পরিচ্ছেদঃ ৯. প্রথম অনুচ্ছেদ - দেউলিয়া (দারিদ্র্য) হওয়া এবং ঋণীকে অবকাশ দান

২৮৯৯-[১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি দেউলিয়াগ্রস্ত বলে গণ্য হবে, যে তার কাছে নিজের মাল হুবহু পাবে, সে তার অন্য পাওনাদার অপেক্ষা অগ্রাধিকারযোগ্য হবে। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

بَابُ الْإفْلَاسِ وَالْاِنْظَارِ

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَيُّمَا رَجُلٍ أَفْلَسَ فَأَدْرَكَ رَجُلٌ مَالَهُ بِعَيْنِهِ فَهُوَ أَحَق بِهِ من غَيره»

عن ابي هريرة قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم ايما رجل افلس فادرك رجل ماله بعينه فهو احق به من غيره

ব্যাখ্যা: মালিক (রহঃ)-এর বর্ণনায় ..... ‘আবদুর রহমান বিন হারিস (রহঃ) হতে বর্ণিত, যে ব্যক্তি তার পণ্য সামগ্রী বিক্রি করবে, অতঃপর ক্রেতা দেউলিয়া হয়ে গেল, কিন্তু বিক্রেতার মূল্য সে পরিশোধ করেনি। অতঃপর বিক্রেতা ক্রেতার কাছে তার উক্ত পণ্য সামগ্রী হুবহু পেলে সেই তার সর্বাধিক হকদার। এখান থেকে বুঝা যায় যে, বিক্রেতা মূল্যের কিছু অংশ হস্তগত করলে অবশিষ্ট মূল্য ঋণের মধ্যে গণ্য হবে (অর্থাৎ- ক্রয়-বিক্রয় বাতিল হবে না)। আর যদি মূল্য সম্পূর্ণ বাকী থাকে তবে ইমাম শাফি‘ঈ ও একদল ‘উলামাগণের মতে বিক্রেতার ইচ্ছাধীন থাকবে। যদি চায় তাহলে পণ্য সামগ্রী বর্জন করবে এবং ঋণের ভিত্তিতে তার মূল্য নিবে। অথবা ক্রেতা দেউলিয়া কিংবা মৃত্যুবরণ করার ক্ষেত্রে বিক্রেতা তার পণ্য সামগ্রী ফেরত নিতে পারবে। (মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১২: ক্রয়-বিক্রয় (ব্যবসা) (كتاب البيوع) 12. Business Transactions

পরিচ্ছেদঃ ৯. প্রথম অনুচ্ছেদ - দেউলিয়া (দারিদ্র্য) হওয়া এবং ঋণীকে অবকাশ দান

২৯০০-[২] আবূ সা’ঈদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সময়ে ফল-ফলাদি ক্রয় করে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ভীষণ ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়ল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকেদেরকে বললেন, তাকে দান-খয়রাতের মাধ্যমে সাহায্য কর। এমতাবস্থায় লোকেরা তাকে দায়-খয়রাত করল, কিন্তু তাতে তার ঋণ পরিশোধ যথেষ্ট হলো না। সুতরাং রসূললুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঐ ব্যক্তির পাওনাদারগণকে ডেকে বললেন, যা সমুপস্থিত আছে তা তোমরা আদায় করে নাও; এর অতিরিক্ত আর পাবে না (মাওকূফ করে দাও)। (মুসলিম)[1]

بَابُ الْإفْلَاسِ وَالْاِنْظَارِ

وَعَن أبي سعيد قَالَ: أُصِيبَ رَجُلٌ فِي عَهْدِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي ثِمَارٍ ابْتَاعَهَا فَكَثُرَ دينه فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «تَصَدَّقُوا عَلَيْهِ» فَتَصَّدَّقَ النَّاسُ عَلَيْهِ فَلَمْ يَبْلُغْ ذَلِك وَفَاء دينه فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِغُرَمَائِهِ «خُذُوا مَا وَجَدْتُمْ وَلَيْسَ لَكُمْ إِلَّا ذَلِك» . رَوَاهُ مُسلم

وعن ابي سعيد قال اصيب رجل في عهد النبي صلى الله عليه وسلم في ثمار ابتاعها فكثر دينه فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم تصدقوا عليه فتصدق الناس عليه فلم يبلغ ذلك وفاء دينه فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم لغرماىه خذوا ما وجدتم وليس لكم الا ذلك رواه مسلم

ব্যাখ্যা: আলোচ্য হাদীসে এ মর্মে দলীল রয়েছে যে, মসজিদের ঋণের পাওনা চাওয়া জায়িয। পাওনাদারের জন্য সুপারিশ করা, বিবাদ মীমাংসা করা, উত্তম মধ্যস্থতা করা, নাফরমানীবিহীন সুপারিশ গ্রহণ করা এবং প্রয়োজনীয় কাজের ইঙ্গিত করা জায়িয। (মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১২: ক্রয়-বিক্রয় (ব্যবসা) (كتاب البيوع) 12. Business Transactions

পরিচ্ছেদঃ ৯. প্রথম অনুচ্ছেদ - দেউলিয়া (দারিদ্র্য) হওয়া এবং ঋণীকে অবকাশ দান

২৯০১-[৩] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ এক ব্যক্তি লোকেদেরকে ধার দিত। সে তার কর্মচারীকে বলে দিত, কোনো পাওনাদারকে (ঋণ পরিশোধে) অক্ষম দেখলে তাকে মুক্তি দিয়ে দিও। এর ওয়াসীলায় হয়তো আল্লাহ তা’আলা আমাদেরকে মুক্তি দিবেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ অতঃপর (মৃত্যুর পর) ঐ ব্যক্তি আল্লাহর দরবারে পৌঁছলে আল্লাহ তা’আলা তাকে মুক্তি করে দিলেন। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

بَابُ الْإفْلَاسِ وَالْاِنْظَارِ

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: كَانَ رجل يدائن النَّاسَ فَكَانَ يَقُولُ لِفَتَاهُ: إِذَا أَتَيْتَ مُعْسِرًا تجَاوز عَنهُ لَعَلَّ الله أَن يَتَجَاوَزُ عَنَّا قَالَ: فَلَقِيَ اللَّهَ فَتَجَاوَزَ عَنْهُ

وعن ابي هريرة رضي الله عنه ان النبي صلى الله عليه وسلم قال كان رجل يداىن الناس فكان يقول لفتاه اذا اتيت معسرا تجاوز عنه لعل الله ان يتجاوز عنا قال فلقي الله فتجاوز عنه

ব্যাখ্যা: আলোচ্য হাদীস থেকে বুঝা যায় যে, কারো প্রতি ঋণের বোঝা হালকা করাটাই নেকীর কাজ। যদি সেটা একমাত্র আল্লাহর জন্যই হয়ে থাকে এবং তা অসংখ্য পাপের কাফফারা হবে। আর যে ব্যক্তি এমন কাজের নির্দেশ দিবে তার জন্যও রয়েছে প্রতিদান। আমাদের পূর্ববর্তী শারী‘আত যখন আমাদের শারী‘আতে প্রশংসা ধারায় এসেছে, সুতরাং তা আমাদের জন্য পুণ্যের কাজ। (মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১২: ক্রয়-বিক্রয় (ব্যবসা) (كتاب البيوع) 12. Business Transactions

পরিচ্ছেদঃ ৯. প্রথম অনুচ্ছেদ - দেউলিয়া (দারিদ্র্য) হওয়া এবং ঋণীকে অবকাশ দান

২৯০২-[৪] আবূ কাতাদাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি এ কামনা করে যে, আল্লাহ তা’আলা তাকে কিয়ামত দিবসের দুঃখ-কষ্ট হতে মুক্তি দেন, সে যেন অক্ষম ঋণগ্রস্তকে সহজ উপায় করে দেয় অথবা ঋণ মাওকূফ করে দেয়। (মুসলিম)[1]

بَابُ الْإفْلَاسِ وَالْاِنْظَارِ

وَعَنْ أَبِي قَتَادَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ سَرَّهُ أَنْ يُنْجِيَهُ اللَّهُ مِنْ كُرَبِ يَوْمِ الْقِيَامَةِ فَلْيُنَفِّسْ عَنْ مُعْسِرٍ أَوْ يَضَعْ عَنْهُ» . رَوَاهُ مُسْلِمٌ

وعن ابي قتادة قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من سره ان ينجيه الله من كرب يوم القيامة فلينفس عن معسر او يضع عنه رواه مسلم

হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১২: ক্রয়-বিক্রয় (ব্যবসা) (كتاب البيوع) 12. Business Transactions

পরিচ্ছেদঃ ৯. প্রথম অনুচ্ছেদ - দেউলিয়া (দারিদ্র্য) হওয়া এবং ঋণীকে অবকাশ দান

২৯০৩-[৫] উক্ত রাবী [আবূ কাতাদাহ (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি অক্ষম ঋণীকে সময় দিবে অথবা ঋণ মাওকূফ করে দেবে, আল্লাহ তা’আলা কিয়ামত দিবসের দুঃখ-কষ্ট হতে তাকে মুক্তি দান করবেন। (মুসলিম)[1]

بَابُ الْإفْلَاسِ وَالْاِنْظَارِ

وَعَنْهُ قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «مَنْ أَنْظَرَ مُعْسِرًا أَوْ وَضَعَ عَنْهُ أَنْجَاهُ اللَّهُ مِنْ كُرَبِ يَوْمِ الْقِيَامَة» . رَوَاهُ مُسلم

وعنه قال سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول من انظر معسرا او وضع عنه انجاه الله من كرب يوم القيامة رواه مسلم

হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১২: ক্রয়-বিক্রয় (ব্যবসা) (كتاب البيوع) 12. Business Transactions

