হাদিসটি ইমেইলে পাঠাতে অনুগ্রহ করে নিচের ফর্মটি পুরন করুন
security code
১৪৮২

পরিচ্ছেদঃ ৫০. প্রথম অনুচ্ছেদ - সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণের সালাত

১৪৮২-[৩] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কালে একবার সূর্যগ্রহণ হয়েছিল। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জনগণকে সাথে নিয়ে সালাত আদায় করলেন। সালাতে তিনি সূরাহ্ আল বাক্বারাহ্ পড়ার মতো দীর্ঘ সময় পর্যন্ত দাঁড়ালেন। তারপর দীর্ঘ রুকূ’ করলেন। তারপর মাথা উঠিয়ে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলেন। তবে এ দাঁড়ানো ছিল প্রথম দাঁড়ানো অপেক্ষা স্বল্প সময়ের। এরপর আবার লম্বা রুকূ’ করলেন। তবে তা প্রথম রুকূ’ অপেক্ষা ছোট ছিল। তারপর রুকূ’ হতে মাথা উঠালেন ও সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) করলেন। তারপর আবার দাঁড়ালেন ও দীর্ঘসময় পর্যন্ত দাঁড়ালেন। তবে তা প্রথম দাঁড়ানো অপেক্ষা খাটো ছিল। তারপর আবার দীর্ঘ রুকূ’ করলেন। তাও আগের রুকূ’ অপেক্ষা ছোট। তারপর মাথা উঠালেন ও দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকলেন। তবে তা আগের দাঁড়ানোর চেয়ে কম। তারপর আবার দীর্ঘ রুকূ’ করলেন। তবে এ রুকূ’ও আগের রুকূ’ অপেক্ষা ছোট। তারপর মাথা উঠালেন ও সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) করলেন। এরপর সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) শেষ করলেন। আর এ সময় সূর্য পূর্ণ জ্যোতির্ময় হয়ে উঠে গেল।

এরপর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সূর্য ও চাঁদ আল্লাহর অসংখ্য নিদর্শনসমূহের মধ্যে দু’টো নিদর্শন। তারা কারো জন্ম-মৃত্যুতে গ্রহণযুক্ত হয় না। তোমরা এরূপ ’গ্রহণ’ দেখলে আল্লাহ তা’আলার যিকর করবে। সাহাবীগণ নিবেদন করলেন, হে আল্লাহর রসূল! আপনাকে আমরা দেখলাম। আপনি যেন এ স্থানে কিছু গ্রহণ করছেন। তারপর দেখলাম পেছনের দিকে সরে গেলেন। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তখন আমি জান্নাত দেখতে পেলাম। জান্নাত হতে এক গুচ্ছ আঙ্গুর নিতে আগ্রহী হলাম। যদি আমি তা গ্রহণ করতাম তাহলে তোমরা দুনিয়ায় বাকী থাকা পর্যন্ত সে আঙ্গুর খেতে পারতে।

আর আমি তখন জাহান্নাম দেখতে পেলাম। জাহান্নামের মতো বীভৎস কুৎসিত দৃশ্য আর কখনো আমি দেখিনি। আমি আরো দেখলাম যে, জাহান্নামের অধিকাংশ অধিবাসীই নারী। সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রসূল! কি কারণে তা হলো। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাদের কুফরীর কারণে। আবার তাঁকে জিজ্ঞেস করা হলো, তারা কি আল্লাহর সাথে কুফরী করে থাকে? রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, না; বরং স্বামীর সাথে কুফরী করে থাকে। তারা (স্বামীর) সদ্ব্যবহার ভুলে যায়। সারা জীবন যদি তুমি তাদের কারো সাথে ইহসান করো। এরপর (কোন সময়) যদি সে তোমার পক্ষ হতে সামান্য ত্রুটি-বিচ্যুতি দেখে বলে উঠে। আমি জীবনেও তোমার কাছে ভাল ব্যবহার পেলাম না। (বুখারী, মুসলিম)[1]

