পরিচ্ছেদঃ বদরী সাহাবাগণের মর্যাদা

(২৮৭৯) মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অতি সংগোপনে মক্কা-বিজয়ের প্রস্তুতি গ্রহণ করছিলেন। কিন্তু হাত্বেব মক্কায় কুরাইশদের নিকট এই সংবাদ দিয়ে পত্র লিখেন যে, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কা আক্রমণ করতে যাচ্ছেন। পারিশ্রমিক প্রদানের প্রতিশ্রুতি সাপেক্ষি তিনি এক মহিলার মাধ্যমে পত্রটি প্রেরণ করেন। মহিলাটি তাঁর চুলের খোঁপার ভিতরে পত্রটি রেখে পথ চলছিল। কিন্তু আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর পক্ষ হতে অহীর মাধ্যমে হাত্বেবের উক্ত কর্মকাণ্ড সম্পর্কে অবহিত হলেন। সুতরাং তিনি আলী, মিক্বদাদ, যুবাইর ও আবূ মারষাদ (রাঃ) কে এই বলে প্রেরণ করলেন যে, তোমরা ’রওযাতু খাখ’ নামক জায়গায় গিয়ে সেখানে এক হাওদা-নশীন মহিলাকে দেখতে পাবে। ঐ মহিলাদের নিকট কুরাইশদের জন্য লিখিত ও প্রেরিত একটি পত্র আছে। সেই পত্রটি তার কাছ থেকে উদ্ধার করতে হবে।

উল্লিখিত সাহাবাগণ অশ্বপৃষ্ঠে আরোহণপূর্বক অত্যন্ত দ্রুতগতিতে মহিলার নাগাল পাওয়ার জন্য ছুটে গেলেন এবং এক পর্যায়ে যথাস্থানে সেই মহিলাকে দেখতে পেলেন। তাঁরা ঐ মহিলাকে উটের পিঠ থেকে অবতরণ করিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন তার কাছে কোন পত্র আছে কি না? কিন্তু সে তার নিকট পত্র থাকার কথা সম্পূর্ণ অস্বীকার করল। তার উটের হাওদায় তল্লাশী চালিয়েও কোন পত্র না পাওয়ায় তাঁরা চিন্তিত হয়ে পড়লেন। অবশেষে আলী (রাঃ) বললেন, ’আমি আল্লাহর কসম ক’রে বলছি যে, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিথ্যা বলেননি। অথবা আমরাও মিথ্যা বলছি না। হয় তুমি পত্রখানা বের ক’রে দাও, নচেৎ তোমাকে সম্পূর্ণ উলঙ্গ ক’রে তল্লাশী চালাব।’

মহিলা যখন তাঁদের দৃঢ়তা অনুভব করল, তখন বলল, ’আচ্ছা! তাহলে তোমরা অন্য দিকে মুখ ফিরাও।’ তাঁরা অন্য দিকে মুখ ফিরালে সে তার কোমরে বাঁধা ওড়না বা মাথার চুলের খোঁপা থেকে পত্রখানা বের ক’রে তাঁদের হাতে দিল। তাঁরা তা নিয়ে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট উপস্থিত হলেন। তিনি হাত্বেবকে ডেকে জিজ্ঞাসা করলেন, ’’তুমি এমন সাংঘাতিক কাজ করেছ কেন?’’

হাত্বেব বললেন, ’হে আল্লাহর রসূল! এ ব্যাপারে তাড়াতাড়ি আমার বিরুদ্ধে কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন না। আল্লাহর কসম! আল্লাহ ও তাঁর রসূলের উপর আমার পূর্ণ বিশ্বাস রয়েছে। আমি ধর্মত্যাগী নই এবং আমার মধ্যে কোন পরিবর্তনও আসেনি। কুরাইশদের সঙ্গে আমার কোন রক্তের সম্পর্কও নেই। তবে কথা হচ্ছে এই যে, কোন কোন ব্যাপারে আমি তাদের সঙ্গে সংশিস্নষ্ট ছিলাম এবং আমার পরিবারের সদস্য ও সন্তান-সন্ততিরা সেখানেই আছে। তাদের সাথে আমার এমন কোন আত্মীয়তা বা সম্পর্ক নেই যে, তার ফলে আমার পরিবারের লোকজনদের দেখাশোনা করবে। পক্ষান্তরে আমার সঙ্গে যাঁরা রয়েছেন, তাঁদের সকলেরই আত্মীয়-স্বজন রয়েছে, যারা তাদের আপনজনদের দেখাশোনা করবে। যদিও এ কাজ সম্পূর্ণ বেআইনী ও আমার অধিকার বহির্ভূত, তবুও ঐ একটি উদ্দেশ্যেই আমি কুরাইশদের প্রতি একটু এহসানী করতে চেয়েছিলাম। যাতে তারা তার বিনিময়ে আমার আত্মীয়-স্বজনদের প্রতি যত্নশীল হয়।’

