আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদিস পাওয়া গেছে ৫৩৭৯ টি

পরিচ্ছেদঃ ৫. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - নিষিদ্ধ বস্তু ক্রয়-বিক্রয়

২৮৬৬-[৩৩] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ’কিলাব’ বংশের কতিপয় লোক নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে ষাড়ের পাল বা প্রজননের মজুরির ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলো। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাকে তা করতে নিষেধ করলেন। সেই লোকটি তখন বললো, হে আল্লাহর রসূল! আমরা ষাড়ের পাল দেয়ার বিনিময়ে সৌজন্যমূলক কিছু পেয়ে থাকি। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাকে সৌজন্য গ্রহণের অনুমতি দিলেন। (তিরমিযী)[1]

وَعَنْ أَنَسٍ: أَنَّ رَجُلًا مِنْ كِلَابٍ سَأَلَ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنْ عَسْبِ الْفَحْلِ فَنَهَاهُ فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّا نُطْرِقُ الْفَحْلَ فَنُكْرَمُ فَرَخَّصَ لَهُ فِي الْكَرَامَةِ. رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ

ব্যাখ্যা: (فَنُكْرَمُ) অর্থাৎ- আমাদেরকে ষাড় গ্রহণকারিণী মাদি প্রাণীর মালিক কোনো শর্ত ছাড়াই হাদিয়া হিসেবে কিছু সম্মানী দিয়ে থাকে, বিনিময়ের ভিত্তিতে নয়। অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ মর্মে হাদিয়া গ্রহণের অনুমতি দিলেন। আলোচ্য হাদীসে এ মর্মে দলীল রয়েছে যে, কোনো ব্যক্তি যদি মাদি প্রাণীর ষাড় গ্রহণের পর কোনো শর্ত ছাড়াই ষাড়ের মালিককে কিছু হাদিয়া বা সম্মানী দিয়ে থাকে তবে তা গ্রহণ করা বৈধ। (তুহফাতুল আহওয়াযী ৪র্থ খন্ড, হাঃ ১২৭৪)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ

পরিচ্ছেদঃ ৫. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - নিষিদ্ধ বস্তু ক্রয়-বিক্রয়

২৮৭৩-[৪০] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একখন্ড কম্বল ও একটি পেয়ালা বিক্রি করতে ইচ্ছা পোষণ করলেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ক্রেতার আহবানে বলতে লাগলেন, এই কম্বলখন্ড ও পেয়ালা কে ক্রয় করবে? জনৈক ব্যক্তি বলল, আমি উভয়টিকে এক দিরহামের [রৌপ্য-মুদ্রার] বিনিময়ে কিনতে পারি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এক দিরহামের চেয়ে বেশি কে দেবে? এক ব্যক্তি তাঁকে দুই দিরহামের বিনিময় দিল। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) উক্ত ব্যক্তির কাছে তা বিক্রি করে দিলেন। (তিরমিযী, আবূ দাঊদ ও ইবনু মাজাহ)­­­­­­­­­­­­[1]

وَعَنْ أَنَسٍ: أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بَاعَ حِلْسًا وَقَدَحًا فَقَالَ: «مَنْ يَشْتَرِي هَذَا الحلس والقدح؟» فَقَالَ رجل: آخذهما بِدِرْهَمٍ. فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ يَزِيدُ عَلَى دِرْهَمٍ؟» فَأَعْطَاهُ رَجُلٌ دِرْهَمَيْنِ فَبَاعَهُمَا مِنْهُ. رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَأَبُو دَاوُدَ وَابْنُ مَاجَهْ

ব্যাখ্যা: এখানে এটা প্রমাণিত হয় যে, বিক্রেতা যখন পণ্য বিক্রয় করতে রাজি না হবে তখন মূল্যের উপরে বর্ধিত কিছু বা মূল্য বাড়িয়ে দেয়া বৈধ।

‘আল্লামা নববী (রহঃ) বলেন, এটি কোনো ধরনের দর কষাকষি নয়। দর কষাকষি হলো পণ্য কিনতে আগ্রহী ব্যক্তি ও বিক্রেতার মাঝে বিক্রয়যোগ্য পণ্যের উপর ক্ষান্ত থাকবে এবং উভয় চুক্তিবদ্ধ হবে না। আর ক্রেতা-বিক্রেতার মাঝে দরাদরি চলাবস্থায় অন্যজন বিক্রেতাকে বলবে যে, আমি এ পণ্য ক্রয় করব। এমনটি মূল্য নির্ধারিত হওয়ার পর করা হারাম। অন্যদিকে বিক্রয়যোগ্য পণ্যের যদি কেউ বেশী বলে তবে এটি হারাম নয়। (তুহফাতুল আহওয়াযী ৪র্থ খন্ড, হাঃ ১২১৮)


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
বর্ণনাকারীঃ আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ

পরিচ্ছেদঃ ৮. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - খাদ্যদ্রব্য গুদামজাত করা

২৮৯৪-[৩] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আমলে এক সময় দ্রব্য-সামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধি পেল। লোকেরা অনুরোধ করল- হে আল্লাহর রসূল! দ্রব্য-সামগ্রীর মূল্য সুনির্ধারিত করে দিন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ দ্রব্যমূল্যের উত্থান-পতন আল্লাহ তা’আলার পক্ষ হতেই নির্ধারিত হয়ে থাকে। সুতরাং সঙ্কীর্ণতা ও প্রশস্ততা একমাত্র তিনিই আনেন এবং তিনিই রিযক দিয়ে থাকেন। সদাসর্বদা আমার এ প্রচেষ্টাই থাকবে, আমি আল্লাহর কাছে এমন অবস্থায় সাক্ষাৎ করি যেন আমার ওপর তোমাদের কারো জানের বা মালের প্রতি কোনো অন্যায়-অবিচারের দাবি না থাকে। (তিরমিযী, আবূ দাঊদ, ইবনু মাজাহ ও দারিমী)[1]

وَعَن أنس قَالَ: غَلَا السِّعْرُ عَلَى عَهْدِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالُوا: يَا رَسُولَ اللَّهِ سَعِّرْ لَنَا فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ اللَّهَ هُوَ الْمُسَعِّرُ الْقَابِضُ الْبَاسِطُ الرَّازِقُ وَإِنِّي لَأَرْجُو أَنْ أَلْقَى رَبِّي وَلَيْسَ أحد مِنْكُم يطلبنني بمظلة بِدَمٍ وَلَا مَالٍ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَأَبُو دَاوُدَ وَابْنُ مَاجَهْ وَالدَّارِمِيُّ

ব্যাখ্যা: আলোচ্য হাদীস থেকে মূল্য নির্ধারণ করা হারাম হওয়ার উপর দলীল গৃহীত হয়। নিশ্চয় মূল্য নির্ধারণ এক প্রকারের অন্যায়। কারণ মানুষেরা তাদের সম্পদের ভিত্তিতে ব্যয় করে। (অর্থাৎ- উৎপাদন বেশী হলে আমদানী বেশী হবে এবং মূল্য কমে যাবে, আর উৎপাদন কম হলে আমদানী কম হবে এবং মূল্য বৃদ্ধি পাবে) আর মূল্য নির্ধারণ করলে তাতে বাধার সৃষ্টি হবে। (মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ

পরিচ্ছেদঃ ১১. প্রথম অনুচ্ছেদ - কারো সম্পদে অন্যায় হস্তক্ষেপ, ঋণ ও ক্ষতিপূরণ

২৯৪০-[৩] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর জনৈকা সহধর্মিণীর ঘরে ছিলেন। তখন উম্মুল মু’মিনীনদের অপর একজন বড় পেয়ালায় করে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্য কিছু খাদ্য পাঠালেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যাঁর ঘরে ছিলেন তিনি খাদিমের হাতে আঘাত করলে তা পড়ে ভেঙ্গে গেল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পেয়ালার টুকরাগুলো একত্র করলেন এবং তাতে যে খাদ্য ছিল তা জমা করতে লাগলেন। আর বললেন, তোমাদের উম্মুল মু’মিনীন ঈর্ষান্বিত হয়েছেন। অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) খাদিমকে ঐ পর্যন্ত আটকে রাখলেন যে পর্যন্ত না যাঁর ঘরে ছিলেন তাঁর ঘর হতে একটি ভালো পেয়ালা আনা হলো। অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যাঁর পেয়ালা ভাঙ্গা হয়েছিল তাঁকে ভালো পেয়ালাটি দিলেন এবং ভাঙ্গাটি তাঁর জন্য রাখলেন যিনি তা ভেঙ্গেছেন। (বুখারী)[1]

بَابُ الْغَصْبِ وَالْعَارِيَةِ

وَعَنْ أَنَسٍ قَالَ: كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عِنْدَ بَعْضِ نِسَائِهِ فَأَرْسَلَتْ إِحْدَى أُمَّهَاتِ الْمُؤْمِنِينَ بِصَحْفَةٍ فِيهَا طَعَامٌ فَضَرَبَتِ الَّتِي النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي بَيْتِهَا يَدَ الْخَادِمِ فَسَقَطَتِ الصَّحْفَةُ فَانْفَلَقَتْ فَجَمَعَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِلَقَ الصَّحْفَةِ ثُمَّ جَعَلَ يَجْمَعُ فِيهَا الطَّعَامَ الَّذِي كَانَ فِي الصَّحْفَةِ وَيَقُولُ: «غَارَتْ أُمُّكُمْ» ثُمَّ حَبَسَ الْخَادِمَ حَتَّى أُتِيَ بِصَحْفَةٍ مِنْ عِنْدِ الَّتِي هُوَ فِي بَيْتُهَا فَدَفَعَ الصَّحْفَةَ الصَّحِيحَةَ إِلَى الَّتِي كُسِرَتْ صَحْفَتُهَا وَأَمْسَكَ الْمَكْسُورَةَ فِي بَيْتِ الَّتِي كَسَرَتْ. رَوَاهُ البُخَارِيّ

ব্যাখ্যা: (غَارَتْ أُمُّكُمْ) যারা উপস্থিত ছিল তাদেরকে সম্বোধন করা হয়েছে, الأم তথা ‘‘মা’’ কথা দ্বারা ঐ নারী উদ্দেশ্য যিনি পেয়ালাটি ভেঙ্গে ছিলেন, আর তিনি হলেন মু’মিনদের মা ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)। দাঊদী বাড়াবাড়ী করে বলেন, (أمكم) উক্তি দ্বারা ‘‘সারাহ’’ উদ্দেশ্য, তাঁর নিকট কথাটির অর্থ এরূপ যে, অভিমান সংঘটিত হয়েছে তার দরুন তোমরা আশ্চর্যবোধ করো না, কেননা ইতিপূর্বে তোমাদের মা অভিমান করেছিল। পরিশেষে ইব্রাহীম (আঃ) তাঁর ছেলে ইসমা‘ঈল (আঃ)-কে বাড়ী হতে বের করে দেন। এমতাবস্থায় ইসমা‘ঈল ছোট শিশু তাঁর মাতার সাথে শস্যহীন উপত্যকার দিকে ছুটে যান। যদিও এর কতিপয় দিক রয়েছে, কিন্তু উদ্দেশ্য এর বিপরীত। আর উদ্দেশ্য হলো, পেয়ালা ভাংচুরকারিণী। যারা এ হাদীসের ব্যাখ্যা করেছে তারা সকলে এ অর্থই করেছেন। আর তারা বলেছেন, আত্ম-সম্মানবোধের কারণে যা কিছু ঘটে তাতে তাকে দায়ী না করার প্রতি ইঙ্গিত রয়েছে, কেননা ঐ মুহূর্তে ক্রোধের কারণে জ্ঞান বাধাপ্রাপ্ত হওয়ায় বিবেক জাগিয়ে তোলা কঠিন।

আবূ ইয়া‘লা (لا بأس به) ‘নির্দোষ’ সূত্রে ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে মারফূ‘ভাবে বর্ণনা করেন, ‘‘নিশ্চয় আত্ম-সম্মানবোধের কারণে রাগান্বিত ব্যক্তি উপত্যকার উপরাংশ অপেক্ষা নিম্নাংশের দিকে দৃষ্টি দেয় না।’’ এটা তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কোনো এক ঘটনায় বলেন।

‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস্‘ঊদ (রাঃ) হতে মারফূ‘ সূত্রে বর্ণিত, ‘‘নিশ্চয় আল্লাহ নারীদের ওপর আত্ম-সম্মানবোধ আবশ্যক করে দিয়েছেন। সুতরাং তাদের মধ্যে যে ধৈর্য ধারণ করবে তার জন্য একজন শাহীদের সাওয়াব থাকবে।’’ বায্যার একে সংকলন করে একে বিশুদ্ধতার দিকে ইঙ্গিত করেছেন। এর বর্ণনাকারীগণ নির্ভরযোগ্য তবে তাদের মাঝে ‘উবায়দ বিন সববাহ-এর ব্যাপারে মতানৈক্য করা হয়েছে। আর ‘‘সারাহ’’-এর ব্যাপারে দাঊদীর প্রয়োগ যে, ‘‘তিনি সম্বোধিতদের মা’’। এতে বিবেচনার বিষয় আছে, কেননা তারা যদি ইসমা‘ঈল (আঃ)-এর বংশধর হয় তাহলে তাদের মা হবে হাজেরা, সারাহ্ নয়; পক্ষান্তরে তারা বানু ইসরাঈল বংশধরের হওয়া সুদূর পরাহত। অতএব সারাহ্ তাদের ‘‘মা’’ হওয়া ‘‘বিশুদ্ধতার মাপকাঠিতে অসম্ভব।’’ (ফাতহুল বারী ১০ম খন্ড, হাঃ ৫২২৫)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ

পরিচ্ছেদঃ ১৭. প্রথম অনুচ্ছেদ - হাদিয়া (উপহার) ও হিবার (অনুদান) প্রসঙ্গে

৩০১৭-[২] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সুগন্ধি জাতীয় দ্রব্য ফিরিয়ে দিতেন না। (বুখারী)[1]

بَابٌ فِى الْهِبَةِ وَالْهَدِيَّةِ

وَعَنْ أَنَسٍ: أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ لَا يَرُدُّ الطِّيبَ. رَوَاهُ الْبُخَارِيُّ

ব্যাখ্যা: আবূ নু‘আয়ম বিশর বিন মু‘আয-এর সানাদে ‘আব্দুল ওয়ারিস থেকে বর্ণনা করেন, ‘আব্দুল ওয়ারিস ‘আযরাহ্ বিন সাবিত হতে বর্ণনা করেন, ‘আযরাহ্ বলেন, (دَخَلْتُ عَلٰى ثُمَامَةَ فَنَاوَلَنِي طِيبًا قُلْتُ قَدْ تَطَيَّبْتُ فَقَالَ كَانَ أَنَسٌ لَا يَرُدُّ الطِّيبَ) ‘‘আমি সুমামার কাছে পৌঁছলে, সে আমাকে সুগন্ধি দিল, আমি বললাম, আমি সবেমাত্র সুগন্ধি লাগিয়েছি, তখন সে বলল, আনাস সুগন্ধিকে ফেরত দিতেন না।’’ (ফাতহুল বারী ৫ম খন্ড, হাঃ ২৫৮২)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ

পরিচ্ছেদঃ ১৭. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - হাদিয়া (উপহার) ও হিবার (অনুদান) প্রসঙ্গে

৩০২৬-[১১] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মদীনায় আগমন করলেন, মুহাজিরগণ তাঁর নিকট এসে বললেন, হে আল্লাহর রসূল! আমরা যাদের মধ্যে এসেছি তাঁদের চেয়ে অধিক দানশীল এবং অল্প দ্বারা হলেও সহানুভূতিশীল প্রদানের মতো কোনো সম্প্রদায় আমরা আর দেখিনি। তাঁরা আমাদের দুঃখ-কষ্টের ভাগিদার হয়েছেন এবং কষ্টার্জিত দ্রব্যে আমাদেরকে শরীক করেছেন, যাতে আমরা আশঙ্কা করছি যে, তারাই সকল সাওয়াব নিয়ে যাবেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তা ততক্ষণ পর্যন্ত হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত তোমরা তাদের জন্য দু’আ ও প্রশংসা করবে। (তিরমিযী; তিনি এটা সহীহ বলেছেন)[1]

وَعَنْ أَنَسٍ قَالَ: لَمَّا قَدِمَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْمَدِينَةَ أَتَاهُ الْمُهَاجِرُونَ فَقَالُوا: يَا رَسُولَ اللَّهِ مَا رَأَيْنَا قَوْمًا أَبْذَلَ مِنْ كَثِيرٍ وَلَا أَحْسَنَ مُوَاسَاةً مِنْ قَلِيلٍ مِنْ قَوْمٍ نَزَلْنَا بَيْنَ أَظْهُرِهِمْ: لَقَدْ كَفَوْنَا المؤونة وَأَشْرَكُونَا فِي الْمَهْنَأِ حَتَّى لَقَدْ خِفْنَا أَنْ يَذْهَبُوا بِالْأَجْرِ كُلِّهِ فَقَالَ: «لَا مَا دَعَوْتُمُ اللَّهَ لَهُمْ وَأَثْنَيْتُمْ عَلَيْهِمْ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَصَحَّحَهُ

ব্যাখ্যা: (لَمَّا قَدِمَ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর প্রথম আগমনে যখন মদীনায় আসলেন।

(أَتَاهُ الْمُهَاجِرُونَ) অর্থাৎ- আনসারীরা তাদের সেবায় আঞ্জাম দেয়া এবং তাদের বাড়ী-ঘর ও বাগানসমূহের অর্ধেক তাদেরকে দান করার পর শেষ পর্যন্ত মুহাজিরগণ যেন তাদের স্ত্রীদের বিবাহ করতে পারে সে উদ্দেশে তাদের কেউ তাঁর সর্বাধিক সুন্দরী স্ত্রীদেরকে তালাক দিল। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘‘তাদের পরে যারা ঘর-বাড়ী ও ঈমান লাভ করেছিল তারা তাঁদের কাছে হিজরত করে যাওয়া ব্যক্তিদেরকে ভালোবাসে এবং তাদেরকে যা দেয়া হয়েছে সে কারণে নিজেদের অন্তরে কোনো প্রয়োজন অনুভব করে না, নিজেদের ওপরে তাদেরকে প্রাধান্য দেয়, যদিও তাদের প্রয়োজন থাকে।’’ (সূরা আল হাশর, ৫৯ : ৯)

(مَا رَأَيْنَا قَوْمًا أَبْذَلَ مِنْ كَثِيرٍ وَلَا أَحْسَنَ مُوَاسَاةً مِنْ قَلِيلٍ) অর্থাৎ- অধিক সম্পদ ব্যয়কারী এবং অল্প সম্পদ দিয়ে হলেও এত অধিক উত্তম সহানুভূতি প্রকাশকারী কোনো সম্প্রদায় আমরা দেখিনি।

(مِنْ قَوْمٍ نَزَلْنَا بَيْنَ أَظْهُرِهِمْ) অর্থাৎ- আমরা যাদের কাছে এবং যাদের মাঝে অবস্থান নিয়েছি। এ অবস্থান নেয়াকালে তারা বেশি সম্পদের অধিকারী হোক অথবা কম সম্পদের মালিক হোক উভয় অবস্থায় তারা নিঃসন্দেহে আমাদের প্রতি দয়া করেছে। হাদীসাংশে قوم দ্বারা আনসারগণ উদ্দেশ্য।

(لَقَدْ كَفَوْنَا المَؤُوْنَةَ) অর্থাৎ- তারা ঘর-বাড়ী তৈরি ও খেজুর বাগান আবাদ করে ও অন্যান্য কাজের মাধ্যমে আমাদের সেবা করার কষ্ট বহন করেছ।

(وَأَشْرَكُوْنَا فِى الْمَهْنَأِ) অর্থাৎ- তারা আমাদেরকে ভাইদের মতো করে জীবন শুদ্ধি ও যথার্থতার উপযোগী তাদের কষ্টার্জিত সম্পদে অংশীদার করেছ। একমতে বলা হয়েছে, বিনা কষ্টে যা আসে তাকে الْمَهْنَأِ বলা হয়। ইবনু মালিক বলেন, তারা আমাদেরকে তাদের খেজুর বাগানের ফলে অংশীদার করেছে, খেজুর বৃক্ষক্ষ পানি ও সেগুলো মেরামত করার কষ্টে আমাদের জন্য যথেষ্ট হয়েছে এবং আমাদেরকে তাদের ফলের অর্ধেক দান করেছে। কাযী বলেন, তারা তাদেরকে তাদের যে সকল শস্য ও ফলে অংশীদার করেছে এর মাধ্যমে তারা তাই উদ্দেশ্য করছে।

(حَتّٰى لَقَدْ خِفْنَا أَنْ يَّذْهَبُوْا بِالْأَجْرِ كُلِّه) অর্থাৎ- আমাদের প্রতি আনসারীদের অনুগ্রহের আধিক্যতার কারণে আমাদের সকল ‘ইবাদাতের সাওয়াব এবং মক্কা হতে মদীনায় হিজরত করার সাওয়াব আল্লাহ তাদেরকে দিয়ে দিবেন।

(فَقَالَ النبى ﷺ : لَا) অর্থাৎ- তারা সকল পুণ্য নিয়ে যাবে না, কেননা আল্লাহর দয়া প্রশস্ত। সুতরাং তোমাদের জন্য থাকবে ‘ইবাদাত করার পুণ্য, আর তাদের জন্য থাকবে পরস্পর সহযোগিতা করার সাওয়াব।

(مَا دَعَوْتُمُ اللّٰهَ لَهُمْ وَأَثْنَيْتُمْ عَلَيْهِمْ) অর্থাৎ- যতক্ষণ পর্যন্ত তোমরা তাদের জন্য কল্যাণের দু‘আ করতে থাকবে, কেননা তোমাদের প্রতি তাদের অনুগ্রহ করার কারণে তোমাদের দু‘আ তাদের জন্য যথেষ্ট হবে, আর তোমাদের ভালো কর্মের সাওয়াব তোমাদের দিকে ফিরে আসবে। ত্বীবী (রহঃ) বলেনঃ তারা যখন তাদের নিজেদের ওপর ক্লেশ, ক্লান্তি বহন করেছে এবং সুখে-দুঃখে আমাদেরকে অংশীদার করেছে, তখন নিঃসন্দেহে তারা অনেক প্রতিদান পাওয়ার অধিকার অর্জন করেছে। সুতরাং কীভাবে আমরা তাদের প্রতিদান দিব? অতঃপর আল্লাহর রসূল উত্তর দিলেন না, অর্থাৎ- তোমরা যেরূপ ধারণা করেছ বিষয়টি ঐরূপ নয়, কেননা তোমরা যখন তাদের কর্মের কৃতজ্ঞতা স্বরূপ তাদের ব্যাপারে গুণকীর্তন করলে এবং তাদের জন্য অবিরাম দু‘আ করতে থাকলে তখন তোমরা তাদেরকে প্রতিদান দিয়ে দিলে। (তুহফাতুল আওয়াযী ৬ষ্ঠ খন্ড, হাঃ ২৪৮৭)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ

পরিচ্ছেদঃ ১৯. প্রথম অনুচ্ছেদ - ফারায়িয (মৃত ব্যক্তির সম্পত্তি বণ্টন সম্বন্ধীয়) ও অন্তিম উপদেশ বা আদেশ)

৩০৪৪-[৪] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোনো সম্প্রদায়ের মুক্ত ক্রীতদাস সে গোত্রেরই একজন। (বুখারী)[1]

بَابُ الْفَرَائِضِ وَالْوَصَايَا

وَعَنْ أَنَسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «مَوْلَى الْقَوْمِ مِنْ أَنْفُسِهِمْ» . رَوَاهُ البُخَارِيّ

ব্যাখ্যা : কোনো ব্যক্তি যদি দাস আযাদ করে, তাহলে ঐ দাসের যদি কোনো রক্ত সম্পর্কিত আসাবা (তথা এমন উত্তরাধিকারী যাদের কোনো নির্ধারিত অংশ কুরআন-হাদীসে বর্ণিত হয়নি) না থাকে তাহলে ঐ দাসের আযাদকারী মুনীব আসাবা সাবাবিয়্যাহ্ হিসেবে তার সম্পদের মালিক হবে।

হাদীসে উল্লেখিত ‘মাওলা’ শব্দটি আযাদকারী এবং আযাদকৃত উভয়ের জন্যই ব্যবহার হয়ে থাকে, তবে এখানে আযাদকারী অর্থেই ব্যবহার বেশী যুক্তিযুক্ত। (ফাতহুল বারী ১২শ খন্ড, হাঃ ৬৭৬১; মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ

পরিচ্ছেদঃ ১৯. প্রথম অনুচ্ছেদ - ফারায়িয (মৃত ব্যক্তির সম্পত্তি বণ্টন সম্বন্ধীয়) ও অন্তিম উপদেশ বা আদেশ)

৩০৪৫-[৫] উক্ত রাবী [আনাস (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ গোত্রের ভাগিনেও গোত্রেরই একজন। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

’আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর বর্ণিত হাদীস ’নিশ্চয় মুক্ত ক্রীতদাসের পরিত্যাজ্য’ অধ্যায়টি ’আগাম বিক্রয়’ অধ্যায়ের পূর্বের অধ্যায়ে বর্ণনা করা হয়েছে। আর বারা (রাঃ)-এর বর্ণিত ’খালা মায়ের মতো’ হাদীসটি ইনশা-আল্লা-হ বর্ণনা করব ’নাবালেগ বালেগ হওয়া ও তার প্রতিপালন’ অধ্যায়ে।

بَابُ الْفَرَائِضِ وَالْوَصَايَا

وَعَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «ابْنُ أُخْتِ الْقَوْمِ مِنْهُم»
وَذُكِرَ حَدِيثُ عَائِشَةَ: «إِنَّمَا الْوَلَاءُ» فِي بَابٍ قبل «بَاب السّلم»

ব্যাখ্যা: আলোচ্য হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বর্ণনা করেন- কোনো কওমের বোনের পুত্র সে কওমেরই অন্তর্ভুক্ত। তথা বোনের পুত্র মৃত ব্যক্তির রক্ত সম্পর্কীয় ওয়ারিস। তারা কখনো সম্পদ পাবে না যদি মৃত ব্যক্তির যাবিল ফুরুজ বা নির্ধারিত অংশপ্রাপ্ত ওয়ারিস এবং আসাবা বিদ্যমান থাকে। কেননা যাবিল আরহাম মৃত ব্যক্তির তৃতীয় স্তরের ওয়ারিস। যাবিল আরহাম বা রক্ত সম্পর্কীয় ওয়ারিসদের ধারাবাহিক নাম নিম্নরূপ-

১. কন্যার সন্তান। ২. বোনের সন্তান, ৩. ভাতিজা, ৪. চাচাতো বোন, ৫. ফুফাতো বোন, ৬. মামাতো বোন, ৭. খালাতো বোন, ৮. নানা, ৯. বৈ।

উল্লেখিত যাবিল আরহামগণ মৃত ব্যক্তির তৃতীয় স্তরের ওয়ারিস হওয়ার কারণে যাবিল ফুরুজ ও আসাবাদের উপস্থিতিতে মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে মীরাস পাবে না। (ফাতহুল বারী ১২শ খন্ড, হাঃ ৬৭৬২; শারহে মুসলিম ৭/৮ খন্ড, হাঃ ১০৫৯; মিরকতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ

পরিচ্ছেদঃ ২০. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - ওয়াসিয়্যাত (অন্তিম উপদেশ বা নির্দেশ)

৩০৭৮-[৯] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি ওয়ারিসদের উত্তরাধিকারের অংশ কেটেছে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা’আলা তার জান্নাতের উত্তরাধিকারীর অংশ কেটে নিবেন। (ইবনু মাজাহ)[1]

