৪৯

পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - কাবীরাহ্ (কবিরা) গুনাহ ও মুনাফিক্বীর নিদর্শন

জমহূরসহ পূর্বপরের সকল ’আলিমের মতে পাপসমূহ দু’ভাগে বিভক্ত কতগুলো বড় পাপ আর কতগুলো ছোট পাপ। এ বিষয়ে সূরা আন্ নিসা’র ৩১ নং এবং সূরাহ্ আন্ নাজ্ম-এর ৩২ নং আয়াতসহ কুরআন সুন্নাহর অসংখ্য প্রমাণ বিদ্যমান রয়েছে। তবে কাবীরার সংজ্ঞার ক্ষেত্রে জমহূরের মতবিরোধ পরিলক্ষিত হয়েছে। ইবনু ’আব্বাস (রাঃ)-এর ভাষ্য মতে- ’’কাবীরাহ্ (কবিরা) ঐসব পাপ যেগুলোর ক্ষেত্রে আল্লাহ তা’আলা জাহান্নাম, গযব, অভিশাপ অথবা ’আযাবের কথা বলেছেন’’। কারো কারো মতে, কাবীরাহ্ (কবিরা) ঐসব পাপ যাতে জড়িত হলে দুনিয়ায় হাদ্দ বা শাস্তি অবধারিত হয়েছে এবং আখিরাতে জাহান্নামের প্রতিশ্রুতি রয়েছে। তবে অগ্রাধিকারযোগ্য অভিমত হলোঃ কাবীরাহ্ (কবিরা) ঐসব পাপ যেগুলোকে বড় বলা হয়েছে বা যা সম্পাদনে আখিরাতে শাস্তির প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে বা যেগুলোর ক্ষেত্রে গযব, অভিশাপের কথা বলা হয়েছে বা হাদ্দ অবধারিত হয় বা যার সম্পাদনকারীকে ফাসিক্ব বলে অভিহিত করা হয়েছে।

জেনে রাখা ভালো যে, পূর্ববর্তী ও পরবর্তী যুগের অধিকাংশ ’আলিমের মতে গুনাহ দুই ভাগে বিভক্ত। কাবীরাহ্ (কবিরা) ও সগীরাহ্। এ বিষয়ে কুরআনে ও হাদীসে প্রমাণাদি স্পষ্ট।

আল্লাহ তা’আলার বাণীঃ ’’তোমরা যদি নিষিদ্ধকৃত কাবীরাহ্ (কবিরা) গুনাহ পরিহার কর তাহলে আমি তোমাদের ছোট গুনাহগুলো ক্ষমা করে দিব।’’ (সূরাহ্ আন্ নিসা ৪: ৩১)

আল্লাহ তা’আলা আরো বলেনঃ ’’যারা কাবীরাহ্ (কবিরা) গুনাহ থেকে এবং অশ্লীল কার্য থেকে বেঁচে থাকে সগীরাহ্ গুনাহ্ ব্যতিরেকে।’’ (সূরাহ্ আন্ নাজম ৫৩: ৩২)

সহীহ হাদীসগুলো থেকে প্রমাণিত যে, এমন কিছু গুনাহ রয়েছে যা পাঁচ ওয়াক্ত সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) রমাযানের সিয়াম, হাজ্জ (হজ/হজ্জ), ’উমরাহ্ ও ’আরাফাহ্ দিবসের সিয়াম, ’আশূরার সিয়াম এবং সৎকার্য দ্বারা মাফ হয়ে যায়। আবার এমন কিছু গুনাহ্ রয়েছে যা উপরোক্ত কার্যাবলী দ্বারা মাফ হয়ে যায় না। যেমন সহীহ হাদীসে বর্ণিত হয়েছে ’’যতক্ষণ সে কাবীরাহ্ (কবিরা) গুনাহ্ না করে।’’

যে সকল গুনাহের ব্যাপারে স্পষ্ট প্রমাণাদি রয়েছে তা কাবীরাহ্ (কবিরা) বা মহাপাপ। অথবা ঐ গুনাহের ফলে পরকালে শাস্তির ওয়া’দা অথবা আল্লাহর অসন্তুষ্টি লা’নাত কিংবা অপরাধের ইহকালীন শাস্তি বা তা কঠোরভাবে অস্বীকার করা হয়েছে বা তা সম্পাদনকারীকে ফাসিক্ব বলে ভূষিত করা হয়েছে ওগুলো কাবীরাহ্ (কবিরা) গুনাহ্।


৪৯-[১] ’আবদুল্লাহ ইবনু মাস্’ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক লোক রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রসূল! আল্লাহর কাছে সর্বাধিক বড় গুনাহ কোনটা? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তোমাকে যিনি সৃষ্টি করেছেন, সেই আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করা। অতঃপর পুনরায় সে জিজ্ঞেস করলো, তারপর কোনটা? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তোমার সন্তান তোমার সাথে খাবে- এ ভয়ে তাকে হত্যা করা। পুনরায় প্রশ্ন করলো, তারপর কোনটা? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তোমার প্রতিবেশীর স্ত্রীর সাথে ব্যভিচার করা। তিনি [ইবনু মাস্’ঊদ (রাঃ)] বলেছেন, এর সমর্থনে আল্লাহ তা’আলা (কুরআনে) অবতীর্ণ করলেনঃ ’’তারাই আল্লাহর প্রকৃত বান্দা, যারা আল্লাহ ব্যতীত অন্য কাউকে মা’বূদ হিসেবে গণ্য করে না, আল্লাহ যাদের হত্যা করা হারাম করে দিয়েছেন, আইনের বিধান ছাড়া তাদের (অন্যায়ভাবে) হত্যা করে না এবং ব্যভিচার করে না। আর যে এগুলো করে সে শাস্তির সাক্ষাৎ লাভ করবে।’’- (সূরাহ্ আল ফুরক্বান ২৫: ৬৮)। (বুখারী, মুসলিম)[1]

بَابُ الْكَبَائِرِ وَعَلَامَاتِ النِّفَاقِ- الفصل الأول

عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ قَالَ: قَالَ رَجُلٌ: يَا رَسُولَ اللَّهِ أَيُّ الذَّنْبِ أَكْبَرُ عِنْدَ اللَّهِ قَالَ أَنْ تَدْعُوَ لِلَّهِ نِدًّا وَهُوَ خَلَقَكَ قَالَ ثُمَّ أَيٌّ قَالَ ثمَّ أَنْ تَقْتُلَ وَلَدَكَ خَشْيَةَ أَنْ يَطْعَمَ مَعَكَ قَالَ ثمَّ أَي قَالَ ثمَّ أَن تُزَانِي بحليلة جَارك فَأنْزل الله عز وَجل تَصْدِيقَهَا (وَالَّذِينَ لَا يَدْعُونَ مَعَ اللَّهِ إِلَهًا آخَرَ وَلَا يَقْتُلُونَ النَّفْسَ الَّتِي حَرَّمَ اللَّهُ إِلَّا بِالْحَقِّ وَلَا يزنون وَمن يفعل ذَلِك يلق أثاما)
الْآيَة

عن عبد الله بن مسعود قال قال رجل يا رسول الله اي الذنب اكبر عند الله قال ان تدعو لله ندا وهو خلقك قال ثم اي قال ثم ان تقتل ولدك خشية ان يطعم معك قال ثم اي قال ثم ان تزاني بحليلة جارك فانزل الله عز وجل تصديقها والذين لا يدعون مع الله الها اخر ولا يقتلون النفس التي حرم الله الا بالحق ولا يزنون ومن يفعل ذلك يلق اثاماالاية

Chapter: Major Sins and the Signs of Hypocrisy - Section 1


‘Abdallah b. Mas'ud said that a man asked God’s messenger, what was the greatest sin in God’s sight, to which he replied, “That you should treat anything as equal to God when He has created you." “What next?’’ he asked, to which he replied, “That you should kill your child for fear that he may eat along with you.”. ‘‘What next?" he asked, to which he replied, “That you should commit adultery with your neighbour’s wife." God has revealed words which verify this :
“Those who do not invoke another god along with God, or kill one whom God has declared inviolate without a just cause, or commit fornication..." *

(Bukhari and Muslim.)

* Quran, 25:68

ব্যাখ্যা: এ হাদীসের মধ্যে এ ইঙ্গিত রয়েছে যে, একক আল্লাহর সাথে পৃথিবীর কোন কিছুকে শরীক করা সব চাইতে কদর্য বা খারাপ কাজ। শির্কের পরে কোন কাজ অধিক অপরাধমূলক? এ প্রশ্নের জবাবে আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ স্বীয় আদরের সন্তানকে এ আশঙ্কায় হত্যা করা যে, সে তোমার সাথে খাবার খাবে। হত্যা করাটাই একটা অপরাধ। এ হত্যা কাজের সাথে যখন স্বীয় সন্তান হত্যার বিষয় যুক্ত হয় তখন তা আরো কদর্য বা বেশী অপরাধ বলে সাব্যস্ত হয়। এ হাদীসটি ঐ আয়াতের সমার্থক যেখানে আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, ‘‘দরিদ্র হবার ভয়ে তোমরা স্বীয় সন্তানদের হত্যা করো না’’- (সূরাহ্ বানী ইসরাঈল ১৭ঃ ৩১)।

‘‘তোমার প্রতিবেশীর স্ত্রীর সাথে ব্যভিচার করা’’ এ বাক্যাংশের ব্যাখ্যায় ইমাম নাবাবী বলেন, تزاني শব্দের মর্মার্থ হলো ‘‘তার সম্মতিক্রমে তার সাথে ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়া’’। এতে ব্যভিচারের সাথে আরো দু’টি অপরাধযুক্ত আছে। সে ঐ মহিলাকে তার স্বামীর বিরুদ্ধে বিগড়িয়ে দিয়েছে এবং তার অন্তরকে ব্যভিচারীর প্রতি আকৃষ্ট করেছে। এ কাজ দু’টি আরো কদর্য। আর এ কাজটি তার প্রতিবেশীর স্ত্রীর সাথে করা যা আরো অধিক কদর্য। আরো মহা অপরাধ। কেননা প্রতিবেশী তার নিকট থেকে আশা করে যে, সে তার পক্ষ হয়ে প্রতিবেশীর ও তার স্ত্রীর জন্য প্রতিরোধ গড়ে তুলবে। তার অনিষ্ট থেকে নিরাপদে থাকবে। তার দ্বারা নিরাপত্তা লাভ করবে। আর তাকে তো এ আদেশই দেয়া হয়েছে যে, সে প্রতিবেশীকে সম্মান করবে। তার প্রতি দয়াপ্রদর্শন করবে। সে যখন এ সবের পরিবর্তে তার স্ত্রীর সাথে ব্যভিচার করে, তার স্ত্রীকে তার বিরুদ্ধে বিগড়িয়ে দেয়- তখন তা কদর্যের শেষ সীমানায় পৌঁছে যায়।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১: ঈমান (বিশ্বাস) (كتاب الإيمان)