بَابُ صَلَاةِ الْخُسُوْفِ

عَن عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: انْخَسَفَتِ الشَّمْسُ عَلَى عَهْدِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَصَلَّى رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَامَ قِيَامًا طَوِيلًا نَحْوًا مِنْ قِرَاءَةِ سُورَةِ الْبَقَرَةِ ثُمَّ رَكَعَ رُكُوعًا طَوِيلًا ثُمَّ رَفَعَ فَقَامَ قِيَامًا طَوِيلًا وَهُوَ دُونَ الْقِيَامِ الْأَوَّلِ ثُمَّ رَكَعَ رُكُوعًا طَوِيلًا وَهُوَ دُونَ الرُّكُوعِ الْأَوَّلِ ثُمَّ رَفَعَ ثُمَّ سَجَدَ ثُمَّ قَامَ قِيَامًا طَوِيلًا وَهُوَ دُونَ الْقِيَامِ الْأَوَّلِ ثُمَّ رَكَعَ رُكُوعًا طَوِيلًا وَهُوَ دُونَ الرُّكُوعِ الْأَوَّلِ ثُمَّ رَفَعَ فَقَامَ قِيَامًا طَوِيلًا وَهُوَ دُونَ الْقِيَامِ الْأَوَّلِ ثُمَّ رَكَعَ رُكُوعًا طَوِيلًا وَهُوَ دُونَ الرُّكُوعِ الْأَوَّلِ ثُمَّ رَفَعَ ثُمَّ سَجَدَ ثمَّ انْصَرف وَقد تجلت الشَّمْس فَقَالَ صلى الله عَلَيْهِ وَسلم: «إِنَّ الشَّمْسَ وَالْقَمَرَ آيَتَانِ مِنْ آيَاتِ اللَّهِ لَا يَخْسِفَانِ لِمَوْتِ أَحَدٍ وَلَا لِحَيَاتِهِ فَإِذَا رَأَيْتُمْ ذَلِكَ فَاذْكُرُوا اللَّهَ» . قَالُوا: يَا رَسُولَ الله رَأَيْنَاك تناولت شَيْئا فِي مقامك ثمَّ رَأَيْنَاك تكعكعت؟ قَالَ صلى الله عَلَيْهِ وَسلم: «إِنِّي أريت الْجنَّة فتناولت عُنْقُودًا وَلَوْ أَخَذْتُهُ لَأَكَلْتُمْ مِنْهُ مَا بَقِيَتِ الدُّنْيَا وأريت النَّار فَلم أر منْظرًا كَالْيَوْمِ قَطُّ أَفْظَعَ وَرَأَيْتُ أَكْثَرَ أَهْلِهَا النِّسَاءَ» . قَالُوا: بِمَ يَا رَسُولَ اللَّهِ؟ قَالَ: «بِكُفْرِهِنَّ» . قِيلَ: يَكْفُرْنَ بِاللَّهِ؟ . قَالَ: يَكْفُرْنَ الْعَشِيرَ وَيَكْفُرْنَ الْإِحْسَانَ لَو أَحْسَنت إِلَى أحداهن الدَّهْر كُله ثُمَّ رَأَتْ مِنْكَ شَيْئًا قَالَتْ: مَا رَأَيْتُ مِنْك خيرا قطّ

ব্যাখ্যা: দারাকুতনীতে ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর হাদীস রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রথম রাক্‘আতে সূরাহ্ ‘আনকাবূত অথবা সূরাহ্ রূম পড়েছেন আর দ্বিতীয় রাক্‘আতে সূরাহ্ ইয়াসীন পড়েছে। আর বায়হাক্বীর হাদীসে প্রথম রাক্‘আতে সূরাহ্ ‘আনকাবূত এবং দ্বিতীয় রাক্‘আতে লুক্বমান অথবা ইয়াসীন পড়েছেন।

(إِنَّ الشَّمْسَ وَالْقَمَرَ ايَتَانِ مِنْ ايَاتِ اللّهِ) নিশ্চয় সূর্য ও চন্দ্র আল্লাহ তা‘আলার নিদর্শনের মধ্যে অন্যতম দু’টি নিদর্শন। এ কথাটি ইঙ্গিত করে যে, সূর্য ও চন্দ্র গ্রহণের সালাতের হুকুম একই। আর নিদর্শন দ্বারা প্রমাণ করে আল্লাহর একত্ববাদ তার ক্ষমতা ও বড়ত্বের উপর অথবা তার বান্দাদেরকে ভীত-সন্ত্রস্ত করান কঠিনতা ও দাপটের মাধ্যমে যেমন আল্লাহ তা‘আলার বাণীঃ وَمَا نُرْسِلُ بِالْايَاتِ إِلَّا تَخْوِيْفًا

‘‘ভয় প্রদর্শনের উদ্দেশেই কেবল আমি নিদর্শন পাঠিয়ে থাকি।’’ (সূরাহ্ বানী ইসরাঈল ১৭ : ৫৯)

