পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ
৪১-[৪০] ’উসমান (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যখন ইন্তিকাল হলো, (তাঁর ইন্তিকালে শোকাহত হয়ে) তাঁর সাহাবীগণের মধ্যে কতক লোক অত্যন্ত চিন্তিত হয়ে পড়লেন। এমনকি সাহাবীগণের কারো কারো মনে নানারূপ সন্দেহ-সংশয় দেখা দেয়। (তাঁর ইন্তিকালের পর এ দীন টিকে থাকবে কি?) ’উসমান (রাঃ) বলেন, আমিও তাদের অন্যতম ছিলাম। এমতাবস্থায় আমি বসেছিলাম আর ’উমার (রাঃ) আমার পাশ দিয়ে চলে গেলেন এবং আমাকে সালামও দিলেন, অথচ আমি তা টেরও পেলাম না। ’উমার (রাঃ) গিয়ে আমার বিরুদ্ধে আবূ বকরের কাছে অভিযোগ পেশ করলেন। অতঃপর তাঁরা দু’জন আমার নিকট আসলেন এবং উভয়ে আমাকে সালাম করলেন। অতঃপর আবূ বকর (রাঃ) বললেন, তোমার ভাই ’উমার (রাঃ)-এর সালামের জবাব কেন দিলে না? আমি বললাম, আমি তো এরূপ করিনি। ’উমার (রাঃ) বললেন, আল্লাহর কসম! নিশ্চয় তুমি এরূপ করেছো। ’উসমান (রাঃ) বললেন, আমি বললাম, আল্লাহর কসম, আমি মোটেই বুঝতে পারিনি আপনি কখন এখান দিয়ে গেছেন ও আমাকে সালাম করেছেন। (কথোপকথন শুনে) আবূ বকর (রাঃ) বললেন, ’উসমান (রাঃ) সত্যই বলেছেন। নিশ্চয়ই আপনাকে কোন দুশ্চিন্তাই হয়তো বিরত রেখেছিল।
তখন আমি বললাম, জ্বি, হতে পারে। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, সে (ব্যাপারটা) কি? আমি বললাম, আল্লাহ তা’আলা তাঁর রসূলকে উঠিয়ে নিয়ে গেলেন অথচ আমরা তাঁকে একটি বিষয় (মনের অযথা খটকা) হতে বাঁচার উপায় সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতে পারিনি। আবূ বকর (রাঃ) বললেন, (চিন্তার কোন বিষয় নয়) আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করেছি। (এটা শুনে) আমি আবূ বকরের দিকে এগিয়ে গিয়ে বললাম, আমার মাতা-পিতা আপনার জন্য কুরবান হোক। আপনিই এ রকম কাজের যোগ্য ব্যক্তি। তারপর আবূ বকর (রাঃ) বললেন, আমি রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রসূল! এ বিষয়টি হতে মুক্তির উপায় কি? রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জবাবে বললেন, যে লোক সে কালিমাহ্ গ্রহণ করলো, যা আমি আমার চাচা (আবূ ত্বালিব)-কে বলেছিলাম এবং তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেছিলেন, তার জন্য এটাই হলো মুক্তির মাধ্যম। (আহমাদ)[1]
অর্থাৎ- তাদের কেউ কেউ সন্দেহে বা কুমন্ত্রণায় পড়ে গেল যে, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মৃত্যুবরণ করায় এ দীন শেষ হয়ে যাবে এবং ইসলামী শারী‘আতের উজ্জ্বল প্রদীপ নির্বাপিত হবে- (মিরকাত)। সাহাবী ‘উসমান (রাঃ)-এর উক্তি عَنْ نَجَاةِ هَذَ الْاَمْرِ -এর দ্বারা দু’টি বিষয় উদ্দেশ্য হতে পারে। ১ম মতঃ মু’মিনদের বর্তমান অবস্থা, অর্থাৎ- তারা কিভাবে জাহান্নাম থেকে পরিত্রাণ পাবে যা ইসলাম ধর্মের সাথে নির্দিষ্ট। ২য় মতঃ সকল মানুষের বর্তমান অবস্থা, অর্থাৎ- তারা যে শায়ত্বনের (শয়তানের) ধোঁকা, দুনিয়ার ভালোবাসা এবং কুপ্রবৃত্তির দিকে ধাবমান অবস্থার মধ্যে রয়েছে তা থেকে পরিত্রাণের উপায় সম্পর্কে- (মিরকাত)।
الفصل الثالث
عَنْ عُثْمَانَ بْنِ عَفَّانَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: إِنَّ رِجَالًا مِنْ أَصْحَابِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حِينَ تُوُفِّيَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَزِنُوا عَلَيْهِ حَتَّى كَادَ بَعْضُهُمْ يُوَسْوِسُ قَالَ عُثْمَان وَكنت مِنْهُم فَبينا أَنا جَالس فِي ظلّ أَطَم من الْآطَام مر عَليّ عمر رَضِي الله عَنهُ فَسلم عَليّ فَلم أشعر أَنه مر وَلَا سلم فَانْطَلق عمر حَتَّى دخل على أبي بكر رَضِي الله عَنهُ فَقَالَ لَهُ مَا يُعْجِبك أَنِّي مَرَرْت على عُثْمَان فَسلمت عَلَيْهِ فَلم يرد عَليّ السَّلَام وَأَقْبل هُوَ وَأَبُو بكر فِي وِلَايَةَ أَبِي بَكْرٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ حَتَّى سلما عَليّ جَمِيعًا ثمَّ قَالَ أَبُو بكر جَاءَنِي أَخُوك عمر فَذكر أَنه مر عَلَيْك فَسلم فَلم ترد عَلَيْهِ السَّلَام فَمَا الَّذِي حملك على ذَلِك قَالَ قُلْتُ مَا فَعَلْتُ فَقَالَ عُمَرُ بَلَى وَاللَّهِ لقد فعلت وَلكنهَا عبيتكم يَا بني أُميَّة قَالَ قُلْتُ وَاللَّهِ مَا شَعَرْتُ أَنَّكَ مَرَرْتَ وَلَا سَلَّمْتَ قَالَ أَبُو بَكْرٍ صَدَقَ عُثْمَانُ وَقد شَغَلَكَ عَنْ ذَلِكَ أَمْرٌ فَقُلْتُ أَجْلَ قَالَ مَا هُوَ فَقَالَ عُثْمَان رَضِي الله عَنهُ توفى الله عز وَجل نَبِيَّهُ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَبْلَ أَنْ نَسْأَلَهُ عَنْ نَجَاةِ هَذَا الْأَمْرِ قَالَ أَبُو بكر قد سَأَلته عَن ذَلِك قَالَ فَقُمْت إِلَيْهِ فَقلت لَهُ بِأَبِي أَنْتَ وَأُمِّي أَنْتَ أَحَقُّ بِهَا قَالَ أَبُو بَكْرٍ قُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ مَا نَجَاةُ هَذَا الْأَمْرِ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ قَبِلَ مِنِّي الْكَلِمَةَ الَّتِي عَرَضْتُ عَلَى عَمِّي فَرَدَّهَا فَهِيَ لَهُ نجاة. رَوَاهُ أَحْمد
Chapter - Section 3
‘Uthman said that when the Prophet died some of his companions were so grieved that they almost began to harbour doubts. Remarking that he was one of them, ‘Uthman said:
While I was sitting ‘Umar passed me and gave me a salutation, but I did not notice it. ‘Umar complained to Abu Bakr, and the two of them came forward and gave me a salutation; then Abu Bakr asked, “What induced you to refrain from returning the salutation of your brother ‘Umar?” I replied, “I did no such thing.” ‘Umar retorted, “Yes, I swear by God, you did.” I said, “I swear by God that I did not notice you passing me or giving me a salutation.” Abu Bakr then said, “‘Uthman is speaking the truth. Something must have distracted you.” On my replying that it had, he asked me what it was, and I said, “God has taken His Prophet before we asked him wherein this affair provides salvation.” Abu Bakr said that he had asked him about that, so I rose and went to him and said to him, “You for whom I would give my father and mother as ransom are most worthy of it.” Abu Bakr then told me that he had asked, “Messenger of God, wherein does this affair provide salvation?” to which God’s messenger replied, “If anyone accepts from me the confession which I proposed to my paternal uncle* and he rejected, it will be salvation for him.”
Ahmad transmitted it.
* Abu Talib, the uncle who gave protection in Makkah, but did not accept his religion.
ব্যাখ্যা: الوسوسة (ওয়াস্ওয়াসাহ্) বলা হয় মনের কথাকে। আর তা অবশ্যই সংঘটিত বিষয়। মানুষের ‘আকলে যখন কোন ত্রুটি দেখা দেয় এবং এতে সে আবোল-তাবোল কথা বলে এটাকেও الوسوسة বলা হয়। মানুষের মনে যে অন্যায় কথার উদয় হয় অথবা এমন বিষয়ের উদয় হয় যার মধ্যে কোন কল্যাণ নেই তাও الوسوسة। চিন্তার আধিক্যের কারণে। আমিও তাদের একজন ছিলাম যাদের মধ্যে الوسوسة সৃষ্টি হয়েছিল। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে এ বিষয় হতে মুক্তির উপায় সম্পর্কে জিজ্ঞেস করার আগেই আল্লাহ তাঁর মৃত্যু দিলেন। এ কথা দ্বারা তিনি শায়ত্বনের (শয়তানের) الوسوسة হতে মুক্তির উপায়ের বিষয়টি বুঝিয়েছেন।
পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ
৪২-[৪১] মিক্বদাদ [ইবনু আস্ওয়াদ] (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছেন, এ জমিনের উপর এমন কোন মাটির অথবা পশমের ঘর (তাঁবু) বাকী থাকবে না, যে ঘরে আল্লাহ রব্বুল ’আলামীন ইসলামের বাণী পৌঁছিয়ে দিবেন না। সম্মানীর ঘরে সম্মানের সাথে আর লাঞ্ছিতের ঘরে লাঞ্ছনার সাথে তা পৌঁছাবেন। আল্লাহ তা’আলা যাদেরকে সম্মানিত করবেন তাদেরকে স্বেচ্ছায় ইসলাম কবূলের উপযুক্ত করে মর্যাদাবান ও গৌরবময় করে দিবেন। পক্ষান্তরে যারা ইসলাম গ্রহণ করবে না, তাদের আল্লাহ তা’আলা লাঞ্ছিত করবেন এবং তারা এ কালিমার প্রতি অনুগত হবার জন্য বাধ্য হবে। আমি (মিক্বদাদ) বললাম, তখন তো সমগ্র বিশ্বে আল্লাহরই দীন (প্রতিষ্ঠিত) হয়ে যাবে। (অর্থাৎ- সকল দীনের উপরই ইসলাম বিজয়ী হবে)। (আহমাদ)[1]
ইমাম আহমাদ (রহঃ) হাদীসটি সহীহ সানাদে বর্ণনা করেছেন। এ হাদীসটি অন্যরাও বর্ণনা করেছেন যাদের নাম আমি (আলবানী) আমার লিখিত গ্রন্থ تَحْذِيْرُ السَّاجِدِ مِنْ اِتِّخَاذِ الْقُبُوْرِ الْمَسَاجِدَ এ উল্লেখ করেছি। ইমাম বুখারী এ হাদীসটি মু‘আল্লিক্ব (সানাদবিহীন) সূত্রে তথা সানাদ ছাড়াই বর্ণনা করেছেন।
الفصل الثالث
عَن الْمِقْدَاد بن الْأسود قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: يَقُولُ لَا يَبْقَى عَلَى ظَهْرِ الْأَرْضِ بَيْتُ مَدَرٍ وَلَا وَبَرٍ إِلَّا أَدْخَلَهُ اللَّهُ كلمة الاسلام بعز عَزِيز أَو ذل ذليل إِمَّا يعزهم الله عز وَجل فَيَجْعَلُهُمْ مِنْ أَهْلِهَا أَوْ يُذِلُّهُمْ فَيَدِينُونَ لَهَا
رَوَاهُ أَحْمد
Chapter - Section 3
Miqdad reported that he heard God’s messenger say, “There will not remain on the face of the earth a mud-brick house or a camel’s hair tent which God will not cause the confession of Islam to enter bringing both mighty honour and abject abasement. God will either honour the occupants and put them among its adherents, or will humiliate them and they will be subject to it.” Miqdad said, “God will then receive complete obedience.”
Ahmad transmitted it.
ব্যাখ্যা: আল্লাহ তা‘আলা প্রতিটি ঘরে ইসলামের কালিমাহ্ প্রবেশ করাবেন। হয়ত ঘরের মালিক ইসলামের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ যুদ্ধে অংশ না নিয়ে এ কালিমাহ্ গ্রহণ করে সম্মানিত হবেন অথবা প্রতিরোধ যুদ্ধে অংশ নিয়ে বন্দি হয়ে দাসত্ব বরণ করে লাঞ্ছিত হবে। অতঃপর ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় এর আনুগত্য করবে। অথবা জিয্ইয়াহ্ প্রদানের মাধ্যমে তার বশ্যতা স্বীকার করবে। মিক্বদাদ বলেনঃ আমি বললাম তাহলে দীন একমাত্র আল্লাহর হয়ে যাবে। অর্থাৎ- বিষয় যদি এ রকমই হয় তাহলে তো আল্লাহর দীনেরই বিজয় ঘটবে। বলা হয়ে থাকে যে, এটা তখন ঘটবে যখন ‘ঈসা (আঃ) আকাশ থেকে অবতরণ করবেন। অতঃপর তিনি দাজ্জালকে হত্যা করবেন। পৃথিবীতে তখন কাফিরদের কোন আস্তানা থাকবে না। বরং সবাই ইসলামের পতাকা তলে সমবেত হবে। হয়তবা তারা স্বেচ্ছায় আগ্রহভরে গ্রহণ করবে। নতুবা অনিচ্ছা সত্ত্বেও বাধ্য হয়ে করবে। তখন শুধুমাত্র আল্লাহর বিধান জারী থাকবে। এর সমর্থনে মুসনাদ আহমাদে আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে হাদীস বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তার (‘ঈসা (আঃ) এর) যুগে সকল ধর্ম বিলীন হয়ে যাবে। একমাত্র ইসলাম ধর্ম টিকে থাকবে।
পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ
৪৩-[৪২] ওয়াহব ইবনু মুনাব্বিহ (রহঃ) হতে বর্ণিত। তাকে জিজ্ঞেস করা হলো, ’’লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ’’ (আল্লাহ ছাড়া প্রকৃত কোন মা’বূদ নেই)- এ বাক্য কি জান্নাতের চাবি নয়? তিনি (ওয়াহব) বললেন, নিশ্চয় (এটা চাবি)! কিন্তু প্রত্যেক চাবির মধ্যেই দাঁত থাকে। তুমি যদি দাঁতওয়ালা চাবি নিয়ে যাও তবেই তো তোমার জন্য (জান্নাতের দরজা) খুলে দেয়া হবে, অন্যথায় তা তোমার জন্য খোলা হবে না। (ইমাম বুখারী তাঁর ’তারজামাতুল বাব’ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন)[1]
الفصل الثالث
عَن وهب بن مُنَبّه قِيلَ لَهُ: أَلَيْسَ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ مِفْتَاحُ الْجَنَّةِ قَالَ بَلَى وَلَكِنْ لَيْسَ مِفْتَاحٌ إِلَّا لَهُ أَسْنَانٌ فَإِنْ جِئْتَ بِمِفْتَاحٍ لَهُ أَسْنَانٌ فَتَحَ لَكَ وَإِلَّا لَمْ يَفْتَحْ لَكَ. رَوَاهُ الْبُخَارِيُّ فِي تَرْجَمَة بَاب
Chapter - Section 3
Wahb b. Munabbih, on being asked whether ‘There is no god but God’ was not the key of paradise, said, “Yes, but every key has wards. If you bring a key with wards the door will be opened for you, otherwise I it will not.”
Bukhari transmitted it in a chapter heading.
ব্যাখ্যা: ‘‘লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ জান্নাতের চাবী’’ তবে কেউ যেন এ ধোঁকায় পতিত না হয় যে, শুধুমাত্র এ কালিমাহ্ পাঠ করলেই তার জন্য জান্নাতের দরজা খুলে দেয়া হবে। আর কোন ‘আমল ছাড়াই প্রথম শ্রেণীর জান্নাতীদের সাথে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। প্রত্যেক চাবীরই দাঁত থাকে যা দ্বারা দরজা খোলা যায়? অতএব তুমি যদি এমন চাবী নিয়ে আসতে পারো যাতে দাঁত আছে তাহলেই দরজা খুলবে। আর দাঁত দ্বারা উদ্দেশ্য এমন সৎ ‘আমল যার সাথে কোন অসৎ ‘আমল মিশ্রিত থাকবে না। এ হাদীসে সৎ ‘আমলকে চাবীর দাঁতের সাথে তুলনা করা হয়েছে। আর যদি দন্তহীন চাবী নিয়ে আসো তাহলে তোমার জন্য দরজা খোলা হবে না। ফলে তুমি প্রথম শ্রেণীর লোকেদের সাথে জান্নাতেও প্রবেশ করতে পারবে না। আর এটা অধিকাংশের বেলায় প্রযোজ্য। আর সঠিক কথা হলো কাবীরাহ্ (কবিরা) গুনাহে জড়িত ব্যক্তি আল্লাহর ইচ্ছাধীন। এটাই আল্ জামা‘আত-এর অভিমত।
পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ
৪৪-[৪৩] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন তোমাদের কেউ উত্তমভাবে (সত্য ও খালিস মনে) মুসলিম হয়, তখন তার জন্য প্রত্যেক সৎ কাজের সাওয়াব দশ গুণ থেকে সাতশত গুণ পর্যন্ত লেখা হয়। আর তার অসৎ কাজ- যা সে করে থাকে, তার অনুরূপই (মাত্র এক গুণই গুনাহ) ’আমলনামায় লেখা হয়, যে পর্যন্ত না সে আল্লাহর দরবারে পৌঁছে। (বুখারী, মুসলিম)[1]
الفصل الثالث
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ:
إِذَا أَحْسَنَ أَحَدُكُمْ إِسْلَامَهُ فَكُلُّ حَسَنَةٍ يَعْمَلُهَا تُكْتَبُ لَهُ بِعشر أَمْثَالهَا إِلَى سبع مائَة ضعف وكل سَيِّئَة يعملها تكْتب لَهُ بِمِثْلِهَا
Chapter - Section 3
Abu Huraira reported God’s messenger as saying, “When one of you makes a good profession of Islam, every good deed he does will be recorded for him ten to seven hundredfold, and every evil deed he does will be recorded as it is till he meets God.”
(Bukhari and Muslim.)
ব্যাখ্যা: বিশ্বাস ও নিষ্ঠার মাধ্যমে যার ইসলাম সুন্দর হয়, প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য সকল দিক থেকেই সে ইসলামের অনুসারী হয়। ‘আমলের সময় আল্লাহ তার নিকটেই আছে এরূপ মনে করে এবং তিনি তাকে দেখছেন এমনটি ভাবে তাহলে তার প্রতিটি ভালো ‘আমলের সাওয়াব দশ থেকে সাতশ’ গুণ লেখা হয়। যদিও বক্তব্যটি উপস্থিত লোকেদের উদ্দেশে দেয়া হয়েছে তথাপি এর হুকুম সর্বব্যাপী। কেননা একজনের প্রতি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কোন হুকুম বা আদেশ সকলের জন্য প্রযোজ্য। আর এতে নারী পুরুষ, স্বাধীন ও দাস সবাই সমান।
ইমাম ত্বীবী (রহঃ) বলেনঃ হাদীসে إِلى শব্দটি শেষ সীমা বুঝাবার জন্য ব্যবহার করা হয়েছে। অর্থাৎ- সৎ ‘আমলের প্রতিদান কমপক্ষে দশগুণ থেকে সর্বোচ্চ সাতশ’ গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হবে। আর তা কাজ, ব্যক্তি ও অবস্থাভেদে কম-বেশী হবে। এ বৃদ্ধিকরণ সাতশত অতিক্রম করবে না। তবে এ অভিমত নিম্নবর্ণিত আল্লাহর বাণী দ্বারা প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। ‘‘আল্লাহ যাকে ইচ্ছা তাকে আরো বাড়িয়ে দিবেন’’- (সূরাহ্ আল বাক্বারাহ্ ২ঃ ২৬১)।
হাফিয বলেনঃ এ বর্ণনাটির দু’টি অর্থ হতে পারে- (১) এ বৃদ্ধিকরণ সাতশ’ পর্যন্ত হতে পারে। ইমাম বায়যাবী এমনটিই বলেছেন। (২) এ বৃদ্ধিকরণ সাতশ’ বা তারও বেশী হতে পারে। এর সমর্থনে সহীহুল বুখারীতে ‘কিতাবুর্ রিক্বাক্ব’-এ (নাসীহাত পর্বে) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত হাদীস রয়েছে। তাতে আছে ‘‘আল্লাহ তার জন্য দশটি নেকী থেকে সাতশত গুণ পর্যন্ত বা আরো অনেক বেশী লেখেন’’। অতএব সাতশত গুণ থেকে উদ্দেশ্য আধিক্য। সংখ্যা উদ্দেশ্য নয়, যারা ঈমানের হ্রাস বা বৃদ্ধিকে অস্বীকার করে এ হাদীসটি তাদের অভিমত প্রত্যাখ্যান করে।
পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ
৪৫-[৪৪] আবূ উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, জনৈক লোক রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করলো, হে আল্লাহর রসূল! ঈমান কী? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, যখন তোমাকে নেক (সৎ) কাজ আনন্দ দিবে ও খারাপ (অসৎ) কাজ পীড়া দিবে, তখন তুমি মু’মিন। আবার সে লোকটি জিজ্ঞেস করলো, হে আল্লাহর রসূল! খারাপ (অসৎ) কাজ কি? উত্তরে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, যখন কোন কাজ করতে তোমার মনে দ্বিধা ও সন্দেহের উদ্রেক করে (তখন মনে করবে এটা গুনাহের কাজ), তখন তা ছেড়ে দিবে। (আহমাদ)[1]
الفصل الثالث
وَعَنْ أَبِي أُمَامَةَ أَنَّ رَجُلًا سَأَلَ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَا الْإِيمَانُ قَالَ إِذَا سَرَّتْكَ حَسَنَتُكَ وَسَاءَتْكَ سَيِّئَتُكَ فَأَنْتَ مُؤْمِنٌ قَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ فَمَا الْإِثْمُ قَالَ إِذَا حَاكَ فِي نَفْسِكَ شَيْءٌ فَدَعْهُ» . رَوَاهُ أَحْمد
Chapter - Section 3
Abu Umama reported that a man asked God’s messenger what faith was, to which he replied, “When your good deed pleases you and your evil deed grieves you, you are a believer.” He then asked what sin was and received the reply, “When you have a besetting sin, give it up.”
Ahmad transmitted it.
ব্যাখ্যাঃ ইমাম ত্বীবী (রহঃ) বলেনঃ যখন তোমার দ্বারা আনুগত্যের কাজ সম্পাদিত হবে আর এতে তুমি আনন্দিত হবে এ কথা বিশ্বাস করে যে, এ কারণে তুমি পুরস্কৃত হবে। আর তোমার দ্বারা যদি কোন গুনাহের কাজ হয়ে যায় তবে তুমি চিন্তিত হও এটাই আল্লাহ ও পরকালের প্রতি বিশ্বাসের আলামত।
গুনাহের কাজ কি? এ ব্যাপারে যখন কোন স্পষ্ট দলীল ও বিশুদ্ধ প্রমাণাদি থাকার ফলে কোন বিষয়ে সন্দেহের সৃষ্টি হয় ও মনে খটকা লাগে এবং এর বিধান সম্পর্কে নিশ্চিত না হওয়া যায়, ফলে মনে প্রশান্তি আসে না বরং মনে এমন ভাবের সৃষ্টি হয় যে, মন তা করতে সায় দেয় না তবে তা পরিত্যাগ করা উচিত। এটা তাদের বেলায় প্রযোজ্য যাদের অন্তঃকরণ পরিষ্কার, হৃদয় পবিত্র। আর সাধারণ লোক যাদের হৃদয় গুনাহের অন্ধকারে নিমজ্জিত তাদের ক্ষেত্রে এটা প্রযোজ্য নয়। কেননা কোন কোন ক্ষেত্রে ভালো কাজকেই গুনাহের কাজ মনে করতে পারে আবার গুনাহের কাজকেও সাওয়াবের কাজ মনে করে বসতে পারে।
পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ
৪৬-[৪৫] ’আমর ইবনু ’আবাসাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খিদমাতে উপস্থিত হয়ে জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রসূল! এ দীনে (ইসলামের দা’ওয়াতের ব্যাপারে একেবারে প্রথমদিকে) আপনার সাথে আর কারা ছিলেন? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, আযাদ ব্যক্তি (আবূ বকর) ও একজন গোলাম (বিলাল)। আমি পুনরায় জিজ্ঞেস বললাম, ইসলাম (তার নিদর্শন) কী? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, মার্জিত কথাবার্তা বলা ও (অভুক্তকে) আহার করানো। অতঃপর আমি জিজ্ঞেস করলাম, ঈমান (তার পরিচয়) কী? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, (গুনাহের কাজ হতে) ধৈর্য ধরা ও দান করা। তিনি (’আমর) বলেন, আমি জিজ্ঞেস করলাম, কোন্ ইসলাম উত্তম? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, যার হাত ও জিহ্বার অনিষ্ট হতে অন্য মুসলিম নিরাপদ থাকে। (’আমর বলেন) আমি পুনরায় জিজ্ঞেস করলাম, কোন্ ঈমান (ঈমানের কোন্ শাখা) উত্তম? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, সৎস্বভাব। (’আমর বলেন) আমি জিজ্ঞেস করলাম, সালাতে কোন্ জিনিস উত্তম? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, দীর্ঘ সময় নিয়ে ক্বিয়াম (কিয়াম) করা। আমি জিজ্ঞেস করলাম, কোন্ হিজরত উত্তম। উত্তরে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, মহান আল্লাহ যা অপছন্দ করে তুমি এমন কাজ ছেড়ে দিবে। আমি বললাম, কোন্ জিহাদ উত্তম? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, যার ঘোড়ার হাত-পা কর্তিত এবং নিজের রক্ত নির্গত হয়েছে (অর্থাৎ- সে ব্যক্তি সর্বোত্তম যার ঘোড়া যুদ্ধে মারা যায় এবং সেও শহীদ হয়)। আমি বললাম, সর্বোত্তম কোন্ সময়? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) উত্তরে বললেন, শেষ রাতের মধ্যভাগ। (আহমাদ)[1]
এখানে قُنُوْطٌ (কুনূত্ব) দ্বারা ক্বিয়াম (কিয়াম), ক্বিরাআত (কিরআত) অথবা বিনয় নম্রতা তিনটিই উদ্দেশ্য হতে পারে। جَوْفُ الْلَيْلِ (জাওফুল লায়ল) অর্থ মধ্যরাত্রি। ইমাম আহমাদ (রহঃ) হাদীসটি তার মুসনাদের ৫/২৩২ নং পৃষ্ঠায় সহীহ সানাদে বর্ণনা করেছেন।
الفصل الثالث
عَن عَمْرو بن عبسة قَالَ: أَتَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقُلْتُ يَا رَسُول الله من تبعك عَلَى هَذَا الْأَمْرِ قَالَ حُرٌّ وَعَبْدٌ قُلْتُ مَا الْإِسْلَامُ قَالَ طِيبُ الْكَلَامِ وَإِطْعَامُ الطَّعَامِ قُلْتُ مَا الْإِيمَانُ قَالَ الصَّبْرُ وَالسَّمَاحَةُ قَالَ قُلْتُ أَيُّ الْإِسْلَامِ أَفْضَلُ قَالَ مَنْ سَلِمَ الْمُسْلِمُونَ مِنْ لِسَانِهِ وَيَدِهِ قَالَ قُلْتُ أَيُّ الْإِيمَانِ أَفْضَلُ قَالَ خُلُقٌ حَسَنٌ قَالَ قُلْتُ أَيُّ الصَّلَاةِ أَفْضَلُ قَالَ طُولُ الْقُنُوتِ قَالَ قُلْتُ أَيُّ الْهِجْرَةِ أَفْضَلُ قَالَ أَنْ تَهْجُرَ مَا كره رَبك عز وَجل قَالَ قلت فَأَيُّ الْجِهَادِ أَفْضَلُ قَالَ مَنْ عُقِرَ جَوَادُهُ وَأُهْرِيقَ دَمُهُ قَالَ قُلْتُ أَيُّ السَّاعَاتِ أَفْضَلُ قَالَ جَوف اللَّيْل الآخر. . . رَوَاهُ أَحْمد
Chapter - Section 3
‘Amr b. ‘Abasa said:
I came to God's messenger and asked, “Who is associated with you in this matter, messenger of God?” He replied, “Both freeman and slave.” I asked what Islam was and he said, I “Pleasant speech and the provision of food.” I asked what faith was and he said, “Endurance and benevolence.” I asked what aspect of Islam was most excellent, and he replied that it was to be seen in him from whose tongue and hand the Muslims were safe. I asked what aspect of faith was most excellent, and he replied that it was a good disposition. I asked what feature of prayer was most excellent, and he replied that it consisted in standing for a long time in [silent] humility. I asked him what aspect of emigration (hijra) was most excellent, and he replied, “Abandoning (an tahjura) what your Lord abhors.” I asked what aspect of jihad was most excellent, and he replied that it was when a man’s steed was wounded and his blood was shed. I asked him which hour was most excellent, and he replied that it was towards the end of the darkest part of the night.
Ahmad transmitted it.
ব্যাখ্যা: উত্তম কথা বলা ও খাদ্য খাওয়ানো- এ দু’টি বিষয়ের মধ্যে উত্তম চরিত্রের প্রতি উৎসাহ প্রদান এবং দয়া প্রদর্শনের প্রতি ইঙ্গিত রয়েছে। যদি তা মিষ্টি কথার মাধ্যমেও হয়। ইমাম ত্বীবী বলেনঃ এ হাদীসে ঈমানকে ধৈর্য ও দানশীলতা দ্বারা ব্যাখ্যা করা হয়েছে। কেননা ধৈর্য নিষিদ্ধ কাজ পরিত্যাগ করার আর দানশীলতা আদিষ্ট কাজ বাস্তবায়নের প্রমাণ বহন করে। যেমনটি হাসান বসরী (রহঃ) ব্যাখ্যা করেছেন। এ দু’টি অভ্যাসের সাথে উত্তম চরিত্রকে সংযোজন করা হয়েছে। এর ভিত্তি হলো ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর বাণী ‘‘রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর চরিত্র ছিল আল-কুরআন’’ অর্থাৎ- তিনি তা পালন করেন আল্লাহ তাঁকে যে আদেশ প্রদান করেছেন, আর তা থেকে বিরত থাকেন আল্লাহ যা করতে নিষেধ করেছেন। কোন্ ইসলাম উত্তম, অর্থাৎ- কোন্ শ্রেণীর মুসলিম অধিক সাওয়াবের অধিকারী।
خُلُقٌ এমন ক্ষমতা বা যোগ্যতাকে বলা হয় যার কারণে কোন ব্যক্তির দ্বারা সহজেই কোন কাজ সম্পাদন হয়। কোন্ সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) উত্তম? এর জওয়াবে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ‘‘দীর্ঘ কুনূত’’, অর্থাৎ- দীর্ঘ ক্বিয়াম (কিয়াম) অথবা ক্বিরাআত (কিরআত) বা নম্রতা। তবে প্রথম অর্থটিই অধিক প্রকাশমান।
কোন্ হিজরত উত্তম? এ প্রশ্নের কারণ এই যে, হিজরত অনেক প্রকারের রয়েছে। উত্তরে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তুমি তা পরিত্যাগ করবে যা তোমার রব অপছন্দ করেন। এ প্রকারের হিজরত উত্তম এজন্য যে তা ব্যাপক।
কোন্ প্রকারের জিহাদ বা কোন্ ধরনের মুজাহিদ উত্তম? এর জওয়াবে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, জিহাদে যার ঘোড়া নিহত হয়েছে এবং তার নিজের রক্ত প্রবাহিত হয়েছে সেই উত্তম মুজাহিদ। এ মুজাহিদ এজন্য উত্তম যে, সে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য সম্পদও ব্যয় করেছেন এবং নিজেও শাহীদ হয়েছেন।
(جَوْفُ اللَّيْلِ الْاۤخِرُ) দ্বারা উদ্দেশ্য রাতের ২য় ভাগের মধ্যাংশ। আর তা হলো রাতের ছয় ভাগের কম সময়। আর রাতের এ অংশেই আল্লাহ তা‘আলা দুনিয়ার আকাশে নেমে আসেন। ইমাম তিরমিযী (রহঃ) ‘আমর ইবনু ‘আবাসাহ্ (রাঃ) সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করেন, ‘‘শেষ রাতের মধ্যভাগে মহান রব বান্দার অতি নিকটবর্তী হন। যারা এ সময়ে আল্লাহর স্মরণে মত্ত থাকে তুমি সক্ষম হলে তাদের অন্তর্ভুক্ত হও’’।
পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ
৪৭-[৪৬] মু’আয ইবনু জাবাল (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক না করে, (দৈনিক) পাঁচ ওয়াক্ত সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করে এবং রমাযানের সিয়াম পালন করে তাঁর কাছে পৌঁছাবে, তাকে মাফ করে দেয়া হবে। আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আমি কি এ সুসংবাদ তাদেরকে জানিয়ে দিব না? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, (না) তাদেরকে ’আমল করতে দাও। (আহমাদ)[1]
الفصل الثالث
وَعَن مُعَاذِ بْنِ جَبَلٍ قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «مَنْ لَقِيَ اللَّهَ لَا يُشْرِكُ بِهِ شَيْئا يُصَلِّي الْخَمْسَ وَيَصُومُ رَمَضَانَ غُفِرَ لَهُ قُلْتُ أَفَلَا أُبَشِّرُهُمْ يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ دَعْهُمْ يَعْمَلُوا» . رَوَاهُ أَحْمد
Chapter - Section 3
Mu‘adh b. Jabal said that he heard God’s messenger say, “He who meets his Lord having associated nothing with Him, observed the five times of prayer, and fasted during Ramadan will be forgiven.” Mu'adh asked whether he should not give them the good news, but was told to let them go on doing [good] works.
Ahmad transmitted it.
ব্যাখ্যা: এ হাদীসে যাকাত ও হাজ্জের (হজ্জের/হজের) কথা উল্লেখ করা হয়নি কারণ তা ধনীদের জন্য খাস। আর বিশেষভাবে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) ও সিয়াম উল্লেখ করা হয়েছে এজন্য যে, তা উত্তম প্রসিদ্ধ ও ব্যাপক। তাকে ক্ষমা করা হবে, অর্থাৎ- তার সগীরাহ্ গুনাহ্ ক্ষমা করা হবে। আর কাবীরাহ্ (কবিরা) গুনাহসমূহের মধ্যে যেগুলো আল্লাহর হক সেগুলো তার ইচ্ছাধীন। আর যেগুলো বান্দার হক সেগুলোর ব্যাপারে সম্ভব যে আল্লাহ তা‘আলা স্বীয় অনুগ্রহ দ্বারা তাদেরকে সন্তুষ্ট করে দিবেন।
পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ
৪৮-[৪৭] মু’আয ইবনু জাবাল (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদা তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করলেন, উত্তম ঈমান সম্পর্কে? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, কাউকে তুমি ভালোবাসলে আল্লাহর ওয়াস্তেই ভালোবাসবে। অপরদিকে শত্রুতা করলে তাও আল্লাহর ওয়াস্তেই করবে এবং নিজের জিহ্বাকে (খালিস মনে) আল্লাহর যিকরে মশগুল রাখবে। তিনি (মু’আয) জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রসূল! এছাড়া আমি আর কি করব? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, অপরের জন্য সে-ই জিনিস পছন্দ কর যা নিজের জন্য পছন্দ কর। আর অপরের জন্যও তা অপছন্দ করবে যা নিজের জন্য অপছন্দ করে থাকো (অর্থাৎ- সকলেরই কল্যাণ কামনা করবে)। (আহমাদ)[1]
الفصل الثالث
وَعَن معَاذ أَنَّهُ سَأَلَ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنْ أَفْضَلِ الْإِيمَانِ قَالَ: «أَنْ تُحِبَّ لِلَّهِ وَتُبْغِضَ لِلَّهِ وَتُعْمِلَ لِسَانَكَ فِي ذِكْرِ اللَّهِ قَالَ وماذا يَا رَسُول الله قَالَ وَأَن تحب للنَّاس مَا تحب لنَفسك وَتَكْرَهُ لَهُمْ مَا تَكْرَهُ لِنَفْسِكَ» . رَوَاهُ أَحْمَدُ
Chapter - Section 3
Mu‘adh b. Jabal said that he asked the Prophet what was the most excellent aspect of faith, and received the reply, “That you should love for God’s sake, hate for God’s sake, and employ your tongue in making mention of God.” “What more, messenger of God?” he asked and was told, “That you should like other people to have what you like yourself, and dislike that they should have what you dislike yourself.”
Ahmad transmitted it.
ব্যাখ্যা: ‘‘তুমি মানুষের জন্য তাই পছন্দ করবে যা তুমি নিজের জন্য পছন্দ কর’’। অর্থাৎ- ইহকালীন ও পরকালীন বৈধ বিষয়সমূহ এবং আনুগত্যমূলক কাজসমূহ লোকেদের জন্য তদ্রূপ পছন্দ করবে যেমন তা তুমি নিজের জন্য পছন্দ কর। এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো তুমি তাদের জন্য তা অর্জন হওয়া পছন্দ কর যা তুমি নিজের জন্য অর্জন হওয়া পছন্দ কর। বিষয়গুলো চাই ইন্দ্রিয়গত হোক বা না হোক। এর দ্বারা উদ্দেশ্য এটা নয় যে, তোমার নিকট যা আছে তা তার কাছে চলে যাওয়া তুমি পছন্দ করবে। অথবা হুবহু ঐ বস্তু তাদের নিকট থাকবে। কেননা একই বস্তু দুই স্থানে থাকা সম্ভব নয়। আর এ প্রকারের ভালোবাসা বা পছন্দ সাধারণ লোকের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। আর বিশেষ লোকেদের ঈমান তখন পূর্ণ হবে যখন সে প্রত্যেক মুসলিমের জন্য পছন্দ করবে যে, সে তার চেয়েও উঁচু মর্যাদা সম্পন্ন হোক। এজন্য ফুযায়ল ইবনু ‘ইয়ায ‘উয়াইনাকে বলেছিলেন, তুমি মানুষের জন্য ততক্ষণ পর্যন্ত পূর্ণ কল্যাণকামী হতে পারবে না যতক্ষণ না তুমি এটা পছন্দ করবে যে, প্রত্যেক মুসলিম তোমার চেয়ে উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন হোক। আর এটা হিংসা বিদ্বেষ ও প্রতারণা পরিত্যাগ ব্যতীত অর্জন সম্ভব নয়।
পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - কাবীরাহ্ (কবিরা) গুনাহ ও মুনাফিক্বীর নিদর্শন
জমহূরসহ পূর্বপরের সকল ’আলিমের মতে পাপসমূহ দু’ভাগে বিভক্ত কতগুলো বড় পাপ আর কতগুলো ছোট পাপ। এ বিষয়ে সূরা আন্ নিসা’র ৩১ নং এবং সূরাহ্ আন্ নাজ্ম-এর ৩২ নং আয়াতসহ কুরআন সুন্নাহর অসংখ্য প্রমাণ বিদ্যমান রয়েছে। তবে কাবীরার সংজ্ঞার ক্ষেত্রে জমহূরের মতবিরোধ পরিলক্ষিত হয়েছে। ইবনু ’আব্বাস (রাঃ)-এর ভাষ্য মতে- ’’কাবীরাহ্ (কবিরা) ঐসব পাপ যেগুলোর ক্ষেত্রে আল্লাহ তা’আলা জাহান্নাম, গযব, অভিশাপ অথবা ’আযাবের কথা বলেছেন’’। কারো কারো মতে, কাবীরাহ্ (কবিরা) ঐসব পাপ যাতে জড়িত হলে দুনিয়ায় হাদ্দ বা শাস্তি অবধারিত হয়েছে এবং আখিরাতে জাহান্নামের প্রতিশ্রুতি রয়েছে। তবে অগ্রাধিকারযোগ্য অভিমত হলোঃ কাবীরাহ্ (কবিরা) ঐসব পাপ যেগুলোকে বড় বলা হয়েছে বা যা সম্পাদনে আখিরাতে শাস্তির প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে বা যেগুলোর ক্ষেত্রে গযব, অভিশাপের কথা বলা হয়েছে বা হাদ্দ অবধারিত হয় বা যার সম্পাদনকারীকে ফাসিক্ব বলে অভিহিত করা হয়েছে।
জেনে রাখা ভালো যে, পূর্ববর্তী ও পরবর্তী যুগের অধিকাংশ ’আলিমের মতে গুনাহ দুই ভাগে বিভক্ত। কাবীরাহ্ (কবিরা) ও সগীরাহ্। এ বিষয়ে কুরআনে ও হাদীসে প্রমাণাদি স্পষ্ট।
আল্লাহ তা’আলার বাণীঃ ’’তোমরা যদি নিষিদ্ধকৃত কাবীরাহ্ (কবিরা) গুনাহ পরিহার কর তাহলে আমি তোমাদের ছোট গুনাহগুলো ক্ষমা করে দিব।’’ (সূরাহ্ আন্ নিসা ৪: ৩১)
আল্লাহ তা’আলা আরো বলেনঃ ’’যারা কাবীরাহ্ (কবিরা) গুনাহ থেকে এবং অশ্লীল কার্য থেকে বেঁচে থাকে সগীরাহ্ গুনাহ্ ব্যতিরেকে।’’ (সূরাহ্ আন্ নাজম ৫৩: ৩২)
সহীহ হাদীসগুলো থেকে প্রমাণিত যে, এমন কিছু গুনাহ রয়েছে যা পাঁচ ওয়াক্ত সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) রমাযানের সিয়াম, হাজ্জ (হজ/হজ্জ), ’উমরাহ্ ও ’আরাফাহ্ দিবসের সিয়াম, ’আশূরার সিয়াম এবং সৎকার্য দ্বারা মাফ হয়ে যায়। আবার এমন কিছু গুনাহ্ রয়েছে যা উপরোক্ত কার্যাবলী দ্বারা মাফ হয়ে যায় না। যেমন সহীহ হাদীসে বর্ণিত হয়েছে ’’যতক্ষণ সে কাবীরাহ্ (কবিরা) গুনাহ্ না করে।’’
যে সকল গুনাহের ব্যাপারে স্পষ্ট প্রমাণাদি রয়েছে তা কাবীরাহ্ (কবিরা) বা মহাপাপ। অথবা ঐ গুনাহের ফলে পরকালে শাস্তির ওয়া’দা অথবা আল্লাহর অসন্তুষ্টি লা’নাত কিংবা অপরাধের ইহকালীন শাস্তি বা তা কঠোরভাবে অস্বীকার করা হয়েছে বা তা সম্পাদনকারীকে ফাসিক্ব বলে ভূষিত করা হয়েছে ওগুলো কাবীরাহ্ (কবিরা) গুনাহ্।
৪৯-[১] ’আবদুল্লাহ ইবনু মাস্’ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক লোক রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রসূল! আল্লাহর কাছে সর্বাধিক বড় গুনাহ কোনটা? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তোমাকে যিনি সৃষ্টি করেছেন, সেই আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করা। অতঃপর পুনরায় সে জিজ্ঞেস করলো, তারপর কোনটা? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তোমার সন্তান তোমার সাথে খাবে- এ ভয়ে তাকে হত্যা করা। পুনরায় প্রশ্ন করলো, তারপর কোনটা? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তোমার প্রতিবেশীর স্ত্রীর সাথে ব্যভিচার করা। তিনি [ইবনু মাস্’ঊদ (রাঃ)] বলেছেন, এর সমর্থনে আল্লাহ তা’আলা (কুরআনে) অবতীর্ণ করলেনঃ ’’তারাই আল্লাহর প্রকৃত বান্দা, যারা আল্লাহ ব্যতীত অন্য কাউকে মা’বূদ হিসেবে গণ্য করে না, আল্লাহ যাদের হত্যা করা হারাম করে দিয়েছেন, আইনের বিধান ছাড়া তাদের (অন্যায়ভাবে) হত্যা করে না এবং ব্যভিচার করে না। আর যে এগুলো করে সে শাস্তির সাক্ষাৎ লাভ করবে।’’- (সূরাহ্ আল ফুরক্বান ২৫: ৬৮)। (বুখারী, মুসলিম)[1]
ইমাম হাকিম (রহঃ)-এর পাণ্ডুলিপিতে শব্দটি تُزَانِىَ আকারে রয়েছে। তবে মূললিপিতে تُزَانِىَ-এর পরিবর্তে تَزْنِىَ রয়েছে।
بَابُ الْكَبَائِرِ وَعَلَامَاتِ النِّفَاقِ- الفصل الأول
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ قَالَ: قَالَ رَجُلٌ: يَا رَسُولَ اللَّهِ أَيُّ الذَّنْبِ أَكْبَرُ عِنْدَ اللَّهِ قَالَ أَنْ تَدْعُوَ لِلَّهِ نِدًّا وَهُوَ خَلَقَكَ قَالَ ثُمَّ أَيٌّ قَالَ ثمَّ أَنْ تَقْتُلَ وَلَدَكَ خَشْيَةَ أَنْ يَطْعَمَ مَعَكَ قَالَ ثمَّ أَي قَالَ ثمَّ أَن تُزَانِي بحليلة جَارك فَأنْزل الله عز وَجل تَصْدِيقَهَا (وَالَّذِينَ لَا يَدْعُونَ مَعَ اللَّهِ إِلَهًا آخَرَ وَلَا يَقْتُلُونَ النَّفْسَ الَّتِي حَرَّمَ اللَّهُ إِلَّا بِالْحَقِّ وَلَا يزنون وَمن يفعل ذَلِك يلق أثاما)
الْآيَة
Chapter: Major Sins and the Signs of Hypocrisy - Section 1
‘Abdallah b. Mas'ud said that a man asked God’s messenger, what was the greatest sin in God’s sight, to which he replied, “That you should treat anything as equal to God when He has created you." “What next?’’ he asked, to which he replied, “That you should kill your child for fear that he may eat along with you.”. ‘‘What next?" he asked, to which he replied, “That you should commit adultery with your neighbour’s wife." God has revealed words which verify this :
“Those who do not invoke another god along with God, or kill one whom God has declared inviolate without a just cause, or commit fornication..." *
(Bukhari and Muslim.)
* Quran, 25:68
ব্যাখ্যা: এ হাদীসের মধ্যে এ ইঙ্গিত রয়েছে যে, একক আল্লাহর সাথে পৃথিবীর কোন কিছুকে শরীক করা সব চাইতে কদর্য বা খারাপ কাজ। শির্কের পরে কোন কাজ অধিক অপরাধমূলক? এ প্রশ্নের জবাবে আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ স্বীয় আদরের সন্তানকে এ আশঙ্কায় হত্যা করা যে, সে তোমার সাথে খাবার খাবে। হত্যা করাটাই একটা অপরাধ। এ হত্যা কাজের সাথে যখন স্বীয় সন্তান হত্যার বিষয় যুক্ত হয় তখন তা আরো কদর্য বা বেশী অপরাধ বলে সাব্যস্ত হয়। এ হাদীসটি ঐ আয়াতের সমার্থক যেখানে আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, ‘‘দরিদ্র হবার ভয়ে তোমরা স্বীয় সন্তানদের হত্যা করো না’’- (সূরাহ্ বানী ইসরাঈল ১৭ঃ ৩১)।
‘‘তোমার প্রতিবেশীর স্ত্রীর সাথে ব্যভিচার করা’’ এ বাক্যাংশের ব্যাখ্যায় ইমাম নাবাবী বলেন, تزاني শব্দের মর্মার্থ হলো ‘‘তার সম্মতিক্রমে তার সাথে ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়া’’। এতে ব্যভিচারের সাথে আরো দু’টি অপরাধযুক্ত আছে। সে ঐ মহিলাকে তার স্বামীর বিরুদ্ধে বিগড়িয়ে দিয়েছে এবং তার অন্তরকে ব্যভিচারীর প্রতি আকৃষ্ট করেছে। এ কাজ দু’টি আরো কদর্য। আর এ কাজটি তার প্রতিবেশীর স্ত্রীর সাথে করা যা আরো অধিক কদর্য। আরো মহা অপরাধ। কেননা প্রতিবেশী তার নিকট থেকে আশা করে যে, সে তার পক্ষ হয়ে প্রতিবেশীর ও তার স্ত্রীর জন্য প্রতিরোধ গড়ে তুলবে। তার অনিষ্ট থেকে নিরাপদে থাকবে। তার দ্বারা নিরাপত্তা লাভ করবে। আর তাকে তো এ আদেশই দেয়া হয়েছে যে, সে প্রতিবেশীকে সম্মান করবে। তার প্রতি দয়াপ্রদর্শন করবে। সে যখন এ সবের পরিবর্তে তার স্ত্রীর সাথে ব্যভিচার করে, তার স্ত্রীকে তার বিরুদ্ধে বিগড়িয়ে দেয়- তখন তা কদর্যের শেষ সীমানায় পৌঁছে যায়।
পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - কাবীরাহ্ (কবিরা) গুনাহ ও মুনাফিক্বীর নিদর্শন
৫০-[২] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কাউকে আল্লাহর সঙ্গে শরীক করা, পিতা-মাতার অবাধ্য হওয়া, কাউকেও হত্যা করা, মিথ্যা শপথ করা বড় গুনাহ। (বুখারী)[1]
بَابُ الْكَبَائِرِ وَعَلَامَاتِ النِّفَاقِ- الفصل الأول
وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «الْكَبَائِرُ الْإِشْرَاكُ بِاللَّهِ وَعُقُوقُ الْوَالِدَيْنِ وَقَتْلُ النَّفْسِ وَالْيَمِين الْغمُوس» . رَوَاهُ البُخَارِيّ
Chapter: Major Sins and the Signs of Hypocrisy - Section 1
‘Abdallah b. ‘Amr reported God’s messenger as saying, “The major sins are associating other objects of worship with God, disobedience to parents, murder, and deliberate perjury (al-yamin al-ghamus)."
Bukhari transmitted it.
ব্যাখ্যা: আল্লাহর সাথে অংশী স্থাপন করার মর্মার্থ হলো আল্লাহ ব্যতিরেকে অন্য কাউকে ইলাহ গ্রহণ করা। এর দ্বারা উদ্দেশ হলো কুফরী করা। বিশেষভাবে শির্কের উল্লেখ করার কারণ হলো এর অস্তিত্বের প্রাধান্য বিশেষ করে তৎকালীন ‘আরব দেশসমূহে। অতএব কুফরীর অন্যান্য প্রকার সম্পর্কে সতর্ক করার উদ্দেশে তা উল্লেখ করা হয়েছে।
পিতা-মাতার অবাধ্য হওয়ার মর্মার্থ হলো তাদের আদেশ অমান্য করা এবং তাদের সেবা না করা। এ থেকে উদ্দেশ্য হলো সন্তান কর্তৃক এমন কথা ও কাজ সম্পাদিত হওয়া যার কারণে পিতা-মাতা কষ্ট পায়। তবে শির্ক ও আল্লাহর অবাধ্যতার ব্যাপারটি স্বতন্ত্র। অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করা এবং মিথ্যা শপথ করাও কাবীরাহ্ (কবিরা) গুনাহের অন্তর্ভুক্ত। মিথ্যা শপথ বলতে অতীতে ঘটে যাওয়া কোন বিষয় সম্পর্কে স্বেচ্ছায় মিথ্যা শপথ করাকে বুঝানো হয়েছে। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, সে যা করেনি সে সম্পর্কে এমন বলা যে, আল্লাহর শপথ আমি অবশ্যই তা করেছি। আর যা করেছে সে সম্পর্কে বলা যে, আল্লাহর শপথ আমি এটি করিনি। এ ধরনের শপথকে غُمُوْسً বলার কারণ এই যে, এ ধরনের শপথ শপথকারীকে জাহান্নামে প্রবেশ করায়।
পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - কাবীরাহ্ (কবিরা) গুনাহ ও মুনাফিক্বীর নিদর্শন
৫১-[৩] আর আনাস (রাঃ) এর বর্ণনায় ’মিথ্যা শপথ’-এর পরিবর্তে ’’মিথ্যা সাক্ষ্য’’ দেয়ার কথা উল্লেখ রয়েছে। (বুখারী, মুসলিম)[1]
بَابُ الْكَبَائِرِ وَعَلَامَاتِ النِّفَاقِ- الفصل الأول
وَفِي رِوَايَةِ أَنَسٍ: «وَشَهَادَةُ الزُّورِ» بَدَلُ: «الْيَمِينُ الْغمُوس»
Chapter: Major Sins and the Signs of Hypocrisy - Section 1
Anas’s version has “false witness” (shahadat al-zur) instead of ‘‘deliberate perjury."
(Bukhari and Muslim.)
ব্যাখ্যা: মিথ্যা সাক্ষ্যকে زور নামকরণের কারণ এই যে, এই সাক্ষ্য দ্বারা সত্য থেকে বাতিলের দিকে ঝুঁকিয়ে দেয়া হয়। হাফিয ইবনু হাজার বলেন, زور এর সংজ্ঞা হলো কোন বস্তুকে তার বিপরীত গুণ দ্বারা সংজ্ঞায়িত করা। কথাকেও زُوْرِ বলা হয়ে থাকে যা মিথ্যা ও না-হক বা বাতিলকে শামিল করে। যখন زُّوْرِ শব্দটিকে সাক্ষ্যের সাথে সম্বন্ধ করা হয় তখন তা শক্ত মিথ্যা সাক্ষ্যকেই বুঝায়।
পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - কাবীরাহ্ (কবিরা) গুনাহ ও মুনাফিক্বীর নিদর্শন
৫২-[৪] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ (হে লোক সকল!) সাতটি ধ্বংসাত্মক বিষয় হতে তোমরা দূরে থাকবে। সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রসূল! এ সাতটি বিষয় কী? জবাবে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, (১) আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করা। (২) যাদু করা। (৩) শারী’আতের অনুমতি ব্যতীত কাউকে (অন্যায়ভাবে) হত্যা করা। (৪) সুদ খাওয়া। (৫) (অন্যায়ভাবে) ইয়াতীমের মাল খাওয়া। (৬) জিহাদের মাঠ থেকে পালিয়ে আসা। (৭) নির্দোষ ও সতী-সাধ্বী মুসলিম মহিলার বিরুদ্ধে ব্যভিচারের অপবাদ দেয়া। (বুখারী, মুসলিম)[1]
بَابُ الْكَبَائِرِ وَعَلَامَاتِ النِّفَاقِ- الفصل الأول
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «اجْتَنِبُوا السَّبْعَ الْمُوبِقَاتِ قَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ وَمَا هُنَّ قَالَ الشِّرْكُ بِاللَّهِ وَالسِّحْرُ وَقَتْلُ النَّفْسِ الَّتِي حَرَّمَ اللَّهُ إِلَّا بِالْحَقِّ وَأَكْلُ الرِّبَا وَأَكْلُ مَالِ الْيَتِيمِ وَالتَّوَلِّي يَوْمَ الزَّحْفِ وَقَذْفُ الْمُحْصَنَاتِ الْمُؤْمِنَاتِ الْغَافِلَاتِ»
Chapter: Major Sins and the Signs of Hypocrisy - Section 1
Abu Huraira reported God’s messenger as saying, “Avoid the seven noxious things." When his hearers asked, “What are they, messenger of God?" he replied, “Associating anything with God, magic, killing one whom God has declared inviolate without a just cause, devouring usury, consuming the property of an orphan, turning back when the army advances, and slandering chaste women who are believers but indiscreet."
(Bukhari and Muslim.)
ব্যাখ্যা : মানাবী (রহঃ) বলেন, সর্বাপেক্ষা বড় গুনাহ্ হলো শির্ক, অতঃপর অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করা।
(سِحْرٌ) সিহর (যাদু) বলা হয় এমন বিষয়কে যা সাধারণ নিয়মের বহির্ভূত। তা সংঘটিত হয় দুষ্ট লোকেদের দ্বারা। জমহূর (অধিকাংশ) ‘আলিমদের মতানুযায়ী যাদুর বাস্তবতা রয়েছে এবং তার প্রভাবও বিদ্যমান। যা মানুষের মেজাজ বিগড়িয়ে দেয়। ইমাম নাবাবী (রহঃ) বলেন, যাদু হারাম। তন্মধ্যে কিছু আছে কুফরী আর কিছু এমন যা কুফরী নয় তবে কাবীরাহ্ (কবিরা) গুনাহ্। যদি যাদুর মধ্যে এমন কথা ও কাজ থাকে যা কুফরীর পর্যায়ের তাহলে এমন যাদু কুফরী নচেৎ তা কুফরী নয়। সর্বাবস্থায় যাদু শিখা এবং তা শিক্ষা দেয়া হারাম।
যে কোন পন্থায় সুদগ্রহণ করা এবং অন্যায়ভাবে ইয়াতীমের মাল আত্মসাৎ করা কাবীরাহ্ (কবিরা) গুনাহের অন্তর্ভুক্ত। যুদ্ধের ময়দান থেকে পলায়ন করা তখনই কাবীরাহ্ (কবিরা) গুনাহ্ বলে গণ্য হবে যখন শত্রুর সংখ্যা মুসলিমের দ্বিগুণের অধিক না হবে। মুসলিম সতীসাধ্বী নারীদের বিরুদ্ধে ব্যভিচারের অপবাদ দেয়া কাবীরাহ্ (কবিরা) গুনাহ। কাফির নারীদের প্রতি এরূপ অপবাদ দেয়া কাবীরাহ্ (কবিরা) গুনাহ নয়।
গাফিলাত বলতে সে সমস্ত নারীকে বুঝায়, যারা অশ্লীল কাজ কর্ম হতে মুক্ত। তবে যারা অশ্লীল কর্ম থেকে মুক্ত নয়, এরূপ নারীদের প্রতি অপবাদ আরোপ করা হারাম নয় যদি তাদের অশ্লীলতা প্রকাশমান হয়।
পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - কাবীরাহ্ (কবিরা) গুনাহ ও মুনাফিক্বীর নিদর্শন
৫৩-[৫] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যিনাকারী যখন যিনা করে তখন আর সে ঈমানদার থাকে না। চোর যখন চুরি করে তখন সে ঈমানদার থাকে না। মদ্যপ যখন মদ পান করে তখন তার আর ঈমান থাকে না। যখন ডাকাত এভাবে ডাকাতি করে যে, যখন চোখ তোলে তাকিয়ে থাকে তখন তার ঈমান থাকে না। এভাবে কেউ যখন গনীমাতের মালে খিয়ানাত করে, তখন তার ঈমান থাকে না। অতএব সাবধান! (এসব গুনাহ হতে দূরে থাকবে)। (বুখারী, মুসলিম)[1]
بَابُ الْكَبَائِرِ وَعَلَامَاتِ النِّفَاقِ- الفصل الأول
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «لَا يَزْنِي الزَّانِي حِينَ يَزْنِي وَهُوَ مُؤْمِنٌ وَلَا يشرب الْخمر حِين يشْربهَا وَهُوَ مُؤمن وَلَا يَسْرِقُ السَّارِقُ حِينَ يَسْرِقُ وَهُوَ مُؤْمِنٌ وَلَا ينتهب نهبة ذَات شرف يرفع النَّاس إِلَيْهِ أَبْصَارهم فِيهَا حِينَ يَنْتَهِبُهَا وَهُوَ مُؤْمِنٌ وَلَا يَغُلُّ أَحَدُكُمْ حِين يغل وَهُوَ مُؤمن فإياكم إيَّاكُمْ»
Chapter: Major Sins and the Signs of Hypocrisy - Section 1
Abu Huraira reported God’s messenger as saying, “When one commits fornication he is not a believer, when one steals he is not a believer, when one drinks wine he is not a believer, when one takes plunder on account of which men raise their eyes at him he is not a believer, and when one of you defrauds he is not a believer; so beware, beware!"
(Bukhari and Muslim.)
ব্যাখ্যা: হাদীসের প্রকাশমান অর্থ দ্বারা বুঝা যায় যে, কাবীরাহ্ (কবিরা) গুনাহে লিপ্ত ব্যক্তি মু’মিন নয় যেমনটি খারিজী এবং মু‘তাযিলাগণ বলে থাকে। তবে জামা‘আত তাদের বিপরীত মত পোষণ করেন এবং এ হাদীসের বিভিন্ন ব্যাখ্যা করেছেন। এ হাদীস এবং কুরআন ও অন্যান্য হাদীসের মধ্যে সমন্বয় করার উদ্দেশে, যে দলীলগুলো প্রমাণ বহন করে যে, শির্ক ব্যতীত অন্য কোন কাবীরাহ্ (কবিরা) গুনাহ্’র দরুন কাউকে কাফির বলা যায় না। বরং এমন ব্যক্তি মু’মিন, তবে তাদের ঈমান অসম্পূর্ণ। যদি তারা তাওবাহ্ করে তবে শাস্তি থেকে রেহাই পাবে। আর যদি তাওবাহ্ ব্যতীত কাবীরাহ্ (কবিরা) গুনাহে লিপ্ত থেকেই মারা যায় তাহলে তারা আল্লাহর ইচ্ছাধীন। আল্লাহ ইচ্ছা করলে তাদের ক্ষমাও করতে পারেন আবার শাস্তিও দিতে পারেন।
পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - কাবীরাহ্ (কবিরা) গুনাহ ও মুনাফিক্বীর নিদর্শন
৫৪-[৬] ইবনু ’আব্বাস (রাঃ)-এর বর্ণনায় এটাও আছে, হত্যাকারী যখন অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করে, সে সময়ও তার ঈমান থাকে না। ’ইকরিমাহ্ (রহঃ) বলেন, আমি ইবনু ’আব্বাস (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, কিরূপে ঈমান তার থেকে বের করে নেয়া হবে? তিনি বললেন, এভাবে (এ কথা বলে) তিনি তার হাতের অঙ্গুলিসমূহ পরস্পরের ফাঁকের মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়ে, পরে তা পৃথক করে নিলেন। অতঃপর সে যদি তওবা্ করে, তাহলে পুনরায় ঈমান তার মধ্যে এভাবে ফিরে আসবে- এ কথা বলে পুনরায় তিনি দুই হাতের আঙ্গুলসমূহ পরস্পরের ফাঁকের মধ্যে ঢুকিয়ে দিলেন। আর আবূ ’আবদুল্লাহ ইমাম বুখারী (রহঃ) বলেছেন, সে মু’মিন থাকে না। অর্থাৎ- সে প্রকৃত বা পূর্ণ মু’মিন থাকে না কিংবা তার ঈমানের নূর থাকে না। এটা বুখারীর বর্ণনার হুবহু শব্দাবলী।[1]
اَبُوْ عَبْدُ اللهِ [আবূ ‘আবদুল্লাহ] এটি ইমাম বুখারীর উপনাম।
بَابُ الْكَبَائِرِ وَعَلَامَاتِ النِّفَاقِ- الفصل الأول
وَفِي رِوَايَة ابْن عَبَّاس: «وَلَا يَقْتُلُ حِينَ يَقْتُلُ وَهُوَ مُؤْمِنٌ» . قَالَ عِكْرِمَةُ: قُلْتُ لِابْنِ عَبَّاسٍ: كَيْفَ يُنْزَعُ الْإِيمَانُ مِنْهُ؟ قَالَ: هَكَذَا وَشَبَّكَ بَيْنَ أَصَابِعِهِ ثُمَّ أَخْرَجَهَا فَإِنْ تَابَ عَادَ إِلَيْهِ هَكَذَا وَشَبَّكَ بَيْنَ أَصَابِعِهِ وَقَالَ أَبُو عَبْدِ اللَّهِ: لَا يَكُونُ هَذَا مُؤْمِنًا تَامًّا وَلَا يَكُونُ لَهُ نُورُ الْإِيمَان. هَذَا لفظ البُخَارِيّ
Chapter: Major Sins and the Signs of Hypocrisy - Section 1
The version of Ibn ‘Abbas contains “When one commits murder he is not a believer.” ‘Ikrima said that he asked Ibn 'Abbas how faith could be snatched away from him, and he replied “Thus (interlacing his fingers and then separating them), but if he repents, it will return to him thus,” and he interlaced his fingers. Aba ‘Abdallah said that such a one is not a perfect believer and does not possess the light of faith. This is Bukhari's wording.
ব্যাখ্যা: এ হাদীসের সারসংক্ষেপ এই যে, অন্তরে বিশ্বাস করা মৌখিক স্বীকৃতি প্রদান এবং বিশ্বাস ও স্বীকৃতি অনুপাতে কাজ করার নাম ঈমান। আর এ নূর অর্থ ঈমানের পূর্ণতা আর তা হলো সৎকাজ সম্পাদন করা এবং নিষিদ্ধ কাজ হতে বিরত থাকা। অতএব কোন ব্যক্তি যদি আদিষ্ট কাজে ত্রুটি করে অথবা ব্যভিচার, মদপান ও চুরির মতো গুনাহের কাজে জড়িয়ে পরে তখন তার নূর চলে যায় তার ঈমানের পূর্ণতা দূর হয়ে যায়। ফলে এমন ব্যক্তি পাপ-পঙ্কিলতার অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়ে যায়।
পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - কাবীরাহ্ (কবিরা) গুনাহ ও মুনাফিক্বীর নিদর্শন
৫৫-[৭] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মুনাফিক্বের নিদর্শন তিনটি- (১) যখন কথা বলে, মিথ্যা বলে; (২) যখন ওয়া’দা করে, তা ভঙ্গ করে এবং (৩) যখন তার নিকট কোন আমানাত রাখা হয়, তার খিয়ানত (বিশ্বাসঘাতকতা) করে। ইমাম মুসলিমের বর্ণনায় আরো আছে, চাই সে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করুক ও সিয়াম পালন করুক এবং দাবী করে সে মুসলিম।[1]
بَابُ الْكَبَائِرِ وَعَلَامَاتِ النِّفَاقِ- الفصل الأول
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ( «آيَةُ الْمُنَافِقِ ثَلَاثٌ» . زَادَ مُسْلِمٌ: «وَإِنْ صَامَ وَصَلَّى وَزَعَمَ أَنَّهُ مُسْلِمٌ» . ثُمَّ اتَّفَقَا: «إِذَا حَدَّثَ كَذَبَ وَإِذَا وَعَدَ أَخْلَفَ وَإِذَا اؤتمن خَان»
Chapter: Major Sins and the Signs of Hypocrisy - Section 1
Abu Huraira reported God's messenger as saying, “There are three signs of a hypocrite.” Muslim added, “Even if he fasts, prays, and asserts that he is a Muslim.” Thereafter both Bukhari and Muslim said, “When he speaks he lies, when he makes a promise he breaks it, and when he is trusted he betrays his trust.”
ব্যাখ্যা: নিফাক্বের শাব্দিক অর্থ হলো আভ্যন্তরীণ বিষয় বাহ্যিক বিষয়ের বিপরীত হওয়া। এ বৈপরীত্য যদি বিশ্বাসের ক্ষেত্রে হয় তবে তা নিফাকুল কুফর। একে বড় নিফাক্ব বা মুনাফিক্বী বলা হয়। আর এ নিফাক্ব যদি বিশ্বাসের ক্ষেত্রে না হয় তবে তা নিফাকুল ‘আমল। আর তা কোন কাজ সম্পাদনের ক্ষেত্রেও হতে পারে। আবার কাজ না করার ক্ষেত্রেও হতে পারে। আর এ ধরনের নিফাক্বকে ছোট মুনাফিক্বী বলা হয়। আর তা হলো বাহ্যিকভাবে কোন কাজ সুন্দরভাবে সম্পাদন করা, কিন্তু দীনের আভ্যন্তরীণ বিষয়কে সংরক্ষণ না করা। যদিও এ ধরনের লোকেরা মুসলিমদের ন্যায় সালাত (সালাত/নামায/নামাজ), সওম ও অন্যান্য ‘ইবাদাতমূলক কাজ সম্পাদন করে তবুও তারা মুনাফিক্ব। এ হাদীসে বিশেষভাবে তিনটি অভ্যাসকে মুনাফিক্বের নিদর্শনরূপে উল্লেখ করার কারণ এই যে, এ তিনটি অভ্যাস নিফাক্বের ভিত্তি। কেননা মিথ্যা হলো বাস্তবের বিপরীত সংবাদ দেয়া।
আর আমানাতের হক হলো তা তার মালিকের নিকট ফেরত দেয়া। আর আমানাত হলো খিয়ানাতের বিপরীত। আর ওয়া‘দা ভঙ্গ করা অর্থ ওয়া‘দার বিপরীত কাজ করা। আর এ বৈপরীত্যই নিফাক্বের মূল। যার মধ্যে এগুলোর সমাবেশ ঘটবে এবং তা অভ্যাসে পরিণত করে নিবে এবং তা অব্যাহত রাখবে, ফলে তার ব্যক্তি সত্তার মধ্যে এগুলো দৃঢ় হয়ে যাবে। যার অবস্থা এমন হয়ে যাবে যে তার মধ্যে সত্য প্রবেশের কোন রাস্তা থাকবে না এবং আমানাতের উপযোগী থাকবে না। যার অবস্থা এরূপ হবে তাকে মুনাফিক্বরূপে নামকরণ করাই বেশী উপযোগী। আর মু’মিনের মধ্যে এ রকম কোন অভ্যাস পাওয়া গেলেও তা ক্ষণিকের জন্য। যদিও সে কিছু সময় এ কাজে লিপ্ত থাকে পরক্ষণেই তা আবার ত্যাগ করে। কোন একটি অভ্যাস তার মধ্যে পাওয়া গেলে অন্যটি অনুপস্থিত থাকে। এসবগুলো একত্রে এবং স্থায়ীভাবে কেবলমাত্র মুনাফিক্বের মধ্যেই পাওয়া সম্ভব।
পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - কাবীরাহ্ (কবিরা) গুনাহ ও মুনাফিক্বীর নিদর্শন
৫৬-[৮] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ চারটি স্বভাব যার মধ্যে পাওয়া যাবে, সে খাঁটি মুনাফিক্ব এবং যার মধ্যে তার একটি দেখা যাবে তার মধ্যে মুনাফিক্বের একটি স্বভাব থাকবে, যে পর্যন্ত না সে তা পরিহার করবে- (১) যখন তার নিকট কোন আমানত রাখা হয় সে তা খিয়ানত করে, (২) যখন কথা বলে, মিথ্যা বলে, (৩) যখন ওয়াদা করে, ভঙ্গ করে এবং (৪) যখন কারো সাথে ঝগড়া-বিবাদ করে, তখন সে অশ্লীলভাষী হয়। (বুখারী, মুসলিম)[1]
بَابُ الْكَبَائِرِ وَعَلَامَاتِ النِّفَاقِ- الفصل الأول
وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «أَرْبَعٌ مَنْ كُنَّ فِيهِ كَانَ مُنَافِقًا خَالِصًا وَمَنْ كَانَتْ فِيهِ خَصْلَةٌ مِنْهُنَّ كَانَتْ فِيهِ خَصْلَةٌ مِنَ النِّفَاقِ حَتَّى يَدَعَهَا إِذَا اؤْتُمِنَ خَانَ وَإِذَا حَدَّثَ كَذَبَ وَإِذَا عَاهَدَ غَدَرَ وَإِذا خَاصم فجر»
Chapter: Major Sins and the Signs of Hypocrisy - Section 1
‘Abdallah b. ‘Amr reported God's messenger as saying, “Four characteristics constitute anyone who possesses them a sheer hypocrite, and anyone who possesses one of them possesses a characteristic of hypocrisy till he abandons it:
when he is trusted he betrays his trust, when he talks he lies, when he makes a covenant he acts treacherously, and when he quarrels he deviates from the truth.”
(Bukhari and Muslim.)
ব্যাখ্যা: এ হাদীসে বর্ণিত চারটি অভ্যাস যার মধ্যে আছে সে খাঁটি মুনাফিক্ব। অর্থাৎ- এ চারটি অভ্যাসের ব্যাপারে সে খাঁটি মুনাফিক্ব। অন্যান্য বিষয়ে নয়। অথবা এর দ্বারা মুনাফিক্বদের সাথে এরূপ ব্যক্তির সাদৃশ্য আধিক্য বুঝানো হয়েছে অথবা যার মধ্যে এ অভ্যাসগুলো স্থায়ীভাবে গেড়ে বসেছে সে খাঁটি মুনাফিক্ব। প্রশ্ন হতে পারে যে পূর্বের হাদীসে মুনাফিক্বের আলামত ৩টি অভ্যাসের মধ্যে সীমাবদ্ধ করা হয়েছে। এ হাদীসে কিভাবে চারটি অভ্যাসের কথা বলা হলো? এর জওয়াব এই যে মুসলিমের বর্ণনাটি যেভাবে এসেছে তা দ্বারা সীমাবদ্ধতা বুঝায় না। তাতে হাদীসের শব্দ এরূপ مِنْ عَلَامَةِ الْمُنَافِقٍ ثَلَاثٌ মুনাফিক্বের নিদর্শনের মধ্যে তিনটি নিদর্শন। এতে বুঝা যায় যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক সময় কিছু নিদর্শনের কথা আলোচনা করেছেন। আবার অন্য সময় অন্য কিছু নিদর্শনের কথা আলোচনা করেছেন। অথবা বলা যায় যে, নির্দিষ্ট সংখ্যা উল্লেখ করার অর্থ এ নয় যে, এর সংখ্যা এর চাইতে বেশী হবে না।
পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - কাবীরাহ্ (কবিরা) গুনাহ ও মুনাফিক্বীর নিদর্শন
৫৭-[৯] ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মুনাফিক্বের দৃষ্টান্ত সে বকরীর ন্যায়, যে দুই ছাগপালের মধ্যে থেকে (নরের খোঁজে) একবার এ পালে ঝুঁকে আর একবার ঐ পালের দিকে দৌড়ায়। (মুসলিম)[1]
بَابُ الْكَبَائِرِ وَعَلَامَاتِ النِّفَاقِ- الفصل الأول
وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «مثل الْمُنَافِق كَمثل الشَّاة الْعَائِرَةِ بَيْنَ الْغُنْمَيْنِ تَعِيرُ إِلَى هَذِهِ مَرَّةً وَإِلَى هَذِه مرّة» . رَوَاهُ مُسلم
Chapter: Major Sins and the Signs of Hypocrisy - Section 1
Ibn ‘Umar reported God's messenger as saying, “The hypocrite is like a ewe which goes to and fro between two flocks, turning at one time to the one and at another time to the other.”
Muslim transmitted it.
ব্যাখ্যা: (الْعَائِرَةِ) এমন ছাগলকে বলা হয় যে পাঁঠা চায় ফলে তা দু’টি পালের মাঝে দৌড়াদৌড়ি করে। কোন একটি দলের সাথে স্থায়ীভাবে থাকে না। তদ্রূপ মুনাফিক্ব বাহ্যিকরূপে মু’মিনের সঙ্গী অথচ তার অন্তর মুশরিকের সাথে। সে এমনটি করে তার প্রবৃত্তির তাড়নায় ও অসৎ উদ্দেশে এবং তার প্রবৃত্তি যা চায় তার দিকে ঝুঁকে পড়ার কারণে। ফলে সে দুই পাল ছাগলের মাঝে যাতায়াতকারী ছাগলের মতই।
পরিচ্ছেদঃ ১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - কাবীরাহ্ (কবিরা) গুনাহ ও মুনাফিক্বীর নিদর্শন
৫৮-[১০] সফ্ওয়ান ইবনু ’আস্সাল (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা এক ইয়াহূদী তার সঙ্গীকে বলল, এসো, আমাকে এ নবী লোকটির নিকট নিয়ে চল। সঙ্গী বলল, তাঁকে ’নবী’ বলবে না, কারণ সে যদি তা শুনে তাহলে সে আনন্দে আত্মহারা হয়ে যাবে। অতঃপর তারা উভয়ে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এলো এবং তাঁকে (মূসার) নয়টি স্পষ্ট হুকুম সম্পর্কে জিজ্ঞেস করল। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ (১) আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করবে না, (২) চুরি করবে না, (৩) ব্যভিচার করবে না, (৪) [শারী’আতের অনুমতি ব্যতিরেকে) কাউকে হত্যা করবে না যা আল্লাহ হারাম করেছেন, (৫) (মিথ্যে অপবাদ দিয়ে) কোন নিরপরাধ ব্যক্তিকে হত্যা করবার জন্য আদালতের নিকট নিয়ে যাবে না, (৬) যাদু করবে না, (৭) সুদ খাবে না, (৮) কোন সতী-সাধ্বীর ওপর ব্যভিচারের মিথ্যা অভিযোগ দিবে না এবং (৯) জিহাদকালে ময়দান থেকে পিঠ ফিরিয়ে পলায়নের উদ্দেশে আসবে না। আর হে ইয়াহূদীরা! তোমাদের জন্য শনিবারের ব্যাপারে আল্লাহর হুকুমের সীমালঙ্ঘন করো না।
বর্ণনাকারী (সফ্ওয়ান) বলেন, তারা উভয়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দুই হাতে-পায়ে চুম্বন করলো এবং বললঃ আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, সত্যিই আপনি আল্লাহর নবী! তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, আমার অনুসরণের পথে তোমাদের বাধা কী? তারা বলল, (সত্যি কথা হল) দাঊদ (আঃ) আল্লাহর নিকট দু’আ করেছিলেন যে, নবী সবসময় যেন তার বংশে জন্মগ্রহণ করেন। সুতরাং আমাদের ভয় হয়, যদি আমরা আপনার অনুসারী হই তাহলে ইয়াহূদীরা আমাদেরকে হত্যা করবে। (তিরমিযী, আবূ দাঊদ ও নাসায়ী)[1]
اَلزَّحَفُ (আয্ যাহাফু) অর্থ বিধর্মীদের সাথে যুদ্ধ বা কাফিরদের সাথে যুদ্ধ। اَلْيَهُوْدُ শব্দের পূর্বে اَعْنِىْ ক্রিয়া গোপন রয়েছে। হাদীসটি ইমাম নাসায়ী (রহঃ) ২/১৭২ নং পৃষ্ঠায় ‘‘রক্ত হারাম হওয়া সম্পর্কিত’’ অধ্যায়ে, ইমাম তিরমিযী (রহঃ) ‘‘অনুমতি প্রার্থনা’’ এবং ‘‘তাফসীর’’ অধ্যায় এবং ইমাম আহমাদ (রহঃ) ৪/২৪০ নং পৃষ্ঠায় বর্ণনা করেছেন। তবে ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ)-এর দিকে হাদীসটি নিসবাতকরণে বিবেচনার অবকাশ রয়েছে। কেননা নাবুলসী হাদীসটি তার اَلزَّخَائِرُ (আয্ যাখা-য়ির) নামক গ্রন্থের ১/২৭০ নং পৃষ্ঠায় ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ)-এর দিকে নিসবাত করেননি।
হাদীসটির সানাদে দুর্বলতা রয়েছে। অর্থাৎ- হাদীসটি দুর্বল।
باب الكبائر وعلامات النفاق - الفصل الثاني
عَنْ صَفْوَانَ بْنِ عَسَّالٍ قَالَ: قَالَ يَهُودِيٌّ لصَاحبه اذْهَبْ بِنَا إِلَى هَذَا النَّبِي فَقَالَ صَاحِبُهُ لَا تَقُلْ نَبِيٌّ إِنَّهُ لَوْ سَمِعَكَ كَانَ لَهُ أَرْبَعَة أَعْيُنٍ فَأَتَيَا رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَسَأَلَاهُ عَنْ تِسْعِ آيَاتٍ بَيِّنَاتٍ فَقَالَ لَهُم: «لَا تُشْرِكُوا بِاللَّهِ شَيْئًا وَلَا تَسْرِقُوا وَلَا تَزْنُوا وَلَا تَقْتُلُوا النَّفْسَ الَّتِي حَرَّمَ اللَّهُ إِلَّا بِالْحَقِّ وَلَا تَمْشُوا بِبَرِيءٍ إِلَى ذِي سُلْطَانٍ لِيَقْتُلَهُ وَلَا تَسْحَرُوا وَلَا تَأْكُلُوا الرِّبَا وَلَا تَقْذِفُوا مُحصنَة وَلَا توَلّوا الْفِرَار يَوْمَ الزَّحْفِ وَعَلَيْكُمْ خَاصَّةً الْيَهُودَ أَنْ لَا تَعْتَدوا فِي السبت» . قَالَ فقبلوا يَده وَرجله فَقَالَا نَشْهَدُ أَنَّكَ نَبِيٌّ قَالَ فَمَا يَمْنَعُكُمْ أَنْ تتبعوني قَالُوا إِن دَاوُد دَعَا ربه أَن لَا يزَال فِي ذُرِّيَّتِهِ نَبِيٌّ وَإِنَّا نَخَافُ إِنْ تَبِعْنَاكَ أَنْ تَقْتُلَنَا الْيَهُودُ. رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَأَبُو دَاوُدَ وَالنَّسَائِيُّ
Chapter: Major Sins and the Signs of Hypocrisy - Section 2
Safwan b. ‘Assal told how, when a Jew said to his friend, “Let us go to this prophet,” his friend said to him, “Don’t say ‘prophet’, for if he heard you he would be greatly pleased.” * They went to God’s messenger and asked him about nine clear signs. God’s messenger said, “Do not associate anything with God. do not steal, do not commit fornication, do not kill anyone whom God has declared inviolate without a just cause, do not bring an innocent person before a ruler in order that he may put him to death, do not use magic, do not devour usury, do not slander a chaste woman, do not turn in flight on the day the army marches, and, a matter which affects you Jews particularly, do not break the Sabbath.” He said that thereupon they kissed/his hands and feet saying, “We testify that you are a prophet.” He asked “What prevents you from following me?” to which they replied, “David prayed to his Lord that prophets might never cease to arise from his offspring, and we are afraid that if we follow you the Jews will kill us.”
Tirmidhi, Aba Dawud and Nasa’i transmitted it.
* Lit. “he would have four eyes.”
ব্যাখ্যা: এ হাদীসে এক ইয়াহূদী তার সঙ্গীকে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে নাবী শব্দ প্রয়োগ করতে বাধা প্রদান করে এবং বলে, সে যদি এ শব্দ শুনতে পায় তাহলে খুশীতে সে দৃষ্টি মেলে ধরবে ফলে উজ্জ্বলতা আরো বেড়ে যাবে। কেননা আনন্দ মানুষের দৃষ্টিকে প্রসারিত করে। আর চিন্তা তাতে বিঘ্ন ঘটায়। তারা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে পরীক্ষা স্বরূপ নয়টি স্পষ্ট নিদর্শন সম্পর্কে প্রশ্ন করে। এ নয়টি নিদর্শন দ্বারা হয়ত নয়টি মু‘জিযা উদ্দেশ্য। যেমন মহান আল্লাহ তা‘আলার বাণীতে বিদ্যমান ‘‘তোমার হাত তোমার জামার বক্ষদেশে প্রবেশ করাও, ফলে তা কোন অকল্যাণ ব্যতিরেকেই ফর্সা হয়ে বেরিয়ে আসবে।’’ এটি নয়টি মু‘জিযার একটি, অবশিষ্টগুলো হলোঃ লাঠি, তুফান, পঙ্গপাল, উকুন, ব্যাঙ, রক্ত, দুর্ভিক্ষ ও ফসলের ঘাটতি। অথবা সাধারণ নির্দেশাবলী যা সকল উম্মাতের জন্য প্রযোজ্য। যেমন আল্লাহ তা‘আলার বাণী, ‘‘আমি মূসা (আঃ)-কে নয়টি স্পষ্ট নিদর্শন প্রদান করেছি’’ এমনটি হলে হাদীসে উল্লিখিত বিষয়গুলো তাদের প্রশ্নোত্তর।
বিশেষ করে হে ইয়াহূদী সম্প্রদায়! তোমরা শনিবারের ব্যাপারে সীমালঙ্ঘন করো না। অর্থাৎ- শনিবারের মর্যাদার ব্যাপারে আল্লাহর নির্দেশ অমান্য করে ঐ দিনে মাছ শিকার করো না। তাদের বক্তব্য অনুযায়ী আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনি নাবী। কেননা একজন লেখাপড়া না জানা ব্যক্তির পক্ষে এ ধরনের জ্ঞান মু‘জিযা। আর তা নুবূওয়্যাতের সাক্ষী। তবে আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনি ‘আরব জাতির নাবী। কারণ দাঊদ (আঃ) দু‘আ করেছিলেন তার সন্তানদের মধ্যেই যেন নুবূওয়্যাতের ধারা অব্যাহত থাকে। তিনি নাবী হওয়ার কারণে তাঁর দু‘আ গ্রহণীয়, কেননা আল্লাহ তা‘আলা নাবীদের দু‘আ অগ্রাহ্য করেন না। বিষয়টি যদি তাই হয়, তাহলে তার সন্তানদের মধ্যে নুবূওয়্যাতের ধারা অব্যাহত থাকবে। আর ইয়াহূদী সম্প্রদায় সে নাবীর অনুসরণ করবে। হতে পারে যে তারা বিজয়ী হবে এবং তারা শক্তিশালী হবে। আর যদি এমনটি হয় আর আমরা তাদের ধর্ম পরিত্যাগ করে আপনার অনুসরণ করি তাহলে তারা আমাদেরকে হত্যা করবে। তাদের এ দাবী মিথ্যা এবং দাঊদ (আঃ)-এর প্রতি অপবাদ। কেননা তিনি এমন দু‘আ করেননি। আর কোন ব্যক্তির পক্ষে দাঊদ (আঃ) সম্পর্কে এমন ধারণা পোষণ করা বৈধ নয়। কেননা দাঊদ (আঃ) যাবূরে পাঠ করেছেন যে, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সর্বশেষ নাবী করে প্রেরণ করা হবে। তার মাধ্যমে নুবূওয়্যাতের ধারাবাহিকতা শেষ হয়ে যাবে এবং সকল বিধান বাতিল হয়ে যাবে। অতএব একজন নাবীর পক্ষে কিভাবে সম্ভব হবে যে, আল্লাহ তাঁকে যা অবহিত করেছেন তার বিপরীত দু‘আ করা?
পরিচ্ছেদঃ ১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - কাবীরাহ্ (কবিরা) গুনাহ ও মুনাফিক্বীর নিদর্শন
৫৯-[১১] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তিনটি বিষয় ঈমানের মূল ভিত্তি বা স্তম্ভ। (১) যে ব্যক্তি ’লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ’ স্বীকার করে নেয়, তার প্রতি আক্রমণ করা হতে বিরত থাকা; কোন গুনাহের দরুন তাকে কাফির বলে মনে করবে না এবং কোন ’আমলের কারণে তাকে ইসলাম হতে খারিজ মনে করবে না (যে পর্যন্ত না তার দ্বারা সুস্পষ্ট কোন কুফরী কাজ করা হয়)। (২) যেদিন হতে আল্লাহ আমাকে নবী করে পাঠিয়েছেন, সেদিন থেকে এ উম্মাতের শেষ দিকের লোকেরা দাজ্জালের সাথে জিহাদ করা পর্যন্ত (ক্বিয়ামাত (কিয়ামত) অবধি) চলতে থাকবে। কোন অত্যাচারী শাসকের অবিচার অথবা কোন সুবিচারী বাদশার ইনসাফ এ জিহাদকে বাতিল করতে পারবে না এবং (৩) তাক্বদীরের প্রতি বিশ্বাস। (আবূ দাঊদ)[1]
باب الكبائر وعلامات النفاق - الفصل الثاني
وَعَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم: «ثَلَاث من أَصْلِ الْإِيمَانِ الْكَفُّ عَمَّنْ قَالَ لَا إِلَهَ إِلَّا الله وَلَا نكفره بذنب وَلَا نخرجهُ من الْإِسْلَام بِعَمَل وَالْجِهَادُ مَاضٍ مُنْذُ بَعَثَنِي اللَّهُ إِلَى أَنْ يُقَاتل آخر أمتِي الدَّجَّالَ لَا يُبْطِلُهُ جَوْرُ جَائِرٍ وَلَا عَدْلُ عَادل وَالْإِيمَان بالأقدار» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
Chapter: Major Sins and the Signs of Hypocrisy - Section 2
Anas reported God’s messenger as saying, “Three matters pertain to the root of faith:
no molestation of one who says there is no god but God, neither declaring him an infidel because of a sin, nor excommunicating him from Islam because of an action; jihad continues from the time God sent me till the last of this people fights with the dajjal, being annulled neither by the tyranny of a tyrannical ruler nor the justice of a just one; and belief in God’s decrees.”
Abu Dawud transmitted it.
ব্যাখ্যা: তিনটি অভ্যাস ঈমানের মূলঃ
(১) যে ব্যক্তি সাক্ষ্য প্রদান করে যে, ‘‘আল্লাহ ব্যতীত প্রকৃত কোন ইলাহ নেই এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রসূল’’ তার জান-মালের ক্ষতি করা হতে বিরত থাকা। কোন গুনাহের কারণে তাকে কাফের না বলা যেমনটি মু‘তাযিলাগণ বলে থাকে।
(২) এ বিশ্বাস রাখা যে, ‘ঈসা (আঃ) কর্তৃক দাজ্জাল নিহত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত জিহাদ অব্যাহত থাকবে। দাজ্জাল নিহত হওয়ার পর আর জিহাদ অবশিষ্ট থাকবে না। কেননা ইয়া’জূজ ও মা’জূজ-এর বিরুদ্ধে জিহাদ করার শক্তি। আর তাদের ধ্বংসের পর ‘ঈসা (আঃ) জীবিত থাকা পর্যন্ত এমন কোন কাফির থাকবে না যে, যাদের বিরুদ্ধে জিহাদ ওয়াজিব হবে। আর ‘ঈসা (আঃ) -এর পর যে সকল মুসলিম কাফির হয়ে যাবে তাদের বিরুদ্ধে এজন্য জিহাদ ওয়াজিব থাকবে না যে, তখন একটি বায়ু দ্বারা সকল মুসলিম মৃত্যুবরণ করবে। আর ঐ যামানা আসার পূর্বে কোন যালিমের যুলম বা ন্যায় বিচারকের ন্যায়বিচার জিহাদ বিলুপ্ত করবে না। এ হাদীসে ঐ সমস্ত মুনাফিক্বদের কথার জওয়াব রয়েছে যারা মনে করে ইসলামী রাষ্ট্র অল্প সময়ের মধ্যে বিলুপ্ত হয়ে যাবে।
পরিচ্ছেদঃ ১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - কাবীরাহ্ (কবিরা) গুনাহ ও মুনাফিক্বীর নিদর্শন
৬০-[১২] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন কোন বান্দা ব্যভিচারে লিপ্ত হয় তখন তার থেকে (অন্তর থেকে) ঈমান বেরিয়ে যায় এবং তা তার মাথার উপর ছায়ার ন্যায় অবস্থিত থাকে। অতঃপর যখন সে এ অসৎকাজ থেকে বিরত হয় তখন ঈমান তার নিকট প্রত্যাবর্তন করে। (তিরমিযী ও আবূ দাঊদ)[1]
باب الكبائر وعلامات النفاق - الفصل الثاني
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِذَا زَنَى الْعَبْدُ خَرَجَ مِنْهُ الْإِيمَانُ فَكَانَ فَوْقَ رَأْسِهِ كَالظُّلَّةِ فَإِذا خرج من ذَلِك الْعَمَل عَاد إِلَيْهِ الايمان» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ وَأَبُو دَاوُد
Chapter: Major Sins and the Signs of Hypocrisy - Section 2
Abu Huraira reported that God's messenger said, “When a servant of God commits fornication faith departs from him and there is something like an awning over his head; but when he quits that action faith returns to him.”
Tirmidhi and Abu Dawud transmitted it.
ব্যাখ্যা: মু’মিন বান্দা যখন যিনার কাজে লিপ্ত হয় তখন তার থেকে ঈমান বেরিয়ে যায়। তার অন্তর থেকে ঈমানের শাখাসমূহের বড় শাখাটি বিলুপ্ত হয়ে যায়। আর তা হলো আল্লাহর প্রতি লজ্জাবোধ। অথবা তার অবস্থা এমন হয় যে, যেন তার থেকে ঈমান চলে গেছে। এ ধরনের লোক ঈমান বিরোধী কাজ সত্ত্বেও সে ঈমানের ছায়াতেই থাকে। তার থেকে ঈমানের হুকুম দূর হয় না এবং ঈমান বিষয়টি তার থেকে উঠে যায় না। কারণ যখন সে ঐ কাজ থেকে বেরিয়ে আসে, তখন অনুতপ্ত হয় এবং এর ফলে ঈমানের নূর ও পূর্ণ ঈমান আবার ফিরে আসে।