পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - যেসব জিনিসের যাকাত দিতে হয়

১৭৯৪-[১] আবূ সা’ঈদ আল্ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ পাঁচ ওয়াসাকের কম খেজুর যাকাত থাকলে ওয়াজিব হয় না। পাঁচ উকিয়ার কম রূপায় যাকাত বাধ্যতামূলক নয়। কিংবা পাঁচটির কম উট থাকলেও যাকাত ওয়াজিব হয় না। (বুখারী, মুসলিম)[1]

بَابُ مَا يَجِبُ فِيْهِ الزَّكَاةُ

وَعَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَيْسَ فِيمَا دُونَ خَمْسَةِ أَوْسُقٍ مِنَ التَّمْرِ صَدَقَةٌ وَلَيْسَ فِيمَا دُونَ خَمْسِ أَوَاقٍ مِنَ الْوَرِقِ صَدَقَةٌ وَلَيْسَ فِيمَا دُونَ خَمْسِ ذَوْدٍ من الْإِبِل صَدَقَة»

وعن أبي سعيد الخدري قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «ليس فيما دون خمسة أوسق من التمر صدقة وليس فيما دون خمس أواق من الورق صدقة وليس فيما دون خمس ذود من الإبل صدقة»

ব্যাখ্যা: পাঁচ ওয়াসাক্বের কম খেজুরে যাকাত ফরয হয় না। পুরা পাঁচ ওয়াসাক্ব বা বেশী হলে উক্ত খেজুরে যাকাত ফরয হয়। ষাট সা'-এ এক ওয়াসাক্ব হয়। আর পাঁচ ওয়াসাকে তিনশত সা' হয়। আর সা'-এর পরিমাণ আড়াই কেজি। পাঁচ ওয়াসাকে ২০ মণ হয়।

আর পাঁচ উটের কমে যাকাত নেই। চার মুদে এক সা' হয়। মুদ এক রিতিল ও এক তৃতীয়াংশ রিতিলে হয়। সুতরাং এক পাঁচ রিতিল ও এক তৃতীয় রিতিলে হয়। আধা সেরে এক রিতিল হয়। যার পরিমাণ একশত ২৮ দিরহাম, আর প্রত্যেক দশক সাত মিসকাল।

নিশ্চয়ই হাদীসটি যে সব সম্পদে যাকাত ওয়াজিব হয় সেগুলোর নিসাব বর্ণনার ক্ষেত্রে একটি মৌলিক হাদীস। যেসব সম্পদে যাকাত ওয়াজিব হয় এ বিষয়ে ইমাম মালিক (রহঃ) বলেন, তিন প্রকার সম্পদে যাকাত দিতে হবে।

১. শস্যাদি, ২. নগদ অর্থ বা মুদ্রা, ও ৩. চতুষ্পদ জন্তু।

আর ইমাম ইবনুল ক্বাইয়্যিম বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চার প্রকার সম্পদে যাকাত নির্ধারণ করেছেন। যথাঃ

১. শস্যাদি, ২. চতুষ্পদ জন্তু, তথা উট, গরু, ছাগল, ৩. স্বর্ণ- রৌপ্য ও ৪. ব্যবসায় সম্পদ।

অত্র হাদীসে তিন প্রকার সম্পদের যাকাতের নিসাব বিবৃত হয়েছে।

প্রথম প্রকারঃ শস্যাদি ও ফলমূল। এর যাকাতে নিসাব হল তা পাঁচ ওয়াসাক্ব পরিমাণ হতে হবে। আর পাঁচ ওয়াসাক্বের সমান প্রায় ঊনিশ মণের মতো।

এটিই সকল ‘উলামাদের অভিমত। শুধুমাত্র ইমাম আবূ হানীফাহ্ (রহঃ) ব্যতীত। তার মতে জমিন থেকে উদগত ফসলের ক্ষেত্রে নিসাব শর্তটি প্রযোজ্য নয়। বরং এক্ষেত্রে উশর তথা এক-দশমাংশ এবং নিসফে উশর প্রযোজ্য যেমনটি ইবনু ‘উমার (রাঃ)-এর  হাদীসে  এসেছে যে, যে সকল ফসল আসমানের বৃষ্টি, ঝরণা বা নহরের বৃষ্টি দ্বারা এবং নালার পাশের ভূমিতে যাতে সেচ প্রয়োজন হয় না উৎপন্ন হয় তাতে এক দশমাংশ। আর যে সকল ফসল সেচের মাধ্যমে উৎপন্ন হয় তাতে নিসফে উশর আবশ্যক। এ হাদীসের আলোকে তিনি তার মতটি ব্যক্ত করেছেন। তবে সঠিক অভিমত হল অধিকাংশ উলামাগণ যেটি পোষণ করেছেন তথা যে কোন ধরনের জমিন থেকে উৎপাদিত ফসল, শস্যাদি এবং ফলমূলের যাকাতের ক্ষেত্রে নেসাব অবশ্যই শর্ত।  আর তা হল পাঁচ ওয়াসাক্ব। এক্ষেত্রে নিসাবের হাদীস এবং উশরের হাদীসের মাঝে সমন্নয় হল নিসাব বা নিসাবের অধিক পরিমাণ ফসল উশর বা নিসফে উশর প্রযোজ্য হবে। কিন্তু নিসাবের কম ফসলে কোন প্রকার যাকাত আবশ্যক হবে না। আর শাক সবজি এবং কিছু ফলমূলের ক্ষেত্রে যাকাত ওয়াজিব নয়।

দ্বিতীয় প্রকারঃ নগদ অর্থ বা মুদ্রা তথা রৌপ্য ও স্বর্ণ। রৌপ্যের যাকাতে নিসাব হল পাঁচ উকিয়্যাহ্। এক উক্বিয়্যাহ্ সমান চল্লিশ দিরহাম। আর পাঁচ উক্বিয়্যাহ্ সমান দুইশত দিরহাম। অর্থাৎ কারো অধিকারে দুইশত দিরহাম বা তার অধিক দিরহাম থাকেল তার উপর যাকাত ওয়াজিব হবে। উপমহাদেশে যার পরিমাণ প্রায় সাড়ে বায়ান্ন তোলা। (বর্তমান মুদ্রার ক্ষেত্রে দিরহামের মূল্যের অনুপাতে যাকাতের নিসাব নির্ধারিত হবে। অর্থাৎ দুইশত দিরহামের যে বাজার মূল্য হয় তার  উপর নির্ভর করে কাগজী মুদ্রার নিসাব নির্ধারিত হবে। আর স্বর্ণের যাকাতের নিসাবের ক্ষেত্রে যতগুলো হাদীস এসেছে তার সবগুলোই দুর্বল শুধুমাত্র আবু দাঊদে বর্ণিত ‘আলী  (রাঃ)-এর হাদীসটি ব্যতীত, সেটিকে ইমাম নাবাবী, হাফিয ইবনে হাজার আসক্বালানী সহ কেউ কেউ হাসান বলেছেন। আবার কেউ কেউ তা দুর্বলও বলেছেন।

হাদীসটি হল, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যখন তুমি দুইশত দিরহামের মালিক হবে এবং তাতে একবছর অতিবাহিত হবে তখন তাতে পাচ দিরহাম ওয়াজিব হবে। আর যখন তুমি বিশ মিসক্বাল স্বর্ণ মুদ্রার মালিক হবে তখন তাতে তুমি বিশ দিনার আবশ্যক হবে। এ হাদীসটি যদিও দুর্বল হয় তারপরেও উম্মাতের উলামাগণ একমত পোষণ করেছেন যে,  স্বর্ণ মুদ্রার যাকাতে নিসাব হল কুড়ি মিসক্বাল যা উপমহাদেশের হিসেবে প্রায় সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ।

তৃতীয় প্রকারঃ উট। উটের যাকাতের নিসাব হল পাঁচটি উট। অর্থাৎ কারো যদি পাঁচটির কম উট থাকে তাহলে তাকে তার উপর যাকাত ওয়াজিব হবে না। আর পাঁচটি উট থাকলে একটি ছাগল যাকাত দিতে হবে।

বিঃদ্রঃ জাহিলিয়্যাতের যুগে কতগুলো পরিমাপ ছিল। অতঃপর ইসলামের আগমন ঘটলে সেগুলোকে আগের অবস্থায় স্থির রাখা হয়। ওজনগুলো হল :

১. أُوْقِيَّةُ (উক্বিয়্যাহ্) : যার পরিমাণ চল্লিশ দিরহাম।

২. رِطْلٌ (রিতল) : যার সমান কারো উক্বিয়্যাহ্ তথা চারশত আশি দিরহাম।

৩. نَشُّ (নাশ) : যার পরিমাণ বিশ দিরহাম।

৪. نَوَاةٌ (নাওয়া-ত) : যার পরিমাণ পাঁচ দিরহাম।

৫. مِثْقَالُ (মিসক্বা-ল) : যার পরিমাণ এক হাররা ব্যতীত বাইশ ক্বিরাত।

৬. دِرْهَمُ (দিরহাম) : যার পরিমাণ পনের ক্বিরাত।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৬: যাকাত (كتاب الزكاة) 6. Zakat

পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - যেসব জিনিসের যাকাত দিতে হয়

১৭৯৫-[২] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ গোলাম ও ঘোড়ার জন্য মালিক মুসলিমকে যাকাত দিতে হবে না। আর এক বর্ণনায় রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ গোলামের যাকাত দেয়া কোন মুসলিমের জন্য ওয়াজিব নয়। তবে সদাক্বায়ে ফিতর দেয়া ওয়াজিব। (বুখারী, মুসলিম)[1]

بَابُ مَا يَجِبُ فِيْهِ الزَّكَاةُ

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَيْسَ عَلَى الْمُسْلِمِ صَدَقَةٌ فِي عَبْدِهِ وَلَا فِي فَرَسِهِ» . وَفِي رِوَايَةٍ قَالَ: «لَيْسَ فِي عَبْدِهِ صَدَقَةٌ إِلَّا صَدَقَةُ الْفِطْرِ»

وعن أبي هريرة رضي الله عنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «ليس على المسلم صدقة في عبده ولا في فرسه» . وفي رواية قال: «ليس في عبده صدقة إلا صدقة الفطر»

ব্যাখ্যা: এ হাদীস হতে বুঝা যায় যে, মুসলিমদের গোলামে ও ঘোড়াতে যাকাত নেই। তবে গোলামের ওপর যাকাতুল ফিতর ওয়াজিব হয়। তবে ইমাম আবূ হানীফাহ্ (রহঃ)-এর মতে ঘোড়ায় যাকাত ওয়াজিব হয়। যে সব দাস এবং ঘোড়া বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত হয় তাতে কোন যাকাত নেই। তবে যদি তা ব্যবসার উদ্দেশে ক্রয়-বিক্রয় হয় তাহলে তার মূল্যে যাকাত ফরয হবে। এ বিষয়ে ইমাম নাবাবী (রহঃ) পূর্ব-পরের প্রায় সকল ‘উলামাগণের ঐকমত্য বর্ণনা করেছেন। তবে ইমাম আবূ হানীফাহ্ (রহঃ) ঘোড়ার ক্ষেত্রে যাকাত ওয়াজিবের মত পোষণ করেছেন। আর দাসের ক্ষেত্রে সদাক্বাতুল ফিতর আবশ্যক হবে যার তার পক্ষ থেকে তার মুনিব আদায় করবে।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৬: যাকাত (كتاب الزكاة) 6. Zakat

পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - যেসব জিনিসের যাকাত দিতে হয়

১৭৯৬-[৩] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবূ বকর সিদ্দীক্ব (রাঃ)যখন তাঁকে বাহরাইনের শাসনকর্তা নিয়োগ দিয়ে পাঠান তখন এ নির্দেশনামাটি লিখে দিয়েছিলেন, বিস্‌মিল্লা-হির রহমা-নির রহীম। এ চিঠি ফরয সদাক্বাহ্ (সাদাকা) অর্থাৎ যাকাত সম্পর্কে। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এটি মুসলিমদের ওপর ফরয করেছেন এবং এটিকে জারী করার জন্য আল্লাহ তা’আলা তাঁর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে নির্দেশ দিয়েছেন। এ প্রেক্ষিতে মুসলিম কোন ব্যক্তির কাছে নিয়মানুযায়ী যাকাত চাওয়া হলে সে যেন তা আদায় করে। আর কোন ব্যক্তির নিকট নিয়ম ভেঙে বেশী যাকাত চাওয়া হলে সে যেন (বেশী যাকাত) না দেয়। চব্বিশ ও চব্বিশের কম উটের যাকাত হবে বকরী। প্রতি পাঁচ উটে একটি বকরী দিতে হবে। (পাঁচটি উটের কম হলে যাকাত দিতে হবে না)। পাঁচ থেকে নয় পর্যন্ত উটে একটি বকরী। দশ থেকে চৌদ্দটি হলে দু’টি বকরী। পনের হতে ঊনিশে তিনটি বকরী। আর বিশ থেকে চব্বিশ পর্যন্ত চারটি বকরী। উটের সংখ্যা পঁচিশ থেকে পঁয়ত্রিশ পর্যন্ত এক বছরের একটি মাদি উট (বিনতে মাখায) যাকাত দিতে হবে। উটের সংখ্যা ছত্রিশ থেকে পঁয়তাল্লিশ হলে একটি দু’ বছরের মাদি উট (বিনতু লাবুন) যাকাত দিতে হবে। ছেচল্লিশ থেকে ষাট পর্যন্ত উটে নরের সাথে মিলনের যোগ্য একটি তিন বছরের মাদী উট (হিক্কাহ) দিতে হবে। উটের সংখ্যা একষট্টি থেকে পঁচাত্তর পর্যন্ত পৌঁছালে চার পেরিয়ে পাঁচ বছরে পা দিয়েছে এমন একটি মাদী উট (জাযা’আহ্) দিতে হবে। উটের সংখ্যা ছিয়াত্তর থেকে নব্বই পর্যন্ত পৌঁছে গেলে দু’টি দু’ বছরের উটনী (বিনতু লাবুন) যাকাত লাগবে। একানব্বই হতে একশত বিশ পর্যন্ত উটে তিন বছর বয়সী নরের সাথে মিলনের যোগ্য দু’টি উট (হিক্কাতানে)। একশ’ বিশ ছাড়ালে প্রতি চল্লিশ উটে দু’ বছরের একটি মাদি উট (বিনতু লাবুন) ও পঞ্চাশটি করে বাড়লে পুরা তিন বছর বয়সী উট যাকাত দিতে হবে। যার নিকট শুধু চারটি উট আছে তার যাকাত লাগবে না। অবশ্য মালিক চাইলে, নফল সদাক্বাহ্ (সাদাকা) কিছু দিতে পারে।

উটের সংখ্যা পাঁচ হলে একটি বকরী যাকাত দিতে হবে। আর চার বছরের মাদী উট নিসাবে পৌঁছে গেলে (৬১-৭৫) এবং তা তার নিকট না থাকলে, তিন বছর বয়সী উট (অর্থাৎ একষট্টি থেকে পঁচাত্তর পর্যন্ত উটের সংখ্যার যাকাত) দিতে হবে। এর সাথে বাড়তি দু’টি বকরী দিবে যদি সহজসাধ্য হয়। অথবা বিশ দিরহাম দিয়ে দিবে। চার বছর পার হয়ে ও পাঁচ বছরে পদার্পণ করা উটের যাকাত দিতে হবে। কিন্তু তার তিন বছর বয়সী মাদী উট থাকলে সেটাই যাকাত হিসেবে গ্রহণ করা হবে। কিন্তু যাকাত গ্রহণকারী প্রদানকারীকে বিশ দিরহাম অথবা দু’টি বকরী ফেরত দিবে। কোন ব্যক্তির নিকট দু’ বছরের উট থাকলে তার যাকাত দিতে হবে। যদি তার কাছে না থেকে এক বছরের উট থাকে। তবে তা থেকে এক বছরের উটই যাকাত হিসেবে গ্রহণ করা হবে। যাকাত আদায়কারী এর সাথে আরো বিশ দিরহাম অথবা দু’টি বকরী আদায় করবে। যে ব্যক্তির যাকাত হিসেবে একটি এক বছরের উট ওয়াজিব কিন্তু তার কাছে তা’ নেই। বরং দু’ বছরের উট আছে। তাহলে তার থেকে দু’ বছরের বকরীই যাকাত হিসেবে নিতে হবে। কিন্তু যাকাত উসূলকারী তাকে দু’টি বকরী অথবা বিশ দিরহাম ফেরত দেবেন। যাকাত দেবার জন্য এক বছরের পরিবর্তে দু’বছরের উট (ইবনু লাবুন) থাকে, তার থেকে তাই গ্রহণ করতে হবে। তবে এ অবস্থায় অন্য কিছু ওয়াজিব হবে না।

আর পালিত বকরীর ক্ষেত্রে বকরীর সংখ্যা চল্লিশ হতে শুরু করে একশত বিশ পর্যন্ত হলে একটি বকরী যাকাত দিতে হবে। একশ’ বিশ হতে দু’শ পর্যন্ত দু’টি বকরী। আর দু’শ হতে তিনশ’ বকরীর জন্য তিনটি বকরী। তিনশ’র বেশী হলে, প্রত্যেক একশ’টির জন্য একটি বকরী যাকাত দিতে হবে। যার নিকট পালিত বকরী চল্লিশ থেকে একটিও কম হবে। তার উপর যাকাত ওয়াজিব নয়। তবে মালিক ইচ্ছা করলে নফল সদাক্বাহ্ (সাদাকা) হিসেবে কিছু দিতে পারে। যাকাতের মাল যেন (উট, গরু, ছাগল) অতি বৃদ্ধ, ত্রুটিযুক্ত না হয়। যাকাত উসূলকারী গ্রহণ করতে চাইলে জায়িয। বিভিন্ন পশুকে এক জায়গায় একত্র না করা উচিত। যাকাত দেবার ভয়ে পশুকে পৃথক পৃথক করে রাখাও ঠিক নয়। যদি যাকাতের নিসাবে দু’ ব্যক্তি যৌথভাবে শরীক হয়, তাহলে সমানভাবে ভাগ করে নেয়া উচিত। আর রূপার ক্ষেত্রে চল্লিশ ভাগের একভাগ যাকাত ওয়াজিব। কোন ব্যক্তি একশত নব্বই দিরহামের মালিক হলে (যা নিসাব হিসেবে গণ্য নয়) তার উপর কিছু ফরয হবে না। তবে নফল সদাক্বাহ্ (সাদাকা) হিসেবে কিছু দিতে পারে। (বুখারী)[1]

بَابُ مَا يَجِبُ فِيْهِ الزَّكَاةُ

وَعَن أنس بن مَالك: أَن أَبَا بكر رَضِي الله عَنهُ كَتَبَ لَهُ هَذَا الْكِتَابَ لَمَّا وَجَّهَهُ إِلَى الْبَحْرِينِ: بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ هَذِهِ فَرِيضَةُ الصَّدَقَةِ الَّتِي فَرَضَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى الْمُسْلِمِينَ وَالَّتِي أَمَرَ اللَّهُ عز وَجل بهَا رَسُوله فَمن سَأَلَهَا مِنَ الْمُسْلِمِينَ عَلَى وَجْهِهَا فَلْيُعْطِهَا وَمَنْ سُئِلَ فَوْقَهَا فَلَا يُعْطِ: فِي أَرْبَعٍ وَعِشْرِينَ مِنَ الْإِبِل فَمَا دونهَا خَمْسٍ شَاةٌ. فَإِذَا بَلَغَتْ خَمْسًا وَعِشْرِينَ إِلَى خَمْسٍ وَثَلَاثِينَ فَفِيهَا بِنْتُ مَخَاضٍ أُنْثَى فَإِذَا بلغت سِتا وَثَلَاثِينَ فَفِيهَا بنت لبون أُنْثَى. فَإِذا بلغت سِتَّة وَأَرْبَعين إِلَى سِتِّينَ فَفِيهَا حِقَّةٌ طَرُوقَةُ الْجَمَلِ فَإِذَا بَلَغَتْ وَاحِدَةً وَسِتِّينَ فَفِيهَا جَذَعَة. فَإِذا بلغت سِتا وَسبعين فَفِيهَا بِنْتَا لَبُونٍ. فَإِذَا بَلَغَتْ إِحْدَى وَتِسْعِينَ إِلَى عِشْرِينَ وَمِائَةٍ فَفِيهَا حِقَّتَانِ طَرُوقَتَا الْجَمَلِ. فَإِذَا زَادَتْ عَلَى عِشْرِينَ وَمِائَةٍ فَفِي كُلِّ أَرْبَعِينَ بِنْتُ لَبُونٍ وَفِي كُلِّ خَمْسِينَ حِقَّةٌ. وَمَنْ لَمْ يَكُنْ مَعَهُ إِلَّا أَرْبَعٌ مِنَ الْإِبِلِ فَلَيْسَ فِيهَا صَدَقَةٌ إِلَّا أَنْ يَشَاءَ رَبُّهَا. فَإِذَا بَلَغَتْ خَمْسًا فَفِيهَا شَاةٌ وَمَنْ بَلَغَتْ عِنْدَهُ مِنَ الْإِبِلِ صَدَقَةَ الْجَذَعَةِ وَلَيْسَتْ عِنْده جَذَعَة وَعِنْده حقة فَإِنَّهَا تقبل مِنْهُ الْحِقَّةُ وَيُجْعَلُ مَعَهَا شَاتَيْنِ إِنِ اسْتَيْسَرَتَا لَهُ أَوْ عِشْرِينَ دِرْهَمًا. وَمَنْ بَلَغَتْ عِنْدَهُ صَدَقَةَ الْحِقَّةِ وَلَيْسَتْ عِنْدَهُ الْحِقَّةُ وَعِنْدَهُ الْجَذَعَةُ فَإِنَّهَا تُقْبَلُ مِنْهُ الْجَذَعَةُ وَيُعْطِيهِ الْمُصَدِّقُ عِشْرِينَ دِرْهَمًا أَوْ شَاتَيْنِ. وَمَنْ بَلَغَتْ عِنْدَهُ صَدَقَةَ الْحِقَّةِ وَلَيْسَت إِلَّا عِنْده بِنْتُ لَبُونٍ فَإِنَّهَا تُقْبَلُ مِنْهُ بِنْتُ لَبُونٍ وَيُعْطِي مَعهَا شَاتَيْنِ أَوْ عِشْرِينَ دِرْهَمًا. وَمَنْ بَلَغَتْ صَدَقَتُهُ بنت لبون وَعِنْده حقة فَإِنَّهَا تقبل مِنْهُ الْحِقَّةُ وَيُعْطِيهِ الْمُصَدِّقُ عِشْرِينَ دِرْهَمًا أَوْ شَاتَيْنِ. وَمَنْ بَلَغَتْ صَدَقَتُهُ بَنْتَ لِبَوْنٍ وَلَيْسَتْ عِنْدَهُ وَعِنْدَهُ بِنْتُ مَخَاضٍ فَإِنَّهَا تُقْبَلُ مِنْهُ بِنْتُ مَخَاضٍ وَيُعْطَى مَعَهَا عِشْرِينَ دِرْهَمًا أَوْ شَاتَيْنِ. وَمَنْ بَلَغَتْ صَدَقَتُهُ بَنْتَ مَخَاضٍ وَلَيْسَتْ عِنْدَهُ وَعِنْدَهُ بِنْتُ لَبُونٍ فَإِنَّهَا تُقْبَلُ مِنْهُ وَيُعْطِيهِ الْمُصَدِّقُ عِشْرِينَ دِرْهَمًا أَوْ شَاتَيْنِ. فَإِنْ لَمْ تَكُنْ عِنْدَهُ بِنْتُ مَخَاضٍ عَلَى وَجْهِهَا وَعِنْدَهُ ابْن لَبُونٍ فَإِنَّهُ يُقْبَلُ مِنْهُ وَلَيْسَ مَعَهُ شَيْءٌ. وَفِي صَدَقَةِ الْغَنَمِ فِي سَائِمَتِهَا إِذَا كَانَتْ أَرْبَعِينَ فَفِيهَا شَاة إِلَى عشْرين وَمِائَة شَاة فَإِن زَادَتْ عَلَى عِشْرِينَ وَمِائَةٍ إِلَى مِائَتَيْنِ فَفِيهَا شَاتَان. فَإِن زَادَتْ عَلَى مِائَتَيْنِ إِلَى ثَلَاثِمِائَةٍ فَفِيهَا ثَلَاثُ شِيَاهٍ. فَإِذَا زَادَتْ عَلَى ثَلَاثِمِائَةٍ فَفِي كُلِّ مِائَةٍ شَاةٌ. فَإِذَا كَانَتْ سَائِمَةُ الرَّجُلِ نَاقِصَةً مِنْ أَرْبَعِينَ شَاةً وَاحِدَةً فَلَيْسَ فِيهَا صَدَقَةٌ إِلَّا أَنْ يَشَاءَ رَبُّهَا. وَلَا تُخْرَجَ فِي الصَّدَقَة هرمة وَلَا ذَات عور وَلَا تَيْسٌ إِلَّا مَا شَاءَ الْمُصَدِّقُ. وَلَا يجمع بَين متفرق وَلَا يفرق بَين مُجْتَمع خَشْيَةَ الصَّدَقَةِ وَمَا كَانَ مِنْ خَلِيطَيْنِ فَإِنَّهُمَا يَتَرَاجَعَانِ بَيْنَهُمَا بِالسَّوِيَّةِ. وَفِي الرِّقَةِ رُبُعُ الْعُشْرِ فَإِنْ لَمْ تَكُنْ إِلَّا تِسْعِينَ وَمِائَةً فَلَيْسَ فِيهَا شَيْءٌ إِلَّا أَنْ يَشَاءَ رَبُّهَا. رَوَاهُ البُخَارِيّ

وعن أنس بن مالك: أن أبا بكر رضي الله عنه كتب له هذا الكتاب لما وجهه إلى البحرين: بسم الله الرحمن الرحيم هذه فريضة الصدقة التي فرض رسول الله صلى الله عليه وسلم على المسلمين والتي أمر الله عز وجل بها رسوله فمن سألها من المسلمين على وجهها فليعطها ومن سئل فوقها فلا يعط: في أربع وعشرين من الإبل فما دونها خمس شاة. فإذا بلغت خمسا وعشرين إلى خمس وثلاثين ففيها بنت مخاض أنثى فإذا بلغت ستا وثلاثين ففيها بنت لبون أنثى. فإذا بلغت ستة وأربعين إلى ستين ففيها حقة طروقة الجمل فإذا بلغت واحدة وستين ففيها جذعة. فإذا بلغت ستا وسبعين ففيها بنتا لبون. فإذا بلغت إحدى وتسعين إلى عشرين ومائة ففيها حقتان طروقتا الجمل. فإذا زادت على عشرين ومائة ففي كل أربعين بنت لبون وفي كل خمسين حقة. ومن لم يكن معه إلا أربع من الإبل فليس فيها صدقة إلا أن يشاء ربها. فإذا بلغت خمسا ففيها شاة ومن بلغت عنده من الإبل صدقة الجذعة وليست عنده جذعة وعنده حقة فإنها تقبل منه الحقة ويجعل معها شاتين إن استيسرتا له أو عشرين درهما. ومن بلغت عنده صدقة الحقة وليست عنده الحقة وعنده الجذعة فإنها تقبل منه الجذعة ويعطيه المصدق عشرين درهما أو شاتين. ومن بلغت عنده صدقة الحقة وليست إلا عنده بنت لبون فإنها تقبل منه بنت لبون ويعطي معها شاتين أو عشرين درهما. ومن بلغت صدقته بنت لبون وعنده حقة فإنها تقبل منه الحقة ويعطيه المصدق عشرين درهما أو شاتين. ومن بلغت صدقته بنت لبون وليست عنده وعنده بنت مخاض فإنها تقبل منه بنت مخاض ويعطى معها عشرين درهما أو شاتين. ومن بلغت صدقته بنت مخاض وليست عنده وعنده بنت لبون فإنها تقبل منه ويعطيه المصدق عشرين درهما أو شاتين. فإن لم تكن عنده بنت مخاض على وجهها وعنده ابن لبون فإنه يقبل منه وليس معه شيء. وفي صدقة الغنم في سائمتها إذا كانت أربعين ففيها شاة إلى عشرين ومائة شاة فإن زادت على عشرين ومائة إلى مائتين ففيها شاتان. فإن زادت على مائتين إلى ثلاثمائة ففيها ثلاث شياه. فإذا زادت على ثلاثمائة ففي كل مائة شاة. فإذا كانت سائمة الرجل ناقصة من أربعين شاة واحدة فليس فيها صدقة إلا أن يشاء ربها. ولا تخرج في الصدقة هرمة ولا ذات عور ولا تيس إلا ما شاء المصدق. ولا يجمع بين متفرق ولا يفرق بين مجتمع خشية الصدقة وما كان من خليطين فإنهما يتراجعان بينهما بالسوية. وفي الرقة ربع العشر فإن لم تكن إلا تسعين ومائة فليس فيها شيء إلا أن يشاء ربها. رواه البخاري

ব্যাখ্যা: আবূ বাকর (রহঃ) বাহরাইনে পত্র পাঠান। যার মধ্যে যাকাতের বর্ণনা ছিল। যার মধ্যে ছিল ২৪টি উট বা তার কমে থাকলে প্রত্যেক একটি উটে একটি করে ছাগল যাকাত আদায় করতে হবে। আর ২৫টি উট হলে ৩৫টি পর্যন্ত পূর্ণ এক বৎসরের একটি মেয়ে উট যাকাত দিবে। আর ৩৬ হতে ৪৫ পর্যন্ত ২ বৎসরের একটি মেয়ে উট আদায় করবে। আর ৪৬টি উট হতে ৬০ পর্যন্ত- এর মধ্যে ৩ বৎসরের একটি উট প্রদান করবে। আর ৬১ হতে ৭৫ পর্যন্ত চার বৎসরের একটি উট প্রদান করবে। আর ৭৬ হতে ৯০ পর্যন্ত দু’ বৎসরের দু’টি মেয়ে উট প্রদান করবে। আর প্রত্যেক ৫০টি ৩ বৎসরের একটি উট প্রদান করবে। আর যার চারটি মাত্র উট আছে তার মধ্যে যাকাত নেই।

প্রকাশ থাকে যে, যাকাতের মধ্যে বুড়া বা কানা অথবা ত্রুটিযুক্ত পশু দেয়া জায়িয নয়। আর যাকাতের ভয়ে শারীকী দু’জনের পশু পৃথক করা যাবে না অথবা দু’জনের আলাদা করা পশুকে এক স্থানে জমা করা যাবে না।

অত্র হাদীসে উটের ক্ষেত্রে কতগুলো পরিভাষা ব্যবহৃত হয়েছে। যথাঃ

১. بِنْتُ مَخَاضٍ (বিনতু মাখায) বলা হয় সেই উটশাবককে যেটির বয়স এক বছর পূর্ণ হয়ে দ্বিতীয় বছরে পদার্পণ করেছে।

২. بِنْتَ لَبُوْنٍ (বিনতু লাবুন) সে উষ্ট্রিকে বলা হয় যেটির বয়স দুই বছর পূর্ণ হয়ে তিন বছরে পদার্পণ করেছে।

৩. حِقَّةٌ (হিক্কাহ্) সেই উষ্ট্রিকে বলা হয় যেটির বয়স তিন বছর পূর্ণ হয়ে চার বছরে পদার্পণ করেছে এবং গর্ভধারণের উপযোগী হয়েছে।

৪. جَذَعَةُ (জাযা‘আহ্) বলা হয় সেই উষ্ট্রিকে যেটির বয়স চার বছর পূর্ণ হয়ে পঞ্চম বছরে পদার্পণ করেছে।

* উট, গরু এবং ছাগলের যাকাতের ক্ষেত্রে শর্ত হল বছর অধিকাংশ সময় চারণভূমিতে চারণশীল হতে হবে। অতএব গৃহপালিত এবং কাজের জন্য পালিত পশুতে কোন যাকাত নেই যেমনটি ইবনু কুদামাহ (রহঃ) বলেছেন, এবং এটিই অধিকাংশ ‘উলামাদের অভিমত। যদিও কেউ কেউ ভিন্নমত পোষণ করেছেন।

* রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উক্তি যাকাতের ভয়ে পৃথক প্রাণীকে একত্রিত বা একত্রিত প্রাণীকে পৃথক করা যাবে না এর অর্থ প্রতিটি পশুর মালিক এবং যাকাত আদায়কারী উভয়ের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।

মালিকের ক্ষেত্রে এর রূপটি হল এক ব্যক্তির চল্লিশটি ছাগল রয়েছে। যখন যাকাত আদায়কারী আসল তখন সে তার প্রাণীগুলোকে অপর এক ব্যক্তির চল্লিশটি ছাগলের সাথে মিশ্রিত করে ফেলল, যাতে উভয়ের পশুতে একটি ছাগল যাকাত লাগে এবং একটি থেকে যায়। যেহেতু আলাদা আলাদা থাকলে একটি করে উভয়ের দু’টি ছাগল যাকাত লাগত। তাই এ থেকে নিষেধ করা হয়েছে। এটি পৃথককে একত্রিত করার ক্ষেত্রে। মালিকের একত্রিত প্রাণীকে পৃথক করার রূপটি হল, দুই ব্যক্তির একত্রে চল্লিশটি ছাগল রয়েছে উভয়ের বিশটি করে। যখন যাকাত আদায়কারী আসলো তখন তারা উভয়ের প্রাণীগুলোকে আলাদা আলাদা করে নিল যাতে নিসাব পরিমাণ না হয় তাতে যাকাত না লাগে। তাই এরূপ করতে নিষেধ করা হয়েছে।

আর যাকাত আদায়কারীর ক্ষেত্রে পৃথক প্রাণীকে একত্রিত করার রূপটি হল, দুই ব্যক্তির পৃথকভাবে ২০ টি করে চল্লিশটি ছাগল রয়েছে। অতঃপর যাকাত আদায়কারী এসে তাদের উভয়ে প্রাণীগুলোকে একত্রিত করল যাতে তা নিসাব পরিমাণ হয়ে যায় এবং একটি ছাগল গ্রহণ করতে পারে। ফলে এ থেকে তাকে নিষেধ করা হয়েছে। আবার একত্রিত প্রাণীকে পৃথক করার রূপটি হল, তিন ব্যক্তির ৪০ টি করে একত্রে একশত বিশটি প্রাণী রয়েছে যাতে মাত্র একটি ছাগল যাকাত লাগে। অতঃপর যাকাত আদায়কারী এসে তাদের প্রাণীগুলোকে পৃথক করে ছাগল আলাদা করে ফেলল যাতে করে তাদের প্রত্যেকের কাছ থেকে একটি করে ছাগল আদায় করা যায়। তাই এই কাজ থেকে নিষেধ করা হয়েছে।

* চতুষ্পদ জন্তুর যাকাতের ক্ষেত্রে দুই বা ততোধিক ব্যক্তির প্রাণীর মিশ্রণ প্রভাব ফেলে যা অন্য কোন ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলে না। অর্থাৎ দুই ব্যক্তি বিশটি করে মোট ৪০ টি ছাগল একত্রে মিশ্রিত থাকলে তাতে একটি ছাগল যাকাত লাগে যদিও পৃথকভাবে তাদের প্রাণীর সংখ্যা নিসাবে পৌঁছেনি কিন্তু যেহেতু মিশ্রিত রয়েছে তাই তাতে যাকাত ফরয হচ্ছে। কিন্তু এই মিশ্রণটি চতুষ্পদ জন্তুর প্রাণী ব্যতীত অন্য কোন যাকাতের ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলবে না যতক্ষণ না প্রত্যেক ব্যক্তির সম্পদ পৃথকভাবে নিসাব পরিমাণ না হবে। আর চতুষ্পদ প্রাণীর মিশ্রণের ক্ষেত্রে প্রত্যেক অংশীদারের প্রাণী সংখ্যানুপাতে সমানভাবে যাকাতের হিসাবটি নিজেদের মাঝে করে নিবে।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৬: যাকাত (كتاب الزكاة) 6. Zakat

পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - যেসব জিনিসের যাকাত দিতে হয়

১৭৯৭-[৪] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে স্থান আকাশের অথবা প্রবাহিত কূপের পানিতে সিক্ত হয় অথবা যা নালার পানিতে তরতাজা হয়, তাতে ’উশর’ (দশভাগের একভাগ) আদায় করতে হবে। আর যে সব ফসল সেচের মাধ্যমে উৎপাদিত হয় তাতে নিসফে উশর (বিশ ভাগের এক ভাগ) আদায় করতে হবে। (বুখারী)[1]

بَابُ مَا يَجِبُ فِيْهِ الزَّكَاةُ

وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «فِيمَا سَقَتِ السَّمَاءُ وَالْعُيُونُ أَوْ كَانَ عَثَرِيًّا الْعُشْرُ. وَمَا سقِِي بالنضح نصف الْعشْر» . رَوَاهُ البُخَارِيّ

وعن عبد الله بن عمر عن النبي صلى الله عليه وسلم قال: «فيما سقت السماء والعيون أو كان عثريا العشر. وما سقي بالنضح نصف العشر» . رواه البخاري

ব্যাখ্যা: যে জমিনের ফসল উৎপন্ন হয় বৃষ্টির পানিতে এবং নদীর বা খালের পানিতে অথবা বিনা পানি দেয়াতে, তার মধ্যে এক দশমাংশ ‘উশর ফরয হয় আর পানি ছেঁচে দিলে বিশভাগে একভাগ ‘উশর আদায় করতে হয়। ‘উশর সেই জমিনের ফসলেও দিতে হবে যার কৌস বা খাজনা সরকারকে দিতে হয়। তবে এ সকল ক্ষেত্রে শর্ত উৎপাদিত ফসল, শস্য বা ফল নিসাব পরিমাণ হতে হবে। আর তা হল পাঁচ ওয়াসাক্ব বা প্রায় ১৯ মণ। যদি কোন ফসল বা শস্য বৃষ্টির পানি এবং সেঁচের পানির উভয়টির মাধ্যমে উৎপাদিত হয়, তাহলে যেটির পরিমাণ বেশি হবে তার আলোকে ‘উশর বের করবে। আর যদি উভয়টি সমান হয় অর্থাৎ কোন ফসল উৎপাদনে দুইবার বৃষ্টির পানি এবং দুইবার সেঁচের পানি লাগে তাহলে তাতে আহলে ‘ইলমদের মতানুসারে দশভাগের তিন চতুর্থাংশ ‘উশর লাগবে।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৬: যাকাত (كتاب الزكاة) 6. Zakat

পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - যেসব জিনিসের যাকাত দিতে হয়

১৭৯৮-[৫] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন জানোয়ার (যেমন- ঘোড়া, গরু, মহিষ ইত্যাদি) কাউকে আহত করলে তা মাফ। কূপ খনন করতে কেউ মারা গেলে তাতে মালিকের ওপর ক্ষতিপূরণ মাফ। তেমনি খনি খনন করতে কেউ মারা গেলেও মালিকের দোষ মাফ। আর রিকাযে এক-পঞ্চমাংশ অংশ দেয়া ওয়াজিব। (বুখারী, মুসলিম)[1]

بَابُ مَا يَجِبُ فِيْهِ الزَّكَاةُ

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم: «العجماء جرحها جَبَّار والبشر جَبَّار والمعدن جَبَّار وَفِي الرِّكَاز الْخمس»

وعن أبي هريرة رضي الله عنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «العجماء جرحها جبار والبشر جبار والمعدن جبار وفي الركاز الخمس»

ব্যাখ্যা: পশু যদি কাউকে আহত করে তাহলে তার মালিক-এর উপর ক্ষতিপূরণ দেয়া লাগবে না। কূয়া খননের সময় কেউ মারা গেলে মালিককে ক্ষতিপূরণ দেয়া লাগে না। আর স্বর্ণ-রৌপ্যের খনিতে কাজ করায় মারা গেলে মালিককে ক্ষতিপূরণ দিতে হয় না। জাহিলী যুগের গচ্ছিত সম্পদে ৫ ভাগ যাকাত ওয়াজিব হয়।

হানাফী মাযহাব অনুসারে খনি হতে উঠানো সকল জিনিসকে রিকায বলা হয়, যার মধ্যে পাঁচ ভাগের এক ভাগ যাকাত আদায় করা ওয়াজিব। ইমাম হুমাম (রহঃ) বলেনঃ রিকায খনি ও ধন-ভান্ডার উভয়কেই বুঝায়। আর ইমাম মালিক, শাফি‘ঈ, আহমাদ এবং জমহূর ‘উলামাতের মত যে, রিকায জাহিলী যুগের মাটির নিচে দাফন করা মালকে বুঝানো হয়েছে। খনিকে বুঝানো হয়নি। খনির মধ্যে খুমুস বের করতে হয় না। বরং তাতে যাকাত বের করতে হয়।

কোন জানোয়ার/চতুষ্পদ জন্তুর দিনের বেলা একাকী থাকাবস্থায় কারো কোন ক্ষতি করলে তার কোন যামানাত বা ক্ষতিপূরণ নেই- এ ব্যাপারে সকল ‘উলামা একমত। তবে প্রাণীর সাথে কোন লোক থাকাবস্থায় যদি সে প্রাণী কারো কোন ক্ষতি করে তাহলে এ ক্ষেত্রে ‘উলামাদের মতভেদ রয়েছে। ইমাম আবূ হানীফাহ্ (রহঃ) বলেন, আহলে যাহিরগণের মতে কোন অবস্থাতে কোন প্রকার ক্ষতিপূরণ লাগবে না। তবে চালকের বিষয়টিকে হানাফীদের কেউ কেউ এর থেকে আলাদা করেছেন। আর ইমাম শাফি‘ঈ (রহঃ)-এর মতে এ ক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণ লাগবে।

আর যদি রাত্রিতে প্রাণী কারো কোন ক্ষতিসাধন করে তাহলে জমহুর ‘উলামাগণের মতে এক্ষেত্রে মালিকের ক্ষতিপূরণ লাগবে। কারণ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, রাত্রিতে চতুষ্পদজন্তু সংরক্ষণের দায়িত্ব মালিকের।

* কূয়ার ক্ষেত্রে বিষয়টি হল বিরাণ ভূমিতে মালিকানামুক্ত কোন কূপে যদি কোন মানুষ বা অন্য কিছু পড়ে মারা যায় বা ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাহলে এর কোন ক্ষতিপূরণ নেই। অনুরূপ যদি কেউ তার অধিনস্ত ভূমিতে কূপ খনন করে এবং তাতে কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে বা কূপ খননের শ্রমিকের ওপর মাটি ধসে সে মারা যায় তাহলে এ ক্ষেত্রেও কোন প্রকার ক্ষতিপূরণ নেই। তবে যদি কোন মুসলিমদের পথে বা পূর্ব অনুমতি ছাড়াই অন্যের ভূমিতে কেউ কূপ খনন করে আর তাতে যে কোন ভাবে কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাহলে এর ক্ষতিপূরণ তাকে দিতে হবে।

* (مَعْدِن) (মা‘দিন) বলা হয় মাটির নিচে স্বর্ণ, রৌপ্য, লোহা, কয়লা, তৈল, হীরা প্রভৃতি যেসব খনিজ পদার্থ লুকায়িত থাকে, তার খনিকে সেই খনি খনন করতে গিয়ে কেউ যদি তাতে পতিত হয়ে মারা যায় বা খনি ধসে মারা যায় তাহলে তার কোন ক্ষতিপূরণ নেই। তবে তাতে যাকাত অবশ্যই আবশ্যক হবে। খনির ক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণের বিধানগুলো কুয়ার বিধানগুলোর ন্যায়।

* (رِكَازُ) (রিকায) বলা হয় জমিনের অভ্যন্তরে গচ্ছিত সম্পদকে। যদি সে গচ্ছিত রাখা সম্পদ কোন মুসলিমের হয়ে থাকে যা কোন চিহ্নের মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া যায় তাহলে তা لُقَطَةُ বা কুড়িয়ে পাওয়ার বিধানের অন্তর্গত হবে। অর্থাৎ তা একবছর যাবৎ প্রচার করতে হবে। আর যদি সে গচ্ছিত রাখা সম্পদ কোন অমুসলিমের হয় যা তাদের কোন চিহ্নের মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া যায় তাহলে তাতে خُمُسُ (খুমুস) বা এক পঞ্চমাংশ আবশ্যক। মা‘দিন এবং রিকায একই শ্রেণীভুক্ত না আলাদা এ বিষয়ে ‘উলামাগণ মতবিরোধ করেছেন।

হানাফী মাযহাবের মতে উভয়ইটি একই শ্রেণীভুক্ত এবং তাতে এক-পঞ্চমাংশ আবশ্যক। অন্যরা বলেছেন, দু’টি আলাদা এবং উভয়টির বিধানও আলাদা। অর্থাৎ রিকাযের ক্ষেত্রে এক-পঞ্চমাংশ আবশ্যক আর মা‘দিনের ক্ষেত্রে যাকাত দিতে হবে। দ্বিতীয় অভিমতই সঠিক যা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অত্র হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। যেখানে তিনি দু’টির মাঝে পার্থক্য সূচনা করেছেন। রিকায বিষয়ক কতগুলো মাস্আলাহ্ হলঃ

* রিকায বা গচ্ছিত রাখা সম্পদের কম বেশির মাঝে কোন পার্থক্য নেই। অর্থাৎ কম বেশি যাই হোক তাতে এক-পঞ্চমাংশ যাকাত ওয়াজিব। এ ক্ষেত্রে নিসাবের শর্ত নেই।

* এতে এক বছর পূর্ণ হওয়ার কোন শর্ত নেই। বরং তা সাথে সাথে আদায় করতে হবে।

* স্বর্ণ, রৌপ্যসহ সকল পুঁতে রাখা সম্পদে এক-পঞ্চমাংশ আবশ্যক। তবে এ এক-পঞ্চমাংশের ব্যয়খাত নিয়ে ‘উলামাদের মতভেদ আছে। ইমাম মালিক, আবূ হানীফা, আহমাদ (রহঃ) এবং জমহুরের মতে এর ব্যয়খাতটি ফাইয়ের এক-পঞ্চমাংশের ব্যয়খাতের ন্যায়। আর এটি সঠিক অভিমত। ইমাম শাফি‘ঈ (রহঃ)-এর মতে এর ব্যয়খাতটি যাকাতের ব্যয়খাতের অন্তর্গত।

* ইবনু কুদামাহ্ (রহঃ) বলেছেন, মুসলিম, যিম্মী, স্বাধীন ব্যক্তি, দাস, মুকাতাব দাস, ছোট, বড়, বুদ্ধিমান ও পাগল যেই পুতে রাখা সম্পদ পাবে তাকেই এক-পঞ্চমাংশ দিতে হবে। তবে যদি দাস পায় তাহলে অবশিষ্ট চার-পঞ্চমাংশের মালিক হবে তার মনিব। আর যদি মুকাতাব গোলাম পায় তাহলে অবশিষ্টাংশের মালিক সেই হবে। কেননা এটি তার উপার্জনের অন্তর্গত। এটিই অধিকাংশ ‘উলামাদের অভিমত।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৬: যাকাত (كتاب الزكاة) 6. Zakat
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ৫ পর্যন্ত, সর্বমোট ৫ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে