পরিচ্ছেদঃ ১৪. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - অনুগ্রহ ও স্বজনে সদাচার

৪৯৩৮-[২৮] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ তিন ব্যক্তি পথ চলছিলেন। হঠাৎ তাঁদেরকে বৃষ্টিতে পেলে তাঁরা এক পর্বতের গুহায় আশ্রয় নিলেন। এ সময় হঠাৎ পর্বত থেকে একটি প্রকাণ্ড পাথর এসে গুহার মুখে পতিত হলো এবং তাঁদের বের হওয়ার পথ বন্ধ হয়ে গেল। তাঁদের মধ্য থেকে একজন অপরজনকে বললেন, তোমরা তোমাদের কোন নেক কাজ দেখো, যা একমাত্র আল্লাহ তা’আলার উদ্দেশেই করেছ। আর সে কাজকে উপলক্ষ করে আল্লাহ তা’আলার কাছে এ বিপদ থেকে মুক্তির প্রার্থনা করো। এমনও হতে পারে যে, আল্লাহ তা’আলা হয়তো এ পাথর দূর করে দেবেন।

তখন তাঁদের একজন বললেনঃ হে আল্লাহ! আমার অতি বৃদ্ধ মাতা-পিতা ছিলেন এবং কয়েকটি ছোট বাচ্চা ছিল। আমি ছাগল চরাতাম। যখন সন্ধ্যায় তাদের নিকট ফিরে আসতাম, তখন দুধ দোহন করতাম। আমার সন্তানদের পান করানোর আগেই আমার পিতা-মাতাকে দুধ পান করাতাম। ঘটনাক্রমে একদিন চারণ-ক্ষেত্র আমাকে দূরে নিয়ে গেল। অর্থাৎ- ছাগল চরাতে চরাতে এতটা দূরে চলে গেলাম যে, বাড়িতে পৌঁছতে সন্ধ্যা হয়ে গেল। দেখলাম, আমার মা-বাবা উভয়ে ঘুমিয়ে পড়েছেন। আমি প্রতিদিনের মতো আজও দুধ দোহন করলাম এবং দুধের পাত্র নিয়ে মা-বাবার কাছে এসে তাঁদের শিয়রের কাছে দাঁড়িয়ে রইলাম। আমি তাঁদেরকে ঘুম থেকে জাগানো ভালো মনে করলাম না এবং অপছন্দ করলাম বাচ্চাগুলোকে দুধ পান করাতে তাঁদের পূর্বে, অথচ বাচ্চাগুলো আমার পায়ের কাছে ক্ষুধায় কাঁদছিল। সকাল হওয়া পর্যন্ত আমার ও তাদের এ অবস্থা ছিল। হে আল্লাহ! যদি তুমি জেনে থাকো যে, আমি এ কাজ একমাত্র তোমার সন্তুষ্টির জন্য করেছি, তবে আমাদের জন্য এতটুকু পথ খুলে দাও, যেন আকাশ দেখতে পাই। তখন আল্লাহ তা’আলা পাথরকে এতটুকু সরিয়ে দিলেন যে, আকাশ দেখা যেতে লাগল।

দ্বিতীয় ব্যক্তি বললেনঃ হে আল্লাহ! আমার এক চাচাতো বোন ছিল। আমি তাকে অত্যধিক ভালোবাসতাম, যতটা কোন পুরুষ কোন মহিলাকে ভালোবাসতে পারে। আমি তাকে উপভোগ করতে চাইলাম। সে এটা অস্বীকার করল, যতক্ষণ না আমি তাকে একশ’ দীনার দেই। তখন আমি জোর প্রচেষ্টা চালালাম এবং একশ’ দীনার যোগাড় করে তার সাথে সাক্ষাৎ করলাম। যখন তার দু’পায়ের মধ্যখানে হাঁটু গেড়ে বসলাম, সে বলল : হে আল্লাহর বান্দা! আল্লাহকে ভয় করো, মোহর অর্থাৎ- কুমারিত্ব নষ্ট করো না। তৎক্ষণাৎ আমি দাঁড়ালাম। হে আল্লাহ! যদি তুমি জেনে থাকো যে, আমি এ কাজ একমাত্র তোমার সন্তুষ্টির জন্য করেছি, তবে আমাদের জন্য পথ খুলে দাও। তখন আল্লাহ তা’আলা পাথর আরো কিঞ্চিৎ সরিয়ে দিলেন।

তৃতীয় ব্যক্তি বললেনঃ হে আল্লাহ! আমি এক ব্যক্তিকে এক ’’ফারক’’ পরিমাণ খাদ্যের বিনিময়ে মজুর নিয়োগ করলাম। যখন সে ব্যক্তি নিজ কাজ সমাধা করে বলল : আমার পাওনা আমাকে দিয়ে দাও। আমি তাকে প্রাপ্য দিলাম। সে তা ফেলে চলে গেল, তার প্রতি ভ্রূক্ষেপ করল না। আমি তার পাওনা দ্বারা চাষাবাদ আরম্ভ করলাম। সেটার আয় দ্বারা অনেকগুলো গরু ও রাখাল যোগাড় করলাম। তখন একদিন লোকটি আমার কাছে এসে বলল : আল্লাহকে ভয় করো, আমার প্রতি অবিচার করো না। আমাকে আমার পাওনা দিয়ে দাও। আমি বললামঃ এ গরুগুলো এবং তার রাখালসমূহ নিয়ে যাও। সে বলল : আল্লাহকে ভয় করো, আমার সাথে ঠাট্টা করো না। তখন আমি বললামঃ তোমার সাথে ঠাট্টা করছি না। ঐ গরু ও রাখালগুলো নিয়ে যাও। সুতরাং সে ওগুলো নিয়ে চলে গেল। হে আল্লাহ! যদি তুমি জানো যে, এ কাজ আমি শুধু তোমার সন্তুষ্টির উদ্দেশেই করেছি, তবে এখনো যতটুকু বাকি, সে রাস্তা খুলে দাও। তখন আল্লাহ তা’আলা পাথর সরিয়ে রাস্তা খুলে দিলেন। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

عَنِ ابْنِ عُمَرَ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: بَيْنَمَا ثَلَاثَة نفر يماشون أَخَذَهُمُ الْمَطَرُ فَمَالُوا إِلَى غَارٍ فِي الْجَبَلِ فَانْحَطَّتْ عَلَى فَمِ غَارِهِمْ صَخْرَةٌ مِنَ الْجَبَلِ فَأَطْبَقَتْ عَلَيْهِمْ فَقَالَ بَعْضُهُمْ لِبَعْضٍ: انْظُرُوا أَعْمَالًا عَمِلْتُمُوهَا لِلَّهِ صَالِحَةً فَادْعُوا اللَّهَ بِهَا لَعَلَّهُ يُفَرِّجُهَا. فَقَالَ أَحَدُهُمْ: اللَّهُمَّ إِنَّهُ كَانَ لِي وَالِدَانِ شَيْخَانِ كَبِيرَانِ وَلِي صِبْيَةٌ صِغَارٌ كُنْتُ أَرْعَى عَلَيْهِمْ فَإِذَا رُحْتُ عَلَيْهِمْ فَحَلَبْتُ بَدَأْتُ بِوَالِدَيَّ أَسْقِيهِمَا قَبْلَ وَلَدِي وَإِنَّهُ قَدْ نَأَى بِي الشَّجَرُ فَمَا أَتَيْتُ حَتَّى أَمْسَيْتُ فَوَجَدْتُهُمَا قَدْ نَامَا فَحَلَبْتُ كَمَا كُنْتُ أَحْلُبُ فَجِئْتُ بِالْحِلَابِ فَقُمْتُ عِنْدَ رُؤُوسِهِمَا أَكْرَهُ أَنْ أُوقِظَهُمَا وَأَكْرَهُ أَنْ أَبْدَأَ بِالصِّبْيَةِ قَبْلَهُمَا وَالصِّبْيَةُ يَتَضَاغَوْنَ عِنْدَ قَدَمَيَّ فَلَمْ يَزَلْ ذَلِكَ دَأْبِي وَدَأْبَهُمْ حَتَّى طَلَعَ الْفَجْرُ فَإِنْ كُنْتَ تَعْلَمُ أَنِّي فَعَلْتُ ذَلِكَ ابْتِغَاءَ وَجْهِكَ فَافْرُجْ لَنَا فُرْجَةً نَرَى مِنْهَا السَّمَاءَ فَفَرَجَ اللَّهُ لَهُمْ حَتَّى يرَوْنَ السماءَ
قَالَ الثَّانِي: اللَّهُمَّ إِنَّه كَانَ لِي بِنْتُ عَمٍّ أُحِبُّهَا كَأَشَدِّ مَا يُحِبُّ الرِّجَالُ النِّسَاءَ فَطَلَبْتُ إِلَيْهَا نَفْسَهَا فَأَبَتْ حَتَّى آتيها بِمِائَة دِينَار فلقيتها بِهَا فَلَمَّا قَعَدْتُ بَيْنَ رِجْلَيْهَا. قَالَتْ: يَا عَبْدَ اللَّهِ اتَّقِ اللَّهَ وَلَا تَفْتَحِ الْخَاتَمَ فَقُمْتُ عَنْهَا. اللَّهُمَّ فَإِنْ كُنْتَ تَعْلَمُ أَنِّي فَعَلْتُ ذَلِكَ ابْتِغَاءَ وَجْهِكَ فَافْرُجْ لَنَا مِنْهَا فَفَرَجَ لَهُمْ فُرْجَةً
وَقَالَ الْآخَرُ: اللَّهُمَّ إِنِّي كُنْتُ اسْتَأْجَرْتُ أَجِيرًا بِفَرْقِ أَرُزٍّ فَلَمَّا قَضَى عَمَلَهُ قَالَ: أَعْطِنِي حَقِّي. فَعَرَضْتُ عَلَيْهِ حَقَّهُ فَتَرَكَهُ وَرَغِبَ عَنْهُ فَلَمْ أَزَلْ أَزْرَعُهُ حَتَّى جَمَعْتُ مِنْهُ بَقَرًا وَرَاعِيَهَا فَجَاءَنِي فَقَالَ: اتَّقِ اللَّهَ وَلَا تَظْلِمْنِي وَأَعْطِنِي حَقِّي. فَقُلْتُ: اذْهَبْ إِلَى ذَلِكَ الْبَقْرِ وَرَاعِيهَا فَقَالَ: اتَّقِ اللَّهَ وَلَا تَهْزَأْ بِي. فَقُلْتُ: إِنِّي لَا أَهْزَأُ بكَ فخذْ ذلكَ البقرَ وراعيها فَأخذ فَانْطَلَقَ بِهَا. فَإِنْ كُنْتَ تَعْلَمُ أَنِّي فَعَلْتُ ذَلِكَ ابْتِغَاءَ وَجْهِكَ فَافْرُجْ مَا بَقِيَ فَفَرَجَ الله عَنْهُم . مُتَّفق عَلَيْهِ

عن ابن عمر عن النبي صلى الله عليه وسلم قال: بينما ثلاثة نفر يماشون أخذهم المطر فمالوا إلى غار في الجبل فانحطت على فم غارهم صخرة من الجبل فأطبقت عليهم فقال بعضهم لبعض: انظروا أعمالا عملتموها لله صالحة فادعوا الله بها لعله يفرجها. فقال أحدهم: اللهم إنه كان لي والدان شيخان كبيران ولي صبية صغار كنت أرعى عليهم فإذا رحت عليهم فحلبت بدأت بوالدي أسقيهما قبل ولدي وإنه قد نأى بي الشجر فما أتيت حتى أمسيت فوجدتهما قد ناما فحلبت كما كنت أحلب فجئت بالحلاب فقمت عند رؤوسهما أكره أن أوقظهما وأكره أن أبدأ بالصبية قبلهما والصبية يتضاغون عند قدمي فلم يزل ذلك دأبي ودأبهم حتى طلع الفجر فإن كنت تعلم أني فعلت ذلك ابتغاء وجهك فافرج لنا فرجة نرى منها السماء ففرج الله لهم حتى يرون السماء قال الثاني: اللهم إنه كان لي بنت عم أحبها كأشد ما يحب الرجال النساء فطلبت إليها نفسها فأبت حتى آتيها بمائة دينار فلقيتها بها فلما قعدت بين رجليها. قالت: يا عبد الله اتق الله ولا تفتح الخاتم فقمت عنها. اللهم فإن كنت تعلم أني فعلت ذلك ابتغاء وجهك فافرج لنا منها ففرج لهم فرجة وقال الآخر: اللهم إني كنت استأجرت أجيرا بفرق أرز فلما قضى عمله قال: أعطني حقي. فعرضت عليه حقه فتركه ورغب عنه فلم أزل أزرعه حتى جمعت منه بقرا وراعيها فجاءني فقال: اتق الله ولا تظلمني وأعطني حقي. فقلت: اذهب إلى ذلك البقر وراعيها فقال: اتق الله ولا تهزأ بي. فقلت: إني لا أهزأ بك فخذ ذلك البقر وراعيها فأخذ فانطلق بها. فإن كنت تعلم أني فعلت ذلك ابتغاء وجهك فافرج ما بقي ففرج الله عنهم . متفق عليه

ব্যাখ্যাঃ অত্র হাদীসটি সৎ ‘আমলের মাধ্যমে আল্লাহর সাহায্য চাওয়ার এক উজ্জ্বল নমুনা। মানুষ বিপদে পড়লে আল্লাহর নিকট দু‘আ করবে। বৃষ্টি প্রার্থনাসহ সব দু‘আর ক্ষেত্রেই। নিজ নিজ সৎ ‘আমলের মাধ্যমে আল্লাহর নিকট দু‘আ করবে। উক্ত তিন ব্যক্তি নিজ নিজ সৎ ‘আমলের মাধ্যমে দু‘আ করলে আল্লাহ তা‘আলা তাদের দু‘আ কবুল করলেন।

অত্র হাদীস থেকে পিতা-মাতার সেবার বিষয়টি পরিষ্কার বুঝা যাচ্ছে, তাদের সেবা করলে আল্লাহ তা‘আলার অনুগ্রহ পাওয়া যায়। আর পিতা-মাতাকে সন্তানাদির চেয়ে বেশী অগ্রাধিকার দিতে হবে এমনকি স্ত্রীর চেয়েও বেশী।

অত্র হাদীস থেকে আরো বুঝা যায় যে, আমাদের সব সময় হারাম কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে, যদিও কেউ তা না দেখে। কেউ না দেখলেও আল্লাহ দেখেন। হারাম কাজ ছাড়তে হবে কেবল আল্লাহর উদ্দেশে এবং তাকে খুশি করার লক্ষ্যে।

অত্র হাদীস থেকে আরো বুঝা যায় নিজ কাজের জন্য কেউ কর্মচারী নিয়োগ দিলে কর্মচারীর সাথে সৎ ব্যবহার করতে হবে, তার সাথে কৃত অঙ্গীকার রক্ষা করতে হবে। আমানাতদারিতার প্রমাণ দিতে হবে এবং কর্ম ক্ষেত্রে উদারতা সহনশীলতার পরিচয় দিতে হবে।

অত্র হাদীসের মৌলিক শিক্ষা হলো তাওয়াস্সুল হলো সৎ আমলের মাধ্যমে দু‘আ করা, এই দু‘আ আল্লাহ কবুল করেন। (শারহে মুসলিম ১৭ খন্ড, হাঃ ২৭৪৩)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৫: শিষ্টাচার (كتاب الآداب)

পরিচ্ছেদঃ ১৪. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - অনুগ্রহ ও স্বজনে সদাচার

৪৯৩৯-[২৯] মু’আবিয়াহ্ ইবনু জাহিমাহ্ (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, তাঁর পিতা জাহিমাহ্ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এসে জিজ্ঞেস করলেনঃ হে আল্লাহর রসূল! আমি জিহাদে অংশগ্রহণের ইচ্ছা করি, এজন্য আপনার সাথে পরামর্শ করতে এসেছি। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জিজ্ঞেস করলেনঃ তোমার মা জীবিত আছেন কী? তিনি বললেনঃ জ্বী হ্যাঁ। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ মায়ের সেবাকেই অবলম্বন করো। কেননা জান্নাত তাঁর পায়ের কাছে। (আহমাদ, নাসায়ী ও বায়হাক্বী শু’আবুল ঈমানে বর্ণনা করেছেন।)[1]

وَعَن معاويةَ بن جاهِمةُ أَنَّ جَاهِمَةَ جَاءَ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ أَرَدْتُ أَنْ أَغْزُوَ وَقَدْ جِئْتُ أَسْتَشِيرُكَ. فَقَالَ: «هَلْ لَكَ مِنْ أُمٍّ؟» قَالَ: نَعَمْ. قَالَ: «فَالْزَمْهَا فَإِنَّ الْجَنَّةَ عِنْدَ رِجْلِهَا» . رَوَاهُ أَحْمَدُ وَالنَّسَائِيُّ وَالْبَيْهَقِيّ فِي «شعب الْإِيمَان»

وعن معاوية بن جاهمة أن جاهمة جاء إلى النبي صلى الله عليه وسلم فقال: يا رسول الله أردت أن أغزو وقد جئت أستشيرك. فقال: «هل لك من أم؟» قال: نعم. قال: «فالزمها فإن الجنة عند رجلها» . رواه أحمد والنسائي والبيهقي في «شعب الإيمان»

হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৫: শিষ্টাচার (كتاب الآداب)

পরিচ্ছেদঃ ১৪. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - অনুগ্রহ ও স্বজনে সদাচার

৪৯৪০-[৩০] ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, জনৈকা মহিলা আমার বিবাহ বন্ধনে ছিল, আমি তাকে ভালোবাসতাম। অথচ আমার পিতা ’উমার তাকে ঘৃণা করতেন। তিনি আমাকে বললেনঃ তুমি এ মহিলাকে ত্বলাক (তালাক) দিয়ে দাও। আমি অস্বীকার করলাম। তখন আমার পিতা ’উমার (রাঃ) রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এলেন এবং তাঁকে ঘটনা বললেন। তখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেনঃ তুমি তাকে ত্বলাক (তালাক) দিয়ে দাও। (তিরমিযী ও আবূ দাঊদ)[1]

وَعَن ابنِ
عمَرَ قَالَ: كَانَتْ تَحْتِي امْرَأَةٌ أُحِبُّهَا وَكَانَ عُمَرُ يَكْرَهُهَا. فَقَالَ لِي: طَلِّقْهَا فَأَبَيْتُ. فَأَتَى عُمَرُ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَذَكَرَ ذَلِكَ لَهُ فَقَالَ لِي رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «طَلِّقْهَا» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَأَبُو دَاوُد

وعن ابن عمر قال: كانت تحتي امرأة أحبها وكان عمر يكرهها. فقال لي: طلقها فأبيت. فأتى عمر رسول الله صلى الله عليه وسلم فذكر ذلك له فقال لي رسول الله صلى الله عليه وسلم: «طلقها» . رواه الترمذي وأبو داود

ব্যাখ্যাঃ এ বিষয়ে ইতোপূর্বে ৪৯২৮ নং হাদীসের ব্যাখ্যায় আলোচনা করা হয়েছে।

অত্র হাদীস থেকেও বুঝা গেল যে, যদি পিতা স্ত্রীকে ত্বলাক দিতে বলেন তাহলে ঐ স্ত্রীকে ত্বলাক দিয়ে দিবে। আমাদের উচিত পিতা-মাতাকেই অগ্রাধিকার দেয়া যতক্ষণ না তারা আমাদেরকে আল্লাহ এবং তার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নাফরমানী হয় এমন বিষয়ে আদেশ দেন। (তুহফাতুল আহওয়াযী ৫ম খন্ড, হাঃ ১১৮৯)

পিতা-মাতার অন্যায় অবৈধ নির্দেশ হলে আলোচনার মাধ্যমে তাদের বুঝিয়ে সমন্বয় করে নিতে হবে।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৫: শিষ্টাচার (كتاب الآداب)

পরিচ্ছেদঃ ১৪. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - অনুগ্রহ ও স্বজনে সদাচার

৪৯৪১-[৩১] আবূ উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, জনৈক ব্যক্তি রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করল : হে আল্লাহর রসূল! সন্তানের ওপর মা-বাবার কি দাবি আছে? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ তাঁরা দু’জন তোমার জান্নাত ও জাহান্নাম। (ইবনু মাজাহ)[1]

وَعَن أبي
أُمامةَ أَنَّ رَجُلًا قَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ مَا حَقُّ الْوَالِدَيْنِ عَلَى وَلَدِهِمَا؟ قَالَ: «هُمَا جَنَّتُكَ ونارُكَ» . رَوَاهُ ابنُ مَاجَه

وعن أبي أمامة أن رجلا قال: يا رسول الله ما حق الوالدين على ولدهما؟ قال: «هما جنتك ونارك» . رواه ابن ماجه

ব্যাখ্যাঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট জনৈক সাহাবী এসে প্রশ্ন করলেন, হে আল্লাহর নবী! পিতা-মাতার হক কি? নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তারা তোমার জান্নাত তারা তোমার জাহান্নাম, অর্থাৎ তাদের সেবা কর তারা যদি রাজি থাকেন তাহলে আল্লাহ তোমাকে তার জান্নাত দান করবেন। পক্ষান্তরে তাদের কষ্ট দিলে আল্লাহ তোমার জন্য তার জাহান্নাম প্রস্তুত করে রেখেছেন। (ইবনু মাজাহ ৩য় খন্ড, হাঃ ৩৬৬২)


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৫: শিষ্টাচার (كتاب الآداب)

পরিচ্ছেদঃ ১৪. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - অনুগ্রহ ও স্বজনে সদাচার

৪৯৪২-[৩২] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন কোন বান্দার মাতা-পিতা অথবা তাদের যে কোন একজন মৃত্যুবরণ করে এমন অবস্থায় যে, সে তাঁদের অবাধ্য। অতঃপর তাঁদের মৃত্যুর পর সে অবাধ্য পুত্র তাঁদের জন্য দু’আ ও ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকে, তখন আল্লাহ তা’আলা তাকে পুণ্যবানদের সাথে লিপিবদ্ধ করেন।[1]

وَعَنْ أَنَسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ الْعَبْدَ لَيَمُوتُ وَالِدَاهُ أَوْ أَحَدُهُمَا وَإِنَّهُ لَهُمَا لَعَاقٌّ فَلَا يَزَالُ يَدْعُو لَهُمَا وَيَسْتَغْفِرُ لَهُمَا حَتَّى يَكْتُبَهُ اللَّهُ بارا»

وعن أنس قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «إن العبد ليموت والداه أو أحدهما وإنه لهما لعاق فلا يزال يدعو لهما ويستغفر لهما حتى يكتبه الله بارا»

ব্যাখ্যাঃ পিতা-মাতার অবাধ্যচারী বড় ধরনের পাপী। মানুষ অজ্ঞতার কারণেই পিতা-মাতার অবাধ্যচারী হয়ে পাপী হয়। অনেক পাপাচারীকে পরবর্তী জীবনে তাওবাহ্ করে পাপ থেকে ফিরে আসতে এবং নেককার হতে দেখা যায়। অনুরূপ মাতা-পিতার অবাধ্যাচারীর পিতা-মাতার মৃত্যুর পর তার তাওবাহ্ ও ক্ষমার পথ একে করেই রুদ্ধ হয়ে যায় না। সন্তান যদি পরবর্তী জীবনে অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহর কাছে তাওবাহ্ ও ইস্তিগফার করে, অতঃপর নিরন্তর মৃত্যু মাতা-পিতার জন্য দু‘আ ইস্তিগফার করতে থাকে তাহলে আল্লাহ খুশী হয়ে তাকে ক্ষমা করে দেন এবং একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর ‘ইবাদাত করায় এই পাপী বান্দাহকেই নেককার বান্দাহদের অন্তর্ভূক্ত করে নেন। অত্র হাদীসে সেদিকে ইশারা করা হয়েছে। সুতরাং নেককার গুনাহগার সকল সন্তানেরই উচিত নিয়মিত মৃত মাতা-পিতার জন্য দু‘আ ইস্তিগফার করা। হাদীসটি সানাদ দুর্বল হলেও অর্থগত বিষয়ে সঠিক। কেননা সহীহ হাদীসে রয়েছে, মাতা-পিতার মৃত্যুর পর তাদের সাথে সদাচরণের পথ হলো তাদের জন্য দু‘আ করা। এ দু‘আর ক্ষেত্রে নেককার গুনাহগারের কোন পার্থক্য করা হয়নি। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৫: শিষ্টাচার (كتاب الآداب)

পরিচ্ছেদঃ ১৪. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - অনুগ্রহ ও স্বজনে সদাচার

৪৯৪৩-[৩৩] ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি এমন অবস্থায় সকাল করল যে, সে তার মাতা-পিতার ব্যাপারে আল্লাহ তা’আলার আদেশের অনুগত রয়েছে, তখন তার সে সকাল এমন অবস্থায় হয় যে, তার জন্য জান্নাতের দু’টো দরজা খোলা থাকে। যদি একজন হয়, তখন জান্নাতের একটি দরজা খোলা থাকে। আর যে ব্যক্তি মাতা-পিতার ব্যাপারে আল্লাহ তা’আলার কাছে অপরাধী হিসেবে সকাল করে, তবে সে যেন এমনভাবে ভোর করল যে, জাহান্নামের দু’টো দরজা তার জন্য খোলা থাকে। আর যদি তাঁদের একজন থাকে, তবে একটি দরজা খোলা থাকে। এ সময় জনৈক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করল, যদি তাঁরা পুত্রের ওপর অবিচার করে? জবাবে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ যদি তারা পুত্রের প্রতি অবিচার করে, যদিও তাঁরা পুত্রের প্রতি অবিচার করে, যদিও তাঁরা পুত্রের প্রতি অবিচার করে।[1]

وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ أَصْبَحَ مُطِيعًا لِلَّهِ فِي وَالِدَيْهِ أَصْبَحَ لَهُ بَابَانِ مَفْتُوحَانِ مِنَ الْجَنَّةِ وَإِنْ كَانَ وَاحِدًا فَوَاحِدًا. وَمَنْ أَمْسَى عَاصِيًا لِلَّهِ فِي وَالِدَيْهِ أَصْبَحَ لَهُ بَابَانِ مَفْتُوحَانِ مِنَ النَّارِ وَإِنْ كَانَ وَاحِدًا فَوَاحِدًا» قَالَ رَجُلٌ: وَإِنْ ظَلَمَاهُ؟ قَالَ: «وَإِنْ ظلماهُ وإِن ظلماهُ وإِنْ ظلماهُ»

وعن ابن عباس قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «من أصبح مطيعا لله في والديه أصبح له بابان مفتوحان من الجنة وإن كان واحدا فواحدا. ومن أمسى عاصيا لله في والديه أصبح له بابان مفتوحان من النار وإن كان واحدا فواحدا» قال رجل: وإن ظلماه؟ قال: «وإن ظلماه وإن ظلماه وإن ظلماه»

ব্যাখ্যাঃ মাতা-পিতার অনুগত্য আল্লাহর আনুগত্যের অংশবিশেষ, যা স্বয়ং আল্লাহ নিজে তার বান্দার প্রতি আবশ্যক করে দিয়েছেন। অনুরূপ মাতা-পিতার অবাধ্যচারিতা বা নাফরমানী এবং তাদের কষ্ট দেয়া আল্লাহর নাফরমানী এবং তাকে কষ্ট দেয়ারই নামান্তর, যা আল্লাহ হারাম বা নিষিদ্ধ করে দিয়েছেন।

‘আল্লামা ‘আলী কারী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ মাতা-পিতার নাফরমানী করা এবং তাদের কষ্ট দেয়া আল-কুরআনের বাণী : إِنَّ الَّذِينَ يُؤْذُونَ اللهَ وَرَسُولَه ‘‘নিশ্চয় যারা আল্লাহ এবং তার রসূলকে কষ্ট দেয়’’- (সূরাহ্ আল আহযা-ব ৩৩ : ৫৭)-এর অন্তর্ভুক্ত। কোন কোন সংকলণে ‘পিতা-মাতার আনুগত্যের’ শব্দের পরিবর্তে শুধু ‘পিতার আনুগত্যের’ কথা উল্লেখ হয়েছে, সেখানে পরিহার করার বিধান প্রযোজ্য।

মাতা-পিতা জুলুম করলেও তাদের কষ্ট দেয়া যাবে না এবং তাদর নাফরমানীও করা যাবে না।

‘আল্লামা ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ এই জুলুম দ্বারা দীনী কিংবা পরকালীন জুলুম উদ্দেশ্য নয়, বরং দুনিয়াবী জুলুম। আরেকটি কথা স্মরণযোগ্য যে, আল্লাহর নাফরমানী করে মাতা-পিতার আনুগত্য করা যাবে না। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৫: শিষ্টাচার (كتاب الآداب)

পরিচ্ছেদঃ ১৪. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - অনুগ্রহ ও স্বজনে সদাচার

৪৯৪৪-[৩৪] ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন কোন মাতা-পিতার ভক্ত সন্তান নিজের মাতা-পিতাকে অনুগ্রহের দৃষ্টিতে দেখে, আল্লাহ তা’আলা তার প্রতিটি দৃষ্টির বিনিময়ে তার ’আমলনামায় একটি নফল হজ্জ-এর সাওয়াব লিখে দেন। সাহাবায়ে কিরাম জিজ্ঞেস করলেনঃ হে আল্লাহর রসূল! যদি দৈনিক একশ’বার দৃষ্টিপাত করে? রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হ্যাঁ, তাও। আল্লাহ মহান ও পবিত্র।[1]

وَعَنْهُ
أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «مامن وَلَدٍ بَارٍّ يَنْظُرُ إِلَى وَالِدَيْهِ نَظْرَةَ رَحْمَةٍ إِلَّا كَتَبَ اللَّهُ لَهُ بِكُلِّ نَظْرَةٍ حَجَّةً مَبْرُورَةً» . قَالُوا: وَإِنْ نَظَرَ كُلَّ يَوْمٍ مِائَةَ مرّة؟ قَالَ: «نعم الله أكبر وَأطيب»

وعنه أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: «مامن ولد بار ينظر إلى والديه نظرة رحمة إلا كتب الله له بكل نظرة حجة مبرورة» . قالوا: وإن نظر كل يوم مائة مرة؟ قال: «نعم الله أكبر وأطيب»

ব্যাখ্যাঃ নেককার সন্তান মাতা-পিতার প্রতি দয়াশীল, সুতরাং সে তার মাতা-পিতার প্রতি দয়া ও রহমাতের দৃষ্টিতে তাকাবে। সন্তানের এই ভালোবাসার দৃষ্টি আল্লাহর কাছে পছন্দনীয়, এমনকি প্রতিটি দৃষ্টিই আল্লাহর প্রিয় এবং আল্লাহ তার মূল্যায়ন করেন। এ মূল্যায়ন হলো প্রতিটি দৃষ্টির বিনিময়ে একটি নফল হাজ্জের সাওয়াব প্রদান করেন। লোকেরা প্রশ্ন করল, কেউ যদি দিনে একশতবার মাতা-পিতার দিকে রহমাতের দৃষ্টিতে তাকায়? রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হ্যাঁ, আল্লাহ তা‘আলা তাকে একশতটিই হাজ্জের সাওয়াবই দান করবেন। কেননা মানুষ যা ধারণা করে এবং মানুষের যে দৃষ্টিভঙ্গি আল্লাহ তার চেয়ে মহান এবং সকল প্রকার অক্ষমতা, দুর্বলতা এবং সংকীর্ণ থেকে মুক্ত।

‘আল্লামা ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ মানুষের এই সংকীর্ণ ধারণাও ই‘তিকাদ (বিশ্বাসসমূহ) থেকে আল্লাহ পুত-পবিত্র এবং মুক্ত। তার দান ভাণ্ডার থেকে কোন কিছু দান করলে সে ভান্ডারের ঘাটতি হয় না, এসব ত্রুটি থেকেও তিনি মুক্ত এবং পবিত্র। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৫: শিষ্টাচার (كتاب الآداب)

পরিচ্ছেদঃ ১৪. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - অনুগ্রহ ও স্বজনে সদাচার

৪৯৪৫-[৩৫] আবূ বকরাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ প্রত্যেক পাপ আল্লাহ তা’আলা যতটুকু ইচ্ছে ক্ষমা করে দেন; কিন্তু মাতা-পিতার অবাধ্যতা ক্ষমা করেন না; বরং আল্লাহ তা’আলা এটার শাস্তি দুনিয়াতেই তার মৃত্যুর পূর্বে তাকে প্রদান করেন।[1]

وَعَنْ أَبِي
بَكْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «كلُّ الذنوبِ يغفرُ اللَّهُ مِنْهَا مَا شاءَ إِلَّا عُقُوقَ الْوَالِدَيْنِ فَإِنَّهُ يُعَجَّلُ لِصَاحِبِهِ فِي الحياةِ قبلَ المماتِ»

وعن أبي بكرة رضي الله عنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «كل الذنوب يغفر الله منها ما شاء إلا عقوق الوالدين فإنه يعجل لصاحبه في الحياة قبل الممات»

ব্যাখ্যাঃ সকল পাপ বা গুনাহকেই আল্লাহ যতটুকু ইচ্ছা ক্ষমা করে দেন। এটা শির্কের গুনাহ ব্যতীত। কেননা শির্কের গুনাহ শির্ক বর্জনপূর্বক তাওবাহ্ না করা পর্যন্ত তা ক্ষমা করা হয় না। মাতা-পিতার সাথে নাফরমান করার গুনাহকেও আল্লাহ ক্ষমা করেন না। আল্লাহর সাথে শরীক বা অংশীদার স্থাপনের গুনাহ যেমন ভয়াবহ এবং ক্ষমার অযোগ্য, ঠিক তেমনি মাতা-পিতার সাথে নাফরমানীর গুনাহ্ও ভয়াবহ এবং ক্ষমার অযোগ্য। যেহেতু এ বিষয়টি হাক্কুল্লাহ এবং হাক্কুল ‘ইবাদ উভয়ের সাথে সংশ্লিষ্ট। অতএব মাতা-পিতার নিকট ক্ষমা না নেয়া পর্যন্ত আল্লাহ এককভাবে তাকে ক্ষমা করবেন না। তার এ অপরাধের জন্য আল্লাহ দুনিয়ায় থাকতেই তার শাস্তি শুরু করবেন। অর্থাৎ মৃত্যুর আগেই সে শান্তি ভোগ শুরু করবে, কিয়ামত পর্যন্ত তাকে প্রতিক্ষা করতে হবে না।

কেউ কেউ বলেছেন, এর এও অর্থ হতে পারে যে, তার মাতা-পিতা মৃত্যুর আগেই শাস্তি শুরু হয়ে যাবে। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
বর্ণনাকারীঃ আবূ বাকরা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৫: শিষ্টাচার (كتاب الآداب)

পরিচ্ছেদঃ ১৪. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - অনুগ্রহ ও স্বজনে সদাচার

৪৯৪৬-[৩৬] সা’ঈদ ইবনুল ’আস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ বড় ভাইয়ের অধিকার ছোট ভাইয়ের ওপর, যেমন- পিতার অধিকার তার পুত্রের উপর।

(উপরের পাঁচটি হাদীস বায়হাক্বী’র ’’শু’আবুল ঈমানে’’ বর্ণনা করেছেন।)[1]

وَعَن
سعيدِ بْنِ الْعَاصِ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم: «حقُّ كبيرِ الإِخوَةِ على صَغِيرِهِمْ حَقُّ الْوَالِدِ عَلَى وَلَدِهِ» . رَوَى الْبَيْهَقِيُّ الأحاديثَ الخمسةَ فِي «شعب الْإِيمَان»

وعن سعيد بن العاص قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «حق كبير الإخوة على صغيرهم حق الوالد على ولده» . روى البيهقي الأحاديث الخمسة في «شعب الإيمان»

ব্যাখ্যাঃ পিতার অবর্তমানে বড় ভাই ছোট ভাই-বোনের অভিভাবক হয়ে থাকে। এছাড়া পিতার বর্তমানেও বড় ভাই ছোট ভাই-বোনদের লালন-পালন ও পরিচর্যা করে থাকে, এমনকি অনেক সময় বড় ভাইয়ের উপার্জনেই ছোট ভাই-বোনের জীবিকা নির্বাহ হয়ে থাকে।

অতএব ছোট ভাইয়ের ওপর বড় ভাইয়ের অধিকার পুত্রের প্রতি পিতার অধিকারের মতই।

মুল্লা ‘আলী কারী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ এই সাদৃশ্য মুবালাগাহ্ হিসেবে পেশ করা হয়েছে। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
বর্ণনাকারীঃ সা‘ঈদ ইবনু আস (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৫: শিষ্টাচার (كتاب الآداب)
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ৯ পর্যন্ত, সর্বমোট ৯ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে