মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) সর্বমোট হাদিসঃ ৫১৬৬ টি

পরিচ্ছেদঃ ৫০. প্রথম অনুচ্ছেদ - সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণের সালাত

১৪৮১-[২] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে এ হাদীসটিও বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতে খুসূফে তাঁর ক্বিরাআত (কিরআত) স্বরবে পড়লেন। (বুখারী, মুসলিম)[1]

بَابُ صَلَاةِ الْخُسُوْفِ

وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا قَالَتْ: جَهَرَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي صَلَاةِ الخسوف بقرَاءَته

ব্যাখ্যা: এ হাদীস সুস্পষ্ট দলীল যে, সূর্যগ্রহণের সালাতের ক্বিরাআত (কিরআত) সশব্দে হতে হবে। নীরবে হবে না। এটা আরও প্রমাণ করে যে, সুন্নাত হল সশব্দে নীরবে না। অনুরূপ হাদীস আসমা হতে বর্ণিত আছে বুখারীতে। এ সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) সররে ও নীরবে পড়ার ব্যাপারে মতভেদ আছে তবে শক্তিশালী মত হল সশব্দে বা স্বরবে পড়া, কারণ এ ব্যাপারে সহীহ ও অধিকাংশ হাদীস বর্ণিত হয়েছে আর এটা হ্যাঁ সূচক যা না বাচকের উপরে প্রাধান্য পাবে।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ

পরিচ্ছেদঃ ৫০. প্রথম অনুচ্ছেদ - সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণের সালাত

১৪৮২-[৩] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কালে একবার সূর্যগ্রহণ হয়েছিল। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জনগণকে সাথে নিয়ে সালাত আদায় করলেন। সালাতে তিনি সূরাহ্ আল বাক্বারাহ্ পড়ার মতো দীর্ঘ সময় পর্যন্ত দাঁড়ালেন। তারপর দীর্ঘ রুকূ’ করলেন। তারপর মাথা উঠিয়ে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলেন। তবে এ দাঁড়ানো ছিল প্রথম দাঁড়ানো অপেক্ষা স্বল্প সময়ের। এরপর আবার লম্বা রুকূ’ করলেন। তবে তা প্রথম রুকূ’ অপেক্ষা ছোট ছিল। তারপর রুকূ’ হতে মাথা উঠালেন ও সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) করলেন। তারপর আবার দাঁড়ালেন ও দীর্ঘসময় পর্যন্ত দাঁড়ালেন। তবে তা প্রথম দাঁড়ানো অপেক্ষা খাটো ছিল। তারপর আবার দীর্ঘ রুকূ’ করলেন। তাও আগের রুকূ’ অপেক্ষা ছোট। তারপর মাথা উঠালেন ও দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকলেন। তবে তা আগের দাঁড়ানোর চেয়ে কম। তারপর আবার দীর্ঘ রুকূ’ করলেন। তবে এ রুকূ’ও আগের রুকূ’ অপেক্ষা ছোট। তারপর মাথা উঠালেন ও সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) করলেন। এরপর সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) শেষ করলেন। আর এ সময় সূর্য পূর্ণ জ্যোতির্ময় হয়ে উঠে গেল।

এরপর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সূর্য ও চাঁদ আল্লাহর অসংখ্য নিদর্শনসমূহের মধ্যে দু’টো নিদর্শন। তারা কারো জন্ম-মৃত্যুতে গ্রহণযুক্ত হয় না। তোমরা এরূপ ’গ্রহণ’ দেখলে আল্লাহ তা’আলার যিকর করবে। সাহাবীগণ নিবেদন করলেন, হে আল্লাহর রসূল! আপনাকে আমরা দেখলাম। আপনি যেন এ স্থানে কিছু গ্রহণ করছেন। তারপর দেখলাম পেছনের দিকে সরে গেলেন। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তখন আমি জান্নাত দেখতে পেলাম। জান্নাত হতে এক গুচ্ছ আঙ্গুর নিতে আগ্রহী হলাম। যদি আমি তা গ্রহণ করতাম তাহলে তোমরা দুনিয়ায় বাকী থাকা পর্যন্ত সে আঙ্গুর খেতে পারতে।

আর আমি তখন জাহান্নাম দেখতে পেলাম। জাহান্নামের মতো বীভৎস কুৎসিত দৃশ্য আর কখনো আমি দেখিনি। আমি আরো দেখলাম যে, জাহান্নামের অধিকাংশ অধিবাসীই নারী। সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রসূল! কি কারণে তা হলো। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাদের কুফরীর কারণে। আবার তাঁকে জিজ্ঞেস করা হলো, তারা কি আল্লাহর সাথে কুফরী করে থাকে? রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, না; বরং স্বামীর সাথে কুফরী করে থাকে। তারা (স্বামীর) সদ্ব্যবহার ভুলে যায়। সারা জীবন যদি তুমি তাদের কারো সাথে ইহসান করো। এরপর (কোন সময়) যদি সে তোমার পক্ষ হতে সামান্য ত্রুটি-বিচ্যুতি দেখে বলে উঠে। আমি জীবনেও তোমার কাছে ভাল ব্যবহার পেলাম না। (বুখারী, মুসলিম)[1]

بَابُ صَلَاةِ الْخُسُوْفِ

عَن عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: انْخَسَفَتِ الشَّمْسُ عَلَى عَهْدِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَصَلَّى رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَامَ قِيَامًا طَوِيلًا نَحْوًا مِنْ قِرَاءَةِ سُورَةِ الْبَقَرَةِ ثُمَّ رَكَعَ رُكُوعًا طَوِيلًا ثُمَّ رَفَعَ فَقَامَ قِيَامًا طَوِيلًا وَهُوَ دُونَ الْقِيَامِ الْأَوَّلِ ثُمَّ رَكَعَ رُكُوعًا طَوِيلًا وَهُوَ دُونَ الرُّكُوعِ الْأَوَّلِ ثُمَّ رَفَعَ ثُمَّ سَجَدَ ثُمَّ قَامَ قِيَامًا طَوِيلًا وَهُوَ دُونَ الْقِيَامِ الْأَوَّلِ ثُمَّ رَكَعَ رُكُوعًا طَوِيلًا وَهُوَ دُونَ الرُّكُوعِ الْأَوَّلِ ثُمَّ رَفَعَ فَقَامَ قِيَامًا طَوِيلًا وَهُوَ دُونَ الْقِيَامِ الْأَوَّلِ ثُمَّ رَكَعَ رُكُوعًا طَوِيلًا وَهُوَ دُونَ الرُّكُوعِ الْأَوَّلِ ثُمَّ رَفَعَ ثُمَّ سَجَدَ ثمَّ انْصَرف وَقد تجلت الشَّمْس فَقَالَ صلى الله عَلَيْهِ وَسلم: «إِنَّ الشَّمْسَ وَالْقَمَرَ آيَتَانِ مِنْ آيَاتِ اللَّهِ لَا يَخْسِفَانِ لِمَوْتِ أَحَدٍ وَلَا لِحَيَاتِهِ فَإِذَا رَأَيْتُمْ ذَلِكَ فَاذْكُرُوا اللَّهَ» . قَالُوا: يَا رَسُولَ الله رَأَيْنَاك تناولت شَيْئا فِي مقامك ثمَّ رَأَيْنَاك تكعكعت؟ قَالَ صلى الله عَلَيْهِ وَسلم: «إِنِّي أريت الْجنَّة فتناولت عُنْقُودًا وَلَوْ أَخَذْتُهُ لَأَكَلْتُمْ مِنْهُ مَا بَقِيَتِ الدُّنْيَا وأريت النَّار فَلم أر منْظرًا كَالْيَوْمِ قَطُّ أَفْظَعَ وَرَأَيْتُ أَكْثَرَ أَهْلِهَا النِّسَاءَ» . قَالُوا: بِمَ يَا رَسُولَ اللَّهِ؟ قَالَ: «بِكُفْرِهِنَّ» . قِيلَ: يَكْفُرْنَ بِاللَّهِ؟ . قَالَ: يَكْفُرْنَ الْعَشِيرَ وَيَكْفُرْنَ الْإِحْسَانَ لَو أَحْسَنت إِلَى أحداهن الدَّهْر كُله ثُمَّ رَأَتْ مِنْكَ شَيْئًا قَالَتْ: مَا رَأَيْتُ مِنْك خيرا قطّ

ব্যাখ্যা: দারাকুতনীতে ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর হাদীস রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রথম রাক্‘আতে সূরাহ্ ‘আনকাবূত অথবা সূরাহ্ রূম পড়েছেন আর দ্বিতীয় রাক্‘আতে সূরাহ্ ইয়াসীন পড়েছে। আর বায়হাক্বীর হাদীসে প্রথম রাক্‘আতে সূরাহ্ ‘আনকাবূত এবং দ্বিতীয় রাক্‘আতে লুক্বমান অথবা ইয়াসীন পড়েছেন।

(إِنَّ الشَّمْسَ وَالْقَمَرَ ايَتَانِ مِنْ ايَاتِ اللّهِ) নিশ্চয় সূর্য ও চন্দ্র আল্লাহ তা‘আলার নিদর্শনের মধ্যে অন্যতম দু’টি নিদর্শন। এ কথাটি ইঙ্গিত করে যে, সূর্য ও চন্দ্র গ্রহণের সালাতের হুকুম একই। আর নিদর্শন দ্বারা প্রমাণ করে আল্লাহর একত্ববাদ তার ক্ষমতা ও বড়ত্বের উপর অথবা তার বান্দাদেরকে ভীত-সন্ত্রস্ত করান কঠিনতা ও দাপটের মাধ্যমে যেমন আল্লাহ তা‘আলার বাণীঃ وَمَا نُرْسِلُ بِالْايَاتِ إِلَّا تَخْوِيْفًا

