পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ - রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর ওফাতের পর সাহাবীদের মক্কাহ্ হতে হিজরত করা সম্পর্কে

৫৯৬৪-[৯] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) সুস্থাবস্থায় প্রায়শ বলতেন, প্রত্যেক নবীকে মৃত্যুর পূর্বে জান্নাতে তাঁর নিবাস দেখিয়ে দেয়া হয়, তারপর তাঁকে ইচ্ছানুযায়ী স্বাধীনতা দেয়া হয়। আয়িশাহ্ (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) যখন মৃত্যুরোগে আক্রান্ত হন এবং তার মাথা ছিল আমার রানের উপর। এ সময় তিনি (সা.) বেহুশ হয়ে পড়লেন। অতঃপর হুশ ফিরে আসলে ঘরের ছাদের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেন। তারপর বললেন, হে আল্লাহ! উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন বন্ধুর সাথে। তখন আমি মনে মনে বললাম, তিনি এখন আমাদের কাছে থাকা ভালোবাসবেন না। আয়িশাহ্ (রাঃ) বলেন, আর আমি এটা বুঝতে পারলাম, সুস্থ অবস্থায় তিনি (সা.) যে কথাটি বলতেন, এটা সে কথারই বহিঃপ্রকাশ। আর সেই কথাটি হলো, প্রত্যেক নবীকে মৃত্যুর আগে জান্নাতে তাঁর নিবাস দেখিয়ে দেয়ার পর তাকে ইচ্ছানুযায়ী স্বাধীনতা দেয়া হয়। আয়িশাহ (রাঃ) বলেন, নবী (সা.) সর্বশেষ এ বাক্যটি উচ্চারণ করেন- (اللَّهُمَّ الرفيق الْأَعْلَى) (হে আল্লাহ! উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন বন্ধুর সঙ্গে)। (বুখারী ও মুসলিম)

اَلْفصْلُ الثَّالِثُ (بَاب هِجْرَة أَصْحَابه صلى الله عَلَيْهِ وَسلم من مَكَّة ووفاته)

عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ وَهُوَ صَحِيح: «لَنْ يُقْبَضَ نَبِيٌّ قَطُّ حَتَّى يُرَى مَقْعَدَهُ مِنَ الْجَنَّةِ ثُمَّ يُخَيَّرَ» . قَالَتْ عَائِشَةُ: فَلَمَّا نَزَلَ بِهِ ورأسُه على فَخذِي غُشِيَ عَلَيْهِ ثُمَّ أَفَاقَ فَأَشْخَصَ بَصَرُهُ إِلَى السَّقْفِ ثُمَّ قَالَ: «اللَّهُمَّ الرَّفِيقَ الْأَعْلَى» . قُلْتُ: إِذَنْ لَا يَخْتَارُنَا. قَالَتْ: وَعَرَفْتُ أَنَّهُ الْحَدِيثُ الَّذِي كَانَ يُحَدِّثُنَا بِهِ وَهُوَ صَحِيحٌ فِي قَوْلِهِ: «إِنَّهُ لَنْ يُقْبَضَ نَبِيٌّ قَطُّ حَتَّى يُرَى مَقْعَدَهُ مِنَ الْجَنَّةِ ثُمَّ يُخَيَّرَ» قَالَتْ عَائِشَةُ: فَكَانَ آخِرُ كَلِمَةٍ تَكَلَّمَ بِهَا النَّبِيُّ صلى الله عَلَيْهِ وَسلم: «اللَّهُمَّ الرفيق الْأَعْلَى» . مُتَّفق عَلَيْهِ

متفق علیہ ، رواہ البخاری (6509) و مسلم (87 / 2444)، (6297) ۔
(مُتَّفق عَلَيْهِ)

عن عائشة قالت: كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول وهو صحيح: «لن يقبض نبي قط حتى يرى مقعده من الجنة ثم يخير» . قالت عائشة: فلما نزل به ورأسه على فخذي غشي عليه ثم أفاق فأشخص بصره إلى السقف ثم قال: «اللهم الرفيق الأعلى» . قلت: إذن لا يختارنا. قالت: وعرفت أنه الحديث الذي كان يحدثنا به وهو صحيح في قوله: «إنه لن يقبض نبي قط حتى يرى مقعده من الجنة ثم يخير» قالت عائشة: فكان آخر كلمة تكلم بها النبي صلى الله عليه وسلم: «اللهم الرفيق الأعلى» . متفق عليه

ব্যাখ্যা: (اللَّهُمَّ الرفيق الْأَعْلَى) “হে আল্লাহ! উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন বন্ধুর সঙ্গে।” এটা ছিল আল্লাহর রাসূল (সা.) -এর পবিত্র জবান থেকে নির্গত সর্বশেষ বাণী। ঐতিহাসিক সুহায়লী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, আল্লাহর নবী (সা.) সর্বপ্রথম মুখ থেকে যে কথাটি বের করেছিলেন তা ছিল ‘আল্ল-হু আকবার'। আর তিনি (সা.) কথা বলেছিলেন যখন তিনি তার দুধ মা হালিমা-এর নিকট দুগ্ধপোষ্য শিশু ছিলেন- এটা বর্ণনা করেছেন ইবনু হাজার (রহিমাহুল্লাহ)। অন্য একটি বর্ণনায় এসেছে যে, রূহ জগতে আল্লাহ তা'আলা যখন সকল রূহ থেকে স্বীয় প্রভুত্বের অঙ্গীকার নিয়েছিলেন যাকে (عهد ألست) “আহদে আলাসতু” বলা হয়, তখন আল্লাহ তা'আলার প্রশ্ন- আলাসতু বিরব্বিকুম? আমি কি তোমাদের প্রভু নই? এর জবাবে বালা, তথা জি হ্যা, অবশ্যই আপনি আমাদের প্রভু। সর্বপ্রথম এ উত্তর দিয়েছিলেন মুহাম্মাদ (সা.)। (মিরকাতুল মাফাতীহ, মাযাহিরে হাক শারহে মিশকাত ৭ম খণ্ড, ২০২ পৃষ্ঠা)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৯: চারিত্রিক গুণাবলি ও মর্যাদাসমূহ (كتاب الْفَضَائِل وَالشَّمَائِل)

পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ - রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর ওফাতের পর সাহাবীদের মক্কাহ্ হতে হিজরত করা সম্পর্কে

৫৯৬৫-[১০] উক্ত রাবী [আয়িশাহ্ (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) যে রোগে ইন্তিকাল করেছেন, সে রোগে আক্রান্ত হওয়ার পরে বলেছিলেন, হে ’আয়িশাহ্! খায়বারে (বিষ-মিশ্ৰিত) যে খাদ্য আমি খেয়েছিলাম, আমি সদা তার যন্ত্রণা অনুধাবন করি। আর এখন মনে হচ্ছে, আমার শিরাগুলো সে বিষের ক্রিয়ায় ফেটে যাচ্ছে। (বুখারী)

اَلْفصْلُ الثَّالِثُ (بَاب هِجْرَة أَصْحَابه صلى الله عَلَيْهِ وَسلم من مَكَّة ووفاته)

وَعَنْهَا قَالَتْ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ فِي مَرَضِهِ الَّذِي مَاتَ فِيهِ: «يَا عَائِشَةُ مَا أَزَالُ أَجِدُ أَلَمَ الطَّعَامِ الَّذِي أَكَلْتُ بِخَيْبَرَ وَهَذَا أَوَانُ وَجَدْتُ انْقِطَاعَ أَبهري من ذَلِك السم» . رَوَاهُ البُخَارِيّ

رواہ البخاری (4428) ۔
(صَحِيح)

وعنها قالت: كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول في مرضه الذي مات فيه: «يا عائشة ما أزال أجد ألم الطعام الذي أكلت بخيبر وهذا أوان وجدت انقطاع أبهري من ذلك السم» . رواه البخاري

ব্যাখ্যা: (انْقِطَاعَ أَبهري) “আমার শিরাগুলো সে বিষক্রিয়ার ফেটে যাচ্ছে।” অর্থাৎ আবহারী বলা হয় এমন শিরাকে যা কল্‌ব বা হৃদয়ের সাথে সম্পর্কিত থাকে। যদি সে শিরা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় তবে মানুষ মারা যায়। নিহায়াহ গ্রন্থে এসেছে, আবহার হলো পিঠের শিরা। বলা হয়ে থাকে, তা হলো বাহুর শিরা। এও বলা হয়ে থাকে, তা হলো এমন শিরা যা হৃদয়ের সাথে সম্পর্কিত। যদি তা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় তবে আর জীবন বাকি থাকে না। বলা হয়ে থাকে, আবহার হলো এমন শিরা যা মাথা থেকে উৎপত্তি হয়েছে, আর তার বিস্তৃতি হলো পা পর্যন্ত। যা শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে, অতএব মাথার শিরাকে বলা হয় আন নাম্মাহ, আর তার থেকে (أسكت الله با مته) অর্থাৎ আল্লাহ তাকে মৃত্যু দিয়েছেন। আর তা বিস্তৃত হয়ে হালক্ক বা কণ্ঠনালী পর্যন্ত পৌছে, তখন তাকে বলা হয় আল ওয়ারীদ। আর তা বিস্তৃত হয়ে বক্ষ পর্যন্ত পৌছে, তখন তাকে বলা হয় আল আবহার। আর তা বিস্তৃত হয়ে পায়ের পিণ্ডলী বা সাক পর্যন্ত পৌঁছে, তখন তাকে সাফিন বলা হয়। (মিরকাতুল মাফাতীহ)।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৯: চারিত্রিক গুণাবলি ও মর্যাদাসমূহ (كتاب الْفَضَائِل وَالشَّمَائِل)

পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ - রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর ওফাতের পর সাহাবীদের মক্কাহ্ হতে হিজরত করা সম্পর্কে

৫৯৬৬-[১১] ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর ইন্তিকালের সময় কাছাকাছি হয়, তখন তার ঘরে অনেক লোকে উপস্থিত ছিলেন। এ সময় নবী (সা.) বললেন, আসো, আমি তোমাদের জন্য একটি (স্মরণ) লিপি লিখে দিয়ে যাই, যাতে তোমরা এরপর কখনো গোমরাহ না হও। তখন ’উমার (রাঃ) বললেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর ওপর এখন রোগ-যন্ত্রণা কঠিন হয়ে পড়েছে। আর তোমাদের কাছে কুরআন মাজীদ রয়েছে, অতএব আল্লাহর কিতাবই তোমাদের জন্য যথেষ্ট। এই নিয়ে গৃহে উপস্থিত লোকেদের মধ্যে মতপার্থক্য দেখা দিল এবং তারা বিতর্কে লিপ্ত হয়ে পড়লেন। তাদের মাঝে কেউ কেউ বললেন, কাগজ-কলম নিয়ে আসো, যেন রাসূলুল্লাহ (সা.) তোমাদের জন্য কিছু লিখে দেন। আবার কেউ সে কথাই বললেন, যা ’উমার (রাঃ) বলেছেন। অতঃপর যখন হৈ চৈ এবং মতবিরোধ চরমে পৌছল, তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, তোমরা আমার কাছ থেকে উঠে যাও। (অধস্তন বর্ণনাকারী) উবায়দুল্লাহ বলেন, ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) অত্যন্ত দুঃখ ও ক্ষোভের সাথে বলতেন, এটা একটি বিপদ, মারাত্মক বিপদ, যা লোকেদের মতবিরোধ ও শোরগোলের আকৃতিতে রাসূলুল্লাহ (সা.) এবং তার ওয়াসিয়্যাত লিখে দেয়ার ইচ্ছার মধ্যে অন্তরাল হয়ে দাড়াল।
আর সুলায়মান ইবনু আবূ মুসলিম আহওয়াল-এর বর্ণনাতে আছে, ইবনু আব্বাস (রাঃ) বললেন, হায় বৃহস্পতিবার! কতই বেদনাদায়ক বৃহস্পতিবার। এ কথা বলে তিনি এমনভাবে কাঁদতে লাগলেন যে, তাঁর অশ্রুতে নিচের বালু-কঙ্কর পর্যন্ত ভিজে গেছে। (সুলায়মান বলেন,) আমি প্রশ্ন করলাম, হে ইবনু আব্বাস! বৃহস্পতিবার দিনের বিষয়টি কি? তিনি বললেন, এদিন রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর রোগ-যন্ত্রণা খুব বেড়ে গিয়েছিল তখন তিনি বলেছিলেন, অস্থিখণ্ড (লেখার উপকরণ) নিয়ে আসো, আমি তোমাদের জন্য এমন লিখে দেব, যার পর তোমরা কখনো গোমরাহ হবে না। তখন লোকেরা তর্কে লিপ্ত হলো। অথচ নবীর সম্মুখে তর্ক করা সমীচীন ছিল না। এ সময় কেউ কেউ বললেন, তাঁর অবস্থা কেমন? তবে কি তিনি প্রলাপ করছেন? তাঁকে প্রশ্ন কর। কেউ কেউ তাঁকে বারবার প্রশ্ন করতে লাগল। সে সময় তিনি বললেন, আমাকে ছেড়ে দাও, আমাকে আমার অবস্থায় থাকতে দাও। আমি যে অবস্থায় আছি, আমাকে ঐ অবস্থায় থাকতে দাও। আমি যে অবস্থায় আছি, ঐ অবস্থায় থাকতে দাও। আমি যে অবস্থায় আছি, তা ঐ অবস্থা হতে অনেক ভালো, যেদিকে তোমরা আমাকে আহ্বান করছ। অতঃপর তিনি তাদেরকে তিনটি বিষয়ে নির্দেশ দিলেন। ১. মুশরিকদেরকে ’আরব উপদ্বীপ হতে বহিষ্কার করবে। ২. আমি যেভাবে প্রতিনিধিদলকে স্বসম্মানে পুরস্কৃত করতাম, (আমার পরে) সেভাবে তাদেরকে পুরস্কৃত করবে। আর ইবনু আব্বাস (রাঃ) তৃতীয়টি হতে নীরব থাকেন, অথবা তিনি বলেছেন, কিন্তু আমি (সুলায়মান) তা ভুলে গেছি। সুফইয়ান বলেন, এটা সুলায়মানের কথা। (বুখারী ও মুসলিম)

اَلْفصْلُ الثَّالِثُ (بَاب هِجْرَة أَصْحَابه صلى الله عَلَيْهِ وَسلم من مَكَّة ووفاته)

وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: لَمَّا حُضِرَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَفِي الْبَيْتِ رِجَالٌ فِيهِمْ عُمَرُ بْنُ الْخَطَّابِ قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «هَلُمُّوا أَكْتُبْ لَكُمْ كِتَابًا لَنْ تَضِلُّوا بَعْدَهُ» . فَقَالَ عُمَرَ: أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَدْ غَلَبَ عَلَيْهِ الْوَجَعُ وَعِنْدَكُمُ الْقُرْآنُ حَسْبُكُمْ كِتَابُ اللَّهِ فَاخْتَلَفَ أَهْلُ الْبَيْتِ وَاخْتَصَمُوا فَمِنْهُمْ مَنْ يَقُولُ: قَرِّبُوا يَكْتُبْ لَكُمْ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عَلَيْهِ وَسلم. وَمِنْهُم يَقُولُ مَا قَالَ عُمَرُ. فَلَمَّا أَكْثَرُوا اللَّغَطَ وَالِاخْتِلَافَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «قُومُوا عَنِّي» . قَالَ عُبَيْدُ اللَّهِ: فَكَانَ ابنُ عباسٍ يَقُول: إِن الرزيئة كل الرزيئة مَا حَالَ بَيْنَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَبَيَّنَ أَنْ يَكْتُبَ لَهُمْ ذَلِكَ الْكِتَابَ لِاخْتِلَافِهِمْ وَلَغَطِهِمْ وَفِي رِوَايَةِ سُلَيْمَانَ بْنِ أَبِي مُسْلِمٍ الْأَحْوَلِ قَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ: يَوْمُ الْخَمِيسِ وَمَا يَوْمُ الْخَمِيسِ؟ ثُمَّ بَكَى حَتَّى بَلَّ دَمْعُهُ الْحَصَى. قُلْتُ: يَا ابْنَ عَبَّاسٍ وَمَا يَوْمُ الْخَمِيسِ؟ قَالَ: اشْتَدَّ بِرَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَجَعُهُ فَقَالَ: «ائْتُونِي بِكَتِفٍ أَكْتُبْ لَكُمْ كِتَابًا لَا تَضِلُّوا بَعْدَهُ أَبَدًا» . فَتَنَازَعُوا وَلَا يَنْبَغِي عِنْدَ نَبِيٍّ تَنَازُعٌ. فَقَالُوا: مَا شَأْنُهُ أَهَجَرَ؟ اسْتَفْهِمُوهُ فَذَهَبُوا يَرُدُّونَ عَلَيْهِ. فَقَالَ: «دَعُونِي ذَرُونِي فَالَّذِي أَنَا فِيهِ خَيْرٌ مِمَّا تَدْعُونَنِي إِلَيْهِ» . فَأَمَرَهُمْ بِثَلَاثٍ: فَقَالَ: «أَخْرِجُوا الْمُشْرِكِينَ مِنْ جَزِيرَةِ الْعَرَبِ وَأَجِيزُوا الْوَفْدَ بِنَحْوِ مَا كُنْتُ أُجِيزُهُمْ» . وَسَكَتَ عَنِ الثَّالِثَةِ أَوْ قَالَهَا فَنَسِيتُهَا قَالَ سُفْيَانُ: هَذَا مِنْ قَول سُلَيْمَان. مُتَّفق عَلَيْهِ

متفق علیہ ، رواہ البخاری (114) و مسلم (22 / 1637) الروایۃ الثانیۃ : البخاری (4431) و مسلم (20 / 1637)، (4232 و 4234) ۔
(مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)

وعن ابن عباس قال: لما حضر رسول الله صلى الله عليه وسلم وفي البيت رجال فيهم عمر بن الخطاب قال النبي صلى الله عليه وسلم: «هلموا أكتب لكم كتابا لن تضلوا بعده» . فقال عمر: أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قد غلب عليه الوجع وعندكم القرآن حسبكم كتاب الله فاختلف أهل البيت واختصموا فمنهم من يقول: قربوا يكتب لكم رسول الله صلى الله عليه وسلم. ومنهم يقول ما قال عمر. فلما أكثروا اللغط والاختلاف قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «قوموا عني» . قال عبيد الله: فكان ابن عباس يقول: إن الرزيئة كل الرزيئة ما حال بين رسول الله صلى الله عليه وسلم وبين أن يكتب لهم ذلك الكتاب لاختلافهم ولغطهم وفي رواية سليمان بن أبي مسلم الأحول قال ابن عباس: يوم الخميس وما يوم الخميس؟ ثم بكى حتى بل دمعه الحصى. قلت: يا ابن عباس وما يوم الخميس؟ قال: اشتد برسول الله صلى الله عليه وسلم وجعه فقال: «ائتوني بكتف أكتب لكم كتابا لا تضلوا بعده أبدا» . فتنازعوا ولا ينبغي عند نبي تنازع. فقالوا: ما شأنه أهجر؟ استفهموه فذهبوا يردون عليه. فقال: «دعوني ذروني فالذي أنا فيه خير مما تدعونني إليه» . فأمرهم بثلاث: فقال: «أخرجوا المشركين من جزيرة العرب وأجيزوا الوفد بنحو ما كنت أجيزهم» . وسكت عن الثالثة أو قالها فنسيتها قال سفيان: هذا من قول سليمان. متفق عليه

