পরিচ্ছেদঃ ৭. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - মৌলিক দু‘আসমূহ

২৪৮৮-[৭] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’আ করতেন,

’’রব্বি আ’ইন্নী ওয়ালা- তু’ইন্ ’আলাইয়্যা ওয়ানসুরনী ওয়ালা- তানসুর ’আলাইয়্যা ওয়াম্‌কুরলী ওয়ালা- তাম্‌কুর ’আলাইয়্যা ওয়াহদিনী ওয়া ইয়াস্‌সিরিল হুদা- লী ওয়ানসুরনী ’আলা- মান্ বাগা- ’আলাইয়্যা রব্বিজ্’আলনী লাকা শা-কিরান লাকা যা-কিরান লাকা র-হিবান লাকা মিত্বওয়া-’আন লাকা মুখবিতান ইলায়কা আও্ওয়া-হান মুনীবান রব্বি তাকব্বাল তাওবাতী ওয়াগসিল হাওবাতী ওয়াআজিব্ দা’ওয়াতী ওয়া সাব্বিত্ হুজ্জাতী ওয়া সাদ্দিদ্ লিসা-নী ওয়াহদি কলবী ওয়াসলুল সাখীমাতা সদরী’’

(অর্থাৎ- হে রব! আমাকে সাহায্য করো, আমার বিপক্ষে সাহায্য করো না। আমাকে সহযোগিতা করো আমার বিরুদ্ধে সহযোগিতা করো না। আমার পক্ষে উপায়-উপকরণ উদ্ভাবন করো, আমার বিরুদ্ধে উপায়-উপকরণ উদ্ভাবন করো না। আমাকে পথ দেখাও, আমার জন্য পথ সহজ করে দাও। যে আমার ওপর জবরদস্তি করে, তার ওপর আমাকে বিজয়ী করো। হে রব! আমাকে তোমার প্রতি কৃতজ্ঞ বানাও। আমাকে তোমার জিকিরকারী করো, তোমার ভয়ে আমাকে ভীত-সন্ত্রস্ত করো। তোমার প্রতি অনুগত করো, তোমারই প্রতি বিনম্র করো। [অনুতপ্তের জন্য] তোমার কাছে মনের দুঃখ জানাতে শিখাও, তোমার প্রতি আমাকে ঝুকাও। হে রব! তুমি আমার তওবা্ কবূল করো, আমার গুনাহ ধুয়ে দাও। আমার ডাকে সাড়া দাও, আমার ঈমান দৃঢ় করো, আমার মুখ ঠিক রাখো, আমার অন্তরকে হিদায়াত দান করো এবং আমার অন্তরের কলুষতা দূরীভূত করো।)। (তিরমিযী, আবূ দাঊদ ও ইবনু মাজাহ)[1]

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَدْعُو يَقُولُ: «رَبِّ أَعِنِّي وَلَا تُعِنْ عَلَيَّ وَانْصُرْنِي وَلَا تَنْصُرْ عَلَيَّ وَامْكُرْ لِي وَلَا تَمْكُرْ عَلَيَّ وَاهْدِنِي وَيَسِّرِ الْهُدَى لِي وَانْصُرْنِي عَلَى مَنْ بَغَى عَلَيَّ ربِّ اجعَلني لكَ شَاكِرًا لَكَ ذَاكِرًا لَكَ رَاهِبًا لَكَ مِطْوَاعًا لَكَ مُخْبِتًا إِلَيْكَ أَوَّاهًا مُنِيبًا رَبِّ تَقَبَّلْ تَوْبَتِي وَاغْسِلْ حَوْبَتِي وَأَجِبْ دَعْوَتِي وَثَبِّتْ حُجَّتِي وَسَدِّدْ لِسَانِي وَاهْدِ قَلْبِي وَاسْلُلْ سَخِيمَةَ صَدْرِي» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ وَأَبُو دَاوُد وَابْن مَاجَه

عن ابن عباس قال كان النبي صلى الله عليه وسلم يدعو يقول رب اعني ولا تعن علي وانصرني ولا تنصر علي وامكر لي ولا تمكر علي واهدني ويسر الهدى لي وانصرني على من بغى علي رب اجعلني لك شاكرا لك ذاكرا لك راهبا لك مطواعا لك مخبتا اليك اواها منيبا رب تقبل توبتي واغسل حوبتي واجب دعوتي وثبت حجتي وسدد لساني واهد قلبي واسلل سخيمة صدري رواه الترمذي وابو داود وابن ماجه

ব্যাখ্যা: দীন ও দুনিয়া উভয় ক্ষেত্রে অন্তর, শয়তান, জিন্, মানুষ যে কারো পক্ষ থেকে আসা শত্রুতার মুকাবেলায় আমাকে সাহায্য করো। নিজের বিরুদ্ধে আল্লাহ কর্তৃক কৌশল উদ্ভাবন অর্থ হলো কোন ব্যক্তি হয়তো বাহ্যিকভাবে দেখবে যে, সে আল্লাহর নিয়ামত পাচ্ছে, দীর্ঘ জীবন, সুস্থতা ইত্যাদি পাচ্ছে। সে মনে করবে এগুলো তার ভাল কর্মের বিনিময়ে পাচ্ছে। মূলত সর্বদা তা নয়। সে যদিও ধারণা করছে যে, তার ‘ইবাদাত কবূল হয়েছে। বাস্তবে তার ‘ইবাদাতে রিয়া (লোক দেখানো), সুম্‘আহ (লোক শুনানো) ইত্যাদি থাকার কারণে তা আল্লাহর নিকট কবূল হয়নি। এর মাধ্যমে সে আল্লাহর কৌশলের শিকার হচ্ছে।

অন্যের প্রতি কৃতজ্ঞতা সর্বদা প্রকাশ করতে হয়। আল্লাহর নিয়ামতসমূহের কৃতজ্ঞতা জানানো জরুরী। সাথে সাথে গুনাহের কাজ, আল্লাহর রাগ ও অসন্তোষ থেকে সর্বদা ভীত-সন্ত্রস্ত থাকা উচিত। কৃতজ্ঞতা তিনভাবে প্রকাশ করা যায়-

[এক] অন্তরের মাধ্যমে, আর তা হলো মনে মনে এ কথা জানা যে, আমার ওপর আসা সকল নিয়ামত আল্লাহর পক্ষ থেকে এসেছে।

[দুই] কর্মের মাধ্যমে কৃতজ্ঞতা; আর তা হলো আল্লাহর আদেশ অনুযায়ী প্রতিটি নিয়ামত তার যথাযথ স্থানে রাখা।

[তিন] মুখের মাধ্যমে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার পর আল্লাহর প্রশংসাসূচক কথা মুখে উচ্চারণের মাধ্যমে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা।

(مِطْوَاعًا) ‘‘মিত্বওয়া-‘আন’’ অর্থ হলো আল্লাহর আদেশের বেশি বেশি আনুগত্য করা, তার আদেশসমূহ যথাযথভাবে পালন করা আর নিষেধ থেকে দূরে থাকা।

(مُخْبِتًا) ‘‘মুখবিতান’’ অর্থ হলো চরম বিনয়ী, বিনম্র ও ভীত হওয়া। এ শব্দটি কুরআনে এসেছে সূরা আল হজ ২২ : ৩৫ আয়াতে। মুনীব অর্থ হলো তাওবাহকারী, অবাধ্যতা থেকে আনুগত্যে ফিরে আসা, গাফলতি ছেড়ে আল্লাহর স্মরণে ফিরে আসা। কুরআনে ইব্রাহীম (আঃ)-কে মুনীব বলে আখ্যায়িত করা হয়- (দ্রঃ সূরা হূদ ১১ : ৭৫)। আমার ঈমান দৃঢ় রাখো দুনিয়া ও আখিরাতে আমার শত্রুর বিরুদ্ধে এবং কবরে সওয়াল-জবাবে। সত্য বলার ক্ষেত্রে আমার মুখকে ঠিক রাখো এবং আমার অন্তরকে সিরাতে মুস্তাক্বীমের প্রতি পরিচালিত করো।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১০: আল্লাহ তা‘আলার নামসমূহ (كتاب اسماء الله تعالٰى)

পরিচ্ছেদঃ ৭. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - মৌলিক দু‘আসমূহ

২৪৮৯-[৮] আবূ বকর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন মিম্বারের উপর দাঁড়িয়ে কেঁদে ফেললেন, অতঃপর বললেনঃ তোমরা আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো এবং শান্তি চাও। কেননা ঈমান আনার পর কাউকেও শান্তির চেয়ে উত্তম আর কিছু দেয়া হয় না। (তিরমিযী ও ইবনু মাজাহ; ইমাম তিরমিযী বলেন, হাদীসটি হাসান তবে সানাদ হিসেবে গরীব)[1]

وَعَن أبي بكرٍ قَالَ: قَامَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى الْمِنْبَرِ ثُمَّ بَكَى فَقَالَ: «سَلُوا اللَّهَ الْعَفْوَ وَالْعَافِيَةَ فَإِنَّ أَحَدًا لَمْ يُعْطَ بَعْدَ الْيَقِينِ خَيْرًا مِنَ الْعَافِيَةِ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَابْنُ مَاجَهْ وَقَالَ التِّرْمِذِيُّ: هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ غَرِيب إِسْنَادًا

وعن ابي بكر قال قام رسول الله صلى الله عليه وسلم على المنبر ثم بكى فقال سلوا الله العفو والعافية فان احدا لم يعط بعد اليقين خيرا من العافية رواه الترمذي وابن ماجه وقال الترمذي هذا حديث حسن غريب اسنادا

ব্যাখ্যা: রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এজন্যে কাঁদলেন যে, তিনি জানতে পেরেছিলেন তার উম্মাত বিভিন্ন ফিতনা, মনোবৃত্তি পূরণ, সম্পদ জমা করার লোভ ও সম্মান-মর্যাদা, খ্যাতি অর্জনের ভুল পথে পতিত হবে। তাই তিনি ফিতনা থেকে বাঁচার জন্য আল্লাহর নিকট ক্ষমা ও শান্তি কামনা করতে আদেশ দিয়েছেন।

(الْعَفْوَ) ‘‘আফ্ওয়া’’ অর্থ হচ্ছে গুনাহ থেকে বাঁচা, গুনাহের ক্ষমা পাওয়া ও গুনাহের শাস্তি থেকে পরিত্রাণ পাওয়া। (الْعَافِيَةَ) ‘‘আ-ফিয়াহ্’’ অর্থ হলো দীনের ক্ষেত্রে সকল ফিতনাহ্, পরীক্ষা থেকে এবং শারীরিকভাবে সকল রোগ ও ক্লান্তি থেকে নিরাপদ থাকা।

‘আ-ফিয়াহ্’ অর্থ এও হয় যে, আল্লাহ স্বয়ং বান্দার পক্ষ থেকে সকল বিপদ, বালা-মুসীবাত, রোগ-শোককে প্রতিরোধ করবেন। এর অর্থ এটাও হতে পারে যে, দুনিয়ার সকল কাজ সঠিকভাবে করতে পারা এবং দুনিয়ার অনিষ্ট থেকে নিরাপদ থাকা। এ দু‘আটি অন্যতম ব্যাপক দু‘আ। অনেক দু‘আতেই ‘আ-ফিয়াহ্ বা চাওয়ার কথা বলা হয়েছে। যার মাধ্যমে বুঝা যায়, প্রত্যেক বান্দার উচিত আল্লাহর কাছে বেশি বেশি ‘আ-ফিয়াহ্ (চাওয়া)। এ দু‘আতে অনেক ফায়দা রয়েছে।


হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১০: আল্লাহ তা‘আলার নামসমূহ (كتاب اسماء الله تعالٰى)

পরিচ্ছেদঃ ৭. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - মৌলিক দু‘আসমূহ

২৪৯০-[৯] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন জনৈক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে বললো, হে আল্লাহর রসূল! কোন্ দু’আ সর্বোত্তম? উত্তরে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তোমার রবের কাছে দুনিয়া ও আখিরাতের শান্তি ও নিরাপত্তা কামনা করো। অতঃপর সেই ব্যক্তি আবার দ্বিতীয় দিন এসে বললো, হে আল্লাহর রসূল! কোন্ দু’আ সর্বোত্তম? তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাকে আগের মতো বললেন। আবার সেই ব্যক্তি তৃতীয় দিন আসলো (একই প্রশ্ন করলে), তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আগের মতই উত্তর দিলেন। অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, দুনিয়া ও আখিরাতে যখন শান্তি ও নিরাপত্তা লাভ করলে, তখন মুক্তি লাভ করলে। (তিরমিযী ও ইবনু মাজাহ; ইমাম তিরমিযী বলেন, হাদীসটি হাসান তবে সানাদের দিক দিয়ে তা গরীব)[1]

وَعَنْ أَنَسٍ أَنَّ رَجُلًا جَاءَ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ أَيُّ الدُّعَاءِ أَفْضَلُ؟ قَالَ: «سَلْ رَبَّكَ الْعَافِيَةَ وَالْمُعَافَاةَ فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ» ثُمَّ أَتَاهُ فِي الْيَوْمِ الثَّانِي فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ أَيُّ الدُّعَاءِ أَفْضَلُ؟ فَقَالَ لَهُ مِثْلَ ذَلِكَ ثُمَّ أَتَاهُ فِي الْيَوْمِ الثَّالِثِ فَقَالَ لَهُ مِثْلَ ذَلِكَ قَالَ: «فَإِذَا أُعْطِيتَ الْعَافِيَةَ وَالْمُعَافَاةَ فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ فَقَدْ أَفْلَحْتَ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَابْنُ مَاجَهْ وَقَالَ التِّرْمِذِيُّ: هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ غَرِيب إِسْنَادًا

وعن انس ان رجلا جاء الى النبي صلى الله عليه وسلم فقال يا رسول الله اي الدعاء افضل قال سل ربك العافية والمعافاة في الدنيا والاخرة ثم اتاه في اليوم الثاني فقال يا رسول الله اي الدعاء افضل فقال له مثل ذلك ثم اتاه في اليوم الثالث فقال له مثل ذلك قال فاذا اعطيت العافية والمعافاة في الدنيا والاخرة فقد افلحت رواه الترمذي وابن ماجه وقال الترمذي هذا حديث حسن غريب اسنادا

ব্যাখ্যা: (الْعَافِيَةَ) ‘‘আ-ফিয়াহ্’’-এর চেয়ে যে দু‘আ করা হয় সে দু‘আ সকল দু‘আর মধ্যে শ্রেষ্ঠ দু‘আ। কারণ এ দু‘আর মধ্যে সকল কল্যাণ ও উপকারিতা অর্জন ও সকল অনিষ্ট ও খারাপী বর্জনের কামনা রয়েছে। জাযারী তাঁর নিহায়াহ্ গ্রন্থে বলেছেন, ‘আ-ফিয়াহ্ হলো সকল রোগ ও বিপদ থেকে নিরাপদ থেকে সুস্থ থাকা। (الْمُعَافَاةَ) ‘‘মু‘আ-ফা-হ্’’ অর্থ হলো অন্যান্য মানুষের অনিষ্টতা থেকে নিজেকে রক্ষা করা, অন্যের থেকে নিজেকে অমুখাপেক্ষী রাখা, অন্যরা যেন আমার থেকে কষ্ট না পায় এবং আমিও যেন অন্যদের থেকে কষ্ট না পাই এমন অবস্থা। লুম্‘আত গ্রন্থকার বলেন, এখানে ‘আ-ফিয়াহ্ বলতে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সকল প্রকাশ্য ও গোপন বিপদাপদ থেকে নিরাপদ থাকার কথা বুঝিয়েছেন।

এ হাদীস স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে যে, ‘আ-ফিয়াহ্ চেয়ে দু‘আ করা সর্বোত্তম দু‘আ। বিশেষ করে প্রশ্নকারী ব্যক্তি তিনদিন সর্বোত্তম দু‘আ কোনটি তা জিজ্ঞেস করলে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতিবারই এ দু‘আটির কথা বলেছেন। বারবার এ দু‘আটিকে সর্বোত্তম দু‘আ হিসেবে বলাই প্রমাণ করে এটি সর্বোত্তম দু‘আ। তাছাড়া হাদীসের শেষাংশে ‘‘যখন তোমাকে ‘আ-ফিয়াহ্ দেয়া হলো তখন তুমি সফলতা লাভ করলে’’ এ বক্তব্য দ্বারা স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয় যে, ‘আ-ফিয়াহ্ চেয়ে যে দু‘আ করা হয় সে দু‘আ দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণকে শামিল করে।


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১০: আল্লাহ তা‘আলার নামসমূহ (كتاب اسماء الله تعالٰى)

পরিচ্ছেদঃ ৭. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - মৌলিক দু‘আসমূহ

২৪৯১-[১০] ’আবদুল্লাহ ইবনু ইয়াযীদ আল খত্বমী (রাঃ) রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) দু’আ করার সময় বলতেন, ’’আল্ল-হুম্মার্ যুকনী হুব্বাকা ওয়াহুব্বা মান্ ইয়ানফা’উনী হুব্বুহূ ’ইন্‌দাকা, আল্ল-হুম্মা মা- রযাকতানী মিম্মা- উহিব্বু ফাজ্’আলহু ক্যুওয়াতান লী ফীমা- তুহিব্বু, আল্ল-হুম্মা মা যাওয়াইতা ’আন্নী মিম্মা- উহিব্বু ফাজ্’আলহু ফারা-গান লী ফীমা- তুহিব্বু’’

(অর্থাৎ- হে আল্লাহ! তুমি আমাকে তোমার ভালোবাসা এবং যার ভালোবাসা তোমার কাছে আমার জন্য কল্যাণকর হবে মনে করো তার ভালোবাসা আমাকে দান করো। হে আল্লাহ! আমি ভালোবাসি এমন যা তুমি আমাকে দিয়েছো, একে তুমি আমার অনুকূল করে দাও যা তুমি তার জন্য ভালোবাসো। হে আল্লাহ! আমি যা ভালোবাসি তার যতখানি তুমি আমার কাছ হতে দূরে রেখেছো, তাকে তুমি যা আমার পক্ষে ভালোবাসো তা করার জন্য সুযোগ-সুবিধা দান করো।)। (তিরমিযী)[1]

وَعَن عبد الله يزِيد الخطمي عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّهُ كَانَ يَقُولُ فِي دُعَائِهِ: «اللَّهُمَّ ارْزُقْنِي حُبَّكَ وَحُبَّ مَنْ يَنْفَعُنِي حُبُّهُ عِنْدَكَ اللَّهُمَّ مَا رَزَقْتَنِي مِمَّا أُحِبُّ فَاجْعَلْهُ قُوَّةً لِي فِيمَا تُحِبُّ اللَّهُمَّ مَا زَوَيْتَ عَنِّي مِمَّا أحب فاجعله فراغا ي فِيمَا تحب» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ

وعن عبد الله يزيد الخطمي عن رسول الله صلى الله عليه وسلم انه كان يقول في دعاىه اللهم ارزقني حبك وحب من ينفعني حبه عندك اللهم ما رزقتني مما احب فاجعله قوة لي فيما تحب اللهم ما زويت عني مما احب فاجعله فراغا ي فيما تحب رواه الترمذي

ব্যাখ্যা: হে আল্লাহ! তুমি আমাকে তোমার ভালবাসা দান করো। কারণ কোন সৌভাগ্য, স্বাদ, নিয়ামত অনুগ্রহ কোন কিছুই কোন মু’মিন বান্দার নিকট আল্লাহর ভালবাসার থেকে অধিক প্রিয় হতে পারে না। তাই সবকিছুর ঊর্ধ্বে আল্লাহর ভালবাসা। আল্লাহর ভালবাসাই মু’মিনের একান্ত কাম্য বিষয়। তোমার নিকট যার ভালবাসা আমার জন্য উপকারে আসবে তার ভালবাসা আমাকে দান করো। যেমন- মালাক (ফেরেশতা), নাবীগণ, আল্লাহর বন্ধু ও মুত্তাক্বীদের ভালবাসা।

হে আল্লাহ! তুমি আমাকে দান করেছ এমন যা কিছু আমি ভালবাসী, যেমন- শারীরিক সুস্থতা ও শক্তি-সামর্থ্য, পার্থিব ভোগের সামগ্রী, সম্পত্তি, সম্মান, খ্যাতি, সন্তান-অবসর ও অন্যান্য সমস্ত নিয়ামত। এগুলোকে তুমি যা ভালবাস যেমন তোমার আনুগত্য ও ‘ইবাদাত ইত্যাদির জন্য আমার পক্ষে অবলম্বনস্বরূপ করো। (অর্থাৎ- এসব পার্থিব নিয়ামতকে ব্যবহার করে আমি যেন তোমার ‘ইবাদাত ও আনুগত্যমূলক কাজ যথাযথভাবে করতে পারি সে তাওফীক দাও।)

হে আল্লাহ! তুমি আমার থেকে যা দূরে রেখেছ বা আমাকে দাওনি অথচ আমি তা ভালবাসি; তুমি সেগুলোকে আমার অবসরে তোমার আনুগত্য, ‘ইবাদাত, জিকির-আযকার করার উপায় হিসেবে গ্রহণ করো, যা করা তুমি ভালবাস।


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১০: আল্লাহ তা‘আলার নামসমূহ (كتاب اسماء الله تعالٰى)

পরিচ্ছেদঃ ৭. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - মৌলিক দু‘আসমূহ

২৪৯২-[১১] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন মাজলিস (বৈঠক) হতে খুব কমই উঠতেন, যতক্ষণ পর্যন্ত তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তার সাহাবীগণের জন্য এ দু’আ না করতেন-

’’আল্ল-হুম্মাকসিম লানা- মিন্ খশ্ইয়াতিকা মা- তাহূলু বিহী বায়নানা- ওয়া বায়না মা’আ-সীকা ওয়ামিন্ ত্ব-’আতিকা মা- তুবাল্লিগুনা- বিহী জান্নাতাকা ওয়ামিনাল ইয়াক্বীনি মা- তুহাওবিনু বিহী ’আলায়না- মুসীবা-তিদ্ দুন্ইয়া- ওয়া মাত্তি’না- বিআসমা-’ইনা- ওয়া আবস-রিনা- ওয়া ক্যুওয়াতিনা- মা- আহ্ইয়াইতানা- ওয়াজ্’আলহুল ওয়া-রিসা মিন্না- ওয়াজ্’আল সা’রানা- ’আলা- মান্ যলামনা- ওয়ানসুরনা- ’আলা- মান ’আ-দা-না ওয়ালা- তাজ্’আল মুসীবাতানা- ফী দীনিনা- ওয়ালা- তাজ্’আলিদ্ দুন্ইয়া- আকবারা হাম্মিনা- ওয়ালা- মাব্‌লাগা ’ইলমিনা- ওয়ালা- তুসাল্লিত্ব ’আলায়না- মান্ লা- ইয়ার্‌হামুনা-’’

(অর্থাৎ- হে আল্লাহ! তুমি আমাদের মধ্যে ঐ পরিমাণ তোমার ভীতি-সঞ্চার করো যা দিয়ে তুমি আমাদের মাঝে ও তোমার নাফরমানীর মধ্যে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করবে। তোমার ’ইবাদাত-আনুগত্যের ঐ পরিমাণ আমাদেরকে দান করো, যা দিয়ে তুমি আমাদেরকে তোমার জান্নাতে প্রবেশ করাবে এবং তোমার ওপর ঈমানের ঐ পরিমাণ দান করো যা দিয়ে তুমি দুনিয়ার বিপদাপদ সহজ করে দেবে। হে আল্লাহ! আমাদের উপকার সাধন করো আমাদের কানের মাধ্যমে, আমাদের চোখের মাধ্যমে ও আমাদের শক্তির মাধ্যমে, যতক্ষণ না তুমি আমাদেরকে বাঁচিয়ে রাখো। হে আল্লাহ! তুমি আমাদের উত্তরাধিকারী জারী রাখো। হে আল্লাহ! তুমি আমাদের প্রতিশোধ-প্রতিরোধকে সীমাবদ্ধ রাখো তাদের ওপর, যারা আমাদের ওপর যুলম [অত্যাচার-অবিচার] করেছে এবং আমাদের সাহায্য-সহযোগিতা করো তাদের বিরুদ্ধে, যারা আমাদের সাথে শত্রুতা করেছে। হে আল্লাহ! আমাদের দীন সম্পর্কে আমাদেরকে কোন বিপদে ফেলো না এবং দুনিয়াকে আমাদের মৌলিক চিন্তার বিষয় ও জ্ঞানের পরিসীমা করো না। হে আল্লাহ! যারা আমাদের ওপর দয়া প্রদর্শন করবে না, তাদেরকে আমাদের ওপর চাপিয়ে দিও না।)। (তিরমিযী; তিনি বলেন, হাদীসটি হাসান গরীব)[1]

وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ: قَلَّمَا كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُومُ مِنْ مَجْلِسٍ حَتَّى يَدْعُوَ بِهَؤُلَاءِ الدَّعَوَاتِ لِأَصْحَابِهِ: «اللَّهُمَّ اقْسِمْ لَنَا مِنْ خَشْيَتِكَ مَا تَحُولُ بِهِ بَيْنَنَا وَبَيْنَ مَعَاصِيكَ وَمِنْ طَاعَتِكَ مَا تُبَلِّغُنَا بِهِ جَنَّتَكَ وَمِنَ الْيَقِينِ مَا تُهَوِّنُ بِهِ عَلَيْنَا مُصِيْبَاتِ الدُّنْيَا وَمَتِّعْنَا بِأَسْمَاعِنَا وَأَبْصَارِنَا وَقُوَّتِنَا مَا أَحْيَيْتَنَا وَاجْعَلْهُ الْوَارِثَ مِنَّا وَاجْعَلْ ثَأْرَنَا عَلَى مَنْ ظَلَمَنَا وَانْصُرْنَا عَلَى مَنْ عَادَانَا وَلَا تَجْعَلْ مُصِيبَتَنَا فِي دِينِنَا وَلَا تَجْعَلِ الدُّنْيَا أَكْبَرَ هَمِّنَا وَلَا مَبْلَغَ عِلْمِنَا وَلَا تُسَلِّطْ عَلَيْنَا مَنْ لَا يَرْحَمُنَا» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَقَالَ: هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ غَرِيبٌ

وعن ابن عمر قال قلما كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يقوم من مجلس حتى يدعو بهولاء الدعوات لاصحابه اللهم اقسم لنا من خشيتك ما تحول به بيننا وبين معاصيك ومن طاعتك ما تبلغنا به جنتك ومن اليقين ما تهون به علينا مصيبات الدنيا ومتعنا باسماعنا وابصارنا وقوتنا ما احييتنا واجعله الوارث منا واجعل ثارنا على من ظلمنا وانصرنا على من عادانا ولا تجعل مصيبتنا في ديننا ولا تجعل الدنيا اكبر همنا ولا مبلغ علمنا ولا تسلط علينا من لا يرحمنا رواه الترمذي وقال هذا حديث حسن غريب

ব্যাখ্যা: বলা হয়, অন্তর যখন আল্লাহর ভয়ে পরিপূর্ণ থাকে তখন শরীরের সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ আল্লাহর অবাধ্যমূলক কাজ থেকে বিরত থাকে। আল্লাহর ভয়ের অনুপাতে গুনাহের কাজ থেকেও বিরত থাকা বাড়ে-কমে। যখন ভয় একেবারে কমে যায় এবং চরম গাফলতিতে অন্তর নিমজ্জিত হয় তখন তা ব্যক্তির দুর্ভাগ্যের চিহ্ন প্রকাশ করে। এজন্যই বিদ্বানগণ বলেছেন যে, আল্লাহর অবাধ্যতামূলক কাজ মূলত কুফরীর দূত যেমনভাবে চুম্বন হচ্ছে যৌনমিলনের দূত, গান হচ্ছে যিনার (ব্যভিচার) দূত, দৃষ্টি হচ্ছে যৌন উত্তেজনার দূত, রোগ হচ্ছে মৃত্যুর দূত। দুনিয়া ও আখিরাতে এবং ব্যক্তির শরীর ও বুদ্ধি-বিবেচনাশক্তির উপর গুনাহের খুবই খারাপ ও ক্ষতিকারক প্রভাব রয়েছে, যে প্রভাব আল্লাহ ছাড়া কেউ গণনা করতে পারবে না।

এখানে দুনিয়ার মুসীবাত বা বিপদাপদসমূহ বলতে, রোগ-বালাই, আঘাত, সম্পদ বিনষ্ট হওয়া, সন্তান মারা যাওয়া ইত্যাদি বুঝাচ্ছে। যে ব্যক্তি সত্যিকার অর্থে নিশ্চিতভাবে জানবে যে, আল্লাহ তা‘আলা তাকে দুনিয়ায় যে বিপদাপদ দিচ্ছেন তার বিনিময়ে আখিরাতে তাকে সাওয়াব দান করবেন, তার গুনাহসমূহ মাফ করবেন এবং তার মর্যাদা বৃদ্ধি করবেন। তাই কোন বিপদাপদে তার দুশ্চিন্তাগ্রস্ত ও হতাশ না হয়ে বরং শেষ পর্যন্ত এর বিনিময়ে সাওয়াব পাওয়ার কারণে তার খুশি হওয়া উচিত।

এ দু‘আর শেষ অংশে বলা হয়েছে- ‘‘তুমি দুনিয়াকে আমাদের জন্য সবচেয়ে বেশি চিন্তার কারণ বানাবেন না’’। এর অর্থ হলো, পার্থিব সম্পত্তি ও সম্মান অর্জনকে দুনিয়ার সবচেয়ে বড় চিন্তার কারণ বানিও না, বরং আখিরাতকেই আমাদের চিন্তার সবচেয়ে বড় কারণ বানাও।

এ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, দুনিয়ার জীবনে স্বাভাবিকভাবে জীবন-যাপন করার জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ অর্জনের যতটুকু চিন্তা না করলেই নয় ততটুকু করা অন্যায় নয় বরং অনুমোদিত এবং কোন কোন ক্ষেত্রে মুস্তাহাব বা ওয়াজিবও।

হাদীসের সর্বশেষ অংশে অত্যাচারী বা কাফিরদের অধীনস্ত না বানাতে দু‘আ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, কাফির ও যালিমদেরকে আমাদের ওপর শাসক বা বিচারক নিয়োগ করো না। কেননা যালিমরা অধীনস্তদের ওপর রহম বা দয়া করে না।


হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১০: আল্লাহ তা‘আলার নামসমূহ (كتاب اسماء الله تعالٰى)

পরিচ্ছেদঃ ৭. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - মৌলিক দু‘আসমূহ

২৪৯৩-[১২] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (দু’আ) বলতেন,

’’আল্ল-হুম্মান্ ফা’নী বিমা- ’আল্লামতানী ওয়া ’আল্লিমনী মা- ইয়ানফা’উনী ওয়া যিদ্‌নী ’ইলমা-, আলহামদু লিল্লা-হি ’আলা- কুল্লি হা-লিন্ ওয়া আ’ঊযুবিল্লা-হি মিন হা-লি আহলিন্‌না-র’’

(অর্থাৎ- হে আল্লাহ! আমাদেরকে যা শিক্ষা দিয়েছো তা আমাদের উপকারে লাগাও এবং আমাদের উপকারে আসে এমন শিক্ষা দান করো, আর আমাদের জ্ঞান বৃদ্ধি করো। প্রত্যেক অবস্থায়ই আল্লাহর কৃতজ্ঞতা স্বীকার করছি জাহান্নামীদের অবস্থা হতে এবং আমি আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাই।)। (তিরমিযী ও ইবনু মাজাহ; ইমাম তিরমিযী বলেন, হাদীসটির সানাদ গরীব)[1]

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «اللَّهُمَّ انْفَعْنِي بِمَا عَلَّمْتَنِي وَعَلِّمْنِي مَا يَنْفَعُنِي وَزِدْنِي عِلْمًا الْحَمْدُ لِلَّهِ عَلَى كُلِّ حَالٍ وَأَعُوذُ بِاللَّهِ مِنْ حَالِ أَهْلِ النَّارِ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَابْنُ مَاجَهْ وَقَالَ التِّرْمِذِيُّ: هَذَا حَدِيثٌ غَرِيبٌ إِسْنَادًا

وعن ابي هريرة قال كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول اللهم انفعني بما علمتني وعلمني ما ينفعني وزدني علما الحمد لله على كل حال واعوذ بالله من حال اهل النار رواه الترمذي وابن ماجه وقال الترمذي هذا حديث غريب اسنادا

ব্যাখ্যা: ‘হে আল্লাহ! তুমি আমাকে এমন জ্ঞান দান করো যা আমার উপকার করবে’। এর দ্বারা বুঝা যায় যে, উপকারী জ্ঞান ছাড়া অন্য কোন জ্ঞান চাওয়া যাবে না। আর উপকারী জ্ঞান হলো দীনের জ্ঞান এবং দুনিয়ার ততটুকু জ্ঞান যতটুকু দীনের উপকারে আসবে। এ দু’টি ছাড়া বাকী সব জ্ঞান ঐ জ্ঞানের অন্তর্ভুক্ত হবে যে জ্ঞান অর্জনকারীদের সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,

وَيَتَعَلَّمُوْنَ مَا يَضُرُّهُمْ وَلَا يَنْفَعُهُمْ

‘‘তারা যা শিক্ষা করত তা তাদের ক্ষতি সাধন করত এবং কোন উপকারে আসত না।’’ (সূরা আল বাকারাহ্ ২ : ১০২)

এ আয়াতে যাদুবিদ্যা শিক্ষা করাকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কারণ এ বিদ্যা তো আখিরাতে তাদের উপকারে আসবেই না বরং তাদের ক্ষতি করবে। যদিও এ জ্ঞান দুনিয়ায় তাদেরকে উপকার করবে কিন্তু এ উপকার শারী‘আতের দৃষ্টিতে কোন উপকারই নয়।

হাদীসে জ্ঞান বৃদ্ধির দু‘আ দ্বারা ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, যে ব্যক্তি তার অর্জিত জ্ঞান অনুযায়ী ‘আমল করবে তাকে আল্লাহ এমন জ্ঞান দিবেন যা সে জানে না। এর দ্বারা আরো বুঝা যায় যে, জ্ঞান হলো ‘আমলের মাধ্যম। একটি অপরটির পরিপূরক।

এ দু‘আ দ্বারা আরো একটি বিষয় প্রমাণিত হয় যে, আল্লাহ এবং তাঁর রসূল জ্ঞান বৃদ্ধি করার দু‘আ ছাড়া অন্য কোন কিছু বৃদ্ধির বা অতিরিক্ত চাইতে দু‘আ করতে শিক্ষা দেননি। শুধু জ্ঞানই অতিরিক্ত বা বেশি চাওয়া মুস্তাহাব। (তাই সকল জিনিসের উপর জ্ঞানের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণিত)।

দুঃখ-কষ্টসহ সকল অবস্থায় আল্লাহর প্রশংসা এ জন্য করতে হবে যে, আল্লাহ এর চেয়ে কঠিন বিপদ বা কষ্ট দেননি। কখনো কখনো কষ্ট-দুর্দশার শেষ পরিণতি হয় সুখকর ও আনন্দময়। তখন ঐ ব্যাপারে প্রশংসা করা বাঞ্ছনীয় হয়। যেমন- মহান আল্লাহ বলেন,

وَعَسٰى أَنْ تَكْرَهُوْا شَيْئًا وَّهُوَ خَيْرٌ لَّكُمْ

‘‘সম্ভবত তোমরা এমন কিছুকে অপছন্দ করো যা তোমাদের জন্য কল্যাণকর।’’

(সূরা আল বাকারাহ্ ২ : ২১৬)

ইমাম গাযালী (রহঃ) বলেছেন, এমন কোন দুঃখণ্ডকষ্ট নেই যার অপর পাশে আল্লাহর অনুগ্রহ নেই। তাই ঐসব অনুগ্রহের কথা ভেবেই আল্লাহর প্রশংসা করা উচিত এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা উচিত। আর জাহান্নামীদের অবস্থা থেকে আশ্রয় চাওয়ার অর্থ হলো, দুনিয়ায় কুফরী ও ফাসিক্বী থেকে বেঁচে থাকা এবং আখিরাতে ‘আযাব বা শাস্তি থেকে বেঁচে থাকা।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১০: আল্লাহ তা‘আলার নামসমূহ (كتاب اسماء الله تعالٰى)

পরিচ্ছেদঃ ৭. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - মৌলিক দু‘আসমূহ

২৪৯৪-[১৩] ’উমার ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ওপর যখন ওহী অবতীর্ণ হতো তাঁর মুখে মৌমাছির গুন্ গুন্ শব্দের মতো আওয়াজ শোনা যেতে। এভাবে একদিন তাঁর ওপর ওহী নাযিল করা হলো। আমরা কিছু সময় তাঁর কাছে অপেক্ষা করলাম। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) স্বাভাবিক হয়ে কিবলার দিকে ফিরলেন এবং হাত উঠিয়ে বললেন,

’’আল্ল-হুম্মা যিদনা- ওয়ালা- তানক্বুসনা- ওয়া আকরিমনা- ওয়ালা- তুহিন্না- ওয়া আ’ত্বিনা- ওয়ালা- তাহ্‌রিম্‌না- ওয়া আ-সির্‌না- ওয়ালা- তু’সির ’আলায়না- ওয়া আর্‌যিনা- ওয়ার্‌যা ’আন্না-’’

(অর্থাৎ- হে আল্লাহ! আমাদের জন্য [তোমার দান] বাড়িয়ে দাও, কম করো না। আমাদেরকে সম্মানিত করো, অপমানিত করো না। আমাদেরকে দান করো, বঞ্চিত করো না। আমাদেরকে ক্ষমতা দাও, কাউকেও আমাদের বিপক্ষে ক্ষমতা দিও না। তুমি আমাদেরকে খুশী করো, আমাদের প্রতিও তুমি খুশী থাকো।)।

অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, এখন আমার ওপর দশটি আয়াত নাযিল হলো, যে ব্যক্তি এ আয়াত বাস্তবায়ন করবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। এরপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তিলাওয়াত করতে লাগলেন, (সূরা মু’মিনূন-এর শুরু হতে) ’’কদ্ আফলাহাল মু’মিনূন’’ (অর্থাৎ- মু’মিনগণ কৃতকার্য হয়েছে)- এভাবে দশটি আয়াত (তিলাওয়াত) শেষ করলেন। (আহমাদ ও তিরমিযী)[1]

وَعَنْ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا أُنْزِلَ عَلَيْهِ الْوَحْيُ سُمِعَ عِنْدَ وَجْهِهِ دوِي كَدَوِيِّ النَّحْل فأنل عَلَيْهِ يَوْمًا فَمَكَثْنَا سَاعَةً فَسُرِّيَ عَنْهُ فَاسْتَقْبَلَ الْقِبْلَةَ وَرَفَعَ يَدَيْهِ وَقَالَ: «اللَّهُمَّ زِدْنَا وَلَا تَنْقُصْنَا وَأَكْرِمْنَا وَلَا تُهِنَّا وَأَعْطِنَا وَلَا تَحْرِمْنَا وَآثِرْنَا وَلَا تُؤْثِرْ عَلَيْنَا وَأَرْضِنَا وَارْضَ عَنَّا» . ثُمَّ قَالَ: «أُنْزِلَ عَلَيَّ عَشْرُ آيَاتٍ مَنْ أَقَامَهُنَّ دَخَلَ الْجَنَّةَ» ثُمَّ قَرَأَ: (قَدْ أَفْلَحَ الْمُؤْمِنُونَ)
حَتَّى خَتَمَ عَشْرَ آيَاتٍ. رَوَاهُ أَحْمَدُ وَالتِّرْمِذِيّ

وعن عمر بن الخطاب رضي الله عنه قال كان النبي صلى الله عليه وسلم اذا انزل عليه الوحي سمع عند وجهه دوي كدوي النحل فانل عليه يوما فمكثنا ساعة فسري عنه فاستقبل القبلة ورفع يديه وقال اللهم زدنا ولا تنقصنا واكرمنا ولا تهنا واعطنا ولا تحرمنا واثرنا ولا توثر علينا وارضنا وارض عنا ثم قال انزل علي عشر ايات من اقامهن دخل الجنة ثم قرا قد افلح المومنونحتى ختم عشر ايات رواه احمد والترمذي

ব্যাখ্যা: (دَوِىٌّ) ‘‘দাভিয়্যু’’ বলতে মূলত এমন আওয়াজকে বুঝায় যে আওয়াজ বুঝা যায় না। এটা ছিল জিবরীল (আঃ)-এর আওয়াজ। তিনি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট ওহী পৌঁছে দিতেন এবং এমতাবস্থায় রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আশে-পাশে উপস্থিত সাহাবীগণ ঐ আওয়াজের কিছুই বুঝতে পারতেন না।

তুমি আমাদের সম্মানিত করো। এর অর্থ হলো তুমি দুনিয়ায় আমাদের প্রয়োজন পূরণ ও আখিরাতে আমাদের স্থান উচ্চে উঠানোর মাধ্যমে আমাদেরকে সম্মানিত করো।

তুমি আমাদেরকে সন্তুষ্ট করো। অর্থাৎ- আমাদের পক্ষে এবং বিপক্ষে যা নির্ধারণ করেছ তার প্রতি ধৈর্য ধারণ, কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনের শক্তি, আনুগত্য বজায় রাখা ও আমাদের জন্য যা বণ্টন করে দিয়েছ তার প্রতি তুষ্ট হওয়ার মাধ্যমে আমাদেরকে তোমার প্রতি সন্তুষ্ট রাখো।

আমাদের সাধ্য অনুযায়ী যে সামান্য ও তুচ্ছ চেষ্টা ও আনুগত্য করি তার প্রতি তুমি সন্তুষ্ট থাকো এবং আমাদের খারাপ কাজের জন্য আমাদেরকে পাকড়াও করো না।

শেষে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যে ব্যক্তি এ সূরা আল মু’মিনূন-এর প্রথম দশটি আয়াত মুখস্থ করবে এবং এগুলোর বিধিবিধানের উপর স্থায়ীভাবে ‘আমল করবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১০: আল্লাহ তা‘আলার নামসমূহ (كتاب اسماء الله تعالٰى)
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ৭ পর্যন্ত, সর্বমোট ৭ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে