৫৯৩৫

পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ - মু'জিযার বর্ণনা

৫৯৩৫-[৬৮] আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, খায়বার বিজয় হওয়ার পর রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে (ভাজা) বকরি হাদিয়্যাহূস্বরূপ পেশ করা হলো তাতে বিষ ছিল। তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) নির্দেশ দিলেন, এখানে যত ইয়াহুদী আছে, সকলকে আমার সামনে একত্রিত কর। তারা সকলে একত্রিত হলে রাসূলুল্লাহ (সা.) তাদেরকে উদ্দেশ্য করে বললেন, আমি তোমাদেরকে এক ব্যাপারে প্রশ্ন করব, তোমরা কি আমাকে এ ব্যাপারে সত্য উত্তর দেবে? তারা বলল, হ্যাঁ, হে আবূল কাসিম! অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সা.) তাদেরকে প্রশ্ন করলেন, আচ্ছা তোমাদের পিতা কে? তারা বলল, অমুক। তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, তোমরা মিথ্যা বলছ; বরং তোমাদের পিতা তো অমুক। তখন তারা বলল, আপনি সত্যই বলেছেন এবং সঠিক বলেছেন। রাসূলুল্লাহ (সা.) আবার বললেন, আমি তোমাদেরকে আরো একটি বিষয়ে যদি প্রশ্ন করি, সে বিষয়েও তোমরা কি আমাকে সত্য উত্তর দিবে? তারা বলল, হ্যাঁ, হে আবূল কাসিম! কেননা যদি আমরা আপনাকে মিথ্যা কথা বলি, তাহলে আপনি তো জানতেই পারবেন যেমনটি জানতে পেরেছেন আমাদের পিতার বিষয়ে।
এবার রাসূলুল্লাহ (সা.) তাদেরকে প্রশ্ন করলেন, আচ্ছা, জাহান্নামী কারা? উত্তরে তারা বলল, আমরা স্বল্প সময়ের জন্য জাহান্নামে যাব। অতঃপর আপনারা তাতে আমাদের স্থলাভিষিক্ত হয়ে থাকবেন। তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, দূর হও! তোমরাই সেখানে থাকবে। আল্লাহর শপথ! আমরা কখনো জাহান্নামে তোমাদের স্থলাভিষিক্ত হব না। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সা.) তাদেরকে বললেন, আমি যদি তোমাদেরকে আরো একটি কথা প্রশ্ন করি, তাহলে তোমরা কি আমাকে সত্য উত্তর দেবে? তারা বলল, হ্যাঁ, হে আবূল কাসিম! এবার রাসূলুল্লাহ (সা.) প্রশ্ন করলেন, আচ্ছা বল দেখি! তোমরা কি এ বকরির মাংসে বিষ মিশিয়েছিলে? তারা (নির্দ্বিধায়) বলল, হ্যাঁ। নবী (সা.) প্রশ্ন করলেন, কিসে তোমাদেরকে এমন করতে উদ্বুদ্ধ করল? উত্তরে তারা বলল, আপনি যদি মিথ্যাবাদী হন, তাহলে আমরা আপনা হতে রেহাই পাব। আর আপনি যদি সত্যবাদী হয়ে থাকেন, তাহলে বিষ আপনার কোনই ক্ষতি করবে না। (বুখারী)

اَلْفصْلُ الثَّالِثُ (بَاب فِي المعجزا)

وَعَن أبي هُرَيْرَة أَنه قَالَ لَمَّا فُتِحَتْ خَيْبَرُ أُهْدِيَتْ لِرَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ شَاةٌ فِيهَا سُمٌّ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اجْمَعُوا لي من كَانَ هَا هُنَا من الْيَهُود فَجمعُوا لَهُ فَقَالَ لَهُمْ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنِّي سَائِلُكُمْ عَنْ شَيْءٍ فَهَلْ أَنْتُمْ صادقي عَنهُ فَقَالُوا نَعَمْ يَا أَبَا الْقَاسِمِ فَقَالَ لَهُمْ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ أَبُوكُمْ قَالُوا فلَان فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَذبْتُمْ بل أبوكم فلَان فَقَالُوا صدقت وبررت قَالَ: «هَلْ أَنْتُمْ مُصَدِّقِيَّ عَنْ شَيْءٍ إِنْ سَأَلْتُكُمْ عَنْهُ» قَالُوا نَعَمْ يَا أَبَا الْقَاسِمِ وَإِنْ كَذَبْنَاكَ عَرَفْتَ كَمَا عَرَفْتَهُ فِي أَبِينَا قَالَ لَهُمْ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ أَهْلُ النَّارِ قَالُوا نَكُونُ فِيهَا يَسِيرًا ثمَّ تخلفوننا فِيهَا فَقَالَ لَهُمْ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اخْسَئُوا فِيهَا وَاللَّهِ لَا نَخْلُفُكُمْ فِيهَا أبدا ثمَّ قَالَ لَهُم فَهَلْ أَنْتُمْ مُصَدِّقِيَّ عَنْ شَيْءٍ إِنْ سَأَلْتُكُمْ عَنهُ قَالُوا نَعَمْ يَا أَبَا الْقَاسِمِ قَالَ: «هَلْ جَعَلْتُمْ فِي هَذِه الشَّاة سما» . قَالُوا نعم فَقَالَ مَا حملكم على ذَلِك فَقَالُوا أردنَا إِن كنت كذابا نستريح مِنْك وَإِن كنت نَبيا لم يَضرك. رَوَاهُ البُخَارِيّ

رواہ البخاری (3169) ۔
(صَحِيح)

وعن ابي هريرة انه قال لما فتحت خيبر اهديت لرسول الله صلى الله عليه وسلم شاة فيها سم فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم اجمعوا لي من كان ها هنا من اليهود فجمعوا له فقال لهم رسول الله صلى الله عليه وسلم اني ساىلكم عن شيء فهل انتم صادقي عنه فقالوا نعم يا ابا القاسم فقال لهم رسول الله صلى الله عليه وسلم من ابوكم قالوا فلان فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم كذبتم بل ابوكم فلان فقالوا صدقت وبررت قال هل انتم مصدقي عن شيء ان سالتكم عنه قالوا نعم يا ابا القاسم وان كذبناك عرفت كما عرفته في ابينا قال لهم رسول الله صلى الله عليه وسلم من اهل النار قالوا نكون فيها يسيرا ثم تخلفوننا فيها فقال لهم رسول الله صلى الله عليه وسلم اخسىوا فيها والله لا نخلفكم فيها ابدا ثم قال لهم فهل انتم مصدقي عن شيء ان سالتكم عنه قالوا نعم يا ابا القاسم قال هل جعلتم في هذه الشاة سما قالوا نعم فقال ما حملكم على ذلك فقالوا اردنا ان كنت كذابا نستريح منك وان كنت نبيا لم يضرك رواه البخاريرواہ البخاری 3169 ۔صحيح

ব্যাখ্যা: (نَعَمْ يَا أَبَا الْقَاسِمِ) “হ্যাঁ, হে আবূল কাসিম!" রাসূল (সা.) -কে সম্মোধন করার ইয়াহূদীদের একটি বিশেষ পদ্ধতি ছিল এটি। ঐ সকল হতভাগারা রাসূল (সা.) -কে মুহাম্মাদ নামে সম্বোধন করত না। কেননা এ বরকতময় নাম তাওরাত ও ইঞ্জীল কিতাবে সুপ্রসিদ্ধ ও উল্লেখিত ছিল। মুহাম্মাদ (সা.) যে সত্য নবী তার একটা সুস্পষ্ট প্রমাণ ছিল। অতএব পক্ষপাত ও শক্রতার ভিত্তিতে তাদের মনঃপুত হত না যে, তারা তাদের মুখে ঐ নামের প্রকাশ করবে, যা স্বয়ং তাদের আসমানী কিতাবসমূহের দৃষ্টিতে শেষ যামানার নবীর সত্যতার নিদর্শন ছিল। (মাযাহিরে হাক ৭ম খণ্ড, ১৬৬ পৃষ্ঠা)
(ثمَّ تخلفوننا فِيهَا) অর্থ- “অতঃপর আপনারা তাতে আমাদের স্থলাভিষিক্ত হয়ে থাকবেন।” অর্থাৎ ইয়াহুদীরা মুসলিমদেরকে বলত যে, জান্নাতের আসল অধিকারী হচ্ছি আমরাই। যদি আমরা আমাদের কোন মন্দ ‘মলের কারণে জাহান্নামে যাই, তবে সেখানে অল্প কিছু দিনের জন্য শাস্তি ভোগ করতে হবে। যখন আমরা সেই শাস্তির সীমা শেষ করে সেখান থেকে বের হব তখন আমাদের স্থলাভিষিক্ত করে মুসলিমদেরকে সেখানে ফেলা হবে। যেখানে তোমরা মুসলিমরা সর্বদা বসবাস করবে। তাদের কথার প্রতি ইঙ্গিত করে আল কুরআনুল কারীমে বর্ণিত হয়েছে -
(قَالُوۡا لَنۡ تَمَسَّنَا النَّارُ اِلَّاۤ اَیَّامًا مَّعۡدُوۡدٰتٍ) “তারা বলে (ইয়াহূদীরা) আমাদেরকে শুধুমাত্র কয়েকদিন জাহান্নামের আগুন স্পর্শ করবে”- (সূরাহ্ আ-লি ইমরান ২৪, সূরা আল বাকারাহ্ ২ : ৮০)।
এটা যেন ঐ সকল ইয়াহুদীদের ‘আক্বীদাহ্ বিশাস ছিল যা বাস্তবিক অর্থে ভ্রান্তবিশ্বাস ও উদ্ভট ধারণা ছাড়া আর কিছুই ছিল না। তা সত্ত্বেও তারা তাদের বিশ্বাস অনুসারে যে কথাকে তারা শুদ্ধ মনে করত এবং রাসূল (সা.) -এর প্রশ্নের যে উত্তর তাদের কাছে সঠিক ছিল তারা তা বর্ণনা করেছিল।
(لم يَضرك) “তাহলে এ বিষ আপনার কোনই ক্ষতি করবে না।” অর্থাৎ ইয়াহুদীদের উক্ত জবাবের উদ্দেশ্য এই ছিল যে, আমরা তো কেবল পরীক্ষামূলক বকরিতে বিষ মিশিয়ে ছিলাম যে, যদি আপনি আপনার নুবুওয়্যাতের দাবীতে মিথ্যাবাদী হন তবে এ বিষ মিশ্রিত বকরির গোশত খেয়ে ধ্বংস হয়ে যাবেন। আর তখন আমরা আপনার থেকে পরিত্রাণ পাব। আর যদি আপনি আপনার দাবীতে সত্যবাদী হন তবে এ বিষ আপনাকে কোন ক্ষতি করতে পারবে না। তখন আমরা আপনাকে নবী হিসেবে মেনে নিব। এটা ইয়াহুদীদের বক্তব্য ছিল। আর তাদের এ বক্তব্য কতটুকু সঠিক তার ধারণা এভাবে পাওয়া যায় যে, যখন বিষ নবী (সা.) - এর ওপর কোনভাবে প্রতিক্রিয়াশীল হলো না, তখন তারা তাদের কথা অনুসারে রাসূল (সা.) -এর নবী হওয়া সত্য সাব্যস্ত হলো, কিন্তু তারা তার উপর ঈমান তো আনেইনি এবং ইসলাম ও মুসলিমদের শত্রুতা থেকেও ফিরে আসেনি। (মাযাহিরে হাক ৭ম খণ্ড, ১৬৭ পৃষ্ঠা)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৯: চারিত্রিক গুণাবলি ও মর্যাদাসমূহ (كتاب الْفَضَائِل وَالشَّمَائِل)