পরিচ্ছেদঃ ১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - তাসবীহ (সুবহা-নাল্ল-হ), তাহমীদ (আল হাম্‌দুলিল্লা-হ), তাহলীল (লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ) ও তাকবীর (আল্ল-হু আকবার)- বলার সাওয়াব

২৩০৪-[১১] জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি ’’সুবহা-নাল্ল-হিল ’আযীম ওয়া বিহামদিহী’’ (অর্থাৎ- মহান আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা করি তাঁর প্রশংসার সাথে) পড়বে, তার জন্য জান্নাতে একটি খেজুর গাছ রোপণ করা হবে। (তিরমিযী)[1]

عَنْ جَابِرٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ قَالَ سُبْحَانَ اللَّهِ الْعَظِيمِ وَبِحَمْدِهِ غُرِسَتْ لَهُ نَخْلَةٌ فِي الْجَنَّةِ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ

عن جابر قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «من قال سبحان الله العظيم وبحمده غرست له نخلة في الجنة» . رواه الترمذي

ব্যাখ্যা: (نَخْلَةٌ) অর্থাৎ- প্রত্যেকবার বলার কারণে একটি করে খেজুর বৃক্ষ লাগানো হয়। নাসায়ীর বর্ণনাতে খেজুর বৃক্ষের পরিবর্তে বৃক্ষের উল্লেখ এসেছে, তবে এ সাধারণ বর্ণনাটিকে খেজুর বৃক্ষের নির্দিষ্ট বর্ণনার উপর চাপিয়ে দিতে হবে। ফলে এ ক্ষেত্রে জান্নাতের রোপণ করা বৃক্ষটি খেজুর বৃক্ষ হিসেবে সাব্যস্ত হবে।

(فِى الْجَنَّةِ) যা উল্লেখিত জিকির পাঠকারীর জন্য প্রস্ত্তত থাকবে। উদ্ধৃত অংশ থেকে বুঝা যাচ্ছে নিশ্চয়ই খেজুর জান্নাতী ফলসমূহের অন্তর্ভুক্ত। যেমন আল্লাহ বলেন, ‘‘উদ্যানদ্বয়ে থাকবে ফল-মূল, খেজুর ও আনার’’- (সূরা আর্ রহমান ৫৫ : ৬৮)। এখানে খেজুরকে নির্দিষ্ট করা হয়েছে অধিক উপকার, উত্তম স্বাদ এবং এর প্রতি ‘আরববাসীদের ঝোঁক থাকার কারণে। বিদ্বানগণ আরো বলেছেন, এখানে কেবল খেজুর বৃক্ষকে নির্দিষ্ট করা হয়েছে, কেননা তা সর্বাধিক উপরকারী ও উত্তম বৃক্ষ। আর এ কারণেই আল্লাহ মু’মিন এবং তার ঈমানের দৃষ্টান্ত খেজুর বৃক্ষ ও তার ফল দ্বারা দিয়েছেন। যেমন আল্লাহ বলেন, ‘‘আপনি লক্ষ্য করেননি কিভাবে আল্লাহ একটি উত্তম বাণীর দৃষ্টান্ত দিয়েছেন’’- (সূরা ইব্রাহীম ১৪ : ২৪)। আর তা হল একত্ববাদের বাণী, ‘‘যেমন উত্তম বৃক্ষ’’- (সূরা ইব্রাহীম ১৪ : ২৪)। আর তা হল খেজুর বৃক্ষ।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১০: আল্লাহ তা‘আলার নামসমূহ (كتاب اسماء الله تعالٰى)

পরিচ্ছেদঃ ১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - তাসবীহ (সুবহা-নাল্ল-হ), তাহমীদ (আল হাম্‌দুলিল্লা-হ), তাহলীল (লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ) ও তাকবীর (আল্ল-হু আকবার)- বলার সাওয়াব

২৩০৫-[১২] যুবায়র (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ প্রত্যেক প্রভাত যাতে আল্লাহর বান্দারা উঠেন, তাতে একজন মালাক (ফেরেশতা) এরূপ আহবান করেন যে, ’’পবিত্র বাদশাহকে পবিত্রতার সাথে স্মরণ করো’’। (তিরমিযী)[1]

وَعَنِ الزُّبَيْرِ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَا مِنْ صَبَاحٍ يُصْبِحُ الْعِبَادُ فِيهِ إِلَّا مُنَادٍ يُنَادِي سَبِّحُوا الْمَلِكَ القدوس» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ

وعن الزبير قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «ما من صباح يصبح العباد فيه إلا مناد ينادي سبحوا الملك القدوس» . رواه الترمذي

ব্যাখ্যা: (الْمَلِكَ الْقُدُّوْسَ) অর্থাৎ- তিনি ছাড়া যা আছে তা থেকে তিনি পবিত্র। অর্থাৎ- তোমরা বিশ্বাস রাখ নিশ্চয়ই তিনি তা থেকে পবিত্র। এখানে পবিত্রতা সৃষ্টি করা উদ্দেশ্য না, কেননা তিনি স্থায়ীভাবে পবিত্র। অথবা তোমরা তাকে পবিত্রতা বর্ণনার মাধ্যমে স্মরণ কর। কারণ আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, ‘‘আর যে কোন বস্ত্ত তার প্রশংসা সহকারে পবিত্রতা বর্ণনা করে’’- (সূরা ইসরা ১৭ : ৪৪)। এ কারণে ইমাম ত্বীবী বলেন, তোমরা (سبحان الملك القدوس) বল অথবা (سبوح قدوس رب الملائكة والروح) বল। অর্থাৎ- (سبحان الله وبحمده سبحان الله العظيم) এ উক্তির ন্যায়। (سبحان الملك القدوس) এর ব্যাপারে মালায়িকাহর (ফেরেশতার) আহবান করা থেকে উদ্দেশ্য হল মানুষকে ঐ তাসবীহ পাঠের ব্যাপারে উৎসাহিত করা।


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১০: আল্লাহ তা‘আলার নামসমূহ (كتاب اسماء الله تعالٰى)

পরিচ্ছেদঃ ১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - তাসবীহ (সুবহা-নাল্ল-হ), তাহমীদ (আল হাম্‌দুলিল্লা-হ), তাহলীল (লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ) ও তাকবীর (আল্ল-হু আকবার)- বলার সাওয়াব

২৩০৬-[১৩] জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সর্বোত্তম জিকির হলো, ’’লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ’’ আর সর্বোত্তম দু’আ হলো, ’’আলহামদুলিল্লা-হ’’। (তিরমিযী, ইবনু মাজাহ)[1]

وَعَنْ جَابِرٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: أَفْضَلُ الذِّكْرِ: لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَفْضَلُ الدُّعَاءِ: الْحَمْدُ لِلَّهِ . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ وَابْن مَاجَه

وعن جابر قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: أفضل الذكر: لا إله إلا الله وأفضل الدعاء: الحمد لله . رواه الترمذي وابن ماجه

ব্যাখ্যা: (أَفْضَلُ الذِّكْرِ: لَا إِلٰهَ إِلَّا اللّٰهُ) কেননা এটি তাওহীদ তথা একত্ববাদের বাণী আর কোন কিছু একত্ববাদের বাণীর সমপর্যায়ের হতে পারে না। আর তা কুফর ও ঈমানের মাঝে পার্থক্যকারী এবং তা ইসলামের সেই দরজা যা দিয়েই ইসলামে প্রবেশ করতে হয়। আর কেননা তা আল্লাহর সাথে অন্তরকে সর্বাধিক সংযুক্তকারী এবং অন্যকে সর্বাধিক অস্বীকারকারী আত্মাকে সর্বাধিক পবিত্রকারী, মনকে সর্বাধিক স্বচ্ছকারী, আত্মার ময়লাজনিত উদ্দেশ্যকে সর্বাধিক পরিষ্কারকারী এবং শয়তানকে সর্বাধিক বিতাড়নকারী।

ইমাম ত্বীবী বলেন, কতক বিশেস্নষক বলেন, (لَا إِلٰهَ إِلَّا اللّٰهُ)-কে সর্বশ্রেষ্ঠ জিকির এজন্য করা হয়েছে যে, কেননা গোপনে এমন কিছু নিন্দনীয় গুণাবলী সম্পর্কে তার প্রভাব রয়েছে যেগুলো জিকিরকারীর আভ্যন্তরীণ উপাস্যসমূহ। আল্লাহ বলেন, ‘‘আপনি কি লক্ষ্য করেছেন ঐ ব্যক্তির ব্যাপারে যে তার প্রবৃত্তিকে তার উপাস্য স্বরূপ গ্রহণ করেছে’’- (সূরা আল ফুরকান ২৫ : ৪৩)। সুতরাং (لَا إِلٰهَ) দ্বারা সকল উপাস্যকে প্রত্যাখ্যান করা হচ্ছে এবং (إِلَّا اللّٰهُ) দ্বারা এক উপাস্যকে সাব্যস্ত করা হচ্ছে। জিকির তার জবানের প্রকাশ্য দিক থেকে তার অন্তরের গভীরে প্রত্যার্বতন করছে, অতঃপর অন্তরে তা দৃঢ় হচ্ছে এবং তা তার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গসমূহের উপর প্রভাব বিস্তার করছে, আর যে তার স্বাদ আস্বাদন করেছে সে এর মিষ্টতা পেয়েছে। কেউ কেউ বলেছেন, কেননা এ ছাড়া ঈমান বিশুদ্ধ হয় না। আর এ ছাড়া আরো যত জিকির আছে এটি তার অন্তর্ভুক্ত না।

(وَأَفْضَلُ الدُّعَاءِ: الْحَمْدُ لِلّٰهِ) সম্ভবত এখানে দু‘আ দ্বারা সূরা আল ফাতিহাহ্ পূর্ণাঙ্গ উদ্দেশ্য। যেন এ শব্দটি সূরা ফাতিহার কেন্দ্রের স্থানে আছে। ইমাম ত্বীবী বলেন, আল্লাহর বাণী (الحمد لله) তাঁর বাণী اهْدِنَا الصِّرَاطَ الْمُسْتَقِيْمَ ۝ صِرَاطَ الَّذِيْنَ أَنْعَمْتَ عَلَيْهِمْ এর দিকে ইঙ্গিত বা ইশারা করা অধ্যায়ের আওতাভুক্ত হতে পারে। আর কোন দু‘আটি এর অপেক্ষা বেশি উত্তম, সর্বাধিক পূর্ণাঙ্গ ও সর্বাধিক জামি‘ হতে পারে? আবার এটিও হতে পারে যে, এর দ্বারা উদ্দেশ্য স্বয়ং (الحمد لله) আর এর উপর ভিত্তি করে বলা হয়েছে। এখানে (الحمد لله) এর উপর দু‘আর প্রয়োগ রূপক অধ্যায়ের অন্তর্ভুক্ত। সম্ভবত একে সর্বোত্তম দু‘আ নির্ধারণ করা হয়েছে এ দৃষ্টিকোণ থেকে যে, তা সূক্ষ্ম চাওয়া যার পথ যথার্থ।

মাযহার বলেন, (حمد)-কে কেবল এজন্য দু‘আ বলা হয়েছে, কেননা তা আল্লাহর জিকির ও তাঁর থেকে প্রয়োজন অনুসন্ধান করা সম্পর্কে একটি ভাষ্য আর (حمد) উভয়কে অন্তর্ভুক্ত করে, কেননা যে আল্লাহর হাম্দ প্রকাশ করল সে কেবল তাঁর নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় করল। আর নিয়ামতের উপর (حمد) পেশ করা হলো অধিক চাওয়া। মহান আল্লাহ বলেন, ‘‘যদি তোমরা শুকরিয়া আদায় কর তাহলে আমি তোমাদেরকে আরো বেশি দিব’’- (সূরা ইব্রাহীম ১৪ : ৭)।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১০: আল্লাহ তা‘আলার নামসমূহ (كتاب اسماء الله تعالٰى)

পরিচ্ছেদঃ ১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - তাসবীহ (সুবহা-নাল্ল-হ), তাহমীদ (আল হাম্‌দুলিল্লা-হ), তাহলীল (লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ) ও তাকবীর (আল্ল-হু আকবার)- বলার সাওয়াব

২৩০৭-[১৪] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ’’আলহামদুলিল্লা-হ’’ বা প্রশংসা করা হলো সর্বোত্তম কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা। যে বান্দা আল্লাহর প্রশংসা করল না, সে তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করল না।[1]

وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «الْحَمْدُ رَأْسُ الشُّكْرِ مَا شَكَرَ اللَّهَ عَبْدٌ لَا يحمده»

وعن عبد الله بن عمرو قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «الحمد رأس الشكر ما شكر الله عبد لا يحمده»

ব্যাখ্যা: (الْحَمْدُ رَأْسُ الشُّكْرِ) কেননা শুকরিয়া আদায় অনুগ্রহকারীকে সম্মান প্রদর্শন এবং জবানের কাজ এ ব্যাপারে যা সর্বাধিক স্পষ্ট ও সর্বাধিক প্রমাণবহ। পক্ষান্তরে অন্তরের কাজ হল গোপনীয়। আর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ এর কর্মের উপরও প্রমাণে ঘাটতি রয়েছে। কতিপয় ব্যাখ্যাকার বলেন, (الحمد) শুকরিয়ার মূল অর্থাৎ- তার কতক বৈশিষ্ট্য ও সর্বোচ্চ বৈশিষ্ট্য, কেননা (حمد) শুধু জবানের মাধ্যমে এবং (شكر) জবান, অন্তর এবং অঙ্গ-প্রত্যঙ্গসূমহের মাধ্যমে আদায় হয়। কেননা (شكر) আল্লাহ যার মাধ্যমে বান্দার ওপর অনুগ্রহ করেছেন সে সকল কিছু বান্দা নিজ সৃষ্টি উদ্দেশের দিকে ফিরিয়ে দেয়। সুতরাং (حمد) হল (شكر) এর শাখা-প্রশাখার একটি। আর বস্ত্তর মূল সে বস্ত্তর কিছু। সুতরাং তা এ দৃষ্টিকোণ থেকে (شكر) এর কিছু। আর (حمد) কে (شكر) এর মাথা করা হয়েছে, কেননা মাথা শরীরের অংশসমূহের মাঝে সর্বাধিক সম্মানিত। আর জবানে গুণকীর্তন করা (شكر) এর অংশসমূহের মাঝে সর্বাধিক সম্মানিত, কেননা জবানে নিয়ামতের উল্লেখ এবং অভিমুখীকারীর উপর গুণকীর্তন নিয়ামতের সর্বাধিক প্রকাশকারী এবং গোপন বিশ্বাসের কারণে নিয়ামতের স্থানের উপর সর্বাধিক প্রমাণবহ এবং জবানের ‘আমলের বিপরীতের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ‘আমলের ক্ষেত্রে যে সম্ভাবনা আছে তার কারণে।


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১০: আল্লাহ তা‘আলার নামসমূহ (كتاب اسماء الله تعالٰى)

পরিচ্ছেদঃ ১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - তাসবীহ (সুবহা-নাল্ল-হ), তাহমীদ (আল হাম্‌দুলিল্লা-হ), তাহলীল (লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ) ও তাকবীর (আল্ল-হু আকবার)- বলার সাওয়াব

২৩০৮-[১৫] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কিয়ামতের দিন যাদেরকে প্রথমে জান্নাতের দিকে ডাকা হবে, তারা হলেন ঐসব ব্যক্তি যারা সুখে-দুঃখে সব সময় আল্লাহর প্রশংসা করেন। (এ হাদীস দু’টি বায়হাক্বী শু’আবূল ঈমানে বর্ণনা করেছে)[1]

وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَوَّلُ مَنْ يُدْعَى إِلَى الْجَنَّةِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ الَّذِينَ يَحْمَدُونَ اللَّهَ فِي السَّرَّاءِ وَالضَّرَّاءِ» . رَوَاهُمَا الْبَيْهَقِيُّ فِي شُعَبِ الْإِيمَان

وعن ابن عباس قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «أول من يدعى إلى الجنة يوم القيامة الذين يحمدون الله في السراء والضراء» . رواهما البيهقي في شعب الإيمان

ব্যাখ্যা: (الَّذِينَ يَحْمَدُونَ اللّٰهَ فِى السَّرَّاءِ وَالضَّرَّاءِ) অর্থাৎ- স্বচ্ছল-অস্বচ্ছল এবং প্রত্যেক অবস্থাতে। কেননা মানুষ সুখ-দুঃখ থেকে মুক্ত না আর সুখের বিপরীত চিন্তা এবং দুঃখের বিপরীত উপকার এবং সুখ-দুঃখে বৈপরীত্য সৃষ্টি হওয়াতে অনেক ব্যাপকতা এবং বৈপরীতপূর্ণ বিষয় অন্তর্ভুক্তকরণে আয়ত্ব শক্তি রয়েছে যেন তিনি বলেছেন আনন্দের ক্ষেত্রে, চিন্তার ক্ষেত্রে, উপকারের ক্ষেত্রে, ক্ষতির ক্ষেত্রে। কেননা প্রত্যেকের উল্লেখ করা তার বিপরীত দিক উল্লেখ করাকে দাবী করে এবং সংক্ষিপ্তভাবে প্রত্যেকের উল্লেখকে অন্তর্ভুক্ত করে আর এটা বর্ণনার এক পদ্ধতি ভাষাবিদগণ যা অবলম্বন করে থাকেন। আর এর অনেক দৃষ্টান্ত রয়েছে। এক মতে বলা হয়েছে, ধনী হোক, দরিদ্র হোক, অস্বচ্ছলতা হোক, স্বচ্ছলতা হোক যারা তাদের ওপর আরোপিত হুকুমের ব্যাপারে তাদের মুনীবের প্রতি সন্তুষ্ট। সুতরাং এখানে স্থায়িত্ব অর্থ উদ্দেশ্য। এক মতে বলা হয়েছে, আনন্দের ক্ষেত্রে (حمد) স্পষ্ট, পক্ষান্তরে দুঃখের ক্ষেত্রে (حمد) এ কারণে যে, আল্লাহ তার প্রতি অনুগ্রহ করেছেন এবং এর অপেক্ষা বড় বিপদ তার প্রতি অবতীর্ণ করেননি। অথবা দুঃখের ক্ষেত্রে সে যে সাওয়াব ও গুনাহ মোচন প্রত্যক্ষ করে সে কারণে। হাফেয ফাতহে বলেন, ত্ববারী ‘আবদুল্লাহ বিন ‘আমর বিন ‘আস কর্তৃক ‘আবদুল্লাহ বিন বাবাহ-এর বর্ণনার মাধ্যমে সংকলন করেন, ‘আবদুল্লাহ বিন ‘আমর ইবনুল ‘আস (রাঃ) বলেন, নিশ্চয়ই ব্যক্তি যখন (لا إله إلا الله) বলে তখন (لا إله إلا) নিষ্ঠার বা ইখলাসের বাণী তা না বলা পর্যন্ত আল্লাহ ‘আমল কবূল করবেন না। আর বান্দা যখন (الحمد لله) বলে তখন তা শুকরিয়ার বাণী স্বরূপ। যতক্ষণ বান্দা এটা না বলবে ততক্ষণ সে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করল না।


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১০: আল্লাহ তা‘আলার নামসমূহ (كتاب اسماء الله تعالٰى)

পরিচ্ছেদঃ ১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - তাসবীহ (সুবহা-নাল্ল-হ), তাহমীদ (আল হাম্‌দুলিল্লা-হ), তাহলীল (লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ) ও তাকবীর (আল্ল-হু আকবার)- বলার সাওয়াব

২৩০৯-[১৬] আবূ সা’ঈদ আল খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ একদিন মূসা (আঃ) বললেন, হে রব! আমাকে এমন একটি কালাম বা বাক্য শিখিয়ে দাও, যা দিয়ে আমি তোমার জিকির করতে পারি। অথবা তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, তোমার কাছে দু’আ করতে পারি। তখন আল্লাহ তা’আলা বললেনঃ হে মূসা! তুমি বলো, ’’লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ’’। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, হে রব! তোমার প্রত্যেক বান্দাই তো এটা (কালিমা) বলে থাকে। আমি তো তোমার কাছে আমার জন্য একটি বিশেষ ’কালিমা’ চাচ্ছি। আল্লাহ তা’আলা তখন বললেন, হে মূসা! সাত আকাশ ও আমি ছাড়া এর সকল অধিবাসী এবং সাত জমিন যদি এক পাল্লায় রাখা হয়, আর ’’লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ’’ অন্য পাল্লায় রাখা হয়, তবে অবশ্যই ’’লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ’’-এর পাল্লা ভারী হবে। (শারহুস্ সুন্নাহ্)[1]

وَعَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: قَالَ مُوسَى عَلَيْهِ السَّلَامُ: يَا رَبِّ عَلِّمْنِي شَيْئًا أَذْكُرُكَ بِهِ وَأَدْعُوكَ بِهِ فَقَالَ: يَا مُوسَى قُلْ: لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ فَقَالَ: يَا رَبِّ كلُّ عبادكَ يقولُ هَذَا إِنَّما أيد شَيْئًا تَخُصُّنِي بِهِ قَالَ: يَا مُوسَى لَوْ أَنَّ السَّمَاوَاتِ السَّبْعَ وَعَامِرَهُنَّ غَيْرِي وَالْأَرَضِينَ السَّبْعَ وُضِعْنَ فِي كِفَّةٍ وَلَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ فِي كِفَّةٍ لَمَالَتْ بِهِنَّ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ . رَوَاهُ فِي شرح السّنة

وعن أبي سعيد الخدري قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: قال موسى عليه السلام: يا رب علمني شيئا أذكرك به وأدعوك به فقال: يا موسى قل: لا إله إلا الله فقال: يا رب كل عبادك يقول هذا إنما أيد شيئا تخصني به قال: يا موسى لو أن السماوات السبع وعامرهن غيري والأرضين السبع وضعن في كفة ولا إله إلا الله في كفة لمالت بهن لا إله إلا الله . رواه في شرح السنة

ব্যাখ্যা: (قُلْ: لَا إِلٰهَ إِلَّا اللّٰهُ) নিশ্চয়ই (لَا إِلٰهَ إِلَّا اللّٰهُ) অংশটুকু আল্লাহর সত্তার একত্ববাদের উপর এবং তার একক গুণাবলীর উপর অধিক প্রমাণ করা সত্ত্বেও তা (لَا إِلٰهَ إِلَّا اللّٰهُ) ছাড়া প্রত্যেক দু‘আ ও জিকিরকে অন্তর্ভুক্ত করে থাকে।

(قَالَ: يَا مُوسٰى لَوْ أَنَّ السَّمَاوَاتِ السَّبْعَ الخ) ইমাম ত্বীবী বলেন, যদি তুমি বল মূসা (আঃ) এমন কিছু অনুসন্ধান করেছেন যার মাধ্যমে জিকির ও দু‘আর দিক দিয়ে তিনি অন্যের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব হওয়ার ইচছা করেছেন তাহলে প্রশ্নোত্তরের অনুকূল কোথায়? আমি বলব, যেন সে বলেছে আমি অসম্ভব জিনিস অনুসন্ধান করেছি, কেননা এর অপেক্ষা উত্তম দু‘আ ও জিকির আর নেই। ইমাম ত্বীবী বলেন, উত্তরের সারাংশ হল, নিশ্চয়ই তোমার সাথে নির্দিষ্ট বিষয় হতে তুমি যা অনুসন্ধান করেছ তা সকল যিকিরের উপর শ্রেষ্ঠ অসম্ভবকর, কেননা এ কালিমাটিকে আকাশ ও তার বাসিন্দাগণ জমিন এবং তার বাসিন্দাগণের ওপর প্রাধান্য দেয়া হয়।

(وَالْأَرَضِيْنَ السَّبْعَ) অর্থাৎ- ‘স্তরসমূহ সীবাবদ্ধ ব্যবহারের কারণে জমিনে আবাদকারী’ কথাটি উল্লেখ করেননি অথবা আকাশের আবাদকারী উক্তি উল্লেখ করে পর্যাপ্ত পথ অবলম্বন করেছেন।

(لَا إِلٰهَ إِلَّا اللّٰهُ فِىْ كِفَّةٍ) অর্থাৎ- এর সাওয়াব বা কার্ড এক পাল্লাতে। হাফেয ফাত্হ-এ এ হাদীস উল্লেখের পর বলেন, এ হাদীস থেকে মাসআলাহ্ গ্রহণ করা যাচ্ছে যে, (لا إله إلا الله) দ্বারা জিকির করা (الحمد لله) দ্বারা জিকির করা অপেক্ষা প্রাধান্য পাবে। আবূ মালিক আল আশ্‘আরী-এর মারফূ' হাদীস (আল হামদুলিল্লা-হ দাড়িপাল্লাকে পূর্ণ করে দেয়) এর বিরোধিতা করবে না। কেননা পূর্ণাঙ্গ সমতার উপর প্রমাণ বহন করে, পক্ষান্তরে (رجحان) স্পষ্টভাবে আধিক্যতাকে বুঝায়। সুতরাং (لا إله إلا الله) দ্বারা জিকির করাই উত্তম। আর দাড়িপাল্লা পরিপূর্ণ হওয়া এর অর্থ হল (لا إله إلا الله) এর জিকিরকারী সাওয়াব দ্বারা দাড়িপাল্লাকে পূর্ণ করবে।


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১০: আল্লাহ তা‘আলার নামসমূহ (كتاب اسماء الله تعالٰى)

পরিচ্ছেদঃ ১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - তাসবীহ (সুবহা-নাল্ল-হ), তাহমীদ (আল হাম্‌দুলিল্লা-হ), তাহলীল (লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ) ও তাকবীর (আল্ল-হু আকবার)- বলার সাওয়াব

২৩১০-[১৭] আবূ সা’ঈদ আল খুদরী (রাঃ) ও আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তাঁরা উভয়ে বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি ’’লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু ওয়াল্ল-হু আকবার’’ (অর্থাৎ- আল্লাহ ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোন মা’বূদ নেই এবং আল্লাহ সুমহান) বলেন, আল্লাহ তা’আলা তার কথা সমর্থন করে বলেন, হ্যাঁ, ’’লা- ইলা-হা ইল্লা- আনা-, ওয়া আনা- আকবার’’ (অর্থাৎ- আমি ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোন মা’বূদ নেই এবং আমি অতি মহান)। আর যখন বলেন, ’’লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু ওয়াহদাহূ লা- শারীকা লাহূ’’ (অর্থাৎ- আল্লাহ ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোন মা’বূদ নেই, তিনি একক, তাঁর কোন শারীক নেই)। তখন আল্লাহ তা’আলা বলেন, ’’লা- ইলা-হা ইল্লা- আনা- ওয়াহদী, লা- শারীকা লী’’ (অর্থাৎ- হ্যাঁ, আমি একক, আমার কোন শারীক নেই)। আর যখন কোন বান্দা বলেন, ’’লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু’’ (অর্থাৎ- আল্লাহ ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোন মা’বূদ নেই, তাঁরই রাজ্য ও তাঁরই প্রশংসা)। তখন আল্লাহ তা’আলা বলেন, ’’লা- ইলা-হা ইল্লা- আনা- লিয়াল মুলকু ওয়া লিয়াল হামদু’’ (অর্থাৎ- হ্যাঁ, আমি ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোন মা’বূদ নেই, আমারই রাজ্য এবং আমারই প্রশংসা)।

কোন বান্দা যখন বলেন, ’’লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু ওয়ালা- হাওলা ওয়ালা- ক্যুওয়াতা ইল্লা- বিল্লা-হি’’ (অর্থাৎ- আল্লাহ ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোন মা’বূদ নেই এবং আল্লাহর সাহায্য ছাড়া কারো কোন উপায় ও শক্তি নেই)। তখন আল্লাহ তা’আলা বলেন, ’’লা- ইলা-হা ইল্লা- আনা- লা- হাওলা ওয়ালা- ক্যুওয়াতা ইল্লা- বী’’ (অর্থাৎ- আল্লাহ ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোন মা’বূদ নেই এবং আমার সাহায্য ছাড়া কারো কোন উপায় ও শক্তি নেই)। আর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আরো বলতেন, যে ব্যক্তি এসব কালিমাগুলো নিজের অসুস্থতার সময়ে পড়ে, তারপর মৃত্যুবরণ করবে, সে জাহান্নামের আগুন হতে রক্ষা পাবে। (তিরমিযী, ইবনু মাজাহ)[1]

وَعَنْ أَبِي سَعِيدٍ وَأَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا قَالَا: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَنْ قَالَ: لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَاللَّهُ أَكْبَرُ صَدَّقَهُ رَبُّهُ قَالَ: لَا إِلَهَ إِلَّا أَنَا وَأَنَا أَكْبَرُ وَإِذَا قَالَ: لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ يَقُولُ اللَّهُ: لَا إِلَهَ إِلَّا أَنَا وَحْدِي لَا شَرِيكَ لِي وَإِذَا قَالَ: لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ قَالَ: لَا إِلَهَ إِلَّا أَنَا لِيَ الْمُلْكُ وَلِيَ الْحَمْدُ وَإِذَا قَالَ: لَا إِلَهَ إِلَّا الله وَلَا وحول وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللَّهِ قَالَ: لَا إِلَهَ إِلَّا أَنَا لَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِي وَكَانَ يَقُولُ: «مَنْ قَالَهَا فِي مَرَضِهِ ثُمَّ مَاتَ لَمْ تَطْعَمْهُ النَّارُ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَابْن مَاجَه

وعن أبي سعيد وأبي هريرة رضي الله عنهما قالا: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: من قال: لا إله إلا الله والله أكبر صدقه ربه قال: لا إله إلا أنا وأنا أكبر وإذا قال: لا إله إلا الله وحده لا شريك له يقول الله: لا إله إلا أنا وحدي لا شريك لي وإذا قال: لا إله إلا الله له الملك وله الحمد قال: لا إله إلا أنا لي الملك ولي الحمد وإذا قال: لا إله إلا الله ولا وحول ولا قوة إلا بالله قال: لا إله إلا أنا لا حول ولا قوة إلا بي وكان يقول: «من قالها في مرضه ثم مات لم تطعمه النار» . رواه الترمذي وابن ماجه

ব্যাখ্যা: (وَعَنْ أَبِىْ سَعِيدٍ وَأَبِىْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللّٰهُ عَنْهُمَا قَالَا: قَالَ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ) তিরমিযী, ইবনু মাজাহ ও হাকিমে আছে, নিশ্চয়ই তারা উভয়ে আল্লাহর রসূলের কাছে পৌঁছল, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ..... শেষ পর্যন্ত। ইবনুত্ তীন বলেন, এ শব্দের মাধ্যমে বর্ণনার তাকীদ নিয়ে এসেছেন, আমি বলব, এটি হল হাদীস আদায়ের ধরন। সুয়ূত্বী তাদরীবুর্ রাবী কিতাবের ১৩৫ পৃষ্ঠাতে বলেন, রামহুরমুযী হাদীস আদায় ও গ্রহণের শব্দসমূহের শ্রেণী বিন্যাসের ক্ষেত্রে একাধিক অধ্যায় বেঁধেছেন। সে অধ্যায়গুলো থেকে একটি হল, শাহাদাত শব্দকে নিয়ে আসা যেমন আবূ সা‘ঈদ-এর উক্তি আমি আল্লাহর রসূলের ব্যাপারে সাক্ষ্য দিচ্ছি جر (জার) বা কলসিতে নাবীয ভিজানো থেকে নিষেধ করেছেন। ‘আবদুল্লাহ বিন ত্বাউস-এর উক্তি আমি আমার পিতার ব্যাপারে সাক্ষ্য দিচ্ছি, নিশ্চয়ই তিনি বলেনঃ আমি জাবির বিন ‘আবদুল্লাহ-এর ব্যাপারে সাক্ষ্য দিচ্ছি, নিশ্চয়ই তিনি বলেনঃ আমি আল্লাহর রসূলের ব্যাপারে সাক্ষ্য দিচ্ছি, নিশ্চয়ই তিনি বলেনঃ আমি মানুষের সাথে যুদ্ধ করতে আদিষ্ট হয়েছি। ইবনু ‘আব্বাস-এর উক্তি আমার নিকট কিছু সন্তুষ্টচিত্ত লোক সাক্ষ্য দিল এবং আমার কাছে তাদেরকে সন্তুষ্ট করল। ‘আসরের এবং ফজরের পরে সালাতে।

(صَدَّقَه رَبُّه) অর্থাৎ- তার পালনকর্তা তার কথার সমর্থন বর্ণনা করতে যেয়ে বলেন, (لا إله إلا أنا وأنا أكبر) কারীর উক্তি ‘‘এ পদ্ধতি আমি সত্যায়ন করেছি’’ বলা অপেক্ষা পরিপূরক। তিরমিযীতে আছে (صدقة ربه وقال) অর্থাৎ- (قال) এর পূর্বে (واو) বৃদ্ধি করে। তারগীবে আছে, (صدقة ربه فقال) অর্থাৎ- (واو) বর্ণের পরিবর্তে (فاء) বর্ণ দ্বারা, ইবনু মাজাতে আছে বান্দা যখন (لا إله إلا الله الله أكبر) বলে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তখন আল্লাহ ‘আযযা ওয়াজাল্লা বলেন, আমার বান্দা সত্য বলেছে আমি ছাড়া কোন উপাস্য নেই এবং আমিই সর্বাধিক বড়।

(لَمْ تَطْعَمْهُ النَّارُ) অর্থাৎ- আগুন তাকে স্পর্শ করবে না অথবা তাকে জ্বালিয়ে দিবে না। অর্থাৎ- তাকে খাবে না। অর্থের আধিক্যতা বুঝানোর জন্য খাদ্যকে জ্বালিয়ে দেয়ার অর্থে (استعارة) করা হয়েছে যেন মানুষ তার খাদ্য যাকে সে খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে এবং এর মাধ্যমে শক্তি অর্জন করে। ইবনু মাজাতে আছে, এ শব্দগুলো যাকে মৃতের সময় দান করা হবে আগুন তাকে স্পর্শ করবে না। সিনদী বলেন, এ শব্দগুলো যাকে তার মৃত্যুর সময় দান করা হবে এবং এগুলো বলার তাওফীক যাকে দেয়া হবে আগুন তাকে স্পর্শ করবে না বরং শুরুতেই পুণ্যবানদের সাথে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।

হাদীসে ঐ ব্যাপারে প্রমাণ রয়েছে যে, হাদীসে এ উল্লেখিত শব্দসমূহ বান্দা যখন তার ঐ অসুস্থতাতে বলবে এবং ঐ শব্দসমূহের উপর ঐ অসুস্থতাতে মারা যাবে, অর্থাৎ- সুস্থ বিবেকে এ শব্দসমূহ তার শেষ কথা হবে তাহলে আগুন তাকে স্পর্শ করবে না এবং তার কৃত অবাধ্যতার কাজ তার কোন ক্ষতি করবে না। নিশ্চয়ই এ শব্দাবলী সমস্ত গুনাহকে ক্ষমা করে দিবে।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১০: আল্লাহ তা‘আলার নামসমূহ (كتاب اسماء الله تعالٰى)

পরিচ্ছেদঃ ১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - তাসবীহ (সুবহা-নাল্ল-হ), তাহমীদ (আল হাম্‌দুলিল্লা-হ), তাহলীল (লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ) ও তাকবীর (আল্ল-হু আকবার)- বলার সাওয়াব

২৩১১-[১৮] সা’দ ইবনু আবূ ওয়াককাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি একবার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে জনৈকা মহিলার কাছে গেলেন। তখন মহিলার সামনে কিছু খেজুরের বিচি; অথবা তিনি বলেছেন, কিছু কাঁকর ছিল, যা দিয়ে মহিলা গুণে গুণে তাসবীহ পড়ছিল। এটা দেখে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাকে বললেন, আমি কি এর চেয়ে তোমার পক্ষে সহজ তাসবীহ; অথবা বলেছেন, উত্তম তাসবীহ তোমাকে বলে দিব না? আর তা হচ্ছে,

’’সুবহা-নাল্ল-হি ’আদাদা মা- খলাকা ফিস্ সামা-য়ি, ওয়া সুবহা-নাল্ল-হি ’আদাদা মা- খলাকা ফিল আরযি, ওয়া সুবহা-নাল্ল-হি ’আদাদা মা- বায়না যা-লিকা ওয়া সুবহা-নাল্ল-হি ’আদাদা মা-হুওয়া খ-লিকুন ওয়াল্ল-হু আকবার মিসলা যা-লিকা ওয়াল হামদুলিল্লা-হি মিসলা যা-লিকা ওয়ালা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু মিসলা যা-লিকা ওয়ালা- হাওলা ওয়ালা- ক্যুওয়াতা ইল্লা- বিল্লা-হি মিসলা যা-লিকা’’

(অর্থাৎ- আল্লাহর জন্য পাক-পবিত্রতা, যে পরিমাণ তিনি আসমানে সৃষ্টিজগত করেছেন। আল্লাহর জন্য পাক-পবিত্রতা তাঁর ওই সৃষ্টিজগতের অনুরূপ যা আসমান ও জমিনের মধ্যে আছে। আর আল্লাহর জন্য সব পাক-পবিত্রতা যে পরিমাণ তিনি ভবিষ্যতে সৃষ্টি করবেন। আর অনুরূপভাবে ’’আল্ল-হু আকবার’’’’আলহামদুলিল্লা-হি’’ ’’লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ’’ এবং ’’লা- হাওলা ওয়ালা- ক্যুওয়াতা ইল্লা- বিল্লা-হি’’ও পড়বে। (তিরমিযী, আবূ দাঊদ; তিরমিযী হাদীসটিকে গরীব বলেছেন)[1]

وَعَنْ سَعْدِ بْنِ أَبِي وَقَّاصٍ أَنَّهُ دَخَلَ مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى امْرَأَةٍ وَبَيْنَ يَدَيْهَا نَوًى أَوْ حَصًى تُسَبِّحُ بِهِ فَقَالَ: «أَلَا أُخْبِرُكَ بِمَا هُوَ أَيْسَرُ عليكِ مِنْ هَذَا أَوْ أَفْضَلُ؟ سُبْحَانَ اللَّهِ عَدَدَ مَا خَلَقَ فِي السَّمَاءِ وَسُبْحَانَ اللَّهِ عَدَدَ مَا خَلَقَ فِي الْأَرْضِ وَسُبْحَانَ اللَّهِ عَدَدَ مَا بَيْنَ ذَلِكَ وَسُبْحَانَ اللَّهِ عَدَدَ مَا هُوَ خَالِقٌ وَاللَّهُ أَكْبَرُ مِثْلَ ذَلِكَ وَالْحَمْدُ لِلَّهِ مِثْلَ ذَلِكَ وَلَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ مِثْلَ ذَلِكَ وَلَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللَّهِ مِثْلَ ذَلِكَ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَأَبُو دَاوُدَ وَقَالَ التِّرْمِذِيُّ: هَذَا حَدِيث غَرِيب

وعن سعد بن أبي وقاص أنه دخل مع النبي صلى الله عليه وسلم على امرأة وبين يديها نوى أو حصى تسبح به فقال: «ألا أخبرك بما هو أيسر عليك من هذا أو أفضل؟ سبحان الله عدد ما خلق في السماء وسبحان الله عدد ما خلق في الأرض وسبحان الله عدد ما بين ذلك وسبحان الله عدد ما هو خالق والله أكبر مثل ذلك والحمد لله مثل ذلك ولا إله إلا الله مثل ذلك ولا حول ولا قوة إلا بالله مثل ذلك» . رواه الترمذي وأبو داود وقال الترمذي: هذا حديث غريب

ব্যাখ্যা: হাদীসে বিচি অথবা কঙ্কর দ্বারা তাসবীহ গণনা বৈধ হওয়ার ব্যাপারে প্রমাণ রয়েছে। এক মতে বলা হয়েছে, এভাবে তাসবীহ এর দানা দ্বারা তাসবীহ গণনা বৈধ রয়েছে আর তা গাঁথা দানা ও বিক্ষিপ্ত দানার মাঝে পার্থক্য না থাকার কারণে। আর বৈধতার কারণ মূলত রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মহিলাকে হুকুমের দিকে দিক-নির্দশনা করা বৈধতার পরিপন্থী না। ‘উবায়দুল্লাহ মুবারকপূরী বলেন, তবে এ ক্ষেত্রে আমার দৃষ্টি দেয়ার আছে, কেননা হাদীসটি দুর্বল। যদিও ইমাম তিরমিযী একে হাসান বলেছেন, ইমাম হাকিম ও যাহাবী একে সহীহ বলেছেন কিন্তু কঙ্কর অথবা বিচি দ্বারা তাসবীহ গণনা করা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কর্ম, উক্তি অথবা তার মৌনসম্মতি কর্তৃক মারফূ' সূত্রে কোন হাদীস প্রমাণিত হয়নি। আর কল্যাণ কেবল নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে প্রমাণিত হয়েছে তার অনুসরণার্থে; পরবর্তীদের নবআবিষ্কারে না।

(أَلَا أُخْبِرُكِ بِمَا هُوَ أَيْسَرُ عَلَيْكِ مِنْ هٰذَا أَوْ أَفْضَلُ؟) ইমাম ত্বীবী বলেন, নিশ্চয়ই তা সর্বোত্তম; কেননা তাতে শিথিলতা সম্পর্কে স্বীকৃতি রয়েছে, কেননা সে তার গুণকীর্তন পরিসংখ্যান করার ব্যাপারে সক্ষম না, আর বিচি দ্বারা তাসবীহ গণনাতে ঐ ব্যাপারে ঝুঁকি রয়েছে যে, সে পরিসংখ্যানের ব্যাপারে সক্ষম। কারী বলেন, হাদীসে বিচি দ্বারা তাসবীহ গণনা করতে ঝুঁকি আবশ্যক হয়ে যায় না, এরপর কারী শ্রেষ্ঠত্বের অন্যান্য দিকসমূহ উল্লেখ করেছেন যেগুলোর কোনটিই জখমমুক্ত নয় এবং চিন্তাশীলের কাছে যা গোপন না।

(عَدَدَ مَا بَيْنَ ذٰلِكَ) অর্থাৎ- আকাশ, জমিন, বাতাস, পাখি, মেঘমালা এবং এগুলো ছাড়া অন্যান্যদের হতে যা উল্লেখ করা হয়েছে তার মাঝে যা আছে তা।

(عَدَدَ مَا هُوَ خَالِقٌ) অর্থাৎ- এরপর যা তিনি সৃষ্টি করবেন। ইবনু হাজার একেই পছন্দ করেছেন এবং এটিই সর্বাধিক প্রকাশ্যমান। তবে সবাধিক সূক্ষ্ম ও গোপনীয় ত্বীবী যা বলেছেন, অর্থাৎ- অনাদী হতে অনন্ত পর্যন্ত তিনি যা সৃষ্টি করবেন তা। উদ্দেশ্য নিরবিচ্ছিন্নতা বিশ্লেষণের পরে অস্পষ্টতা। কেননা (اسم الفاعل) কে যখন আল্লাহ তা‘আলার দিকে সম্বন্ধ করা হবে তখন তা সৃষ্টির শুরু থেকে নিয়ে শেষ পর্যন্ত স্থায়িত্বের উপকারিতা দিবে। উদাহরণ স্বরূপ কেউ যদি বলে আল্লাহ ক্ষমতাবান, জ্ঞানী তখন সে কোন এক কালকে বাদ দিয়ে অপর কালকে উদ্দেশ্য করতে পারবে না।


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১০: আল্লাহ তা‘আলার নামসমূহ (كتاب اسماء الله تعالٰى)

পরিচ্ছেদঃ ১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - তাসবীহ (সুবহা-নাল্ল-হ), তাহমীদ (আল হাম্‌দুলিল্লা-হ), তাহলীল (লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ) ও তাকবীর (আল্ল-হু আকবার)- বলার সাওয়াব

২৩১২-[১৯] ’আমর ইবনু শু’আয়ব তাঁর পিতার মাধ্যমে তাঁর দাদা হতে বর্ণনা করেন। তাঁর দাদা বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি সকালে ও বিকালে একশ’বার করে ’সুবহা-নাল্ল-হ’ পড়বে, সে তাঁর মতো হবে (সাওয়াবের দিক দিয়ে) যে একশ’বার হজ করবে। যে ব্যক্তি সকালে ও বিকালে একশ’বার করে ’আলহামদুলিল্লা-হ’ পড়বে, সে আল্লাহর পথে একশ’ ঘোড়ায় একশ’ মুজাহিদ রওনা করে দেয়া ব্যক্তির মতো হবে। যে সকালে ও বিকালে একশ’বার করে ’লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ’ পড়বে, সে নবী ইসমা’ঈল (আঃ)-এর বংশের একশ’ লোক মুক্ত করে দেয়া ব্যক্তির সমতুল্য হবে। আর যে ব্যক্তি সকালে ও বিকালে একশ’বার করে ’আল্ল-হু আকবার’ পড়বে, সেদিন তার চেয়ে বেশি সাওয়াবের কাজ আর কেউ করতে পারবে না। অবশ্য যে ব্যক্তি ব্যতিক্রম, যে অনুরূপ ’আমল করেছে অথবা এর চেয়ে বেশি করেছে- (তিরমিযী; তিনি বলেন, হাদীসটি হাসান গরীব)[1]

وَعَنْ عَمْرِو بْنِ شُعَيْبٍ عَنْ أَبِيهِ عَنْ جَدِّهِ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَنْ سَبَّحَ اللَّهَ مِائَةً بِالْغَدَاةِ وَمِائَةً بِالْعَشِيِّ كَانَ كَمَنْ حَجَّ مِائَةَ حَجَّةٍ وَمَنْ حَمِدَ اللَّهَ مِائَةً بِالْغَدَاةِ وَمِائَةً بِالْعَشِيِّ كَانَ كَمَنْ حَمَلَ عَلَى مِائَةِ فَرَسٍ فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَمَنْ هَلَّلَ اللَّهَ مِائَةً بِالْغَدَاةِ وَمِائَةً بِالْعَشِيِّ كَانَ كَمَنْ أَعْتَقَ مِائَةَ رَقَبَةٍ مِنْ وَلَدِ إِسْمَاعِيلَ وَمَنْ كَبَّرَ اللَّهَ مِائَةً بِالْغَدَاةِ وَمِائَةً بِالْعَشِيِّ لَمْ يَأْتِ فِي ذَلِكَ الْيَوْمِ أَحَدٌ بِأَكْثَرِ مِمَّا أَتَى بِهِ إِلَّا مَنْ قَالَ مِثْلَ ذَلِكَ أَوْ زَادَ عَلَى مَا قَالَ. رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ. وَقَالَ: هَذَا حَدِيثٌ غَرِيب

وعن عمرو بن شعيب عن أبيه عن جده قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: من سبح الله مائة بالغداة ومائة بالعشي كان كمن حج مائة حجة ومن حمد الله مائة بالغداة ومائة بالعشي كان كمن حمل على مائة فرس في سبيل الله ومن هلل الله مائة بالغداة ومائة بالعشي كان كمن أعتق مائة رقبة من ولد إسماعيل ومن كبر الله مائة بالغداة ومائة بالعشي لم يأت في ذلك اليوم أحد بأكثر مما أتى به إلا من قال مثل ذلك أو زاد على ما قال. رواه الترمذي. وقال: هذا حديث غريب

ব্যাখ্যা: (بِالْغَدَاةِ وَمِائَةً بِالْعَشِىِّ) অর্থাৎ- দিনের শুরুতে এবং রাতের শুরুতে অথবা দিনে ও রাত্রে।

(كَانَ كَمَنْ حَجَّ مِائَةَ حَجَّةٍ) অর্থাৎ- নফল হজ। হাদীসটি ঐ ব্যাপারে প্রমাণ বহন করছে, যে আল্লাহর সাথে আন্তরিক সম্পর্ক ঠিক রেখে সহজ-সাবলীলভাবে ‘ইবাদাত করা উদাসীনতার সাথে জটিলভাবে ‘ইবাদাত করা অপেক্ষা উত্তম। হাদীসটি অধিক উৎসাহিতকরণে এবং বহুগুণ সাওয়াব অর্জন হয় এমন তাসবীহের মাঝে, বহুগুণ সাওয়াব অর্জন হয় এমন অন্যান্য হাজ্জের সাথে সমতা রদকরণে নাকিসকে কামিলের সাথে মিলিয়ে দেয়া অধ্যায়ের অন্তর্ভুক্ত হওয়া সম্ভব।

(عَلٰى مِائَةِ فَرَسٍ فِىْ سَبِيلِ اللّٰهِ) অর্থাৎ- জিহাদের মতো ক্ষেত্রে চাই দান স্বরূপ হোক, চাই ধার স্বরূপ হোক। তিরমিযীতে এর পরে আছে অথবা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সে একশতটি যুদ্ধ করল। এটি বর্ণনাকারীর সন্দেহ।

(كَانَ كَمَنْ أَعْتَقَ مِائَةَ رَقَبَةٍ) উল্লেখিত অংশে আর্থিক ‘ইবাদাতের সাথে নির্দিষ্ট ধনীদের সম্পর্কে নিঃস্ব মুহাজির জিকিরকারীদের সান্তবনা দেয়া হয়েছে।

(مِنْ وَلَدِ إِسْمَاعِيلَ) ইসমা‘ঈলের সন্তান থেকে দাস আযাদ করাকে নির্দিষ্ট করার কারণ হল কেননা ইসমা‘ঈল বংশের দাসদের অন্যান্য বংশের দাসদের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব রয়েছে।

আর এটা এ কারণে যে, মুহাম্মাদ, ইসমা‘ঈল, ইব্রাহীম এরা একে অপর থেকে উদ্ভূত। ত্বীবী বলেন, তাঁর উক্তি (مِنْ وَلَدِ إِسْمَاعِيلَ) দাস আযাদের ক্ষেত্রে পূর্ণতা দান, কেননা দাস আযাদ করা মহৎ উদ্দেশ্য। আর তা ইসমা‘ঈল (আঃ)-এর বংশধর থেকে হওয়া আরো গুরুত্বের দাবীদার। যা সৃষ্টির মাঝে বংশের দিক থেকে সর্বাধিক সম্মানিত মহৎ, দৃষ্টান্তপূর্ণ বংশ।

(لَمْ يَأْتِ فِىْ ذٰلِكَ الْيَوْمِ أَحَدٌ) অর্থাৎ- কিয়ামতের দিন উদ্দেশ্য।

(بِأَكْثَرَ) অর্থাৎ- অধিক সাওয়াব নিয়ে, বা (উদ্দেশ্য) সর্বোত্তম ‘আমল নিয়ে আর এখানে (أكثر) দ্বারা বিশ্লেষণ করা হয়েছে, কেননা তা (أفضل) অর্থে ব্যবহৃত।

(مِمَّا أَتٰى بِه) অর্থাৎ- সে যা সম্পাদন করেছে অথবা তার মত। এক মতে বলা হয়েছে এর বাহ্যিক দিক হল নিশ্চয়ই এটা এর পূর্বে যা আছে তার অপেক্ষা উত্তম। অনেক বিশুদ্ধ হাদীস যা প্রমাণ করেছে তা হল, নিশ্চয়ই সর্বোত্তম হল এ (لا إله إلا الله), অতঃপর (الحمد لله), তারপর (الله أكبر), তারপর (سبحان الله) পাঠ করা। সুতরাং তখন এ বলে ব্যাখ্যা করতে হবে (لا إله إلا الله) পাঠকারী এবং উল্লেখিত জিকির পাঠকারীগণ ছাড়া অন্য কেউ তাদের অপেক্ষা ঐ দিন উত্তম ‘আমল সম্পাদন করতে পারবে না।


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১০: আল্লাহ তা‘আলার নামসমূহ (كتاب اسماء الله تعالٰى)

পরিচ্ছেদঃ ১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - তাসবীহ (সুবহা-নাল্ল-হ), তাহমীদ (আল হাম্‌দুলিল্লা-হ), তাহলীল (লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ) ও তাকবীর (আল্ল-হু আকবার)- বলার সাওয়াব

২৩১৩-[২০] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ’সুবহা-নাল্ল-হ’ হলো পাল্লার অর্ধেক, ’আলহামদুলিল্লা-হ’ একে পূর্ণ করে, আর ’লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ’-এর সামনে কোন পর্দা নেই, যে পর্যন্ত না তা আল্লাহর কাছে গিয়ে না পৌঁছে। (তিরমিযী; তিনি বলেছেন, হাদীসটি গরীব, এর সানাদ সবল নয়)[1]

وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «التَّسْبِيحُ نِصْفُ الْمِيزَانِ وَالْحَمْدُ لِلَّهِ يَمْلَؤُهُ وَلَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ لَيْسَ لَهَا حِجَابٌ دُونَ اللَّهِ حَتَّى تَخْلُصَ إِلَيْهِ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ. وَقَالَ: هَذَا حَدِيثٌ غَرِيبٌ وَلَيْسَ إِسْنَاده بِالْقَوِيّ

وعن عبد الله بن عمرو قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «التسبيح نصف الميزان والحمد لله يملؤه ولا إله إلا الله ليس لها حجاب دون الله حتى تخلص إليه» . رواه الترمذي. وقال: هذا حديث غريب وليس إسناده بالقوي

ব্যাখ্যা: (التَّسْبِيحُ نِصْفُ الْمِيزَانِ) অর্থাৎ- তাসবীহ বর্ণনার সাওয়াবকে আকৃতি দেয়ার পর তা অর্ধেক দাড়িপাল্লাকে পূর্ণ করে নিবে। এখানে উদ্দেশ্য হল প্রতিষ্ঠিত দাড়িপাল্লাতে পুণ্য রাখার কারণে তার দু’ পাল্লার এক পাল্লাকে তা পূর্ণ করে নিবে।

(وَالْحَمْدُ لِلّٰهِ يَمْلَؤُه) অর্থাৎ- যদি (الْحَمْدُ لِلّٰهِ) দাড়িপাল্লার এক পাল্লাতে রাখা হয় তাহলে তা এক পাল্লাকে পূর্ণ করে নিবে। সুতরাং (الحمد) তাসবীহ অপেক্ষা উত্তম। তার সাওয়াব তাসবীহের সাওয়াবের দ্বিগুণ, কেননা তাসবীহ দাড়িপাল্লার এক পাল্লার অর্ধেক পূর্ণ করে। পক্ষান্তরে (الْحَمْدُ لِلّٰهِ) দাড়িপাল্লার দু’ পাল্লার একটিকে একাই পূর্ণ করে দেয়। অথবা উদ্দেশ্য এও হতে পারে যে, (الْحَمْدُ لِلّٰهِ) দাড়িপাল্লার বাকী অর্ধেককে পূর্ণ করে দিবে। অর্থাৎ- যদি তাসবীহের সাওয়াবকে দাড়িপাল্লার এক পাল্লাতে রাখার পর অন্য পাল্লাতে (الْحَمْدُ لِلّٰهِ) এর সাওয়াব রাখা হয় তাহলে দাড়িপাল্লা পূর্ণ হয়ে যাবে। তখন (الحمد) এর সাওয়াব তাসবীহের সাওয়াবের সমান হবে, কেননা (الحمد) এবং (تسبيح) থেকে প্রত্যেকটি দাড়িপাল্লার অর্ধেককে গ্রহণ করে এক সাথে দাড়িপাল্লাকে পূর্ণ করে দিবে তখন (الحمد) এবং (تسبيح) উভয়টি সমান হবে।

ত্বীবী বলেন, হাদীসে দু’টি দিক আছে। দু’টি দিকের একটি হল (تسبيح) এবং (تحميد) এর মাঝে সমতা উদ্দেশ্য করা আর তা এভাবে যে, (تسبيح) এবং (تحميد) প্রত্যেকটি অর্ধেক পাল্লা করে এক সাথে সম্পূর্ণ পাল্লাকে পূর্ণ করে দেয়। আর এটা এ কারণে যে, কেননা ঐ সকল জিকির যা দৈহিক ‘ইবাদাতের মূল তা দু’ প্রকারে সীমাবদ্ধ। দু’ প্রকারের একটি হল, পবিত্রতা বর্ণনা করা অপরটি প্রশংসা করা। (تسبيح) প্রথম প্রকারকে আয়ত্ব করে এবং (تحميد) দ্বিতীয় প্রকারকে অন্তর্ভুক্ত করে। দু’টির দ্বিতীয়টি দ্বারা (الحمد) কে (تسبيح)-এর শ্রেষ্ঠত্ব দান করা উদ্দেশ্য। এর সাওয়াব (تسبيح)-এর সাওয়াবের দ্বিগুণ। কেননা (تسبيح) এর দাড়িপাল্লার অর্ধেক আর (تحميد) একাই তাকে পূর্ণ করে আর এটা এ কারণে যে, কেননা সাধারণ (حمد)-এর অধিকারী হবে কেবল ঐ সত্তা যে সকল ঘাটতি থেকে মুক্ত সম্মান মর্যাদার গুণে গুণান্বিত। সুতরাং (حمد) দু’টি বিষয়কে এবং দু’টি প্রকারের সর্বোচ্চ প্রকারকে শামিল করতেছে। প্রথমটির দিকে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর (বাণী দু’টি জবানে হালকা এবং দাড়িপাল্লাতে ভারি) এ উক্তি দ্বারা এবং দ্বিতীয়টির দিকে (আমার হাতে থাকবে حمد-এর পতাকা) এ উক্তি দ্বারা ইঙ্গিত করা হচ্ছে।

‘উবায়দুল্লাহ মুবারকপূরী বলেন, আমি বলব, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উক্তি (لا إله إلا الله)-এর কোন পর্দা নেই (কেবল হওয়ার ক্ষেত্রে) এ উক্তির ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার ঊর্ধ্বগতির অর্থকে সমর্থন করা হচ্ছে। কেননা (لا إله إلا الله)-এর বাণী আল্লাহর পবিত্রতা সাব্যস্তকরণ এবং প্রশংসাকরণকে অন্তর্ভুক্ত করে যেমন অতিবাহিত হয়েছে। আর আল্লাহ ছাড়া যা কিছু রয়েছে তাদের পবিত্রতা ও প্রশংসাকরণকে সাব্যস্ত করে না। এখান থেকে এটিকে অন্য জাতের আওতাভুক্ত করা হয়েছে। কেননা প্রথম দু’টি ‘আমলের ক্ষেত্রে ওযন এবং পরিমাণের অর্থের মাঝে অন্তর্ভুক্ত। এ থেকে বিনা বাধাতে আল্লাহর নৈকট্যতা অর্জন হল।

হাদীসের বাহ্যিক অর্থ জটিলতা সৃষ্টি করেছে। কেননা (حمد) পাঠ করা যখন দাড়িপাল্লাকে পূর্ণ করবে তখন অবশিষ্ট ‘আমলকে কিভাবে ওযন করা হবে? পুণ্য এবং পাপ ওযনের ক্ষেত্রে বর্ণিত হাদীসসমূহের বাহ্যিক দিক হল নিশ্চয়ই সমস্ত পুণ্য কর্মসমূহকে এক পাল্লাতে রাখা হবে এবং সকল পাপসমূহকে অন্য পাল্লাতে রাখা হবে। আরো উত্তর দেয়া হয়েছে যে, ঐ ‘আমলসমূহ এবং জিকিরসমূহ ওযন করার সময় বহু আকৃতি ও ছোট আকৃতিতে পরিণত করার সম্ভাবনা রয়েছে। এ সত্ত্বেও এদের ওযনে ত্রুটি সৃষ্টি হবে না এবং একে অন্যের সাথে গাদাগাদি সৃষ্টি করবে না। আর আল্লাহ সর্বাধিক জ্ঞানী।

(وَلَا إِلٰهَ إِلَّا اللّٰهُ لَيْسَ لَهَا حِجَابٌ دُونَ اللّٰهِ) অর্থাৎ- (لا إله إلا الله) কবূল হওয়ার জন্য এমন কোন পর্দা নেই যা (لا إله إلا الله) কবূল হওয়াকে বাধা দিবে। আর তা পবিত্রতা ও প্রশংসা সাব্যস্ত করার কারণে এবং আল্লাহর সাথে অন্যের সমতা সাব্যস্তকে পরিষ্কারভাবে নিষেধ করার কারণে।

(حَتّٰى تَخْلُصَ إِلَيْهِ) অর্থাৎ- তাঁর পর্যন্ত ও কবূলের স্থান পর্যন্ত পৌঁছে যায়। এটা এবং এর মতো আরো বাণী দ্বারা উদ্দেশ্য হল, দ্রুত কবূল হওয়া ও অধিক সাওয়াব লাভ করা। উল্লেখিত হাদীসাংশে স্পষ্ট প্রমাণ রয়েছে যে, নিশ্চয়ই (لا إله إلا الله) হল (سبحان الله) এবং (الحمد لله) অপেক্ষা উত্তম।


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১০: আল্লাহ তা‘আলার নামসমূহ (كتاب اسماء الله تعالٰى)

পরিচ্ছেদঃ ১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - তাসবীহ (সুবহা-নাল্ল-হ), তাহমীদ (আল হাম্‌দুলিল্লা-হ), তাহলীল (লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ) ও তাকবীর (আল্ল-হু আকবার)- বলার সাওয়াব

২৩১৪-[২১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে কোন বান্দা খালেস মনে ’লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ’ বলবে, অবশ্যই তার জন্য জান্নাতের দরজাগুলো খোলা হবে, যতক্ষণ না তা আল্লাহর ’আরশে না পৌঁছে, তবে যদি সে কাবীরাহ্ গুনাহ হতে বিরত থাকে। (তিরমিযী; তিনি বলেন, হাদীসটি গরীব)[1]

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَا قَالَ عَبْدٌ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ مُخْلِصًا قَطُّ إِلَّا فُتِحَتْ لَهُ أَبْوَابُ السَّمَاءِ حَتَّى يُفْضِيَ إِلَى الْعَرْشِ مَا اجْتَنَبَ الْكَبَائِرَ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ. وَقَالَ: هَذَا حَدِيث غَرِيب

وعن أبي هريرة قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «ما قال عبد لا إله إلا الله مخلصا قط إلا فتحت له أبواب السماء حتى يفضي إلى العرش ما اجتنب الكبائر» . رواه الترمذي. وقال: هذا حديث غريب

ব্যাখ্যা: (إِلَّا فُتِحَتْ لَه أَبْوَابُ السَّمَاءِ) অর্থাৎ- কালিমাহ্ শাহাদাত সর্বদা উপরে উঠতে থাকবে পরিশেষে তা ‘আরশ পর্যন্ত পৌঁছবে।

(مَا اجْتَنَبَ الْكَبَائِرَ) অর্থাৎ- (لَا إِلٰهَ إِلَّا اللّٰهُ)-এর পাঠক কাবীরাহ্ গুনাহ থেকে বেঁচে থাকার সময়। ত্বীবী বলেন, পূর্বক্ত হাদীসটি প্রমাণ বহন করছে (لَا إِلٰهَ إِلَّا اللّٰهُ) পাঠ করার সাওয়াব ‘আরশ অতিক্রম করে আল্লাহ পর্যন্ত পৌঁছে যায়। এ থেকে উদ্দেশ্য হল, দ্রুত কবূল হওয়া আর কাবীরাহ্ গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা দ্রুত দু‘আ কবূলের শর্ত; সাওয়াব অর্জন ও দু‘আ কবূলের শর্ত না। অথবা পূর্ণ সাওয়াব অর্জন এবং দু‘আ কবূলের স্তরের জন্য শর্ত। কেননা মন্দ কর্ম পুণ্য কর্মকে বাদ করতে পারে না, পক্ষান্তরে পুণ্য কর্ম মন্দ কর্মকে দূর করে দেয়। হাদীসটিতে কবীরাহ্ গুনাহে জড়িত হওয়া থেকে সতর্ক করা হয়েছে এবং আল্লাহর বাণী (সূরা আল ফা-ত্বির ৩৫ : ১০) إِلَيْهِ يَصْعَدُ الْكَلِمُ الطَّيِّبُ وَالْعَمَلُ الصَّالِحُ يَرْفَعُهٗ এ সম্পর্কে অবহিত করা হয়েছে।


হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১০: আল্লাহ তা‘আলার নামসমূহ (كتاب اسماء الله تعالٰى)

পরিচ্ছেদঃ ১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - তাসবীহ (সুবহা-নাল্ল-হ), তাহমীদ (আল হাম্‌দুলিল্লা-হ), তাহলীল (লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ) ও তাকবীর (আল্ল-হু আকবার)- বলার সাওয়াব

২৩১৫-[২২] ’আবদুল্লাহ ইবনু মাস্’ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মি’রাজের রাতে ইব্রাহীম (আঃ)-এর সাথে আমার দেখা হলে তিনি আমাকে বললেন, হে মুহাম্মাদ! আপনি আপনার উম্মাতকে আমার সালাম বলবেন এবং খবর দিবেন যে, জান্নাত হলো সুগন্ধ মাটি ও সুপেয় পানিবিশিষ্ট। কিন্তু এতে কোন গাছপালা নেই (অর্থাৎ- জান্নাত হলো সমতল ভূমি)। এর গাছপালা হলো ’’সুবহা-নাল্ল-হি, ওয়ালহামদুলিল্লা-হি, ওয়ালা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু ওয়াল্ল-হু আকবার’’। (তিরমিযী; তিনি বলেন, সানাদগত দিক থেকে হাদীসটি হাসান গরীব)[1]

وَعَنِ ابْنِ مَسْعُودٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: لَقِيتُ إِبْرَاهِيمَ لَيْلَةَ أُسَرِيَ بِي فَقَالَ: يَا مُحَمَّدُ أَقْرِئْ أُمَّتَكَ مِنِّي السَّلَامَ وَأَخْبِرْهُمْ أَنَّ الْجَنَّةَ طَيِّبَةُ التُّرْبَةِ عَذْبَةُ الْمَاءِ وَأَنَّهَا قِيعَانٌ وَأَنَّ غِرَاسَهَا سُبْحَانَ اللَّهِ وَالْحَمْدُ لِلَّهِ وَلَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَاللَّهُ أَكْبَرُ . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ. وَقَالَ: هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ غَرِيبٌ إِسْنَادًا

وعن ابن مسعود قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: لقيت إبراهيم ليلة أسري بي فقال: يا محمد أقرئ أمتك مني السلام وأخبرهم أن الجنة طيبة التربة عذبة الماء وأنها قيعان وأن غراسها سبحان الله والحمد لله ولا إله إلا الله والله أكبر . رواه الترمذي. وقال: هذا حديث حسن غريب إسنادا

ব্যাখ্যা: (فَقَالَ) অর্থাৎ- ইব্রাহীম (আঃ) বলেন, এমতাবস্থায় তিনি স্বস্থানে সপ্তাকাশে বায়তুল মা‘মূর এর সাথে পিঠ হেলান দেয়াবস্থায় ছিলেন। (أَقْرِئْ أُمَّتَكَ مِنِّى السَّلَامَ) বলা হয়ে থাকে (أقرأ فلان فلانا السلام) এবং (أقرأ عليه السلام) অর্থাৎ- আমি তার ওপর সালাম পাঠ করছি, অর্থাৎ- সালাম তারই কাছে পৌঁছাচ্ছি।

(طَيِّبَةُ التُّرْبَةِ) কেননা তার মাটি মিস্‌ক আম্বার, জা‘ফরান এবং এদের অপেক্ষা সুগন্ধিময় কিছু নেই।

(قِيعَانٌ) যা (قاع) শব্দের বহুবচন, অর্থাৎ- বৃক্ষমুক্ত সমতল ভূমি।

(وَأَنَّ غِرَاسَهَا) অর্থাৎ- যা (غرس)-এর বহুবচন। কারী বলেন, তা এমন বস্ত্ত যা রোপণ করা হয় অর্থাৎ- জমিনের মাটি, বীজ হতে যা ঢেকে নেয় যাতে পরে তা গজায়। আর যখন ঐ মাটি উত্তম হবে এবং তার পানি মিষ্টি হবে তখন স্বভাবত চারা উত্তম হবে আর চারা বলতে উত্তম বাক্যাবলী আর এগুলো হল নিষ্ঠাপূর্ণ অবশিষ্ট কালিমাহ্, অর্থাৎ- তাদের জানিয়ে দিন এ বাক্যাবলী এবং এদের মতো আরো কিছুর উক্তিকারী জান্নাতে প্রবেশের কারণ এবং জান্নাতে তার বাসস্থানের বৃক্ষ অধিক হওয়ার কারণে, কেননা যখনই উক্তিকারী এগুলো বারংবার পাঠ করবে তখনই তার জন্য জান্নাতে তার পাঠের সংখ্যা পরিমাণ বৃক্ষ গজাবে।

তুরবিশতী বলেন, চারা কেবল উত্তম মাটিতে ভাল হয়ে থাকে। মিষ্টি পানি দ্বারা বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। অর্থাৎ- আপনি তাদেরকে জানিয়ে দিন নিশ্চয়ই এ বাক্যাবলী এদের উক্তিকারীকে জান্নাতের উত্তরাধিকারী বানিয়ে দেয় এবং এগুলো অর্জনের চেষ্টাকারীর চেষ্টা নষ্ট হয় না, কেননা রোপণকারী সে তার গুদামজাত করা বস্ত্ত একত্র করে রাখে না। শায়খ দেহলবী বলেন, বিষয়টি জটিলতা সৃষ্টি করছে যে, নিশ্চয়ই আলোচনা ঐ কথার উপর প্রমাণ বহনকারী যে, নিশ্চয়ই জান্নাতের মাটি বৃক্ষ ও প্রাসাদমুক্ত যা প্রমাণিত জান্নাতের বিপরীত। এ ব্যাপারে উত্তর প্রদান করা হয়েছে যে, আলোচ্য বিষয়টি ঐ কথার উপর প্রমাণ বহন করছে না যে, এখনও সে জান্নাত বৃক্ষ ও প্রাসাদমুক্ত, বরং ঐ কথার উপর প্রমাণ বহন করছে যে, মূলত জান্নাত বৃক্ষ, প্রাসাদমুক্ত এবং বৃক্ষসমূহ তাতে কর্মের বদলা স্বরূপ রোপণ করা হয়। অথবা উদ্দেশ্য নিশ্চয়ই জান্নাতে বৃক্ষসমূহ যা ‘আমলের কারণে হয়েছে তা যেন ‘আমলের কারণে রোপণ করা হয়েছে।

ইমাম ত্বীবী বলেন, এ হাদীসে জটিলতা রয়েছে, কেননা হাদীসটি ঐ কথার উপর প্রমাণ বহন করছে যে, জান্নাতের জমিন বৃক্ষ, প্রাসাদমুক্ত। পক্ষান্তরে আল্লাহর বাণী (جنات تجرى من تحتها الأنهار) এবং অপর বাণী (أعدت للمتقين) ঐ কথার উপর প্রমাণ বহন করছে যে, নিশ্চয়ই জান্নাত বৃক্ষ, প্রাসাদমুক্ত না। কেননা জান্নাতকে জান্নাত নামকরণ করা হয়েছে তার ছায়া বিশিষ্ট ঘন বৃক্ষসমূহের ডাল-পালা ঐক্যবদ্ধ হয়ে থাকার কারণে এবং তা জান্নাতের গঠন ঢেকে নেয়া অর্থের উপর আবর্তনশীল হওয়ার কারণে আর নিশ্চয়ই তা তৈরি করে প্রস্ত্তত করে রাখা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে উত্তর হল নিশ্চয়ই জান্নাত বৃক্ষ, প্রাসাদমুক্ত ছিল, অতঃপর আল্লাহ তার কৃপা ও তার অনুগ্রহের প্রশস্ততার মাধ্যমে ‘আমলকারীদের ‘আমল অনুপাতে তাতে বৃক্ষ ও প্রাসাদ সৃষ্টি করেছেন। যা প্রত্যেক ‘আমলকারীর জন্য তার ‘আমল অনুযায়ী নির্দিষ্ট। অতঃপর নিশ্চয়ই আল্লাহ সাওয়াব দানের জন্য যাকে যে ‘আমলের জন্য সৃষ্টি করেছেন তার জন্য তা যখন সহজ করে দিলেন তখন ‘আমলকারীকে রূপকার্থে বৃক্ষ রোপণকারীর ন্যায় করে দিলেন। অর্থাৎ- (سبب) কে (مسبب) এর উপর প্রয়োগ করা হয়েছে।

আরো উত্তর দেয়া হয়েছে যে, হাদীসে ঐ ব্যাপারে প্রমাণ নেই যে, জান্নাত সম্পূর্ণরূপে বৃক্ষ ও প্রাসাদমুক্ত। কেননা জান্নাত বৃক্ষ ও প্রাসাদমুক্ত হওয়ার অর্থ হল জান্নাতের অধিকাংশ চারা রোপণ করা, এছাড়া বাকী যা আছে তা প্রশস্ত স্থান রোপণহীন যাতে ঐ বাণীর কারণে চারা রোপণ করা হয় যাতে বিনা কারণে প্রকৃত চারা রোপণ এবং ঐ বাণীর কারণে চারা রোপণ। ত্ববারানী অত্যন্ত দুর্বল সানাদে সালমান ফারিসী-এর হাদীস কর্তৃক বর্ণনা করেন যার শব্দ হল ‘‘তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, নিশ্চয়ই জান্নাতে বৃক্ষ, প্রাসাদহীন ভূমি রয়েছে, সুতরাং বেশি করে চারা রোপণ কর। তারা বলল, হে আল্লাহর রসূল! চারা রোপণ কি? রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, (سبحان الله والحمد لله ولا إله إلا الله والله أكبر)।’’


হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১০: আল্লাহ তা‘আলার নামসমূহ (كتاب اسماء الله تعالٰى)

পরিচ্ছেদঃ ১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - তাসবীহ (সুবহা-নাল্ল-হ), তাহমীদ (আল হাম্‌দুলিল্লা-হ), তাহলীল (লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ) ও তাকবীর (আল্ল-হু আকবার)- বলার সাওয়াব

২৩১৬-[২৩] ইউসায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি মুহাজির রমণীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। তিনি বলেন, একদিন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে বললেন, তোমরা তাসবীহ (সুবহা-নাল্ল-হ), তাহলীল (লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ), তাকদীস (সুবহা-নাল মালিকিল কুদ্দূস) নিজের আঙ্গুলে গুণে গুণে পড়বে। কারণ আঙ্গুলকে কথা বলার শক্তি দিয়ে কিয়ামতের দিন জিজ্ঞেস করা হবে এবং আল্লাহর জিকির করা হতে গাফিল হয়ো না, যাতে তোমরা আল্লাহর রহমতকে ভুলে না যাও। (তিরমিযী ও আবূ দাঊদ)[1]

وَعَنْ يُسَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا وَكَانَتْ مِنَ الْمُهَاجِرَاتِ قَالَتْ: قَالَ لَنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «عَلَيْكُنَّ بِالتَّسْبِيحِ وَالتَّهْلِيلِ وَالتَّقْدِيسِ واعقِدْنَ بالأناملِ فإِنهنَّ مسؤولات مُسْتَنْطَقَاتٌ وَلَا تَغْفُلْنَ فَتَنْسَيْنَ الرَّحْمَةَ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَأَبُو دَاوُد

وعن يسيرة رضي الله عنها وكانت من المهاجرات قالت: قال لنا رسول الله صلى الله عليه وسلم: «عليكن بالتسبيح والتهليل والتقديس واعقدن بالأنامل فإنهن مسؤولات مستنطقات ولا تغفلن فتنسين الرحمة» . رواه الترمذي وأبو داود

ব্যাখ্যা: (قَالَ لَنَا رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ) অর্থাৎ- আমাদের মহিলাদের দলকে বললেন, মুসনাদে এরপর একটু বেশি আছে, হে মু’মিনাহ্ নারীরা! (بِالتَّسْبِيحِ) অর্থাৎ- (سبحان الله والتهليل) অর্থাৎ- (لا إله الا الله، والتقديس سبحان الملك القدوس) অথবা (سبوح قدوس رب الملائكة والروح)

(وَاعْقِدَنَّ بِالْأَنَامِلِ) ত্বীবী বলেন, এর মাধ্যমে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আঙ্গুল দ্বারা ঐ শব্দ বাক্যসমূহ গণনার ব্যাপারে উৎসাহিত করেছেন যাতে এর মাধ্যমে অর্জিত গুনাহসমূহ মুছে দেয়া হয় হাদীসাংশটুকু ঐ কথার উপর প্রমাণ বহন করতেছে যে, ‘আরবরা হিসাব করা জানত।

(فَإِنَّهُنَّ مَسْؤُوْلَاتٌ) কেননা কিয়ামতের দিন এগুলোকে জিজ্ঞেস করা হবে এগুলো যা উপার্জন করেছে এবং কোন জিনিসের ক্ষেত্রে এগুলো ব্যবহার করা হয়েছে সে সম্পর্কে।

(مُسْتَنْطَقَاتٌ) অর্থাৎ- এগুলোর মাঝে উচ্চারণ শক্তি দেয়ার কারণে এগুলো তাদের সাথীর পক্ষে অথবা বিপক্ষে সাক্ষ্য দিবে ভাল অথবা মন্দ কর্ম করার কারণে। আল্লাহ বলেন, ‘‘যেদিন তাদের কৃতকর্মের কারণে তাদের জিহবা, তাদের হাত, তাদের পা তাদের বিপক্ষে সাক্ষ্য দিবে।’’ (সূরা আন্ নূর ২৪ : ২৪)

অন্যত্র বলেন, ‘‘আর তোমরা গোপন করতে পারতে না তোমাদের চক্ষু, কর্ণ, তোমাদের দৃষ্টি, তোমাদের চামড়া তোমাদের বিপক্ষে সাক্ষ্য দেয়া থেকে’’- (সূরা ফুসসিলাত ৪১ : ২২)। এতে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ আল্লাহর সন্তুষ্টজনিত কাজে ব্যবহারে সতর্ক করা হয়েছে।

(فَتَنْسَيْنَ الرَّحْمَةَ) রহমাতকে ভুলে যাওয়া দ্বারা উদ্দেশ্য রহমাত লাভের উপকরণসমূহ ভুলে যাওয়া, অর্থাৎ- তোমরা জিকির ছেড়ে দিও না, কেননা তোমরা যদি জিকির ছেড়ে দাও তাহলে অবশ্যই তোমাদেরকে তার সাওয়াব থেকে মাহরুম করা হবে। শাওকানী বলেন, হাদীসটি ঐ ব্যাপারে প্রমাণ বহন করছে যে, আঙ্গুল দ্বারা তাসবীহ গণনা করা শারী‘আত সম্মত। আবূ দাঊদ একে সংকলন করেছেন এবং তিরমিযী একে সংকলন করে একে হাসান বলেছেন, ইমাম নাসায়ী একে সংকলন করেছেন এবং হাকিম একে ‘আবদুল্লাহ বিন ‘আমর থেকে সংকলন করে একে সহীহ বলেছেন।

‘আবদুল্লাহ বিন ‘আমর বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে তাঁর হাত দ্বারা তাসবীহ গণনা করতে দেখেছি। আবূ দাঊদ এবং অন্যান্যের বর্ণনাতে একটু বেশি এসেছে, তা হল ডান হাতের কথা। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বুসায়রার হাদীসে এর কারণ উল্লেখ করেছেন যে, আঙ্গুলসমূহকে বাকশক্তি দেয়া হবে এবং জিজ্ঞেস করা হবে, অর্থাৎ- আঙ্গুলসমূহ এ ব্যাপারে সাক্ষ্য প্রদান করবে। সুতরাং এভাবে তাসবীহ গণনা করা তাসবীহের দানা এবং কঙ্কর অপেক্ষা উত্তম। ‘উবায়দুল্লাহ মুবারকপূরী বলেন, আমি বলব, সা‘দ বিন আবী ওয়াক্কাস-এর পূর্বক্ত হাদীস এবং সফিয়্যাহ্’র হাদীস আটি এবং কঙ্কর দ্বারা তাসবীহ গণনা বৈধ হওয়ার উপর প্রমাণ বহন করছে। সফিয়্যাহ্ বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার কাছে আসলেন, এমতাবস্থায় আমার সামনে চার পাত্র আঁটি ছিল তার মাধ্যমে আমি তাসবীহ পাঠ করতাম। তিরমিযী, হাকিম একে সংকলন করেছেন সুয়ূত্বী একে বিশুদ্ধ বলেছেন।

ইমাম শাওকানী বলেছেন, এ হাদীস দু’টি আটি এবং কঙ্কর দ্বারা তাসবীহ পাঠ বৈধ হওয়ার উপর প্রমাণ বহন করছে। এমনিভাবে খেজুরের আঁটি, পাথর এবং তাসবীহের দানার নামে পার্থক্য না থাকার কারণে, এ ব্যাপারে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মহিলাদ্বয়কে সমর্থন করার কারণে, অসম্মতি না জানানোর কারণে এবং যা উত্তম তার প্রতি দিক-নির্দেশনা যা উত্তম না তা বৈধ হওয়ার ব্যাপারে বিরোধিতা না করার কারণে তাসবীহের দানা দ্বারা তাসবীহ পাঠ বৈধ হওয়ার উপর প্রমাণ বহন করছে।

‘উবায়দুল্লাহ মুবারকপূরী বলেন, ইতিপূর্বে আমরা সা‘দ-এর হাদীস সম্পর্কে বলেছি যে, তা দুর্বল। অপরদিকে সফিয়্যাহ্ এর হাদীসও দুর্বল, ইমাম তিরমিযী একে তার উক্তি ‘‘এ হাদীসটি গরীব, একে হাশিম বিন সা‘ঈদ আলকূফী সফিয়্যাহ্-এর আযাদকৃত দাস কিনানাহ্ থেকে, আর কিনানাহ্ সফিয়্যাহ্ থেকে বর্ণনা করেছেন আর এ সানাদ ছাড়া অন্য কোন সানাদে হাদীসটি জানা যায় না। এ দ্বারা দুর্বল সাব্যস্ত করেছেন। এর সানাদ মা‘রুফ না। পক্ষান্তরে হাকিম একে সহীহ বলেছেন হাফেয যাহাবী তার সমর্থন করেছেন আর সুয়ূত্বী তার মুতাবায়াত নিয়ে এসেছেন শাওকানী এ ক্ষেত্রে ধোঁকা খেয়েছেন আর এটা তাদের ক্ষেত্রে আশ্চর্যের বিষয়। কেননা হাশিম বিন সা‘ঈদকে যাহাবী মীযান গ্রন্থে উল্লেখ করে বলেন, ইবনু মা‘ঈন হাশিম বিন সা‘ঈদ সম্পর্কে বলেন, ليس بشيئ অর্থাৎ- তার হাদীস কম। ইবনু ‘আদী বলেন, তিনি যা বর্ণনা করেন তার পরিমাণ এমন যার মুতাবায়াত পাওয়া যায় না, এজন্য হাফেয তাকরীর গ্রন্থে তাকে দুর্বল বলে আখ্যা দিয়েছেন।


হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১০: আল্লাহ তা‘আলার নামসমূহ (كتاب اسماء الله تعالٰى)
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ১৩ পর্যন্ত, সর্বমোট ১৩ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে