৫৯৭২

পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ - রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর ওফাতের পর সাহাবীদের মক্কাহ্ হতে হিজরত করা সম্পর্কে

৫৯৭২-[১৭] জাফার ইবনু মুহাম্মাদ তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেন, একদিন কুরায়শী এক লোক তাঁর পিতা ’আলী ইবনু হুসায়ন (রহিমাহুল্লাহ)-এর কাছে আসলেন এবং বললেন, আমি কি তোমাকে একটি হাদীস বর্ণনা করব না। তিনি বললেন: হ্যা, আপনি আমাকে আবূল কাসিম (সা.) হতে হাদীস বর্ণনা করুন। তিনি বললেন: রাসূলুল্লাহ (সা.) যখন রোগাক্রান্ত হলেন, তখন জিবরীল আলায়হিস সালাম তাঁর কাছে এসে বললেন, হে মুহাম্মাদ! আপনার বিশেষ সম্মান ও মর্যাদার বৈশিষ্ট্যর প্রেক্ষিতে আল্লাহ তা’আলা আমাকে আপনার খিদমাতে পাঠিয়ে আপনার হাল-অবস্থা জানতে চেয়েছেন। অথচ আপনার অবস্থা সম্পর্কে তিনি (আল্লাহ) আপনার চেয়ে অধিক অবগত আছেন। তবুও তিনি জানতে চেয়েছেন, আপনি এখন নিজের মধ্যে কিরূপ অনুভব করছেন? উত্তরে রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, হে জিবরীল। আমি নিজেকে ভারাক্রান্ত পাচ্ছি এবং নিজের মাঝে অস্থিরতা অনুভব করছি। এরপর সেদিন জিবরীল আলায়হিস সালাম চলে গেলেন। আবার দ্বিতীয় দিন এসে বিগত দিনের মতো প্রশ্ন করলেন, আর নবী (সা.) ও প্রথম দিনের মতো জবাব দিলেন। আবার জিবরীল আলায়হিস সালাম তৃতীয় দিন আসলেন এবং নবী (সা.) -কে প্রথম দিনের মতো প্রশ্ন করলেন, আর তিনিও প্রথম দিনের মতো একই উত্তর দিলেন। এই (তৃতীয়) দিন জিবরীল আলায়হিস সালাম-এর সাথে আসলেন ইসমাঈল নামে আর একজন ফেরেশতা।
তিনি ছিলেন এমন এক লক্ষ মালায়িকাহ্’র (ফেরেশতাদের) সর্দার, যাদের প্রত্যেকেই (স্বতন্ত্রভাবে) এক এক লক্ষ মালায়িকাহ্’র নেতা। সেই মালাক (ফেরেশতা)- নবী (সা.) -এর নিকটে আসার অনুমতি চাইলেন। অতঃপর নবী (সা.) - জিবরীল আলায়হিস সালাম-কে তার পরিচয় জিজ্ঞেস করলেন। বললেন, এই যে মালাকুল মাওত। ইনিও আপনার কাছে আসার অনুমতি চাচ্ছেন। তিনি আপনার পূর্বে কখনো মানুষের কাছে যেতে অনুমতি চাননি এবং আপনার পরেও আর কখনো কোন মানুষের কাছে আসতে অনুমতি চাবেন না। অতএব, তাঁকে প্রবেশের অনুমতি দিন। এমতাবস্থায় নবী (সা.) তাঁকে অনুমতি দিলেন, তখন তিনি নবী (সা.) -কে সালাম করে বললেন, হে মুহাম্মাদ! আল্লাহ তা’আলা আমাকে আপনার কাছে পাঠিয়েছেন। আপনি যদি আমাকে আপনার আত্মা কবয করার অনুমতি বা নির্দেশ দেন, তাহলে আমি আপনার আত্মা কবয করব। আর যদি আপনি আপনাকে ছেড়ে দিতে আমাকে নির্দেশ দেন, তাহলে আমি আপনাকে ছেড়ে দিব। তখন নবী (সা.) বললেন, হে মালাকুল মাওত! আপনি কি এমন করতে পারবেন? তিনি বললেন, হ্যা, আমি এভাবে আদিষ্ট হয়েছি। আর আমি এটাও আদিষ্ট হয়েছি যে, আমি যেন আপনার নির্দেশ মেনে চলি। বর্ণনাকারী বলেন, এ সময় নবী (সা.) জিবরীল আলায়হিস সালাম-এর দিকে দৃষ্টিবদ্ধ হলো, তখন জিবরীল আলায়হিস সালাম বললেন, হে মুহাম্মাদ! আল্লাহ তা’আলা আপনার সাক্ষাৎ লাভের জন্য একান্তভাবে উদগ্রীব। তখনই নবী (সা.) মালাকুল মাওতকে বললেন, যে জন্য আপনি আদিষ্ট হয়েছেন, তাই কার্যে পরিণত করুন, অতঃপর তিনি তাঁর আত্মা কবয করে ফেললেন। যখন রাসূলুল্লাহ (সা.) এ ইন্তিকাল করেন এবং একজন সান্তনাদানকারী আসেন, তখন তাঁরা গৃহের এক পার্শ্ব হতে এ আওয়াজ শুনতে পেলেন-“হে আহলে বায়ত! আপনাদের প্রতি আল্লাহর তরফ থেকে শান্তি, রহমত ও বরকত বর্ষিত হোক। আল্লাহর কিতাবে প্রত্যেকটি বিপদের সময় সান্ত্বনা ও ধৈর্যের উপাদান রয়েছে। আল্লাহ তা’আলা প্রত্যেক ধ্বংসের উত্তম বিনিময়দানকারী এবং প্রত্যেক হারানো বস্তুর ক্ষতিপূরণকারী। অতএব আপনারা একমাত্র আল্লাহকে ভয় করে চলুন এবং তাঁর কাছেই সদা কল্যাণের কামনা করুন। কারণ মূলত ঐ লোক বিপদগ্রস্ত যে সাওয়াব হতে বঞ্চিত।” অতঃপর আলী (রাঃ) বললেন, তোমরা কি জান এই সান্তনাবাণী প্রদানকারী লোকটি কে? ইনি হলেন, খিযির আলায়হিস সালাম। [ইমাম বায়হাক্কী (রহিমাহুল্লাহ) তাঁর “দালায়িলুন নুবুওয়্যাহ্” গ্রন্থে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন]

اَلْفصْلُ الثَّالِثُ (بَاب هِجْرَة أَصْحَابه صلى الله عَلَيْهِ وَسلم من مَكَّة ووفاته)

وَعَنْ جَعْفَرِ بْنِ مُحَمَّدٍ عَنْ أَبِيهِ أَنَّ رَجُلًا مِنْ قُرَيْشٍ دَخَلَ عَلَى أَبِيهِ عَلِيِّ بْنِ الْحُسَيْنِ فَقَالَ أَلَا أُحَدِّثُكَ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ؟ قَالَ: بَلَى حَدِّثْنَا عَنْ أَبِي الْقَاسِمِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: لَمَّا مَرَضِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَتَاهُ جِبْرِيلُ فَقَالَ: يَا مُحَمَّدُ إِنَّ اللَّهَ أَرْسَلَنِي إِلَيْكَ تَكْرِيمًا لَكَ وَتَشْرِيفًا لَكَ خَاصَّةً لَكَ يَسْأَلُكَ عَمَّا هُوَ أَعْلَمُ بِهِ مِنْكَ يَقُولُ: كَيْفَ تجدك؟ قَالَ: أجدُني يَا جِبْرِيل مغموماً وأجدني يَا جِبْرِيل مَكْرُوبًا . ثُمَّ جَاءَهُ الْيَوْمُ الثَّانِي فَقَالَ لَهُ ذَلِكَ فَرَدَّ عَلَيْهِ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَمَا رَدَّ أَوَّلَ يَوْمٍ ثُمَّ جَاءَهُ الْيَوْمَ الثَّالِثَ فَقَالَ لَهُ كَمَا قَالَ أَوَّلَ يَوْمٍ وَرَدَّ عَلَيْهِ كَمَا رَدَّ عَلَيْهِ وَجَاءَ مَعَهُ مَلَكٌ يُقَالُ لَهُ: إِسْمَاعِيلُ عَلَى مِائَةِ أَلْفِ مَلَكٍ كُلُّ مَلَكٍ عَلَى مِائَةِ أَلْفِ مَلَكٍ فَاسْتَأْذَنَ عَلَيْهِ فَسَأَلَهُ عَنْهُ. ثُمَّ قَالَ جِبْرِيل: هَذَا مَلَكُ الْمَوْتِ يَسْتَأْذِنُ عَلَيْكَ. مَا اسْتَأْذَنَ عَلَى آدَمِيٍّ قَبْلَكَ وَلَا يَسْتَأْذِنُ عَلَى آدَمِيٍّ بَعْدَكَ. فَقَالَ: ائْذَنْ لَهُ فَأَذِنَ لَهُ فَسَلَّمَ عَلَيْهِ ثُمَّ قَالَ يَا مُحَمَّدُ إِنَّ اللَّهَ أَرْسَلَنِي إِلَيْكَ فَإِنْ أَمَرْتَنِي أَنْ أَقْبِضَ رُوحَكَ قَبَضْتُ وَإِنْ أَمَرْتَنِي أَنْ أَتْرُكَهُ تَرَكْتُهُ فَقَالَ: وَتَفْعَلُ يَا مَلَكَ الْمَوْتِ؟ قَالَ: نَعَمْ بِذَلِكَ أُمرتُ وأُمرتُ أَن أطيعَك. قَالَ: فَنَظَرَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَى جِبْرِيل عَلَيْهِ السَّلَام فَقَالَ جِبْرِيلُ: يَا مُحَمَّدُ إِنَّ اللَّهَ قَدِ اشْتَاقَ إِلَى لِقَائِكَ فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِمَلَكِ الْمَوْتِ: «امْضِ لِمَا أُمِرْتَ بِهِ» فَقَبَضَ رُوحَهُ فَلَمَّا تُوُفِّيَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَجَاءَتِ التَّعْزِيَةُ سَمِعُوا صَوْتًا مِنْ نَاحِيَةِ الْبَيْتِ: السَّلَامُ عَلَيْكُمْ أَهْلَ الْبَيْتِ وَرَحْمَةُ اللَّهِ وَبَرَكَاتُهُ إِنَّ فِي اللَّهِ عَزَاءً مِنْ كُلِّ مُصِيبَةٍ وَخَلَفًا مِنْ كُلِّ هالكٍ ودَرَكاً من كلِّ فَائت فبالله فثقوا وَإِيَّاهُ فَارْجُوا فَإِنَّمَا الْمُصَابُ مَنْ حُرِمَ الثَّوَابَ. فَقَالَ عَلِيٌّ: أَتَدْرُونَ مَنْ هَذَا؟ هُوَ الْخَضِرُ عَلَيْهِ السَّلَامُ. رَوَاهُ الْبَيْهَقِيُّ فِي «دَلَائِلِ النُّبُوَّةِ»

اسنادہ ضعیف جذا ، رواہ البیھقی فی دلائل النبوۃ (7 / 267 ۔ 268) [و الشافعی فی السنن الماثورۃ (ص 334 ۔ 335 ح 390 روایۃ الطحاوی عن المزنی) و السھمی فی تاریخ جرجان (ص 363 ۔ 364)] * فیہ قاسم بن عبداللہ بن عمر بن حفص : متروک رماہ احمد بالکذب ۔
(ضَعِيف)

وعن جعفر بن محمد عن ابيه ان رجلا من قريش دخل على ابيه علي بن الحسين فقال الا احدثك عن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال بلى حدثنا عن ابي القاسم صلى الله عليه وسلم قال لما مرض رسول الله صلى الله عليه وسلم اتاه جبريل فقال يا محمد ان الله ارسلني اليك تكريما لك وتشريفا لك خاصة لك يسالك عما هو اعلم به منك يقول كيف تجدك قال اجدني يا جبريل مغموما واجدني يا جبريل مكروبا ثم جاءه اليوم الثاني فقال له ذلك فرد عليه النبي صلى الله عليه وسلم كما رد اول يوم ثم جاءه اليوم الثالث فقال له كما قال اول يوم ورد عليه كما رد عليه وجاء معه ملك يقال له اسماعيل على ماىة الف ملك كل ملك على ماىة الف ملك فاستاذن عليه فساله عنه ثم قال جبريل هذا ملك الموت يستاذن عليك ما استاذن على ادمي قبلك ولا يستاذن على ادمي بعدك فقال اىذن له فاذن له فسلم عليه ثم قال يا محمد ان الله ارسلني اليك فان امرتني ان اقبض روحك قبضت وان امرتني ان اتركه تركته فقال وتفعل يا ملك الموت قال نعم بذلك امرت وامرت ان اطيعك قال فنظر النبي صلى الله عليه وسلم الى جبريل عليه السلام فقال جبريل يا محمد ان الله قد اشتاق الى لقاىك فقال النبي صلى الله عليه وسلم لملك الموت امض لما امرت به فقبض روحه فلما توفي رسول الله صلى الله عليه وسلم وجاءت التعزية سمعوا صوتا من ناحية البيت السلام عليكم اهل البيت ورحمة الله وبركاته ان في الله عزاء من كل مصيبة وخلفا من كل هالك ودركا من كل فاىت فبالله فثقوا واياه فارجوا فانما المصاب من حرم الثواب فقال علي اتدرون من هذا هو الخضر عليه السلام رواه البيهقي في دلاىل النبوةاسنادہ ضعیف جذا رواہ البیھقی فی دلاىل النبوۃ 7 267 ۔ 268 و الشافعی فی السنن الماثورۃ ص 334 ۔ 335 ح 390 روایۃ الطحاوی عن المزنی و السھمی فی تاریخ جرجان ص 363 ۔ 364 فیہ قاسم بن عبداللہ بن عمر بن حفص متروک رماہ احمد بالکذب ۔ضعيف

ব্যাখ্যা: (وأجدني يَا جِبْرِيل مَكْرُوبًا) অর্থাৎ চিন্তিত, আর আমি আমার দুঃখ ও চিন্তাগুলো কেবল আমার কাছে সোপর্দ করলাম। আর আমি সর্বাবস্থায় বলি, আলহামদুলিল্লা-হ।
(لِمَا أُمِرْتَ بِهِ) অর্থাৎ আর তাতে বিলম্ব করবেন না। ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, এখান থেকে ইবনুল জাওযী (রহিমাহুল্লাহ) “কিতাবুল ওয়াফা” কিতাবে উল্লেখ করেছেন। তারপরে জিবরীল আলায়হিস সালাম বলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনার ওপর শান্তি বর্ষিত হোক। এটাই আমার সর্বশেষ পৃথিবীতে আগমন। এ দুনিয়ায় আপনিই আমার প্রয়োজন ছিলেন। এই বলেই তার রূহ কবয করে নেয়া হয় (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্নাইলায়হি র-জিউন)। (মিরকাতুল মাফাতীহ)

(مِنْ كُلِّ مُصِيبَةٍ) অর্থাৎ এ ব্যাপারে মহান আল্লাহর বাণী-
...وَ بَشِّرِ الصّٰبِرِیۡنَ ﴿۱۵۵﴾ الَّذِیۡنَ اِذَاۤ اَصَابَتۡهُمۡ مُّصِیۡبَۃٌ.. ﴿۱۵۶﴾ؕ “আর আপনি ধৈর্যশীলদেরকে সুসংবাদ দিন। যখন তাদের কোন বিপদ আসে”- (সূরা আল বাকারাহ ২: ১৫৫-১৫৬)। অথবা তার সাওয়াবের বিনিময় করে দেন তার কষ্টের ও পরিশ্রমের বিনিময়ে।
“আন নিহায়াহ্" গ্রন্থকার বলেন, আর হাদীসে এসেছে, “যে আল্লাহর সান্ত্বনায় সান্ত্বনা পায় না।” কথিত আছে যে, তিনি এ হাদীসে তা'যীয়াহ বলতে সান্তনাকে ও বিপদে ধৈর্য ধরাকে বুঝিয়েছেন। আর এ কথা বলা যে, ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলায়হি র-জিউন, অর্থাৎ- নিশ্চয় আমরা আল্লাহর জন্য আর আমরা তার নিকটেই ফিরে যাব।
ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, এখান থেকেই তার কথায় (আল্লাহর) মুযাফ বা সম্বন্ধনীয় পদ নির্ধারণ করা বৈধ। আল্লাহ সম্পর্কে অর্থাৎ নিশ্চয় মহান আল্লাহর সাক্ষাতের ক্ষেত্রে প্রত্যেক বিপদে-আপদে ধৈর্য ধারণ করা ও সান্ত্বনা গ্রহণ করা। এ কথার উদ্দেশ্য হলো আল্লাহর (সন্তুষ্টির) জন্যই সকল ক্ষেত্রে ধৈর্য ধারণ ও সান্ত্বনা লাভ করা। (মিরকাতুল মাফাতীহ)।


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৯: চারিত্রিক গুণাবলি ও মর্যাদাসমূহ (كتاب الْفَضَائِل وَالشَّمَائِل)