৫৯৬৮

পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ - রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর ওফাতের পর সাহাবীদের মক্কাহ্ হতে হিজরত করা সম্পর্কে

৫৯৬৮-[১৩] আবূ সাঈদ আল খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) তাঁর শেষ রোগের সময় একদিন আমরা মসজিদে বসছিলাম, তখন তিনি স্বীয় মাথায় একখানা কাপড় বাঁধা অবস্থায় বের হয়ে আমাদের সামনে এসে সরাসরি মিম্বারে গিয়ে বসলেন। আর আমরাও তার অনুকরণে কাছে গিয়ে বসলাম। অতঃপর তিনি বললেন, আমি সেই মহান সত্তার শপথ করে বলছি, যার হাতে আমার প্রাণ! নিশ্চয় আমি আমার এ স্থান হতে হাওযে কাওসার দেখতে পাচ্ছি। তারপর বললেন, আল্লাহর কোন এক বান্দার সম্মুখে দুনিয়া ও তার সাজসজ্জা উপস্থিত করা হয়; কিন্তু সে পরকালকে অগ্রাধিকার দেয়। আবূ সা’ঈদ (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর এ কথাটির ব্যাখ্যা আবূ বকর সিদ্দিক (রাঃ) ছাড়া আর কেউ বুঝতে পারেননি। সাথে সাথে তার চক্ষুদ্বয় হতে অশ্রু প্রবাহিত হতে লাগল এবং তিনি কেঁদে দিলেন। অতঃপর বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! বরং আমরা আমাদের পিতামাতা ও আমাদের জানমালসমূহ আপনার জন্য উৎসর্গ করছি। আবূ সাঈদ (রাঃ) বলেন, তারপর তিনি মিম্বার হতে নেমে আসলেন এবং এ যাবৎ আর কখনো তিনি (সা.) তার উপর দাঁড়াননি। (দারিমী)

اَلْفصْلُ الثَّالِثُ (بَاب هِجْرَة أَصْحَابه صلى الله عَلَيْهِ وَسلم من مَكَّة ووفاته)

وَعَن أبي سعيد الْخُدْرِيّ قَالَ: خَرَجَ عَلَيْنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي مَرَضِهِ الَّذِي مَاتَ فِيهِ وَنَحْنُ فِي الْمَسْجِدِ عَاصِبًا رَأْسَهُ بِخِرْقَةٍ حَتَّى أَهْوَى نَحْوَ الْمِنْبَرِ فَاسْتَوَى عَلَيْهِ وَاتَّبَعْنَاهُ قَالَ: «وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ إِنِّي؟ لَأَنْظُرُ إِلَى الْحَوْضِ مِنْ مَقَامِي هَذَا» ثُمَّ قَالَ: «إِنَّ عَبْدًا عُرِضَتْ عَلَيْهِ الدُّنْيَا وَزِينَتُهَا فَاخْتَارَ الْآخِرَةَ» قَالَ: فَلَمْ يَفْطِنْ لَهَا أَحَدٌ غَيْرُ أَبِي بَكْرٍ فَذَرَفَتْ عَيْنَاهُ فَبَكَى ثُمَّ قَالَ: بَلْ نَفْدِيكَ بِآبَائِنَا وأمَّهاتِنا وأنفسنا وأموالِنا يَا رسولَ الله قَالَ: ثُمَّ هَبَطَ فَمَا قَامَ عَلَيْهِ حَتَّى السَّاعَة. رَوَاهُ الدَّارمِيّ

اسنادہ حسن ، رواہ الدارمی (1 / 36 ح 78) ۔
(صَحِيح)

وعن ابي سعيد الخدري قال خرج علينا رسول الله صلى الله عليه وسلم في مرضه الذي مات فيه ونحن في المسجد عاصبا راسه بخرقة حتى اهوى نحو المنبر فاستوى عليه واتبعناه قال والذي نفسي بيده اني لانظر الى الحوض من مقامي هذا ثم قال ان عبدا عرضت عليه الدنيا وزينتها فاختار الاخرة قال فلم يفطن لها احد غير ابي بكر فذرفت عيناه فبكى ثم قال بل نفديك باباىنا وامهاتنا وانفسنا واموالنا يا رسول الله قال ثم هبط فما قام عليه حتى الساعة رواه الدارمياسنادہ حسن رواہ الدارمی 1 36 ح 78 ۔صحيح

ব্যাখ্যা: অন্য বর্ণনায় এসেছে যে, জিবরীল আলায়হিস সালাম রাসূল (সা.) -এর দরবারে এসে বললেন যে, মহান আল্লাহ বলেছেন: আপনি যদি এখন দুনিয়ায় আরো থাকতে চান তাহলে থাকতে পারেন এবং দুনিয়ার ধনভাণ্ডার আপনাকে প্রদান করা হবে, আর তার পাহাড়সমূহকে আপনার জন্য স্বর্ণ-চাদিতে পরিণত করা হবে, তবে আখিরাতে আপনার জন্য যে পরিমাণ মর্যাদা, প্রতিদান ও নি'আমাত নির্ধারিত আছে তাতে সামান্য পরিমাণ হ্রাস পাবে। আবার আপনি যদি চান যে, আমাদের নিকট আসবেন তাহলে আসতে পারেন। এটা শুনে নবী (সা.) মাথা ঝুঁকালেন যেমন গুরুত্বপূর্ণ কোন সিদ্ধান্ত ঘোষণার পূর্বে গবেষকরা মাথা ঝুঁকিয়ে চিন্তা করে থাকেন। এটাও বর্ণনা করা হয় যে, সে সময় রাসূল (সা.) -এর গোলামদের মধ্য থেকে একজন গোলাম সেখানে উপস্থিত ছিল। সে এ কথা শুনল যে, রাসূল (সা.) -কে ধনভাণ্ডার ও স্বর্ণ-রৌপ্যের বিশাল পরিমাণসহ দুনিয়াতে থাকার ইখতিয়ার দেয়া হয়েছে তখন সে বলল যে, হে আল্লাহর রাসূল! এতে কি এমন ক্ষতি আছে যদি আপনি আরো কিছু দিন এ দুনিয়াতে থাকার ইচ্ছা করেন, আপনার ওয়াসীলায় প্রাপ্ত ধনভাণ্ডার হতে আমরাও আরাম-আয়েশে জীবনযাপন করব।
কিন্তু তিনি (সা.) সে কথায় কর্ণপাত না করে জিবরীল আলায়হিস সালাম এর উদ্দেশে জানতে চাইলেন যে, উপঢৌকন ও ইখতিয়ার প্রদানের আসল উদ্দেশ্য কি? আর যখন তিনি (সা.) বুঝলেন যে, মহান আল্লাহর উদ্দেশ্য হলো তার নিকট আহ্বান করা তখন তিনি বললেন, সেখানে আমি আসতে চাচ্ছি। এভাবেই তিনি (সা.) চিরকালের আখিরাতকে ইখতিয়ার করলেন এবং ধ্বংসশীল দুনিয়াকে উপেক্ষা করলেন। এরই ভিত্তিতে কোন এক ব্যক্তি বলেন যে, যদি কোন বুদ্ধিমান ব্যক্তিকে এমন দু'টি পাত্র হতে একটিকে বাছাই করার ইখতিয়ার দেয়া যায় একটি পাত্র মাটির তৈরি কিন্তু দীর্ঘস্থায়ী এবং অন্য পাত্রটি স্বর্ণের কিন্তু তা ক্ষণস্থায়ী তাহলে বুদ্ধিমান ব্যক্তি নিশ্চয় ঐ ক্ষণস্থায়ী পাত্রের উপর তথা স্বর্ণের পাত্রের উপর মাটির পাত্র তথা দীর্ঘস্থায়ী পাত্রকে প্রাধান্য দিবে। আর কোথাও যদি অবস্থা উল্টা হয় অর্থাৎ স্বর্ণের পাত্র দীর্ঘস্থায়ী পাত্র হয় আর মাটির পাত্র ক্ষণস্থায়ী পাত্র হয় তাহলে কাউকে যদি কোন একটি পছন্দ করার ইখতিয়ার দেয়া হয় তখন শুধু কোন নির্বোধ ও বেকুফ ব্যক্তিই স্বর্ণের পাত্র পছন্দ না করে মাটির পাত্র পছন্দ করবে।

অতঃএব জানা উচিত যে, আখিরাতের উদাহরণ হলো ঐ দীর্ঘস্থায়ী পাত্র যা স্বর্ণের আর দুনিয়ার উদাহরণ হলো ঐ ক্ষণস্থায়ী পাত্র যা মাটির এবং ধ্বংসশীল। আল কুরআনুল কারীম ঐ বাস্তবতার দিকে এভাবে ইঙ্গিত করেছে যে, (وَ الۡاٰخِرَۃُ خَیۡرٌ وَّ اَبۡقٰی) “আর আখিরাত হলো উত্তম ও উচ্চ এবং চিরকাল বিদ্যমান থাকবে”- (সূরা আল আ'লা- ৮৭: ১৭)। (মাযাহিরে হাক শারহে মিশকাত ৭ম খণ্ড, ২১১-২১২ পৃষ্ঠা)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৯: চারিত্রিক গুণাবলি ও মর্যাদাসমূহ (كتاب الْفَضَائِل وَالشَّمَائِل)