وَعَنْ أَنَسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ قَطَعَ مِيرَاثَ وَارِثِهِ قَطَعَ اللَّهُ مِيرَاثَهُ مِنَ الْجَنَّةِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ» . رَوَاهُ ابْنُ مَاجَهْ

ব্যাখ্যা: অত্র হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোনো ব্যক্তি যদি তার ওয়ারিসকে মীরাস থেকে বঞ্চিত করে কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাকে জান্নাতের মীরাস থেকে বঞ্চিত করবেন। কেননা প্রত্যেক ব্যক্তি আশায় থাকে, সে তার পূর্বসুরীদের থেকে মীরাস পাবে, পরিশেষে যখন ঐ ব্যক্তি তার ওয়ারিসকে বঞ্চিত করে তখন আল্লাহ তা‘আলাও ঐ ব্যক্তিকে (যিনি ওয়ারিসকে বঞ্চিত করেছেন তাকে) তার সর্বশেষ প্রত্যাশা জান্নাতপ্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত করেন।

‘আল্লামা রাগিব বলেনঃ কোনরূপ চুক্তি ব্যতিরেকে অন্যের থেকে কারো নিকট সম্পদের স্থানান্তরকে الْوِرَاثَةُ (ওয়ারাসাহ্) বলা হয়। এ কারণেই উক্ত প্রক্রিয়াকে الْمُنْتَقِلِ عَنِ الْمَيِّتِ ‘‘মৃত ব্যক্তির স্থানান্তরকৃত সম্পদ’’ নামকরণ করা হয়। কেউ কেউ বলেনঃ কোনো কষ্ট-পরিশ্রম ব্যতীত যা অর্জিত হয় তা-ই ‘ওয়ারাসাহ্’। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ وَتِلْكَ الْجَنَّةُ الَّتِيْ أُورِثْتُمُوْهَا ‘‘এই হলো জান্নাত তোমাদেরকে যার উত্তরাধিকারী করা হয়েছে’’- (সূরা আয্ যুখরুফ ৪৩ : ৭২)। (মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
বর্ণনাকারীঃ আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ

পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ

৩০৯৪-[১৫] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহ তা’আলার সাথে পাক-পবিত্রাবস্থায় সাক্ষাৎ প্রত্যাশা করে, সে যেন স্বাধীনা রমণীকে বিয়ে করে। (ইবনু মাজাহ)[1]

اَلْفَصْلُ الثَّالِثُ

وَعَنْ أَنَسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ أَرَادَ أَنْ يَلْقَى الله طَاهِرا مطهراً فليتزوج الْحَرَائِر» . رَوَاهُ ابْن مَاجَه


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
বর্ণনাকারীঃ আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ

পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ

৩০৯৬-[১৭] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মানুষ যখন বিয়ে করে তখন সে তার ঈমানের অর্ধেক পূর্ণ করে, অবশিষ্টাংশ লাভের জন্য সে যেন আল্লাহভীতি অর্জন করে।[1]

اَلْفَصْلُ الثَّالِثُ

وَعَنْ أَنَسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِذَا تَزَوَّجَ الْعَبْدُ فَقَدِ اسْتَكْمَلَ نِصْفَ الدِّينِ فَلْيَتَّقِ اللَّهَ فِي النِّصْفِ الْبَاقِي»


হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
বর্ণনাকারীঃ আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ

পরিচ্ছেদঃ ১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - (বিবাহের প্রস্থাবিত) পাত্রী দেখা ও সতর (পর্দা) প্রসঙ্গে

৩১২০-[২৩] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (কন্যা) ফাতিমা (রাঃ)-এর ঘরে দান করেছেন এমন ক্রীতদাসসহ গমন করেন। তখন তাঁর পরিধানে এত ছোট কাপড় ছিল যে, মাথা ঢাকলে পা খুলে যায়, আর পা ঢাকলে মাথা খুলে যায়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর এরূপ অবস্থা দেখে বললেন, তুমি অস্বস্তিবোধ করো না, এখানে তোমার পিতা ও তোমার স্বীয় গোলাম ব্যতীত আর কেউই নেই। (আবূ দাঊদ)[1]

وَعَنْ أَنَسٍ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَتَى فَاطِمَةَ بِعَبْدٍ قَدْ وَهَبَهُ لَهَا وَعَلَى فَاطِمَةَ ثَوْبٌ إِذَا قَنَّعَتْ بِهِ رَأْسَهَا لَمْ يَبْلُغْ رِجْلَيْهَا وَإِذَا غَطَّتْ بِهِ رِجْلَيْهَا لَمْ يَبْلُغْ رَأْسَهَا فَلَمَّا رَأَى رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَا تَلْقَى قَالَ: «إِنَّهُ لَيْسَ عَلَيْكِ بَأْسٌ إِنَّمَا هُوَ أَبُوكِ وغلامك» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد

ব্যাখ্যা: আলোচ্য হাদীসে এ মর্মে দলীল রয়েছে যে, দাসের জন্য তার মুনীবাকে দেখা বৈধ, কারণ সে তার জন্য মাহরাম ব্যক্তি। প্রয়োজনীয় তার সঙ্গে সফর করতে পারবে। মাহরাম ব্যক্তির সঙ্গে যেমন দেখা করতে পারবে তেমন দাসের সঙ্গেও দেখা করতে পারবে। আর এমন মত দিয়েছেন ‘আয়িশাহ্ (রাঃ), সা‘ঈদ বিন মুসাইয়্যাব, ইমাম শাফি‘ঈ (রহঃ)। আর এটাই অধিকাংশ সালাফদের কথা। পক্ষান্তরে জুমহূর ‘উলামাগণের মতে দাস বেগানা পুরুষের মতই, কেননা দাস আযাদ হয়ে যাওয়ার পর তার সঙ্গে বিবাহ বৈধ। আল্লাহই ভালো জানেন। (‘আওনুল মা‘বূদ ৭ম খন্ড, হাঃ ৪১০২)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ

পরিচ্ছেদঃ ৭. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - মোহর

৩২০৯-[৮] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবূ ত্বলহাহ্ উম্মু সুলায়ম (রাঃ)-কে বিয়ে করেন, তাদের মোহর ছিল ইসলাম গ্রহণ। উম্মু সুলায়ম (রাঃ) আবূ ত্বলহাহ্ (রাঃ)-এর পূর্বে ইসলাম কবুল করেন। অতঃপর আবূ ত্বলহাহ্ তাকে বিয়ের প্রস্তাব দেন। উম্মু সুলায়ম (রাঃ) বলেন, আমি ইসলাম গ্রহণ করেছি; যদি তুমি ইসলাম কবুল কর তবে তোমার সাথে বিয়ে হতে পারে। অতঃপর আবূ ত্বলহাহ্ ইসলাম গ্রহণ করেন। এ ইসলাম গ্রহণ তাঁদের বিয়ের মোহর বলে গণ্য হয়। (নাসায়ী)[1]

وَعَنْ أَنَسٍ قَالَ: تَزَوَّجَ أَبُو طَلْحَةَ أُمَّ سُلَيْمٍ فَكَانَ صَدَاقُ مَا بَيْنَهُمَا الْإِسْلَامَ أَسْلَمَتْ أُمُّ سُلَيْمٍ قَبْلَ أَبِي طَلْحَةَ فَخَطَبَهَا فَقَالَتْ: إِنِّي قَدْ أَسْلَمْتُ فَإِنْ أَسْلَمْتَ نَكَحْتُكَ فَأَسْلَمَ فَكَانَ صدَاق مَا بَينهمَا. رَوَاهُ النَّسَائِيّ

ব্যাখ্যা: আবূ ত্বলহাহ্-এর আসল নাম হলো যায়দ ইবনু সাহল আল আনসারী আন্ নাজ্জারী। আবূ ত্বলহাহ্ হলো তার কুন্ইয়াত বা উপনাম, উপনামেই তিনি সমাধিক প্রসিদ্ধ। তিনি আনাস ইবনু মালিক-এর মায়ের স্বামী। তিনি ছিলেন নামকরা তীরন্দাজদের অন্যতম। সেনাদলের ভিতর আবূ ত্বলহার আওয়াজের জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর ভূয়সী প্রশংসাবাণী উচ্চারণ করেছেন।

আনাস-এর মা উম্মু সুলায়ম ছিলেন মিলহান-এর কন্যা। তার আসল নামের ব্যাপারে মতপার্থক্য রয়েছে। মালিক ইবনু নযর প্রথম তাকে বিবাহ করেন, সেখানে তার ঘরে আনাস জন্মগ্রহণ করেন। এই মালিক আনাস-এর মাকে রেখে মুশরিক অবস্থায় নিহত হলে তার মা ইসলাম গ্রহণ করেন। অতঃপর আবূ ত্বলহাহ্ তাকে বিবাহের প্রস্তাব দেন, কিন্তু আবূ ত্বলহাহ্ মুশরিক থাকায় তিনি তার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন এবং তাকে ইসলাম গ্রহণে আহবান জানান। এ আহবানে সাড়া দিয়ে আবূ ত্বলহাহ্ ইসলাম গ্রহণ করলেন; উম্মু সুলায়ম তাকে বললেন, ঠিক আছে আমি তোমাকে বিবাহ করব, তোমার ইসলাম গ্রহণের কারণে আমি তোমার নিকট থেকে কোনো মোহরও গ্রহণ করব না।

অতঃপর আবূ ত্বলহাহ্ তাকে বিবাহ করলেন, আর তাঁর ইসলাম গ্রহণই হলো তাদের দু’জনের মাঝের বিবাহের মুহরানা। উম্মু সুলায়ম আবূ ত্বলহার আগেই ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন।

