নবী-রসূলগণের দা'ওয়াতের পদ্ধতি আবু আহমাদ সাইফুদ্দীন বেলাল ২৬ টি
নবী-রসূলগণের দা'ওয়াতের পদ্ধতি আবু আহমাদ সাইফুদ্দীন বেলাল ২৬ টি

দাওয়াত ইলাল্লাহ তথা আল্লাহর দিকে দাওয়াতের ফজিলত ও গুরুত্ব অনেক; কারণ ইহা নবী-রসূলগণের কাজ। আর তাঁরাই হলেন সৃষ্টির সেরা ও আল্লাহর নিকট সবচেয়ে বেশি মর্যাদাবান ব্যক্তি। আল্লাহ তা'য়ালা তাদেরকে মানুষের হেদায়েতের জন্য নির্বাচন করেন। আর আলেমগণ নবীদের জ্ঞান ও দাওয়াতের উত্তরসূরী। দা'ওয়াত ইলাল্লাহর কাজের দ্বারা আহ্বানকারীদের সম্মান ও মর্যাদা অনেক বৃদ্ধি পায়।

   ১. আল্লাহ তা'য়ালা বলেন:

   وَمَنْ أَحْسَنُ قَوْلًا مِّمَّن دَعَا إِلَى اللَّهِ وَعَمِلَ صَالِحًا وَقَالَ إِنَّنِي مِنَ الْمُسْلِمِينَ ٣٣

   "যে আল্লাহর দিকে দাওয়াত দেয়, সৎকর্ম করে এবং বলে, আমি একজন মুসলিম [পূর্ণ আত্মসমর্পণকারী]। তার কথা অপেক্ষা উত্তম কথা আর কার হতে পারে?” (সূরা হা-মীম সেজদাহ : ৩৩)

   ২. আল্লাহ তা'য়ালা বলেন:

   قُلْ هَذِهِ سَبِيلِي أَدْعُو إِلَى اللَّهِ عَلَى بَصِيرَةٍ أَنَا وَمَنِ اتَّبَعَنِي وَسُبْحَانَ اللَّهِ وَمَا أَنَا مِنَ الْمُشْرِكِينَ ١٠٨

   “বলুন, এই আমার পথ। আমি আল্লাহর দিকে বুঝে সুঝে দা'ওয়াত দেই-আমি এবং আমার অনুসারীরা। আর আল্লাহ মহা পবিত্র এবং আমি অংশীবাদীদের অন্তর্ভুক্ত নই।”[সুরা ইউসুফ: ১০৮]

   ৩. আল্লাহ তা'য়ালা বলেন:

   ادْعُ إِلَى سَبِيلِ رَبِّكَ بِالْحِكْمَةِ وَالْمَوْعِظَةِ الْحَسَنَةِ وَجَادِلْهُم بِالَّتِي هِيَ أَحْسَنُ إِنَّ رَبَّكَ هُوَ أَعْلَمُ بِمَن ضَلَّ عَن سَبِيلِهِ وَهُوَ أَعْلَمُ بِالْمُهْتَدِينَ ١٢٥

   আপনার প্রতিপালকের পথের প্রতি দা'ওয়াত করুন জ্ঞানের কথা বুঝিয়ে ও উত্তম উপদেশ শুনিয়ে এবং তাদের সঙ্গে বিতর্ক করুন। পছন্দযুক্ত পন্থায়। নিশ্চয় আপনার পালনকর্তাই ঐ ব্যক্তি সম্পর্কে বিশেষভাবে জ্ঞাত রয়েছেন যে, তাঁর পথ থেকে কে ভ্রষ্ট হয়ে গেছে এবং তিনিই ভাল জানেন তাদেরকে যারা হেদায়েত লাভ করেছে।”[সূরা নাহল :১২৫]

   ৪. আল্লাহ তায়ালা বলেন:

   يَا أَيُّهَا الرَّسُولُ بَلِّغْ مَا أُنزِلَ إِلَيْكَ مِن رَّبِّكَ وَإِن لَّمْ تَفْعَلْ فَمَا بَلَّغْتَ رِسَالَتَهُ وَاللَّهُ يَعْصِمُكَ مِنَ النَّاسِ إِنَّ اللَّهَ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الْكَافِرِينَ ٦٧

   “হে রসূল ﷺ তাবলীগ প্রচার করুন আপনার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে আপনার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে। আর যদি আপনি এরূপ না করেন, তবে আপনি তাঁর পয়গাম কিছুই পৌঁছালেন না। আল্লাহ আপনাকে মানুষের কাছ থেকে রক্ষা করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ কাফেরদেকে পথ প্রদর্শন করেন না।" [সূরা মায়েদাহঃ ৬৭]

   ৫. রসূলুল্লাহ ﷺ বলেন:

   فَوَاللَّهِ لَأَنْ يَهْدِيَ اللَّهُ بِكَ رَجُلًا وَاحِدًا خَيْرٌ لَكَ مِنْ أَنْ يَكُونَ لَكَ حُمْرُ النَّعَمِ

   তিনি ﷺ আরো বলেন

   رواه البخاري

   “আল্লাহর শপথ! যদি তোমার দ্বারা একজন মানুষও হেদায়েত লাভ করে তাহলে উহা একটি লাল উটের চেয়েও উত্তম।” [বুখারী]

   নবী ﷺ আরো বলেন

   بَلِّغُوا عَنِّي وَلَوْ آيَةً رواه البخاري

   আমার থেকে একটি আয়াত হলেও তা প্রচার কর।” [বুখারী]

   عَنْ حُذَيْفَةَ بْنِ الْيَمَانِ رضي الله عنه يَقُولُ: كَانَ النَّاسُ يَسْأَلُونَ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنِ الْخَيْرِ وَكُنتُ أَسْأَلُهُ عَنِ الشَّرِّ مَخَافَةَ أَنْ يُدْرِكَنِي، فَقُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ: إِنَّا كُنَّا فِي جَاهِلِيَّةٍ وَشَرٍّ فَجَاءَنَا اللَّهُ بِهَذَا الْخَيْرِ فَهَلْ بَعْدَ هَذَا الْخَيْرِ مِنْ شَرٍّ؟ قَالَ: نَعَمْ، قُلْتُ: وَهَلْ بَعْدَ ذَلِكَ الشَّرِّ مِنْ خَيْرٍ؟ قَالَ: نَعَمْ، وَفِيهِ دَخَنٌ. قُلْتُ: وَمَا دَخَنُهُ؟ قَالَ: قَوْمٌ يَهْدُونَ بِغَيْرِ هَدْيِي تَعْرِفُ مِنْهُمْ وَتُنْكِرُ. قُلْتُ: فَهَلْ بَعْدَ ذَلِكَ الْخَيْرِ مِنْ شَرٍّ؟ قَالَ: نَعَمْ، دُعَاةٌ عَلَى أَبْوَابِ جَهَنَّمَ مَنْ أَجَابَهُمْ إِلَيْهَا قَذَفُوهُ فِيهَا. قُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ صِفْهُمْ لَنَا، قَالَ: هُمْ مِنْ  جِلْدَتِنَا وَيَتَكَلَّمُونَ بِأَلْسِنَتِنَا. قُلْتُ: فَمَا تَأْمُرُنِي إِنْ أَدْرَكَنِي ذَلِكَ؟ قَالَ: تَلْزَمُ جَمَاعَةَ الْمُسْلِمِينَ وَإِمَامَهُمْ. قُلْتُ: فَإِنْ لَمْ يَكُنْ لَهُمْ جَمَاعَةٌ وَلَا إِمَامٌ؟ قَالَ: فَاعْتَزِلْ تِلْكَ الْفِرَقَ كُلَّهَا وَلَوْ أَنْ تَعَضَّ بِأَصْلِ شَجَرَةٍ حَتَّى يُدْرِكَكَ الْمَوْتُ وَأَنتَ عَلَى ذَلِكَ. متفق عليه.

হুযাইফা ইবনে ইয়ামান [রাঃ] হতে বর্ণিত, তিনি বলেন:

রসূলুল্লাহ ﷺ কে মানুষ কল্যাণ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করত। আর অকল্যাণ আমাকে পেয়ে বসবে এ ভয়ে আমি জিজ্ঞাসা করতাম অনিষ্ট-অকল্যাণ সম্পর্কে। আমি বললাম: হে আল্লাহর রসূল! আমরা জাহেলিয়াত ও অনিষ্টকর যুগে ছিলাম। আল্লাহ আমাদেরকে দ্বীন ইসলামের কল্যাণে এনেছেন। আচ্ছা এ মঙ্গলের পর আবারও কি অমঙ্গল আসবে? তিনি ﷺ বললেন: হ্যাঁ, আমি আবার বললাম: আচ্ছা এ অনিষ্টর পর আবারও কি কল্যাণ আসবে? তিনি ﷺ বললেন: হ্যাঁ, কিন্তু তাতে ধোঁয়া থাকবে। আমি বললামঃ ধোঁয়া আবার কি? তিনি ﷺ বললেন: ধোঁয়া হলো, এমন এক জাতির আবির্ভাব ঘটবে যারা আমার হেদায়েত পরিহার করে অন্যদের হেদায়েত গ্রহণ করবে। তাদের মাঝে কিছু ভাল পাবে আবার কিছু মন্দও দেখবে। আমি বললাম: আচ্ছা এ ধোঁয়া মিশ্রিত কল্যাণের পর কি আর কোন অনিষ্ট আসবে? তিনি ﷺ বললেন: হ্যাঁ, আল্লাহর দ্বীনের পথে এক শ্রেণীর আহ্বানকারী, যারা জাহান্নামের দরজার উপর হতে জান্নাতের নামে আহ্বান করবে। তাদের ডাকে যারা সাড়া দেবে তাদেরকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবে।

আমি বললামঃ হে আল্লাহর রসূল। আমাদেরকে তাদের সম্পর্কে বর্ণনা দেন। তিনি ﷺ বললেন: তারা আমাদের জাতির মানুষ। তারা আমাদের ভাষায় কথা বলবে। আমি বললাম যদি সে অবস্থা আমাকে পেয়ে বসে তাহলে কি নির্দেশ করেন। তিনি ﷺ বললেন সম্মিলিত মুসলমানদের জামাত ও ইমামের (রাষ্ট্রপতির) সঙ্গে থাকবে। আমি বললাম: যদি সম্মিলিত মুসলমানদের কোন জামাত ও ইমাম না থাকে তবে কি করব? তিনি বললেন: ঐ সমস্ত দল ছেড়ে একাকী থাকবে, যদিও গাছের শিকড় দাঁত দ্বারা ধরে হোক না কেন। আর এভাবে মৃত্যু আসা পর্যন্ত থাকবে।” [বুখারী ও মুসলিম]

দা'ওয়াত শব্দের অর্থ:

দাওয়াত শব্দটি আরবি শব্দ, যার আভিধানিক অর্থ একাধিক হতে পারে। যেমন: আহ্বান করা, প্রশ্ন করা, একত্রিত হওয়া ও দু'য়া করা ইত্যাদি।

ইসলামের পরিভাষায় দাওয়াত শব্দের অর্থ দু'টি

(ক) প্রচার-প্রসার ও আহ্বান করা ও (খ) দ্বীন ও রেসালাত।

১. আহ্বান অর্থে:

প্রচার-প্রসার ও আহ্বান ভাল-মন্দ উভয়টির হতে পারে।

পরিভাষায় দাওয়াতের অর্থ হলো:

সকল মানুষের নিকট ইসলামের প্রচার করা এবং তাদেরকে একমাত্র আল্লাহ ও তাঁর দ্বীন ও পথের দিকে আহ্বান করা। আর তাদেরকে ইসলামের পূর্ণ শিক্ষা দেয়া এবং তাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে দ্বীনের বাস্তবায়ন করানো।

২. দ্বীন ও রেসালাত অর্থে:

আল্লাহ তায়ালার মনোনীত দ্বীন ও রেসালাত যা তিনি বিশ্ব জাহানের জন্য পছন্দ করেছেন। আর যার শিক্ষা অহিরূপে তাঁর রসূলের প্রতি নাজিল করেছেন এবং কুরআনুল করীম ও সুন্নাতে রসূলের মধ্যে তার সংরক্ষণ করেছেন।

তাবলীগ শব্দের অর্থ:

তাবলীগ শব্দটি আরবি শব্দ, যার আভিধানিক অর্থ: প্রচার ও প্রসার করা। আর পরিভাষায় তাবলীগ বলা হয়। আল্লাহর পক্ষ থেকে নাজিলকৃত “অহি মাতলু" তথা কুরআন ও "অহি গাইর মাতলু" তথা রসুলুল্লাহ -এর সহীহ হাদীসসমূহ, উপযুক্ত মাধ্যম ও উত্তম পদ্ধতিতে সকল মানুষের নিকট পৌঁছানো।

আল্লাহ তা'য়ালার বাণী:

   يَا أَيُّهَا الرَّسُولُ بَلِّغْ مَا أُنزِلَ إِلَيْكَ مِن رَّبِّكَ وَإِن لَّمْ تَفْعَلْ فَمَا بَلَّغْتَ رِسَالَتَهُ وَاللَّهُ يَعْصِمُكَ مِنَ النَّاسِ إِنَّ اللَّهَ لَا يَهْدِي   الْقَوْمَ الْكَافِرِينَ ٦٧

“হে রসূল! আপনার রবের পক্ষ থেকে আপনার প্রতি যা নাজিল হয়েছে তার প্রচার করুন। আর যদি তার প্রচার না করেন তাহলে তাঁর রেসালাতের তাবলীগ তথা প্রচারই করলে না।"[সূরা মায়েদা: ৬৭]

রসূলুল্লাহ ﷺ বলেন:

   بَلِّغُوا عَنِّي وَلَوْ آيَةً رواه البخاري

"তোমরা আমার নিকট থেকে একটি আয়াত হলেও তা তাবলীগ প্রচার কর।” [বুখারী]

এখানে রসূলুল্লাহ ﷺ আয়াতের কথা বলেছেন। অতএব, এ হাদীস উল্লেখ করে ইচ্ছামত যা-তা প্রচার করা নিঃসন্দেহে এ হাদীসের সরাসরি বিপরীত কাজ হবে।

এখানে আমাদের নিকট স্পষ্ট হলো যে, দা'ওয়াত শব্দটি ব্যাপক যা দা'ওয়াত ও তাবলীগ উভয় অর্থে আসে। কিন্তু তাবলীগ শব্দটি নির্দিষ্ট যা শুধুমাত্র প্রচারের অর্থে আসে। অতএব, দাওয়াত বলতে তাবলীগও বুঝায়। কিন্তু তাবলীগ বলতে দাওয়াত বুঝানো হয় না। সুতরাং, দা'ওয়াত বলতে অমুসলিমদের জন্য আর তাবলীগ বলতে মুসলিমদের জন্য এমনটা বলা একান্ত অজ্ঞতার পরিচয়? বরং দাওয়াত ও তাবলীগ মুসলিম ও অমুসলিম। সকলের জন্য প্রযোজ্য।

দা'ওয়াত ও তাবলীগের হুকুম

দা'ওয়াত ও তাবলীগের কাজ প্রতিটি মুসলিম নারী-পুরুষের ক্ষমতা ও যোগ্যতা অনুসারে করা ফরজে 'আইন তথা সবার প্রতি ফরজ। আর মুসলিম উম্মতের উপর ফরজে কেফায়া। অর্থাৎ- কিছু সংখ্যক মানুষ করলে সবাই পাপমুক্ত হবে। আর যদি কেউ না করে তাহলে সকলে সমান পাপী হবে।

   আল্লাহ তা'য়ালার বাণী:

   وَلْتَكُن مِّنكُمْ أُمَّةٌ يَدْعُونَ إِلَى الْخَيْرِ وَيَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنكَرِ وَأُولَئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ ١٠٤

“আর তোমাদের মধ্যে এমন একটা দল থাকা উচিত যারা আহ্বান জানাবে সৎকর্মের প্রতি, নির্দেশ দেবে ভাল কাজের এবং বারণ করবে অন্যায় কাজ থেকে, আর তারাই হলো সফলকাম।"[সূরা আল-ইমরান: ১০৪]

   আল্লাহ তা'য়ালার আরো বাণী:

   كُنتُمْ خَيْرَ أُمَّةٍ أُخْرِجَتْ لِلنَّاسِ تَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَتَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنكَرِ وَتُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَلَوْ آمَنَ أَهْلُ الْكِتَابِ لَكَانَ خَيْرًا لَّهُم مِّنْهُمُ الْمُؤْمِنُونَ وَأَكْثَرُهُمُ الْفَاسِقُونَ ١١٠

   “তোমরাই হলে সর্বোত্তম উম্মত, মানবজাতির কল্যাণের জন্যই তোমাদের উদ্ভব ঘটানো হয়েছে। তোমরা সৎকাজের নির্দেশ করবে ও অন্যায় কাজে বাধা দেবে এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান আনবে।”[সূরা আল-ইমরান : ১১০]

আর দেশের রাষ্ট্রপতি ও ক্ষমতাসীনদের প্রতি নির্দিষ্টভাবে দাওয়াতের কাজ করা ফরজে আইন।

   আল্লাহ তা'য়ালার বাণী:

   الَّذِينَ إِن مَّكَّنَّاهُمْ فِي الْأَرْضِ أَقَامُوا الصَّلَاةَ وَآتَوُا الزَّكَاةَ وَأَمَرُوا بِالْمَعْرُوفِ وَنَهَوْا عَنِ الْمُنكَرِ وَلِلَّهِ عَاقِبَةُ الْأُمُورِ ٤١

"তারা এমন লোক যাদেরকে আমি পৃথিবীতে শক্তি-সামর্থ্য দান করলে তারা সালাত কায়েম করবে, জাকাত দেবে এবং সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজের নিষেধ করবে। আর প্রত্যেক কর্মের পরিণাম আল্লাহর এখতিয়ারভুক্ত।” [সূরা হাজ্ব: ৪১]

   নবী ﷺ-এর বাণী:

   وَالْإِمَامُ رَاعٍ وَهُوَ مَسْئُولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ متفق عليه

"রাষ্ট্রপ্রধান দায়িত্বশীল, সে তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে।"

আর আল্লাহর প্রতি দা'ওয়াত করা হলো সবচেয়ে বড় দায়িত্ব যা করা ফরজ এরপর দা'ওয়াত করা ফরজ হলো আলেমদের প্রতি। এঁদের থেকে আল্লাহ তা'য়ালা জ্ঞান প্রচার ও তা গোপন না করার অঙ্গীকার নিয়েছেন।

   আল্লাহ তা'য়ালার বাণী:

   وَإِذْ أَخَذَ اللَّهُ مِيثَاقَ الَّذِينَ أُوتُوا الْكِتَابَ لَتُبَيِّنُنَّهُ لِلنَّاسِ وَلَا تَكْتُمُونَهُ فَنَبَذُوهُ وَرَاءَ ظُهُورِهِمْ وَاشْتَرَوْا بِهِ ثَمَنًا قَلِيلًا فَبِئْسَ مَا يَشْتَرُونَ ١٨٧

   “আর আল্লাহ যখন আহলে কিতাবদের কাছ থেকে প্রতিজ্ঞা গ্রহণ করলেন যে, তা মানুষের নিকট বর্ণনা করবে এবং গোপন করবে না, তখন তারা সে প্রতিজ্ঞাকে নিজেদের পেছনে ফেলে রাখল।

   আর তারা কেনাবেচা করল সামান্য মূল্যের বিনিময়ে। সুতরাং কতই না মন্দ তাদের এ বেচাকেনা।” [সূরা আল-ইমরান : ১৮৭]

   নবী ﷺ বলেন:

   مَنْ سُئِلَ عَنْ عِلْمٍ فَكَتَمَهُ أَلْجَمَهُ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ بِلِجَامٍ مِنْ نَارٍ يَوْمَ الْقِيَامَةِ صحيح الترغيب والترهيب

“যে ব্যক্তিকে (দ্বীনের) জ্ঞান সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে। অতঃপর সে তা গোপন রাখল আল্লাহ তা'য়ালা কিয়ামতের দিন তাকে আগুনের লাগাম পরাবেন।" [হাদীসটি হাসান সহীহ, সহীহুত্তারগীব ওয়াত্তারহীব, আলবানী- হাঃ নং ১২১]

নবী-রসূলগণের দা'ওয়াতের পদ্ধতি জানার গুরুত্ব

প্রথমতঃ আল্লাহ তা'য়ালার দ্বীনের প্রকৃত দায়ী (আহ্বানকারী) হলেন নবী-রসূলগণ। তাঁরা মানুষকে একমাত্র আল্লাহ তা'য়ালার দিকে আহ্বান করেছেন। তাওহীদ প্রতিষ্ঠা ও শিরক উৎখাতের দাওয়াত দিয়েছেন। আর যাতে মানুষের কল্যাণ ও মঙ্গল রয়েছে তার প্রতি উৎসাহিত করেছেন এবং যাতে তাদের অকল্যাণ ও অমঙ্গল রয়েছে তা থেকে বারণ করেছেন।

   ১. আল্লাহ তা'য়ালার বাণী:

   لَقَدْ أَرْسَلْنَا نُوحًا إِلَى قَوْمِهِ فَقَالَ يَا قَوْمِ اعْبُدُوا اللَّهَ مَا لَكُم مِّنْ إِلَهٍ غَيْرُهُ إِنِّي أَخَافُ عَلَيْكُمْ عَذَابَ يَوْمٍ عَظِيمٍ ٥٩

   “নিশ্চয় আমি নূহকে তার সম্প্রদায়ের প্রতি পাঠিয়েছি। সে বলল: হে আমার সম্প্রদায়, তোমরা আল্লাহর এবাদত কর। তিনি ব্যতীত তোমাদের কোন মাবুদ (উপাস্য) নেই। আমি তোমাদের জন্যে একটি মহাদিবসের শাস্তির আশঙ্কা করি।” [সূরা আ'রাফ:৫৯]

   ২. আল্লাহ তা'য়ালার বাণী:

   وَإِلَى عَادٍ أَخَاهُمْ هُودًا قَالَ يَا قَوْمِ اعْبُدُوا اللَّهَ مَا لَكُم مِّنْ إِلَهٍ غَيْرُهُ

   "আদ সম্প্রদায়ের কাছে প্রেরণ করেছি তাদের ভাই হুদকে। সে বলল: হে আমার সম্প্রদায়, তোমরা আল্লাহর এবাদত কর। তিনি ব্যতীত তোমাদের কোন মাবুদ নেই।” [সুরা আ'রাফ: ৬৫]

   ৩. আল্লাহ তা'য়ালার বাণী:

   وَإِلَى ثَمُودَ أَخَاهُمْ صَالِحًا قَالَ يَا قَوْمِ اعْبُدُوا اللَّهَ مَا لَكُم مِّنْ إِلَهٍ غَيْرُهُ قَدْ جَاءَتْكُم بَيِّنَةٌ مِّن رَّبِّكُمْ ٧٣

   “সামূদ সম্প্রদায়ের কাছে প্রেরণ করেছি তাদের ভাই সালেহকে। সে বলল: হে আমার সম্প্রদায় তোমরা আল্লাহর এবাদত কর। তিনি ব্যতীত তোমাদের কোন মাবুদ নেই। [সূরা আ'রাফ: ৭৩]

   ৪. আল্লাহ তা'য়ালার বাণী:

   فَتَوَلَّى عَنْهُمْ وَقَالَ يَا قَوْمِ لَقَدْ أَبْلَغْتُكُمْ رِسَالَةَ رَبِّي وَنَصَحْتُ لَكُمْ وَلَكِن لَّا تُحِبُّونَ النَّاصِحِينَ ٧٩

   "আর সে (সালেহ বলল: হে আমার জাতি, আমি তোমাদের নিকট আমার রবের রেসালাত পৌঁছে দিয়েছি। কিন্তু তোমরা নসীহতকারীদেরকে পছন্দ করো না।” [সূরা আ'রাফ: ৭৯)

   ৫. আল্লাহ তা'য়ালার বাণী:

   وَإِلَى مَدْيَنَ أَخَاهُمْ شُعَيْبًا قَالَ يَا قَوْمِ اعْبُدُوا اللَّهَ مَا لَكُم مِّنْ إِلَهٍ غَيْرُهُ

   “আমি মাদইয়ানের প্রতি তাদের ভাই শোয়ায়েবকে প্রেরণ করেছি। সে বলল: হে আমার সম্প্রদায়, তোমরা আল্লাহর এবাদত কর। তিনি ব্যতীত তোমাদের কোন মাবুদ নেই।”[সূরা আ'রাফ: ৮৫]

   ৬. আল্লাহ তা'য়ালার বাণী:

   وَإِبْرَاهِيمَ إِذْ قَالَ لِقَوْمِهِ اعْبُdُوا اللَّهَ وَاتَّقُوهُ ذَلِكُمْ خَيْرٌ لَّكُمْ إِن كُنتُمْ تَعْلَمُونَ ١٦

   “স্মরণ কর ইবরাহীমকে, যখন সে তার সম্প্রদায়কে বলল: তোমরা আল্লাহর এবাদত কর এবং তাঁকে ভয় কর। এটাই তোমাদের জন্যে উত্তম যদি তোমরা বোঝ।”[সূরা আনকাবূত:১৬]

   ৭. আল্লাহ তা'য়ালার বাণী:

   وَقَالَ الْمَسِيحُ يَا بَنِي إِسْرَائِيلَ اعْبُدُوا اللَّهَ رَبِّي وَرَبَّكُمْ

   “অথচ মসীহ্ বলল: হে বনি ইসরাঈল, তোমরা আল্লাহর এবাদত কর, যিনি আমার পালনকর্তা এবং তোমাদের পালনকর্তা।” [সূরা মায়েদা: ৭২]

   ৮. আল্লাহ তা'য়ালার বাণী:

   وَلَقَدْ بَعَثْنَا فِي كُلِّ أُمَّةٍ رَّسُولًا أَنِ اعْبُدُوا اللَّهَ وَاجْتَنِبُوا الطَّاغُوتَ

   “আমি প্রত্যেক উম্মতের মধ্যেই রসূল প্রেরণ করেছি এই মর্মে যে, তোমরা আল্লাহর এবাদত কর এবং তাগূত (আল্লাহ ছাড়া যার এবাদত করা হয়) থেকে নিরাপদ থাক।” [সূরা নাহল : ৩৬]

   ৯. রসূলুল্লাহ ﷺ-এর বাণী:

   عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِنَّهُ لَمْ يَكُنْ نَبِيٌّ قَبْلِي إِلَّا كَانَ حَقًّا عَلَيْهِ أَنْ يَدُلَّ أُمَّتَهُ عَلَى خَيْرِ مَا يَعْلَمُهُ لَهُمْ وَيُنْذِرَهُمْ شَرَّ مَا يَعْلَمُهُ لَهُمْ. رواه مسلم

আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস [রাঃ] থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন রসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন: “আমার পূর্বের প্রতিটি নবীর দায়িত্ব ছিল, যে কল্যাণ জানতেন তার প্রতি তাঁর উম্মতেকে উৎসাহিত করা এবং যে অনিষ্ট সম্পর্কে অবগত হতেন তা থেকে তাদেরকে 'ভয় প্রদর্শন করা।” [মুসলিম]

দ্বিতীয়ত: নবী-রসুলদের দা'ওয়াত আল্লাহ তা'য়ালার অহির ভিত্তিতে। কোন চিন্তাবিদের চিন্তা-ভাবনা বা গবেষকের গবেষণা কিংবা কোন অলি-বুজুর্গের স্বপ্ন ইত্যাদি দ্বারা নয়। তাদের প্রতিটি কাজ ও আহ্বান একমাত্র অহি দ্বারাই গ্রহণ করা।

   ১. আল্লাহ তা'য়ালার বাণী:

   قُلْ مَا كُنتُ بِدْعًا مِّنَ الرُّسُلِ وَمَا أَدْرِي مَا يُفْعَلُ بِي وَلَا بِكُمْ إِنْ أَتَّبِعُ إِلَّا مَا يُوحَى إِلَيَّ وَمَا أَنَا إِلَّا نَذِيرٌ مُّبِينٌ ٩

   “বলুন, আমি তো কোন নতুন রসূল নই। আমি জানি না, আমার ও তোমাদের সাথে কি ব্যবহার করা হবে। আমি কেবল তারই অনুসরণ করি, যা আমার প্রতি অহি করা হয়। আমি স্পষ্ট সতর্ককারী ছাড়া আর কিছুই নই।" [সূরা আহকাফ:৯]

   ২. আল্লাহ তা'য়ালার বাণী:

   قُلْ إِنَّمَا أَتَّبِعُ مَا يُوحَى إِلَيَّ مِن رَّبِّي

   “বলুন, আমি তো শুধুমাত্র আমার প্রতিপালকের নিকট থেকে যে অহি আসে তারই অনুসরণ করি।" [সূরা আ'রাফ : ২০৩]

   ৩. আল্লাহ তা'য়ালার বাণী:

   وَلَوْ تَقَوَّلَ عَلَيْنَا بَعْضَ الْأَقَاوِيلِ ٤٤ لَأَخَذْنَا مِنْهُ بِالْيَمِينِ ٤٥ ثُمَّ لَقَطَعْنَا مِنْهُ الْوَتِينَ ٤٦


   "তিনি যদি আমার নামে কোন কথা রচনা করতেন, তাহলে আমি তাঁর ডান হাত ধরে ফেলতাম। অতঃপর কেটে দিতাম তার গ্রীবা।” [সূরা হাক্কাহ: ৪৪-৪৬]

 তৃতীয়ত: আল্লাহ তা'য়ালা কুরআনুল করীমে বিভিন্ন নবী-রসূলদের ঘটনা বর্ণনা করেছেন। আর তাঁদের চরিত্র ও গুণাবলী এবং পদ্ধতির অনুসরণ ও চলার জন্য আমাদেরকে নির্দেশ প্রদান করেছেন।

   ১. আল্লাহ তা'য়ালার বাণী:

   أُولَئِكَ الَّذِينَ هَدَى اللَّهُ فَبِهُدَاهُمُ اقْتَدِهْ قُل لَّا أَسْأَلُكُمْ عَلَيْهِ أَجْرًا إِنْ هُوَ إِلَّا ذِكْرَى لِلْعَالَمِينَ ٩٠

   "এরা এমন ছিল, যাদেরকে আল্লাহ পথ প্রদর্শন করেছিলেন। অতএব, আপনিও তাদের পথ অনুসরণ করুন। আপনি বলে দিন। আমি তোমাদের কাছে এর জন্যে কোন পারিশ্রমিক চাই না। এতো সারা বিশ্বের জন্যে একটি উপদেশমাত্র।" [সূরা আন'আম: ৯০]

   ২. আল্লাহ তা'য়ালার বাণী:

   لَقَدْ كَانَ فِي قَصَصِهِمْ عِبْرَةٌ لِّأُولِي الْأَلْبَابِ

   “তাদের কাহিনীতে বুদ্ধিমানদের জন্য রয়েছে প্রচুর শিক্ষণীয় বিষয়।” [সূরা ইউসুফ:১১১]

চতুর্থত: দা'ওয়াতী কাজে সাফল্য ও অগ্রগতি আল্লাহ তা'য়ালার নিয়ম ও পদ্ধতি ছাড়া অন্য কোন নীতি দ্বারা সম্ভব নয়। আর নবী-রসূলদের নিয়ম ও পদ্ধতিই হলো আল্লাহর রব্বানী পদ্ধতি ও নীতিমালা। আর বাকি সবই কারো স্বপ্নে বা জঙ্গলে কিংবা পণ্ডিত সাহেবের গবেষণা ইত্যাদির মাধ্যমে পাওয়া।

নবী রসূলদের দা'ওয়াতের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য

স্মরণে রাখতে হবে যে, একজন মানুষ হেদায়েত হলেও রেসালাতের মহান উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন হবে। কিয়ামতের দিন এমনও নবী উঠবেন যার সঙ্গে একজনও উম্মত থাকবে না। আবার কারো সাথে দুইজন, কারো সাথে তিনজন।

   عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا قَالَ خَرَجَ عَلَيْنَا النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمًا فَقَالَ: عُرِضَتْ عَلَيَّ الْأُمَمُ فَجَعَلَ يَمُرُّ النَّبِيُّ مَعَهُ الرَّجُلُ وَالنَّبِيُّ مَعَهُ الرَّجُلَانِ وَالنَّبِيُّ مَعَهُ الرَّهْطُ وَالنَّبِيُّ لَيْسَ مَعَهُ أَحَدٌ. متفق عليه

   ইবনে আব্বাস [রাঃ] থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: নবী একদিন আমাদের নিকট এসে বললেন: “আমার প্রতি পূর্বের উম্মতদেরকে পেশ করা হয়। দেখলাম এমন নবী অতিক্রম করছেন যাঁর সাথে একজন মাত্র মানুষ, এমন নবী যাঁর সাথে দুইজন মানুষ, এমন নবী যাঁর সাথে ছোট একটি দল ও এমনও নবী অতিক্রম করছেন যাঁর সাথে একজনও নেই।” [বুখারী ও মুসলিম]

   নূহ (আঃ) দীর্ঘ সাড়ে নয়শত বছর দা'ওয়াত করে মাত্র ৮৩ জন দা'ওয়াত কবুল করেছিল। যার মধ্যে তাঁর স্ত্রী ও পুত্রও ছিল না।

   ১. আল্লাহর তাওহীদ প্রতিষ্ঠা ও শিরক উৎখাত করে দ্বীন কায়েম করা:

   وَلَقَدْ بَعَثْنَا فِي كُلِّ أُمَّةٍ رَّسُولًا أَنِ اعْبُدُوا اللَّهَ وَاجْتَنِبُوا الطَّاغُوتَ

   “আমি প্রতিটি জাতির নিকট রসূল প্রেরণ করেছি (এ কথা বলার জন্য যে তোমরা একমাত্র আল্লাহর এবাদত করবে এবং তাগুত তথা শিরক থেকে বিরত থাকবে।" [সূরা নাহাল: ৩৬]

   ২. মানুষকে আল্লাহর সিরাতে মুস্তাকীম ও সঠিক দ্বীনের প্রতি আহ্বান করা:

   يَا أَبَتِ إِنِّي قَدْ جَاءَنِي مِنَ الْعِلْمِ مَا لَمْ يَأْتِكَ فَاتَّبِعْنِي أَهْدِكَ صِرَاطًا سَوِيًّا ٤٣

   (ক) (ইবরাহীম বলল:) "হে আমার পিতা, আমার কাছে এমন জ্ঞান এসেছে; যা আপনার কাছে আসেনি, সুতরাং আমার অনুসরণ করুন, আমি আপনাকে সরল পথ দেখাব।" [সূরা মারয়াম: ৪৩]

   وَإِنَّكَ لَتَهْدِي إِلَى صِرَاطٍ مُّسْتَقِيمٍ ٥٢ صِرَاطِ اللَّهِ الَّذِي لَهُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الْأَرْضِ أَلَا إِلَى اللَّهِ تَصِيرُ الْأُمُورُ ٥٣

   (খ) "আর নিশ্চয়ই আপনি তাদেরকে সিরাতে মুস্তাকীমের হেদায়েত দান করেন। আল্লাহর পথ। আসমান ও জমিনে যা কিছু আছে, সবই তাঁরই। জেনে রাখ, আল্লাহ তা'য়ালার কাছেই সব বিষয় পৌঁছে।” [সূরা শূরা: ৫২-৫৩]

   وَإِنَّكَ لَتَدْعُوهُمْ إِلَى صِرَاطٍ مُّسْتَقِيمٍ ٧٣

   (গ) “আর নিশ্চয়ই আপনি তাদেরকে সিরাতে মুস্তাকীমের দিকে দাওয়াত করেন।" [সূরা মুমিনূন: ৭৩]

      ৩. শিরক, কুফুর, অজ্ঞতা ও পাপের অন্ধকার থেকে বের করে তাওহীদ, ঈমান, জ্ঞান ও সত্যের আলোর দিকে আনা

   يَهْدِي بِهِ اللَّهُ مَنِ اتَّبَعَ رِضْوَانَهُ سُبُلَ السَّلَامِ وَيُخْرِجُهُم مِّنَ الظُّلُمَاتِ إِلَى النُّورِ بِإِذْنِهِ وَيَهْدِيهِمْ إِلَى صِرَاطٍ مُّسْتَقِيمٍ ١٦

   (ক) এ (কুরআন) দ্বারা আল্লাহ যারা তাঁর সন্তুষ্টি কামনা করে, তাদেরকে নিরাপত্তার পথ প্রদর্শন করবেন এবং তাদেরকে স্বীয় নির্দেশ দ্বারা অন্ধকার থেকে বের করে আলোর দিকে আনয়ন করবেন এবং সরল পথে পরিচালনা করবেন।” [সূরা মায়েদা: ১৬]

   الر كِتَابٌ أَنزَلْنَاهُ إِلَيْكَ لِتُخْرِجَ النَّاسَ مِنَ الظُّلُمَاتِ إِلَى النُّورِ بِإِذْنِ رَبِّهِمْ إِلَى صِرَاطِ الْعَزِيزِ الْحَمِيدِ ١

   (খ) "আলিফ-লাম-র; এটি একটি গ্রন্থ, যা আমি আপনার প্রতি নাজিল করেছি- যাতে আপনি মানুষকে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে বের করে আনেন-পরাক্রান্ত, প্রশংসার যোগ্য পালনকর্তার নির্দেশে তাঁইর পথের দিকে।" [সূরা ইবরাহীম : ১]

   ৪. আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা:

   এ জন্যে ঈমানদারগণ তাদের দা'ওয়াতের কাজের দ্বারা একমাত্র আল্লাহ তা'য়ালার সন্তুষ্টি হাসিল করাই তাদের লক্ষ্য থাকে যাতে করে তাঁরা দুনিয়া ও আখেরাতে সাফল্য অর্জনকারীদের অন্তর্ভুক্ত হতে পারেন।

   مُّحَمَّدٌ رَّسُولُ اللَّهِ وَالَّذِينَ مَعَهُ أَشِدَّاءُ عَلَى الْكُفَّارِ رُحَمَاءُ بَيْنَهُمْ تَرَاهُمْ رُكَّعًا سُجَّدًا يَبْتَغُونَ فَضْلًا مِّنَ اللَّهِ وَرِضْوَانًا

   (ক) “মুহম্মাদ আল্লাহর রসূল এবং তাঁর সহচরগণ কাফেরদের প্রতি কঠোর, নিজেদের মধ্যে পরস্পর সহানুভূতিশীল। আল্লাহর অনুগ্রহ ও সন্তুষ্টি কামনায় আপনি তাদেরকে রুকু ও সেজদারত দেখবেন।" [সূরা ফাত্‍হ: ২৯]

   لِلْفُقَرَاءِ الْمُهَاجِرِينَ الَّذِينَ أُخْرِجُوا مِن دِيَارِهِمْ وَأَمْوَالِهِمْ يَبْتَغُونَ فَضْلًا مِّنَ اللَّهِ وَرِضْوَانًا وَيَنصُرُونَ اللَّهَ وَرَسُولَهُ أُولَئِكَ هُمُ الصَّادِقُونَ ٨

   (খ) “(এই ধন সম্পদ) দেশত্যাগী নিঃস্বদের জন্যে, যারা আল্লাহর অনুগ্রহ ও সন্তুষ্টিলাভের অন্বেষণে এবং আল্লাহ ও তাঁর রসূলের সাহায্যার্থে সম্পদ থেকে বহিষ্কৃত হয়েছে। তারাই -নিজেদের বাস্তভিটা ও ধন সত্যবাদী।" [সূরা হাশর: ৮]

   ৫. মানুষকে আল্লাহর জাহান্নামের আগুন থেকে বের ও জান্নাতে প্রবেশ করানোর জন্য:

   এ জন্য নবী ﷺ বলেছেন:

   كُلُّ أُمَّتِي يَدْخُلُونَ الْجَنَّةَ إِلَّا مَنْ أَبَى قَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ وَمَنْ يَأْبَى قَالَ مَنْ أَطَاعَنِي دَخَلَ الْجَنَّةَ وَمَنْ عَصَانِي فَقَدْ أَبَى. رواه البخاري

   (ক) “আমার উম্মতের প্রতিটি মানুষ জান্নাতে প্রবেশ করবে। কিন্তু অস্বীকারকারী ব্যতিরেকে, বলা হলো হে আল্লাহর রসূল অস্বীকারকারী কে? তিনি বললেন: যে আমার আনুগত্য করবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে আর যে আমার নাফরমানি করবে সেই হলো অস্বীকারকারী।" [বুখারী]

   عَنْ أَنَسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ كَانَ غُلَامٌ يَهُودِيٌّ يَخْدُمُ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَمَرِضَ فَأَتَاهُ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَعُودُهُ فَقَعَدَ عِندَ رَأْسِهِ فَقَالَ لَهُ: أَسْلِمْ. فَنَظَرَ إِلَى أَبِيهِ وَهُوَ عِندَهُ فَقَالَ لَهُ أَطِعْ أَبَا الْقَاسِمِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَأَسْلَمَ فَخَرَجَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهُوَ يَقُولُ: الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي أَنْقَذَهُ مِنَ النَّارِ. رواه البخاري

   (খ) আনাস [রাঃ] থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, একজন ইহুদির ছেলে নবী ﷺ এর খেদমত করত। সে অসুস্থ হলে নবী তাকে দেখতে যান। তিনি ﷺ ছেলেটির মাথার পার্শ্বে বসে বলেন “ইসলাম কবুল কর।” ছেলেটি তার নিকট উপস্থিত বাবার দিকে চাইল। অতঃপর বাবা ছেলেটিকে বলল, আবুল কাসেম ﷺ-এর কথা শুন। এরপর বালকটি ইসলাম কবুল করল। নবী ﷺ বের হয়ে বলেন: "সেই মহান আল্লাহর সমস্ত প্রশংসা যিনি ওরে জাহান্নাম হতে বাঁচালেন।” [বুখারী]

      ৬. বিভিন্ন দ্বীনের জুলুম-অত্যাচার থেকে বের করে ইসলামের ইনসাফের দিকে এবং দুনিয়ার সংকীর্ণতা থেকে বের করে দুনিয়া ও আখেরাতে প্রশস্ততার দিকে নিয়ে আসা:

   সাহাবী রেবী' ইবনে আমের (রাঃ) দ্বীনের দা'ওয়াদের উদ্দেশ্য সম্পর্কে বীর রুস্তমের সামনে বলেন:

   لِنُخْرِجَ مَنْ شَاءَ مِنْ عِبَادَةِ الْعِبَادِ إِلَى عِبَادَةِ اللَّهِ وَمِنْ ضِيقِ الدُّنْيَا إِلَى سَعَتِهَا وَمِنْ جَوْرِ الْأَدْيَانِ إِلَى عَدْلِ الْإِسْلَامِ

   মানুষকে মানুষের এবাদত করা থেকে এক আল্লাহর এবাদত ও দুনিয়ার সংকীর্ণতা থেকে তার প্রশস্ততার দিকে এবং বিভিন্ন ধর্মের জুলুম-অত্যাচার থেকে ইসলামের ইনসাফের দিকে বের করে নিয়ে আনাই আমাদের একমাত্র লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। (তারীখে ত্ববারী:৩/৩৪)

   ৭. শয়তানের আনুগত্য ও তার পদাঙ্কানুসরণ ও প্রবৃত্তির গোলামী থেকে বের করা:

   ১. আল্লাহ তায়ালার বাণী:

   وَلَا تَتَّبِعُوا خُطُوَاتِ الشَّيْطَانِ إِنَّهُ لَكُمْ عَدُوٌّ مُّبِينٌ ١٦٨

   "তোমরা শয়তানের পদাঙ্কানুসরণ করো না; নিশ্চয় সে তোমাদের সুস্পষ্ট শত্রু।" [সুরা বাকারা : ১৬৮]

   ২. আল্লাহ তা'য়ালার বাণী:

   وَأَمَّا مَنْ خَافَ مَقَامَ رَبِّهِ وَنَهَى النَّفْسَ عَنِ الْهَوَى ٤٠ فَإِنَّ الْجَنَّةَ هِيَ الْمَأْوَى ٤١

   “আর যে ব্যক্তি তার পালনকর্তার সামনে দণ্ডায়মান হওয়াকে ভয় করেছে এবং নফসের গোলামী থেকে নিজেকে নিবৃত্ত রেখেছে, তার ঠিকানা হবে জান্নাত।" [সূরা নাজিআত:৪০-৪১]

   ৩. আল্লাহ তা'য়ালার বাণী:

   فَلَا تَتَّبِعُوا الْهَوَى أَن تَعْدِلُوا

   “অতএব, তোমরা বিচার করতে গিয়ে প্রবৃত্তির অনুসরণ কর না।”[সূরা নিসা: ১৩৫]

      ৮. অস্বীকারকারী ও কাফেরদের উপর হুজ্জত-দলিল ও প্রমাণ কায়েম করা:

   رُّسُلًا مُّبَشِّرِينَ وَمُنذِرِينَ لِئَلَّا يَكُونَ لِلنَّاسِ عَلَى اللَّهِ حُجَّةٌ بَعْدَ الرُّسُلِ وَكَانَ اللَّهُ عَزِيزًا حَكِيمًا ١٦٥

   (ক) “সুসংবাদদাতা ও ভীতি প্রদর্শনকারী রসূলগণকে প্রেরণ করেছি, যাতে রসূলগণের পরে আল্লাহর প্রতি মানুষের জন্য কোন ওজর করার অবকাশ না থাকে। আল্লাহ প্রবল পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।" [সূরা নিসা: ১৬৫]

   إِذَا أُلْقُوا فِيهَا سَمِعُوا لَهَا شَهِيقًا وَهِيَ تَفُورُ ٧ تَكَادُ تَمَيَّزُ مِنَ الْغَيْظِ كُلَّمَا أُلْقِيَ فِيهَا فَوْجٌ سَأَلَهُمْ خَزَنَتُهَا أَلَمْ يَأْتِكُمْ

   نَذِيرٌ ٨ قَالُوا بَلَى قَدْ جَاءَنَا نَذِيرٌ فَكَذَّبْنَا وَقُلْنَا مَا نَزَّلَ اللَّهُ مِن شَيْءٍ إِنْ أَنتُمْ إِلَّا فِي ضَلَالٍ كَبِيرٍ ٩ وَقَالُوا لَوْ كُنَّا نَسْمَعُ أَوْ نَعْقِلُ مَا كُنَّا فِي أَصْحَابِ السَّعِيرِ ١٠ فَاعْتَرَفُوا بِذَنبِهِمْ فَسُحْقًا لِّأَصْحَابِ السَّعِيرِ ١١

   (খ) "যখন তারা তথায় নিক্ষিপ্ত হবে, তখন তার উৎক্ষিপ্ত গর্জন শুনতে পাবে। ক্রোধে জাহান্নাম যেন ফেটে পড়বে। যখনই তাতে কোন সম্প্রদায় নিক্ষিপ্ত হবে তখন তাদেরকে তার সিপাহীরা জিজ্ঞাসা করবে। তোমাদের কাছে কি কোন সতর্ককারী আগমন করেননি? তারা বলবে: হ্যাঁ, আমাদের কাছে সতর্ককারী আগমন করেছিল, অতঃপর আমরা মিথ্যারোপ করেছিলাম এবং বলেছিলাম। আল্লাহ কিছু নাজিল করেননি। তোমরা মহাবিভ্রান্তিতে পড়ে রয়েছে। তারা আরও বলবে: যদি আমরা শুনতাম ও বুঝার চেষ্টা করতাম, তবে আমরা জাহান্নামবাসীদের মধ্যে থাকতাম না।" [সূরা মূলক:৭-১১]

   ৯. একমাত্র নবী-রসুলদের হেদায়েত ও সত্যের অনুসরণ ও অনুকরণ করানো। আর শয়তান এবং বাপ-দাদা ও পীর- বুজুর্গদের তরীকা ত্যাগ করানো:

   اتَّبِعُوا مَا أُنزِلَ إِلَيْكُم مِّن رَّبِّكُمْ وَلَا تَتَّبِعُوا مِن دُونِهِ أَوْلِيَاءَ قَلِيلًا مَّا تَذَكَّرُونَ ٣

   (ক) “তোমরা অনুসরণ কর, যা তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে অবতীর্ণ হয়েছে এবং আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্যান্য অলিদের অনুসরণ  করো না। আর তোমরা অল্পই উপদেশ গ্রহণ কর।"[সূরা আ'রাফ: ৩]

   وَإِذَا قِيلَ لَهُمُ اتَّبِعُوا مَا أَنزَلَ اللَّهُ قَالُوا بَلْ نَتَّبِعُ مَا وَجَدْنَا عَلَيْهِ آبَاءَنَا أَوَلَوْ كَانَ الشَّيْطَانُ يَدْعُوهُمْ إِلَى عَذَابِ السَّعِيرِ ٢١

   (খ) "তাদেরকে যখন বলা হয়, আল্লাহ যা নাজিল করেছেন, তোমরা তারই অনুসরণ কর, তখন তারা বলে, আমরা আমাদের বাপ-দাদাদেরকে যে বিষয়ের উপর পেয়েছি, তারই অনুসরণ করব। শয়তান যদি তাদেরকে জাহান্নামের শাস্তির দিকে দাওয়াত দেয়, তবুও কি?" [সূরা লোকমান: ২১]

   وَإِذَا قِيلَ لَهُمُ اتَّبِعُوا مَا أَنزَلَ اللَّهُ قَالُوا بَلْ نَتَّبِcُ مَا أَلْفَيْنَا عَلَيْهِ آبَاءَنَا أَوَلَوْ كَانَ آبَاؤُهُمْ لَا يَعْقِلُونَ شَيْئًا وَلَا يَهْتَدُونَ ١٧٠

   (গ) “আর যখন তাদেরকে বলা হয়, আল্লাহর নিকট হতে যা নাজিল হয়েছে তার অনুসরণ কর, তখন তারা বলে কখনো না, আমরা তো সে বিষয়েরই অনুসরণ করব, যাতে আমরা আমাদের বাপ-দাদাদেরকে দেখেছি। যদিও তাদের বাপ-দাদারা কিছুই জানতো না, জানতো না সরল পথও।” [সূরা বাকারা: ১৭০]

   ذَلِكَ بِأَنَّ الَّذِينَ كَفَرُوا اتَّبَعُوا الْبَاطِلَ وَأَنَّ الَّذِينَ آمَنُوا اتَّبَعُوا الْحَقَّ مِن رَّبِّهِمْ كَذَلِكَ يَضْرِبُ اللَّهُ لِلنَّاسِ أَمْثَالَهُمْ ٣

   (ঘ) “এটা এ কারণে যে, যারা কাফের, তারা বাতিলের অনুসরণ করে এবং যারা মুমিন, তারা তাদের পালনকর্তার নিকট থেকে আগত সত্যের অনুসরণ করে। এমনিভাবে আল্লাহ মানুষের জন্যে তাদের দৃষ্টান্তসমূহ বর্ণনা করেন।" [সূরা মুহাম্মাদ: ৩]

   ১০. সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজের নিষেধ করা:

   وَلْتَكُن مِّنكُمْ أُمَّةٌ يَدْعُونَ إِلَى الْخَيْرِ وَيَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنكَرِ وَأُولَئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ ١٠٤

   "আর তোমাদের মধ্যে এমন একটা দল থাকা উচিত যারা আহবান জানাবে সৎকর্মের প্রতি, নির্দেশ দেবে ভাল কাজের এবং বারণ করবে অন্যায় কাজ থেকে, আর তারাই হলো সফলকাম।"[সূরা আল-ইমরান: ১০৪]

সমস্ত নবী-রসূলদের দা'ওয়াতের উসুল চারটি:

      (এক) তাওহীদ।

      (দুই) নবুয়াত ও রেসালাত।

      (তিন) তাকওয়া।

      (চার) আখেরাত।

সমস্ত নবী-রসূল নিজ নিজ উম্মতকে আল্লাহ তা'য়ালার তাওহীদ প্রতিষ্ঠা এবং তাওহীদের বিপরীত শিরক থেকে বাঁচার জন্য নির্দেশ করেছেন। এটাই হলো তাওহীদের হকিকত যা আল্লাহর হক। আর সর্বপ্রকার এবাদত একমাত্র নবী-রসূলদের তরীকায় আদায় করার জন্য আদেশ দিয়েছেন যা নবুয়াত ও রেসালাতের হকিকত। এ ছাড়া আল্লাহ তায়ালা ও নবী- রসূলগণের আদেশ-নিষেধ পালন করাই হলো তাকওয়া। আর উপরের তিনটি উসুলের উপর নির্ভর করবে আখেরাত। সঠিকভাবে পালন করলে আখেরাতে জান্নাত আর না করলে জাহান্নাম। সকল নবী-রসূলগণ এ চারটি উসুল দ্বারাই দা'ওয়াত ও তাবলীগ করেছেন। পূর্ণ দ্বীন ইসলাম এই চার উসুলের মাঝেই কেন্দ্রভূত। সর্বপ্রথম রসূল নূহ (আঃ) কে আল্লাহ তা'য়ালা এই চারটি উসুল দ্বারাই প্রেরণ করেন।

   আল্লাহ তা'য়ালার বাণী:

   إِنَّا أَرْسَلْنَا نُوحًا إِلَى قَوْمِهِ أَنْ أَنذِرْ قَوْمَكَ مِن قَبْلِ أَن يَأْتِيَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ ١ قَالَ يَا قَوْمِ إِنِّي لَكُمْ نَذِيرٌ مُّبِينٌ ٢ أَنِ اعْبُدُوا اللَّهَ وَاتَّقُوهُ وَأَطِيعُونِ ٣ يَغْفِرْ لَكُم مِّن ذُنُوبِكُمْ وَيُؤَخِّرْكُمْ إِلَى أَجَلٍ مُّسَمًّى إِنَّ أَجَلَ اللَّهِ إِذَا جَاءَ لَا يُؤَخَّرُ لَوْ كُنتُمْ تَعْلَمُونَ ٤

   “আমি নূহকে প্রেরণ করেছিলাম তার জাতির নিকট এ কথা বলে: তুমি তোমার জাতিকে সতর্ক কর, তাদের প্রতি যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি আসার আগে। সে বলল: হে আমার জাতি! আমি তোমাদের জন্যে স্পষ্ট সতর্ককারী। এ বিষয়ে যে, তোমরা আল্লাহর এবাদত কর, তাঁকে ভয় কর এবং আমার আনুগত্য কর। আল্লাহ তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করবেন এবং নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত অবকাশ দিবেন। নিশ্চয় আল্লাহর নির্দিষ্টকাল যখন হবে, তখন অবকাশ দেয়া হবে না, যদি তোমরা তা জানতে।” [সূরা নূহ: ১-৪]

   আল্লাহ তা'য়ালা প্রথম দুই আয়াত ও চতুর্থ আয়াতে আখেরাত উসুল উল্লেখ করেছেন। আর তৃতীয় আয়াতে তিনটি উসুল তথা তাওহীদ, তাকওয়া ও রেসালাত উল্লেখ করেছেন।

   দাওয়াতের ময়দানে যারা কাজ করছেন তাদেরকে এ চারটি উসুলে প্রতি গুরুত্ব দেয়া অতীব জরুরি। নিম্নে চারটি উসুলের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেয়া হল।


প্রথম: তাওহীদ:

   নবী-রসূলগণ তাঁদের জাতিকে সকল এবাদত একমাত্র আল্লাহর জন্য নির্দিষ্ট করা এবং কোন প্রকার এবাদত আল্লাহ ছাড়া অন্য কার জন্য না করার দা'ওয়াত করেন। যেমন: বিভিন্ন নবী-রসূলদের দা'ওয়াত সম্পর্কে আল্লাহ তা'য়ালার বাণী:

   فَقَالَ يَا قَوْمِ اعْبُدُوا اللَّهَ مَا لَكُم مِّنْ إِلَهٍ غَيْرُهُ

   "হে আমার জাতি! একমাত্র আল্লাহর এবাদত কর: তিনি ছাড়া আর কোন তোমাদের উপাস্য নেই।” [সূরা আ'রাফ: ৫৯, ৬৫, ৭৩, ৮৫ সূরা হুদ:৫০, ৬১, ৮৪ সূরা মুমিনুন : ২৩]


দ্বিতীয় নবুয়াত ও রেসালাত:

   নবুয়াত শব্দ থেকে নবী যার অর্থ খবরদাতা এবং রেসালাত শব্দ থেকে রসূল যার অর্থ পত্রবাহক বা দূত। নবী-রসূলগণ আল্লাহ তা'য়ালার পক্ষ থেকে খবরদাতা ও দূত। নবী-রসূলগণ আল্লাহর পক্ষ থেকে যা প্রচার করতেন তার আনুগত্য করার জন্য দা'ওয়াত করেন। প্রতিটি নবী-রসূল নিজ নিজ জাতিকে তাঁদের আনুগত্য করার জন্য নির্দেশ এবং নাফরমানি করতে নিষেধ করেন। আর রেসালাতের মর্মার্থ হলো এক আল্লাহর এবাদت শুধুমাত্র সে নবী বা রসূলের তরীকা ছাড়া আর অন্য কোন তরীকা দ্বারা করা যাবে না। আর করলেও তা আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য হবে না।

   সালেহ [আঃ] সম্পর্কে আল্লাহ তা'য়ালা বলেন:

   فَتَوَلَّى عَنْهُمْ وَقَالَ يَا قَوْمِ لَقَدْ أَبْلَغْتُكُمْ رِسَالَةَ رَبِّي وَنَصَحْتُ لَكُمْ وَلَكِن لَّا تُحِبُّونَ النَّاصِحِينَ ٧٩

   (ক) “সালেহ তাদের থেকে প্রস্থান করলো এবং বলল: হে আমার জাতি, আমি তোমাদের কাছে স্বীয় প্রতিপালকের। পয়গাম। (রেসালত) পৌঁছিয়েছি এবং তোমাদের মঙ্গল কামনা করছি কিন্তু তোমরা মঙ্গলাকাঙ্খীদেরকে ভালবাস না।” [সূরা আ'রাফ: ৭৯]

   يَا أَيُّهَا الرَّسُولُ بَلِّغْ مَا أُنزِلَ إِلَيْكَ مِن رَّبِّكَ وَإِن لَّمْ تَفْعَلْ فَمَا بَلَّغْتَ رِسَالَتَهُ وَاللَّهُ يَعْصِمُكَ مِنَ النَّاسِ إِنَّ اللَّهَ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الْكَافِرِينَ ٦٧

   (খ) “হে রসূল, তাবলীগ করুন, আপনার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে আপনার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে। আর যদি আপনি এরূপ না করেন, তবে আপনি তাঁর পয়গাম কিছুই পৌঁছালেন না। আল্লাহ আপনাকে মানুষের কাছ থেকে রক্ষা করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ কাফেরদেরকে পথ প্রদর্শন করেন না।” [সূরা মায়েদা: ৬৭]

   قُلْ يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنِّي رَسُولُ اللَّهِ

   (গ) “বলে দিন, হে মানবমণ্ডলী! তোমাদের সবার প্রতি আমি আল্লাহর প্রেরিত রসূল।" [সূরা আ'রাফ: ১৫৮]

   مَّا كَانَ مُحَمَّدٌ أَبَا أَحَدٍ مِّن رِّجَالِكُمْ وَلَكِن رَّسُولَ اللَّهِ وَخَاتَمَ النَّبِيِّينَ وَكَانَ اللَّهُ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمًا ٤٠

   (ঘ) “মুহাম্মদ তোমাদের কোন ব্যক্তির বাবা নন; বরং তিনি আল্লাহর রসূল এবং শেষ নবী। আল্লাহ সব বিষয়ে জ্ঞাত।”[সূরা আহজাব :৪০]

   فَإِن كَذَّبُوكَ فَقَدْ كُذِّبَ رُسُلٌ مِّن قَبْلِكَ جَاءُوا بِالْبَيِّنَاتِ وَالزُّبُرِ وَالْكِتَابِ الْمُنِيرِ ١٨٤

   (ঙ) "তাছাড়া এরা যদি তোমাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে, তবে তোমার পূর্বেও এরা এমন বহু নবীকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে: যারা নিদর্শনসমূহ নিয়ে এসেছিলেন এবং এনেছিলেন সহীফা ও প্রদীপ্ত গ্রন্থ।” [সূরা আল-ইমরান: ১৮৪]

   يَا مَعْشَرَ الْجِنِّ وَالْإِنسِ أَلَمْ يَأْتِكُمْ رُسُلٌ مِّنكُمْ يَقُصُّونَ عَلَيْكُمْ آيَاتِي وَيُنذِرُونَكُمْ لِقَاءَ يَوْمِكُمْ هَذَا قَالُوا شَهِدْنَا عَلَى أَنفُسِنَا وَغَرَّتْهُمُ الْحَيَاةُ الدُّنْيَا وَشَهِدُوا عَلَى أَنفُسِهِمْ أَنَّهُمْ كَانُوا كَافِرِينَ ١٣٠

   (চ) “হে জিন ও মানব সম্প্রদায়, তোমাদের কাছে কি তোমাদের মধ্য থেকে রসূল আগমন করেনি, যাঁরা তোমাদেরকে আমার বিধানাবলী বর্ণনা করতেন এবং তোমাদেরকে আজকের এ দিনের সাক্ষাতের ভীতি প্রদর্শন করতেন? তারা বলবে: আমরা স্বীয় পাপ স্বীকার করে নিলাম। পার্থিব জীবন তাদেরকে প্রতারিত করেছে। তারা নিজেদের বিরুদ্ধে স্বীকার করে নিয়েছে যে, তারা কাফের ছিল।” [সূরা আন'আম: ১৩০]

   وَسِيقَ الَّذِينَ كَفَرُوا إِلَى جَهَنَّمَ زُمَرًا حَتَّى إِذَا جَاءُوهَا فُتِحَتْ أَبْوَابُهَا وَقَالَ لَهُمْ خَزَنَتُهَا أَلَمْ يَأْتِكُمْ رُسُلٌ مِّنكُمْ يَتْلُونَ عَلَيْكُمْ آيَاتِ رَبِّكُمْ وَيُنذِرُونَكُمْ لِقَاءَ يَوْمِكُمْ هَذَا قَالُوا بَلَى وَلَكِنْ حَقَّتْ كَلِمَةُ الْعَذَابِ عَلَى الْكَافِرِينَ ٧١

   (ছ) “কাফেরদেরকে জাহান্নামের দিকে দলে দলে হাঁকিয়ে নেয়া হবে। তারা যখন সেখানে পৌঁছবে, তখন তার দরজাসমূহ খুলে দেয়া হবে এবং জাহান্নামের রক্ষীরা তাদেরকে বলবে, তোমাদের কাছে কি তোমাদের মধ্য থেকে রসূল আসেনি, যারা তোমাদের কাছে তোমাদের পালনকর্তার আয়াতসমূহ আবৃত্তি করত এবং সতর্ক করত এ দিনের সাক্ষাতের ব্যাপারে? তারা বলবে, হাঁ, কিন্তু কাফেরদের প্রতি শাস্তির বিধানই বাস্তবায়িত হয়েছে। "[সূরা জুমার : ৭১]

   আর এ জন্যে কোন কাফের মুসলিম হতে চাইলে এক আল্লাহর সাক্ষ্য দেওয়ার সাথে সাথে নবীর রেসালাতের সাক্ষ্য না দেওয়া পর্যন্ত মুসলিম হতে পারবে না।

   قُلْ إِن كُنتُمْ تُحِبُّونَ اللَّهَ فَاتَّبِعُونِي يُحْبِبْكُمُ اللَّهُ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ وَاللَّهُ غَفُورٌ رَّحِيمٌ ٣١

   "বলুন, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালবাস তাহলে আমাকে অনুসরণ কর, যাতে আল্লাহও তোমাদিগকে ভালবাসেন এবং তোমাদিগকে তোমারদের পাপ মার্জনা করে দেন। আর আল্লাহ হলেন ক্ষমাকারী, দয়ালু।" [সূরা আল-ইমরান: ৩১]


তৃতীয়: তাকওয়াঃ

   নবী-রসূলগণ তাঁদের জাতিকে তাকওয়া তথা আল্লাহর নির্দেশাবলী পালন এবং নিষেধসমূহ পরিহার করার জন্য আদেশ করেন। তাকওয়ার অর্থ সাধারণত: আল্লাহভীরুতাকে বলা হয়ে থাকে। এর অর্থ আল্লাহর নির্দেশ ত্যাগ করতে বা নিষেধ উপেক্ষা করতে তাঁকে ভয় করা। অন্যভাবে বলা যেতে পারে: আল্লাহর সমস্ত আদেশ পালন ও সকল নিষেধ থেকে দূরে থাকার নাম তাকওয়া।

   قَالَ يَا قَوْمِ إِنِّي لَكُمْ نَذِيرٌ مُّبِينٌ ٢ أَنِ اعْبُدُوا اللَّهَ وَاتَّقُوهُ وَأَطِيعُونِ ٣

   (ক) “সে (নূহ) বলল: হে আমার সম্প্রদায়! আমি তোমাদের জন্যে স্পষ্ট সতর্ককারী। এ বিষয়ে যে, তোমরা আল্লাহর এবাদত কর, তাঁকে ভয় কর এবং আমার আনুগত্য কর।” [সূরা নূহ:২-৩]

   كَذَّبَتْ عَادٌ الْمُرْسَلِينَ ١٢٣ إِذْ قَالَ لَهُمْ أَخُوهُمْ هُودٌ أَلَا تَتَّقُونَ ١٢٤ إِنِّي لَكُمْ رَسُولٌ أَمِينٌ ١٢٥ فَاتَّقُوا اللَّهَ وَ أَطِيعُونِ ١٢٦

   (খ) "আদ সম্প্রদায় রসূলগণকে মিথ্যাবাদী বলেছে। তখন তাদের ভাই হুদ তাদেরকে বললেন: তোমাদের কি ভয় নেই? আমি তোমাদের বিশ্বস্ত রসূল। অতএব, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং আমার আনুগত্য কর।” [সুরা শুয়ারা:১২৩-১২৬]

   كَذَّبَتْ ثَمُودُ الْمُرْسَلِينَ ١٤١ إِذْ قَالَ لَهُمْ أَخُوهُمْ صَالِحٌ أَلَا تَتَّقُونَ ١٤٢ إِنِّي لَكُمْ رَسُولٌ أَمِينٌ ١٤٣ فَاتَّقُوا اللَّهَ وَأَطِيعُونِ ١٤٤

   (গ) “সামূদ জাতি রসুলগণকে মিথ্যাবাদী বলেছে। যখন তাদের ভাই সালেহ, তাদেরকে বললেন: তোমরা কি ভয় কর না? আমি তোমাদের বিশ্বস্ত রসুল। অতএব, আল্লাহকে ভয় কর এবং আমার আনুগত্য কর।” [সূরা শু'আরা: ১৪১-১৪৪]

   كَذَّبَتْ قَوْمُ لُوطٍ الْمُرْسَلِينَ ١٦٠ إِذْ قَالَ لَهُمْ أَخُوهُمْ لُوطٌ أَلَا تَتَّقُونَ ١٦١ إِنِّي لَكُمْ رَسُولٌ أَمِينٌ ١٦٢ فَاتَّقُوا اللَّهَ وَأَطِيعُونِ ١٦٣

   (ঘ) “লূতের জাতি রসূলগণকে মিথ্যাবাদী বলেছে। যখন তাদের ভাই লুত, তাদেরকে বললেন: তোমরা কি ভয় কর না? আমি তোমাদের বিশ্বস্ত রসূল। অতএব, আল্লাহকে ভয় কর এবং আমার আনুগত্য কর।" [সূরা শু'আরা: ১৬০-১৬৩]

   كَذَّبَ أَصْحَابُ الْأَيْكَةِ الْمُرْسَلِينَ ١٧٦ إِذْ قَالَ لَهُمْ شُعَيْبٌ أَلَا تَتَّقُونَ ١٧٧ إِنِّي لَكُمْ رَسُولٌ أَمِينٌ ١٧٨ فَاتَّقُوا اللَّهَ وَأَطِيعُونِ ١٧٩

   (ঙ) “বনের অধিবাসীরা রসুলগণকে মিথ্যাবাদী বলেছে। যখন তাদের ভাই শো আইব, তাদেরকে বললেন: তোমরা কি ভয় কর না? আমি তোমাদের বিশ্বস্ত রসূল। অতএব, আল্লাহকে ভয় কর এবং আমার আনুগত্য কর।”[সূরা শুআরা : ১৭৬-১৭৯]

   وَلَقَدْ قَالَ لَهُمْ هَارُونُ مِن قَبْلُ يَا قَوْمِ إِنَّمَا فُتِنتُم بِهِ وَإِنَّ رَبَّكُمُ الرَّحْمَنُ فَاتَّبِعُونِي وَأَطِيعُوا أَمْرِي ٩٠

   “হারুন তাদের পূর্বেই বলেছিলেন: হে আমার জাতি, তোমরা তো এই গো-বৎস দ্বারা পরীক্ষায় নিপতিত হয়েছে এবং তোমাদের পালনকর্তা দয়াময়। অতএব, তোমরা আমার অনুসরণ কর এবং আমার আদেশ মেনে চল।” [সূরা ত্বহা :৯০]

   وَلَمَّا جَاءَ عِيسَى بِالْبَيِّنَاتِ قَالَ قَدْ جِئْتُكُم بِالْحِكْمَةِ وَلِأُبَيِّنَ لَكُم بَعْضَ الَّذِي تَخْتَلِفُونَ فِيهِ فَاتَّقُوا اللَّهَ وَأَطِيعُونِ ٦٣

   (চ) “ঈসা যখন স্পষ্ট নিদর্শনসহ আগমন করলেন, তখন বললেন, আমি তোমাদের কাছে প্রজ্ঞা নিয়ে এসেছি এবং তোমরা যে, কোন কোন বিষয়ে মতভেদ করছ তা ব্যক্ত করার জন্যে এসেছি। অতএব, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং আমার কথা মান।" [সূরা জুখরুফ : ৬৩]

   وَلَقَدْ وَصَّيْنَا الَّذِينَ أُوتُوا الْكِتَابَ مِن قَبْلِكُمْ وَإِيَّاكُمْ أَنِ اتَّقُوا اللَّهَ ٩

   (ছ) “বস্তুত: আমি নির্দেশ দিয়েছি তোমাদের পূর্ববর্তী গ্রন্থের অধিকারীদের এবং তোমাদেরকে যে, তোমরা সবাই আল্লাহকে ভয় করতে থাক।" [সূরা নিসা : ১৩১]

   চতুর্থ: আখেরাত:

   নবী-রসূলগণ তাঁদের জাতিকে পরকালের ভয়-ভীতি প্রদর্শন করেন। পরকালে পুনরুত্থান, প্রতিদান ও হিসাব-নিকাশের কথা অবহিত করেন। সেই দিন এক দলের পরিণাম হবে জান্নাত আর এক দলের জাহান্নাম।

   فَرِيقٌ فِي الْجَنَّةِ وَفَرِيقٌ فِي السَّعِيرِ ٧

   (ক) “একদল জান্নাতে এবং একদল জাহান্নামে প্রবেশ করবে।"[সুরা শুরা: ৭]

   كُلُّ نَفْسٍ ذَائِقَةُ الْمَوْتِ وَإِنَّمَا تُوَفَّوْنَ أُجُورَكُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فَمَن زُحْزِحَ عَنِ النَّارِ وَأُدْخِلَ الْجَنَّةَ فَقَدْ فَازَ وَمَا الْحَيَاةُ الدُّنْيَا إِلَّا مَتَاعُ الْغُرُورِ ١٨٥

   (খ) “প্রত্যেক প্রাণীকে আস্বাদন করতে হবে মৃত্যু। আর তোমরা কিয়ামতের দিন পরিপূর্ণ বদলা প্রাপ্ত হবে। তারপর যাকে দোযখ থেকে দূরে রাখা হবে এবং জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে, তার কার্যসিদ্ধি ঘটবে। আর পার্থিব জীবন ধোঁকা ছাড়া আর অন্য কোন সম্পদ নয়।” [সূরা আল ইমরান:১৮৫]

   وَمَا الْحَيَاةُ الدُّنْيَا إِلَّا لَعِبٌ وَلَهْوٌ وَلَلدَّارُ الْآخِرَةُ خَيْرٌ لِّلَّذِينَ يَتَّقُونَ أَفَلَا تَعْقِلُونَ ٣٢

   (গ) "পার্থিব জীবন খেল-তামাশা ও কৌতুক ব্যতীত কিছুই নয়। পরকালে আবাস পরহেজগারদের জন্যে শ্রেষ্ঠতর। তোমরা কি বুঝ না?” [সূরা আন'আম: ৩২]

   مَن كَانَ يُرِيدُ الْحَيَاةَ الدُّنْيَا وَزِينَتَهَا نُوَفِّ إِلَيْهِمْ أَعْمَالَهُمْ فِيهَا وَهُمْ فِيهَا لَا يُبْخَسُونَ ١٥ أُولَئِكَ الَّذِينَ لَيْسَ لَهُمْ فِي الْآخِرَةِ إِلَّا النَّارُ وَحَبِطَ مَا صَنَعُوا فِيهَا وَبَاطِلٌ مَّا كَانُوا يَعْمَلُونَ ١٦

   (ঘ) “যে ব্যক্তি পার্থিবজীবন ও তার চাকচিক্যই কামনা করে, আমি তাদের দুনিয়াতেই তাদের আমলের প্রতিফল ভোগ করিয়ে দেব এবং তাতে তাদের প্রতি কিছুমাত্র কমতি করা হয় না। এরাই হল সেসব লোক আখেরাতে যাদের জন্য আগুন ছাড়া আর কিছুই নেই। তারা এখানে যা কিছু করেছিল সবই বরবাদ করেছে, আর যা কিছু উপার্জন করেছিল, সবই বিনষ্ট হল।" [সূরা হুদ: ১৫-১৬]

   وَمَنْ أَرَادَ الْآخِرَةَ وَسَعَى لَهَا سَعْيَهَا وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَأُولَئِكَ كَانَ سَعْيُهُم مَّشْكُورًا ١٩

   (ঙ) “আর যারা পরকাল কামনা করে এবং মুমিন অবস্থায় তার জন্য যথাযথ চেষ্টা-সাধনা করে, এমন লোকদের চেষ্টা স্বীকৃত হয়ে থাকে।" [সূরা বনী ইসরাঈল: ১৯]

   إِنَّ الَّذِينَ لَا يُؤْمِنُونَ بِالْآخِرَةِ زَيَّنَّا لَهُمْ أَعْمَالَهُمْ فَهُمْ يَعْمَهُونَ ٤ أُولَئِكَ الَّذِينَ لَهُمْ سُوءُ الْعَذَابِ وَهُمْ فِي الْآخِرَةِ هُمُ الْأَخْسَرُونَ ٥

   (চ) “যারা পরকালে বিশ্বাস করে না, আমি তাদের দৃষ্টিতে তাদের কর্মকাণ্ডকে সুশোভিত করে দিয়েছি। অতএব, তারা উদভ্রান্ত হয়ে ঘুরে বেড়ায়। তাদের জন্যেই রয়েছে মন্দ শাস্তি এবং তারাই পরকালে অধিক ক্ষতিগ্রস্ত।” [সূরা নামল: ৪-৫]

   تِلْكَ الدَّارُ الْآخِرَةُ نَجْعَلُهَا لِلَّذِينَ لَا يُرِيدُونَ عُلُوًّا فِي الْأَرْضِ وَلَا فَسَادًا وَالْعَاقِبَةُ لِلْمُتَّقِينَ ٨٣

   (ছ) "সেই পরকাল আমি তাদের জন্যে নির্ধারিত করি, যারা দুনিয়ার বুকে উদ্ধতা প্রকাশ করতে ও অনর্থ সৃষ্টি করতে চায় না। আল্লাহভীরুদের জন্যে শুভ পরিণাম।” [সূরা কাসাস: ৮৩]

   وَمَا هَذِهِ الْحَيَاةُ الدُّنْيَا إِلَّا لَهْوٌ وَلَعِبٌ وَإِنَّ الدَّارَ الْآخِرَةَ لَهِيَ الْحَيَوَانُ لَوْ كَانُوا يَعْلَمُونَ ٦٤

   (জ) “এই পার্থিবজীবন ক্রীড়া-কৌতুক ছাড়া আর কিছুই নয়। পারকালের গৃহই প্রকৃত স্থায়ী জীবন, যদি তারা জানত। "[সূরা আনকাবৃত: ৬৪]

   يَا قَوْمِ إِنَّمَا هَذِهِ الْحَيَاةُ الدُّنْيَا مَتَاعٌ وَإِنَّ الْآخِرَةَ هِيَ دَارُ الْقَرَارِ   ٣٩

   (ঝ) “হে আমার জাতি, পার্থিব এ জীবন তো কেবল উপভোগের বস্তু, আর পরকাল হচ্ছে স্থায়ী বসবাসের গৃহ।" (সূরা মুমিন:৩৯)

   زَعَمَ الَّذِينَ كَفَرُوا أَن لَّن يُبْعَثُوا قُلْ بَلَى وَرَبِّي لَتُبْعَثُنَّ ثُمَّ لَتُنَبَّؤُنَّ بِمَا عَمِلْتُمْ وَذَلِكَ عَلَى اللَّهِ يَسِيرٌ ٧

   (ঞ) "কাফেররা দাবী করে যে, তারা কখনও পুনরথিত হবে না। বলুন, অবশ্যই হবে, আমার পালনকর্তার কসম, তোমরা নিশ্চয় পুনরুত্থিত হবে। অতঃপর তোমাদেরকে অবহিত করা হবে যা তোমরা করতে। এটা আল্লাহর পক্ষে সহজ।" [সূরা তাগাবুন: ৭]

   فَمَن ثَقُلَتْ مَوَازِينُهُ فَأُولَئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ ١٠٢ وَمَنْ خَفَّتْ مَوَازِينُهُ فَأُولَئِكَ الَّذِينَ خَسِرُوا أَنفُسَهُمْ فِي جَهَنَّمَ خَالِدُونَ ١٠٣ تَلْفَحُ وُجُوهَهُمُ النَّارُ وَهُمْ فِيهَا كَالِحُونَ ١٠٤

   (ট)"যাদের পাল্লা ভারী হবে, তারাই হবে সফলকাম, এবং যাদের পাল্লা হালকা হবে তারাই নিজেদের ক্ষতিসাধন করেছে, তারা দোযখেই চিরকাল বসবাস করবে। আগুন তাদের মুখমণ্ডল দগ্ধ করবে এবং তারা তাতে বীভৎস আকার ধারণ করবে।" [সূরা আল মুমিনুন : ১০২:১০৪]

   وَالْوَزْنُ يَوْمَئِذٍ الْحَقُّ فَمَن ثَقُلَتْ مَوَازِينُهُ فَأُولَئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ ٨ وَمَنْ خَفَّتْ مَوَازِينُهُ فَأُولَئِكَ الَّذِينَ خَسِرُوا أَنفُسَهُم بِمَا كَانُوا بِآيَاتِنَا يَظْلِمُونَ ٩

   (ঠ) “আর সেদিন যথার্থই ওজন হবে। অতঃপর যাদের পাল্লা ভারী হবে, তারাই সফলকাম হবে। আর যাদের পাল্লা হাল্কা হবে, তারাই এমন হবে, যারা নিজেদের ক্ষতি করেছে। কেননা, তারা আমার আয়াতসমূহ অস্বীকার করতো।" [সূরা আ'রাফ:৮,৯]

   فَأَمَّا مَن ثَقُلَتْ مَوَازِينُهُ ٦ فَهُوَ فِي عِيشَةٍ رَّاضِيَةٍ ٧ وَأَمَّا مَنْ خَفَّتْ مَوَازِينُهُ ٨ فَأُمُّهُ هَاوِيَةٌ ٩ وَمَا أَدْرَاكَ مَا هِيَهْ ١٠ نَارٌ حَامِيَةٌ ١١

   (ড) “অতএব, যার পাল্লা ভারী হবে, সে সুখী জীবন যাপন করবে। আর যার পাল্লা হাল্কা হবে, তার ঠিকানা হবে হাবিয়া। আপনি কি তা জানেন? প্রজ্জ্বলিত অগ্নি।” [সূরা কারিয়া: ৬-১১]

 

১. দাওয়াতের পূর্বে সঠিক জ্ঞানার্জন:

   অজ্ঞ-মূর্খ ব্যক্তি দাওয়াতের জন্য উপযুক্ত নয়। আল্লাহ তা'য়ালা তাঁর নবী সম্পর্কে বলেন:

   قُلْ هَذِهِ سَبِيلِي أَدْعُو إِلَى اللَّهِ

   “বলুন! ইহাই আমার পথ। আমি এবং আমার অনুসারীগণ সজ্ঞানে আল্লাহর দিকে দা'ওয়াত করি।” [সূরা ইউসুফ: ১০৮]

   দ্বীনের দা'য়ী-আহ্বানকারী যদি কুরআন ও বিশুদ্ধ হাদীসের সঠিক জ্ঞান না রাখেন তবে বিভিন্ন সংশয় ও বাতিলের মোকাবেলা কি দ্বারা করবেন?

   আর প্রতিপক্ষের সঙ্গে কিভাবে উত্তম পন্থায় বিতর্ক করবেন? জ্ঞান না থাকলে প্রথম অবস্থাতেই হেরে যাবেন। এবং রাস্তার শুরুতেই দাঁড়িয়ে পড়বেন।

   যা জানা অতি প্রয়োজন:

   (ক) যার প্রতি দা'ওয়াত করবেন সে বিষয়ে কুরআন ও সহীহ সুন্নাহর সঠিক জ্ঞানার্জন।

   (খ) যাদেরকে দা'ওয়াত করবেন তাদের অবস্থা, প্রকারভেদ, ধর্ম- কর্ম, মানসিকতা, চিন্তা-ভাবনা ও সংস্কৃতি ইত্যাদি সম্পর্কে জ্ঞানার্জন।

   (গ) নতুন ও পুরাতন বিভিন্ন ধরনের দা'ওয়াতের মাধ্যম ও পদ্ধতি সম্পর্কে জ্ঞানার্জন।

   (ঘ) যে সমাজে দাওয়াত করবেন সে সমাজ সম্পর্কে জ্ঞানার্জন।

২. নিজে আমল করার পর অন্যদেরকে দা'ওয়াত করা:

   এর দ্বারা আহ্বানকারী মানুষের জন্য উত্তম নমুনা ও মডেল হতে পারবেন। আর তাঁর কাজ কথার সত্যায়ন করবে এবং বাতিলরা তাঁর উপর কোন প্রকার প্রতিবাদ করতে পরবে না। আল্লাহ তা'য়ালার বাণী:

   وَمَنْ أَحْسَنُ قَوْلًا مِّمَّن دَعَا إِلَى اللَّهِ وَعَمِلَ صَالِحًا وَقَالَ إِنَّنِي مِنَ الْمُسْلِمِينَ ٣٣

   "যে আল্লাহর দিকে আহ্বান করে ও সৎ আমল করে এবং বলে আমি একজন মুসলিম তার চেয়ে উত্তম কথা আর কার হতে পারে।" [সূরা হামীম সেজদাহ : ৩৩]

৩. এখলাস:

   দাওয়াত শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য হওয়া। এ দ্বারা মানুষ দেখানো বা শুনানো কিংবা পদোন্নতি অথবা সম্মান বা নেতৃত্ব-কর্তৃত্ব বা মন্ত্রীত্ব-রাজত্ব বা আমিরী কিংবা পার্লামেন্ট সদস্য হওয়া এবং দুনিয়ার কোন লোভ-লালসা ইত্যাদির লক্ষ্য-উদ্দেশ না থাকা: কারণ ঐ সকল লক্ষ্য-উদ্দেশ্যের কোন একটি যখন থাকবে তখন আল্লাহর জন্য দা'ওয়াত হবে না। বরং নিজের প্রবৃত্তির কিংবা দুনিয়ার লোভ-লালসা ইত্যাদির জন্য হবে।

   ১. আল্লাহ তা'য়ালার বাণী:

   فَمَا سَأَلْتُكُم مِّنْ أَجْرٍ إِنْ أَجْرِيَ إِلَّا عَلَى اللَّهِ

   “আমি তোমাদের নিকট এর কোন প্রতিদান চাচ্ছি না। বরং আমার প্রতিদান একমাত্র আল্লাহর নিকট।" [সুরা ইউনুস:৭২]

   ২. আল্লাহ তা'য়ালার বাণী:

   لَّا أَسْأَلُكُمْ عَلَيْهِ مَالًا إِنْ أَجْرِيَ إِلَّا عَلَى اللَّهِ

   "এর প্রতিদান হিসাবে তোমাদের নিকট কোন মাল-সম্পদ চাইনা। আমার প্রতিদান একমাত্র আল্লাহর নিকট।" [সূরা হুদ : ২৯]

৪. অধিক গুরুত্বতার ভিত্তিতে পর্যায়ক্রমে দা'ওয়াত করা:

   সর্বপ্রথম দায়ী-আহ্বানকারী আকীদাহ সংশোধন ও একমাত্র আল্লাহর এবাদতের জন্য দা'ওয়াত করবেন আর শিরক থেকে নিষেধ করবেন। এরপর নামাজ কায়েম ও জাকাত আদায়ের জন্য নির্দেশ করবেন। অতঃপর ফরজ-ওয়াজিবসমূহ আদায় করতে এবং হারাম কার্যাদি ছাড়তে আদেশ করবেন। আর ইহাই ছিল। সমস্ত নবী-রসূলগণের দা'ওয়াতী পদ্ধতি ও পন্থা।

   وَمَا أَرْسَلْنَا مِن قَبْلِكَ مِن رَّسُولٍ إِلَّا نُوحِي إِلَيْهِ أَنَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا أَنَا فَاعْبُدُونِ ٢٥

   (১) "আমি আপনার পূর্বের প্রেরিত প্রতিটি রসূলকে শুধু এই অহি করেছি যে, আমি ব্যতীত সত্য কোন ইলাহ নেই। সুতরাং তোমরা একমাত্র আমারই এবাদত কর।” [সূরা আম্বিয়া: ২৫]

   لَقَدْ أَرْسَلْنَا نُوحًا إِلَى قَوْمِهِ فَقَالَ يَا قَوْمِ اعْبُدُوا اللَّهَ مَا لَكُم مِّنْ إِلَهٍ غَيْرُهُ إِنِّي أَخَافُ عَلَيْكُمْ عَذَابَ يَوْمٍ عَظِيمٍ ٥٩

   (২) "আমি নূহকে তার জাতির নিকট প্রেরণ করেছিলাম। সে বলেছিল: হে আমার জাতি তোমরা একমাত্র আল্লাহর এবাদত কর। তোমাদের জন্য তিনি ব্যতীত আর কোন ইলাহ্-উপাস্য নেই। আমি তোমাদের প্রতি সেই কঠিন দিনের শাস্তির ভয় করছি।" [সূরা আ'রাফ: ৫৯]

   অনুরূপভাবে হুদ [আঃ] সালেহ [আঃ] শু'আইব [আঃ] এবং মূসা ও ঈসা [আঃ] সকলেই সর্বপ্রথম তাওহীদের প্রতি দাওয়াত করেছেন।

   আল্লাহর দা'ওয়াতের কাজে আমাদের জন্য উত্তম নমুনা হচ্ছে প্রিয় নবী ﷺ তিনি তাঁর সাহাবাগণকে উত্তম নমুনা দান করেছিলেন। তিনি মক্কায় দীর্ঘ ১৩ বছর ধরে মানুষকে একমাত্র তাওহীদের প্রতিই আহ্বান করেছিলেন। ইহা ছিল নামাজ কায়েম, জাকাত প্রদান, রমজানের রোজা পালন ও হজ্ব আদায়ের পূর্বের দাওয়াত। আর শিরক থেকে বারণ করেছিলেন, যা ছিল সুদ, জেনা-ব্যভিচার, চুরি ও মানুষ হত্যা থেকে নিষেধের পূর্বের দা'ওয়াত।

   আকীদাহ সংশোধন ছিল সকল নবী-রসূলদের সর্বপ্রথম দাওয়াত। আকীদা বিশুদ্ধকরণ প্রতিটি জিনিসের মূল ভিত্তি ও বুনিয়াদ। আর আকীদা সংশোধন অর্থ তাওহিদী কালেমার উচ্চারণ, তার মর্মার্থ বুঝা এবং তার চাওয়া-পাওয়া ও দাবী মোতাবেক আমল করা। তাওহীদ দ্বারা একজন কাফের ইসলামে দীক্ষিত হয় এবং মৃত্যুর পূর্বে ইহা দ্বারা তালকীন দিয়ে সর্বশেষ দুনিয়া থেকে বিদায় নেয়। ইহাই সর্বপ্রথম ও সর্বশেষ এবং সবচেয়ে বড় ফরজ। এ জন্যেই নবী ﷺ মু'আয ইবনে জাবাল [রাঃ]কে যখন ইয়ামেনে দায়ী হিসাবে প্রেরণ করেন তখন বলেন:

   إِنَّكَ تَقْدَمُ عَلَى قَوْمٍ مِنْ أَهْلِ الْكِتَابِ فَلْيَكُنْ أَوَّلَ مَا تَدْعُوهُمْ إِلَى أَنْ يُوَحِّدُوا اللَّهَ تَعَالَى فَإِذَا عَرَفُوا ذَلِكَ فَأَخْبِرْهُمْ أَنَّ اللَّهَ قَدْ فَرَضَ عَلَيْهِمْ خَمْسَ صَلَوَاتٍ فِي يَوْمِهِمْ وَلَيْلَتِهِمْ فَإِذَا صَلَّوْا فَأَخْبِرْهُمْ أَنَّ اللَّهَ افْتَرَضَ عَلَيْهِمْ زَكَاةً فِي أَمْوَالِهِمْ تُؤْخَذُ مِنْ غَنِيِّهِمْ فَتُرَدُّ عَلَى فَقِيرِهِمْ فَإِذَا أَقَرُّوا بِذَلِكَ فَخُذْ مِنْهُمْ وَتَوَقَّ كَرَائِمَ أَمْوَالِ النَّاسِ. متفق عليه

   (ক) “তুমি আহলে কিতাবের নিকট যাচ্ছ। তুমি তাদেরকে সর্বপ্রথম এক আল্লাহর এবাদতের দিকে দাওয়াত করবে।” অতঃপর তারা যখন ইহা অবগত হবে তখন তাদেরকে জানিয়ে দিবে যে, আল্লাহ তা'য়ালা রাতে ও দিনে ৫ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করে দিয়েছেন। তারা তাদের প্রতি দিনে যখন সালাত আদায় করবে তখন তাদেরকে জানিয়ে দিবে যে, আল্লাহ তাদের সম্পদে জাকাত ফরজ করে দিয়েছেন। জাকাত ধনী লোকদের থেকে নিয়ে তাদের অভাবী লোকদের মাঝে বিতরণ করতে হবে। তারা যদি ইহা মেনে নেয় তবে জাকাত গ্রহণের সময় তাদের উত্তম সম্পদ নেওয়া থেকে বিরত থাকবে। আর মাজলুমের দোয়াকে ভয় করবে; কারণ তার এবং আল্লাহর দোয়ার মাঝে কোন পর্দা নেই।” [বুখারী ও মুসলিম]

   (খ) অন্য বর্ণনায় আছে:

   إِنَّكَ تَأْتِي قَوْمًا مِنْ أَهْلِ الْكِتَابِ فَادْعُهُمْ إِلَى شَهَادَةِ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَنِّي رَسُولُ اللَّهِ فَإِنْ هُمْ أَطَاعُوا لِذَلِكَ فَأَعْلِمْهُمْ أَنَّ اللَّهَ افْتَرَضَ عَلَيْهِمْ خَمْسَ صَلَوَاتٍ فِي كُلِّ يَوْمٍ وَلَيْلَةٍ فَإِنْ هُمْ أَطَاعُوا لِذَلِكَ فَأَعْلِمْهُمْ أَنَّ اللَّهَ افْتَرَضَ عَلَيْهِمْ صَدَقَةً تُؤْخَذُ مِنْ أَغْنِيَائِهِمْ فَتُرَدُّ فِي فُقَرَائِهِمْ فَإِنْ هُمْ أَطَاعُوا لِذَلِكَ فَإِيَّاكَ وَكَرَائِمَ أَمْوَالِهِمْ وَاتَّقِ دَعْوَةَ الْمَظْلُومِ فَإِنَّهُ لَيْسَ بَيْنَهَا وَبَيْنَ اللَّهِ حِجَابٌ. رواه مسلم

   "তুমি আহলে কিতাবের নিকট যাচ্ছ। তুমি তাদেরকে (তাওহীদ) আল্লাহ ছাড়া কোন উপাস্য নেই এবং (রেসালাত) আমি আল্লাহর রসূল   এর দা'ওয়াত করবে।" অতঃপর যদি তারা ইহা মেনে নেয় তাহলে রাতে -তাদেরকে জানিয়ে দিবে যে, আল্লাহ তা'য়ালা তাদের প্রতি দিনে ৫ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করে দিয়েছেন। তারা যদি ইহা মেনে নেই তাহলে তাদেরকে জানিয়ে দিবে যে, আল্লাহ তাদের সম্পদে জাকাত ফরজ করে দিয়েছেন। জাকাত ধনী লোকদের থেকে নিয়ে তাদের অভাবী লোকদের মাঝে বিতরণ করতে হবে। তারা যদি ইহা মেনে নেয় তবে জাকাত গ্রহণের সময় তাদের উত্তম সম্পদ নেওয়া থেকে বিরত থাকবে। আর মাজলুমের দোয়াকে ভয় করবে; কারণ তার দোয়া এবং আল্লাহর মাঝে কোন পর্দা নেই।" [মুসলিম]

   (গ) অন্য আর এক বর্ণনায় আছে।

   فَلْيَكُنْ أَوَّلَ مَا تَدْعُوهُمْ إِلَى أَنْ يُوَحِّدُوا اللَّهَ تَعَالَى. رواه البخاري

   "তাদেরকে সর্বপ্রথম এক আল্লাহর তাওহীদ প্রতিষ্ঠা করার জন্য দা'ওয়াত করবে।" [বুখারী]

   (ঘ) রসূলুল্লাহ ﷺ আরো বলেছেন:

   أُمِرْتُ أَنْ أُقَاتِلَ النَّاسَ حَتَّى يَقُولُوا لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ فَمَنْ قَالَ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ فَقَدْ عَصَمَ مِنِّي مَالَهُ وَنَفْسَهُ إِلَّا بِحَقِّهِ وَحِسَابُهُ عَلَى اللَّهِ. متفق عليه

   "যতক্ষণ পর্যন্ত মানুষ "লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ ওয়া আন্না মুহাম্মাদার রসূলুল্লাহ" এর সাক্ষ্য প্রদান এবং নামাজ প্রতিষ্ঠা ও জাকাত প্রদান না করবে ততক্ষণ তাদেরকে হত্যা করার জন্য আমি আদিষ্ট হয়েছি। যখন তারা এসব করে তখন তাদের খুন-রক্ত ও সম্পদ আমার থেকে নিরাপদ লাভ করে। তবে ইসলামের হক হলে তার ব্যাপার স্বতন্ত্র এবং তাদের হিসাব আল্লাহর প্রতি।” [বুখারী ও মুসলিম]

   নবী-রসূলগণের দাওয়াতী সিলেবাসের নিদর্শন হচ্ছে সর্বপ্রথম তাওহীদের দাওয়াত দ্বারা আরম্ভ করা। এ দা'ওয়াত সর্বপ্রথম রসূল নূহ [আঃ] থেকে শুরু করে সর্বশেষ রসূল মুহাম্মদ ﷺ পর্যন্ত শেষ হয়েছে। তাঁরা মূল ভিত্তি ও আসল থেকে দা'ওয়াত আরম্ভ করেছেন। তাঁরা কেউ গাছ লাগানোর পূর্বে ফল পাড়ার চেষ্টা করেননি। তাঁরা কেউ ভিত্তি স্থাপনের আগে ছাদ ঢালাই দেওয়ার বৃথা প্রচেষ্টা চালাননি। আর ইহাই হলো নবী-রসূলগণের দাওয়াতের নীতিমালা ও পদ্ধতি। সকলেই তাওহীদ দ্বারা আরম্ভ করেছেন।

   আল্লাহ তা'য়ালার বাণী:

   قَالَ يَا قَوْمِ اعْبُدُوا اللَّهَ مَا لَكُم مِّنْ إِلَهٍ غَيْرُهُ

   "হে আমার জাতি একমাত্র আল্লাহর এবাদত কর। তিনি ব্যতীত আর কেউ তোমাদের সত্য মাবুদ নেই।" [সূরা আ'রাফ: ৬৫]

   অতএব, তাওহীদ থেকেই একজন দ্বীনের দায়ী তার দাওয়াতের কার্যক্রম শুরু করবেন। এমন কিছু দায়ী আছেন যারা তাদের দাওয়াতে তাড়াহুড়া করেন এবং প্রকৃত পক্ষে তাঁরা সঠিক ইসলামী দাওয়াতের জন্য হুমকি স্বরূপ হয়ে দাঁড়ান। আর সংশোধনের চেয়ে বিপর্যয় সৃষ্টি করেন বেশি। তাঁরা তাঁদের দাওয়াতের ফল খেতে পারেন না। বরং তাঁদের ঘরের ছাদ তৈরী হতে বহু দেরী হয়; কারণ ইহা নবী-রসূলদের সিলেবাসের পরিপন্থী নিয়ম। আমরা জানি যে নুহ [আঃ] ৯৫০ বছর ধরে তার জাতিকে একমাত্র তাওহীদের দিকে আহ্বান করতে থাকেন। আর আমাদের নবী মুহাম্মদ ﷺ তাঁর নবুয়াতের বেশির ভাগ সময় মক্কাতে একমাত্র তাওহীদের প্রতি দাওয়াত করতে থাকেন। তিনি বলতে থাকেন, তোমরা বল:"লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ" কল্যাণকামী হবে। [আহমাদ]

   এরপর তাওহীদের বুনিয়াদ ও ঈমান মানুষের অন্তরে দৃঢ়মূল হয়। একিন ও আল্লাহর ভয়-ভীতির উপর তাদের তারবিয়ত হয়। এরপর নবী তাদেরকে নিয়ে মদিনায় হিজরত করেন এ সময় শরীয়তের বিভিন্ন বিধিবিধান নাজিল হয়।

   মদিনায় জিহাদের আয়াত নাজিল হয়। যদি বিধান দ্বারা আরম্ভ করাই নবী-রসূলগণের দাওয়াতের পদ্ধতি হত তাহলে নবী ﷺ তাই করতেন। নবী ﷺ এর প্রতি রাজত্ব পেশ করা হয়েছিল। কুরাইশরা বলেছিল: মুহাম্মাদ ﷺ যদি তুমি রাজা হতে চাও তাহলে তোমাকে আমাদের রাজা বানিয়ে দেব। কিন্তু নবী ﷺ বুনিয়াদ ও ভিত্তি দ্বারা শুরু করেন আর তা হচ্ছে তাওহীদ। এ দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, দা'ওয়াত তাওহীদ দ্বারাই আরম্ভ করতে হবে রাষ্ট্র দিয়ে নয়। আর এ   জন্যেই সালাফী দা'ওয়াত তাওহীদের ভিত্তি দ্বারা শুরু করা হয়। কারণ এর মধ্যে রয়েছে নবী-রসূলদের পদাঙ্কানুসরণ। দ্বীনের সঠিক আহ্বানকারীরা যা দ্বারা আরম্ভ করেছেন তা দ্বারাই তাঁরা আরম্ভ করেন।

   আমরা দেখতে পাই অনেক দলীয় ও সাংগঠনিক দা'ওয়াতগুলো তাওহীদের ব্যাপারে কোন প্রকার গুরুত্ব দেয় না। বরং তাদের কোন কোন নেতারা ঘোষণা করেন যে, তাওহীদ দ্বারা দা'ওয়াত মানুষের মাঝে বিভেদ ও দলাদলি সৃষ্টি করে। তারা এক গলদ শ্লোগান দেয় যা হচ্ছে: “যে ব্যাপারে একমত তার উপরে আমরা জমায়েত হই। আর যে ব্যাপারে দ্বিমত সে ক্ষেত্রে একে অপরকে ওজর পেশ করি।" তারা নিজেরা ভিতরের আকীদার গণ্ডগোল মেনে নিয়ে দলাদলিকে সমর্থন করেন। যদিও তা শরীয়ত ও দ্বীনের বিপরীত হোক না কেন; কারণ এ শ্লোগান তাদের দলের মূল নীতির একটি। আর সালাফী দাওয়াতের নিদর্শন হলোঃ আল্লাহ তা'য়ালা যা শরীয়তের বিধিবিধান করেছেন এবং নির্দেশ করেছেন সে ব্যাপারে আপোসে সাহায্য-সহযোগিতা করা। আর যে ব্যাপারে দ্বিমত হবে সে বিষয়ে একে অপরকে বুঝানো ও নসিহত করা।

সর্বপ্রথম আকীদা সংশোধন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা বা অন্য কিছু নয় কেন?

আকীদার বিপর্যয় বড় কঠিন ও জটিল এবং বেশি বিপজ্জনক। আচ্ছা যদি একজন মানুষের সামনে একটি বিষাক্ত সাপ ও একটি পিঁপড়া থাকে, তবে কার থেকে আগে নিজেকে বাঁচবার চেষ্টা করবে? সাপ না পিঁপড়া থেকে? যদি তার সামনে একটি নেকড়ে বাঘ আর একটি ইঁদুরের দল হয়, তবে কোনটিকে প্রথমে প্রতিহত করবে? নেকড়ে না ইঁদুরের দল কে? যদি তার সামনে দু'টি রাস্তা হয় যার একটিতে আগ্নেয়গিরি আর অপরটি ভয়ঙ্কর তাহলে কোনটি রাস্তা দিয়ে সে পথ অতিক্রম করবে?

প্রতিটি নবী-রসুলকে আল্লাহ বাশীর তথা জান্নাতের সুসংবাদদাতা এবং নাযীর তথা জাহান্নাম থেকে ভয় প্রদর্শক হিসেবে প্রেরণ করেন। আর এর সম্পর্ক সরাসরী তাওহীদ ও শিরকের সঙ্গে।

হুকুমাত তথা রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে প্রতিটি গোষ্ঠী, দুনিয়াদার, পদ ও গদির আকাঙ্খী, বিভিন্ন উদ্দেশ্য ও বিষয়ের এবং প্রবৃত্তির অনুসরণকারীরা অংশগ্রহণ করে। কিন্তু নবী- রসূলগণ ও তাঁদের অনুসারীরা এসব দুনিয়াবী উদ্দেশ্য থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত। একমাত্র মুখলিস এবং ঈমান ও তাওহীদ পন্থিরাই তাঁদের অনুসরণ করেন। যারা আল্লাহ ও তাঁর রসূলকে ভালবাসেন এবং তাদের প্রতিপালকের শাস্তিকে ভয় করেন।

   নেতৃত্ব ও রাজত্বের মাঝে রয়েছে যুদ্ধ-বিগ্রহ, টানা-হেঁচড়া ও বিরোধিতা। এর দ্বারা শুরু হলে কোনভাবে শক্ত ভিত্তিস্থাপন করাই সম্ভব হবে না।

   শয়তানের তিনটি লোভনীয় টোপ যা দ্বারা সে আদম সন্ত নিকে শিকার করে; সম্পদের লোভ, নারীর লোভ এবং নেতৃত্বের লোভ। নবী  ﷺ বলেছেন:

   إِنَّا وَاللَّهِ لَا نُوَلِّي عَلَى هَذَا الْعَمَلِ أَحَدًا سَأَلَهُ وَلَا أَحَدًا حَرَصَ عَلَيْهِ. متفق عليه

   "যারা নেতৃত্ব চায় এবং লোভ করে আমি তাদেরকে দায়িত্বভার দান করি না।”

   তিনি ﷺ আরো বলেছেন:

   لَا تَسْأَلِ الْإِمَارَةَ فَإِنَّكَ إِنْ أُوتِيتَهَا عَنْ مَسْأَلَةٍ وُكِلْتَ إِلَيْهَا وَإِنْ أُوتِيتَهَا مِنْ غَيْرِ مَسْأَلَةٍ أُعِنْتَ عَلَيْهَا. متفق عليه

   "তুমি এমারত (দায়িত্ব) চাইবে না; কারণ যদি চাওয়ার পরে তোমাকে এমারত দেওয়া হয়, তাহলে তার উপরেই তোমাকে ছেড়ে দেওয়া হবে সাহায্য করা হবে না। আর নিজে না চেয়ে যদি তোমাকে এমারতী (দায়িত্বভার দেওয়া হয়, তাহলে তাতে তোমাকে (আল্লাহর পক্ষ থেকে) সাহায্য করা হবে।" [বুখারী ও মুসলিম]

দ্বীন কায়েমের প্রচলিত কিছু ভুল পদ্ধতি

১. ইমামাত কায়েম করে: শুধুমাত্র আহলে বাইতের ইমামাত কায়েম করার মাধ্যম্যে দ্বীন কায়েম করা। ইহা শিয়া- রাফেযীদের পদ্ধতি।

২. বেলায়াত কায়েম করে: অলি-বুজুর্গদের বেলায়াত কায়েম করে দ্বীন কায়েম করা। ইহা প্রচলিত সূফীদের পদ্ধতি।

৩. হুকুমাত কায়েম করে: রাষ্ট্র কায়েম হলে সবকিছুই কায়েম হয়ে যাবে মনে করা। ইহা বর্তমানে এক শ্রেণীর অধুনিক ইসলামী চিন্তাবিদগণের পদ্ধতি।

৪. জিহাদ কায়েম করে: জিহাদের দ্বারাই দ্বীন কায়েম করতে হবে। ইহা জিহাদী দলগুলোর পদ্ধতি। ইহা এক শ্রেণীর আবেগী যুবক ও দ্বীনের ভাসা ভাসা জ্ঞানের লোকদের পদ্ধতি। নিঃসন্দেহে উপরের প্রতিটি জিনিস ইসলামে তার আপন গতিতে রয়েছে কারো নিজস্ব বুঝমত নয়। মনে রাখতে হবে যে, একমাত্র তাওহীদ কায়েমের মাধ্যমেই সবকিছু কায়েম হতে পারে। যা নবী-রসূলগণের একমাত্র পদ্ধতি। তাওহীদ প্রতিষ্ঠা দ্বারা সবই প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব; কারণ ইহাই আল্লাহ তায়ালা প্রদত্ত নিয়ম ও পদ্ধতি। আর বাকি সবগুলো পদ্ধতি হলো মানব রচিত পদ্ধতি।

৫. ধৈর্যধারণ:

দা'ওয়াত করতে যে সমস্ত সমস্যা ও মানুষের পক্ষ থেকে কষ্ট পাবে তার উপরে ধৈর্যধারণ করা জরুরি; কারণ দাওয়াতের রাস্তায় গোলাপ ফুল বিছানো থাকবে না বরং এপথ কষ্ট-ক্লেশ ও বিপদ দ্বারা বেষ্টিত। এ ব্যাপারে আমাদের জন্য নবী-রসূলগণের কেচ্ছা উত্তম নমুনা। আর তাঁরা যা তাঁদের জাতি ও নেতাদের থেকে কষ্ট ও হাসি ঠাট্টা-বিদ্রূপ পেয়েছেন সে সকল বর্ণনা আমাদের জন্য শান্তনা। আল্লাহ তা'য়ালার বাণী:

   وَلَقَدْ كُذِّبَتْ رُسُلٌ مِّن قَبْلِكَ فَصَبَرُوا عَلَى مَا كُذِّبُوا وَأُوذُوا حَتَّى أَتَاهُمْ نَصْرُنَا

   “আপনার পূর্বে রসূলদেরকে মিথ্যারোপ করা হয়েছে, তারা তাদের মিথ্যারোপ ও কষ্টের উপর ধৈর্যধারণ করেছে। পরিশেষে তাদের নিকট আমার সাহায্য এসেছে।" [সূরা আন'আম: ৩৪]

৬. উত্তম চরিত্র ও সুন্দর ব্যবহারের অধিকারী হওয়া:

   দ্বীনের দা'য়ী দাওয়াতে হিকমত অবলম্বন করবেন।

   আল্লাহ তা'য়ালার বাণী:

   ادْعُ إِلَى سَبِيلِ رَبِّكَ بِالْحِكْمَةِ وَالْمَوْعِظَةِ الْحَسَنَةِ وَجَادِلْهُم بِالَّتِي هِيَ أَحْسَنُ

   "আপনার প্রতিপালকের রাস্তায় হিকমত ও উত্তম ওয়াজ দ্বারা দাওয়াত করুন। আর উত্তম পন্থায় তাদের সঙ্গে বিতর্ক করুন।"[সুরা নাহল :১২৫]

   আর উত্তম চরিত্র ও হিকমত এবং বিবেক দ্বারা দা'ওয়াত করা কতই না প্রয়োজন। দাওয়াতকে ধ্বংসকারী অস্ত্র হচ্ছে যুবকদের আবেগপ্রবণতা। তাই একজন দায়ী যুবকদের আবেগকে সঠিক পথে পরিচালিত করবেন, যাতে করে যুব সমাজ ধ্বংস না হয়। আল্লাহ তা'য়ালা তাঁর নবী সম্পর্কে এরশাদ করেন:

   فَبِمَا رَحْمَةٍ مِّنَ اللَّهِ لِنتَ لَهُمْ وَلَوْ كُنتَ فَظًّا غَلِيظَ الْقَلْبِ لَانفَضُّوا مِنْ حَوْلِكَ

   "আল্লাহর দয়া দ্বারা তাদেরকে অর্জন করতে পেরেছেন। যদি কর্কশ ও শক্ত অন্তরের হতেন তবে তারা আপনার নিকট থেকে ভেগে যেত।"[সূরা আল-ইমরান: ১৫৯]

৭. বড় আশা-আকাঙ্খা ও শক্ত আশাবাদী হওয়া:

কোন সময় যেন দ্বীনের দা'য়ীর অন্তরে নিরাশা প্রবেশের রাস্তা না পায়। দাওয়াতের প্রভাব দুর্বল ও মানুষ হেদায়েত গ্রহণ না করার জন্যে দায়ী কখনো নিরাশ হবেন না। আল্লাহর সাহায্য- সহযোগিতার ব্যাপারে হতাশায় ভুগবেন না, যদিও সময় অনেক লম্বা লাগে না কেন। দা'য়ীর জন্য রয়েছে নবী-রসূলগণের মাঝে উত্তম নমুনা। আমাদের নবী মুহাম্মদ কে তায়েফের কাফের- মুশরেকরা মারধর করে সমস্ত শরীরকে রক্তাক্ত করে দিয়েছিল। এ দেখে আল্লাহ তা'য়ালা তাঁর প্রিয় হাবীবের নিকট পর্বতের ফেরেশতা প্রেরণ করেন। ফেরেশতা উপস্থিত হয়ে অনুমতি চান: আপনি অনুমতি দিন মক্কার সবচেয়ে বড় পর্বতময় আখশাইবন দ্বারা তাদেরকে ধ্বংস করে দেই। তিনি ফেরেশতাকে বলেন: "না, তাদেরকে ধ্বংস করে দিও না।

   بَلْ أَرْجُو أَنْ يُخْرِجَ اللَّهُ مِنْ أَصْلَابِهِمْ مَنْ يَعْبُدُ اللَّهَ وَحْدَهُ لَا يُشْرِكُ بِهِ شَيْئًا. متفق عليه

"বরং আমি আশাবাদী আল্লাহ তাদের ঔরস থেকে এমন জাতির আবির্ভাব ঘটাবেন, যারা একমাত্র আল্লাহর এবাদত করবে এবং তাঁর সঙ্গে কোন কিছুকে শরিক করবে না।" [বুখারী ও মুসলিম]

মনে রাখতে হবে যে, দায়ী যখন আশা হারিয়ে হতাশায় ভুগবেন তখন মাঝ রাস্তায় দাঁড়িয়ে পড়বেন এবং তার কাজ ব্যর্থতায় ও বিফলে যাবে।

 

১. উত্তম পন্থায় ওয়াজ ও নসিহত:

   وَلَوْ أَنَّا كَتَبْنَا عَلَيْهِمْ أَنِ اقْتُلُوا أَنفُسَكُمْ أَوِ اخْرُجُوا مِن دِيَارِكُم مَّا فَعَلُوهُ إِلَّا قَلِيلٌ مِّنْهُمْ وَلَوْ أَنَّهُمْ فَعَلُوا مَا يُوعَظُونَ بِهِ لَكَانَ خَيْرًا لَّهُمْ وَأَشَدَّ تَثْبِيتًا ٦٦

   “যদি তারা তাই করে যার তাদের উপদেশ দেয়া হয়, তবে তা অবশ্যই তাদের জন্য উত্তম এবং তাদেরকে নিজেদের দ্বীনের উপর সুদৃঢ় রাখার জন্য তা উত্তম হবে।" [সূরা নিসা: ৬৬]

   ادْعُ إِلَى سَبِيلِ رَبِّكَ بِالْحِكْمَةِ وَالْمَوْعِظَةِ الْحَسَنَةِ وَجَادِلْهُم بِالَّتِي هِيَ أَحْسَنُ

   “আপন পালনকর্তার পথের দিকে আহ্বান করুন জ্ঞানের কথা বুঝিয়ে ও উপদেশ শুনিয়ে উত্তমরূপে।" [সূরা নাহল :১২৫]

২. তা'লীম ও তরবিয়ত তথা শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ:

   لَقَدْ مَنَّ اللَّهُ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ إِذْ بَعَثَ فِيهِمْ رَسُولًا مِّنْ أَنفُسِهِمْ يَتْلُو عَلَيْهِمْ آيَاتِهِ وَيُزَكِّيهِمْ وَيُعَلِّمُهُمُ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ وَإِن كَانُوا مِن قَبْلُ لَفِي ضَلَالٍ مُّبِينٍ ١٦٤

   (১) “আল্লাহ মুমিনদের প্রতি অনুগ্রহ করেছেন যে, তাদের মাঝে তাদের নিজেদের মধ্য থেকে নবী পাঠিয়েছেন। তিনি তাদের জন্য তাঁর আয়াতসমূহ পাঠ করেন। তাদেরকে পরিশোধন করেন এবং তাদেরকে কিতাব ও সুন্নতের শিক্ষা দেন। বস্তুত: তারা ছিল পূর্ব থেকেই পথভ্রষ্ট।" [সূরা আল ইমরান: ১৬৪]

   وَيَسْأَلُونَكَ عَنِ الْمَحِيضِ قُلْ هُوَ أَذًى فَاعْتَزِلُوا النِّسَاءَ فِي الْمَحِيضِ وَلَا تَقْرَبُوهُنَّ حَتَّى يَطْهُرْنَ فَإِذَا تَطَهَّرْنَ فَأْتُوهُنَّ مِنْ حَيْثُ أَمَرَكُمُ اللَّهُ إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ التَّوَّابِينَ وَيُحِبُّ الْمُتَطَهِّرِينَ ٢٢٢ نِسَاؤُكُمْ حَرْثٌ لَّكُمْ فَأْتُوا حَرْثَكُمْ أَنَّى شِئْتُمْ وَقَدِّمُوا لِأَنفُسِكُمْ وَاتَّقُوا اللَّهَ وَاعْلَمُوا أَنَّكُم مُّلَاقُوهُ وَبَشِّرِ الْمُؤْمِنِينَ ٢٢٣

   (২) "আর আপনার কাছে জিজ্ঞেস করে হায়েয (মহিলাদের মাসিক ঋতু) সম্পর্কে। বলে দাও, এটা অশুচি। কাজেই তোমরা হায়েয অবস্থায় স্ত্রীগমন থেকে বিরত থাক। ততক্ষণ পর্যন্ত তাদের নিকটবর্তী হবে না যতক্ষণ না তারা পবিত্র হয়ে যায়। যখন উত্তমরূপে পরিশুদ্ধ হয়ে যাবে, তখন গমন কর তাদের কাছে, যেভাবে আল্লাহ তোমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ তওবাকারী এবং পবিত্র অর্জনকারীদেকে পছন্দ করেন। তোমাদের স্ত্রীরা হলো তোমাদের জন্য শস্যক্ষেত্র। তোমরা যেভাবে ইচ্ছা তাদেরকে ব্যবহার কর। আর নিজেদের জন্য আগামী দিনের ব্যবস্থা কর এবং আল্লাহকে ভয় করতে থাক। আর নিশ্চিতভাবে জেনে রাখ যে, আল্লাহর সাথে তোমাদেরকে সাক্ষাত করতেই হবে। আর মুমিনদেকে সুসংবাদ জানিয়ে দাও।” [সুরা বাকারা: ২২২,২২৩]

৩. তারগীব (উৎসাহ প্রদান) ও তারহীব (ভয় প্রদর্শন):

   إِنَّ هَذَا الْقُرْآنَ يَهْدِي لِلَّتِي هِيَ أَقْوَمُ وَيُبَشِّرُ الْمُؤْمِنِينَ الَّذِينَ يَعْمَلُونَ الصَّالِحَاتِ أَنَّ لَهُمْ أَجْرًا كَبِيرًا ٩

   (ক) “এই কুরআন এমন পথ প্রদর্শন করে, যা সর্বাধিক সরল এবং সৎকর্ম পরায়ণ মুমিনদেরকে সুসংবাদ দেয় যে, তাদের জন্যে মহা পুরস্কার রয়েছে।" [সূরা বনী ইসরাঈল:৯]

   مَنْ عَمِلَ صَالِحًا مِّن ذَكَرٍ أَوْ أُنثَى وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَلَنُحْيِيَنَّهُ حَيَاةً طَيِّبَةً وَلَنَجْزِيَنَّهُمْ أَجْرَهُم بِأَحْسَنِ مَا كَانُوا يَعْمَلُونَ ٩٧

   (খ) "যে সৎকর্ম সম্পাদন করে এবং সে ঈমানদার, পুরুষ হোক কিংবা নারী আমি তাকে সুন্দর জীবন দান করব এবং প্রতিদানে তাদেরকে তাদের উত্তম কাজের কারণে প্রাপ্য পুরস্কার দেব যা তারা করত।" [সূরা নাহল : ৯৭]

   وَمَن يَعْصِ اللَّهَ وَرَسُولَهُ وَيَتَعَدَّ حُدُودَهُ يُدْخِلْهُ نَارًا خَالِدًا فِيهَا وَلَهُ عَذَابٌ مُّهِينٌ ١٤

   (গ) “যে কেউ আল্লাহ ও রসূলের অবাধ্যতা করে এবং তার সীমা অতিক্রম করে তাকে আগুনে প্রবেশ করাবেন। সে সেখানে চিরকাল থাকবে। তার জন্যে রয়েছে অপমানজনক শাস্তি।" [সূরা নিসা: ১৪]

৪. অহির দ্বারা সাব্যস্ত শিক্ষণীয় কেস্সা-কাহিনী বর্ণনা:

   نَحْنُ نَقُصُّ عَلَيْكَ أَحْسَنَ الْقَصَصِ بِمَا أَوْحَيْنَا إِلَيْكَ هَذَا الْقُرْآنَ وَإِن كُنتَ مِن قَبْلِهِ لَمِنَ الْغَافِلِينَ ٣

   (১) "আমি আপনার নিকট উত্তম কাহিনী বর্ণনা করেছি, যেমতে আমি এ কুরআন তোমার নিকট অবতীর্ণ করেছি। আপনি এর আগে অবশ্যই এ ব্যাপারে অনবহিতদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন।"[সূরা ইউসুফ: ৩]

   لَقَدْ كَانَ فِي قَصَصِهِمْ عِبْرَةٌ لِّأُولِي الْأَلْبَابِ

   (২) “তাদের কাহিনীতে বুদ্ধিমানদের জন্য রয়েছে প্রচুর শিক্ষণীয় বিষয়।" (সূরা ইউসুফ: ১১১)

৫. বিভিন্ন ধরনের উদাহরণ উপস্থাপন:

   أَلَمْ تَرَ كَيْفَ ضَرَبَ اللَّهُ مَثَلًا كَلِمَةً طَيِّبَةً كَشَجَرَةٍ طَيِّبَةٍ أَصْلُهَا ثَابِتٌ وَفَرْعُهَا فِي السَّمَاءِ ٢٤

   (ক) "আপনি কি লক্ষ্য করেন না, আল্লাহ কেমন উপমা বর্ণনা করেছেন: পবিত্র বাক্য হলো পবিত্র বৃক্ষের মত। তার শিকড় মজবুত এবং শাখা আকাশে উত্থিত।” [সূরা ইবরাহীম : ২৪]

   ضَرَبَ اللَّهُ مَثَلًا رَّجُلًا فِيهِ شُرَكَاءُ مُتَشَاكِسُونَ وَرَجُلًا سَلَمًا لِّرَجُلٍ هَلْ يَسْتَوِيَانِ مَثَلًا الْحَمْدُ لِلَّهِ بَلْ أَكْثَرُهُمْ لَا يَعْلَمُونَ ٢٩

   (খ) "আল্লাহ এক দৃষ্টান্ত বর্ণনা করেছেন: একটি লোকের উপর পরস্পর বিরোধী কয়জন মালিক রয়েছে, আরেক ব্যক্তির মালিক মাত্র একজন তাদের উভয়ের অবস্থা কি সমান? সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর। কিন্তু তাদের অধিকাংশই জানে না।" [সূরা জুমার : ২৯]

৬. সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজের নিষেধ:

   وَلْتَكُن مِّنكُمْ أُمَّةٌ يَدْعُونَ إِلَى الْخَيْرِ وَيَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنكَرِ وَأُولَئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ ١٠٤

   "আর তোমাদের মধ্যে এমন একটা দল থাকা উচিত যারা আহ্বান জানাবে সৎকর্মের প্রতি, নির্দেশ দেবে ভাল কাজের এবং বারণ করবে অন্যায় কাজ থেকে, আর তারাই হলো সফলকাম।”[সূরা আল-ইমরান: ১০৪]

৭. প্রশ্নোত্তর:

   আল্লাহ তা'য়ালা স্বয়ং নিজে ইবলীসের সাথে প্রশ্নোত্তর করেছেন। যেমন আল্লাহর বাণী:

   إِذْ قَالَ رَبُّكَ لِلْمَلَائِكَةِ إِنِّي خَالِقٌ بَشَرًا مِّن طِينٍ ٧١ فَإِذَا سَوَّيْتُهُ وَنَفَخْتُ فِيهِ مِن رُّوحِي فَقَعُوا لَهُ سَاجِدِينَ ٧٢ فَسَجَدَ الْمَلَائِكَةُ كُلُّهُمْ أَجْمَعُونَ ٧٣ إِلَّا إِبْلِيسَ اسْتَكْبَرَ وَكَانَ مِنَ الْكَافِرِينَ ٧٤ قَالَ يَا إِبْلِيسُ مَا مَنَعَكَ أَن تَسْجُدَ لِمَا خَلَقْتُ بِيَدَيَّ أَسْتَكْبَرْتَ أَمْ كُنتَ مِنَ الْعَالِينَ ٧٥ قَالَ أَنَا خَيْرٌ مِّنْهُ خَلَقْتَنِي مِن نَّارٍ وَخَلَقْتَهُ مِن طِينٍ ٧٦ قَالَ فَاخْرُجْ مِنْهَا فَإِنَّكَ رَجِيمٌ ٧٧ وَإِنَّ عَلَيْكَ لَعْنَتِي إِلَى يَوْمِ الدِّينِ ٧٨ قَالَ رَبِّ فَأَنظِرْنِي إِلَى يَوْمِ يُبْعَثُونَ ٧٩ قَالَ فَإِنَّكَ مِنَ الْمُنظَرِينَ ٨٠ إِلَى يَوْمِ الْوَقْتِ الْمَعْلُومِ ٨١ قَالَ فَبِعِزَّتِكَ لَأُغْوِيَنَّهُمْ أَجْمَعِينَ ٨٢ إِلَّا عِبَادَكَ مِنْهُمُ الْمُخْلَصِينَ ٨٣

   “যখন আপনার পালনকর্তা ফেরেশতাগণকে বললেন, আমি মাটির মানুষ সৃষ্টি করব। যখন আমি তাকে সুষমভাবে সৃষ্টি করব এবং তাতে রূহ ফুঁকে দেব, তখন তোমরা তার সম্মানে নত হয়ে যেয়ো। অতঃপর সমস্ত ফেরেশতাই একযোগে সম্মানে নত হল। কিন্তু ইবলীস সে অহংকার করল এবং অস্বীকারকারীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেল। আল্লাহ বললেন, হে ইবলীস! আমি স্বহস্তে যাকে সৃষ্টি করেছি, তার সম্মানে সেজদা করতে তোমার কিসে বাধা দিল? তুমি অহংকার করলে, না তুমি তার চেয়ে উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন? সে বলল: আমি তার চেয়ে উত্তম। আপনি আমাকে আগুনের দ্বারা সৃষ্টি করেছেন, আর তাকে সৃষ্টি করেছেন মাটির দ্বারা। আল্লাহ বললেন: বের হয়ে যা, এখান থেকে। কারণ, তুই অভিশপ্ত। তোর প্রতি আমার এ অভিশাপ বিচার দিবস পর্যন্ত স্থায়ী হবে। সে বলল, হে আমার পালনকর্তা, আপনি আমাকে পুনরুত্থান দিবস পর্যন্ত অবকাশ দিন। আল্লাহ বললেন: তোকে অবকাশ দেয়া হল। সে সময়ের দিন পর্যন্ত যা জানা। সে বলল: আপনার ইজ্জতের কসম, আমি অবশ্যই তাদের সবাইকে বিপথগামী করে দেব। তবে তাদের মধ্যে যারা আপনার খাঁটি বান্দা, তাদেরকে ছাড়া।"[সূরা স্ব-দ: ৭১-৮৩]

৮. মুনাযারা তথা বিতর্কের মাধ্যমে প্রতিপক্ষকে বুঝানো:

   أَلَمْ تَرَ إِلَى الَّذِي حَاجَّ إِبْرَاهِيمَ فِي رَبِّهِ أَنْ آتَاهُ اللَّهُ الْمُلْكَ إِذْ قَالَ إِبْرَاهِيمُ رَبِّيَ الَّذِي يُحْيِي وَيُمِيتُ قَالَ أَنَا أُحْيِي وَأُمِيتُ قَالَ إِبْرَاهِيمُ فَإِنَّ اللَّهَ يَأْتِي بِالشَّمْسِ مِنَ الْمَشْرِقِ فَأْتِ بِهَا مِنَ الْمَغْرِبِ فَبُهِتَ الَّذِي كَفَرَ وَاللَّهُ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الظَّالِمِينَ ٢٥٨

   "আপনি কি সে লোককে দেখেননি, যে পালনকর্তার ব্যাপারে বাদানুবাদ করেছিল ইবরাহীমের সাথে এ কারণে যে, আল্লাহ সে ব্যক্তিকে রাজ্য দান করেছিলেন? ইবরাহীম যখন বললেন, আমার পালনকর্তা হলেন তিনি, যিনি জীবন দান করেন এবং মৃত্যু ঘটান। সে বলল, আমিও জীবন দান করি এবং মৃত্যু ঘটিয়ে থাকি। ইবরাহীম বললেন, নিশ্চয়ই তিনি সূর্যকে উদিত করেন পূর্ব দিক থেকে, এবার তুমি তাকে পশ্চিম দিক থেকে উদিত কর। তখন সে কাফের হতভম্ব হয়ে গেল। আল্লাহ সীমালংঘণকারী সম্প্রদায়কে সরল পথ প্রদর্শন করেন না।” [সূরা বাকারা : ২৫৮]

৯. প্রয়োজনে শক্তি প্রয়োগ ও জবরদস্তী করা যেমন:

   শরিয়তের শর্ত সম্মত জিহাদ (প্রচলিত জিহাদ নয়)

   قَاتِلُوا الَّذِينَ لَا يُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَلَا بِالْيَوْمِ الْآخِرِ وَلَا يُحَرِّمُونَ مَا حَرَّمَ اللَّهُ وَرَسُولُهُ وَلَا يَدِينُونَ دِينَ الْحَقِّ مِنَ الَّذِينَ أُوتُوا الْكِتَابَ حَتَّى يُعْطُوا الْجِزْيَةَ عَن يَدٍ وَهُمْ صَاغِرُونَ ٢٩

   (ক)“তোমরা যুদ্ধ কর আহলে-কিতাবের ঐ লোকদের সাথে, যারা আল্লাহ ও রোজ কিয়ামতের প্রতি ঈমান রাখে না, আল্লাহ ও তাঁর রসূল যা হারাম করে দিয়েছেন তা হারাম করে না এবং গ্রহণ করে না সত্য ধর্ম, যতক্ষণ না করজোড়ে তারা জিযিয়া (কর) প্রদান করে।" [সূরা তাওবাহ : ২৯]

   وَقَاتِلُوهُمْ حَتَّى لَا تَكُونَ فِتْنَةٌ وَيَكُونَ الدِّينُ كُلُّهُ لِلَّهِ فَإِنِ انتَهَوْا فَإِنَّ اللَّهَ بِمَا يَعْمَلُونَ بَصِيرٌ ٣٩

   (খ) “আর তাদের সাথে যুদ্ধ করতে থাক যতক্ষণ না ভ্রান্তি শেষ হয়ে যায় এবং আল্লাহর সমস্ত বিধান প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়। তারপর যদি তারা বিরত হয়ে যায়, তবে আল্লাহ তাদের কার্যকলাপ লক্ষ্য করেন।” [সূরা আনফাল: ৩৯]

নবী-রসূলগণের দাওয়াতের লক্ষণ ও নিদর্শন

   ১. তাওহীদ দ্বারা দা'ওয়াত আরম্ভ করা এবং তার গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি প্রদান করা।

   ২. আল্লাহর অহিকে মজবুতভাবে আঁকড়িয়ে ধরা এবং তার অনুসরণ করা। যেমন:

   (ক) প্রকাশ্যে ও গোপনে আনুসরণ এবং পূর্ণ আত্মসমর্পণ ও আনুগত্য করা।

   (খ) আপোসে মতানৈক্য ও দ্বিমত হলে ফয়সালার জন্য একমাত্র অহির দিকেই ফিরে আসা।

   (গ)  যেই হোক না কেন তাদের সবার কথা ও কাজের উপরে কুরআন ও বিশুদ্ধ হাদীসকে প্রাধান্য দেওয়া।

   ৩. শরীয়তের সঠিক জ্ঞানার্জনের ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করা। চাই তা ফিকহে আকবর তথা মূল ও আকীদা বিষয়ে হোক বা ফিকহে আসগার তথা বিভিন্ন মাসলা-মাসায়েল বিষয়ে হোক।

   ৪. প্রয়োজনে দাওয়াতের সমর্থনে শরীয়ত সম্মত শর্তানুযায়ী। সাহায্যকারী শক্তির সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন।

   ৫. সবকিছু সুস্পষ্ট হওয়া এবং গোপনীয়তা থেকে সম্পূর্ণভাবে দূরে থাকা। যেমন:

   (ক) আকীদাতে।

   (খ) পদ্ধতি ও সিলেবাসে।

   (গ) দা'ওয়াত ও তাবলীগে।

   ৬. ইসলাম ও সুন্নতের দিকে সম্পর্ক স্থাপন করা। নিজেদের বানানো কোন প্রকার লকব উপাধি ও অন্যান্য কোন আলামত বা নামের সাথে সম্পৃক্ত না হওয়া। যেমন: কাদেরীয়া, খারেজিয়া, আশ'আরীয়া, মাতুরিদিয়া, নকশাবন্দিয়া, চিশতিয়া, বাতেনিয়া, আকবরিয়া, কাদয়ানী, দেওবন্দী, বেরলবী, মু'তাজেলী, সূফী, তাবলিগী ও এখওয়ানী ইত্যাদি। শরীয়তে যে সকল শ্লোগান ও উপাধির নাম নেই সে সকল নতুন নতুন বিদাতী নাম ও উপাধির আবিস্কার ও উদ্ভাবন এবং সৃষ্টি করা শরীয়ত পরিপন্থী কাজ।

   ৭. জামাতবদ্ধ থাকা এবং দলাদলি হতে দূরে থাকা। আর সত্য দলের মাপকাঠি হচ্ছে হক তথা একমাত্র কুরআন ও সহীহ হাদীসের মানদণ্ড এবং তা সাহাবীদের বুঝ অনুযায়ী বুঝা এবং আমল করা।

   সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ [রাঃ] বলেন:

   الْجَمَاعَةُ مَا وَافَقَ الْحَقَّ وَإِنْ كُنْتَ وَحْدَكَ

   “জামাত হলো যা হকের (কুরআন সুন্নাহর) সঙ্গে মিলে যদিও তুমি একাকী হও না কেন।" [শারহু আকীদাতু আহলিস সুন্নাহ ওয়াল জামাহ ইমাম লালকাযী: ১/১৬৩]

   দলাদলির অপকারিতা:

    নিরাপত্তার স্থানে ভয় ও ভীতি।

    পেটের পরিভূক্তির পরিবর্তে ক্ষুধা।

    সম্মান ও ইজ্জত নষ্টকরণ।

    ছিনতাই ও ডাকাতি।

    মূর্খদের প্রভাব বিস্তার।

    অজ্ঞতার প্রসার লাভ ও জাহেলদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠা।

    শারয়ী জ্ঞানের হ্রাস ও সঠিক আলেমদের অসম্মান ও পরিচয় না জানা।

   ৭. ইসলামের শক্তি খর্ব ও মানুষের কাছে সঠিক দ্বীন অপরিচিত হওয়া।

   ৮. সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজের নির্দেশের ব্যাপারে গুরুত্বারোপ না করা।

   ৯. সুদৃঢ় নীতিমালার ভিত্তিতে শরীয়তের উদ্দেশ্য বুঝার পথ অবলম্বন না করা।

   ১০. আল্লাহর মনোনীত ইসলামকে বজ্রমুষ্ঠিতে আঁকড়িয়ে ধরতে না পারা।

দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ১০ পর্যন্ত, সর্বমোট ২৬ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে পাতা নাম্বারঃ 1 2 3 পরের পাতা »