মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) পর্ব-২৯: চারিত্রিক গুণাবলি ও মর্যাদাসমূহ (كتاب الْفَضَائِل وَالشَّمَائِل)

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - নবীকুল শিরোমণি -এর মর্যাদাসমূহ

রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর মর্যাদা, তার উত্তম গুণাবলি, তার বদান্যতা ও শ্রেষ্ঠত্বের বিস্তারিত বিবরণ গণনা করা ও আয়ত্ব করা সম্ভব নয়, বরং তা গুণে শেষ করা যাবে না। তবে লেখক এখানে রাসূলের মর্যাদা অধ্যায় রচনার উদ্দেশ্য তাঁর মর্যাদা ও ফযীলতের কিছু দিক তুলে ধরেছেন যাতে এগুলোর মাধ্যমে অন্যগুলো উপলব্ধি করা যায়।


৫৭৩৯-[১] আবু হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: আমি আদম আলায়হিস সালাম-এর সন্তানদের প্রত্যেক যুগের উত্তম শ্রেণিতে যুগের পর যুগ স্থানান্তরিত হয়ে এসেছি। সবশেষে ঐ যুগে জন্মগ্রহণ করি, যে যুগে আমি বর্তমানে আছি। (বুখারী)

الفصل الاول (بَابُ فَضَائِلِ سَيِّدِ الْمُرْسَلِينَ)

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «بُعِثْتُ مِنْ خَيْرِ قُرُونِ بَنِي آدَمَ قَرْنًا فَقَرْنًا حَتَّى كُنْتُ من القرنِ الَّذِي كنتُ مِنْهُ» . رَوَاهُ البُخَارِيّ

رواہ البخاری (3557) ۔
(صَحِيح)

عن أبي هريرة قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «بعثت من خير قرون بني آدم قرنا فقرنا حتى كنت من القرن الذي كنت منه» . رواه البخاري

ব্যাখ্যা: (مِنْ خَيْرِ قُرُونِ) “সর্বোত্তম যুগে”; এ হাদীসে সর্বোত্তমের অর্থ এবং পরবর্তী হাদীসে নির্বাচিত হওয়ার অর্থ গোত্র হিসেবে উত্তম ও নির্বাচিত। ধর্মীয় গুণাবলি হিসেবে নয়। বরং অন্যান্য প্রশংসনীয় গুণের ক্ষেত্রে। (قُرُونِ) শব্দটি (قَرْنٌ)-এর বহুবচন। একই সময়ের মানুষকে এক কারন বা এক যুগের মানুষ বলে। রাসূলুল্লাহ (সা.) একটি হাদীসে বলেন, (خَيْرُ النَّاسِ قَرْنِيْ)“সর্বোত্তম মানুষ আমার যুগের মানুষ।” (সহীহুল বুখারী হা, ২৬৫২, ৩৬৫১)

শারহুস সুন্নাহয় লিখেন, এক সময়ে বসবাসকারী মানুষকে এক কালের মানুষ বলা হয়। আবার কারো কারো মতে, (قَرْنٌ) আশি বছর সময়কাল। আবার কারো কারো মতে (قَرْنٌ) চল্লিশ বছরের সময়কাল। আবার কারো কারো মতে (قَرْنٌ) একশত বছরের সময়কাল। তবে এখানে প্রথম মত উদ্দেশ্য।
অতএব হাদীসের মর্ম, আদম সন্তানের এক যুগের পর আরেক যুগে বসবাসকারী মানুষের স্তরের মাঝে আমি যে যুগে এসেছি সেটা সর্বোত্তম।
তাই হাদীসে অন্যদের ওপর রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর মর্যাদা এবং অন্যান্য উম্মাতের ওপর তাঁর উম্মাতের মর্যাদা প্রকাশ পেয়েছে। (মিরকাতুল মাফাতীহ)।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৯: চারিত্রিক গুণাবলি ও মর্যাদাসমূহ (كتاب الْفَضَائِل وَالشَّمَائِل)

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - নবীকুল শিরোমণি -এর মর্যাদাসমূহ

৫৭৪০-[২] ওয়াসিলাহ্ ইবনুল আসক্বা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা.) -কে বলতে শুনেছি, আল্লাহ তা’আলা ইসমাঈল আলায়হিস সালাম-এর বংশধর হতে ’কিনানাহ্’র বংশধরকে নির্বাচন করেছেন। আর কিননার বংশধর হতে কুরায়শ বংশকে নির্বাচন করেছেন। আবার কুরায়শ বংশ হতে বানূ হাশিম পরিবার হতে আমাকেই বাছাই করেছেন। (মুসলিম)

আর তিরমিযীর বর্ণনায় আছে- আল্লাহ তা’আলা ইবরাহীম আলায়হিস সালাম-এর বংশে ইসমাঈল আলায়হিস সালাম-কে এবং ইসমাঈল আলায়হিস সালাম-এর বংশে বানূ কিনানাকে মনোনীত করেছেন।

الفصل الاول (بَابُ فَضَائِلِ سَيِّدِ الْمُرْسَلِينَ)

وَعَنْ وَاثِلَةَ بْنِ الْأَسْقَعِ قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «إِنَّ اللَّهَ اصْطَفَى كِنَانَةَ مِنْ وَلَدِ إِسْمَاعِيلَ وَاصْطَفَى قُرَيْشًا مِنْ كِنَانَةَ وَاصْطَفَى مِنْ قُرَيْشٍ بَنَى هَاشِمٍ وَاصْطَفَانِي مِنْ بَنِي هَاشِمٍ» . رَوَاهُ مُسْلِمٌ وَفِي رِوَايَةٍ لِلتِّرْمِذِيِّ: «إِنَّ اللَّهَ اصْطَفَى مِنْ ولد إِبْرَاهِيم إِسْمَاعِيل وَاصْطفى من ولد إِسْمَاعِيل بني كنَانَة»

رواہ مسلم (1 / 2276)، (5938) و الترمذی (3606) ۔
(صَحِيح)

وعن واثلة بن الأسقع قال: سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول: «إن الله اصطفى كنانة من ولد إسماعيل واصطفى قريشا من كنانة واصطفى من قريش بنى هاشم واصطفاني من بني هاشم» . رواه مسلم وفي رواية للترمذي: «إن الله اصطفى من ولد إبراهيم إسماعيل واصطفى من ولد إسماعيل بني كنانة»

ব্যাখ্যা: (وَاصْطَفَى قُرَيْشًا مِنْ كِنَانَةَ) “কুরায়শকে নির্বাচন করেছি কিনানাহ্ বংশ থেকে”; কিনানাহ হলো নাযর ইবনু কিনানার সন্তানেরা।

রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর বংশ তালিকা:
আবুল কাসিম মুহাম্মাদ ইবনু ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আবদুল মুত্তালিব ইবনু হাশিম ইবনু আবদ মানাফ ইবনু কুসাই ইবনু কিলাব ইবনু মুররাহ্ ইবনু কা'ব ইবনু লুওয়াই ইবনু গালিব ইবনু ফিহর ইবনু মালিক ইবনু নাযর ইবনু খুযায়মাহ্ ইবনু মুদরিকাহ্ ইবনু ইল্‌ইয়াস ইবনু নাযর ইবনু নাযর ইবনু মা'দ ইবনু আদনান।
রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর বংশধর এ পর্যন্তই সহীহ সূত্রে বর্ণিত। আদনান-এর উপরের বংশ তালিকা বিশুদ্ধ সূত্রে বর্ণিত নয়। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৯: চারিত্রিক গুণাবলি ও মর্যাদাসমূহ (كتاب الْفَضَائِل وَالشَّمَائِل)

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - নবীকুল শিরোমণি -এর মর্যাদাসমূহ

৫৭৪১-[৩] আবু হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: কিয়ামতের দিন আমি আদম সন্তানদের নেতা হব। আমিই সকলের আগে কবর হতে উত্থিত হব। সকলের আগে আমিই সুপারিশ করব এবং সর্বপ্রথম আমার শাফা’আত গ্রহণ করা হবে। (মুসলিম)

الفصل الاول (بَابُ فَضَائِلِ سَيِّدِ الْمُرْسَلِينَ)

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: أَنَا سَيِّدُ وَلَدِ آدَمَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَأَوَّلُ مَنْ يَنْشَقُّ عَنْهُ الْقَبْرُ وَأَوَّلُ شَافِعٍ وَأَوَّلُ مُشَفَّعٍ . رَوَاهُ مُسْلِمٌ

رواہ مسلم (3 / 2278)، (5940) ۔
(صَحِيح)

وعن أبي هريرة قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: أنا سيد ولد آدم يوم القيامة وأول من ينشق عنه القبر وأول شافع وأول مشفع . رواه مسلم

ব্যাখ্যা: (أَنَا سَيِّدُ وَلَدِ آدَمَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ) “আমি কিয়ামত দিবসে আদম সন্তানদের সরদার”।
ইমাম নবাবী (রহিমাহুল্লাহ) হারাবী-এর বরাতে বলেন, ‘সাইয়িদ’ বা সরদার হলেন যিনি তার সম্প্রদায়ের মাঝে কল্যাণের দিক থেকে সবার উপরে থাকেন। অন্যরা বলেন, “সাইয়িদ’ হলেন, বিপদাপদে সবাই যার আশ্রয়ে যায় এবং তিনি তাদের বিপদে পাশে দাঁড়ান, তাদের কষ্ট নিজের কাঁধে নেন এবং তাদের বিপদ প্রতিহত করেন।
তবে রাসূলুল্লাহ (সা.) দুনিয়া ও আখিরাত উভয় জগতেই মানবজাতির সরদার। তারপরও কিয়ামত দিবসে সরদার বলার কারণ হলো, কিয়ামত দিবসে তার নেতৃত্ব পূর্ণাঙ্গভাবে প্রকাশ পাবে। সেদিন কেউ তার বিরোধী এবং তার সাথে বিদ্ধেষ পোষণকারী থাকবে না। কিন্তু দুনিয়ায় অনেকেই যেমন কাফিরদের বাদশাহ ও মুশরিকদের নেতারা তার সাথে বিরোধিতা করেছেন। তাই কিয়ামত দিবসের সাথে রাসূলের সরদার হওয়ার সম্পৃক্ততা (لِمَنِ الۡمُلۡکُ الۡیَوۡمَ ؕ لِلّٰهِ الۡوَاحِدِ الۡقَهَّارِ) “আজ রাজত্ব কার? এক প্রবল পরাক্রান্ত আল্লাহর”- (সূরাহ্ আল গাফির ৪০ : ১৬); এই আয়াতেরই মতো। অথচ আল্লাহ তা'আলার রাজত্ব দুনিয়া আখিরাত সর্বব্যাপি।

‘উলামাগণ বলেন, “আমি আদম সন্তানদের সরদার রাসূল (সা.) -এর এ কথা অহংকারবশত ছিল না। বরং সহীহ মুসলিম ছাড়া অন্যান্য মাশহুর হাদীসে অহংকার নাকচের বিষয়টি স্পষ্ট এসেছে। হাদীসে রয়েছে, (أَنَا سَيِّدُ وَلَدِ آدَمَ يَوْمَ ولافخر) “আমি আদম সন্তানদের সরদার, তবে এটা কোন গর্বের বিষয় নয়। তাই এটা বলার দু'টি কারণ হতে পারে:
[এক] রবের নি'আমাত প্রকাশের নির্দেশ পালন; কেননা আল্লাহ তা'আলা বলেন-
(وَ اَمَّا بِنِعۡمَۃِ رَبِّکَ فَحَدِّثۡ) “আর আপনার পালনকর্তার নি'আমাতের কথা প্রকাশ করুন”- (সূরাহ্ আয যুহা- ৯৩ : ১১)।
[দুই] এটা বর্ণনা করা তার জন্য জরুরী; যাতে উম্মাত তাকে চিনতে পারে, তাকে বিশ্বাস করতে পারে, তাঁর কথা অনুযায়ী আমল করতে পারে এবং তাঁকে তাঁর যথাযথ মর্যাদা দিতে পারে।
এ হাদীসটি নবী (সা.) সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি হওয়ার প্রমাণ বহন করে। কেননা আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা'আতের ‘আকীদাহ্ হলো, মানুষ মালাক (ফেরেশতা) থেকে শ্রেষ্ঠ। আর রাসূলুল্লাহ (সা.) মানবের মাঝে শ্রেষ্ঠ। অতএব রাসূল (সা.) সবার শ্রেষ্ঠ। (নাবাবী ব্যাখ্যাগ্রন্থ- ১৫/৩৭, হা. ২২৭৮)

(وَأَوَّلُ مَنْ يَنْشَقُّ عَنْهُ الْقَبْرُ) অর্থাৎ কবর থেকে যাকে সর্বপ্রথম উঠানো হবে এবং হাশরের মাঠে উপস্থিত করা সে আমি। তিরমিযীর বর্ণনায় রয়েছে-
أَنَا أَوَّلُ النَّاسِ خُرُوجًا إِذَا بُعِثُوا وَأَنَا خَطِيبُهُمْ إِذَا وَفَدُوا وَأَنَا مُبَشِّرُهُمْ إِذَا أَيِسُوا لِوَاءُ الْحَمْدِ يَوْمَئِذٍ بِيَدِي وَأَنَا أَكْرَمُ وَلَدِ آدَمَ عَلَى رَبِّي وَلاَ فَخْرَ ‏ “যেদিন লোকেদেরকে উঠানো হবে (কবর হতে কিয়ামতের মাঠে) সেদিন আমিই সর্বপ্রথম আত্মপ্রকাশকারী হব। যখন সকল মানুষ আল্লাহ তা'আলার আদালতে একত্র হবে, তখন আমি তাদের ব্যাপারে বক্তব্য উত্থাপন করব। তারা যখন নিরাশ ও হতাশাগ্রস্ত হবে তখন আমিই তাদের সুখবর প্রদানকারী হর। সেদিন প্রশংসার পতাকা আমার হাতেই থাকবে। আমার প্রতিপালকের নিকট আদম-সন্তানদের মধ্যে আমিই সবচাইতে সম্মানিত, এতে গর্বের কিছু নেই।”
(সুনানুত তিরমিযী, অধ্যায়: রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর মর্যাদা, হা. ৩৬১০)

(وَأَوَّلُ شَافِعٍ وَأَوَّلُ مُشَفَّعٍ) شَفَّعٍ অর্থ: সুপারিশকারী। (مُشَفَّعٍ) অর্থ: যার সুপারিশ গৃহীত। অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ (সা.) প্রথম সুপারিশকারী ব্যক্তি এবং তার সুপারিশই সর্বপ্রথম কবুল করা হবে। (সম্পাদকীয়)।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৯: চারিত্রিক গুণাবলি ও মর্যাদাসমূহ (كتاب الْفَضَائِل وَالشَّمَائِل)

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - নবীকুল শিরোমণি -এর মর্যাদাসমূহ

৫৭৪২-[8] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: কিয়ামতের দিন নবীদের মধ্যে আমার অনুসারীদের সংখ্যা হবে সবচাইতে বেশি। আর আমিই সর্বপ্রথম জান্নাতের দরজা খুলিয়ে নেব। (মুসলিম)

الفصل الاول (بَابُ فَضَائِلِ سَيِّدِ الْمُرْسَلِينَ)

وَعَنْ أَنَسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَنَا أَكْثَرُ الْأَنْبِيَاءِ تَبَعًا يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَأَنَا أَوَّلُ مَنْ يَقْرَعُ بَابَ الجنةِ» . رَوَاهُ مُسلم

رواہ مسلم (331 / 196)، (484) ۔
(صَحِيح)

وعن أنس قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «أنا أكثر الأنبياء تبعا يوم القيامة وأنا أول من يقرع باب الجنة» . رواه مسلم

ব্যাখ্যা: (أَكْثَرُ الْأَنْبِيَاءِ تَبَعًا) অর্থাৎ সর্বাধিক অনুসারী বিশিষ্ট নবী। (تبعٌ) শব্দটি (تَابعٌ) এর বহুবচন। যার অর্থ অনুসারী। অনুসারীদের আধিক্য অনুসৃত ব্যক্তির শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করে। তাই এ হাদীসটিতেও রাসূল (সা.)-এর মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণিত হয়।
(أَوَّلُ مَنْ يَقْرَعُ بَابَ الجنةِ) অর্থাৎ জান্নাতে প্রবেশের জন্য সর্বপ্রথম রাসূল (সা.) কড়া নাড়বেন। তখন জান্নাতের দরজা খোলা হবে এবং তিনিই সর্বপ্রথম জান্নাতে প্রবেশ করবেন। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৯: চারিত্রিক গুণাবলি ও মর্যাদাসমূহ (كتاب الْفَضَائِل وَالشَّمَائِل)

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - নবীকুল শিরোমণি -এর মর্যাদাসমূহ

৫৭৪৩-[৫] উক্ত রাবী [আনাস (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: কিয়ামতের দিন আমি জান্নাতের দরজায় এসে তা খোলার জন্য বলব। তখন তার প্রহরী বলবেন, তুমি কে? বলব, আমি মুহাম্মাদ (সা.)! তখন প্রহরী বলবেন, আপনার সম্পর্কে আমাকে এ নির্দেশ দেয়া হয়েছে যে, আপনার আগে আমি যেন অন্য কারো জন্য এ দরজা না খুলি। (মুসলিম)

الفصل الاول (بَابُ فَضَائِلِ سَيِّدِ الْمُرْسَلِينَ)

وَعَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: آتِي بَابَ الْجَنَّةِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فَأَسْتَفْتِحُ فَيَقُولُ الْخَازِنُ: مَنْ أَنْتَ؟ فَأَقُولُ: مُحَمَّدٌ. فيقولُ: بكَ أمرت أَن لاأفتح لأحد قبلك . رَوَاهُ مُسلم

رواہ مسلم (333 / 197)، (486) ۔
(صَحِيح)

وعنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: آتي باب الجنة يوم القيامة فأستفتح فيقول الخازن: من أنت؟ فأقول: محمد. فيقول: بك أمرت أن لاأفتح لأحد قبلك . رواه مسلم

ব্যাখ্যা: পূর্বের হাদীস ও এ হাদীসের মর্ম এক। অর্থাৎ রাসূল (সা.) জান্নাতের দরজা কড়া নাড়িয়ে জান্নাতে প্রবেশের আবেদন করবেন। রাসূল (সা.) কড়া নাড়লে মালাক (ফেরেশতা) জানতে চাইবেন, আপনি কে? জান্নাতের দরজায় পাহারায় নিয়োজিত থাকবেন একজন মালাক, যার নাম ‘খাযিন’। মালাক-এর প্রশ্নের উত্তরে রাসূল (সা.) তাঁর নাম বলে পরিচয় দিলে খাযিন বলবেন, আপনার ব্যাপারে আমাকে আদেশ প্রদান করা হয়েছে যে, আমি যেন আপনার পূর্বে আর কারো জন্য জান্নাতের দরজা না খুলি।

রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর মর্যাদা বর্ণনায় হাদীসটি স্পষ্ট। কেননা আল্লাহ তাঁর শ্রেষ্ঠ সৃষ্টির জন্য জান্নাত তৈরি করেছেন। আর সেই জান্নাত যার মাধ্যমে উদ্বোধন করা হবে তার শ্রেষ্ঠত্ব সবার উপর, তা একেবারে স্পষ্ট। (সম্পাদকীয়)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৯: চারিত্রিক গুণাবলি ও মর্যাদাসমূহ (كتاب الْفَضَائِل وَالشَّمَائِل)

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - নবীকুল শিরোমণি -এর মর্যাদাসমূহ

৫৭৪৪-[৬] উক্ত রাবী [আনাস (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: আমিই সর্বপ্রথম জান্নাতের জন্য শাফাআতকারী। আমার নুবুওয়্যাত ও রিসালাতকে এত অধিক সংখ্যক লোকে বিশ্বাস করেছে যে, কোন নবীকেই অনুরূপ সংখ্যক লোক বিশ্বাস করেনি এবং এমন নবীও অতিবাহিত হয়েছেন যার উম্মতের মধ্যে শুধু এক লোক তাকে বিশ্বাস করেছে। (মুসলিম)

الفصل الاول (بَابُ فَضَائِلِ سَيِّدِ الْمُرْسَلِينَ)

وَعَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَنَا أَوَّلُ شَفِيعٍ فِي الْجَنَّةِ لَمْ يُصَدَّقْ نَبِيٌّ مِنَ الْأَنْبِيَاءِ مَا صُدِّقْتُ وَإِنَّ مِنَ الْأَنْبِيَاءِ نَبِيًّا مَا صَدَّقَهُ مِنْ أُمَّته إِلَّا رجل وَاحِد» . رَوَاهُ مُسلم

رواہ مسلم (332 / 196)، (485) ۔
(صَحِيح)

وعنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «أنا أول شفيع في الجنة لم يصدق نبي من الأنبياء ما صدقت وإن من الأنبياء نبيا ما صدقه من أمته إلا رجل واحد» . رواه مسلم

ব্যাখ্যা: (لَمْ يُصَدَّقْ نَبِيٌّ مِنَ الْأَنْبِيَاءِ مَا صُدِّقْتُ) “আমাকে যেভাবে সত্যায়ন করা হয়েছে কোন নবীকে সেভাবে সত্যায়ন করা হয়নি।” অর্থাৎ আমাকে সত্য বলে মেনে নেয়ার সংখ্যা বেশি তথা আমার অনুসারী বেশি। অথচ এমনও নবী রয়েছেন যাকে মাত্র একজন বিশ্বাস করেছেন। অন্য হাদীসে রয়েছে, এমনও নবী ছিলেন যাকে কেউ বিশ্বাস করেনি।
عُرِضَتْ عَلَيَّ الأُمَمُ فَجَعَلَ يَمُرُّ النَّبِيُّ مَعَهُ الرَّجُلُ وَالنَّبِيُّ مَعَهُ الرَّجُلاَنِ وَالنَّبِيُّ مَعَهُ الرَّهْطُ وَالنَّبِيُّ لَيْسَ مَعَه“أَحَدٌ وَرَأَيْتُ سَوَادًا كَثِيرًا سَدَّ الأُفُقَ فَرَجَوْتُ أَنْ تَكُونَ أُمَّتِي فَقِيلَ هٰذَا مُوسٰى وَقَوْمُه“ ثُمَّ قِيلَ لِي انْظُرْ فَرَأَيْتُ سَوَادًا كَثِيرًا سَدَّ الأُفُقَ فَقِيلَ لِي انْظُرْ هٰكَذَا وَهٰكَذَا فَرَأَيْتُ سَوَادًا كَثِيرًا سَدَّ الأُفُقَ فَقِيلَ هَؤُلاَءِ أُمَّتُكَ

“আমার সামনে (পূর্ববর্তী নবীগণের) উম্মতদের পেশ করা হল। (আমি দেখলাম) একজন নবী যাচ্ছেন, তাঁর সাথে রয়েছে মাত্র একজন লোক এবং আর একজন নবী যার সঙ্গে রয়েছে দু’জন লোক। অন্য এক নবীকে দেখলাম, তাঁর সঙ্গে আছে একটি দল, আর একজন নবী তাঁর সাথে কেউ নেই। আবার দেখলাম, একটি বিরাট দল যা দিগন্ত জুড়ে আছে। আমি আকাঙ্ক্ষা করলাম যে, এ বিরাট দলটি যদি আমার উম্মাত হত। বলা হলো এটা মূসা ও তাঁর কওম। এরপর আমাকে বলা আপনি লক্ষ্য করে দেখুন, অতঃপর আমি দেখলাম যে, একটি বিশাল জামা'আত দিগন্ত জুড়ে আছে। আবার বলা হলো এ দিকে দেখুন, ওদিকে দেখুন। দেখলাম বিরাট বিরাট দল দিগন্ত জুড়ে ছেয়ে আছে। বলা হলো, ঐ সবই আপনার উম্মাত।” (সহীহুল বুখারী হা. ৫৭৫২)

এ সকল হাদীসের ইঙ্গিত হলো, রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর উম্মাত সকল নবীর চেয়ে বেশি। (সম্পাদকীয়)।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৯: চারিত্রিক গুণাবলি ও মর্যাদাসমূহ (كتاب الْفَضَائِل وَالشَّمَائِل)

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - নবীকুল শিরোমণি -এর মর্যাদাসমূহ

৫৭৪৫-[৭] আবু হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: আমার উপমা ও (আমার পূর্ববর্তী) অন্যান্য নবীদের উপমা হলো এরূপ- যেমন একটি প্রাসাদ, যা সুশোভিত করে তৈরি করা হয়েছে, তবে এক জায়গাতে একটি ইটের জায়গা খালি রাখা হয়েছে। অতঃপর লোকেরা তা ঘুরে দেখে বিস্মিত হয় যে, তার তৈরি কত সুন্দর, কিন্তু একটি ইটের স্থান খালি রয়েছে। তিনি (সা.) বলেন, আমি উক্ত খালি ইটের স্থানটি পূর্ণ করি। আমার দ্বারাই উক্ত প্রাসাদটি সমাপ্ত করা হয়েছে এবং আমার দ্বারাই নবী আগমনের সিলসিলা শেষ করা হয়েছে। অপর এক বর্ণনাতে আছে, আমিই সেই ইট এবং আমিই নবীদের সিলসিলা সমাপ্তকারী। (বুখারী ও মুসলিম)

الفصل الاول (بَابُ فَضَائِلِ سَيِّدِ الْمُرْسَلِينَ)

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَثَلِي وَمَثَلُ الْأَنْبِيَاءِ كَمَثَلِ قَصْرٍ أُحْسِنَ بُنْيَانُهُ تُرِكَ مِنْهُ مَوضِع لبنة فَطَافَ النظَّارُ يتعجَّبونَ من حُسنِ بنيانِه إِلَّا مَوْضِعَ تِلْكَ اللَّبِنَةِ فَكُنْتُ أَنَا سَدَدْتُ مَوْضِعَ اللَّبِنَةِ خُتِمَ بِيَ الْبُنْيَانُ وَخُتِمَ بِي الرُّسُلُ» . وَفِي رِوَايَةٍ: «فَأَنَا اللَّبِنَةُ وَأَنَا خَاتَمُ النَّبِيِّينَ» . مُتَّفق عَلَيْهِ

متفق علیہ ، رواہ البخاری (3534 و الروایۃ الثانیۃ : 3535) و مسلم (21 ، 20 / 2286، (5960) و الروایۃ الثانیۃ 22 / 2286)، (5961) ۔
(مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)

وعن أبي هريرة قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «مثلي ومثل الأنبياء كمثل قصر أحسن بنيانه ترك منه موضع لبنة فطاف النظار يتعجبون من حسن بنيانه إلا موضع تلك اللبنة فكنت أنا سددت موضع اللبنة ختم بي البنيان وختم بي الرسل» . وفي رواية: «فأنا اللبنة وأنا خاتم النبيين» . متفق عليه

ব্যাখ্যা: ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, হাদীসটিতে যে উপমা পেশ করা হয়েছে তা বালাগাত শাস্ত্র মোতাবেক তাশবিহে তামসিলী বা উদাহরণের মাধ্যমে উপমা দেয়া। আল্লাহ তা'আলা যত নবী পাঠিয়েছেন তাদের হিদায়াত, ‘ইলম ও মানুষদেরকে উত্তম চরিত্রের দিকে পথনির্দেশকে একটি দৃঢ় সুন্দর অট্টালিকার সাথে উপমা দেয়া হয়েছে। কিন্তু সেই সুন্দর অট্টালিকায় একটি ইট বাদ পড়ে একটু ত্রুটি রয়ে গেছে। সেই ত্রুটি দূর করে সুন্দরের চূড়ান্ত রূপ দেয়ার জন্য নবী (সা.) -কে পাঠানো হয়েছে। সাথে মূল নির্মাণের ইটের অংশিদারিত্ব রয়েছে। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)

রাসূল (সা.) -কে শেষ নবী হিসেবে প্রেরণ করা হয়েছে, তার পরে আর কোন নবী আসবে না। এটা কুরআন সুন্নাহ ও ইজমায়ে উম্মাতের দ্বারা প্রমাণিত। এটা অস্বীকার করা কুফরী। কেননা রাসূল (সা.) -কে নবী বলে অস্বীকার করার অর্থ, কুরআন ও সুন্নাহর অকাট্য স্পষ্ট অনেক বাণী অস্বীকার করা। বর্ণিত হাদীসেও রাসূল (সা.) -এর শেষ নবী হওয়া এবং তারপরে আর কোন নবী আসার সুযোগ না থাকার বিষয়টি একটি উপমার মাধ্যমে রাসূল (সা.) সুন্দরভাবে বুঝিয়ে দিয়েছেন। (সম্পাদকীয়)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৯: চারিত্রিক গুণাবলি ও মর্যাদাসমূহ (كتاب الْفَضَائِل وَالشَّمَائِل)

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - নবীকুল শিরোমণি -এর মর্যাদাসমূহ

৫৭৪৬-[৮] উক্ত রাবী [আবু হুরায়রাহ্ (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: এমন কোন নবী অতিবাহিত হননি যাকে এরূপ কিছু মু’জিযাহ্ দেয়া হয়নি, যার অনুপাতে লোকেরা ঈমান এনেছে। কিন্তু আমাকে যা দেয়া হয়েছে তা হলো ওয়াহী, যা আল্লাহ তা’আলা আমার কাছে অবতীর্ণ করেছেন। অতএব আমি আশা করি, কিয়ামতের দিন তাদের তুলনায় আমার অনুসারীর সংখ্যা হবে অধিক। (বুখারী ও মুসলিম)

الفصل الاول (بَابُ فَضَائِلِ سَيِّدِ الْمُرْسَلِينَ)

وَعَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَا مِنَ الْأَنْبِيَاءِ مِنْ نَبِيٍّ إِلَّا قَدْ أُعْطِيَ مِنَ الْآيَاتِ مَا مِثْلُهُ آمَنَ عَلَيْهِ الْبَشَرُ وَإِنَّمَا كَانَ الَّذِي أُوتِيتُ وَحْيًا أَوْحَى اللَّهُ إِلَيَّ وَأَرْجُو أَنْ أَكُونَ أَكْثَرَهُمْ تَابِعًا يَوْمَ الْقِيَامَةِ» . مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ

متفق علیہ ، رواہ البخاری (4981) و مسلم (239 / 152)، (385) ۔
(مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)

وعنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «ما من الأنبياء من نبي إلا قد أعطي من الآيات ما مثله آمن عليه البشر وإنما كان الذي أوتيت وحيا أوحى الله إلي وأرجو أن أكون أكثرهم تابعا يوم القيامة» . متفق عليه

ব্যাখ্যা: (الْآيَاتِ) শব্দটি (الْآيَة) শব্দের বহুবচন। এর বিভিন্ন অর্থ রয়েছে। তবে এখানে ‘আয়াত’ শব্দের অর্থ হলো মু'জিযাহ্ বা অলৌকিক কর্ম। ইমাম নবাবী (রহিমাহুল্লাহ) হাদীসটির ব্যাখ্যায় বলেন, হাদীসটির কয়েকটি মর্ম বর্ণনা করা হয়েছে:
[এক] প্রত্যেক নবীকে এই পরিমাণ অলৌকিক নিদর্শন দেয়া হয়েছে, যে পরিমাণ তার পূর্বের নবীকে দেয়া হয়েছে। নবীদের অলৌকিক নিদর্শন দেখে লোকেরা ঈমান এনেছে। কিন্তু আমার অলৌকিক বিষয় ও প্রকাশ্য নিদর্শন হচ্ছে কুরআন। এমন নিদর্শন পূর্বে কাউকে দেয়া হয়নি। এজন্যই বলেন, আমার অনুসারী সর্বাধিক।

[দুই] হাদীসের মর্ম হলো, আমাকে যে নিদর্শন দেয়া হয়েছে তাতে জাদুর সাথে সাদৃশ্যের কোন দিক নেই। অপরদিকে অন্যান্য নবীদের কে যেসব অলৌকিক নিদর্শন দেয়া হয়েছে। এগুলো অনেক সময় জাদুর মাধ্যমে মানুষের খেয়ালে প্রবেশ করিয়ে দেয়া হতে পারে; তাই এগুলোতে সংশয় আসার অবকাশ রয়েছে। যেমন মূসা আলায়হিস সালাম-এর লাঠির অলৌকিকের বিপরীত জাদুর মাধ্যমে রশি দিয়ে সাপের আকৃতি প্রকাশ করেছিল। সাধারণের মাঝে অনেক সময় এগুলো প্রভাব ফেলে দিতে পারে।

[তিন] অন্যান্য নবীর অলৌকিক নিদর্শন তাদের যুগ শেষ হওয়ার সাথে সাথে শেষ হয়ে গেছে। নবীদের সময়ে বিদ্যমান ব্যক্তি ছাড়া অন্যরা তা প্রত্যক্ষ করেনি।
অপরদিকে আমাদের নবী (সা.) -এর চিরস্থায়ী অলৌকিক নিদর্শন কুরআন। এর পদ্ধতি, বালাগাত, অদৃশ্য সম্পর্কে সংবাদ প্রদান, জিন এবং ইনসান সবার একত্র প্রচেষ্ট বা বিচ্ছিন্ন প্রচেষ্টায় তার মতো একটি সূরাহ্ পেশ করতে অক্ষম হওয়া একটি অলৌকিক বিষয়। তারা ভাষা শাস্ত্রে সে যুগের সর্বোচ্চ পণ্ডিত হওয়া সত্ত্বেও কুরআনের সাদৃশ্য পেশ করার চূড়ান্ত প্রচেষ্টার পরও তারা ব্যর্থ হয়েছে।

(وَأَرْجُو أَنْ أَكُونَ أَكْثَرَهُمْ تَابِعًا يَوْمَ الْقِيَامَةِ) “আমি আশা করি কিয়ামতের দিন আমার অনুসারী সর্বাধিক হবে।” রাসূল (সা.) - এই ভবিষ্যদ্বাণীও তাঁর নুবুওয়্যাতের একটি নিদর্শন। কেননা তিনি (সা.) এই সংবাদ সে সময় দিয়েছিলেন যখন মুসলিমের সংখ্যা কম ছিল। তারপর আল্লাহ তা'আলা মুসলিমদের ওপর অনুগ্রহ করেন, তারা বিভিন্ন দেশ জয় করে, আল্লাহ তাদের মাঝে বারাকাত দান করেন, যার ফলে ইসলামের প্রচার, প্রসারতা ও মুসলিমদের পরিসর এ পর্যন্ত এসে দাঁড়ায়। (নাবাবী ব্যাখ্যাগ্রন্থ হা. ২/১৮৬)।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৯: চারিত্রিক গুণাবলি ও মর্যাদাসমূহ (كتاب الْفَضَائِل وَالشَّمَائِل)

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - নবীকুল শিরোমণি -এর মর্যাদাসমূহ

৫৭৪৭-[৯] জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: আমাকে এমন পাঁচটি জিনিস দেয়া হয়েছে, যা আমার আগে আর কাউকে দেয়া হয়নি।
১. আমাকে এক মাসের দূরত্বের মধ্যে রু’ব (ভীতি) দ্বারা সাহায্য করা হয়েছে।
২. আমার জন্য মাটিকে মসজিদ ও পবিত্রতা অর্জনের উপকরণ বানানো হয়েছে। কাজেই আমার উম্মতের কোন লোক যেখানেই সালাতের সময় হয়ে যাবে, সে যেন সেখানেই সালাত আদায় করে নেয়।
৩. আমার জন্য গনীমাতের সম্পদ বৈধ করা হয়েছে, যা ইতোপূর্বে কারো জন্য বৈধ ছিল না।
৪. আমাকে শাফাআতের অধিকার দেয়া হয়েছে।
৫. প্রত্যেক নবী প্রেরিত হয়েছেন কেবলমাত্র আপন আপন গোত্রের জন্য, কিন্তু আমি প্রেরিত হয়েছি সমগ্র মানবজাতির জন্য। (বুখারী ও মুসলিম)

الفصل الاول (بَابُ فَضَائِلِ سَيِّدِ الْمُرْسَلِينَ)

وَعَنْ جَابِرٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: أُعْطِيتُ خَمْسًا لَمْ يُعْطَهُنَّ أَحَدٌ قَبْلِي: نُصِرْتُ بِالرُّعْبِ مَسِيرَةَ شَهْرٍ وَجُعِلَتْ لِيَ الْأَرْضُ مَسْجِدًا وَطَهُورًا فَأَيُّمَا رَجُلٍ مِنْ أُمَّتي أدركتْه الصَّلاةُ فليُصلِّ وأُحلَّتْ لي المغانمُ وَلَمْ تَحِلَّ لِأَحَدٍ قَبْلِي وَأَعْطِيتُ الشَّفَاعَةَ وَكَانَ النَّبِيُّ يُبْعَثُ إِلَى قَوْمِهِ خَاصَّةً وَبُعِثْتُ إِلَى النَّاسِ عامَّةً . مُتَّفق عَلَيْهِ

متفق علیہ ، رواہ البخاری (335) و مسلم (3 / 521)، (1163) ۔
(مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)

وعن جابر قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: أعطيت خمسا لم يعطهن أحد قبلي: نصرت بالرعب مسيرة شهر وجعلت لي الأرض مسجدا وطهورا فأيما رجل من أمتي أدركته الصلاة فليصل وأحلت لي المغانم ولم تحل لأحد قبلي وأعطيت الشفاعة وكان النبي يبعث إلى قومه خاصة وبعثت إلى الناس عامة . متفق عليه

ব্যাখ্যা: হাদীসে রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর পাঁচটি বিশেষ বৈশিষ্ট্যের কথা বলা হয়েছে যা অন্যান্য নবীদের দেয়া হয়নি।

প্রথম বৈশিষ্ট্য: শত্রুর মনে ভীতি। এক মাসের রাস্তার দূরত্ব পর্যন্ত এই ভীতির প্রভাব পড়ে। অর্থাৎ শত্রু অনেক দূরে থাকতেই রাসূল (সা.) এর নাম শুনলে তার মনে ভীতির সঞ্চার হয়ে যায়।

দ্বিতীয় বৈশিষ্ট্য: শারহুস্ সুন্নাহয় বলেন, আহলে কিতাবদেরকে তাদের গীর্জা ও মঠ তথা “ইবাদাতশালা ছাড়া উপাসনা অনুমতি দেয়া হয়নি। তাদের জন্য ‘ইবাদাতশালা ছাড়া উপাসনা আদায় বৈধ নয়। কিন্তু এই উম্মতের ওপর সহজ করার জন্য আল্লাহ তা'আলা যে কোন স্থানে সালাত আদায়ের অনুমতি দিয়েছেন। কেবল অপবিত্র জায়গা, কবর ও বাথরুম ব্যতীত। দ্বিতীয় বৈশিষ্ট্যের আরেকটি অংশ হলো, মাটিকে পবিত্রতার মাধ্যম বানানো। এর দ্বারা উদ্দেশ্য তায়াম্মুম করে পবিত্র হওয়ার সুযোগ দান। কারো কারো মতে, এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, পবিত্র মাটিকে তাদের জন্য সালাতের স্থান বানিয়ে দিয়েছেন। অর্থাৎ যে কোন পবিত্র ভূমিতে তারা সালাত আদায় করতে পারে।

তৃতীয় বৈশিষ্ট্য: গনীমাতের সম্পদ বৈধ হওয়া, যুদ্ধলব্ধ সম্পদ অন্যান্য নবী বা উম্মতের জন্য বৈধ ছিল না।

চতুর্থ বৈশিষ্ট্য: রাসূল (সা.) -কে সুপারিশের অনুমতি দেয়া, এটা বিশেষ সুপারিশ। কিয়ামত দিবসে হাশরের ময়দানের ভয়াবহ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য বিচার কার্য শুরু করার বিশেষ সুপারিশটি কেবল রাসূল (সা.) করবেন। অন্য কেউ এই সুপারিশ করার সাহস করবে না।

পঞ্চম বৈশিষ্ট্য: প্রত্যেক নবী নির্ধারিত জাতি বা বিশেষ গোষ্ঠীর জন্য পাঠানো হয়েছে। পক্ষান্তরে রাসূলুল্লাহ (সা.) -কে পুরো পৃথিবীর জন্য এবং সকল জাতির জন্য পাঠানো হয়েছে। (সম্পাদকীয়)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৯: চারিত্রিক গুণাবলি ও মর্যাদাসমূহ (كتاب الْفَضَائِل وَالشَّمَائِل)

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - নবীকুল শিরোমণি -এর মর্যাদাসমূহ

৫৭৪৮-[১০] আবু হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা.) ও বলেছেন: আমাকে ছয়টি বিষয়ে অন্যান্য নবীদের ওপরে সম্মান দেয়া হয়েছে।
১. আমি জাওয়ামিউল কালিম প্রাপ্ত হয়েছি (অর্থাৎ আমাকে অল্প কথায় ব্যাপক অর্থ ব্যক্ত করার দক্ষতা দেয়া হয়েছে)
২. রু’ব (ভীতি) দ্বারা আমাকে সাহায্য করা হয়েছে।
৩. আমার জন্য গনীমাতের সম্পদ বৈধ করা হয়েছে।
৪. সমগ্র জমিন আমার জন্য মাসজিদ ও পবিত্রতার উপাদান করা হয়েছে।
৫. গোটা বিশ্বের সৃষ্টিজীবের জন্য আমাকে (নবী রূপে) প্রেরণ করা হয়েছে এবং
৬. নবী আগমনের সিলসিলা আমার মাধ্যমেই শেষ করা হয়েছে। (মুসলিম)

الفصل الاول (بَابُ فَضَائِلِ سَيِّدِ الْمُرْسَلِينَ)

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: فُضِّلْتُ عَلَى الْأَنْبِيَاءِ بِسِتٍّ: أُعْطِيتُ جَوَامِعَ الْكَلِمِ وَنُصِرْتُ بِالرُّعْبِ وَأُحِلَّتْ لِيَ الْغَنَائِمُ وَجُعِلَتْ لِيَ الْأَرْضُ مَسْجِدًا وَطَهُورًا وَأُرْسِلْتُ إِلَى الْخَلْقِ كَافَّةً وَخُتِمَ بِيَ النَّبِيُّونَ . رَوَاهُ مُسلم

رواہ مسلم (5 / 523)، (1167) ۔
(صَحِيح)

وعن أبي هريرة أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: فضلت على الأنبياء بست: أعطيت جوامع الكلم ونصرت بالرعب وأحلت لي الغنائم وجعلت لي الأرض مسجدا وطهورا وأرسلت إلى الخلق كافة وختم بي النبيون . رواه مسلم

ব্যাখ্যা: জাবির (রাঃ)-এর হাদীসে পাঁচটি বৈশিষ্ট্যের কথা বলা হয়েছে। আর আবু হুরায়রাহ্ (রাঃ) -এর হাদীসে ছয়টি বৈশিষ্ট্যের কথা বলা হলো। তুরিবিশতী (রহিমাহুল্লাহ)-এর বরাতে মিরক্বাতে লিখেন, এই মতভেদ সাংঘর্ষিকমূলক মতভেদ নয় বরং এটা সময়ের মতভেদ। পাঁচটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখিত হাদীস পূর্বের এবং ছয়ের হাদীস পরের। প্রথমে পাঁচটি বৈশিষ্ট্য দেয়া হয়েছে, তখন রাসূল (সা.) পাঁচটি বৈশিষ্ট্যের খবর দিয়েছেন। পরবর্তীতে আরেকটি বৈশিষ্ট্য দেয়া হলে রাসূল (সা.) ছয়টির সংবাদ দেন। খুলাসাহ্ গ্রন্থকার বলেন, পাঁচ এবং ছয়ের বর্ণনা স্থানের উপযুক্ততা হিসেবে হতে পারে। তাই পূর্বের হাদীস এবং পরের হাদীস মিলে সাতটি বৈশিষ্ট্য হয়।
মিরক্বাতুল মাফাতীহ গ্রন্থকার বলেন, আমি বলি, পূর্বের হাদীস এবং পরের হাদীস মিলে সাতটির বেশি হওয়ার অবকাশ রয়েছে।
(أُعْطِيتُ جَوَامِعَ الْكَلِمِ) “আমাকে দেয়া হয়েছে সারগর্ভ কথা” জাওয়ামিউল কালিম বা সারগর্ভ কথার দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, কম শব্দে বেশি অর্থ প্রকাশ করে এমন কথা বলার যোগ্যতা। শারহুস্ সুন্নাহয় লিখেন, সারগর্ভ কথা দ্বারা উদ্দেশ্য কুরআন। আল্লাহ তা'আলা কুরআনে অল্প শব্দের মধ্যে অনেক অর্থের প্রকাশ ঘটিয়েছেন। (মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৯: চারিত্রিক গুণাবলি ও মর্যাদাসমূহ (كتاب الْفَضَائِل وَالشَّمَائِل)

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - নবীকুল শিরোমণি -এর মর্যাদাসমূহ

৫৭৪৯-[১১] উক্ত রাবী [আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)] হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: আমাকে ব্যাপক অর্থবোধক বাক্যের দক্ষতাসহ প্রেরণ করা হয়েছে এবং ব্যক্তিত্বের প্রভাব দ্বারা সাহায্য করা হয়েছে। একরাত্রে আমি যখন নিদ্রিতাবস্থায় তখন ধনভাণ্ডারের চাবিসমূহ আনা হয়, অতঃপর তা আমার হাতে রেখে দেয়া হয়। (বুখারী ও মুসলিম)

الفصل الاول (بَابُ فَضَائِلِ سَيِّدِ الْمُرْسَلِينَ)

وَعَنْهُ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «بُعِثْتُ بِجَوَامِعِ الْكَلِمِ وَنُصِرْتُ بِالرُّعْبِ وبَينا أَنا نائمٌ رأيتُني أُوتيتُ بِمَفَاتِيحِ خَزَائِنِ الْأَرْضِ فَوُضِعَتْ فِي يَدِي» مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ.

متفق علیہ ، رواہ البخاری (122) و مسلم (6 / 523)، (1171) ۔
(مُتَّفق عَلَيْهِ)

وعنه أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: «بعثت بجوامع الكلم ونصرت بالرعب وبينا أنا نائم رأيتني أوتيت بمفاتيح خزائن الأرض فوضعت في يدي» متفق عليه.

ব্যাখ্যা: ভূমির খাজানা বা সঞ্চিত সম্পদ স্বপ্নে দেখিয়ে বিভিন্ন দেশ বিজয় এবং তাদের সম্পদ মুসলিমদের হস্তগত হওয়ার প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। দেশ বিজয়ের মাধ্যমে দেশের খনিজ সম্পদ যেমন স্বর্ণ, রোপ্য ও অন্যান্য খনিজ পদার্থ মুসলিমদের হস্তগত হয়েছে। আর নবীদের স্বপ্নও ওয়াহী: নবীর এই স্বপ্নের বাস্তব প্রতিফলনও নুবুওয়্যাতের সত্যতার একটি নিদর্শন, যা অক্ষরে অক্ষরে প্রমাণিত হয়েছে। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৯: চারিত্রিক গুণাবলি ও মর্যাদাসমূহ (كتاب الْفَضَائِل وَالشَّمَائِل)

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - নবীকুল শিরোমণি -এর মর্যাদাসমূহ

৫৭৫০-[১২] সাওবান (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: আল্লাহ তা’আলা সমগ্র জমিনকে আমার জন্য সংকুচিত করলেন, তখন আমি তার পূর্ব ও পশ্চিম প্রান্ত পর্যন্ত দেখতে পেলাম। আমার উম্মতের রাজত্ব অদূর ভবিষ্যতে সে পর্যন্ত পৌঁছে যাবে, যে পর্যন্ত জমিন আমার জন্য সংকুচিত করা হয়েছিল। আর আমাকে দুটি ধনভাণ্ডার দেয়া হয়েছে, একটি লাল এবং অপরটি সাদা (অর্থাৎ কায়সার ও কিসরার ধনভাণ্ডার) আর আমি আমার প্রভুর কাছে আমার উম্মতের জন্য এই আবেদন করি যেন তাদেরকে ব্যাপক দুর্ভিক্ষে ধ্বংস না করা হয়। আর তাদের ওপর যেন স্বজাতি ছাড়া অন্য শত্রুকে এমনভাবে চাপিয়ে দেয়া না হয় যে, তারা মুসলিমদের কেন্দ্রস্থলকে গ্রহণ করে নেয়। আমার প্রভু বললেন, হে মুহাম্মাদ! আমি যখন কোন ব্যাপারে ফয়সালা করে ফেলি, তখন তা পরিবর্তন হয় না। আমি তোমাকে তোমার উম্মতের ব্যাপারে এ অঙ্গীকার দিচ্ছি যে, আমি তাদেরকে ব্যাপক দুর্ভিক্ষের দ্বারা ধ্বংস করব না এবং তাদের স্বজাতি ছাড়া শত্রুতা তাদের ওপর এমনভাবে চাপিয়ে দেব না, যাতে তারা মুসলিমদের কেন্দ্রস্থল ধ্বংস করতে পারে। এমনকি দুনিয়ার সকল কাফির বিশ্বের সকল প্রান্ত হতেও একত্রিত হয়ে মুসলিমদের ওপর আক্রমণ চালায়। অবশ্য তারা (মুসলিমরা) একে অপরে লড়াই করবে। একে অন্যকে ধ্বংস করতে থাকবে এবং কয়েদ ও বন্দি করতে থাকবে। (মুসলিম)

الفصل الاول (بَابُ فَضَائِلِ سَيِّدِ الْمُرْسَلِينَ)

وَعَنْ ثَوْبَانَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِنَّ اللَّهَ زَوَى لِيَ الْأَرْضَ فَرَأَيْتُ مَشَارِقَهَا وَمَغَارِبَهَا وَإِنَّ أُمَّتِي سَيَبْلُغُ مُلْكُهَا مَا زُوِيَ لِي مِنْهَا وَأُعْطِيتُ الْكَنْزَيْنِ: الْأَحْمَرَ وَالْأَبْيَضَ وَإِنِّي سَأَلْتُ رَبِّي لِأُمَّتِي أَنْ لَا يُهْلِكَهَا بِسَنَةٍ عَامَّةٍ وَأَنْ لَا يُسَلِّطَ عَلَيْهِمْ عَدُوًّا مِنْ سِوَى أَنْفُسِهِمْ فَيَسْتَبِيحَ بَيْضَتَهُمْ وإنَّ ربِّي قَالَ: يَا محمَّدُ إِذَا قَضَيْتُ قَضَاءً فَإِنَّهُ لَا يُرَدُّ وَإِنِّي أَعْطَيْتُكَ لِأُمَّتِكَ أَنْ لَا أُهْلِكَهُمْ بِسَنَةٍ عَامَّةٍ وأنْ لَا أُسلطَ عَلَيْهِم عدُوّاً سِوَى أَنْفُسِهِمْ فَيَسْتَبِيحَ بَيْضَتَهُمْ وَلَوِ اجْتَمَعَ عَلَيْهِمْ مَنْ بِأَقْطَارِهَا حَتَّى يَكُونَ بَعْضُهُمْ يُهْلِكُ بَعْضًا وَيَسْبِي بَعضهم بَعْضًا . رَوَاهُ مُسلم

رواہ مسلم (19 / 2889)، (7258) ۔
(صَحِيح)

وعن ثوبان قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: إن الله زوى لي الأرض فرأيت مشارقها ومغاربها وإن أمتي سيبلغ ملكها ما زوي لي منها وأعطيت الكنزين: الأحمر والأبيض وإني سألت ربي لأمتي أن لا يهلكها بسنة عامة وأن لا يسلط عليهم عدوا من سوى أنفسهم فيستبيح بيضتهم وإن ربي قال: يا محمد إذا قضيت قضاء فإنه لا يرد وإني أعطيتك لأمتك أن لا أهلكهم بسنة عامة وأن لا أسلط عليهم عدوا سوى أنفسهم فيستبيح بيضتهم ولو اجتمع عليهم من بأقطارها حتى يكون بعضهم يهلك بعضا ويسبي بعضهم بعضا . رواه مسلم

ব্যাখ্যা: (زَوَى لِيَ الْأَرْضَ) “ভূমিকে আমার জন্য সঙ্কুচিত করে দিয়েছেন।” এ হাদীসে কয়েকটি প্রকাশ্য মু'জিযা বা অলৌকিক নিদর্শনের বিবরণ রয়েছে। উলামাগণ বলেন, লাল ও সাদা দুই খাযানা দ্বারা স্বর্ণ ও রোপ্য মুদ্রা বুঝানো হয়েছে। এর দ্বারা ‘ইরাক ও শামের কিসরা-কায়সারের ধনভাণ্ডার উদ্দেশ্য। উম্মাতের রাজত্ব পূর্ব ও পশ্চিম দিকে ব্যাপ্তি লাভ করার প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। বাস্তবেও তাই হয়েছে। ইসলামী রাজত্ব পূর্ব ও পশ্চিমে ব্যাপকতা লাভের তুলনায় উত্তর দক্ষিণে অনেক কম হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সা.) ওয়াহী ছাড়া কিছু বলেন না, অর্থাৎ যা বলেন তা ওয়াহীর ভিত্তিতে বলেন। এসব ভবিষ্যদ্বাণীর বাস্তবতা তারই প্রকাশ। (নাবাবী ব্যাখ্যাগ্রন্থ- অধ্যায়: ফিতান, অনুচ্ছেদ: কিয়ামতের নিদর্শন)

(أَنْ لَا يُهْلِكَهَا بِسَنَةٍ عَامَّةٍ) سَنَةٍ عَامَّةٍ অর্থাৎ এমন দুর্ভিক্ষ যা মুসলিমদের সকল দেশে ছড়িয়ে যায়। মুসলিমের সকল দেশ পরিব্যাপ্তি কোন দুর্ভিক্ষ দিয়ে যেন এই উম্মতকে ধ্বংস না করেন।
(فَيَسْتَبِيحَ بَيْضَتَهُمْ) অর্থাৎ মুসলিমদের শিকড় উপড়ে ফেলে এমন কোন অমুসলিম শত্রু যেন তাদের ওপর চড়াও না হয়। আল্লামাহ্ ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, (بيضة) দ্বারা মুসলিম সমাজ এবং তাদের রাষ্ট্রীয় কেন্দ্র এবং দা'ওয়াতী মিশন। যেমন- (بيضة الدار) বলা হয়, ঘরের মধ্যবর্তী স্থান ও উৎকৃষ্ট জায়গাকে। মর্ম হলো, তাদেরকে সমূলে ধ্বংস করে দিবে এমন কোন শত্রু যেন তাদের ওপর চাপিয়ে না দেয়া হয়। (بيضة) বলার কারণ হলো, (بيضة) বা মূল ডিম ধ্বংস হলে ডিমের স্বাদ ও বাচ্চা সবই নষ্ট হয়ে গেল। মূল ডিম নষ্ট না হলে কোন সময় এক দুটি বাচ্চা বেঁচে যেতে পারে। অতএব উম্মাতের ডিম ধ্বংস করে ফেলা দ্বারা উদ্দেশ্য হলো তাদের পুরো অস্তিত্ব উপড়ে ফেলা।
কাফির শত্রু দ্বারা মুসলিমদেরকে সমূলে ধ্বংস না করার দু'আ আল্লাহ তা'আলা কবুল করেছেন। তাই কাফির শত্রু মুসলিমদের ওপর চড়াও হলে বা যুদ্ধে লিপ্ত হলে তাদেরকে সমূলে ধ্বংস করতে পারবে না। যতক্ষণ না তারা নিজেরা একে অপরকে ধ্বংস করছে। অর্থাৎ মুসলিমরা অন্য শত্রুর দ্বারা সমূলে ধ্বংস হবে না। কিন্তু তারা পরস্পর মারামারিতে লিপ্ত হলে একে অপরকে ধ্বংস করে সমূলে বিনাশ হয়ে যাবে।
سَأَلْتُ اللهُ ثَلَاثًا فَأَعْطَافُي اثْنَتَيْنِ وَمَنَعَنِي وَاحِدَةً. سَأَلْتُدُ أَنْ لَا يُهْلِكَ أُمَّتِي غَرَقًا فَأَعْطَانِيهَا. وَسَأَلْتُهُ أَنْ لَايُسَلِّطَ عَدُوًّامِنْ غَيْرِهِمْ فَأَعْطَانِيهَا، وَسَأَلْتُهُ أَنْ لَايُلْقِيَ بِأْسَهُمْ بَيْنَهُمْ فَرَدَّعَلَيَّ.
 “আমি আল্লাহর কাছে তিনটি জিনিসের আবেদন করেছি। আল্লাহ তা'আলা আমাকে দুটি দিয়েছেন এবং একটি বারণ করেছেন। আমি আবেদন করেছি, আমার উম্মাতকে যেন ডুবিয়ে ধ্বংস না করেন। তিনি তা দিয়েছেন। আমি আবেদন করেছি, তাদের বাহিরের কোন শত্রু যেন তাদের ওপর চাপিয়ে না দেয়া হয়, তিনি তা দিয়েছেন। আমি আবেদন করেছি, তাদের শক্তি পরস্পরের মধ্যে নিক্ষেপ না করেন। তিনি আমার এই প্রার্থনা প্রত্যাখ্যান করেছেন।” (সহীহ ইবনু খুযায়মাহ হা, ১/৬০৩)।

(إِذَا قَضَيْتُ قَضَاءً فَإِنَّهُ لَا يُرَدُّ) “আমি কোন ফয়সালা করে ফেললে তা প্রত্যাখ্যাত হয় না।” মিরক্কাতে উল্লেখ রয়েছে, মুযহির (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, সৃষ্টির ব্যাপারে আল্লাহ তা'আলার ফয়সালা দুই ধরনের। একটি চূড়ান্ত, আরেকটি কোন কর্মের সাথে শর্তযুক্ত। যেমন সে এই কাজ করলে এমন হবে, ঐ কাজ করলে এমন হবে। এ জাতীয় ফয়সালার মাঝে মিটানো এবং বহাল রাখা সাব্যস্ত হয়। এ ব্যাপারেই আল্লাহ তা'আলা তার কিতাবে বলেন, (یَمۡحُوا اللّٰهُ مَا یَشَآءُ وَ یُثۡبِتُ) “আল্লাহ যা ইচ্ছা মিটিয়ে দেন এবং বহাল রাখেন”- (সূরা আর রা'দ ১৩ : ৩৯)।
অপরদিকে চূড়ান্ত ফয়সালা হলো আল্লাহ তা'আলার নির্ধারিত ঐ ফয়সালা যা তিনি বান্দার জন্য অনাদিকাল থেকে নির্ধারণ করে রেখেছেন। এটা কোন অবস্থায়ই পরিবর্তন হয় না। এর বিপরীত হওয়া অসম্ভব। এর বেলায় মিটানো এবং বহাল রাখা সাব্যস্ত হয় না।
এ ব্যাপারে আল্লাহ তা'আলা বলেন-( وَ اللّٰهُ یَحۡکُمُ لَا مُعَقِّبَ لِحُکۡمِهٖ) “আল্লাহ ফয়সালা করেন, তার ফয়সালার পশ্চাতে নিক্ষেপকারী কেউ নেই”- (সূরাহ আর রা'দ ১৩ : ৪১)।
অতএব হাদীসের বাণী “আমি কোন ফয়সালা করে ফেললে তা প্রত্যাখ্যাত হয় না।” তা এই প্রকারের। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
তবে এখানে এ ব্যাখ্যা হওয়ারও সম্ভাবনা রয়েছে যে, আল্লাহ তা'আলা কোন ফয়সালা করলে অন্য কেউ তা প্রত্যাখ্যান বা পরিবর্তন করতে পারে না। তিনি নিজে চাইলে তার ফয়সালা বদলাতে পারেন। যেমন কেউ তাঁর কাছে দু'আ করলে তিনি চাইলে তা পরিবর্তন করে দিতে পারেন।
এটাই হাদীসে বলা হয়েছে- (لاَ يَرُدُّ الْقَضَاءَ إِلاَّ الدُّعَاءُ) “দু'আ ছাড়া কোন কিছু ফয়সালা পরিবর্তন করতে পারে না।” (আল্লাহ ভালো জানেন] (সুনানুত্ তিরমিযী হা. ২১৩৯) (সম্পাদকীয়)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ সাওবান (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৯: চারিত্রিক গুণাবলি ও মর্যাদাসমূহ (كتاب الْفَضَائِل وَالشَّمَائِل)

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - নবীকুল শিরোমণি -এর মর্যাদাসমূহ

৫৭৫১-[১৩] সা’দ (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা.) বানূ মু’আবিয়ার মসজিদের কাছে দিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন তাতে প্রবেশ করে দুই রাকআত সালাত আদায় করলেন এবং তাঁর সাথে আমরাও সালাত আদায় করলাম। সালাত শেষে তিনি (সা.) এক দীর্ঘ দু’আ করলেন, অতঃপর আমাদের দিকে ফিরে বললেন, আমি আমার প্রভুর কাছে তিনটি বিষয়ে ফরিয়াদ করেছিলাম। তিনি আমার দুটি দু’আ কবুল করেছেন এবং একটি প্রত্যাখ্যান করেছেন। ১. আমি আমার প্রভুর কাছে চেয়েছিলাম, ব্যাপক দুর্ভিক্ষ দ্বারা যেন আমার উম্মাতকে ধ্বংস না করা হয়। আমার এ দু’আটি তিনি গ্রহণ করেছেন। ২. আমি আমার প্রভুর কাছে এটাও চেয়েছিলাম যেন আমার উম্মাতকে পানিতে ডুবিয়ে ধ্বংস না করা হয়। তিনি আমার এ দু’আও গ্রহণ করেছেন, এবং ৩. আমি তার কাছে চেয়েছিলাম যেন আমার উম্মতের একে অপরের মধ্যে যুদ্ধবিগ্রহ না হয়। কিন্তু তিনি তা আমাকে দান করেননি। (মুসলিম)

الفصل الاول (بَابُ فَضَائِلِ سَيِّدِ الْمُرْسَلِينَ)

وَعَنْ سَعْدٍ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَرَّ بِمَسْجِدِ بَنِي مُعَاوِيَةَ دَخَلَ فَرَكَعَ فِيهِ رَكْعَتَيْنِ وَصَلَّيْنَا مَعَهُ وَدَعَا رَبَّهُ طَوِيلًا ثُمَّ انْصَرَفَ فَقَالَ: «سَأَلْتُ رَبِّي ثَلَاثًا فَأَعْطَانِي ثِنْتَيْنِ وَمَنَعَنِي وَاحِدَةً سَأَلْتُ رَبِّي أَنْ لَا يُهْلِكَ أُمَّتِي بِالسَّنَةِ فَأَعْطَانِيهَا وَسَأَلْتُهُ أَنْ لَا يُهْلِكَ أُمَّتِي بِالْغَرَقِ فَأَعْطَانِيهَا وَسَأَلْتُهُ أَنْ لَا يَجْعَلَ بأسهم بَينهم فَمَنَعَنِيهَا» . رَوَاهُ مُسلم

رواہ مسلم (20 / 2890)، (7260) ۔
(صَحِيح)

وعن سعد أن رسول الله صلى الله عليه وسلم مر بمسجد بني معاوية دخل فركع فيه ركعتين وصلينا معه ودعا ربه طويلا ثم انصرف فقال: «سألت ربي ثلاثا فأعطاني ثنتين ومنعني واحدة سألت ربي أن لا يهلك أمتي بالسنة فأعطانيها وسألته أن لا يهلك أمتي بالغرق فأعطانيها وسألته أن لا يجعل بأسهم بينهم فمنعنيها» . رواه مسلم

ব্যাখ্যা: (وَدَعَا رَبَّهُ طَوِيلًا) “এবং তিনি তার রবের কাছে দীর্ঘ দু'আ করেন।” অর্থাৎ সালাতের পর অনেক সময় ধরে দু'আ করেন। দীর্ঘ’ শব্দের সম্পর্ক সালাত ও দু'আ উভয়ের। অর্থাৎ সালাত ও দু'আ মিলে দীর্ঘ সময় যায়। একটু পরেই দ্বিতীয় অনুচ্ছেদের প্রথম হাদীস থেকে বিষয়টি স্পষ্ট বুঝা যায়। পূর্বের এবং এই হাদীসের মর্ম।
(أَنْ لَا يُهْلِكَ أُمَّتِي بِالْغَرَقِ) “ডুবিয়ে যেন আমার উম্মতকে ধ্বংস না করেন। যেমন ফির'আওন গোষ্ঠীকে সাগরে ডুবিয়ে মারা হয়েছিল। নূহ আলায়হিস সালাম-এর কওমকে বন্যা দিয়ে ডুবিয়ে মারা হয়েছিল। পানিতে ডুবিয়ে সমূলে বিনাশ থেকে উম্মাতকে রক্ষার জন্য রাসূল (সা.) আল্লাহ তা'আলার কাছে প্রার্থনা করেছেন। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৯: চারিত্রিক গুণাবলি ও মর্যাদাসমূহ (كتاب الْفَضَائِل وَالشَّمَائِل)

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - নবীকুল শিরোমণি -এর মর্যাদাসমূহ

৫৭৫২-[১৪] ’আত্বা ইবনু ইয়াসার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন আমি ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আমর ইবনুল আস (রাঃ) -এর সাথে সাক্ষাৎ করে তাকে বললাম, তাওরাতে রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর যে গুণ বর্ণিত আছে, সে সম্পর্কে আমাকে অবহিত করুন। তিনি বললেন: হ্যা, আল্লাহর শপথ! কুরআনে বর্ণিত তাঁর কিছু গুণাবলিসহ তাওরাতে তাঁর গুণাগুণ বর্ণনা করা হয়েছে- “হে নবী! আমি তোমাকে সাক্ষ্যদাতা, সুসংবাদদাতা, সতর্ককারী হিসেবে এবং উম্মতের রক্ষাকারী হিসেবে প্রেরণ করেছি। তুমি আমার বান্দা ও রাসূল। আমি তোমার নাম দিয়েছি মুতাওয়াক্কিল বা ভরসাকারী, তুমি রূঢ় বা কঠোর হৃদয় এবং বাজারে তর্ককারী ও হৈ-হুল্লোড়কারী নও। তিনি কোন মন্দ দ্বারা মন্দকে প্রতিহত করবেন না, বরং তিনি এদেরকে মার্জনা করে দেবেন এবং মাফ করে দেবেন। আল্লাহ তা’আলা তাকে ততদিন পর্যন্ত দুনিয়া হতে উঠিয়ে নেবেন না, বক্রপথে চালিত জাতিকে যতদিন সৎপথের উপর প্রতিষ্ঠিত করবেন না তাঁর দ্বারা। অর্থাৎ যতক্ষণ লোকজন লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ এর উপর বিশ্বাসী না হয় এবং তার দ্বারা অন্ধ চোখ, বধির কান এবং বদ্ধ অন্তর উন্মুক্ত না হয়ে যায়। (বুখারী)

الفصل الاول (بَابُ فَضَائِلِ سَيِّدِ الْمُرْسَلِينَ)

وَعَنْ عَطَاءِ بْنِ يَسَارٍ قَالَ: لَقِيتُ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ قُلْتُ: أَخْبِرْنِي عَنْ صِفَةُ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي التَّوْرَاةِ قَالَ: أَجَلْ وَاللَّهِ إِنَّهُ لموصوف بِبَعْض صفتِه فِي القرآنِ: (يَا أيُّها النبيُّ إِنَّا أرسلناكَ شَاهدا ومُبشِّراً وَنَذِيرا) وحِرْزا للاُمِّيّينَ أَنْت بعدِي وَرَسُولِي سَمَّيْتُكَ الْمُتَوَكِّلَ لَيْسَ بِفَظٍّ وَلَا غَلِيظٍ وَلَا سَخَّابٍ فِي الْأَسْوَاقِ وَلَا يَدْفَعُ بِالسَّيِّئَةِ السَّيِّئَةَ وَلَكِنْ يَعْفُو وَيَغْفِرُ وَلَنْ يَقْبِضَهُ اللَّهُ حَتَّى يُقِيمَ بِهِ الْمِلَّةَ الْعَوْجَاءَ بِأَنْ يَقُولُوا: لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَيَفْتَحُ بِهَا أَعْيُنًا عُمْيًا وَآذَانًا صُمًّا وَقُلُوبًا غُلْفًا. رَوَاهُ الْبُخَارِيُّ

رواہ البخاری (2125) ۔
(صَحِيح)

وعن عطاء بن يسار قال: لقيت عبد الله بن عمرو بن العاص قلت: أخبرني عن صفة رسول الله صلى الله عليه وسلم في التوراة قال: أجل والله إنه لموصوف ببعض صفته في القرآن: (يا أيها النبي إنا أرسلناك شاهدا ومبشرا ونذيرا) وحرزا للاميين أنت بعدي ورسولي سميتك المتوكل ليس بفظ ولا غليظ ولا سخاب في الأسواق ولا يدفع بالسيئة السيئة ولكن يعفو ويغفر ولن يقبضه الله حتى يقيم به الملة العوجاء بأن يقولوا: لا إله إلا الله ويفتح بها أعينا عميا وآذانا صما وقلوبا غلفا. رواه البخاري

ব্যাখ্যা: (وَاللَّهِ إِنَّهُ لموصوف بِبَعْض صفتِه فِي القرآنِ) অর্থাৎ কুরআনুল কারীমে রাসূলুল্লাহ (সা.) এর যে সকল বৈশিষ্ট্য রয়েছে এগুলোর কিছু কিছু তাওরাতেও রয়েছে। যেমন তাওরাতে রয়েছে (يَا أيُّها النبيُّ إِنَّا أرسلناكَ شَاهدا ومُبشِّراً وَنَذِيرا) “হে নবী। আমি আপনাকে সাক্ষী ও সুসংবাদদাতা এবং সতর্ককারীরূপে প্রেরণ করেছি।”
এভাবে কুরআনে রয়েছে- (یٰۤاَیُّهَا النَّبِیُّ اِنَّاۤ اَرۡسَلۡنٰکَ شَاهِدًا وَّ مُبَشِّرًا وَّ نَذِیۡرًا) “হে নবী! আমি আপনাকে সাক্ষী, সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে প্রেরণ করেছি”- (সূরা আল আহযাব ৩৩ : ৪৫)।
অর্থাৎ উম্মতের ওপর সাক্ষী, আনুগত্যশীলদের জন্য জান্নাতের সুসংবাদ এবং অবাধ্যদের জন্য জাহান্নামের সতর্ককারী।
এভাবে তাওরাতে তার আরো যে গুণ বলা হয়েছে:
(وحِرْزا للاُمِّيّينَ) “উম্মীদের রক্ষাকবচ ও আশ্রয়স্থল।” তাঁর উম্মতের অধিকাংশ নিরক্ষরতার দরুন এ গুণটির উল্লেখ করা হয়েছে। আবার তিনি তাদের মাঝে থাকাবস্থায় তাদের রক্ষাকবচের মতো গুণটির উল্লেখ কুরআনে যেভাবে বলা হয়েছে- (وَ مَا کَانَ اللّٰهُ لِیُعَذِّبَهُمۡ وَ اَنۡتَ فِیۡهِمۡ) “অথচ আল্লাহ কখনোই তাদের ওপর ‘আযাব নাযিল করবেন না যতক্ষণ আপনি তাদের মাঝে অবস্থান করবেন।” (সূরা আল আনফাল ৮ : ৩৩)
(أَنْت بعدِي وَرَسُولِي) “তুমি আমার বান্দা ও রাসূল” রাসূলের এই দুই বৈশিষ্ট্যের উল্লেখ কুরআনের বিভিন্ন জায়গায় এসেছে। যেমন- (هُوَ الَّذِیۡۤ اَرۡسَلَ رَسُوۡلَهٗ بِالۡهُدٰی) “তিনিই প্রেরণ করেছেন আপন রাসূলকে হিদায়াত ও সত্য দীন সহকারে।” এ আয়াতটি সূরাহ্ তাওবাহ্ ৩৩, সূরাহ্ ফাতহ: ২৮, সূরাহ্ সফ: ৯-এ রয়েছে।
(سَمَّيْتُكَ الْمُتَوَكِّلَ) “আমি তোমার নাম মুতাওয়াক্কিল রেখেছি।” মুতাওয়াক্কিল অর্থ: ভরসাকারী। রাসূলকে আল্লাহ তা'আলার ওপর ভরসার নির্দেশ বিভিন্ন আয়াতে দেয়া হয়েছে। যেমন- (وَ تَوَکَّلۡ عَلَی اللّٰهِ) “তুমি আল্লাহর ওপর ভরসা করো।” এটি রয়েছে- সূরাহ্ নিসা: ৮১, সূরা আনফাল: ৬১, সূরাহ্ আহযাব: ৩ ও ৪৮ নম্বর আয়াতে। এভাবে বিভিন্ন আয়াতে বিভিন্ন শব্দে এই নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
(لَيْسَ بِفَظٍّ وَلَا غَلِيظٍ) “তিনি রাগী ও কঠিন নন।” এই মর্মে কুরআনে যেভাবে বলা হয়েছে
(فَبِمَا رَحۡمَۃٍ مِّنَ اللّٰهِ لِنۡتَ لَهُمۡ ۚ وَ لَوۡ کُنۡتَ فَظًّا غَلِیۡظَ الۡقَلۡبِ لَانۡفَضُّوۡا مِنۡ حَوۡلِکَ) “আল্লাহর রহমতেই আপনি তাদের জন্য কোমল হৃদয় হয়েছেন, পক্ষান্তরে আপনি যদি রাগ ও কঠিন হৃদয়ের হতেন তাহলে তারা আপনার কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেত।” (সূরা আ-লি ইমরান ৩ : ১৫৯)।
(وَلَا سَخَّابٍ فِي الْأَسْوَاقِ) “তিনি বাজারে শোরগোলকারী নন।” অর্থাৎ বাজার শোরগোলের জায়গা হওয়ার পরও তিনি বা তার সাহাবীরা শোরগোলে লিপ্ত হন না। বরং বাজারের শোরগোল তাদেরকে আল্লাহ তা'আলার স্মরণ থেকে সরাতে পারে না। এই মর্ম কুরআনে যেভাবে এসেছে
(رِجَالٌ ۙ لَّا تُلۡهِیۡهِمۡ تِجَارَۃٌ وَّ لَا بَیۡعٌ عَنۡ ذِکۡرِ اللّٰهِ) “তারা এমন কতিপয় লোক যাদেরকে ব্যবসা-বাণিজ্য আল্লাহর স্মরণ থেকে উদাসীন করতে পারে না।” (সূরা আন্ নূর ২৪: ৩৭)
(وَلَا يَدْفَعُ بِالسَّيِّئَةِ السَّيِّئَةَ) “মন্দ দিয়ে মন্দকে প্রতিহত করেন না,” কুরআনে এই দিক-নির্দেশ যেভাবে এসেছে- (جَزٰٓؤُا سَیِّئَۃٍ سَیِّئَۃٌ مِّثۡلُهَا ۚ فَمَنۡ عَفَا وَ اَصۡلَحَ فَاَجۡرُهٗ عَلَی اللّٰهِ) “আর মন্দের প্রতিফল তো অনুরূপ মন্দই। তবে যে ক্ষমা করে ও আপোষ করে তার পুরস্কার আল্লাহর কাছে রয়েছে”- (সূরা আরশ শূরা ৪২ : ৪০)।
অন্যত্র রয়েছে- (اِدۡفَعۡ بِالَّتِیۡ هِیَ اَحۡسَنُ) “মন্দের জওয়াবে তাই বলুন, যা উত্তম।” (সূরা আল মু'মিনূন ২৩: ৯৬)
(وَلَكِنْ يَعْفُو وَيَغْفِرُ) “তিনি ক্ষমা করেন, ক্ষমার দু'আ করেন।” অর্থাৎ যে দোষ করে তাকে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখেন এবং তার গোনাহ ক্ষমা করে দেয়ার জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেন। কুরআনে বর্ণিত হয়েছে (فَاعۡفُ عَنۡهُمۡ وَ اصۡفَحۡ) “অতএব, আপনি তাদেরকে ক্ষমা করুন এবং মার্জনা করুন”- (সূরাহ আল মায়িদাহ্ ৫ : ১৩)। অন্যত্র রয়েছে- (فَاعۡفُ عَنۡهُمۡ وَ اسۡتَغۡفِرۡ لَهُمۡ) “আপনি তাদের ক্ষমা করে দিন এবং তাদের জন্য মাগফিরাত কামনা করুন”- (সূরাহ আ-লি ইমরান ৩ : ১৫৯)।
(حَتَّى يُقِيمَ بِهِ الْمِلَّةَ الْعَوْجَاءَ) “যতক্ষণ না বক্র জাতিকে সংশোধন করেছেন। অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ (সা.)- এর মাধ্যমে তাদের বক্রতা সংশোধন করার পরই তাকে ওফাত দিবেন। কাফিরদেরকে তিরস্কার করে তাদের বক্রতা কুরআনে যেভাবে তুলে ধরা হয়েছে –
(الَّذِیۡنَ یَصُدُّوۡنَ عَنۡ سَبِیۡلِ اللّٰهِ وَ یَبۡغُوۡنَهَا عِوَجًا ۚ وَ هُمۡ بِالۡاٰخِرَۃِ کٰفِرُوۡنَ) “যারা আল্লাহর পথে বাধা দিত এবং তাতে বক্রতা অন্বেষণ করত, তারা পরকালের বিষয়েও অবিশ্বাসী ছিল।” (সূরা আল আ'রাফ ৭ : ৪৫)
এই মর্মে কুরআনের কয়েক জায়গায় বর্ণিত হয়েছে। অপরদিকে ইসলামের প্রশংসা করে কুরআনে বলা হয়েছে-
(ذٰلِکَ الدِّیۡنُ الۡقَیِّمُ) “এটিই সুপ্রতিষ্ঠিত বিধান।” (সূরাহ আত্ তাওবাহ্ ৯ : ৩৬)
অন্যত্র বলা হয়েছে- (وَ اِنَّکَ لَتَهۡدِیۡۤ اِلٰی صِرَاطٍ مُّسۡتَقِیۡمٍ) “নিশ্চয় আপনি সরল পথ প্রদর্শন করেন।” (সূরা আরশ শূরা- ৪২: ৫২)
(بِأَنْ يَقُولُوا: لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ) বাক্যটির সম্পর্ক (حَتَّى يُقِيمَ بِهِ) এর সাথে। অর্থাৎ তাদের সংশোধনী ও সঠিক পথ প্রদর্শন এই কালিমাহ্ বলার মাধ্যমে। এতে ইঙ্গিত হলো রাসূল (সা.) -এর মূল কাজ তাওহীদ বা একত্ববাদ প্রতিষ্ঠা। এর মাধ্যমে আল্লাহ তা'আলা তাদের অন্ধ চক্ষু, বধির কান, বন্ধ হৃদয় খুলে দিবেন বলে তাওরাতে রয়েছে। এগুলো কাফিরদের বৈশিষ্ট্য। কুরআনে বলা হয়েছে-
(صُمٌّۢ بُکۡمٌ عُمۡیٌ فَهُمۡ لَا یَعۡقِلُوۡنَ) “তারা বধির, মুক এবং অন্ধ; অতএব তারা কিছুই বুঝে না” (সূরা আল বাকারাহ্ ২ : ১৭১)। এসব নিরক্ষরকে হিদায়াত প্রদর্শন করা রাসূল (সা.) -এর কাজ বলে কুরআনে বর্ণিত হয়েছে। আল্লাহ তা'আলা বলেন –
(هُوَ الَّذِیۡ بَعَثَ فِی الۡاُمِّیّٖنَ رَسُوۡلًا مِّنۡهُمۡ یَتۡلُوۡا عَلَیۡهِمۡ اٰیٰتِهٖ وَ یُزَکِّیۡهِمۡ وَ یُعَلِّمُهُمُ الۡکِتٰبَ وَ الۡحِکۡمَۃَ) “তিনিই নিরক্ষরদের মধ্য থেকে একজন রাসূল প্রেরণ করেছেন, যিনি তাদের কাছে পাঠ করেন তার আয়াতসমূহ, তাদেরকে পবিত্র করেন এবং শিক্ষা দেন কিতাব ও হিকমাত।” (সূরা আল জুমু'আহ্ ৬২ : ২)
এভাবে কুরআনে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য তাওরাতের মধ্যে পাওয়া যায়। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আতা ইবনু ইয়াসার (রহ.)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৯: চারিত্রিক গুণাবলি ও মর্যাদাসমূহ (كتاب الْفَضَائِل وَالشَّمَائِل)

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - নবীকুল শিরোমণি -এর মর্যাদাসমূহ

৫৭৫৩-[১৫] দারিমীও ’আত্বার সূত্রে ইবনু সালাম হতে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। আর আবু হুরায়রাহ্ (রাঃ)-এর হাদীস (نَحْنُ الْآخَرُونَ) “আমরা শেষে আগমনকারী” জুমু’আহ্ অধ্যায়ে উল্লিখিত হয়েছে।

الفصل الاول (بَابُ فَضَائِلِ سَيِّدِ الْمُرْسَلِينَ)

وَكَذَا الدَّارِمِيُّ عَنْ عَطَاءٍ عَنِ ابْنِ سَلَامٍ نَحْوَهُ وَذَكَرَ حَدِيثَ أَبِي هُرَيْرَةَ: «نَحْنُ الْآخَرُونَ» فِي «بَاب الْجُمُعَة»

صحیح ، رواہ الدارمی (1 / 5 ح 6) 0 حدیث ’’ نحن الآخرون ‘‘ تقدم (1354) ۔
(صَحِيح)

وكذا الدارمي عن عطاء عن ابن سلام نحوه وذكر حديث أبي هريرة: «نحن الآخرون» في «باب الجمعة»

ব্যাখ্যা: (نَحْنُ الْآخَرُونَ) অর্থাৎ আমাদের আগমন শেষে। হাদীসের পূর্ণ বাক্যটি (نَحْنُ الْآخَرُونَ السابقون) অর্থাৎ আমরা শেষে আগমনকারী, আমরা অগ্রগামী। ইবনু হাজার (রহিমাহুল্লাহ) লিখেন, অর্থাৎ আমরা যুগ হিসেবে সর্বশেষের, আর মর্যাদার দিক দিয়ে সবার অগ্রে। উদ্দেশ্য হলো, এই উম্মতের আগমন যদিও অন্যান্য উম্মতের পরে হয়েছে, কিন্তু আখিরাতে তারা অগ্রগামী থাকবে। তাদেরকে প্রথমে সমবেত করা হবে, তাদের হিসাব প্রথমে নেয়া হবে, তাদের মাঝে প্রথমে ফয়সালা করা এবং তারা প্রথমে জান্নাতে প্রবেশ করবে। হুযায়ফাহ্ (রাঃ) থেকে সহীহ মুসলিমে বর্ণিত হাদীসে রয়েছে- نَحْنُ الآخِرُونَ مِنْ أَهْلِ الدُّنْيَا وَالأَوَّلُونَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ الْمَقْضِيُّ لَهُمْ قَبْلَ الْخَلاَئِقِ “দুনিয়াবাসীদের মধ্যে আমরা সবার শেষে। কিন্তু আখিরাতে আমরা প্রথম। সকল সৃষ্টির পূর্বে আমাদের ফয়সালা করা হবে। (ফাতহুল বারী হা. ২/৩৫৪)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৯: চারিত্রিক গুণাবলি ও মর্যাদাসমূহ (كتاب الْفَضَائِل وَالشَّمَائِل)

পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - নবীকুল শিরোমণি -এর মর্যাদাসমূহ

৫৭৫৪-[১৬] খব্বাব ইবনুল আরাত (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন রাসূলুল্লাহ (সা.) আমাদেরকে নিয়ে খুব লম্বা (তিলাওয়াতে) করে সালাত আদায় করলেন। সাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি তো আজ এমন করে সালাত আদায় করেছেন যে, এরূপ সালাত আপনি আর কক্ষনো পড়েননি। তিনি (সা.) বললেন, হ্যা ঠিকই বলেছ। কেননা এটা ছিল রহমতের আশায় আশান্বিত এবং শাস্তির ভয়ে ভীত-সন্ত্রস্ত অবস্থায় সালাত। আমি এ সালাতের মধ্যেই আল্লাহর কাছে তিনটি জিনিস চেয়েছি। তিনি দুটি আমাকে দিয়েছেন এবং একটি নিষেধ করেছেন। ১. আমি চেয়েছিলাম যেন আমার উম্মাতকে (ব্যাপক) দুর্ভিক্ষের দ্বারা ধ্বংস না করা হয়, তিনি আমাকে এটা দান করেছেন। ২. আমি চেয়েছিলাম যেন সকল মুসলিমদের ওপর অমুসলিমদের চাপিয়ে দেয়া না হয়। ৩. এটাও চেয়েছিলাম, যেন আমার উম্মতের কেউ অপরের ওপর অন্যায় না করে, কিন্তু এটা তিনি আমাকে দান করেনি। (তিরমিযী ও নাসায়ী)

اَلْفصْلُ الثَّنِفْ (بَابُ فَضَائِلِ سَيِّدِ الْمُرْسَلِينَ)

عَن خبَّابِ بنِ الأرتِّ قَالَ: صَلَّى بِنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ صَلَاةَ فَأَطَالَهَا. قَالُوا: يَا رَسُولَ الله صلَّيتَ صَلَاةً لَمْ تَكُنْ تُصَلِّيهَا قَالَ: «أَجَلْ إِنَّهَا صَلَاةُ رَغْبَةٍ وَرَهْبَةٍ وَإِنِّي سَأَلْتُ اللَّهَ فِيهَا ثَلَاثًا فَأَعْطَانِي اثْنَتَيْنِ وَمَنَعَنِي وَاحِدَةً سَأَلْتُهُ أَنْ لَا يُهْلِكَ أُمَّتِي بِسَنَةٍ فَأَعْطَانِيهَا وَسَأَلْتُهُ أَنْ لَا يُسَلِّطَ عَلَيْهِمْ عَدُوًّا مِنْ غَيْرِهِمْ فَأَعْطَانِيهَا وَسَأَلْتُهُ أَنْ لَا يُذِيقَ بَعْضَهُمْ بَأْسَ بَعْضٍ فمنعَنيها» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ وَالنَّسَائِيّ

اسنادہ صحیح ، رواہ الترمذی (2175 وقال : حسن صحیح) و النسائی (3 / 216 ۔ 217 ح 1639) ۔
(صَحِيح)

عن خباب بن الأرت قال: صلى بنا رسول الله صلى الله عليه وسلم صلاة فأطالها. قالوا: يا رسول الله صليت صلاة لم تكن تصليها قال: «أجل إنها صلاة رغبة ورهبة وإني سألت الله فيها ثلاثا فأعطاني اثنتين ومنعني واحدة سألته أن لا يهلك أمتي بسنة فأعطانيها وسألته أن لا يسلط عليهم عدوا من غيرهم فأعطانيها وسألته أن لا يذيق بعضهم بأس بعض فمنعنيها» . رواه الترمذي والنسائي

ব্যাখ্যা: (خبَّابِ بنِ الأرتِّ)الأرتِّ শব্দটির (ت) অক্ষরে তাশদীদসহ পঠিত। তিনি আবু আবদুল্লাহ খব্বাব ইবনুল আরাত। প্রথমদিকে ইসলাম গ্রহণকারীদের একজন। ইসলাম গ্রহণের কারণে তাকে অনেক নির্যাতন ভোগ করতে হয়েছে। তিনি বদর যুদ্ধে অংশ নেন। পরবর্তীতে কুফায় আগমন করেন এবং সেখানে মারা যান। (তুহফাতুল আহওয়াযী হা. ৬/৩৩১)
(صَلَاةُ رَغْبَةٍ وَرَهْبَةٍ) “আশা ও ভয়ের সালাত” অর্থাৎ যে সালাতের মাঝে সাওয়াবের আশা ও আল্লাহ তা'আলার প্রতি আগ্রহ রয়েছে এবং আল্লাহ তা'আলার শাস্তির ভয়ও রয়েছে। সালাতের পর রাসূল (সা.)-এর আবেদন ও তা গৃহীত হওয়া না হওয়ার ইতোপূর্বে কয়েকটি হাদীসে অতিক্রান্ত হয়েছে। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৯: চারিত্রিক গুণাবলি ও মর্যাদাসমূহ (كتاب الْفَضَائِل وَالشَّمَائِل)

পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - নবীকুল শিরোমণি -এর মর্যাদাসমূহ

৫৭৫৫-[১৭] আবূ মালিক আল আশ’আরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: (হে মুসলিমগণ!) মহাপরাক্রমশালী আল্লাহ তোমাদেরকে তিনটি জিনিস হতে রক্ষা করেছেন। ১. তোমাদের নবী তোমাদের বিরুদ্ধে এমন কোন বদদু’আ করবেন না যাতে তোমরা সবাই ধ্বংস হয়ে যাও। ২. বাতিল ও গোমরাহ গোত্র কখনো সত্যপন্থীদের ওপর প্রাধান্য লাভ করতে পারবে না এবং ৩. সমষ্টিগতভাবে আমার উম্মাত গোমরাহীর (তথা অন্যায়ের উপরে একত্রিত হবে না। (আবু দাউদ)

اَلْفصْلُ الثَّنِفْ (بَابُ فَضَائِلِ سَيِّدِ الْمُرْسَلِينَ)

وَعَنْ أَبِي مَالِكٍ الْأَشْعَرِيِّ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِنَّ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ أَجَارَكُمْ مِنْ ثَلَاثِ خِلَالٍ: أَنْ لَا يَدْعُوَ عَلَيْكُمْ نَبِيُّكُمْ فَتَهْلَكُوا جَمِيعًا وَأَنْ لَا يُظْهِرَ أَهْلَ الْبَاطِلِ على أهلِ الحقِّ وَأَن لَا تجتمِعوا على ضَلَالَة . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد

اسنادہ ضعیف ، رواہ ابوداؤد (4253) * فیہ شریح عن ابی مالک رضی اللہ عنہ ، وقال ابو حاتم الرازی :’’ شریح بن عبید عن ابی مالک الاشعری : مرسل ‘‘ (المراسیل ص 90 ت 327 ب) ۔
(ضَعِيف)

وعن أبي مالك الأشعري قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: إن الله عز وجل أجاركم من ثلاث خلال: أن لا يدعو عليكم نبيكم فتهلكوا جميعا وأن لا يظهر أهل الباطل على أهل الحق وأن لا تجتمعوا على ضلالة . رواه أبو داود

ব্যাখ্যা: (أَجَارَكُمْ مِنْ ثَلَاثِ خِلَالٍ) অর্থাৎ তিনটি বৈশিষ্ট্য থেকে তোমাদেরকে রক্ষা করেছেন। এই তিনটি মূলত মুসীবাত। এই তিন মুসীবাতে আল্লাহ তা'আলা এই উম্মাতকে নিক্ষেপ করবেন না। তিন বৈশিষ্ট্যের অন্যতম হলো নবী (সা.) উম্মতের ওপর বদদু'আ দিবেন না। অর্থাৎ সমূলে ধ্বংস হয়ে যাওয়ার বদূদু'আ দিবেন না। যেমন নূহ আলায়হিস সালাম তার উম্মতের ওপর বদদু'আ দিয়েছেন। মূসা আলায়হিস সালাম কিবতী জাতি ধ্বংসের জন্য বদ্‌দু'আ দিয়েছেন। আরেকটি বৈশিষ্ট্য: বাতিলপন্থীরা সত্যপন্থীদের ওপর বিজয় লাভ করবে না। বাতিলপন্থীদের সংখ্যা বেশি এবং সত্যপন্থীদের সংখ্যা কম থাকলেও সত্যপন্থীদের জয় থাকবে। কিয়ামত পর্যন্ত এমন একটি দল সর্বদা থাকবে। যেমন রাসূল (সা.) বলেন –
لاَ تَزَالُ طَائِفَةٌ مِنْ أُمَّتِي عَلَى الْحَقِّ ظَاهِرِينَ لاَ يَضُرُّهُمْ مَنْ يَخْذُلُهُمْ حَتَّى يَأْتِيَ أَمْرُ اللَّهِ ‏ “আমার উম্মাতের একটি দল সর্বদা সত্যের উপর বিজয়ী থাকবে, যারা তাদেরকে অপদস্থ করবে তারা তাদের কোন ক্ষতি করতে পারবে না, এমনকি আল্লাহ তা'আলার নির্দেশ তথা কিয়ামত আসা পর্যন্ত।” (সুনানুত্ তিরমিযী হা, ২২২৯)

কুরআনেরও একটি আয়াতে এই মর্ম পাওয়া যায়। যেমন আল্লাহ তা'আলা বলেন –
یُرِیۡدُوۡنَ اَنۡ یُّطۡفِـُٔوۡا نُوۡرَ اللّٰهِ بِاَفۡوَاهِهِمۡ وَ یَاۡبَی اللّٰهُ اِلَّاۤ اَنۡ یُّتِمَّ نُوۡرَهٗ وَ لَوۡ کَرِهَ الۡکٰفِرُوۡنَ “তারা তাদের মুখের ফুঁৎকারে আল্লাহর নূরকে নির্বাপিত করতে চায়। কিন্তু আল্লাহ অবশ্যই তার নূরের পূর্ণতা বিধান করবেন, যদিও কাফিররা তা অপ্রতিকর মনে করে।” (সূরাহ আত্ তাওবাহ্ ৯ : ৩২)

তূরিবিশতী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, হাদীস ও আয়াতের মর্ম হলো, বাতিলপন্থীদের সংখ্যা বেশি হলেও তারা সত্যপন্থীদের ওপর এমনভাবে জয়ী হতে পারবে না যে, তাদেরকে দুনিয়া থেকে একেবারে মিটিয়ে দিবে এবং তাদের আলো নিভিয়ে দিবে। আল্লাহ তা'আলার প্রশংসায় এমনটি হয়নি। বাতিলপন্থীদের পক্ষ থেকে মুসলিমদের ওপর বিভিন্ন নির্যাতনের পরীক্ষা, শত্রুর প্রভাব, বাতিলদের প্রভাব চিরস্থায়ী হওয়া সত্ত্বেও সত্য প্রকাশিত রয়েছে এবং শারী'আত প্রতিষ্ঠিত রয়েছে। সত্যের আলো নিভে যায়নি এবং আলোর মিনার মিটে যায়নি। এই উম্মাতের তৃতীয় বৈশিষ্ট্য; তারা সবাই কোন একটি ভ্রান্তির উপর ঐক্য হবে না। এর দ্বারা প্রমাণিত হয়, উম্মতের ঐক্য শারী'আতের একটি দলীল। মানুষের কাছে যেটা সুন্দর সেটা আল্লাহ তা'আলার কাছে সুন্দর। কুরআনের একটি আয়াতও এই দলীলকে শক্তিশালী করে। আল্লাহ তা'আলা বলেন-

وَ مَنۡ یُّشَاقِقِ الرَّسُوۡلَ مِنۡۢ بَعۡدِ مَا تَبَیَّنَ لَهُ الۡهُدٰی وَ یَتَّبِعۡ غَیۡرَ سَبِیۡلِ الۡمُؤۡمِنِیۡنَ نُوَلِّهٖ مَا تَوَلّٰی وَ نُصۡلِهٖ جَهَنَّمَ ؕ وَ سَآءَتۡ مَصِیۡرًا “যে কেউ রাসূলের বিরুদ্ধাচরণ করে, তার কাছে সরল পথ প্রকাশিত হওয়ার পর এবং সব মুসলিমের অনুসৃত পথের বিরুদ্ধে চলে, আমি তাকে ঐ দিকেই ফেরাব যেদিক সে অবলম্বন করেছে এবং তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করব। আর তা নিকৃষ্টতর গন্তব্যস্থান।” (সূরা আন্ নিসা ৪ : ১১৫)।
এ আয়াত দিয়েই ইমাম শাফিঈ (রহিমাহুল্লাহ) ইজমা’কে শারী'আতের দলীল বলে আখ্যায়িত করেন। (মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৯: চারিত্রিক গুণাবলি ও মর্যাদাসমূহ (كتاب الْفَضَائِل وَالشَّمَائِل)

পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - নবীকুল শিরোমণি -এর মর্যাদাসমূহ

৫৭৫৬-[১৮] ’আওফ ইবনু মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: আল্লাহ তা’আলা এ মুসলিম উম্মাতের ওপর দুই তলোয়ার একত্রিত করবেন না। এক তলোয়ার মুসলিমদের পক্ষ হতে এবং অপর তলোয়ার শত্রুদের পক্ষ হতে। (আবু দাউদ)

اَلْفصْلُ الثَّنِفْ (بَابُ فَضَائِلِ سَيِّدِ الْمُرْسَلِينَ)

وَعَنْ عَوْفِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: لَنْ يَجْمَعَ اللَّهُ عَلَى هَذِهِ الْأُمَّةِ سَيْفَيْنِ: سَيْفًا مِنْهَا وسَيفاً منْ عدُوِّها رَوَاهُ أَبُو دَاوُد

اسنادہ ضعیف ، رواہ ابوداؤد (4301) * یحیی بن جابر : لم بلق عوف بن مالک رضی اللہ عنہ فالسند منقطع

وعن عوف بن مالك قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: لن يجمع الله على هذه الأمة سيفين: سيفا منها وسيفا من عدوها رواه أبو داود

ব্যাখ্যা: হাদীসের মর্ম হলো, এই উম্মতের ওপর একসাথে শত্রু ও নিজেদের তরবারি একত্র হবে না, যা তাদের মূলোৎপাটনের কারণ হয়। নিজেদের বিরুদ্ধে নিজেদের তরবারি, এর সাথে শত্রুদের তরবারির আক্রমণ একটি জাতির সমূলে ধংসের কারণ। উম্মতে মুহাম্মাদীর ওপর এমন পরিস্থিতি আসবে না। তারা যদি পরস্পর লড়াইয়ে লিপ্ত হয়, তখন দেখা যাবে শত্রু তাদের ওপর চড়াও হয়ে উঠবে। শত্রু চড়াও হতেই তারা পরস্পর লড়াই বাদ দিবে। ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, অর্থাৎ একসাথে তাদেরকে দু'টি লড়াই করতে হবে না। নিজেদের মাঝে লড়াই হলে কাফিরদের সাথে লড়াই হবে না। আর কাফিরদের সাথে যখন লড়াই হবে তখন নিজেদের মাঝে লড়াই হবে না। এভাবে এই উম্মাত শত বাধার মাঝে কিয়ামত পর্যন্ত টিকে থাকবে। তারা সমূলে ধ্বংস হবে না। (মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আউফ ইবনু মালিক (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৯: চারিত্রিক গুণাবলি ও মর্যাদাসমূহ (كتاب الْفَضَائِل وَالشَّمَائِل)

পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - নবীকুল শিরোমণি -এর মর্যাদাসমূহ

৫৭৫৭-[১৯] ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। একবার তিনি কাফিরদের মুখে নবী (সা.) -এর বিরুদ্ধে তিরস্কারমূলক কিছু কথা শুনতে পেলেন। তাতে তিনি ক্রোধান্বিত হয়ে নবী (সা.) -এর কাছে ছুটে এসে কথাটি তাকে জানালেন। এতদশ্রবণে তিনি (সা.) মিম্বারে দাঁড়িয়ে বললেন, তোমরা বল দেখি আমি কে? উত্তরে সাহাবীগণ বললেন, আপনি আল্লাহর রাসূল!’ তিনি বললেন, আমি হলাম, ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আবদুল মুত্ত্বালিব এর পুত্র মুহাম্মাদ। আল্লাহ তা’আলা যে সকল সষ্টিজীব সৃষ্টি করেছেন তন্মধ্যে আমাকে উত্তম শ্রেণিতে সৃষ্টি করেছেন। আবার সেই মানব শ্রেণিকে দু’ভাগে (আরব ও আ’যম) নামে বিভক্ত করেছেন। আর আমাকে তার উত্তম দলে (আরবের মধ্যে) সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর সেই দলকে আবার উত্তম গোত্রে (কুরায়শ গোত্রে) সৃষ্টি করেছেন। আবার সেই গোত্রকেও বিভিন্ন পরিবারে বিভক্ত করেছেন। তার নামে উত্তম পরিবার (হাশিমী পরিবারে) আমাকে সৃষ্টি করেছেন। অতএব লোক ও পরিবার হিসেবে আমি সর্বোত্তম। (তিরমিযী)

اَلْفصْلُ الثَّنِفْ (بَابُ فَضَائِلِ سَيِّدِ الْمُرْسَلِينَ)

وَعَن الْعَبَّاس أَنَّهُ جَاءَ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَكَأَنَّهُ سَمِعَ شَيْئًا فَقَامَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى الْمِنْبَرِ فَقَالَ: «مَنْ أَنَا؟» فَقَالُوا: أَنْتَ رَسُولُ اللَّهِ. فَقَالَ: «أَنَا مُحَمَّدُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَبْدِ الْمُطَّلِبِ إِنَّ اللَّهَ خَلَقَ الْخَلْقَ فَجَعَلَنِي فِي خَيْرِهِمْ ثمَّ جعلهم فرقتَيْن فجعلني فِي خير فِرْقَةً ثُمَّ جَعَلَهُمْ قَبَائِلَ فَجَعَلَنِي فِي خَيْرِهِمْ قَبيلَة ثمَّ جعله بُيُوتًا فَجَعَلَنِي فِي خَيْرِهِمْ بَيْتًا فَأَنَا خَيْرُهُمْ نفسا وَخَيرهمْ بَيْتا» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ

اسنادہ ضعیف ، رواہ الترمذی (3607 ۔ 3608 وقال : حسن) * فیہ یزید بن ابی زیاد : ضعیف مشھور ۔
(ضَعِيف)

وعن العباس أنه جاء إلى النبي صلى الله عليه وسلم فكأنه سمع شيئا فقام النبي صلى الله عليه وسلم على المنبر فقال: «من أنا؟» فقالوا: أنت رسول الله. فقال: «أنا محمد بن عبد الله بن عبد المطلب إن الله خلق الخلق فجعلني في خيرهم ثم جعلهم فرقتين فجعلني في خير فرقة ثم جعلهم قبائل فجعلني في خيرهم قبيلة ثم جعله بيوتا فجعلني في خيرهم بيتا فأنا خيرهم نفسا وخيرهم بيتا» . رواه الترمذي

ব্যাখ্যা: (فَكَأَنَّهُ سَمِعَ شَيْئًا) অর্থাৎ ‘আব্বাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে রাগত ভাব নিয়ে এসেছেন, যেন তিনি কাফিরদের কাছে কিছু শুনেছেন।
কাফিররা নবী (সা.) -এর বংশ ও মর্যাদা নিয়ে কটাক্ষ করেছে। যেমন তারা বলেছে- (وَ قَالُوۡا لَوۡ لَا نُزِّلَ هٰذَا الۡقُرۡاٰنُ عَلٰی رَجُلٍ مِّنَ الۡقَرۡیَتَیۡنِ عَظِیۡمٍ) “তারা বলে, কুরআন কেন দুই জনপদের কোন প্রধান ব্যক্তির ওপর অবতীর্ণ হলো না?” (সূরা আয যুখরুফ ৪৩ : ৩১)।
এটা বলে তারা যেন নবীর মর্যাদা নিয়েই কটাক্ষ করেছে। কারণ তাদের ধারণা মতে, এত বড় বিষয় সাধারণ মুহাম্মাদের ওপর অবতীর্ণ না হয়ে বড় কোন ব্যক্তির ওপর অবতীর্ণ হওয়ার কথা। তাদের এমন অবজ্ঞা ‘আব্বাস (রাঃ)-কে কষ্ট দেয়। তাই তিনি পীড়িত মন নিয়ে রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর কাছে আসেন। রাসূল (সা.) তা বুঝতে পেরে মিম্বারে উঠে নিজের মর্যাদা তুলে ধরেন। বংশ ও মর্যাদার দিক দিয়ে তার ওপর কেউ নেই সেটাই রাসূল (সা.) তার এই হাদীসে প্রকাশ করেন।
(«مَنْ أَنَا؟» فَقَالُوا: أَنْتَ رَسُولُ اللَّهِ.) “তিনি বললেন, আমি কে? তারা বলল, আপনি আল্লাহর রাসূল।” রাসূল তাদের কাছে প্রশ্ন করে নিজের পরিচয় তুলে ধরতে চেয়েছেন। কারণ প্রশ্নের পর কোন কিছু প্রকাশ করা সম্বোধিত ব্যক্তির হৃদয়ে অধিক রেখাপাত করে। তাছাড়া প্রশ্নের মাধ্যম সম্বোধিত ব্যক্তির পূর্ব ধারণা সম্পর্কে অবগত হওয়া যায়। রাসূলুল্লাহ (সা.) তাদের কাছে “আমি কে?” প্রশ্ন করে তার মর্যাদা সম্পর্কে তারা কতটুকু অবগত সেটাই প্রথমে নির্ণয় করতে চেয়েছেন। এই প্রশ্ন করলে তারা স্বভাবতই উত্তর দিলো, “আপনি আল্লাহর রাসূল।” রাসূল তাদের উত্তরের সাথে যোগ করলেন, “আমি মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু ‘আবদুল মুত্ত্বালিব...” অর্থাৎ আমার মর্যাদা কেবল রাসূল হওয়ার মাঝে সীমাবদ্ধ নয়। বরং বংশের দিক দিয়েও আমার মর্যাদা শিখরে। বংশ মর্যাদার দিক থেকে কিভাবে তিনি শিখরে সেটাই হাদীসে তুলে ধরেন। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৯: চারিত্রিক গুণাবলি ও মর্যাদাসমূহ (كتاب الْفَضَائِل وَالشَّمَائِل)

পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - নবীকুল শিরোমণি -এর মর্যাদাসমূহ

৫৭৫৮-[২০] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনার জন্য নুবুওয়্যাত কখন হতে নির্ধারণ করা হয়েছে? তিনি (সা.) বললেন, সে সময় হতে, যখন আদম আলায়হিস সালাম আত্মা ও দেহের মধ্যবর্তী অবস্থায় ছিলেন। (তিরমিযী)

اَلْفصْلُ الثَّنِفْ (بَابُ فَضَائِلِ سَيِّدِ الْمُرْسَلِينَ)

وَعَن أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالُوا: يَا رَسُولَ اللَّهِ مَتَى وَجَبَتْ لَكَ النُّبُوَّةُ؟ قَالَ: «وَآدَمُ بَيْنَ الرُّوحِ وَالْجَسَدِ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ

صحیح ، رواہ الترمذی (3609 وقال : حسن صحیح غریب) [و الفریابی فی کتاب القدر (14)] * یعنی انہ صلی اللہ علیہ و آلہ وسلم کان نبیًا فی التقدیر قبل خلق آدم علیہ السلام فالحدیث متعلق بالتقدیر ، لا بخلق رسول اللہ صلی اللہ علیہ و آلہ وسلم فافھمہ فانہ مھم و الحدیث الآتی یؤید ھذا التفسیر ۔
(صَحِيح)

وعن أبي هريرة قال: قالوا: يا رسول الله متى وجبت لك النبوة؟ قال: «وآدم بين الروح والجسد» . رواه الترمذي

ব্যাখ্যা: وَآدَمُ بَيْنَ الرُّوحِ وَالْجَسَدِ  “যখন আদম আত্মা ও শরীরের মাঝে।” অর্থাৎ আদমের শরীরে আত্মা ফুৎকারের আগেই আমার নুবুওয়্যাত নির্ধারিত হয়ে গেছে। যখন মাটি দিয়ে আদমের আকৃতি সৃষ্টি করে রাখা হয়েছিল, আকৃতি বানানোর পর আত্মা দেয়ার আগেই আমার নুবুওয়্যাত নির্ধারিত হয়ে গেছে। ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত ত্ববারানী’র বর্ণনার শব্দ- (كُنْتُ نَبِيًّا وَآدَمُ بَيْنَ الرُّوحِ وَالْجَسَدِ) অর্থাৎ “আদম শরীর ও আত্মার মাঝে থাকতেই আমি নবী ছিলাম।” আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে হাকীমে বর্ণিত আরেকটি বর্ণনায় রয়েছে- (كنت أول النبيين في الخلق وأخر هم في البعث) “আমি সৃষ্টি হিসেবে প্রথম নবী, কিন্তু প্রেরণ হিসেবে শেষ নবী” কিন্তু মানুষের মুখে প্রচলিত বাক্য (كنت نبيا وآدم بين الماء والطين) “আদম পানি মাটির মধ্যে থাকতেই আমি নবী ছিলাম।” এ হাদীস সম্পর্কে সাখাবী বলেন, এই বাক্য সম্পর্কে আমি অবগত নই। যারকাশী বলেন, এই শব্দে হাদীসটির কোন ভিত্তি নেই। (তুহফাতুল আহওয়াযী হা. ১০/৫৬, মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৯: চারিত্রিক গুণাবলি ও মর্যাদাসমূহ (كتاب الْفَضَائِل وَالشَّمَائِل)
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ২০ পর্যন্ত, সর্বমোট ২৪০ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে পাতা নাম্বারঃ 1 2 3 4 5 6 · · · 9 10 11 12 পরের পাতা »