সে কাজ এত বড় মারাত্মক ছিল যে, উমার (রাঃ) উত্তেজিত হয়ে বললেন, ’হে আল্লাহর রসূল! আমাকে অনুমতি দিন, আমি তার গর্দান উড়িয়ে দিই। কারণ সে আল্লাহ ও তাঁর রসূলের বিশ্বাসঘাতকতা করেছে এবং মুনাফিক হয়ে গেছে।’

আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ’’হে উমার! তুমি কি জান না যে, সে বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছে? আর নিশ্চয় আল্লাহ বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণকারীদের (অবস্থা) জেনে ও দেখে বলেছেন, ’তোমরা যা ইচ্ছা তাই কর, আমি তোমাদেরকে ক্ষমা ক’রে দিয়েছি।’’

এ কথা শুনে উমার (রাঃ) এর চক্ষুদ্বয় অশ্রুসিক্ত হয়ে উঠল। তিনি বললেন, ’আল্লাহ ও তাঁর রসূলই ভাল জানেন।’ (বুখারী, মুসলিম ৬৫৫৭, আর-রাহীক্বুল মাখতূম ২/২৬০-২৬২)

কোন কোন বর্ণনায় আছে, ’’তোমরা যা ইচ্ছা তাই কর, আমি তোমাদের জন্য জান্নাত ওয়াজিব ক’রে দিয়েছি।’’ (বুখারী ৬৯৩৯)

-


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদীস সম্ভার
২৬/ ফাযায়েল

পরিচ্ছেদঃ বদরী সাহাবাগণের মর্যাদা

(২৮৮০) উম্মে রুবাইয়ে’ বিনতে বারা’ যিনি হারেষাহ ইবনে সূরাকার মা, তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে বললেন, ’ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমাকে হারেষাহ সম্পর্কে কিছু বলবেন না? সে বদরের দিনে খুন হয়েছিল। যদি সে জান্নাতী হয়, তাহলে ধৈর্য ধারণ করব, অন্যথা তার জন্য মন ভরে অত্যধিক কান্না করব।’ তিনি বললেন,

يَا أُمَّ حَارِثَةَ إِنَّهَا جِنَانٌ فِي الْجَنَّةِ، وَإِنَّ ابْنَكِ أَصَابَ الْفِرْدَوْسَ الْأَعْلٰـى

হে হারেসার মা! জান্নাতের মধ্যে বিভিন্ন প্রকারের জান্নাত আছে। আর তোমার ছেলে তো সর্বোচ্চ ফিরদাউস (জান্নাতে) পৌঁছে গেছে।

-


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদীস সম্ভার
২৬/ ফাযায়েল

পরিচ্ছেদঃ বদরী সাহাবাগণের মর্যাদা

(২৮৮১) জাবের (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

لَا يَدْخُلُ النَّارَ أَحَدٌ شَهِدَ بَدْرًا وَالْـحُدَيْبِيَةَ

অর্থাৎ, যে কেউ বদর ও হুদাইবিয়্যাতে উপস্থিত ছিল, সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে না।

-


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদীস সম্ভার
২৬/ ফাযায়েল

পরিচ্ছেদঃ বদরী সাহাবাগণের মর্যাদা

(২৮৮২) রিফাআহ ইবনে রাফে’ যুরাক্বী (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট জিবরীল এসে বললেন, ’বদর যুদ্ধে অংশ গ্রহণকারীদেরকে আপনাদের মাঝে কিরূপ গণ্য করেন?’ তিনি বললেন, ’’সর্বশ্রেষ্ঠ মুসলিমদের শ্রেণীভুক্ত গণ্য করি।’’ অথবা অনুরূপ কোন বাক্যই তিনি বললেন। (জিবরীল) বললেন, ’বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী ফিরিশতাগণও অনুরূপ (সর্বশ্রেষ্ঠ ফিরিশতাগণের শ্রেণীভুক্ত)।’

و عَنْ رِفَاعَةَ بنِ رَافِعٍ الزُّرَقِيِّ قَالَ : جَاءَ جِبرِيلُ إلَى النَّبِيِّ ﷺ قَالَ : مَا تَعُدُّوْنَ أَهْلَ بَدْرٍ فِيكُمْ؟ قَالَ مِنْ أَفْضَلِ المُسْلِمِينَ أَوْ كَلِمَةً نَحْوَهَا قَالَ : وَكَذلِكَ مَنْ شَهِدَ بَدْراً مِنَ المَلائِكَةِ رواه البخاري

و عن رفاعة بن رافع الزرقي قال جاء جبريل الى النبي ﷺ قال ما تعدون اهل بدر فيكم قال من افضل المسلمين او كلمة نحوها قال وكذلك من شهد بدرا من الملاىكة رواه البخاري

হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদীস সম্ভার
২৬/ ফাযায়েল
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ৪ পর্যন্ত, সর্বমোট ৪ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে