৫৯৪২

পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ - মু'জিযার বর্ণনা

৫৯৪২-[৭৫] ’আসিম ইবনু কুলায়ব (রহিমাহুল্লাহ) তাঁর পিতা হতে, তিনি (কুলায়ব) জনৈক আনসারী লোক হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন, একবার আমরা রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর সাথে এক লোকের জানাযায় গেলাম। পরে আমি দেখলাম, রাসূলুল্লাহ (সা.) কবরের কাছে উপস্থিত হয়ে কবর খননকারীকে নির্দেশ দিয়ে বলছেন, (এর কবরকে) পায়ের দিকে ও মাথার দিকে আরো প্রশস্ত কর। অতঃপর তিনি (সা.) দাফন কাজ শেষ করে বাড়িতে ফিরে আসলে মৃত লোকের (বিধবা) স্ত্রীর পক্ষ হতে এক লোক এসে নবী (সা.) -কে খাদ্যের দাওয়াত দিল। রাসূল (সা.) দাওয়াত গ্রহণ করলেন এবং তাঁর সঙ্গে আমরাও খেতে গেলাম। তাঁর সামনে খাদ্য আনা হলে তিনি তাতে হাত রাখলেন, অতঃপর লোকেরাও হাত বাড়িয়ে খেতে শুরু করল। এ সময় আমরা রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর দিকে তাকিয়ে দেখলাম, তিনি মাংসের একটি গ্রাসকে মুখের ভিতরে রেখে নাড়াচাড়া করছেন। অতঃপর তিনি (সা.) বললেন, এমন একটি বকরির মাংস বলে আমি একে অনুভব করছি, যা তার মালিকের অনুমতি ছাড়াই আনা হয়েছে। তখন মহিলাটি [রাসূল (সা.) -এর সন্দেহ জানতে পেরে] একজন লোক পাঠিয়ে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! বকরি ক্রয় করার জন্য আমি এক লোককে নাকী বাজারে পাঠিয়েছিলাম। তা এমন একটি স্থান, যেখানে ভেড়া, বকরি ও দুম্বা ইত্যাদি বিক্রয় হয়; কিন্তু সেখানে কোন ভেড়া-বকরি পাওয়া যায়নি। অতঃপর আমার একজন প্রতিবেশীর কাছে পাঠালাম। সে নিজের জন্য একটি বকরি ক্রয় করেছিল। আমি এই বলে লোকটিকে পাঠিয়েছিলাম, সে যে দামে বকরিটি ক্রয় করেছে, ঠিক সেই দামেই বকরিটি যেন আমার জন্য পাঠিয়ে দেয়, কিন্তু সে ব্যক্তিকে পাওয়া যায়নি। অতঃপর আমি তার স্ত্রীর কাছে লোক পাঠালাম। তখন তার স্ত্রী আমার জন্য বকরিটি পাঠিয়ে দিয়েছে (এটা সেই বকরিরই মাংস)। তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) তাকে বললেন, এ খাদ্যগুলো বন্দিদেরকে খাইয়ে দাও। (আবূ দাউদ ও বায়হাক্বী’র “দালায়িলুন নুবুওয়্যাহ্")

اَلْفصْلُ الثَّالِثُ (بَاب فِي المعجزا)

وَعَنْ عَاصِمِ بْنِ كُلَيْبٍ عَنْ أَبِيهِ عَنْ رَجُلٍ مِنَ الْأَنْصَارِ قَالَ خَرَجْنَا مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي جَنَازَةٍ فَرَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهُوَ عَلَى الْقَبْرِ يُوصِي الْحَافِرَ يَقُولُ: «أَوْسِعْ مِنْ قِبَلِ رِجْلَيْهِ أَوْسِعْ مِنْ قِبَلِ رَأْسِهِ» فَلَمَّا رَجَعَ اسْتَقْبَلَهُ دَاعِيَ امْرَأَتِهِ فَأَجَابَ وَنَحْنُ مَعَه وَجِيء بِالطَّعَامِ فَوَضَعَ يَدَهُ ثُمَّ وَضَعَ الْقَوْمُ فَأَكَلُوا فَنَظَرْنَا إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يلوك لقْمَة فِي فَمه ثُمَّ قَالَ أَجِدُ لَحْمَ شَاةٍ أُخِذَتْ بِغَيْرِ إِذْنِ أَهْلِهَا فَأَرْسَلَتِ الْمَرْأَةُ تَقُولُ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنِّي أَرْسَلْتُ إِلَى النَّقِيعِ وَهُوَ مَوْضِعٌ يُبَاعُ فِيهِ الْغَنَمُ لِيُشْتَرَى لِي شَاةٌ فَلَمْ تُوجَدْ فَأَرْسَلْتُ إِلَى جَارٍ لِي قَدِ اشْتَرَى شَاة أَن أرسل إِلَيّ بهَا بِثَمَنِهَا فَلَمْ يُوجَدْ فَأَرْسَلْتُ إِلَى امْرَأَتِهِ فَأَرْسَلَتْ إِلَيَّ بِهَا فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَطْعِمِي هَذَا الطَّعَامَ الْأَسْرَى» رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ والْبَيْهَقِيُّ فِي دَلَائِلِ النُّبُوَّةِ

اسنادہ صحیح ، رواہ ابوداؤد (3332) [و عنہ] و البیھقی فی دلائل النبوۃ (6 / 310) * قولہ ’’ داعی امراتہ ‘‘ خطا من الناسخ اوغیرہ ، و الصواب :’’ داعی امراۃ ‘‘ کما فی سنن ابی داود وغیرہ ولو صح فمعناہ ’’ ای امراۃ الحافر ‘‘ و لا یدل ھذا اللفظ الی ما ذھب الیہ البریلویۃ و من و افقھم بان المراد منہ ’’ داعی امراۃ المیت ‘‘ و لم یاتو بای دلیل علی تحریفھم ھذا ! ۔
(صَحِيح)

وعن عاصم بن كليب عن أبيه عن رجل من الأنصار قال خرجنا مع رسول الله صلى الله عليه وسلم في جنازة فرأيت رسول الله صلى الله عليه وسلم وهو على القبر يوصي الحافر يقول: «أوسع من قبل رجليه أوسع من قبل رأسه» فلما رجع استقبله داعي امرأته فأجاب ونحن معه وجيء بالطعام فوضع يده ثم وضع القوم فأكلوا فنظرنا إلى رسول الله صلى الله عليه وسلم يلوك لقمة في فمه ثم قال أجد لحم شاة أخذت بغير إذن أهلها فأرسلت المرأة تقول يا رسول الله إني أرسلت إلى النقيع وهو موضع يباع فيه الغنم ليشترى لي شاة فلم توجد فأرسلت إلى جار لي قد اشترى شاة أن أرسل إلي بها بثمنها فلم يوجد فأرسلت إلى امرأته فأرسلت إلي بها فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «أطعمي هذا الطعام الأسرى» رواه أبو داود والبيهقي في دلائل النبوة

ব্যাখ্যা: (فَأَكَلُوا) অর্থ- তারা খেল, মিরকাতের ভাষ্যকার মুল্লা আলী কারী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, মৃতকে উপলক্ষ করে প্রস্তুতকৃত খাবারের ব্যাপারে ফুকাহায়ে কিরামের যে সকল মতামত রয়েছে বাহ্যিক দৃষ্টিতে এ হাদীস তার বিপরীত। যেমন “আল বাযযারিয়্যাহ্” কিতাবে লেখা আছে, মৃতের উত্তরাধিকারীদের পক্ষ থেকে প্রথম দিন তথা মৃত্যুর দিন অথবা তৃতীয় দিন অথবা সপ্তম দিন খানা খাওয়ানো মাকরূহ। তদ্রুপ “আল খুলাসাহ” গ্রন্থে উল্লেখ আছে, তৃতীয় দিন খানার ব্যবস্থা করা এবং মানুষকে উক্ত খাবারের দিকে আহ্বান করা বৈধ নয়।
‘আল্লামাহ যায়লা'ঈ (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, তিনদিন পর্যন্ত শোক পালনের জন্য বসে থাকাতে কোন ক্ষতি নেই। তবে শর্ত হলো নিষিদ্ধ কোন বিষয় যেন সংঘটিত না হয়, যেমন- খাবার প্রস্তুত করা এবং দা'ওয়াত ও যিয়াফাতের ব্যবস্থা করা।
ইবনু হুমাম (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, মৃত ব্যক্তির আত্মীয়স্বজনদের জন্য যিয়াফাতের ব্যবস্থা করা মাকরূহ। আর সকল ফক্বীহ তার কারণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন যে, যিয়াফাত খুশির ক্ষেত্রে বৈধ, শোকের ক্ষেত্রে বৈধ নয়। তিনি আরো বলেন, মৃত্যের জন্য যে খাবার খাওয়ানো হয় তা বিদআতে সায়্যিআহ্।  ইমাম আহমাদ ও ইমাম ইবনু হিব্বান (রহিমাহুল্লাহ) সহীহ সনদে উল্লেখ করেছেন-
عَنْ جَرِيرِ بْنِ عَنْدِ اللهِ الْبَجَلِيِّ قَالَ: كُنَّا نَعُدُّ الِا جْتِمَاعَ إِلَى أَهْلِ الْمَيِّتِ وَصَنِيعَةَ الطَّعَامِ بَعْدَ دَفْنِهِ مِنَ النِّيَا حَةِ.
জারীর ইবনু আবদুল্লাহ আল বাজালী (রাঃ) বলেন, দাফনের পর মৃতের ঘরে লোকজন একত্রিত হওয়া এবং মৃতের আত্মীয়স্বজনের পক্ষ থেকে খাবার পরিবেশনকে আমরা মৃতের জন্য বিলাপের অন্তর্ভুক্ত করতাম। (মুসনাদ আহমাদ ৬৯০৫)। (যা শরী'আতে কঠোরভাবে নিষেধ)।
কাযী খান (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, বিপদের দিন যিয়াফাত খাওয়ানো মাকরূহ। কেননা তা হলো দুঃখের দিন। অতএব ঐ দিনে এমন কাজ করা উচিত নয় যাতে আনন্দ প্রকাশ পায়। তবে যদি ফকীরদের খাবার ব্যবস্থা করা হয় তবে তা ভালো। মৃত্যুর পরে তিন দিন খাদ্য খাওয়ানোর ওয়াসিয়াত করা হলে তা বাত্বিল হবে। এটিই সঠিক মত।
(أَرْسَلْتُ إِلَى النَّقِيعِ) নাকী’ লেখা হয় নূন দিয়ে। আর এটা এমন একটা জায়গা যেখানে ছাগল বিক্রি করা হয়। অর্থাৎ- এ বাক্যটি মূলত বাক্যের অংশ নয়; বরং কোন বর্ণনাকারী নাক্বী'-এর বিশ্লেষণ করতে গিয়ে বর্ণনার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করেছেন। আল মুকদ্দিমাহ্ গ্রন্থে এসেছে আন নাক্বী হলো মদীনার পূর্ব দিকের একটি জায়গার নাম। আত্ তাহযীব গ্রন্থে এসেছে, নাকী মদীনাহ্ হতে ‘আক্বীক উপত্যকার দিকে প্রায় বিশ মাইল দূরত্বে অবস্থিত একটি জায়গার নাম। (মিরকাতুল মাফাতীহ)।
(أَطْعِمِي هَذَا الطَّعَامَ الْأَسْرَى) “তুমি এ খাদ্যগুলো বন্দীদেরকে খাইয়ে দাও।” কারণ তারা ফকীর বা দরিদ্র লোক। আল্লামাহ্ ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, তারা ছিল কাফির। খাদ্য হালাল হওয়ার জন্য যখন ছাগলের মালিককে পাওয়া যায়নি, আর সে খাবার নষ্টের ভয়ও ছিল, তাই সে খাদ্য তাদেরকে খাওয়ানোর দরকার হয়ে পড়েছিল। ফলে তিনি তাদেরকে খাওয়ানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন। আর এটি নষ্ট করার কারণে তার উপর ছাগলের মূল্য দেয়া জরূরী ছিল। তাই এ খাবার খাওয়ানো তার থেকে সদাকাহ হলো। (মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৯: চারিত্রিক গুণাবলি ও মর্যাদাসমূহ (كتاب الْفَضَائِل وَالشَّمَائِل)