এ হাদীসে ইশারা রয়েছে যে, দীনী উপকারিতা বা উপকারলাভ মোহর (বিনিময়) হতে পারে এবং কুরআন শিক্ষা দেয়াও এ অর্থে ব্যবহার বৈধ হতে পারে। (মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ

পরিচ্ছেদঃ ৮. প্রথম অনুচ্ছেদ - ওয়ালীমাহ্ (বৌভাত)

৩২১০-[১] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ’আব্দুর রহমান ইবনু ’আওফ (রাঃ)-এর শরীরে হলুদের চিহ্ন দেখে জিজ্ঞেস করলেন, কিসের রং এটা? তিনি বললেন, আমি জনৈকা (আনসারী) নারীকে খেজুর দানার সমপরিমাণ স্বর্ণের বিনিময়ে বিয়ে করেছি। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, আল্লাহ তা’আলা তোমার বিয়েকে বরকতময় করুন। একটি বকরী দিয়ে হলেও তুমি ওয়ালীমাহ্ কর। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

بَابُ الْوَلِيْمَةِ

عَنْ أَنَسٍ: أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَأَى عَلَى عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ عَوْفٍ أَثَرَ صُفْرَةٍ فَقَالَ: «مَا هَذَا؟» قَالَ: إِنِّي تَزَوَّجْتُ امْرَأَةً عَلَى وَزْنِ نَوَاةٍ مِنْ ذَهَبٍ قَالَ: «بَارَكَ اللَّهُ لَكَ أَوْلِمْ وَلَوْ بِشَاةٍ»

ব্যাখ্যা: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘আবদুর রহমান ইবনু ‘আওফ-এর শরীরে অথবা কাপড়ে (জা‘ফরানের) হলোদে চিহ্ন লক্ষ্য করে জিজ্ঞেস করলেন, একি? অর্থাৎ এ হলুদ রং কোত্থেকে এলো? উত্তরে তিনি বললেন, আমি একজন মহিলাকে বিয়ে করেছি।

‘আল্লামা ত্বীবী বলেনঃ প্রশ্ন ছিল গায়ে বা কাপড়ে রং লাগার কারণ কি? উত্তরে যা বলার তাই বললেন। মূলতঃ এটা ছিল استفهام انكارى অর্থাৎ অস্বীকৃতিজ্ঞাপক প্রশ্ন, তিনি যেন এটা অস্বীকার ও অপছন্দ করছিলেন। তিনি সুগন্ধ মিশ্রিত তৈল মাখতে নিষেধ করতেন। এর উত্তরে ‘আবদুর রহমান ইবনু ‘আওফ যেন বললেন, এটা তার মাখানো কোনো সুগন্ধযুক্ত তেলের রং নয় বরং তার নব বিবাহিতা স্ত্রীর সাথে বাসর উদযাপনের ফলে তার সংস্পর্শে লাগা রং বিশেষ, এটা ইচ্ছাজনিত নয় এবং অসাবধানতাজনিত বিষয়। ‘আবদুর রহমান ইবনু ‘আওফ-এর বিবাহের মোহর নির্ধারিত হয়েছিল এক নাওয়াত পরিমাণ ওযনের স্বর্ণ।

কাযী ‘ইয়ায (রহঃ) বলেনঃ নাওয়াত বলা হয় পাঁচ দিরহামকে, যেমন বিশ দিরহামকে এক নাশ্ এবং চল্লিশ দিরহামকে এক উকিয়্যাহ্ বলা হয়। কেউ কেউ বলেছেন, নাওয়াত হলো ঐ পরিমাণ স্বর্ণ যার মূল্য পাঁচ দিরহামের মতো। আবার কেউ কেউ বলেছেন, নাওয়াত দ্বারা উদ্দেশ্য হলো খেজুরের বিচি। শেষ কথা যা এখানে স্পষ্ট তা হলো সামান্য পরিমাণ স্বর্ণ। এই পরিমাণকেই কেউ এক-ষষ্ঠাংশ মিসকালের কাছাকাছি বলে উল্লেখ করেছেন; কেউ এক-চতুর্থ মিছকাল বা তার চেয়েও কম যার মূল্য দশ দিরহামের সমান বলে উল্লেখ করেছেন। তবে প্রথম মতটি গ্রহণ অধিক সম্ভাবনাময়। সুতরাং নাওয়াতের অর্থ পাঁচ দিরহামের পরিমাণ, যা স্বর্ণের ওযনে সমান, অর্থাৎ সাড়ে তিন মিসকাল স্বর্ণ।

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘আবদুর রহমান ইবনু ‘আওফ-এর বিবাহের কথা শুনে তার দাম্পত্য জীবনের বারাকাতের জন্য দু‘আ করলেনঃ بَارَكَ اللّٰهُ لَكَ অর্থাৎ আল্লাহ তোমার জীবনকে বরকতময় করুন। এ হাদীস থেকে বিবাহিত ব্যক্তির জন্য বারাকাতের দু‘আ করা মুস্তাহাব বা সুন্নাত প্রমাণিত হয়।

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘আবদুর রহমান ইবনু ‘আওফ-কে বিবাহোত্তর ওয়ালীমাহ্ খাওয়ানোর নির্দেশ করেন। ইবনুল মালিক বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর এই প্রকাশ্য নির্দেশসূচক বাক্য দ্বারা কতিপয় ‘উলামাহ্ বিবাহোত্তর ওয়ালীমাহ্ খাওয়ানোকে ওয়াজিব বলে মন করেন। তবে অধিকাংশ ‘উলামারা বলেন, এ নির্দেশ মুস্তাহাব অর্থে ব্যবহৃত হবে।

ওয়ালীমাহ্ কখন করতে হবে? এর উত্তরে বলা হয় ওয়ালীমাহ্ হবে বাসর উদযাপনের পরে, কেউ আবার বিবাহের আকদ সম্পাদন হওয়ার পরেই মতামত পেশ করেছেন। কেউবা আবার বিবাহের সময় এবং বাসর উদযাপনের পর দু’ সময়েই ওয়ালীমা করার কথা বলেছেন। ইমাম মালিকের একদল অনুসারী তো সাতদিন ভরে ওয়ালীমাগ্ খাওয়ানো মুস্তাহাব বলে মনে করে থাকেন। তবে নির্ভরযোগ্য এবং পছন্দনীয় মত হলো ওয়ালীমাহ্ খাওয়ানো বিবাহকারীর সাধ্য ও সামর্থ্যের উপর নির্ভর করবে। (ফাতহুল বারী ৪র্থ খন্ড, হাঃ ২০৪৯; শারহে মুসলিম ৯/১০ম খন্ড, হাঃ ১৪২৭; মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ

পরিচ্ছেদঃ ৮. প্রথম অনুচ্ছেদ - ওয়ালীমাহ্ (বৌভাত)

৩২১১-[২] উক্ত রাবী [আনাস (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যায়নাব বিনতু জাহশ (রাঃ)-এর বিয়েতে যত বড় আয়োজনে ওয়ালীমাহ্ করেন, আর অন্য কোনো স্ত্রীর বিয়েতে তা করেননি। এতে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এক বকরী দ্বারা ওয়ালীমাহ্ করেছেন। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

بَابُ الْوَلِيْمَةِ

وَعَنْهُ قَالَ: مَا أَوْلَمَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى أَحَدٍ مِنْ نِسَائِهِ مَا أولم على زَيْنَب أولم بِشَاة

ব্যাখ্যা: হাদীসের মর্মকথা হলো, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার স্ত্রী যায়নাব-এর সাথে বিবাহোত্তর ওয়ালীমাহ্ যত বেশী সুন্দর এবং পরিসরে করেছিলেন এমনটি অন্য কোনো স্ত্রীর বেলায় করেননি। তিনি বকরী যবেহ করে তার ওয়ালীমাহ্ করেছিলেন।

মাওয়াহিব নামক গ্রন্থে আছে, উম্মুল মু’মিনীন যায়নাব বিনতু জাহ্শ (রাঃ) ছিলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ফুপী আমীমাহ্ বিনতু ‘আবদুল মুত্ত্বালিব-এর কন্যা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে তার পালক পুত্র যায়দ ইবনু হারিসাহ্-এর সাথে বিবাহ দিয়ে দেন। দীর্ঘদিন অবস্থানের পর যায়দ ইবনু হারিসাহ্ তাকে তালাক প্রদান করেন। অতঃপর যখন তার ‘ইদ্দত শেষ হয় তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যায়দ ইবনু হারিসাকে বলেন, তুমি যায়নাব-এর কাছে গিয়ে আমার কথা উল্লেখ কর, অর্থাৎ আমার পক্ষ থেকে তাকে বিয়ের প্রস্তাব পেশ কর। যায়দ ইবনু হারিসাহ্ বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আদেশ পালনে যায়নাব (রাঃ)-এর বাড়ী গেলাম এবং দরজার দিকে পিঠ ফিরিয়ে কললাম, হে যায়নাব! আল্লাহর রসূল তোমাকে স্মরণ করিয়ে অর্থাৎ বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে পাঠিয়েছেন। এ কথা শুনে যায়নাব বললেন, আমি কোনো কাজই করতে যাই না যতক্ষণ না আমার রবের নির্দেশ জারী হয়। অতঃপর যায়নাব তার একটি মসজিদ ছিল সেদিকে রওনা হলেন, এরপর এ আয়াত নাযিল হলো:

فَلَمَّا قَضٰى زَيْدٌ مِنْهَا وَطَرًا زَوَّجْنَاكَهَا অর্থাৎ- ‘‘অতঃপর যায়দ যখন যায়নাবের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করল তখন আমি তাকে তোমার সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ করে দিলাম।’’ (সূরা আল আহযাব ৩৩ : ৩৭)

অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সোজা যায়নাব-এর বাড়ী চলে আসলেন এবং অনুমতি ছাড়াই তার ঘরে প্রবেশ করলেন। (সহীহ মুসলিম)

এ ঘটনার পর মুনাফিকরা বলতে লাগল মুহাম্মাদ পুত্রবধূকে হারাম বলে অর্থাৎ ছেলের বউকে বিবাহ করা হারাম বলে ঘোষণা করে থাকে অথচ নিজেই পুত্রবধূকে বিয়ে করে বসেছে। তখনই এ আয়াত নাযিল হলো:

مَا كَانَ مُحَمَّدٌ أَبَا أَحَدٍ مِّنْ رِّجَالِكُمْ

অর্থাৎ ‘‘মুহাম্মাদ তোমাদের মধ্যেকার কোনো পুরুষের পিতা নয়।’’ (সূরা আল আহযাব ৩৩ : ৪০)

যায়নাব (রাঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অন্যান্য স্ত্রীদের ওপর গর্ব করে বলতেন : তোমাদের পিতাগণ ‘‘তোমাদের অভিভাবক হয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে তোমাদেরকে’’ বিয়ে দিয়েছেন আর আমাকে স্বয়ং আল্লাহ তা‘আলা নিজে সপ্তম আসমানের উপর আমাকে (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে) বিয়ে দিয়েছেন। (তিরমিযী)

যায়নাব-এর আসল নাম ছিল বারীরাহ্ , রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার নাম রাখলেন যায়নাব।

আনাস (রাঃ) বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন যায়নাবকে বিয়ে করলেন তখন ওয়ালীমার জন্য কওমের লোকজনকে দা‘ওয়াত করলেন। লোকজন খানা খাওয়া শেষ হলে বসে বসে গল্প শুরু করল, এটা হলো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্য ভীষণ কষ্টের, কারণ তিনি তাদের উঠে চলে যাওয়ার জন্য উদ্যত করলেন কিন্তু তারা উঠলেন না। অনেকেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর এ বিব্রত ও অস্বস্তি অবস্থা দেখে একে একে উঠে চলে গেলেন কিন্তু তিনজন লোক অবশিষ্ট বসেই রইলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘরে প্রবেশের জন্য এসে দেখেন লোকজন বসেই আছেন। এরপর তারা যখন চলে গেলেন তখন আমি (আনাস) গিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে খবর জানালাম যে, তারা চলে গেছেন।

এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘরে প্রবেশ করলেন। এ সময় আমি ঘরে ঢোকার জন্য গেলাম কিন্তু তিনি আমার ও তার মাঝে পর্দা টেনে দিলেন, তখনই আল্লাহ তা‘আলা এ আয়াত নাযিল করলেন:

يٰاَيُّهَا الَّذِينَ اٰمَنُوا لَا تَدْخُلُوا بُيُوتَ النَّبِيِّ

অর্থাৎ ‘‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা নাবীর ঘরে প্রবেশ করো না।’’ (সূরা আল আহযাব ৩৩ : ৫৩)

বিস্তারিত ঘটনা তাফসীরে ইবনু কাসীর ও অন্যান্য তাফসীর গ্রন্থ দেখুন। (ফাতহুল বারী ৯ম খন্ড, হাঃ ৫১৬৮; শারহে মুসলিম ৯/১০ম খন্ড, হাঃ ১৪২৮; মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ

পরিচ্ছেদঃ ৮. প্রথম অনুচ্ছেদ - ওয়ালীমাহ্ (বৌভাত)

৩২১২-[৩] উক্ত রাবী [আনাস (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যায়নাব বিনতু জাহশ (রাঃ)-এর বিয়েতে ওয়ালীমাহ্ করেন, তিনি লোকেদেরকে রুটি ও গোশ্ত/মাংস দ্বারা পরিতৃপ্ত করেন। (বুখারী)[1]

بَابُ الْوَلِيْمَةِ

وَعَنْهُ قَالَ: أَوْلَمَ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حِينَ بَنَى بِزَيْنَبَ بِنْتِ جَحْشٍ فأشبع النَّاس خبْزًا وَلَحْمًا. رَوَاهُ البُخَارِيّ

ব্যাখ্যা: যায়নাব বিনতু জাহশ-এর সাথে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বিবাহ ছিল পৃথিবীর সবচেয়ে বিস্ময়কর বিবাহ। আবহমানকালের সামাজিক কুসংস্কার ভেঙ্গে আল্লাহ তা‘আলা মানব সভ্যতার সামাজিক সংস্কার সাধন করেন। এ বিবাহ সম্পাদনের কাজ সপ্তম আসমানের উপর সংঘটিত হয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ বিবাহে প্রচুর লোকজনকে ওয়ালীমার দা‘ওয়াত করেছিলেন। সেখানে অঢেল গোশত রুটি তৈরি হয়েছিল অথবা গোশত রুটি সংমিশ্রণে সারীদ বা অন্যকিছু তৈরি হয়েছিল। লোকজন এসব খাদ্য অত্যন্ত তৃপ্তিসহ খেয়েছিলেন। (ফাতহুল বারী ৮ম খন্ড, হাঃ ৪৭৯৪; মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ

পরিচ্ছেদঃ ৮. প্রথম অনুচ্ছেদ - ওয়ালীমাহ্ (বৌভাত)

৩২১৩-[৪] উক্ত রাবী [আনাস (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সফিয়্যাহ্ (রাঃ)-কে মুক্ত করে বিয়ে করেন। এ মুক্তিদান মোহর হিসেবে পরিগণিত হয় এবং হায়স (খেজুর, পনির ও ঘি সংমিশ্রণে প্রস্তুতকৃত) খাদ্য দ্বারা ওয়ালীমাহ্ করেন। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

بَابُ الْوَلِيْمَةِ

وَعَنْهُ قَالَ: إِنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ أَعْتَقَ صَفِيَّةَ وَتَزَوَّجَهَا وَجَعَلَ عِتْقَهَا صَدَاقَهَا وَأَوْلَمَ عَلَيْهَا بحيس. مُتَّفق عَلَيْهِ

ব্যাখ্যা: ‘আল্লামা ইবনু হাজার ‘আসকালানী (রহঃ) বলেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর স্ত্রী উম্মুল মু’মিনীন সফিয়্যাহ্ (রাঃ) ছিলেন মূসা (আঃ)-এর ভাই হারূন ইবনু ‘ইমরান (আঃ) -এর বংশের হুয়াই ইবনু আখতাব-এর কন্যা। তার পিতা মদীনার বিখ্যাত ইয়াহূদী বানু নাযীর গোত্রের সর্দার ছিলেন, মা ছিলেন বানী কুরায়যাহ্-এর সর্দার সামাওয়াল-এর কন্যা। সফিয়্যাহ্-এর আসল নাম ছিল যায়নাব, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দরবারে এসে তার নাম হয় সফিয়্যাহ্। সফিয়্যাহ্ পিতা এবং মাতা উভয়ের বংশের দিক থেকে ছিলেন দারুণ বংশমর্যাদার অধিকারিণী। সপ্তম হিজরীতে খায়বার যুদ্ধের মাধ্যমে তিনি যুদ্ধবন্দী হিসেবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে আসেন এবং ইসলাম গ্রহণ করেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে মুক্ত করে দেন এবং স্বীয় বিবাহ বন্ধনে এনে উম্মুল মু’মিনীনের মর্যাদা দান করেন।

বন্দিত্ব থেকে তাকে মুক্ত করাই ছিল তার বিবাহের মোহর। মুল্লা ‘আলী কারী (রহঃ) বলেন, এটা একমাত্র রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্য খাস বা বিশেষত্ব ছিল। শারহুস্ সুন্নাহ্ গ্রন্থকার বলেন, বিদ্বানগণ মতবিরোধ করেছেন ঐ ব্যক্তি সম্পর্কে যে তার দাসীকে মুক্ত করে বিবাহ করে নেয় এবং ঐ দাসত্ব মুক্তই তার মোহর ধার্য করে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর একদল সাহাবীসহ কতিপয় বিদ্বান প্রকাশ্য হাদীসের ভিত্তিতে দাসত্ব মুক্তিকে মোহর ধার্য করা বৈধ মনে করেন। কিন্তু অন্য আরেকদল বিদ্বান এটা বৈধ বলে মনে করেন না। তারা প্রকাশ্য ঐ হাদীসের নানা তা‘বীল বা ব্যাখ্যা করে থাকেন।

এ হাদীস থেকে এটাও দলীল গ্রহণ করা হয় যে, দাসীকে মুক্ত করার পর তাকে বিবাহ করা অপছন্দনীয় নয়। দাস-দাসীর প্রথা বর্তমানে পৃথিবীতে চালু নেই। সুতরাং বিস্তারিত আর আলোচনা করা হলো না।

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর এই স্ত্রী সফিয়্যাহ্ (রাঃ)-এর বিবাহের ওয়ালীমাহ্ হায়স নামক খাদ্য দ্বারা সম্পন্ন করা হয়েছিল। হায়স হলো খেজুর, পনীর এবং ঘি-এর সংমিশ্রণে তৈরি এক প্রকার উপাদেয় এবং অত্যন্ত রুচিকর ও সুস্বাদু খাদ্য, যা ‘আরবদের কাছে খুব জনপ্রিয় ও লোভনীয় ছিল। (ফাতহুল বারী ৯ম খন্ড, হাঃ ৫১৬৯; মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ

পরিচ্ছেদঃ ৮. প্রথম অনুচ্ছেদ - ওয়ালীমাহ্ (বৌভাত)

৩২১৪-[৫] উক্ত রাবী [আনাস (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খায়বার ও মদীনার পথে (প্রত্যাবর্তনকালে) সফিয়্যাহ্ (রাঃ)-এর সাথে (বিবাহ বাসরের উদ্দেশে) তিনদিন অবস্থান করেন। আমি মুসলিমগণকে তাঁর ওয়ালীমার দা’ওয়াত করি, কিন্তু উক্ত ওয়ালীমায় রুটি-গোশ্ত/মাংস ছিল না। অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) চামড়ার দস্তরখানা বিছানোর নির্দেশ দিলেন। দস্তরখানা বিছানো হলে তাতে খেজুর, পনির ও ঘি রাখলেন। (বুখারী)[1]

بَابُ الْوَلِيْمَةِ

وَعَنْهُ قَالَ: أَقَامَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بَيْنَ خَيْبَرَ وَالْمَدِينَةِ ثَلَاثَ لَيَالٍ يُبْنَى عَلَيْهِ بِصَفِيَّةَ فَدَعَوْتُ الْمُسْلِمِينَ إِلَى وَلِيمَتِهِ وَمَا كَانَ فِيهَا مِنْ خُبْزٍ وَلَا لَحْمٍ وَمَا كَانَ فِيهَا إِلَّا أَن أمربالأنطاع فَبُسِطَتْ فَأَلْقَى عَلَيْهَا التَّمْرَ وَالْأَقِطَ وَالسَّمْنَ. رَوَاهُ البُخَارِيّ

ব্যাখ্যা : খায়বার বিজয় শেষে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনাহ্ এবং খায়বারের মধ্যবর্তী ‘সহবা’ নামক ভূ-খন্ডে তাঁবু খাটিয়ে তিনরাত অতিক্রম করেন। এ সময়ে সফিয়্যাহ্ (রাঃ) তার বাসরেই রাত যাপন করেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর রীতি ছিল যখনই কোনো অঞ্চল বা কোনো দূর্গ জয় করতেন সেখানে তিনি তিনদিন বা তিনরাত কাটিয়ে বিজয় চূড়ান্ত ও নিশ্চিত করে এবং পরিবেশ স্থিতিশীল করে সেখান থেকে ফিরতেন। এই সহবা নামক স্থানেই আনাস-এর মা উম্মু সুলায়ম বিনতু মিলহান সফিয়্যাহ্ (রাঃ)-কে সাজগোজ করিয়ে বধূবেশে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর তাঁবুতে প্রেরণ করেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে বাসর উদযাপনের জন্য এ সময় (নতুন) বিশেষ তাঁবু তৈরি করা হয়েছিল। পরদিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নির্দেশক্রমে আনাস ওয়ালীমার জন্য মুসলিমদের দা‘ওয়াত করলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চামড়ার বিছানা বা দস্তরখানা বিছানোর জন্যও নির্দেশ করলেন, ফলে তা বিছানো হলো। এবার দস্তরখানে খেজুর, পনীর, ঘি ইত্যাদি রাখা হলো এবং সেগুলো মিশ্রিত করে হায়স তৈরি করা হলো। এই ওয়ালীমার খাদ্য তালিকায় গোশত এবং রুটি ছিল না।

সফিয়্যাহ্ (রাঃ)-এর বিস্তারিত ঘটনা বিভিন্ন হাদীস গ্রন্থে সহীহ সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। মাওয়াহিব নামক গ্রন্থে উল্লেখ আছে, উম্মুল মু’মিনীন সফিয়্যাহ্ বিনতু হুয়াই ইবনু আখতাব, কেননা ইবনু আবুল হুকায়ক-এর বিবাহাধীন ছিলেন। ৭ম হিজরীতে তার স্বামী খায়বার যুদ্ধে নিহত হলে এবং খায়বার পতন হলে তিনি পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সাথে বন্দী হিসেবে নীত হন। বন্দীদের যখন একত্রিত করা হয় তখন সাহাবী দাহিয়্যাতুল কলবী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দরবারে আরয কারলেন, হে আল্লাহর রসূল! আমাকে (বন্দীদের মধ্য থেকে) একটা দাসী দান করুন। আল্লাহর নাবী বললেন, যাও তুমি ঐ বন্দীদের মধ্য থেকে একটি বন্দী নিয়ে নাও। দাহিয়্যাহ্ গিয়ে সফিয়্যাহ্ বিনতু হুয়াই-কে নিয়ে নিলেন। এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এসে জানালেন, হে আল্লাহর রসূল! সম্ভ্রান্ত বানী নাযীর ও বানী কুবায়যার নেত্রী সফিয়্যাহ্কে দাহিয়্যাহ্-এর হাতে তুলে দিলেন?

তার মতো সম্ভ্রান্ত এবং মহীয়সী নারীর তো সে মর্যাদা দিতে পারবে না, সে তো কেবল আপনার স্বকীয় সত্তার জন্যই শোভন! এ কথা শুনে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, দাহিয়্যাহ্-কে ডাকো। দাহিয়্যাহ্ সফিয়্যাহ্কে নিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দরবারে হাযির হলে তিনি দাহিয়্যাহ্-কে বললেন, তুমি বন্দীদের মধ্যে থেকে অন্য একটি বন্দী নিয়ে যাও। অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সকল গুণাবলী ও বংশ মর্যাদার খেয়াল করে তাকে মুক্ত করে দিলেন এবং নিজে বিয়ে করে নিলেন। তার মুক্ত হওয়াটাই ছিল তার বিয়ের মোহর। খায়বায় এবং মদীনার মধ্যবর্তী সহবা নামক স্থানে উম্মু সুলায়ম (আনাস -এর মা) সফিয়্যাহ্-এর পোষাক পরিবর্তন করে উত্তম পোষাক পরালেন এবং সুন্দররূপে সাজিয়ে বধূবেশে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাসরে পেশ করলেন। লোকেরা সফিয়্যার ব্যাপারে বলাবলি করছিল। কেউ বলল আল্লাহর নাবী তাকে বিয়ে করেছেন, কেউ বলছিল তাকে উম্ম ওয়ালাদ বানিয়েছেন। এক পর্যায়ে লোকেরা যখন দেখল যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে লোকজন থেকে পর্দাবৃত করছেন তখন তারা বুঝে নিলেন যে, তিনি তাকে স্ত্রী হিসেবেই গ্রহণ করেছেন।

জাবির থেকে বর্ণিত, খায়বারের যুদ্ধের সময় যেদিন সফিয়্যাহ্-এর বাবা, ভাই নিহত হলো সেদিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সফিয়্যাহ্-কে বন্দিদশা থেকে মুক্ত করে দিয়ে পরিবারের জীবিত অবশিষ্ট লোকেদের সাথে চলে যাওয়ার অথবা ইসলাম গ্রহণ করার ইখতিয়ার দিয়ে স্বীয় সত্বার সান্নিধ্যে থাকার কথা জানালেন। সফিয়্যাহ্ ইসলাম গ্রহণ করলেন এবং আল্লাহ ও তার রসূলকেই গ্রহণ করে নিলেন। আনাস -এর বিভিন্ন বর্ণনাবলীর সার-সংক্ষক্ষপ এই যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে এই প্রস্তাবই দিয়েছিলেন যে, আমাকে কি তোমার প্রয়োজন আছে? উত্তরে সফিয়্যাহ্ বললেন, হে আল্লাহর রসূল আমি শির্কের জীবনেই এটা মনে মনে কামনা করতাম আর আল্লাহ যখন আমাকে সেই সুযোগ করে দিলেন তা কিভাবে আমি ত্যাগ করতে পারি? আবূ হাতিম প্রমুখ মুহাদ্দিস ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার থেকে একটি ঘটনা উদ্বৃত করেছেন, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সফিয়্যাহ্-এর ‘‘চোখে কোনো কিছু দিয়ে আঘাতের নীলাভ’’ দাগ লক্ষ্য করে জিজ্ঞেস করলেন, এ দাগ কিসের? উত্তরে তিনি বললেন, একদা আমি আমার স্বামীর কোলে মাথা রেখে ঘুমিয়েছিলাম এমন সময় স্বপ্নে দেখি আকাশের চাঁদ আমার কোলে এসে পড়ল! এ স্বপ্নের কথা স্বামীকে জানালে তিনি আমার মুখমণ্ডলে ভীষণভাবে চপটেঘাত করে বলেন, তুমি বুঝি এখন ইয়াসরিবের রাজার আশা করছ? (ফাতহুল বারী ৭ম খন্ড, হাঃ ৪২১৩; মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ

পরিচ্ছেদঃ ৮. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - ওয়ালীমাহ্ (বৌভাত)

৩২২০-[১১] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সহধর্মিণী সফিয়্যাহ্ (রাঃ)-এর বিবাহে ছাতু ও খেজুর দ্বারা ওয়ালীমা করেছিলেন। (আহমাদ, তিরমিযী, আবূ দাঊদ ও ইবনু মাজাহ)[1]

عَنْ أَنَسٍ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أولم على صَفِيَّة بسويق وتمر. رَوَاهُ أَحْمَدُ وَالتِّرْمِذِيُّ وَأَبُو دَاوُدَ وَابْنُ مَاجَهْ

ব্যাখ্যা: পূর্বে ৩২১৪ নং হাদীসে সফিয়্যাহ্ -এর বিবাহোত্তর ওয়ালীমার বিবরণ অতিবাহিত হয়েছে, সেই ওয়ালীমার খানা ছিল হায়স। এ হাদীসে বলা হয়েছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সফিয়্যাহ্-এর ওয়ালীমাহ্ খেজুর এবং ছাতু দ্বারা সম্পন্ন করেছিলেন। ভিন্ন দু’টি হাদীসের সমন্বয়ে মুহাদ্দিসগণ বলেন, সফিয়্যার সাথে বিয়ের ওয়ালীমায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উভয় খাদ্যই পরিবেশন করেছিলেন, যে বর্ণনাকারীর নিকট যা ছিল অথবা যে যা খেয়েছেন সে তাই বর্ণনা করেছেন। তাছাড়া আরো বলা যায়, হায়স তৈরি করতেও যব বা ছাতু এবং খেজুর ব্যবহার করা হয়। সুতরাং হয়তো এক বর্ণনাকারী হায়সের কথা বলেছেন, অন্য বর্ণনাকারী হায়সের মৌল উপাদানের কথা বলেছেন, তাই দ্বিবিধ কথার মৌলিক কোনো পার্থক্য নেই। (‘আওনুল মা‘বূদ ৬ষ্ঠ খন্ড, হাঃ ৩৭৪০; তুহফাতুল আহওয়াযী ৩য় খন্ড, হাঃ ১০৯৫; মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ

পরিচ্ছেদঃ ১০. প্রথম অনুচ্ছেদ - স্ত্রীদের সাথে সদ্ব্যবহার এবং তাদের প্রত্যেকের (স্বামী-স্ত্রীর) পারস্পরিক হক ও অধিকার সংক্রান্ত

৩২৪৮-[১১] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সহধর্মিণীগণের সাথে এক মাসের ঈলা (পৃথক থাকার কসম) করেছিলেন। কেননা সওয়ারী হতে পড়ে গিয়ে যখন তাঁর (বাম) পা মচকে যায় তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) উঁচু কোঠায় ঊনত্রিশ দিন অবস্থান করেছিলেন। অতঃপর নেমে আসলে লোকেরা বলল, হে আল্লাহর রসূল! আপনি এক মাসের ঈলা করেছিলেন (অথচ ঊনত্রিশ দিনেই নীচে নেমে আসলেন)? উত্তরে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, (চন্দ্র) মাস কখনও ঊনত্রিশ দিনেও হয়। (বুখারী)[1]

بَابُ عِشْرَةِ النِّسَاءِ وَمَا لِكُلِّ وَاحِدَةِ مِّنَ الْحُقُوْقِ

وَعَن أنس قَالَ: آلى رَسُول الله مِنْ نِسَائِهِ شَهْرًا وَكَانَتِ انْفَكَّتْ رِجْلُهُ فَأَقَامَ فِي مَشْرُبَةٍ تِسْعًا وَعِشْرِينَ لَيْلَةً ثُمَّ نَزَلَ فَقَالُوا: يَا رَسُولَ اللَّهِ آلَيْتَ شَهْرًا فَقَالَ: «إِنَّ الشَّهْرَ يَكُونُ تِسْعًا وَعِشْرِينَ» . رَوَاهُ الْبُخَارِيُّ

ব্যাখ্যা: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর স্ত্রীদের সাথে ‘ঈলা’ করেছিলেন। ‘ঈলা’ শব্দটি ‘আরবী মাসদার বা শব্দমূল اِيْلَاءٌ থেকে اٰلٰى অতীতকালের ক্রিয়ারূপে ব্যবহৃত হয়েছে। ‘ঈলা’ শব্দের আভিধানিক অর্থ শপথ করা, কসম করা। পরিভাষায় স্ত্রীর নিকট দাম্পত্য সম্পর্কের জন্য বা সহবাস গমন না করার শপথ করা।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ঘোড়া কিংবা খচ্চরের পিঠ থেকে পড়ে গিয়ে পায়ে মারাত্মক আঘাতপ্রাপ্ত হন। এ আঘাতে তাঁর পায়ের জোড়া খুলে যায়। চলতে ফিরতে না পারায় তিনি একটি দ্বিতল ভবনে বিশ্রামের জন্য অবস্থান করেছিলেন। এই সময় তিনি তার স্ত্রীদের সাথে ঈলা করেছিলেন। কেউ কেউ বলেছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রসিদ্ধ ঈলার ঘটনা এটি নয়।

রাবীর বর্ণনা (انْفَكَّتْ رِجْلُه) অর্থাৎ তার পায়ের জোড়া খুলে গিয়েছিল। এখানে انْفَكَّتْ এর অর্থ اِنْفَرَجَتْ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া, অর্থাৎ পায়ের গিরার জোড়া থেকে হাড় খুলে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল।

‘আল্লামা ত্বীবী (রহঃ) বলেনঃ انفكاك হলো অবষণ্ণতা ও দুর্বলতার একটি প্রকার, আর الخلع শব্দের অর্থ হলো অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের এক অংশ থেকে অন্য অংশ সরে যাওয়া, বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঐ দ্বিতল কক্ষে ঊনত্রিশ দিন অবস্থানের পর যখন সেখান থেকে অবতরণ করেন, অর্থাৎ ঈলার মেয়াদ শেষ হলে তিনি স্ত্রীদের নিকট গমন করলেন। তখন লোকেরা তাকে বললেন, হে আল্লাহর রসূল! আপনি তো ঈলা করেছিলেন এক মাসের জন্য? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার উত্তরে বললেন, মাস কখনো কখনো ঊনত্রিশ দিনেও হয়। সম্ভবতঃ ঐ মাসটি ঊনত্রিশ দিনেই হয়েছিল, তাই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঊনত্রিশ দিনে তার ঈলার মেয়াদ সমাপ্ত করেছিলেন। শারহুস্ সুন্নাহ্ গ্রন্থকার বলেন, যদি কেউ মাসের কথা উল্লেখ করে বলে আমি আল্লাহর ওয়াস্তে অমুক অমুক মাস সওম পালন করবো, এখন ঐ মাসগুলোর মধ্যে যদি ২৯ দিনের অপূর্ণাঙ্গ মাস এসে যায় তাহলে তার ৩০ পুরতে আরেকটি সিয়াম পালন করতে হবে না। কিন্তু সে যদি মাসের নাম নির্দিষ্টভাবে উল্লেখ না করে বলে আমি আল্লাহর ওয়াস্তে একমাস সিয়াম পালন করবো, তাহলে তাকে ত্রিশটি সিয়ামই পালন করতে হবে।
আল্লাহ তা‘আলার বাণীঃ ‘‘হে নাবী! আপনি আপনার স্ত্রীদের বলে দিন।’’ (সূরা আল আহযাব ৩৩ : ২৮)

এ আয়াতের প্রেক্ষিতে ‘আল্লামা বাগাভী (রহঃ) বলেনঃ নাবী পত্নীগণ দুনিয়ার আরাম-আয়েশের সামগ্রী এবং জীবন নির্বাহের উপরকরণাদির বরাদ্দ বাড়িয়ে দিতে আবেদন জানালেন। আর স্ত্রীদের কতিপয় কতিপয়ের উপর গায়রাত বা আত্মমর্যাদা প্রকাশ করে নাবীকে কষ্ট দিলেন, এ সময় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের বর্জন করলেন এবং এক মাস তাদের নিকট গমন না করার শপথ করলেন, তিনি এ সময় তার সাহাবীদের নিকটও বের হননি। লোকেরা বলাবলি করতে লাগলো, তার কি হয়েছে? তারা এও বলতে লাগলেন যে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার স্ত্রীদের তালাক দিয়েছেন। ‘উমার তখন বললেন, আমি অবশ্যই তার আসল ঘটনাটা তোমাদের জানাবো। তিনি বলেন, অতঃপর আমি তখনই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট গমন করে জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রসূল! আপনি কি আপনার স্ত্রীদেরকে তালাক দিয়ে দিয়েছেন? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, না। আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আমি মুসলিমদের এই মাত্র মসজিদের মধ্যে বলতে শুনে আসলাম, তারা বলছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর স্ত্রীদের তালাক দিয়েছেন। আপনি আমাকে অনুমতি দিন আমি তাদের বলে আসি যে, তিনি তাঁর স্ত্রীদের তালাক দেননি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হ্যাঁ, ইচ্ছা করলে যেতে পারো। ‘উমার বলেন, অতঃপর আমি গিয়ে মসজিদের দরজায় দাঁড়িয়ে উচ্চকণ্ঠে ঘোষণা দিলাম যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর স্ত্রীদের তালাক দেননি। এ সময় আল্লাহ ‘খিয়ারাতের’ আয়াত নাযিল করেন। (ফাতহুল বারী ৪র্থ খন্ড, হাঃ ১৯১১; মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
দেখানো হচ্ছেঃ ৪২৪১ থেকে ৪২৬০ পর্যন্ত, সর্বমোট ৫৩৭৯ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে পাতা নাম্বারঃ « আগের পাতা 1 2 3 4 · · · 210 211 212 213 214 · · · 266 267 268 269 পরের পাতা »