ব্যাখ্যা: (هَلُمُّوا أَكْتُبْ لَكُمْ كِتَابًا لَنْ تَضِلُّوا بَعْدَهُ) “আসো তোমাদের জন্য আমি একটি পত্র লিখে দেই।” এ সময় ‘উমার (রাঃ) বললেন, তার ব্যথা বেশি হয়ে গেছে। আর তোমাদের কাছে তো কুরআন মাজীদ আছে। তোমাদের জন্য আল্লাহর কিতাবই যথেষ্ট জীবনে পথ চলার জন্য। (এ অবস্থায় তোমরা আর নবী (সা.) -কে বিরক্ত করো না)। অতএব এ বিষয়টি নিয়ে আহলে বায়তদের মাঝেই দ্বন্দ ও কথা কাটাকাটি শুরু হলে কেউ কেউ বলেন, তোমরা একটা খাতা তার নিকট নিয়ে যাও তিনি তোমাদের জন্য লিখে দিবেন। আর তাদের কেউ ‘উমার (রাঃ)-এর মতো কথা বলল। যখন এরূপ কথা কাটাকাটি ও দ্বন্দ্ব বেশি হয়ে গেল তখন নবী (সা.) বললেন, তোমরা আমার কাছ থেকে চলে যাও।
শারহে মুসলিমের মধ্যে ইমাম নাবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, জেনে রাখ যে, নবী (সা.) মিথ্যা থেকে পবিত্র। তিনি আরো পবিত্র তার সুস্থতার সময় বা তার অসুস্থতার সময়ে তার দ্বারা শারী'আতের কোন বিষয় পরিবর্তন হওয়া থেকে। আর আল্লাহ তাকে যা প্রচারের কথা বলেছেন তা প্রচার করার ক্ষেত্রে কোন বিষয় ছেড়ে দেয়া থেকেও তিনি পবিত্র। তার সুস্থ অবস্থায় হোক বা তার অসুস্থ অবস্থায় হোক তার মর্যাদা হানিকর, কোন কাজ হওয়া থেকেও তিনি মা'সূম বা পবিত্র। তিনি তার শারী'আতে যা গুরুত্বারোপ করেছেন তাতে কোন দ্বন্দ্ব নেই।
একবার নবী (সা.) -কে যাদু করা হয়েছিল আর তখন তিনি কোন কাজ না করেই করেছি বলে মনে করতেন। তবে এ অবস্থায়ও তার থেকে শারী'আতের মধ্যে কোন ভুল সিদ্ধান্ত আসেনি। অতএব তারা যে বিষয়ে ইখতিলাফ বা মতভেদ করল যা তিনি লিখে দিতে চাইলেন। এ বিষয়ে বলা হয়ে থাকে, তিনি খিলাফাতের জন্য একজনের নাম নির্দিষ্ট করে দিতে চেয়েছিলেন, যাতে এ বিষয়ে কোন দ্বন্দ্ব না হয়।
মিরকাতুল মাফাতীহ গ্রন্থকার বলেন, এ বিষয়টি দলীল থেকে যা প্রমাণিত তা হতে অনেক দূরে চলে গেল। অর্থাৎ ইমাম নবাবী (রহিমাহুল্লাহ)-এর ব্যাখ্যাটি দলীল সঙ্গত নয়। কারণ এ ব্যাপারে যোগ্য ছিলেন আবূ বাকর (রাঃ), ‘উমার (রাঃ), ‘আব্বাস (রাঃ) অথবা ‘আলী (রাঃ), আর এ বিষয়টি লেখার কোন দরকার ছিল না। এটা শুধু মুখে বললেই যথেষ্ট ছিল। বরং তিনি আবূ বাকর (রাঃ) -এর খিলাফাতের ব্যাপারে আগেই ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। তিনি খিলাফাতের বিষয়টি লিখতে চাননি। কারণ এটা করলে ইমাম মাহদী ও ঈসা আলায়হিস সালাম পর্যন্ত লেখার প্রয়োজন হত। আর তিনি খিলাফাতের বিষয়টি গোপন রাখতে চেয়েছিলেন। বরং তিনি সামনে আগত কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় লিপিবদ্ধ করতে চেয়েছিলেন। যেখানে এমন কথা লেখা থাকত যা অনুসরণ করলে মুক্তিপ্রাপ্ত দলের অন্তর্ভুক্ত হওয়া যেত। আর সেখানে লেখা থাকত ভ্রান্তদের পরিচয়। যেমন মু'তাযিলাহ, খারিজী ও রাফিযীসহ সকল বিদআতীদের নামের তালিকা। (মিরকাতুল মাফাতীহ)

(قُومُوا عَنِّي) “তোমরা আমার নিকট থেকে চলে যাও।” অর্থাৎ তোমাদের কাছে যে কিতাব ও সুন্নাহ্ আছে তার উপর নির্ভর করে আমি আমার লেখার ইচ্ছাকে পরিহার করলাম।
ইমাম নবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, নবী (সা.) তাদেরকে কিছু লিখে দেয়ার ইচ্ছা করেছিল যখন তিনি তা কল্যাণকর মনে করেছিলেন অথবা তাকে ওয়াহী করা হয়েছিল। আর তিনি মনে করলেন তা না লিখে দেয়ার মাঝেই কল্যাণ আছে বা তাকে ওয়াহীর মাধ্যমে জানিয়ে দেয়া হয়েছিল। তাই তিনি তা লেখার সিদ্ধান্তকে প্রত্যাহার করে নেন। আর ‘উমার (রাঃ) এর কথা যে, তোমাদের কাছে আল্লাহর কিতাব আছে যা তোমাদের জন্য যথেষ্ট হবে। এ কথার উপর সকলেই একমত যে, এটি তার সূক্ষ্ম বুঝ ও মর্যাদা, তার বুঝ ও তার জ্ঞানের গভীরতার কারণে। কারণ তিনি ভয় করছিলেন যে, হয়তো নবী (সা.) এমন কিছু লিখে দিবেন যা পালন করতে অনেকেই অক্ষম হবেন। আর তাতে অক্ষম হওয়ার কারণে শাস্তি চলে আসবে, কারণ তাতে তো কোন ইজতিহাদের সুযোগ থাকবে না। আর তার কথা, তোমাদের জন্য আল্লাহর কিতাব যথেষ্ট। এ বিষয়ে মহান আল্লাহর বাণী- “আমি কিতাবে কোন কিছুই ছাড়িনি”। (সূরা আল আ'আম ৬: ৩৮)। মহান আল্লাহ আরো বলেন, “আজ আমি তোমাদের দীনকে পরিপূর্ণ করে দিয়েছি”- (সূরাহ্ আল মায়িদাহ ৫: ৩)। (মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৯: চারিত্রিক গুণাবলি ও মর্যাদাসমূহ (كتاب الْفَضَائِل وَالشَّمَائِل)

পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ - রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর ওফাতের পর সাহাবীদের মক্কাহ্ হতে হিজরত করা সম্পর্কে

৫৯৬৭-[১২] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর মৃত্যুর পর একদিন আবূ বকর সিদ্দিক (রাঃ) ’উমার (রাঃ)-কে বললেন, চল আমাদের সাথে উম্মু আয়মান-এর সাথে সাক্ষাৎ করতে যাই, রাসূলুল্লাহ (সা.) যেভাবে তার সাথে দেখা-সাক্ষাৎ করতেন। [আনাস (রাঃ) বলেন,] আমরা তার কাছে পৌছলে তিনি কাঁদতে লাগলেন। তখন তারা উভয়ে উম্ম আয়মান-কে বললেন, কাঁদছ কেন? তুমি কি জান না, রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর জন্য আল্লাহ তা’আলার কাছে যা আছে, তাই উত্তম; উম্ম আয়মান বললেন, এজন্য আমি কাঁদছি না যে, আমি জানি না আল্লাহর কাছে যা তা রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর উত্তম; বরং আমি এজন্য কাঁদছি যে, আকাশ হতে ওয়াহী আসার ধারা বন্ধ হয়ে গেছে। এ কথা শুনে তাদের অন্তরও বিগলিত হয়ে গেল, ফলে তাঁরাও উম্মু আয়মান-এর সাথে কাঁদতে লাগলেন। (মুসলিম)

اَلْفصْلُ الثَّالِثُ (بَاب هِجْرَة أَصْحَابه صلى الله عَلَيْهِ وَسلم من مَكَّة ووفاته)

وَعَنْ أَنَسٍ قَالَ: قَالَ أَبُو بَكْرٍ لِعُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا بَعْدَ وَفَاةِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: انْطَلِقْ بِنَا إِلَى أُمِّ أَيْمَنَ نَزُورُهَا كَمَا كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَزُورُهَا فَلَمَّا انْتَهَيْنَا إِلَيْهَا بَكَتْ. فَقَالَا لَهَا: مَا يُبْكِيكِ؟ أَمَا تَعْلَمِينَ أَنَّ مَا عِنْدَ اللَّهِ خَيْرٌ لِرَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ؟ فَقَالَتْ: إِنِّي لَا أَبْكِي أَنِّي لَا أَعْلَمُ أَنَّ مَا عِنْدَ اللَّهِ تَعَالَى خَيْرٌ لِرَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَلَكِنْ أَبْكِي أَنَّ الْوَحْيَ قَدِ انْقَطَعَ مِنَ السَّمَاءِ فَهَيَّجَتْهُمَا عَلَى الْبُكَاءِ فَجعلَا يَبْكِيَانِ مَعهَا. رَوَاهُ مُسلم

رواہ مسلم (103 / 2454)، (6318) ۔
(صَحِيح)

وعن أنس قال: قال أبو بكر لعمر رضي الله عنهما بعد وفاة رسول الله صلى الله عليه وسلم: انطلق بنا إلى أم أيمن نزورها كما كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يزورها فلما انتهينا إليها بكت. فقالا لها: ما يبكيك؟ أما تعلمين أن ما عند الله خير لرسول الله صلى الله عليه وسلم؟ فقالت: إني لا أبكي أني لا أعلم أن ما عند الله تعالى خير لرسول الله صلى الله عليه وسلم ولكن أبكي أن الوحي قد انقطع من السماء فهيجتهما على البكاء فجعلا يبكيان معها. رواه مسلم

ব্যাখ্যা: উম্মু আয়মান ছিলেন উসামাহ্ ইবনু যায়দ ইবনু হারিস-এর মা। তিনি নবী (সা.) -এর মুক্তদাসী ছিলেন। তাকে নবী (সা.) যায়দ (রাঃ)-এর সাথে বিবাহ দেন। তাঁর নাম ছিল বারাকাহ্। তিনি নবী (সা.) -এর পিতা আবদুল্লাহ-এর দাসী ছিলেন। পরে নবী (সা.) উত্তরাধিকার সূত্রে তার মালিক হন। তিনি মুজাহিদদের পানি পান করাতেন ও আহতদের সেবা করতেন। তিনি হাবশীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। তিনি উমার (রাঃ)-এর মৃত্যুর বিশ দিন পরে মারা যান। আর যায়দ (রাঃ)-এর মালিক ছিলেন খাদীজাহ্ (রাঃ)। পরে তিনি তাকে খাদীজাহ্ (রাঃ) -এর কাছে চেয়েছিলেন। তাই খাদীজাহ্ (রাঃ) তাকে তার সেবা করার জন্য পেশ করেন। পরে নবী (সা.) তাকে মুক্ত করে দেন। এভাবেই কিছু মুহাক্কিক ‘আলিম উল্লেখ করেছেন। আর লেখক তার নাম উম্মু আয়মান উল্লেখ করেননি। (মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৯: চারিত্রিক গুণাবলি ও মর্যাদাসমূহ (كتاب الْفَضَائِل وَالشَّمَائِل)

পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ - রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর ওফাতের পর সাহাবীদের মক্কাহ্ হতে হিজরত করা সম্পর্কে

৫৯৬৮-[১৩] আবূ সাঈদ আল খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) তাঁর শেষ রোগের সময় একদিন আমরা মসজিদে বসছিলাম, তখন তিনি স্বীয় মাথায় একখানা কাপড় বাঁধা অবস্থায় বের হয়ে আমাদের সামনে এসে সরাসরি মিম্বারে গিয়ে বসলেন। আর আমরাও তার অনুকরণে কাছে গিয়ে বসলাম। অতঃপর তিনি বললেন, আমি সেই মহান সত্তার শপথ করে বলছি, যার হাতে আমার প্রাণ! নিশ্চয় আমি আমার এ স্থান হতে হাওযে কাওসার দেখতে পাচ্ছি। তারপর বললেন, আল্লাহর কোন এক বান্দার সম্মুখে দুনিয়া ও তার সাজসজ্জা উপস্থিত করা হয়; কিন্তু সে পরকালকে অগ্রাধিকার দেয়। আবূ সা’ঈদ (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর এ কথাটির ব্যাখ্যা আবূ বকর সিদ্দিক (রাঃ) ছাড়া আর কেউ বুঝতে পারেননি। সাথে সাথে তার চক্ষুদ্বয় হতে অশ্রু প্রবাহিত হতে লাগল এবং তিনি কেঁদে দিলেন। অতঃপর বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! বরং আমরা আমাদের পিতামাতা ও আমাদের জানমালসমূহ আপনার জন্য উৎসর্গ করছি। আবূ সাঈদ (রাঃ) বলেন, তারপর তিনি মিম্বার হতে নেমে আসলেন এবং এ যাবৎ আর কখনো তিনি (সা.) তার উপর দাঁড়াননি। (দারিমী)

اَلْفصْلُ الثَّالِثُ (بَاب هِجْرَة أَصْحَابه صلى الله عَلَيْهِ وَسلم من مَكَّة ووفاته)

وَعَن أبي سعيد الْخُدْرِيّ قَالَ: خَرَجَ عَلَيْنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي مَرَضِهِ الَّذِي مَاتَ فِيهِ وَنَحْنُ فِي الْمَسْجِدِ عَاصِبًا رَأْسَهُ بِخِرْقَةٍ حَتَّى أَهْوَى نَحْوَ الْمِنْبَرِ فَاسْتَوَى عَلَيْهِ وَاتَّبَعْنَاهُ قَالَ: «وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ إِنِّي؟ لَأَنْظُرُ إِلَى الْحَوْضِ مِنْ مَقَامِي هَذَا» ثُمَّ قَالَ: «إِنَّ عَبْدًا عُرِضَتْ عَلَيْهِ الدُّنْيَا وَزِينَتُهَا فَاخْتَارَ الْآخِرَةَ» قَالَ: فَلَمْ يَفْطِنْ لَهَا أَحَدٌ غَيْرُ أَبِي بَكْرٍ فَذَرَفَتْ عَيْنَاهُ فَبَكَى ثُمَّ قَالَ: بَلْ نَفْدِيكَ بِآبَائِنَا وأمَّهاتِنا وأنفسنا وأموالِنا يَا رسولَ الله قَالَ: ثُمَّ هَبَطَ فَمَا قَامَ عَلَيْهِ حَتَّى السَّاعَة. رَوَاهُ الدَّارمِيّ

اسنادہ حسن ، رواہ الدارمی (1 / 36 ح 78) ۔
(صَحِيح)

وعن أبي سعيد الخدري قال: خرج علينا رسول الله صلى الله عليه وسلم في مرضه الذي مات فيه ونحن في المسجد عاصبا رأسه بخرقة حتى أهوى نحو المنبر فاستوى عليه واتبعناه قال: «والذي نفسي بيده إني؟ لأنظر إلى الحوض من مقامي هذا» ثم قال: «إن عبدا عرضت عليه الدنيا وزينتها فاختار الآخرة» قال: فلم يفطن لها أحد غير أبي بكر فذرفت عيناه فبكى ثم قال: بل نفديك بآبائنا وأمهاتنا وأنفسنا وأموالنا يا رسول الله قال: ثم هبط فما قام عليه حتى الساعة. رواه الدارمي

ব্যাখ্যা: অন্য বর্ণনায় এসেছে যে, জিবরীল আলায়হিস সালাম রাসূল (সা.) -এর দরবারে এসে বললেন যে, মহান আল্লাহ বলেছেন: আপনি যদি এখন দুনিয়ায় আরো থাকতে চান তাহলে থাকতে পারেন এবং দুনিয়ার ধনভাণ্ডার আপনাকে প্রদান করা হবে, আর তার পাহাড়সমূহকে আপনার জন্য স্বর্ণ-চাদিতে পরিণত করা হবে, তবে আখিরাতে আপনার জন্য যে পরিমাণ মর্যাদা, প্রতিদান ও নি'আমাত নির্ধারিত আছে তাতে সামান্য পরিমাণ হ্রাস পাবে। আবার আপনি যদি চান যে, আমাদের নিকট আসবেন তাহলে আসতে পারেন। এটা শুনে নবী (সা.) মাথা ঝুঁকালেন যেমন গুরুত্বপূর্ণ কোন সিদ্ধান্ত ঘোষণার পূর্বে গবেষকরা মাথা ঝুঁকিয়ে চিন্তা করে থাকেন। এটাও বর্ণনা করা হয় যে, সে সময় রাসূল (সা.) -এর গোলামদের মধ্য থেকে একজন গোলাম সেখানে উপস্থিত ছিল। সে এ কথা শুনল যে, রাসূল (সা.) -কে ধনভাণ্ডার ও স্বর্ণ-রৌপ্যের বিশাল পরিমাণসহ দুনিয়াতে থাকার ইখতিয়ার দেয়া হয়েছে তখন সে বলল যে, হে আল্লাহর রাসূল! এতে কি এমন ক্ষতি আছে যদি আপনি আরো কিছু দিন এ দুনিয়াতে থাকার ইচ্ছা করেন, আপনার ওয়াসীলায় প্রাপ্ত ধনভাণ্ডার হতে আমরাও আরাম-আয়েশে জীবনযাপন করব।
কিন্তু তিনি (সা.) সে কথায় কর্ণপাত না করে জিবরীল আলায়হিস সালাম এর উদ্দেশে জানতে চাইলেন যে, উপঢৌকন ও ইখতিয়ার প্রদানের আসল উদ্দেশ্য কি? আর যখন তিনি (সা.) বুঝলেন যে, মহান আল্লাহর উদ্দেশ্য হলো তার নিকট আহ্বান করা তখন তিনি বললেন, সেখানে আমি আসতে চাচ্ছি। এভাবেই তিনি (সা.) চিরকালের আখিরাতকে ইখতিয়ার করলেন এবং ধ্বংসশীল দুনিয়াকে উপেক্ষা করলেন। এরই ভিত্তিতে কোন এক ব্যক্তি বলেন যে, যদি কোন বুদ্ধিমান ব্যক্তিকে এমন দু'টি পাত্র হতে একটিকে বাছাই করার ইখতিয়ার দেয়া যায় একটি পাত্র মাটির তৈরি কিন্তু দীর্ঘস্থায়ী এবং অন্য পাত্রটি স্বর্ণের কিন্তু তা ক্ষণস্থায়ী তাহলে বুদ্ধিমান ব্যক্তি নিশ্চয় ঐ ক্ষণস্থায়ী পাত্রের উপর তথা স্বর্ণের পাত্রের উপর মাটির পাত্র তথা দীর্ঘস্থায়ী পাত্রকে প্রাধান্য দিবে। আর কোথাও যদি অবস্থা উল্টা হয় অর্থাৎ স্বর্ণের পাত্র দীর্ঘস্থায়ী পাত্র হয় আর মাটির পাত্র ক্ষণস্থায়ী পাত্র হয় তাহলে কাউকে যদি কোন একটি পছন্দ করার ইখতিয়ার দেয়া হয় তখন শুধু কোন নির্বোধ ও বেকুফ ব্যক্তিই স্বর্ণের পাত্র পছন্দ না করে মাটির পাত্র পছন্দ করবে।

অতঃএব জানা উচিত যে, আখিরাতের উদাহরণ হলো ঐ দীর্ঘস্থায়ী পাত্র যা স্বর্ণের আর দুনিয়ার উদাহরণ হলো ঐ ক্ষণস্থায়ী পাত্র যা মাটির এবং ধ্বংসশীল। আল কুরআনুল কারীম ঐ বাস্তবতার দিকে এভাবে ইঙ্গিত করেছে যে, (وَ الۡاٰخِرَۃُ خَیۡرٌ وَّ اَبۡقٰی) “আর আখিরাত হলো উত্তম ও উচ্চ এবং চিরকাল বিদ্যমান থাকবে”- (সূরা আল আ'লা- ৮৭: ১৭)। (মাযাহিরে হাক শারহে মিশকাত ৭ম খণ্ড, ২১১-২১২ পৃষ্ঠা)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৯: চারিত্রিক গুণাবলি ও মর্যাদাসমূহ (كتاب الْفَضَائِل وَالشَّمَائِل)

পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ - রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর ওফাতের পর সাহাবীদের মক্কাহ্ হতে হিজরত করা সম্পর্কে

৫৯৬৯-[১৪] ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন () “যখন আসবে আল্লাহর সাহায্য ও (ইসলামের চূড়ান্ত) বিজয়”- (সূরা আন্ নাসর ১১০: ১) নাযিল হলো, তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) ফাতিমাহ্ (রাঃ) -কে ডেকে বললেন, আমাকে আমার মৃত্যুর সংবাদ দেয়া হয়েছে। এ কথা শুনে ফাতিমাহ্ (রাঃ) কেঁদে দিলেন। তখন তিনি (সা.) বললেন, তুমি কেঁদো না। কারণ আমার পরিবারের মাঝে তুমিই প্রথম আমার সাথে মিলিত হবে। তখন ফাতিমাহ্ (রাঃ) হাসলেন। ফাতিমাহ্ (রাঃ)-এর এ অবস্থা দেখে নবী (সা.) -এর কোন এক স্ত্রী প্রশ্ন করলেন, হে ফাতিমাহ্! আমরা প্রথমে একবার তোমাকে দেখলাম কাঁদতে। আবার পরে দেখলাম হাসতে উত্তরে ফাতিমা (রাঃ) বললেন, প্রথমে তিনি আমাকে বলেছেন, ’তাঁকে তাঁর মৃত্যুর সংবাদ দেয়া হয়েছে। তা শুনে আমি কেঁদেছি। অতঃপর তিনি (সা.) আমাকে বললেন, তুমি কেঁদো না। কারণ আমার পরিবারের মধ্য হতে তুমিই সর্বপ্রথম আমার সাথে মিলিত হবে। এ কথা শুনে আমি হাসলাম। আর রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, যখন আল্লাহর সাহায্য এসেছে এবং মক্কার বিজয় হয়েছে এবং ইয়ামানবাসীগণ (ইসলাম গ্রহণ করে) রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর কাছে এসেছে, তারা কোমল অন্তরের অধিকারী, ঈমান ইয়ামানবাসীদের মাঝে এবং হিকমাতও ইয়ামানবাসীদের মাঝে রয়েছে। (দারিমী)

اَلْفصْلُ الثَّالِثُ (بَاب هِجْرَة أَصْحَابه صلى الله عَلَيْهِ وَسلم من مَكَّة ووفاته)

وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: لَمَّا نَزَلَتْ [إِذَا جَاءَ نصر الله وَالْفَتْح] دَعَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَاطِمَةَ قَالَ: «نُعِيَتْ إِلَيَّ نَفْسِي» فَبَكَتْ قَالَ: «لَا تَبْكِي فَإِنَّكِ أَوَّلُ أَهْلِي لَاحِقٌ بِي» فَضَحِكَتْ فَرَآهَا بَعْضُ أَزْوَاجِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقُلْنَ: يَا فَاطِمَةُ رَأَيْنَاكِ بَكَيْتِ ثُمَّ ضَحِكْتِ. قَالَتْ: إِنَّهُ أَخْبَرَنِي أَنَّهُ قَدْ نُعِيَتْ إِلَيْهِ نَفْسُهُ فَبَكَيْتُ فَقَالَ لِي: لَا تبْكي فإِنك أوَّلُ أَهلِي لاحقٌ بِي فضحكتُ. وَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِذَا جَاءَ نصرُ الله وَالْفَتْح وَجَاءَ أَهْلُ الْيَمَنِ هُمْ أَرَقُّ أَفْئِدَةً وَالْإِيمَانُ يمانٍ وَالْحكمَة يَمَانِية» . رَوَاهُ الدَّارمِيّ

سندہ حسن ، رواہ الدارمی (1 / 37 ح 80) ۔
(حسن)

وعن ابن عباس قال: لما نزلت [إذا جاء نصر الله والفتح] دعا رسول الله صلى الله عليه وسلم فاطمة قال: «نعيت إلي نفسي» فبكت قال: «لا تبكي فإنك أول أهلي لاحق بي» فضحكت فرآها بعض أزواج النبي صلى الله عليه وسلم فقلن: يا فاطمة رأيناك بكيت ثم ضحكت. قالت: إنه أخبرني أنه قد نعيت إليه نفسه فبكيت فقال لي: لا تبكي فإنك أول أهلي لاحق بي فضحكت. وقال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «إذا جاء نصر الله والفتح وجاء أهل اليمن هم أرق أفئدة والإيمان يمان والحكمة يمانية» . رواه الدارمي

ব্যাখ্যা: (عِيَتْ إِلَيَّ نَفْسِي) “আমাকে আমার মৃত্যুর খবর দেয়া হয়েছে।” অর্থাৎ আমাকে সংবাদ দেয়া হয়েছে যে, আমি মারা যাব। ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, আমার মৃত্যুর খবর আমাকে দেয়া হয়েছে। যেমন তুমি বল, আমি তোমার নিকট অমুকের প্রশংসা করছি। কথিত আছে যে, মৃত ব্যক্তি তার মৃত্যুর সংবাদ প্রচার করছে। যখন সে সেটা জেনে কাউকে জানাচ্ছে। আর এর গুপ্ত রহস্য হলো, মহান আল্লাহ বলেছেন,
(فَسَبِّحۡ بِحَمۡدِ رَبِّکَ) “আপনি আপনার রবের প্রশংসার সাথে পবিত্রতা ঘোষণা করুন”- (সূরা আন্ নাসর ১১০: ৩)। তার কথার সারমর্ম হলো-  اِذَا جَآءَ نَصۡرُ اللّٰهِ وَ الۡفَتۡحُ ۙ﴿۱﴾ وَ رَاَیۡتَ النَّاسَ یَدۡخُلُوۡنَ فِیۡ دِیۡنِ اللّٰهِ اَفۡوَاجًا ۙ﴿۲﴾ “যখন আল্লাহর সাহায্য ও বিজয় আসবে। আর তুমি দলে দলে মানুষকে আল্লাহর দীনে প্রবেশ করতে দেখবে"(সূরা আন্ নাসর ১১০: ১-২)। এটা আল্লাহর রাসূল (সা.) -এর প্রতি বিশেষ নির্দেশ যে, তিনি আল্লাহর প্রশংসা করবেন এবং তাঁর নি'আমাতের উপর গুণকীর্তন করবেন। এটা হলো তাঁর প্রতি অর্পিত রিসালাতের প্রচারপ্রসার কাজে কষ্ট স্বীকার করা, আর দীনের শত্রুদের ওপর চেষ্টা-প্রচেষ্টা করা, আর ইবাদাত কবুল হওয়ার জন্য চেষ্টা করা, আর সম্মান ও মর্যাদার সর্বোচ্চ চূড়ায় আরোহণের জন্য ত্বাকওয়ার নীতি অবলম্বন করা। আর সবশেষে উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন বন্ধুর সাথে মিলিত হওয়ার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে যাওয়া।
(فإِنك أوَّلُ أَهلِي لاحقٌ بِي فضحكتُ) “নিশ্চয় তুমি আমার পরিবারের প্রথম সদস্য যে আমার সাথে মিলিত হবে, এ কথা শুনে সে হেসে উঠল।” অর্থাৎ আল্লাহর রাসূল (সা.) তার মেয়ে ফাতিমাহ্ (রাঃ)-কে বলেন, আমার পরে তুমি আমার পরিবারের মাঝে প্রথম মৃত্যুবরণ করবে। আকমাল বলেন, সহীহ মত হলো তিনি রাসূল (সা.) -এর মৃত্যুর ছয় মাস পরে মারা যান। কথিত আছে যে, আট মাস পরে মারা যান। এও কথিত আছে যে, তিন মাস পরে মারা যান। আরো কথিত আছে যে, তিনি দুই মাস পরে মারা যান। এছাড়াও কথিত আছে যে, তিনি রাসূল (সা.)-এর মৃত্যুবরণ করার মাত্র সত্তর দিন পরে মারা যান।
(وَالْإِيمَانُ يمانٍ) “ঈমান হলো ইয়ামানবাসীদের মধ্যে।” বলা হয়ে থাকে, মক্কাহ্ থেকে ঈমানের সূচনা হয়েছে। আর তা হলো ত্বিহামাহ্ এলাকা থেকে। আর ত্বিহামাহ্ হলো ইয়ামান দেশের মধ্যে। এ কারণে বলা হয়ে থাকে, ইয়ামানী কা'বাহ্। কথিত আছে, তিনি এ কথা বলেছেন তাবুকে থাকা অবস্থায়। তখন মক্কাহ্ ও মদীনাহ্ তাবূক ও ইয়ামানের মাঝে ছিল। তিনি ইয়ামানের দিকে ইঙ্গিত করে মক্কাকে বুঝিয়েছেন। আবূ ‘উবায়দ বলেন, তিনি আনসারদের উদ্দেশ্য করে বলেছেন কারণ তারা মূলত ইয়ামানী। আর তাদের দিকে ঈমানকে সম্পৃক্ত করা হয়েছে কারণ তারা তাকে সাহায্য করেছেন। শায়খ আবূ ‘উমার বলেন, বরং তার উদ্দেশ্য ছিল ইয়ামানবাসী। যেমনটি বাহ্যিকভাবে ঈমানকে তাদের সাথে সম্পৃক্ত করেছেন, কারণ নবী (সা.) - এর পূর্ণতা হয়েছে তাদের মাঝে। কারণ কোন ব্যক্তি যে গুণে গুণান্বিত হয় ও যার উপর ভর করে শক্তিশালী হয় সে নিজেকে তার দিকে সম্পৃক্ত করে, আর এ কাজ অন্য কিছুকে নিষেধ করে না। অতএব তার মাঝে আর রাসূল (সা.) -এর কথার মাঝে কোন পার্থক্য নেই। (মিরকাতুল মাফাতীহ)।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৯: চারিত্রিক গুণাবলি ও মর্যাদাসমূহ (كتاب الْفَضَائِل وَالشَّمَائِل)

পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ - রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর ওফাতের পর সাহাবীদের মক্কাহ্ হতে হিজরত করা সম্পর্কে

৫৯৭০-[১৫] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদিন তিনি বললেন, হায় আমার মাথা! তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, যদি এটা ঘটে যায়, আর আমি বেঁচে থাকি, তাহলে আমি তোমার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করব এবং তোমার জন্য দু’আ করব। তখন ’আয়িশাহ্ (রাঃ) বললেন, হায় আফসোস! আল্লাহর শপথ! আমার তো মনে হচ্ছে, আপনি আমার মৃত্যুই কামনা করছেন। আর যদি তাই ঘটে, তাহলে তো আপনি সেদিনের শেষাংশে আপনার জন্য অন্য কোন স্ত্রীর সাথে রাত্রি যাপন করবেন। তখন নবী (সা.) বললেন, বরং আমার মাথা ওয়াসিয়্যাত করে যাব যেন লোকেদের কিছু বলার অবকাশ না থাকে কিংবা আকাঙ্ক্ষাকারীদের কোন আকাঙ্ক্ষা করার অবকাশ না থাকে। আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, অথবা বলেছেন, আমি ইচ্ছা করেছিলাম কোন লোক পাঠিয়ে আবূ বকর (রাঃ) ও তাঁর পুত্র (আবদুর রহমান)-কে ডেকে আনব এবং তাদেরকে (খিলাফাত সম্পর্কে) আল্লাহ আবূ বকর (রাঃ) ছাড়া অন্যের খলীফাহ্ হওয়া অপছন্দ করবেন মুমিনগণ বর্জন করবেন। এ গ্রহণ করবেন না। আর ঈমানদারগণও গ্রহণ করবে না। (বুখারী)

اَلْفصْلُ الثَّالِثُ (بَاب هِجْرَة أَصْحَابه صلى الله عَلَيْهِ وَسلم من مَكَّة ووفاته)

وَعَن عَائِشَة أَنَّهَا قَالَت: وَا رأساه قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «ذَاكِ لَوْ كَانَ وَأَنَا حَيٌّ فَأَسْتَغْفِرُ لَكِ وَأَدْعُو لَكِ» فَقَالَتْ عَائِشَةُ: وَاثُكْلَيَاهْ وَاللَّهِ إِنِّي لَأَظُنُّكَ تُحِبُّ مَوْتِي فَلَوْ كَانَ ذَلِكَ لَظَلِلْتَ آخِرَ يَوْمِكَ مُعْرِسًا بِبَعْضِ أَزْوَاجِكَ فَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عَلَيْهِ وَسلم: بل أَنا وَا رأساه لَقَدْ هَمَمْتُ أَوْ أَرَدْتُ أَنْ أُرْسِلَ إِلَى أَبِي بَكْرٍ وَابْنِهِ وَأَعْهَدُ أَنْ يَقُولَ الْقَائِلُونَ أَوْ يَتَمَنَّى الْمُتَمَنُّونَ ثُمَّ قُلْتُ: يَأْبَى اللَّهُ وَيَدْفَعُ الْمُؤْمِنُونَ أَوْ يَدْفَعُ اللَّهُ وَيَأْبَى الْمُؤْمِنُونَ . رَوَاهُ البُخَارِيّ

رواہ البخاری (5666) ۔
(صَحِيح)

وعن عائشة أنها قالت: وا رأساه قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «ذاك لو كان وأنا حي فأستغفر لك وأدعو لك» فقالت عائشة: واثكلياه والله إني لأظنك تحب موتي فلو كان ذلك لظللت آخر يومك معرسا ببعض أزواجك فقال النبي صلى الله عليه وسلم: بل أنا وا رأساه لقد هممت أو أردت أن أرسل إلى أبي بكر وابنه وأعهد أن يقول القائلون أو يتمنى المتمنون ثم قلت: يأبى الله ويدفع المؤمنون أو يدفع الله ويأبى المؤمنون . رواه البخاري

ব্যাখ্যা: (بِبَعْضِ أَزْوَاجِكَ) অর্থাৎ যদি আমার মৃত্যু হয় আর আপনি আমার পরে জীবিত থাকেন তবে তাড়াতাড়ি আপনি অন্য স্ত্রীদের সময় দিবেন আর আমাকে দ্রুত ভুলে যাবেন। বলা হয়ে থাকে, আরোস বলা হয় যখন কোন পুরুষ তার স্ত্রীর সাথে বাসর করে থাকে।
এরপর সকল সহবাসকেও বলা হয়। এটা উল্লেখ করেছেন ইবনু হাজার আল আসকালানী (রহিমাহুল্লাহ)। আর “আন্ নিহায়াহ” গ্রন্থে এসেছে, তা'রীস বলা হয় রাতের শেষে অবতরণ করাকে। এখান থেকেই নেয়া হয়েছে কোন ব্যক্তি তার স্ত্রীর সাথে বাসর করল।
আর “আল কামূস” গ্রন্থে এসেছে, আ'রাসা অর্থ হলো কোন ব্যক্তি তার স্ত্রীর সাথে বাসর করল। আর কোন সম্প্রদায় শেষ রাতে বিশ্রামের জন্য অবতরণ করল। আর এটিই বেশি ব্যবহৃত হয়।
(أَوْ يَتَمَنَّى الْمُتَمَنُّونَ) অর্থাৎ আবূ বাকর (রাঃ) -কে ছাড়া অন্য কেউ অথবা তাদের কাউকে বা অন্য কাউকে খলীফাহ্ নিযুক্ত করে। এখানে ‘আও' প্রকারের জন্য সন্দেহের জন্য নয়।
ইবনুল মালিক (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, অর্থাৎ কোন ব্যক্তির এ কথা বলা অপছন্দীয় যে, আমি তার থেকে খিলাফাতের বেশি উপযুক্ত অথবা কেউ কামনা করে যে তার থেকে অন্য কেউ খিলাফাতের বেশি উপযুক্ত।
ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, আমি আবূ বাকর (রাঃ) এ-কে খিলাফাতের দায়িত্ব দিতে চাই যাতে করে কেউ বলতে না পারে...। (মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৯: চারিত্রিক গুণাবলি ও মর্যাদাসমূহ (كتاب الْفَضَائِل وَالشَّمَائِل)

পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ - রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর ওফাতের পর সাহাবীদের মক্কাহ্ হতে হিজরত করা সম্পর্কে

৫৯৭১-[১৬] উক্ত রাবী [’আয়িশাহ্ (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন রাসূলুল্লাহ (সা.) বাকী নামক কবরস্থানে এক জানাযায় শামিল হওয়ার পর আমার কাছে ফিরে আসলেন। তখন আমাকে তিনি (সা.) এমন অবস্থায় পেলেন যে, আমি মাথা ব্যথায় আক্রান্ত। আর আমি বলছি, হায়! ব্যথায় আমার মাথা গেল। তিনি (সা.) বললেন, না বরং হে ’আয়িশাহ (বলে) আমি মাথা ব্যথায় অস্থির হয়ে পড়েছি। আর এতে ক্ষতিই বা কি? যদি তুমি আমার আগে মৃত্যুবরণ কর, তাহলে আমি তোমাকে গোসল করাব, কাফন পরাব, তোমার সালাতে জানাযা আদায় করব এবং আমি তোমাকে দাফন করব। আমি বললাম, আল্লাহর শপথ! আমি যেন আপনাকে এমন অবস্থায় মনে করছি, আপনি আমার শেষকৃত্য সম্পাদন করে আমার হুজরায় ফিরে আসবেন, আপনার কোন এক স্ত্রীর সাথে সেখানে রাত্রি যাপন করবেন। তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) মুচকি হাসলেন। [“আয়িশাহ্ (রাঃ) বলেন,] এরপর হতেই তাঁর সেই রোগের সূচনা হলো যে রোগে তিনি (সা.) ইন্তিকাল করেছেন। (দারিমী)

اَلْفصْلُ الثَّالِثُ (بَاب هِجْرَة أَصْحَابه صلى الله عَلَيْهِ وَسلم من مَكَّة ووفاته)

وَعَنْهَا : قَالَتْ: رَجَعَ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ذَات يومٍ من جنازةٍ مِنَ الْبَقِيعِ فَوَجَدَنِي وَأَنَا أَجِدُ صُدَاعًا وَأَنَا أَقُولُ: وَارَأْسَاهْ قَالَ: «بَلْ أَنَا يَا عَائِشَةُ وَارَأْسَاهْ» قَالَ: «وَمَا ضَرَّكِ لَوْ مِتِّ قَبْلِي فَغَسَّلْتُكِ وَكَفَّنْتُكِ وَصَلَّيْتُ عَلَيْكِ وَدَفَنْتُكِ؟» قُلْتُ: لَكَأَنِيِّ بِكَ وَاللَّهِ لَوْ فَعَلْتَ ذَلِكَ لَرَجَعْتَ إِلَى بَيْتِي فَعَرَّسْتَ فِيهِ بِبَعْضِ نِسَائِكَ فَتَبَسَّمَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ثُمَّ بُدِيءَ فِي وَجَعِهِ الَّذِي مَاتَ فِيهِ. رَوَاهُ الدَّارِمِيُّ

اسنادہ ضعیف ، رواہ الدارمی (1 / 37 ۔ 38 ح 81) [و ابن ماجہ (1465)] * الزھری مدلس و عنعن

وعنها : قالت: رجع إلى رسول الله صلى الله عليه وسلم ذات يوم من جنازة من البقيع فوجدني وأنا أجد صداعا وأنا أقول: وارأساه قال: «بل أنا يا عائشة وارأساه» قال: «وما ضرك لو مت قبلي فغسلتك وكفنتك وصليت عليك ودفنتك؟» قلت: لكأني بك والله لو فعلت ذلك لرجعت إلى بيتي فعرست فيه ببعض نسائك فتبسم رسول الله صلى الله عليه وسلم ثم بديء في وجعه الذي مات فيه. رواه الدارمي

ব্যাখ্যা: অত্র হাদীসটি দ্বারা বুঝা যায় যে, স্বামী মারা যাওয়ার পর স্ত্রী তার গোসল দিতে পারে। তাকে দেখতে পারে। আসমা বিনতু ‘উমায়স (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ফাতিমাহ্ (রাঃ) ওয়াসিয়্যাত করে যান যে, ‘আলী (রাঃ) তার গোসল দিবে। ইমাম শাওকানী (রহিমাহুল্লাহ)-এর সনদকে হাসান বলেছেন। ইমাম শাওকানী (রহিমাহুল্লাহ)- বলেন, রাসূল (সা.) বলেন, আমি তোমাকে গোসল দিব। এখান থেকে বুঝা যায় যে, স্ত্রী তার স্বামীকে গোসল দিতে পারবে। (নায়লুল আওত্বার ৪/৩৫)
মহিলা তার স্বামীর মৃত্যুর পর গোসল দিতে পারবে- এ মর্মে আরো দলীল হলো- মা আয়িশাহ (রাঃ) বলেন, যে বিষয়টি আমার ছুটে গেছে তা আমার আগে স্মরণ থাকলে আল্লাহর রাসূল (সা.)-কে তার স্ত্রীগণ ছাড়া কেউ গোসল দিতে পারত না। (আবূ দাউদ হা. ৩১৪১)।

আলবানী (রহিমাহুল্লাহ) হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। (আহকামুল জানায়িয' ১/৪৯ পৃ.)
এ ব্যাপারে ইমাম নবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, ইবনুল মুনযির (রহিমাহুল্লাহ) ‘আল ইশরাফ’ কিতাবে ও কিতাবুল ইজমা'-তে বর্ণনা করেছেন, মুসলিম উম্মাহ্ এ ব্যাপারে ইজমা' তথা ঐকমত্য পোষণ করেছেন যে, মহিলা তার স্বামীকে গোসল করাতে পারে। এছাড়া অন্যরাও ইজমা' বলে উল্লেখ করেছেন। দেখুন শারহুল মুহাযযাব ৫/১১৪ পৃ.।
বিস্তারিত দেখুন- ইসলাম কিউ. এ. শায়খ মুহাম্মাদ সালিহ আল মুনাজ্জিদ, প্রশ্ন নং ১৫৫০৪৫।
(সম্পাদকীয়)


হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৯: চারিত্রিক গুণাবলি ও মর্যাদাসমূহ (كتاب الْفَضَائِل وَالشَّمَائِل)

পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ - রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর ওফাতের পর সাহাবীদের মক্কাহ্ হতে হিজরত করা সম্পর্কে

৫৯৭২-[১৭] জাফার ইবনু মুহাম্মাদ তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেন, একদিন কুরায়শী এক লোক তাঁর পিতা ’আলী ইবনু হুসায়ন (রহিমাহুল্লাহ)-এর কাছে আসলেন এবং বললেন, আমি কি তোমাকে একটি হাদীস বর্ণনা করব না। তিনি বললেন: হ্যা, আপনি আমাকে আবূল কাসিম (সা.) হতে হাদীস বর্ণনা করুন। তিনি বললেন: রাসূলুল্লাহ (সা.) যখন রোগাক্রান্ত হলেন, তখন জিবরীল আলায়হিস সালাম তাঁর কাছে এসে বললেন, হে মুহাম্মাদ! আপনার বিশেষ সম্মান ও মর্যাদার বৈশিষ্ট্যর প্রেক্ষিতে আল্লাহ তা’আলা আমাকে আপনার খিদমাতে পাঠিয়ে আপনার হাল-অবস্থা জানতে চেয়েছেন। অথচ আপনার অবস্থা সম্পর্কে তিনি (আল্লাহ) আপনার চেয়ে অধিক অবগত আছেন। তবুও তিনি জানতে চেয়েছেন, আপনি এখন নিজের মধ্যে কিরূপ অনুভব করছেন? উত্তরে রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, হে জিবরীল। আমি নিজেকে ভারাক্রান্ত পাচ্ছি এবং নিজের মাঝে অস্থিরতা অনুভব করছি। এরপর সেদিন জিবরীল আলায়হিস সালাম চলে গেলেন। আবার দ্বিতীয় দিন এসে বিগত দিনের মতো প্রশ্ন করলেন, আর নবী (সা.) ও প্রথম দিনের মতো জবাব দিলেন। আবার জিবরীল আলায়হিস সালাম তৃতীয় দিন আসলেন এবং নবী (সা.) -কে প্রথম দিনের মতো প্রশ্ন করলেন, আর তিনিও প্রথম দিনের মতো একই উত্তর দিলেন। এই (তৃতীয়) দিন জিবরীল আলায়হিস সালাম-এর সাথে আসলেন ইসমাঈল নামে আর একজন ফেরেশতা।
তিনি ছিলেন এমন এক লক্ষ মালায়িকাহ্’র (ফেরেশতাদের) সর্দার, যাদের প্রত্যেকেই (স্বতন্ত্রভাবে) এক এক লক্ষ মালায়িকাহ্’র নেতা। সেই মালাক (ফেরেশতা)- নবী (সা.) -এর নিকটে আসার অনুমতি চাইলেন। অতঃপর নবী (সা.) - জিবরীল আলায়হিস সালাম-কে তার পরিচয় জিজ্ঞেস করলেন। বললেন, এই যে মালাকুল মাওত। ইনিও আপনার কাছে আসার অনুমতি চাচ্ছেন। তিনি আপনার পূর্বে কখনো মানুষের কাছে যেতে অনুমতি চাননি এবং আপনার পরেও আর কখনো কোন মানুষের কাছে আসতে অনুমতি চাবেন না। অতএব, তাঁকে প্রবেশের অনুমতি দিন। এমতাবস্থায় নবী (সা.) তাঁকে অনুমতি দিলেন, তখন তিনি নবী (সা.) -কে সালাম করে বললেন, হে মুহাম্মাদ! আল্লাহ তা’আলা আমাকে আপনার কাছে পাঠিয়েছেন। আপনি যদি আমাকে আপনার আত্মা কবয করার অনুমতি বা নির্দেশ দেন, তাহলে আমি আপনার আত্মা কবয করব। আর যদি আপনি আপনাকে ছেড়ে দিতে আমাকে নির্দেশ দেন, তাহলে আমি আপনাকে ছেড়ে দিব। তখন নবী (সা.) বললেন, হে মালাকুল মাওত! আপনি কি এমন করতে পারবেন? তিনি বললেন, হ্যা, আমি এভাবে আদিষ্ট হয়েছি। আর আমি এটাও আদিষ্ট হয়েছি যে, আমি যেন আপনার নির্দেশ মেনে চলি। বর্ণনাকারী বলেন, এ সময় নবী (সা.) জিবরীল আলায়হিস সালাম-এর দিকে দৃষ্টিবদ্ধ হলো, তখন জিবরীল আলায়হিস সালাম বললেন, হে মুহাম্মাদ! আল্লাহ তা’আলা আপনার সাক্ষাৎ লাভের জন্য একান্তভাবে উদগ্রীব। তখনই নবী (সা.) মালাকুল মাওতকে বললেন, যে জন্য আপনি আদিষ্ট হয়েছেন, তাই কার্যে পরিণত করুন, অতঃপর তিনি তাঁর আত্মা কবয করে ফেললেন। যখন রাসূলুল্লাহ (সা.) এ ইন্তিকাল করেন এবং একজন সান্তনাদানকারী আসেন, তখন তাঁরা গৃহের এক পার্শ্ব হতে এ আওয়াজ শুনতে পেলেন-“হে আহলে বায়ত! আপনাদের প্রতি আল্লাহর তরফ থেকে শান্তি, রহমত ও বরকত বর্ষিত হোক। আল্লাহর কিতাবে প্রত্যেকটি বিপদের সময় সান্ত্বনা ও ধৈর্যের উপাদান রয়েছে। আল্লাহ তা’আলা প্রত্যেক ধ্বংসের উত্তম বিনিময়দানকারী এবং প্রত্যেক হারানো বস্তুর ক্ষতিপূরণকারী। অতএব আপনারা একমাত্র আল্লাহকে ভয় করে চলুন এবং তাঁর কাছেই সদা কল্যাণের কামনা করুন। কারণ মূলত ঐ লোক বিপদগ্রস্ত যে সাওয়াব হতে বঞ্চিত।” অতঃপর আলী (রাঃ) বললেন, তোমরা কি জান এই সান্তনাবাণী প্রদানকারী লোকটি কে? ইনি হলেন, খিযির আলায়হিস সালাম। [ইমাম বায়হাক্কী (রহিমাহুল্লাহ) তাঁর “দালায়িলুন নুবুওয়্যাহ্” গ্রন্থে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন]

اَلْفصْلُ الثَّالِثُ (بَاب هِجْرَة أَصْحَابه صلى الله عَلَيْهِ وَسلم من مَكَّة ووفاته)

وَعَنْ جَعْفَرِ بْنِ مُحَمَّدٍ عَنْ أَبِيهِ أَنَّ رَجُلًا مِنْ قُرَيْشٍ دَخَلَ عَلَى أَبِيهِ عَلِيِّ بْنِ الْحُسَيْنِ فَقَالَ أَلَا أُحَدِّثُكَ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ؟ قَالَ: بَلَى حَدِّثْنَا عَنْ أَبِي الْقَاسِمِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: لَمَّا مَرَضِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَتَاهُ جِبْرِيلُ فَقَالَ: يَا مُحَمَّدُ إِنَّ اللَّهَ أَرْسَلَنِي إِلَيْكَ تَكْرِيمًا لَكَ وَتَشْرِيفًا لَكَ خَاصَّةً لَكَ يَسْأَلُكَ عَمَّا هُوَ أَعْلَمُ بِهِ مِنْكَ يَقُولُ: كَيْفَ تجدك؟ قَالَ: أجدُني يَا جِبْرِيل مغموماً وأجدني يَا جِبْرِيل مَكْرُوبًا . ثُمَّ جَاءَهُ الْيَوْمُ الثَّانِي فَقَالَ لَهُ ذَلِكَ فَرَدَّ عَلَيْهِ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَمَا رَدَّ أَوَّلَ يَوْمٍ ثُمَّ جَاءَهُ الْيَوْمَ الثَّالِثَ فَقَالَ لَهُ كَمَا قَالَ أَوَّلَ يَوْمٍ وَرَدَّ عَلَيْهِ كَمَا رَدَّ عَلَيْهِ وَجَاءَ مَعَهُ مَلَكٌ يُقَالُ لَهُ: إِسْمَاعِيلُ عَلَى مِائَةِ أَلْفِ مَلَكٍ كُلُّ مَلَكٍ عَلَى مِائَةِ أَلْفِ مَلَكٍ فَاسْتَأْذَنَ عَلَيْهِ فَسَأَلَهُ عَنْهُ. ثُمَّ قَالَ جِبْرِيل: هَذَا مَلَكُ الْمَوْتِ يَسْتَأْذِنُ عَلَيْكَ. مَا اسْتَأْذَنَ عَلَى آدَمِيٍّ قَبْلَكَ وَلَا يَسْتَأْذِنُ عَلَى آدَمِيٍّ بَعْدَكَ. فَقَالَ: ائْذَنْ لَهُ فَأَذِنَ لَهُ فَسَلَّمَ عَلَيْهِ ثُمَّ قَالَ يَا مُحَمَّدُ إِنَّ اللَّهَ أَرْسَلَنِي إِلَيْكَ فَإِنْ أَمَرْتَنِي أَنْ أَقْبِضَ رُوحَكَ قَبَضْتُ وَإِنْ أَمَرْتَنِي أَنْ أَتْرُكَهُ تَرَكْتُهُ فَقَالَ: وَتَفْعَلُ يَا مَلَكَ الْمَوْتِ؟ قَالَ: نَعَمْ بِذَلِكَ أُمرتُ وأُمرتُ أَن أطيعَك. قَالَ: فَنَظَرَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَى جِبْرِيل عَلَيْهِ السَّلَام فَقَالَ جِبْرِيلُ: يَا مُحَمَّدُ إِنَّ اللَّهَ قَدِ اشْتَاقَ إِلَى لِقَائِكَ فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِمَلَكِ الْمَوْتِ: «امْضِ لِمَا أُمِرْتَ بِهِ» فَقَبَضَ رُوحَهُ فَلَمَّا تُوُفِّيَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَجَاءَتِ التَّعْزِيَةُ سَمِعُوا صَوْتًا مِنْ نَاحِيَةِ الْبَيْتِ: السَّلَامُ عَلَيْكُمْ أَهْلَ الْبَيْتِ وَرَحْمَةُ اللَّهِ وَبَرَكَاتُهُ إِنَّ فِي اللَّهِ عَزَاءً مِنْ كُلِّ مُصِيبَةٍ وَخَلَفًا مِنْ كُلِّ هالكٍ ودَرَكاً من كلِّ فَائت فبالله فثقوا وَإِيَّاهُ فَارْجُوا فَإِنَّمَا الْمُصَابُ مَنْ حُرِمَ الثَّوَابَ. فَقَالَ عَلِيٌّ: أَتَدْرُونَ مَنْ هَذَا؟ هُوَ الْخَضِرُ عَلَيْهِ السَّلَامُ. رَوَاهُ الْبَيْهَقِيُّ فِي «دَلَائِلِ النُّبُوَّةِ»

اسنادہ ضعیف جذا ، رواہ البیھقی فی دلائل النبوۃ (7 / 267 ۔ 268) [و الشافعی فی السنن الماثورۃ (ص 334 ۔ 335 ح 390 روایۃ الطحاوی عن المزنی) و السھمی فی تاریخ جرجان (ص 363 ۔ 364)] * فیہ قاسم بن عبداللہ بن عمر بن حفص : متروک رماہ احمد بالکذب ۔
(ضَعِيف)

وعن جعفر بن محمد عن أبيه أن رجلا من قريش دخل على أبيه علي بن الحسين فقال ألا أحدثك عن رسول الله صلى الله عليه وسلم؟ قال: بلى حدثنا عن أبي القاسم صلى الله عليه وسلم قال: لما مرض رسول الله صلى الله عليه وسلم أتاه جبريل فقال: يا محمد إن الله أرسلني إليك تكريما لك وتشريفا لك خاصة لك يسألك عما هو أعلم به منك يقول: كيف تجدك؟ قال: أجدني يا جبريل مغموما وأجدني يا جبريل مكروبا . ثم جاءه اليوم الثاني فقال له ذلك فرد عليه النبي صلى الله عليه وسلم كما رد أول يوم ثم جاءه اليوم الثالث فقال له كما قال أول يوم ورد عليه كما رد عليه وجاء معه ملك يقال له: إسماعيل على مائة ألف ملك كل ملك على مائة ألف ملك فاستأذن عليه فسأله عنه. ثم قال جبريل: هذا ملك الموت يستأذن عليك. ما استأذن على آدمي قبلك ولا يستأذن على آدمي بعدك. فقال: ائذن له فأذن له فسلم عليه ثم قال يا محمد إن الله أرسلني إليك فإن أمرتني أن أقبض روحك قبضت وإن أمرتني أن أتركه تركته فقال: وتفعل يا ملك الموت؟ قال: نعم بذلك أمرت وأمرت أن أطيعك. قال: فنظر النبي صلى الله عليه وسلم إلى جبريل عليه السلام فقال جبريل: يا محمد إن الله قد اشتاق إلى لقائك فقال النبي صلى الله عليه وسلم لملك الموت: «امض لما أمرت به» فقبض روحه فلما توفي رسول الله صلى الله عليه وسلم وجاءت التعزية سمعوا صوتا من ناحية البيت: السلام عليكم أهل البيت ورحمة الله وبركاته إن في الله عزاء من كل مصيبة وخلفا من كل هالك ودركا من كل فائت فبالله فثقوا وإياه فارجوا فإنما المصاب من حرم الثواب. فقال علي: أتدرون من هذا؟ هو الخضر عليه السلام. رواه البيهقي في «دلائل النبوة»

ব্যাখ্যা: (وأجدني يَا جِبْرِيل مَكْرُوبًا) অর্থাৎ চিন্তিত, আর আমি আমার দুঃখ ও চিন্তাগুলো কেবল আমার কাছে সোপর্দ করলাম। আর আমি সর্বাবস্থায় বলি, আলহামদুলিল্লা-হ।
(لِمَا أُمِرْتَ بِهِ) অর্থাৎ আর তাতে বিলম্ব করবেন না। ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, এখান থেকে ইবনুল জাওযী (রহিমাহুল্লাহ) “কিতাবুল ওয়াফা” কিতাবে উল্লেখ করেছেন। তারপরে জিবরীল আলায়হিস সালাম বলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনার ওপর শান্তি বর্ষিত হোক। এটাই আমার সর্বশেষ পৃথিবীতে আগমন। এ দুনিয়ায় আপনিই আমার প্রয়োজন ছিলেন। এই বলেই তার রূহ কবয করে নেয়া হয় (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্নাইলায়হি র-জিউন)। (মিরকাতুল মাফাতীহ)

(مِنْ كُلِّ مُصِيبَةٍ) অর্থাৎ এ ব্যাপারে মহান আল্লাহর বাণী-
...وَ بَشِّرِ الصّٰبِرِیۡنَ ﴿۱۵۵﴾ الَّذِیۡنَ اِذَاۤ اَصَابَتۡهُمۡ مُّصِیۡبَۃٌ.. ﴿۱۵۶﴾ؕ “আর আপনি ধৈর্যশীলদেরকে সুসংবাদ দিন। যখন তাদের কোন বিপদ আসে”- (সূরা আল বাকারাহ ২: ১৫৫-১৫৬)। অথবা তার সাওয়াবের বিনিময় করে দেন তার কষ্টের ও পরিশ্রমের বিনিময়ে।
“আন নিহায়াহ্" গ্রন্থকার বলেন, আর হাদীসে এসেছে, “যে আল্লাহর সান্ত্বনায় সান্ত্বনা পায় না।” কথিত আছে যে, তিনি এ হাদীসে তা'যীয়াহ বলতে সান্তনাকে ও বিপদে ধৈর্য ধরাকে বুঝিয়েছেন। আর এ কথা বলা যে, ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলায়হি র-জিউন, অর্থাৎ- নিশ্চয় আমরা আল্লাহর জন্য আর আমরা তার নিকটেই ফিরে যাব।
ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, এখান থেকেই তার কথায় (আল্লাহর) মুযাফ বা সম্বন্ধনীয় পদ নির্ধারণ করা বৈধ। আল্লাহ সম্পর্কে অর্থাৎ নিশ্চয় মহান আল্লাহর সাক্ষাতের ক্ষেত্রে প্রত্যেক বিপদে-আপদে ধৈর্য ধারণ করা ও সান্ত্বনা গ্রহণ করা। এ কথার উদ্দেশ্য হলো আল্লাহর (সন্তুষ্টির) জন্যই সকল ক্ষেত্রে ধৈর্য ধারণ ও সান্ত্বনা লাভ করা। (মিরকাতুল মাফাতীহ)।


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৯: চারিত্রিক গুণাবলি ও মর্যাদাসমূহ (كتاب الْفَضَائِل وَالشَّمَائِل)
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ৯ পর্যন্ত, সর্বমোট ৯ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে