লগইন করুন
সমস্ত নবী-রসূলদের দা'ওয়াতের উসুল চারটি:
(এক) তাওহীদ।
(দুই) নবুয়াত ও রেসালাত।
(তিন) তাকওয়া।
(চার) আখেরাত।
সমস্ত নবী-রসূল নিজ নিজ উম্মতকে আল্লাহ তা'য়ালার তাওহীদ প্রতিষ্ঠা এবং তাওহীদের বিপরীত শিরক থেকে বাঁচার জন্য নির্দেশ করেছেন। এটাই হলো তাওহীদের হকিকত যা আল্লাহর হক। আর সর্বপ্রকার এবাদত একমাত্র নবী-রসূলদের তরীকায় আদায় করার জন্য আদেশ দিয়েছেন যা নবুয়াত ও রেসালাতের হকিকত। এ ছাড়া আল্লাহ তায়ালা ও নবী- রসূলগণের আদেশ-নিষেধ পালন করাই হলো তাকওয়া। আর উপরের তিনটি উসুলের উপর নির্ভর করবে আখেরাত। সঠিকভাবে পালন করলে আখেরাতে জান্নাত আর না করলে জাহান্নাম। সকল নবী-রসূলগণ এ চারটি উসুল দ্বারাই দা'ওয়াত ও তাবলীগ করেছেন। পূর্ণ দ্বীন ইসলাম এই চার উসুলের মাঝেই কেন্দ্রভূত। সর্বপ্রথম রসূল নূহ (আঃ) কে আল্লাহ তা'য়ালা এই চারটি উসুল দ্বারাই প্রেরণ করেন।
আল্লাহ তা'য়ালার বাণী:
إِنَّا أَرْسَلْنَا نُوحًا إِلَى قَوْمِهِ أَنْ أَنذِرْ قَوْمَكَ مِن قَبْلِ أَن يَأْتِيَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ ١ قَالَ يَا قَوْمِ إِنِّي لَكُمْ نَذِيرٌ مُّبِينٌ ٢ أَنِ اعْبُدُوا اللَّهَ وَاتَّقُوهُ وَأَطِيعُونِ ٣ يَغْفِرْ لَكُم مِّن ذُنُوبِكُمْ وَيُؤَخِّرْكُمْ إِلَى أَجَلٍ مُّسَمًّى إِنَّ أَجَلَ اللَّهِ إِذَا جَاءَ لَا يُؤَخَّرُ لَوْ كُنتُمْ تَعْلَمُونَ ٤
“আমি নূহকে প্রেরণ করেছিলাম তার জাতির নিকট এ কথা বলে: তুমি তোমার জাতিকে সতর্ক কর, তাদের প্রতি যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি আসার আগে। সে বলল: হে আমার জাতি! আমি তোমাদের জন্যে স্পষ্ট সতর্ককারী। এ বিষয়ে যে, তোমরা আল্লাহর এবাদত কর, তাঁকে ভয় কর এবং আমার আনুগত্য কর। আল্লাহ তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করবেন এবং নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত অবকাশ দিবেন। নিশ্চয় আল্লাহর নির্দিষ্টকাল যখন হবে, তখন অবকাশ দেয়া হবে না, যদি তোমরা তা জানতে।” [সূরা নূহ: ১-৪]
আল্লাহ তা'য়ালা প্রথম দুই আয়াত ও চতুর্থ আয়াতে আখেরাত উসুল উল্লেখ করেছেন। আর তৃতীয় আয়াতে তিনটি উসুল তথা তাওহীদ, তাকওয়া ও রেসালাত উল্লেখ করেছেন।
দাওয়াতের ময়দানে যারা কাজ করছেন তাদেরকে এ চারটি উসুলে প্রতি গুরুত্ব দেয়া অতীব জরুরি। নিম্নে চারটি উসুলের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেয়া হল।
প্রথম: তাওহীদ:
নবী-রসূলগণ তাঁদের জাতিকে সকল এবাদত একমাত্র আল্লাহর জন্য নির্দিষ্ট করা এবং কোন প্রকার এবাদত আল্লাহ ছাড়া অন্য কার জন্য না করার দা'ওয়াত করেন। যেমন: বিভিন্ন নবী-রসূলদের দা'ওয়াত সম্পর্কে আল্লাহ তা'য়ালার বাণী:
فَقَالَ يَا قَوْمِ اعْبُدُوا اللَّهَ مَا لَكُم مِّنْ إِلَهٍ غَيْرُهُ
"হে আমার জাতি! একমাত্র আল্লাহর এবাদত কর: তিনি ছাড়া আর কোন তোমাদের উপাস্য নেই।” [সূরা আ'রাফ: ৫৯, ৬৫, ৭৩, ৮৫ সূরা হুদ:৫০, ৬১, ৮৪ সূরা মুমিনুন : ২৩]
দ্বিতীয় নবুয়াত ও রেসালাত:
নবুয়াত শব্দ থেকে নবী যার অর্থ খবরদাতা এবং রেসালাত শব্দ থেকে রসূল যার অর্থ পত্রবাহক বা দূত। নবী-রসূলগণ আল্লাহ তা'য়ালার পক্ষ থেকে খবরদাতা ও দূত। নবী-রসূলগণ আল্লাহর পক্ষ থেকে যা প্রচার করতেন তার আনুগত্য করার জন্য দা'ওয়াত করেন। প্রতিটি নবী-রসূল নিজ নিজ জাতিকে তাঁদের আনুগত্য করার জন্য নির্দেশ এবং নাফরমানি করতে নিষেধ করেন। আর রেসালাতের মর্মার্থ হলো এক আল্লাহর এবাদت শুধুমাত্র সে নবী বা রসূলের তরীকা ছাড়া আর অন্য কোন তরীকা দ্বারা করা যাবে না। আর করলেও তা আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য হবে না।
সালেহ [আঃ] সম্পর্কে আল্লাহ তা'য়ালা বলেন:
فَتَوَلَّى عَنْهُمْ وَقَالَ يَا قَوْمِ لَقَدْ أَبْلَغْتُكُمْ رِسَالَةَ رَبِّي وَنَصَحْتُ لَكُمْ وَلَكِن لَّا تُحِبُّونَ النَّاصِحِينَ ٧٩
(ক) “সালেহ তাদের থেকে প্রস্থান করলো এবং বলল: হে আমার জাতি, আমি তোমাদের কাছে স্বীয় প্রতিপালকের। পয়গাম। (রেসালত) পৌঁছিয়েছি এবং তোমাদের মঙ্গল কামনা করছি কিন্তু তোমরা মঙ্গলাকাঙ্খীদেরকে ভালবাস না।” [সূরা আ'রাফ: ৭৯]
يَا أَيُّهَا الرَّسُولُ بَلِّغْ مَا أُنزِلَ إِلَيْكَ مِن رَّبِّكَ وَإِن لَّمْ تَفْعَلْ فَمَا بَلَّغْتَ رِسَالَتَهُ وَاللَّهُ يَعْصِمُكَ مِنَ النَّاسِ إِنَّ اللَّهَ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الْكَافِرِينَ ٦٧
(খ) “হে রসূল, তাবলীগ করুন, আপনার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে আপনার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে। আর যদি আপনি এরূপ না করেন, তবে আপনি তাঁর পয়গাম কিছুই পৌঁছালেন না। আল্লাহ আপনাকে মানুষের কাছ থেকে রক্ষা করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ কাফেরদেরকে পথ প্রদর্শন করেন না।” [সূরা মায়েদা: ৬৭]
قُلْ يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنِّي رَسُولُ اللَّهِ
(গ) “বলে দিন, হে মানবমণ্ডলী! তোমাদের সবার প্রতি আমি আল্লাহর প্রেরিত রসূল।" [সূরা আ'রাফ: ১৫৮]
مَّا كَانَ مُحَمَّدٌ أَبَا أَحَدٍ مِّن رِّجَالِكُمْ وَلَكِن رَّسُولَ اللَّهِ وَخَاتَمَ النَّبِيِّينَ وَكَانَ اللَّهُ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمًا ٤٠
(ঘ) “মুহাম্মদ তোমাদের কোন ব্যক্তির বাবা নন; বরং তিনি আল্লাহর রসূল এবং শেষ নবী। আল্লাহ সব বিষয়ে জ্ঞাত।”[সূরা আহজাব :৪০]
فَإِن كَذَّبُوكَ فَقَدْ كُذِّبَ رُسُلٌ مِّن قَبْلِكَ جَاءُوا بِالْبَيِّنَاتِ وَالزُّبُرِ وَالْكِتَابِ الْمُنِيرِ ١٨٤
(ঙ) "তাছাড়া এরা যদি তোমাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে, তবে তোমার পূর্বেও এরা এমন বহু নবীকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে: যারা নিদর্শনসমূহ নিয়ে এসেছিলেন এবং এনেছিলেন সহীফা ও প্রদীপ্ত গ্রন্থ।” [সূরা আল-ইমরান: ১৮৪]
يَا مَعْشَرَ الْجِنِّ وَالْإِنسِ أَلَمْ يَأْتِكُمْ رُسُلٌ مِّنكُمْ يَقُصُّونَ عَلَيْكُمْ آيَاتِي وَيُنذِرُونَكُمْ لِقَاءَ يَوْمِكُمْ هَذَا قَالُوا شَهِدْنَا عَلَى أَنفُسِنَا وَغَرَّتْهُمُ الْحَيَاةُ الدُّنْيَا وَشَهِدُوا عَلَى أَنفُسِهِمْ أَنَّهُمْ كَانُوا كَافِرِينَ ١٣٠
(চ) “হে জিন ও মানব সম্প্রদায়, তোমাদের কাছে কি তোমাদের মধ্য থেকে রসূল আগমন করেনি, যাঁরা তোমাদেরকে আমার বিধানাবলী বর্ণনা করতেন এবং তোমাদেরকে আজকের এ দিনের সাক্ষাতের ভীতি প্রদর্শন করতেন? তারা বলবে: আমরা স্বীয় পাপ স্বীকার করে নিলাম। পার্থিব জীবন তাদেরকে প্রতারিত করেছে। তারা নিজেদের বিরুদ্ধে স্বীকার করে নিয়েছে যে, তারা কাফের ছিল।” [সূরা আন'আম: ১৩০]
وَسِيقَ الَّذِينَ كَفَرُوا إِلَى جَهَنَّمَ زُمَرًا حَتَّى إِذَا جَاءُوهَا فُتِحَتْ أَبْوَابُهَا وَقَالَ لَهُمْ خَزَنَتُهَا أَلَمْ يَأْتِكُمْ رُسُلٌ مِّنكُمْ يَتْلُونَ عَلَيْكُمْ آيَاتِ رَبِّكُمْ وَيُنذِرُونَكُمْ لِقَاءَ يَوْمِكُمْ هَذَا قَالُوا بَلَى وَلَكِنْ حَقَّتْ كَلِمَةُ الْعَذَابِ عَلَى الْكَافِرِينَ ٧١
(ছ) “কাফেরদেরকে জাহান্নামের দিকে দলে দলে হাঁকিয়ে নেয়া হবে। তারা যখন সেখানে পৌঁছবে, তখন তার দরজাসমূহ খুলে দেয়া হবে এবং জাহান্নামের রক্ষীরা তাদেরকে বলবে, তোমাদের কাছে কি তোমাদের মধ্য থেকে রসূল আসেনি, যারা তোমাদের কাছে তোমাদের পালনকর্তার আয়াতসমূহ আবৃত্তি করত এবং সতর্ক করত এ দিনের সাক্ষাতের ব্যাপারে? তারা বলবে, হাঁ, কিন্তু কাফেরদের প্রতি শাস্তির বিধানই বাস্তবায়িত হয়েছে। "[সূরা জুমার : ৭১]
আর এ জন্যে কোন কাফের মুসলিম হতে চাইলে এক আল্লাহর সাক্ষ্য দেওয়ার সাথে সাথে নবীর রেসালাতের সাক্ষ্য না দেওয়া পর্যন্ত মুসলিম হতে পারবে না।
قُلْ إِن كُنتُمْ تُحِبُّونَ اللَّهَ فَاتَّبِعُونِي يُحْبِبْكُمُ اللَّهُ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ وَاللَّهُ غَفُورٌ رَّحِيمٌ ٣١
"বলুন, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালবাস তাহলে আমাকে অনুসরণ কর, যাতে আল্লাহও তোমাদিগকে ভালবাসেন এবং তোমাদিগকে তোমারদের পাপ মার্জনা করে দেন। আর আল্লাহ হলেন ক্ষমাকারী, দয়ালু।" [সূরা আল-ইমরান: ৩১]
তৃতীয়: তাকওয়াঃ
নবী-রসূলগণ তাঁদের জাতিকে তাকওয়া তথা আল্লাহর নির্দেশাবলী পালন এবং নিষেধসমূহ পরিহার করার জন্য আদেশ করেন। তাকওয়ার অর্থ সাধারণত: আল্লাহভীরুতাকে বলা হয়ে থাকে। এর অর্থ আল্লাহর নির্দেশ ত্যাগ করতে বা নিষেধ উপেক্ষা করতে তাঁকে ভয় করা। অন্যভাবে বলা যেতে পারে: আল্লাহর সমস্ত আদেশ পালন ও সকল নিষেধ থেকে দূরে থাকার নাম তাকওয়া।
قَالَ يَا قَوْمِ إِنِّي لَكُمْ نَذِيرٌ مُّبِينٌ ٢ أَنِ اعْبُدُوا اللَّهَ وَاتَّقُوهُ وَأَطِيعُونِ ٣
(ক) “সে (নূহ) বলল: হে আমার সম্প্রদায়! আমি তোমাদের জন্যে স্পষ্ট সতর্ককারী। এ বিষয়ে যে, তোমরা আল্লাহর এবাদত কর, তাঁকে ভয় কর এবং আমার আনুগত্য কর।” [সূরা নূহ:২-৩]
كَذَّبَتْ عَادٌ الْمُرْسَلِينَ ١٢٣ إِذْ قَالَ لَهُمْ أَخُوهُمْ هُودٌ أَلَا تَتَّقُونَ ١٢٤ إِنِّي لَكُمْ رَسُولٌ أَمِينٌ ١٢٥ فَاتَّقُوا اللَّهَ وَ أَطِيعُونِ ١٢٦
(খ) "আদ সম্প্রদায় রসূলগণকে মিথ্যাবাদী বলেছে। তখন তাদের ভাই হুদ তাদেরকে বললেন: তোমাদের কি ভয় নেই? আমি তোমাদের বিশ্বস্ত রসূল। অতএব, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং আমার আনুগত্য কর।” [সুরা শুয়ারা:১২৩-১২৬]
كَذَّبَتْ ثَمُودُ الْمُرْسَلِينَ ١٤١ إِذْ قَالَ لَهُمْ أَخُوهُمْ صَالِحٌ أَلَا تَتَّقُونَ ١٤٢ إِنِّي لَكُمْ رَسُولٌ أَمِينٌ ١٤٣ فَاتَّقُوا اللَّهَ وَأَطِيعُونِ ١٤٤
(গ) “সামূদ জাতি রসুলগণকে মিথ্যাবাদী বলেছে। যখন তাদের ভাই সালেহ, তাদেরকে বললেন: তোমরা কি ভয় কর না? আমি তোমাদের বিশ্বস্ত রসুল। অতএব, আল্লাহকে ভয় কর এবং আমার আনুগত্য কর।” [সূরা শু'আরা: ১৪১-১৪৪]
كَذَّبَتْ قَوْمُ لُوطٍ الْمُرْسَلِينَ ١٦٠ إِذْ قَالَ لَهُمْ أَخُوهُمْ لُوطٌ أَلَا تَتَّقُونَ ١٦١ إِنِّي لَكُمْ رَسُولٌ أَمِينٌ ١٦٢ فَاتَّقُوا اللَّهَ وَأَطِيعُونِ ١٦٣
(ঘ) “লূতের জাতি রসূলগণকে মিথ্যাবাদী বলেছে। যখন তাদের ভাই লুত, তাদেরকে বললেন: তোমরা কি ভয় কর না? আমি তোমাদের বিশ্বস্ত রসূল। অতএব, আল্লাহকে ভয় কর এবং আমার আনুগত্য কর।" [সূরা শু'আরা: ১৬০-১৬৩]
كَذَّبَ أَصْحَابُ الْأَيْكَةِ الْمُرْسَلِينَ ١٧٦ إِذْ قَالَ لَهُمْ شُعَيْبٌ أَلَا تَتَّقُونَ ١٧٧ إِنِّي لَكُمْ رَسُولٌ أَمِينٌ ١٧٨ فَاتَّقُوا اللَّهَ وَأَطِيعُونِ ١٧٩
(ঙ) “বনের অধিবাসীরা রসুলগণকে মিথ্যাবাদী বলেছে। যখন তাদের ভাই শো আইব, তাদেরকে বললেন: তোমরা কি ভয় কর না? আমি তোমাদের বিশ্বস্ত রসূল। অতএব, আল্লাহকে ভয় কর এবং আমার আনুগত্য কর।”[সূরা শুআরা : ১৭৬-১৭৯]
وَلَقَدْ قَالَ لَهُمْ هَارُونُ مِن قَبْلُ يَا قَوْمِ إِنَّمَا فُتِنتُم بِهِ وَإِنَّ رَبَّكُمُ الرَّحْمَنُ فَاتَّبِعُونِي وَأَطِيعُوا أَمْرِي ٩٠
“হারুন তাদের পূর্বেই বলেছিলেন: হে আমার জাতি, তোমরা তো এই গো-বৎস দ্বারা পরীক্ষায় নিপতিত হয়েছে এবং তোমাদের পালনকর্তা দয়াময়। অতএব, তোমরা আমার অনুসরণ কর এবং আমার আদেশ মেনে চল।” [সূরা ত্বহা :৯০]
وَلَمَّا جَاءَ عِيسَى بِالْبَيِّنَاتِ قَالَ قَدْ جِئْتُكُم بِالْحِكْمَةِ وَلِأُبَيِّنَ لَكُم بَعْضَ الَّذِي تَخْتَلِفُونَ فِيهِ فَاتَّقُوا اللَّهَ وَأَطِيعُونِ ٦٣
(চ) “ঈসা যখন স্পষ্ট নিদর্শনসহ আগমন করলেন, তখন বললেন, আমি তোমাদের কাছে প্রজ্ঞা নিয়ে এসেছি এবং তোমরা যে, কোন কোন বিষয়ে মতভেদ করছ তা ব্যক্ত করার জন্যে এসেছি। অতএব, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং আমার কথা মান।" [সূরা জুখরুফ : ৬৩]
وَلَقَدْ وَصَّيْنَا الَّذِينَ أُوتُوا الْكِتَابَ مِن قَبْلِكُمْ وَإِيَّاكُمْ أَنِ اتَّقُوا اللَّهَ ٩
(ছ) “বস্তুত: আমি নির্দেশ দিয়েছি তোমাদের পূর্ববর্তী গ্রন্থের অধিকারীদের এবং তোমাদেরকে যে, তোমরা সবাই আল্লাহকে ভয় করতে থাক।" [সূরা নিসা : ১৩১]
চতুর্থ: আখেরাত:
নবী-রসূলগণ তাঁদের জাতিকে পরকালের ভয়-ভীতি প্রদর্শন করেন। পরকালে পুনরুত্থান, প্রতিদান ও হিসাব-নিকাশের কথা অবহিত করেন। সেই দিন এক দলের পরিণাম হবে জান্নাত আর এক দলের জাহান্নাম।
فَرِيقٌ فِي الْجَنَّةِ وَفَرِيقٌ فِي السَّعِيرِ ٧
(ক) “একদল জান্নাতে এবং একদল জাহান্নামে প্রবেশ করবে।"[সুরা শুরা: ৭]
كُلُّ نَفْسٍ ذَائِقَةُ الْمَوْتِ وَإِنَّمَا تُوَفَّوْنَ أُجُورَكُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فَمَن زُحْزِحَ عَنِ النَّارِ وَأُدْخِلَ الْجَنَّةَ فَقَدْ فَازَ وَمَا الْحَيَاةُ الدُّنْيَا إِلَّا مَتَاعُ الْغُرُورِ ١٨٥
(খ) “প্রত্যেক প্রাণীকে আস্বাদন করতে হবে মৃত্যু। আর তোমরা কিয়ামতের দিন পরিপূর্ণ বদলা প্রাপ্ত হবে। তারপর যাকে দোযখ থেকে দূরে রাখা হবে এবং জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে, তার কার্যসিদ্ধি ঘটবে। আর পার্থিব জীবন ধোঁকা ছাড়া আর অন্য কোন সম্পদ নয়।” [সূরা আল ইমরান:১৮৫]
وَمَا الْحَيَاةُ الدُّنْيَا إِلَّا لَعِبٌ وَلَهْوٌ وَلَلدَّارُ الْآخِرَةُ خَيْرٌ لِّلَّذِينَ يَتَّقُونَ أَفَلَا تَعْقِلُونَ ٣٢
(গ) "পার্থিব জীবন খেল-তামাশা ও কৌতুক ব্যতীত কিছুই নয়। পরকালে আবাস পরহেজগারদের জন্যে শ্রেষ্ঠতর। তোমরা কি বুঝ না?” [সূরা আন'আম: ৩২]
مَن كَانَ يُرِيدُ الْحَيَاةَ الدُّنْيَا وَزِينَتَهَا نُوَفِّ إِلَيْهِمْ أَعْمَالَهُمْ فِيهَا وَهُمْ فِيهَا لَا يُبْخَسُونَ ١٥ أُولَئِكَ الَّذِينَ لَيْسَ لَهُمْ فِي الْآخِرَةِ إِلَّا النَّارُ وَحَبِطَ مَا صَنَعُوا فِيهَا وَبَاطِلٌ مَّا كَانُوا يَعْمَلُونَ ١٦
(ঘ) “যে ব্যক্তি পার্থিবজীবন ও তার চাকচিক্যই কামনা করে, আমি তাদের দুনিয়াতেই তাদের আমলের প্রতিফল ভোগ করিয়ে দেব এবং তাতে তাদের প্রতি কিছুমাত্র কমতি করা হয় না। এরাই হল সেসব লোক আখেরাতে যাদের জন্য আগুন ছাড়া আর কিছুই নেই। তারা এখানে যা কিছু করেছিল সবই বরবাদ করেছে, আর যা কিছু উপার্জন করেছিল, সবই বিনষ্ট হল।" [সূরা হুদ: ১৫-১৬]
وَمَنْ أَرَادَ الْآخِرَةَ وَسَعَى لَهَا سَعْيَهَا وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَأُولَئِكَ كَانَ سَعْيُهُم مَّشْكُورًا ١٩
(ঙ) “আর যারা পরকাল কামনা করে এবং মুমিন অবস্থায় তার জন্য যথাযথ চেষ্টা-সাধনা করে, এমন লোকদের চেষ্টা স্বীকৃত হয়ে থাকে।" [সূরা বনী ইসরাঈল: ১৯]
إِنَّ الَّذِينَ لَا يُؤْمِنُونَ بِالْآخِرَةِ زَيَّنَّا لَهُمْ أَعْمَالَهُمْ فَهُمْ يَعْمَهُونَ ٤ أُولَئِكَ الَّذِينَ لَهُمْ سُوءُ الْعَذَابِ وَهُمْ فِي الْآخِرَةِ هُمُ الْأَخْسَرُونَ ٥
(চ) “যারা পরকালে বিশ্বাস করে না, আমি তাদের দৃষ্টিতে তাদের কর্মকাণ্ডকে সুশোভিত করে দিয়েছি। অতএব, তারা উদভ্রান্ত হয়ে ঘুরে বেড়ায়। তাদের জন্যেই রয়েছে মন্দ শাস্তি এবং তারাই পরকালে অধিক ক্ষতিগ্রস্ত।” [সূরা নামল: ৪-৫]
تِلْكَ الدَّارُ الْآخِرَةُ نَجْعَلُهَا لِلَّذِينَ لَا يُرِيدُونَ عُلُوًّا فِي الْأَرْضِ وَلَا فَسَادًا وَالْعَاقِبَةُ لِلْمُتَّقِينَ ٨٣
(ছ) "সেই পরকাল আমি তাদের জন্যে নির্ধারিত করি, যারা দুনিয়ার বুকে উদ্ধতা প্রকাশ করতে ও অনর্থ সৃষ্টি করতে চায় না। আল্লাহভীরুদের জন্যে শুভ পরিণাম।” [সূরা কাসাস: ৮৩]
وَمَا هَذِهِ الْحَيَاةُ الدُّنْيَا إِلَّا لَهْوٌ وَلَعِبٌ وَإِنَّ الدَّارَ الْآخِرَةَ لَهِيَ الْحَيَوَانُ لَوْ كَانُوا يَعْلَمُونَ ٦٤
(জ) “এই পার্থিবজীবন ক্রীড়া-কৌতুক ছাড়া আর কিছুই নয়। পারকালের গৃহই প্রকৃত স্থায়ী জীবন, যদি তারা জানত। "[সূরা আনকাবৃত: ৬৪]
يَا قَوْمِ إِنَّمَا هَذِهِ الْحَيَاةُ الدُّنْيَا مَتَاعٌ وَإِنَّ الْآخِرَةَ هِيَ دَارُ الْقَرَارِ ٣٩
(ঝ) “হে আমার জাতি, পার্থিব এ জীবন তো কেবল উপভোগের বস্তু, আর পরকাল হচ্ছে স্থায়ী বসবাসের গৃহ।" (সূরা মুমিন:৩৯)
زَعَمَ الَّذِينَ كَفَرُوا أَن لَّن يُبْعَثُوا قُلْ بَلَى وَرَبِّي لَتُبْعَثُنَّ ثُمَّ لَتُنَبَّؤُنَّ بِمَا عَمِلْتُمْ وَذَلِكَ عَلَى اللَّهِ يَسِيرٌ ٧
(ঞ) "কাফেররা দাবী করে যে, তারা কখনও পুনরথিত হবে না। বলুন, অবশ্যই হবে, আমার পালনকর্তার কসম, তোমরা নিশ্চয় পুনরুত্থিত হবে। অতঃপর তোমাদেরকে অবহিত করা হবে যা তোমরা করতে। এটা আল্লাহর পক্ষে সহজ।" [সূরা তাগাবুন: ৭]
فَمَن ثَقُلَتْ مَوَازِينُهُ فَأُولَئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ ١٠٢ وَمَنْ خَفَّتْ مَوَازِينُهُ فَأُولَئِكَ الَّذِينَ خَسِرُوا أَنفُسَهُمْ فِي جَهَنَّمَ خَالِدُونَ ١٠٣ تَلْفَحُ وُجُوهَهُمُ النَّارُ وَهُمْ فِيهَا كَالِحُونَ ١٠٤
(ট)"যাদের পাল্লা ভারী হবে, তারাই হবে সফলকাম, এবং যাদের পাল্লা হালকা হবে তারাই নিজেদের ক্ষতিসাধন করেছে, তারা দোযখেই চিরকাল বসবাস করবে। আগুন তাদের মুখমণ্ডল দগ্ধ করবে এবং তারা তাতে বীভৎস আকার ধারণ করবে।" [সূরা আল মুমিনুন : ১০২:১০৪]
وَالْوَزْنُ يَوْمَئِذٍ الْحَقُّ فَمَن ثَقُلَتْ مَوَازِينُهُ فَأُولَئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ ٨ وَمَنْ خَفَّتْ مَوَازِينُهُ فَأُولَئِكَ الَّذِينَ خَسِرُوا أَنفُسَهُم بِمَا كَانُوا بِآيَاتِنَا يَظْلِمُونَ ٩
(ঠ) “আর সেদিন যথার্থই ওজন হবে। অতঃপর যাদের পাল্লা ভারী হবে, তারাই সফলকাম হবে। আর যাদের পাল্লা হাল্কা হবে, তারাই এমন হবে, যারা নিজেদের ক্ষতি করেছে। কেননা, তারা আমার আয়াতসমূহ অস্বীকার করতো।" [সূরা আ'রাফ:৮,৯]
فَأَمَّا مَن ثَقُلَتْ مَوَازِينُهُ ٦ فَهُوَ فِي عِيشَةٍ رَّاضِيَةٍ ٧ وَأَمَّا مَنْ خَفَّتْ مَوَازِينُهُ ٨ فَأُمُّهُ هَاوِيَةٌ ٩ وَمَا أَدْرَاكَ مَا هِيَهْ ١٠ نَارٌ حَامِيَةٌ ١١
(ড) “অতএব, যার পাল্লা ভারী হবে, সে সুখী জীবন যাপন করবে। আর যার পাল্লা হাল্কা হবে, তার ঠিকানা হবে হাবিয়া। আপনি কি তা জানেন? প্রজ্জ্বলিত অগ্নি।” [সূরা কারিয়া: ৬-১১]