কারও মৃত্যুর কারণে সূর্য ও চন্দ্র গ্রহণ হয় না। জাহিলী যুগে এ ধারণা বা বিশ্বাস ছিল স্বনামধন্য ও সর্বজন শ্রদ্ধেয় ব্যক্তির মৃত্যুর কারণে সূর্য ও চন্দ্রগ্রহণ প্রকাশ পায়। যেমন বুখারীর হাদীসে আবূ বাকরাহ্-এর কারণ বর্ণনা প্রসঙ্গে বলেন যে, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পুত্র ইব্রাহীম মারা গেল মানুষেরা বলতে লাগল যে ইব্রাহীম এর মৃত্যুর কারণে সূর্যগ্রহণ প্রকাশ পেয়েছে। সামনে নু‘মান বিন বাশীর-এর হাদীস আসছে জাহিলিয়্যাতের লোকেরা বলত সূর্য ও চন্দ্রগ্রহণ প্রকাশ পায় কেবল স্বনামধন্য বক্তির মৃত্যুর জন্য আর এ হাদীস জাহিলিয়্যাতে এ চিন্তা চেতনা ও কুসংস্কৃতিকে বাতিল করে।

(فَإِذَا رَأَيْتُمْ ذلِكَ فَاذْكُرُوا اللّهَ) আর যখন তোমরা এমনটি (সূর্য ও চন্দ্রগ্রহণ) দেখবে আল্লাহ তা‘আলাকে স্মরণ করবে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ), তাসবীহ, তাকবীর, দু‘আ, তাহলীল, ইসতিগফার ও সকল দু‘আর মাধ্যমে। আর এটা প্রমাণ করে চন্দ্রগ্রহণের সালাত শারী‘আত সম্মত।

(إِنِّي أريت الْجنَّة) ‘আমি জান্নাত দেখেছি’ তাঁর এই দেখাটা বাস্তবে তথা স্বচক্ষক্ষ দেখেছেন। আর অন্য বর্ণনায় জানাযায় যুহরের সালাতে এমনটি ঘটেছিল এটি ধর্তব্য বিষয় না। কেননা তিনি দু’বার বা অনেকবার জান্নাত জাহান্নাম প্রত্যক্ষ করেছেন বিভিন্ন আকৃতিতে। আর আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের বিশ্বাস হল জান্নাত ও জাহান্নামকে সৃষ্টি করা হয়েছে যা বর্তমান পর্যন্ত বাস্তবে বিদ্যমান।

(وَرَأَيْتُ أَكْثَرَ أَهْلِهَا النِّسَاءَ) ‘আর জাহান্নামে অধিকাংশ অধিবাসী মহিলা দেখেছি’ এ বক্তব্যটি আবূ হুরায়রার হাদীসের সাথে দ্বন্দ্ব। তাতে বলা হয়েছে সর্বনিম্ন জান্নাতবাসীর অবস্থান দুনিয়াতে যার দু’জন স্ত্রী ছিল। আর এ মোতাবেক মহিলারা দুই তৃতীয়াংশ জান্নাতের অধিবাসী হবে। দ্বন্দ্ব সমাধানে বলা হয় আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)-এর হাদীস তাদের মহিলাদের জাহান্নাম হতে বের হবার পর এ ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। আর জাবির (রাঃ)-এর হাদীস যেখানে বলা হয়েছে অধিকাংশ মহিলাদের আমি সেখানে দেখেছি যারা যদি তাদেরকে আমানাত দেয়া হয় তাহলে তা খিয়ানাত করে আর তাদের নিকট কিছু চাইলে কৃপণতা করে আর যখন তারা চায় খুব কাকুতি মিনতি করে আর যদি তাদেরকে দেয়া হয় তাহলে নাশুকর করে। সুতরাং এটা প্রমাণ করে এমন খারাপ গুণে গুণান্বিত মহিলারা জাহান্নামে অবস্থান করবে।

হাদীসের শিক্ষাঃ

আল্লাহর পক্ষ হতে ভীতিকর কোন পরিবেশ দেখলে দ্রুত তার আনুগত্যে ফিরে যাওয়া এবং বালা মুসীবাতকে প্রতিহত করা আল্লাহর স্মরণ এবং বিভিন্নভাবে তার আনুগত্য ও পরস্পরের অধিকারকে সন্ধান আর আবশ্যিকভাবে নি‘আমাত দানকারীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ ও ইত্যাদির মাধ্যমে।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