মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) সর্বমোট হাদিসঃ ৫১৫৪ টি

পরিচ্ছেদঃ ৫. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - বিভিন্ন সময়ের পঠিতব্য দু‘আ

২৪৪১-[২৬] আবূ মূসা আল আশ্’আরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কোন দলের ব্যাপারে ভয় করতেন, তখন বলতেন, ’’আল্ল-হুম্মা ইন্না- নাজ্’আলুকা ফী নুহূরিহিম ওয়ানা’ঊযুবিকা মিন্ শুরূরিহিম’’ (অর্থাৎ- হে আল্লাহ! আমরা তোমাকে তাদের মোকাবেলা করলাম [তুমিই তাদের প্রতিহত কর] এবং তাদের অনিষ্টতা হতে তোমার কাছে আশ্রয় নিলাম)। (আহমাদ ও আবূ দাঊদ)[1]

وَعَنْ أَبِي مُوسَى: أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ إِذَا خَافَ قَوْمًا قَالَ: «اللَّهُمَّ إِنَّا نَجْعَلُكَ فِي نُحُورِهِمْ وَنَعُوذُ بِكَ من شرورهم» . رَوَاهُ أَحْمد وَأَبُو دَاوُد

ব্যাখ্যা:  (كَانَ إِذَا خَافَ قَوْمًا) অর্থাৎ- কোন সম্প্রদায়ের অনিষ্টতা নিয়ে আশঙ্কা করতেন।

(اَللّٰهُمَّ إِنَّا نَجْعَلُكَ فِىْ نُحُورِهِمْ) অর্থাৎ- বুকে সাহস ও শত্রুর মুকাবিলায় শক্তি সঞ্চার করা। যাতে করে যুদ্ধের ময়দানে শত্রুকে সাহসের সাথে মুকাবিলা করতে পারে।

(وَنَعُوذُ بِكَ مِنْ شُرُوْرِهِمْ) অর্থাৎ- তাদের মুকাবিলায় বুকে শক্তি দাও, আর শত্রুদের চক্রান্ত মুকাবিলা করার তাওফীক দাও। আমি আশ্রয় চাচ্ছি তাদের চক্রান্তের অনিষ্টতা থেকে।

অতএব অত্র হাদীসের দলীল রয়েছে যে, শত্রুর ভয়ে এ দু‘আ পড়া শার‘ঈভাবে প্রমাণিত।


পরিচ্ছেদঃ ৫. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - বিভিন্ন সময়ের পঠিতব্য দু‘আ

২৪৪২-[২৭] উম্মু সালামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘর হতে বের হবার সময় বলতেন, ’’বিসমিল্লা-হি তাওয়াক্কালতু ’আলাল্ল-হি, আল্ল-হুম্মা ইন্না- না’ঊযুবিকা মিন্ আন্ নাযিল্লা আও নাযিল্লা আও নাযলিমা আও নুযলামা আও নাজহালা আও ইউজহালা ’আলায়না-’’ (অর্থাৎ- আল্লাহর নামে, আমি আল্লাহর ওপর পূর্ণ ভরসা করলাম। হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে আশ্রয় চাই পদস্খলিত হওয়া, বিপথগামী হওয়া, উৎপীড়ন করা, উৎপীড়িত হওয়া, অজ্ঞতা প্রকাশ করা এবং কারো অজ্ঞতা প্রকাশের পাত্র হওয়া হতে।)। (আহমাদ, তিরমিযী, নাসায়ী; তিরমিযী বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ)

আবূ দাঊদ ও ইবনু মাজাহর অন্য বর্ণনায় আছে, উম্মু সালামাহ্ (রাঃ) বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখনই ঘর হতে বের হতেন, তখন আকাশের দিকে মাথা উঠিয়ে বলতেন, ’’আল্ল-হুম্মা ইন্নী আ’ঊযুবিকা আন্ আযিল্লা আও উযল্লা, আও আযলিমা আও উযলামা, আও আজহালা আও ইউজহালা ’আলাইয়্যা’’ (অর্থাৎ- হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে আশ্রয় চাই বিপথগামী হওয়া, বিপথগামী করা, উৎপীড়ন করা, উৎপীড়িত হওয়া, অজ্ঞতা প্রকাশ করা বা অজ্ঞতা প্রকাশের পাত্র হওয়া হতে।)।[1]

وَعَنْ أُمُّ سَلَمَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ إِذَا خَرَجَ مِنْ بَيْتِهِ قَالَ: «بِسْمِ اللَّهِ تَوَكَّلْتُ عَلَى اللَّهِ اللَّهُمَّ إِنَّا نَعُوذُ بِكَ مِنْ أَنْ نَزِلَّ أَوْ نَضِلَّ أَوْ نَظْلِمَ أَوْ نُظْلَمَ أَوْ نَجْهَلَ أَوْ يُجْهَلَ عَلَيْنَا» . رَوَاهُ أَحْمَدُ وَالتِّرْمِذِيُّ وَالنَّسَائِيُّ وَقَالَ التِّرْمِذِيُّ: هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ وَفِي رِوَايَةِ أَبِي دَاوُدَ وَابْنِ مَاجَهْ قَالَتْ أُمُّ سَلَمَةَ: مَا خَرَجَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِنْ بَيْتِي قَطُّ إِلَّا رَفَعَ طَرْفَهُ إِلَى السَّمَاءِ فَقَالَ: «اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ أَنْ أَضِلَّ أَوْ أُضَلَّ أَوْ أَظْلِمَ أَوْ أُظْلَمَ أَوْ أَجْهَلَ أَو يجهل عَليّ»

ব্যাখ্যা: (اَللّٰهُمَّ إِنَّا نَعُوذُ بِكَ مِنْ أَنْ نَزِلَّ أَوْ نَضِلَّ) অর্থাৎ- খারাপ বা পাপাচার পতিত হওয়া থেকে আশ্রয় চাচ্ছি।

মুল্লা ‘আলী কারী (রহঃ) বলেনঃ ইচ্ছা ছাড়াই সত্য পথ হতে বিচ্যুত হওয়া। অথবা ইচ্ছা ছাড়াই পাপ কাজে লিপ্ত হওয়া।

(أَوْ نَجْهَلَ أَوْ يُجْهَلَ عَلَيْنَا) অর্থাৎ- আল্লাহর হক বা বান্দার হাক্বের ব্যাপারে কোন অন্যায় করা। অথবা, মানুষের উপায়ে কোন কষ্টদায়ক বস্ত্ত চালিয়ে দেয়া।

ইমাম ত্বীবী (রহঃ) বলেনঃ ইচ্ছা ছাড়াই কোন পাপ কাজ পতিত হওয়া থেকে আশ্রয় চাওয়া। অথবা, মানুষের সাথে লেনদেন বা চলাফেরায় কষ্ট দেয়া বা তাদের উপর অত্যাচার করা।

নাসায়ী’র শব্দে রয়েছে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন বাড়ী থেকে বের হতেন, বলতেন, (بسم الله رب أعوذ بك من أن أزل، أو أضل، أو أظلم أو أظلم، أو أجهل أو يجهل علي) অর্থাৎ- আল্লাহর নামে শুরু করছি- হে আমার প্রতিপালক! আপনার নিকট লাঞ্ছনা, গোমরাহ্ হওয়া অথবা অত্যাচার করা, অত্যাচারিত হওয়া, অজ্ঞ হওয়া ও আমার ওপর অজ্ঞতার আরোপ থেকে আশ্রয় চাই। অনুরূপ বর্ণনা করেছেন- হাকিম (১ম খণ্ড, ৫১৯ পৃঃ), আহমাদ (৩য় খণ্ড, ৩১৮, ৩৩২ পৃঃ)।


পরিচ্ছেদঃ ৫. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - বিভিন্ন সময়ের পঠিতব্য দু‘আ

২৪৪৩-[২৮] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন ব্যক্তি ঘর হতে বের হবার সময় যখন বলে, ’’বিসমিল্লা-হি তাওয়াক্কাল্তু ’আলাল্ল-হি, লা- হাওলা ওয়ালা- ক্যুওয়াতা ইল্লা- বিল্লা-হি’’ (অর্থাৎ- আল্লাহর নামে বের হলাম, আল্লাহর ওপর ভরসা করলাম, আল্লাহ ছাড়া কোন উপায় নেই, ক্ষমতা নেই)- তখন তাকে বলা হয়, পথ পেলে, উপায়-উপকরণ পেলে এবং নিরাপদ থাকলে। সুতরাং শয়তান তার কাছ হতে দূর হয়ে যায় এবং অন্য এক শয়তান এই শয়তানকে বলে, যে ব্যক্তিকে পথ দেখানো হয়েছে, উপায়-উপকরণ দেয়া হয়েছে এবং রক্ষা করা হয়েছে- তাকে তুমি কি করতে পারবে? (আবূ দাঊদ; আর তিরমিযীতে বর্ণিত হয়েছে ’শয়তান বিদূরিত হয়ে যায়’ পর্যন্ত)[1]

وَعَنْ أَنَسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِذَا خَرَجَ الرَّجُلُ مِنْ بَيْتِهِ فَقَالَ: بِسْمِ اللَّهِ تَوَكَّلْتُ عَلَى اللَّهِ لَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللَّهِ يُقَالُ لَهُ حِينَئِذٍ هُدِيتَ وَكُفِيتَ وَوُقِيتَ فَيَتَنَحَّى لَهُ الشَّيْطَانُ وَيَقُولُ شَيْطَانٌ آخَرُ: كَيْفَ لَكَ بِرَجُلٍ قَدْ هُدِيَ وَكُفِيَ وَوُقِيَ . رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ وروى التِّرْمِذِيّ إِلى قَوْله: «الشَّيْطَان»

ব্যাখ্যা: যখন বান্দা আল্লাহর কাছে সাহায্য চায় তার বারাকাতপূর্ণ নামের সাথে তখন আল্লাহ তা‘আলা তাকে হিদায়াত দেন, সঠিক পথ দেখান এবং দুনিয়া ও আখিরাতের কর্মগুলোতে সাহায্য করেন। বান্দা যখন আল্লাহ তা‘আলার ওপর ভরসা রাখবে আল্লাহই তার জন্য যথেষ্ট। অতএব তিনি তার জন্য যথেষ্ট। আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ ‘‘যে ব্যক্তি আল্লাহর ওপর ভরসা করে তিনি তার জন্য যথেষ্ঠ’’- (সূরা আত্ব ত্বলা-ক ৬৫ : ৩)। আর যে ‘‘লা- হাওলা ওয়ালা- ক্যুওয়াতা ইল্লা- বিল্লা-হ’’ পড়বে আল্লাহ তাকে শয়তানের অনিষ্টতা থেকে মুক্ত করবেন।


