আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদিস পাওয়া গেছে ৪৬৮৪ টি

পরিচ্ছেদঃ ৩. দ্বিতীয় ‘অনুচ্ছেদ - তাকদীরের প্রতি ঈমান

১০৫-[২৭] ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমার উম্মাতের মধ্যে দু’ রকমের লোক রয়েছে, তাদের জন্য ইসলামে কোন অংশ নেই। তারা হলোঃ (১) মুর্জিয়াহ্ ও (২) ক্বদারিয়্যাহ্। (তিরমিযী; ইমাম তিরমিযী বলেন, হাদীসটি হাসান গরীব)[1]

باب الإيمان بالقدر - الفصل الثاني

وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: صِنْفَانِ مِنْ أُمَّتِي لَيْسَ لَهُمَا فِي الْإِسْلَامِ نَصِيبٌ: الْمُرْجِئَةُ وَالْقَدَرِيَّةُ . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَقَالَ هَذَا حَدِيثٌ غَرِيبٌ

Chapter: Belief in the Divine Decree - Section 2


Ibn ‘Abbas reported that God’s messenger said, “There are two classes among my people who have no portion in Islam, the Murji’a and the Qadariya." Tirmidhi transmitted it and said this is a gharib tradition.

ব্যাখ্যা: ‘আল্লামা শাহরাস্তানী বলেন, إلْارْجَاءُ-এর দু’টি অর্থ হতে পারে। ১. বিলম্ব করা। যেমনঃ ‘আরবরা বলে থাকে, অবকাশ দাও। ২. আশা দেয়া। এই দুই অর্থই উক্ত হাদীসে উল্লিখিত মুরজিয়াহ্ দলের ওপর নেয়া যেতে পারে। কেননা তারা ‘আমলকে নিয়্যাত থেকে বিলম্বিত করে এবং তারা এ কথা বলে যে, ঈমানের পরে যতই পাপ হোক না কেন তাতে কোন ক্ষতি হবে না। যেমনিভাবে কুফরীর অবস্থায় কোন ভালো কাজ কোনই উপকারে আসবে না।

তিনি আরো বলেন, মুর্জিয়াহ্ চার শ্রেণীরঃ ১. খাওয়ারিজের মুরজিয়াহ্ দল ২. ক্বদারিয়্যাদের মুরজিয়াহ্ দল ৩. জাবরিয়াদের মুরজিয়াহ্ দল ৪. মূল মুরজিয়াহ্ দল।

অতঃপর তিনি মূল মুরজিয়াদের আলোচনা করেছেন এবং বলেছেন যে, যে ব্যক্তি এ ব্যাপারে জানতে চায় সে যেন ‘‘আল মিলাল ওয়া আন্ নিহাল’’ কিতাব দেখেন। আর অত্র হাদীসে মুরজিয়াহ্ দ্বারা জাবরিয়াই উদ্দেশ্য।

‘আল্লামা ‘উবায়দুল্লাহ মুবারকপূরী (রহঃ) বলেছেন, এ তাক্বদীরের বিষয়ের হাদীসগুলো সহীহ, হাসান, য‘ঈফ সবগুলোই প্রমাণ করছে কোন তর্ক ছাড়াই তাক্বদীরের প্রতি ঈমান আনতে হবে, যা ইসলামের অন্যতম স্তম্ভ। অতএব, তাক্বদীরকে অস্বীকার করা বা মিথ্যাপ্রতিপন্ন করা কুফরী গুনাহের অন্তর্ভুক্ত। (আল্লাহই ভালো জানেন)

(والقَدَرية) দু’টোতেই যবর দিয়ে অথবা দালে সাকিন দিয়ে পড়া যায়। যারা বলে থাকে বান্দা নিজেই তার কর্মসমূহের স্রষ্টা এক্ষেত্রে তাক্বদীরের কোন প্রাধান্য নেই। এই নামে প্রসিদ্ধ হয়েছে যারা তাক্বদীরকে স্বীকার করে না তারা এই কারণে যে, তারা তাক্বদীর সম্পর্কে কথা বলে এবং তাক্বদীর অস্বীকার করার দলীল উপস্থাপন করে। তাদের বাড়াবাড়ির কারণেই এ নামে প্রসিদ্ধ হতে তারাই বেশী হকদার।


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
বর্ণনাকারীঃ আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ

পরিচ্ছেদঃ ৩. তৃতীয় ‘অনুচ্ছেদ - তাকদীরের প্রতি ঈমান

১২১-[৪৩] ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) সূত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা ’আরাফার মাঠের সন্নিকটে না’মান নামে এক জায়গায় আদম (আঃ)-এর মেরুদণ্ড হতে তাঁর সন্তানদের বের করে শপথ গ্রহণ করিয়েছিলেন। তিনি আদম (আঃ)-এর মেরুদণ্ড হতে তাঁর প্রত্যেক সন্তানকে বের করেছিলেন। এ সকলকে পিঁপড়ার মতো আদম (আঃ)-এর সামনে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছিল। অতঃপর আল্লাহ তাদের সম্মুখপানে কথা বলেছিলেন- ’’আমি কি তোমাদের ’প্রভু’ নই? আদম সন্তানরা উত্তর দিয়েছিল, হ্যাঁ, অবশ্যই আপনি আমাদের ’প্রতিপালক’। এতে আমরা সাক্ষী থাকলাম যাতে তোমরা কিয়ামতের (কিয়ামতের) দিন এ কথা বলতে না পারো, আমরা জানতাম না কিংবা তোমরা এ কথাও বলতে না পারো, আমাদের পিতৃ-পুরুষগণ আমাদের পূর্বে মুশরিক হয়ে গিয়েছিল। আর আমরা তাদের পরবর্তী বংশধর। তুমি কি বাতিলধর্মীরা (পিতৃ-পুরুষগণ) যা করেছে সে ’আমলের কারণে আমাদেরকেও ক্ষতিগ্রস্ত করে দিবে’’- (সূরাহ্ আ’রাফ ১৭২-১৭৩)। (আহমাদ)[1]

باب الإيمان بالقدر - الفصل الثالث

وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: أَخذ الله الْمِيثَاق من ظهر آدم بنعمان يَعْنِي عَرَفَة فَأخْرج من صلبه كل ذُرِّيَّة ذَرَاهَا فَنَثَرَهُمْ بَيْنَ يَدَيْهِ كَالذَّرِّ ثُمَّ كَلَّمَهُمْ قِبَلًا قَالَ: (أَلَسْتُ بِرَبِّكُمْ قَالُوا بَلَى شَهِدْنَا أَنْ تَقُولُوا يَوْمَ الْقِيَامَةِ إِنَّا كُنَّا عَنْ هَذَا غافلين أَوْ تَقُولُوا إِنَّمَا أَشْرَكَ آبَاؤُنَا مِنْ قَبْلُ وَكُنَّا ذُرِّيَّةً مِنْ بَعْدِهِمْ أَفَتُهْلِكُنَا بِمَا فَعَلَ المبطلون)
رَوَاهُ أَحْمد

Chapter: Belief in the Divine Decree - Section 3


Ibn ‘Abbas reported the Prophet as saying: God made the covenant from Adam’s back in Na‘man, i.e. ‘Arafa, and brought forth from his loins all his offspring whom He created and scattered before Him like small ants. He then spoke to them face to face saying, “Am I not your Lord?’ They replied, “Yes, we testify this.” [It was] lest you should say on the day of resurrection, “We were neglectful of this,” or should say, “Our fathers were polytheists before us and we were an offspring after them. Wilt Thou destroy us for what the workers of vanity did?” * Ahmad transmitted it. * Quran, 7:172-173

ব্যাখ্যা: (فَنَثَرَهُمْ بَيْنَ يَدَيْهِ كَالذَّرِّ) ‘‘অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা আদম (আঃ)-এর সন্তানদেরকে তাঁর সামনে পিপিলিকার মতো ছড়িয়ে দিলেন।’’ অর্থাৎ- আল্লাহ তা‘আলা আদম (আঃ)-এর পিঠ থেকে তার সন্তানদেরকে বের করলেন পিপিলিকার মতো ছোট আকারে এবং তাদেরকে আদম (আঃ)-এর সামনে উপস্থাপন করলেন।

(ثُمَّ كَلَّمَهُمْ قُبُلًا) ‘‘অতঃপর তাদের সাথে কথা বলেছিলেন সামনাসামনি’’। অর্থাৎ- আল্লাহ তা‘আলা সরাসরি তাদের সামনে উপস্থিত হয়ে কথা বলেছিলেন। এ কথার বিনিময় পর্দার অন্তরাল থেকে ছিল না এবং মালাকের (ফেরেশতার) মাধ্যমেও ছিল না।

(أَلَسْتُ بِرَبِّكُمْ؟) ‘‘আমি কি তোমাদের প্রভু নই?’’

(قَالُوا بَلى) ‘‘তারা বললঃ হ্যাঁ।’’ অর্থাৎ- হ্যাঁ, আপনিই আমাদের প্রভু, আপনি ব্যতীত অন্য কেউ আমাদের প্রভু নন।

প্রকৃতপক্ষে অর্থ হলো, নিজের তাওহীদের স্বীকৃতি দেয়ার পরেও এর মাধ্যমে তারা যেন যুক্তি স্থাপন না করতে পারে, এজন্যই আল্লাহ তা‘আলা ঐ স্বীকারোক্তি নিয়েছিলেন।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ

পরিচ্ছেদঃ ১৮. প্রথম অনুচ্ছেদ - সালাতের পর যিকর-আযকার

৯৫৯-[১] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) শেষ হওয়াটা বুঝতাম তাকবীর শোনার মাধ্যমে। (মুত্তাফাকুন ’আলায়হি)[1]

بَابُ الذِّكْرِ بَعْدَ الصَّلَاةِ

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا قَالَ: كُنْتُ أَعْرِفُ انْقِضَاءَ صَلَاةِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسلم بِالتَّكْبِيرِ

ব্যাখ্যা: রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ‘আল্ল-হু আকবার’ ধ্বনি শ্রবণ করে তাঁর সালাত শেষ হওয়া এবং তা থেকে অবসর হওয়া বুঝতে পারতাম। বুখারী ও মুসলিম ইুবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে এও বর্ণনা করেছেন যে ‘‘ফরয সালাত শেষ করার পর উচ্চৈঃস্বরে যিকর পাঠ’’ রসূলু্ল্লাহ (রাঃ)-এর যুগে প্রচলিত ছিল। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) আরো বলেনঃ যিকর বা তাকবীর শুনে আমি লোকজনের সালাত শেষ হওয়া বুঝতে পারতাম। এ থেকে বুঝা যায় যে, লোকজন সালাত শেষে উচ্চৈঃস্বরে তাকবীর ও যিকর পাঠ করতেন। অতএব হাদীসটি প্রমাণ করে যে, ফরয সালাতের পরে উচ্চৈঃস্বরে ‘আল্ল-হু আকবার’ বলা এবং অন্যান্য যিকর করা মুসতাহাব। এ হাদীস থেকে এটাও বুঝা যায় যে, ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বয়সে ছোট হওয়ার কারণে তখন নিয়মিত জামা‘আতে উপস্থিত হতেন না তাই তিনি লোকজনের তাকবীর ধ্বনি ও তাদের যিকিরের (জিকিরের) আওয়াজ শুনে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) সমাপ্তির বিষয়ে অবহিত হতেন।

ইমাম নাবাবী বলেনঃ এ হাদীসটি ঐসব সালাফীদের দলীল যারা বলেন যে, ফরয সালাতের পরে উচুঁস্বরে ‘আল্ল-হু আকবার’ বলা এবং যিকর আযকার পাঠ করা মুস্তাহাব। আর পরবর্তী যুগের যারা এটাকে মুস্তাহাব বলেন তাদের অন্যতম হলেন ইবনু হাযম। ‘আল্লামা মুবারকপূরী বলেনঃ যারা ফরয সালাতের পর উচুঁস্বরে তাকবীর বলা ও যিকর-আযকার পাঠ করা মুসতাহাব মনে করেন তাদের অভিমত আমার দৃষ্টিতে অধিক গ্রহণযোগ্য যদিও চার ইমাম ও তাদের অনুসারীগণ এতে একমত পোষণ করেন না। কেননা সঠিক তা-ই যার ব্যাপারে দলীল প্রমাণ পাওয়া যায়। কোন ব্যক্তির অভিমত ও দাবী দলীল ব্যতীত সঠিক হতে পারে না। তবে হ্যাঁ এ উঁচুস্বরের ক্ষেত্রে বেশী বাড়াবাড়ি করা যাবে না এবং সীমাতিরিক্ত উঁচু আওয়াজ করা যাবে না কেননা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ‘‘তোমরা তোমাদের প্রতি সদয় হও।’’


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ

পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ

১৭৮১-[১০] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন এ আয়াত, وَالَّذِيْنَ يَكْنِزُوْنَ الذَّهَبَ وَالْفِضَّةَ অর্থাৎ ’’যেসব লোক সোনা-রূপা জমা করে রাখে’’- (সূরাহ্ আত্ তওবা্ ৯: ৩৪) আয়াতের শেষ পর্যন্ত নাযিল হল তখন সাহাবীগণ চিন্তিত হয়ে পড়ল। ’উমার (রাঃ) বলেন, আমি তোমাদের এ দুশ্চিন্তা নিরসন করে দিচ্ছি। তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট গেলেন। তাঁকে বললেন, হে আল্লাহর নবী! এ আয়াত তো আপনার সাথীদের জন্য ভারি বোঝা হয়েছে। (এ কথা শুনে) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আল্লাহ তা’আলা (সকল ব্যয় নির্বাহের পর) অবশিষ্ট মাল পবিত্র করার ব্যবস্থা স্বরূপ তোমাদের ওপর যাকাত ফরয করেছেন। আল্লাহ তা’আলা এজন্যই ওয়ারিস ঠিক করে দিয়েছেন। এরপর তিনি এ বাক্য উল্লেখ করলেন, যেন তোমাদের পরবর্তীরা যাতে এ মালের মালিক হয়ে যায়। ’আব্বাস (রাঃ)বলেন, এ কথা শুনে ’উমার (রাঃ) ’আল্ল-হু আকবার’ বলে উঠলেন। তারপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ’উমার (রাঃ) কে বললেন, আমি কি তোমাকে মানুষের সবচেয়ে উত্তম গচ্ছিত বস্তু সম্পর্কে অবহিত করব না? তা হলো চরিত্রবান স্ত্রী। স্বামী যখন তার প্রতি দৃষ্টিপাত করবে খুশী হয়ে যাবে, তাকে কোন হুকুম করলে পালন করবে, সে ঘরে না থাকলে তার ধন-সম্পদের সুরক্ষা করবে। (আবূ দাঊদ)[1]

اَلْفَصْلُ الثَّانِى

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا قَالَ: لَمَّا نَزَلَتْ (وَالَّذِينَ يَكْنِزُونَ الذَّهَبَ وَالْفِضَّةَ)
كَبُرَ ذَلِكَ عَلَى الْمُسْلِمِينَ. فَقَالَ عُمَرُ أَنَا أُفَرِّجُ عَنْكُمْ فَانْطَلَقَ. فَقَالَ: يَا نَبِيَّ اللَّهِ قد كبر على أَصْحَابك هَذِه الْآيَة. فَقَالَ نَبِيُّ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ اللَّهَ لم يفْرض الزَّكَاة إِلَّا ليطيب بهَا مَا بَقِيَ مِنْ أَمْوَالِكُمْ وَإِنَّمَا فَرَضَ الْمَوَارِيثَ وَذكر كلمة لتَكون لمن بعدكم» قَالَ فَكَبَّرَ عُمَرُ. ثُمَّ قَالَ لَهُ: «أَلَا أُخْبِرُكَ بِخَيْرِ مَا يَكْنِزُ الْمَرْءُ الْمَرْأَةُ الصَّالِحَةُ إِذَا نَظَرَ إِلَيْهَا سَرَّتْهُ وَإِذَا أَمَرَهَا أَطَاعَتْهُ وَإِذَا غَابَ عَنْهَا حفظته» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد

ব্যাখ্যা: ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেনঃ যখন সূরাহ্ আত্ তাওবাহ্-র যাকাত সম্পর্কে ৩৪ নং আয়াত অবতীর্ণ হয় তখন ‘উমার (রাঃ) বলেনঃ হে আল্লাহর নাবী! এ আয়াতটি মুসলিমদের ওপর খুবই বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আল্লাহ তা‘আলা যাকাতের সম্পদ পবিত্র করার জন্য ফরয করেছেন। আর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ উত্তম ধনভান্ডার হলো সতীনারী যে স্বামীর আনুগত্য করে।

ক্বাযী ‘আয়ায বলেন, যখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীদের বললেন, যে মালের যাকাত আদায় করলে তা জমা করা/গচ্ছিত রাখায় কোন সমস্যা নেই এবং দেখলেন যে, তারা এতে খুশি হয়েছেন তখন তার থেকে বিরত রাখার এর চেয়ে অধিক উত্তম এবং স্থায়ী বিষয়ের সংবাদ দিলেন। আর তা হল একজন সত্বী সুন্দরী রমণী। কারণ স্বর্ণ/অর্থ সম্পদ মানুষের সাথে কিছু সময়ের জন্য থাকে কিন্তু একজন রমণী তার দুনিয়ার জীবনের সাথী যার দিকে দৃষ্টিপাত করলে সে তোমাকে আনন্দিত করে, প্রয়োজনের সময় তুমি তার মাধ্যমে তোমার যৌনবৃত্তি পূর্ণ কর, কোন গোপন বিষয়ে তার সাথে পরামর্শ করলে সে তোমার গোপনীয়তা সংরক্ষণ করে, প্রয়োজনীয় মুহূর্তে তার সাহায্য চাইলে সে তোমার আনুগত্য করে। যখন তুমি তার থেকে অনুপস্থিত থাকো তখন সে তোমার সম্পদ সংরক্ষণ করে পরিবারের যত্ন নেয়। আর এত কিছু না হলেও সে তোমার একটি সন্তান জন্ম দেয় যে জীবতাবস্থায় তোমার সহকারী এবং মৃত্যুর পরে তোমার খলীফা হবে। অতএব, তার অনেক ফযীলত রয়েছে।


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
বর্ণনাকারীঃ আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ

পরিচ্ছেদঃ ২. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - কিরাআতের ভিন্নতা ও কুরআন সংকলন প্রসঙ্গে

