﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ كُتِبَ عَلَيۡكُمُ ٱلصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى ٱلَّذِينَ مِن قَبۡلِكُمۡ لَعَلَّكُمۡ تَتَّقُونَ ١٨٣﴾ [البقرة: ١٨٣]

“হে মুমিনগণ, তোমাদের ওপর সাওম ফরয করা হয়েছে, যেভাবে ফরয করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর। যাতে তোমরা তাকওয়া অবলম্বন কর”। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৮৩]

তালহা ইবন উবাইদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত,

«أَنَّ أَعْرَابِيًّا جَاءَ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ثَائِرَ الرَّأْسِ، فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ أَخْبِرْنِي مَاذَا فَرَضَ اللَّهُ عَلَيَّ مِنَ الصَّلاَةِ؟ فَقَالَ: «الصَّلَوَاتِ الخَمْسَ إِلَّا أَنْ تَطَّوَّعَ شَيْئًا»، فَقَالَ: أَخْبِرْنِي مَا فَرَضَ اللَّهُ عَلَيَّ مِنَ الصِّيَامِ؟ فَقَالَ: «شَهْرَ رَمَضَانَ إِلَّا أَنْ تَطَّوَّعَ شَيْئًا»، فَقَالَ: أَخْبِرْنِي بِمَا فَرَضَ اللَّهُ عَلَيَّ مِنَ الزَّكَاةِ؟ فَقَالَ: فَأَخْبَرَهُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ شَرَائِعَ الإِسْلاَمِ، قَالَ: وَالَّذِي أَكْرَمَكَ، لاَ أَتَطَوَّعُ شَيْئًا، وَلاَ أَنْقُصُ مِمَّا فَرَضَ اللَّهُ عَلَيَّ شَيْئًا، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ «أَفْلَحَ إِنْ صَدَقَ، أَوْ دَخَلَ الجَنَّةَ إِنْ صَدَقَ»

“এলোমেলো চুলবিশিষ্ট একজন গ্রাম্য আরব রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এলেন। তারপর বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমাকে বলুন, আল্লাহ তা‘আলা আমার ওপর কত (ওয়াক্ত) সালাত ফরয করেছেন? তিনি বলেন, পাঁচ (ওয়াক্ত) সালাত; তবে তুমি যদি কিছু নফল আদায় কর তা স্বতন্ত্র কথা। এরপর তিনি বললেন, বলুন, আমার ওপর কত সাওম আল্লাহ তা‘আলা ফরয করেছেন? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, রমযান মাসের সাওম; তবে তুমি যদি কিছু নফল কর তবে তা স্বতন্ত্র কথা। এরপর তিনি বললেন, বলুন, আল্লাহ আমার ওপর কী পরিমাণ যাকাত ফরয করেছেন? বর্ণনাকারী বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে ইসলামের বিধান জানিয়ে দিলেন। এরপর তিনি বললেন, ঐ সত্তার কসম, যিনি আপনাকে সত্য দিয়ে সম্মানিত করেছেন, আল্লাহ আমার ওপর যা ফরয করেছেন, আমি এর মাঝে কিছু বাড়াব না এবং কমাবও না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সে সত্য বলে থাকলে সফলতা লাভ করল কিংবা বলেছেন, সে সত্য বলে থাকলে জান্নাত লাভ করল।”[1]

ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«صَامَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَاشُورَاءَ، وَأَمَرَ بِصِيَامِهِ فَلَمَّا فُرِضَ رَمَضَانُ تُرِكَ»، وَكَانَ عَبْدُ اللَّهِ لاَ يَصُومُهُ إِلَّا أَنْ يُوَافِقَ صَوْمَهُ»

“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘আশুরার দিন সাওম পালন করেছেন এবং এ সিয়ামের জন্য আদেশও করেছেন। পরে যখন রমযানের সাওম ফরয হলো তখন তা ছেড়ে দেওয়া হয়। ‘আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু এ সাওম পালন করতেন না, তবে মাসের যে দিনগুলোতে সাধারন সাওম পালন করতেন, তাঁর সাথে মিল হলে করতেন।”[2]

আনাস ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«بَيْنَمَا نَحْنُ جُلُوسٌ مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي المَسْجِدِ، دَخَلَ رَجُلٌ عَلَى جَمَلٍ، فَأَنَاخَهُ فِي المَسْجِدِ ثُمَّ عَقَلَهُ، ثُمَّ قَالَ لَهُمْ: أَيُّكُمْ مُحَمَّدٌ؟ وَالنَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مُتَّكِئٌ بَيْنَ ظَهْرَانَيْهِمْ، فَقُلْنَا: هَذَا الرَّجُلُ الأَبْيَضُ المُتَّكِئُ. فَقَالَ لَهُ الرَّجُلُ: يَا ابْنَ عَبْدِ المُطَّلِبِ فَقَالَ لَهُ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «قَدْ أَجَبْتُكَ». فَقَالَ الرَّجُلُ لِلنَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِنِّي سَائِلُكَ فَمُشَدِّدٌ عَلَيْكَ فِي المَسْأَلَةِ، فَلاَ تَجِدْ عَلَيَّ فِي نَفْسِكَ؟ فَقَالَ: «سَلْ عَمَّا بَدَا لَكَ» فَقَالَ: أَسْأَلُكَ بِرَبِّكَ وَرَبِّ مَنْ قَبْلَكَ، آللَّهُ أَرْسَلَكَ إِلَى النَّاسِ كُلِّهِمْ؟ فَقَالَ: «اللَّهُمَّ نَعَمْ». قَالَ: أَنْشُدُكَ بِاللَّهِ، آللَّهُ أَمَرَكَ أَنْ نُصَلِّيَ الصَّلَوَاتِ الخَمْسَ فِي اليَوْمِ وَاللَّيْلَةِ؟ قَالَ: «اللَّهُمَّ نَعَمْ». قَالَ: أَنْشُدُكَ بِاللَّهِ، آللَّهُ أَمَرَكَ أَنْ نَصُومَ هَذَا الشَّهْرَ مِنَ السَّنَةِ؟ قَالَ: «اللَّهُمَّ نَعَمْ». قَالَ: أَنْشُدُكَ بِاللَّهِ، آللَّهُ أَمَرَكَ أَنْ تَأْخُذَ هَذِهِ الصَّدَقَةَ مِنْ أَغْنِيَائِنَا فَتَقْسِمَهَا عَلَى فُقَرَائِنَا؟ فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «اللَّهُمَّ نَعَمْ». فَقَالَ الرَّجُلُ: آمَنْتُ بِمَا جِئْتَ بِهِ، وَأَنَا رَسُولُ مَنْ وَرَائِي مِنْ قَوْمِي، وَأَنَا ضِمَامُ بْنُ ثَعْلَبَةَ أَخُو بَنِي سَعْدِ بْنِ بَكْرٍ وَرَوَاهُ مُوسَى بْنُ إِسْمَاعِيلَ، وَعَلِيُّ بْنُ عَبْدِ الحَمِيدِ، عَنْ سُلَيْمَانَ بْنِ المُغِيرَةِ، عَنْ ثَابِتٍ، عَنْ أَنَسٍ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِهَذَا»

“একবার আমরা রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে মসজিদে বসা ছিলাম। তখন এক ব্যক্তি সওয়ার অবস্থায় ঢুকল। মসজিদে (প্রাঙ্গণে) সে তার উটটি বসিয়ে বেঁধে রাখল। এরপর সাহাবীদের লক্ষ্য করে বলল, ‘তোমাদের মধ্যে আল্লাহর রাসূল কে?’ রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন তার সামনেই হেলান দিয়ে বসা ছিলেন। আমরা বললাম, ‘এই হেলান দিয়ে বসা ফর্সা রঙের ব্যক্তিই হলেন তিনি।’ তারপর লোকটি তাঁকে লক্ষ্য করে বলল, ‘হে আব্দুল মুত্তালিবের পুত্র!’ রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, ‘আমি তোমার জওয়াব দিচ্ছি।’ লোকটি বলল, ‘আমি আপনাকে কিছু প্রশ্ন করব এবং সে প্রশ্ন করার ব্যাপারে কঠোর হব, এতে আপনি রাগ করবেন না।’ তিনি বললেন, ‘তোমার যেমন ইচ্ছা প্রশ্ন কর।’ সে বলল, ‘আমি আপনাকে আপনার রব ও আপনার পূর্ববর্তীদের রবের কসম দিয়ে জিজ্ঞাসা করছি, আল্লাহই কি আপনাকে সব মানুষের জন্য রাসূলরূপে পাঠিয়েছেন?’ তিনি বললেন, ‘আল্লাহ সাক্ষী, হ্যাঁ।’ সে বলল, ‘আমি আপনাকে আল্লাহর কসম দিয়ে বলছি, আল্লাহ্ই কি আপনাকে দিন ও রাতে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করতে নির্দেশ দিয়েছেন?’ তিনি বললেন, ‘আল্লাহ সাক্ষী, হ্যাঁ। সে বলল, ‘আমি আপনাকে আল্লাহর কসম দিয়ে বলছি, আল্লাহই কি আপনাকে বছরের এ মাসে (রমযান) সাওম পালনের নির্দেশ দিয়েছেন?’ তিনি বললেন, ‘আল্লাহ সাক্ষী, হ্যাঁ।’ সে বলল, ‘আমি আপনাকে আল্লাহর কসম দিয়ে বলছি, আল্লাহ্ই কি আপনাকে নির্দেশ দিয়েছেন, আমাদের ধনীদের থেকে সদকা (যাকাত) উসূল করে গরীবদের মধ্যে ভাগ করে দিতে?’ রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘আল্লাহ সাক্ষী, হ্যাঁ।’ এরপর লোকটি বলল, ‘আমি ঈমান আনলাম আপনি যা (যে শরী‘আত) এনেছেন তার ওপর। আর আমি আমার কওমের রেখে আসা লোকজনের পক্ষে প্রতিনিধি, আমার নাম যিমাম ইবন সা‘লাবা, বনী সা‘দ ইবন বকর গোত্রের একজন। মূসা ও আলী ইবন আব্দুল হামীদ রহ. আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর সূত্রেও এরূপ বর্ণনা করেছেন।”[3]

আনাস ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«نُهِينَا أَنْ نَسْأَلَ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنْ شَيْءٍ، فَكَانَ يُعْجِبُنَا أَنْ يَجِيءَ الرَّجُلُ مِنْ أَهْلِ الْبَادِيَةِ الْعَاقِلُ، فَيَسْأَلَهُ، وَنَحْنُ نَسْمَعُ، فَجَاءَ رَجُلٌ مِنْ أَهْلِ الْبَادِيَةِ، فَقَالَ: يَا مُحَمَّدُ، أَتَانَا رَسُولُكَ فَزَعَمَ لَنَا أَنَّكَ تَزْعُمُ أَنَّ اللهَ أَرْسَلَكَ، قَالَ: «صَدَقَ»، قَالَ: فَمَنْ خَلَقَ السَّمَاءَ؟ قَالَ: «اللهُ»، قَالَ: فَمَنْ خَلَقَ الْأَرْضَ؟ قَالَ: «اللهُ»، قَالَ: فَمَنْ نَصَبَ هَذِهِ الْجِبَالَ، وَجَعَلَ فِيهَا مَا جَعَلَ؟ قَالَ: «اللهُ»، قَالَ: فَبِالَّذِي خَلَقَ السَّمَاءَ، وَخَلَقَ الْأَرْضَ، وَنَصَبَ هَذِهِ الْجِبَالَ، آللَّهُ أَرْسَلَكَ؟ قَالَ: «نَعَمْ»، قَالَ: وَزَعَمَ رَسُولُكَ أَنَّ عَلَيْنَا خَمْسَ صَلَوَاتٍ فِي يَوْمِنَا، وَلَيْلَتِنَا، قَالَ: «صَدَقَ»، قَالَ: فَبِالَّذِي أَرْسَلَكَ، آللَّهُ أَمَرَكَ بِهَذَا؟ قَالَ: «نَعَمْ»، قَالَ: وَزَعَمَ رَسُولُكَ أَنَّ عَلَيْنَا زَكَاةً فِي أَمْوَالِنَا، قَالَ: «صَدَقَ»، قَالَ: فَبِالَّذِي أَرْسَلَكَ، آللَّهُ أَمَرَكَ بِهَذَا؟ قَالَ: «نَعَمْ»، قَالَ: وَزَعَمَ رَسُولُكَ أَنَّ عَلَيْنَا صَوْمَ شَهْرِ رَمَضَانَ فِي سَنَتِنَا، قَالَ: «صَدَقَ»، قَالَ: فَبِالَّذِي أَرْسَلَكَ، آللَّهُ أَمَرَكَ بِهَذَا؟ قَالَ: «نَعَمْ»، قَالَ: وَزَعَمَ رَسُولُكَ أَنَّ عَلَيْنَا حَجَّ الْبَيْتِ مَنِ اسْتَطَاعَ إِلَيْهِ سَبِيلًا، قَالَ: «صَدَقَ»، قَالَ: ثُمَّ وَلَّى، قَالَ: وَالَّذِي بَعَثَكَ بِالْحَقِّ، لَا أَزِيدُ عَلَيْهِنَّ، وَلَا أَنْقُصُ مِنْهُنَّ، فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَئِنْ صَدَقَ لَيَدْخُلَنَّ الْجَنَّةَ»

“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কোনো বিষয়ে প্রশ্ন করার ব্যাপারে আমাদের নিষেধ করা হয়েছিল। তাই আমরা চাইতাম যে, গ্রাম থেকে কোনো বুদ্ধিমান ব্যক্তি এসে তাঁকে প্রশ্ন করুক আর আমরা তা শুনি। তারপর একদিন গ্রাম থেকে এক ব্যক্তি এসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলল, হে মুহাম্মদ! আমাদের কাছে আপনার দূত এসে বলেছে, আপনি দাবি করেছেন যে, আল্লাহ আপনাকে রাসুল হিসাবে পাঠিয়েছেন। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সত্যই বলেছে। আগন্তুক বলল, আসমান কে সৃষ্টি করেছেন? তিনি বললেন, আল্লাহ। আগন্তুক বলল, জমিন কে সৃষ্টি করেছেন? রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আল্লাহ। আগন্তুক বলল, এসব পর্বতমালা কে স্থাপন করেছেন এবং এর মধ্যে যা কিছু আছে তা কে সৃষ্টি করেছেন? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আল্লাহ। আগন্তুক বলল, কসম সেই সত্তার! যিনি আসমান ও জমিন সৃষ্টি করেছেন এবং এসব পর্বতমালা স্থাপন করেছেন। আল্লাহই আপনাকে রাসুলরূপে পাঠিয়েছেন? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,হ্যাঁ। আগন্তুক বলল, আপনার দূত বলে যে, আমাদের ওপর দিনে ও রাতে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফরয। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সত্যই বলেছে। আগন্তুক বলল, যিনি আপনাকে রাসুলরূপে পাঠিয়েছেন তাঁর কসম, আল্লাহ-ই কি আপনাকে এর নির্দেশ দিয়েছেন? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হ্যাঁ। আগন্তুক বলল, আপনার দূত বলে যে, আমাদের ওপর আমাদের মালের যাকাত দেওয়া ফরয। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,ঠিকই বলেছো আগন্তুক বলল, যিনি আপনাকে রাসুলরূপে পাঠিয়েছেন, তাঁর কসম, আল্লাহ-ই কি আপনাকে এর নির্দেশ দিয়েছেন? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,হ্যাঁ। আগন্তুক বলল, আপনার দূত বলে যে, প্রতি বছর রমযান মাসের সাওম পালন করা আমাদের ওপর ফরয। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সত্যই বলেছে। আগন্তুক বলল, যিনি আপনাকে রাসুল হিসেবে পাঠিয়েছেন, তার কসম, আল্লাহ-ই কি আপনাকে এর নির্দেশ দিয়েছেন? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হ্যাঁ। আগন্তুক বলল, আপনার দূত বলে যে, আমাদের মধ্যে যে বায়তুল্লায় যেতে সক্ষম তার ওপর হজ ফরয। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,সত্যি বলেছে। বর্ণনাকারী বলেন যে, তারপর আগন্তুক চলে যেতে যেতে বলল, যিনি আপনাকে সত্যসহ প্রেরণ করেছেন তার কসম, আমি এর অতিরিক্তও করব না এবং এর কমও করব না। এ কথা শুনে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, লোকটি সত্য বলে থাকলে অবশ্যই সে জান্নাতে যাবে।”[4]

ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«صَامَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَاشُورَاءَ، وَأَمَرَ بِصِيَامِهِ فَلَمَّا فُرِضَ رَمَضَانُ تُرِكَ»، وَكَانَ عَبْدُ اللَّهِ لاَ يَصُومُهُ إِلَّا أَنْ يُوَافِقَ صَوْمَهُ»

“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘আশুরার দিন সাওম পালন করেছেন এবং এ সিয়ামের জন্য আদেশও করেছেন। পরে যখন রমযানের সাওম ফরয হলো তখন তা ছেড়ে দেওয়া হয়। ‘আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু এ সাওম পালন করতেন না, তবে মাসের যে দিনগুলোতে সাধারণ সাওম পালন করতেন, তাঁর সাথে মিল হলে করতেন।”[5]

আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত,

عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا،: أَنَّ قُرَيْشًا كَانَتْ تَصُومُ يَوْمَ عَاشُورَاءَ فِي الجَاهِلِيَّةِ، ثُمَّ أَمَرَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِصِيَامِهِ حَتَّى فُرِضَ رَمَضَانُ، وَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ شَاءَ فَلْيَصُمْهُ وَمَنْ شَاءَ أَفْطَرَ»

“জাহেলী যুগে কুরাইশগণ ‘আশুরার দিন সাওম পালন করত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও পরে এ সাওম পালনের নির্দেশ দেন। অবশেষে রমযানের সাওম ফরয হলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যার ইচ্ছা ‘আশুরার সাওম পালন করবে এবং যার ইচ্ছা সে সাওম পালন করবে না।”[6]

ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ " بُنِيَ الإِسْلاَمُ عَلَى خَمْسٍ: شَهَادَةِ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ، وَإِقَامِ الصَّلاَةِ، وَإِيتَاءِ الزَّكَاةِ، وَالحَجِّ، وَصَوْمِ رَمَضَانَ»

“রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ইসলামের ভিত্তি পাঁচটি। আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই এবং নিশ্চয় মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল -এ কথার সাক্ষ্য দান, সালাত কায়েম করা, যাকাত দেওয়া, হজ করা এবং রমযানের সাওম পালন করা।”[7]

আবু জামরা রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«كُنْتُ أَقْعُدُ مَعَ ابْنِ عَبَّاسٍ يُجْلِسُنِي عَلَى سَرِيرِهِ فَقَالَ: أَقِمْ عِنْدِي حَتَّى أَجْعَلَ لَكَ سَهْمًا مِنْ مَالِي فَأَقَمْتُ مَعَهُ شَهْرَيْنِ، ثُمَّ قَالَ: إِنَّ وَفْدَ عَبْدِ القَيْسِ لَمَّا أَتَوُا النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «مَنِ القَوْمُ؟ - أَوْ مَنِ الوَفْدُ؟ -» قَالُوا: رَبِيعَةُ. قَالَ: «مَرْحَبًا بِالقَوْمِ، أَوْ بِالوَفْدِ، غَيْرَ خَزَايَا وَلاَ نَدَامَى»، فَقَالُوا: يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّا لاَ نَسْتَطِيعُ أَنْ نَأْتِيكَ إِلَّا فِي الشَّهْرِ الحَرَامِ، وَبَيْنَنَا وَبَيْنَكَ هَذَا الحَيُّ مِنْ كُفَّارِ مُضَرَ، فَمُرْنَا بِأَمْرٍ فَصْلٍ، نُخْبِرْ بِهِ مَنْ وَرَاءَنَا، وَنَدْخُلْ بِهِ الجَنَّةَ، وَسَأَلُوهُ عَنِ الأَشْرِبَةِ: فَأَمَرَهُمْ بِأَرْبَعٍ، وَنَهَاهُمْ عَنْ أَرْبَعٍ، أَمَرَهُمْ: بِالإِيمَانِ بِاللَّهِ وَحْدَهُ، قَالَ: «أَتَدْرُونَ مَا الإِيمَانُ بِاللَّهِ وَحْدَهُ» قَالُوا: اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَعْلَمُ، قَالَ: «شَهَادَةُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ، وَإِقَامُ الصَّلاَةِ، وَإِيتَاءُ الزَّكَاةِ، وَصِيَامُ رَمَضَانَ، وَأَنْ تُعْطُوا مِنَ المَغْنَمِ الخُمُسَ» وَنَهَاهُمْ عَنْ أَرْبَعٍ: عَنِ الحَنْتَمِ وَالدُّبَّاءِ وَالنَّقِيرِ وَالمُزَفَّتِ "، وَرُبَّمَا قَالَ: «المُقَيَّرِ» وَقَالَ: «احْفَظُوهُنَّ وَأَخْبِرُوا بِهِنَّ مَنْ وَرَاءَكُمْ»

“আমি ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমার সঙ্গে বসতাম। তিনি আমাকে তাঁর আসনে বসাতেন। একবার তিনি বললেন, তুমি আমার কাছে থেকে যাও, আমি তোমাকে আমার সম্পদ থেকে কিছু অংশ দেব। আমি দু’মাস তাঁর সঙ্গে অবস্থান করলাম। তারপর একদিন তিনি বললেন, আব্দুল কায়েসের একটি প্রতিনিধি দল রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে আসলে তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, তোমরা কোন কওমের? অথবা কোন প্রতিনিধি দলের? তারা বলল, রাবী‘আ গোত্রের।’ তিনি বললেন, মারহাবা সে গোত্র বা সে প্রতিনিধি দলের প্রতি, যারা অপদস্থ ও লজ্জিত না হয়েই এসেছে। তারা বলল, ইয়া রাসূলুল্লহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! নিষিদ্ধ মাসসমূহ ছাড়া অন্য কোনো সময় আমরা আপনার কাছে আসতে পারি না। (কারণ) আমাদের এবং আপনার মাঝখানে মুদার গোত্রীয় কাফিরদের বসবাস। তাই আমাদের কিছু স্পষ্ট হুকুম দিন, যাতে আমরা যাদের পিছনে রেখে এসেছি তাদের জানিয়ে দিতে পারি এবং যাতে আমরা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারি। তারা পানীয় সম্পর্কেও জিজ্ঞাসা করল। তখন তিনি তাদের চারটি জিনিসের নির্দেশ এবং চারটি জিনিস থেকে নিষেধ করলেন। তাদের এক আল্লাহর প্রতি ঈমান আনার আদেশ দিয়ে বললেন, ‘এক আল্লাহ্‌ প্রতি ঈমান আনা কিভাবে হয় তা কি তোমরা জান?’ তাঁরা বলল, ‘আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই ভাল জানেন।’ তিনি বললেন, ‘তা হলো এ সাক্ষ্য দেওয়া যে, আল্লাহ্ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই এবং মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল এবং সালাত কায়েম করা, যাকাত দেওয়া, রমযানের সাওম পালন করা আর তোমরা গণীমতের মাল থেকে এক-পঞ্চমাংশ প্রদান করবে। তিনি তাদেরকে চারটি জিনিস থেকে নিষেধ করলেন। তা হলো সবুজ কলসী, শুকনো লাউয়ের খোল, খেজুর গাছের গুঁড়ি থেকে তৈরিকৃত পাত্র এবং আলকাতরার পালিশকৃত পাত্র। বর্ণনাকারী বলেন, বর্ণনাকারী (المُزَفَّتِ এর স্থলে) কখনও المُقَيَّرِ উল্লেখ করেছেন (উভয় শব্দের অর্থ একই)। তিনি আরো বলেন, তোমরা এগুলো ভালো করে আয়ত্ত করে নাও এবং অন্যদেরও এগুলি জানিয়ে দিও।”[8]

আবু সা‘ঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বর্ণনা করেন যে,

«أَنَّ أُنَاسًا مِنْ عَبْدِ الْقَيْسِ قَدِمُوا عَلَى رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالُوا: يَا نَبِيَّ اللهِ، إِنَّا حَيٌّ مِنْ رَبِيعَةَ، وَبَيْنَنَا وَبَيْنَكَ كُفَّارُ مُضَرَ، وَلَا نَقْدِرُ عَلَيْكَ إِلَّا فِي أَشْهُرِ الْحُرُمِ، فَمُرْنَا بِأَمْرٍ نَأْمُرُ بِهِ مَنْ وَرَاءَنَا، وَنَدْخُلُ بِهِ الْجَنَّةَ إِذَا نَحْنُ أَخَذْنَا بِهِ، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " آمُرُكُمْ بِأَرْبَعٍ، وَأَنْهَاكُمْ عَنْ أَرْبَعٍ: اعْبُدُوا اللهَ وَلَا تُشْرِكُوا بِهِ شَيْئًا، وَأَقِيمُوا الصَّلَاةَ، وَآتُوا الزَّكَاةَ، وَصُومُوا رَمَضَانَ»

“আব্দুল কায়স গোত্রের কয়েকজন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে উপস্থিত হয়ে আরয করল, হে আল্লাহর নবী! আমরা রাবী’আ গোত্রের লোক। আপনার ও আমাদের মধ্যবতী যাতায়াত পথে মুদার গোত্রের কাফিররা অবস্থান করায় ‘হারাম মাস’ ছাড়া আমরা আপনার কাছে আসতে পারি না। অতএব, আপনি আমাদের এমন কাজের আদেশ দিন, আমাদের যারা আসে নি তাদের জানাতে পারি এবং যা পালন করে আমরা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমাদের চারটি বিষয় পালনের এবং চারটি বিষয় থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিচ্ছি। পালনীয় চারটি বিষয় হলো, তোমরা আল্লাহর ইবাদত করবে, তাঁর সাথে অন্য কাউকে শরীক করবে না, সালাত কায়েম করবে, যাকাত দিবে, রমযানের সাওম পালন করবে এবং গনীমতের এক-পঞ্চমাংশ প্রদান করবে।”[9]

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بَارِزًا يَوْمًا لِلنَّاسِ، فَأَتَاهُ جِبْرِيلُ فَقَالَ: مَا الإِيمَانُ؟ قَالَ: «الإِيمَانُ أَنْ تُؤْمِنَ بِاللَّهِ وَمَلاَئِكَتِهِ، وَكُتُبِهِ، وَبِلِقَائِهِ، وَرُسُلِهِ وَتُؤْمِنَ بِالْبَعْثِ». قَالَ: مَا الإِسْلاَمُ؟ قَالَ: " الإِسْلاَمُ: أَنْ تَعْبُدَ اللَّهَ، وَلاَ تُشْرِكَ بِهِ شَيْئًا، وَتُقِيمَ الصَّلاَةَ، وَتُؤَدِّيَ الزَّكَاةَ المَفْرُوضَةَ، وَتَصُومَ رَمَضَانَ ". قَالَ: مَا الإِحْسَانُ؟ قَالَ: «أَنْ تَعْبُدَ اللَّهَ كَأَنَّكَ تَرَاهُ، فَإِنْ لَمْ تَكُنْ تَرَاهُ فَإِنَّهُ يَرَاكَ»، قَالَ: مَتَى السَّاعَةُ؟ قَالَ: " مَا المَسْئُولُ عَنْهَا بِأَعْلَمَ مِنَ السَّائِلِ، وَسَأُخْبِرُكَ عَنْ أَشْرَاطِهَا: إِذَا وَلَدَتِ الأَمَةُ رَبَّهَا، وَإِذَا تَطَاوَلَ رُعَاةُ الإِبِلِ البُهْمُ فِي البُنْيَانِ، فِي خَمْسٍ لاَ يَعْلَمُهُنَّ إِلَّا اللَّهُ " ثُمَّ تَلاَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ﴿ إِنَّ ٱللَّهَ عِندَهُۥ عِلۡمُ ٱلسَّاعَةِ﴾ [لقمان: ٣٤]، ثُمَّ أَدْبَرَ فَقَالَ: «رُدُّوهُ» فَلَمْ يَرَوْا شَيْئًا، فَقَالَ: «هَذَا جِبْرِيلُ جَاءَ يُعَلِّمُ النَّاسَ دِينَهُمْ» قَالَ أَبُو عَبْدِ اللَّهِ: جَعَلَ ذَلِكَ كُلَّهُ مِنَ الإِيمَانِ»

“একদিন রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জনসমক্ষে বসা ছিলেন, এমন সময় তাঁর কাছে এক ব্যক্তি এসে জিজ্ঞাসা করলেন ‘ঈমান কী?’ তিনি বললেন, ‘ঈমান হলো, আপনি বিশ্বাস রাখবেন আল্লাহর প্রতি, তাঁর ফিরিশতাগণের প্রতি, (কিয়ামতের দিন) তাঁর সঙ্গে সাক্ষাতের প্রতি এবং তাঁর রাসূলগণের প্রতি। আপনি আরো বিশ্বাস রাখবেন পুনরুত্থানের প্রতি।’ তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, ‘ইসলাম কী?’ তিনি বললেন, ‘ইসলাম হলো, আপনি আল্লাহর ইবাদত করবেন এবং তাঁর সঙ্গে শরীক করবেন না, সালাত কায়েম করবেন, ফরয যাকাত আদায় করবেন এবং রমযানের সাওম পালন করবেন।’ ঐ ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করলেন, ‘ইহসান কী?’ তিনি বললেন, ‘আপনি এমন ভাবে আল্লাহর ইবাদত করবেন যেন আপনি তাঁকে দেখছেন, আর যদি আপনি তাঁকে দেখতে না পান তবে (বিশ্বাস রাখবেন যে) তিনি আপনাকে দেখছেন।’ ঐ ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করলেন, ‘কিয়ামত কবে?’ তিনি বললেন, ‘এ ব্যাপারে যাকে জিজ্ঞাসা করা হচ্ছে, তিনি জিজ্ঞাসাকারী অপেক্ষা বেশি জানেন না। তবে আমি আপনাকে কিয়ামতের আলামতসমূহ বলে দিচ্ছি: বাঁদী যখন তার প্রভুকে প্রসব করবে এবং উটের নগণ্য রাখালেরা যখন বড় বড় অট্টালিকা নির্মাণে প্রতিযোগিতা করবে। (কিয়ামতের বিষয়) সেই পাঁচটি জিনিসের অন্তর্ভূক্ত, যা আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না।’ এরপর রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই আয়াতটি শেষ পর্যন্ত তিলাওয়াত করলেন,

﴿إِنَّ ٱللَّهَ عِندَهُۥ عِلۡمُ ٱلسَّاعَةِ﴾ [لقمان: ٣٤]

“কিয়ামতের জ্ঞান কেবল আল্লাহই নিকট..।” [সূরা লুকমান, আয়াত: ৩৪], এরপর ঐ ব্যক্তি চলে গেলে তিনি বললেন, ‘তোমরা তাকে ফিরিয়ে আন।’ তারা কিছুই দেখতে পেল না। তখন তিনি বললেন, ‘ইনি জিবরীল আলাইহিস সালাম। লোকদের দীন শেখাতে এসেছিলেন।”[10]

[1] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৮৯১।

[2] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৮৯২।

[3] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬৩, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৩।

[4] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১২।

[5] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৮৯২, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১২৬।

[6] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৮৯৩।

[7] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৮, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৬।

[8] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫৩, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৭।

[9] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৮।

[10] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫০, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৯।

 আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«الصِّيَامُ جُنَّةٌ فَلاَ يَرْفُثْ وَلاَ يَجْهَلْ، وَإِنِ امْرُؤٌ قَاتَلَهُ أَوْ شَاتَمَهُ فَلْيَقُلْ: إِنِّي صَائِمٌ مَرَّتَيْنِ وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لَخُلُوفُ فَمِ الصَّائِمِ أَطْيَبُ عِنْدَ اللَّهِ تَعَالَى مِنْ رِيحِ المِسْكِ» «يَتْرُكُ طَعَامَهُ وَشَرَابَهُ وَشَهْوَتَهُ مِنْ أَجْلِي الصِّيَامُ لِي، وَأَنَا أَجْزِي بِهِ وَالحَسَنَةُ بِعَشْرِ أَمْثَالِهَا»

“সাওম ঢালস্বরূপ। সুতরাং অশ্লীলতা করবে না এবং মুর্খের মতো কাজ করবে না। যদি কেউ তাঁর সাথে ঝগড়া করতে চায়, তাঁকে গালি দেয়, তবে সে যেন দুই বার বলে, আমি সাওম পালন করছি। ঐ সত্তার শপথ, যার হাতে আমার প্রাণ, অবশ্যই সাওম পালনকারীর মুখের গন্ধ আল্লাহর নিকট মিসকের গন্ধের চেয়েও উৎকৃষ্ট। সে আমার জন্য আহার, পান ও কামাচার পরিত্যাগ করে। সাওম আমারই জন্য। তাই এর পুরষ্কার আমি নিজেই দান করব। আর প্রত্যেক নেক কাজের বিনিময় দশ গুণ”।[1]

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«إِذَا جَاءَ رَمَضَانُ فُتِّحَتْ أَبْوَابُ الْجَنَّةِ، وَغُلِّقَتْ أَبْوَابُ النَّارِ، وَصُفِّدَتِ الشَّيَاطِينُ»

“যখন রমযান আসে তখন জান্নাতের দরজাসমূহ উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়, জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং শয়তানগুলোকে শিকলে বন্দী করা হয়”।[2]

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«إِذَا كَانَ رَمَضَانُ فُتِّحَتْ أَبْوَابُ الرَّحْمَةِ، وَغُلِّقَتْ أَبْوَابُ جَهَنَّمَ، وَسُلْسِلَتِ الشَّيَاطِينُ»

“রমযান মাস আসলে জান্নাতের দরজাসমূহ উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়, জাহান্নমের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং শয়তানগুলোকে শিকলে বন্দী করা হয়”।[3]

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে আরও বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«إِذَا كَانَ أَوَّلُ لَيْلَةٍ مِنْ شَهْرِ رَمَضَانَ صُفِّدَتِ الشَّيَاطِينُ، وَمَرَدَةُ الجِنِّ، وَغُلِّقَتْ أَبْوَابُ النَّارِ، فَلَمْ يُفْتَحْ مِنْهَا بَابٌ، وَفُتِّحَتْ أَبْوَابُ الجَنَّةِ، فَلَمْ يُغْلَقْ مِنْهَا بَابٌ، وَيُنَادِي مُنَادٍ: يَا بَاغِيَ الخَيْرِ أَقْبِلْ، وَيَا بَاغِيَ الشَّرِّ أَقْصِرْ، وَلِلَّهِ عُتَقَاءُ مِنَ النَّارِ، وَذَلكَ كُلُّ لَيْلَةٍ».

“শয়তান ও দুষ্ট জিন্নদেরকে রমযান মাসের প্রথম রাতেই শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়, জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করা হয় এবং এর একটি দরজাও তখন আর খোলা হয় না, খুলে দেওয়া হয় জান্নাতের দরজাগুলো এবং এর একটি দরজাও তখন আর বন্ধ করা হয় না। (এ মাসে) একজন ঘোষণাকারী ঘোষণা দিতে থাকেন, হে কল্যাণ অন্বেষণকারী! অগ্রসর হও। হে পাপাসক্ত! বিরত হও। আর বহু লোককে আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে এ মাসে জাহান্নাম থেকে মুক্ত করে দেওয়া হয় এবং প্রত্যেক রাতেই এরূপ থেকে থাকে।”[4]

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«أَتَاكُمْ رَمَضَانُ شَهْرٌ مُبَارَكٌ فَرَضَ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ عَلَيْكُمْ صِيَامَهُ، تُفْتَحُ فِيهِ أَبْوَابُ السَّمَاءِ، وَتُغْلَقُ فِيهِ أَبْوَابُ الْجَحِيمِ، وَتُغَلُّ فِيهِ مَرَدَةُ الشَّيَاطِينِ، لِلَّهِ فِيهِ لَيْلَةٌ خَيْرٌ مِنْ أَلْفِ شَهْرٍ، مَنْ حُرِمَ خَيْرَهَا فَقَدْ حُرِمَ»

“তোমাদের নিকট রমযান উপস্থিত হয়েছে, যা একটি বরকতময় মাস। তোমাদের ওপরে আল্লাহ তা‘আলা অত্র মাসের সাওম ফরয করেছেন। এ মাস আগমনের কারণে জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেওয়া হয়, জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেওয়া হয়, আর আল্লাহর অবাধ্য শয়তানদের গলায় লোহার বেড়ী পরানো হয়। এ মাসে একটি রাত রয়েছে যা এক হাজার মাস অপেক্ষাও উত্তম। যে ব্যক্তি সে রাতের কল্যাণ থেকে বঞ্চিত রয়ে গেল সে প্রকৃত বঞ্চিত রয়ে গেল।”[5]

ওয়াসিলা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«أُنْزِلَتْ صُحُفُ إِبْرَاهِيمَ أَوَّلَ لَيْلَةٍ مِنْ شَهْرِ رَمَضَانَ، وَأُنْزِلَتِ التَّوْرَاةُ لِسِتٍّ مَضَيْنَ مِنْ رَمَضَانَ وَأُنْزِلَ الْإِنْجِيلُ لِثَلَاثَ عَشْرَةَ مَضَتْ مِنْ رَمَضَانَ، وَأُنْزِلَ الزَّبُورُ لِثَمَانَ عَشْرَةَ خَلَتْ مِنْ رَمَضَانَ، وَأُنْزِلَ الْقُرْآنُ لِأَرْبَعٍ وَعِشْرِينَ خَلَتْ مِنْ رَمَضَانَ»

“রমযানের প্রথম রাত্রিতে ইবরাহীম আলাইহিস সালামের ওপর সহীফা নাযিল হয়, রমযানের ছয় দিন অতিবাহিত হলে (মূসা আলাইহিস সালামের ওপর) তাওরাত নাযিল হয়, তের রমযান শেষে (ঈসা আলাইহিস সালামের ওপর) ইঞ্জিল নাযিল হয়, আঠারো রমযান শেষ হলে (দাউদ আলাইহিস সালামের ওপর) যাবুর নাযিল হয় এবং চব্বিশ রমযান শেষে (মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর) কুরআন নাযিল হয়।”[6]

কা‘ব ইবন উজরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার বললেন,

«احْضَرُوا الْمِنْبَرَ فَحَضَرْنَا فَلَمَّا ارْتَقَى دَرَجَةً قَالَ: آمِينَ ، فَلَمَّا ارْتَقَى الدَّرَجَةَ الثَّانِيَةَ قَالَ: «آمِينَ» فَلَمَّا ارْتَقَى الدَّرَجَةَ الثَّالِثَةَ قَالَ: آمِينَ، فَلَمَّا نَزَلَ قُلْنَا: يَا رَسُولَ اللَّهِ لَقَدْ سَمِعْنَا مِنْكَ الْيَوْمَ شَيْئًا مَا كُنَّا نَسْمَعُهُ قَالَ: إِنَّ جِبْرِيلَ عَلَيْهِ الصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ عَرَضَ لِي فَقَالَ: بُعْدًا لِمَنْ أَدْرَكَ رَمَضَانَ فَلَمْ يَغْفَرْ لَهُ قُلْتُ: آمِينَ، فَلَمَّا رَقِيتُ الثَّانِيَةَ قَالَ: بُعْدًا لِمَنْ ذُكِرْتُ عِنْدَهُ فَلَمْ يُصَلِّ عَلَيْكَ قُلْتُ: آمِينَ، فَلَمَّا رَقِيتُ الثَّالِثَةَ قَالَ: بُعْدًا لِمَنْ أَدْرَكَ أَبَوَاهُ الْكِبَرَ عِنْدَهُ أَوْ أَحَدُهُمَا فَلَمْ يُدْخِلَاهُ الْجَنَّةَ قُلْتُ: آمِينَ»

“তোমরা মিম্বার নিয়ে আসো, ফলে আমরা মিম্বার নিয়ে আসলাম। যখন তিনি মিম্বারের প্রথম সিঁড়িতে উঠলেন, বললেন, আমীন। দ্বিতীয় সিঁড়িতে উঠে আবার বললেন, আমীন। অনুরূ পভাবে তৃতীয় সিঁড়িতে উঠে বললেন, আমীন। তিনি মিম্বার থেকে নেমে আসলে আমরা জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসূল! আপনার কাছে আমরা আজ যা শুনলাম ইতোপূর্বে কখনও এরূপ শুনি নি। তিনি বললেন, জিবরীল আলাইহিস সালাম আমার কাছে আসলেন, তিনি বললেন, সে ব্যক্তি ধ্বংস হোক যে রমযান পেলো অথচ নিজের গুনাহ মাফ করাতে পারল না, আমি বললাম, আমীন। আমি যখন দ্বিতীয় সিঁড়িতে উঠলাম জিবরীল আলাইহিস সালাম বললেন, সে ব্যক্তি ধ্বংস হোক যার কাছে আপনার নাম উল্লেখ করা হলো অথচ সে আপনার ওপর দুরুদ ও সালাম পেশ করল না। আমি বললাম, আমীন। আবার আমি যখন তৃতীয় সিঁড়িতে উঠলাম তখন জিবরীল আলাইহিস সালাম বললেন, সে ব্যক্তি ধ্বংস হোক যে বৃদ্ধ অবস্থায় তার পিতামাতা দু’জনকে বা একজনকে পেল অথচ তাদের সেবা যত্ন করে জান্নাতে যেতে পারল না। আমি বললাম, আমীন।”[7]

মু‘আয ইবন জাবাল রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«كُنْتُ مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي سَفَرٍ، فَأَصْبَحْتُ يَوْمًا قَرِيبًا مِنْهُ وَنَحْنُ نَسِيرُ، فَقُلْتُ: يَا رَسُولَ اللهِ أَخْبِرْنِي بِعَمَلٍ يُدْخِلُنِي الجَنَّةَ وَيُبَاعِدُنِي عَنِ النَّارِ، قَالَ: لَقَدْ سَأَلْتَنِي عَنْ عَظِيمٍ، وَإِنَّهُ لَيَسِيرٌ عَلَى مَنْ يَسَّرَهُ اللَّهُ عَلَيْهِ، تَعْبُدُ اللَّهَ وَلاَ تُشْرِكْ بِهِ شَيْئًا، وَتُقِيمُ الصَّلاَةَ، وَتُؤْتِي الزَّكَاةَ، وَتَصُومُ رَمَضَانَ، وَتَحُجُّ البَيْتَ, ثُمَّ قَالَ: أَلاَ أَدُلُّكَ عَلَى أَبْوَابِ الخَيْرِ: الصَّوْمُ جُنَّةٌ، وَالصَّدَقَةُ تُطْفِئُ الخَطِيئَةَ كَمَا يُطْفِئُ الْمَاءُ النَّارَ، وَصَلاَةُ الرَّجُلِ مِنْ جَوْفِ اللَّيْلِ قَالَ: ثُمَّ تَلاَ ﴿ تَتَجَافَىٰ جُنُوبُهُمۡ عَنِ ٱلۡمَضَاجِعِ﴾ [السجدة: ١٦] حَتَّى بَلَغَ يَعْمَلُونَ , ثُمَّ قَالَ: أَلاَ أُخْبِرُكَ بِرَأْسِ الأَمْرِ كُلِّهِ وَعَمُودِهِ، وَذِرْوَةِ سَنَامِهِ؟ قُلْتُ: بَلَى يَا رَسُولَ اللهِ، قَالَ: رَأْسُ الأَمْرِ الإِسْلاَمُ، وَعَمُودُهُ الصَّلاَةُ، وَذِرْوَةُ سَنَامِهِ الجِهَادُ, ثُمَّ قَالَ: أَلاَ أُخْبِرُكَ بِمَلاَكِ ذَلِكَ كُلِّهِ؟ قُلْتُ: بَلَى يَا نَبِيَّ اللهِ، فَأَخَذَ بِلِسَانِهِ قَالَ: كُفَّ عَلَيْكَ هَذَا، فَقُلْتُ: يَا نَبِيَّ اللهِ، وَإِنَّا لَمُؤَاخَذُونَ بِمَا نَتَكَلَّمُ بِهِ؟ فَقَالَ: ثَكِلَتْكَ أُمُّكَ يَا مُعَاذُ، وَهَلْ يَكُبُّ النَّاسَ فِي النَّارِ عَلَى وُجُوهِهِمْ أَوْ عَلَى مَنَاخِرِهِمْ إِلاَّ حَصَائِدُ أَلْسِنَتِهِمْ».

“আমি একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে এক সফরে ছিলাম। একদিন চলার সময় আমি তাঁর নিকটবর্তী হয়ে গেলাম। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে এমন একটি ‘আমল সম্পর্কে অবহিত করুন যা আমাকে জান্নাতে দাখিল করবে এবং জাহান্নাম থেকে দূরে সরিয়ে দিবে।তিনি বললেন, তুমি তো বিরাট একটা বিষয়ে আমাকে জিজ্ঞাসা করলে। তবে আল্লাহ তা‘আলা যার জন্য তা সহজ করে দেন তার জন্য বিষয়টি অবশ্য সহজ। আল্লাহর ইবাদত করবে, তার সঙ্গে কোনো কিছু শরীক করবে না। সালাত কায়েম করবে, যাকাত প্রদান করবে, রমযানের সাওম পালন করবে, বায়তুল্লাহর হজ করবে। এরপর তিনি বললেন, সব কল্যাণের দ্বার (দরজা) সম্পর্কে কি আমি তোমাকে দিক-নির্দেশনা দিব? সাওম হলো ঢালস্বরূপ, পানি যেমন আগুন নিভিয়ে দেয় তেমনি সদকাও গুনাহসমূহকে নিশ্চি‎হ্ন করে দেয় আর হলো মধ্য রাতের সালাত। এরপর তিনি তিলাওয়াত করলেন,

﴿ تَتَجَافَىٰ جُنُوبُهُمۡ عَنِ ٱلۡمَضَاجِعِ﴾ [السجدة: ١٦]

“তারা (মুমিনরা গভীর রাতে) শয্যা ত্যাগ করে।” [সূরা আস-সাজদা, আয়াত: ১৬]তারপর বললেন, তোমাকে এই সব কিছুর মাথা ও বুনিয়াদ এবং সর্বোচ্চ শীর্ষদেশ স্বরূপ আমল সম্পর্কে অবহিত করব কি? এরপর বললেন, অবশ্যই, ইয়া রাসূলাল্লাহ! তিনি বললেন, সব কিছুর মাথা হলো ইসলাম, বুনিয়াদ হলো সালাত আর সর্বোচ্চ শীর্ষ হলো জিহাদ। এরপর বললেন, এ সব কিছুর মূল পুঁজি সম্পর্কে তোমাকে অবহিত করব কি? আমি বললাম, অবশ্যই, ইয়া রাসূলাল্লাহ! তিনি তাঁর জিহ্বা ধরে বললেন, এটিকে সংযত রাখ। আমি বললাম, হে আল্লাহর নবী, আমরা যে কথাবার্তা বলি সে কারণেও কি আমাদের পাকড়াও করা হবে? তিনি বললেন, তোমাদের মা তোমাকে হারিয়ে ফেলুক, হে মু‘আয! লোকদের অধঃমুখে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হওয়ার জন্য এ যবানের কামাই ছাড়া আর কি কিছু আছে নাকি?”[8]

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«مَنْ آمَنَ بِاللَّهِ وَبِرَسُولِهِ، وَأَقَامَ الصَّلاَةَ، وَصَامَ رَمَضَانَ كَانَ حَقًّا عَلَى اللَّهِ أَنْ يُدْخِلَهُ الجَنَّةَ، جَاهَدَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ أَوْ جَلَسَ فِي أَرْضِهِ الَّتِي وُلِدَ فِيهَا، فَقَالُوا: يَا رَسُولَ اللَّهِ، أَفَلاَ نُبَشِّرُ النَّاسَ؟ قَالَ: إِنَّ فِي الجَنَّةِ مِائَةَ دَرَجَةٍ، أَعَدَّهَا اللَّهُ لِلْمُجَاهِدِينَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ، مَا بَيْنَ الدَّرَجَتَيْنِ كَمَا بَيْنَ السَّمَاءِ وَالأَرْضِ، فَإِذَا سَأَلْتُمُ اللَّهَ، فَاسْأَلُوهُ الفِرْدَوْسَ، فَإِنَّهُ أَوْسَطُ الجَنَّةِ وَأَعْلَى الجَنَّةِ - أُرَاهُ - فَوْقَهُ عَرْشُ الرَّحْمَنِ، وَمِنْهُ تَفَجَّرُ أَنْهَارُ الجَنَّةِ» قَالَ مُحَمَّدُ بْنُ فُلَيْحٍ، عَنْ أَبِيهِ: وَفَوْقَهُ عَرْشُ الرَّحْمَنِ»

“আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি যে ঈমান আনল, সালাত আদায় করল ও রমযানের সাওম পালন করল সে আল্লাহর পথে জিহাদ করুক কিংবা স্বীয় জন্মভূমিতে বসে থাকুক, তাকে জান্নাতে প্রবেশ করিয়ে দেওয়া আল্লাহর দায়িত্ব হয়ে যায়। সাহাবীগণ বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমরা কি লোকদের এ সুসংবাদ পৌঁছে দিব না? তিনি বলেন, আল্লাহর পথে মুজাহিদদের জন্য আল্লাহ তা‘আলা জান্নাতে একশটি মর্যাদার স্তর প্রস্তুত রেখেছেন। দু’টি স্তরের ব্যবধান আসমান ও জমিনের দুরত্বের ন্যায়। তোমরা আল্লাহর কাছে চাইলে ফেরদাউস চাইবে। কেননা এটাই হলো সবচেয়ে উত্তম ও সর্বোচ্চ জান্নাত। আমার মনে হয়, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ-ও বলেছেন, এর উপরে রয়েছে ‘আরশে রহমান। আর সেখান থেকে জান্নাতের নহরসমূহ প্রবাহিত হচ্ছে। মুহাম্মদ ইবন ফুলাইহ্ রহ. তাঁর পিতার সূত্রে (নিঃসন্দেহে) বলেন, এর উপরে রয়েছে ‘আরশে রহমান।”[9]

ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন,

«قَدِمَ وَفْدُ عَبْدِ القَيْسِ فَقَالُوا: يَا رَسُولَ اللَّهِ، إِنَّا هَذَا الحَيَّ مِنْ رَبِيعَةَ، بَيْنَنَا وَبَيْنَكَ كُفَّارُ مُضَرَ، فَلَسْنَا نَصِلُ إِلَيْكَ إِلَّا فِي الشَّهْرِ الحَرَامِ، فَمُرْنَا بِأَمْرٍ نَأْخُذُ بِهِ وَنَدْعُو إِلَيْهِ مَنْ وَرَاءَنَا، قَالَ: " آمُرُكُمْ بِأَرْبَعٍ، وَأَنْهَاكُمْ عَنْ أَرْبَعٍ، الإِيمَانِ بِاللَّهِ: شَهَادَةِ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ، - وَعَقَدَ بِيَدِهِ - وَإِقَامِ الصَّلاَةِ، وَإِيتَاءِ الزَّكَاةِ، وَصِيَامِ رَمَضَانَ، وَأَنْ تُؤَدُّوا لِلَّهِ خُمُسَ مَا غَنِمْتُمْ، وَأَنْهَاكُمْ: عَنِ الدُّبَّاءِ، وَالنَّقِيرِ، وَالحَنْتَمِ، وَالمُزَفَّتِ»

“আব্দুল কায়স গোত্রের প্রতিনিধি দল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এসে বলল, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমরা রাবী‘আ গোত্রের একটি উপদল। আপনার ও আমাদের মাঝে মুদার (কাফির) গোত্রের বসবাস। তাই আমরা আপনার নিকট নিষিদ্ধ মাসসমূহ ব্যতীত অন্য সময় আসতে পারি না। কাজেই আপনি আমাদের এমন কাজের আদেশ করুন, যার ওপর আমরা আমল করব এবং আমাদের পশ্চাতে যারা রয়ে গেছে, তাদে কেও তা আমল করতে আহবান জানাবো। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি তোমদেরকে চারটি কাজের আদেশ করছি এবং চারটি কাজ থেকে নিষেধ করছি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাতের অঙ্গুলে তা গণনা করে বলেন, আল্লাহ তা‘আলার প্রতি ঈমান আন। আর তা হচ্ছে এ সাক্ষ্য দান করা যে, আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনো ইলাহ নেই আর সালাত প্রতিষ্ঠা করা, যাকাত দান করা, রমযান মাসে সাওম পালন করা এবং আল্লাহর জন্য গনীমাত লব্ধ সম্পদের এক পঞ্চমাংশ আদায় করা। আর আমি তোমাদের শুল্ক লাউয়ের খোলে তৈরি পাত্র, খেজুর গাছের মূল দ্বারা তৈরি পাত্র, সবুজ মটকা, আলকাতরা প্রলিপ্ত মটকা ব্যবহার করতে নিষেধ করছি।”[10]

[1] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৮৯৪, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১৫১।

[2] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১০৭৯।

[3] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১০৭৯।

[4] তিরমিযী, হাদীস নং ৬৮২, ইমাম তিরমিযী রহ. বলেছেন, এ পরিচ্ছেদে আব্দুর রহমান ইবন ‘আউফ, ইবন মাস‘ঊদ ও সালমান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুম থেকে হাদীস বর্ণিত আছে। ইবন মাজাহ, ১৬৪২। আলবানী রহ. বলেছেন, হাদীসটি সহীহ। নাসায়ী, ২১০৭।

[5] নাসায়ী, হাদীস নং ২১০৬, আলবানী রহ. বলেছেন, হাদীসটি সহীহ। মুসনাদে আহমদ, ৭১৪৮, শু ‘আইব আরনাঊত বলেছেন, হাদীসটি সহীহ।

[6] আল ‘মুজামুল কাবীর লিততবরানী, হাদীস নং ১৮৫। জামে‘উস সগীর ওয়াযিয়াদাহ, হাদীস নং ২৩৭৭। আলবানী রহ. বলেছেন, হাদীসটি হাসান, দেখুন, সহীহ জামে‘উস সগীর, হাদীস নং ১৪৯৭। শু‘আবুল ঈমান লিলবাইহাকী, ২০৫৩। অধিকাংশ বর্ণনায় ২৪শে রমাদানের কথা উল্লেখ আছে, অর্থাৎ ২৫শে রমাদান রাতে কুরআন নাযিল হয়েছে। তবে মু‘জামুল কাবীর এর বর্ণনায় ২৪শে রমাদানের পরিবর্তে ১৪ই রমাদান এসেছে।

[7] মুসতাদরাক হাকিম, হাদীস নং ৭২৫৬, ইমাম হাকিম রহ. বলেছেন, হাদীসের সনদটি সহীহ, তবে বুখারী ও মুসলিম কেউ উল্লেখ করেননি। ইমাম যাহাবী রহ. সহীহ বলেছেন। আবূ হুরাইরা, আনাস ও জাবির রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে অনুরূপ বর্ণনা আছে। দেখুন, তিরমিযী, হাদীস নং ৩৫৪৫। ইমাম তিরমিযী রহ. বলেছেন, হাদীসটি হাসান সহীহ। আলবানী রহ. হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।

[8] তিরমিযী, হাদীস নং ২৬১৬, ইমাম তিরমিযী রহ. বলেছেন, হাদীসটি হাসান সহীহ। আলবানী রহ. বলেছেন, হাদীসটি সহীহ। ইবন মাজাহ, ৩৯৭৩। মুসনাদে আহমাদ, ২২০১৬। মুহাক্কিক শু ‘আইব আরনাঊত বলেছেন, হাদীসটি বিভিন্ন সনদে সহীহ।

[9] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২৭৯০।

[10] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩০৯৫।

আবু সঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি,

«مَنْ صَامَ يَوْمًا فِي سَبِيلِ اللَّهِ، بَعَّدَ اللَّهُ وَجْهَهُ عَنِ النَّارِ سَبْعِينَ خَرِيفًا»

“যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় এক দিনও সাওম পালন করে, আল্লাহ তার মুখমণ্ডলকে (অর্থাৎ তাকে) জাহান্নামের আগুন থেকে সত্তর বছরের রাস্তা দূরে সরিয়ে নেন।”[1]

>
[1] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২৮৪০, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১৫৩।

হুযায়ফা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«قَالَ عُمَرُ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، مَنْ يَحْفَظُ حَدِيثًا عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي الفِتْنَةِ؟ قَالَ حُذَيْفَةُ أَنَا سَمِعْتُهُ يَقُولُ: «فِتْنَةُ الرَّجُلِ فِي أَهْلِهِ وَمَالِهِ وَجَارِهِ، تُكَفِّرُهَا الصَّلاَةُ وَالصِّيَامُ وَالصَّدَقَةُ»، قَالَ: لَيْسَ أَسْأَلُ عَنْ ذِهِ، إِنَّمَا أَسْأَلُ عَنِ الَّتِي تَمُوجُ كَمَا يَمُوجُ البَحْرُ، قَالَ: وَإِنَّ دُونَ ذَلِكَ بَابًا مُغْلَقًا، قَالَ: فَيُفْتَحُ أَوْ يُكْسَرُ؟ قَالَ: يُكْسَرُ، قَالَ: ذَاكَ أَجْدَرُ أَنْ لاَ يُغْلَقَ إِلَى يَوْمِ القِيَامَةِ، فَقُلْنَا لِمَسْرُوقٍ: سَلْهُ أَكَانَ عُمَرُ يَعْلَمُ مَنِ البَابُ؟ فَسَأَلَهُ فَقَالَ: نَعَمْ، كَمَا يَعْلَمُ أَنَّ دُونَ غَدٍ اللَّيْلَةَ»

“একদিন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, ফিতনা সম্পর্কিত নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদীসটি কার মুখস্ত আছে? হুযায়ফা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি যে, পরিবার, ধন-সম্পদ এবং প্রতিবেশিই মানুষের জন্য ফিতনা। সালাত, সাওম এবং সদকা এর কাফফারা হয়ে যায়। উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, এ ফিতনা সম্পর্কে আমি জিজ্ঞাসা করছি না, আমি তো জিজ্ঞাসা করেছি ঐ ফিতনা সম্পর্কে, যা সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো আন্দোলিত থেকে থাকবে। হুযায়ফা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, এ ফিতনার সামনে বন্ধ দরজা আছে। উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, এ দরজা কি খুলে যাবে, না ভেঙ্গে যাবে? হুযায়ফা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, ভেঙ্গে যাবে। উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, তাহলে তো তা কিয়ামত পর্যন্ত বন্ধ হবে না। আমরা মাসরূক রহ. কে বললাম, হুযায়ফা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে জিজ্ঞেস করুন, উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কি জানতেন, কে সেই দরজা? তিনি বললেন, হ্যাঁ, তিনি এরূপ জানতেন যেরূপ আগামীকালের দিনের পূর্বে আজকের রাত।”[1]

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেন,

«الصَّلَوَاتُ الْخَمْسُ، وَالْجُمْعَةُ إِلَى الْجُمْعَةِ، وَرَمَضَانُ إِلَى رَمَضَانَ، مُكَفِّرَاتٌ مَا بَيْنَهُنَّ إِذَا اجْتَنَبَ الْكَبَائِرَ»

“পাঁচ ওয়াক্ত সালাত, এক জুমু‘আ থেকে আরেক জুমু‘আ পর্যন্ত এবং এক রমযান থেকে অপর রমযান পর্যন্ত এসব তাদের মধ্যবর্তী সময়ের জন্য কাফফারা হয়ে যাবে, যদি সে কবীরা গুনাহ থেকে বিরত থাকে।”[2]

>
[1] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৮৯৫।

[2] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৩৩।

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«الصِّيَامُ جُنَّةٌ فَلاَ يَرْفُثْ وَلاَ يَجْهَلْ، وَإِنِ امْرُؤٌ قَاتَلَهُ أَوْ شَاتَمَهُ فَلْيَقُلْ: إِنِّي صَائِمٌ مَرَّتَيْنِ وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لَخُلُوفُ فَمِ الصَّائِمِ أَطْيَبُ عِنْدَ اللَّهِ تَعَالَى مِنْ رِيحِ المِسْكِ يَتْرُكُ طَعَامَهُ وَشَرَابَهُ وَشَهْوَتَهُ مِنْ أَجْلِي الصِّيَامُ لِي، وَأَنَا أَجْزِي بِهِ وَالحَسَنَةُ بِعَشْرِ أَمْثَالِهَا»

“সাওম ঢালস্বরূপ। সুতরাং অশ্লীলতা করবে না এবং মুর্খের মতো কাজ করবে না। যদি কেউ তাঁর সাথে ঝগড়া করতে চায়, তাঁকে গালি দেয়, তবে সে যেন দুই বার বলে, আমি সাওম পালন করছি। ঐ সত্তার শপথ, যার হাতে আমার প্রাণ, অবশ্যই সাওম পালনকারীর মুখের গন্ধ আল্লাহর নিকট মিশকের ঘ্রাণের চাইতেও উৎকৃষ্ট, সে আমার জন্য আহার, পান ও কামাচার পরিত্যাগ করে। সাওম আমারই জন্য। তাই এর পুরষ্কার আমি নিজেই দান করব। আর প্রত্যেক নেক কাজের বিনিময় দশ গুন।”[1]

সা‘ঈদ ইবন আবু হিন্দ রহ. থেকে বর্ণিত,

«أَنَّ مُطَرِّفًا، رَجُلًا مِنْ بَنِي عَامِرِ بْنِ صَعْصَعَةَ، حَدَّثَهُ أَنَّ عُثْمَانَ بْنَ أَبِي الْعَاصِ، دَعَا لَهُ بِلَبَنٍ لِيَسْقِيَهُ، فَقَالَ مُطَرِّفٌ: إِنِّي صَائِمٌ، فَقَالَ عُثْمَانُ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، يَقُولُ: «الصِّيَامُ جُنَّةٌ كَجُنَّةِ أَحَدِكُمْ مِنَ الْقِتَالِ»

“বনী ‘আমের ইবন সা‘আসা‘আ গোত্রের মুতাররিফ রহ. তাকে হাদীস বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, ওসমান ইবন আবু ‘আস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু দুধ পান করার জন্য তাকে দুধ নিয়ে আসতে বললেন। তখন মুতাররিফ রহ. বললেন, আমি সাওম পালনকারী। ওসমান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, সাওম এমন ঢালস্বরূপ, তোমাদের যুদ্ধে ব্যবহৃত ঢালের ন্যায়।”[2]

>
[1] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৮৯৪, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১৫১।

[2] সুনানে নাসায়ী, হাদীস নং ২২৩০, সহীহ ইবন হিব্বান, হাদীস নং ৩৬৪৯। হাদীসটি সহীহ।
সাওম পালনকারীর জন্য জান্নাতে রাইয়্যান দরজা

সাহল রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«إِنَّ فِي الجَنَّةِ بَابًا يُقَالُ لَهُ الرَّيَّانُ، يَدْخُلُ مِنْهُ الصَّائِمُونَ يَوْمَ القِيَامَةِ، لاَ يَدْخُلُ مِنْهُ أَحَدٌ غَيْرُهُمْ، يُقَالُ: أَيْنَ الصَّائِمُونَ؟ فَيَقُومُونَ لاَ يَدْخُلُ مِنْهُ أَحَدٌ غَيْرُهُمْ، فَإِذَا دَخَلُوا أُغْلِقَ فَلَمْ يَدْخُلْ مِنْهُ أَحَدٌ»

“জান্নাতে রাইয়্যান নামক একটি দরজা আছে। এ দরজা দিয়ে কিয়ামতের দিন সাওম পালনকারীরাই প্রবেশ করবে। তাঁদের ছাড়া আর কেউ এ দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। ঘোষণা দেওয়া হবে, সাওম পালনকারীরা কোথায়? তখন তারা দাঁড়াবে। তাঁরা ছাড়া আর কেউ এ দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে না। তাঁদের প্রবেশের পরই দরজা বন্ধ করে দেওয়া হবে। যাতে এ দরজা দিয়ে আর কেউ প্রবেশ না করে।”[1]

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«مَنْ أَنْفَقَ زَوْجَيْنِ فِي سَبِيلِ اللَّهِ، نُودِيَ مِنْ أَبْوَابِ الجَنَّةِ: يَا عَبْدَ اللَّهِ هَذَا خَيْرٌ، فَمَنْ كَانَ مِنْ أَهْلِ الصَّلاَةِ دُعِيَ مِنْ بَابِ الصَّلاَةِ، وَمَنْ كَانَ مِنْ أَهْلِ الجِهَادِ دُعِيَ مِنْ بَابِ الجِهَادِ، وَمَنْ كَانَ مِنْ أَهْلِ الصِّيَامِ دُعِيَ مِنْ بَابِ الرَّيَّانِ، وَمَنْ كَانَ مِنْ أَهْلِ الصَّدَقَةِ دُعِيَ مِنْ بَابِ الصَّدَقَةِ "، فَقَالَ أَبُو بَكْرٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ: بِأَبِي أَنْتَ وَأُمِّي يَا رَسُولَ اللَّهِ مَا عَلَى مَنْ دُعِيَ مِنْ تِلْكَ الأَبْوَابِ مِنْ ضَرُورَةٍ، فَهَلْ يُدْعَى أَحَدٌ مِنْ تِلْكَ الأَبْوَابِ كُلِّهَا، قَالَ: «نَعَمْ وَأَرْجُو أَنْ تَكُونَ مِنْهُمْ»

“যে কেউ আল্লাহর পথে জোড়া জোড়া ব্যয় করবে তাঁকে জান্নাতের দরজাসমূহ থেকে ডাকা হবে, হে আল্লাহর বান্দা! এটাই উত্তম। অতএব, যে সালাত আদায়কারী, তাঁকে সালাতের দরজা থেকে ডাকা হবে। সে মুজাহিদ তাঁকে জিহাদের দরজা থেকে ডাকা হবে, যে সাওম পালনকারী, তাঁকে রাইয়্যাব দরজা থেকে ডাকা হবে। যে সদকা দানকারী তাঁকে সদকা দরজা থেকে ডাকা হবে। এরপর আবু বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আপনার জন্য আমার পিতা-মাতা কুরবান, সব দরজা থেকে কাউকে ডাকার কোনো প্রয়োজন নেই, তবে কি কাউকে সব দরজা থেকে ডাকা হবে? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হ্যাঁ। আমি আশা করি তুমি তাঁদের মধ্যে হবে।”[2]

>
[1] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৮৯৬।

[2] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৮৯৭।
রমযান নাকি রমযান মাস বলা হবে? কেউ কেউ বলেছেন, উভয়টি বলা যাবে?

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«إِذَا جَاءَ رَمَضَانُ فُتِحَتْ أَبْوَابُ الجَنَّةِ»

“যখন রমযান আসে তখন জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেওয়া হয়।”[1]

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলতেন, রাসূলুল্লাহ বলেছেন,

«إِذَا دَخَلَ شَهْرُ رَمَضَانَ فُتِّحَتْ أَبْوَابُ السَّمَاءِ، وَغُلِّقَتْ أَبْوَابُ جَهَنَّمَ، وَسُلْسِلَتِ الشَّيَاطِينُ»

“রমযান আসলে আসমানের দরজাসমূহ খুলে দেওয়া হয় এবং জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেওয়া হয় আর শয়তানকে শৃঙ্খলিত করে দেওয়া হয়।”[2]

>
[1] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৮৯৮।

[2] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৮৯৯।

ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুলাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি,

«إِذَا رَأَيْتُمُوهُ فَصُومُوا، وَإِذَا رَأَيْتُمُوهُ فَأَفْطِرُوا، فَإِنْ غُمَّ عَلَيْكُمْ فَاقْدُرُوا لَهُ» وَقَالَ غَيْرُهُ: عَنِ اللَّيْثِ، حَدَّثَنِي عُقَيْلٌ، وَيُونُسُ: لِهِلاَلِ رَمَضَانَ»

“যখন তোমরা তা (চাঁদ) দেখবে তখন সাওম পালন করবে, আবার যখন তা দেখবে তখন ইফতার করবে। আর যদি আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকে তাহলে তাঁর সময় হিসাব করে (ত্রিশ দিন) পূর্ণ করবে। ইয়াহইয়া ইবন বুকায়র রহ. ব্যতীত অন্যরা লায়স রহ. থেকে উকায়লা এবং ইউনুস রহ. সূত্রে বর্ণনা করেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কথাটি বলেছেন রমযানের চাঁদ সম্পর্কে।”[1]

>
[1] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৯০০।
যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে সাওয়াবের আশায় নিয়তের সাথে সাওম পালন করবে

আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন,

«يُبْعَثُونَ عَلَى نِيَّاتِهِمْ»

“তারা (সাওম পালনকারী) তাদের নিয়ত অনুসারে কিয়ামতের দিন উত্থিত হবেন।”[1]

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«مَنْ قَامَ لَيْلَةَ القَدْرِ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا، غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ، وَمَنْ صَامَ رَمَضَانَ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ»

“যে ব্যক্তি লাইলাতুল ক্বাদরে ঈমানের সাথে সওয়াবের আশায় রাত জেগে ইবাদাত করে, তাঁর পিছনের সমস্ত গুনাহ মাপ করা হবে। আর যে ব্যক্তি ঈমানসহ সওয়াবের আশায় রমযানের সাওম পালন করবে, তাঁরও অতীতের সমস্ত গুনাহ মাফ করা হবে”[2]

>
[1] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২১১৮।

[2] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৯০১।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযান মাসে অধিক দান করতেন

ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَجْوَدَ النَّاسِ بِالخَيْرِ، وَكَانَ أَجْوَدُ مَا يَكُونُ فِي رَمَضَانَ حِينَ يَلْقَاهُ جِبْرِيلُ، وَكَانَ جِبْرِيلُ عَلَيْهِ السَّلاَمُ يَلْقَاهُ كُلَّ لَيْلَةٍ فِي رَمَضَانَ، حَتَّى يَنْسَلِخَ، يَعْرِضُ عَلَيْهِ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ القُرْآنَ، فَإِذَا لَقِيَهُ جِبْرِيلُ عَلَيْهِ السَّلاَمُ، كَانَ أَجْوَدَ بِالخَيْرِ مِنَ الرِّيحِ المُرْسَلَةِ»

“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ধন সম্পদ ব্যয় করার ব্যাপারে সকলের চেয়ে দানশীল ছিলেন। রমযানে জিবরীল আলাইহিস সালাম যখন তাঁর সাথে দেখা করতেন, তখন তিনি আরো অধিক দান করতেন। রমযান শেষ না হওয়া পর্যন্ত প্রতি রাতেই জিবরীল আলাইহিস সালাম তাঁর একবার সাক্ষাৎ করতেন। আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে কুরআন শোনাতেন। জিবরীল আলাইহিস সালাম যখন তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন তখন তিনি রহমত প্রেরিত বায়ূর চেয়ে অধিক ধন-সম্পদ দান করতেন।”[1]

>
[1] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৯০২।
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ১০ পর্যন্ত, সর্বমোট ৯২ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে পাতা নাম্বারঃ 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 পরের পাতা »