নবী-রসূলগণের দা'ওয়াতের পদ্ধতি দা'ওয়াত ও তাবলীগ আবু আহমাদ সাইফুদ্দীন বেলাল
দ্বীন কায়েমের প্রচলিত কিছু ভুল পদ্ধতি

১. ইমামাত কায়েম করে: শুধুমাত্র আহলে বাইতের ইমামাত কায়েম করার মাধ্যম্যে দ্বীন কায়েম করা। ইহা শিয়া- রাফেযীদের পদ্ধতি।

২. বেলায়াত কায়েম করে: অলি-বুজুর্গদের বেলায়াত কায়েম করে দ্বীন কায়েম করা। ইহা প্রচলিত সূফীদের পদ্ধতি।

৩. হুকুমাত কায়েম করে: রাষ্ট্র কায়েম হলে সবকিছুই কায়েম হয়ে যাবে মনে করা। ইহা বর্তমানে এক শ্রেণীর অধুনিক ইসলামী চিন্তাবিদগণের পদ্ধতি।

৪. জিহাদ কায়েম করে: জিহাদের দ্বারাই দ্বীন কায়েম করতে হবে। ইহা জিহাদী দলগুলোর পদ্ধতি। ইহা এক শ্রেণীর আবেগী যুবক ও দ্বীনের ভাসা ভাসা জ্ঞানের লোকদের পদ্ধতি। নিঃসন্দেহে উপরের প্রতিটি জিনিস ইসলামে তার আপন গতিতে রয়েছে কারো নিজস্ব বুঝমত নয়। মনে রাখতে হবে যে, একমাত্র তাওহীদ কায়েমের মাধ্যমেই সবকিছু কায়েম হতে পারে। যা নবী-রসূলগণের একমাত্র পদ্ধতি। তাওহীদ প্রতিষ্ঠা দ্বারা সবই প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব; কারণ ইহাই আল্লাহ তায়ালা প্রদত্ত নিয়ম ও পদ্ধতি। আর বাকি সবগুলো পদ্ধতি হলো মানব রচিত পদ্ধতি।

৫. ধৈর্যধারণ:

দা'ওয়াত করতে যে সমস্ত সমস্যা ও মানুষের পক্ষ থেকে কষ্ট পাবে তার উপরে ধৈর্যধারণ করা জরুরি; কারণ দাওয়াতের রাস্তায় গোলাপ ফুল বিছানো থাকবে না বরং এপথ কষ্ট-ক্লেশ ও বিপদ দ্বারা বেষ্টিত। এ ব্যাপারে আমাদের জন্য নবী-রসূলগণের কেচ্ছা উত্তম নমুনা। আর তাঁরা যা তাঁদের জাতি ও নেতাদের থেকে কষ্ট ও হাসি ঠাট্টা-বিদ্রূপ পেয়েছেন সে সকল বর্ণনা আমাদের জন্য শান্তনা। আল্লাহ তা'য়ালার বাণী:

   وَلَقَدْ كُذِّبَتْ رُسُلٌ مِّن قَبْلِكَ فَصَبَرُوا عَلَى مَا كُذِّبُوا وَأُوذُوا حَتَّى أَتَاهُمْ نَصْرُنَا

   “আপনার পূর্বে রসূলদেরকে মিথ্যারোপ করা হয়েছে, তারা তাদের মিথ্যারোপ ও কষ্টের উপর ধৈর্যধারণ করেছে। পরিশেষে তাদের নিকট আমার সাহায্য এসেছে।" [সূরা আন'আম: ৩৪]

৬. উত্তম চরিত্র ও সুন্দর ব্যবহারের অধিকারী হওয়া:

   দ্বীনের দা'য়ী দাওয়াতে হিকমত অবলম্বন করবেন।

   আল্লাহ তা'য়ালার বাণী:

   ادْعُ إِلَى سَبِيلِ رَبِّكَ بِالْحِكْمَةِ وَالْمَوْعِظَةِ الْحَسَنَةِ وَجَادِلْهُم بِالَّتِي هِيَ أَحْسَنُ

   "আপনার প্রতিপালকের রাস্তায় হিকমত ও উত্তম ওয়াজ দ্বারা দাওয়াত করুন। আর উত্তম পন্থায় তাদের সঙ্গে বিতর্ক করুন।"[সুরা নাহল :১২৫]

   আর উত্তম চরিত্র ও হিকমত এবং বিবেক দ্বারা দা'ওয়াত করা কতই না প্রয়োজন। দাওয়াতকে ধ্বংসকারী অস্ত্র হচ্ছে যুবকদের আবেগপ্রবণতা। তাই একজন দায়ী যুবকদের আবেগকে সঠিক পথে পরিচালিত করবেন, যাতে করে যুব সমাজ ধ্বংস না হয়। আল্লাহ তা'য়ালা তাঁর নবী সম্পর্কে এরশাদ করেন:

   فَبِمَا رَحْمَةٍ مِّنَ اللَّهِ لِنتَ لَهُمْ وَلَوْ كُنتَ فَظًّا غَلِيظَ الْقَلْبِ لَانفَضُّوا مِنْ حَوْلِكَ

   "আল্লাহর দয়া দ্বারা তাদেরকে অর্জন করতে পেরেছেন। যদি কর্কশ ও শক্ত অন্তরের হতেন তবে তারা আপনার নিকট থেকে ভেগে যেত।"[সূরা আল-ইমরান: ১৫৯]

৭. বড় আশা-আকাঙ্খা ও শক্ত আশাবাদী হওয়া:

কোন সময় যেন দ্বীনের দা'য়ীর অন্তরে নিরাশা প্রবেশের রাস্তা না পায়। দাওয়াতের প্রভাব দুর্বল ও মানুষ হেদায়েত গ্রহণ না করার জন্যে দায়ী কখনো নিরাশ হবেন না। আল্লাহর সাহায্য- সহযোগিতার ব্যাপারে হতাশায় ভুগবেন না, যদিও সময় অনেক লম্বা লাগে না কেন। দা'য়ীর জন্য রয়েছে নবী-রসূলগণের মাঝে উত্তম নমুনা। আমাদের নবী মুহাম্মদ কে তায়েফের কাফের- মুশরেকরা মারধর করে সমস্ত শরীরকে রক্তাক্ত করে দিয়েছিল। এ দেখে আল্লাহ তা'য়ালা তাঁর প্রিয় হাবীবের নিকট পর্বতের ফেরেশতা প্রেরণ করেন। ফেরেশতা উপস্থিত হয়ে অনুমতি চান: আপনি অনুমতি দিন মক্কার সবচেয়ে বড় পর্বতময় আখশাইবন দ্বারা তাদেরকে ধ্বংস করে দেই। তিনি ফেরেশতাকে বলেন: "না, তাদেরকে ধ্বংস করে দিও না।

   بَلْ أَرْجُو أَنْ يُخْرِجَ اللَّهُ مِنْ أَصْلَابِهِمْ مَنْ يَعْبُدُ اللَّهَ وَحْدَهُ لَا يُشْرِكُ بِهِ شَيْئًا. متفق عليه

"বরং আমি আশাবাদী আল্লাহ তাদের ঔরস থেকে এমন জাতির আবির্ভাব ঘটাবেন, যারা একমাত্র আল্লাহর এবাদত করবে এবং তাঁর সঙ্গে কোন কিছুকে শরিক করবে না।" [বুখারী ও মুসলিম]

মনে রাখতে হবে যে, দায়ী যখন আশা হারিয়ে হতাশায় ভুগবেন তখন মাঝ রাস্তায় দাঁড়িয়ে পড়বেন এবং তার কাজ ব্যর্থতায় ও বিফলে যাবে।