লগইন করুন
দাওয়াত ইলাল্লাহ তথা আল্লাহর দিকে দাওয়াতের ফজিলত ও গুরুত্ব অনেক; কারণ ইহা নবী-রসূলগণের কাজ। আর তাঁরাই হলেন সৃষ্টির সেরা ও আল্লাহর নিকট সবচেয়ে বেশি মর্যাদাবান ব্যক্তি। আল্লাহ তা'য়ালা তাদেরকে মানুষের হেদায়েতের জন্য নির্বাচন করেন। আর আলেমগণ নবীদের জ্ঞান ও দাওয়াতের উত্তরসূরী। দা'ওয়াত ইলাল্লাহর কাজের দ্বারা আহ্বানকারীদের সম্মান ও মর্যাদা অনেক বৃদ্ধি পায়।
১. আল্লাহ তা'য়ালা বলেন:
وَمَنْ أَحْسَنُ قَوْلًا مِّمَّن دَعَا إِلَى اللَّهِ وَعَمِلَ صَالِحًا وَقَالَ إِنَّنِي مِنَ الْمُسْلِمِينَ ٣٣
"যে আল্লাহর দিকে দাওয়াত দেয়, সৎকর্ম করে এবং বলে, আমি একজন মুসলিম [পূর্ণ আত্মসমর্পণকারী]। তার কথা অপেক্ষা উত্তম কথা আর কার হতে পারে?” (সূরা হা-মীম সেজদাহ : ৩৩)
২. আল্লাহ তা'য়ালা বলেন:
قُلْ هَذِهِ سَبِيلِي أَدْعُو إِلَى اللَّهِ عَلَى بَصِيرَةٍ أَنَا وَمَنِ اتَّبَعَنِي وَسُبْحَانَ اللَّهِ وَمَا أَنَا مِنَ الْمُشْرِكِينَ ١٠٨
“বলুন, এই আমার পথ। আমি আল্লাহর দিকে বুঝে সুঝে দা'ওয়াত দেই-আমি এবং আমার অনুসারীরা। আর আল্লাহ মহা পবিত্র এবং আমি অংশীবাদীদের অন্তর্ভুক্ত নই।”[সুরা ইউসুফ: ১০৮]
৩. আল্লাহ তা'য়ালা বলেন:
ادْعُ إِلَى سَبِيلِ رَبِّكَ بِالْحِكْمَةِ وَالْمَوْعِظَةِ الْحَسَنَةِ وَجَادِلْهُم بِالَّتِي هِيَ أَحْسَنُ إِنَّ رَبَّكَ هُوَ أَعْلَمُ بِمَن ضَلَّ عَن سَبِيلِهِ وَهُوَ أَعْلَمُ بِالْمُهْتَدِينَ ١٢٥
আপনার প্রতিপালকের পথের প্রতি দা'ওয়াত করুন জ্ঞানের কথা বুঝিয়ে ও উত্তম উপদেশ শুনিয়ে এবং তাদের সঙ্গে বিতর্ক করুন। পছন্দযুক্ত পন্থায়। নিশ্চয় আপনার পালনকর্তাই ঐ ব্যক্তি সম্পর্কে বিশেষভাবে জ্ঞাত রয়েছেন যে, তাঁর পথ থেকে কে ভ্রষ্ট হয়ে গেছে এবং তিনিই ভাল জানেন তাদেরকে যারা হেদায়েত লাভ করেছে।”[সূরা নাহল :১২৫]
৪. আল্লাহ তায়ালা বলেন:
يَا أَيُّهَا الرَّسُولُ بَلِّغْ مَا أُنزِلَ إِلَيْكَ مِن رَّبِّكَ وَإِن لَّمْ تَفْعَلْ فَمَا بَلَّغْتَ رِسَالَتَهُ وَاللَّهُ يَعْصِمُكَ مِنَ النَّاسِ إِنَّ اللَّهَ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الْكَافِرِينَ ٦٧
“হে রসূল ﷺ তাবলীগ প্রচার করুন আপনার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে আপনার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে। আর যদি আপনি এরূপ না করেন, তবে আপনি তাঁর পয়গাম কিছুই পৌঁছালেন না। আল্লাহ আপনাকে মানুষের কাছ থেকে রক্ষা করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ কাফেরদেকে পথ প্রদর্শন করেন না।" [সূরা মায়েদাহঃ ৬৭]
৫. রসূলুল্লাহ ﷺ বলেন:
فَوَاللَّهِ لَأَنْ يَهْدِيَ اللَّهُ بِكَ رَجُلًا وَاحِدًا خَيْرٌ لَكَ مِنْ أَنْ يَكُونَ لَكَ حُمْرُ النَّعَمِ
তিনি ﷺ আরো বলেন
رواه البخاري
“আল্লাহর শপথ! যদি তোমার দ্বারা একজন মানুষও হেদায়েত লাভ করে তাহলে উহা একটি লাল উটের চেয়েও উত্তম।” [বুখারী]
নবী ﷺ আরো বলেন
بَلِّغُوا عَنِّي وَلَوْ آيَةً رواه البخاري
আমার থেকে একটি আয়াত হলেও তা প্রচার কর।” [বুখারী]
عَنْ حُذَيْفَةَ بْنِ الْيَمَانِ رضي الله عنه يَقُولُ: كَانَ النَّاسُ يَسْأَلُونَ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنِ الْخَيْرِ وَكُنتُ أَسْأَلُهُ عَنِ الشَّرِّ مَخَافَةَ أَنْ يُدْرِكَنِي، فَقُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ: إِنَّا كُنَّا فِي جَاهِلِيَّةٍ وَشَرٍّ فَجَاءَنَا اللَّهُ بِهَذَا الْخَيْرِ فَهَلْ بَعْدَ هَذَا الْخَيْرِ مِنْ شَرٍّ؟ قَالَ: نَعَمْ، قُلْتُ: وَهَلْ بَعْدَ ذَلِكَ الشَّرِّ مِنْ خَيْرٍ؟ قَالَ: نَعَمْ، وَفِيهِ دَخَنٌ. قُلْتُ: وَمَا دَخَنُهُ؟ قَالَ: قَوْمٌ يَهْدُونَ بِغَيْرِ هَدْيِي تَعْرِفُ مِنْهُمْ وَتُنْكِرُ. قُلْتُ: فَهَلْ بَعْدَ ذَلِكَ الْخَيْرِ مِنْ شَرٍّ؟ قَالَ: نَعَمْ، دُعَاةٌ عَلَى أَبْوَابِ جَهَنَّمَ مَنْ أَجَابَهُمْ إِلَيْهَا قَذَفُوهُ فِيهَا. قُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ صِفْهُمْ لَنَا، قَالَ: هُمْ مِنْ جِلْدَتِنَا وَيَتَكَلَّمُونَ بِأَلْسِنَتِنَا. قُلْتُ: فَمَا تَأْمُرُنِي إِنْ أَدْرَكَنِي ذَلِكَ؟ قَالَ: تَلْزَمُ جَمَاعَةَ الْمُسْلِمِينَ وَإِمَامَهُمْ. قُلْتُ: فَإِنْ لَمْ يَكُنْ لَهُمْ جَمَاعَةٌ وَلَا إِمَامٌ؟ قَالَ: فَاعْتَزِلْ تِلْكَ الْفِرَقَ كُلَّهَا وَلَوْ أَنْ تَعَضَّ بِأَصْلِ شَجَرَةٍ حَتَّى يُدْرِكَكَ الْمَوْتُ وَأَنتَ عَلَى ذَلِكَ. متفق عليه.
হুযাইফা ইবনে ইয়ামান [রাঃ] হতে বর্ণিত, তিনি বলেন:
রসূলুল্লাহ ﷺ কে মানুষ কল্যাণ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করত। আর অকল্যাণ আমাকে পেয়ে বসবে এ ভয়ে আমি জিজ্ঞাসা করতাম অনিষ্ট-অকল্যাণ সম্পর্কে। আমি বললাম: হে আল্লাহর রসূল! আমরা জাহেলিয়াত ও অনিষ্টকর যুগে ছিলাম। আল্লাহ আমাদেরকে দ্বীন ইসলামের কল্যাণে এনেছেন। আচ্ছা এ মঙ্গলের পর আবারও কি অমঙ্গল আসবে? তিনি ﷺ বললেন: হ্যাঁ, আমি আবার বললাম: আচ্ছা এ অনিষ্টর পর আবারও কি কল্যাণ আসবে? তিনি ﷺ বললেন: হ্যাঁ, কিন্তু তাতে ধোঁয়া থাকবে। আমি বললামঃ ধোঁয়া আবার কি? তিনি ﷺ বললেন: ধোঁয়া হলো, এমন এক জাতির আবির্ভাব ঘটবে যারা আমার হেদায়েত পরিহার করে অন্যদের হেদায়েত গ্রহণ করবে। তাদের মাঝে কিছু ভাল পাবে আবার কিছু মন্দও দেখবে। আমি বললাম: আচ্ছা এ ধোঁয়া মিশ্রিত কল্যাণের পর কি আর কোন অনিষ্ট আসবে? তিনি ﷺ বললেন: হ্যাঁ, আল্লাহর দ্বীনের পথে এক শ্রেণীর আহ্বানকারী, যারা জাহান্নামের দরজার উপর হতে জান্নাতের নামে আহ্বান করবে। তাদের ডাকে যারা সাড়া দেবে তাদেরকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবে।
আমি বললামঃ হে আল্লাহর রসূল। আমাদেরকে তাদের সম্পর্কে বর্ণনা দেন। তিনি ﷺ বললেন: তারা আমাদের জাতির মানুষ। তারা আমাদের ভাষায় কথা বলবে। আমি বললাম যদি সে অবস্থা আমাকে পেয়ে বসে তাহলে কি নির্দেশ করেন। তিনি ﷺ বললেন সম্মিলিত মুসলমানদের জামাত ও ইমামের (রাষ্ট্রপতির) সঙ্গে থাকবে। আমি বললাম: যদি সম্মিলিত মুসলমানদের কোন জামাত ও ইমাম না থাকে তবে কি করব? তিনি বললেন: ঐ সমস্ত দল ছেড়ে একাকী থাকবে, যদিও গাছের শিকড় দাঁত দ্বারা ধরে হোক না কেন। আর এভাবে মৃত্যু আসা পর্যন্ত থাকবে।” [বুখারী ও মুসলিম]