পরিচ্ছেদঃ ৭. প্রথম অনুচ্ছেদ - গনীমাতের সম্পদ বণ্টন এবং তা আত্মসাৎ করা

গনীমাত হলো ঐ সম্পদ যা মুশরিকদের সাথে যুদ্ধের মাধ্যমে (তাদের নিকট থেকে) অর্জিত হয়। এটা নফল থেকে ’আম বা ব্যাপক, আর ফাই হলো গনীমাত থেকে ’আম্। কেননা আহলে শির্ক থেকে মুসলিমদের হাতে অর্জিত সকল সম্পদই গনীমাত। আবূ বকর আর্ রাযী (রহঃ) বলেন, গনীমাত ফাই, জিয্ইয়াহ্ও ফাই, সন্ধি চুক্তিবদ্ধের সম্পদও ফাই, জমির খিরাজ বা খাজনাও ফাই; কেননা এর প্রত্যেকটি মুশরিকদের নিকট থেকে আল্লাহ তা’আলা মুসলিমদের হাতে সমর্পণ করেছেন। ’আল্লামা ত্বীবী উল্লেখ করেছেন, ফুকাহাগণের অনেকের মতে মুশরিকদের নিকট থেকে যে মালই গ্রহণ বৈধ সেটাই ’ফাই’।

’আল্লামা ইবনুল হুমাম (রহঃ) বলেনঃ যুদ্ধের মাধ্যমে মুশরিকদের নিকট থেকে যা নেয়া হয় তাকে গনীমাত বলা হয়। আর যুদ্ধ ছাড়া যা অর্জিত হয় যেমন জিয্ইয়াহ্, খিরাজ ইত্যাদি তাকে ’ফাই’ বলা হয়।


৩৯৮৫-[১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমাদের পূর্বে কারো জন্য গনীমাতের মাল (ভোগ করা) জায়িয ছিল না। আল্লাহ তা’আলা আমাদের দুর্বলতা ও অক্ষমতা দেখে তা আমাদের জন্য জায়িয করে দিয়েছেন। (বুখারী, মুসলিম)[1]

بَابُ قِسْمَةِ الْغَنَائِمِ وَالْغُلُوْلِ فِيْهَا

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «فَلَمْ تَحِلَّ الْغَنَائِمُ لِأَحَدٍ مِنْ قَبْلِنَا ذَلِكَ بِأَنَّ اللَّهَ رَأَى ضعفنا وعجزنا فطيها لنا»

عن ابي هريرة عن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال فلم تحل الغناىم لاحد من قبلنا ذلك بان الله راى ضعفنا وعجزنا فطيها لنا

ব্যাখ্যা: এ হাদীসটি তৃতীয় অনুচ্ছেদে উল্লেখিত আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত ৪০৩০ নং হাদীসের অংশ বা সংক্ষিপ্ত রূপ। আরো প্রয়োজনীয় কিছু কথা এখানে আলোচিত হলো পূর্বকালের মু’মিনদের যুদ্ধলব্ধ সম্পদ বা গনীমাতের মাল গ্রহণ করা বৈধ ছিল না। যুদ্ধে বিজয় হলে তারা গনীমাতের সম্পদগুলো একত্রিত করে রাখতো, অতঃপর আসমান থেকে আগুন এসে তা জ্বালিয়ে দিতো। এতে তারা বুঝে নিতো যে, তাদের যুদ্ধ আল্লাহ কবুল করেছেন। এ উম্মাত দুর্বল ও অক্ষম, তাই আল্লাহ তা‘আলা অনুগ্রহ করে তাদের জন্য গনীমাতের মাল বৈধ এবং পবিত্র করে দিয়েছেন। (মিরকাতুল মাফাতীহ; ফাতহুল বারী ৬ষ্ঠ খন্ড, হাঃ ৩১২৪; শারহে মুসলিম ১২শ খন্ড, হাঃ ১৭৪৭)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৯: জিহাদ (كتاب الجهاد) 19. Jihad

পরিচ্ছেদঃ ৭. প্রথম অনুচ্ছেদ - গনীমাতের সম্পদ বণ্টন এবং তা আত্মসাৎ করা

৩৯৮৬-[২] আবূ কাতাদাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, হুনায়ন অভিযানে আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে অংশগ্রহণ করলাম। যখন আমরা শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধরত ছিলাম, তখন (যুদ্ধের প্রথম দিকে) মুসলিমদের বিশৃঙ্খলার দরুন পরাজয়ের লক্ষণ দেখা দিল। এমন সময় আমি দেখলাম, এক মুশরিক জনৈক মুসলিম সৈন্যের উপর চড়ে বসেছে, তৎক্ষণাৎ আমি পিছন থেকে তার গর্দানে তরবারি মেরে তার লৌহবর্ম কেটে ফেললাম। তখন সে আমাকে এমনভাবে জড়িয়ে ধরল, আমি যেন তা হতে মৃত্যুর গন্ধ পেলাম। ক্ষণিক পরেই সে আমাকে ছেড়ে দিল।

এরপর আমি ’উমার ইবনুল খত্ত্বাব (রাঃ)-এর সাক্ষাৎ পেলাম এবং তাকে জিজ্ঞেস করলাম, লোকজনের (যুদ্ধের) অবস্থা কোন্ পর্যায়ে? তিনি বলেন, সবকিছু আল্লাহর হুকুম। অতঃপর মুসলিমগণ পুনরায় (বিজয় বেশে) ফিরে আসলেন। আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক জায়গায় বসে ঘোষণা করলেন, আজ তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি কাফিরদের মধ্যে যাকে হত্যা করেছে এবং ঐ হত্যার সাক্ষ্য-প্রমাণ রয়েছে, সেই উক্ত নিহত ব্যক্তির পরিত্যক্ত সবকিছু পাবে। আবূ কাতাদাহ(রাঃ) বলেন, আমি দাঁড়িয়ে বললাম, কেউ কি আমার পক্ষে সাক্ষ্য দিবে? এ কথাটি বলে আমি বসে পড়লাম।

অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পূর্বের ন্যায় ঘোষণা করলেন, আর আমিও দাঁড়িয়ে বললাম, কেউ কি আমার পক্ষে সাক্ষ্য দিবে? এ কথা বলে আমি আবারও বসে পড়লাম। এরপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবারও পূর্বের ন্যায় ঘোষণা করলেন, আর আমি এবারও পূর্বের ন্যায় একই কথার পুনরাবৃত্তি করলাম। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, হে আবূ কাতাদাহ! তোমার কি হয়েছে (বারবার উঠছ এবং কি যেন বলে বসছ কেন)? তখন আমি ঘটনার আদ্যোপান্ত খুলে বললাম, এমন সময় জনৈক ব্যক্তি বলে উঠল, আবূ কাতাদাহ সত্য কথাই বলেছেন এবং সেই নিহত ব্যক্তির পরিত্যক্ত সমস্ত মালামাল আমার আয়ত্বেই আছে, আপনি তাকে অন্য কিছুর বিনিময়ে সন্তুষ্ট করে দিন (আর আমিই তা ভোগ করব)।

এ কথা শুনে আবূ বকর সিদ্দীক বলে উঠলেন, আল্লাহর কসম! তা কক্ষনো হতে পারে না। আল্লাহর সিংহসমূহের একটি সিংহ যে আল্লাহ ও তার রসূলের পক্ষে যুদ্ধ করেছে, তাকে বঞ্চিত করে তার প্রাপ্য তথা নিহত ব্যক্তির পরিত্যক্ত মাল তোমাকে দেয়া হবে, এটা কক্ষনো হতে পারে না। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আবূ বকর যথার্থই বলেছেন। তুমি ঐ নিহত ব্যক্তির পরিত্যক্ত মাল আবূ কাতাদাহ (রাঃ)-কে দিয়ে দাও। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নির্দেশে তখন সে সমুদয় মাল আমাকে দিয়ে দিল। আবূ কাতাদাহ বলেন, ঐ মাল বিক্রি করে আমি বানূ সালামার একটি খেজুরের বাগান ক্রয় করলাম। আর ইসলাম গ্রহণের পর এটাই আমার অর্জিত প্রথম সম্পত্তি। (বুখারী, মুসলিম)[1]

بَابُ قِسْمَةِ الْغَنَائِمِ وَالْغُلُوْلِ فِيْهَا

وَعَن أبي قتادةَ قَالَ: خَرَجْنَا مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَامَ حُنَيْنٍ فَلَمَّا الْتَقَيْنَا كَانَتْ لِلْمُسْلِمِينَ جَوْلَةٌ فَرَأَيْتُ رَجُلًا مِنَ الْمُشْرِكِينَ قَدْ عَلَا رَجُلًا مِنَ الْمُسْلِمِينَ فَضَرَبْتُهُ مِنْ وَرَائِهِ عَلَى حَبْلِ عَاتِقِهِ بِالسَّيْفِ فَقَطَعْتُ الدِّرْعَ وَأَقْبَلَ عَلَيَّ فَضَمَّنِي ضَمَّةً وَجَدْتُ مِنْهَا رِيحَ الْمَوْتِ ثُمَّ أَدْرَكَهُ الْمَوْتُ فَأَرْسَلَنِي فَلَحِقْتُ عُمَرَ بْنَ الْخَطَّابِ فَقُلْتُ: مَا بَالُ النَّاسِ؟ قَالَ: أَمْرُ اللَّهِ ثُمَّ رَجَعُوا وَجَلَسَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: «مَنْ قَتَلَ قَتِيلًا لَهُ عَلَيْهِ بَيِّنَةٌ فَلَهُ سَلَبُهُ» فَقُلْتُ: مَنْ يَشْهَدُ لِي؟ ثُمَّ جَلَسْتُ ثُمَّ قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِثْلَهُ فَقُمْتُ فَقَالَ: «مَا لَكَ يَا أَبَا قَتَادَةَ؟» فَأَخْبَرْتُهُ فَقَالَ رَجُلٌ: صَدَقَ وَسَلَبُهُ عِنْدِي فَأَرْضِهِ مِنِّي فَقَالَ أَبُو بَكْرٍ: لَا هَا اللَّهِ إِذاً لَا يعمدُ أَسَدٍ مِنْ أُسْدِ اللَّهِ يُقَاتِلُ عَنِ اللَّهِ وَرَسُولِهِ فَيُعْطِيكَ سَلَبَهُ. فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «صَدَقَ فأعطه» فأعطانيه فاتبعت بِهِ مَخْرَفًا فِي بَنِي سَلِمَةَ فَإِنَّهُ لَأَوَّلُ مالٍ تأثَّلْتُه فِي الإِسلامِ

وعن ابي قتادة قال خرجنا مع النبي صلى الله عليه وسلم عام حنين فلما التقينا كانت للمسلمين جولة فرايت رجلا من المشركين قد علا رجلا من المسلمين فضربته من وراىه على حبل عاتقه بالسيف فقطعت الدرع واقبل علي فضمني ضمة وجدت منها ريح الموت ثم ادركه الموت فارسلني فلحقت عمر بن الخطاب فقلت ما بال الناس قال امر الله ثم رجعوا وجلس النبي صلى الله عليه وسلم فقال من قتل قتيلا له عليه بينة فله سلبه فقلت من يشهد لي ثم جلست ثم قال النبي صلى الله عليه وسلم مثله فقمت فقال ما لك يا ابا قتادة فاخبرته فقال رجل صدق وسلبه عندي فارضه مني فقال ابو بكر لا ها الله اذا لا يعمد اسد من اسد الله يقاتل عن الله ورسوله فيعطيك سلبه فقال النبي صلى الله عليه وسلم صدق فاعطه فاعطانيه فاتبعت به مخرفا في بني سلمة فانه لاول مال تاثلته في الاسلام

ব্যাখ্যা: হুনায়ন মক্কা ও ত্বায়িফের মাঝখানে একটি স্থান। ৮ম হিজরী সনে মক্কা বিজয়ের ১৯ দিন পরে ৬ই শাও্ওয়াল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হুনায়নের উদ্দেশে রওনা হন। এ যুদ্ধে মুসলিমদের সৈন্য সংখ্যা ছিল ১২০০০। যুদ্ধের শুরুতে মুসলিমদের কিছুটা বিপর্যয় ঘটে, অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা তাদের চূড়ান্ত বিজয়ের মধ্য দিয়ে যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটান।

جَوْلَةٌ শব্দের অর্থ هَزِيمَةٌ পরাজয় হওয়া। মুল্লা ‘আলী আল কারী (রহঃ) বলেনঃ الجَوْلَةٌ এর অর্থ হলো هَزِيمَةٌ قَلِيلَةٌ সামান্য পরাজয়, কিছুটা পরাজয়, পরাজয় পরাজয় ভাব হওয়া। الْجَوَلَانُ فِي الْحَرْبِ যুদ্ধের ময়দানে ঘূর্ণায়ন, যুদ্ধের ময়দানে নিজ অবস্থানস্থল থেকে সরে পড়া।

‘আল্লামা তূরিবিশতী (রহঃ) বলেনঃ এ যুদ্ধে প্রথম দিকে মুসলিমগণ ক্ষণিকের জন্য বিপর্যয়ের মুখে পড়েছিলেন, এ কথাটি সাহাবীগণ هَزِيمَة ‘পরাজয় বরণ’ শব্দ দ্বারা প্রকাশ করা অপছন্দ করেছেন, তাই তারা جَوْلَةٌ শব্দে তা প্রকাশ করেছেন। কেননা এ শব্দটির অর্থও পরাজয় তবে তা স্থায়ী এবং দীর্ঘ সময়ব্যাপী নয়। বর্ণনাকারী আবূ কাতাদাহ (রহঃ)-এর কথা : ‘আমি তার লৌহবর্ম কেটে ফেললাম, অতঃপর সে আমার দিকে ফিরে আসলো এবং আমাকে এমনভাবে চেপে ধরলো যে, আমি মৃত্যুর গন্ধ পেলাম।’ এটি একটি কিনায়া শব্দ দ্বারা اسْتِعَارَةٌ করা হয়েছে, এখানে শব্দের রূপক অর্থ বা পরোক্ষ অর্থ গ্রহণ করা হয়েছে; সুতরাং তার কথার অর্থ হলো : আমি মৃত্যুর কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিলাম, আমার প্রাণ বের হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়ে গিয়েছিল। এরপর আমার আঘাতের কারণে সে যখন নিসেত্মজ হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লো, তখন আমাকে ছেড়ে দিল।

যুদ্ধের বিধান হলো, যে কোনো কাফিরকে হত্যা করবে, সে প্রমাণসাপেক্ষে নিহত ব্যক্তির সঙ্গে থাকা অস্ত্র-শস্ত্র ও অন্যান্য যাবতীয় সামগ্রীর অধিকারী হবে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূ কাতাদাহ-এর জন্য একাধিকবার সাক্ষ্য চান, একজন তার সাক্ষ্য প্রদান করে বলেন, হে আল্লাহর রসূল! আবূ কাতাদাহ তাকে হত্যা করেছে, আর ঐ নিহত ব্যক্তির পরিত্যক্ত সামগ্রী আমার কাছেই রয়েছে। আপনি আমার পক্ষ থেকে তাকে বুঝিয়ে অথবা কিছু দিয়ে সন্তুষ্ট করে দিন, এ সম্পদ আমিই ভোগ করি। আবূ বাকর বললেন, না তা হবে না। সে আল্লাহর সিংহ, সে আল্লাহ ও তাঁর রসূলের পক্ষে যুদ্ধ করেছে। সুতরাং তার হাতে নিহত ব্যক্তির সম্পদ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তোমাকে দিতে পারেন না। এ কথা শুনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আবূ বাকর ঠিকই বলেছেন। এরপর তিনি ঐ সম্পদ ফেরত দিলেন।

ইমাম নববী (রহঃ) বলেনঃ এ হাদীসের ভিত্তিতে ইমাম শাফি‘ঈ, লায়স প্রমুখ ইমাম ও ফাকীহ বলেন, নিহত ব্যক্তির পরিত্যক্ত সম্পদ পেতে হলে তার পক্ষে সাক্ষীর প্রয়োজন, নিজে নিজে হত্যার দাবী করলেই যথেষ্ট হবে না। কিন্তু ইমাম মালিক (রহঃ) বলেন, হত্যাকারীর একক দাবীর ভিত্তিতেই তাকে পরিত্যক্ত সম্পদ দেয়া হবে। কেননা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একজনের কথার ভিত্তিতেই তাকে দিয়েছেন, তাকে শপথও করাননি। ইমাম শাফি‘ঈ (রহঃ) আরো বলেন, নিহত ব্যক্তির পরিত্যক্ত সম্পদের হকদার হত্যাকারী, এ হাদীস তারও দলীল।

ইমাম আবূ হানীফাহ্ (রহঃ) বলেনঃ ইমাম যদি তাকে নফল হিসেবে প্রদান করেন তবেই সে হকদার হবে অন্যথায় নয়। ‘আল্লামা নববী (রহঃ) বলেন, এ ব্যাপারে ফাকীহগণ মতবিরোধ করেছেন; ইমাম মালিক, আহমাদ, আওযা‘ঈ, সাওরী প্রমুখসহ আরো কতিপয় ইমাম ও ফাকীহ বলেন, সেনাদলের আমীর যুদ্ধের পূর্বে বলুন অথবা না বলুন হত্যাকারী নিহত ব্যক্তির সম্পদ পাবেন। তারা বলেন, এটা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর শাশ্বত ফতোয়া এবং শারী‘আতের সুসাব্যস্ত বিধানের খবর। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘যে কাউকে হত্যা করবে তার জন্যই নিহতের পরিত্যক্ত সম্পদ।’’ পক্ষান্তরে ইমাম আবূ হানীফাহ্ ও শাফি‘ঈ (রহঃ) বলেনঃ সেনাদলের আমীর বা ইমামের পূর্বানুমতি ছাড়া হত্যাকারী নিহত ব্যক্তির সম্পদ পাবে না। (মিরকাতুল মাফাতীহ; ফাতহুল বারী হাঃ ৪৩২১; তুহফাতুল আহওয়াযী ৪র্থ খন্ড, হাঃ ১৫৬২; ‘আওনুল মা‘বূদ ৫ম খন্ড, হাঃ ২৭১৪)

[বর্তমানে ইসলামী যুদ্ধ তেমন একটা নেই বললেই চলে; উপরোক্ত রাষ্ট্রের বেতনভোগী সৈন্যরা যুদ্ধ করে থাকে, তারা এই গনীমাতের অংশ পাবে কিনা, এ নিয়ে অনেক কথা। সুতরাং এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা পরিহার করা হলো।] -সম্পাদক


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৯: জিহাদ (كتاب الجهاد) 19. Jihad

