২৪৫৭

পরিচ্ছেদঃ ৬. প্রথম অনুচ্ছেদ - আশ্রয় প্রার্থনা করা

২৪৫৭-[১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা বিপদাপদে কষ্ট-ক্লিষ্ট ও দুর্ভাগ্যের আক্রমণ, ভাগ্যের অনিষ্টতা এবং বিপদগ্রস্তে শত্রুর উপহাস থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করো। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

بَابُ الْإِسْتِعَاذَةِ

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ «تَعَوَّذُوا بِاللَّهِ مِنْ جَهْدِ الْبَلَاءِ وَدَرَكِ الشَّقَاءِ وَسُوءِ القضاءِ وشَماتة الْأَعْدَاء»

ব্যাখ্যা: এখানে আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাওয়ার আদেশ করার দ্বারা এর বৈধতা সাব্যস্ত হয়। বিপদ থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাওয়া তাকদীর (ভাগ্যের)-এর বিশ্বাসে পরিপন্থী নয়। আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাওয়া ও দু‘আ করাও ভাগ্যের বহিঃপ্রকাশ। যেমন কোন ব্যক্তির বিপদে পতিত হলো আর তার ভাগ্যে লেখা ছিল- যে এর থেকে মুক্তির জন্য আল্লাহর নিকট দু‘আ করবে তাই সে দু‘আ করল এবং মুক্তি লাভ করল। আর আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাওয়া ও দু‘আ করার মাধ্যমে আল্লাহর প্রতি বান্দার প্রয়োজন ও ভীত-সন্ত্রস্ত ভাব প্রকাশ পায় (যা আল্লাহর কাম্য)।

অত্র হাদীসে যে বিষয় বা অবস্থাসমূহ থেকে আশ্রয় চাওয়ার কথা বলা হয়েছে সেগুলোর প্রথমটি হলো বিপদের কষ্ট। এখানে এমন বিপদের অবস্থা থেকে আশ্রয় চাইতে বলা হয়েছে- যে অবস্থায় বান্দাকে পরীক্ষা করা হয় এবং মৃত্যু কামনা করার মতো অবস্থার সৃষ্টি হয়। অর্থাৎ- এমন অবস্থা যখন মৃত্যু ও ঐ কঠিন অবস্থার মধ্যে যে কোন একটিকে বেছে নিতে বলা হয়, তাহলে সে ব্যক্তি ঐ কঠিন অবস্থা থেকে বাঁচতে মৃত্যুকে বেছে নেবে। কেউ কেউ বলেছেনঃ কঠিন বিপদ দ্বারা এমন বিপদ বুঝানো হয়েছে যা সহ্য করার কিংবা প্রতিরোধ করার ক্ষমতা ব্যক্তির নেই। কারো মতে এর দ্বারা স্বল্প অর্থ সম্পদ ও অধিক পরিবার-পরিজন বুঝানো হয়েছে।

মূলত এটি একটি ব্যাপক অবস্থা। এর মধ্যে সকল বিপদই অন্তর্ভুক্ত। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর থেকে আশ্রয় চেয়েছেন এজন্য যে, এ অবস্থা ব্যক্তিকে দীনের অনেক বিষয় পালনে অপারগ করে এবং বিপদ সহ্য করতে বাধা দেয়। ফলে সে বিপদে ধৈর্য ধারণ করতে না পেরে গুনাহে লিপ্ত হয়।

দুর্ভাগ্যের আক্রমণ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো খারাপ। ইমাম আশ্ শাওকানী (রহঃ) বলেন, দুর্ভাগ্যের আক্রমণ হলো পার্থিব বিষয়াবলীর ক্ষেত্রে কঠিন অবস্থার মুখোমুখি হওয়া ও সংকীর্ণ জীবন-যাপন করা। নিজের শরীরের, পরিবারের কিংবা সম্পদের অনিষ্ট সাধিত হওয়া। এটা কখনো পরকালীন বিষয়ের সাথে সম্পৃক্তও হয়। পার্থিব জীবনে কৃত গুনাহের কারণেও এরূপ শাস্তি দেয়া হতে পারে। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর থেকে আশ্রয় চেয়েছেন এজন্য যে, এটি বিপদ-আপদ বা পরীক্ষার সর্বশেষ অবস্থা। এক্ষেত্রে যাকে পরীক্ষা করা হয় সে সাধারণত ধৈর্য ধারণ করতে পারে না। কারো কারো মতে, (وَدَرْكِ الشَّقَاءِ) বলতে জাহান্নামের একটি স্তরকে বুঝানো হয়েছে। এর অর্থ হলো দুর্ভাগ্যবানদের আবাসস্থল; জাহান্নামের এমন স্তর যেখানে দুর্ভাগ্যবানরা বসবাস করবে।

আশ্রয় চাওয়া তৃতীয় বিষয়টি হলো, ব্যক্তির ভাগ্যে নির্ধারিত এমন বিষয় যা তাকে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত করে। এটা হতে পারে তার দীনের পার্থিব, ব্যক্তিগত, পারিবারিক বা অর্থনৈতিক বিষয়ের সাথে সম্পৃক্ত। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক ভাগ্যের খারাপী থেকে আশ্রয় চাওয়া দ্বারা ভাগ্যের প্রতি অসন্তুষ্টি প্রমাণ হয় না। কেননা ভাগ্যের খারাপ দিকগুলো থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাওয়ার বিষয়টিও আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত ভাগ্যের অন্তর্ভুক্ত। এজন্যই আল্লাহ তার বান্দাদের জন্য এটিকে বৈধ করেছেন। একই প্রেক্ষিতে বিতরের সালাতের কুনূতে পড়া হয় (وَقِنِىْ شَرَّ مَا قَضَيْتُ) ‘‘এবং তোমার নির্ধারিত ভাগ্যের খারাপ দিক থেকে আমাকে রক্ষা করো’’।

বান্দার ক্ষেত্রে ভাগ্য (কাযা) দু’ ভাগে বিভক্ত; ভাল ও মন্দ। আর আল্লাহ মন্দ ভাগ্য থেকে আশ্রয় চাইতে বলেছেন। এটি ঈমানের সাথে সাংঘর্ষিক নয়। তাই ভাগ্যের ভাল-মন্দের প্রতি বিশ্বাসী মু’মিন ব্যক্তি ভাগ্যের মন্দ দিক থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করতে কোন নিষেধ নেই। কারণ ভাগ্যের ভাল-মন্দের প্রতি বিশ্বাস সম্পর্কিত হাদীস দ্বারা ভাগ্যের দু’টো দিকের প্রতি বিশ্বাসের কথাই বলা হয়েছে।

অপরদিকে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক ভাগ্যের মন্দ দিক থেকে আশ্রয় চাওয়ার বিষয়টি প্রমাণিত হওয়ায় বুঝা যায় যে, আমাদের ঈমান ও আশ্রয় চাওয়া উভয়টিই শারী‘আত প্রণেতা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আদেশের অধীন। ‘আল্লামা সিন্দী (রহঃ) বলেন, এখানে ভাগ্য পরিবর্তন দ্বারা অস্থায়ী ভাগ্য উদ্দেশ্য করা হয়েছে; চিরস্থায়ী ভাগ্য নয়। চতুর্থ বিষয় হলো, শত্রুর হাসা বা খুশি হতে আশ্রয় চাওয়া। এখানে শত্রু দ্বারা দীনের এবং দীনের সাথে সম্পৃক্ত দুনিয়ার শত্রু বুঝানো হয়েছে। শত্রুর আনন্দ থেকে আশ্রয় চাওয়ার কথা বলা হয়েছে এজন্য যে, শত্রুর আনন্দ মানবমনে কঠিন প্রভাব বিস্তার করে।

এ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, অন্ত্যমিলযুক্ত বাক্য রচনা করা মাকরূহ নয়।