হাদিসটি ইমেইলে পাঠাতে অনুগ্রহ করে নিচের ফর্মটি পুরন করুন
security code
৩২১০

পরিচ্ছেদঃ ৮. প্রথম অনুচ্ছেদ - ওয়ালীমাহ্ (বৌভাত)

৩২১০-[১] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ’আব্দুর রহমান ইবনু ’আওফ (রাঃ)-এর শরীরে হলুদের চিহ্ন দেখে জিজ্ঞেস করলেন, কিসের রং এটা? তিনি বললেন, আমি জনৈকা (আনসারী) নারীকে খেজুর দানার সমপরিমাণ স্বর্ণের বিনিময়ে বিয়ে করেছি। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, আল্লাহ তা’আলা তোমার বিয়েকে বরকতময় করুন। একটি বকরী দিয়ে হলেও তুমি ওয়ালীমাহ্ কর। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

بَابُ الْوَلِيْمَةِ

عَنْ أَنَسٍ: أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَأَى عَلَى عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ عَوْفٍ أَثَرَ صُفْرَةٍ فَقَالَ: «مَا هَذَا؟» قَالَ: إِنِّي تَزَوَّجْتُ امْرَأَةً عَلَى وَزْنِ نَوَاةٍ مِنْ ذَهَبٍ قَالَ: «بَارَكَ اللَّهُ لَكَ أَوْلِمْ وَلَوْ بِشَاةٍ»

ব্যাখ্যা: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘আবদুর রহমান ইবনু ‘আওফ-এর শরীরে অথবা কাপড়ে (জা‘ফরানের) হলোদে চিহ্ন লক্ষ্য করে জিজ্ঞেস করলেন, একি? অর্থাৎ এ হলুদ রং কোত্থেকে এলো? উত্তরে তিনি বললেন, আমি একজন মহিলাকে বিয়ে করেছি।

‘আল্লামা ত্বীবী বলেনঃ প্রশ্ন ছিল গায়ে বা কাপড়ে রং লাগার কারণ কি? উত্তরে যা বলার তাই বললেন। মূলতঃ এটা ছিল استفهام انكارى অর্থাৎ অস্বীকৃতিজ্ঞাপক প্রশ্ন, তিনি যেন এটা অস্বীকার ও অপছন্দ করছিলেন। তিনি সুগন্ধ মিশ্রিত তৈল মাখতে নিষেধ করতেন। এর উত্তরে ‘আবদুর রহমান ইবনু ‘আওফ যেন বললেন, এটা তার মাখানো কোনো সুগন্ধযুক্ত তেলের রং নয় বরং তার নব বিবাহিতা স্ত্রীর সাথে বাসর উদযাপনের ফলে তার সংস্পর্শে লাগা রং বিশেষ, এটা ইচ্ছাজনিত নয় এবং অসাবধানতাজনিত বিষয়। ‘আবদুর রহমান ইবনু ‘আওফ-এর বিবাহের মোহর নির্ধারিত হয়েছিল এক নাওয়াত পরিমাণ ওযনের স্বর্ণ।

কাযী ‘ইয়ায (রহঃ) বলেনঃ নাওয়াত বলা হয় পাঁচ দিরহামকে, যেমন বিশ দিরহামকে এক নাশ্ এবং চল্লিশ দিরহামকে এক উকিয়্যাহ্ বলা হয়। কেউ কেউ বলেছেন, নাওয়াত হলো ঐ পরিমাণ স্বর্ণ যার মূল্য পাঁচ দিরহামের মতো। আবার কেউ কেউ বলেছেন, নাওয়াত দ্বারা উদ্দেশ্য হলো খেজুরের বিচি। শেষ কথা যা এখানে স্পষ্ট তা হলো সামান্য পরিমাণ স্বর্ণ। এই পরিমাণকেই কেউ এক-ষষ্ঠাংশ মিসকালের কাছাকাছি বলে উল্লেখ করেছেন; কেউ এক-চতুর্থ মিছকাল বা তার চেয়েও কম যার মূল্য দশ দিরহামের সমান বলে উল্লেখ করেছেন। তবে প্রথম মতটি গ্রহণ অধিক সম্ভাবনাময়। সুতরাং নাওয়াতের অর্থ পাঁচ দিরহামের পরিমাণ, যা স্বর্ণের ওযনে সমান, অর্থাৎ সাড়ে তিন মিসকাল স্বর্ণ।

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘আবদুর রহমান ইবনু ‘আওফ-এর বিবাহের কথা শুনে তার দাম্পত্য জীবনের বারাকাতের জন্য দু‘আ করলেনঃ بَارَكَ اللّٰهُ لَكَ অর্থাৎ আল্লাহ তোমার জীবনকে বরকতময় করুন। এ হাদীস থেকে বিবাহিত ব্যক্তির জন্য বারাকাতের দু‘আ করা মুস্তাহাব বা সুন্নাত প্রমাণিত হয়।

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘আবদুর রহমান ইবনু ‘আওফ-কে বিবাহোত্তর ওয়ালীমাহ্ খাওয়ানোর নির্দেশ করেন। ইবনুল মালিক বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর এই প্রকাশ্য নির্দেশসূচক বাক্য দ্বারা কতিপয় ‘উলামাহ্ বিবাহোত্তর ওয়ালীমাহ্ খাওয়ানোকে ওয়াজিব বলে মন করেন। তবে অধিকাংশ ‘উলামারা বলেন, এ নির্দেশ মুস্তাহাব অর্থে ব্যবহৃত হবে।

ওয়ালীমাহ্ কখন করতে হবে? এর উত্তরে বলা হয় ওয়ালীমাহ্ হবে বাসর উদযাপনের পরে, কেউ আবার বিবাহের আকদ সম্পাদন হওয়ার পরেই মতামত পেশ করেছেন। কেউবা আবার বিবাহের সময় এবং বাসর উদযাপনের পর দু’ সময়েই ওয়ালীমা করার কথা বলেছেন। ইমাম মালিকের একদল অনুসারী তো সাতদিন ভরে ওয়ালীমাগ্ খাওয়ানো মুস্তাহাব বলে মনে করে থাকেন। তবে নির্ভরযোগ্য এবং পছন্দনীয় মত হলো ওয়ালীমাহ্ খাওয়ানো বিবাহকারীর সাধ্য ও সামর্থ্যের উপর নির্ভর করবে। (ফাতহুল বারী ৪র্থ খন্ড, হাঃ ২০৪৯; শারহে মুসলিম ৯/১০ম খন্ড, হাঃ ১৪২৭; মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