পরিচ্ছেদঃ ৫. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - বিভিন্ন সময়ের পঠিতব্য দু‘আ

২৪৪৪-[২৯] আবূ মালিক আল আশ্’আরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন কোন ব্যক্তি ঘরে প্রবেশ করবে সে যেন বলে, ’’আল্ল-হুম্মা ইন্নী আস্আলুকা খয়রল মাওলিজি ওয়া খয়রল মাখর-জি বিস্‌মিল্লা-হি ওয়ালাজনা- ওয়া ’আলাল্ল-হি রব্বিনা- তাওয়াক্কালনা-’’ (অর্থাৎ- হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে ঘরে প্রবেশ ও ঘর হতে বের হওয়ার কল্যাণ চাই। তোমার নামেই আমি প্রবেশ করি (ও বের হই)। হে আমাদের বর! আল্লাহর নামে ভরসা করলাম।)। অতঃপর সে যেন নিজ পরিবারের লোকদেরকে সালাম দেয়। (আবূ দাঊদ)[1]

وَعَنْ أَبِي مَالِكٍ الْأَشْعَرِيِّ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِذَا وَلَجَ الرَّجُلُ بَيْتَهُ فَلْيَقُلْ: اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ خَيْرَ الْمَوْلِجِ وَخَيْرَ الْمَخْرَجِ بِسْمِ اللَّهِ وَلَجْنَا وَعَلَى اللَّهِ رَبِّنَا تَوَكَّلْنَا ثُمَّ لْيُسَلِّمْ عَلَى أَهْلِهِ . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد

ব্যাখ্যা : মিরকাতে ইমাম সুয়ূত্বী (রহঃ) ব্যাখ্যা করেছেন, তাতে আল্লাহ তা‘আলার কথার দিকেই ইঙ্গিত করেছেন, তার শিক্ষার জন্য। হে পালনকর্তা! আমাকে দাখিল করুন সত্যরূপে এবং আমাকে বের করুন সত্যরূপে।

এখানে আয়াতে কারীমা সব ধরনের প্রবেশ ও বের হওয়াকে অন্তর্ভুক্ত করবে। যদিও আয়াতটি মক্কা বিজয়ের দিনে নাযিল হয়েছে। কেননা শিক্ষা তো ‘আম্ শব্দ দ্বারা সাব্যস্ত হয়, নির্দিষ্ট কোন কারণে নয়।


পরিচ্ছেদঃ ৫. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - বিভিন্ন সময়ের পঠিতব্য দু‘আ

২৪৪৫-[৩০] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, কোন ব্যক্তি বিয়ে করলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলতেন, ’’বা-রকাল্ল-হ লাকা ওয়া বা-রকা ’আলায়কুমা- ওয়া জামা’আ বায়নাকুমা- ফী খায়রিন’’ (অর্থাৎ- আল্লাহ তোমাকে বারাকাত দিন, তোমাদের উভয়ের ওপর বারাকাতময় করুন এবং তোমাদেরকে [সর্বদা] কল্যাণের সাথে একত্রিত রাখুন)। (আহমাদ, তিরমিযী, আবূ দাঊদ ও ইবনু মাজাহ)[1]

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ إِذَا رَفَّأَ الْإِنْسَانَ إِذَا تَزَوَّجَ قَالَ: «بَارَكَ اللَّهُ لَكَ وَبَارَكَ عَلَيْكُمَا وَجَمَعَ بَيْنَكُمَا فِي خَيْرٍ» رَوَاهُ أَحْمَدُ وَالتِّرْمِذِيُّ وَأَبُو دَاوُدَ وَابْنُ مَاجَهْ

ব্যাখ্যা: নব দুলালের জন্য সুখী জীবন ও অধিক সন্তানের দু‘আকারী- এ কথাগুলো জাহিলী জামানার লোকেরা বলত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা প্রত্যাখ্যান করলেন। যেমন- বাক্বী ইবনু মিখলাদ বর্ণনা করেছেন গালিব (রহঃ)-এর সূত্রে, তিনি হাসান (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বানু তামীম গোত্রের এক লোক থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেনঃ আমরা জাহিলী যুগে নব বিবাহিত দুলালের প্রতি সুখী-জীবন ও অধিক সন্তান জন্মের দু‘আ করতাম, যখন ইসলাম আসলো নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের শিক্ষা দিলেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ তোমরা বলো- (بارك الله لكم وبارك فيكم وبارك عليكم) অর্থাৎ- আল্লাহ তোমাদের জন্য বারাকাত দান করুন, তোমাদের মাঝে বারাকাত দান করুন, তোমাদের ওপর বারাকাত দান করুন। (নাসায়ী, ত্ববারানী)

ইবনুস্ সুন্নীর অপর বর্ণনায় রয়েছে যে, ‘আক্বীল ইবনু আবী ত্বলিব বাসরাহ্ গমন করলেন। অতঃপর এক নারীকে বিয়ে করলেন। অতঃপর তারা তাকে সুখী জীবন ও অধিক সন্তানের দু‘আ করল। তিনি বললেন, এরূপ বলো না, তোমরা তাই বলো যা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, (اللهم بارك لهم وبارك عليهم) ‘‘হে আল্লাহ! তাদেরকে বারাকাত দান করো ও তাদের ওপর বারাকাত নাযিল করো।’’


পরিচ্ছেদঃ ৫. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - বিভিন্ন সময়ের পঠিতব্য দু‘আ

২৪৪৬-[৩১] ’আমর ইবনু শু’আয়ব হতে বর্ণিত। তিনি তার পিতার মাধ্যমে দাদা হতে বর্ণনা করেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের মধ্যে কেউ যখন কোন মহিলাকে বিয়ে অথবা কোন চাকর ক্রয় করে তখন সে যেন বলে,

’’আল্ল-হুম্মা ইন্নী আস্আলুকা খয়রহা- ওয়া খয়রা মা- জাবালতাহা- ’আলায়হি ওয়া আ’ঊযুবিকা মিন্ শাররিহা- ওয়া শাররি মা- জাবালতাহা- ’আলায়হি’’

(অর্থাৎ- হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে তার কল্যাণ এবং তাকে যে সৎ চরিত্রের সাথে সৃষ্টি করেছো তার কল্যাণ চাই। আর তোমার কাছে আমি তার অনিষ্ট ও তাকে যে খারাপ স্বভাবের সাথে সৃষ্টি করেছো তা হতে আশ্রয় চাই।)।

আর যখন কোন ব্যক্তি উট ক্রয় করে, তখন যেন ঠোঁটের চূড়া ধরে আগের মতো দু’আ পড়ে। অন্য এক বর্ণনায় মহিলা ও চাকর সম্বদ্ধে বলা হয়েছে, তখন সে যেন তার সামনের চুল ধরে বারাকাতের জন্য দু’আ করে। (আবূ দাঊদ ও ইবনু মাজাহ)[1]

وَعَنْ عَمْرِو بْنِ شُعَيْبٍ عَنْ أَبِيهِ عَنْ جَدِّهِ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «إِذَا تَزَوَّجَ أَحَدُكُمُ امْرَأَةً أَوِ اشْتَرَى خَادِمًا فَلْيَقُلْ اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ خَيْرَهَا وَخَيْرَ مَا جَبَلْتَهَا عَلَيْهِ وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّهَا وَشَرِّ مَا جَبَلْتَهَا عَلَيْهِ وَإِذَا اشْتَرَى بَعِيرًا فليأخُذْ بِذروةِ سنامِهِ ولْيَقُلْ مِثْلَ ذَلِكَ» . وَفِي رِوَايَةٍ فِي الْمَرْأَةِ وَالْخَادِمِ: «ثُمَّ لْيَأْخُذْ بِنَاصِيَتِهَا وَلْيَدْعُ بِالْبَرَكَةِ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد وَابْن مَاجَه

ব্যাখ্যা: ইবনু মাজাহ্, ইবনুস্ সুন্নী ও হাকিম-এর বর্ণনায় রয়েছে, সে যেন তার কপাল ধারণ করে। অতঃপর দু‘আ বলবে। এখানে কপাল দ্বারা মাথার অগ্রভাগের চুল উদ্দেশ্য, যেমন ‘‘আস্ সিহাহ’’-তে বর্ণিত রয়েছে। তবে মোদ্দা কথা হলো- এর দ্বারা মাথার অগ্রভাগ উদ্দেশ্য, চাই তাতে চুল থাকুক বা না থাকুক। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) (بِذَرْوَةِ سَنَامِه) উল্লেখের পর বলেনঃ আবূ সা‘ঈদ অর্থাৎ- সা‘ঈদ ইবনু ‘আবদিল্লাহ, (যিনি তার একজন উস্তায ছিলেন) তিনি এ হাদীসের বর্ণনায় কিছু বর্ধিত করেছেন যে, অতঃপর সে যেন তার কপাল ধারণ করে। অতঃপর নারী ও খাদিমের জন্য বারাকাতের দু‘আ করবে।

এ হাদীসে দলীল রয়েছে যে, বিবাহ, খাদিম কিংবা কোন পশু ক্রয়ের সময় এ দু‘আ পড়া শার‘ঈভাবে প্রমাণিত-সুন্নাত।


পরিচ্ছেদঃ ৫. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - বিভিন্ন সময়ের পঠিতব্য দু‘আ

২৪৪৭-[৩২] আবূ বকরা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ বিপদগ্রস্ত লোকের দু’আ হলো,

’’আল্ল-হুম্মা রহমতাকা আরজূ ফালা- তাকিলনী ইলা- নাফসী ত্বরফাতা ’আয়নিন, ওয়া আসলিহ লী শা’নী কুল্লা-হূ, লা- ইলা-হা ইল্লা- আন্‌তা’’