২২২২-[১২] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি একবার খলীফা ’উসমানকে বললাম, কোন্ জিনিস আপনাদেরকে উদ্বুদ্ধ করল যে সূরা আনফাল, যা সূরা ’মাসানী’র অন্তর্ভুক্ত, সূরা বারাআত (আত্ তওবা্) যা ’মাঈন’-এর অন্তর্ভুক্ত? এ উভয় সূরাকে এক স্থানে একত্র করে দিলেন? এ দু’ সূরার মাঝে আবার বিসমিল্লা-হির রহমা-নির রহীম লাইনও লিখলেন না? আর এগুলোকে জায়গা দিলেন ’’সাব্’ইত্ব তুওয়াল’’-এর মধ্যে (অর্থাৎ- ৭টি দীর্ঘ সূরা)। কোন্ বিষয়ে আপনাদেরকে এ কাজ করতে উজ্জীবিত করল? ’উসমান জবাবে বললেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ওপর ওহী নাযিল হবার অবস্থা ছিল এমন যে, কোন কোন সময় দীর্ঘ দিন অতিবাহিত হত (তাঁর ওপর কোন সূরা নাযিল হত না) আবার কোন কোন সময় তাঁর ওপর বিভিন্ন সূরা (একত্রে) নাযিল হত। তাঁর ওপর কুরআনের কিছু নাযিল হলে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁর কোন না কোন সাহাবী ওহী লেখককে (কাতিবে ওহী) ডেকে বলতেন, এ আয়াতগুলোকে অমুক সূরার অন্তর্ভুক্ত করো। যেসব আয়াতে অমুক অমুক বর্ণনা রয়েছে এর, আর অন্য কোন আয়াত নাযিল হলে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলতেন, এ আয়াতকে অমুক সূরায় স্থান দাও।

মদীনায় প্রথম নাযিল হওয়া সূরাহসমূহের মধ্যে সূরা আল আনফাল অন্তর্ভুক্ত। আর সূরা ’বারাআত’ মদীনায় অবতীর্ণ হবার দিক দিয়ে শেষ সূরাগুলোর অন্তর্গত। অথচ ও দু’টি সূরার বিষয়বস্ত্ত প্রায় এক। এরপর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইন্তিকালের কারণে আমাদেরকে বলে যেতে পারেননি সূরা বারাআত, সূরা আনফাল-এর অন্তর্ভুক্ত কিনা। তাই (অর্থাৎ- উভয় সূরা মাদানী ও বিষয়বস্ত্তর মিল থাকার কারণে) আমি এ দু’ সূরাকে একত্রে মিলিয়ে দিয়েছি। ’বিসমিল্লা-হির রহমা-নির রহীম’ লাইনও (এ দু’ সূরার মধ্যে) লিখিনি এবং এ কারণেই এটাকে ’’সাব্’ইত্ব তুওয়াল’’-এর অন্তর্গত করে নিয়েছি। (আহমদ, তিরমিযী ও আবূ দাঊদ)[1]

وَعَن ابْن عَبَّاس قَالَ: قلت لعُثْمَان بن عَفَّان مَا حملكم أَنْ عَمَدْتُمْ إِلَى الْأَنْفَالِ وَهِيَ مِنَ الْمَثَانِي وَإِلَى بَرَاءَةٍ وَهِيَ مِنَ الْمَئِينِ فَقَرَنْتُمْ بَيْنَهُمَا وَلم تكْتبُوا بَينهمَا سَطْرَ بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ وَوَضَعْتُمُوهَا فِي السَّبع الطول مَا حملكم على ذَلِك فَقَالَ عُثْمَانُ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِمَّا يَأْتِي عَلَيْهِ الزَّمَان وَهُوَ تنزل عَلَيْهِ السُّور ذَوَات الْعدَد فَكَانَ إِذا نزل عَلَيْهِ الشَّيْء دَعَا بعض من كَانَ يَكْتُبُ فَيَقُولُ: «ضَعُوا هَؤُلَاءِ الْآيَاتِ فِي السُّورَةِ الَّتِي يُذْكَرُ فِيهَا كَذَا وَكَذَا» فَإِذَا نَزَلَتْ عَلَيْهِ الْآيَةُ فَيَقُولُ: «ضَعُوا هَذِهِ الْآيَةَ فِي السُّورَةِ الَّتِي يُذْكَرُ فِيهَا كَذَا وَكَذَا» . وَكَانَتِ الْأَنْفَالُ مِنْ أَوَائِلِ مَا نَزَلَتْ بِالْمَدِينَةِ وَكَانَتْ بَرَاءَة من آخر الْقُرْآن وَكَانَت قصَّتهَا شَبيهَة بِقِصَّتِهَا فَظَنَنْت أَنَّهَا مِنْهَا فَقُبِضَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَلَمْ يبين لنا أَنَّهَا مِنْهَا فَمِنْ أَجْلِ ذَلِكَ قَرَنْتُ بَيْنَهُمَا وَلِمَ أكتب بَينهمَا سَطْرَ بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ وَوَضَعْتُهَا فِي السَّبْعِ الطُّوَلِ. رَوَاهُ أَحْمَدُ وَالتِّرْمِذِيُّ وَأَبُو دَاوُدَ

ব্যাখ্যা: মুহাদ্দিসগণ কুরআনকে চারভাগে ভাগ করেছেন। আর প্রত্যেক ভাগের এক একটি নাম দিয়েছেন। তারা বলেন, কুরআনের প্রথম দিকের সূরার নাম السبع الطول ‘‘সাব্‘ইত্ব তুওয়াল’’। এ প্রকারের মধ্যে রয়েছে সূরা আল বাকারাহ্ থেকে সূরা আল আ‘রাফ পর্যন্ত ছয়টি সূরা। সপ্তম সূরা নিয়ে মতভেদ রয়েছে। কেউ বলেন, সূরা ফাতিহাহ্ যদিও এর আয়াত সংখ্যা কম কিন্তু এর অর্থের আধিক্যতা রয়েছে।

কেউ কেউ বলেন, সূরা আনফাল ও তাওবার সমষ্টি হচ্ছে সপ্তম সূরা। এ সূরা দু’টি যেন একটি সূরা। এ কারণে এই দু’টি সূরার মাঝে بسم الله দ্বারা পার্থক্য করা হয়নি।

* দ্বিতীয় প্রকার হলো ذوات مائية অর্থাৎ- যেসব সূরায় ১০০ বা ১০০ এর কম বেশি আয়াত রয়েছে, এ ধরনের সূরার সংখ্যা ১১ টি। এর আরেক নাম المئون

* তৃতীয় প্রকার হলো مثانى অর্থাৎ- যেসব সূরায় ১০০ এর কম আয়াত আছে। এ প্রকার সূরার সংখ্যা ২০ টি।

* চতুর্থ প্রকার হলো مفصل। আর এ নামে নামকরণের কারণ হলো بسم الله এর মাধ্যমে সূরাগুলোকে বেশি বেশি ভাগ করা হয়েছে।

ইবনু ‘আব্বাস ‘উসমান (রাঃ)-কে দু’টি প্রশ্ন করেছেন। (এক) আনফাল ছোট সূরা হওয়া সত্ত্বেও কেন الطول-এ এবং সূরা তাওবাকে طول -এর সমপর্যায়ের হওয়া সত্ত্বেও مئين এ আর দু’টির মাঝে بسم الله কেন লেখা হল না।

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) এর দু’টি প্রশ্নের জবাব ‘উসমান (রাঃ) প্রদান করেছেন, কারণ দু’টি বিষয়ের মাঝে সাদৃশ্য রয়েছে। কেননা তিনি মনে করেছেন যে, সূরা দু’টি একটিই সূরা। তাই এটাকে السبع الطول এর মাঝে রাখা হয়েছে। আর এ দু’টির মাঝে بسم الله লেখা হয়নি।

অথবা দু’টি সূরা মনে করেছেন, তাই এ দু’টির মাঝে ফাঁকা সাদা জায়গা রাখা হয়েছে। এ ধরনের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে এটা সাদৃশ্য হওয়া বা অস্পষ্ট হওয়ায় এবং এ দু’টির একটি সূরা হওয়াতে অকাট্য প্রমাণ না থাকায়।

বর্তমানে কুরআনে যে অবস্থায় সূরার ধারাবাহিকতা দেখা যাচ্ছে এটা আল্লাহ কর্তৃক জিবরীল মারফত প্রাপ্ত না সাহাবীদের ইজতিহাদের মাধ্যমে হয়েছে, এ ব্যাপারে মতানৈক্য রয়েছে।

কেউ কেউ বলেন, এটা সাহাবীদের ইজতিহাদের মাধ্যমে। এ মতের প্রবক্তাদের মধ্যে কাযী আবূ বাকর (রহঃ) অন্যতম। তারা এ মতের প্রতি ঝুঁকেছেন এজন্যে যে, সাহাবীদের কুরআন নাযিলের কারণ এবং শব্দাবলীর অবস্থান স্থল সম্পর্কে জ্ঞান ছিল। মূলত তারা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট থেকে যা শুনতেন তা লিখে রাখতেন।

আবার কেউ বলেন, আয়াতের ধারাবাহিকতা ও সূরার ধারাবাহিকতা আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত বিধান।

ইমাম বায়হাক্বী (রহঃ) তাঁর مدخل গ্রন্থে বলেছেন, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যুগে সূরা আনফাল ও তাওবাহ্ ব্যতীত অন্য সব আয়াত ও সূরা এ ধারাতেই সাজানো ছিল। যা ‘উসমান (রাঃ) এর হাদীস থেকে বুঝা যাচ্ছে। ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূত্বী ও ‘উলামাগণের বিস্তারিত মতভেদের বর্ণনা উল্লেখ পূর্বক ইমাম বায়হাক্বীর মত সমর্থন করে ‘আলিমদের মতামতকে উল্লেখ করে বলেন, সূরা আনফাল ও তাওবাহ্ ছাড়া সমস্ত সূরার তারতীব আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত।

নির্ভরযোগ্য ও অগ্রাধিকারযোগ্য মত: ইমাম বাগাবী, ইবনুল আবারী, কিরমানী ও অন্যান্যদের মত হচ্ছে আমাদের সিদ্ধান্ত। তাদের মত হলো বর্তমানে কুরআনে সূরার এবং আয়াতের যে ধারাবাহিকতা রয়েছে এভাবে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পাদন করেছেন। যেমন জিবরীল (আঃ) আল্লাহর নিকট থেকে সংবাদ পেয়েছেন। সুতরাং সমস্ত সূরার ধারাবাহিকতা আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত। আর এর বিপক্ষে যেসব মত রয়েছে তা প্রত্যাখ্যানযোগ্য।

তিরমিযী ও মুসনাদে আহমাদে বর্ণিত হয়েছে যে, মদীনায় প্রথমদিকে সূরা আল আনফাল নাযিল হয়েছে এবং সূরা আত্ তাওবাহ্ কুরআন নাযিলের শেষের দিকে নাযিল হয়েছে।

কারী বলেন, সূরা আত্ তাওবাহ্ মাদানী সূরা। এ দু’টি সূরার মাঝে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ধারাবাহিক বিষয়বস্ত্তর সাদৃশ্য রয়েছে। আর এটাই হচ্ছে দু’টি সূরাকে একত্রিত করার একটি কারণ।

মোটকথা দু’টি সূরা হওয়ার ব্যাপারে স্পষ্ট দলীল না আসায় بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ উল্লেখ করা হয়নি, একটি সূরা হওয়ার ব্যাপারে স্পষ্ট না পাওয়ায় ফাঁকা জায়গা রাখা হয়েছে। আর দু’টি সূরা হলেও طول-এ রাখা বেঠিক হয়নি। কারণ مئين-এর ক্ষেত্রে কিছুটা ব্যতিক্রম দেখা যায়। যেমন সূরা র‘দ এবং সূরা ইব্রাহীম। আর যদি একটি সূরা হয় তাহলে তাকে সেখানে রাখা ঠিক হয়েছে। যাকে مثانى-এর স্থানে দিলে তা ঠিক হতো না ও সামঞ্জস্যপূর্ণ হতো না । তাই সাদৃশ্য থাকার কারণে طول-এর শেষে এবং مئين-এর প্রথমে স্থান দেয়া হয়েছে।


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
বর্ণনাকারীঃ আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ

পরিচ্ছেদঃ ১. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - উপার্জন করা এবং হালাল রুযী অবলম্বনের উপায় সন্ধান করা

২৭৮২-[২৪] ’আব্দুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তাঁকে একবার কুরআন মাজীদ লেখার মজুরি বা পারিশ্রমিক গ্রহণ করা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে, জবাবে তিনি বললেন, তাতে কোনো দোষ নেই। কারণ তারা তো (কুরআনের) হরফসমূহের নক্সা অঙ্কন করে নিজ হাতের উপার্জন খেয়ে থাকে। (রযীন)[1]

وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا أَنَّهُ سُئِلَ عَنْ أُجْرَةِ كِتَابَةِ الْمُصْحَفِ فَقَالَ: لَا بَأْسَ إِنَّمَا هُمْ مُصَوِّرُونَ وَإِنَّهُمْ إِنَّمَا يَأْكُلُونَ من عمل أَيْديهم. رَوَاهُ رزين

ব্যাখ্যা: (إِنَّمَا هُمْ مُصَوِّرُونَ) ‘‘তারা তো শুধুমাত্র অঙ্কনকারী’’। অর্থাৎ মুসহাফ লেখকগণ শুধুমাত্র কুরআনের অক্ষর অঙ্কন করে আর তা দূষণীয় নয়।

(وَإِنَّهُمْ إِنَّمَا يَأْكُلُونَ مِنْ عَمَلِ أَيْدِيْهِمْ) ‘‘তারা তো শুধুমাত্র তাদের স্বীয় হস্তের উপার্জনই ভক্ষণ করে।’’ আর স্বীয় হস্তের উপার্জন সর্বাধিক উত্তম উপার্জন। ‘আল্লামা ত্বীবী বলেনঃ পাঠ করা এবং পঠিত, লেখা এবং লিখিত এর সবগুলোর সমন্বয়ে হলো কুরআন তথা মুসহাফ। এক্ষেত্রে লেখা ও পাঠ করা এটি হলো মানুষের কর্ম। তাই মুসহাফ লেখা যেহেতু মানুষের কর্ম সেহেতু মুসহাফ লিখে তার পারিশ্রমিক নেয়া বৈধ। (মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
বর্ণনাকারীঃ আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ

পরিচ্ছেদঃ ৫. প্রথম অনুচ্ছেদ - নিষিদ্ধ বস্তু ক্রয়-বিক্রয়

২৮৪৫-[১২] ইবনু ’আব্বাস (রাঃ)-এর এক বর্ণনায় রয়েছে, ’যে পর্যন্ত না ওই খাদ্য-দ্রব্য পরিমাপ করে বুঝে নেয়।’ (বুখারী, মুসলিম)[1]

بَابُ الْمَنْهِىِّ عَنْهَا مِنَ الْبُيُوْعِ

وَفَى رِوَايَةِ ابْنِ عَبَّاسٍ: «حَتَّى يكْتالَه»

ব্যাখ্যা: ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)-এর অপর বর্ণনায় রয়েছে (حَتّٰى يَكْتَالَه), অর্থাৎ যতক্ষণ না তা পরিমাপ করে হস্তগত না করবে ততক্ষণ তা অন্যের কাছে বিক্রি করবে না। এখানে সম্পদের ওযন করা বা পরিমাপ করা ক্রয়ের সাথে নির্দিষ্ট করা হয়েছে। সুতরাং গচ্ছিত সম্পদ বিক্রি করার পূর্বে তা ওযন করা শর্ত নয় এবং ক্রয়কৃত সম্পদের সম্পদ ওযন বা পরিমাপ নির্ধারণ দ্বারা এটাই বুঝা যায় যে, কেউ যদি হিবা বা দান কিংবা অন্য কোনো উপায়ে সম্পদের মালিক হয় তবে তিনি তা পরিমাপ করার পূর্বেই বিক্রি করতে পারবে। আর যদি ক্রয়কৃত সম্পদ দান করতে চায় তবে পরিমাপ ছাড়াই তা জায়িয। (মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ

পরিচ্ছেদঃ ৫. প্রথম অনুচ্ছেদ - নিষিদ্ধ বস্তু ক্রয়-বিক্রয়

২৮৪৬-[১৩] ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিষেধ করেছেনঃ কোনো খাদ্যদ্রব্য ক্রয় করে তা হস্তগত হওয়ার আগে যেন বিক্রি না করে। ইবনু ’আব্বাস(রাঃ) বলেন, প্রত্যেক জিনিসের এরূপ হুকুম বলেই মনে করি। (বুখারী, মুসলিম)[1]

بَابُ الْمَنْهِىِّ عَنْهَا مِنَ الْبُيُوْعِ

وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: أَمَّا الَّذِي نَهَى عَنْهُ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَهُوَ الطَّعَامُ أَنْ يُبَاعَ حَتَّى يُقْبَضَ. قَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ: وَلَا أَحْسِبُ كُلَّ شَيْءٍ إِلاَّ مثلَه

ব্যাখ্যা: এখানে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খাদ্যের প্রতি, অর্থাৎ- দানা জাতীয় খাদ্যের উপরই নিষেধাজ্ঞা বর্তায়। কিন্তু ইবনু ‘আব্বাস -এর কথা, (لَا أَحْسِبُ كُلَّ شَيْءٍ إِلَّا مِثْلَه) অর্থাৎ খাদ্যের মতো অন্যান্য সকল বস্তু ক্রেতা তা পূর্ণ পরিমাপ করার পূর্বে বিক্রি করতে পারবে না। এ কথা প্রসঙ্গে ইবনুল মালিক (রহঃ) বলেনঃ এ কথাটি ইবনু ‘আব্বাস -এর পক্ষ হতে বলা হয়নি। (মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ

পরিচ্ছেদঃ ৭. প্রথম অনুচ্ছেদ - অগ্রিম বিক্রয় করা এবং বন্ধক রাখা

২৮৮৩-[১] ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মদীনায় পদার্পণ করলেন, তখন মদীনাবাসীগণ এক, দুই এবং তিন বছরের মেয়াদে বিভিন্ন রকমের ফল ক্রয়-বিক্রয় করতো। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, যে ব্যক্তি অগ্রিম ক্রয়-বিক্রয় করবে, অতঃপর তার উচিত অগ্রিম দেয়া নির্ধারিত পরিমাপে (ওযনে) এবং নির্ধারিত মেয়াদ পর্যন্ত। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

بَابُ السَّلَمِ وَالرَّهْنِ

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: قَدِمَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْمَدِينَةَ وَهُمْ يُسْلِفُونَ فِي الثِّمَارِ السَّنَةَ وَالسَّنَتَيْنِ وَالثَّلَاثِ فَقَالَ: «مَنْ سلف فِي شَيْءٍ فَلْيُسْلِفْ فِي كَيْلٍ مَعْلُومٍ وَوَزْنٍ مَعْلُوم إِلَى أجل مَعْلُوم»

ব্যাখ্যা: এখানে এ মর্মে দলীল রয়েছে যে, অগ্রিম ক্রয়-বিক্রয় (অর্থাৎ পণ্য লেনদেন হবে মূল্য বিলম্বে পরিশোধের শর্তে) করা বৈধ তবে শর্ত হলো, ওযন পরিমাণ ও পরিমাণ নির্ধারিত হতে হবে। যদি কাপড় কেনা-বেচা হয়, তা নির্ধারিত থাকতে হবে। আর যদি লেনদেন সংখ্যার ভিত্তিতে হয় যেমন, প্রাণী; তবে এর সংখ্যা নির্ধারিত হতে হবে। পক্ষান্তরে কোনো বিষয়ে অজ্ঞাত বা কোনো ধরনের অস্পষ্টতা থাকলে ক্রয়-বিক্রয় বাতিল হয়ে যাবে। (শারহে মুসলিম ১১শ খন্ড, হাঃ ১৬০৪)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ

পরিচ্ছেদঃ ৭. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - অগ্রিম বিক্রয় করা এবং বন্ধক রাখা

২৮৯০-[৮] ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পরিমাপ ও ওযনকারীদের উদ্দেশে বলেছেনঃ তোমাদের ওপর এমন দু’টি দায়িত্ব অর্পিত রয়েছে, যার কারণে পূর্ববর্তী অনেক উম্মাত ও জাতি ধ্বংস হয়েছে। (তিরমিযী)[1]

وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِأَصْحَابِ الْكَيْلِ وَالْمِيزَانِ: «إِنَّكُمْ قَدْ وُلِّيتُمْ أَمْرَيْنِ هَلَكَتْ فِيهِمَا الْأُمَمُ السَّابِقَة قبلكُمْ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ

ব্যাখ্যা: ‘‘তোমাদেরকে দু’টি বিষয়ে বিচারক বানানো হয়েছে, তা হলো, ওযন এবং পরিমাপ।’’ আর তাদের ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ ‘‘যারা মাপে কম দেয় তাদের জন্যই ধ্বংস’’- (সূরা আল মুতাফফিফীন ৮৩ : ১)। (الْأُمَمُ السَّابِقَةُ قَبْلَكُمْ) পূর্ববর্তী উম্মাতগণ যথা শু‘আয়ব (আঃ)-এর কওমের লোকেরা যখন মানুষদের কাছ থেকে মেপে নিত তখন পূর্ণ করে নিত আর যখন মেপে দিত তখন কম করে দিত। (তুহফাতুল আহওয়াযী ৪র্থ খন্ড, হাঃ ১২১৭)


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
বর্ণনাকারীঃ আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ

পরিচ্ছেদঃ ১২. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - শুফ্‘আহ্

২৯৬৮-[৮] ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ শরীক হলো শাফী’, আর প্রত্যেক [স্থাবর] জিনিসেই শুফ্’আহ্ রয়েছে। (তিরমিযী)[1]

وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «الشَّرِيكُ شَفِيعٌ وَالشُّفْعَةُ فِي كل شَيْء» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ قَالَ:

ব্যাখ্যা: (وَالشُّفْعَةُ فِىْ كُلِّ شَيْءٍ) যা স্থানান্তরযোগ্য অথবা স্থানান্তরযোগ্য নয় যারা এমন সকল বস্তুর ক্ষেত্রে, শুফ্‘আহ্ রয়েছে বলে উক্তি করেন তারা এ হাদীসকে দলীল হিসেবে উপস্থাপন করেছেন, কিন্তু হাদীসটি মুরসাল হওয়ার কারণে ত্রুটিযুক্ত।

হাফিয ইবনু হাজার ফাতহুল বারীতে বলেনঃ বায়হাক্বী ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) হতে মারফূ‘ সূত্রে হাদীস বর্ণনা করেন, (الشُّفْعَةُ فِىْ كُلِّ شَيْءٍ) ‘‘প্রত্যেক বস্তুতে শুফ্‘আহ্ আছে।’’ এর বর্ণনাকারীগণ নির্ভরযোগ্য। তবে মুরসাল হওয়ার কারণে তা ত্রুটিযুক্ত। ত্বহাবী জাবির-এর হাদীস হতে এমন এক সানাদে এর শাহিদ বা সমর্থন বর্ণনা করেছেন। যার বর্ণনাকারীদের ব্যাপারে (لا بأس) বলা হয়েছে। (لا بأس) বলতে এমন বর্ণনাকারী যাদের হাদীস দলীলযোগ্য নয়, তবে পরীক্ষা চালানোর জন্য লেখা যাবে।

অধিকাংশ বিদ্বানগণ বলেন, শুফ্‘আহ্ কেবল ঘর-বাড়ী ও জমিতে হয়ে থাকে। তারা প্রত্যেক বস্তুতে শুফ্‘আর মতামত ব্যক্ত করেননি। তারা জাবির-এর হাদীস দ্বারা দলীল পেশ করেছেন, (قَضٰى رَسُولُ اللّٰهِ ﷺ بِالشُّفْعَةِ فِي كُلِّ شَرِكَةٍ لَمْ تُقْسَمْ رَبْعَةٍ أَوْ حَائِطٍ) অর্থাৎ- বণ্টন করা হয়নি এমন প্রত্যেক অংশীদারপূর্ণ বিষয়ে আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শুফ্‘আর ফায়সালা দিয়েছেন তথা বাড়ী-ভিটা অথবা বাগানের ক্ষেত্রে। হাদীসটি মুসলিম বর্ণনা করেছেন। কারী বলেন, এ হাদীসটিতে ঐ ব্যাপারে প্রমাণ আছে যে, যা কিছু স্থানান্তরযোগ্য নয় এমন ক্ষেত্র ছাড়া অন্য ক্ষেত্রে শুফ্‘আহ্ প্রমাণিত হয় না। যেমন- ঘর-বাড়ী, জমি-জমা, বাগ-বাগিচা। যা স্থানান্তর করা যায় তাতে শুফ্‘আহ্ নেই, যেমন পণ্য-সামগ্রী ও প্রাণীসমূহ। এটা সাধারণ বিদ্বানদের উক্তি। (মিরকাতুল মাফাতীহ; তুহফাতুল আহওয়াযী ৪র্থ খন্ড, হাঃ ১৩৭১)


হাদিসের মানঃ মুনকার (সহীহ হাদীসের বিপরীত)
বর্ণনাকারীঃ আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ

পরিচ্ছেদঃ ১৪. প্রথম অনুচ্ছেদ - ভাড়ায় প্রদান ও শ্রম বিক্রি

২৯৮২-[২] ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শিঙ্গা লাগাতেন এবং শিঙ্গাদাতাকে মজুরি দিয়েছেন এবং তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নাকে ঔষধও নিয়েছেন। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

بَابُ الْإِجَارَةِ

وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ: أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ احْتَجَمَ فَأَعْطَى الْحَجَّامَ أجره واستعط

ব্যাখ্যা: (فَأَعْطَى الْحَجَّامَ أَجْرَة) এ অংশটি শিঙ্গা লাগিয়ে পারিশ্রমিক নেয়া বৈধ হওয়ার উপর প্রমাণ বহন করছে।

(اسْتَعَطَ) অর্থাৎ- সে তার নাকে ঔষধ প্রবেশ করাল। ত্বীবী (রহঃ) বলেন, السعوط শব্দের ‘সীন’ বর্ণে ‘যবর’ দিয়ে এক প্রকার ঔষধ যা নাকে প্রবেশ করানো হয়, যেমন ‘আরবীতে বলা হয় (اسعطت الرجل وَاِسْتَعَطَ) অর্থাৎ- আমি লোকটির নাকে ঔষধ দিলাম লোকটি নাকে ঔষধ গ্রহণ করল। উল্লেখিত হাদীসাংশ (اِسْتَعَطَ) এর মাঝে শ্রমিক খাটানোর বিশুদ্ধতা এবং ঔষধ প্রয়োগের বৈধতার প্রমাণ রয়েছে। (মিরকাতুল মাফাতীহ)

ফাতহুল বারীতে এসেছে, (اِسْتَعَطَ) সে নাক দিয়ে ব্যবহার করল, আর তা হলো ব্যক্তি তার পিঠের উপর ভর করে গা এলিয়ে দেয়া এবং তার কাঁধদ্বয়ের মাঝে এমন কিছু রাখা যা কাঁধদ্বয়কে উঁচু করে রাখবে, যাতে তার মাথা ঢালু হতে পারে এবং তার নাকে পানি অথবা তেল পতিত হতে পারে, যাতে আছে বিচ্ছিন্ন অথবা মিশ্র ঔষধ। যাতে এর মাধ্যমে তা মস্তিষ্কে পৌঁছতে পারে এবং মস্তিষ্কে যে রোগ আছে তা হাঁচির মাধ্যমে বের করতে পারে।

তিরমিযীতে অন্য সানাদে ইবনু ‘আব্বাস হতে মারফূ‘ সূত্রে বর্ণিত আছে- (أَنَّ خَيْرَ مَا تَدَاوَيْتُمْ بِهِ السَّعُوْط) অর্থাৎ- নিঃসন্দেহে তোমরা যে সকল ঔষধ ব্যবহার করে থাক তার মাঝে নাক সর্বোত্তম। (ফাতহুল বারী ১০ম খন্ড, হাঃ ৫৬৯১)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ

পরিচ্ছেদঃ ১৪. প্রথম অনুচ্ছেদ - ভাড়ায় প্রদান ও শ্রম বিক্রি

২৯৮৫-[৫] ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাহাবীগণের মধ্যে একদল এক পানির কূপওয়ালাদের কাছে পৌঁছলেন, তাদের মধ্যে একজনকে বিচ্ছু অথবা সাপে দংশন করেছিল। কূপওয়ালাদের এক লোক এসে বললো, আপনাদের মধ্যে কোনো মন্ত্র (চিকিৎসা) জানা লোক আছে কি? এ কূপের ধারে একজন বিচ্ছু বা সাপে কাটা লোক রয়েছে। তখন তাঁদের মধ্য হতে একজন [আবূ সা’ঈদ আল খুদরী (রাঃ)] গেলেন এবং কিছু ছাগলের বিনিময়ে তার ওপর সূরা ফাতিহাহ্ পড়ে ফুঁক দিলেন। এতে সে সুস্থ হয়ে উঠলো এবং সাহাবী ছাগলগুলো নিয়ে স্বীয় সাথীদের কাছে আসলেন।

তাঁরা এটা অপছন্দ করে বলতে লাগলেন, আপনি কি আল্লাহর কিতাবের বিনিময়ে পারিশ্রমিক নিলেন? পরিশেষে তাঁরা মদীনায় পৌঁছলেন এবং বললেন, হে আল্লাহর রসূল! ইনি আল্লাহর কিতাবের বিনিময়ে পারিশ্রমিক নিয়েছেন। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা যেসব জিনিসের বিনিময়ে পারিশ্রমিক নিয়ে থাকো, তাদের মধ্যে কিতাবুল্লাহ (আল্লাহর কিতাব) অধিকতর উপযোগী। (বুখারী)[1]

অপর এক বর্ণনায় রয়েছে, তোমরা ঠিকই করেছো, তা ভাগ-বণ্টন কর এবং আমার জন্যও তোমাদের সাথে এক অংশ রেখ।

بَابُ الْإِجَارَةِ

وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ: أَنَّ نَفَرًا مِنْ أَصْحَابِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَرُّوا بِمَاءٍ فبهم لَدِيغٌ أَوْ سَلِيمٌ فَعَرَضَ لَهُمْ رَجُلٌ مِنْ أَهْلِ الْمَاءِ فَقَالَ: هَلْ فِيكُمْ مِنْ رَاقٍ؟ إِن فِي المَاء لَدِيغًا أَوْ سَلِيمًا فَانْطَلَقَ رَجُلٌ مِنْهُمْ فَقَرَأَ بِفَاتِحَة الْكتاب على شَاءَ فبرئ فَجَاءَ بِالشَّاءِ إِلَى أَصْحَابِهِ فَكَرِهُوا ذَلِكَ وَقَالُوا: أَخَذْتَ عَلَى كِتَابِ اللَّهِ أَجْرًا حَتَّى قَدِمُوا الْمَدِينَةَ فَقَالُوا: يَا رَسُولَ اللَّهِ أَخَذَ عَلَى كِتَابِ اللَّهِ أَجْرًا. فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ أَحَقَّ مَا أَخَذْتُمْ عَلَيْهِ أَجْرًا كِتَابُ اللَّهِ» . رَوَاهُ الْبُخَارِيُّ وَفِي رِوَايَةٍ: «أَصَبْتُمُ اقْسِمُوا وَاضْرِبُوا لِي مَعَكُمْ سَهْمًا»

ব্যাখ্যা: (لَدِيغٌ أَوْ سَلِيمٌ) বর্ণনাকারীর সন্দেহ সে জন্য উল্লেখিত শব্দদ্বয়ের মাঝে أَوْ তথা, অথবা বর্ণনা করেছেন। لَدِيغٌ শব্দটি অধিকাংশ সময় ঐ ব্যক্তির ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হয় যাকে বিচ্ছু দংশন করেছে এবং سَلِيمٌ শব্দটি ঐ ব্যক্তির ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হয় যাকে সাপ দংশন করেছে।

(رَجُلٌ مِنْهُمْ) একমতে বলা হয়েছে, তিনি হলেন : আবূ সা‘ঈদ আল খুদরী। (فَقَرَأَ) ফল কথা, ঐ লোকটি তাদেরকে বলল, তোমরা আমাকে এ পরিমাণ ছাগল দিবে এ শর্তে আমি এ বিচ্ছু কাটা রোগীটিকে ঝাড়ব। অতঃপর রোগীর লোকেরা তাতে রাজী হলে আবূ সা‘ঈদ রোগীর ওপর সূরা ফাতিহাহ্ পাঠ করলেন ঐ বর্ণনার উপর ভিত্তি করে যে, সূরা ফাতিহাহ্ বিষ হতে আরোগ্য দানকারী। অতঃপর রোগীটি আল্লাহর কালামের বারাকাতে মুক্তি লাভ করল। একমতে বলা হয়েছে, ছাগলের সংখ্যা ছিল ত্রিশ এবং তারাও ছিল ত্রিশ জন।

(حَتّٰى قَدِمُوا) ত্বীবী বলেনঃ এ অংশটি ‘‘তারা বলল, তুমি আল্লাহর কিতাবের বিনিময়ে এ সব গ্রহণ করেছ?’’ এ অংশের সাথে সম্পর্কিত। এর অর্থ হলো- তারা পথে এ বিষয়টিকে সর্বদা অস্বীকার করছিল, পরিশেষে তারা মদীনাতে আগমন করে।

(كِتَابِ اللّٰهِ) কাযী বলেন, এতে কুরআন পাঠের জন্য শ্রমিক ভাড়া করা, কুরআন দ্বারা ঝাড়-ফুঁক দেয়া বৈধ হওয়া এবং কুরআন শিক্ষার বিনিময়ে পরিশ্রমিক গ্রহণ বৈধ হওয়ার ব্যাপারে প্রমাণ আছে। এক সম্প্রদায় তা হারাম সাব্যস্ত করার মত পোষণ করেছেন, আর তা হলো- যুহরী, আবূ হানীফাহ্ এবং ইসহক (রহঃ)-এর মত। তারা ‘শারহুস্ সুন্নাহ্’তে ‘উবাদাহ্ ইবনুস্ সামিত (রাঃ) হতে বর্ণিত আগত হাদীস দ্বারা দলীল গ্রহণ করেছেন। অত্র হাদীসটিতে কুরআন দ্বারা, আল্লাহর জিকির দ্বারা ঝাড়ফুঁক বৈধ হওয়া এবং তার বিনিময়ে মজুরী গ্রহণের ব্যাপারে দলীল আছে। কেননা ক্বিরাআত বৈধ কর্মসমূহের অন্তর্ভুক্ত। যারা মুসহাফ ক্রয়-বিক্রয় এবং তা লিপিবদ্ধ করার বিনিময়ে মজুরী গ্রহণ করার অবকাশ দিয়েছেন তারা এর মাধ্যমে দলীল গ্রহণ করেছেন। এ মত পোষণ করেছেন- হাসান, শা‘বী, ‘ইকরিমাহ্, সুফ্ইয়ান, মালিক, শাফি‘ঈ এবং আবূ হানীফার সাথীবর্গ (রহঃ)।

(اقْسِمُوا) ইমাম নববী (রহঃ) বলেনঃ এটা মানবিকতা, স্বেচ্ছাসেবা, সাথীদের সাথে ভালোবাসার আচরণ এবং নম্রতা প্রদর্শন অধ্যায়ের অন্তর্ভুক্ত। অন্যথায় সমস্ত বকরীর মালিক ঝাড়ফুঁককারী। (لِىْ مَعَكُمْ سَهْمًا) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ কথাটি বলেছেন তাদের মনে স্বাচ্ছন্দ্য দানের উদ্দেশ্য এবং তাদেরকে জানানোর ব্যাপারে আধিক্যতা স্বরূপ যে, এটা হালাল, এতে সন্দেহ নেই। (মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ

পরিচ্ছেদঃ ১৫. প্রথম অনুচ্ছেদ - অনাবাদী জমিন আবাদ করা ও সেচের পালা

২৯৯২-[২] ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, সা’ব ইবনু জাসসামাহ্ বলেছেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, আল্লাহ ও তাঁর রসূল ছাড়া পশু চারণের জমিন সংরক্ষণ করার অধিকার কারো নেই। (বুখারী)[1]

بَابُ إِحْيَاءِ الْمَوَاتِ وَالشِّرِبِ

وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ: أَنَّ الصَّعْبَ بْنَ جَثَّامَةَ قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «لَا حِمَى إِلَّا لِلَّهِ وَرَسُولِهِ» . رَوَاهُ البُخَارِيّ

ব্যাখ্যা: (لَا حِمٰى إِلَّا لِلّٰهِ وَرَسُوْلِه ﷺ) ফাতহুল বারীতে আছে, ‘আরবদের নিকট (حِمٰى) এর মূল হলো- তাদের কোনো নেতা যখন উর্বর স্থানে যেত, তখন উঁচু স্থানে একটি কুকুর দ্বারা আওয়াজ করাত, কুকুরের আওয়াজ যে পর্যন্ত পৌঁছত চতুর্দিকে ঐ স্থান পর্যন্ত সংরক্ষণ করত, তখন সেখানে অন্য কেউ প্রাণী চড়াত না অথচ ঐ নেতা অন্য চারণভূমিতে অন্যদের সাথে তার প্রাণী চড়াত।

(حِمٰى) বলতে সংরক্ষিত স্থান, তা বৈধতার বিপরীত। এর উদ্দেশ্য হলো, ঐ মৃত ভূখণ্ড আবাদ করা হতে বাধা দেয়া, যাতে সেখানে পূর্ণরূপে ঘাস উৎপন্ন হয়, অতঃপর বিশেষ প্রাণীসমূহ সেখানে চড়তে পারে এবং অন্য প্রাণীসমূহকে বাধা দিতে পারে। শাফি‘ঈদের নিকট প্রণিধানযোগ্য মাস্আলাহ্ হলো- সংরক্ষিত ভূমি খলীফার জন্য নির্দিষ্ট। তবে কেউ কেউ গভর্নরদেরকে এর সাথে সম্পর্কিত করেছেন। ইমাম ত্বহাবী মৃত ভূখণ্ড জীবিত করার ক্ষেত্রে ইমামের অনুমতিকে শর্ত করে তার মতের পক্ষে দলীল গ্রহণ করেছেন। উভয়ের মাঝে পার্থক্য করার মাধ্যমে সমালোচনা করা হয়েছে, কেননা সংরক্ষণ করা ভূমি জীবিত করা ভূমি অপেক্ষা নির্দিষ্ট। আল্লাহ সর্বাধিক জ্ঞাত। (ফাতহুল বারী ৫ম খন্ড, হাঃ ২৩৭০)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ

পরিচ্ছেদঃ ১৫. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - অনাবাদী জমিন আবাদ করা ও সেচের পালা

৩০০১-[১১] ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তিন প্রকার জিনিসে সকল মুসলিম অংশীদার; আর তা হলো পানি, ঘাস ও আগুন। (আবূ দাঊদ ও ইবনু মাজাহ)[1]

وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: الْمُسْلِمُونَ شُرَكَاءُ فِي ثَلَاث: الْمَاءِ وَالْكَلَأِ وَالنَّارِ . رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ وَابْنُ مَاجَه

ব্যাখ্যা: (فى الْمَاءِ) অর্থাৎ- ঐ পানি যা কারো অনুসন্ধান এবং প্রচেষ্টার মাধ্যমে অর্জন হয়নি, যেমন খাল এবং কূপের পানি এবং নদী হতে গ্রহণ করে কোনো পাত্রে অথবা পুকুর এবং নালাতে সংরক্ষণ করা হয়নি।

(الْكَلَأِ) ভিজা এবং শুকনা তৃণলতা। খত্ত্বাবী বলেনঃ এর অর্থ হলো ঐ ঘাস যা অনাবাদী ভূখণ্ডে উৎপন্ন হয় এবং জনগণ পশু চড়ায়, তা কাউকে বাদ দিয়ে কারো জন্য নির্দিষ্ট করে দেয়া বৈধ নয়। আর ঘাস যখন কোনো ব্যক্তির সুনির্দিষ্ট মালিকানাভুক্ত জমিতে উৎপন্ন হবে তখন তা ঐ ব্যক্তির জন্য নির্দিষ্ট সম্পদ, তার অনুমতি ছাড়া অন্য কারো তার সম্পদে অংশীদার হওয়ার অধিকার নেই।

(وَالنَّارِ) আগুনে অংশীদার হওয়া থেকে উদ্দেশ্য হলো- সে আগুন হতে প্রদীপ জ্বালাতে, তার আলো দ্বারা আলো গ্রহণ করতে কাউকে নিষেধ করা যাবে না, তবে আগুন প্রজ্জ্বলনকারীর এ অধিকার আছে যে, সে আগুন হতে অগ্নিশিখা গ্রহণ করতে কউকে বাধা দিবে। কেননা তা আগুনকে কমিয়ে দেয় এবং আগুনকে নিভিয়ে দেয়ার পর্যায়ে পৌঁছায়। একমতে বলা হয়েছে, আগুন দ্বারা ঐ পাথর উদ্দেশ্য যা দ্বারা আগুন জ্বালানো হয়। যখন এ পাথর কোনো অনাবাদী ভূখণ্ডে হবে তখন তা হতে কিছু গ্রহণ করতে কাউকে বাধা দেয়া যাবে না।

সিনদী বলেনঃ এক সম্প্রদায় এ হাদীসের বাহ্যিক অর্থ গ্রহণ করেছে। অতঃপর তারা বলেছে যে, এ তিনটি বিষয়ে কারো মালিকানা প্রতিষ্ঠা করা যাবে না এবং সাধারণভাবে এগুলো বিক্রি করাও বৈধ হবে না। বিদ্বানদের মাঝে প্রসিদ্ধ যে, (الْكَلَأِ) তথা ঘাস দ্বারা ঐ বৈধ ঘাস যা কারো সাথে নির্দিষ্ট নয়। আর (الْمَاءِ) তথা পানি দ্বারা আকাশ, ঝর্ণা এবং নদীসমূহের পানি, যার মালিকানা প্রতিষ্ঠা করা যায় না। আর (وَالنَّارِ) তথা আগুন দ্বারা ঐ বৃক্ষ উদ্দেশ্য মানুষ যাকে বৈধভাবে লাকড়ী স্বরূপ গ্রহণ করে, অতঃপর তা দ্বারা আগুন জ্বালায়। আর এ পানি যখন মানুষ তার পাত্রে, তার মালিকানায় সংরক্ষণ করবে তখন তা বিক্রি করা বৈধ হবে না। এভাবে অন্যান্য বস্তু। (‘আওনুল মা‘বূদ ৬ষ্ঠ খন্ড, হাঃ ৩৪৭৪)


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
বর্ণনাকারীঃ আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ

পরিচ্ছেদঃ ১৭. প্রথম অনুচ্ছেদ - হাদিয়া (উপহার) ও হিবার (অনুদান) প্রসঙ্গে

৩০১৮-[৩] ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি দান করে ফেরত নেয়, সে কুকুরের সদৃশ; সে স্বীয় বমি পুনরায় খায়। আমাদের মাঝে এই নিকৃষ্ট দৃষ্টান্ত কাম্য নয়। (বুখারী)[1]

بَابٌ فِى الْهِبَةِ وَالْهَدِيَّةِ

وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «الْعَائِدُ فِي هِبَتِهِ كَالْكَلْبِ يَعُودُ فِي قَيْئِهِ لَيْسَ لَنَا مَثَلُ السوء» . رَوَاهُ البُخَارِيّ

ব্যাখ্যা: (لَيْسَ لَنَا مَثَلُ السُّوْءِ) একমতে বলা হয়েছে- যার মাধ্যমে মন্দের উপমা পেশ করা হয় সে ব্যাপারে কাজ করা আমাদের জাতির জন্য মানায় না। কাযী বলেন, আমাদের জন্য ঐ নিন্দনীয় গুণ দ্বারা গুণান্বিত হওয়া উচিত না যে ক্ষেত্রে সর্বাধিক নিকৃষ্ট প্রাণী সর্বাধিক নিকৃষ্ট অবস্থায় আমাদের অংশীদার হবে। অথচ উপমা পেশ করা হয়- অবাক অভিনব বৈশিষ্ট্যের ক্ষেত্রে চাই তা প্রশংসাজ্ঞাপক হোক অথবা নিন্দাজ্ঞাপক হোক।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘‘যারা পরকালের প্রতি বিশ্বাস রাখে না তাদের জন্য রয়েছে মন্দ দৃষ্টান্ত আর আল্লাহর জন্য রয়েছে সুউচ্চ দৃষ্টান্ত’’- (সূরা আন্ নাহল ১৬ : ৬০) এর মাধ্যমে দান করা বস্তু গ্রহীতা আয়ত্তে নেয়ার পর দানকারীর তা ফিরিয়ে নেয়া বৈধ না হওয়ার ব্যাপারে দলীল গ্রহণ করা হয়েছে। নববী (রহঃ) বলেন, দান-সাদাকা গ্রহণ করার পর তা গ্রহীতার কাছ থেকে ফিরিয়ে নেয়া হারাম হওয়ার ব্যাপারে দৃষ্টান্তটি স্পষ্ট। তবে কোনো ব্যক্তি তার সন্তানকে এবং তার সন্তানের সন্তানকে যা দান করেছে তা উদ্দেশ্য নয়, যেমন এ ব্যাপারে নু‘মান বিন বাশীর-এর হাদীসে স্পষ্ট করে দেয়া হয়েছে। এটা শাফি‘ঈ, মালিক ও আওযা‘ঈ-এর অভিমত। আবূ হানীফাহ্ এবং অন্যান্যরা বলেন, পিতা এবং মাহরাম ছাড়া প্রত্যেক দাতা ফিরিয়ে নিতে পারবে। অনাত্মীয়দের থেকে দান ফিরিয়ে নেয়া যাবে বলে যারা মনে করে তাদের কাছে এ হাদীসটিতে যে নিষেধাজ্ঞা এসেছে তা মাকরূহ অর্থে হারাম অর্থে নয়। আর তিনি ‘উমার -এর হাদীস দ্বারা দলীল গ্রহণ করে থাকেন। যখন তিনি ঐ ঘোড়া ক্রয় করতে চেয়েছিলেন, আল্লাহর পথে যার উপর তিনি কাউকে আরোহণ করতে দিয়েছিলেন। অতঃপর তিনি ঐ সম্পর্কে আল্লাহর রসূলকে প্রশ্ন করলে আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যদিও সে তা তোমাকে এক দিরহামের বিনিময়ে দেয়, তথাপিও তা ক্রয় করবে না। তুমি তোমার দান ফিরিয়ে নিবে না। কেননা দানকে ফেরত গ্রহণকারী ঐ কুকুরের মতো, যে বমি করার পর পুনরায় তা চেটে নেয়। তূরিবিশতী বলেনঃ এ উক্তি যখন দান করা বস্তুর ক্রয় করার হুরমাতকে আবশ্যক সাব্যস্ত করতে পারল না, তখন এভাবে এ হাদীস কোনো বস্তু দান করার পর তা ফিরিয়ে নেয়া হারাম হওয়াকে আবশ্যক সাব্যস্ত করতে পারবে না। কিন্তু ত্বীবী এমন এক মাধ্যমে এর সমালোচনা করেছেন যাতে বিস্ময় রয়েছে।

জামি‘উস্ সগীরে আছে, (الْعَائِدُ فِىْ هِبَتِه كَالْكَلْبِ يَعُوْدُ فِىْ قَيْئِه) অর্থাৎ- ‘‘দান করে তা ফেরত গ্রহণকারী বমি করে পুনরায় তা ভক্ষণকারীর মতো।’’ (মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ

পরিচ্ছেদঃ ১৯. প্রথম অনুচ্ছেদ - ফারায়িয (মৃত ব্যক্তির সম্পত্তি বণ্টন সম্বন্ধীয়) ও অন্তিম উপদেশ বা আদেশ)

৩০৪২-[২] ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ নির্ধারিত (ধন-সম্পদের) অংকসমূহ তাদের হকদারদেরকে পৌঁছিয়ে দেবে। তারপর যা বাঁচবে তা নিকটতম পুরুষ ব্যক্তির জন্য। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

بَابُ الْفَرَائِضِ وَالْوَصَايَا

وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَلْحِقُوا الْفَرَائِضَ بِأَهْلِهَا فَمَا بَقِيَ فَهُوَ لِأَوْلَى رَجُلٍ ذكر»

ব্যাখ্যা: মৃত ব্যক্তির পরিত্যক্ত সম্পদ কুরআনুল মাজীদে বর্ণিত নির্ধারিত অংশ কুরআন ও সুন্নাহতে বর্ণিত ওয়ারিসদের অংশ দেয়ার পর মৃত ব্যক্তির সম্পদের অবশিষ্টাংশ পাওয়ার অধিকতর উপযুক্ত ও নিকটবর্তী হলেন- ঐ পুরুষ যার জন্যে কুরআনুল মাজীদ অংশ নির্ধারণ করেনি আর ঐ সকল পুরুষের মধ্যে সর্বাগ্রে রয়েছেন মৃত ব্যক্তির ছেলে, অতঃপর ভাই। এভাবে সম্পর্কের দিক দিয়ে যে মৃত ব্যক্তির নিকটতর হবে সেই অবশিষ্ট অংশ পাবে। এটাই অবশিষ্টাংশ বণ্টনের মূলনীতি।

যে সকল ওয়ারিসের অংশ কুরআন নির্ধারণ করে দিয়েছে তারা হলেন সর্বমোট বারো জন। তন্মধ্যে চারজন পুরুষ- যথাঃ ১. পিতা, ২. দাদা, ৩. বৈপিত্রেয় ভাই, ৪. স্বামী। এবং আটজন মহিলা- যথাঃ ১. স্ত্রী, ২. কন্যা, ৩. নাতনী (ছেলের কন্যা) ৪. সহোদরা বোন, ৫. বৈপিত্রেয় বোন, ৬. বৈমাত্রেয় বোন, ৭. মা, ৮. দাদী। (ফাতহুল বারী ১২শ খন্ড, হাঃ ৬৭৩২; শারহে মুসলিম ১১/১২ খন্ড, হাঃ ১৬১৫; মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ

পরিচ্ছেদঃ ১৯. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - ফারায়িয (মৃত ব্যক্তির সম্পত্তি বণ্টন সম্বন্ধীয়) ও অন্তিম উপদেশ বা আদেশ)

৩০৬৫-[২৫] ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক লোক মারা গেল এবং তার মুক্ত করা একটি ক্রীতদাস ছাড়া কাউকেও উত্তরাধিকারী রেখে গেল না। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞেস করলেন, তার কি কেউ (আত্মীয়-স্বজন) আছে? লোকেরা বলল, তার মুক্ত করা একটি ক্রীতদাস ছাড়া আর কেউই নেই। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার উত্তরাধিকার তাকে (ক্রীতদাসকে) দিয়ে দিলেন। (আবূ দাঊদ, তিরমিযী ও ইবনু মাজাহ)[1]

وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ: أَنَّ رَجُلًا مَاتَ وَلَمْ يَدَعْ وَارِثًا إِلَّا غُلَامًا كَانَ أَعْتَقَهُ فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «هَلْ لَهُ أَحَدٌ؟» قَالُوا: لَا إِلَّا غُلَامٌ لَهُ كَانَ أَعْتَقَهُ فَجَعَلَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِيرَاثَهُ لَهُ. رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ وَالتِّرْمِذِيُّ وَابْنُ مَاجَه

ব্যাখ্যা: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকটির যাবতীয় সম্পদ দাসকে দিয়ে দেন। কেননা সম্পদে মূলত কোনো উত্তরাধিকারী না থাকায় বায়তুল মাল হিসেবে পরিগণিত হয়েছে। তাই রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঐ সম্পদকে দানের ভিত্তিতে দাসকে দিয়ে দেন মীরাসের ভিত্তিতে নয়। কাযী শুরাইহ, ত্বাঊস প্রমুখ বিদ্বানগণ অবশ্য আযাদকৃত ব্যক্তিকেও আযাদকারীর পরিত্যক্ত সম্পত্তির অন্য কোনো ওয়ারিস না থাকলে ওয়ারিস সাব্যস্ত করে থাকেন। (‘আওনুল মা‘বূদ ৫ম খন্ড, হাঃ ২৯০২; তুহফাতুল আহওয়াযী ৫ম খন্ড, হাঃ ২১০৬; মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
বর্ণনাকারীঃ আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ

পরিচ্ছেদঃ ২০. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - ওয়াসিয়্যাত (অন্তিম উপদেশ বা নির্দেশ)

৩০৭৪-[৫] ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ওয়ারিসের জন্য ওয়াসিয়্যাত নেই, তবে যদি ওয়ারিসরা অনুমতি দেয়। মাসাবীহ-এর এ শব্দ কর্তিত হয়েছে; আর দারাকুত্বনীর বর্ণনায় রয়েছে, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ ওয়ারিসের জন্য ওয়াসিয়্যাত জায়িয নেই, তবে ওয়ারিসরা অনুমতি দিলে।[1]

وَيُرْوَى عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «لَا وَصِيَّةَ لِوَارِثٍ إِلَّا أَنْ يَشَاءَ الْوَرَثَةُ» مُنْقَطِعٌ هَذَا لَفْظُ الْمَصَابِيحِ. وَفِي رِوَايَةِ الدَّارَقُطْنِيِّ: قَالَ: «لَا تَجُوزُ وَصِيَّةٌ لِوَارِثٍ إِلَّا أَنْ يَشَاء الْوَرَثَة»


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
বর্ণনাকারীঃ আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ

পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ

৩০৯৩-[১৪] ’আব্দুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ দম্পতির পরস্পরের প্রতি যে আন্তরিক প্রেম-ভালোবাসা, তা অন্য (কোথাও) দু’জনের মাঝে তুমি দেখতে পাবে না। (ইবনু মাজাহ)[1]

اَلْفَصْلُ الثَّالِثُ

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَمْ تَرَ لِلْمُتَحَابِّينَ مثل النِّكَاح» . رَوَاهُ ابْن مَاجَه


হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
বর্ণনাকারীঃ আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
দেখানো হচ্ছেঃ ৩৪৪১ থেকে ৩৪৬০ পর্যন্ত, সর্বমোট ৪৬৮৪ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে পাতা নাম্বারঃ « আগের পাতা 1 2 3 4 · · · 170 171 172 173 174 · · · 232 233 234 235 পরের পাতা »