পরিচ্ছেদঃ ৭. প্রথম অনুচ্ছেদ - গনীমাতের সম্পদ বণ্টন এবং তা আত্মসাৎ করা

৩৯৮৭-[৩] ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (মুজাহিদ) ব্যক্তি ও তার ঘোড়ার জন্য গনীমাতের মাল তিন ভাগে বণ্টন করেছেন। ব্যক্তির জন্য এক-তৃতীয়াংশ এবং ঘোড়ার জন্য দুই-তৃতীয়াংশ। (বুখারী, মুসলিম)[1]

بَابُ قِسْمَةِ الْغَنَائِمِ وَالْغُلُوْلِ فِيْهَا

وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ: أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَسْهَمَ لِلرَّجُلِ وَلِفَرَسِهِ ثَلَاثَةَ أَسْهُمٍ: سَهْمًا لَهُ وَسَهْمَيْنِ لِفَرَسِهِ

وعن ابن عمر ان رسول الله صلى الله عليه وسلم اسهم للرجل ولفرسه ثلاثة اسهم سهما له وسهمين لفرسه

ব্যাখ্যা: ইমাম মুযহির বলেনঃ হাদীসের মূল ‘আরবী ইবারতে لَه শব্দের ‘লাম’ অক্ষরটি تَمْلِيك ‘মালিকানা’ এর অর্থ প্রদান করেছে। আর لِفَرَسِه এর ‘লাম’ বর্ণটি سَبب ‘কারণ’ এর অর্থ প্রদান করেছে। সুতরাং অধিক অংশ তার ঘোড়ার কারণে। মূল কথা ঘোড় সওয়ারী যোদ্ধা নিজের এবং ঘোড়ার অংশসহ মোট তিন অংশ পাবে, আর পদাতিক পাবে এক অংশ (তার নিজের)। অত্র হাদীসের ভিত্তিতে ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস সহ তাবি‘ঈ হাসান বাসরী, মুজাহিদ, ইবনু সীরীন, ‘উমার ইবনু ‘আবদুল আযীয, ফাকীহ ও ইমামদের মধ্যে ইমাম মালিক, শাফি‘ঈ, আহমাদ, ইসহক, আওযা‘ঈ, আবূ ইউসুফ, মুহাম্মাদ সহ বহু সংখ্যক ইমাম ও ফাকীহ এই মতই পোষণ করেন যে, ঘোড় সওয়ারের জন্য তিন ভাগ, পদাতিকের জন্য এক ভাগ। পক্ষান্তরে ইমাম আবূ হানীফাহ্ (রহঃ) বলেন, ঘোড় সওয়ারীর জন্য দুই ভাগ মাত্র। এক অংশ নিজের এক অংশ ঘোড়ার- এই মোট দুই অংশ। [এখানেও বিস্তারিত আলোচনা পরিহার করা হলো]

(মিরকাতুল মাফাতীহ; শারহে মুসলিম ১২শ খন্ড, হাঃ ১৭৬২; ফাতহুল বারী ৫ম খন্ড, হাঃ ২০৬৩; তুহফাতুল আহওয়াযী ৪র্থ খন্ড, হাঃ ১৫৫৪; ‘আওনুল মা‘বূদ ৫ম খন্ড, হাঃ ২৭৩০)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৯: জিহাদ (كتاب الجهاد) 19. Jihad

পরিচ্ছেদঃ ৭. প্রথম অনুচ্ছেদ - গনীমাতের সম্পদ বণ্টন এবং তা আত্মসাৎ করা

৩৯৮৮-[৪] ইয়াযীদ ইবনু হুরমুয হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন (খারিজী নেতা) নাজদাতুল হারূরী ইবনু ’আব্বাস (রাঃ)-এর নিকট পত্র লিখে জানতে চাইল, যদি কোনো নারী বা গোলাম জিহাদে অংশগ্রহণ করে তারা গনীমাতের মালে অংশ পাবে কিনা? তখন ইবনু ’আব্বাস ইয়াযীদকে বললেন, তাকে লিখে দাও, তাদের কোনো নির্ধারিত অংশ নেই। তবে ইমাম তাদেরকে সামান্য কিছু মাল দিতে পারেন।

অপর এক বর্ণনায় আছে, ইবনু ’আব্বাস তাকে লিখে পাঠিয়েছেন যে, তুমি আমার কাছে জানতে চেয়েছ যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিহাদে নারীদেরকে সঙ্গে নিয়েছেন কিনা এবং তাদেরকে গনীমাতের মালের অংশ দিতেন কিনা? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নারীদেরকে সঙ্গে নিতেন এ উদ্দেশে যে, তারা অসুস্থ ও আহত মুজাহিদদের পরিচর্যা ও সেবা-শুশ্রূষা করবেন, এতে তাদেরকে গনীমাত হতে সামান্য কিছু দেয়া হতো, নিয়মিত অংশাধিকার দেননি। (মুসলিম)[1]

بَابُ قِسْمَةِ الْغَنَائِمِ وَالْغُلُوْلِ فِيْهَا

وَعَنْ يَزِيدَ بْنِ هُرْمُزَ قَالَ: كَتَبَ نَجْدَةُ الْحَرُورِيُّ إِلَى ابْنِ عَبَّاسٍ يَسْأَلُهُ عَنِ الْعَبْدِ وَالْمَرْأَة يحْضرَانِ لمغنم هلْ يُقسَمُ لَهما؟ فَقَالَ ليزيدَ: اكْتُبْ إِلَيْهِ أَنَّهُ لَيْسَ لَهُمَا سَهْمٌ إِلَّا أَنْ يُحْذَيَا. وَفِي رِوَايَةٍ: كَتَبَ إِلَيْهِ ابْنُ عَبَّاسٍ: إِنَّكَ كَتَبْتَ إِلَيَّ تَسْأَلُنِي: هَلْ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَغْزُو بِالنِّسَاءِ؟ وَهَلْ كَانَ يَضْرِبُ لَهُنَّ بِسَهْمٍ؟ فَقَدْ كَانَ يَغْزُو بِهِنَّ يُدَاوِينَ الْمَرْضَى وَيُحْذَيْنَ مِنَ الْغَنِيمَةِ وَأَمَّا السَّهْمُ فَلَمْ يَضْرِبْ لَهُنَّ بِسَهْمٍ. رَوَاهُ مُسلم

وعن يزيد بن هرمز قال كتب نجدة الحروري الى ابن عباس يساله عن العبد والمراة يحضران لمغنم هل يقسم لهما فقال ليزيد اكتب اليه انه ليس لهما سهم الا ان يحذيا وفي رواية كتب اليه ابن عباس انك كتبت الي تسالني هل كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يغزو بالنساء وهل كان يضرب لهن بسهم فقد كان يغزو بهن يداوين المرضى ويحذين من الغنيمة واما السهم فلم يضرب لهن بسهم رواه مسلم

ব্যাখ্যা: নাজদাতুল হারুরী হলো (ইরাকের) খারিজী সম্প্রদায়ের সর্দার। হারূরী ইরাকের কুফা নগরীর সন্নিকটে একটি গ্রাম। এখানেই খারিজী ভ্রান্ত দলের উদ্ভব হয়। তারা খলীফাতুল মুসলিমীন ‘আলী -এর দল ত্যাগ করে ভিন্নদল ও মতবাদ কায়িম করে এবং এই হারূরী নামক স্থানে সমবেত হয়।

শিশু, নারী এবং দাস-দাসীরা যদি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে তাদের সৈনিকদের মতো নির্ধারিত হিস্যা বা অংশ নেই, তবে তারা رضخ (কিছু পরিমাণ সম্পদ) অনুদান পাবে। খারিজী সর্দার ইবনু ‘আব্বাসকে পত্র পাঠিয়ে জানতে চান যে, নারীরা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে পারবে কিনা? যদি কোনো নারী ও কৃতদাস যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে তবে তাদের গনীমাতের কোনো অংশ আছে কিনা? ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস ইরাকের গভর্নর ইয়াযীদকে পত্র লিখে জানালেন যে, তুমি তাকে জানিয়ে দাও যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নারীদের সেবা শুশ্রুষা করার জন্য যুদ্ধে নিতেন, কিন্তু তাদের গনীমাতের নির্দিষ্ট কোনো অংশ দেয়া হতো না। (মিরকাতুল মাফাতীহ; শারহে মুসলিম ১২শ খন্ড, হাঃ ১৮২২ পৃঃ নং ১৬০; ‘আওনুল মা‘বূদ ৫ম খন্ড, হাঃ ২৭২৪)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ ইয়াযীদ ইবন হুরমুয
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৯: জিহাদ (كتاب الجهاد) 19. Jihad

পরিচ্ছেদঃ ৭. প্রথম অনুচ্ছেদ - গনীমাতের সম্পদ বণ্টন এবং তা আত্মসাৎ করা

৩৯৮৯-[৫] সালামাহ্ ইবনুল আক্ওয়া’ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বীয় গোলাম রবাহ-কে উট ইত্যাদির তত্ত্বাবধানে (মদীনার বাইরে) পাঠালেন, আমিও তার সাথে ছিলাম। ভোর হতে না হতেই আকস্মিক আক্রমণ করে (গাত্ফান গোত্রের অন্যতম দলনেতা) ’আব্দুর রহমান ফাযারী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উটগুলো লুট করে নিয়ে গেল। (সালামাহ্ বলেন) আমি একটি উচ্চ টিলার উপরে উঠে মদীনার দিকে মুখ করে তিনবার উচ্চস্বরে ’ইয়া সবাহাহ্’ (বিপদ সংকেত) বলে চিৎকার করলাম। অতঃপর আমি লুণ্ঠনকারী শত্রুদলের প্রতি তীর নিক্ষেপ করতে করতে তাদেরকে ধাওয়া করলাম। আর ছন্দ আবৃত্তি করতে থাকলাম- ’আমি আক্ওয়া’-এর স্বনামধন্য পুত্র, আজ মাতৃদুগ্ধ স্মরণের দিন’।

অবশেষে আমি তাদের প্রতি অবিরাম তীর নিক্ষেপ করতে করতে অগ্রসর হতে লাগলাম এবং লুণ্ঠিত উটগুলো আমার পশ্চাতে ফেলে রেখে পুনরায় তীর নিক্ষেপ করতে করতে তাদের পিছনে ছুটলাম। পরিশেষে (আমার আক্রমণে তারা অতিষ্ঠ হয়ে) শরীরের বোঝা লাঘবের নিমিত্তে ত্রিশটির অধিক চাদর, কম্বল ও ত্রিশটি বর্শা শরীর হতে ফেলে দ্রুত পালিয়ে গেল। অতঃপর আমি প্রতিটি চাদর কম্বল ও বর্শার উপরে পাথর চাপা দিয়ে এই চিহ্ন রেখে গেলাম যেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তার সাথীরা এ কথা বুঝতে পারেন যে, এ সমস্ত জিনিসগুলো আমিই শত্রুদের নিকট হতে করায়ত্ব করেছি। এতক্ষণে আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তার সাথীদেরকে দেখতে পেলাম।

এমন সময়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ঘোড়সওয়ার আবূ কাতাদাহ ’আব্দুর রহমান ফাযারীকে সম্মুখে পেয়ে হত্যা করে ফেললেন। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উৎসাহের সাথে বললেন, আবূ কাতাদাহ হলো আমাদের ঘোড়সওয়ারীদের মধ্যে উত্তম, আর পদাতিকের মধ্যে সর্বোত্তম হলো সালামাহ্ ইবনুল আক্ওয়া’। সালামাহ্ বলেন, অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে দু’-তৃতীয়াংশ দিলেন। এক অংশ অশ্বারোহীর এবং আরেক অংশ পদাতিকের। অতঃপর মদীনায় প্রত্যাবর্তনকালে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে তার ’আযবা নামক উটের উপরে তার পিছনে বসিয়ে নিলেন। (মুসলিম)[1]

بَابُ قِسْمَةِ الْغَنَائِمِ وَالْغُلُوْلِ فِيْهَا

وَعَنْ سَلَمَةَ بْنِ الْأَكْوَعِ قَالَ: بَعَثَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِظَهْرِهِ مَعَ رَبَاحٍ غُلَامِ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَأَنَا مَعَهُ فَلَمَّا أَصْبَحْنَا إِذَا عَبْدُ الرَّحْمَنِ الْفَزَارِيُّ قَدْ أَغَارَ عَلَى ظَهْرِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقُمْتُ عَلَى أَكَمَةٍ فَاسْتَقْبَلْتُ الْمَدِينَةَ فَنَادَيْتُ ثَلَاثًا يَا صَبَاحَاهْ ثُمَّ خَرَجْتُ فِي آثَارِ الْقَوْمِ أَرْمِيهِمْ بِالنَّبْلِ وَأَرْتَجِزُ وَأَقُولُ:
أَنَا ابْنُ الْأَكْوَعْ وَالْيَوْمُ يَوْمُ الرُّضَّعْ
فَمَا زِلْتُ أَرْمِيهِمْ وَأَعْقِرُ بِهِمْ حَتَّى مَا خلَقَ اللَّهُ مِنْ بَعِيرٍ مِنْ ظَهْرِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَّا خَلَّفْتُهُ وَرَاءَ ظَهْرِي ثُمَّ اتَّبَعْتُهُمْ أَرْمِيهِمْ حَتَّى أَلْقَوْا أَكْثَرَ مِنْ ثَلَاثِينَ بُرْدَةً وَثَلَاثِينَ رُمْحًا يَسْتَخِفُّونَ وَلَا يَطْرَحُونَ شَيْئًا إِلَّا جَعَلْتُ عَلَيْهِ آرَامًا مِنَ الْحِجَارَةِ يَعْرِفُهَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَأَصْحَابُهُ حَتَّى رَأَيْتُ فَوَارِسَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَلَحِقَ أَبُو قَتَادَةَ فَارِسُ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِعَبْدِ الرَّحْمَنِ فَقَتَلَهُ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «خَيْرُ فُرْسَانِنَا الْيَوْمَ أَبُو قَتَادَةَ وَخَيْرُ رَجَّالَتِنَا سَلَمَةُ» . قَالَ: ثُمَّ أَعْطَانِي رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سَهْمَيْنِ: سَهْمَ الْفَارِسِ وَسَهْمَ الرَّاجِلِ فَجَمَعَهُمَا إِلَيَّ جَمِيعًا ثُمَّ أَرْدَفَنِي رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَرَاءَهُ عَلَى الْعَضْبَاءِ رَاجِعَيْنِ إِلَى الْمَدِينَةِ. رَوَاهُ مُسلم

وعن سلمة بن الاكوع قال بعث رسول الله صلى الله عليه وسلم بظهره مع رباح غلام رسول الله صلى الله عليه وسلم وانا معه فلما اصبحنا اذا عبد الرحمن الفزاري قد اغار على ظهر رسول الله صلى الله عليه وسلم فقمت على اكمة فاستقبلت المدينة فناديت ثلاثا يا صباحاه ثم خرجت في اثار القوم ارميهم بالنبل وارتجز واقولانا ابن الاكوع واليوم يوم الرضعفما زلت ارميهم واعقر بهم حتى ما خلق الله من بعير من ظهر رسول الله صلى الله عليه وسلم الا خلفته وراء ظهري ثم اتبعتهم ارميهم حتى القوا اكثر من ثلاثين بردة وثلاثين رمحا يستخفون ولا يطرحون شيىا الا جعلت عليه اراما من الحجارة يعرفها رسول الله صلى الله عليه وسلم واصحابه حتى رايت فوارس رسول الله صلى الله عليه وسلم ولحق ابو قتادة فارس رسول الله صلى الله عليه وسلم بعبد الرحمن فقتله قال رسول الله صلى الله عليه وسلم خير فرساننا اليوم ابو قتادة وخير رجالتنا سلمة قال ثم اعطاني رسول الله صلى الله عليه وسلم سهمين سهم الفارس وسهم الراجل فجمعهما الي جميعا ثم اردفني رسول الله صلى الله عليه وسلم وراءه على العضباء راجعين الى المدينة رواه مسلم

ব্যাখ্যা: অত্র হাদীসের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হলো সালামাহ্ ইবনুল আক্ওয়া‘-কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’ভাবে অংশ দিয়েছেন, অশ্বারোহী হিসেবে এবং পদাতিক হিসেবে। যদিও সে পদাতিক ছিল, কেননা গনীমাত অর্জনে তার ভূমিকা ছিল মুখ্য। (মিরকাতুল মাফাতীহ ৭ম খন্ড, ৫০৪ পৃঃ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৯: জিহাদ (كتاب الجهاد) 19. Jihad

পরিচ্ছেদঃ ৭. প্রথম অনুচ্ছেদ - গনীমাতের সম্পদ বণ্টন এবং তা আত্মসাৎ করা

৩৯৯০-[৬] ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুদ্ধে প্রেরিত কোনো কোনো সৈন্যকে বিশেষভাবে সাধারণ সৈন্যদের অংশ অপেক্ষা নফল স্বরূপ অতিরিক্ত কিছু গনীমাত দিতেন। (বুখারী, মুসলিম)[1]

بَابُ قِسْمَةِ الْغَنَائِمِ وَالْغُلُوْلِ فِيْهَا

وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ: أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يُنَفِّلُ بَعْضَ مَنْ يَبْعَثُ مِنَ السَّرَايَا لِأَنْفُسِهِمْ خَاصَّةً سِوَى قِسْمَةِ عَامَّةِ الْجَيْشِ

وعن ابن عمر ان رسول الله صلى الله عليه وسلم كان ينفل بعض من يبعث من السرايا لانفسهم خاصة سوى قسمة عامة الجيش

ব্যাখ্যা: গনীমাত বণ্টনের সাধারণ নীতির পরও ইমাম বা আমীর কোনো সৈনিককে নফল হিসেবে অতিরিক্ত সম্পদ দিতে পারেন। এরূপ দেয়ার প্রমাণে অত্র হাদীসটি দলীল হতে পারে। (বিস্তারিত দেখুন- ফাতহুল বারী ৬ষ্ঠ খন্ড, হাঃ ৩১৩৫; ‘আওনুল মা‘বূদ ৫ম খন্ড, হাঃ ২৭৪৩)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৯: জিহাদ (كتاب الجهاد) 19. Jihad

পরিচ্ছেদঃ ৭. প্রথম অনুচ্ছেদ - গনীমাতের সম্পদ বণ্টন এবং তা আত্মসাৎ করা

৩৯৯১-[৭] উক্ত রাবী [ইবনু ’উমার (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গনীমাতের পঞ্চমাংশ হতে আমরা যা পেতাম তা ব্যতীত নফল স্বরূপ অতিরিক্ত কিছু আমাদের দিয়েছেন। সেই নফল থেকে আমার ভাগে একটি ’শারিফ’ পড়েছিল। ’শারিফ’ বলা হয় বয়স্ক বড় উটকে। (বুখারী, মুসলিম)[1]