‘‘ভয় প্রদর্শনের উদ্দেশেই কেবল আমি নিদর্শন পাঠিয়ে থাকি।’’ (সূরাহ্ বানী ইসরাঈল ১৭ : ৫৯)

কারও মৃত্যুর কারণে সূর্য ও চন্দ্র গ্রহণ হয় না। জাহিলী যুগে এ ধারণা বা বিশ্বাস ছিল স্বনামধন্য ও সর্বজন শ্রদ্ধেয় ব্যক্তির মৃত্যুর কারণে সূর্য ও চন্দ্রগ্রহণ প্রকাশ পায়। যেমন বুখারীর হাদীসে আবূ বাকরাহ্-এর কারণ বর্ণনা প্রসঙ্গে বলেন যে, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পুত্র ইব্রাহীম মারা গেল মানুষেরা বলতে লাগল যে ইব্রাহীম এর মৃত্যুর কারণে সূর্যগ্রহণ প্রকাশ পেয়েছে। সামনে নু‘মান বিন বাশীর-এর হাদীস আসছে জাহিলিয়্যাতের লোকেরা বলত সূর্য ও চন্দ্রগ্রহণ প্রকাশ পায় কেবল স্বনামধন্য বক্তির মৃত্যুর জন্য আর এ হাদীস জাহিলিয়্যাতে এ চিন্তা চেতনা ও কুসংস্কৃতিকে বাতিল করে।

(فَإِذَا رَأَيْتُمْ ذلِكَ فَاذْكُرُوا اللّهَ) আর যখন তোমরা এমনটি (সূর্য ও চন্দ্রগ্রহণ) দেখবে আল্লাহ তা‘আলাকে স্মরণ করবে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ), তাসবীহ, তাকবীর, দু‘আ, তাহলীল, ইসতিগফার ও সকল দু‘আর মাধ্যমে। আর এটা প্রমাণ করে চন্দ্রগ্রহণের সালাত শারী‘আত সম্মত।

(إِنِّي أريت الْجنَّة) ‘আমি জান্নাত দেখেছি’ তাঁর এই দেখাটা বাস্তবে তথা স্বচক্ষক্ষ দেখেছেন। আর অন্য বর্ণনায় জানাযায় যুহরের সালাতে এমনটি ঘটেছিল এটি ধর্তব্য বিষয় না। কেননা তিনি দু’বার বা অনেকবার জান্নাত জাহান্নাম প্রত্যক্ষ করেছেন বিভিন্ন আকৃতিতে। আর আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের বিশ্বাস হল জান্নাত ও জাহান্নামকে সৃষ্টি করা হয়েছে যা বর্তমান পর্যন্ত বাস্তবে বিদ্যমান।

(وَرَأَيْتُ أَكْثَرَ أَهْلِهَا النِّسَاءَ) ‘আর জাহান্নামে অধিকাংশ অধিবাসী মহিলা দেখেছি’ এ বক্তব্যটি আবূ হুরায়রার হাদীসের সাথে দ্বন্দ্ব। তাতে বলা হয়েছে সর্বনিম্ন জান্নাতবাসীর অবস্থান দুনিয়াতে যার দু’জন স্ত্রী ছিল। আর এ মোতাবেক মহিলারা দুই তৃতীয়াংশ জান্নাতের অধিবাসী হবে। দ্বন্দ্ব সমাধানে বলা হয় আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)-এর হাদীস তাদের মহিলাদের জাহান্নাম হতে বের হবার পর এ ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। আর জাবির (রাঃ)-এর হাদীস যেখানে বলা হয়েছে অধিকাংশ মহিলাদের আমি সেখানে দেখেছি যারা যদি তাদেরকে আমানাত দেয়া হয় তাহলে তা খিয়ানাত করে আর তাদের নিকট কিছু চাইলে কৃপণতা করে আর যখন তারা চায় খুব কাকুতি মিনতি করে আর যদি তাদেরকে দেয়া হয় তাহলে নাশুকর করে। সুতরাং এটা প্রমাণ করে এমন খারাপ গুণে গুণান্বিত মহিলারা জাহান্নামে অবস্থান করবে।

হাদীসের শিক্ষাঃ

আল্লাহর পক্ষ হতে ভীতিকর কোন পরিবেশ দেখলে দ্রুত তার আনুগত্যে ফিরে যাওয়া এবং বালা মুসীবাতকে প্রতিহত করা আল্লাহর স্মরণ এবং বিভিন্নভাবে তার আনুগত্য ও পরস্পরের অধিকারকে সন্ধান আর আবশ্যিকভাবে নি‘আমাত দানকারীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ ও ইত্যাদির মাধ্যমে।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ

পরিচ্ছেদঃ ৫০. প্রথম অনুচ্ছেদ - সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণের সালাত

১৪৮৩-[৪] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) ও ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) বরাতে বর্ণিত হওয়া এ ধরনের একটি হাদীস বর্ণিত হয়েছে। বস্তুতঃ ’আয়িশাহ্ (রাঃ) বলেন, তারপর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাজদায় গেলেন। তিনি দীর্ঘ সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) করলেন। তারপর সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) শেষ করলেন। তখন সূর্য বেশ আলোকিত হয়ে গেছে। তারপর তিনি জনগণের উদ্দেশে বক্তব্য প্রদান করলেন। তিনি সর্বপ্রথম আল্লাহর গুণকীর্তন করলেন। তারপর বললেন, সূর্য ও চাঁদ আল্লাহর নিদর্শনাবলীর দু’টো নিদর্শন। কারো মৃত্যুতে সূর্যগ্রহণ বা চন্দ্রগ্রহণ হয় না। আর কারো জন্মের কারণেও হয় না। তোমরা এ অবস্থা দেখতে পেলে আল্লাহর নিকট দু’আ করো এবং তার বড়ত্ব ঘোষণা কর। সালাত আদায় কর। দান-সদাক্বাহ্ (সাদাকা) ও খয়রাত করো। এরপর তিনি বললেন, হে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উম্মাতেরা! আল্লাহর শপথ! আল্লাহ তা’আলার চেয়ে বেশী ঘৃণাকারী আর কেউ নেই। তাঁর যে বান্দা ’যিনা’ তথা ব্যভিচার করবে অথবা তার যে বান্দী ’যিনা’ তথা ব্যভিচার করবে তিনি তাদের ঘৃণা করেন। হে মুহাম্মাদের উম্মাতগণ! আল্লাহর কসম! আমি যা জানি যদি তোমরা তা জানতে, নিশ্চয়ই তোমরা কম হাসতে ও বেশী কাঁদতে। (বুখারী, মুসলিম)[1]

بَابُ صَلَاةِ الْخُسُوْفِ

وَعَنْ عَائِشَةَ نَحْوُ حَدِيثِ ابْنِ عَبَّاسٍ وَقَالَتْ: ثُمَّ سَجَدَ فَأَطَالَ السُّجُودَ ثُمَّ انْصَرَفَ وَقَدِ انْجَلَتِ الشَّمْسُ فَخَطَبَ النَّاسَ فَحَمِدَ اللَّهَ وَأَثْنَى عَلَيْهِ ثُمَّ قَالَ: «إِنَّ الشَّمْسَ وَالْقَمَرَ آيَتَانِ مِنْ آيَاتِ اللَّهِ لَا يَخْسِفَانِ لِمَوْتِ أَحَدٍ وَلَا لِحَيَاتِهِ فَإِذَا رَأَيْتُمْ ذَلِكَ فَادْعُوا اللَّهَ وَكَبِّرُوا وَصَلُّوا وَتَصَدَّقُوا» ثُمَّ قَالَ: «يَا أُمَّةَ مُحَمَّدٍ وَاللَّهِ مَا مِنْ أَحَدٍ أَغْيَرُ مِنَ اللَّهِ أَنْ يَزْنِيَ عَبْدُهُ أَوْ تَزْنِيَ أَمَتُهُ يَا أُمَّةَ مُحَمَّدٍ وَاللَّهِ لَوْ تَعْلَمُونَ مَا أَعْلَمُ لَضَحِكْتُمْ قَلِيلًا وَلَبَكَيْتُمْ كَثِيرًا»

ব্যাখ্যা: (فَخَطَبَ النَّاسَ) ‘অতঃপর তিনি জনগণের উদ্দেশে খুতবাহ্ প্রদান করছেন।’ এটা সুস্পষ্ট প্রমাণ করে সূর্য ও চন্দ্র গ্রহণের সালাতে খুতবাহ্ রয়েছে। এ মতে শাফি‘ঈ, ইসহাক ইবনু জারীর ও আহলে হাদীসের ফকীহগণ রায় দিয়েছেন। আর আবূ হানীফাহ্, মালিক ও আহমাদ এর মতে এ সালাতে কোন খুতবাহ্ নেই। আর তারা দলীল হিসেবে বলেন কেননা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত (সালাত/নামায/নামাজ), তাকবীর এবং সদাক্বার আদেশ দিয়েছেন এবং খুতবার আদেশ দেননি আর যদি সুন্নাহ হত তাহলে আদেশ দিতেন। এর জবাবে বলা হবে শারী‘আত সম্মত ও সুন্নাহ হওয়ার জন্য বলার মাধ্যমে বর্ণনার প্রতি ভ্রূক্ষক্ষপ করে না বরং প্রমাণিত হয় তাঁর কর্মের দ্বারা আর এখানে এবং অনেক হাদীস দ্বারা সাব্যস্ত হয়েছে তিনি সূর্য ও চন্দ্র গ্রহণের সালাতের পর খুতবাহ্ প্রদান করেছেন।

(فَإِذَا رَأَيْتُمْ ذلِكَ فَادْعُوا اللّهَ وَكَبِّرُوْا وَصَلُّوْا) ‘যখন এমনটি দেখবে আল্লাহকে ডাকবে এবং তার বড়ত্ব ঘোষণা করবে আর সালাত আদায় করবে। আর বুখারীতে আবূ মাস্‘ঊদ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ নিশ্চয় মানুষের মধ্যে কারও মৃত্যুর কারণে সূর্য ও চন্দ্রগ্রহণ প্রকাশ পায় না বরং তা আল্লাহ তা‘আলার নিদর্শনের মধ্যে অন্যতম দু’টি নিদর্শন যখন তোমরা এমনটি দেখবে তোমরা দাঁড়াবে এবং সালাত আদায় করবে।

হাফিয ইবনু হাজার এ হাদীস দ্বারা প্রমাণ করেন যে, সূর্যগ্রহণের সালাতের নির্ধারিত কোন সময় নেই কেননা সালাতকে সংশ্লিষ্ট করা হয়েছে সূর্যগ্রহণের সাথে আর তা দিনের যে কোন সময় হতে পারে।

(تَصَدَّقُوْا) তোমরা সদাক্বাহ্ (সাদাকা) কর কেননা সদাক্বাহ্ (সাদাকা) রবের রাগকে মিটিয়ে দেয়। আর হাদীস প্রমাণ করে যে, সূর্য বা চন্দ্র গ্রহণের সময় দ্রুত সালাত ও সকল প্রকার উল্লেখিত দু‘আ, তাকবীর ও সদাক্বার প্রতি ধাবিত হওয়া। আল্লামা শাহ ওয়ালীউল্লাহ দেহলবী বলেন, নিঃসন্দেহে আল্লাহর নিদর্শন যখন প্রকাশ পায় তখন আত্মা যে নিদর্শনের প্রতি অনুগত হয় এবং আল্লাহর প্রতি শরণাপন্ন হয় আর দুনিয়া হতে বিচ্ছিন্ন হয়। সুতরাং ঐ অবস্থাটি মু’মিনদের জন্য গনীমাত তখন যে অনুনয়কারী হবে দু‘আ, সালাত ও সকল ভাল কাজে। আর (মনে হবে) দুর্ঘটনাটি বা বিপদের সময়টি অনুরূপ বিশ্বে নিশ্চয় আল্লাহর বিচার কার্যের সময়। সুতরাং এ সময়ে চিন্তাবিদরা আতঙ্ক অনুভব করবে। আর এ জন্য রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঐ সময়ে আতঙ্ক অনুভব করেছিলেন। আর এটা পৃথিবীতে আধ্যাত্মিক সংক্রমণ সময় মুহসিনদের জন্য উপযোগী সময় তারা এ সময়ে আল্লাহর নিকটবর্তী হবে বা আল্লাহর নৈকট্য লাভ করবে। যেমন নু‘মান-এর হাদীস যখন আল্লাহ তার সৃষ্টি জীবের জন্য কোন নিদর্শন প্রকাশ করেন তখন তারা তার জন্য ভীত হয়।

(لَوْ تَعْلَمُوْنَ مَا أَعْلَمُ) ‘যদি তোমরা জানতে আমি যা জানি’। বাজি বলেনঃ কিছু জ্ঞান আল্লাহ তা‘আলা তাঁর নাবীর জন্য করেছেন যা অন্য কাউকে জানান না।

সূর্য ও চন্দ্র গ্রহণের হিকমাহ্ঃ

১। সূর্য ও চন্দ্র গ্রহণের বিষয়টি এমন একটি দৃষ্টান্ত বর্ণনা করে যে, অতি শীঘ্রই ক্বিয়ামাত (কিয়ামত) সংঘটিত হবে।

২। আর শাস্তির একটি চিত্র, যে পাপ কাজ করে না আর যে পাপ কাজ করে তার জন্য কিরূপ হবে।

৩। আর সতর্ক করা হয়েছে ভয়ের সাথে যেন আশার নীতি অবলম্বন করে। কেননা সূর্যগ্রহণের পরে তা দীপ্তমান হয়। যেন মু’মিন আশা নিয়ে রবকে ভয় করে।

৪। ভৎর্সনা করা হয়েছে তাদেরকে যারা সূর্য ও চন্দ্রের পূজা করে।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ

পরিচ্ছেদঃ ৫০. প্রথম অনুচ্ছেদ - সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণের সালাত

১৪৮৪-[৫] আবূ মূসা আল আশ্’আরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার সূর্যগ্রহণ হলো। এতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে গেলেন। তাঁর উপর ’ক্বিয়ামাত (কিয়ামত) ’ সংঘটিত হয়ে যাবার মতো ভয়-ভীতি আরোপিত হলো। অতঃপর তিনি মসজিদে গমন করলেন। দীর্ঘ ’ক্বিয়াম (কিয়াম)’ ’রুকূ’ ও ’সিজদা্ (সিজদা/সেজদা)’ দিয়ে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করলেন। সাধারণতঃ (এত দীর্ঘ সালাত আদায় করতে) আমি কখনো তাঁকে দেখেনি। অতঃপর তিনি বললেন, এসব নিদর্শনাবলী যা আল্লাহ তা’আলা পাঠিয়ে থাকেন তা না কারো মৃত্যুতে সংঘটিত হয়ে থাকে, আর না কারো জন্মে হয়ে থাকে। বরং এসব দিয়ে আল্লাহ তাঁর বান্দাদেরকে ভয়-ভীতি দেখিয়ে থাকেন। অতএব তোমরা যখন এ নিদর্শনাবলীর কোন একটি অবলোকন করবে, আল্লাহকে ভয় করবে। তাঁর যিকর করবে। তাঁর নিকট দু’আ ও ক্ষমা প্রার্থনা করবে। (বুখারী, মুসলিম)[1]

بَابُ صَلَاةِ الْخُسُوْفِ

وَعَنْ أَبِي مُوسَى قَالَ: خَسَفَتِ الشَّمْسُ فَقَامَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَزِعًا يَخْشَى أَنْ تَكُونَ السَّاعَةَ فَأَتَى الْمَسْجِدَ فَصَلَّى بِأَطْوَلِ قِيَامٍ وَرُكُوعٍ وَسُجُودٍ مَا رَأَيْتُهُ قَطُّ يَفْعَلُهُ وَقَالَ: «هَذِهِ الْآيَاتُ الَّتِي يُرْسِلُ اللَّهُ لَا تَكُونُ لِمَوْتِ أَحَدٍ وَلَا لِحَيَاتِهِ وَلَكِنْ يُخَوِّفُ اللَّهُ بِهَا عِبَادَهُ فَإِذَا رَأَيْتُمْ شَيْئًا مِنْ ذَلِكَ فَافْزَعُوا إِلَى ذِكْرِهِ وَدُعَائِهِ واستغفاره»

ব্যাখ্যা: (أَنْ تَكُوْنَ السَّاعَةَ) ‘রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘাবড়ানো অবস্থায় উঠে দাঁড়ালেন।’ এতে ক্বিয়ামাত (কিয়ামত) সংঘঠিত হয়ে যায় নাকি এ ভয়ে ভীত হয়ে পড়লেন। এ হাদীস বুঝতে সমস্যা সৃষ্টি করে যে, ক্বিয়ামাত (কিয়ামত) সংঘটিত হয়েছে অথবা ক্বিয়ামাতের (কিয়ামতের) পূর্বে অনেক বড় বড় নিদর্শন রয়েছে যেমন, বিভিন্ন দেশ বিজয়। খুলাফায়ে রাশিদীনদের রাষ্ট্র নেতৃত্ব দান। খাওয়ারিজদের আবির্ভাব। সূর্য পশ্চিম দিকে উদয় দাজ্জালের আগমন ইত্যাদি এগুলোর একটিও হয়নি।

অনেক জবাব দেয়া হয়েছে তন্মধ্যে-

১। ভয়, আতঙ্ক হঠাৎ করে বড় বিষয়ের আগমনের প্রাধান্যতা মানুষকে নির্বাচক করে দেয় যা সে জানে।

২। আসলে বর্ণনাকারী ধারণা করছেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভয় পেয়েছেন যে, ক্বিয়ামাত (কিয়ামত) সন্নিকটে। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সত্যিকারে এমনটি ভাবেননি বরং তিনি সালাতের উদ্দেশে দ্রুত বের হয়েছেন।

৩। তিনি ভয় পেয়েছেন এজন্য যে, ক্বিয়ামাতের (কিয়ামতের) আলামতসমূহের এটা ভূমিকা স্বরূপ যেন সূর্য পশ্চিমে উদিত হওয়া।

(فَأَتَى الْمَسْجِدَ) তিনি মসজিদে আসলেন হাদীসে এটা প্রমাণিত হয় যে, সূর্যগ্রহণের সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) মসজিদে পড়া সুন্নাহ আর এটা ‘উলামাদের প্রসিদ্ধ মত।

হাদীসে ইঙ্গিত বহন করে যে, দ্রুত বাস্তবায়নের দিকে ধাবিত হওয়া যা আল্লাহ আদেশ করেছেন আর সতর্ক করা হয়েছে যে বিপদসমূহের সময় আল্লাহর নিকট আশ্রয় নেয়ার দু‘আ ও ক্ষমা প্রার্থনার মাধ্যমে।

আরও ইঙ্গিত বহন করে যে, গুনাহ হচ্ছে বিপদাপদ ও দ্রুত শাস্তির কারণ এবং ক্ষমা প্রার্থনা ও তাওবাহ্ এ সকল মুসীবাত দূরীভূত করেন।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ

পরিচ্ছেদঃ ৫০. প্রথম অনুচ্ছেদ - সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণের সালাত

১৪৮৫-[৬] জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জীবদ্দশায় যেদিন তাঁর ছেলে ইব্রাহীমের ইন্তিকাল হলো এদিন সূর্যগ্রহণ হলো। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জনগণকে নিয়ে ’ছয় রুকূ’ ও চার সাজদায় সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করালেন। (মুসলিম)[1]

بَابُ صَلَاةِ الْخُسُوْفِ

وَعَنْ جَابِرٍ قَالَ: انْكَسَفَتِ الشَّمْسُ فِي عَهْدِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمَ مَاتَ إِبْرَاهِيمُ ابْنُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَصَلَّى بِالنَّاسِ سِتَّ رَكَعَاتٍ بِأَرْبَعِ سَجَدَاتٍ. رَوَاهُ مُسلم

ব্যাখ্যা: (مَاتَ إِبْرَاهِيْمُ ابْنُ رَسُولُ اللّهِ ﷺ) রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ছেলে ইব্রাহীম মারা গেছেন। তার মা মারিয়্যাহ্ কিবতিয়্যাহ্ সারিয়্যাহ্ রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপপত্মী বা রক্ষিতা ছিলেন যাকে মুক্বাওক্বিস ইসকান্দার ও মিসরের অধিপতি উপঢৌকন দিয়েছিলেন। আর তিনি (ইব্রাহীম) জন্মগ্রহণ করেছিলেন ৮ম হিজরীর যিলহাজ্জ মাসে মৃত্যুবরণ করেন ১৬ মাস বয়সে অথবা ১৭/১৮ মাস বয়সে। তবে এ বিষয়ে গবেষণা করে মরহুম মাহমূদ বাশা আল কুলকী বলেন, সূর্যগ্রহণের দিন মারা গেছে ইব্রাহীম যা সংঘটিত হয়েছিল দশম হিজরীর ২৯শে শাও্ওয়াল সোমবার সকাল ৮টা ৩০মিনিটে। ৬৩২ খৃঃ ২৭ জানুয়ারী মোতাবেক মদীনাতে। তার জন্ম নবম হিজরীর জামাদিউল উলা মাসে সে হিসেবে মৃত্যু ১৮ মাস অথবা ১৭ মাস বয়সে।

(بِأَرْبَعِ سَجَدَاتٍ) চার সিজদা (সিজদা/সেজদা) তথা দু’ রাক্‘আতে। সুতরাং প্রতি রাক্‘আতে তিন রুকূ' ও দু’ সিজদা্ (সিজদা/সেজদা)। ত্বীবী বলেন, তিনি দু’ রাক্‘আত আদায় করেছেন প্রতি রাক্‘আতে তিনটি করে রুকূ' ছিল।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ

পরিচ্ছেদঃ ৫০. প্রথম অনুচ্ছেদ - সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণের সালাত

১৪৮৬-[৭] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূর্যগ্রহণের সময় (দু’ রাক্’আত) সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আট রুকূ’ ও চার সাজদায় আদায় করেছেন।[1]

بَابُ صَلَاةِ الْخُسُوْفِ

وَعَن ابْن عَبَّاس قَالَ: صلى الله عَلَيْهِ وَسلم حِين كسفت الشَّمْس ثَمَان رَكْعَات فِي أَربع سَجدَات


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ

পরিচ্ছেদঃ ৫০. প্রথম অনুচ্ছেদ - সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণের সালাত

১৪৮৭-[৮] ’আলী (রাঃ) হতেও ঠিক এরূপ একটি হাদীস বর্ণিত হয়েছে। (মুসলিম)[1]

بَابُ صَلَاةِ الْخُسُوْفِ

وَعَن عَليّ مثل ذَلِك. رَوَاهُ مُسلم


হাদিসের মানঃ তাহকীক অপেক্ষমাণ
পুনঃনিরীক্ষণঃ

পরিচ্ছেদঃ ৫০. প্রথম অনুচ্ছেদ - সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণের সালাত

১৪৮৮-[৯] ’আবদুর রহমান ইবনু সামুরাহ্ (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জীবদ্দশায় মদীনায় আমি আমার তীরগুলো (লক্ষস্থলে) নিক্ষেপের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করছিলাম। এ সময় সূর্যগ্রহণ শুরু হলো। তীরগুলো আমি ছুঁড়ে ফেলে দিলাম। মনে মনে বললাম, আল্লাহর কসম! আমি আজ দেখব সূর্যগ্রহণের সময় রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আজ কি করেন। এরপর আমি তাঁর নিকট এলাম। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সালাতে দাঁড়িয়ে আছেন। তিনি তাঁর হাত দু’টি উঠিয়ে সূর্যগ্রহণ ছেড়ে না যাওয়া পর্যন্ত আল্লাহর তাসবীহ্, তাহলীল, তাকবীর ও হামদ করেছেন। আল্লাহর দরবারে দু’আয় মশগুল রয়েছেন। সূর্যগ্রহণ ছেড়ে গেলে তিনি দু’টি সূরাহ্ পড়লেন ও দু’ রাক্’আত সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করলেন- (মুসলিম; শারহে সুন্নাতেও হাদীসটি এভাবে ’আবদুর রহমান ইবনু সামুরাহ্ হতে বর্ণিত হয়েছে। আর মাসাবীহ হতেও এ বর্ণনাটি জাবির ইবনু সামুরাহ্ হতে নকল করা হয়েছে।)[1]

بَابُ صَلَاةِ الْخُسُوْفِ

وَعَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ سَمُرَةَ قَالَ: كُنْتُ أرتمي بأسهم لي بالمدين فِي حَيَاةَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذْ كُسِفَتِ الشَّمْسُ فَنَبَذْتُهَا. فَقُلْتُ: وَاللَّهِ لَأَنْظُرَنَّ إِلَى مَا حَدَثَ لِرَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي كُسُوفِ الشَّمْسِ. قَالَ: فَأَتَيْتُهُ وَهُوَ قَائِمٌ فِي الصَّلَاةِ رَافِعٌ يَدَيْهِ فَجعل يسبح ويهلل وَيكبر ويحمد وَيَدْعُو حَتَّى حَسَرَ عَنْهَا فَلَمَّا حَسَرَ عَنْهَا قَرَأَ سُورَتَيْنِ وَصَلَّى رَكْعَتَيْنِ. رَوَاهُ مُسْلِمٌ فِي صَحِيحِهِ عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ سَمُرَةَ وَكَذَا فِي شَرْحِ السُّنَّةِ عَنْهُ وَفِي نُسَخِ الْمَصَابِيحِ عَنْ جَابِرِ بن سَمُرَة

ব্যাখ্যা: (وَهُوَ قَائِمٌ فِي الصَّلَاةِ رَافِعٌ يَدَيْهِ) সালাতে দন্ডায়মান অবস্থায় দু’হাত উঠাতেন। নাবাবী বলেন, এতে আমাদের সাথীদের জন্য সুস্পষ্ট দলীল যে, কুনূতেও দু’হাত উত্তোলন হবে আর দু‘আর সালাতে হাত উত্তোলন করা যাবে না তাদের বিরুদ্ধেও এটা দলীল।

(فَلَمَّا حَسَرَ عَنْهَا قَرَأَ سُورَتَيْنِ وَصَلّى رَكْعَتَيْنِ) ‘অতঃপর সূর্যগ্রহণ ছেড়ে গেল’ রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’টি সূরাহ্ পাঠ করলেন এবং দু’ রাক্‘আত সালাত আদায় করলেন। এটা সুস্পষ্ট যে, সূর্য দ্বীপ্তমান হবার পরে সালাতরত অবস্থায় ছিলেন এটা সকল রিওয়ায়াতের বিপরীত। অনেকের মন্তব্য যে, এটা স্বতন্ত্র নফল সালাত ছিল সূর্যগ্রণের সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) ছিল না। এটা এ কথার বিপরীত যেন (فَأَتَيْتُه وَهُوَ قَائِمٌ فِي الصَّلَاةِ) রাবী বলেন, আমি আসলাম এবং তাঁকে (রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে) সালাত অবস্থায় পেলাম।

লাম্‘আত গ্রন্থে বলেনঃ দু’ রাক্‘আত সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) পূর্ণ করেছেন যা তিনি আরম্ভ করেছিলেন, সালাতরত অবস্থায় সূর্যগ্রহণ ছেড়ে গেছে। ত্বীবী বলেনঃ সালাতে প্রবেশ করেছেন প্রথম কিয়ামে অবস্থান করেছেন আর তাসবীহ, তাহলীল তাকবীর, তাহমীদ করেছেন, ইতোমধ্যে সূর্যগ্রহণ ছেড়ে গেছে। অতঃপর কুরআন পড়লেন, রুকূ' করলেন, সিজদা(সিজদা/সেজদা) করলেন। অনুরূপ দ্বিতীয় রাক্‘আতের জন্য দাঁড়ালেন, তিলাওয়াত করলেন, রুকূ' করলেন সিজদা (সিজদা/সেজদা) করলেন তাশাহুদ পাঠ করলেন এবং সালাম ফিরালেন। আর এ হাদীস প্রমাণ করে তিনি দু’ রাক্‘আত আদায় করেছেন এবং প্রত্যেক রাক্‘আতে একটি করে রুকূ' করেছেন।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ

পরিচ্ছেদঃ ৫০. প্রথম অনুচ্ছেদ - সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণের সালাত

১৪৮৯-[১০] আসমা বিনতু আবূ বকর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূর্যগ্রহণ শুরু হলে দাস মুক্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন। (বুখারী)[1]

بَابُ صَلَاةِ الْخُسُوْفِ

وَعَنْ أَسْمَاءَ بِنْتِ أَبِي بَكْرٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا قَالَتْ: لَقَدْ أَمَرَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِالْعَتَاقَةِ فِي كُسُوفِ الشَّمْسِ. رَوَاهُ البُخَارِيّ

ব্যাখ্যা: সূর্যগ্রহণের সময় দাসমুক্ত করা শারী‘আত সম্মত। এ আদেশটি প্রমাণ বহন করে মুস্তাহাব তথা ভালোর উপর ওয়াজিব হিসেবে না, আর দাস মুক্ত ও সকল প্রকার কল্যাণসূচক কাজ সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণের সময় অনুমোদনযোগ্য, কেননা ভালো কাজসমূহ ‘আযাবকে প্রতিহত করে।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ

পরিচ্ছেদঃ ৫০. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণের সালাত

১৪৯০-[১১] সামুরাহ্ ইবনু জুনদুব (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূর্যগ্রহণের সময় আমাদেরকে নিয়ে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করেছেন। আমরা তাঁর আওয়াজ শুনতে পাইনি। (তিরমিযী, আবূ দাঊদ, নাসায়ী ও ইবনু মাজাহ)[1]

عَن سَمُرَة بن جُنْدُب قَالَ: صَلَّى بِنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي كُسُوفٍ لَا نَسْمَعُ لَهُ صَوْتًا. رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَأَبُو دَاوُدَ وَالنَّسَائِيُّ وَابْنُ مَاجَهْ

ব্যাখ্যা: হাদীস প্রমাণ করে যে, ইমাম সূর্যগ্রহণের সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) সশব্দে পড়বে না। সিনদী বলেন, সম্ভবত সামুরাহ্ পিছনের কাতারে ছিলেন বলে শুনতে পাননি তিনি সেটিই বর্ণনা করেছেন আর তার না শোনা প্রমাণ করে না যে, তিনি সশব্দে পড়েননি। সঠিক হল সশব্দে পড়া যা ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর হাদীস ইতিপূর্বে গেছে।


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ

পরিচ্ছেদঃ ৫০. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণের সালাত

১৪৯১-[১২] ’ইকরামাহ্ (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আব্বাসকে বলা হলো, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অমুক স্ত্রী ইন্তিকাল করেছেন। খবর শুনার সাথে সাথে তিনি সাজদায় লুটে পড়লেন। তাঁকে তখন জিজ্ঞেস করা হলো, আপনি কি এ সময় সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) করছেন? (অর্থাৎ এটা কি সিজদা্ করার সময়?) তিনি বললেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ তোমরা যখন কোন নিদর্শন দেখবে তখন সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) করবে। আর কোন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর স্ত্রীর দুনিয়া ত্যাগ করে চলে যাবার চেয়ে বড় নিদর্শন আর কি হতে পারে? (আবূ দাঊদ, তিরমিযী)[1]

وَعَن عِكْرِمَة قَالَ: قِيلَ لِابْنِ عَبَّاسٍ: مَاتَتْ فُلَانَةُ بَعْضُ أَزْوَاجِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَخَرَّ سَاجِدًا فَقِيلَ لَهُ تَسْجُدُ فِي هَذِهِ السَّاعَةِ؟ فَقَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِذَا رَأَيْتُمْ آيَةً فَاسْجُدُوا» وَأَيُّ آيَةٍ أَعْظَمُ مِنْ ذَهَابِ أَزْوَاجِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ؟ رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ وَالتِّرْمِذِيّ

ব্যাখ্যা: (إِذَا رَأَيْتُمْ ايَةً فَاسْجُدُوْا) যখন তোমরা কোন নিদর্শন দেখবে সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) করবে। ত্বীবী বলেন, এই সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) ‘আম তথা সাধারণ যদি নিদর্শন দ্বারা সূর্য ও চন্দ্রগ্রহণ হয় তাহলে সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) দ্বারা সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) উদ্দেশে হবে। আর যদি অন্য কোন হয় যেমন প্রচন্ড ঝড় এবং ভূমিকম্পন বা অন্য কোনো বিপদ হয় তাহলে সিজদা্ দ্বারা উদ্দেশ্য স্বভাবিক সিজদা্।

(وَأَيُّ ايَةٍ أَعْظَمُ مِنْ ذَهَابِ أَزْوَاجِ النَّبِيِّ ﷺ) আর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর স্ত্রীদের ইন্তিকালের চেয়ে বড় নিদর্শন আর কি হতে পারে। কেননা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্ত্রীদের বিশেষ মর্যাদা রয়েছে যা অন্য সাহাবীদের নেই। বিশেষ করে তাদের ইন্তিকালের মাধ্যমে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে বিশেষ সংশ্লিষ্ট ‘ইলমও চলে যায়।

মুল্লা ‘আলী কারী  বলেন, নিশ্চয় রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর স্ত্রীরা বারাকাতপূর্ণ তাদের জীবিত মানুষ হতে ‘আযাবকে মানুষ প্রতিহত করে আর তাঁদের ইন্তিকালের কারণে ‘আযাবের আশঙ্কা হয়। সুতরাং উচিত হবে তাদের বারাকাতের বিচ্ছিন্নের সময় আল্লাহর যিকর ও সাজদার দিকে ধাবিত হয়ে ‘আযাবকে প্রতিহত করতে যিকর ও সালাতের মাধ্যমে।


হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
পুনঃনিরীক্ষণঃ

পরিচ্ছেদঃ ৫০. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণের সালাত

১৪৯২-[১৩] উবাই ইবনু কা’ব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সময় একবার সূর্যগ্রহণ হয়েছিল। তিনি তাদের নিয়ে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করলেন। তিওয়ালে মুফাস্‌সালের সূরাহ্ দ্বারা ক্বিরাআত (কিরআত) পড়লেন। এরপর (প্রথম রাক্’আতে) পাঁচটি রুকূ’ করলেন। দু’টি সিজদা্ করলেন। তারপর দ্বিতীয় রাক্’আতের জন্য দাঁড়ালেন। তিওয়ালে মুফাস্‌সালের একটি সূরাহ্ দিয়ে ক্বিরাআত (কিরআত) পড়লেন। এরপর একটি রুকূ’ করলেন। দু’টি সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) করলেন। অতঃপর ক্বিবলা (কিবলা/কেবলা)মুখী হয়ে বসলেন। সূর্যগ্রহণ শেষ না হওয়া পর্যন্ত (বসে বসে) দু’আ করতে থাকলেন। (আবূ দাঊদ)[1]

عَنْ أُبَيِّ بْنِ كَعْبٍ قَالَ: انْكَسَفَتِ الشَّمْسُ عَلَى عَهْدِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فصلى بهم فَقَرَأَ بِسُورَة م الطُّوَلِ وَرَكَعَ خَمْسَ رَكَعَاتٍ وَسَجَدَ سَجْدَتَيْنِ ثُمَّ قَامَ الثَّانِيَةَ فَقَرَأَ بِسُورَةٍ مِنَ الطُّوَلِ ثُمَّ رَكَعَ خَمْسَ رَكَعَاتٍ وَسَجَدَ سَجْدَتَيْنِ ثُمَّ جَلَسَ كَمَا هُوَ مُسْتَقْبِلَ الْقِبْلَةِ يَدْعُو حَتَّى انْجَلَى كسوفها. رَوَاهُ أَبُو دَاوُد

ব্যাখ্যা: হাদীসটি প্রমাণ করে যে, সূর্যগ্রহণের সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) দু’ রাক্‘আত আর প্রতিটি রাক্‘আতের পাঁচটি করে রুকূ' তবে হাদীসটি ত্রুটিমুক্ত যা দু’রুকূ‘র হাদীসের মোকাবেলায় টিকে না।


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ

পরিচ্ছেদঃ ৫০. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণের সালাত

১৪৯৩-[১৪] নু’মান ইবনু বাশীর (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জীবদ্দশায় সূর্যগ্রহণ হলে তিনি দু’ দু’ রাক্’আত সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় শুরু করতেন ও মসজিদে বসে গ্রহণ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতেন। (অর্থাৎ দু’ রাক্’আত সালাত আদায়ান্তে দেখতেন ’গ্রহণ’ শেষ হয়েছে কি-না? না হলে আবার দু’ রাক্’আত সালাত আদায় করতেন)। এভাবে ’গ্রহণ’ থাকা পর্যন্ত সালাত আদায় করতে থাকতেন। আবূ দাঊদ; নাসায়ীর এক বর্ণনায় আছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূর্যগ্রহণ লাগলে আমাদের সালাতের মতো সালাত আদায় করতে শুরু করতেন। রুকূ’ করতেন, সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) করতেন।

