পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - মু'জিযার বর্ণনা
৫৯২৩-[৫৬] ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন একজন মহিলা তার একটি ছেলে নিয়ে রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর কাছে এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমার এ ছেলেকে জিনে পেয়েছে। ফলে সকাল-সন্ধ্যা তা তাকে আক্রমণ করে। তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) ছেলেটির বুকের উপর হাত ফিরিয়ে দিয়ে দু’আ করলেন। তাতে ছেলেটির জোরে বমি হলো, তখন তার পেটের ভিতর হতে কালো একটি কুকুরের ছানার মতো বের হয়ে দৌড়ে গেল। (দারিমী)
اَلْفصْلُ الثَّنِفْ (بَاب فِي المعجزا)
وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: إِنَّ امْرَأَةً جَاءَتْ بابنٍ لَهَا إِلى رَسُول اللَّهِ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَتْ يارسول اللَّهِ إِنَّ ابْنِي بِهِ جُنُونٌ وَأَنَّهُ لَيَأْخُذُهُ عِنْدَ غَدَائِنَا وَعَشَائِنَا (فَيَخْبُثُ عَلَيْنَا) فَمَسَحَ رَسُولُ اللَّهِ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ صَدْرَهُ وَدَعَا فَثَعَّ ثَعَّةً وَخَرَجَ مِنْ جَوْفِهِ مِثْلُ الجرو الْأسود يسْعَى. رَوَاهُ الدَّارمِيّ
اسنادہ ضعیف ، رواہ الدارمی (1 / 11 ۔ 12 ح 19) * فیہ فرقد السبخی وھو ضعیف ۔
(ضَعِيف)
ব্যাখ্যা: জনৈক মহিলা নবী (সা.) -এর নিকটে এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমার ছেলের মাঝে পাগলামি আছে। আর সে এ পাগলামিতে আক্রান্ত হয় সকাল ও সন্ধ্যায়। এ কথা শুনে নবী (সা.) সে ছেলের পেটে হাত বুলিয়ে দিলেন। ফলে ছেলেটি একবার বমি করল। ফলে তার পেট থেকে কালো কুকুরের বাচ্চার মতো একটি জন্তু বের হয়ে দৌড়ে পালিয়ে গেল। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - মু'জিযার বর্ণনা
৫৯২৪-[৫৭] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন নবী (সা.) মক্কার কাফিরদের কর্তৃক আক্রান্ত হয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় অত্যন্ত ভারাক্রান্ত মনে এক স্থানে বসাছিলেন, এমন সময় জিবরীল আলায়হিস সালাম তাঁর কাছে এসে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি কি পছন্দ করেন যে, আমি আপনাকে একটি মু’জিযাহ্ দেখাব? তিনি (সা.) বললেন, হ্যাঁ, দেখান। তখন জিবরীল আলায়হিস সালাম ঐ গাছটির প্রতি তাকালেন যা নবী (সা.) - এর পিছনে ছিল। জিবরীল আলায়হিস সালাম নবী (সা.) -কে বললেন, আপনি ঐ বৃক্ষটিকে ডাক দেন। তিনি (সা.) তাকে ডাকলেন। তখন বৃক্ষটি এসে তাঁর সামনে দাঁড়াল। অতঃপর জিবরীল আলায়হিস সালাম বললেন, এবার তাকে নিজের স্থানে চলে যেতে বলুন। তখন তিনি (সা.) তাকে পূর্বের স্থানে যেতে নির্দেশ করলে তা সেখানে চলে গেল। তা দেখে নবী (সা.) বললেন, আমার (মানসিক প্রশান্তির জন্য এটাই যথেষ্ট, এটাই যথেষ্ট। (দারিমী)
اَلْفصْلُ الثَّنِفْ (بَاب فِي المعجزا)
وَعَن أنس بن مَالك قَالَ جَاءَ جِبْرِيلُ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهُوَ جَالس حَزِين وَقد تخضب بِالدَّمِ من فعل أهل مَكَّة من قُرَيْش فَقَالَ جِبْرِيل يَا رَسُول الله هَل تحب أَن أريك آيَةً قَالَ نَعَمْ فَنَظَرَ إِلَى شَجَرَةٍ مِنْ وَرَائِهِ فَقَالَ ادْعُ بِهَا فَدَعَا بِهَا فَجَاءَتْ وَقَامَت بَيْنَ يَدَيْهِ فَقَالَ مُرْهَا فَلْتَرْجِعْ فَأَمَرَهَا فَرَجَعَتْ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حسبي حسبي. رَوَاهُ الدَّارمِيّ
اسنادہ ضعیف ، رواہ الدارمی (1 / 12 ۔ 13 ح 23) [و ابن ماجہ (4028)] * فیہ الاعمش مدلس و عنعن
ব্যাখ্যা: (جَالس حَزِين وَقد تخضب بِالدَّمِ) অর্থাৎ উহুদের যুদ্ধের দিন তার দাঁত ভেঙ্গে যাওয়ার কারণে তিনি এ অবস্থায় ছিলেন।
(من فعل أهل مَكَّة) অর্থাৎ মক্কার কাফিরদের প্রহারের কারণে। আবদুর রাযযাক বলেন, মা'মার থেকে। তিনি যুহরী থেকে, তিনি বলেন, নবী (সা.) -এর চেহারা মুবারকে উহুদের দিন সত্তরটি আঘাত করা হয়েছিল তরবারি দিয়ে। তবুও মহান আল্লাহ তাকে রক্ষা করেছিলেন। বুখারীর হাশিয়ার মধ্যে সুয়ূত্বী (রহিমাহুল্লাহ) উল্লেখ করেছেন, তাকে আল্লাহ রক্ষা করেছিলেন কারণ মহান আল্লাহ বলেন- (وَ اللّٰهُ یَعۡصِمُکَ مِنَ النَّاسِ) “আর আল্লাহ আপনাকে মানুষের থেকে রক্ষা করবেন”- (সূরাহ্ আল মায়িদাহ্ ৫: ৬৭)। কিন্তু তার এ দাঁত ভাঙ্গার কারণ হলো তিনি যাতে অধিক প্রতিদান লাভ করতে পারেন। আর যে সকল মুমিন আল্লাহর দীনের জন্য খুবই কষ্ট স্বীকার করেছেন, তিনিও তাদের অন্তর্ভুক্ত হতে পারেন। আর তিনিও মুজাহিদদের কষ্টে শামিল হতে পারেন। এ কারণে যখন তাকে শত্রুরা আঘাত করেছিল তিনি আঘাতে আক্রান্ত হয়েছিলেন।
(يَا رَسُول الله هَل تحب أَن أريك آيَةً) অর্থাৎ- হে আল্লাহর রাসূল! আমি আপনাকে একটি নিদর্শন দেখাব এটি কি আপনি পছন্দ করেন? অর্থাৎ আপনার নুবুওয়্যাতের নিদর্শন স্বরূপ যাতে আপনি আপনার কাজের (কষ্টের) কারণে মনে মনে প্রশান্তি পান। যাতে আপনি বুঝতে পারেন এটা কেবলমাত্র একটি কারণ আপনার কষ্টকে বাড়িয়ে দেয়ার। তথা আপনার কষ্ট বেশি হওয়ার কারণে আপনার মর্যাদাকেও বেশি করে দেয়া হয়েছে। আর আপনার সম্মানের স্থানও বেশি নিকটবর্তী করা হয়েছে। তখন নবী (সা.) নিদর্শন দেখতে চাইলেন। ফলে নবী (সা.) -এর পিছনে থাকা একটি গাছের দিকে জিবরীল আলায়হিস সালাম তাকিয়ে নবী (সা.) -কে বললেন, আপনি এ গাছটিকে আপনার নিকটে ডাকেন। ফলে নবী (সা.) তাকে ডাকলে গাছটি তার কাছে আসে। তারপর জিবরীল আলায়হিস সালাম নবী (সা.) -কে আবার বললেন, আপনি তাকে তার পূর্বের স্থানে ফিরে যেতে বলেন। নবী (সা.) তাকে তার জায়গায় ফিরে যেতে বললে গাছটি তার আগের জায়গায় ফিরে আসে। এ দেখে নবী (সা.) বললেন, যথেষ্ট হয়েছে। আমার জন্য যথেষ্ট হয়েছে। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - মু'জিযার বর্ণনা
৫৯২৫-[৫৮] ইবনু উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার আমরা নবী (সা.) -এর সাথে এক ভ্রমণে ছিলাম। এমন সময় এক বেদুঈন আসে। যখন সে কাছে আসলো, তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) তাকে বললেন, তুমি কি এ কথার সাক্ষ্য দাও যে, সত্যিকারার্থে আল্লাহ ছাড়া “ইবাদাত পাওয়ার যোগ্য দ্বিতীয় কেউ নেই, আর মুহাম্মাদ তাঁর বান্দা ও রাসূল?
বেদুঈন বলল, তুমি যা বললে আর কেউ কি এ কথার সাক্ষ্য দেয়? তিনি (সা.) বললেন, ঐ বাবলা গাছটি এ কথার সাক্ষ্য দিবে। এই বলে রাসূলুল্লাহ (সা.) গাছটিকে ডাকলেন। গাছটি ছিল উপত্যকার এক প্রান্তে। তা জমিনকে চিরে তাঁর সম্মুখে এসে দাঁড়াল। তখন তিনি গাছটি হতে তিনবার সাক্ষ্য চাইলেন। গাছটি অনুরূপভাবে তিনবার সাক্ষ্য প্রদান করল, যেরূপ তিনি (সা.) বলেছিলেন। অতঃপর গাছটি নিজের স্থানে চলে গেল। (দারিমী)
اَلْفصْلُ الثَّنِفْ (بَاب فِي المعجزا)
وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ كُنَّا مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي سَفَرٍ فَأَقْبَلَ أَعْرَابِي فَلَمَّا دنا مِنْهُ قَالَ لَهُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ تَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولَهُ قَالَ وَمَنْ يَشْهَدُ عَلَى مَا تَقُولُ؟ قَالَ: «هَذِهِ السَّلَمَةُ» فَدَعَاهَا رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهُوَ بِشَاطِئِ الْوَادِي فَأَقْبَلَتْ تَخُدُّ الْأَرْضَ حَتَّى قَامَتْ بَيْنَ يَدَيْهِ فَاسْتَشْهِدْهَا ثَلَاثًا فَشَهِدَتْ ثَلَاثًا أَنَّهُ كَمَا قَالَ ثُمَّ رجعتْ إِلى منبتِها. رَوَاهُ الدَّارمِيّ
اسنادہ حسن ، رواہ الدارمی (1 / 10 ح 16) ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যা: (كُنَّا مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي سَفَرٍ) আমরা কোন একটি সফরে নবী (সা.) -এর সাথে ছিলাম। অর্থাৎ কোন একটি যুদ্ধের সফরে অথবা ‘উমরার সফরে ছিলাম।
নবী (সা.) একজন বেদুইনকে দেখে বললেন, তুমি কি সাক্ষ্য প্রদান কর আল্লাহ ছাড়া সত্য কোন মা'বুদ নেই, তিনি একক ও তার কোন অংশীদার নেই, আর আমি মুহাম্মাদ তাঁর বান্দা ও তাঁর রাসূল? লোকটি তখন প্রশ্ন করল, আর কে আছে যে, তুমি ছাড়া এ সাক্ষ্য প্রদান করে? তখন নবী (সা.) একটি গাছের দিকে ইশারা করে গাছটিকে ডাকলেন। তখন উপত্যকার গাছটি এসে তার নিকটে দাঁড়াল। আর তিনবার সাক্ষ্য দিল। এরপর আবার তার আগের জায়গায় ফিরে গেল। অতএব উক্ত ঘটনা দ্বারা নবী (সা.) -এর মু'জিযাহ্ পরিলক্ষিত হয়। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - মু'জিযার বর্ণনা
৫৯২৬-[৫৯] ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন এক বেদুঈন রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর কাছে এসে বলল, আমি কিভাবে বিশ্বাস করব যে, আপনি আল্লাহর নবী? তিনি (সা.) বললেন, যদি আমি খেজুরের ঐ খোসা (কান্দি বা ছড়া)-কে ডাকি এবং সে সাক্ষ্য দেয় যে, আমি আল্লাহর রাসূল! (তবে বিশ্বাস করবে?) তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) তাকে ডাকলেন। এতে ঐ কান্দি খেজুরের গাছ হতে নিচে নেমে নবী (সা.) -এর সম্মুখে এসে পড়ল। অতঃপর তিনি (সা.) বললেন, ফিরে যাও। তখন কান্দিটি ফিরে গেল। তা দেখে বেদুঈন মুসলিম হয়ে গেল। ইমাম তিরমিযী (রহিমাহুল্লাহ) হাদীসটি বর্ণনা করেছেন এবং তিনি বলেছেন, হাদীসটি সহীহ।
اَلْفصْلُ الثَّنِفْ (بَاب فِي المعجزا)
وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ جَاءَ أَعْرَابِيٌّ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: بِمَا أَعْرِفُ أَنَّكَ نَبِيٌّ؟ قَالَ: «إِنْ دَعَوْتَ هَذَا الْعِذْقَ مِنْ هَذِهِ النَّخْلَةِ يَشْهَدُ أَنِّي رَسُولُ اللَّهِ» فَدَعَاهُ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَجَعَلَ يَنْزِلُ مِنَ النَّخْلَةِ حَتَّى سَقَطَ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ثُمَّ قَالَ: «ارْجِعْ» فَعَادَ فَأَسْلَمَ الْأَعْرَابِيُّ. رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ وَصَححهُ
سندہ ضعیف ، رواہ الترمذی (3628) * شریک مدلس و عنعن ولہ شواھد ضعیفۃ
ব্যাখ্যা: এক বেদুইন নবী (সা.) -এর নিকট এসে বলল, আপনি যে সত্য নবী তা আমরা কোন মু'জিযাহ্ দেখে চিনতে পারব? তখন নবী (সা.) তাকে বললেন, যদি আমি এই খেজুরের কাঁদিকে ডাকি তাহলে সে খেজুরের গাছ থেকে নেমে এসে সাক্ষ্য দিবে যে, আমি আল্লাহর রাসূল। ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, আমি যদি তাকে আহ্বান করি তাহলে সে আমার কাছে এসে সাক্ষ্য প্রদান করবে। অতঃপর নবী (সা.) খেজুরের কাঁদিকে ডাকলে সে গাছ থেকে নেমে এসে নবী (সা.) -এর কাছে এসে সাক্ষ্য প্রদান করে। এ অবস্থা দেখে বেদুইন ব্যক্তি ইসলাম গ্রহণ করল। (মিরকাতুল মাফাতীহ)।
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - মু'জিযার বর্ণনা
৫৯২৭-[৬০] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন একটি বাঘ বকরির রাখালের নিকট এসে (বকরির) পাল হতে একটি বকরি ধরে নিয়ে গেল। এদিকে রাখাল তার অনুসন্ধানে বের হলো, শেষ পর্যন্ত সে বাঘের কবল হতে বকরিটিকে ছিনিয়ে নিল। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর বাঘটি একটি টিলার উপর উঠল এবং লেজ গুটিয়ে বলতে লাগল, আমি খাদ্যের অনুসন্ধানে বের হয়েছিলাম, আর আল্লাহ তা’আলাও আমাকে রিযক দান করেছিলেন, অতঃপর (হে রাখাল!) তুমি আমার কাছ থেকে তা ছিনিয়ে নিয়েছ। তা শুনে (রাখাল) লোকটি বলে উঠল, আল্লাহর শপথ আজকের মতো এমন আশ্চর্যের ব্যাপার আমি আর কখনো দেখিনি। বাঘে (মানুষের ন্যায়) কথা বলছে। তখন বাঘটি বলে উঠল! এটা অপেক্ষা অধিকতর আশ্চর্যের ব্যাপার হলো, এক লোক দু’টি পাথরের মাঝে খেজুর বাগানে অবস্থান করছে। সে তোমাদেরকে অতীতে যা হয়ে গেছে তা এবং পরবর্তীতে যা কিছু হবে তার সংবাদ দেয়। বর্ণনাকারী [আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)] বলেন, উক্ত (রাখাল) লোকটি ছিল ইয়াহুদী। সে নবী (সা.) -এর কাছে এসে উক্ত ঘটনাটি বর্ণনা করে সাথে সাথে ইসলাম গ্রহণ করল। তার কথা শুনে নবী (সা.) বললেন, লোকটি সত্য কথাই বলেছেন।
অতঃপর নবী (সা.) বললেন, এটা এবং এর মতো আরো অন্যান্য বহু নিদর্শন কিয়ামতের আগে সংঘটিত হবে। তিনি আরো বলেছেন, সেদিন বেশি দূরে নয়, এমন একদিন আসবে, কোন লোক তার ঘর হতে বাইরে কোথাও যাবে এবং তার অনুপস্থিতিতে তার পরিবার (স্ত্রী) কি অপকর্ম করেছে, সে ফিরে আসতেই তার (পায়ের) জুতা ও (হাতের) লাঠি তাকে বলে দিবে। (শারহুস্ সুন্নাহ্)
اَلْفصْلُ الثَّنِفْ (بَاب فِي المعجزا)
وَعَن أبي هريرةَ قَالَ جَاءَ ذِئْبٌ إِلَى رَاعِي غَنَمٍ فَأَخَذَ مِنْهَا شَاةً فَطَلَبَهُ الرَّاعِي حَتَّى انْتَزَعَهَا مِنْهُ قَالَ فَصَعِدَ الذئبُ على تل فأقعى واستذفر فَقَالَ عَمَدت إِلَى رزق رزقنيه الله عز وَجل أخذتُه ثمَّ انتزعتَه مِنِّي فَقَالَ الرَّجُلُ تَاللَّهِ إِنْ رَأَيْتُ كَالْيَوْمِ ذئبا يَتَكَلَّمُ فَقَالَ الذِّئْبُ أَعْجَبُ مِنْ هَذَا رَجُلٌ فِي النَّخَلَاتِ بَيْنَ الْحَرَّتَيْنِ يُخْبِرُكُمْ بِمَا مَضَى وَبِمَا هُوَ كَائِن بعدكم وَكَانَ الرجل يَهُودِيّا فجَاء الرجل إِلَى النَّبِي صلى الله عَلَيْهِ وَسلم فَأسلم وَخَبره فَصَدَّقَهُ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ثُمَّ قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنَّهَا أَمارَة من أَمَارَاتٌ بَيْنَ يَدَيِ السَّاعَةِ قَدْ أَوْشَكَ الرَّجُلُ أَن يخرج فَلَا يرجع حَتَّى تحدثه نعلاه وَسَوْطه مَا أَحْدَثَ أَهْلُهُ بَعْدَهُ . رَوَاهُ فِي شَرْحِ السُّنَّةِ
صحیح ، رواہ البغوی فی شرح السنۃ (15 / 87 ح 4282) [و احمد (2 / 306 ح 8049 و سندہ حسن)] * ولہ شاھد عند احمد (3 / 83 ۔ 84) و صححہ الحاکم (4 / 467 ۔ 468) و وافقہ الذھبی و اصلہ فی سنن الترمذی (2181 وھو حدیث صحیح) ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যা: একটি বাঘ একটি রাখালের ছাগলের পালের কাছে এসে সেখান থেকে একটি ছাগলকে ধরল। তারপর ছাগলের পালের রাখাল বাঘের কাছ থেকে সে ছাগলকে ছাড়িয়ে নিল। তখন বাঘটি সেখান থেকে সরে গিয়ে একটি উঁচু টিলাতে উঠে নিতম্বের ওপর ভর করে দু’হাত বিছিয়ে বসে বলল, আল্লাহ আমার জন্য যে খাবার বৈধ করেছেন তা থেকে আমি ধরেছি। তারপর তুমি আমার থেকে তাকে ছাড়িয়ে নিলে। তখন তার কথা শুনে রাখাল বলল। আল্লাহর শপথ, আজকের মতো এরূপ আশ্চর্যের ঘটনা কক্ষনো দেখিনি। তুরিবিশতী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, সেই রাখালটির নাম ছিল হাব্বার ইবনু আওস আল খুযাই। আর তাকে বাঘের সাথে কথা-বার্তা বলা ব্যক্তি বলা হয়। লোকটি বাঘের কথা-বার্তা শুনে খুবই আশ্চর্যান্বিত হয়ে বলল, আমি আজকের দিনের মতো কোন দিন দেখিনি। তাকে নবী (সা.) সম্পর্কে সংবাদ দেয়া হলে সে নবী (সা.) -এর কাছে আসলো। সে ছিল একজন ইয়াহুদী লোক। নবী (সা.) তাকে এ সংবাদ সত্যায়ন করলে সে ইসলাম গ্রহণ করে। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - মু'জিযার বর্ণনা
৫৯২৮-[৬১] আবূল আ’লা (রহিমাহুল্লাহ) সামুরাহ ইবনু জুনদুব (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আমরা (সাহাবীগণ) নবী (সা.) -এর সাথে বড় একটি পাত্রে পালাক্রমে সকাল হতে সন্ধ্যা পর্যন্ত খানা খেতাম। অর্থাৎ দশজন খানা খেয়ে উঠে যেত এবং দশজন খেতে বসত। [আবূল আলা (রহিমাহুল্লাহ) বলেন,] আমরা সামুরাহ্ (রাঃ) -কে প্রশ্ন করলাম, কোথা হতে এ পাত্রে খাদ্য বৃদ্ধি পেত? সামুরাহ্ (রাঃ) বললেন, কি কারণে তুমি আশ্চর্য হচ্ছ? আকাশের দিকে ইঙ্গিত করে বললেন, সে খাদ্য-পাত্রে এখান হতে বৃদ্ধি পেত। (তিরমিযী)
اَلْفصْلُ الثَّنِفْ (بَاب فِي المعجزا)
وَعَنْ أَبِي الْعَلَاءِ عَنْ سَمُرَةَ بْنِ جُنْدَبٍ قَالَ كُنَّا مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَتَدَاوَلُ مِنْ قَصْعَةٍ مِنْ غُدْوَةٍ حَتَّى اللَّيْلِ يَقُومُ عَشَرَةٌ وَيَقْعُدُ عَشَرَةٌ قُلْنَا: فَمِمَّا كَانَتْ تُمَدُّ؟ قَالَ: مِنْ أَيْ شَيْءٍ تَعْجَبُ؟ مَا كَانَت تمَدّ إِلا من هَهنا وَأَشَارَ بِيَدِهِ إِلَى السَّمَاءِ . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَالدَّارِمِيُّ
اسنادہ صحیح ، رواہ الترمذی (3625 وقال : حسن صحیح) و الدارمی (1 / 30 ح 57) ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যা: আমরা নবী (সা.) -এর সাথে একটি বড় পাত্র থেকে খাবার খাচ্ছিলাম। আমাদের হাত এখানে ওখানে ঘুরছিল। আমরা সে পাত্র থেকে সকাল থেকে খাওয়া শুরু করলাম। এ খাবার রাত পর্যন্ত চলতে থাকল। পাত্রে দশজন দশজন করে বসতে ছিল। তাদের খাওয়া শেষ হলে বাকি দশজন বসল। আমরা বর্ণনাকারী সামুরাহ (রাঃ)-কে বললাম, পাত্রে খাদ্য বেশি হচ্ছিল কিভাবে? এ কথা তিনি এক পর্যায়ে আশ্চর্যান্বিত হয়ে বলেছিলেন। প্রশ্নকারী আবূল আলা যিনি তাবিঈদের নেতা ছিলেন তাকে বর্ণনাকারী সামুরাহ্ (রাঃ) বলেন, তুমি আশ্চর্যান্বিত হচ্ছ কেন? তিনি তার হাতকে আসমানের দিকে উঁচু করে ইঙ্গিত করলেন, এ বরকত আসমান থেকে আসে। আসমান থেকে বরকত নাযিলের কারণে এত অধিক পরিমাণ খাবার হয়েছে। এ দিকে ইঙ্গিত রয়েছে মহান আল্লাহর বাণীর মধ্যে। তা হলো- (وَ فِی السَّمَآءِ رِزۡقُکُمۡ وَ مَا تُوۡعَدُوۡنَ) “আর তোমাদের রিযক আসমানে আছে”- (সূরাহ্ আহ্ যা-রিয়া-ত ৫১ : ২২)। ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, এ কথা বলেছেন, সামুরাহ্ (রাঃ) আর প্রশ্নকারী হলো আবূল ‘আলা। এটাই বাহ্যিকভাবে বুঝা যাচ্ছে। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - মু'জিযার বর্ণনা
৫৯২৯-[৬২] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। বদর যুদ্ধে নবী (সা.) তিনশত পনেরো জনকে সঙ্গে নিয়ে রওয়ানা হলেন এবং এভাবে দু’আ করলেন, হে আল্লাহ! এরা খালি পা, অতএব এদেরকে বাহন দান কর। হে আল্লাহ! এরা বস্ত্রহীন, এদেরকে পোশাক দান কর। হে আল্লাহ! এরা ক্ষুধার্ত, এদেরকে পরিতৃপ্ত খাদ্য দান কর। অতএব আল্লাহ তা’আলা তাদেরকে (মুসলিমদেরকে) বিজয়ী করলেন। ফলে তাঁরা এমন অবস্থায় ফিরলেন যে, তাঁদের প্রত্যেক লোকের সাথে একটি অথবা দু’টি উট ছিল এবং তারা পোশাক পরিহিত এবং খাদ্যে পরিতৃপ্ত। (আবূ দাউদ)
اَلْفصْلُ الثَّنِفْ (بَاب فِي المعجزا)
وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ خَرَجَ يَوْمَ بَدْرٍ فِي ثَلَاثِمِائَةٍ وَخَمْسَةَ عَشَرَ قَالَ: «اللَّهُمَّ إِنَّهُمْ حُفَاةٌ فَاحْمِلْهُمْ اللَّهُمَّ إِنَّهُمْ عُرَاةٌ فَاكْسُهُمْ اللَّهُمَّ إِنَّهُمْ جِيَاعٌ فَأَشْبِعْهُمْ» فَفَتَحَ اللَّهُ لَهُ فَانْقَلَبُوا وَمَا مِنْهُمْ رَجُلٌ إِلَّا وَقَدْ رَجَعَ بِجَمَلٍ أَوْ جَمَلَيْنِ وَاكْتَسَوْا وَشَبِعُوا. رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
اسنادہ حسن ، رواہ ابوداؤد (2747) ۔
(حسن)
ব্যাখ্যা: (اللَّهُمَّ إِنَّهُمْ حُفَاةٌ) অর্থাৎ হে আল্লাহ। তারা খালি পায়ে। অর্থাৎ তাদের বেশির ভাগ লোক খালি পায়ে আছে তাদের পায়ে জুতা নেই।
(فَاحْمِلْهُمْ) অর্থাৎ তাদেরকে আপনি আরোহণের জন্য সাহায্য করেন। তথা আপনি তাদের প্রত্যেককেই আলাদা আলাদা বাহন দান করুন।
(اللَّهُمَّ إِنَّهُمْ عُرَاةٌ) অর্থ হে আল্লাহ। নিশ্চয় তারা উলঙ্গ। অর্থাৎ লুঙ্গি ছাড়া তাদের আর কোন কিছু পরিধানের নেই। অতএব আপনি তাদেরকে পরিধানের কাপড় দিন। আর তাদেরকে সৌন্দর্যের পোশাক দান করুন।
(اللَّهُمَّ إِنَّهُمْ جِيَاعٌ فَأَشْبِعْهُمْ) অর্থাৎ বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণভাবে তাদেরকে শক্তিশালী কর যাতে তারা আনুগত্যের প্রতি শক্তিশালী হয়ে ওঠে।
(فَفَتَحَ اللَّهُ لَهُ) অর্থাৎ আল্লাহ তার নবীকে সাহায্য করেছেন মক্কার মুশরিকদের ও কুরায়শদের সৈন্য ও তাদের বড়দের ওপর। এমনকি তাদের সত্তরজনকে নিহত করা হয় আর সত্তর জনকে বন্দি করা হয়।
(وَمَا مِنْهُمْ رَجُلٌ إِلَّا وَقَدْ رَجَعَ بِجَمَلٍ أَوْ جَمَلَيْنِ وَاكْتَسَوْا وَشَبِعُوا) অর্থাৎ তাদের শত্রুদের গনীমাত থেকে। আল্লাহ সত্য কথাই বলেছেন
(فَعَسٰۤی اَنۡ تَکۡرَهُوۡا شَیۡئًا وَّ یَجۡعَلَ اللّٰهُ فِیۡهِ خَیۡرًا کَثِیۡرًا)- “সম্ভবত তোমরা কোন জিনিসকে অপছন্দ কর আর আল্লাহ তাতে অনেক কল্যাণ রেখে দিয়েছেন”- (সূরা আন্ নিসা ৪ : ১৯)। যেমন তাদের একদল সম্পর্কে মহান আল্লাহ্ সংবাদ দিয়েছেন- (وَ اِنَّ فَرِیۡقًا مِّنَ الۡمُؤۡمِنِیۡنَ لَکٰرِهُوۡنَ ۙ) “আর মু'মিনদের একটি দল তা অপছন্দ করেছিল”- (সূরাহ আল আনফাল ৮ : ৫)। একটি হাদীসে আছে, যাতে তাদেরকে কষ্ট দেয়া হয় তাতে ধৈর্যধারণ করা বেশি উত্তম। অতঃপর এটা হলো দুনিয়াবী পরিণতি আর আখিরাতে যা আছে উত্তম ও স্থায়ী- (আবূ দাউদ)। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - মু'জিযার বর্ণনা
৫৯৩০-[৬৩] ইবনু মাস্’উদ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সা.) হতে বর্ণনা করেন। তিনি (সা.) বলেছেন: তোমাদেরকে (আল্লাহর পক্ষ হতে) সাহায্য করা হবে। তোমরা (শত্রুদের) অনেক সম্পদ লাভ করবে এবং তোমাদের জন্য (বহু শহর ও দেশ) বিজিত হবে। অতএব তোমাদের যে কেউ সেই সময়টি পাবে, সে যেন আল্লাহকে ভয় করে চলে, লোকেদেরকে ভালো কাজের দিকে ডাকে এবং মন্দকাজ হতে নিষেধ করে। (আবূ দাউদ)
اَلْفصْلُ الثَّنِفْ (بَاب فِي المعجزا)
وَعَنِ ابْنِ مَسْعُودٍ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قا ل: «إِنَّكُمْ مَنْصُورُونَ وَمُصِيبُونَ وَمَفْتُوحٌ لَكُمْ فَمَنْ أَدْرَكَ ذَلِكَ مِنْكُمْ فَلْيَتَّقِ اللَّهَ وَلْيَأْمُرْ بِالْمَعْرُوفِ وَلْيَنْهَ عَن الْمُنكر» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
صحیح ، رواہ ابوداؤد (5118 مختصرًا جدًا ولم یذکر ھذا اللفظ و سندہ صحیح) [و ابوداؤد الطیالسی (337) و الترمذی (2257)] ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যা: হাদীসটিতে এ ঘোষণার মাধ্যমে নবী (সা.) যেন ন্যায় ও ভারসাম্যপূর্ণ পথের দিকনির্দেশনা দিয়েছেন, যাতে করে কোন ব্যক্তি বিজয় ও সাফল্য অর্জনের ক্ষেত্রে, কর্তৃত্ব ও ক্ষমতা হস্তগত হওয়ার সময় ও ধনসম্পদ করায়ত্তকালীন স্বীর অবস্থান ও উদ্দেশ্য হতে উদাসীন না হয় এবং গর্ব-অহংকার, অপব্যয়, আত্মপ্রদর্শন ও যুলম-অত্যাচারের নিকৃষ্ট পন্থা অবলম্বন করে আল্লাহর গযবের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত না হয়। মূলত এ ঘোষণার মাধ্যমে নবী (সা.) মুসলিমদেরকে কুরআন মাজীদের ঐ আয়াতের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন যাতে বলা হয়েছে-
(لَّذِیۡنَ اِنۡ مَّکَّنّٰهُمۡ فِی الۡاَرۡضِ اَقَامُوا الصَّلٰوۃَ وَ اٰتَوُا الزَّکٰوۃَ وَ اَمَرُوۡا بِالۡمَعۡرُوۡفِ وَ نَهَوۡا) অর্থাৎ “যদি আমরা তাদেরকে পৃথিবীতে ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব প্রদান করি তাহলে তারা সালাত প্রতিষ্ঠা করবে ও যাকাত প্রদান করবে এবং ভালো কাজের আদেশ করবে এবং মন্দ কাজ হতে নিষেধ করবে”- (সূরাহ্ হাজ্জ: ২২ : ৪১)। (মাযাহিরে হক শারহে মিশকাত ৭ম খণ্ড, ১৫৬ পৃষ্ঠা)।
(فَلْيَتَّقِ اللَّهَ) অর্থাৎ মু'মিন ব্যক্তি যেন সকল কাজে আল্লাহকে ভয় করে, যাতে করে সে সফলতায় পরিপূর্ণ হতে পারে। (মিরকাতুল মাফাতীহ)।
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - মু'জিযার বর্ণনা
৫৯৩১-[৬৪] জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি খায়বার এলাকায় এক ইয়াহূদী মহিলা বকরির মাংসের ভুনা মধ্যে বিষ মিশ্রিত করে রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর জন্য হাদিয়্যাহ্ পেশ করল। তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) এর তার বাহু হতে কিছু অংশ খেলেন এবং তাঁর কতিপয় সাহাবীও তাঁর সাথে খেলেন। অতঃপর (মাংস মুখে তুলেই) তিনি (সা.) সাহাবীগণকে বললেন, খাদ্য হতে তোমরা হাত গুটিয়ে নাও এবং উক্ত ইয়াহূদী মহিলাকে ডেকে পাঠালেন, (সে আসলে) তিনি (সা.) তাকে প্রশ্ন করলেন, তুমি বকরির এ মাংসে বিষ মিশ্রিত করেছ? সে বলল, আপনাকে কে বলেছে? তিনি (সা.) বললেন, আমার হাতের এই বাহুর মাংসই বলেছে। তখন মহিলাটি বলল, হ্যাঁ, আমি এতে বিষ মিশিয়েছি। আর তা এ উদ্দেশেই করেছি, যদি আপনি প্রকৃতই নবী হন, তাহলে তা (বিষ) আপনার কোন ক্ষতি করতে পারবে না। আর যদি নবীই না হয়ে থাকেন, তাহলে তার থেকে আমরা শান্তি লাভ করব।
অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সা.) তাকে ক্ষমা করে দিলেন এবং তাকে কোন প্রকারে শাস্তি দিলেন না। আর তার ঐ সমস্ত সাহাবীগণ মৃত্যুবরণ করলেন, যারা উক্ত বকরি হতে খেয়েছিলেন। (বর্ণনাকারী বলেন,) আর উক্ত মাংসের কিছু অংশ খাওয়ার কারণে রাসূলুল্লাহ (সা.) দুই কাঁধের মাঝখানে শিঙ্গা লাগিয়েছেন। আনসারের বায়াযাহ্ গোত্রের আযাদকৃত গোলাম আবূ হিন্দ শিং ও চাকু দ্বারা নবী (সা.) - এর কাঁধে শিঙ্গা লাগিয়েছিল। (আবূ দাউদ ও দারিমী)
اَلْفصْلُ الثَّنِفْ (بَاب فِي المعجزا)
وَعَن جَابر بِأَن يَهُودِيَّةً مِنْ أَهْلِ خَيْبَرَ سَمَّتْ شَاةً مَصْلِيَّةً ثُمَّ أَهْدَتْهَا لِرَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَأَخَذَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الذِّرَاعَ فَأَكَلَ مِنْهَا وَأَكَلَ رَهْطٌ مِنْ أَصْحَابِهِ مَعَهُ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ارْفَعُوا أَيْدِيَكُمْ وَأَرْسَلَ إِلَى الْيَهُودِيَّةِ فَدَعَاهَا فَقَالَ سممتِ هَذِهِ الشَّاةَ فَقَالَتْ مَنْ أَخْبَرَكَ قَالَ أَخْبَرَتْنِي هَذِه فِي يَدي للذِّراع قَالَت نعم قَالَت قلت إِن كَانَ نَبيا فَلَنْ يضرّهُ وَإِنْ لَمْ يَكُنْ نَبِيًّا اسْتَرَحْنَا مِنْهُ فَعَفَا عَنْهَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَلَمْ يُعَاقِبهَا وَتُوفِّي بعض أَصْحَابُهُ الَّذِينَ أَكَلُوا مِنَ الشَّاةِ وَاحْتَجَمَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى كَاهِلِهِ مِنْ أَجْلِ الَّذِي أَكَلَ مِنَ الشَّاةِ حَجَمَهُ أَبُو هِنْدٍ بِالْقَرْنِ وَالشَّفْرَةِ وَهُوَ مَوْلًى لِبَنِي بَيَاضَةَ مِنَ الْأَنْصَارِ. رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ وَالدَّارِمِيُّ
اسنادہ ضعیف ، رواہ ابوداؤد (4510) و الدارمی (1 / 33 ح 69) ۔ * الزھری عن جابر : منقطع ’’ لم یسمع منہ ‘‘ انظر تحفۃ الاشراف (2 / 356) ۔
(ضَعِيف)
ব্যাখ্যা: হাদীসে উল্লেখিত ইয়াহূদী মহিলার নাম ছিল যায়নাব বিনতুল হারিস। সে ছিল মারহাব ইবনু আবূ মারহাব-এর ভাইয়ের মেয়ে এবং সালাম ইবনু মিশকাত-এর স্ত্রী। এই মহিলা কিছু লোকের মাধ্যমে জেনে নিয়েছিল যে, আল্লাহর রাসূল (সা.)-এর নিকট কোন অংশের গোশত সর্বাধিক পছন্দনীয় ছিল। সে অনুসারে সে তার গৃহপালিত একটি বকরি যাবাহ করল এবং তা উত্তমরূপে ভুনা করে তাতে মারাত্মক বিষ মিশ্রিত করল। হাত এবং সিনার অংশে সে বেশি করে বিষ মিশ্রিত করল, অতঃপর উক্ত গোশত এতে নবী (সা.) এবং সাহাবীদের সামনে উপস্থাপন করল যারা সে সময় রাসূল (সা.) -এর দরবারে উপস্থিত ছিল।
(وَإِنْ لَمْ يَكُنْ نَبِيًّا اسْتَرَحْنَا مِنْهُ فَعَفَا عَنْهَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ) আর যদি নবীই না হয়ে থাকেন, তাহলে তা দ্বারা আমরা শান্তি লাভ করব। অতঃপর আল্লাহর রাসূল (সা.) তাকে ক্ষমা করে দিলেন। ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, অন্য একটি বর্ণনায় এসেছে, রাসূল (সা.) তাকে হত্যার নির্দেশ দিলে তাকে হত্যা করা হয়। এ দু' বর্ণনার মধ্যে মতভেদ তৈরি হলো। উভয়ের মাঝে সমাধান হলো- রাসূল (সা.) তাকে প্রথমে ক্ষমা করে দিয়েছিলেন, তবে যখন সেই বিষ মিশ্রিত খাবার খেয়ে বিশর ইবনুল বারা ইবনু মা'রূর মারা যায় তখন কিসাস স্বরূপ মহিলাকে হত্যার নির্দেশ দেয়া হয়। মাওয়াহিব’-এর মধ্যে এসেছে, বলা হয়ে থাকে যে, সে মহিলা ইসলাম গ্রহণ করেছিল বিধায় তাকে হত্যা করা হয়নি। কতিপয় মুহাক্কিক বলেন, “তিনি তাকে ক্ষমা করে দেন” অর্থাৎ প্রথমে তিনি তাকে ক্ষমা করে দিয়েছিলেন, কারণ তিনি নিজের ক্ষেত্রে কোন প্রতিশোধ নেননি। তারপর যখন বিশর ইবনুল বারা' ইবনু মা'রূর মারা গেলেন তখন তাকে কিসাস স্বরূপ হত্যার নির্দেশ দেন। এটার সম্ভাবনা রয়েছে যে, সে ইসলাম গ্রহণের কারণে তিনি তাকে ক্ষমা করে দেন, অতঃপর বিশরকে হত্যার অপরাধে কিসাসস্বরূপ তাকে হত্যার নির্দেশ দেন। যুহরী (রহিমাহুল্লাহ) তাঁর এ দাবীর পক্ষে একা নন, বরং সুলায়মান আত্ তায়মী তার “আল মাগাযী” কিতাবে এ বিষয়টিকে শক্তিশালী করেছেন। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
(فَلَنْ يضرّهُ) অর্থ, তাহলে তা (বিষ) আপনার কোন ক্ষতি করতে পারবে না। অর্থাৎ হয়তো এ কারণে যে, নবীগণের ওপর বিষ এরূপ প্রতিক্রিয়াশীল হয় না যে, তাদের জীবনই নিঃশেষ করে দিবে। অথবা এ ভিত্তিতে যে, ইসলামের প্রচার ও পূর্ণতার পূর্বে নবী (সা.) -এর মৃত্যর আশঙ্কাও করা যায় না। প্রথম সম্ভাবনার ক্ষেত্রে ঐ বর্ণনা সংশয়ের কারণ হতে পারে যাতে বলা হয়েছে যে, নবী (সা.) -এর মৃত্যু ঐ বিষের প্রতিক্রিয়ার কারণে হয়েছে যা তাকে খায়বারের খাবারের মধ্যে দেয়া হয়েছিল। কিন্তু যেহেতু মুহাক্কিক ‘আলিমগণ লিখেছেন যে, এ বর্ণনা বিশুদ্ধ নয়, তাই সংশয়ের প্রশ্নই আসে না; বরং এক বর্ণনায় তো এরূপ এসেছে যে, কেউ একজন মৃত্যুশয্যায় প্রশ্ন করেছিল যে, আপনার মধ্যে কি খায়বারের বিষ প্রতিক্রিয়াশীল হয়েছে? জবাবে রাসূল (সা.) বলেন, আমার তাক্বদীরে যা লেখা আছে এবং আল্লাহ তা'আলা যা চান তা ছাড়া অন্য কোন কষ্ট আপতিত হতে পারে না। (মাযাহিরে হাক ৭ম খণ্ড, ১৫৭ পৃষ্ঠা)।
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - মু'জিযার বর্ণনা
৫৯৩২-[৬৫] সাহল ইবনু হানযালিয়্যাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। হুনায়নের যুদ্ধের দিন তাঁরা রাসূলুল্লাহ (সা.) এর সাথে ভ্রমণে বের হলেন। ভ্রমণটি কিছুটা দীর্ঘ হলো, এমনকি সন্ধ্যা এসে গেল। এমন সময় একজন অশ্বারোহী এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমি অমুক অমুক পাহাড়ের উপর উঠেছিলাম, তখন দেখতে পেলাম, হাওয়াযিন গোত্রের লোকেরা সকলে এসে পড়েছে। তাদের সাথে তাদের মহিলাগণ, মালসম্পদ এবং সর্বপ্রকারের গবাদিপশু রয়েছে; আর তারা সকলে হুনায়ন এলাকায় একত্রিত হয়েছে।
এ কথা শুনে রাসূলুল্লাহ (সা.) হালকা হেসে বললেন, ইনশা-আল্ল-হ! আগামীকাল এ সমস্ত জিনিস মুসলিমদের গনীমাতের সম্পদে পরিণত হবে। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সা.) - বললেন, আজ রাতে (তোমাদের) কে আমাদেরকে পাহারা দেবে? আনাস ইবনু আবূ মারসাদ আল গানবী (রাঃ) বললেন, আমিই হে আল্লাহর রাসূল! তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, আচ্ছা আরোহণ কর। তখন তিনি তাঁর অশ্বে আরোহণ করলেন। তারপর রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, তুমি এই পাহাড়ী রাস্তায় অগ্রসর হও, এমনকি এ পাহাড়ের উপরে পৌছে যাও। (বর্ণনকারী বলেন,) যখন ভোর হলো, তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) সালাতের জন্য বের হলেন। দু’ রাক্আত সুন্নাত পড়ে প্রশ্ন করলেন, তোমরা তোমাদের অশ্বারোহীর আভাস পেয়েছ কি? তখন এক লোক বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা আভাস পাইনি।
অতঃপর সালাতের জন্য ইকামাত দেয়া হলো, তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) সালাত আদায় করতে করতে আড় চোখে সেই গিরিপথের দিকে তাকাচ্ছিলেন। সালাত শেষ করেই তিনি (সা.) বললেন, তোমরা সুসংবাদ গ্রহণ কর। তোমাদের অশ্বারোহী এসে পৌছেছে। (বর্ণনাকারী বলেন, আমরা বৃক্ষরাজির মাঝে পাহাড়ী পথে সেদিকে তাকিয়ে দেখলাম, তিনি এসে রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর সামনে দাঁড়ালেন। অতঃপর বললেন, আমি রওয়ানা হয়ে ঐ পাহাড়ের সর্বোচ্চ চূড়ায় উঠেছিলাম, যেখানে উঠার জন্য রাসূলুল্লাহ (সা.) আমাকে নির্দেশ করেছিলেন। যখন আমি সকালে উপনীত হলাম, তখন আমি উভয় পাহাড়ের চূড়ায় উঠে এদিক-সেদিক দৃষ্টি দিলাম কিন্তু কাউকেই দেখতে পেলাম না। এমতাবস্থায় রাসূলুল্লাহ (সা.) সে অশ্বারোহীকে প্রশ্ন করলেন, তুমি কি রাতের বেলায় অবতরণ করেছিলে? তিনি বললেন, না। তবে শুধু সালাতের জন্য অথবা প্রাকৃতিক প্রয়োজন মিটানোর জন্য। তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, এরপর তুমি অন্য কোন প্রকারের (নফল) ’আমল না করলেও তোমার কোন ক্ষতি হবে না। (আবূ দাউদ)
اَلْفصْلُ الثَّنِفْ (بَاب فِي المعجزا)
وَعَن سهل ابْن الْحَنْظَلِيَّةِ أَنَّهُمْ سَارُوا مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمَ حُنَيْنٍ فَأَطْنَبُوا السَّيْرَ حَتَّى كَانَت عَشِيَّةً فَجَاءَ فَارِسٌ فَقَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنِّي طَلِعْتُ عَلَى جَبَلِ كَذَا وَكَذَا فَإِذَا أَنَا بِهَوَازِنَ عَلَى بَكْرَةِ أَبِيهِمْ بِظُعُنِهِمْ وَنَعَمِهِمُ اجْتَمَعُوا إِلَى حُنَيْنٍ فَتَبَسَّمَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَقَالَ تِلْكَ غَنِيمَةٌ الْمُسْلِمِينَ غَدا إِن شَاءَ الله ثمَّ قَالَ مَنْ يَحْرُسُنَا اللَّيْلَةَ قَالَ أَنَسُ بْنُ أَبِي مَرْثَدٍ الْغَنَوِيُّ أَنَا يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ ارْكَبْ فَرَكِبَ فَرَسًا لَهُ فَقَالَ: «اسْتَقْبِلْ هَذَا الشِّعْبَ حَتَّى تَكُونَ فِي أَعْلَاهُ» . فَلَمَّا أَصْبَحْنَا خَرَجَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَى مُصَلَّاهُ فَرَكَعَ رَكْعَتَيْنِ ثُمَّ قَالَ هَلْ حسستم فارسكم قَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ مَا حَسِسْنَا فَثُوِّبَ بِالصَّلَاةِ فَجَعَلَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُصَلِّي وَهُوَ يَلْتَفِتُ إِلَى الشِّعْبِ حَتَّى إِذَا قَضَى الصَّلَاةَ قَالَ أَبْشِرُوا فَقَدْ جَاءَ فَارِسُكُمْ فَجَعَلْنَا نَنْظُرُ إِلَى خِلَالِ الشَّجَرِ فِي الشِّعْبِ فَإِذَا هُوَ قَدْ جَاءَ حَتَّى وَقَفَ عَلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَسلم فَقَالَ إِنِّي انْطَلَقْتُ حَتَّى كُنْتُ فِي أَعْلَى هَذَا الشِّعْبِ حَيْثُ أَمَرَنِي رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَلَمَّا أَصبَحت اطَّلَعت الشِّعْبَيْنِ كِلَيْهِمَا فَلَمْ أَرَ أَحَدًا فَقَالَ لَهُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ هَلْ نَزَلْتَ اللَّيْلَةَ قَالَ لَا إِلَّا مُصَلِّيَا أَوْ قَاضِيَ حَاجَةٍ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «فَلَا عَلَيْكَ أَنْ لَا تَعْمَلَ بعدَها» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
اسنادہ حسن ، رواہ ابوداؤد (2501) ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যা: (عَلَى بَكْرَةِ أَبِيهِمْ) অর্থাৎ স্বীয় পিতার উটের উপর। অর্থাৎ- সকলেই একত্রিত হয়ে। কথিত আছে যে এক ব্যক্তি তাঁর সকল ছেলে-মেয়েকে একটি উটের উপরে বহন করত। এটি আরবদের একটি প্রবাদ বাক্য। এর দ্বারা তারা আধিক্য বুঝায়।
কাযী (রহিমাহুল্লাহ) লিখেছেন যে, (عَلَى بَكْرَةِ أَبِيهِمْ)-এর মধ্যকার (عَلَى) মূলত (مع) অর্থে হয়েছে। আর এ বাক্য প্রবাদ বাক্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। আর এ প্রবাদ বাক্যের উৎস হলো, এক ‘আরব গোত্রের কিছু লোক কোন ঘটনার সম্মুখীন হয়ে স্বীয় বাসস্থান ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়। অতএব ঐ সকল লোক এখান থেকে রওয়ানা হলো। যেহেতু তারা তাদের পিছনে কোন জিনিস ফেলে যেতে চাচ্ছিল না, তাই তারা এক একটি জিনিস নিজেদের সাথে নিয়ে নিল। এমনকি তাদের নিকট যে উট ছিল সেগুলোও সাথে নিয়ে নিল।
এ অবস্থা দেখে কিছু লোক বলল, (جاءواعلى بكرةأبيهم) অর্থাৎ এ সকল লোক (সব কিছু নিয়ে) এসেছে এমনকি স্বীয় পিতার উটও নিয়ে এসেছে। পরবর্তীতে এ বাক্য এমন লোকদের ক্ষেত্রে প্রবাদ বাক্য হিসেবে ব্যবহৃত হতে লাগল যারা নিজেদের সাথে তাদের সকল মাল-সামানা ও সকল লোক সহকারে আগমন করে এমতাবস্থায় তাদের সাথে কখনো উট থাকত আবার কখনো থাকত না। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
(أَنْ لَا تَعْمَلَ بعدَها) অর্থ- ঐ রাতের পর তুমি অন্য কোন ‘আমল না করলেও... অর্থাৎ অন্য কোন নফল ও ফাযীলাতের কাজ না করতে পারলেও আজ রাতে তুমি যে গুণের কাজ করেছ তা তোমার মুক্তির জন্য যথেষ্ট হবে। ইবনুল মুবারক (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, এতে রাসূল (সা.) -এর পক্ষ থেকে সুসংবাদ আছে যে, আল্লাহ তার পূর্বের ও পরের গুনাহ ক্ষমা করে দিয়েছেন। মুল্লা আলী ক্বারী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, তবে এতে সন্দেহের অবকাশ আছে।
‘আল্লামাহ ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, অর্থাৎ এই রাতের পর তুমি যদি কোন অতিরিক্ত কল্যাণকর কাজ নাও কর তবে তোমার কোন সমস্যা হবে না। কারণ এই রাতের ‘আমল তোমার জন্য সাওয়াব ও ফাযীলাতের দিক দিয়ে যথেষ্ট। তিনি এখানে নফল ও সাওয়াবের কথা বলেছেন, ফরযের কথা বলেননি। কারণ ফরয কাজ বান্দার থেকে কম করা হয় না। এটারও সম্ভাবনা আছে যে, উক্ত ঘোষণার মধ্যে আমল দ্বারা জিহাদ উদ্দেশ্য। অর্থাৎ তুমি আজকের রাত্রিতে আল্লাহর রাস্তায় আমাদের পাহারাদারির দায়িত্ব যেভাবে পরিশ্রম, বীরত্ব ও আন্তরিকতার সাথে পালন করেছ এরপর যদি তুমি জিহাদে শরীক নাও হও তবুও তোমাকে এ ব্যাপারে কোন ধরপাকড় করা হবে না। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - মু'জিযার বর্ণনা
৫৯৩৩-[৬৬] আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন আমি অল্প কয়েকটি খেজুর রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর কাছে নিয়ে এসে বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহর কাছে দু’আ করুন যেন এগুলোর মাঝে বরকত হয়। তখন তিনি (সা.) খেজুরগুলো হাতে নিলেন। অতঃপর সেগুলোর মাঝে আমার জন্য বরকতের দু’আ করলেন। তারপর বললেন, এগুলো নিয়ে যাও এবং তোমার খাদ্য-থলির মাঝে রেখে দাও। যখনই তুমি থলি হতে কিছু নিতে চাবে, তখনই তার ভিতরে হাত ঢুকিয়ে নেবে। তবে কখনো থলিটিকে ঝেড়ে খালি করবে না।
[আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) বলেন,] আমি সে খেজুর হতে এত এত ’ওয়াসাক’ পরিমাণ আল্লাহর রাস্তায় খরচ করেছি। এতদ্ভিন্ন তা হতে আমরা নিজেরাও খেয়েছি এবং অন্যান্যকেও খাওয়েছি। আর উক্ত থলিটি কখনো আমার কোমর হতে আলাদা হত না। পরিশেষে ’উসমান (রাঃ)-এর শাহাদাতের দিন সেই থলিটি কোথাও খুলে পড়ে যায়। (তিরমিযী)
اَلْفصْلُ الثَّنِفْ (بَاب فِي المعجزا)
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ أَتَيْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِتَمَرَاتٍ فَقُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ ادْعُ اللَّهَ فِيهِنَّ بِالْبَرَكَةِ فَضَمَّهُنَّ ثُمَّ دَعَا لي فِيهِنَّ بِالْبركَةِ فَقَالَ خذهن واجعلهن فِي مِزْوَدِكَ كُلَّمَا أَرَدْتَ أَنْ تَأْخُذَ مِنْهُ شَيْئًا فَأَدْخِلْ فِيهِ يَدَكَ فَخُذْهُ وَلَا تَنْثُرْهُ نَثْرًا فَقَدْ حَمَلْتُ مِنْ ذَلِكَ التَّمْرِ كَذَا وَكَذَا مِنْ وَسْقٍ فِي سَبِيلِ اللَّهِ فَكُنَّا نَأْكُلُ مِنْهُ وَنُطْعِمُ وَكَانَ لَا يُفَارِقُ حَقْوِي حَتَّى كَانَ يَوْمُ قَتْلِ عُثْمَانَ فَإِنَّهُ انْقَطَعَ. رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ
اسنادہ حسن ، رواہ الترمذی (3839 وقال : حسن غریب) ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যা: হাদীসটির শেষ বাক্য দ্বারা জানা যায় যে, যখন ফিতনাহ্ ছড়িয়ে পড়ে তখন বরকত উঠে যায়। আর মনের দুঃখে আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) বলতেন, (للناس هم ولي همان بينهم هم الجر اب وهم الشيخ عثبانا) অর্থাৎ মানুষের জন্য একটি দুঃখ, কিন্তু আমার দুঃখ দু'টি- একটি হলো আমার থলি হারানো আর দ্বিতীয়টি হলো মহামান্য খলীফাহ্ ‘উসমান (রাঃ)-কে হারানো। (মিরকাতুল মাফাতীহ, মাযাহিরে হাক ৭ম খণ্ড, ১৬১ পৃষ্ঠা)
পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ - মু'জিযার বর্ণনা
৫৯৩৪-[৬৭] ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন রাত্রির বেলায় কুরায়শগণ মক্কায় পরামর্শ করল যে, সকাল হতেই তারা নবী (সা.)-কে রশি দ্বারা শক্ত করে বেঁধে ফেলবে। আবার কেউ বলল, বরং তাকে হত্যা করে ফেল। অন্য আরেকজন বলল, বরং তাকে দেশ হতে তাড়িয়ে দাও। আর এদিকে আল্লাহ তা’আলা তাঁর নবী (সা.) -কে কাফিরদের ষড়যন্ত্রের কথা জানিয়ে দেন। অতঃপর আলী (রাঃ) নবী (সা.) -এর বিছানায় সেই রাত্রি যাপন করলেন এবং নবী (সা.) মক্কাহ্ হয়ে পর্বতের গুহায় গিয়ে আত্মগোপন করলেন, কিন্তু নবী (সা.) এ স্বীয় বিছানায় শুয়ে আছেন ধারণা করে সারাটি রাত্র মুশরিকরা ’আলী (রাঃ) -কে পাহারা দিতে থাকল। ভোর হতেই তারা নবী (সা.) -এর হুজরার উপর আক্রমণ করার জন্য অগ্রসর হলো। যখন তারা নবী (সা.)-এর স্থানে ’আলী (রাঃ)-কে দেখতে পেল, তখন (বুঝতে পারল যে,) তাদের ষড়যন্ত্র আল্লাহ তা’আলা প্রতিহত করে দিয়েছেন। অতঃপর তারা ’আলী (রাঃ) -কে প্রশ্ন করল, তোমার এই বন্ধু [নবী (সা.)] কোথায়? ’আলী (রাঃ) বললেন, আমি জানি না। তখন তারা নবী (সা.) -এর পদচিহ্ন অনুসরণ করে তার খোঁজে বের হয়ে পড়ল, কিন্তু উক্ত পর্বতের কাছে পৌঁছার পর পদচিহ্ন তাদের জন্য হজবরল ও সংশয়পূর্ণ হয়ে গেল। তবু তারা পাহাড়ের উপর উঠল এবং গুহার মুখে গিয়ে পৌছল। তারা দেখতে পেল, মাকড়সা গুহার দ্বারপথে জাল বুনে রেখেছে, তা দেখে তারা বলাবলি করল, যদি সে (মুহাম্মাদ) এ গুহার মাঝে প্রবেশ করত, তাহলে গুহার দ্বারে মাকড়সার জাল থাকত না। তারপর নবী (সা.) এ তিন রাত্র-দিবস তার ভিতরে অবস্থান করলেন। (আহমাদ)
اَلْفصْلُ الثَّالِثُ (بَاب فِي المعجزا)
وَعَن ابْن عبَّاس قَالَ تَشَاوَرَتْ قُرَيْشٌ لَيْلَةً بِمَكَّةَ فَقَالَ بَعْضُهُمْ إِذَا أَصْبَحَ فَأَثْبِتُوهُ بِالْوِثَاقِ يُرِيدُونَ النَّبِيَّ صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسلم وَقَالَ بَعْضُهُمْ بَلِ اقْتُلُوهُ وَقَالَ بَعْضُهُمْ بَلْ أَخْرِجُوهُ فَأطلع الله عز وَجل نَبِيَّهُ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى ذَلِكَ فَبَاتَ عَليّ عَلَى فِرَاشِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ تِلْكَ اللَّيْلَةَ وَخَرَجَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَتَّى لَحِقَ بِالْغَارِ وَبَاتَ الْمُشْرِكُونَ يَحْرُسُونَ عَلِيًّا يَحْسَبُونَهُ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَلَمَّا أَصْبحُوا ثَارُوا إِلَيْهِ فَلَمَّا رَأَوْا عَلِيًّا رَدَّ اللَّهُ مَكْرَهُمْ فَقَالُوا أَيْنَ صَاحِبُكَ هَذَا قَالَ لَا أَدْرِي فَاقْتَصُّوا أَثَرَهُ فَلَمَّا بَلَغُوا الْجَبَلَ اخْتَلَطَ عَلَيْهِمْ فَصَعِدُوا فِي الْجَبَلَ فَمَرُّوا بِالْغَارِ فَرَأَوْا عَلَى بَابِهِ نَسْجَ الْعَنْكَبُوتِ فَقَالُوا لَوْ دَخَلَ هَاهُنَا لَمْ يَكُنْ نَسْجُ الْعَنْكَبُوتِ عَلَى بَابِهِ فَمَكَثَ فِيهِ ثَلَاثَ لَيَال. رَوَاهُ أَحْمد
اسنادہ ضعیف ، رواہ احمد (1 / 348 ح 3251) * فیہ عثمان الجزری بن عمرو بن ساج : فیہ ضعیف ۔
(ضَعِيف)
ব্যাখ্যা: কুরায়শ নেতারা নবী (সা.) -এর বিরূদ্ধে সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য দারুণ নাদওয়া-তে পরামর্শ সভায় মিলিত হয়েছিল। কথিত আছে যে, শয়তানও শায়খ নাজদীর আকৃতি ধারণ করে সেখানে উপস্থিত হয়েছিল এবং সে-ই নবী (সা.)-কে হত্যা করার পরামর্শ দেয়। এ ব্যাপারে মহান আল্লাহ বলেন, (وَ اِذۡ یَمۡکُرُ بِکَ الَّذِیۡنَ کَفَرُوۡا لِیُثۡبِتُوۡکَ اَوۡ یَقۡتُلُوۡکَ اَوۡ یُخۡرِجُوۡکَ) “আর সেই ঘটনাও স্মরণ যখন কাফিররা আপনাকে নিয়ে ষড়যন্ত্র করল যে, তারা আপনাকে বন্দি করে রাখবে অথবা আপনাকে নিহত করে রাখবে অথবা আপনাকে দেশান্তর করে দিবে”- (সূরা আল আনফাল ৮: ৩০)। হাদীসে এ বিষয়ের প্রতি ইঙ্গিত আছে।
(فَرَأَوْا عَلَى بَابِهِ نَسْجَ الْعَنْكَبُوتِ) অর্থাৎ তারা যখন গুহার মধ্যে যাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করল তখন তারা তার মুখে মাকড়সার বাসা দেখতে পেল। এটা দেখে তারা মন্তব্য করল যে, তারা যদি এখানে থাকত তবে এর দরজায় মাকড়সা জাল বাধলো কিভাবে? বলা হয়ে থাকে যে, যখন নবী (সা.) গুহার ভেতরে প্রবেশ করেন। তখন আল্লাহ দুটি কবুতরকে পাঠিয়ে দেন। তারা তার নিচে ডিম পাড়ে। আর মাকড়সা সেখানে জাল তৈরি করে। বর্ণিত আছে, যে গর্তের উপরে উঠল, তারা যদি নিচের দিকে তাকাত তবে তাদেরকে দেখে ফেলত। এ দেখে আবূ বাকর (রাঃ) ভয় পেয়ে যান। তখন নবী (সা.) বলেন, হে আবূ বাকর! দু’জনের ব্যাপারে তোমার ধারণা কি, তৃতীয় জন হিসেবে তো আল্লাহ আছেন। আল্লাহ গুহা থেকে তাদের চোখকে অন্ধ করে দেন। ফলে তারা গুহার চারপাশে ঘুরতে লাগল কিন্তু তারা তাদেরকে দেখতে পেল না। অবশেষে তারা সেখান থেকে চলে গেল। (তুহফাতুল আহওয়াযী ৮ম খণ্ড, হা. ৩০৬৪, মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ - মু'জিযার বর্ণনা
৫৯৩৫-[৬৮] আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, খায়বার বিজয় হওয়ার পর রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে (ভাজা) বকরি হাদিয়্যাহূস্বরূপ পেশ করা হলো তাতে বিষ ছিল। তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) নির্দেশ দিলেন, এখানে যত ইয়াহুদী আছে, সকলকে আমার সামনে একত্রিত কর। তারা সকলে একত্রিত হলে রাসূলুল্লাহ (সা.) তাদেরকে উদ্দেশ্য করে বললেন, আমি তোমাদেরকে এক ব্যাপারে প্রশ্ন করব, তোমরা কি আমাকে এ ব্যাপারে সত্য উত্তর দেবে? তারা বলল, হ্যাঁ, হে আবূল কাসিম! অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সা.) তাদেরকে প্রশ্ন করলেন, আচ্ছা তোমাদের পিতা কে? তারা বলল, অমুক। তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, তোমরা মিথ্যা বলছ; বরং তোমাদের পিতা তো অমুক। তখন তারা বলল, আপনি সত্যই বলেছেন এবং সঠিক বলেছেন। রাসূলুল্লাহ (সা.) আবার বললেন, আমি তোমাদেরকে আরো একটি বিষয়ে যদি প্রশ্ন করি, সে বিষয়েও তোমরা কি আমাকে সত্য উত্তর দিবে? তারা বলল, হ্যাঁ, হে আবূল কাসিম! কেননা যদি আমরা আপনাকে মিথ্যা কথা বলি, তাহলে আপনি তো জানতেই পারবেন যেমনটি জানতে পেরেছেন আমাদের পিতার বিষয়ে।
এবার রাসূলুল্লাহ (সা.) তাদেরকে প্রশ্ন করলেন, আচ্ছা, জাহান্নামী কারা? উত্তরে তারা বলল, আমরা স্বল্প সময়ের জন্য জাহান্নামে যাব। অতঃপর আপনারা তাতে আমাদের স্থলাভিষিক্ত হয়ে থাকবেন। তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, দূর হও! তোমরাই সেখানে থাকবে। আল্লাহর শপথ! আমরা কখনো জাহান্নামে তোমাদের স্থলাভিষিক্ত হব না। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সা.) তাদেরকে বললেন, আমি যদি তোমাদেরকে আরো একটি কথা প্রশ্ন করি, তাহলে তোমরা কি আমাকে সত্য উত্তর দেবে? তারা বলল, হ্যাঁ, হে আবূল কাসিম! এবার রাসূলুল্লাহ (সা.) প্রশ্ন করলেন, আচ্ছা বল দেখি! তোমরা কি এ বকরির মাংসে বিষ মিশিয়েছিলে? তারা (নির্দ্বিধায়) বলল, হ্যাঁ। নবী (সা.) প্রশ্ন করলেন, কিসে তোমাদেরকে এমন করতে উদ্বুদ্ধ করল? উত্তরে তারা বলল, আপনি যদি মিথ্যাবাদী হন, তাহলে আমরা আপনা হতে রেহাই পাব। আর আপনি যদি সত্যবাদী হয়ে থাকেন, তাহলে বিষ আপনার কোনই ক্ষতি করবে না। (বুখারী)
اَلْفصْلُ الثَّالِثُ (بَاب فِي المعجزا)
وَعَن أبي هُرَيْرَة أَنه قَالَ لَمَّا فُتِحَتْ خَيْبَرُ أُهْدِيَتْ لِرَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ شَاةٌ فِيهَا سُمٌّ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اجْمَعُوا لي من كَانَ هَا هُنَا من الْيَهُود فَجمعُوا لَهُ فَقَالَ لَهُمْ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنِّي سَائِلُكُمْ عَنْ شَيْءٍ فَهَلْ أَنْتُمْ صادقي عَنهُ فَقَالُوا نَعَمْ يَا أَبَا الْقَاسِمِ فَقَالَ لَهُمْ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ أَبُوكُمْ قَالُوا فلَان فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَذبْتُمْ بل أبوكم فلَان فَقَالُوا صدقت وبررت قَالَ: «هَلْ أَنْتُمْ مُصَدِّقِيَّ عَنْ شَيْءٍ إِنْ سَأَلْتُكُمْ عَنْهُ» قَالُوا نَعَمْ يَا أَبَا الْقَاسِمِ وَإِنْ كَذَبْنَاكَ عَرَفْتَ كَمَا عَرَفْتَهُ فِي أَبِينَا قَالَ لَهُمْ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ أَهْلُ النَّارِ قَالُوا نَكُونُ فِيهَا يَسِيرًا ثمَّ تخلفوننا فِيهَا فَقَالَ لَهُمْ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اخْسَئُوا فِيهَا وَاللَّهِ لَا نَخْلُفُكُمْ فِيهَا أبدا ثمَّ قَالَ لَهُم فَهَلْ أَنْتُمْ مُصَدِّقِيَّ عَنْ شَيْءٍ إِنْ سَأَلْتُكُمْ عَنهُ قَالُوا نَعَمْ يَا أَبَا الْقَاسِمِ قَالَ: «هَلْ جَعَلْتُمْ فِي هَذِه الشَّاة سما» . قَالُوا نعم فَقَالَ مَا حملكم على ذَلِك فَقَالُوا أردنَا إِن كنت كذابا نستريح مِنْك وَإِن كنت نَبيا لم يَضرك. رَوَاهُ البُخَارِيّ
رواہ البخاری (3169) ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যা: (نَعَمْ يَا أَبَا الْقَاسِمِ) “হ্যাঁ, হে আবূল কাসিম!" রাসূল (সা.) -কে সম্মোধন করার ইয়াহূদীদের একটি বিশেষ পদ্ধতি ছিল এটি। ঐ সকল হতভাগারা রাসূল (সা.) -কে মুহাম্মাদ নামে সম্বোধন করত না। কেননা এ বরকতময় নাম তাওরাত ও ইঞ্জীল কিতাবে সুপ্রসিদ্ধ ও উল্লেখিত ছিল। মুহাম্মাদ (সা.) যে সত্য নবী তার একটা সুস্পষ্ট প্রমাণ ছিল। অতএব পক্ষপাত ও শক্রতার ভিত্তিতে তাদের মনঃপুত হত না যে, তারা তাদের মুখে ঐ নামের প্রকাশ করবে, যা স্বয়ং তাদের আসমানী কিতাবসমূহের দৃষ্টিতে শেষ যামানার নবীর সত্যতার নিদর্শন ছিল। (মাযাহিরে হাক ৭ম খণ্ড, ১৬৬ পৃষ্ঠা)
(ثمَّ تخلفوننا فِيهَا) অর্থ- “অতঃপর আপনারা তাতে আমাদের স্থলাভিষিক্ত হয়ে থাকবেন।” অর্থাৎ ইয়াহুদীরা মুসলিমদেরকে বলত যে, জান্নাতের আসল অধিকারী হচ্ছি আমরাই। যদি আমরা আমাদের কোন মন্দ ‘মলের কারণে জাহান্নামে যাই, তবে সেখানে অল্প কিছু দিনের জন্য শাস্তি ভোগ করতে হবে। যখন আমরা সেই শাস্তির সীমা শেষ করে সেখান থেকে বের হব তখন আমাদের স্থলাভিষিক্ত করে মুসলিমদেরকে সেখানে ফেলা হবে। যেখানে তোমরা মুসলিমরা সর্বদা বসবাস করবে। তাদের কথার প্রতি ইঙ্গিত করে আল কুরআনুল কারীমে বর্ণিত হয়েছে -
(قَالُوۡا لَنۡ تَمَسَّنَا النَّارُ اِلَّاۤ اَیَّامًا مَّعۡدُوۡدٰتٍ) “তারা বলে (ইয়াহূদীরা) আমাদেরকে শুধুমাত্র কয়েকদিন জাহান্নামের আগুন স্পর্শ করবে”- (সূরাহ্ আ-লি ইমরান ২৪, সূরা আল বাকারাহ্ ২ : ৮০)।
এটা যেন ঐ সকল ইয়াহুদীদের ‘আক্বীদাহ্ বিশাস ছিল যা বাস্তবিক অর্থে ভ্রান্তবিশ্বাস ও উদ্ভট ধারণা ছাড়া আর কিছুই ছিল না। তা সত্ত্বেও তারা তাদের বিশ্বাস অনুসারে যে কথাকে তারা শুদ্ধ মনে করত এবং রাসূল (সা.) -এর প্রশ্নের যে উত্তর তাদের কাছে সঠিক ছিল তারা তা বর্ণনা করেছিল।
(لم يَضرك) “তাহলে এ বিষ আপনার কোনই ক্ষতি করবে না।” অর্থাৎ ইয়াহুদীদের উক্ত জবাবের উদ্দেশ্য এই ছিল যে, আমরা তো কেবল পরীক্ষামূলক বকরিতে বিষ মিশিয়ে ছিলাম যে, যদি আপনি আপনার নুবুওয়্যাতের দাবীতে মিথ্যাবাদী হন তবে এ বিষ মিশ্রিত বকরির গোশত খেয়ে ধ্বংস হয়ে যাবেন। আর তখন আমরা আপনার থেকে পরিত্রাণ পাব। আর যদি আপনি আপনার দাবীতে সত্যবাদী হন তবে এ বিষ আপনাকে কোন ক্ষতি করতে পারবে না। তখন আমরা আপনাকে নবী হিসেবে মেনে নিব। এটা ইয়াহুদীদের বক্তব্য ছিল। আর তাদের এ বক্তব্য কতটুকু সঠিক তার ধারণা এভাবে পাওয়া যায় যে, যখন বিষ নবী (সা.) - এর ওপর কোনভাবে প্রতিক্রিয়াশীল হলো না, তখন তারা তাদের কথা অনুসারে রাসূল (সা.) -এর নবী হওয়া সত্য সাব্যস্ত হলো, কিন্তু তারা তার উপর ঈমান তো আনেইনি এবং ইসলাম ও মুসলিমদের শত্রুতা থেকেও ফিরে আসেনি। (মাযাহিরে হাক ৭ম খণ্ড, ১৬৭ পৃষ্ঠা)
পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ - মু'জিযার বর্ণনা
৫৯৩৬-[৬৯] ’আমর ইবনু আখত্বাব আল আনসারী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন রাসূলুল্লাহ (সা.) আমাদেরকে ফজরের সালাত আদায় করিয়ে মিম্বারে উঠে আমাদের সামনে ভাষণ দিলেন, এমনকি ভাষণে সিলসিলা একটানা যুহরের সময় অবধি চলতে থাকল। অতঃপর মিম্বার হতে তিনি নেমে যুহরের সালাত আদায় করালেন। সালাত শেষ করে আবার মিম্বারে উঠে ভাষণ দিলেন, এমনকি ’আসরের সময় হয়ে গেল। তখন মিম্বার হতে নেমে আসরের সালাত আদায় করালেন। আসরের সালাত শেষ করে আবার মিম্বারে উঠে সূর্যাস্ত অবধি ভাষণ দিলেন। ভাষণে তিনি সেই সমস্ত বিষয়গুলো আমাদেরকে জানালেন, কিয়ামত পর্যন্ত যা কিছু সংঘটিত হবে। বর্ণনাকারী বলেন, আমাদের মধ্যে সেই লোকই সর্বাপেক্ষা জ্ঞানী যে সেদিন কথাগুলো বেশি বেশি স্মরণ রেখেছে। (মুসলিম)
اَلْفصْلُ الثَّالِثُ (بَاب فِي المعجزا)
وَعَن عَمْرو بن أخطَب الْأنْصَارِيّ قَالَ صَلَّى بِنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمًا الْفجْر وَصعد الْمِنْبَرِ فَخَطَبَنَا حَتَّى حَضَرَتِ الظُّهْرُ فَنَزَلَ فَصَلَّى ثمَّ صعِد الْمِنْبَر فَخَطَبَنَا حَتَّى حَضَرَتِ الْعَصْرُ ثُمَّ نَزَلَ فَصَلَّى ثُمَّ صَعِدَ الْمِنْبَرَ حَتَّى غَرَبَتِ الشَّمْسُ فَأَخْبَرَنَا بِمَا هُوَ كَائِنٌ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ فَأَعْلَمُنَا أحفظنا. رَوَاهُ مُسلم
رواہ مسلم (25 / 2892)، (7267) ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যা: হাসীসটির বর্ণনাকারী ‘আমর ইবনু আখত্বাব আল আনসারী (রাঃ) তাঁর উপনাম আবূ যায়দ। আর তিনি এ উপনামেই প্রসিদ্ধ ছিলেন। তিনি রাসূল (সা.) -এর সাথে সকল যুদ্ধেই অংশগ্রহণ করেছিলেন। তিনি তার মাথায় হাত বুলিয়ে দেন এবং তাঁর সৌন্দর্যের জন্য দু'আ করেন। কথিত আছে যে, তিনি ১০০ বছরের বেশি জীবিত ছিলেন এবং শেষ পর্যন্ত তার চেহারা খুব তরতাজা ছিল আর তার মাথা ও দাড়ির মাত্র কয়েকটি চুল সাদা হয়েছিল। (মিরকাতুল মাফাতীহ)।
হাদীসে আলোচিত দিন আল্লাহর রাসূল (সা.) যুহর ও ‘আসর সালাতের বিরতি ছাড়া সমস্ত সময় ওয়ায ও নসীহাতের মধ্যে অতিবাহিত করেছেন। আর উক্ত দীর্ঘ সময় ওয়ায ও নাসীহাত চলাকালীন তিনি কিয়ামত পর্যন্ত সংঘটিতব্য সকল বিষয়াবলীর প্রতি ইঙ্গিত করেন। এটা নবী (সা.) -এর বড় একটি মু'জিযা ছিল। তিনি কিয়ামতের এত আগে সংঘটিতব্য সকল বিষয়ের কথা এত পূর্বে জানিয়ে দিয়েছিলেন। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ - মু'জিযার বর্ণনা
৫৯৩৭-[৭০] মা’ন ইবনু আবদুর রহমান (রহিমাহুল্লাহ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আমার পিতাকে বলতে শুনেছি, আমি মাসরূককে প্রশ্ন করলাম, জিনেরা যে রাত্রে মনোনিবেশ সহকারে কুরআন মাজীদ শুনেছিল, এ সংবাদটি নবী (সা.) -কে কে দিয়েছিল? তিনি বললেন, তোমরা পিতা অর্থাৎ ’আবদুল্লাহ ইবনু মাস’ঊদ আমাকে বলেছেন যে, তাকে [নবী (সা.) -কে] একটি গাছ তাদের উপস্থিতির কথা জানিয়েছিল। (বুখারী ও মুসলিম)
اَلْفصْلُ الثَّالِثُ (بَاب فِي المعجزا)
وَعَنْ مَعْنِ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ قَالَ سَمِعْتُ أَبِي قَالَ: سَأَلْتُ مَسْرُوقًا: مَنْ آذَنَ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِالْجِنِّ لَيْلَةَ اسْتَمَعُوا الْقُرْآنَ؟ قَالَ حَدَّثَنِي أَبُوكَ يَعْنِي عَبْدَ اللَّهِ ابْن مَسْعُودٍ أَنَّهُ قَالَ: آذَنَتْ بِهِمْ شَجَرَةٌ. مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ
متفق علیہ ، رواہ البخاری (3859) و مسلم (153 / 450)، (1011) ۔
(مُتَّفق عَلَيْهِ)
ব্যাখ্যা: (آذَنَتْ بِهِمْ شَجَرَةٌ) “একটি গাছ তাদের উপস্থিতির কথা তাঁকে [নবী (সা.)-কে] জানিয়েছিল। এ হাদীস থেকে প্রমাণিত হয় যে, নিশ্চয় আল্লাহ তা'আলা জড় বস্তুর মধ্য থেকে যাকে ইচ্ছা তাকে অন্যদের থেকে আলাদা মর্তবা দান করেন। এর দলীল -
মহান আল্লাহ বলেন: (وَ اِنَّ مِنۡهَا لَمَا یَهۡبِطُ مِنۡ خَشۡیَۃِ اللّٰهِ) “আর তাদের মধ্য থেকে কত্থক আল্লাহর ভয়ে ভীত হয়”- (সূরা আল বাক্বারাহ ২: ৭৪)। তিনি অন্যত্র বলেন- (.... وَ اِنۡ مِّنۡ شَیۡءٍ اِلَّا یُسَبِّحُ بِحَمۡدِهٖ وَ لٰکِنۡ لَّا تَفۡقَهُوۡنَ تَسۡبِیۡحَهُمۡ...)“...আর প্রত্যেকটা জিনিসই তার (আল্লাহর) প্রশংসায় তাসবীহ পাঠ করে, কিন্তু তোমরা তাদের তাসবীহ বোঝ না...”- (সূরাহ্ বানী ইসরাঈল ১৭: ৪৪)। আর নবী (সা.) -এর বাণী, (عَنْ جَابِرِ بْنِ سَمُرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " إِنِّي لأَعْرِفُ حَجَرًا بِمَكَّةَ كَانَ يُسَلِّمُ عَلَىَّ قَبْلَ أَنْ أُبْعَثَ إِنِّي لأَعْرِفُهُ الآنَ) জাবির ইবনু সামুরাহ্ (রাঃ) বলেন, আল্লাহর রাসূল (সা.) বলেছেন: নিশ্চয় আমি এখন মক্কার সেই পাথরকে চিনি যে আমি নবী হওয়ার আগেই আমাকে সালাম করত। [সহীহ: মুসলিম ২-(২২৭৭)]
আর সেই দুই গাছের ঘটনা যারা নবী (সা.) -এর আহ্বানে সাড়া দিয়ে তার কাছে এসেছিল।
আবার খেজুর গাছের কাণ্ডের ক্রন্দনের সেই বিখ্যাত ঘটনা। আবার মূসা আলায়হিস সালাম-এর কাপড় নিয়ে পাথরের পালানোর সময়ের ঘটনা। (শারহুন নাবাবী হা, ৪৫০)
পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ - মু'জিযার বর্ণনা
৫৯৩৮-[৭১] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার আমরা মক্কাহ্ এবং মদীনার মাঝামাঝি স্থানে ’উমার (রাঃ)-এর সাথে ছিলাম, তখন আমরা নতুন চাঁদ দেখতে চেষ্টা করি। আমি ছিলাম তীক্ষ্ণ দৃষ্টিসম্পন্ন লোক। অতএব আমি চাঁদ দেখে ফেললাম। আর আমি ব্যতীত অন্য কেউই চাঁদ দেখতে পেয়েছে বলে দাবি করেনি। আমি ’উমার (রাঃ)-কে বললাম, আপনি কি চাঁদ দেখছেন না? কিন্তু তিনি তা দেখতে পাচ্ছিলেন না। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর ’উমার (রাঃ) বললেন, শীঘ্রই আমি আমার বিছানায় শুয়ে শুয়ে তা দেখব। অতঃপর ’উমার (রাঃ) বদর যুদ্ধের ঘটনাবলী বর্ণনা করতে লাগলেন এবং বললেন, যুদ্ধের একদিন আগে রাসূলুল্লাহ (সা.) আমাদেরকে ঐ সমস্ত স্থানগুলো দেখিয়ে দিলেন, যে যে স্থানে কাফিরদের লাশ পড়ে থাকবে। তিনি বললেন, ইনশা-আল্ল-হ আগামীকাল এ জায়গা অমুক (কাফির)-এর লাশ পড়বে। ইনশাআল্ল-হ আগামীকাল এ স্থানে অমুকের লাশ পড়বে। উমার (রাঃ) বলেন, সেই মহান সত্তার শপথ! যিনি তাকে সত্য সহকারে প্রেরণ করেছেন; যে সকল স্থান রাসূলুল্লাহ (সা.) নির্দিষ্ট করেছিলেন, ঐ স্থান হতে একটুখানিও এদিক-সেদিক সরে পড়েনি।
(বর্ণনাকারী বলেন,) অতঃপর লাশগুলোকে একটি (অনাবাদ) কূপের মাঝে একটির উপর অপরটিকে নিক্ষেপ করা হলো এরপর রাসূলুল্লাহ (সা.) কূপটির কাছে এসে বললেন, হে অমুকের পুত্র অমুক! হে অমুকের পুত্র অমুক! আল্লাহ ও তাঁর রাসূল তোমাদেরকে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তোমরা কি তা ঠিক ঠিক পেয়েছ? তবে আমার আল্লাহ আমাকে যা ওয়াদা দিয়েছেন, আমি অবশ্য তা ঠিক ঠিকভাবে পেয়েছি। তখন ’উমার (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি কিভাবে এমন দেহসমূহের সাথে কথা বলছেন, যাদের মধ্যে কোন প্রাণ নেই। তিনি বললেন, আমি তাদেরকে যা বলছি, তোমরা তা তাদের চেয়ে বেশি শুনছ না, অবশ্য তারা আমার কথার কোন উত্তর দিতে সক্ষম নয়। (মুসলিম)
اَلْفصْلُ الثَّالِثُ (بَاب فِي المعجزا)
وَعَنْ أَنَسٍ قَالَ كُنَّا مَعَ عُمَرَ بَيْنَ مَكَّةَ وَالْمَدِينَةِ فَتَرَاءَيْنَا الْهِلَالَ وَكُنْتُ رَجُلًا حَدِيدَ الْبَصَرِ فَرَأَيْتُهُ وَلَيْسَ أَحَدٌ يَزْعُمُ أَنَّهُ رَآهُ غَيْرِي قَالَ فجعلتُ أقولُ لعُمر أما ترَاهُ فَجعل لَا يَرَاهُ قَالَ يَقُولُ عُمَرُ سَأَرَاهُ وَأَنَا مُسْتَلْقٍ عَلَى فِرَاشِي ثُمَّ أَنْشَأَ يُحَدِّثُنَا عَنْ أَهْلِ بدر فَقَالَ إِنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يُرِينَا مَصَارِعَ أَهْلِ بَدْرٍ بِالْأَمْسِ يَقُولُ هَذَا مَصْرَعُ فُلَانٍ غَدًا إِنْ شَاءَ الله قَالَ فَقَالَ عمر فوالذي بَعثه بِالْحَقِّ مَا أخطئوا الْحُدُود الَّتِي حد رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم قَالَ فَجُعِلُوا فِي بِئْرٍ بَعْضُهُمْ عَلَى بَعْضٍ فَانْطَلَقَ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَتَّى انْتَهَى إِلَيْهِمْ فَقَالَ يَا فُلَانَ بْنَ فُلَانٍ وَيَا فُلَانَ بْنَ فُلَانٍ هَلْ وَجَدْتُمْ مَا وَعَدَكُمُ اللَّهُ وَرَسُولُهُ حَقًّا فَإِنِّي قَدْ وَجَدْتُ مَا وَعَدَني الله حَقًا قَالَ عُمَرُ يَا رَسُولَ اللَّهِ كَيْفَ تُكَلِّمُ أَجْسَادًا لَا أَرْوَاحَ فِيهَا قَالَ مَا أَنْتُمْ بِأَسْمَعَ لِمَا أَقُولُ مِنْهُمْ غَيْرَ أَنَّهُمْ لَا يَسْتَطِيعُونَ أَن يَردُّوا عليَّ شَيْئا . رَوَاهُ مُسلم
رواہ مسلم (76 / 2873)، (7222) ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যা: (سَأَرَاهُ وَأَنَا مُسْتَلْقٍ عَلَى فِرَاشِي) “আমি অচিরেই আমার বিছানায় শুয়ে তা দেখব।” এ বাক্য দ্বারা মূলত ‘উমার (রাঃ) উক্ত চাঁদ দেখার জন্য অধিক চেষ্টা করার বিষয়টিকে অপ্রয়োজনীয় হওয়ার দিকে ইঙ্গিত করেছেন। তাঁর উদ্দেশ্য ছিল এই যে, যে সকল লোক নিজ চোখে চাঁদ দেখেছে তাদের সাক্ষ্যের উপর বর্ণনা সাব্যস্ত হয়ে যাবে। অথবা আমাকে স্বচক্ষে নতুন চাঁদ দেখতেই হবে। তাই কিছুদিন পর অথবা আগামী দিন যখন চাঁদ বড় ও উজ্জ্বল হয়ে যাবে এবং সহজেই দৃষ্টিগোচর হবে তখন দেখে নেব। এখন যেহেতু চাঁদ দেখা যাচ্ছে না তখন তাকে দেখার জন্য অধিক চেষ্টা করার কোন দরকার নেই। (মিরকাতুল মাফাতীহ, মাযাহিরে হাক)
(مَا أَنْتُمْ بِأَسْمَعَ لِمَا أَقُولُ مِنْهُمْ غَيْرَ أَنَّهُمْ لَا يَسْتَطِيعُونَ أَن يَردُّوا عليَّ شَيْئا) “আমি তাদেরকে যা বলছি, তোমরা তা তাদের চেয়ে অধিক শুনছ না, অবশ্য তারা আমার কথার কোন জবাব দিতে সক্ষম নয়।” এখান থেকে প্রমাণিত হয় যে, মৃত ব্যক্তি জীবিতদের কথা শুনতে পারে। এখন প্রশ্ন হলো, সকল মৃত ব্যক্তি কী জীবিত ব্যক্তিদের কথা শুনতে পায়? উত্তর- এ মাস্আলাটি নিয়ে অনেক মতভেদ আছে। তবে সঠিক কথা হলো- এ বিষয়ে সৌদী ফাতাওয়া বোর্ড “আল লাজনাহ্ আদ্ দায়িমাহ্ লিল বুহূস আল ‘ইলমিয়্যাহ্ ওয়াল ইফতা”-কে প্রশ্ন করা হয়েছিল। প্রশ্নকারী বলেন, আমি “আল হাউয়ী লিল ফাতাওয়া” ইমাম সুয়ূত্বী-এর লেখা কিতাবে পড়েছি যে, মৃত ব্যক্তি জীবিত মানুষের কথা শুনতে পায়, তাদের প্রশংসা ও তাদের কথা-বার্তা বুঝতে পারে, অনুরূপভাবে যারা তাদেরকে দেখতে যায় তারা তাদেরকে চিনতে পারে, আর মৃতরা ঘোরাঘুরি করতে পারে, এটা কি ঠিক? আর তিনি কতিপয় হাদীস ও আসারের উপর নির্ভর করেছেন। (আল হাউয়ী লিল ফাতাওয়া ২/১৬৯, ১৭০, ১৭১)।
উত্তর- মূল কথা হলো মৃত ব্যক্তি জীবিতদের কথা শুনতে পায় না, তবে যেসব জায়গায় শোনার কথা উল্লেখ আছে তা ব্যতীত। কারণ মহান আল্লাহ তাঁর নবী (সা.)কে সম্বোধন করে বলেছেন,
(فَاِنَّکَ لَا تُسۡمِعُ الۡمَوۡتٰی) “আর তুমি মৃত ব্যক্তিকে শোনাতে পারবে না”- (সূরা আর রূম ৩০ : ৫২)। তিনি অন্যত্র বলেন- (وَ مَاۤ اَنۡتَ بِمُسۡمِعٍ مَّنۡ فِی الۡقُبُوۡرِ) “তুমি কবরবাসীকে শোনাতে পারবে না”- (সূরাহ আল ফাত্বির ৩৫ : ২২)। “আল লাজনাহ্ আদ্ দায়িমাহ লিল বুহুস আল ইলমিয়্যাহ্ ওয়াল ইফতা" ফাতাওয়া নং ৯২১৬।
‘আল্লামাহ্ আলুসী (রহিমাহুল্লাহ) তাঁর তাফসীর “রূহুল মা'আনী”৬/৪৫৫-তে বলেন: এ বিষয়ে সূক্ষ্ম গবেষণার পরে সত্য কথা হলো মৃত ব্যক্তি একেবারেই শুনতে পায় না, তবে নবী (সা.) থেকে শোনার ব্যাপারে যা উল্লেখ হয়েছে সে জায়গাগুলো ছাড়া। এ মতটি পোষণ করেছেন অনেক বিদ্বান, যেমনটি বলেছেন হাফিয ইবনু রজব আল হাম্বলী। (গুগল পেজ, আল আলুকা আশ শারঈয়াহ, তারিখ ২৭/৩/২০১৪ ইং, প্রশ্নঃ --- )
পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ - মু'জিযার বর্ণনা
৫৯৩৯-[৭২] যায়দ ইবনু আরকাম-এর কন্যা উনায়সাহ্ (রাঃ) তাঁর পিতা যায়দ (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন, একবার যায়দ রোগাগ্রস্ত হয়ে পড়লে নবী (সা.) তাঁকে দেখাশুনা করতে আসলেন। তিনি (সা.) বললেন, এ রোগে তোমার অবস্থা কি হবে? যখন আমার মৃত্যুর পরও তুমি বেঁচে থাকবে এবং সে সময় দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলবে? তিনি বললেন, আমি আল্লাহর কাছে এর প্রতিদানের আশা করে ধৈর্যধারণ করব। নবী (সা.) বললেন, তবে তো তুমি বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশ করবে। উনায়সাহ (রাঃ) বলেন, নবী (সা.) - এর মৃত্যুর পর তিনি দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলেছিলেন। আবার কিছুদিন পর আল্লাহ তা’আলা তাঁকে দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দিলেন। এরপর তিনি ইন্তিকাল করেন।
اَلْفصْلُ الثَّالِثُ (بَاب فِي المعجزا)
وَعَنْ أُنَيْسَةَ بِنْتِ زَيْدِ بْنِ أَرْقَمَ عَنْ أَبِيهَا إِنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ دَخَلَ عَلَى زَيْدٍ يَعُودُهُ مِنْ مَرَضٍ كَانَ بِهِ قَالَ: «لَيْسَ عَلَيْكَ مِنْ مَرَضِكَ بَأْسٌ وَلَكِنْ كَيْفَ لَكَ إِذَا عُمِّرْتَ بَعْدِي فَعَمِيتَ؟» قَالَ: أَحْتَسِبُ وَأَصْبِرُ. قَالَ: «إِذًا تَدْخُلِ الْجَنَّةَ بِغَيْرِ حِسَاب» . قَالَ: فَعَمِيَ بَعْدَ مَا مَاتَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم ثمَّ ردَّ اللَّهُ بَصَره ثمَّ مَاتَ
اسنادہ ضعیف ، رواہ البیھقی فی دلائل النبوۃ (6 / 479) * فیہ ’’ نباتۃ عن حمادۃ عن انیسۃ بنت زید بن ارقم ‘‘ وھن مجھولات و من دونھن ینظر فیہ ۔
(ضَعِيف)
ব্যাখ্যা: রাসূল (সা.) -এর উল্লেখিত ভবিষ্যদ্বাণী অক্ষরে অক্ষরে সত্য প্রমাণিত হয়েছিল। যে অসুখে রাসূল (সা.) এ যায়দ (রাঃ)-কে দেখতে গিয়েছিলেন তা থেকে তিনি সুস্থ হয়ে যান। তারপর রাসূল (সা.) -এর মৃত্যুর পর তার দৃষ্টিশক্তি চলে যায়। তবে রাসূল (সা.) এর ভবিষ্যদ্বাণী করার সময় যায়দ ইবনু আরকাম (রাঃ)-এর সামনে তাঁর দৃষ্টিশক্তি পুনরায় ফিরে আসার কথা উল্লেখ করেননি; তার কারণ হয়তো রাসূল (সা.) -এর এ আকাঙ্ক্ষা ছিল যে, দৃষ্টিশক্তি না থাকা অবস্থায় যায়দ ইবনু আরকম (রাঃ) ধৈর্যধারণ করে বেশি বেশি দুঃখকষ্ট সহ্য করবেন, যার ফলে তিনি অধিক প্রতিদান ও সাওয়াব লাভ করবেন। যদি তিনি পূর্ব থেকেই এ কথা জানতেন যে, তাঁর দৃষ্টিশক্তি চলে যাওয়ার পর পুনরায় ফিরে আসবে তবে তিনি এত অধিক পরিমাণে দুঃখ ও কষ্ট ভোগ করতেন না
এবং তিনি পূর্ণ ধৈর্যধারণের ঐ মর্যাদাও অর্জন করতে পারতেন না যার কারণে তিনি আল্লাহ তা'আলার সাহায্য-সহযোগিতা অর্জন করেছেন। (মাযাহিরে হাক শারহে মিশকাত ৭ম খণ্ড, ১৭০ পৃষ্ঠা)
পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ - মু'জিযার বর্ণনা
৫৯৪০-[৭৩] উসামাহ্ ইবনু যায়দ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: যে লোক আমার ওপর এমন কথা আরোপ করে যা আমি বলিনি, সে যেন জাহান্নামে তার বাসস্থান নির্দিষ্ট করে নেয়। রাসূল (সা.) -এর এই বাণী এ প্রসঙ্গে ছিল যে, একদিন তিনি এক লোককে পাঠালেন, সে সেখানে গিয়ে রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর পক্ষ হতে মিথ্যা কথা বলল। তা জানতে পেরে রাসূলুল্লাহ (সা.) তার ওপর বদূদু’আ করলেন। এরপর তাকে এমতাবস্থায় পাওয়া যায় যে, তার পেট ফাটা এবং মাটি তাকে গ্রহণ করেনি। [হাদীস দুটি ইমাম বায়হাকী (রহিমাহুল্লাহ) “দালায়িলুন্ নুবুওয়্যাহ্” গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন]
اَلْفصْلُ الثَّالِثُ (بَاب فِي المعجزا)
وَعَنْ أُسَامَةَ بْنِ زَيْدٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم: «من تَقول عَليّ مالم أَقُلْ فَلْيَتَبَوَّأْ مَقْعَدَهُ مِنَ النَّارِ» . وَذَلِكَ أَنَّهُ بَعَثَ رَجُلًا فَكَذَبَ عَلَيْهِ فَدَعَا عَلَيْهِ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَوَجَدَ مَيِّتًا وَقد انشقَّ بَطْنه وَلم تقبله الأَرْض. رَوَاهُمَا الْبَيْهَقِيّ فِي دَلَائِل النُّبُوَّة
اسنادہ ضعیف جذا ، رواہ البیھقی فی دلائل النبوۃ (6 / 245) * فیہ الوازع بن نافع العقیلی : متروک ، وقولہ :’’ من تقول علی مالم اقل فلیتبوا مقعدہ من النار ‘‘ صحیح متواتر من طرق أخری ۔
(ضَعِيف)
ব্যাখ্যা: হাদীসের শেষ বাক্যটি এ কথার নিদর্শন যে, ঐ ব্যক্তি চিরদিনের জন্য জাহান্নামী সাব্যস্ত হলো। এ হিসেবে এই বর্ণনা ঐ বক্তব্যের সহায়ক যার সারকথা হলো, ইচ্ছাকৃতভাবে রাসূল (সা.) -এর দিকে কোন মিথ্যা কথা সম্পর্কিতকারী অর্থাৎ জাল হাদীস রচয়িতা কাফির হয়ে যায়। (মাযাহিরে হাক শারহে মিশকাত ৭ম খণ্ড, ১৭১ পৃষ্ঠা)
পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ - মু'জিযার বর্ণনা
৫৯৪১-[৭৪] জাবির (রাঃ) বলেন, একদিন এক লোক রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর কাছে এসে খাদ্য চাইল। তিনি (সা.) তাকে অর্ধ ওয়াসাক পরিমাণ যব দিলেন। তা হতে সে লোক, তার স্ত্রী ও তাদের মেহমান সর্বদা খেতে থাকে। অবশেষে একদিন সে উক্ত যুবগুলো মেপে দেখল। ফলে তা নিঃশেষ হয়ে গেল। অতঃপর সে রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর কাছে এসে ঘটনাটি জানাল। তখন নবী (সা.) বললেন, তুমি যদি তা না মাপতে, তাহলে তোমরা তা হতে সর্বদা খেতে পারতে এবং (আমার দেয়া) যবগুলো আগের মতো থেকে যেত। (মুসলিম)
اَلْفصْلُ الثَّالِثُ (بَاب فِي المعجزا)
وَعَن جابرٍ أنَّ رسولَ الله جَاءَهُ رَجُلٌ يَسْتَطْعِمُهُ فَأَطْعَمَهُ شَطْرَ وَسَقِ شَعِيرٍ فَمَا زَالَ الرَّجُلُ يَأْكُلُ مِنْهُ وَامْرَأَتُهُ وَضَيْفُهُمَا حَتَّى كَالَهُ فَفَنِيَ فَأَتَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: «لَوْ لَمْ تَكِلْهُ لَأَكَلْتُمْ مِنْهُ ولقام لكم» رَوَاهُ مُسلم
رواہ مسلم (9 / 2281)، (5946) ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যা: হাদীসটিতে বরকতের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। কোন মানুষ আল্লাহর ওপর ভরসা করে কাজ করতে থাকলে তাতে বরকত দেয়া হয়। বিশেষ করে আল্লাহর রাসূল (সা.) -এর দেয়া কোন জিনিসে যে বরকত হত তা এই হাদীসটি থেকে স্পষ্ট বুঝা যায়। এ ব্যাপারে কিছু হাদীস লক্ষ্য করা যেতে পারে- সহীহ: বুখারী ৬৪৫১, ২১২৮, ১৪৩৩, সহীহ: মুসলিম ১০২৯, ১৮৫৬, ৬৮২, ২০৫৬, মুসনাদ আহমাদ ২৩৮৫৯। (সম্পাদকীয়)
পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ - মু'জিযার বর্ণনা
৫৯৪২-[৭৫] ’আসিম ইবনু কুলায়ব (রহিমাহুল্লাহ) তাঁর পিতা হতে, তিনি (কুলায়ব) জনৈক আনসারী লোক হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন, একবার আমরা রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর সাথে এক লোকের জানাযায় গেলাম। পরে আমি দেখলাম, রাসূলুল্লাহ (সা.) কবরের কাছে উপস্থিত হয়ে কবর খননকারীকে নির্দেশ দিয়ে বলছেন, (এর কবরকে) পায়ের দিকে ও মাথার দিকে আরো প্রশস্ত কর। অতঃপর তিনি (সা.) দাফন কাজ শেষ করে বাড়িতে ফিরে আসলে মৃত লোকের (বিধবা) স্ত্রীর পক্ষ হতে এক লোক এসে নবী (সা.) -কে খাদ্যের দাওয়াত দিল। রাসূল (সা.) দাওয়াত গ্রহণ করলেন এবং তাঁর সঙ্গে আমরাও খেতে গেলাম। তাঁর সামনে খাদ্য আনা হলে তিনি তাতে হাত রাখলেন, অতঃপর লোকেরাও হাত বাড়িয়ে খেতে শুরু করল। এ সময় আমরা রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর দিকে তাকিয়ে দেখলাম, তিনি মাংসের একটি গ্রাসকে মুখের ভিতরে রেখে নাড়াচাড়া করছেন। অতঃপর তিনি (সা.) বললেন, এমন একটি বকরির মাংস বলে আমি একে অনুভব করছি, যা তার মালিকের অনুমতি ছাড়াই আনা হয়েছে। তখন মহিলাটি [রাসূল (সা.) -এর সন্দেহ জানতে পেরে] একজন লোক পাঠিয়ে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! বকরি ক্রয় করার জন্য আমি এক লোককে নাকী বাজারে পাঠিয়েছিলাম। তা এমন একটি স্থান, যেখানে ভেড়া, বকরি ও দুম্বা ইত্যাদি বিক্রয় হয়; কিন্তু সেখানে কোন ভেড়া-বকরি পাওয়া যায়নি। অতঃপর আমার একজন প্রতিবেশীর কাছে পাঠালাম। সে নিজের জন্য একটি বকরি ক্রয় করেছিল। আমি এই বলে লোকটিকে পাঠিয়েছিলাম, সে যে দামে বকরিটি ক্রয় করেছে, ঠিক সেই দামেই বকরিটি যেন আমার জন্য পাঠিয়ে দেয়, কিন্তু সে ব্যক্তিকে পাওয়া যায়নি। অতঃপর আমি তার স্ত্রীর কাছে লোক পাঠালাম। তখন তার স্ত্রী আমার জন্য বকরিটি পাঠিয়ে দিয়েছে (এটা সেই বকরিরই মাংস)। তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) তাকে বললেন, এ খাদ্যগুলো বন্দিদেরকে খাইয়ে দাও। (আবূ দাউদ ও বায়হাক্বী’র “দালায়িলুন নুবুওয়্যাহ্")
اَلْفصْلُ الثَّالِثُ (بَاب فِي المعجزا)
وَعَنْ عَاصِمِ بْنِ كُلَيْبٍ عَنْ أَبِيهِ عَنْ رَجُلٍ مِنَ الْأَنْصَارِ قَالَ خَرَجْنَا مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي جَنَازَةٍ فَرَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهُوَ عَلَى الْقَبْرِ يُوصِي الْحَافِرَ يَقُولُ: «أَوْسِعْ مِنْ قِبَلِ رِجْلَيْهِ أَوْسِعْ مِنْ قِبَلِ رَأْسِهِ» فَلَمَّا رَجَعَ اسْتَقْبَلَهُ دَاعِيَ امْرَأَتِهِ فَأَجَابَ وَنَحْنُ مَعَه وَجِيء بِالطَّعَامِ فَوَضَعَ يَدَهُ ثُمَّ وَضَعَ الْقَوْمُ فَأَكَلُوا فَنَظَرْنَا إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يلوك لقْمَة فِي فَمه ثُمَّ قَالَ أَجِدُ لَحْمَ شَاةٍ أُخِذَتْ بِغَيْرِ إِذْنِ أَهْلِهَا فَأَرْسَلَتِ الْمَرْأَةُ تَقُولُ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنِّي أَرْسَلْتُ إِلَى النَّقِيعِ وَهُوَ مَوْضِعٌ يُبَاعُ فِيهِ الْغَنَمُ لِيُشْتَرَى لِي شَاةٌ فَلَمْ تُوجَدْ فَأَرْسَلْتُ إِلَى جَارٍ لِي قَدِ اشْتَرَى شَاة أَن أرسل إِلَيّ بهَا بِثَمَنِهَا فَلَمْ يُوجَدْ فَأَرْسَلْتُ إِلَى امْرَأَتِهِ فَأَرْسَلَتْ إِلَيَّ بِهَا فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَطْعِمِي هَذَا الطَّعَامَ الْأَسْرَى» رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ والْبَيْهَقِيُّ فِي دَلَائِلِ النُّبُوَّةِ
اسنادہ صحیح ، رواہ ابوداؤد (3332) [و عنہ] و البیھقی فی دلائل النبوۃ (6 / 310) * قولہ ’’ داعی امراتہ ‘‘ خطا من الناسخ اوغیرہ ، و الصواب :’’ داعی امراۃ ‘‘ کما فی سنن ابی داود وغیرہ ولو صح فمعناہ ’’ ای امراۃ الحافر ‘‘ و لا یدل ھذا اللفظ الی ما ذھب الیہ البریلویۃ و من و افقھم بان المراد منہ ’’ داعی امراۃ المیت ‘‘ و لم یاتو بای دلیل علی تحریفھم ھذا ! ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যা: (فَأَكَلُوا) অর্থ- তারা খেল, মিরকাতের ভাষ্যকার মুল্লা আলী কারী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, মৃতকে উপলক্ষ করে প্রস্তুতকৃত খাবারের ব্যাপারে ফুকাহায়ে কিরামের যে সকল মতামত রয়েছে বাহ্যিক দৃষ্টিতে এ হাদীস তার বিপরীত। যেমন “আল বাযযারিয়্যাহ্” কিতাবে লেখা আছে, মৃতের উত্তরাধিকারীদের পক্ষ থেকে প্রথম দিন তথা মৃত্যুর দিন অথবা তৃতীয় দিন অথবা সপ্তম দিন খানা খাওয়ানো মাকরূহ। তদ্রুপ “আল খুলাসাহ” গ্রন্থে উল্লেখ আছে, তৃতীয় দিন খানার ব্যবস্থা করা এবং মানুষকে উক্ত খাবারের দিকে আহ্বান করা বৈধ নয়।
‘আল্লামাহ যায়লা'ঈ (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, তিনদিন পর্যন্ত শোক পালনের জন্য বসে থাকাতে কোন ক্ষতি নেই। তবে শর্ত হলো নিষিদ্ধ কোন বিষয় যেন সংঘটিত না হয়, যেমন- খাবার প্রস্তুত করা এবং দা'ওয়াত ও যিয়াফাতের ব্যবস্থা করা।
ইবনু হুমাম (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, মৃত ব্যক্তির আত্মীয়স্বজনদের জন্য যিয়াফাতের ব্যবস্থা করা মাকরূহ। আর সকল ফক্বীহ তার কারণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন যে, যিয়াফাত খুশির ক্ষেত্রে বৈধ, শোকের ক্ষেত্রে বৈধ নয়। তিনি আরো বলেন, মৃত্যের জন্য যে খাবার খাওয়ানো হয় তা বিদআতে সায়্যিআহ্। ইমাম আহমাদ ও ইমাম ইবনু হিব্বান (রহিমাহুল্লাহ) সহীহ সনদে উল্লেখ করেছেন-
عَنْ جَرِيرِ بْنِ عَنْدِ اللهِ الْبَجَلِيِّ قَالَ: كُنَّا نَعُدُّ الِا جْتِمَاعَ إِلَى أَهْلِ الْمَيِّتِ وَصَنِيعَةَ الطَّعَامِ بَعْدَ دَفْنِهِ مِنَ النِّيَا حَةِ.
জারীর ইবনু আবদুল্লাহ আল বাজালী (রাঃ) বলেন, দাফনের পর মৃতের ঘরে লোকজন একত্রিত হওয়া এবং মৃতের আত্মীয়স্বজনের পক্ষ থেকে খাবার পরিবেশনকে আমরা মৃতের জন্য বিলাপের অন্তর্ভুক্ত করতাম। (মুসনাদ আহমাদ ৬৯০৫)। (যা শরী'আতে কঠোরভাবে নিষেধ)।
কাযী খান (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, বিপদের দিন যিয়াফাত খাওয়ানো মাকরূহ। কেননা তা হলো দুঃখের দিন। অতএব ঐ দিনে এমন কাজ করা উচিত নয় যাতে আনন্দ প্রকাশ পায়। তবে যদি ফকীরদের খাবার ব্যবস্থা করা হয় তবে তা ভালো। মৃত্যুর পরে তিন দিন খাদ্য খাওয়ানোর ওয়াসিয়াত করা হলে তা বাত্বিল হবে। এটিই সঠিক মত।
(أَرْسَلْتُ إِلَى النَّقِيعِ) নাকী’ লেখা হয় নূন দিয়ে। আর এটা এমন একটা জায়গা যেখানে ছাগল বিক্রি করা হয়। অর্থাৎ- এ বাক্যটি মূলত বাক্যের অংশ নয়; বরং কোন বর্ণনাকারী নাক্বী'-এর বিশ্লেষণ করতে গিয়ে বর্ণনার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করেছেন। আল মুকদ্দিমাহ্ গ্রন্থে এসেছে আন নাক্বী হলো মদীনার পূর্ব দিকের একটি জায়গার নাম। আত্ তাহযীব গ্রন্থে এসেছে, নাকী মদীনাহ্ হতে ‘আক্বীক উপত্যকার দিকে প্রায় বিশ মাইল দূরত্বে অবস্থিত একটি জায়গার নাম। (মিরকাতুল মাফাতীহ)।
(أَطْعِمِي هَذَا الطَّعَامَ الْأَسْرَى) “তুমি এ খাদ্যগুলো বন্দীদেরকে খাইয়ে দাও।” কারণ তারা ফকীর বা দরিদ্র লোক। আল্লামাহ্ ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, তারা ছিল কাফির। খাদ্য হালাল হওয়ার জন্য যখন ছাগলের মালিককে পাওয়া যায়নি, আর সে খাবার নষ্টের ভয়ও ছিল, তাই সে খাদ্য তাদেরকে খাওয়ানোর দরকার হয়ে পড়েছিল। ফলে তিনি তাদেরকে খাওয়ানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন। আর এটি নষ্ট করার কারণে তার উপর ছাগলের মূল্য দেয়া জরূরী ছিল। তাই এ খাবার খাওয়ানো তার থেকে সদাকাহ হলো। (মিরকাতুল মাফাতীহ)