بَابُ قِسْمَةِ الْغَنَائِمِ وَالْغُلُوْلِ فِيْهَا

وَعَنْهُ قَالَ: نَفَّلَنَا رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عَلَيْهِ وَسلم نَفَلًا سِوَى نَصِيبِنَا مِنَ الْخُمُسِ فَأَصَابَنِي شَارِفٌ والشارف: المسن الْكَبِير

وعنه قال نفلنا رسول الله صلى الله عليه وسلم نفلا سوى نصيبنا من الخمس فاصابني شارف والشارف المسن الكبير

ব্যাখ্যা: নফল বলা হয় ‘ফরয’ বা নির্ধারিত অংশের অতিরিক্তকে। এখানে যুদ্ধলব্ধ সম্পদে সৈনিকদের নির্ধারিত হিস্যা বা অংশের অতিরিক্ত সম্পদকে নফল বলা হয়েছে।

সৈনিকদের প্রাপ্য নির্ধারিত অংশ পাওয়ার পরও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের নফল বা অতিরিক্ত কিছু অংশ দিতেন। নির্ধারিত অংশের অতিরিক্ত কিছু দেয়া আমির বা ইমামের ইখতিয়ার, তিনি যাকে উপযুক্ত মনে করবেন যতটুকু মনে করবেন দিবেন। এটা সৈনিকের অধিকার নয়। (মিরকাতুল মাফাতীহ; শারহে মুসলিম ১২শ খন্ড, হাঃ ১৭৫০)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৯: জিহাদ (كتاب الجهاد) 19. Jihad

পরিচ্ছেদঃ ৭. প্রথম অনুচ্ছেদ - গনীমাতের সম্পদ বণ্টন এবং তা আত্মসাৎ করা

৩৯৯২-[৮] উক্ত রাবী [ইবনু ’উমার (রাঃ)] হতে বর্ণিত। একদিন তাঁর (ইবনু ’উমার -এর) একটি ঘোড়া কোথাও চলে গেলে শত্রুরা (রোমকরা) তাকে ধরে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে মুসলিম বাহিনী ঐ শত্রুদেরকে পরাজিত করে, অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সময়ে সেই হারানো ঘোড়াটি ইবনু ’উমার (রাঃ)-কে ফেরত দেয়া হয়।

অপর এক বর্ণনায় আছে, তাঁর (ইবনু ’উমার (রাঃ)-এর) একটি গোলাম পালিয়ে রোম দেশে চলে যায়। পরবর্তীতে মুসলিমরা তাদের বিরুদ্ধে বিজয়ী হলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সময়ের পরে খালিদ ইবনু ওয়ালীদ উক্ত গোলাম ইবনু ’উমার (রাঃ)-কে ফিরিয়ে দেন। (বুখারী)[1]

بَابُ قِسْمَةِ الْغَنَائِمِ وَالْغُلُوْلِ فِيْهَا

وَعَنْهُ قَالَ: ذَهَبَتْ فَرَسٌ لَهُ فَأَخَذَهَا الْعَدُوُّ فَظَهَرَ عَلَيْهِمُ الْمُسْلِمُونَ فَرُدَّ عَلَيْهِ فِي زَمَنِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ. وَفِي رِوَايَةٍ: أَبَقَ عَبْدٌ لَهُ فَلَحِقَ بِالرُّومِ فَظَهَرَ عَلَيْهِمُ الْمُسْلِمُونَ فَرَدَّ عَلَيْهِ خَالِدُ بْنُ الْوَلِيدِ بَعْدَ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ. رَوَاهُ الْبُخَارِيُّ

وعنه قال ذهبت فرس له فاخذها العدو فظهر عليهم المسلمون فرد عليه في زمن رسول الله صلى الله عليه وسلم وفي رواية ابق عبد له فلحق بالروم فظهر عليهم المسلمون فرد عليه خالد بن الوليد بعد النبي صلى الله عليه وسلم رواه البخاري

ব্যাখ্যা: ইবনু মালিক (রহ) বলেনঃ পলাতক গোলামের কেউ মালিক হবে না, কেউ যদি তাকে পায় অথবা বন্দী করে তবে তার কর্তব্য হলো মালিককে ফেরত দেয়া। বিজিত এলাকায় তাকে গনীমাত হিসেবে পেলে গনীমাতের সম্পদ হিসেবে তা বণ্টন হবে না বরং মালিক ফেরত পাবে। যেমনটি ইবনু ‘উমারকে ফেরত দেয়া হয়েছিল।

ইবনুল হুমাম (রহঃ) বলেনঃ কোনো মুসলিম অথবা যিম্মির মুসলিম গোলাম যদি পালিয়ে দারুল হার্বে প্রবেশ করে, আর তারা এটাকে ধরে নেয়, তবে ইমাম আবূ হানীফার মতে তারা এর মালিক হবে না, কিন্তু আবূ ইউসুফ ও মুহাম্মাদ (রহঃ)-এর মতে তারা এর মালিক হবে। (মিরকাতুল মাফাতীহ; ফাতহুল বারী ৬ষ্ঠ খন্ড, হাঃ ৩০৬৭)

* গোলামের প্রচলন বর্তমানে নেই, তাই বিস্তারিত ব্যাখ্যা বর্জন করা হলো। (সম্পাদক)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৯: জিহাদ (كتاب الجهاد) 19. Jihad

পরিচ্ছেদঃ ৭. প্রথম অনুচ্ছেদ - গনীমাতের সম্পদ বণ্টন এবং তা আত্মসাৎ করা

৩৯৯৩-[৯] জুবায়র ইবনু মুত্ব’ইম (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন আমি ও ’উসমান ইবনু ’আফফান (রাঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট গিয়ে বললাম, আপনি খায়বারের পঞ্চমাংশ হতে বানী মুত্ত্বালিবকে (স্বীয় আপনজন হিসেবে) মাল দিলেন, কিন্তু আমাদেরকে (বানী নাওফাল ও ’আব্দ শামস্-কে) বঞ্চিত করলেন। অথচ আমরা ও তারা আপনার নিকট একই মান-মর্যাদার অধিকারী। উত্তরে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, অবশ্যই বানী হাশিম ও বানী মুত্ত্বালিব এক ও অভিন্ন। বর্ণনাকারী (জুবায়র) বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বানী ’আব্দ শামস্ ও বানী নাওফাল-কে তা হতে কিছু দেননি। (বুখারী)[1]

بَابُ قِسْمَةِ الْغَنَائِمِ وَالْغُلُوْلِ فِيْهَا

وَعَن جُبيرِ بن مُطعمٍ قَالَ: مَشَيْتُ أَنَا وَعُثْمَانُ بْنُ عَفَّانَ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقُلْنَا: أَعْطَيْتَ بَنِي الْمُطَّلِبِ مِنْ خُمُسِ خَيْبَرَ وَتَرَكْتَنَا وَنَحْنُ بِمَنْزِلَةٍ وَاحِدَةٍ مِنْكَ؟ فَقَالَ: «إِنَّمَا بَنُو هَاشِمٍ وَبَنُو المطلبِ وَاحِدٌ» . قَالَ جُبَيْرٌ: وَلَمْ يَقْسِمِ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِبَنِي عَبْدِ شَمْسٍ وَبَنِي نوفلٍ شَيْئا. رَوَاهُ البُخَارِيّ

وعن جبير بن مطعم قال مشيت انا وعثمان بن عفان الى النبي صلى الله عليه وسلم فقلنا اعطيت بني المطلب من خمس خيبر وتركتنا ونحن بمنزلة واحدة منك فقال انما بنو هاشم وبنو المطلب واحد قال جبير ولم يقسم النبي صلى الله عليه وسلم لبني عبد شمس وبني نوفل شيىا رواه البخاري

ব্যাখ্যা: জুবায়র ইবনু মুত্ব‘ইম সম্ভ্রান্ত কুরায়শ বংশের লোক ছিলেন! তার উপনাম ছিল আবূ মুহাম্মাদ আল্ কারশী আন্ নাওফালী। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খায়বারের গনীমাত থেকে সাহাবীদের প্রচুর সম্পদ প্রদান করেন। বানী মুত্ত্বালিবদের খুমুস (এক-পঞ্চমাংশত) থেকে সম্পদ প্রদান করলে জুবায়র ইবনু মুত্ব‘ইম এবং ‘উসমান বললেন, হে আল্লাহর রসূল! বংশ মর্যাদার দিক থেকে আমরা তো আপনার নিকট বানী মুত্ত্বালিব-এর সাথে একই অবস্থানে, আপনি বানী মুত্ত্বালিব-কে খুমুস থেকে সম্পদ দিলেন আর আমাদের বাদ দিলেন? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হ্যাঁ, বানু হাশিম এবং বানী মুত্ত্বালিব একই, এই বলে তিনি এক হাতের অঙ্গুলি অন্য হাতের অঙ্গুলির মধ্যে প্রবেশ করালেন।

হাশিম, মুত্ত্বালিব, ‘আব্দ শামস্ ও নাওফাল- এ চারজনই ‘আব্দ মানাফ-এর পুত্র। জুবায়র নাওফাল-এর বংশধর, ‘উসমান ‘আব্দে শামস্-এর বংশধর, আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বানু হাশিম-এর বংশধর। ‘আব্দে মানাফ হলো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর চতুর্থ পর্যায়ের দাদা। সুতরাং সকলেই মূলে এক বংশ। ইসলামের প্রাথমিককালে কুরায়শগণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খানদান বানী হাশিম-এর বিরুদ্ধে একত্র হয়ে শি‘আবে আবী ত্বালিব নামক স্থানে অন্তরীণ করে রাখে। এ সময় বানু মুত্ত্বালিব তাদের প্রতি দয়াপ্রদর্শন করেন এবং তাদের দুর্দশায় এগিয়ে আসেন। বানী নাওফাল ও বানী ‘আব্দ শামস্ মানাফ-এর বংশধর হলেও হাশিমী ও মুত্ত্বালিবীদের সাথে সহযোগিতা করেনি, তাই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উক্ত খান্দান দু’টিকে নিজের নিকটতম আত্মীয়দের মধ্যে ধরেননি এবং তাদের জন্য অংশ নির্ধারণ করেননি। (মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৯: জিহাদ (كتاب الجهاد) 19. Jihad

পরিচ্ছেদঃ ৭. প্রথম অনুচ্ছেদ - গনীমাতের সম্পদ বণ্টন এবং তা আত্মসাৎ করা

৩৯৯৪-[১০] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা যে কোনো জনবসতিতে (যুদ্ধবিগ্রহ ব্যতীত) আধিপত্য বিস্তার কর, সেখানের সম্পদে সকলের সাথে তোমাদের অংশের অধিকার রয়েছে। আর যে জনবসতির অধিবাসীগণ আল্লাহ ও তার রসূলের অবাধ্য হয়, তখন তোমরা যুদ্ধের মাধ্যমে তা জয়ী হও। আর সেখানের সম্পদে আল্লাহ ও তার রসূলের এক-পঞ্চমাংশ রয়েছে এবং অবশিষ্ট তোমাদেরই জন্য। (মুসলিম)[1]

بَابُ قِسْمَةِ الْغَنَائِمِ وَالْغُلُوْلِ فِيْهَا

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَيُّمَا قَرْيَةٍ أَتَيْتُمُوهَا وأقمتمْ فِيهَا فَسَهْمُكُمْ فِيهَا وَأَيُّمَا قَرْيَةٍ عَصَتِ اللَّهَ وَرَسُولَهُ فَإِنَّ خُمُسَهَا لِلَّهِ وَلِرَسُولِهِ ثُمَّ هِيَ لَكُمْ» . رَوَاهُ مُسلم

وعن ابي هريرة قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم ايما قرية اتيتموها واقمتم فيها فسهمكم فيها وايما قرية عصت الله ورسوله فان خمسها لله ولرسوله ثم هي لكم رواه مسلم

ব্যাখ্যা: সে সমস্ত এলাকার অমুসলিম মুসলিম বাহিনীর সাথে যুদ্ধ না করে আত্মসমর্পণ করবে এবং বশ্যতা স্বীকার করে কোনো সন্ধি চুক্তিতে আবদ্ধ হবে তাদের সম্পদ হলো ফাই, সকলের তাতে হক রয়েছে। পক্ষান্তরে যুদ্ধের মাধ্যমে পদানত অমুসলিম এলাকা থেকে প্রাপ্ত সম্পদ হলো গনীমাত; এর এক-পঞ্চমাংশত আল্লাহ ও তার রসূলের জন্য, অবশিষ্ট সম্পদ কেবলমাত্র উক্ত অভিযানে অংশগ্রহণকারী সৈনিকদের মধ্যেই বণ্টিত হবে। অবশ্য ইমাম শাফি‘ঈ বিনা যুদ্ধে প্রাপ্ত সম্পদ ‘ফাই’ এর মধ্যেও খুমুস নির্ধারণের পক্ষপাতি। (মিরকাতুল মাফাতীহ; শারহে মুসলিম ১২শ খন্ড, হাঃ ১৭৫৬; ‘আওনুল মা‘বূদ ৫ম খন্ড, হাঃ ৩০৩৪)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৯: জিহাদ (كتاب الجهاد) 19. Jihad

পরিচ্ছেদঃ ৭. প্রথম অনুচ্ছেদ - গনীমাতের সম্পদ বণ্টন এবং তা আত্মসাৎ করা

৩৯৯৫-[১১] খাওলাহ্ আল আনসারিয়্যাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ এমন কিছু লোক রয়েছে যারা আল্লাহ প্রদত্ত মাল অন্যায়ভাবে গ্রাস করতে চায়! জেনে রাখ, এ শ্রেণীর লোকেদের জন্য কিয়ামতের দিন জাহান্নামের আগুন অবধারিত রয়েছে। (বুখারী)[1]

بَابُ قِسْمَةِ الْغَنَائِمِ وَالْغُلُوْلِ فِيْهَا

وَعَن خوْلَةَ الْأَنْصَارِيَّةِ قَالَتْ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «إِنَّ رِجَالًا يَتَخَوَّضُونَ فِي مَالِ اللَّهِ بِغَيْرِ حَقٍّ فَلَهُمُ النَّارُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ» . رَوَاهُ البُخَارِيّ

وعن خولة الانصارية قالت سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول ان رجالا يتخوضون في مال الله بغير حق فلهم النار يوم القيامة رواه البخاري

ব্যাখ্যা: (مَالِ اللّٰهِ) ‘আল্লাহর মাল’ বলতে গনীমাতের মাল, ‘ফাই’-এর মাল এবং যাকাতের মাল।

(يَتَخَوَّضُوْنَ) এর অর্থ তারা অনধিকার প্রবেশ করে, অনধিকার চর্চা করে ইত্যাদি। উদ্দেশ্য হলো গনীমাতের মালের উপর অনাধিকার চর্চা করা এবং তা খরচ করা।

তাদের জন্য জাহান্নামের আগুন। যদি তারা এটাকে হালাল মনে করে খরচ করে থাকে তবে তারা চির জাহান্নামী। আর যদি তা না করে তবে আল্লাহর ইচ্ছা মোতাবিক নির্দিষ্ট দিন পর্যন্ত জাহান্নাম ভোগ করবে। (মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৯: জিহাদ (كتاب الجهاد) 19. Jihad

পরিচ্ছেদঃ ৭. প্রথম অনুচ্ছেদ - গনীমাতের সম্পদ বণ্টন এবং তা আত্মসাৎ করা

৩৯৯৬-[১২] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের মাঝে দাঁড়িয়ে গনীমাত খিয়ানাত করা যে, মারাত্মক অপরাধ এবং তার পরিণাম ফল যে, খুব ভয়াবহ- এ সম্পর্কে নাসীহাত করার পর সতর্ক বাণী উচ্চারণ করে বলেন, কিয়ামতের দিন আমি যেন তোমাদের কাউকেও এ অবস্থায় দেখতে না পাই, সে স্বীয় কাঁধের উপর চিৎকাররত একটি উটসহ উপস্থিত হয়ে বলতে থাকবে, হে আল্লাহর রসূল! আমাকে রক্ষা করুন! আর আমি বলব, আজ আমার কিছু করার নেই। আমি তো আল্লাহর বিধান আগেই (দুনিয়াতে) জানিয়ে দিয়েছি। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আরো বললেন, আমি তোমাদের কাউকে কিয়ামতের দিন এ অবস্থায় দেখতে না পাই যে, সে স্বীয় কাঁধের উপর চিৎকাররত একটি বকরী বহন করে আসবে, আর আমাকে বলবে, হে আল্লাহর রসূল! আমাকে রক্ষা করুন।

আমি বলব, আমার কিছু করার নেই। আমি তো আল্লাহর বিধান আগেই জানিয়ে দিয়েছি। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আরো বললেন, আমি তোমাদের কাউকে কিয়ামতের দিন এ অবস্থায় দেখতে না পাই যে, সে স্বীয় কাঁধের উপর চিৎকাররত একটি মানুষকে বহন করে আসবে, আর আমাকে বলবে, হে আল্লাহর রসূল! আমাকে রক্ষা করুন। আমি বলব, আমার কিছু করার নেই। আমি তো আল্লাহর বিধান আগেই জানিয়ে দিয়েছি। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আরো বললেন, আমি তোমাদের কাউকে কিয়ামতের দিন এ অবস্থায় দেখতে না পাই যে, সে স্বীয় কাঁধের উপর এলোমেলো বিশিষ্ট কাপড়-চোপড় বহন করে আসবে, আর আমাকে বলবে, হে আল্লাহর রসূল! আমাকে রক্ষা করুন।

আমি বলব, আমার কিছু করার নেই। আমি তো আল্লাহর বিধান আগেই জানিয়ে দিয়েছি। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আরো বললেন, আমি তোমাদের কাউকে কিয়ামতের দিন এ অবস্থায় দেখতে না পাই যে, সে স্বীয় কাঁধের উপর জড়ো সম্পদ বহন করে আসবে, আর আমাকে বলবে, হে আল্লাহর রসূল! আমাকে রক্ষা করুন। আমি বলব, আমার কিছু করার নেই। আমি তো আল্লাহর বিধান আগেই জানিয়ে দিয়েছি। (বুখারী, মুসলিম; তবে শব্দবিন্যাস মুসলিম-এর, আর এটাই বিস্তৃত ও পূর্ণাঙ্গ হাদীস)[1]

بَابُ قِسْمَةِ الْغَنَائِمِ وَالْغُلُوْلِ فِيْهَا

وَعَن أبي هُرَيْرَة قَالَ: قَامَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ذَاتَ يَوْمٍ فَذَكَرَ الْغُلُولَ فَعَظَّمَهُ وَعَظَّمَ أَمْرَهُ ثُمَّ قَالَ: لَا أُلْفِيَنَّ أَحَدَكُمْ يَجِيءُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ عَلَى رَقَبَتِهِ بَعِيرٌ لَهُ رُغَاءٌ يَقُولُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ أَغِثْنِي فَأَقُولُ: لَا أَمْلِكُ لَكَ شَيْئًا قَدْ أَبْلَغْتُكَ. لَا أُلْفِيَنَّ أَحَدَكُمْ يَجِيءُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ عَلَى رَقَبَتِهِ فُرْسٌ لَهُ حَمْحَمَةٌ فَيَقُولُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ أَغِثْنِي فَأَقُولُ: لَا أَمْلِكُ لَكَ شَيْئًا قَدْ أَبْلَغْتُكَ لَا أُلْفِيَنَّ أَحَدَكُمْ يَجِيءُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ عَلَى رَقَبَتِهِ شَاةٌ لَهَا ثُغَاءٌ يَقُولُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ أَغِثْنِي فَأَقُولُ: لَا أَمْلِكُ لَكَ شَيْئًا قَدْ أَبْلَغْتُكَ لَا أُلْفِيَنَّ أَحَدَكُمْ يَجِيءُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ عَلَى رَقَبَتِهِ نَفْسٌ لَهَا صِيَاحٌ فَيَقُولُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ أَغِثْنِي فَأَقُولُ: لَا أَمْلِكُ لَكَ شَيْئًا قَدْ أَبْلَغْتُكَ لَا أُلْفِيَنَّ أَحَدَكُمْ يَجِيءُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ عَلَى رَقَبَتِهِ رِقَاعٌ تَخْفُقُ فَيَقُولُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ أَغِثْنِي فَأَقُولُ: لَا أَمْلِكُ لَكَ شَيْئًا قَدْ أَبْلَغْتُكَ لَا أُلْفِيَنَّ أَحَدَكُمْ يَجِيءُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ عَلَى رَقَبَتِهِ صَامِتٌ فَيَقُولُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ أَغِثْنِي فَأَقُولُ: لَا أَمْلِكُ لَكَ شَيْئا قد أبلغتك . وَهَذَا لفظ مُسلم وَهُوَ أتم

وعن ابي هريرة قال قام رسول الله صلى الله عليه وسلم ذات يوم فذكر الغلول فعظمه وعظم امره ثم قال لا الفين احدكم يجيء يوم القيامة على رقبته بعير له رغاء يقول يا رسول الله اغثني فاقول لا املك لك شيىا قد ابلغتك لا الفين احدكم يجيء يوم القيامة على رقبته فرس له حمحمة فيقول يا رسول الله اغثني فاقول لا املك لك شيىا قد ابلغتك لا الفين احدكم يجيء يوم القيامة على رقبته شاة لها ثغاء يقول يا رسول الله اغثني فاقول لا املك لك شيىا قد ابلغتك لا الفين احدكم يجيء يوم القيامة على رقبته نفس لها صياح فيقول يا رسول الله اغثني فاقول لا املك لك شيىا قد ابلغتك لا الفين احدكم يجيء يوم القيامة على رقبته رقاع تخفق فيقول يا رسول الله اغثني فاقول لا املك لك شيىا قد ابلغتك لا الفين احدكم يجيء يوم القيامة على رقبته صامت فيقول يا رسول الله اغثني فاقول لا املك لك شيىا قد ابلغتك وهذا لفظ مسلم وهو اتم

ব্যাখ্যা: الْغُلُولَ ‘গুলূল’ শব্দের অর্থ الْخِيَانَةُ فِي الْغَنِيمَةِ গনীমাতের মাল খিয়ানাত করা, আত্মসাৎ করা, চুরি করা। কেউ কেউ বলেছেন, (يَتَخَوَّضُوْنَ) ব্যাপক অর্থে ব্যবহৃত হয়, অর্থাৎ সকল চোরাই বা আত্মসাৎকৃত সম্পদই الْغُلُولَ। মোট কথা হারাম পন্থায় সংগৃহীত অর্থই গুলূল।

কিয়ামত দিবসে প্রত্যেকেই তার আত্মাসাৎকৃত বস্তু ঘাড়ে নিয়ে উঠবে। সেটি যদি কোনো প্রাণী হয় তাহলে বিকট চিৎকার করতে থাকবে, আর যদি অন্য কোনো জড় বস্তু হয় তবে সেটাও তার ঘাড়ে ভীষণভাবে চেপে বসবে, ফলে সে চিৎকার করে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে সাহায্যপ্রার্থী হবে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সবাইকে বলবেন, আমি আজ তোমাদের কিছুই করতে পারব না। আমি তো আল্লাহর বিধান পূর্বেই জানিয়ে দিয়েছি, অর্থাৎ আত্মসাতের পরিণতির কথা তোমাদেরকে পূর্বেই জানিয়ে দিয়েছি, তোমরা সে কথা কানে নাওনি, তাই আজ আমি তোমাদের পক্ষে কোনো সুপারিশ করতে পারব না। (মিরকাতুল মাফাতীহ ৭ম খন্ড, ৫১৬ পৃঃ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৯: জিহাদ (كتاب الجهاد) 19. Jihad

পরিচ্ছেদঃ ৭. প্রথম অনুচ্ছেদ - গনীমাতের সম্পদ বণ্টন এবং তা আত্মসাৎ করা

৩৯৯৭-[১৩] উক্ত রাবী [আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, জনৈক ব্যক্তি (বানী দুবার গোত্রীয়) মিদ্’আম নামক একটি গোলাম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে হাদিয়া স্বরূপ দেন। এক যুদ্ধে সে সওয়ারীর উপর হতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাওদা বা গদি নামাচ্ছিল। অকস্মাৎ কোথা থেকে একটি অজ্ঞাত তীর এসে তার গায়ে বিধঁল এবং এটাই তাকে হত্যা করে ফেলল; তখন লোকেরা বলে উঠল, তার জন্য জান্নাত মুবারক হোক। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, কক্ষনো না। সেই মহান সত্তার কসম, যার হাতে আমার প্রাণ। খায়বার যুদ্ধে গনীমাতের মাল হতে বণ্টন ব্যতিরেকে যে চাদরটি সে আত্মসাৎ করেছে, তা তার উপর অগ্নিরূপে দগ্ধ করবে। এ কথা শুনে এক ব্যক্তির জুতার একটি কিংবা দু’টি ফিতা যা অন্যের অগোচরে লুকিয়ে রেখেছিল, তা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এনে পেশ করল। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, এই একটি ফিতা বা দু’টি ফিতার কারণেও জাহান্নামের প্রজ্জ্বলিত আগুন হবে। (বুখারী, মুসলিম)[1]

بَابُ قِسْمَةِ الْغَنَائِمِ وَالْغُلُوْلِ فِيْهَا

وَعَنْهُ قَالَ: أَهْدَى رَجُلٌ لِرَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ غُلَامًا يُقَالُ لَهُ: مِدْعَمٌ فَبَيْنَمَا مِدْعَمٌ يَحُطُّ رَحْلًا لِرَسُولِ اللَّهِ صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسلم إِذْ أَصَابَهُ سهم عاثر فَقَتَلَهُ فَقَالَ النَّاسُ: هَنِيئًا لَهُ الْجَنَّةُ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «كَلَّا وَالَّذِي نَفسِي بِيَدِهِ إِن الثملة الَّتِي أَخَذَهَا يَوْمَ خَيْبَرَ مِنَ الْمَغَانِمِ لَمْ تُصِبْهَا الْمَقَاسِمُ لَتَشْتَعِلُ عَلَيْهِ نَارًا» . فَلَمَّا سَمِعَ ذَلِك النَّاس جَاءَ رجل بشرك أَوْ شِرَاكَيْنِ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: «شِرَاكٌ مِنْ نَارٍ أَوْ شِرَاكَانِ من نارٍ»

وعنه قال اهدى رجل لرسول الله صلى الله عليه وسلم غلاما يقال له مدعم فبينما مدعم يحط رحلا لرسول الله صلى الله عليه وسلم اذ اصابه سهم عاثر فقتله فقال الناس هنيىا له الجنة فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم كلا والذي نفسي بيده ان الثملة التي اخذها يوم خيبر من المغانم لم تصبها المقاسم لتشتعل عليه نارا فلما سمع ذلك الناس جاء رجل بشرك او شراكين الى النبي صلى الله عليه وسلم فقال شراك من نار او شراكان من نار

ব্যাখ্যা: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মুসলিম গোলাম মিদ্‘আম আল্লাহর রাস্তায় বের হয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খিদমাতরত অবস্থায় (শত্রুদের) তীরবিদ্ধ হয়ে শাহাদাৎ বরণ করেন। সাহাবীগণ তার মৃত্যুকে সৌভাগ্যের মৃত্যু মনে করেন এবং তার জন্য জান্নাত নির্ধারিত বলে উল্লেখ করেন। কিন্তু সে খায়বারের গনীমাতের মাল বণ্টনের আগেই সামান্য একখানা চাদর গ্রহণ করায় আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীগণের দাবী প্রত্যাখ্যান করে বলেন, আল্লাহর শপথ! কক্ষনো নয়, সে খায়বারের গনীমাত থেকে বণ্টন ছাড়াই যে চাদরখানা হস্তগত করেছে সেটা আগুন হয়ে তাকে দগ্ধ করবে।

অন্য বর্ণনায় রয়েছে, «إِنِّي رَأَيْتُهُ فِي النَّارِ» ‘আমি তাকে জাহান্নামে দেখছি’। সামান্য একখানা চাদর আত্মসাতের কারণে তার (আল্লাহর নাবীর) খিদমাত এবং (আল্লাহর রাস্তায় জীবন দিয়ে) শহীদ হওয়াও তাকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করতে পারেনি।

আত্মসাৎকৃত বস্তুটিই আগুন হবে অথবা ঐ আত্মসাৎকৃত বস্তুটি তার জাহান্নামে যাওয়ার কারণ হবে। (মিরকাতুল মাফাতীহ; ফাতহুল বারী ১১শ খন্ড, হাঃ ৬৭০৭)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৯: জিহাদ (كتاب الجهاد) 19. Jihad

পরিচ্ছেদঃ ৭. প্রথম অনুচ্ছেদ - গনীমাতের সম্পদ বণ্টন এবং তা আত্মসাৎ করা

৩৯৯৮-[১৪] ’আব্দুল্লাহ ইবনু ’আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, কারকারাহ্ নামক জনৈক ব্যক্তি যুদ্ধে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আসবাবপত্র রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে নিয়োজিত ছিল। সে (যুদ্ধে) নিহত হলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সে জাহান্নামী। এটা শুনে লোকেরা তার মাল-সামানের সন্ধান করতে গিয়ে দেখতে পেল যে, সে গনীমাতের মাল হতে একটি জুববা (পোশাক) খিয়ানাত করেছে। (বুখারী)[1]

بَابُ قِسْمَةِ الْغَنَائِمِ وَالْغُلُوْلِ فِيْهَا

وَعَن عبدِ الله بنِ عَمْروٍ قَالَ: كَانَ عَلَى ثَقَلِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَجُلٌ يُقَالُ لَهُ كَرْكَرَةُ فَمَاتَ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «هُوَ فِي النَّارِ» فَذَهَبُوا يَنْظُرُونَ فَوَجَدُوا عَبَاءَةً قد غلها. رَوَاهُ البُخَارِيّ

وعن عبد الله بن عمرو قال كان على ثقل النبي صلى الله عليه وسلم رجل يقال له كركرة فمات فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم هو في النار فذهبوا ينظرون فوجدوا عباءة قد غلها رواه البخاري

ব্যাখ্যা: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আসবাবপত্র রক্ষণাবেক্ষণকারী নিশ্চয় বিশস্ত ব্যক্তিই ছিলেন। সাহাবী তো বটেই, উপরন্ত তার খাদিম। তিনি গনীমাতের সম্পদ থেকে একটি ‘আবা অর্থাৎ জুববা, অথবা চাদর আত্মসাতের কারণে জাহান্নামী হয়েছেন! তাহলে বিশাল বিশাল সম্পদ আত্মসাৎকারী সাধারণ মানুষের কি উপায় হতে পারে? (সম্পাদক)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৯: জিহাদ (كتاب الجهاد) 19. Jihad

পরিচ্ছেদঃ ৭. প্রথম অনুচ্ছেদ - গনীমাতের সম্পদ বণ্টন এবং তা আত্মসাৎ করা

৩৯৯৯-[১৫] ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যুদ্ধ চলাকালে আমরা মধু ও আঙ্গুর ইত্যাদি পেতাম, কিন্তু তা বায়তুল মালে (সরকারী কোষাগারে) জমা না দিয়ে নিজেরা ভোগ করতাম। (বুখারী)[1]

بَابُ قِسْمَةِ الْغَنَائِمِ وَالْغُلُوْلِ فِيْهَا

وَعَن ابْن عمر قَالَ: كُنَّا نُصِيبُ فِي مَغَازِينَا الْعَسَلَ وَالْعِنَبَ فنأكله وَلَا نرفعُه رَوَاهُ البُخَارِيّ

وعن ابن عمر قال كنا نصيب في مغازينا العسل والعنب فناكله ولا نرفعه رواه البخاري

ব্যাখ্যা: যুদ্ধের ময়দানে সৈনিকেরা খাদ্যদ্রব্য ফলমূল গনীমাত হিসেবে যা অর্জন করবে তা বায়তুল মালে জমা দানের পূর্বেই আমীরের অনুমতি ছাড়া খেলে তা কোনো পাপ হবে না। খাওয়ার পর অবশিষ্ট যা থাকে তা অবশ্যই বায়তুল মালে জমা দিতে হবে। সাহাবীগণ যুদ্ধের ময়দানে অর্জিত মধু, আঙ্গুর ইত্যাদি বণ্টনের জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট জমা না দিয়েই খেতেন। ফুকাহাদের সর্বসম্মত মত হলো মুজাহিদগণ দারুল হার্বে অবস্থানকালে গনীমাতের সম্পদ ‘খাদ্যদ্রব্য, ফলমূল’ বায়তুল মালে জমা দানের পূর্বেই প্রয়োজন মতো খেয়ে নিতে পারবে। তবে ব্যক্তিগতভাবে জমা রাখা বা সংরক্ষণ করা অথবা বাড়ীতে নিয়ে যাওয়া যাবে না। (মিরকাতুল মাফাতীহ ৭ম খন্ড, ৫১৯ পৃঃ; ফাতহুল বারী ৬ষষ্ঠ খন্ড, হাঃ ৩১৫৪)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৯: জিহাদ (كتاب الجهاد) 19. Jihad

পরিচ্ছেদঃ ৭. প্রথম অনুচ্ছেদ - গনীমাতের সম্পদ বণ্টন এবং তা আত্মসাৎ করা

৪০০০-[১৬] ’আব্দুল্লাহ ইবনু মুগাফফাল (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, খায়বার যুদ্ধের দিন আমি একটি চর্বিভর্তি থলি পেয়ে উঠিয়ে নিলাম আর (মনে মনে) বলতে লাগলাম, আজ আমি এটা হতে অন্য কাউকেও ভাগ দেব না। এমন সময় পাশে তাকিয়ে দেখি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার দিকে চেয়ে মৃদু হাসছেন। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

এ সম্পর্কে আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)-এর বর্ণিত হাদীসে উল্লেখ আছে, ’’শাসনকর্তাদের (কর্মচারীদের) মজুরি’’ অধ্যায়ে।

بَابُ قِسْمَةِ الْغَنَائِمِ وَالْغُلُوْلِ فِيْهَا

وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مُغَفَّلٍ قَالَ: أَصَبْتُ جِرَابًا مِنْ شَحْمٍ يَوْمَ خَيْبَرَ فَالْتَزَمْتُهُ فَقُلْتُ: لَا أُعْطِي الْيَوْمَ أَحَدًا مِنْ هَذَا شَيْئًا فَالْتَفَتُّ فَإِذَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يبتسم إِلَيّ. مُتَّفق عَلَيْهِ. وَذكر الحَدِيث أَبِي هُرَيْرَةَ «مَا أُعْطِيكُمْ» فِي بَابِ «رِزْقِ الْوُلَاة»

وعن عبد الله بن مغفل قال اصبت جرابا من شحم يوم خيبر فالتزمته فقلت لا اعطي اليوم احدا من هذا شيىا فالتفت فاذا رسول الله صلى الله عليه وسلم يبتسم الي متفق عليه وذكر الحديث ابي هريرة ما اعطيكم في باب رزق الولاة

ব্যাখ্যা: ‘আবদুল্লাহ ইবনু মুগাফফাল ছিলেন একজন জলীলুল কাদ্র সাহাবী, আহলে সুফ্ফার অন্যতম সদস্য। ‘উমার দশজন সাহাবীকে বাসরায় শিক্ষক হিসেবে প্রেরণ করেছিলেন তিনি তাদের অন্যতম ছিলেন।

তিনি খায়বারের যুদ্ধে চর্বিভর্তি একটি থলি তুলে নিয়ে প্রকাশ্যে অথবা মনে মনে বলেন, এটা আমি নিয়ে নিবো, এ থেকে কাউকে কিছুই দেবো না। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার কথা শুনে মুচকি মুচকি হাসলেন এবং তাকে কিছুই বললেন না।

‘আল্লামা ত্বীবী (রহঃ) বলেনঃ তিনি ঐ দিনে থলির প্রতি এত বেশী মুহতাজ ছিলেন যে, সেটা ছাড়া তার চলতই না। তার এই অধিক প্রয়োজনীয়তার কথা বুঝেই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে নিষেধ করেননি, বরং মৃদু হাসি দিয়েছেন।

ইবনুল মালিক (রহঃ) বলেনঃ এ হাদীস থেকে প্রমাণিত যে, ইসলামী যোদ্ধারা গনীমাতের মাল থেকে (খাদ্যদ্রব্য যা রয়েছে তা থেকে) প্রয়োজন পরিমাণ অর্থাৎ ক্ষুধা নিবারণ হয় এ পরিমাণ খাদ্য নিতে পারবে। অনুরূপ শরীরে মালিশের জন্য অথবা জ্বালানীর জন্য তৈল বা তৈল জাতীয় দ্রব্যও গ্রহণ করতে পারবে। (মিরকাতুল মাফাতীহ; ফাতহুল বারী ৬ষ্ঠ খন্ড, হাঃ ৩১৫৩; শারহে মুসলিম ১২শ খন্ড, হাঃ ১৭৭২)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৯: জিহাদ (كتاب الجهاد) 19. Jihad
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ১৬ পর্যন্ত, সর্বমোট ১৬ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে