১৪৮৩

পরিচ্ছেদঃ ৫০. প্রথম অনুচ্ছেদ - সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণের সালাত

১৪৮৩-[৪] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) ও ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) বরাতে বর্ণিত হওয়া এ ধরনের একটি হাদীস বর্ণিত হয়েছে। বস্তুতঃ ’আয়িশাহ্ (রাঃ) বলেন, তারপর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাজদায় গেলেন। তিনি দীর্ঘ সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) করলেন। তারপর সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) শেষ করলেন। তখন সূর্য বেশ আলোকিত হয়ে গেছে। তারপর তিনি জনগণের উদ্দেশে বক্তব্য প্রদান করলেন। তিনি সর্বপ্রথম আল্লাহর গুণকীর্তন করলেন। তারপর বললেন, সূর্য ও চাঁদ আল্লাহর নিদর্শনাবলীর দু’টো নিদর্শন। কারো মৃত্যুতে সূর্যগ্রহণ বা চন্দ্রগ্রহণ হয় না। আর কারো জন্মের কারণেও হয় না। তোমরা এ অবস্থা দেখতে পেলে আল্লাহর নিকট দু’আ করো এবং তার বড়ত্ব ঘোষণা কর। সালাত আদায় কর। দান-সদাক্বাহ্ (সাদাকা) ও খয়রাত করো। এরপর তিনি বললেন, হে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উম্মাতেরা! আল্লাহর শপথ! আল্লাহ তা’আলার চেয়ে বেশী ঘৃণাকারী আর কেউ নেই। তাঁর যে বান্দা ’যিনা’ তথা ব্যভিচার করবে অথবা তার যে বান্দী ’যিনা’ তথা ব্যভিচার করবে তিনি তাদের ঘৃণা করেন। হে মুহাম্মাদের উম্মাতগণ! আল্লাহর কসম! আমি যা জানি যদি তোমরা তা জানতে, নিশ্চয়ই তোমরা কম হাসতে ও বেশী কাঁদতে। (বুখারী, মুসলিম)[1]

بَابُ صَلَاةِ الْخُسُوْفِ

وَعَنْ عَائِشَةَ نَحْوُ حَدِيثِ ابْنِ عَبَّاسٍ وَقَالَتْ: ثُمَّ سَجَدَ فَأَطَالَ السُّجُودَ ثُمَّ انْصَرَفَ وَقَدِ انْجَلَتِ الشَّمْسُ فَخَطَبَ النَّاسَ فَحَمِدَ اللَّهَ وَأَثْنَى عَلَيْهِ ثُمَّ قَالَ: «إِنَّ الشَّمْسَ وَالْقَمَرَ آيَتَانِ مِنْ آيَاتِ اللَّهِ لَا يَخْسِفَانِ لِمَوْتِ أَحَدٍ وَلَا لِحَيَاتِهِ فَإِذَا رَأَيْتُمْ ذَلِكَ فَادْعُوا اللَّهَ وَكَبِّرُوا وَصَلُّوا وَتَصَدَّقُوا» ثُمَّ قَالَ: «يَا أُمَّةَ مُحَمَّدٍ وَاللَّهِ مَا مِنْ أَحَدٍ أَغْيَرُ مِنَ اللَّهِ أَنْ يَزْنِيَ عَبْدُهُ أَوْ تَزْنِيَ أَمَتُهُ يَا أُمَّةَ مُحَمَّدٍ وَاللَّهِ لَوْ تَعْلَمُونَ مَا أَعْلَمُ لَضَحِكْتُمْ قَلِيلًا وَلَبَكَيْتُمْ كَثِيرًا»

وعن عاىشة نحو حديث ابن عباس وقالت ثم سجد فاطال السجود ثم انصرف وقد انجلت الشمس فخطب الناس فحمد الله واثنى عليه ثم قال ان الشمس والقمر ايتان من ايات الله لا يخسفان لموت احد ولا لحياته فاذا رايتم ذلك فادعوا الله وكبروا وصلوا وتصدقوا ثم قال يا امة محمد والله ما من احد اغير من الله ان يزني عبده او تزني امته يا امة محمد والله لو تعلمون ما اعلم لضحكتم قليلا ولبكيتم كثيرا

ব্যাখ্যা: (فَخَطَبَ النَّاسَ) ‘অতঃপর তিনি জনগণের উদ্দেশে খুতবাহ্ প্রদান করছেন।’ এটা সুস্পষ্ট প্রমাণ করে সূর্য ও চন্দ্র গ্রহণের সালাতে খুতবাহ্ রয়েছে। এ মতে শাফি‘ঈ, ইসহাক ইবনু জারীর ও আহলে হাদীসের ফকীহগণ রায় দিয়েছেন। আর আবূ হানীফাহ্, মালিক ও আহমাদ এর মতে এ সালাতে কোন খুতবাহ্ নেই। আর তারা দলীল হিসেবে বলেন কেননা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত (সালাত/নামায/নামাজ), তাকবীর এবং সদাক্বার আদেশ দিয়েছেন এবং খুতবার আদেশ দেননি আর যদি সুন্নাহ হত তাহলে আদেশ দিতেন। এর জবাবে বলা হবে শারী‘আত সম্মত ও সুন্নাহ হওয়ার জন্য বলার মাধ্যমে বর্ণনার প্রতি ভ্রূক্ষক্ষপ করে না বরং প্রমাণিত হয় তাঁর কর্মের দ্বারা আর এখানে এবং অনেক হাদীস দ্বারা সাব্যস্ত হয়েছে তিনি সূর্য ও চন্দ্র গ্রহণের সালাতের পর খুতবাহ্ প্রদান করেছেন।

(فَإِذَا رَأَيْتُمْ ذلِكَ فَادْعُوا اللّهَ وَكَبِّرُوْا وَصَلُّوْا) ‘যখন এমনটি দেখবে আল্লাহকে ডাকবে এবং তার বড়ত্ব ঘোষণা করবে আর সালাত আদায় করবে। আর বুখারীতে আবূ মাস্‘ঊদ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ নিশ্চয় মানুষের মধ্যে কারও মৃত্যুর কারণে সূর্য ও চন্দ্রগ্রহণ প্রকাশ পায় না বরং তা আল্লাহ তা‘আলার নিদর্শনের মধ্যে অন্যতম দু’টি নিদর্শন যখন তোমরা এমনটি দেখবে তোমরা দাঁড়াবে এবং সালাত আদায় করবে।

হাফিয ইবনু হাজার এ হাদীস দ্বারা প্রমাণ করেন যে, সূর্যগ্রহণের সালাতের নির্ধারিত কোন সময় নেই কেননা সালাতকে সংশ্লিষ্ট করা হয়েছে সূর্যগ্রহণের সাথে আর তা দিনের যে কোন সময় হতে পারে।

(تَصَدَّقُوْا) তোমরা সদাক্বাহ্ (সাদাকা) কর কেননা সদাক্বাহ্ (সাদাকা) রবের রাগকে মিটিয়ে দেয়। আর হাদীস প্রমাণ করে যে, সূর্য বা চন্দ্র গ্রহণের সময় দ্রুত সালাত ও সকল প্রকার উল্লেখিত দু‘আ, তাকবীর ও সদাক্বার প্রতি ধাবিত হওয়া। আল্লামা শাহ ওয়ালীউল্লাহ দেহলবী বলেন, নিঃসন্দেহে আল্লাহর নিদর্শন যখন প্রকাশ পায় তখন আত্মা যে নিদর্শনের প্রতি অনুগত হয় এবং আল্লাহর প্রতি শরণাপন্ন হয় আর দুনিয়া হতে বিচ্ছিন্ন হয়। সুতরাং ঐ অবস্থাটি মু’মিনদের জন্য গনীমাত তখন যে অনুনয়কারী হবে দু‘আ, সালাত ও সকল ভাল কাজে। আর (মনে হবে) দুর্ঘটনাটি বা বিপদের সময়টি অনুরূপ বিশ্বে নিশ্চয় আল্লাহর বিচার কার্যের সময়। সুতরাং এ সময়ে চিন্তাবিদরা আতঙ্ক অনুভব করবে। আর এ জন্য রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঐ সময়ে আতঙ্ক অনুভব করেছিলেন। আর এটা পৃথিবীতে আধ্যাত্মিক সংক্রমণ সময় মুহসিনদের জন্য উপযোগী সময় তারা এ সময়ে আল্লাহর নিকটবর্তী হবে বা আল্লাহর নৈকট্য লাভ করবে। যেমন নু‘মান-এর হাদীস যখন আল্লাহ তার সৃষ্টি জীবের জন্য কোন নিদর্শন প্রকাশ করেন তখন তারা তার জন্য ভীত হয়।

(لَوْ تَعْلَمُوْنَ مَا أَعْلَمُ) ‘যদি তোমরা জানতে আমি যা জানি’। বাজি বলেনঃ কিছু জ্ঞান আল্লাহ তা‘আলা তাঁর নাবীর জন্য করেছেন যা অন্য কাউকে জানান না।

সূর্য ও চন্দ্র গ্রহণের হিকমাহ্ঃ

১। সূর্য ও চন্দ্র গ্রহণের বিষয়টি এমন একটি দৃষ্টান্ত বর্ণনা করে যে, অতি শীঘ্রই ক্বিয়ামাত (কিয়ামত) সংঘটিত হবে।

২। আর শাস্তির একটি চিত্র, যে পাপ কাজ করে না আর যে পাপ কাজ করে তার জন্য কিরূপ হবে।

৩। আর সতর্ক করা হয়েছে ভয়ের সাথে যেন আশার নীতি অবলম্বন করে। কেননা সূর্যগ্রহণের পরে তা দীপ্তমান হয়। যেন মু’মিন আশা নিয়ে রবকে ভয় করে।

৪। ভৎর্সনা করা হয়েছে তাদেরকে যারা সূর্য ও চন্দ্রের পূজা করে।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৪: সালাত (كتاب الصلاة)