(নাসায়ীর) অন্য এক রিওয়ায়াতে আছে, একদিন সূর্যগ্রহণ শুরু হলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তড়িৎগতিতে মসজিদে চলে গেলেন এবং সালাত আদায় করতে লাগলেন। এ অবস্থায় সূর্য আলোকিত হয়ে গেল। তারপর তিনি বললেন, জাহিলিয়্যাতের সময় মানুষেরা বলাবলি করত পৃথিবীর কোন বড় মানুষ মৃত্যুবরণ করলে ’সূর্যগ্রহণ’ ও ’চন্দ্রগ্রহণ’ হয়ে থাকে। (ব্যাপারটি কিন্তু তা নয়) আসলে কোন মানুষের জন্ম বা মৃত্যুতে ’গ্রহণ’ হয় না। বরং এ দু’টি জিনিস (চাঁদ, সূর্য) আল্লাহ তা’আলার সৃষ্টিসমূহের দু’টি সৃষ্টি। আল্লাহ তা’আলা তার সৃষ্টি জগতে যেভাবে চান পরিবর্তন আনেন। অতএব যেটারই ’গ্রহণ’ হয় তোমরা সালাত আদায় করবে। যে পর্যন্ত ’গ্রহণ’ ছেড়ে না যায়। অথবা আল্লাহ তা’আলা কোন নির্দেশ জারী না করেন (অর্থাৎ ’আযাব অথবা ক্বিয়ামাত (কিয়ামত) শুরু না হয়)।[1]

وَعَنِ النُّعْمَانِ بْنِ بَشِيرٍ قَالَ: كَسَفَتِ الشَّمْسُ عَلَى عَهْدِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَجَعَلَ يُصَلِّي رَكْعَتَيْنِ رَكْعَتَيْنِ وَيَسْأَلُ عَنْهَا حَتَّى انْجَلَتِ الشَّمْسُ. رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ. وَفِي رِوَايَةِ النَّسَائِيِّ: أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ صَلَّى حِينَ انْكَسَفَتِ الشَّمْسُ مِثْلَ صَلَاتِنَا يَرْكَعُ وَيَسْجُدُ
وَلَهُ فِي أُخْرَى: أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ خَرَجَ يَوْمًا مُسْتَعْجِلًا إِلَى الْمَسْجِدِ وَقَدِ انْكَسَفَتِ الشَّمْسُ فَصَلَّى حَتَّى انْجَلَتْ ثُمَّ قَالَ: إِنَّ أَهْلَ الْجَاهِلِيَّةِ كَانُوا يَقُولُونَ: إِنَّ الشَّمْسَ وَالْقَمَرَ لَا يَنْخَسِفَانِ إِلَّا لِمَوْتِ عَظِيمٍ مِنْ عُظَمَاءِ أَهْلِ الْأَرْضِ وَإِنَّ الشَّمْسَ وَالْقَمَرَ لَا يَنْخَسِفَانِ لِمَوْتِ أَحَدٍ وَلَا لِحَيَاتِهِ وَلَكِنَّهُمَا خَلِيقَتَانِ مِنْ خَلْقِهِ يُحْدِثُ اللَّهُ فِي خَلْقِهِ مَا شَاءَ فَأَيُّهُمَا انْخَسَفَ فَصَلُّوا حَتَّى ينجلي أَو يحدث الله أمرا

ব্যাখ্যা: হাফিয ইবনু হাজার (রহঃ) বলেন, যদি হাদীসটি ত্রুটিমুক্ত হয় তাহলে দু’ রাক্‘আত দ্বারা উদ্দেশ্য দু’রুকূ‘ আর হাসান বসরীর হাদীসের ব্যাখ্যায় রাক্‘আত দ্বারা রুকূ' নেয়া হয়েছে।

শিক্ষণীয় বিষয়ঃ

যদি সূর্যগ্রহণ দীপ্তমান হওয়ার পূর্বে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) শেষ হয় তাহলে পুনরায় সালাত আদায়ের প্রয়োজন নেই। বরং যিকর ও দু‘আয় ব্যাস্ত হবে দীপ্তমান হওয়া পর্যন্ত, কেননা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’ রাক্‘আতের অতিরিক্ত আদায় করেননি। এটা মালিক হাম্বালীদের মাযহাব। অনুরূপ হানাফীদের নিকট যদি সালাত আদায় করা অবস্থায় সূর্যগ্রহণ ছেড়ে যায় তাহলে সালাতের বাকী অংশ পূর্ণ করবে। আর যদি দু’সালাত একত্রিত হয় যেন সূর্যগ্রহণ সালাতের অন্য কোন সালাত যেমন জুমু‘আহ্, ফরয সালাত বা বিতর অথবা তারাবীহ। ইবনু কুদামাহ্ বলেন, আমার নিকট বিশুদ্ধ মত হচ্ছে সূর্যগ্রহণ সালাতের পূর্বে ওয়াজিব সালাত আদায় করতে হবে। অনুরূপ তারাবীহ ও বিতরের সাথে একত্রিত হলে তারাবীহ এবং বিতরের পূর্বে আদায় করে নিতে হবে।


হাদিসের মানঃ মুনকার (সহীহ হাদীসের বিপরীত)
পুনঃনিরীক্ষণঃ

পরিচ্ছেদঃ ৫১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সাজদায়ে শুক্‌র

সালাতের বাইরে স্বতন্ত্র সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) তন্মধ্যে বালা-মুসীবাত দূরীভূত অর্জিত নি’আমাতের বিনিময়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশের সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) এ ব্যাপারে মতানৈক্য রয়েছে। শাফি’ঈ ও আহমাদের নিকট সুন্নাহ এবং এটা মুহাম্মাদ-এর উক্তি আর এ ব্যাপারে অসংখ্য হাদীস ও আসার বিদ্যমান। আবূ হানীফাহ্ ও মালিক-এর নিকট সুন্নাহ না, বরং তা মাকরূহ আর তাদের মতে উল্লেখিত সিজদা্ দ্বারা সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) উদ্দেশ্য। প্রকৃতপক্ষে তাতে অংশ বিশেষ উল্লেখ করে গোটা বিষয়কে বুঝানো হয়েছে। এরূপ বহু ব্যবহার হয় যে অংশবিশেষকে নিয়ে গোটা বিষয়কে বুঝানো হয়। অথবা সিজদা্ শুকুর বিষয়টি রহিত হয়েছে। বা আল্লাহ তা’আলা অসংখ্য অগণিত নি’আমাতের মধ্যে যদি প্রতিটি নি’আমাতের জন্য সিজদা্ করা হয় তাহলে বান্দা তা কৃতজ্ঞতা প্রকাশে অপরাগ হবে। আর মুল্লা ’আলী ক্বারী বলেন, বড় কোন নি’আমাতের সুসংবাদের সময় এবং শারীরিক মুসীবাত দূরীভূতীর সময় কৃতজ্ঞতার সিজদা্ সুন্নাহ। সিনদী বলেন, এ বিষয়ে হাদীসসমূহের সুস্পষ্ট প্রমাণ যে, কৃতজ্ঞতা প্রকাশের সিজদা্ শারী’আত সম্মত। আর ইমাম শাওকানী নায়লুল আওতারে কৃতজ্ঞতা প্রকাশের সিজদা্ সংক্রান্ত হাদীসসমূহ উল্লেখের পর বলেন যে, এ সকল হাদীস প্রমাণ করে কৃতজ্ঞতা প্রকাশের সিজদা্ শারী’আত সম্মত।


১৪৯৪-[১] আবূ বকরাহ (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, কোন আনন্দের ব্যাপার সংঘটিত হলে অথবা কোন ব্যাপার তাঁকে খুশী করলে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর নিকট কৃতজ্ঞতা প্রকাশের উদ্দেশে সাজদায় নুয়ে পড়তেন। (আবূ দাঊদ, তিরমিযী; তিনি [ইমাম তিরমিযী] বলেছেন, হাদীসটি হাসান গরীব)[1]

بَابٌ فِىْ سُجُوْدِ الشُّكْرِ

عَنْ أَبِي بَكْرَةَ قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا جَاءَهُ أَمْرٌ سُرُورًا أَوْ يُسَرُّ بِهِ خَرَّ سَاجِدًا شَاكِرًا لِلَّهِ تَعَالَى. رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ وَالتِّرْمِذِيُّ وَقَالَ: هَذَا حَدِيثٌ حسن غَرِيب

ব্যাখ্যা: হাদীস সুস্পষ্ট প্রমাণ করে যে, কৃতজ্ঞতা প্রকাশের সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) শারী‘আত সম্মত। তিরমিযী বলেন, অধিকাংশ ‘উলামাদের এরই উপর ‘আমল। আর যারা এ সাজদাকে সালাতের উপর প্রয়োগ করেছেন। তা প্রকৃত উদ্দেশ্য হতে শুধু অনেক দূরেই নয় বরং বাতিল ও অগ্রহণযোগ্য। এ ব্যাপারে কোন দলীল নেই। কৃতজ্ঞতা প্রকাশের সাজদায় কি পবিত্রতা শর্ত? কারও মতে শর্ত সালাতের উপর কিয়াস করে, আবার কারও মতে শর্ত না। আমীর ইয়ামানী বলেন, এটাই সঠিক। অধ্যায়ের হাদীসগুলোতে পবিত্রতার শর্ত প্রমাণ করে না। আর সেখানে তাকবীরও প্রমাণ করে না।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ

পরিচ্ছেদঃ ৫১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সাজদায়ে শুক্‌র

১৪৯৫-[২] আবূ জা’ফার (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন একজন বেটে লোককে দেখে সাজদায় পড়ে গেলেন। (দারাকুত্বনী হাদীসটি মুরসাল হিসেবে বর্ণনা করেছেন। আর শারহুস্ সুন্নায় মাসাবীহের ভাষায় বর্ণনা করা হয়েছে।)[1]

بَابٌ فِىْ سُجُوْدِ الشُّكْرِ

وَعَنْ أَبِي جَعْفَرٍ: أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَأَى رَجُلًا مِنَ النُّغَاشِينَ فَخَرَّ ساجا. رَوَاهُ الدَّارَقُطْنِيُّ مُرْسَلًا وَفِي شَرْحِ السُّنَّةِ لَفْظُ المصابيح

ব্যাখ্যা: نغاش বলতে খুব খাটো মানুষ যা অধিকাংশ পুরুষের ক্ষেত্রে হয়। নিহায়াহ্ গ্রন্থে বলা হয় চলাফেরায় দুর্বল আর অবয়বে ত্রুটিপূর্ণ। হাদীস প্রমাণ করে সুস্থতার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশের সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) শারী‘আত সম্মত যখন সে কাউকে দেখবে খারাপ রোগ নিয়ে পরীক্ষার সম্মুখীন হয়েছে। মাজহার বলেন, যখন কেউ বিপদাপদ নিয়ে পরীক্ষার সম্মুখীন হয় এমন ব্যক্তিকে দেখলে আল্লাহ তাকে যে সুস্থ রেখেছেন এজন্য সে কৃতজ্ঞতা প্রকাশের সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) করে। আর পাপাচারী ব্যক্তি দেখলেও এ সিজদা্ যেন প্রকাশ করে যাতে পাপাচারী ব্যক্তি সতর্ক হয় ও তাওবাহ্ করে।


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ

পরিচ্ছেদঃ ৫১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সাজদায়ে শুক্‌র

১৪৯৬-[৩] সা’দ ইবনু আবূ ওয়াক্কাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা একবার রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে মক্কা হতে মদীনার উদ্দেশে পথযাত্রা শুরু করলাম। আমরা গায্ওয়াযা নামক স্থানের কাছে পৌঁছলে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আরোহী হতে নামলেন। দু’হাত উঠালেন। কিছু সময় পর্যন্ত আল্লাহর নিকট দু’আ করতে থাকলেন। তারপর সাজদায় গেলেন। দীর্ঘক্ষণ সাজদায় পড়ে থাকলেন। তারপর দাঁড়ালেন। কিছু সময় পর্যন্ত হাত উঠিয়ে থাকলেন। তারপর আবার সাজদায় গেলেন। দীর্ঘক্ষণ সাজদায় থাকলেন। তারপর সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) হতে উঠে দু’হাত তুলে রাখলেন বেশ কিছুক্ষণ। তারপর আবার সাজদায় গেলেন। বললেন, আমি আমার রবের কাছে আরয করলাম। আমার উম্মাতের জন্য সুপারিশ করলাম। তিনি আমাকে আমার উম্মাতের তিনভাগের একভাগ দান করলেন। এজন্য আমি আমার রবের শুকর আদায় করার জন্য সাজদায় গেলাম। তারপর আমি আমার মাথা উঠালাম। আমার রবের কাছে আমার উম্মাতের জন্য আবার আবেদন জানালাম। এবার তিনি আমাকে আমার উম্মাতের আর এক অংশ দান করলেন। এজন্য আমি আমার রবের কৃতজ্ঞতা আদায় করার জন্য আবার সাজদায় চলে গেলাম। এরপর আবার আমি আমার মাথা উঠালাম। আমার রবের কাছে আমার উম্মাতের জন্য আবেদন জানালাম। এবার তিনি আমাকে আমার উম্মাতের শেষ তৃতীয়াংশ দান করলেন। এ কারণে এবার আমি আমার রবের শুকর আদায়ের জন্য তৃতীয়বার সাজদায় মনোনিবেশ করলাম। (আহমাদ, আবূ দাঊদ)[1]

بَابٌ فِىْ سُجُوْدِ الشُّكْرِ

وَعَن سعد بن أبي وَقاص قَالَ: خَرَجْنَا مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نم مَكَّةَ نُرِيدُ الْمَدِينَةَ فَلَمَّا كُنَّا قَرِيبًا مِنْ عَزْوَزَاءَ نَزَلَ ثُمَّ رَفَعَ يَدَيْهِ فَدَعَا اللَّهَ سَاعَةً ثُمَّ خَرَّ سَاجِدًا فَمَكَثَ طَوِيلًا ثُمَّ قَامَ فَرَفَعَ يَدَيْهِ سَاعَةً ثُمَّ خَرَّ سَاجِدًا فَمَكَثَ طَوِيلًا ثُمَّ قَامَ فَرَفَعَ يَدَيْهِ سَاعَةً ثُمَّ خَرَّ سَاجِدًا قَالَ: «إِنِّي سَأَلْتُ رَبِّي وَشَفَعْتُ لِأُمَّتِي فَأَعْطَانِي ثُلُثَ أُمَّتِي فَخَرَرْتُ سَاجِدًا لِرَبِّي شُكْرًا ثُمَّ رَفَعْتُ رَأْسِي فَسَأَلْتُ رَبِّي لِأُمَّتِي فَأَعْطَانِي ثُلُثَ أُمَّتِي فَخَرَرْتُ سَاجِدًا لِرَبِّي شُكْرًا ثُمَّ رَفَعْتُ رَأْسِي فَسَأَلْتُ رَبِّي لِأُمَّتِي فَأَعْطَانِي الثُّلُثَ الْآخِرَ فَخَرَرْتُ سَاجِدًا لِرَبِّي شُكْرًا» . رَوَاهُ أَحْمد وَأَبُو دَاوُد


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ

পরিচ্ছেদঃ ৫২. প্রথম অনুচ্ছেদ - বৃষ্টির জন্য সালাত

(الاسْتِسْقَاء) শাব্দিক অর্থ হল নিজের জন্য অথবা অন্যের জন্য অপর কারও কাছে তৃষ্ণা নিবারণের জন্য পানি চাওয়া। আর শারী’আতের পরিভাষায় হাদীসসমূহের আলোকে সুস্পষ্ট পন্থায় অনাবৃষ্টির সময় আল্লাহর নিকট বৃষ্টি অমেবষণ করা। কুসতুলানী বলেন, ইসতিসক্বা তিনভাবে।

প্রথমতঃ সাধারণ দু’আ সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) ব্যতিরেকে একাকী অথবা একত্রিতভাবে।

দ্বিতীয়তঃ (প্রথম পদ্ধতির চেয়ে ভাল) সালাত শেষে দু’আ যদিও সে সালাত নফল সালাত হয় তবে ইমাম নাবাবী এটা ফরয সালাত ও জুমু’আর খুতবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট।

তৃতীয়তঃ এটা উত্তম ও পরিপূর্ণ আর তা হবে দু’ রাক্’আত সালাত ও দু’ খুতবার মাধ্যমে হবে। আর নাবাবী বলেন, বৃষ্টি প্রার্থনা সালাতের পূর্বে সদাক্বাহ্ (সাদাকা) করা। সওম পালন করা, তওবা্ করা। কল্যাণসূচক কাজে অগ্রগামী হওয়া। খারাপ কাজ হতে বিরত হওয়া ও অনুরূপ কাজ করা আল্লাহর আনুগত্যের অন্তর্ভুক্ত। শাহ ওয়ালীউল্লাহ দেহলবী বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বৃষ্টির জন্য প্রার্থনা করেছিলেন তাঁর উম্মাতের জন্য বেশ কয়েকবার অসংখ্য প্রান্তে। আর তাঁর উম্মাতের জন্য এ পদ্ধতিতে চালু রেখেছেন যে, তিনি বের হতেন জনগণকে নিয়ে ঈদগাহের উদ্দেশে অত্যন্ত বিনয়ী, অনুনয়কারী ও কাতরভাবে। অতঃপর তাদেরকে নিয়ে দু’ রাক্’আত সালাত আদায় করতেন সশব্দে ক্বিরাআতে, অতঃপর খুতবাহ্ প্রদান করতেন এবং ক্বিবলা (কিবলা/কেবলা)মুখী হয়ে দু’আ করতেন, দু’হাত তুলতেন এবং তাঁর চাদর উল্টাতেন। কেননা মুসলিমদের একই স্থানে একই উদ্দেশে আগ্রহী হয়ে একত্রিত হওয়া সর্বোচ্চ অভিপ্রায়, ক্ষমা প্রার্থনা এবং ভাল কাজগুলো দু’আ কবূলে ভূমিকা রাখে। আর সালাতেই বান্দার জন্য আল্লাহর নিকটবর্তী হওয়ার অন্যতম মাধ্যম আর হাত উত্তোলন পরিপূর্ণ বিনয়ের চিত্র এবং সর্বোচ্চ কাকুতি ব্যক্তিকে ভয়ের সতর্ক করে আর চাদর উল্টানোর বিষয়টি তাদের অবস্থার পরিবর্তন ফুটে উঠে যেমন রাজাদের সামনে আবেদনকারী করে থাকে।


১৪৯৭-[১] ’আবদুল্লাহ ইবনু যায়দ (রাঃ)কর্তৃক বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার বৃষ্টির জন্য লোকজন নিয়ে ঈদগাহতে গেলেন। তাদের নিয়ে তিনি দু’ রাক্’আত সালাত আদায় করলেন। উচ্চস্বরে করে তিনি উভয় রাক্’আতে ক্বিরাআত (কিরআত) পড়লেন। এরপর তিনি ক্বিবলা (কিবলা/কেবলা)মুখী হয়ে দু’হাত উঠিয়ে দু’আ করলেন। ক্বিবলা (কিবলা/কেবলা)মুখী হবার সময় তিনি তাঁর চাদর ঘুরিয়ে দিলেন। (বুখারী, মুসলিম)[1]

بَابُ الْاِسْتِسْقَاءِ

عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ زَيْدٍ قَالَ: خَرَجَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِالنَّاسِ إِلَى الْمُصَلَّى يَسْتَسْقِي فَصَلَّى بِهِمْ رَكْعَتَيْنِ جَهَرَ فِيهِمَا بِالْقِرَاءَةِ وَاسْتَقْبَلَ الْقِبْلَةَ يَدْعُو وَرَفَعَ يَدَيْهِ وَحَوَّلَ رِدَاءَهُ حِينَ اسْتَقْبَلَ الْقِبْلَةَ

ব্যাখ্যা: এ হাদীস প্রমাণ করে বৃষ্টি প্রার্থনার সালাত জামা‘আতগতভাবে প্রকাশ্য অবস্থায় করা সুন্নাহ। এ মতে মালিক শাফি‘ঈ আহমাদ বক্তব্য দিয়েছেন। আর ইমাম আবূ হানীফাহ্ সুন্নাহ মনে করেন না। ইস্তিসক্বা সালাতের হুকুমের ব্যাপারে মতভেদ রয়েছে। আবূ ইউসুফ ও মুহাম্মাদ-এর নিকট সুন্নাহ, মালিকী, শাফি‘ঈ, হাম্বালী মাযহাবে সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ্। আর আবূ হানীফাহ্ জামা‘আতবদ্ধভাবে এ সালাত আদায় করা অস্বীকার করেছেন তবে ইস্তিসক্বার সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) শারী‘আত সম্মত ও জায়িয তা অস্বীকার করেননি।

(جَهَرَ فِيْهِمَا بِالْقِرَاءَةِ) ইমাম নাবাবী মুসলিমের শরাহতে বলেন, সকল ‘উলামাহ্ ঐকমত্য হয়েছেন ইস্তিসক্বার সালাত সশব্দে পড়া মুস্তাহাব।

(وَاسْتَقْبَلَ الْقِبْلَةَ) ‘কখন তিনি ক্বিবলামুখী হতেন’ এ ব্যাপারে মতভেদ রয়েছে তবে আমাদের নিকট সর্বাধিক ও অধিক গ্রহণযোগ্য মত হল একটি খুতবাহ্ দিবে। খুতবাহ্ চলা অবস্থায় ক্বিবলামুখী হবে এবং ক্বিবলামুখী হয়ে দু‘আ করবে। কেননা হাদীসের ভাষ্য এটাই প্রামাণ করে।

(وَحَوَّلَ رِدَاءَه) ‘এর তাঁর চাদর উল্টে দিলেন’ উল্টানো এমন হবে চাদরের ডান দিকটা বাম দিকে এবং বাম দিকটা ডান দিকে আসবে আর ভিতরেরটা বাইরে আসবে এবং বাইরেরটা ভিতরে যাবে পদ্ধতিটা এভাবে হবে ডান হাত চাদরের বাম দিকের নিচের অংশ ধরবে এবং বাম হাত চাদরের ডান দিকের নিচের অংশ ধরবে এবং দু’হাতই পিঠের পিছনে দিয়ে পরিবর্তন করবে তাতে ডান হাতের ধরা অংশ ডান ঘাড়ের উপর হবে এবং বাম হাতে ধরা অংশ বাম ঘাড়ের উপর হবে। এভাবে করলে ডান বামে এবং বাম ডানে পরিবর্তন হয় আর উপরের অংশ নীচে এবং নীচের অংশ উপরে চলে আসে।

আর ওয়াক্বিদী উল্লেখ করেন, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর চাদরের দৈর্ঘ্য ছয় গজ প্রস্থ তিন গজ আর লুঙ্গির দৈর্ঘ্য চার গজ দুই গিরা প্রস্থ দু’গজ এক গিরা ছিল যা তিনি ঈদে ও জুমু‘আয় পরিধান করতে। আর হাদীসে প্রমাণিত হয়, সে এ ‘ইবাদাতে চাদর উল্টানো মুস্তাহাব।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ

পরিচ্ছেদঃ ৫২. প্রথম অনুচ্ছেদ - বৃষ্টির জন্য সালাত

১৪৯৮-[২] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইসতিসক্বা (বৃষ্টির জন্য সালাত) ছাড়া আর অন্য কোন দু’আয় হাত উঠাতেন না। এ দু’আয় তিনি এত উপরে হাত উঠাতেন যে তাঁর বগলের শুভ্র উজ্জ্বলতা দেখা যেত। (বুখারী, মুসলিম)[1]

بَابُ الْاِسْتِسْقَاءِ

وَعَنْ أَنَسٍ قَالَ: كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَا يَرْفَعُ يَدَيْهِ فِي شَيْءٍ مِنْ دُعَائِهِ إِلَّا فِي الِاسْتِسْقَاءِ فَإِنَّهُ يَرْفَعُ حَتَّى يرى بَيَاض إبطَيْهِ

ব্যাখ্যা: হাফিয ইবনু হাজার বলেন, ইস্তিসক্বা ব্যতীত অন্য কোন দু‘আয় হাত তুলতেন না- এ হাদীসের প্রকাশ্য ভাষ্য যে ইস্তিসক্বা ব্যতীত সকল দু‘আ হাত উত্তোলনকে নিষেধ করে। আর এ হাদীস অন্য হাদীসসমূহের বিপরীত যেখানে হাত উত্তোলনের কথা বলা হয়েছে। অনেকে হাত উত্তোলনকে উত্তম ‘আমল বলে রায় দিয়েছেন এবং তারা আনাস (রাঃ)-এর উক্ত হাদীসে তাঁর অন্যকে হাত উত্তোলন না দেখা আবশ্যক করে না যে অন্যরা হাত তুলে না আর (কায়েদানুসায়ী) হ্যাঁ সূচক বর্ণনাগুলো না সূচক বর্ণনার উপর প্রাধান্য পাবে।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ

পরিচ্ছেদঃ ৫২. প্রথম অনুচ্ছেদ - বৃষ্টির জন্য সালাত

১৪৯৯-[৩] আনাস (রাঃ) হতে এ হাদীসটিও বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন আল্লাহর নিকট পানি চাইলেন এবং দু’হাতের পিঠ আসমানের দিকে করে রাখলেন। (মুসলিম)[1]

بَابُ الْاِسْتِسْقَاءِ

وَعَنْ أَنَسٍ: أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اسْتَسْقَى فَأَشَارَ بِظَهْرِ كَفَّيْهِ إِلَى السَّمَاءِ. رَوَاهُ مُسلم

ব্যাখ্যা: হাতের তালুর পিঠ ইস্তিসক্বার সময় উপরে রাখার তাৎপর্য হল। কাজটি চাদর উল্টানোর মত। মেঘমালার বৃষ্টি যেন নীচের দিকে ধাবিত হয়। আর ইমাম নাবাবী বলেন, ‘উলামারা বলেছেন, সুন্নাহ হল বালা মুসীবাত হতে মুক্তি পাওয়ার দু‘আর সময় তালুর পিঠকে আকাশের দিকে রাখা আর আল্লাহ তা‘আলার নিকট কোন কিছু চাওয়ার সময় হতের তালুকে আকাশের দিকে রাখা। আর ইমাম আহমাদ হতে বর্ণিত আছে, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কোন বালা-মুসীবাত হতে মুক্তি চাইতেন তখন তালু উপুড় করে দু‘আ করতেন এবং যখন কোন প্রার্থনা করতেন তখন হাতের তালু আকাশের দিকে করে দু‘আ করতেন।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ

পরিচ্ছেদঃ ৫২. প্রথম অনুচ্ছেদ - বৃষ্টির জন্য সালাত

১৫০০-[৪] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন আকাশে বৃষ্টি দেখতেন আর বলতেন, হে আল্লাহ! তুমি পর্যাপ্ত ও কল্যাণকর বৃষ্টি বর্ষণ করাও। (বুখারী)[1]

بَابُ الْاِسْتِسْقَاءِ

وَعَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ: إِنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ إِذَا رَأَى الْمَطَرَ قَالَ: «اللَّهُمَّ صيبا نَافِعًا» . رَوَاهُ البُخَارِيّ

ব্যাখ্যা: হাদীস প্রমাণ করে বৃষ্টি বর্ষণের সময় কল্যাণ ও বারাকাত কামনা করে উল্লেখিত দু‘আ পড়া মুস্তাহাব।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
দেখানো হচ্ছেঃ ১৪৮১ থেকে ১৫০০ পর্যন্ত, সর্বমোট ৫১৬৬ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে পাতা নাম্বারঃ « আগের পাতা 1 2 3 4 · · · 72 73 74 75 76 · · · 256 257 258 259 পরের পাতা »