(অর্থাৎ- হে আল্লাহ! আমি তোমার রহমত প্রত্যাশা করি। তুমি আমাকে আমার নিজের ওপর ক্ষণিকের জন্যও ছেড়ে দিও না। বরং তুমি নিজে আমার সকল বিষয়াদি সংশোধন করে দাও। তুমি ছাড়া প্রকৃতপক্ষে আর কোন মা’বূদ নেই।)। (আবূ দাঊদ)[1]

وَعَنْ أَبِي بَكْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «دَعَوَاتُ الْمَكْرُوبِ اللَّهُمَّ رَحْمَتَكَ أَرْجُو فَلَا تَكِلْنِي إِلَى نَفْسِي طَرْفَةَ عَيْنٍ وَأَصْلِحْ لِي شَأْنِي كُلَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد

ব্যাখ্যা: (لَا إِلٰهَ إِلَّا أَنْتَ) এ দু‘আর শেষে ‘‘লা- ইলা-হা ইল্লা- আনতা’’ এর উল্লেখ করা। এটাই ছিল মুখ্য উদ্দেশ্য। কেননা তা একক মা‘বূদের ফায়দা দেয়। অর্থাৎ- ‘ইবাদাতের যোগ্য মাত্র একজনই এটা জানিয়ে দেয়।

‘আল্লামা মানাবী (রহঃ) বলেনঃ আল্লাহ তা‘আলার হাজির-নাজির ও স্বাক্ষর শব্দ দ্বারা এটি শেষ করার দ্বারা এদিকে ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে, নিশ্চয় এ দু‘আ চিন্তিত ব্যক্তির উপকার করবে এবং চিন্তা দূর করবে। আর যে ব্যক্তি তাওহীদের সাক্ষ্য দিবে সে পার্থিব জীবনে চিন্তা দূর হওয়ার মাধ্যমে মুক্ত হয়ে যাবে এবং আখিরাতে রহমাত ও উচ্চ মর্যাদার অধিকারী হবে।


পরিচ্ছেদঃ ৫. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - বিভিন্ন সময়ের পঠিতব্য দু‘আ

২৪৪৮-[৩৩] আবূ সা’ঈদ আল খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন জনৈক ব্যক্তি এসে বললো, হে আল্লাহর রসূল! আমি বড় দুশ্চিন্তায় আছি, আমার ঘাড়ে ঋণ চেপে আছে। (এ কথা শুনে) তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, আমি কি তোমাকে এমন একটি কালাম (বাক্য) বলে দেবো না, যা পড়লে আল্লাহ তোমার চিন্তা দূর করবেন ও ঋণ পরিশোধ করবেন। সে বললো, হ্যাঁ, নিশ্চয়ই বলুন, হে আল্লাহর রসূল! তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তুমি সকাল-সন্ধ্যায় পড়বে,

’’আল্ল-হুম্মা ইন্নী আ’ঊযুবিকা মিনাল হাম্মি, ওয়াল হুযনি, ওয়া আ’ঊযুবিকা মিনাল ’আজযি, ওয়াল কাসালি ওয়া আ’ঊযুবিকা মিনাল বুখলি, ওয়াল জুবনি, ওয়া আ’ঊযুবিকা মিন্ গলাবাতিদ্ দায়নি ওয়া কহরির রিজা-ল’’

(অর্থাৎ- হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে দুশ্চিন্তা হতে মুক্তি চাই। আশ্রয় চাই অপারগতা ও অলসতা এবং কৃপণতা ও কাপুরুষতা হতে এবং ঋণের বোঝা ও মানুষের কঠোরতা হতে।)।

সে বললো, পরিশেষে আমি তা-ই করলাম। আর আল্লাহ আমার দুশ্চিন্তা মুক্ত করে দিলেন এবং ঋণও পরিশোধ করে দিলেন। (আবূ দাঊদ)[1]

وَعَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ قَالَ: قَالَ رَجُلٌ: هُمُومٌ لَزِمَتْنِي وَدُيُونٌ يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ: «أَفَلَا أُعَلِّمُكَ كَلَامًا إِذَا قُلْتَهُ أَذْهَبَ اللَّهُ هَمَّكَ وَقَضَى عَنْكَ دَيْنَكَ؟» قَالَ: قُلْتُ: بَلَى قَالَ: قُلْ إِذَا أَصْبَحْتَ وَإِذَا أَمْسَيْتَ: اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْهَمِّ وَالْحُزْنِ وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ غَلَبَةِ الدَّيْنِ وَقَهْرِ الرِّجَالِ . قَالَ: فَفعلت ذَلِك فَأذْهب الله همي وَقضى عَن ديني. رَوَاهُ أَبُو دَاوُد

ব্যাখ্যা: আবূ সা‘ঈদ (রাঃ) বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন একদিন মসজিদে প্রবেশ করলেন, দেখলেন আনসারী একজন লোক, যাকে আবূ উমামাহ্ বলা হত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হে আবূ উমামাহ্! তোমার কি হয়েছে যে, আমি তোমাকে অসময়ে মসজিদে দেখতে পাচ্ছি? তিনি বললেনঃ চিন্তা এবং ঋণ আমায় বাধ্য করছে। অর্থাৎ- অসময়ে মসজিদে আমার বসে থাকার কারণ হলো চিন্তা এবং ঋণ। সুতরাং আমি আমার প্রতিপালকের কাছে তারই ঘরে বসে মুক্তি চাই। এটা স্পষ্ট যে, নিশ্চয় হাদীসটি আবূ উমামার বর্ণনা এবং তার অনুরূপ কথা। তিনি বলেন, আমি তাই করলাম। অর্থাৎ- রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কথা মতো এ দু‘আ পড়লাম। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা আমাকে চিন্তা মুক্ত করলেন এবং আমার ঋণ পরিশোধের ব্যবস্থা করলেন।


পরিচ্ছেদঃ ৫. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - বিভিন্ন সময়ের পঠিতব্য দু‘আ

২৪৪৯-[৩৪] ’আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন তাঁর কাছে একজন মুকাতাব (চুক্তিবদ্ধ দাস) এসে বললো, আমি আমার কিতাবাতের (মুনিবের সাথে সম্পদের লিখিত চুক্তিপত্রের) মূল্য পরিশোধ করতে পারছি না, আমাকে সাহায্য করুন। উত্তরে তিনি [’আলী (রাঃ)] বললেন, আমি কি তোমাকে এমন কিছু কালাম (বাক্য) শিখিয়ে দেবো, যা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে শিখিয়েছেন? (এ দু’আর মাধ্যমে) যদি তোমার ওপর বড় পাহাড়সম ঋণের বোঝাও থাকে, আল্লাহ তা পরিশোধ করে দেবেন। তুমি পড়বে,

’’আল্ল-হুম্মাকফিনী বিহালা-লিকা ’আন্ হারা-মিকা, ওয়া আগ্‌নিনী বিফাযলিকা ’আম্মান্ সিওয়াক’’

(অর্থাৎ- হে আল্লাহ! তুমি আমাকে হালাল [জিনিসের] সাহায্যে হারাম থেকে বাঁচিয়ে রাখো এবং তুমি তোমার রহমতের মাধ্যমে আমাকে পরমুখাপেক্ষী হতে রক্ষা করো।)। (তিরমিযী, বায়হাক্বী- দা’ওয়াতুল কাবীর)[1]

আর জাবির (রাঃ)-এর(إِذَا سَمِعْتُمْ نُبَاحَ الْكِلَابِ) ’’যখন তোমরা কুকুরের আওয়াজ শুনতে পাবে’’ বর্ণিত হাদীসটিتَغْطِيَةِ الْأَوَانِىْ ’’পাত্র ঢেকে রাখা’’ অনুচ্ছেদে আমরা উল্লেখ করব ইনশা-আল্ল-হ।

وَعَن عليّ: أَنَّهُ جَاءَهُ مُكَاتَبٌ فَقَالَ: إِنِّي عَجَزْتُ عَنْ كتابي فَأَعِنِّي قَالَ: أَلَا أُعَلِّمُكَ كَلِمَاتٍ عَلَّمَنِيهِنَّ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَوْ كَانَ عَلَيْكَ مِثْلُ جَبَلٍ كَبِيرٍ دَيْنًا أَدَّاهُ اللَّهُ عَنْكَ. قُلْ: «اللَّهُمَّ اكْفِنِي بِحَلَالِكَ عَنْ حَرَامِكَ وَأَغْنِنِي بِفَضْلِكَ عَمَّنْ سِوَاكَ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَالْبَيْهَقِيُّ فِي الدَّعَوَاتِ الْكَبِيرِ
وَسَنَذْكُرُ حَدِيثَ جَابِرٍ: «إِذَا سَمِعْتُمْ نُبَاحَ الْكِلَابِ» فِي بَابِ «تَغْطِيَةِ الْأَوَانِي» إِن شَاءَ الله تَعَالَى

ব্যাখ্যা: ‘আল্লামা ত্বীবী (রহঃ) বলেনঃ মুকাতাব গোলাম সম্পদ চাইল আর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে দু‘আ শিক্ষা দিলেন। কেননা তাকে সাহায্য করার মতো কোন সম্পদ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে ছিল না। কাজেই নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে সর্বোত্তম কিছু দিয়ে ফিরিয়ে দিলেন, ‘আমল ফিরে দিলেন, আল্লাহ তা‘আলা কথার ভিত্তিতে ‘‘ভাল কথা বলা ও ক্ষমা করা সদাকাহ্ অপেক্ষা উত্তম’’। (সূরা আল বাকারাহ্ ২ : ২৬৩)

অথবা তাকে সঠিক পথ দেখালেন। এটি এদিকে ইঙ্গিত করে যে, নিশ্চয় উত্তম ও অধিক বিশুদ্ধ বিষয় হলো তা (মালিকের পাওনা) আদায় করার জন্য আল্লাহর নিকট সাহায্য চাওয়া এবং অন্যের ওপর নির্ভর না করা। আর আল্লাহ তা‘আলা এ ব্যাপারে সাহায্য করবেন।


পরিচ্ছেদঃ ৫. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - বিভিন্ন সময়ের পঠিতব্য দু‘আ

২৪৫০-[৩৫] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কোন মাজলিসে (বৈঠকে) বসতেন অথবা সালাত আদায় করতেন, তখন কিছু কালাম (বাক্য) পড়তেন। একদিন আমি ঐ সব কালাম সম্পর্কে তাঁকে জিজ্ঞেস করলে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, (মাজলিসে) যদি কল্যাণকামী আলোচনা হয় তবে তা তার জন্য কিয়ামত পর্যন্ত ’মুহর’ হিসেবে গণ্য হবে। আর যদি (মাজলিসে) অকল্যাণকর আলোচনা হয় তবে তা তার জন্য কাফফারার মধ্যে গণ্য হবে। কালামটি হলো, ’’সুবহা-নাকা আল্ল-হুম্মা ওয়া বিহাম্‌দিকা, লা- ইলা-হা ইল্লা- আন্‌তা, আস্‌তাগফিরুকা ওয়া আতূবু ইলায়কা’’ (অর্থাৎ- হে আল্লাহ! তোমার প্রশংসার সাথে তোমার পবিত্রতা বর্ণনা করছি। তুমি ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোন মা’বূদ নেই। আমি তোমার কাছে ক্ষমা চাই ও তওবা্ করি।)। (নাসায়ী)[1]

وَعَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ: إِنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ إِذَا جَلَسَ مَجْلِسًا أَوْ صَلَّى تكلَّم بِكَلِمَاتٍ فَسَأَلْتُهُ عَنِ الْكَلِمَاتِ فَقَالَ: إِنْ تُكُلِّمَ بِخَيْرٍ كَانَ طَابَعًا عَلَيْهِنَّ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ وَإِنْ تُكُلِّمَ بِشَرٍّ كَانَ كَفَّارَةً لَهُ: سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ وَبِحَمْدِكَ لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ أَسْتَغْفِرُكَ وَأَتُوبُ إِلَيْكَ . رَوَاهُ النَّسَائِيّ

ব্যাখ্যা: (كَانَ كَفَّارَةً لَه) অর্থাৎ- বৈঠকে যে আপত্তিকর, ভুল, অনিষ্টতা ভুল কথা বলেছে। অর্থাৎ- উক্ত বৈঠকে যে পাপ অর্জিত হয়েছে তার ক্ষমা হবে এ দু‘আ বলার মাধ্যমে। অতএব কোন বৈঠক অর্থাৎ- যে কোন বৈঠক শেষে মানুষের জন্য মুস্তাহাব হবে উল্লেখিত দু‘আ ‘‘সুবহা-নাকা.....’’ পাঠ করা।


পরিচ্ছেদঃ ৫. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - বিভিন্ন সময়ের পঠিতব্য দু‘আ

২৪৫১-[৩৬] কাতাদাহ্ (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, তাঁর কাছে বিশ্বস্তসূত্রে খবর এসেছে যে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নতুন চাঁদ দেখে এ বাক্যটি তিনবার বলতেন, ’’হিলা-লু খয়রিন ওয়া রুশদিন হিলা-লু খয়রিন ওয়া রুশদিন হিলা-লু খয়রিন ওয়া রুশদিন আ-মানতু বিল্লাযী খলাকক’’ (অর্থাৎ- কল্যাণ ও হিদায়াতের চাঁদ, কল্যাণ ও হিদায়াতের চাঁদ, কল্যাণ ও হিদায়াতের চাঁদ। যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন, তার ওপর আমি ঈমান আনলাম।)। অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলতেন, ’’আলহামদু লিল্লা-হিল্লাযী যাহাবা বিশাহরি কাযা- ওয়াজা-আ বিশাহরি কাযা-’’ (অর্থাৎ- সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর যিনি [বিগত] মাস শেষ করলেন এবং এই মাস আনলেন)। (আবূ দাঊদ)[1]

وَعَن قَتَادَة: بَلَغَهُ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ إِذَا رَأَى الْهِلَالَ قَالَ: «هِلَالُ خَيْرٍ وَرُشْدٍ هِلَالُ خَيْرٍ وَرُشْدٍ هِلَالُ خَيْرٍ وَرُشْدٍ آمَنْتُ بِالَّذِي خَلَقَكَ» ثَلَاثَ مَرَّاتٍ ثُمَّ يَقُولُ: «الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي ذَهَبَ بِشَهْرِ كَذَا وَجَاء بِشَهْر كَذَا» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد

ব্যাখ্যা: চাঁদ আল্লাহ তা‘আলার ‘ইবাদাতের সাথে কিয়ামের সঠিক নির্দেশনা দেয় এবং তা হজ, সিয়াম ও অন্যান্য ‘ইবাদাতের সময় নির্ণয়ক। যেমন- আল্লাহ তা‘আলার কথাঃ ‘‘তারা আপনাকে চাঁদের ব্যাপারে জিজ্ঞেস.....।’’ (সূরা আল বাকারাহ্ ২ : ১৮৯)

আবূ সা‘ঈদ আল খুদরী (রাঃ) এর অপর বর্ণনায় রয়েছে যে, যখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নতুন চাঁদ দেখতেন, তখন বলতেনঃ هِلَالُ خَيْرٌ وَّرُشْدٌ ثَلَاثُ مَرَّاتٍ ‘‘চাঁদ কল্যাণকর ও সঠিক পথের দিশা।’’ এটি তিনবার বলতেন।

اٰمَنْتُ بِالَّذِىْ خَلَقَكَ ثَلَاثُ مَرَّاتٍ ‘‘আমি ঈমান এনেছি ঐ সত্তার প্রতি যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন’’, তিনবার বলতেন। অতঃপর বলতেনঃ اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ الَّذِىْ جَاءَ بِالشَّهْرِ وَذَهَبَ بِالشَّهْرِ সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ তা‘আলার জন্য যিনি (নতুন) মাস নিয়ে এলেন এবং (বিগত) মাস নিয়ে গেলেন।


পরিচ্ছেদঃ ৫. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - বিভিন্ন সময়ের পঠিতব্য দু‘আ

২৪৫২-[৩৭] ’আবদুল্লাহ ইবনু মাস্’ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে বেশি চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে সে যেন বলে, ’’আল্ল-হুম্মা ইন্নী ’আবদুকা, ওয়াবনু ’আবদিকা ওয়াবনু আমাতিকা, ওয়াফী কবযাতিকা, না-সিয়াতী বিয়াদিকা মা-যিন ফী হুকমুকা ’আদলুন ফি কযা-উকা আস্আলুকা বিকুল্লি ইসমিন, হুওয়া লাকা সাম্‌মায়তা বিহী নাফসাকা, আও আনযালতাহূ ফী কিতা-বিকা, আও ’আল্লামতাহূ আহাদাম্ মিন্ খলকিকা, আও আলহামতা ’ইবা-দাকা, আউইস্‌তা’সারতা বিহী ফী মাকনূনিল গয়বি ’ইনদাক আন্ তাজ্’আলাল কুরআ-না রবী’আ কলবী ওয়াজালা-আ হাম্মী ওয়া গম্মী’’

(অর্থাৎ- হে আল্লাহ! আমি তোমার বান্দা, তোমার বান্দার পুত্র, তোমার দাসীর পুত্র। আমি তোমার হাতের মুঠে, আমার অদৃষ্ট তোমার হাতে। তোমার হুকুম আমার ওপর কার্যকর, তোমার আদেশ আমার পক্ষে ন্যায়। আমি তোমার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি তোমার সেসব নামের ওয়াসীলায় যাতে তুমি নিজেকে অভিহিত করেছো, অথবা তুমি তোমার কিতাবে নাযিল করেছো অথবা তুমি তোমার সৃষ্টির কাউকেও তা শিক্ষা দিয়েছো, অথবা তুমি তোমার বান্দাদের ওপর ইলহাম করেছো (অদৃশ্য অবস্থায় থেকে অন্তরে কথা বসিয়ে দেয়া) অথবা তুমি গায়বের পর্দায় তা তোমার কাছে অদৃশ্য রেখেছো- তুমি কুরআনকে আমার অন্তরের বসন্তকাল স্বরূপ চিন্তা-ফিকির দূর করার উপায় স্বরূপ গঠন করো।)। যে বান্দা যখনই তা পড়বে আল্লাহ তার চিন্তা-ভাবনা দূর করে দেবেন এবং তার পরিবর্তে মনে নিশ্চিন্ততা (প্রশান্তি) দান করবেন। (রযীন)[1]

وَعَنِ ابْنِ مَسْعُودٍ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: مَنْ كَثُرَ هَمُّهُ فَلْيَقُلْ: اللَّهُمَّ إِنِّي عَبْدُكَ وَابْنُ عَبْدِكَ وَابْنُ أَمَتِكَ وَفِي قَبْضَتِكَ نَاصِيَتِي بِيَدِكَ مَاضٍ فِيَّ حُكْمُكَ عَدْلٌ فِيَّ قَضَاؤُكَ أَسْأَلُكَ بِكُلِّ اسْمٍ هُوَ لَكَ سَمَّيْتَ بِهِ نَفْسَكَ أَوْ أَنْزَلْتَهُ فِي كِتَابِكَ أَوْ عَلَّمْتَهُ أَحَدًا مِنْ خَلْقِكَ أَوْ أَلْهَمْتَ عِبَادَكَ أَوِ اسْتَأْثَرْتَ بِهِ فِي مَكْنُونِ الْغَيْبِ عِنْدَكَ أَنْ تَجْعَلَ الْقُرْآنَ رَبِيعَ قلبِي وجِلاء هَمِّي وغَمِّي مَا قَالَهَا عَبْدٌ قَطُّ إِلَّا أَذْهَبَ اللَّهُ غمه وأبدله فرجا . رَوَاهُ رزين

ব্যাখ্যা: এখানে দলীল রয়েছে যে, নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলার ৯৯টি নাম ছাড়াও আরো অনেক নাম রয়েছে। আর এ নামগুলোর মাঝে কতকগুলো বান্দার জানা এবং কতকগুলোর ব্যাপারে বান্দা অজানা। আর আল্লাহর নামগুলোর মাধ্যমে ওয়াসীলাহ্ নেয়া বৈধ।


পরিচ্ছেদঃ ৫. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - বিভিন্ন সময়ের পঠিতব্য দু‘আ

২৪৫৩-[৩৮] জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা যখন উপরের দিকে উঠতাম, ’আল্ল-হু আকবার’ ও যখন নীচের দিকে নামতাম ’সুবহা-নাল্ল-হ’ বলতাম। (বুখারী)[1]

وَعَن جابرٍ قَالَ: كُنَّا إِذَا صَعِدْنَا كَبَّرْنَا وَإِذَا نَزَلْنَا سبحنا. رَوَاهُ البُخَارِيّ

ব্যাখ্যা: উঁচু স্থানে আরোহণের সময় ‘আল্ল-হু আকবার’ বলার সম্পর্ক হলো, উঁচু স্থান অন্তরের জন্য অতি প্রিয়, যাতে অহংকার দানা বাধে। সুতরাং তিনি নির্দেশ দিলেন, যে ব্যক্তি উঁচু ভূমি অতিক্রম করবে সে আল্লাহ তা‘আলার বড়ত্বকে স্মরণ করবে। তিনি সবকিছু থেকে বড়। যাতে সে তার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। অতঃপর তিনি তাকে তার অনুগ্রহ বৃদ্ধি করে দিবেন। আর নিচে নামার সাথে সুব্হা-নাল্ল-হ বলার সম্পর্ক হলোঃ নিম্ন জায়গাটা সংকীর্ণ স্থান।

কাজেই তার জন্য তিনি তাসবীহ পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন, কেননা তা (তাসবীহ) প্রশস্ততার কারণ। যেমন- ইউনুস (আঃ)-এর ঘটনা বর্ণিত রয়েছে, যখন তিনি অন্ধকারে তাসবীহ পড়তেন, অতঃপর তিনি দুঃশ্চিন্তা থেকে মুক্তি পেলেন। আল্লাহ তা‘আলার কথাঃ ‘‘যদি তিনি আল্লাহর তাসবীহ পাঠ না করতেন তবে তাকে কিয়ামাত পর্যন্ত মাছের পেটেই থাকতে হত।’’ (সূরা আস্ স-ফফা-ত ৩৭ : ১৪৩-১৪৪)

অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা তাকে মাছের পেটের অন্ধকার থেকে পরিত্রাণ দিলেন। আর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর তাসবীহের বাস্তবায়ন করতেন, যাতে তিনি তাঁর অনিষ্টতা থেকে মুক্তি পান এবং তাকে শত্রু পেয়ে বসা থেকে মুক্তি পান।


পরিচ্ছেদঃ ৫. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - বিভিন্ন সময়ের পঠিতব্য দু‘আ

২৪৫৪-[৩৯] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন বিষয়ে চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়লে বলতেন, ’’ইয়া- হাইয়্যু, ইয়া কইয়ূমু বিরহমতিকা আস্‌তাগীস’’ (অর্থাৎ- হে চিরঞ্জীব! হে চিরস্থায়ী! তোমার রহমতের সাথে আমি প্রার্থনা করছি)। (তিরমিযী; তিনি বলেন, হাদীসটি গরীব ও গায়রে মাহফূয)[1]

وَعَنْ أَنَسٍ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ إِذَا كَرَبَهُ أَمْرٌ يَقُولُ: «يَا حَيُّ يَا قَيُّومُ بِرَحْمَتِكَ أَسْتَغِيثُ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَقَالَ: هَذَا حَدِيثٌ غَرِيبٌ وَلَيْسَ بِمَحْفُوظٍ

ব্যাখ্যা: ইবনু আল কইয়্যূম তাঁর ‘‘আত্ব ত্বিববীন্ নাবাবী’’তে এ রোগ প্রতিহতের ক্ষেত্রে তার কথার প্রভাবের ব্যাপারে বলেনঃ (يَا حَىُّ يَا قَيُّومُ بِرَحْمَتِكَ أَسْتَغِيثُ) কেননা জীবনটা তার আবশ্যকীয় সমস্ত পরিপূর্ণ গুণাবলীর জিম্মাদার। আর চিরঞ্জীবির গুণটা সমস্ত কর্মের গুণাবলীর জিম্মাদার। এজন্য আল্লাহ তা‘আলার মহিমান্বিত নাম, যে নামেই তাকে ডাকা হোক না কেন, তিনি তাতে সাড়া দেন। যখন যে নামের মাধ্যমে যা-ই চাওয়া হবে তিনি তা দিবেন। তিনি ও তার নাম চিরঞ্জীব ও চিরপ্রতিষ্ঠিত। পূর্ণ জীবনে সকল ধরনের অসুস্থতা ও যন্ত্রণাকে প্রতিহত করে। আর এজন্য যখন জান্নাতবাসীদের জীবন পূর্ণতা লাভ করবে তখন তাদের চিন্তা, দুঃশ্চিন্তা বা কোন ধরনের বিপদ স্পর্শ করবে না।


পরিচ্ছেদঃ ৫. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - বিভিন্ন সময়ের পঠিতব্য দু‘আ

২৪৫৫-[৪০] আবূ সা’ঈদ আল খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা খন্দক যুদ্ধের দিন বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আমাদেরকে কি কিছু বলবেন? আমাদের প্রাণ তো ওষ্ঠাগত। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, হ্যাঁ আছে। তোমরা বল, ’’আল্ল-হুম্মাসতুর ’আওর-তিনা- ওয়া আ-মিন রও’আ-তিনা-’’ (অর্থাৎ- হে আল্লাহ! তুমি আমাদেরকে দোষ-ত্রুটিগুলো ঢেকে রাখো, আমাদের ভয়-ভীতি নিরাপত্তায় পরিণত করো। বর্ণনাকারী [আবূ সা’ঈদ আল খুদরী (রাঃ)] বলেন, অতএব আল্লাহ তা’আলা তার শত্রুদের ঝড়-ঝঞ্ঝা হাওয়া দিয়ে দমন করলেন এবং এ ঝড়-ঝঞ্ঝা হাওয়া দিয়েই তাদেরকে পরাজিত করলেন। (আহমাদ)[1]

وَعَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ قَالَ: قُلْنَا يَوْمَ الْخَنْدَقِ: يَا رَسُولَ اللَّهِ هَلْ مِنْ شَيْءٍ نَقُولُهُ؟ فَقَدْ بَلَغَتِ الْقُلُوبُ الْحَنَاجِرَ قَالَ: «نَعَمْ اللَّهُمَّ اسْتُرْ عَوْرَاتِنَا وَآمِنْ رَوْعَاتِنَا» قَالَ: فَضَرَبَ اللَّهُ وُجُوهَ أَعْدَائِهِ بِالرِّيحِ وَهَزَمَ اللَّهُ بِالرِّيحِ. رَوَاهُ أَحْمد

ব্যাখ্যা: আহযা-ব যুদ্ধের দিন মদীনায়, খন্দক খননের কারণ হলোঃ যখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে খবর পৌঁছল যে, মক্কাহ্বাসীরা যুদ্ধে প্রস্ত্ততি নিচ্ছে এবং তারা ‘আরবের মুশরিক ও আহলে কিতাব (ইয়াহূদী-নাসারা)-দের একত্রিত করছে, যাদের মুকাবিলা করার সামর্থ্য মুসলিমদের নেই। অতঃপর সহাবায়ে কিরামগণ পরামর্শ করলেন এবং সালমান আল ফারিসী খন্দক খননের পরামর্শ দিলেন, যা তিনি তার নিজ দেশ থেকে জেনেছেন। আর শত্রুদের ধারণা ছিল যে, তারা (মুসলিমরা) মদীনার চারপাশে তাদের মুকাবিলা করতে পারবে না, বিধায় তারা তাদের স্ত্রী-সন্তানদের ওপর নিরাপত্তা চাইবে। অতঃপর তিনি ও তার সাথীগণ ১০ দিনের অধিক সময় ধরে খন্দক খনন করলেন। আর তারা সে খননের কাজে দেখতে পেতেন কষ্ট, ক্ষুধা ও অক্ষমতা, আর এজন্যই তারা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলছিলেন, আমাদের কিছু বলবেন? উল্লেখ্য যে, খন্দাকের যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল ৫ম হিজরীর শাওয়াল মাসে।


পরিচ্ছেদঃ ৫. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - বিভিন্ন সময়ের পঠিতব্য দু‘আ

২৪৫৬-[৪১] বুরায়দাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন বাজারে প্রবেশ করলে বলতেন,

’’বিস্‌মিল্লা-হি, আল্ল-হুম্মা ইন্নী আস্আলুকা খয়রা হা-যিহিস্ সূকি ওয়া খয়রা মা- ফীহা-, ওয়া আ’ঊযুবিকা মিন্ শাররিহা- ওয়া শাররি মা- ফীহা-। আল্ল-হুম্মা ইন্নী আ’ঊযুবিকা আন্ উসীবা ফীহা- সফক্বতান খ-সিরাতান’’

(অর্থাৎ- আল্লাহর নামে, হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে বাজারের কল্যাণ এবং এতে যা আছে তার কল্যাণ চাই। আমি আশ্রয় চাই এর অকল্যাণ হতে এবং এতে যা আছে তার অকল্যাণ হতে। হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে আশ্রয় চাই, এতে যেন কোন ক্ষয়-ক্ষতি ও ক্রয়-বিক্রয়ের ফাঁদে না পড়ি।)। (বায়হাক্বী- দা’ওয়াতুল কাবীর)[1]

وَعَن بُرَيْدَة قَالَ: كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا دَخَلَ السُّوقَ قَالَ: «بِسْمِ اللَّهِ اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ خَيْرَ هَذِهِ السُّوقِ وَخَيْرِ مَا فِيهَا وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّهَا وَشَرِّ مَا فِيهَا اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ أَنْ أُصِيبَ فِيهَا صَفْقَةً خَاسِرَةً» . رَوَاهُ الْبَيْهَقِيُّ فِي الدَّعَوَاتِ الْكَبِير

ব্যাখ্যা: ‘আল্লামা আল মানাবী (রহঃ) বলেনঃ নিশ্চয় (বাজারে গমনকারী ব্যক্তি) সে বাজারের কল্যাণ চাইবে এবং তার অনিষ্টতা থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করবে তার অন্তর থেকে উদাসীনতা দূর করার জন্য। সুতরাং সে এ বাক্যগুলো পড়বে উদাসীন অবস্থা থেকে বের হওয়ার জন্য। অতএব যে বাজারে প্রবেশ করবে তার জন্য এ কথাগুলো (উল্লেখিত দু‘আ) মুখস্থ করা মুস্তাহাব। যখন এতে প্রবেশকারীগণ এ কালিমাগুলো বলবে তখন অন্তরে যে উদাসীনতা ভর করবে তা দূর হয়ে যাবে।


পরিচ্ছেদঃ ৬. প্রথম অনুচ্ছেদ - আশ্রয় প্রার্থনা করা

২৪৫৭-[১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা বিপদাপদে কষ্ট-ক্লিষ্ট ও দুর্ভাগ্যের আক্রমণ, ভাগ্যের অনিষ্টতা এবং বিপদগ্রস্তে শত্রুর উপহাস থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করো। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

بَابُ الْإِسْتِعَاذَةِ

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ «تَعَوَّذُوا بِاللَّهِ مِنْ جَهْدِ الْبَلَاءِ وَدَرَكِ الشَّقَاءِ وَسُوءِ القضاءِ وشَماتة الْأَعْدَاء»

ব্যাখ্যা: এখানে আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাওয়ার আদেশ করার দ্বারা এর বৈধতা সাব্যস্ত হয়। বিপদ থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাওয়া তাকদীর (ভাগ্যের)-এর বিশ্বাসে পরিপন্থী নয়। আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাওয়া ও দু‘আ করাও ভাগ্যের বহিঃপ্রকাশ। যেমন কোন ব্যক্তির বিপদে পতিত হলো আর তার ভাগ্যে লেখা ছিল- যে এর থেকে মুক্তির জন্য আল্লাহর নিকট দু‘আ করবে তাই সে দু‘আ করল এবং মুক্তি লাভ করল। আর আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাওয়া ও দু‘আ করার মাধ্যমে আল্লাহর প্রতি বান্দার প্রয়োজন ও ভীত-সন্ত্রস্ত ভাব প্রকাশ পায় (যা আল্লাহর কাম্য)।

অত্র হাদীসে যে বিষয় বা অবস্থাসমূহ থেকে আশ্রয় চাওয়ার কথা বলা হয়েছে সেগুলোর প্রথমটি হলো বিপদের কষ্ট। এখানে এমন বিপদের অবস্থা থেকে আশ্রয় চাইতে বলা হয়েছে- যে অবস্থায় বান্দাকে পরীক্ষা করা হয় এবং মৃত্যু কামনা করার মতো অবস্থার সৃষ্টি হয়। অর্থাৎ- এমন অবস্থা যখন মৃত্যু ও ঐ কঠিন অবস্থার মধ্যে যে কোন একটিকে বেছে নিতে বলা হয়, তাহলে সে ব্যক্তি ঐ কঠিন অবস্থা থেকে বাঁচতে মৃত্যুকে বেছে নেবে। কেউ কেউ বলেছেনঃ কঠিন বিপদ দ্বারা এমন বিপদ বুঝানো হয়েছে যা সহ্য করার কিংবা প্রতিরোধ করার ক্ষমতা ব্যক্তির নেই। কারো মতে এর দ্বারা স্বল্প অর্থ সম্পদ ও অধিক পরিবার-পরিজন বুঝানো হয়েছে।

মূলত এটি একটি ব্যাপক অবস্থা। এর মধ্যে সকল বিপদই অন্তর্ভুক্ত। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর থেকে আশ্রয় চেয়েছেন এজন্য যে, এ অবস্থা ব্যক্তিকে দীনের অনেক বিষয় পালনে অপারগ করে এবং বিপদ সহ্য করতে বাধা দেয়। ফলে সে বিপদে ধৈর্য ধারণ করতে না পেরে গুনাহে লিপ্ত হয়।

দুর্ভাগ্যের আক্রমণ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো খারাপ। ইমাম আশ্ শাওকানী (রহঃ) বলেন, দুর্ভাগ্যের আক্রমণ হলো পার্থিব বিষয়াবলীর ক্ষেত্রে কঠিন অবস্থার মুখোমুখি হওয়া ও সংকীর্ণ জীবন-যাপন করা। নিজের শরীরের, পরিবারের কিংবা সম্পদের অনিষ্ট সাধিত হওয়া। এটা কখনো পরকালীন বিষয়ের সাথে সম্পৃক্তও হয়। পার্থিব জীবনে কৃত গুনাহের কারণেও এরূপ শাস্তি দেয়া হতে পারে। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর থেকে আশ্রয় চেয়েছেন এজন্য যে, এটি বিপদ-আপদ বা পরীক্ষার সর্বশেষ অবস্থা। এক্ষেত্রে যাকে পরীক্ষা করা হয় সে সাধারণত ধৈর্য ধারণ করতে পারে না। কারো কারো মতে, (وَدَرْكِ الشَّقَاءِ) বলতে জাহান্নামের একটি স্তরকে বুঝানো হয়েছে। এর অর্থ হলো দুর্ভাগ্যবানদের আবাসস্থল; জাহান্নামের এমন স্তর যেখানে দুর্ভাগ্যবানরা বসবাস করবে।

আশ্রয় চাওয়া তৃতীয় বিষয়টি হলো, ব্যক্তির ভাগ্যে নির্ধারিত এমন বিষয় যা তাকে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত করে। এটা হতে পারে তার দীনের পার্থিব, ব্যক্তিগত, পারিবারিক বা অর্থনৈতিক বিষয়ের সাথে সম্পৃক্ত। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক ভাগ্যের খারাপী থেকে আশ্রয় চাওয়া দ্বারা ভাগ্যের প্রতি অসন্তুষ্টি প্রমাণ হয় না। কেননা ভাগ্যের খারাপ দিকগুলো থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাওয়ার বিষয়টিও আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত ভাগ্যের অন্তর্ভুক্ত। এজন্যই আল্লাহ তার বান্দাদের জন্য এটিকে বৈধ করেছেন। একই প্রেক্ষিতে বিতরের সালাতের কুনূতে পড়া হয় (وَقِنِىْ شَرَّ مَا قَضَيْتُ) ‘‘এবং তোমার নির্ধারিত ভাগ্যের খারাপ দিক থেকে আমাকে রক্ষা করো’’।

বান্দার ক্ষেত্রে ভাগ্য (কাযা) দু’ ভাগে বিভক্ত; ভাল ও মন্দ। আর আল্লাহ মন্দ ভাগ্য থেকে আশ্রয় চাইতে বলেছেন। এটি ঈমানের সাথে সাংঘর্ষিক নয়। তাই ভাগ্যের ভাল-মন্দের প্রতি বিশ্বাসী মু’মিন ব্যক্তি ভাগ্যের মন্দ দিক থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করতে কোন নিষেধ নেই। কারণ ভাগ্যের ভাল-মন্দের প্রতি বিশ্বাস সম্পর্কিত হাদীস দ্বারা ভাগ্যের দু’টো দিকের প্রতি বিশ্বাসের কথাই বলা হয়েছে।

অপরদিকে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক ভাগ্যের মন্দ দিক থেকে আশ্রয় চাওয়ার বিষয়টি প্রমাণিত হওয়ায় বুঝা যায় যে, আমাদের ঈমান ও আশ্রয় চাওয়া উভয়টিই শারী‘আত প্রণেতা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আদেশের অধীন। ‘আল্লামা সিন্দী (রহঃ) বলেন, এখানে ভাগ্য পরিবর্তন দ্বারা অস্থায়ী ভাগ্য উদ্দেশ্য করা হয়েছে; চিরস্থায়ী ভাগ্য নয়। চতুর্থ বিষয় হলো, শত্রুর হাসা বা খুশি হতে আশ্রয় চাওয়া। এখানে শত্রু দ্বারা দীনের এবং দীনের সাথে সম্পৃক্ত দুনিয়ার শত্রু বুঝানো হয়েছে। শত্রুর আনন্দ থেকে আশ্রয় চাওয়ার কথা বলা হয়েছে এজন্য যে, শত্রুর আনন্দ মানবমনে কঠিন প্রভাব বিস্তার করে।

এ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, অন্ত্যমিলযুক্ত বাক্য রচনা করা মাকরূহ নয়।


পরিচ্ছেদঃ ৬. প্রথম অনুচ্ছেদ - আশ্রয় প্রার্থনা করা

২৪৫৮-[২] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেনঃ ’’আল্ল-হুম্মা ইন্নী আ’ঊযুবিকা মিনাল হাম্মি ওয়াল হুযনি ওয়াল ’আজযি ওয়াল কাসালি ওয়াল জুবনি ওয়াল বুখলি, ওয়া যলা’ইদ্ দায়নি ওয়া গলাবাতির্ রিজা-ল’’ (অর্থাৎ- হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে দুশ্চিন্তা, শোক-তাপ, অক্ষমতা-অলসতা, কাপুরুষতা, কৃপণতা, ঋণের বোঝা ও মানুষের জোর-জবরদস্তি হতে আশ্রয় চাই)। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

بَابُ الْإِسْتِعَاذَةِ

وَعَنْ أَنَسٍ قَالَ كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْهَمِّ وَالْحُزْنِ وَالْعَجْزِ وَالْكَسَلِ وَالْجُبْنِ وَالْبُخْلِ وَضَلَعِ الدَّيْنِ وَغَلَبَةِ الرِّجَالِ»

ব্যাখ্যা: (اَلْعَجْزِ) বা অক্ষমতা বলতে ইমাম নাবাবী (রহঃ) কল্যাণকর কাজ করার ক্ষমতা না থাকাকে বুঝিয়েছেন। (اَلْكَسَلِ) বা অলসতা দ্বারা মূলত কল্যাণকর কাজ করতে উদ্দীপনা অনুভব না করা এবং তা করার সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও তা করতে আগ্রহ না থাকা। (اَلْجُبْنِ) বা কাপুরুষতা দ্বারা সাহসহীনতা বুঝানো হয়েছে। কারো মতে এর দ্বারা প্রাণভয়ে যুদ্ধে যেতে না চাওয়া কিংবা আবশ্যক অধিকার আদায় থেকে নিজের জীবন ও সম্পদকে বিরত রাখা। (اَلْبُخْلِ) বা কৃপণতা দ্বারা দানশীলতার বিপরীত স্বভাবকে বুঝানো হয়েছে। শারী‘আতের দৃষ্টিতে কৃপণতা বলতে আবশ্যক দান না করাকে বুঝায়।

ইমাম নাবাবী (রহঃ) বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাপুরুষতা ও কৃপণতা থেকে আশ্রয় চেয়েছেন এজন্য যে, এগুলো ইসলামের ওয়াজিব কাজগুলো আদায় করতে, আল্লাহর হকসমূহ পালন করতে, অন্যায় দূরীকরণে, আল্লাহদ্রোহীদের বিরুদ্ধে কঠোর হতে অক্ষম করে। সাহসিকতার দ্বারা ব্যক্তি ‘ইবাদাতসমূহ সঠিকভাবে পালন করতে পারে, মাযলূমকে সহযোগিতা করতে ও জিহাদে অংশগ্রহণ করতে পারে এবং কৃপণতা থেকে নিরাপদ থাকলে ব্যক্তি আর্থিক হকসমূহ আদায় করতে পারে এবং আল্লাহর পথে খরচ করতে, দানশীল হতে ও চারিত্রিক উৎকর্ষ সাধনে উদ্দীপ্ত হয়। নিজের নয় এমন জিনিসের প্রতি লোভ করা থেকে বিরত হয়।

(ضَلَعِ الدَّيْنِ) বা ঋণের বোঝা দ্বারা ঋণের ভারে জর্জরিত হওয়া এবং এর কাঠিন্যকে বুঝানো হয়েছে। এর দ্বারা মূলত এমন অবস্থাকে বুঝানো হয়েছে যখন কোন ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি ঋণ পরিশোধের জন্য কিছুই পায় না; বিশেষ করে মানুষের কাছে সাহায্যের আবেদন করার পরও। এজন্যই পূর্ববর্তী অনেক পণ্ডিত বলেছেন, (ما دخل هم الدين قلبًا إلا أذهب من العقل ما لا يعود إليه) অর্থাৎ- ‘‘ঋণের দুশ্চিন্তা ঋণী ব্যক্তির অন্তরে প্রবেশ করে জ্ঞান-বুদ্ধির এমন কিছু দূর করে দেয় যা তার নিকট আর ফেরত আসে না।’’


পরিচ্ছেদঃ ৬. প্রথম অনুচ্ছেদ - আশ্রয় প্রার্থনা করা

২৪৫৯-[৩] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেনঃ

’’আল্ল-হুম্মা ইন্নী আ’ঊযুবিকা মিনাল কাসালি ওয়াল হারামি ওয়াল মাগ্‌রামি ওয়াল মা’সামি, আল্ল-হুম্মা ইন্নী আ’ঊযুবিকা মিন্ ’আযা-বিন্ না-রি ওয়া ফিত্‌নাতিন্ না-রি ওয়া ওয়া ফিতনাতিল কব্‌রি ’আযা-বিল কব্‌রি ওয়ামিন্ শার্‌রি ফিত্‌নাতিল গিনা-, ওয়ামিন্ শার্‌রি ফিত্‌নাতিল ফাকরি ওয়ামিন্ শার্‌রি ফিত্‌নাতিল মাসীহিদ্ দাজ্জা-লি, আল্ল-হুম্মাগসিল খত্বা-ইয়া-ইয়া বিমা-য়িস্ সালজি ওয়াল বারাদি ওয়া নাক্কি কলবী কামা- ইউনাক্কাস্ সাওবুল আবয়াযু মিনাদ্দানাসি ওয়াবা-’ইদ্ বায়নী ওয়াবায়না খত্বা-ইয়া-ইয়া কামা- বা’আদ্তা বায়নাল মাশরিকি ওয়াল মাগ্‌রিব’’

(অর্থাৎ- হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে অলসতা, বার্ধক্য, ঋণ ও গুনাহ থেকে আশ্রয় চাই। হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে জাহান্নামের আগুন, জাহান্নামের পরীক্ষা, কবরের পরীক্ষা ও শাস্তি হতে, স্বচ্ছলতার পরীক্ষার মন্দাভাব ও দারিদ্রের পরীক্ষার মন্দাভাব হতে এবং মাসীহুদ (কানা) দাজ্জালের পরীক্ষার অনিষ্টতা হতে আশ্রয় চাই। হে আল্লাহ! তুমি আমার গুনাহসমূহ বরফের ও শিলার পানি দিয়ে ধুয়ে দাও। আমার অন্তরকে পরিষ্কার করে দাও যেভাবে সাদা কাপড়, ময়লা হতে পরিষ্কার করা হয় এবং আমার ও আমার গুনাহের মধ্যে এমন ব্যবধান তৈরি করে দাও যেমনভাবে পূর্ব ও পশ্চিমের মধ্যে রেখেছো।)। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

بَابُ الْإِسْتِعَاذَةِ

وَعَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ: كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْكَسَلِ وَالْهَرَمِ وَالْمَغْرَمِ وَالْمَأْثَمِ اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ النَّارِ وَفِتْنَةِ النَّارِ وَفِتْنَةِ الْقَبْرِ وَعَذَابِ الْقَبْرِ وَمِنْ شَرِّ فِتْنَةِ الْغِنَى وَمِنْ شَرِّ فِتْنَةِ الْفَقْرِ وَمِنْ شَرِّ فِتْنَةِ الْمَسِيحِ الدَّجَّالِ اللَّهُمَّ اغْسِلْ خَطَايَايَ بِمَاءِ الثَّلْجِ وَالْبَرَدِ وَنَقِّ قَلْبِي كَمَا يُنَقَّى الثَّوْبُ الْأَبْيَضُ مِنَ الدَّنَسِ وَبَاعِدْ بَيْنِي وَبَيْنَ خَطَايَايَ كَمَا بَاعَدْتَ بَيْنَ الْمَشْرِقِ وَالْمغْرب»

ব্যাখ্যা: অত্র হাদীসের (اَلْهَرَمِ) ‘‘আল হারাম’’ বলতে বার্ধক্যকে বুঝানো হয়েছে। যখন মানুষের জ্ঞান-বুদ্ধি ক্রমশ লোপ পেতে থাকে, আল্লাহর আনুগত্যমূলক কাজকর্ম পালনে অক্ষমতা আসে, কিছু ‘ইবাদাত পালনে অলসতা আসে, ইন্দ্রিয় শক্তি দুর্বল হতে থাকে। এমতাবস্থায় ইন্দ্রিয় শক্তির সুস্থতা ও সঠিক বুঝ ক্ষমতা থাকাসহ দীর্ঘ বয়স পর্যন্ত বেঁচে থাকার প্রতি এ হাদীসে দু‘আ করতে বলা হয়েছে।

এখানে আগুনের শাস্তি দ্বারা এর ফিতনা থেকে আশ্রয় চাওয়ার কথা বলা হয়েছে। ‘আল্লামা কারী বলেছেনঃ এর অর্থ হলো আমি জাহান্নামী বা আগুনের অধিবাসী হওয়া থেকে আপনার নিকট আশ্রয় চাই। (فِتْنَةِ النَّارِ) বা আগুনের ফিতনা দ্বারা এমন ফিতনাহ্ বা পরীক্ষাকে বুঝানো হয়েছে যা আগুনের শাস্তির দিকে নিয়ে যায়। এর দ্বারা জাহান্নামের প্রহরীদের প্রশ্নকেও বুঝানো হতে পারে, যার কথা ৬৭ নং সূরার ৮ নং আয়াতে বলা হয়েছে। ফিতনা দ্বারা মূলত পরীক্ষা, কাঙ্ক্ষিত বহু অর্জনে গাফলতি, দীন থেকে প্রত্যাবর্তন করার জন্য বাধ্য করা; বিভ্রান্তি, গুনাহ, কুফর, ‘আযাব ইত্যাদি বুঝানো হয়। কবরের ফিতনা বলতে কবরে নিয়োজিত দু’জন মালাকের (ফেরেশতার) করা প্রশ্নের উত্তরে বেদিশা হয়ে যাওয়া।

ইমাম শাওকানী (রহঃ) বলেন, শয়তান মৃত ব্যক্তিকে তার কবরে কুমন্ত্রণা দেয় যাতে করে সে মালায়িকাহ্’র (ফেরেশতাগণের) করা প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে না পারে।

ধনীর ফিতনার অনিষ্টতা হচ্ছে অহংকার, অবাধ্যতা, হারাম পন্থায় সম্পদ উপার্জন ও গুনাহের কাজে তা খরচ করা, সম্পদের ও সম্মানের অহংকার করা, সম্পদের যে ফরয ও নফল হক রয়েছে তা হকদারকে প্রদান করতে কৃপণতা করা।

দারিদ্র্যতার ফিতনার অনিষ্টতা হচ্ছে বিরক্ত হওয়া, অধৈর্য হওয়া, প্রয়োজনে হারাম কিংবা এর সদৃশ কোন কর্মে পতিত হওয়া। কারীর মতে, এটা হচ্ছে ধনীদের হিংসা করা, তাদের ধন-সম্পদ কামনা করা, আল্লাহ তার জন্য যা বণ্টন করেছেন তাতে অসন্তুষ্ট হওয়া ইত্যাদি সহ এমন সকল কর্ম যার শেষ পরিণতি প্রশংসনীয় নয়।


পরিচ্ছেদঃ ৬. প্রথম অনুচ্ছেদ - আশ্রয় প্রার্থনা করা

২৪৬০-[৪] যায়দ ইবনু আরক্বম (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেনঃ

’’আল্ল-হুম্মা ইন্নী আ’ঊযুবিকা মিনাল ’আজযি ওয়াল কাসালি ওয়াল জুবনি ওয়াল বুখলি ওয়াল হারামি ওয়া ’আযা-বিল কবরি, ’আল্ল-হুম্মা আ-তি নাফসী তাকওয়া-হা- ওয়াযাক্কিহা- আন্‌তা খয়রু মিন্ যাক্কা-হা- আন্‌তা ওয়ালিয়্যুহা- ওয়ামাও লা- হা-, আল্ল-হুম্মা ইন্নী আ’ঊযুবিকা মিন্ ’ইল্‌মিন লা- ইয়ানফা’উ ওয়ামিন্ কলবিন লা- ইয়াখশা’উ ওয়ামিন্ নাফসিন লা- তাশবা’উ ওয়ামিন্ দা’ওয়াতিন্ লা- ইউসতাজা-বু লাহা-’’

(অর্থাৎ- হে আল্লাহ! আমি অক্ষমতা, অলসতা, কাপুরুষতা, কৃপণতা, বার্ধক্য ও কবরের ’আযাব হতে তোমার কাছে আশ্রয় চাই। হে আল্লাহ! তুমি আমার আত্মাকে সংযমী করো ও একে পবিত্র করো। তুমিই শ্রেষ্ঠ পুতঃপবিত্রকারী, তুমি তার অভিভাবক ও রব। হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে ঐ জ্ঞান লাভ হতে আশ্রয় চাই, যে জ্ঞান (আত্মার) কোন উপকারে আসে না, ঐ অন্তর হতে মুক্তি চাই যে অন্তর তোমার ভয়ে ভীত হয় না। ঐ মন হতে আশ্রয় চাই যে মন তৃপ্তি লাভ করে না এবং ঐ দু’আ হতে, যে দু’আ কবূল করা হয় না।)। (মুসলিম)[1]

بَابُ الْإِسْتِعَاذَةِ

وَعَنْ زَيْدِ بْنِ أَرْقَمَ قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْعَجْزِ وَالْكَسَلِ وَالْجُبْنِ وَالْبُخْلِ وَالْهَرَمِ وَعَذَابِ الْقَبْرِ اللَّهُمَّ آتِ نَفْسِي تَقْوَاهَا وَزَكِّهَا أَنْتَ خَيْرُ مَنْ زَكَّاهَا أَنْتَ وَلِيُّهَا وَمَوْلَاهَا اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ عِلْمٍ لَا يَنْفَعُ وَمِنْ قَلْبٍ لَا يَخْشَعُ وَمِنْ نَفْسٍ لَا تَشْبَعُ وَمِنْ دَعْوَةٍ لَا يُسْتَجَاب لَهَا» . رَوَاهُ مُسلم

ব্যাখ্যা: অত্র হাদীসে (الْجُبْنُ) ‘‘জুবন’’ বা কাপুরুষতা বলতে মূলত আল্লাহর সন্তুষ্টিমূলক শার‘ঈ বড় বড় ও কষ্টসাধ্য কাজ যেমন ফাতাওয়া ও নেতৃত্ব দেয়ার মতপর্যায়ের শার‘ঈ জ্ঞান অর্জন করার যোগ্যতাকে বুঝানো হয়েছে। তবে কারো যদি মেধা, বুঝ-ব্যবস্থা, মুখস্থশক্তি কম থাকে কিংবা দৈনন্দিন জীবিকা অর্জনের কাজে ব্যস্ত থাকতে হয় তাহলে তার ক্ষেত্রে ঐ পর্যায়ে না পৌঁছতে পারাটা কাপুরুষতা বলে গণ্য হবে না। আর এখানে (الْبُخْلُ) ‘‘বুখল’’ বা কৃপণতা বলতে মানুষের দীনী কোন বিষয়ে মানুষ কিছু জানতে চাইলে তা তাদেরকে না জানানোকে বুঝানো হয়েছে।

কবরের ‘আযাব বলতে কবর সংকীর্ণ হওয়া, অন্ধকারাচ্ছন্ন হওয়া, নিঃসঙ্গতা, হাতুড়ির পিটুনি, সাপ-বিচ্ছুর দংশন ও এ জাতীয় অন্যান্য শাস্তিকে বুঝানো হয়েছে। তবে এখানে কবরের আযাব থেকে আশ্রয় চাওয়ার দ্বারা যেসব কাজ কবরের ‘আযাবের কারণ। যেমন- চোগলখোরী, একের কথা অপরের কাছে বলা (নেতিবাচক অর্থে), প্রসাব থেকে যথাযথভাবে পবিত্র না হওয়া ইত্যাদি থেকে আশ্রয় চাওয়ার কথা বলা হয়েছে।

আত্মার তাকওয়া বা সংযম দ্বারা মূলত সকল বর্জনীয় কথা ও কর্ম থেকে আত্মাকে সংরক্ষিত রাখাকে বুঝানো হয়েছে। আর অন্তরকে পবিত্র করার দ্বারা একে সকল গুনাহ থেকে পবিত্র করা, সকল দোষ-ত্রুটি থেকে মুক্ত করা এবং অন্তরকে ঈমানের আলোয় পূর্ণভাবে আলোকিত করে পবিত্র করার আহবান জানানো হয়েছে।

ওলী বলতে ব্যবস্থাপক, সংস্কারক, সৌন্দর্যকারক বা সাহায্যকারী বুঝানো হয়েছে। মাওলা অর্থও একই।

অত্র হাদীসে এমন জ্ঞান যা উপকারে আসে না সে জ্ঞান থেকে আশ্রয় চাওয়ার কথা বলা হয়েছে। আর সে জ্ঞান হলো ঐ জ্ঞান যে জ্ঞান অনুযায়ী বাস্তব কর্ম সম্পাদিত হয় না। অর্থাৎ- ‘আমলে পরিণত হয় না, যা মানুষকে শিক্ষা দেয়া হয় না, যে জ্ঞানের বারাকাত আমার অন্তরে প্রবেশ করে না; যে জ্ঞান আমার কর্ম, কথা, খারাপ চরিত্রকে পরিবর্তন করে আল্লাহর দিকে ধাবিত করে না এবং চরিত্রকে সভ্য ও মার্জিত করে না।

ঐ জ্ঞান দ্বারা এটাও বুঝানো হতে পারে, যে জ্ঞান অর্জনের কোন প্রয়োজন দীনে নেই কিংবা যে জ্ঞান অর্জনে শারী‘আত অনুমতি দেয় না।

এমন অন্তর থেকে আশ্রয় চাওয়ার কথা বলা হয়েছে, যে অন্তর আল্লাহকে ভয় করে না, আল্লাহর স্মরণে বা তাঁর কালাম তথা কথা শুনে ভীত হয় না। এ অন্তর হলো কঠোর অন্তর। কারী বলেনঃ এ অন্তর হলো ঐ অন্তর যা আল্লাহর যিকিরের মাধ্যমে প্রশান্ত হয় না।

এমন আত্মা থেকেও আশ্রয় চাওয়ার কথা বলা হয়েছে, যে আত্মা তার প্রতি আল্লাহর দেয়া রিযক-এর প্রতি সন্তুষ্টি হতে পারে না। অর্থ-সম্পদের অধিক লোভ থেকে যে মুক্ত হতে পারে না। এমন ব্যক্তি, যে বেশি বেশি খায় এবং বেশি খাওয়ার কারণে বেশি বেশি ঘুমায়, অলস থাকে, শায়ত্বনী কুমন্ত্রণা অন্তরে উদিত হয়, অন্তরের ব্যাধি সৃষ্টি হয় যা ক্রমশ তাকে দুনিয়া ও আখিরাতের ক্ষতির দিকে নিয়ে যায়। ইবনুল মালিক বলেনঃ এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, দুনিয়ার সকল সম্পদের প্রতি লোভ (যা দেখে তাই সংগ্রহ করতে চায়) এবং দুনিয়ার বিভিন্ন পদ পদবী অর্জনের লোভ। এখানে ঐসব অন্তর থেকে আশ্রয় চাওয়ার কথা বলা হয়েছে যেগুলোর পেটের ক্ষুধার চেয়ে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ক্ষুধা (চোখের ক্ষুধা) বেশি।

এমন দু‘আ থেকেও আশ্রয় চাওয়ার কথা বলা হয়েছে যে দু‘আ কবূল হয় না এজন্য যে, ঐ দু‘আর মধ্যে গুনাহ থাকে অথবা সত্যের অনুকূলে থাকে না। তবে এখানে সাধারণভাবে সকল দু‘আ কবূল না হওয়ার কথাই বলা হয়েছে।

ইমাম শাওকানী (রহঃ) বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে জ্ঞান উপকারে আসে না সে জ্ঞান থেকে আশ্রয় চেয়েছেন এজন্য যে, ঐ জ্ঞান জ্ঞানীর জন্য বিপদের কারণ হবে এবং তার বিরুদ্ধে দলীল হিসেবে দাঁড়াবে। যে অন্তর আল্লাহর ভয়ে ভীত হয় না তা থেকে আশ্রয় চেয়েছেন এজন্য যে, এ অন্তর হয় কঠিন ও শক্ত। কোন ওয়াজ, নাসীহাত, ভয়-ভীতি, আশার বাণী কোন কিছুই এ অন্তরের উপর প্রভাব বিস্তার করতে পারে না। যে আত্মা পরিতৃপ্ত হয় না না থেকে আশ্রয় চেয়েছেন এজন্য যে, এ আত্মা সামান্য তুচ্ছ বস্ত্ত অর্জনেও কুকুরের মতো ঝাঁপিয়ে পরে এবং হারাম অর্থ-সম্পদ অর্জনে দুঃসাহস দেখায়, আল্লাহ তা‘আলার দেয়া রিযক্বে তুষ্ট থাকে না, সে দুনিয়ার পরিশ্রমে সর্বদা ডুবে থাকে এবং আখিরাতের শাস্তিতে নিমজ্জিত থাকবে।

নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে দু‘আ কবূল হয় না তা থেকে আশ্রয় চেয়েছেন এজন্য যে, আল্লাহ এমন রব যিনি দানকারী, প্রশস্ত হাতের অধিকারী এবং বান্দার উপকার সাধনকারী। বান্দা যখন তাঁর কাছে দু‘আ করে আর সে দু‘আ যদি কবূল না হয় তাহলে ঐ দু‘আকারীর জন্য ধ্বংস ছাড়া আর কোন পথ নেই। কারণ সে এমন সত্তার নিকট থেকে খালি হাতে বিতাড়িত হয়েছে যে ছাড়া আর কারো কাছ থেকে কল্যাণ আশা করা যায় না এবং সে ছাড়া কারো কাছ থেকে অনিষ্টের প্রতিরোধ আশা করা যায় না। হে আল্লাহ! আমরাও তোমার কাছে ঐসব জিনিস ও বিষয় থেকে আশ্রয় চাই যেগুলো থেকে তোমার নিকট আশ্রয় চেয়েছেন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।


দেখানো হচ্ছেঃ ২৪৪১ থেকে ২৪৬০ পর্যন্ত, সর্বমোট ৫১৫৪ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে পাতা নাম্বারঃ « আগের পাতা 1 2 3 4 · · · 120 121 122 123 124 · · · 255 256 257 258 পরের পাতা »