন, হে আল্লাহর রসূল! আমাকে একটি জামি', অর্থাৎ- ব্যাপক অর্থবোধক সূরা শিখিয়ে দিন। সুনানু আবী দাঊদ ও আহমাদ-এর বর্ণনায় নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে তিন মুসাব্বাহাত সূরা শিক্ষার কথা বললেন। মুসাব্বাহাত ঐ সূরাগুলোকে বলা হয় যার শুরু التسبيح-এর মাদ্দাহ বা মূল ধাতু থেকে গঠিত শব্দ দ্বারা করা হয়েছে। এটাও সাতটি সূরাতে আনা হয়েছে। লোকটি সবকিছুতেই অপারগতা প্রকাশ করলে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে সূরা ‘‘ইযা- যুলযিলাত’’ পড়তে বললেন। লোকটি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট যেন এমন একটি বিষয় চাচ্ছিলেন যা ‘আমল সহজ কিন্তু তার মাধ্যমেই তিনি সফলতা লাভ করতে পারেন। এজন্য তিনি বলেছিলেন আমাকে একটি ব্যাপক অর্থবোধক সূরা শিক্ষা দিন। এ সূরার মধ্যে এমন একটি অধিক অর্থ ও বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত আয়াত আছে যার চেয়ে অধিক অর্থবোধক আয়াত অন্য কোথাও নেই। সেটি হলোঃ

فَمَنْ يَعْمَلْ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ خَيْرًا يَرَهٗ

‘‘যে ব্যক্তি এক যার্রা বা অণু পরিমাণ নেকীর কাজ করবে সে তাও দেখতে পাবে।’’ (সূরা আয্ যিলযা-ল ৯৯ : ৮)

এ অসীম বৈশিষ্ট্যের কারণে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে এ সূরাটি সম্পূর্ণ পড়িয়ে শুনালেন।

লোকটি শপথ করে করে বলল, আমি কখনো এর বেশী করব না, এ শপথ ছিল তাকীদ এবং দৃঢ়তা প্রকাশার্থে যা মূলত বায়‘আত ও প্রতিশ্রুতির অর্থে ব্যবহৃত রয়েছে। ‘আল্লামা ত্বীবী (রহঃ) বলেন, এর অর্থ হলো ‘‘আমি যা শুনলাম সেটা আমার জন্য যথেষ্ট’’, এরপর আমি কিছু শুনতে পারি অথবা না পারি তাতে আমার কোন পরোয়া নেই। লোকটি চলে যেতে লাগলে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মন্তব্য ‘‘লোকটি সফলকাম’’, সফলকামের অর্থ হলো কৃতকার্য হওয়া, উদ্দেশ্য হাসিল করা, কামিয়াব হওয়া।

রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ বাক্যটি দু’বার বলেছেন, তাকীদ হিসেবে অর্থাৎ- কথাটির গুরুত্ব বুঝানোর জন্য। অথবা একবার বলেছেন, দুনিয়ার সফলতার জন্য, আরেকবার আখিরাতের সফলতা বুঝানোর জন্য।


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৮: কুরআনের মর্যাদা (كتاب فضائل القراٰن)