পরিচ্ছেদঃ ৮. প্রথম অনুচ্ছেদ - নাম রাখা

৪৭৫০-[১] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাজারে গেলেন। এক ব্যক্তি ’’হে আবুল কাসিম!’’ বলে ডাক দিলো। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার দিকে দৃষ্টিপাত করলেন। লোকটি বলল, আমি ঐ ব্যক্তিকে ডেকেছি। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমরা আমার নামে নাম রাখতে পার; কিন্তু আমার উপনামে উপনাম রেখ না। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

بَابُ الْأَسَامِىْ

عَنْ أَنَسٍ قَالَ: كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي السُّوقِ فَقَالَ رَجُلٌ: يَا أَبَا الْقَاسِمِ فَالْتَفَتَ إِلَيْهِ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: إِنَّمَا دَعَوْتُ هَذَا. فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسلم: «سموا باسمي وَلَا تكنوا بكنيتي» . مُتَّفق عَلَيْهِ

عن انس قال كان النبي صلى الله عليه وسلم في السوق فقال رجل يا ابا القاسم فالتفت اليه النبي صلى الله عليه وسلم فقال انما دعوت هذا فقال النبي صلى الله عليه وسلم سموا باسمي ولا تكنوا بكنيتي متفق عليه

ব্যাখ্যাঃ ত্ববারানীর বর্ণনায় রয়েছে, ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত (وَلَا تَكْنُوْا بِكُنِيَّتِىْ) অর্থাৎ আমার উপনামে নামকরণ করো না। কেননা উপনাম সম্মানার্থে হয়ে থাকে। শুধু নাম সম্মানের বিপরীত, অতঃপর তিনি তাদেরকে এটা হতে নিষেধ করেন। যাতে করে সন্দেহে পতিত না হয় যখন কতিপয় মানুষকে আহবান করা হয়। অতঃপর ঘোষণা দেয়া হয়, নিশ্চয় ‘আরবদের ‘আলিমগণ বলেন, নাম হয়ত প্রশংসার ঘোষণা দিবে অথবা বদনামের তার নাম মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উপনাম আবুল কাসিম ও তার لقب উপাধি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।

রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপনামে বা মূল নামে কখন রাখা যাবে বা যাবে না- এ প্রসঙ্গে নিম্নে ইমামদের মতভেদ উল্লেখ করা হলো।

১. ইমাম শাফি‘ঈ ও আহলে যাহির-এর অভিমত হলো : নিশ্চয় আবুল কাসিম নামে কারও নামকরণ করা কখনও বৈধ হবে না। চাই সেই নাম মুহাম্মাদ বা আহমাদ হোক বা না হোক। আনাস (রাঃ) বর্ণিত মুসলিমের বাহ্যিক হাদীস থেকে উপলব্ধি করা যায়- এ মতটি।

২. এই নিষেধ রহিত হয়ে গেছে। এ আদেশ প্রথম দিকে ছিল। এ অর্থই হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে। অতঃপর রহিত হয়েছে। জামহূর ‘উলামা বলেছেন, অতঃপর প্রত্যেকের জন্য আবুল কাসিম নামে নামকরণ করা বর্তমানে বৈধ। সেটা তার নাম মুহাম্মাদ এবং আহমাদ বা অন্য কিছু হোক এতে অসুবিধা নেই। এ মতটি ইমাম মালিক-এর। কাযী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ এ মতটি অধিকাংশ সালাফ ও মিসরের ফকীহগণেরও অধিকাংশ ‘আলিমগণের এবং প্রসিদ্ধ রয়েছে এক জামা‘আত আবুল কাসিম উপনামে নাম রেখেছে। এর পরেও বর্তমান পর্যন্ত।

৩. ইবনু জারীর-এর মত নিশ্চয় এটা রহিত হয়নি। শুধু নিষেধ ছিল পবিত্রকরণে ও আদাবের (শিষ্টাচারিতার) জন্য, হারাম করার জন্য নয়।

৪. নিশ্চয় নিষেধ আবুল কাসিম উপনামে ডাকা থেকে। নির্দিষ্ট ঐ ব্যক্তির জন্য যার নাম মুহাম্মাদ অথবা আহমাদ এবং ক্ষতি নেই অসুবিধা নেই শুধু উপনামে ঐ ব্যক্তির জন্য যে এই দুই নামের মধ্যে থেকে কোন একটি নামে নাম রাখে না। এটা সালাফের এক জামা‘আতের উক্তি। এ প্রসঙ্গে মারফূ‘ হাদীস জাবির  হতে বর্ণিত হয়েছে।

৫. নিশ্চয় সাধারণভাবে আবুল কাসিম উপনামে ডাকা থেকে নিষেধ করা হয় এবং কাসিম নাম রাখা থেকে নিষেধ করা হয়। যাতে উপনামে ডাকা হবে না তার আববাকে আবুল কাসিম নামে অথচ মারওয়ান ইবনু হাকাম তার ছেলের নাম পরিবর্তন করে ‘আবদুল মালিক রাখলেন। যখন তার কাছে পৌঁছল এ হাদীস তখন তার ছেলের নাম রাখলেন ‘আবদুল মালিক। তার ছেলের নাম প্রথমে রেখেছিলেন কাসিম এবং কতিপয় আনসার সাহাবীরা এরূপ করেছেন।

৬. সাধারণত মুহাম্মাদ নাম রাখা নিষেধ করা হয়। চাই তার উপনাম হোক বা আসল নাম হোক- এ প্রসঙ্গে হাদীস এসেছে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে تُسَمُّونَ أَوْلَادَكُمْ مُحَمَّدًا ثُمَّ تَلْعَنُونَهُمْ অর্থাৎ তোমরা তোমাদের সন্তানদের নাম রাখ মুহাম্মাদ, অতঃপর তোমরা তাদের প্রতি অভিসম্পাত কর লা‘নাত কর। ‘উমার চিঠি লিখেন কুফাবাসীর প্রতি, তোমরা নবীর নামে কারও নাম রাখিও না। মাদানীহ্-এর এক জামা‘আতকে আদেশ করেন তাদের সন্তানদের মুহাম্মাদ নাম পরিবর্তন করার জন্য। এক জামা‘আত উল্লেখ করেন তার জন্য নিশ্চয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে অনুমতি দিয়েছেন এ ব্যাপারে এবং এর মাধ্যমে তিনি নাম রাখেন, অতঃপর তিনি তাদেরকে ত্যাগ করেন। কাযী বলেনঃ অধিক সাদৃশ্যপূর্ণ নিশ্চয় ‘উমার  এ কাজটি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নামের সম্মান করার জন্য করেন।

শিক্ষা : কুরআন ও সহীহ হাদীস বিরোধী কোন নাম হলে সেই নাম পরিবর্তন করা উচিত। যেরূপ সহাবা (রাঃ) করেছেন। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জীবদ্দশায় কোন অবস্থায় ঠিক না। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নামে বা উপনামে বা উপাধিতে নাম রাখা। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ; শারহুন নাবাবী ১৪শ খন্ড, হাঃ ২১৩১/১) [সম্পাদক]


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৫: শিষ্টাচার (كتاب الآداب)

পরিচ্ছেদঃ ৮. প্রথম অনুচ্ছেদ - নাম রাখা

৪৭৫১-[২] জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমার নামে নাম রাখতে পার; কিন্তু আমার নামে নাম রেখ না। কেননা আমাকে বণ্টনকারী নিয়োগ করা হয়েছে। আমি তোমাদের মধ্যে বণ্টন করে থাকি। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

بَابُ الْأَسَامِىْ

وَعَنْ جَابِرٌ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «سموا باسمي وَلَا تكنوا بِكُنْيَتِي فَإِنِّي إِنَّمَا جُعِلْتُ قَاسِمًا أَقْسِمُ بَيْنَكُمْ» مُتَّفق عَلَيْهِ

وعن جابر ان النبي صلى الله عليه وسلم قال سموا باسمي ولا تكنوا بكنيتي فاني انما جعلت قاسما اقسم بينكم متفق عليه

ব্যাখ্যাঃ জাবির (রাঃ) বর্ণিত হাদীসে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নামে নাম রাখা আদেশ পাওয়া যায় উপনামে নাম রাখা নিষেধাজ্ঞা পাওয়া যায় রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সম্মান করার জন্য। যাকে আহবান করা হয়, উপনামের কারণে সে কষ্ট পায়। এটা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অধিকারে এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো ইযযত করা। এর মধ্যে কাউকেও অংশীদার না করা। অথচ আল্লাহ তা‘আলা বলেছেনঃ لَا تَجْعَلُوا دُعَاءَ الرَّسُولِ بَيْنَكُمْ كَدُعَاءِ بَعْضِكُمْ بَعْضًا ৭৩ ‘‘রসূলের ডাককে তোমরা তোমাদের একের প্রতি অন্যের ডাকের মতো গণ্য করো না’’- (সূরাহ্ আন্ নূর ২৪ : ৬৩)। আল্লাহ তাদেরকে জানেন যারা তোমাদের মধ্যে চুপিসারে সরে পড়ে। আল্লাহ তা‘আলা ‘কাসিম’ অর্থাৎ বণ্টনকারী বানিয়েছেন সবার মাঝে। جامع (জামি‘)-এর বর্ণনায় রয়েছে, আমি প্রেরিত হয়েছি, কাসিম হিসেবে আমি বণ্টনকারী ‘ইলম’ গনীমাত এরূপ আরো অনেক কিছু। শুভ সংবাদ নেক বান্দার জন্য। মানতের বস্তু খারাপ ব্যক্তির জন্য। মূলকথা হলো রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শুধু তার সন্তানদের জন্য ‘আবুল কবাসিম’ নন বরং তিনি দুনিয়া ও আখিরাতের বিভিন্ন বিষয়ের মধ্যে সর্বকালের জন্য ‘কাসিম’।

‘আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, হে আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! যদি আপনার মৃত্যুর পর আমার সন্তান হয় আমি কি তার নাম মুহাম্মাদ এবং আপনার উপনামে নাম রাখতে পারব? তখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, হ্যাঁ। এ মত ইমাম মালিক-এর। কাযী ‘ইয়ায বলেনঃ এ মত অধিকাংশ সালাফের ও মিসরের ফকীহগণের।

আবূ হুরায়রা (রাঃ) বর্ণিত হাদীসে রয়েছে, أن النبي صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نهى أن يجمع بين اسمه وكنيته অর্থাৎ নিশ্চয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিষেধ করেছেন তার নাম ও উপনামে একত্র করা হতে। একই ব্যক্তির মাঝে । (তুহফাতুল আহ্ওয়াযী ৭ম খন্ড, হাঃ ২৮৪২)

রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর রসূলুল্লাহ উপাধি কোন অবস্থায় কারো জন্য বৈধ নয়। মালায়িকাহ্’র (ফেরেশতাদের) নামে কারো নাম রাখা নিষেধ।

‘আবদুল্লাহ ইবনু জাবির  হতে বর্ণিত বুখারী ও মুসলিমে নিষেধ রয়েছে, হাদীসটি নিম্নে বর্ণিত হলো,

 عن عبد الله بن جرار "سموا بأسماء الانبياء ولاتسموا بأسماء الملائكة". (متفق عليه)

নামের প্রসঙ্গে শাফি‘ঈ ও আহলুয্ যাহির সতর্কতা অবলম্বনে যা বলেছেন আবুল কাসিম উপনামে কারো নাম রাখা কখনও বৈধ নয়, সঠিক কথা হলো তার নামে রাখা বৈধ, তাঁর উপনামে ডাকা তার থেকে নিষেধ। তার বেঁচে থাকা অবস্থায় কঠিনভাবে নিষেধ। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ) [সম্পাদক]


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৫: শিষ্টাচার (كتاب الآداب)

পরিচ্ছেদঃ ৮. প্রথম অনুচ্ছেদ - নাম রাখা

৪৭৫২-[৩] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলার নিকট তোমাদের নামসমূহের মধ্যে সবচেয়ে উত্তম নাম ’আবদুল্লাহ এবং ’আবদুর রহমান। (মুসলিম)[1]

بَابُ الْأَسَامِىْ

وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِنَّ أَحَبَّ أَسْمَائِكُمْ إِلَى اللَّهِ: عَبْدُ اللَّهِ وَعَبْدُ الرَّحْمَنِ رَوَاهُ مُسلم

وعن ابن عمر قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم ان احب اسماىكم الى الله عبد الله وعبد الرحمن رواه مسلم

ব্যাখ্যাঃ ব্যাখ্যায় বলা হয়, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-গণের নামের পরে, ইসফাতের দালীলের মাধ্যমে জানা যায়। ‘আবদুল্লাহ ও ‘আবদুর রহমান অতি প্রিয় আল্লাহ তা‘আলার নিকট। অতঃপর প্রমাণ করে এই দুই নামের উপরে যে, এ দুই নাম মুহাম্মাদের নাম হতে অধিক প্রিয় নয়, অতঃপর উভয় নামই সমান মর্যাদার অবস্থানে। অথবা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নাম। উক্ত দুই নাম হতে অতি প্রিয় সাধারণভাবে অথবা কোন দিক থেকে। মিরক্বাত লেখক বলেনঃ এ বিষয়ে আল্লাহ অধিক ভালো অবগত রয়েছেন। (তুহফাতুল আহ্ওয়াযী ৭ম খন্ড, হাঃ ২৮৩৩)

عن عبد الله بن عمر عن النبي قال أحب الاسماء عبد الله وعبد الرحمن

 অর্থাৎ ইবনু ‘উমার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করেন, আল্লাহর কাছে ‘আবদুল্লাহ ও ‘আবদুর রহমান নাম অতি প্রিয়।

শিক্ষা : আল্লাহ তা‘আলার নামের সঙ্গে কারো নাম রাখতে হলে আল্লাহর নামের পূর্বে عبد শব্দ যুক্ত করে اضافت এর পদ্ধতিতে ব্যবহার করতে হবে তা না করলে বৈধ হবে না। বরং শির্ক হবে। যেমন- ‘আবদুল মালিক ও ‘আবদুর রহীম ইত্যাদি।

অন্যথায় বৈধ হবে না। যেমন ‘আবদুন্ নবী ও ‘আবদুল হারিস ইত্যাদি এ জাতীয় নাম রাখা শারী‘আতে বৈধ নয়। আর ‘আবদুল্লাহ ও ‘আবদুর রহমান নাম আমরা বেশী রাখব। [সম্পাদক]


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৫: শিষ্টাচার (كتاب الآداب)

পরিচ্ছেদঃ ৮. প্রথম অনুচ্ছেদ - নাম রাখা

৪৭৫৩-[৪] সামুরাহ্ ইবনু জুনদুব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তুমি কখনো তোমাদের ’’গোলাম’’ (সন্তান)-এর নাম ’ইয়াসার’, ’রবাহ’, ’নাজীহ’ ও ’আফলাহ’ রেখ না। কেননা যখন তুমি তার নাম ধরে ডাকবে, আর সে উপস্থিত থাকবে না, তখন কেউ বলবে ’’নেই’’। (মুসলিম)[1]

মুসলিম-এর অপর বর্ণনায় রয়েছে, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ তুমি তোমার গোলামের নাম ’রবাহ’, ’ইয়াসার’, ’আফলাহ’ কিংবা নাফি’ নাম রেখ না।

بَابُ الْأَسَامِىْ

وَعَن سَمُرَةَ بْنِ جُنْدُبٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم: لَا تسمين غُلَاما يسارا وَلَا رباحا ولانجيحا وَلَا أَفْلَحَ فَإِنَّكَ تَقُولُ: أَثَمَّ هُوَ؟ فَلَا يَكُونُ فَيَقُولُ لَا رَوَاهُ مُسْلِمٌ. وَفِي رِوَايَةٍ لَهُ قَالَ: «لَا تسم غُلَاما رَبَاحًا وَلَا يَسَارًا وَلَا أَفْلَحَ وَلَا نَافِعًا»

وعن سمرة بن جندب قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم لا تسمين غلاما يسارا ولا رباحا ولانجيحا ولا افلح فانك تقول اثم هو فلا يكون فيقول لا رواه مسلم وفي رواية له قال لا تسم غلاما رباحا ولا يسارا ولا افلح ولا نافعا

ব্যাখ্যাঃ আমাদের সন্তানের নাম نجيح ، افلح، نافع، يسار، رباح (নাজীহ, আফলাহ, নাফি‘, ইয়াসার, রবাহ) ইত্যাদি ও এ জাতীয় অর্থবোধক নাম রাখা থেকে বিরত থাকব। ইমাম নাবাবী মুসলিমের শারহাতে বলেছেন, আমাদের সঙ্গীরা এ জাতীয় নাম রাখা অপছন্দ করেন। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ) [সম্পাদক]


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৫: শিষ্টাচার (كتاب الآداب)

পরিচ্ছেদঃ ৮. প্রথম অনুচ্ছেদ - নাম রাখা

৪৭৫৪-[৫] জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইচ্ছা করলেন যে, তিনি লোকেদেরকে ইয়া’লা, বারাকাহ্, আফলাহ, ইয়াসার, নাফি’ এবং অনুরূপ নাম রাখতে নিষেধ করবেন। তারপর দেখলাম, তিনি ইচ্ছা পোষণ করার পর নিশ্চুপ থাকলেন। অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ইন্তিকাল হলো, অথচ তিনি এরূপ নাম রাখতে নিষেধ করেননি। (মুসলিম)[1]

بَابُ الْأَسَامِىْ

وَعَن جَابر قَالَ أَرَادَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنْ يَنْهَى عَنْ أَنْ يُسَمَّى بِيَعْلَى وَبِبَرَكَةَ وَبِأَفْلَحَ وَبِيَسَارٍ وَبِنَافِعٍ وَبِنَحْوِ ذَلِكَ. ثُمَّ سَكَتَ بَعْدُ عَنْهَا ثُمَّ قُبِضَ وَلَمْ يَنْهَ عَنْ ذَلِك. رَوَاهُ مُسلم

وعن جابر قال اراد النبي صلى الله عليه وسلم ان ينهى عن ان يسمى بيعلى وببركة وبافلح وبيسار وبنافع وبنحو ذلك ثم سكت بعد عنها ثم قبض ولم ينه عن ذلك رواه مسلم

ব্যাখ্যাঃ জাবির (রাঃ) বর্ণিত হাদীসে نافع، يسار، افلح، بركة، يعلى (নাফি‘, ইয়াসার, আফলাহ, বারাকাহ্, ইয়া‘লা-) এ জাতীয় আরো নাম এবং সামুরাহ্ (রাঃ) বর্ণিত হাদীসে আবূ দাঊদ ও ইবনু মাজাহ বর্ণনা করেন চারটি নাম رباح، نافع، يسار، افلح (রবাহ, নাফি‘, ইয়াসার, আফলাহ) এবং ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস্‘ঊদ  বর্ণিত হাদীসে ইমাম ত্ববারানী হাসান সনদে বর্ণনা করেন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম وليذ، حرب، يسار، نجيح، افلح، ابوالحكم، الحكم، امرأة (ওয়ালীয, হারব, ইয়াসার, নাজীহ, আফলাহ, আবুল হাকাম, আল হাকাম, আমরিআহ্/আমরাআহ্) এবং ইমাম ত্ববারানী (রহিমাহুল্লাহ) বুরয়দাহ্  হতে বর্ণিত كلب ، كليب কাল্ব ও কুলায়ব নাম রাখতে নিষেধ করেছেন।

শিক্ষা : আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে উল্লেখিত নিষেধকৃত নাম রাখা থেকে পুরোপুরি বিরত থাকার তাওফীক দান করুন এবং বিরত থাকা আমাদের সকলের উচিত যেহেতু হাদীসে নিষেধ রয়েছে।

(শারহুন নাবাবী ১৪শ খন্ড, হাঃ ১৩-[২১৩৮]; তুহফাতুল আহ্ওয়াযী ৭ম খন্ড, হাঃ ২৮৩৫) [সম্পাদক]


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৫: শিষ্টাচার (كتاب الآداب)

পরিচ্ছেদঃ ৮. প্রথম অনুচ্ছেদ - নাম রাখা

৪৭৫৫-[৬] আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা’আলার সমীপে সবচেয়ে খারাপ নাম ঐ ব্যক্তির হবে, যাকে مَلِكَ الْأَمْلَاكِ অর্থাৎ- ’’রাজাধিরাজ’’ বলা হবে। (বুখারী)[1]

মুসলিমের অপর বর্ণনায় রয়েছে, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা’আলার নিকট সবচেয়ে অভিশপ্ত ও কলুষিত সে-ই হবে, যার নাম ’’শাহানশাহ’’ বা ’’রাজাধিরাজ’’ রাখা হয়েছিল। আল্লাহ তা’আলা ব্যতীত কেউ ’’রাজাধিরাজ’’ নন।

بَابُ الْأَسَامِىْ

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَخْنَى الْأَسْمَاءِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ عِنْدَ اللَّهِ رَجُلٌ يُسَمَّى مَلِكَ الْأَمْلَاكِ» . رَوَاهُ الْبُخَارِيُّ. وَفِي رِوَايَةٍ لِمُسْلِمٍ قَالَ: «أَغْيَظُ رَجُلٍ عَلَى اللَّهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَأَخْبَثُهُ رَجُلٌ كَانَ يُسَمَّى مَلِكَ الْأَمْلَاكِ لَا مَلِكَ إِلَّا لله»

وعن ابي هريرة قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم اخنى الاسماء يوم القيامة عند الله رجل يسمى ملك الاملاك رواه البخاري وفي رواية لمسلم قال اغيظ رجل على الله يوم القيامة واخبثه رجل كان يسمى ملك الاملاك لا ملك الا لله

ব্যাখ্যাঃ বিখ্যাত সাহাবী আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, বুখারীতে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কিয়ামতের দিন নিকটতম নাম হবে ঐ ব্যক্তির যে নাম রাখে مالك الأملاك ‘‘রাজাধিরাজ’’। ফাতহুল বারীতে কিছু শব্দের পরিবর্তে একই রূপ বর্ণনা করা হয়। সুফ্ইয়ান বলেন, এ শব্দের ব্যাখ্যা شاهان شاه। মুসলিম, আবূ দাঊদ ও ইমাম তিরমিযী একই রূপ উল্লেখ করেন। قاضي القضاة অথবা حاكم الحكام ‘‘বিচারকদের বিচারক নাম রাখার ব্যাপারে ‘আলিমদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে।’’ (শারহুন নাবাবী ১৪শ খন্ড, হাঃ [২১৪৩]-২০)

ملك الأملاك অনেক ঘৃণিত নাম আল্লাহ তা‘আলার নিকট। ইবনু আবী শায়বাহ্ তার রিওয়ায়াতে কিছু বৃদ্ধি করেছেন, যেমন বলেন لا مالك الا الله عزوجل আর باب تحريم التسمي بملك الأملاك وبملك الملوك" এই শিরোনাম থেকে আমরা বুঝতে পারি এ জাতীয় নাম হারাম পর্যায়ের।

ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বাল (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ আমি জিজ্ঞেস করেছি, আবূ ‘আমর-কে ঘৃণিত নামের প্রসঙ্গে তিনি বলেন এগুলো নাম অনেক নিকৃষ্ট। অন্য বর্ণনায় রয়েছে, اغيظ رجل على الله يوم القيامة واخبته واغيظه عليه رجل كان يسمى ملك الأملاك অর্থাৎ কিয়ামত দিবসে আল্লাহর নিকট অধিক অপছন্দনীয় ও লাঞ্ছিত হবে ঐ ব্যক্তি যার নাম যে ‘‘মালিকুল আমলাক’’ ও ‘‘মালিকুল মুলুক’’ নামে শিরোনাম যুক্ত হবে। (তুহফাতুল আহ্ওয়াযী ৭ম খন্ড, হাঃ ২৮৩৭; ‘আওনুল মা‘বূদ ৮ম খন্ড, হাঃ ৪৯৫৩)

শিক্ষা : এ উল্লেখিত এসব নামে শিরোনাম যুক্ত হওয়া হারাম, এগুলো আল্লাহর জন্য নির্দিষ্ট। যেমন আর রহমান ও আল কুদ্দূস ইত্যাদি। আরো রয়েছে জাহাঙ্গীর, আলমগীর, শাহজাহান, শাহানশাহ ইত্যাদি।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৫: শিষ্টাচার (كتاب الآداب)

পরিচ্ছেদঃ ৮. প্রথম অনুচ্ছেদ - নাম রাখা

৪৭৫৬-[৭] যায়নাব বিনতু আবূ সালামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার নাম ’’বাররাহ্’’ রাখা হয়েছে। তখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা নিজেদের পবিত্রতা নিজেরাই প্রকাশ করো না। তোমাদের মধ্যে কে পুণ্যবান, তা আল্লাহ তা’আলাই বেশি জানেন। তাঁর নাম যায়নাব রাখো। (মুসলিম)[1]

بَابُ الْأَسَامِىْ

وَعَن زينبَ بنتِ أبي سلَمةَ قَالَتْ: سُمِّيتُ بَرَّةَ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ «لَا تُزَكُّوا أَنْفُسَكُمْ اللَّهُ أَعْلَمُ بِأَهْلِ الْبِرِّ مِنْكُمْ سَمُّوهَا زَيْنَبَ» . رَوَاهُ مُسلم

وعن زينب بنت ابي سلمة قالت سميت برة فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم لا تزكوا انفسكم الله اعلم باهل البر منكم سموها زينب رواه مسلم

ব্যাখ্যাঃ যায়নাব (রাঃ) বলেন, আমার নাম ছিল বাররাহ্ (পুণ্যবতীর কাছ থেকে উত্থিত হয়েছে)। অতঃপর আমার নাম রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যায়নাব রাখলেন। (শারহুন নাবাবী ১৪শ খন্ড, হাঃ ১৯-[২১৪২])


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৫: শিষ্টাচার (كتاب الآداب)

পরিচ্ছেদঃ ৮. প্রথম অনুচ্ছেদ - নাম রাখা

৪৭৫৭-[৮] ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বিবি ’’জুওয়াইরিয়াহ্’’-এর নাম ছিল ’’বাররাহ্’’। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁর নাম পরিবর্তন করে ’’জুওয়াইরিয়াহ্’’ রেখেছিলেন। এজন্য যে, কেউ বলবে, আপনি ’’বাররাহ্’’ কথাটি তিনি খারাপ মনে করতেন। (মুসলিম)[1]

بَابُ الْأَسَامِىْ

وَعَن ابنِ عبَّاسٍ قَالَ: كَانَتْ جُوَيْرِيَةُ اسْمُهَا بَرَّةُ فَحَوَّلَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اسْمَهَا جُوَيْرِيَةَ وَكَانَ يَكْرَهُ أَنْ يُقَالَ: خَرَجَ مِنْ عِنْدِ برة. رَوَاهُ مُسلم

وعن ابن عباس قال كانت جويرية اسمها برة فحول رسول الله صلى الله عليه وسلم اسمها جويرية وكان يكره ان يقال خرج من عند برة رواه مسلم

ব্যাখ্যাঃ এ হাদীসের মধ্যে برة নাম পরিবর্তন করে زينب (যায়নাব) রাখতে বলেন, কেননা কে ভালো বা মন্দ আল্লাহ অধিক ভালো অবগত রয়েছেন। মুসলিমের অন্য বর্ণনায় برة নামকে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম جويرية (জুওয়াইরিয়াহ্) নামে পরিবর্তন করেন। (ফাতহুল বারী ১০ম খন্ড, হাঃ ৬১৯২; শারহুন নাবাবী ১৪শ খন্ড, হাঃ ২১৪২/১৯)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৫: শিষ্টাচার (كتاب الآداب)

পরিচ্ছেদঃ ৮. প্রথম অনুচ্ছেদ - নাম রাখা

৪৭৫৮-[৯] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ’উমার (রাঃ)-এর কন্যাকে ’আসিয়াহ্ বলা হত। অতঃপর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর নাম পরিবর্তন করে রাখলেন ’’জামীলাহ্’’। (মুসলিম)[1]

بَابُ الْأَسَامِىْ

وَعَن ابْن عمر أَنَّ بِنْتًا كَانَتْ لِعُمَرَ يُقَالُ لَهَا: عَاصِيَةُ فَسَمَّاهَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ جميلَة. رَوَاهُ مُسلم

وعن ابن عمر ان بنتا كانت لعمر يقال لها عاصية فسماها رسول الله صلى الله عليه وسلم جميلة رواه مسلم

ব্যাখ্যাঃ ‘উমার -এর মেয়ের নাম ছিল عاصية (‘আসিয়াহ্) অর্থাৎ অমান্যকারী। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার নাম পরিবর্তন করে রাখলেন جميلة (জামীলাহ্) অর্থাৎ সুন্দরী। শারহু মুসলিমে রয়েছে, ইমাম নাবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ অপছন্দনীয় কুশ্রী নাম পরিবর্তন করা মুস্তাহাব, যে রকম اسامى مكروهة অপছন্দ নামসমূহ পরিবর্তন করে ভালো নাম রাখা শারী‘আতসম্মত মত।

(শারহুন নাবাবী ১৪শ খন্ড, হাঃ ২১৩৯/১৫; তুহফাতুল আহ্ওয়াযী ৭ম খন্ড, হাঃ ২৮৩৮; ‘আওনুল মা‘বূদ ৮ম খন্ড, হাঃ ৪৯৪৪)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৫: শিষ্টাচার (كتاب الآداب)

পরিচ্ছেদঃ ৮. প্রথম অনুচ্ছেদ - নাম রাখা

৪৭৫৯-[১০] সাহল ইবনু সা’দ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, মুনযির ইবনু আবূ উসায়দ যখন ভূমিষ্ঠ হলো, তখন তাঁকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে আনা হলো। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁকে নিজের রানের উপর রাখলেন এবং জিজ্ঞেস করলেনঃ তাঁর নাম কী? উত্তরদাতা বলল : ’’অমুক’’। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ ’’না’’; বরং তাঁর নাম ’’মুনযির’’। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

بَابُ الْأَسَامِىْ

وَعَنْ سَهْلِ بْنِ سَعْدٍ قَالَ أُتِيَ بِالْمُنْذِرِ بْنِ أَبِي أُسَيْدٍ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حِينَ وُلِدَ فَوَضعه على فَخذه فَقَالَ: «وَمَا اسْمه؟» قَالَ: فلَان: «لاولكن اسْمه الْمُنْذر» . مُتَّفق عَلَيْهِ

وعن سهل بن سعد قال اتي بالمنذر بن ابي اسيد الى النبي صلى الله عليه وسلم حين ولد فوضعه على فخذه فقال وما اسمه قال فلان لاولكن اسمه المنذر متفق عليه

ব্যাখ্যাঃ সাহল ইবনু সা‘দ (রাঃ) অর্থাৎ সা‘দ আস্ সা‘ইদী আল আনসারী, সাহল-এর নাম ছিল حزن (হুয্ন), অর্থাৎ- দুঃখিত, ব্যথিত, বিষণ্ণ হওয়া। অতঃপর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার নাম রাখলেন سهل (সাহল), তার থেকে তার ছেলে عباس (‘আব্বাস) ও الزهرى (যুহরী)। আর ابو حازم (আবূ হাযিম) বর্ণনা করেন আল মুনযির ইবনু আবূ উসায়দ (রাঃ) তাকে الساعدى (সা‘দী)-ও বলা হয়। তাকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট আনা হলে তার জন্মের পর তাকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর রানের উপর রাখা হয়। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে শিশুকে যে উপস্থিত করেছেন তাকে জিজ্ঞেস করলেন, তার নাম কি? তিনি বললেন, উমুক। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, না। ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ)-এর ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে বলেনঃ তোমরা যে নাম এ শিশুটির রেখেছ তাতে আমি সন্তুষ্ট নই। বরং আমি সন্তুষ্ট হব তার নাম হবে المنذر (মুনযির)। সম্ভবত নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভালো মনে করে এরূপ করেছেন। ফাতহুল বারী ও শারহুন নাবাবীসহ সব শারহাতে শাব্দিক কিছু পার্থক্যসহ সব হাদীসগুলো একইরূপ উল্লেখ করা হয়েছে। (ফাতহুল বারী ১০ম খন্ড, হাঃ ৬১৯১; শারহুন নাবাবী ১৪শ খন্ড, হাঃ ২১৪৯/২৯)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ সাহল বিন সা'দ (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৫: শিষ্টাচার (كتاب الآداب)

পরিচ্ছেদঃ ৮. প্রথম অনুচ্ছেদ - নাম রাখা

৪৭৬০-[১১] আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ নিজের দাস-দাসীকে ’’আমার বান্দা’’, ’’আমার বাঁদী’’ ইত্যাদি যেন না বলে। কেননা তোমরা সকল পুরুষই আল্লাহ তা’আলার বান্দা, আর সকল মহিলাই আল্লাহ তা’আলার বাঁদি; বরং সে যেন বলে, ’’আমার চাকর’’, ’’আমার চাকরাণী’’, ’’আমার ছেলে’’, ’’আমার মেয়ে’’। আর গোলামও নিজের মুনীবকে প্রভু বলবে না; বরং সে বলবে, ’’আমার সর্দার’’।অপর এক বর্ণনায় আছে, সে যেন ’’আমার সর্দার’’ ও ’’আমার মনিব’’ বলে। আরেক বর্ণনায় আছে যে, দাস তার মালিককে যেন ’’আমার প্রভু’’ না বলে। কারণ তোমাদের সকলের প্রভুই আল্লাহ রব্বুল ’আলামীন। (মুসলিম)[1]

بَابُ الْأَسَامِىْ

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: لَا يَقُولَنَّ أَحَدُكُمْ عَبدِي وَأمتِي كلكُمْ عباد اللَّهِ وَكُلُّ نِسَائِكُمْ إِمَاءُ اللَّهِ. وَلَكِنْ لِيَقُلْ: غُلَامِي وَجَارِيَتِي وَفَتَايَ وَفَتَاتِي. وَلَا يَقُلِ الْعَبْدُ: رَبِّي ولكنْ ليقلْ: سَيِّدِي وَفِي رِوَايَةٍ: لِيَقُلْ: سَيِّدِي وَمَوْلَايَ . وَفِي رِوَايَةٍ: لَا يَقُلِ الْعَبْدُ لِسَيِّدِهِ: مَوْلَايَ فَإِنَّ مولاكم اللَّهُ . رَوَاهُ مُسلم

عن ابي هريرة قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم لا يقولن احدكم عبدي وامتي كلكم عباد الله وكل نساىكم اماء الله ولكن ليقل غلامي وجاريتي وفتاي وفتاتي ولا يقل العبد ربي ولكن ليقل سيدي وفي رواية ليقل سيدي ومولاي وفي رواية لا يقل العبد لسيده مولاي فان مولاكم الله رواه مسلم

ব্যাখ্যাঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ) বর্ণিত সহীহ মুসলিমের হাদীসে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন : কতিপয় শব্দের মাধ্যমে মুনীব বা দাস কেউ কাউকে ডাকতে পারবে না- এ প্রসঙ্গে নিম্নে আলোচনা উল্লেখ করা হলো-

১. আবূ হুরায়রা (রাঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করেন, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ তোমাদের কেউ বলবে না তুমি খাওয়াও তোমার রবকে। উযূ করিয়ে দাও তোমার রবকে এবং তার বলা উচিত আমার নেতা, আমার বন্ধু। আর তোমাদের কেউ বলবে না আমার দাস আমার দাসী এবং তার বলা উচিত আমার যুবক এবং আমার যুবতী এবং আমার ছেলে। আরবী হাদীস নিম্নে প্রদত্ত হলো,

عن ابى هريرة يحدث عن النبي صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ انه قال لا يقل احدكم اطعم ربك وضيئ ربك وليقل سيدى مولاى ولا احدكم عبدى امتى وليقل فتاى وفتاتى غلامى

২. আবূ দাঊদ, নাসায়ী, আহমাদ এবং মুসান্নিফ (রহিমাহুমুল্লাহ) ‘আল আদাবুল মুফরাদ’-এর মধ্যে বর্ণনা করেন ‘আবদুল্লাহ ইবনু আশ্ শিখখীর-এর বর্ণিত হাদীস উল্লেখ করেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন السيد শব্দ দ্বারা আল্লাহ তা‘আলাকে বুঝানো হয়েছে। ইমাম মালিক (রহিমাহুল্লাহ) বলেন হারফে নিদার দ্বারা নির্দিষ্ট করে আহবান করাকে অপছন্দ করা হয়েছে। অতঃপর তিনি বলেনঃ কোন ব্যক্তির বলা يا سيدى এরূপ বলা অপছন্দ অর্থাৎ ঠিক হবে না।

৩. মুসান্নিফ (রহিমাহুল্লাহ) আল আদাবুল মুফরাদে বৃদ্ধি করেছেন এবং ইমাম মুসলিম (রহিমাহুল্লাহ) ‘আলা ইবনু ‘আবদুর রহমান তিনি তার আববা থেকে তার আববা আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন, "كلكم عبيد الله وكل نسائكم اماء الله অর্থাৎ- তোমরা সবাই আল্লাহর বান্দাসমূহ বা দাসসমূহ এবং তোমাদের সকল মহিলারা আল্লাহর বান্দীসমূহ বা দাসীসমূহ।

৪. ইমাম নাবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ নিষেধাজ্ঞার দ্বারা উদ্দেশ্য হলো বড়ত্ব ও অহংকার প্রকাশ করার জন্য বৈধ হবে না। আর যদি শুধু পরিস্থিতির জন্য রাখে তা হলো শিথিলতা রয়েছে। والله أعلم

৫. শারহু মুসলিমে শাব্দিক কিছু একই রূপ হাদীস উল্লেখ করেছেন।

৬. ‘আওনুল মা‘বূদে আবূ হুরায়রা  হতে বর্ণিত হাদীস উল্লেখ করা হলো :

لَا يَقُولَنَّ أَحَدُكُمْ عَبْدِىْ وَلَا أَمَتِىْ وَلَا يَقُلِ الْمَمْلُوكُ رَبِّىْ وَرَبَّتِىْ وَلٰكِنْ لِيَقُلِ الْمَالِكُ فَتَاىَ وَفَتَاتِىْ وَالْمَمْلُوكُ سَيِّدِىْ وَسَيِّدَتِىْ فَإِنَّكُمُ الْمَمْلُوكُونَ وَالرَّبُّ اللهُ تَعَالٰى

অর্থাৎ আবূ হুরায়রা  হতে বর্ণিত, নিশ্চয় রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ বলবে না আমার বান্দা, আমার দাসী এবং দাস; তার মুনীবকে বলবে না আমার রব (প্রভু)। আর ‘রব্’ শব্দকে তা দ্বারা স্ত্রী লিঙ্গ বানিয়ে বলবে না আমার রববাতী স্ত্রী প্রভু নামে সম্বোধন করবে না। কর্তার বলা উচিত আমার যুবক এবং যুবতী এবং দাসের বলা উচিত আমার নেতা ও আমার নেত্রী। অতঃপর অবশ্যই তোমরা সবাই আল্লাহর দাসসমূহ আর প্রকৃত প্রভু আল্লাহ তা‘আলা। অতএব ‘রব্’ শব্দ আল্লাহ তা‘আলার জন্যই প্রযোজ্য অন্য কারোর জন্য নয়। আর ইমাম মালিক (রহিমাহুল্লাহ) দু‘আ করার সময় سيد শব্দের মাধ্যমে দু‘আ করা তিনি অপছন্দ করেন। سيد শব্দ আল্লাহর নাম হিসেবে কুরআন এবং মুতাওয়াতির হাদীসে প্রমাণ পাওয়া যায় না। আর ইমাম নাবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ ‘রব্’ শব্দ দ্বারা আল্লাহ তা‘আলাকে বুঝানো হয়েছে। মুনযিরী (রহিমাহুল্লাহ) বলেছেনঃ ইমাম নাসায়ী এটা সংকলন করেন।

শিক্ষা : হাদীসসমূহ পর্যালোচনা করে বুঝা যায়, যে সমস্ত নাম আল্লাহ তা‘আলার জন্য প্রযোজ্য, তা অন্য কারোর জন্য প্রয়োগ না করা। আর যে সমস্ত শব্দ বা নাম এর ব্যাপারে সন্দেহ রয়েছে ঐ নাম বা শব্দ অন্যের নামের (সৃষ্টি জীবের) জন্য ব্যবহার ও সম্বোধন না করা। যেমন ربة، رب، سيد، امة، عبد، مولى ইত্যাদি। যা আল্লাহর জন্য ব্যবহার করা দরকার তা আল্লাহ তা‘আলার জন্য আর যা অন্যের জন্য ব্যবহার করা যায় তা অন্যের জন্য এটা ছাড়া বিপরীত থেকে অবশ্যই বিরত থাকতে হবে তা না হলে পাপী হতে হবে এবং শির্ক হয়ে যাবে।

(ফাতহুল বারী ৫ম খন্ড, হাঃ ২৫৫২; শারহুন নাবাবী ১৫শ খন্ড, হাঃ ২২৪৯/১৫; ‘আওনুল মা‘বূদ ৮ম খন্ড, হাঃ ৪৯৬৭)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৫: শিষ্টাচার (كتاب الآداب)

পরিচ্ছেদঃ ৮. প্রথম অনুচ্ছেদ - নাম রাখা

৪৭৬১-[১২] উক্ত রাবী [আবূ হুরায়রা (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ (আঙ্গুর গাছকে) তোমরা ’’কার্‌ম’’ বলো না। কারণ كَرْم (কারম) বলা হয় মু’মিনের অন্তঃকরণকে। (মুসলিম)[1]

بَابُ الْأَسَامِىْ

وَعَنْهُ
عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: لَا تَقُولُوا: الْكَرْمُ فَإِنَّ الْكَرْمَ قَلْبُ الْمُؤمن . رَوَاهُ مُسلم

وعنهعن النبي صلى الله عليه وسلم قال لا تقولوا الكرم فان الكرم قلب المومن رواه مسلم

ব্যাখ্যাঃ ফাতহুল বারীতে আবূ হুরায়রাহ  হতে বর্ণিত হাদীসে রয়েছে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ

عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ ؓ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَيَقُولُونَ الْكَرْمُ إِنَّمَا الْكَرْمُ قَلْبُ الْمُؤْمِنِ

অর্থাৎ- রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তারা বলেন, الْكَرْمُ  (আল কার্ম) আর ‘‘আল কার্ম’’ অর্থ মু’মিনের অন্তর। যুহরী বর্ণনা করেন, আবূ সালামাহ্ হতে এই শব্দের মাধ্যমে لا تسموا العنب كرما অর্থ তোমরা আঙ্গুরকে كرم নামকরণ করো না।

আর ইমাম মুসলিম (রহিমাহুল্লাহ) همام এর পদ্ধতি থেকে আবূ হুরায়রা -এর বর্ণনা করা হাদীস উল্লেখ করেন, لا يقل احدكم للعنب الكرم অর্থাৎ তোমাদের কেহ আঙ্গুরকে الكرم বলবে না। কেননা الكرم শব্দ দ্বারা একজন মুসলিম ব্যক্তিকে বুঝানো হয়েছে। سفيان এর বর্ণিত হাদীস,

قال رسول الله صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: لا تقولوا كرم فإن الكرم قلب المؤمن

অর্থাৎ- রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা كرم বলো না, কেননা কার্ম হলো মু’মিনের অন্তর। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উক্তি ويقولون الكرم এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো তারা বলে কার্ম আঙ্গুরের গাছ। আর ত্ববারানী ও বাযযার (রহিমাহুমাল্লাহ) সামুরাহ  বর্ণিত হাদীস মারফূ‘ হিসেবে সংকলন করেন,

إن اسم الرجل المؤمن في الكتب الكرم من أجل ما أكرمه الله على الخليقة، وإنكم تدعون الحائط من العنب الكرمد

অর্থাৎ- নিশ্চয় মু’মিনের নাম গ্রন্থসমূহে রয়েছে كرم এ কারণে যে, আল্লাহ তা‘আলা তাকে সৃষ্টিজীবের উপর সম্মানিত করেছেন। নিশ্চয় তোমরা আঙ্গুরের বাগানকে كرم কার্ম বলে আহবান করো।

খত্ত্বাবী এ আলোচনার সারাংশ বর্ণনা করেছেন যে, নিশ্চয় নিষেধের দ্বারা উদ্দেশ্য হলো মদের হারামের গুরুত্ব দেয়া তার নাম মিটিয়ে ফেলার দ্বারা এবং কেননা এ নাম অবশিষ্ট রাখার মাধ্যমে তাকে প্রতিষ্ঠা করার শামিল। কারণ জাহিলী যুগে একে যে পান করত সে সম্মানী হয়ে যায় এটা মনে ও ধারণা করত, অতঃপর এর নামকরণ كرم কারাম করা হতে নিষেধ করা হয়েছে এবং বলেছেন,

(إِنَّمَا الْكَرْمُ قَلْبُ الْمُؤْمِنِ) অর্থাৎ নিশ্চয় কার্ম মু’মিনের হৃদয়, অন্তর। কারণ এর ভিতর রয়েছে ঈমানের আলো ইসলামের হিদায়াত সৎপথ প্রদর্শন।

ইবনুল বাত্ত্বল ইবনুল ‘আরাবী হতে বর্ণনা করেছেন, নিশ্চয় তারা আঙ্গুর কারম كرم নামে নামকরণ করত, কেননা মদ আঙ্গুর থেকে তৈরি করা হত আর তাদের ভ্রান্ত ধারণা মদ দানশীল হওয়ার, উদার হওয়ার উপর উৎসাহ প্রদান করে এবং উত্তম চরিত্রের আদেশ দেয়। (আসলে এ কথাগুলো ঠিক নয়, ভ্রান্ত।) শারহু মুসলিমে আবূ হুরায়রা  ও ‘আওনুল মা‘বূদে নিষেধ রয়েছে।

শিক্ষা : আমরা কখনও কোন ব্যক্তির নাম كرم (কারম) রাখব না এবং এ নামে আহবান করব না। বরং كرم কোন ব্যক্তির নাম রাখা যায়।

(ফাতহুল বারী ১০ম খন্ড, হাঃ ৬১৮৩; শারহুন নাবাবী ১৫শ খন্ড, হাঃ ২২৪৭/৭; ‘আওনুল মা‘বূদ ৮ম খন্ড, হাঃ ৪৯৬৬)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৫: শিষ্টাচার (كتاب الآداب)

পরিচ্ছেদঃ ৮. প্রথম অনুচ্ছেদ - নাম রাখা

৪৭৬২-[১৩] মুসলিম-এর উপর বর্ণনায় ওয়ায়িল ইবনু হুজর হতে বর্ণিত। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা আঙ্গুরকে কার্ম বলো না; বরং عِنَبْ (’ইনাব) ও حَبَلَهْ (হাবালাহ্) বলো।[1]

بَابُ الْأَسَامِىْ

وَفِي
رِوَايَةٍ لَهُ عَنْ وَائِلِ بْنِ حُجْرٍ قَالَ: لَا تَقُولُوا: الْكَرْمُ وَلَكِنْ قُولُوا: الْعِنَبُ والحبلة

وفيرواية له عن واىل بن حجر قال لا تقولوا الكرم ولكن قولوا العنب والحبلة

ব্যাখ্যাঃ ‘আলকামাহ্ ইবনু ওয়ায়িল তার পিতা থেকে বর্ণিত হাদীস নিষেধ রয়েছে।

لَا تَقُولُوا الْكَرْمُ وَلَكِنْ قُولُوا الْعِنَبُ وَالْحَبَلَةُ

অর্থাৎ নিশ্চয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা ‘কার্ম’ বলো না। বরং তোমরা আঙ্গুর বা আঙ্গুরের গাছ বলো। আর এটাই আসল কথা। (শারহুন নাবাবী ১৫শ খন্ড, হাঃ ২২৪৮/১২)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৫: শিষ্টাচার (كتاب الآداب)

পরিচ্ছেদঃ ৮. প্রথম অনুচ্ছেদ - নাম রাখা

৪৭৬৩-[১৪] আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা আঙ্গুরের নাম ’’কারম’’ (كَرْم) রাখবে না এবং যুগের হতাশা ও নৈরাজ্যজনক শব্দ উচ্চারণ করো না। কেননা আল্লাহই যুগ। অর্থাৎ- যুগ আল্লাহ তা’আলার ইচ্ছাধীন। (বুখারী)[1]

بَابُ الْأَسَامِىْ

وَعَنْ
أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: لَا تُسَمُّوا الْعِنَبَ الْكَرْمَ وَلَا تَقُولُوا: يَا خَيْبَةَ الدَّهْرِ فَإِنَّ اللَّهَ هُوَ الدهرُ . رَوَاهُ البُخَارِيّ

وعنابي هريرة قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم لا تسموا العنب الكرم ولا تقولوا يا خيبة الدهر فان الله هو الدهر رواه البخاري

ব্যাখ্যাঃ বুখারীতে আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত হাদীসের প্রথম দিকে আঙ্গুরকে كرم বলতে নিষেধ করা হয়েছে। এর পরে (يَا خَيْبَةَ الدَّهْرِ) অর্থাৎ যুগের নিরাশ বলে সম্বোধন করতে নিষেধ করা হয়েছে। কারণ যুগের কোন দোষ নেই। যুগ পরিবর্তন করেন স্বয়ং আল্লাহ তা‘আলা নিজেই। এজন্যে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ (فَإِنَّ اللهَ هُوَ الدهرُ) অর্থাৎ অতঃপর নিশ্চয় আল্লাহ নিজেই যুগ। যুগের ভালো ও মন্দ কোন কিছু করার ক্ষমতা নেই যদি আল্লাহ তা‘আলা না করেন। কেননা আল্লাহ তা‘আলা যুগের সৃষ্টিকর্তা। তিনি যুগকে পরিবর্তন, রূপান্তর, পরিবর্ধন করেন। যুগের মধ্যে কারও পরিবর্তন করার ক্ষমতা নেই আল্লাহ ছাড়া। আর যুগ আল্লাহ তা‘আলার হুকুমে নিয়ন্ত্রণে নিয়ন্ত্রিত ও বশীভূত, অনুগত। জামি‘উস্ সগীরে বুখারী ও মুসলিম বর্ণনা করেন।

শারহু মুসলিমে আবূ হুরায়রা  বর্ণিত হাদীসে রয়েছে,

يسب بن آدَمَ الدَّهْرَ وَأَنَا الدَّهْرُ بِيَدَيَّ اللَّيْلُ وَالنَّهَارُ

অর্থাৎ- আবূ হুরায়রা  বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, আল্লাহ তা‘আলা বলেছেনঃ ইবনু আদম (আদম সন্তান) যুগকে গালি দেয়, অথচ আমিই যুগ আমারই হাতে রাত ও দিন অর্থাৎ আমার হুকুমের অধীনে রাত-দিন।

আবূ হুরায়রা  বর্ণিত অন্য হাদীসে রয়েছে শাব্দিক কিছু পরিবর্তন সহকারে,

يؤذيني بن آدَمَ يَسُبُّ الدَّهْرَ وَأَنَا الدَّهْرُ أُقَلِّبُ اللَّيْلَ والنهار

অর্থাৎ আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ আদম সন্তান আমাকে কষ্ট দেয়, সে যুগকে গালি দেয়। আর অথচ আমিই যুগ, আমি রাত ও দিবসকে পরিবর্তন করি। শারহু মুসলিমে আরো রয়েছে শাব্দিক কিছু পরিবর্তন সহকারে, تَسُبُّوا الدَّهْرَ فَإِنَّ اللهَ هُوَ الدَّهْرُ

অর্থাৎ তোমরা যুগকে গালি দিও না, কেননা আল্লাহ তা‘আলা তিনিই যুগ।

অন্য বর্ণনায় রয়েছে, আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে, ولا تقولوا يا خيبة الدهر، فإن الله هو الدهر

অর্থাৎ তোমাদের কেউ বলবে না ‘হে যুগের নিরাশ!’ কেননা আল্লাহ তা‘আলাই যুগ। এটা ছাড়া ফাতহুল বারীতেও একই রূপ নিষেধ রয়েছে।

(শারহুন নাবাবী ১৫শ খন্ড, হাঃ ২২৬৪/৪; ফাতহুল বারী ১০ম খন্ড, হাঃ ৬১৮২)

শিক্ষা : বিভিন্ন হাদীসের পর্যালোচনা থেকে বুঝা গেল যে, হে যুগের নিরাশ! যুগের বঞ্চিত বলা যাবে না এবং যুগ ও কালকে গালি দেয়া যাবে না। সম্পূর্ণ নিষেধ।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৫: শিষ্টাচার (كتاب الآداب)

পরিচ্ছেদঃ ৮. প্রথম অনুচ্ছেদ - নাম রাখা

৪৭৬৪-[১৫] উক্ত রাবী [আবূ হুরায়রা (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যেন যুগকে গালি না দেয় (দোষারোপ না করে)। কারণ যুগের ব্বির্তন আল্লাহ তা’আলার ইচ্ছাধীন। (মুসলিম)[1]

بَابُ الْأَسَامِىْ

وَعَنْهُ
قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَا يَسُبَّ أَحَدُكُمُ الدَّهْرَ فَإِنَّ اللَّهَ هوَ الدَّهْر» . رَوَاهُ مُسلم

وعنهقال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم لا يسب احدكم الدهر فان الله هو الدهر رواه مسلم

ব্যাখ্যাঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ) বর্ণিত হাদীসে রয়েছে,

عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ:لَا يَسُبُّ أَحَدُكُمُ الدَّهْرَ، فَإِنَّ اللهَ هُوَ الدَّهْرُ وَلَا يَقُولَنَّ أَحَدُكُمْ لِلْعِنَبِ الْكَرْمَ، فَإِنَّ الْكَرْمَ الرَّجُلُ الْمُسْلِمُ

অর্থাৎ- রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ অবশ্যই তোমাদের কেউ যুগকে গালি দিবে না, কেননা আল্লাহ তিনিই যুগ এবং তোমাদের কেউ অঙ্গুরকে কার্ম বলবে না, কেননা الكرم দ্বারা উদ্দেশ্য হলো একজন মুসলিম ব্যক্তি। এটা ছাড়া বিভিন্ন হাদীসে যুগকে গালি দেয়া এবং আঙ্গুরকে الكرم বলা নিষেধ করা হয়েছে, অতঃপর আমরা এরূপ করব না এবং বলব না। (শারহুন নাবাবী ১৫শ খন্ড, হাঃ ২২৪৭/৬)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৫: শিষ্টাচার (كتاب الآداب)

পরিচ্ছেদঃ ৮. প্রথম অনুচ্ছেদ - নাম রাখা

৪৭৬৫-[১৬] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যেন কখনো এ কথা না বলে যে, আমার আত্মা কলুষিত হয়েছে; বরং বলবে, আমার আত্মা কষ্ট বা ব্যথা পাচ্ছে। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

এ প্রসঙ্গে আবূ হুরায়রা(রাঃ) বর্ণিত হাদীস ’’ঈমান’’ অধ্যায়ে বর্ণিত হয়েছে।

بَابُ الْأَسَامِىْ

وَعَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: لَا يَقُولَنَّ أَحَدُكُمْ: خَبُثَتْ نَفْسِي وَلَكِنْ لِيَقُلْ: لَقِسَتْ نَفْسِي . مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ
وَذُكِرَ حديثُ أبي هريرةَ: «يُؤذيني ابنُ آدمَ» فِي «بَاب الْإِيمَان»

وعن عاىشة قالت قال رسول الله صلى الله عليه وسلم لا يقولن احدكم خبثت نفسي ولكن ليقل لقست نفسي متفق عليهوذكر حديث ابي هريرة يوذيني ابن ادم في باب الايمان

ব্যাখ্যাঃ ফাতহুল বারীতে রয়েছে ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) বর্ণিত হাদীসে এবং আবূ উমামাহ্ ইবনু সাহল তিনি তার পিতা হতে বর্ণিত হাদীসে রয়েছে,

عَنْ الزُّهْرِيِّ عَنْ أَبِىْ أُمَامَةَ بْنِ سَهْلٍ عَنْ أَبِيهِ عَنْ النَّبِىِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ لَا يَقُولَنَّ أَحَدُكُمْ خَبُثَتْ نَفْسِي وَلَكِنْ لِيَقُلْ لَقِسَتْ نَفْسِي تَابَعَهُ عُقَيْلٌ

অর্থাৎ আবূ উমামাহ্ ইবনু সাহল তার পিতা হতে, তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, তোমাদের কেউ অবশ্যই বলবে না আমার আত্মা-মন দুষ্ট, অনিষ্টকর, মন্দ হয়েছে এবং কিন্তু তার বলা উচিত আমার মন-আত্মা আকৃষ্ট, আকর্ষিত হয়েছে। এ হাদীসের অনুসরণ করেছে ‘উকায়ল।

শিক্ষা : আত্মা-মন অনিষ্টকর বা মন্দ হয়েছে না বলে, আকৃষ্ট বা আকর্ষিত, ঝুঁকে পড়েছে বলা উচিত।

(ফাতহুল বারী ১০ম খন্ড, হাঃ ৬১৭৯)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৫: শিষ্টাচার (كتاب الآداب)
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ১৬ পর্যন্ত, সর্বমোট ১৬ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে