১৩০৫

পরিচ্ছেদঃ ৩৭. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - রমাযান মাসের ক্বিয়াম (তারাবীহ সালাত)

১৩০৫-[১১] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেনঃ তুমি কি জানো এ রাতে অর্থাৎ শা’বান মাসের পনের তারিখে কি ঘটে? তিনি বললেন, হে আল্লাহর রসূল! আমি তো জানি না। আপনিই বলে দিন এ রাতে কি ঘটে? রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ বানী আদমের প্রতিটি লোক যারা এ বছর জন্মগ্রহণ করবে এ রাতে তাদের নাম লেখা হয়। আদম সন্তানের যারা এ বছর মৃত্যুবরণ করবে এ রাতে তা ঠিক করা হয়। এ রাতে বান্দাদের ’আমল উপরে উঠিয়ে নেয়া হয়। এ রাতে বান্দাদের রিযক্ব (রিজিক/রিযিক) আসমান থেকে নাযিল করা হয়।

’আয়িশাহ্ (রাঃ) প্রশ্ন করলেন, হে আল্লাহর রসূল! কোন লোকই আল্লাহর রহমত ব্যতীত জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইরশাদ করলেনঃ হ্যাঁ! কোন মানুষই আল্লাহর রহমত ব্যতীত জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এ বাক্যটি তিনবার উচ্চারণ করলেন। ’আয়িশাহ্ (রাঃ) আবেদন করলেন, এমনকি আপনিও নয়! এবার তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আপন মাথায় হাত রেখে বললেন, আমিও না, তবে আল্লাহ তার রহমত দ্বারা আমাকে আবৃত করে নেবেন। এ বাক্যটিও তিনি তিনবার উচ্চারণ করলেন। (বায়হাক্বী এ বর্ণনাটি দা’ওয়াতুল কাবীর নামক গ্রন্থে নকল করেছে)[1]

وَعَنْ عَائِشَةَ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «هَل تدرين مَا هَذِه اللَّيْل؟» يَعْنِي لَيْلَةَ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ قَالَتْ: مَا فِيهَا يَا رَسُولَ اللَّهِ فَقَالَ: «فِيهَا أَنْ يُكْتَبَ كلُّ مَوْلُودٍ مِنْ بَنِي آدَمَ فِي هَذِهِ السَّنَةِ وَفِيهَا أَنْ يُكْتَبَ كُلُّ هَالِكٍ مِنْ بَنِي آدَمَ فِي هَذِهِ السَّنَةِ وَفِيهَا تُرْفَعُ أَعْمَالُهُمْ وَفِيهَا تَنْزِلُ أَرْزَاقُهُمْ» . فَقَالَتْ: يَا رَسُولَ اللَّهِ مَا مِنْ أَحَدٍ يَدْخُلُ الْجَنَّةَ إِلَّا بِرَحْمَةِ اللَّهِ تَعَالَى؟ فَقَالَ: «مَا مِنْ أحد يدْخل الْجنَّة إِلَّا برحمة الله تَعَالَى» . ثَلَاثًا. قُلْتُ: وَلَا أَنْتَ يَا رَسُولَ اللَّهِ؟ فَوَضَعَ يَدَهُ عَلَى هَامَتِهِ فَقَالَ: «وَلَا أَنَا إِلَّا أَنْ يَتَغَمَّدَنِيَ اللَّهُ بِرَحْمَتِهِ» . يَقُولُهَا ثَلَاثَ مَرَّاتٍ. رَوَاهُ الْبَيْهَقِيُّ فِي الدَّعْوَات الْكَبِير

وعن عاىشة عن النبي صلى الله عليه وسلم قال هل تدرين ما هذه الليل يعني ليلة النصف من شعبان قالت ما فيها يا رسول الله فقال فيها ان يكتب كل مولود من بني ادم في هذه السنة وفيها ان يكتب كل هالك من بني ادم في هذه السنة وفيها ترفع اعمالهم وفيها تنزل ارزاقهم فقالت يا رسول الله ما من احد يدخل الجنة الا برحمة الله تعالى فقال ما من احد يدخل الجنة الا برحمة الله تعالى ثلاثا قلت ولا انت يا رسول الله فوضع يده على هامته فقال ولا انا الا ان يتغمدني الله برحمته يقولها ثلاث مرات رواه البيهقي في الدعوات الكبير

ব্যাখ্যা: এ রাতে আদম সন্তানের ‘আমলনামা উঠানো হবে। আর এ জন্যই ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করেছেন ‘‘কোন লোকই আল্লাহর রহমাত ব্যতীত জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না?’’ এ ব্যাপারে ইবনু হাজার (রহঃ) বলেনে যে, تُرْفَعُ أَعْمَالُهُمْ (‘আমলনামা উঠানো হবে) এর অর্থ হলো تُرَفَعُ أَعْمَالُهُمْ إِلَى الْمَلَإِ الْأَعْلى অর্থাৎ ‘আমলনামাগুলো ঊর্ধ্বতন মালায়িকাহ্-এর (ফেরেশতাগণের) নিকট উঠানো হবে এবং প্রতিদিনের ‘আমল, তথা রাত্রের ‘আমল ফাজ্‌রের (ফজরের) সালাতের পর, দিনের ‘আমল ‘আসর সালাতের পর ও প্রতি সোম ও বৃহস্পতিবারের ‘আমলনামা উঠানো সংক্রান্ত হাদীস আলোচ্য হাদীসের বিরোধী নয়। কেননা প্রথমটি পূর্ণ বছরের ‘আমল উঠানো সম্পর্কে, দ্বিতীয়টি প্রতি দিন-রাতের সাথে নির্দিষ্ট এবং তৃতীয়টি পূর্ণ সপ্তাহের ‘আমলনামা সংক্রান্ত। আর এ ‘আমলনামা উঠানোর বারংবার উল্লেখ (দিন, সপ্তাহ, বছর) আনুগত্যশীলদের মর্যাদা বৃদ্ধি ও নাফরমানদের ধমকের জন্য। মিরকাতেও অনুরূপ আলোচনা রয়েছে।

আল্লামা সিনদী (রহঃ) বলেন যে, দু’টি বিশুদ্ধ গ্রন্থে (বুখারী ও মুসলিম) প্রমাণিত হয় যে, আল্লাহ সুবহানাহূ ওয়া তা‘আলার নিকট রাতের ‘আমল দিনের ‘আমলের পূর্বে ও দিনের ‘আমল রাতের ‘আমলের পূর্বেই পৌঁছানো হয়। সুতরাং হতে পারে যে, বান্দাদের ‘ইবাদাত বা ‘আমল প্রতিদিন আল্লাহ তা‘আলার নিকট পৌঁছানো হয়, এরপর প্রতি সপ্তাহের ‘আমল প্রতি সোম ও বৃহস্পতিবারে তাঁর নিকট পৌঁছানো হয় এবং বছরের ‘আমল তাঁর নিকট পৌঁছানো হয় শা‘বান মাসের অর্ধ রাত্রিতে।

(وَفِيْهَا تَنْزِلُ أَرْزَاقُهُمْ) অর্থাৎ তাদের জীবিকার কারণসমূহ অথবা সেটার পরিমাণ এ রাত্রিতে অবতীর্ণ করা হয়। ইবনু হাজার (রহঃ) বলেন যে, এখানে ‘অবতীর্ণ’ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো জীবিকাপ্রাপ্তদের তাকদীরে নির্ধারিত বিষয় কিংবা তার উপকরণ যেমন দুনিয়ার আসমানে বৃষ্টি অবতীর্ণ হওয়া অথবা দুনিয়ার আসমান থেকে আসমানে ও জমিনের মধ্যবর্তী অবস্থিত মেঘমালায়ে অবতীর্ণ হওয়া। আল্লামা ত্বীবী (রহঃ) বলেন, এ প্রতিটি আল্লাহর কথা فِيْهَا يُفْرَقُ كّلُّ أَمْرٍ حَكِيْمٍ ‘‘প্রতিটি নির্ধারিতি বিষয় এ রাত্রিতে আলাদা করা হয়’’- (সূরাহ্ আদ্ দুখান ৪৪ : ৪)। অর্থাৎ বান্দার জীবিকা, মৃত্যু এবং আগামী বছরের সকল বিষয় এ রাত্রিতে আলাদা করা হয়।

হাফিয আসক্বালানী (রহঃ) বলেন যে, আলোচ্য আয়াতে কারীমায় এ রাত্রি দ্বারা উদ্দেশ্য হলো ‘লায়লাতুল ক্বদর (কদর)’। সালফ ওয়াস সালিহীনদের একদল বলেছেন যে, কুরআনুল কারীমের বাহ্যিক দৃষ্টিকোণ এবং আয়াতে কারীমার দ্বারা স্পষ্টই বুঝা যায় যে, নিশ্চয় সেটা রমাযানে অবতীর্ণ হয়েছে এবং অন্যত্র রয়েছে সেটা (কুরআন) নাযিল হয়েছে ক্বদরের রাত্রিতে। এখানে উভয়ের মাঝে কোন বৈপরীত্য নেই কারণ লায়লাতুল ক্বদর (কদর) তো রমাযানেরই অংশ।

আর এখানে ‘অবতীর্ণ হওয়া’ বলতে লাওহে মাহফূয থেকে দুনিয়ার আসমানে বায়তুল ইয্যাহ্ বুঝানো হয়েছে এবং তারপর প্রয়োজন অনুযায়ী তা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ওপর অবতীর্ণ হয়েছে। সুতরাং কুরআন অবতীর্ণ হওয়াটা যখন লায়লাতুল ক্বদরে প্রমাণিত হবে। তখন فِيْهَا يُفْرَقُ كّلُّ أَمْرٍ حَكِيْمٍ এ আয়াতে উল্লেখিত রাত্রিটিও নিশ্চয়ই লায়লাতুল ক্বদর (কদর) হবে। অবশ্যই তা অর্ধ শা‘বানের রাত্রি নয়। জমহূর ‘উলামাগণ বলেছেন,

إِنَّا أَنْزَلْنَاهُ فِي لَيْلَةٍ مُبَارَكَةٍ إِنَّا كُنَّا مُنْذِرِيْنَ ۝ فِيْهَا يُفْرَقُ كُلُّ أَمْرٍ حَكِيْمٍ

এ আয়াতে لَيْلَةٍ مُبَارَكَةٍ দ্বারা লায়লাতুল ক্বদর (কদর) উদ্দেশ্য অর্ধ শা‘বানের রাত্রি উদ্দেশ্য নয় এবং তাদের কথাই সঠিক।

হাফিয ইবনু কাসির (রহঃ) বলেন যে, যে বলে, এটা নিশ্চয়ই অর্ধ শা‘বানের রাত্রি সে সত্য থেকে বহুদূরে অবস্থিত। কেননা কুরআনের পূর্ণ বক্তব্য হলো নিশ্চয়ই সেটা (ঐ রাত্রি) রমাযান মাসে।

আল্লামা শাওকানী (রহঃ) ফাতহুল কাদীর ৪র্থ খন্ডের ৫৫৪ পৃষ্ঠায় বলেছেন, জমহূরের কথাই সঠিক, لَيْلَةٍ مُبَارَكَةٍ দ্বারা لَيْلَةٍ الْقَدْرِ উদ্দেশ্য অর্ধ শা‘বানের রাত্রি নয়। কেননা আল্লাহ তা‘আলা এখানে তার ব্যাপক ব্যাখ্যা করেছেন ও সূরাহ্ আল বাক্বারাহ্ ১৮৫ নং আয়াতে উল্লেখ করেছেন,

شَهْرُ رَمَضَانَ الَّذِي أُنْزِلَ فِيْهِ الْقُرْانُ هُدًى لِلنَّاسِ وَبَيِّنَاتٍ مِنَ الْهُدى وَالْفُرْقَانِ

এবং সূরাহ্ আল ক্বদর (কদর)-এ إِنَّا أَنْزَلْنَاهُ فِي لَيْلَةِ الْقَدْرِ ও বর্ণনা করেছেন।

অতএব এ স্পষ্ট বিবরণের পরে আর কোন মতানৈক্যের সুযোগ নেই।


হাদিসের মানঃ সহিহ/যঈফ [মিশ্রিত]
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৪: সালাত (كتاب الصلاة)