২৩১৬

পরিচ্ছেদঃ ১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - তাসবীহ (সুবহা-নাল্ল-হ), তাহমীদ (আল হাম্‌দুলিল্লা-হ), তাহলীল (লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ) ও তাকবীর (আল্ল-হু আকবার)- বলার সাওয়াব

২৩১৬-[২৩] ইউসায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি মুহাজির রমণীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। তিনি বলেন, একদিন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে বললেন, তোমরা তাসবীহ (সুবহা-নাল্ল-হ), তাহলীল (লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ), তাকদীস (সুবহা-নাল মালিকিল কুদ্দূস) নিজের আঙ্গুলে গুণে গুণে পড়বে। কারণ আঙ্গুলকে কথা বলার শক্তি দিয়ে কিয়ামতের দিন জিজ্ঞেস করা হবে এবং আল্লাহর জিকির করা হতে গাফিল হয়ো না, যাতে তোমরা আল্লাহর রহমতকে ভুলে না যাও। (তিরমিযী ও আবূ দাঊদ)[1]

وَعَنْ يُسَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا وَكَانَتْ مِنَ الْمُهَاجِرَاتِ قَالَتْ: قَالَ لَنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «عَلَيْكُنَّ بِالتَّسْبِيحِ وَالتَّهْلِيلِ وَالتَّقْدِيسِ واعقِدْنَ بالأناملِ فإِنهنَّ مسؤولات مُسْتَنْطَقَاتٌ وَلَا تَغْفُلْنَ فَتَنْسَيْنَ الرَّحْمَةَ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَأَبُو دَاوُد

وعن يسيرة رضي الله عنها وكانت من المهاجرات قالت قال لنا رسول الله صلى الله عليه وسلم عليكن بالتسبيح والتهليل والتقديس واعقدن بالانامل فانهن مسوولات مستنطقات ولا تغفلن فتنسين الرحمة رواه الترمذي وابو داود

ব্যাখ্যা: (قَالَ لَنَا رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ) অর্থাৎ- আমাদের মহিলাদের দলকে বললেন, মুসনাদে এরপর একটু বেশি আছে, হে মু’মিনাহ্ নারীরা! (بِالتَّسْبِيحِ) অর্থাৎ- (سبحان الله والتهليل) অর্থাৎ- (لا إله الا الله، والتقديس سبحان الملك القدوس) অথবা (سبوح قدوس رب الملائكة والروح)

(وَاعْقِدَنَّ بِالْأَنَامِلِ) ত্বীবী বলেন, এর মাধ্যমে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আঙ্গুল দ্বারা ঐ শব্দ বাক্যসমূহ গণনার ব্যাপারে উৎসাহিত করেছেন যাতে এর মাধ্যমে অর্জিত গুনাহসমূহ মুছে দেয়া হয় হাদীসাংশটুকু ঐ কথার উপর প্রমাণ বহন করতেছে যে, ‘আরবরা হিসাব করা জানত।

(فَإِنَّهُنَّ مَسْؤُوْلَاتٌ) কেননা কিয়ামতের দিন এগুলোকে জিজ্ঞেস করা হবে এগুলো যা উপার্জন করেছে এবং কোন জিনিসের ক্ষেত্রে এগুলো ব্যবহার করা হয়েছে সে সম্পর্কে।

(مُسْتَنْطَقَاتٌ) অর্থাৎ- এগুলোর মাঝে উচ্চারণ শক্তি দেয়ার কারণে এগুলো তাদের সাথীর পক্ষে অথবা বিপক্ষে সাক্ষ্য দিবে ভাল অথবা মন্দ কর্ম করার কারণে। আল্লাহ বলেন, ‘‘যেদিন তাদের কৃতকর্মের কারণে তাদের জিহবা, তাদের হাত, তাদের পা তাদের বিপক্ষে সাক্ষ্য দিবে।’’ (সূরা আন্ নূর ২৪ : ২৪)

অন্যত্র বলেন, ‘‘আর তোমরা গোপন করতে পারতে না তোমাদের চক্ষু, কর্ণ, তোমাদের দৃষ্টি, তোমাদের চামড়া তোমাদের বিপক্ষে সাক্ষ্য দেয়া থেকে’’- (সূরা ফুসসিলাত ৪১ : ২২)। এতে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ আল্লাহর সন্তুষ্টজনিত কাজে ব্যবহারে সতর্ক করা হয়েছে।

(فَتَنْسَيْنَ الرَّحْمَةَ) রহমাতকে ভুলে যাওয়া দ্বারা উদ্দেশ্য রহমাত লাভের উপকরণসমূহ ভুলে যাওয়া, অর্থাৎ- তোমরা জিকির ছেড়ে দিও না, কেননা তোমরা যদি জিকির ছেড়ে দাও তাহলে অবশ্যই তোমাদেরকে তার সাওয়াব থেকে মাহরুম করা হবে। শাওকানী বলেন, হাদীসটি ঐ ব্যাপারে প্রমাণ বহন করছে যে, আঙ্গুল দ্বারা তাসবীহ গণনা করা শারী‘আত সম্মত। আবূ দাঊদ একে সংকলন করেছেন এবং তিরমিযী একে সংকলন করে একে হাসান বলেছেন, ইমাম নাসায়ী একে সংকলন করেছেন এবং হাকিম একে ‘আবদুল্লাহ বিন ‘আমর থেকে সংকলন করে একে সহীহ বলেছেন।

‘আবদুল্লাহ বিন ‘আমর বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে তাঁর হাত দ্বারা তাসবীহ গণনা করতে দেখেছি। আবূ দাঊদ এবং অন্যান্যের বর্ণনাতে একটু বেশি এসেছে, তা হল ডান হাতের কথা। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বুসায়রার হাদীসে এর কারণ উল্লেখ করেছেন যে, আঙ্গুলসমূহকে বাকশক্তি দেয়া হবে এবং জিজ্ঞেস করা হবে, অর্থাৎ- আঙ্গুলসমূহ এ ব্যাপারে সাক্ষ্য প্রদান করবে। সুতরাং এভাবে তাসবীহ গণনা করা তাসবীহের দানা এবং কঙ্কর অপেক্ষা উত্তম। ‘উবায়দুল্লাহ মুবারকপূরী বলেন, আমি বলব, সা‘দ বিন আবী ওয়াক্কাস-এর পূর্বক্ত হাদীস এবং সফিয়্যাহ্’র হাদীস আটি এবং কঙ্কর দ্বারা তাসবীহ গণনা বৈধ হওয়ার উপর প্রমাণ বহন করছে। সফিয়্যাহ্ বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার কাছে আসলেন, এমতাবস্থায় আমার সামনে চার পাত্র আঁটি ছিল তার মাধ্যমে আমি তাসবীহ পাঠ করতাম। তিরমিযী, হাকিম একে সংকলন করেছেন সুয়ূত্বী একে বিশুদ্ধ বলেছেন।

ইমাম শাওকানী বলেছেন, এ হাদীস দু’টি আটি এবং কঙ্কর দ্বারা তাসবীহ পাঠ বৈধ হওয়ার উপর প্রমাণ বহন করছে। এমনিভাবে খেজুরের আঁটি, পাথর এবং তাসবীহের দানার নামে পার্থক্য না থাকার কারণে, এ ব্যাপারে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মহিলাদ্বয়কে সমর্থন করার কারণে, অসম্মতি না জানানোর কারণে এবং যা উত্তম তার প্রতি দিক-নির্দেশনা যা উত্তম না তা বৈধ হওয়ার ব্যাপারে বিরোধিতা না করার কারণে তাসবীহের দানা দ্বারা তাসবীহ পাঠ বৈধ হওয়ার উপর প্রমাণ বহন করছে।

‘উবায়দুল্লাহ মুবারকপূরী বলেন, ইতিপূর্বে আমরা সা‘দ-এর হাদীস সম্পর্কে বলেছি যে, তা দুর্বল। অপরদিকে সফিয়্যাহ্ এর হাদীসও দুর্বল, ইমাম তিরমিযী একে তার উক্তি ‘‘এ হাদীসটি গরীব, একে হাশিম বিন সা‘ঈদ আলকূফী সফিয়্যাহ্-এর আযাদকৃত দাস কিনানাহ্ থেকে, আর কিনানাহ্ সফিয়্যাহ্ থেকে বর্ণনা করেছেন আর এ সানাদ ছাড়া অন্য কোন সানাদে হাদীসটি জানা যায় না। এ দ্বারা দুর্বল সাব্যস্ত করেছেন। এর সানাদ মা‘রুফ না। পক্ষান্তরে হাকিম একে সহীহ বলেছেন হাফেয যাহাবী তার সমর্থন করেছেন আর সুয়ূত্বী তার মুতাবায়াত নিয়ে এসেছেন শাওকানী এ ক্ষেত্রে ধোঁকা খেয়েছেন আর এটা তাদের ক্ষেত্রে আশ্চর্যের বিষয়। কেননা হাশিম বিন সা‘ঈদকে যাহাবী মীযান গ্রন্থে উল্লেখ করে বলেন, ইবনু মা‘ঈন হাশিম বিন সা‘ঈদ সম্পর্কে বলেন, ليس بشيئ অর্থাৎ- তার হাদীস কম। ইবনু ‘আদী বলেন, তিনি যা বর্ণনা করেন তার পরিমাণ এমন যার মুতাবায়াত পাওয়া যায় না, এজন্য হাফেয তাকরীর গ্রন্থে তাকে দুর্বল বলে আখ্যা দিয়েছেন।


হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১০: আল্লাহ তা‘আলার নামসমূহ (كتاب اسماء الله تعالٰى)