পরিচ্ছেদঃ ৯. প্রথম অনুচ্ছেদ - দেউলিয়া (দারিদ্র্য) হওয়া এবং ঋণীকে অবকাশ দান

২৯০৪-[৬] আবুল ইয়াসার হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি অক্ষম ঋণীকে সময়দান করবে অথবা তার ঋণ মাওকূফ করবে, আল্লাহ তা’আলা (কিয়ামত দিবসে) তাকে তাঁর ছায়া দান করবেন। (মুসলিম)[1]

بَابُ الْإفْلَاسِ وَالْاِنْظَارِ

وَعَنْ أَبِي الْيَسَرِ قَالَ: سَمِعْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «مَنْ أَنْظَرَ مُعْسِرًا أَوْ وَضَعَ عَنْهُ أَظَلَّهُ اللَّهُ فِي ظِلِّهِ» . رَوَاهُ مُسلم

وعن ابي اليسر قال سمعت النبي صلى الله عليه وسلم يقول من انظر معسرا او وضع عنه اظله الله في ظله رواه مسلم

হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবুল ইয়াসার (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১২: ক্রয়-বিক্রয় (ব্যবসা) (كتاب البيوع) 12. Business Transactions

পরিচ্ছেদঃ ৯. প্রথম অনুচ্ছেদ - দেউলিয়া (দারিদ্র্য) হওয়া এবং ঋণীকে অবকাশ দান

২৯০৫-[৭] আবূ রাফি’ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (জনৈক ব্যক্তিকে) একটি যুবা উট ধার নিলেন। অতঃপর সাদাকার উট (সরকারী কোষাগারে) আমদানী হলে আবূ রাফি’ আমাকে তার ঋণ পরিশোধ করতে আদেশ করলেন। আমি বললাম, শুধুমাত্র উটনীর বাচ্চা আছে (যা তুলনামূলকভাবে বড়)। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ সেই বড়টিই তাকে দিয়ে দাও; অবশ্যই লোকেদের মধ্যে ঐ ব্যক্তি উত্তম যে তার প্রাপ্য পরিশোধে উত্তমতা অবলম্বন করে। (মুসলিম)[1]

بَابُ الْإفْلَاسِ وَالْاِنْظَارِ

وَعَن أبي رَافع قَالَ: اسْتَسْلَفَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بَكْرًا فَجَاءَتْهُ إِبِلٌ مِنَ الصَّدَقَةِ قَالَ: أَبُو رَافِعٍ فَأَمَرَنِي أَنْ أَقْضِيَ الرَّجُلَ بَكْرَهُ فَقُلْتُ: لَا أَجِدُ إِلَّا جَمَلًا خِيَارًا رَبَاعِيًا فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَعْطِهِ إِيَّاهُ فَإِنَّ خَيْرَ النَّاسِ أَحْسَنُهُمْ قَضَاءً» . رَوَاهُ مُسلم

وعن ابي رافع قال استسلف رسول الله صلى الله عليه وسلم بكرا فجاءته ابل من الصدقة قال ابو رافع فامرني ان اقضي الرجل بكره فقلت لا اجد الا جملا خيارا رباعيا فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم اعطه اياه فان خير الناس احسنهم قضاء رواه مسلم

হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ রাফি‘ (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১২: ক্রয়-বিক্রয় (ব্যবসা) (كتاب البيوع) 12. Business Transactions

পরিচ্ছেদঃ ৯. প্রথম অনুচ্ছেদ - দেউলিয়া (দারিদ্র্য) হওয়া এবং ঋণীকে অবকাশ দান

২৯০৬-[৮] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক লোক রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট কঠোরতার সাথে প্রাপ্যের তাগাদা করল; এতে সাহাবীগণ তার ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে উঠলেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সাহাবীগণকে বললেন, তাকে কিছু বলো না। কেননা পাওনাদার কঠোরতা প্রয়োগের অধিকার রাখে। তার প্রাপ্য পরিশোধের জন্য একটি উট কিনে তাকে দিয়ে দাও। সাহাবীগণ বললেন, তার প্রাপ্য বড় উট ছাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, বড়টিই ক্রয় করে তাকে দিয়ে দাও। তোমাদের মধ্যে ঐ ব্যক্তি উত্তম, যে অন্যের প্রাপ্য পরিশোধে উত্তম হয়। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

بَابُ الْإفْلَاسِ وَالْاِنْظَارِ

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ أَنَّ رَجُلًا تَقَاضَى رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَأَغْلَظَ لَهُ فَهَمَّ أَصْحَابُهُ فَقَالَ: «دَعُوهُ فَإِنَّ لِصَاحِبِ الْحَقِّ مَقَالًا وَاشْتَرُوا لَهُ بَعِيرًا فَأَعْطُوهُ إِيَّاهُ» قَالُوا: لَا نَجِدُ إِلَّا أَفْضَلَ مِنْ سِنِّهِ قَالَ: «اشْتَرُوهُ فَأَعْطُوهُ إِيَّاهُ فَإِنَّ خَيْرَكُمْ أحسنكم قَضَاء»

وعن ابي هريرة ان رجلا تقاضى رسول الله صلى الله عليه وسلم فاغلظ له فهم اصحابه فقال دعوه فان لصاحب الحق مقالا واشتروا له بعيرا فاعطوه اياه قالوا لا نجد الا افضل من سنه قال اشتروه فاعطوه اياه فان خيركم احسنكم قضاء

ব্যাখ্যা: আলোচ্য হাদীস দু’টি থেকে প্রতীয়মান হয় যে, অন্যের কাছ থেকে কর্জে হাসানাহ্ ও ঋণ গ্রহণ বৈধ। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রয়োজনীয় কর্জ নিতেন এবং তিনি আল্লাহ তা‘আলার কাছে ঋণ থেকে আশ্রয় কামনা করতেন। আর এখানে এটাও প্রমাণিত হয় যে, প্রাণীর ক্ষেত্রেও বাকী বিক্রি বৈধ। তার হুকুম হলো, কর্জ বা হাওলাদের অনুরূপ হুকুম।

যার ওপর ঋণ রয়েছে সেটা হাওলাদ কিংবা অন্য যে কোনো বিষয়ে হোক, তা পরিশোধের সময় কিছু বৃদ্ধি দেয়া মুস্তাহাব আর এটাই সুন্নাত ও উত্তম আদর্শের অন্তর্ভুক্ত। তবে কখনই এটি ঋণের সাথে চলমান থাকবে না, কারণ এটি নিষিদ্ধ। কেননা কর্জ বা ঋণের চুক্তির সময় যা শর্তারোপ করা হয় তা নিষিদ্ধ এবং এটাই সুদ। তবে ঋণ পরিশোধের সময় সন্তষ্টচিত্তে ঋণদাতাকে কিছু বর্ধিত মাল বা অন্য কিছু প্রদান করা মুস্তাহাব। (মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১২: ক্রয়-বিক্রয় (ব্যবসা) (كتاب البيوع) 12. Business Transactions

পরিচ্ছেদঃ ৯. প্রথম অনুচ্ছেদ - দেউলিয়া (দারিদ্র্য) হওয়া এবং ঋণীকে অবকাশ দান

২৯০৭-[৯] উক্ত রাবী [আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সক্ষম ব্যক্তির জন্য (অন্যের দেনা পরিশোধে) গড়িমসি করা জুলুম। ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি দেনা পরিশোধের জন্য কোনো সক্ষম ব্যক্তির ওপর দায়িত্ব অর্পণ করলে তা গৃহীত করা কর্তব্য। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

بَابُ الْإفْلَاسِ وَالْاِنْظَارِ

وَعَنْهُ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «مَطْلُ الْغَنِيِّ ظُلْمٌ فَإِذَا أُتْبِعَ أحدكُم على مَلِيء فَليتبعْ»

وعنه ان رسول الله صلى الله عليه وسلم قال مطل الغني ظلم فاذا اتبع احدكم على مليء فليتبع

ব্যাখ্যা: ঋণের প্রাপক ব্যক্তি যদি ধনীও হয় তবুও ঋণ পরিশোধ করা ওয়াজিব। ধনাঢ্য হওয়া তার প্রাপ্য বিলম্ব হওয়ার কারণ নয়। ধনীর ব্যাপারে যখন এমন বিধান, তখন প্রাপক ব্যক্তি যদি গরীব হয় তাহলে তো সেটা ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে আরো অগ্রগামী। সুতরাং এ মর্মে ব্যাখ্যায় আর অস্পষ্টতা থাকে না। ‘উলামাগণের মাঝে এ মর্মে মতপার্থক্য রয়েছে যে, পাওনাদার চাওয়ার পূর্বেই পরিশোধে সক্ষম ব্যক্তি পরিশোধে বিলম্ব করলে সে ফাসিক হবে কিনা। তবে আলোচ্য হাদীসটি পাওনাদারের চাওয়ার উপর নির্ভর করছে। এছাড়া অন্যান্য হকদার যারা রয়েছেন, যেমন- স্ত্রীর প্রতি স্বামীর হক, দাসের প্রতি মুনীবের ও প্রজার প্রতি রাজার হক এবং এর বিপরীত দিকটা, অর্থাৎ- স্বামীর প্রতি স্ত্রীর হক, মুনীবের প্রতি দাসের হক, রাজার প্রতি প্রজার হক- এসবগুলোই এ হুকুমের অন্তর্ভুক্ত হবে। কিন্তু ঋণ পরিশোধে অক্ষম ব্যক্তির টালবাহানা করা জুলুমের অন্তর্ভুক্ত হবে না। (ফাতহুল বারী ৪র্থ খন্ড, হাঃ ২২৮৭)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১২: ক্রয়-বিক্রয় (ব্যবসা) (كتاب البيوع) 12. Business Transactions

পরিচ্ছেদঃ ৯. প্রথম অনুচ্ছেদ - দেউলিয়া (দারিদ্র্য) হওয়া এবং ঋণীকে অবকাশ দান

২৯০৮-[১০] কা’ব ইবনু মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সময়ে একদিন মসজিদের মধ্যে ইবনু আবূ হাদরাদ-কে তাঁর প্রাপ্য ঋণের তাগাদা করলেন। উভয়ের কথোপকথনে উচ্চ আওয়াজের সৃষ্টি হলো। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজ ঘর থেকে তা শুনতে পেয়ে দরজার পর্দা উঠিয়ে বললেন, হে কা’ব! কা’ব উপস্থিত বলে ছুটে আসলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাতের ইশারায় বললেন, তাকে তার প্রাপ্য ঋণের অর্ধেক মাফ করে দাও। কা’ব বললেন, হে আল্লাহর রসূল! আমি তা-ই করলাম। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ঋণগ্রস্ত ব্যক্তিকে বললেন, এবার অবশিষ্ট ঋণ পরিশোধ করে দাও। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

بَابُ الْإفْلَاسِ وَالْاِنْظَارِ

وَعَنْ كَعْبِ بْنِ مَالِكٍ: أَنَّهُ تَقَاضَى ابْنَ أَبِي حَدْرَدٍ دَيْنًا لَهُ عَلَيْهِ فِي عَهْدِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي الْمَسْجِدِ فَارْتَفَعَتْ أَصْوَاتُهُمَا حَتَّى سَمِعَهَا رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهُوَ فِي بَيْتِهِ فَخَرَجَ إِلَيْهِمَا رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَتَّى كَشَفَ سِجْفَ حُجْرَتِهِ وَنَادَى كَعْبَ بْنَ مَالِكٍ قَالَ: «يَا كَعْبُ» قَالَ: لَبَّيْكَ يَا رَسُولَ اللَّهِ فَأَشَارَ بِيَدِهِ أَنْ ضَعِ الشَّطْرَ مِنْ دَيْنِكَ قَالَ كَعْبٌ: قَدْ فَعَلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ: «قُمْ فاقضه»

وعن كعب بن مالك انه تقاضى ابن ابي حدرد دينا له عليه في عهد رسول الله صلى الله عليه وسلم في المسجد فارتفعت اصواتهما حتى سمعها رسول الله صلى الله عليه وسلم وهو في بيته فخرج اليهما رسول الله صلى الله عليه وسلم حتى كشف سجف حجرته ونادى كعب بن مالك قال يا كعب قال لبيك يا رسول الله فاشار بيده ان ضع الشطر من دينك قال كعب قد فعلت يا رسول الله قال قم فاقضه

হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১২: ক্রয়-বিক্রয় (ব্যবসা) (كتاب البيوع) 12. Business Transactions

পরিচ্ছেদঃ ৯. প্রথম অনুচ্ছেদ - দেউলিয়া (দারিদ্র্য) হওয়া এবং ঋণীকে অবকাশ দান

২৯০৯-[১১] সালামাহ্ ইবনুল আক্ওয়া’ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে বসা ছিলাম। এমতাবস্থায় একটি জানাযা উপস্থিত করা হলো। লোকেরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জানাযার সালাত আদায়ের অনুরোধ করলো। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জিজ্ঞেস করলেন, মৃত লোকের ওপর কোনো ঋণ আছে কি? তারা বলল, না। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জানাযার সালাত আদায় করলেন। অতঃপর অপর একটি জানাযা আনা হলো। সেটির ব্যাপারেও তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জিজ্ঞেস করলেন, মৃত ব্যক্তির ওপর কোনো ঋণ আছে কি? তখন বলা হলো, হ্যাঁ, আছে। জিজ্ঞেস করলেন, (ঋণ পরিশোধে) কোনো কিছু রেখে গেছে কি? লোকেরা বলল, হ্যাঁ, তিনটি স্বর্ণমুদ্রা রেখে গেছে। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এ জানাযার সালাত আদায় করলেন।

অতঃপর আরেকটি জানাযা উপস্থিত করা হলে সেটির ব্যাপারেও তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জিজ্ঞেস করলেন, তার ওপর কোনো ঋণ আছে কি? লোকেরা বলল, তিনটি স্বর্ণমুদ্রা তার ওপর ঋণ আছে। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জিজ্ঞেস করলেন, কিছু রেখে গেছে কি? লোকেরা বলল, না। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তোমরা তোমাদের ভাইয়ের জানাযার সালাত আদায় করে নাও। আবূ কাতাদাহ (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রসূল! এ লোকের জানাযার সালাত আদায় করিয়ে দিন, আমি তার ঋণ পরিশোধের দায়িত্ব নিলাম। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তার জানাযার সালাত আদায় করিয়ে দিলেন। (বুখারী)[1]

بَابُ الْإفْلَاسِ وَالْاِنْظَارِ

وَعَن سَلمَة بن الْأَكْوَع قَالَ: كُنَّا جُلُوسًا عِنْدَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذْ أُتِيَ بِجِنَازَةٍ فَقَالُوا: صَلِّ عَلَيْهَا فَقَالَ: «هَلْ عَلَيْهِ دَيْنٌ؟» قَالُوا: لَا فَصَلَّى عَلَيْهَا ثُمَّ أُتِيَ بِجِنَازَةٍ أُخْرَى فَقَالَ: «هَل عَلَيْهِ دين؟» قَالُوا: نعم فَقَالَ: «فَهَلْ تَرَكَ شَيْئًا؟» قَالُوا: ثَلَاثَةَ دَنَانِيرَ فَصَلَّى عَلَيْهَا ثمَّ أُتِي بالثالثة فَقَالَ: «هَلْ عَلَيْهِ دَيْنٌ؟» قَالُوا: ثَلَاثَةُ دَنَانِيرَ قَالَ: «هَلْ تَرَكَ شَيْئًا؟» قَالُوا: لَا قَالَ: «صلوا على صَاحبكُم» قَالَ أَبُو قَتَادَة: صلى الله عَلَيْهِ وَسلم عَلَيْهِ يَا رَسُولَ اللَّهِ وَعَلَيَّ دَيْنُهُ فَصَلَّى عَلَيْهِ. رَوَاهُ البُخَارِيّ

وعن سلمة بن الاكوع قال كنا جلوسا عند النبي صلى الله عليه وسلم اذ اتي بجنازة فقالوا صل عليها فقال هل عليه دين قالوا لا فصلى عليها ثم اتي بجنازة اخرى فقال هل عليه دين قالوا نعم فقال فهل ترك شيىا قالوا ثلاثة دنانير فصلى عليها ثم اتي بالثالثة فقال هل عليه دين قالوا ثلاثة دنانير قال هل ترك شيىا قالوا لا قال صلوا على صاحبكم قال ابو قتادة صلى الله عليه وسلم عليه يا رسول الله وعلي دينه فصلى عليه رواه البخاري

ব্যাখ্যা: দারাকুত্বনীতে ‘আলী (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত রয়েছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কোনো জানাযায় যেতেন তখন মৃত ব্যক্তির ‘আমল সম্পর্কে কোনো কিছু জিজ্ঞেস করতেন না, বরং তিনি তার ঋণ আছে কিনা এটা জিজ্ঞেস করতেন, যদি বলা হত ঋণ আছে তবে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সে জানাযা হতে নিজেকে বিরত রাখতেন। আর যদি বলা হত তার কোনো ঋণ নেই, তবে তিনি জানাযার সালাত আদায় করতেন। একবার আগন্তুক এক জানাযায় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর তাকবীর দেয়া মুহূর্তে তাকে বলা হলো, তার দুই দিরহাম ঋণ রয়েছে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জানাযা থেকে বিরত হলেন এবং ‘আলী উক্ত ঋণের দায়িত্ব নিলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জানাযা আদায় করলেন এবং ‘আলী -এর জন্য দু‘আ করলেন। ‘‘জাযা-কাল্লা-হু খইরান ওয়া ফাক্কাল্লা-হু রাহানাক’’ অর্থাৎ- আল্লাহ তোমাকে উত্তম প্রতিদান দান করুন এবং আল্লাহ তোমার ঋণের বোঝা হালকা করুন।

ইবনুল বাত্ত্বল (রহঃ) বলেনঃ জুমহূর ‘উলামাগণের মতে ঋণের দায়িত্ব নেয়া বৈধ। কেউ দায়িত্ব নিলে এ ঋণ পরিশোধ মৃত ব্যক্তির পরিত্যক্ত সম্পদের দিকে বর্তাবে না। ইমাম মালিক (রহঃ)-এর মতে বর্তাবে। ইমাম আবূ হানীফাহ্ (রহঃ)-এর মতে মৃত ব্যক্তি ঋণ পরিশোধের মতো সম্পদ থাকলে ঋণের জিম্মাদার ব্যক্তি তা থেকে ঋণ পরিশোধ করতে পারবে। আর মৃত ব্যক্তির ঋণ পরিশোধের মতো সম্পদ না থাকলে, জিম্মাদারের নিজের পক্ষ হতে ঋণ পরিশোধ করতে হবে। (ফাতহুল বারী ৪র্থ খন্ড, হাঃ ২২৮৯)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১২: ক্রয়-বিক্রয় (ব্যবসা) (كتاب البيوع) 12. Business Transactions

পরিচ্ছেদঃ ৯. প্রথম অনুচ্ছেদ - দেউলিয়া (দারিদ্র্য) হওয়া এবং ঋণীকে অবকাশ দান

২৯১০-[১২] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে লোক পরিশোধের নিয়্যাতে অপর লোকের মাল (ঋণরূপে) গ্রহণ করে, আল্লাহ তা’আলা তার ঋণ পরিশোধ করে দেন। আর যে লোক বিনষ্ট করার নিয়্যাতে ঋণদাতার মাল গ্রহণ করে আল্লাহ তা’আলা তাকে ধ্বংস করে দেন। (বুখারী)[1]

بَابُ الْإفْلَاسِ وَالْاِنْظَارِ

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «مَنْ أَخَذَ أَمْوَالَ النَّاسِ يُرِيدُ أَدَاءَهَا أَدَّى اللَّهُ عَنْهُ وَمَنْ أَخَذَ يُرِيدُ إِتْلَافَهَا أَتْلَفَهُ اللَّهُ عَلَيْهِ» . رَوَاهُ الْبُخَارِيُّ

وعن ابي هريرة عن النبي صلى الله عليه وسلم قال من اخذ اموال الناس يريد اداءها ادى الله عنه ومن اخذ يريد اتلافها اتلفه الله عليه رواه البخاري

ব্যাখ্যা: ইবনুল বাত্ত্বল (রহঃ) বলেনঃ এখানে অন্যের সম্পদ কুক্ষিগত না করা ও ঋণ উত্তমরূপে আদায় করার প্রতি উৎসাহ দেয়া হয়েছে। আর প্রতিদান দেয়া হবে ‘আমলের ভিত্তিতে। ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর বর্ণনা রয়েছে যে, বান্দার ঋণ পরিশোধে নিয়্যাত থাকলে আল্লাহ তা‘আলা তাকে ঋণ পরিশোধে সাহায্য করবেন। তিনি বলেন, আমি সে সাহায্য অনুসন্ধান করতাম। (ফাতহুল বারী ৪র্থ খন্ড, হাঃ ২৩৮৭)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১২: ক্রয়-বিক্রয় (ব্যবসা) (كتاب البيوع) 12. Business Transactions

পরিচ্ছেদঃ ৯. প্রথম অনুচ্ছেদ - দেউলিয়া (দারিদ্র্য) হওয়া এবং ঋণীকে অবকাশ দান

২৯১১-[১৩] আবূ কাতাদাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক লোক জিজ্ঞেস করলো, হে আল্লাহর রসূল! আমি জানতে চাই, যদি দৃঢ়পদ থেকে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশে পশ্চাদপদ না হয়ে সম্মুখপানে অগ্রসর হয়ে আল্লাহর পথে শহীদ হই, তবে কি আল্লাহ আমার সব গুনাহ মাফ করে দেবেন? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হ্যাঁ। অতঃপর ঐ লোক চলে যেতে উদ্যত হলে পিছন থেকে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাকে ডেকে বললেন, কিন্তু ঋণ ক্ষমা করা হবে না। জিবরীল (আঃ) এসে এ কথাটিই বলে গেলেন। (মুসলিম)[1]

بَابُ الْإفْلَاسِ وَالْاِنْظَارِ

وَعَن أبي قَتَادَة قَالَ: قَالَ رَجُلٌ: يَا رَسُولَ اللَّهِ أَرَأَيْتَ إِنْ قُتِلْتُ فِي سَبِيلِ اللَّهِ صَابِرًا مُحْتَسِبًا مُقبلا غير مُدبر يكفر اللَّهُ عَنِّي خَطَايَايَ؟ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «نَعَمْ» . فَلَمَّا أَدْبَرَ نَادَاهُ فَقَالَ: «نَعَمْ إِلَّا الدَّيْنَ كَذَلِكَ قَالَ جِبْرِيلُ» . رَوَاهُ مُسْلِمٌ

وعن ابي قتادة قال قال رجل يا رسول الله ارايت ان قتلت في سبيل الله صابرا محتسبا مقبلا غير مدبر يكفر الله عني خطاياي فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم نعم فلما ادبر ناداه فقال نعم الا الدين كذلك قال جبريل رواه مسلم

ব্যাখ্যা: একমাত্র আল্লাহর জন্য ইখলাস নিয়্যাতের সাথে যে যুদ্ধ করবে তার জন্য উল্লেখিত সাওয়াব প্রযোজ্য। বংশীয় মর্যাদা, গনীমাত ও বীরত্ব কিংবা অন্য কিছুর আশায় যুদ্ধ করলে উল্লেখিত সাওয়াব প্রযোজ্য নয়। আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কথায় (إِلَّا الدَّيْنَ বা ঋণ ব্যতীত) এ মর্মে সতর্কবাণী রয়েছে যে, জিহাদ, শাহাদাতের মৃত্যু কিংবা অন্যান্য ‘আমল কখনো মানবীয় অধিকারের কাফফারা হবে না। এগুলো শুধু আল্লাহ তা‘আলার হক আদায়ের ক্ষেত্রে কাফফারা হবে। (শারহে মুসলিম ১৩শ খন্ড, হাঃ ১৮৮৫)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১২: ক্রয়-বিক্রয় (ব্যবসা) (كتاب البيوع) 12. Business Transactions

পরিচ্ছেদঃ ৯. প্রথম অনুচ্ছেদ - দেউলিয়া (দারিদ্র্য) হওয়া এবং ঋণীকে অবকাশ দান

২৯১২-[১৪] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ শাহীদের ঋণ ছাড়া সব গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হয়। (মুসলিম)[1]

بَابُ الْإفْلَاسِ وَالْاِنْظَارِ

وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «يُغْفَرُ لِلشَّهِيدِ كل ذَنْب إِلَّا الدّين» . رَوَاهُ مُسلم

وعن عبد الله بن عمرو ان رسول الله صلى الله عليه وسلم قال يغفر للشهيد كل ذنب الا الدين رواه مسلم

হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১২: ক্রয়-বিক্রয় (ব্যবসা) (كتاب البيوع) 12. Business Transactions

পরিচ্ছেদঃ ৯. প্রথম অনুচ্ছেদ - দেউলিয়া (দারিদ্র্য) হওয়া এবং ঋণীকে অবকাশ দান

২৯১৩-[১৫] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে ঋণগ্রস্ত ব্যক্তির জানাযা উপস্থিত করা হলে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জিজ্ঞেস করতেন, তার ঋণ পরিশোধের ব্যবস্থা রেখে গেছে কি? যদি বলা হতো, হ্যাঁ, ঋণ পরিশোধের ব্যবস্থা রেখে গেছে, তবে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তার জানাযার সালাত আদায় করতেন। অন্যথায় মুসলিমদের উদ্দেশে বলতেন, তোমরা তোমাদের সাথীর জানাযার সালাত আদায় করে নাও। অতঃপর আল্লাহ তা’আলা যখন তাঁকে বিভিন্ন জিহাদে বিজয় দিলেন, তখন বললেন, আমি মু’মিনদের জন্য তাদের নিজের চেয়ে অধিক কল্যাণকামী। এমতাবস্থায় মু’মিনদের মধ্য হতে কেউ ঋণ পরিশোধ না করে মৃত্যুবরণ করলে, তা পরিশোধের দায়িত্ব আমার ওপর বর্তাবে। পক্ষান্তরে মৃত ব্যক্তি ধন-সম্পদ রেখে গেলে তা তার উত্তরাধিকারীগণ পাবে। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

بَابُ الْإفْلَاسِ وَالْاِنْظَارِ

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُؤْتَى بِالرَّجُلِ الْمُتَوَفَّى عَلَيْهِ الدِّينُ فَيَسْأَلُ: «هَلْ تَرَكَ لِدَيْنِهِ قَضَاءً؟» فَإِنْ حُدِّثَ أَنَّهُ تَرَكَ وَفَاءً صَلَّى وَإِلَّا قَالَ لِلْمُسْلِمِينَ: «صَلُّوا عَلَى صَاحِبِكُمْ» . فَلَمَّا فَتَحَ اللَّهُ عَلَيْهِ الْفُتُوحَ قَامَ فَقَالَ: «أَنَا أَوْلَى بِالْمُؤْمِنِينَ مِنْ أَنْفُسِهِمْ فَمَنْ تُوفِّيَ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ فَتَرَكَ دينا فعلي قَضَاؤُهُ وَمن ترك فَهُوَ لوَرثَته»

وعن ابي هريرة قال كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يوتى بالرجل المتوفى عليه الدين فيسال هل ترك لدينه قضاء فان حدث انه ترك وفاء صلى والا قال للمسلمين صلوا على صاحبكم فلما فتح الله عليه الفتوح قام فقال انا اولى بالمومنين من انفسهم فمن توفي من المومنين فترك دينا فعلي قضاوه ومن ترك فهو لورثته

ব্যাখ্যা: ‘উলামাগণ বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ঋণগ্রস্ত ব্যক্তির জানাযার সালাত না আদায় করার কারণ হলো, মানুষদেরকে তাদের জীবদ্দশাতেই ঋণ পরিশোধের উপর উৎসাহিত করা এবং ঋণমুক্ত মৃত্যুবরণ করা। তা না হলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জানাযা আদায় হতে বঞ্চিত হবে। তবে ঋণগ্রস্ত ব্যক্তির ওপর জানাযা হারাম কিনা- এ ব্যাপারে ইমাম নববী (রহঃ) বলেন, জানাযার বৈধতা ঋণের জিম্মাদারদের ওপর নির্ভর করবে। অর্থাৎ- যদি ঋণ পরিশোধের জিম্মাদার কেউ থাকে তবে তার জানাযা আদায় করা বৈধ। যেমনটা সহীহ মুসলিমে বর্ণিত রয়েছে। (ফাতহুল বারী ৪র্থ খন্ড, হাঃ ২২৯৮)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১২: ক্রয়-বিক্রয় (ব্যবসা) (كتاب البيوع) 12. Business Transactions
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ১৫ পর্যন্ত, সর্বমোট ১৫ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে