পরিচ্ছেদঃ ৩৭. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - রমাযান মাসের ক্বিয়াম (তারাবীহ সালাত)

১৩০১-[৭] ’আবদুর রহমান ইবনু ’আবদুল ক্বারী (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার রমাযান মাসের রাত্রে ’উমার ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ)-এর সঙ্গে আমি মসজিদে গেলাম। সেখানে গিয়ে দেখলাম মানুষ অমীমাংসিত বিক্ষিপ্ত অবস্থায়। কেউ একা একা নিজের সালাত আদায় করছে। আর কারো পেছনে ছোট একদল সালাত আদায় করছে এ অবস্থা দেখে ’উমার (রাঃ) বললেন, আমি যদি সকলকে একজন ইমামের পেছনে জমা করে দেই তাহলেই চমৎকার হবে। তাই তিনি এ কাজের ইচ্ছা পোষণ করে ফেললেন এবং সকলকে উবাই ইবনু কা’ব-এর পেছনে জমা করে তাকে তারাবীহ সালাতের জন্যে লোকের ইমাম বানিয়ে দিলেন।

’আবদুর রহমান বলেন, এরপর আমি একদিন ’উমারের সঙ্গে মসজিদে গেলাম। সকল লোককে দেখলাম তারা তাদের ইমামের পেছনে (তারাবীহের) সালাত আদায় করছে। ’উমার (রাঃ) তা দেখে বললেন, ’’উত্তম বিদ্’আত’’। আর তারাবীহের এ সময়ের সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) তোমাদের ঘুমিয়ে থাকার সময়ের সালাতের চেয়ে ভাল। এ কথার দ্বারা ’উমার (রাঃ) বুঝাতে চেয়েছেন শেষ রাতকে। অর্থাৎ তারাবীহের রাতের প্রথমাংশের চেয়ে শেষাংশে আদায় করাই উত্তম। ঐ সময়ের লোকেরা তারাবীহের সালাত প্রথম ভাগে আদায় করে ফেলতেন। (বুখারী)[1]

عَن عبد الرَّحْمَن بن عبد الْقَارِي قَالَ: خَرَجْتُ مَعَ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ لَيْلَةً فِي رَمَضَان إِلَى الْمَسْجِدِ فَإِذَا النَّاسُ أَوْزَاعٌ مُتَفَرِّقُونَ يُصَلِّي الرَّجُلُ لِنَفْسِهِ وَيُصَلِّي الرَّجُلُ فَيُصَلِّي بِصَلَاتِهِ الرَّهْطُ فَقَالَ عمر: إِنِّي أرى لَوْ جَمَعْتُ هَؤُلَاءِ عَلَى قَارِئٍ وَاحِدٍ لَكَانَ أَمْثَلَ ثُمَّ عَزَمَ فَجَمَعَهُمْ عَلَى أُبَيِّ بْنِ كَعْب ثُمَّ خَرَجْتُ مَعَهُ لَيْلَةً أُخْرَى وَالنَّاسُ يُصَلُّونَ بِصَلَاة قارئهم. قَالَ عمر رَضِي الله عَنهُ: نعم الْبِدْعَةُ هَذِهِ وَالَّتِي تَنَامُونَ عَنْهَا أَفْضَلُ مِنَ الَّتِي تَقُومُونَ. يُرِيدُ آخِرَ اللَّيْلِ وَكَانَ النَّاسُ يقومُونَ أَوله. رَوَاهُ البُخَارِيّ

عن عبد الرحمن بن عبد القاري قال خرجت مع عمر بن الخطاب ليلة في رمضان الى المسجد فاذا الناس اوزاع متفرقون يصلي الرجل لنفسه ويصلي الرجل فيصلي بصلاته الرهط فقال عمر اني ارى لو جمعت هولاء على قارى واحد لكان امثل ثم عزم فجمعهم على ابي بن كعب ثم خرجت معه ليلة اخرى والناس يصلون بصلاة قارىهم قال عمر رضي الله عنه نعم البدعة هذه والتي تنامون عنها افضل من التي تقومون يريد اخر الليل وكان الناس يقومون اوله رواه البخاري

ব্যাখ্যা: ‘উমার বিন খাত্ত্বাব (রাঃ) তাদের পুরুষগণকে ১৪ হিজরীতে তারাবীহের এক জামা‘আত প্রতিষ্ঠার জন্য একত্রিত করলেন এবং উবাই ইবনু কা‘ব (রাঃ)-কে মুসল্লীদের সাথে তারাবীহের সালাত আদায়ের ইমাম নিযুক্ত করলেন যেন তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর এই কথা (কুরআনুল কারীম সম্পর্কে অভিজ্ঞ ব্যক্তি ক্বওমের ইমাম নিযুক্ত হবে) উপরেই ‘আমল করলেন।

‘উমার ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) বলেনঃ আমাদের ক্বারী হলেন উবাই (রাঃ)।

(نعمت البدعة) বুখারীর অপর বর্ণনায় (نعم البدعة) অর্থাৎ ت ছাড়া। হাফিয আসক্বালানী (রহঃ) কোন কোন রিওয়ায়াতে (نعمت البدعة) তথা ت বৃদ্ধি করেছেন। هذه এর দ্বারা বড় জামা‘আত উদ্দেশ্য বৃহৎ জামা‘আত, মূল তারাবীহ কিংবা তারাবীহের জামা‘আত উদ্দেশ্য নয়। কেননা এ দু’টিই (জামা‘আত ও তারাবীহ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কর্ম থেকেই সাব্যস্ত রয়েছে। ইমাম তাক্বীউদ্দীন ইবনু তায়মিয়্যাহ্ (রহঃ) মিনহাজু সুন্নাহয় বলেছেন যে, এ কথা প্রমাণিত রয়েছে যে, মানুষগণ রমাযানের রাতের সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে জামা‘আতবদ্ধভাবে আদায় করতেন এবং এটাও প্রমাণিত রয়েছে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে দু’দিন কিংবা তিনদিন রমাযানের রাতের সালাত আদায় করেছেন।

শাতুবী (রহঃ) আল ই‘তিসাম গ্রন্থে বলেন, রমাযান মাসে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মসজিদে তারাবীহের সালাত আদায় করা ও মুসল্লীদের তাঁর পিছনে জমায়েত হওয়ার দ্বারা তারাবীহের জামা‘আতের উপর দলীল প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে । সহীহ হাদীসে রয়েছে,

أن رسول الله - صلى الله عليه وسلم - صلى ذات ليلة في المسجد، فصلى بصلاته ناس.

‘আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন এক রাতে মসজিদে সালাত আদায় করলেন। এ সহীহ হাদীস প্রমাণ করে যে, রমাযানে জামা‘আতের সাথে রাতের সালাত আদায় করা সুন্নাত। কেননা রমাযান মাসে রাতের সালাতে মসজিদে জামা‘আত করার ক্ষেত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ক্বিয়ামই সর্বোত্তম দলীল। আর ফরয হওয়ার আশংকায় নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জামা‘আতে অংশগ্রহণ না করাটা মুত্বলাক্বভাবে তারাবীহ নিষেধের দলীল নয়। কারণ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জামানা ছিল ওয়াহী নাযিল হওয়ার যামানা, শার‘ঈ বিধান নাযিলের যামানা। কাজেই লোকজন যখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে সংঘবদ্ধভাবে কোন ‘আমল করবে তখন তা ওয়াহী অবতীর্ণ হওয়ার মাধ্যমে আবশ্যক হয়ে যেতে পারে। সুতরাং যখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ইন্তিকালের মধ্য দিয়ে শার‘ঈ বিধান নাযিলের সম্ভাবনা দূর হয়ে গেল, তখন বিষয়টি মূলের দিকেই ফিরে যাবে এবং তার বৈধতাই অটুট থাকবে।

যদি কেউ বলেন যে, ‘উমার (রাঃ) তারাবীহের সালাতকে বিদ্‘আত বলে সম্বোধন করেছেন এবং তাকে উত্তম বলেছেন (نعمت البدعة هذه) বলার মাধ্যমে। কাজেই শারী‘আতে মধ্যে বিদ্‘আতে হাসানাহ্ মুত্বলাক্বভাবেই সাব্যস্ত হচ্ছে।

তার উত্তরে বলব যে, ‘উমার ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) বিদ্‘আত (بدعة) শব্দটি উচ্চারণ করেছেন বাহ্যিক অবস্থার দিক লক্ষ্য করে, কারণ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা (তারাবীহের সালাত) খন্ড জামা‘আতের উপর ছেড়ে দিয়েছেন এবং আবূ বাকর (রাঃ)-এর যামানায় তা (বড় জামা‘আত) চালু হয়নি এ দৃষ্টিকাণ থেকে তিনি بدعة বিদ‘আত বলেছেন, অবশ্যই তা অর্থগত বিদ‘আত নয়। কাজেই এর ভিত্তিতে বিদ‘আতে হাসানাহ নামকরণের কোন যুক্তিকতা নেই।

ইবনু রজব তার শারহু আল খামসিন গ্রন্থের ১৯১ পৃষ্ঠায় বলেছেন যে, ‘উলামাগণ বিদ্‘আতের কতকগুলোকে যে হাসানাহ্ বলে সম্বোধন করেছেন তা মূলত বিদ্‘আত আল লাগবিয়াহ্ (بدعة اللغوية), তা শারী‘আত নয়, (‘‘বিদ্‘আতে হাসানাহ্’’ শার‘ঈ কোন পরিভাষা নয়) ইবনু তায়মিয়্যাহ্ (রহঃ) বলেন, ‘উমার (রাঃ) যে (بدعة) শব্দটি উচ্চারণ করেছেন তা শব্দগত উচ্চারণ, অবশ্যই তা শার‘ঈ কোন বিদ‘আত (بدعة) নয়। কারণ শার‘ঈ বিদ‘আত হলো গোমরাহী, যা শার‘ঈ কোন প্রমাণ ছাড়াই করা হয়, যেমন আল্লাহ তা‘আলা যা ভালবাসেন না তা ভালবাসা বা মুস্তাহাব মনে করা, আল্লাহ তা‘আলা যা ওয়াজিব করেননি তা ওয়াজিব হিসেবে গ্রহণ করা। আল্লাহ তা‘আলা যা হারাম করেননি তা হারাম করা।

হাফিয আসক্বালানী (রহঃ) বলেন যে, ‘উমার (রাঃ)-এর প্রকাশ্য ঘোষণা যে, রাতের সালাত শেষ রাতে আদায় করাটা রাতের প্রথমাংশে আদায়ের চাইতে উত্তম। তবে এটার দ্বারা এ দলীল সাব্যস্ত হচ্ছে না যে, একক সালাত তথা রাত্রের সালাত একাকী আদায় করা জামা‘আতের চেয়ে উত্তম আল্লামা ত্বীবী (রহঃ) বলেন যে, এটা এ মর্মে সতর্কবাণী যে, নিশ্চয় তারাবীহের সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) শেষ রাত্রে আদায় করা উত্তম।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৪: সালাত (كتاب الصلاة) 4. Prayer

পরিচ্ছেদঃ ৩৭. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - রমাযান মাসের ক্বিয়াম (তারাবীহ সালাত)

১৩০২-[৮] সায়িব ইবনু ইয়াযীদ (রাঃ)থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ’উমার (রাঃ) উবাই ইবনু কা’ব ও তামীম আদ্ দারী-কে আদেশ করলেন যেন তারা লোকেদেরকে নিয়ে রমাযান মাসের রাতের এগার রাক্’আত তারাবীহের সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করে। এ সময় ইমাম তারাবীহের সালাতে এ সূরাগুলো পড়তেন। যে সূরার প্রত্যেকটিতে একশতের বেশী আয়াত ছিল। বস্ত্ততঃ ক্বিয়াম (কিয়াম) বেশী লম্বা হওয়ার কারণে আমরা আমাদের লাঠির উপর ভর করে দাঁড়িয়ে ফাজ্‌রের (ফজরের) নিকটবর্তী সময়ে সালাত শেষ করতাম। (মালিক)[1]

وَعَن السَّائِب بن يزِيد قَالَ: أَمَرَ عُمَرُ أُبَيَّ بْنَ كَعْبٍ وَتَمِيمًا الدَّارِيَّ أَنْ يَقُومَا لِلنَّاسِ فِي رَمَضَانَ بِإِحْدَى عَشْرَةَ رَكْعَةً فَكَانَ الْقَارِئُ يَقْرَأُ بِالْمِئِينَ حَتَّى كُنَّا نَعْتَمِدُ عَلَى الْعَصَا مِنْ طُولِ الْقِيَامِ فَمَا كُنَّا نَنْصَرِفُ إِلَّا فِي فُرُوعِ الْفَجْرِ. رَوَاهُ مَالك

وعن الساىب بن يزيد قال امر عمر ابي بن كعب وتميما الداري ان يقوما للناس في رمضان باحدى عشرة ركعة فكان القارى يقرا بالمىين حتى كنا نعتمد على العصا من طول القيام فما كنا ننصرف الا في فروع الفجر رواه مالك

ব্যাখ্যা: (إِحْدى عَشْرَةَ رَكْعَةً) এটি একটি বক্তব্য যে, ‘উমার (রাঃ) ক্বিয়ামে রমাযানের উপর মানুষ একত্রিত করেছিলেন এবং তাদেরকে বিতরসহ এগার রাক্‘আত আদায়ের নির্দেশ দিয়েছেন এবং তার যামানায় সাহাবী এ তাবি‘ঈনগণ পূর্বে আলোচিত ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর হাদীস অনুপাতে এগার রাক্‘আত তারাবীহের সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করতেন। ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমাযান কিংবা অন্য মাসে এগার রাক্‘আতের বেশী রাতের সালাত আদায় করতেন না এবং জাবির (রাঃ)-এর বর্ণিত হাদীস পূর্বে আলোচিত হয়েছে যে, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের সাথে রমাযান মাসে আট রাক্‘আত (সালাতুল লায়ল) আদায় করতেন।

আল্লামা ‘আয়নী (রহঃ) ‘শারহুল বুখারী’ গ্রন্থের ১১ খন্ডের ১২৬ পৃষ্ঠায় বলেছেন যে, রমাযানের ক্বিয়াম (কিয়াম) বা তারাবীহ মুস্তাহাব, রাক্‘আত সংখ্যা সম্পর্কে ‘উলামাদের মাঝে অনেক মতপার্থক্য রয়েছে।

(১) কেউ বলেছেন তারাবীহের রাক্‘আত সংখ্যা ৪১ রাক্‘আত, আল্লামা ‘আয়নী (রহঃ) বলেনঃ ইবনু ‘আবদুল বার আল ইস্তিযকার গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন যে, আসওয়াদ ইবনু ইয়াযীদ (রহঃ) ৪০ রাক্‘আত তারাবীহ ও ৭ রাক্‘আত বিতর পড়তেন,

(২) কারো কারো মতে ক্বিয়ামে রমাযান ৩৮ রাক্‘আত,

(৩) কারো কারো মতে ৩৬ রাক্‘আত,

(৪) কারো মতে ৩৪ রাক্‘আত,

(৫) কারো মতে ২৮ রাক্‘আত,

(৬) কারো মতে ২৪ রাক্‘আত,

(৭) কারো মতে ২০ রাক্‘আত, ইমাম আত্ তিরমিযী অধিকাংশ বিদ্বানদের থেকে বর্ণনা করেছেন এবং এটাই হানাফীদের কথা,

(৮) কারো মতে ক্বিয়ামে রমাযান বা তারাবীহের সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) বিতরসহ এগারো রাক্‘আত এবং এ মতই ইমাম মালিক (রহঃ) তার নিজের জন্য পছন্দ করেছেন, ইবনু আরাবী ও এ মতকেই পছন্দ করেছেন। আল্লামা সুয়ূতী (রহঃ) তার ‘আল মাসাবীহ ফী সালাতিত্ তারাবীহ’ নামক গ্রন্থে বলেছেন যে, ইবনুল জাওযী (রহঃ) বলেনঃ আমাদের সাথী ইমাম মালিক (রহঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি বলেন, ‘উমার (রাঃ) ১১ রাক্‘আতের জামা‘আত চালু করেছিলেন। এটাই আমার নিকট পছন্দনীয় অভিমত এবং এটাই নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সালাত। তাকে জিজ্ঞেস করা হলো যে, বিতর সহ কি ১১ রাক্‘আত? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ! এবং তিনি বলেন যে, এই যে রাক্‘আতের আধিক্য (১১, ৩৮, .....) কথায় হতে বর্ণনা করা হয়েছে তা আমি জানি না।

তিরমিযীর ব্যাখ্যায় আল্লামী ‘ইরাক্বী (রহঃ) বলেন, সর্ব প্রসিদ্ধ প্রাধান্য ও পছন্দনীয় এবং দলীলগত দিক দিয়ে অধিক মজবুত মত হলো সর্বশেষ মত যা ইমাম মালিক (রহঃ) নিজের জন্য পছন্দ করছেন তা হলো ১১ রাক্‘আত এবং এটাই নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বিশুদ্ধ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত এবং সেটার প্রতি (১১ রাক্‘আত তারাবীহ) ‘উমার ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) নির্দেশ দিয়েছিলেন। অবশিষ্ট মতগুলোর একটিও বিশুদ্ধ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত নয় এবং খুলাফায়ে রাশিদীনদের পক্ষ থেকে এ মর্মে বিশুদ্ধ আসারেও কোন নির্দেশ প্রমাণিত হয়নি। এরপর তিনি (ইরাকী) ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) ও জাবির (রাঃ)-এর ১১ রাক্‘আত সংক্রান্ত হাদীসদ্বয় উল্লেখ করেছেন।

দৃষ্টি আকর্ষণঃ

কতিপয় লোকদের পক্ষ থেকে দাবী করা হয় যে, তারাবীহের সালাত ২০ রাক্‘আতের ক্ষেত্রে ইজমা তথা ‘উলামাগণের ঐকমত্য রয়েছে এবং বিভিন্ন শহরে এটারই বাস্তবায়ন রয়েছে।

জবাবে আমাদের শাইখ আল্লামা ইরাকী (রহঃ) বলেন, কিয়ামে রমাযান বা তারাবীহ ২০ রাক্‘আত এবং তা বিভিন্ন শহরে বাস্তবায়িত হওয়ার দাবি করাটা সম্পূর্ণ মিথ্যা।

এটা কিভাবে সম্ভব? অথচ আমরা আল্লামা ‘আয়নী (রহঃ)-এর কথায় জেনেছি। এ ব্যাপারে অনেক বক্তব্য বা মতামত রয়েছে, নিশ্চয় ইমাম মালিক (রহঃ) বলেছেন যে, এ ‘আমল অর্থাৎ ৩৮ রাক্‘আত ক্বিয়ামে রমাযান ও এক রাক্‘আত বিতরের উপর ‘আমল শতাধিক বছর পূর্ব হতে আজ অবধি মদীনায় প্রচলিত ছিল এবং তিনি নিজ শহরের জন্য বিতর সহ ১১ রাক্‘আত মনোনীত করেছেন এবং আস্ওয়াদ ইবনু ইয়াযীদ আন নাখ‘ঈর মত শ্রেষ্ঠ ফক্বিহ, ৪০ রাক্‘আত তারাবীহ ও ৭ রাক্‘আত বিতর আদায় করেছেন,আরো অবশিষ্ট মত যা ‘আয়নী (রহঃ) উল্লেখ করেছেন (৩৮, ৩৬, ৩৪, ২৮, ২৪ ..... রাক্‘আত) তাহলে ২০ রাক্‘আত ক্বিয়ামে রমাযান বা তারাবীহের অস্তিত্ব থাকল কোথায় বিভিন্ন শহরে এর (২০ রাক্‘আত তারাবীহ) বাস্তবায়নই বা থাকল কোথায়?


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৪: সালাত (كتاب الصلاة) 4. Prayer

পরিচ্ছেদঃ ৩৭. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - রমাযান মাসের ক্বিয়াম (তারাবীহ সালাত)

১৩০৩-[৯] আ’রাজ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা সব সময় লোকদেরকে (সাহাবীদেরকে) পেয়েছি তারা রমাযান মাসে কাফিরদের ওপর লা’নাত বর্ষণ করতেন। সে সময় ক্বারী অর্থাৎ তারাবীহের সালাতের ইমামগণ সূরাহ্ আল বাক্বারাহ্-কে আট রাক্’আতে পড়তেন। যদি কখনো সূরাহ্ আল বাক্বারাহ্-কে বারো রাক্’আতে পড়ত, তাহলে লোকেরা মনে করত ইমাম সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) সংক্ষেপ করে ফেলেছেন। (মালিক)[1]

وَعَن الْأَعْرَج قَالَ: مَا أَدْرَكْنَا النَّاسَ إِلَّا وَهُمْ يَلْعَنُونَ الْكَفَرَةَ فِي رَمَضَانَ قَالَ: وَكَانَ الْقَارِئُ يَقْرَأُ سُورَةَ الْبَقَرَةِ فِي ثَمَانِ رَكَعَاتٍ وَإِذَا قَامَ بِهَا فِي ثِنْتَيْ عَشْرَةَ رَكْعَةً رَأَى النَّاسُ أَنه قد خفف. رَوَاهُ مَالك

وعن الاعرج قال ما ادركنا الناس الا وهم يلعنون الكفرة في رمضان قال وكان القارى يقرا سورة البقرة في ثمان ركعات واذا قام بها في ثنتي عشرة ركعة راى الناس انه قد خفف رواه مالك

ব্যাখ্যা: রমাযানের বিতর সালাতে সাহাবী ও তাবি‘ঈনগণ কাফিরদেরকে অভিসম্পাত করতেন। আল্লামা ত্বীবী (রহঃ) বলেন যে সম্ভবত এখানে লা‘নাত দ্বারা উদ্দেশ্য হলো যেহেতু কাফিররা আল্লাহ তা‘আলা যে মাসকে সম্মান দিয়েছেন সে মাসকে তারা সম্মান করেনি এবং যে মাসে কুরআনুল কারীম অবতীর্ণ হয়েছে সে মাসে তারা (কাফিররা) হিদায়াতপ্রাপ্ত হয়নি বা হিদায়াতের পথে আসেনি বিধায় তারা তাদের ওপর লা‘নাত পাওয়ার মাধ্যমেই তার জবাব পেয়েছে।

আল্লামা ক্বারী (রহঃ) বলেন যে, সম্ভবত এ অভিসম্পাতটি রমাযানের শেষোর্ধেকের সাথে খাস ‘উমার (রাঃ) থেকে সহীহ সানাদে বর্ণিত রয়েছে যে,

السنة إذا انتصف رمضان أن يلعن الكفرة في آخر ركعة من الوتر بعد ما يقول القاري: سمع الله لمن حمده، ثم يقول اللهم العن الكفرة.

অর্থাৎ, সুন্নাত হলো রমাযানের অর্ধেক অতিবাহিত হলে বিতরের শেষ রাক্‘আতে কাফিরদেরকে অভিসম্পাত করা। ইমাম سمع الله لمن حمده (সামি‘আল্ল-হু লিমান হামিদাহ) বলার পর বলবে اللهم العن الكفرة (আল্ল-হুম্মাল ‘আনিল কাফারাহ্) অর্থাৎ হে আল্লাহ! কাফিরদের ধ্বংস করো। (আবূ দাঊদ)

আর যখন ‘উমার (রাঃ) ‘উবাই ইবনু কা‘ব (রাঃ)-এর নেতৃত্বে লোকজনকে তারাবীহের জন্য জমায়েত করলেন তখন ‘উবাই ইবনু কা‘ব (রাঃ) রমাযানের দ্বিতীয়ার্ধেক ছাড়া কুনূত পড়তেন না।

(ثِنْتَيْ عَشْرَةَ رَكْعَةً) এখানে এ দলীল সাব্যস্ত হচ্ছে যে, সসহাবায়ে কিরামগণের একটি দল আট রাক্‘আতের বেশী সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করেছেন রমাযান মাসে। তবে এতে কোন অসুবিধা নেই, কেননা তা নফল; আর নফল সালাতের কোন সীমা নেই, কাজেই তাতে রুকূ'-সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) বৃদ্ধি করা (বেশী বেশী নফল সালাত আদায় করা) বৈধ।

কারণ সালফে সালিহীনদের একদল ৪১ রাক্‘আত সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করেছেন। তবে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুন্নাতী ‘আমল হলো ১১ রাক্‘আত, যা (নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে) সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৪: সালাত (كتاب الصلاة) 4. Prayer

পরিচ্ছেদঃ ৩৭. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - রমাযান মাসের ক্বিয়াম (তারাবীহ সালাত)

১৩০৪-[১০] ’আবদুল্লাহ ইবনু আবূ বকর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি উবাইকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, আমরা রমাযান মাসে ’ক্বিয়াম (কিয়াম)’ অর্থাৎ তারাবীহের সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) শেষ করে ফিরতাম রাত শেষ হয়ে সাহরীর সময় থাকবে না ভয়ে খাদিমদেরকে তাড়াতাড়ি খাবার দিতে বলতাম। অন্য এক সূত্রের ভাষ্য হলো, ফাজ্‌রের (ফজরের) সময় হয়ে যাবার ভয়ে (খাদিমদেরকে দ্রুত খাবার দিতে বলতাম)। (মালিক)[1]

وَعَن عبد الله
بن أبي بكر قَالَ: سَمِعت أبي يَقُولُ: كُنَّا نَنْصَرِفُ فِي رَمَضَانَ مِنَ الْقِيَامِ فَنَسْتَعْجِلُ الْخَدَمَ بِالطَّعَامِ مَخَافَةَ فَوْتِ السَّحُورِ. وَفِي أُخْرَى مَخَافَة الْفجْر. رَوَاهُ مَالك

وعن عبد اللهبن ابي بكر قال سمعت ابي يقول كنا ننصرف في رمضان من القيام فنستعجل الخدم بالطعام مخافة فوت السحور وفي اخرى مخافة الفجر رواه مالك

ব্যাখ্যা: তারাবীহের সালাতের ক্ষেত্রে, আল্লামা ক্বারী (রহঃ) বলেন যে, এটাকে قِيَامِ رَمَضَانَ (ক্বিয়ামে রমাযান) নামকরণের কারণ হলো সাহাবায়ে কিরামগণ দীর্ঘ ক্বিয়াম (কিয়াম) করতেন।

ফাজ্‌র (ফজর) উদয় হলে সাহরীর সময় শেষ হয়ে যাবে। এ মর্মে আল্লামা বাজী (রহঃ) বলেন যে, এটা (অর্থাৎ সাহরীর সময় শেষ হওয়ার আশংকা) যারা শেষ রাত্রিতে সর্বদা রাত্রি জাগরণ করেন তাদের জন্য অথবা যারা রাতের ক্বিয়ামকে রাতের শেষাংশের সাথে খাস মনে করেন তাদের জন্য। অতএব যারা বলেন, (তাদের মধ্যে ‘উমার (রাঃ) রয়েছেন) রাতের প্রথমাংশে জাগরণ থেকে ঘুমানোই উত্তম, এটা তাদের জন্য প্রযোজ্য নয়। এটা রাতে ক্বিয়ামের ক্ষেত্রে মানুষদের বিভিন্ন অবস্থারই দলীল প্রদান করছে। তাদের কেউ কেউ (সাহাবী ও তাবি‘ঈগণ) রাতের প্রথমাংশে ক্বিয়াম (কিয়াম) করতেন, কেউ কেউ শেষাংশে, আবার কেউ কেউ সর্বদাই শেষ রাত্রে ক্বিয়াম করতেন।


হাদিসের মানঃ তাহকীক অপেক্ষমাণ
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৪: সালাত (كتاب الصلاة) 4. Prayer

পরিচ্ছেদঃ ৩৭. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - রমাযান মাসের ক্বিয়াম (তারাবীহ সালাত)

১৩০৫-[১১] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেনঃ তুমি কি জানো এ রাতে অর্থাৎ শা’বান মাসের পনের তারিখে কি ঘটে? তিনি বললেন, হে আল্লাহর রসূল! আমি তো জানি না। আপনিই বলে দিন এ রাতে কি ঘটে? রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ বানী আদমের প্রতিটি লোক যারা এ বছর জন্মগ্রহণ করবে এ রাতে তাদের নাম লেখা হয়। আদম সন্তানের যারা এ বছর মৃত্যুবরণ করবে এ রাতে তা ঠিক করা হয়। এ রাতে বান্দাদের ’আমল উপরে উঠিয়ে নেয়া হয়। এ রাতে বান্দাদের রিযক্ব (রিজিক/রিযিক) আসমান থেকে নাযিল করা হয়।

’আয়িশাহ্ (রাঃ) প্রশ্ন করলেন, হে আল্লাহর রসূল! কোন লোকই আল্লাহর রহমত ব্যতীত জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইরশাদ করলেনঃ হ্যাঁ! কোন মানুষই আল্লাহর রহমত ব্যতীত জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এ বাক্যটি তিনবার উচ্চারণ করলেন। ’আয়িশাহ্ (রাঃ) আবেদন করলেন, এমনকি আপনিও নয়! এবার তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আপন মাথায় হাত রেখে বললেন, আমিও না, তবে আল্লাহ তার রহমত দ্বারা আমাকে আবৃত করে নেবেন। এ বাক্যটিও তিনি তিনবার উচ্চারণ করলেন। (বায়হাক্বী এ বর্ণনাটি দা’ওয়াতুল কাবীর নামক গ্রন্থে নকল করেছে)[1]

وَعَنْ عَائِشَةَ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «هَل تدرين مَا هَذِه اللَّيْل؟» يَعْنِي لَيْلَةَ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ قَالَتْ: مَا فِيهَا يَا رَسُولَ اللَّهِ فَقَالَ: «فِيهَا أَنْ يُكْتَبَ كلُّ مَوْلُودٍ مِنْ بَنِي آدَمَ فِي هَذِهِ السَّنَةِ وَفِيهَا أَنْ يُكْتَبَ كُلُّ هَالِكٍ مِنْ بَنِي آدَمَ فِي هَذِهِ السَّنَةِ وَفِيهَا تُرْفَعُ أَعْمَالُهُمْ وَفِيهَا تَنْزِلُ أَرْزَاقُهُمْ» . فَقَالَتْ: يَا رَسُولَ اللَّهِ مَا مِنْ أَحَدٍ يَدْخُلُ الْجَنَّةَ إِلَّا بِرَحْمَةِ اللَّهِ تَعَالَى؟ فَقَالَ: «مَا مِنْ أحد يدْخل الْجنَّة إِلَّا برحمة الله تَعَالَى» . ثَلَاثًا. قُلْتُ: وَلَا أَنْتَ يَا رَسُولَ اللَّهِ؟ فَوَضَعَ يَدَهُ عَلَى هَامَتِهِ فَقَالَ: «وَلَا أَنَا إِلَّا أَنْ يَتَغَمَّدَنِيَ اللَّهُ بِرَحْمَتِهِ» . يَقُولُهَا ثَلَاثَ مَرَّاتٍ. رَوَاهُ الْبَيْهَقِيُّ فِي الدَّعْوَات الْكَبِير

وعن عاىشة عن النبي صلى الله عليه وسلم قال هل تدرين ما هذه الليل يعني ليلة النصف من شعبان قالت ما فيها يا رسول الله فقال فيها ان يكتب كل مولود من بني ادم في هذه السنة وفيها ان يكتب كل هالك من بني ادم في هذه السنة وفيها ترفع اعمالهم وفيها تنزل ارزاقهم فقالت يا رسول الله ما من احد يدخل الجنة الا برحمة الله تعالى فقال ما من احد يدخل الجنة الا برحمة الله تعالى ثلاثا قلت ولا انت يا رسول الله فوضع يده على هامته فقال ولا انا الا ان يتغمدني الله برحمته يقولها ثلاث مرات رواه البيهقي في الدعوات الكبير

ব্যাখ্যা: এ রাতে আদম সন্তানের ‘আমলনামা উঠানো হবে। আর এ জন্যই ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করেছেন ‘‘কোন লোকই আল্লাহর রহমাত ব্যতীত জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না?’’ এ ব্যাপারে ইবনু হাজার (রহঃ) বলেনে যে, تُرْفَعُ أَعْمَالُهُمْ (‘আমলনামা উঠানো হবে) এর অর্থ হলো تُرَفَعُ أَعْمَالُهُمْ إِلَى الْمَلَإِ الْأَعْلى অর্থাৎ ‘আমলনামাগুলো ঊর্ধ্বতন মালায়িকাহ্-এর (ফেরেশতাগণের) নিকট উঠানো হবে এবং প্রতিদিনের ‘আমল, তথা রাত্রের ‘আমল ফাজ্‌রের (ফজরের) সালাতের পর, দিনের ‘আমল ‘আসর সালাতের পর ও প্রতি সোম ও বৃহস্পতিবারের ‘আমলনামা উঠানো সংক্রান্ত হাদীস আলোচ্য হাদীসের বিরোধী নয়। কেননা প্রথমটি পূর্ণ বছরের ‘আমল উঠানো সম্পর্কে, দ্বিতীয়টি প্রতি দিন-রাতের সাথে নির্দিষ্ট এবং তৃতীয়টি পূর্ণ সপ্তাহের ‘আমলনামা সংক্রান্ত। আর এ ‘আমলনামা উঠানোর বারংবার উল্লেখ (দিন, সপ্তাহ, বছর) আনুগত্যশীলদের মর্যাদা বৃদ্ধি ও নাফরমানদের ধমকের জন্য। মিরকাতেও অনুরূপ আলোচনা রয়েছে।

আল্লামা সিনদী (রহঃ) বলেন যে, দু’টি বিশুদ্ধ গ্রন্থে (বুখারী ও মুসলিম) প্রমাণিত হয় যে, আল্লাহ সুবহানাহূ ওয়া তা‘আলার নিকট রাতের ‘আমল দিনের ‘আমলের পূর্বে ও দিনের ‘আমল রাতের ‘আমলের পূর্বেই পৌঁছানো হয়। সুতরাং হতে পারে যে, বান্দাদের ‘ইবাদাত বা ‘আমল প্রতিদিন আল্লাহ তা‘আলার নিকট পৌঁছানো হয়, এরপর প্রতি সপ্তাহের ‘আমল প্রতি সোম ও বৃহস্পতিবারে তাঁর নিকট পৌঁছানো হয় এবং বছরের ‘আমল তাঁর নিকট পৌঁছানো হয় শা‘বান মাসের অর্ধ রাত্রিতে।

(وَفِيْهَا تَنْزِلُ أَرْزَاقُهُمْ) অর্থাৎ তাদের জীবিকার কারণসমূহ অথবা সেটার পরিমাণ এ রাত্রিতে অবতীর্ণ করা হয়। ইবনু হাজার (রহঃ) বলেন যে, এখানে ‘অবতীর্ণ’ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো জীবিকাপ্রাপ্তদের তাকদীরে নির্ধারিত বিষয় কিংবা তার উপকরণ যেমন দুনিয়ার আসমানে বৃষ্টি অবতীর্ণ হওয়া অথবা দুনিয়ার আসমান থেকে আসমানে ও জমিনের মধ্যবর্তী অবস্থিত মেঘমালায়ে অবতীর্ণ হওয়া। আল্লামা ত্বীবী (রহঃ) বলেন, এ প্রতিটি আল্লাহর কথা فِيْهَا يُفْرَقُ كّلُّ أَمْرٍ حَكِيْمٍ ‘‘প্রতিটি নির্ধারিতি বিষয় এ রাত্রিতে আলাদা করা হয়’’- (সূরাহ্ আদ্ দুখান ৪৪ : ৪)। অর্থাৎ বান্দার জীবিকা, মৃত্যু এবং আগামী বছরের সকল বিষয় এ রাত্রিতে আলাদা করা হয়।

হাফিয আসক্বালানী (রহঃ) বলেন যে, আলোচ্য আয়াতে কারীমায় এ রাত্রি দ্বারা উদ্দেশ্য হলো ‘লায়লাতুল ক্বদর (কদর)’। সালফ ওয়াস সালিহীনদের একদল বলেছেন যে, কুরআনুল কারীমের বাহ্যিক দৃষ্টিকোণ এবং আয়াতে কারীমার দ্বারা স্পষ্টই বুঝা যায় যে, নিশ্চয় সেটা রমাযানে অবতীর্ণ হয়েছে এবং অন্যত্র রয়েছে সেটা (কুরআন) নাযিল হয়েছে ক্বদরের রাত্রিতে। এখানে উভয়ের মাঝে কোন বৈপরীত্য নেই কারণ লায়লাতুল ক্বদর (কদর) তো রমাযানেরই অংশ।

আর এখানে ‘অবতীর্ণ হওয়া’ বলতে লাওহে মাহফূয থেকে দুনিয়ার আসমানে বায়তুল ইয্যাহ্ বুঝানো হয়েছে এবং তারপর প্রয়োজন অনুযায়ী তা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ওপর অবতীর্ণ হয়েছে। সুতরাং কুরআন অবতীর্ণ হওয়াটা যখন লায়লাতুল ক্বদরে প্রমাণিত হবে। তখন فِيْهَا يُفْرَقُ كّلُّ أَمْرٍ حَكِيْمٍ এ আয়াতে উল্লেখিত রাত্রিটিও নিশ্চয়ই লায়লাতুল ক্বদর (কদর) হবে। অবশ্যই তা অর্ধ শা‘বানের রাত্রি নয়। জমহূর ‘উলামাগণ বলেছেন,

إِنَّا أَنْزَلْنَاهُ فِي لَيْلَةٍ مُبَارَكَةٍ إِنَّا كُنَّا مُنْذِرِيْنَ ۝ فِيْهَا يُفْرَقُ كُلُّ أَمْرٍ حَكِيْمٍ

এ আয়াতে لَيْلَةٍ مُبَارَكَةٍ দ্বারা লায়লাতুল ক্বদর (কদর) উদ্দেশ্য অর্ধ শা‘বানের রাত্রি উদ্দেশ্য নয় এবং তাদের কথাই সঠিক।

হাফিয ইবনু কাসির (রহঃ) বলেন যে, যে বলে, এটা নিশ্চয়ই অর্ধ শা‘বানের রাত্রি সে সত্য থেকে বহুদূরে অবস্থিত। কেননা কুরআনের পূর্ণ বক্তব্য হলো নিশ্চয়ই সেটা (ঐ রাত্রি) রমাযান মাসে।

আল্লামা শাওকানী (রহঃ) ফাতহুল কাদীর ৪র্থ খন্ডের ৫৫৪ পৃষ্ঠায় বলেছেন, জমহূরের কথাই সঠিক, لَيْلَةٍ مُبَارَكَةٍ দ্বারা لَيْلَةٍ الْقَدْرِ উদ্দেশ্য অর্ধ শা‘বানের রাত্রি নয়। কেননা আল্লাহ তা‘আলা এখানে তার ব্যাপক ব্যাখ্যা করেছেন ও সূরাহ্ আল বাক্বারাহ্ ১৮৫ নং আয়াতে উল্লেখ করেছেন,

شَهْرُ رَمَضَانَ الَّذِي أُنْزِلَ فِيْهِ الْقُرْانُ هُدًى لِلنَّاسِ وَبَيِّنَاتٍ مِنَ الْهُدى وَالْفُرْقَانِ

এবং সূরাহ্ আল ক্বদর (কদর)-এ إِنَّا أَنْزَلْنَاهُ فِي لَيْلَةِ الْقَدْرِ ও বর্ণনা করেছেন।

অতএব এ স্পষ্ট বিবরণের পরে আর কোন মতানৈক্যের সুযোগ নেই।


হাদিসের মানঃ সহিহ/যঈফ [মিশ্রিত]
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৪: সালাত (كتاب الصلاة) 4. Prayer

পরিচ্ছেদঃ ৩৭. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - রমাযান মাসের ক্বিয়াম (তারাবীহ সালাত)

১৩০৬-[১২] আবূ মূসা আল আশ্’আরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা শা’বান মাসের পনের তারিখ রাত্রে দুনিয়াবাসীর প্রতি ফিরেন এবং মুশরিক ও হিংসুক ছাড়া তাঁর সৃষ্টির সকলের গুনাহ ক্ষমা করে দেন। (ইবনু মাজাহ)[1]

وَعَنْ أَبِي مُوسَى الْأَشْعَرِيِّ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «إِنَّ اللَّهَ تَعَالَى لَيَطَّلِعُ فِي لَيْلَةِ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ فَيَغْفِرُ لِجَمِيعِ خَلْقِهِ إِلَّا لِمُشْرِكٍ أَوْ مُشَاحِنٍ» . رَوَاهُ ابْن مَاجَه

وعن ابي موسى الاشعري عن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال ان الله تعالى ليطلع في ليلة النصف من شعبان فيغفر لجميع خلقه الا لمشرك او مشاحن رواه ابن ماجه

ব্যাখ্যা: আলোচ্য হাদীস এ মর্মে প্রমাণ বহন করে যে, অর্ধ শা‘বানের রাত্রিটি একটি সম্মানিত রাত, নিশ্চয় এ রাতটি অন্যান্য রাতের মতো নয়। সুতরাং তা থেকে উদাসীন থাকা উচিত নয়। বরং ‘ইবাদাত, দু‘আ ও যিকিরের (জিকিরের) মাধ্যমে উক্ত রাতে জাগ্রত থাকা মুস্তাহাব। কিন্তু এ রাত্রির সর্বাধিক গুরুত্ব প্রদান করা, পাঁচ ওয়াক্ত ফরয সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) কিংবা সকল ফরয ‘ইবাদাত বর্জন করে এবং অন্যান্য ওয়াজিবগুলোর কোন গুরুত্ব না দিয়ে (যেমন বর্তমান সময়ে সকল মুসলিমদের যে অবস্থা) শুধু নির্দিষ্ট করে এ রাত্রি জাগ্রত থাকা নিঃসন্দেহে তা একটি ঘৃণিত কাজ। ফরয ছেড়ে মুস্তাহাব নিয়ে ব্যস্ত থাকা কখনো দীন হতে পারে না। অনুরূপভাবে সকল সুন্নাতকে ছেড়ে দিয়ে এ রাত্রিতে কবর যিয়ারাতের গুরুত্ব প্রদান করা কোন সুন্নাতের অন্তর্ভুক্ত হতে পারে না। এ রাত্রিকে উপলক্ষ করে দরিদ্রদের মাঝে বিভিন্ন রকমের খাবার বিতরণ করার ব্যাপারে মারফূ‘, মাওকূফ, সহীহ কিংবা য‘ঈফ কোন হাদীস বর্ণিত হয়নি এবং এ রাত্রিতে মৃত ব্যক্তির আত্মার উপস্থিতি বিশ্বাস করা ঘর-বাড়ী পরিচ্ছন্ন করা, প্রয়োজনের অতিরিক্ত বাতি জ্বালানো ইত্যাদি এসবগুলোই নিঃসন্দেহে বিদ্‘আত ও গোমরাহী।


হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৪: সালাত (كتاب الصلاة) 4. Prayer

পরিচ্ছেদঃ ৩৭. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - রমাযান মাসের ক্বিয়াম (তারাবীহ সালাত)

১৩০৭-[১৩] ইমাম আহমাদ (রহঃ) এ হাদীসটি ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আমর ইবনুল ’আস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন। তাঁদের এক বর্ণনায় এ বাক্যটি আছে যে, কিন্তু দু’ লোকঃ ’হিংসা পোষণকারী ও আত্মহত্যাকারী ব্যতীত আল্লাহ তার সকল সৃষ্টিকে মাফ করে দেন)।[1]

وَرَوَاهُ أَحْمَدُ عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ وَفِي رِوَايَته: «إِلَّا اثْنَيْنِ مُشَاحِن وَقَاتل نفس»

ورواه احمد عن عبد الله بن عمرو بن العاص وفي روايته الا اثنين مشاحن وقاتل نفس

ব্যাখ্যা: আহমাদ-এর অপর বর্ণনায় রয়েছে, (إِلَّا اثْنَيْنِ مُشَاحِن)। এ সম্পর্কে ‘আল্লামা আওযা‘ঈ (রহঃ) বলেনঃ মুশাহিন দ্বারা উদ্দেশ্য হলো বিদ্‘আতী এবং জামা‘আত বিচ্ছিন্নকারী। অর্থাৎ এ রাত্রিতে সকলকে ক্ষমা করা হবে শুধু দু’ব্যক্তি ব্যতীত। (১) মুশাহিন বা বিদ্‘আতী, (২) অন্যায়ভাবে নিজকে হত্যাকারী (আত্মহত্যাকারী)।


হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৪: সালাত (كتاب الصلاة) 4. Prayer

পরিচ্ছেদঃ ৩৭. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - রমাযান মাসের ক্বিয়াম (তারাবীহ সালাত)

১৩০৮-[১৪] ’আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ শা’বান মাসের পনের তারিখ রাত হলে তোমরা সে রাত্রে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় কর ও দিনে রোযা রাখো। কেননা, আল্লাহ তা’আলা এ রাত্রে সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গে দুনিয়ার আকাশে নেমে আসেন এবং (দুনিয়াবাসীকে উদ্দেশ্য করে) বলেন, কোন ক্ষমা প্রার্থনাকারী আছে কি? আমি তাকে ক্ষমা করে দেবো। কোন রিযক্বপ্রার্থী আছে কি, আমি তাকে রিযক্ব (রিজিক/রিযিক) দান করব? কোন বিপদগ্রস্ত কি আছে, আমি তাকে বিপদ মুক্ত করে দেব? এভাবে আল্লাহ মানুষের প্রতিটি দরকার ও প্রতিটি বিপদের নাম উল্লেখ করে তাঁর বান্দাদেরকে সকাল হওয়া পর্যন্ত আহবান করতে থাকেন। (ইবনু মাজাহ)[1]

وَعَنْ عَلِيٍّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِذَا كَانَتْ لَيْلَةُ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ فَقُومُوا لَيْلَهَا وَصُومُوا يَوْمَهَا فَإِنَّ اللَّهَ تَعَالَى يَنْزِلُ فِيهَا لِغُرُوبِ الشَّمْسِ إِلَى السَّمَاءِ الدُّنْيَا فَيَقُولُ: أَلَا مِنْ مُسْتَغْفِرٍ فَأَغْفِرَ لَهُ؟ أَلَا مُسْتَرْزِقٌ فَأَرْزُقَهُ؟ أَلَا مُبْتَلًى فَأُعَافِيَهُ؟ أَلَا كَذَا أَلَا كَذَا حَتَّى يطلع الْفجْر . رَوَاهُ ابْن مَاجَه

وعن علي رضي الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم اذا كانت ليلة النصف من شعبان فقوموا ليلها وصوموا يومها فان الله تعالى ينزل فيها لغروب الشمس الى السماء الدنيا فيقول الا من مستغفر فاغفر له الا مسترزق فارزقه الا مبتلى فاعافيه الا كذا الا كذا حتى يطلع الفجر رواه ابن ماجه

ব্যাখ্যা : আলোচ্য হাদীসটি অর্ধ শা‘বানের রাত্রিতে সিয়াম পালন করা মুস্তাহাব- এ মর্মে দলীল কিন্তু হাদীসটি জাল এবং এ হাদীস দ্বারা (হানাফীদের পক্ষ হতে) দলীল গ্রহণ করা হয় আইয়্যামে বীয-এর সিয়াম মুস্তাহাব হওয়ার ব্যাপারে। কিন্তু তা যে বাতিল তাতে কোন সন্দেহ নেই। কারণ উক্ত হাদীসের উদ্দেশ্য হলো মাত্র একদিন সিয়াম পালন মুস্তাহাব হওয়ার ব্যাপারে। অর্থাৎ তা হলো শা‘বানের ১৫ তারিখ। প্রতিমাসে তিন দিন সিয়াম পালনের দলীল এ হাদীসে কোথায়?

(আইয়্যামে বীয বা প্রতি মাসে তিন দিন ১৩, ১৪, ১৫ তারিখে সিয়াম পালন করা অন্যান্য সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত)

সারকথা হলো অর্ধ শা‘বান তথা শা‘বানের ১৫ তারিখে সিয়াম পালন প্রসঙ্গে কোন মারফূ‘, সহীহ অথবা হাসান, অথবা স্বল্প দুর্বলতা সম্পূর্ণ য‘ঈফ হাদীস এবং মজবুত কোন আসার অথবা য‘ঈফ আসারও নেই।


হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৪: সালাত (كتاب الصلاة) 4. Prayer
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ৮ পর্যন্ত, সর্বমোট ৮ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে