মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) পর্ব-২৫: শিষ্টাচার (كتاب الآداب)
৪৮৮৮

পরিচ্ছেদঃ ১২. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - ঠাট্টা ও কৌতুক প্রসঙ্গে

৪৮৮৮-[৫] উক্ত রাবী [আনাস (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জনৈক বৃদ্ধা মহিলাকে বললেনঃ কোন বৃদ্ধা জান্নাতে যাবে না। বৃদ্ধা জিজ্ঞেস করল, কি কারণে বৃদ্ধারা জান্নাতে যাবে না? অথচ এ বৃদ্ধা মহিলা কুরআন পাঠ করেছিল। তখন রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেনঃ তুমি কি কুরআনের এ আয়াত পাঠ করনি- إِنَّا أَنْشَأْنَاهُنَّ إِنشاءً فَجَعَلْنَاهُنَّ أَبْكَارًا অর্থাৎ- ’’তাদেরকে (অর্থাৎ ঐ হূরদেরকে) আমি সৃষ্টি করেছি এক অভিনব সৃষ্টিতে’’- (সূরাহ্ আল ওয়াক্বি’আহ্ ৫৬ : ৩৫)। (রযীন; আর শারহুস্ সুন্নাহ্ গ্রন্থে মাসাবীহের উদ্ধৃতিতে বর্ণিত)[1]

وَعَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ لِامْرَأَةٍ عَجُوزٍ: «إِنَّهُ لَا تَدْخُلُ الْجَنَّةَ عَجُوزٌ» فَقَالَتْ: وَمَا لَهُنَّ؟ وَكَانَتْ تَقْرَأُ الْقُرْآنَ. فَقَالَ لَهَا: «أَمَا تَقْرَئِينَ الْقُرْآنَ؟ (إِنَّا أَنْشَأْنَاهُنَّ إِنشاءً فجعلناهُنَّ أَبْكَارًا)
رَوَاهُ رَزِينٌ. وَفِي
شَرْحِ السُّنَّةِ» بِلَفْظِ «الْمَصَابِيحِ»

وعنه عن النبي صلى الله عليه وسلم قال لامرأة عجوز: «إنه لا تدخل الجنة عجوز» فقالت: وما لهن؟ وكانت تقرأ القرآن. فقال لها: «أما تقرئين القرآن؟ (إنا أنشأناهن إنشاء فجعلناهن أبكارا) رواه رزين. وفي شرح السنة» بلفظ «المصابيح»

ব্যাখ্যাঃ (قَالَ لِامْرَأَةٍ عَجُوزٍ) বলা হয়েছে যে, এই বৃদ্ধা মহিলার নাম সফিয়্যাহ্ বিনতু ‘আবদুল মুত্ত্বালিব। যিনি যুবায়র ইবনু ‘আও্ওয়াম (রাঃ)-এর মা এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ফুফু। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)

(لَا تَدْخُلُ الْجَنَّةَ عَجُوزٌ. فَقَالَتْ: وَمَا لَهُنَّ؟) অর্থাৎ বৃদ্ধা মহিলাগণ কোন কারণে জান্নাতে যেতে পারবে না অথচ তারা মু’মিনাদের অন্তর্ভুক্ত? অর্থাৎ তাদেরও তা সাধারণ যুবতী মু’মিনা নারীদের সাথে জান্নাতের যাওয়ার কথা। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)

(فَقَالَ لَهَا:أَمَا تَقْرَئِينَ الْقُرْآنَ؟) অর্থাৎ বৃদ্ধা মহিলার প্রশ্নের উত্তরে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে প্রশ্ন করেন। তুমি কি কুরআন পড় না? পবিত্র কুরআন মাজীদেই তো তোমার প্রশ্নের উত্তর আছে। তা হলো মহান আল্লাহ বলেন, إِنَّا أَنْشَأْنَاهُنَّ إِنْشَاءً فَجَعَلْنَاهُنَّ أَبْكَارًا ‘‘তাদেরকে (অর্থাৎ ঐ হূরদেরকে) আমি সৃষ্টি করেছি এক অভিনব সৃষ্টিতে’’- (সূরাহ্ আল ওয়াক্বি‘আহ্ ৫৬ : ৩৫)।

মহিলাদেরকে কিভাবে কুমারী করা হবে তার ২টি ব্যাখ্যা আছে। ১. যখনই তাদের স্বামীরা তাদের কাছে সহবাসের জন্য আসবে তখনই তাদেরকে কুমারী পাবে। আর ২. আল্লাহ পরকালে তাদেরকে নব যৌবন দান করবেন। যাতে তারা হূরদের চেয়ে সুন্দরী হয়ে যাবে। আর সে সকল মহিলার কয়েকজন স্বামী থাকবে তাদেরকে সবচেয়ে উত্তম চরিত্রবান স্বামীকে বেছে নেয়ার জন্য স্বাধীনতা দেয়া হবে। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৫: শিষ্টাচার (كتاب الآداب)
৪৮৮৯

পরিচ্ছেদঃ ১২. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - ঠাট্টা ও কৌতুক প্রসঙ্গে

৪৮৮৯-[৬] উক্ত রাবী [আনাস (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ’’যাহির ইবনু হারাম’’ নামক এক বনভূমির বাসিন্দা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্য বনভূমি থেকে উপঢৌকন হিসেবে কিছু নিয়ে আসত। সে যখন চলে যাওয়ার মনস্থ করত, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার পথের সম্বল গোছগাছ করে দিতেন। একদিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সম্পর্কে বললেনঃ যাহির আমাদের জন্য বনভূমির গোমস্তা, আর আমরা তার শহরের গোমস্তা। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে ভালোবাসতেন। সে ছিল দেখতে কুৎসিত। একদিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাজারে এলেন, তখন যাহির তার পণ্য সামগ্রী বিক্রি করছিল। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পিছন থেকে তাকে বুকে চেপে ধরলেন, ফলে সে তাঁকে দেখতে পেল না। যাহির বলল : কে? আমাকে ছেড়ে দাও। সে আড়চোখে লক্ষ্য করে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে চিনতে পারল। তখন সে তার পিঠকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বুকের সাথে বারাকাতের জন্য মিলাতে চেষ্টা করে সফল হলো। তখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতে লাগলেন, ’’গোলাম কিনবে কে?’’ যাহির এটা শুনে বলল : হে আল্লাহর রসূল! আল্লাহর কসম, আপনি আমাকে অকেজো পাবেন। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, কিন্তু আল্লাহ তা’আলার নিকট তুমি অকেজো নও। (শারহুস্ সুন্নাহ্)[1]

وَعَنْهُ أَنَّ رَجُلًا مِنْ أَهْلِ الْبَادِيَةِ كَانَ اسْمه زَاهِر بن حرَام وَكَانَ يهدي النَّبِي صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِنَ الْبَادِيَةِ فَيُجَهِّزُهُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا أَرَادَ أَنْ يَخْرُجَ فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ زَاهِرًا بَادِيَتُنَا وَنَحْنُ حَاضِرُوهُ» . وَكَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُحِبُّهُ وَكَانَ دَمِيمًا فَأَتَى النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمًا وَهُوَ يَبِيعُ مَتَاعَهُ فَاحْتَضَنَهُ مِنْ خلفِه وَهُوَ لَا يُبصره. فَقَالَ: أَرْسِلْنِي مَنْ هَذَا؟ فَالْتَفَتَ فَعَرَفَ النَّبِيَّ صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسلم فَجعل لَا يألوا مَا أَلْزَقَ ظَهْرَهُ بِصَدْرِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حِينَ عَرَفَهُ وَجَعَلَ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «مَنْ يَشْتَرِي الْعَبْدَ؟» فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ إِذًا وَاللَّهِ تَجِدُنِي كَاسِدًا فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَكِنْ عِنْدَ اللَّهِ لَسْتَ بِكَاسِدٍ» رَوَاهُ فِي «شرح السّنة»

وعنه أن رجلا من أهل البادية كان اسمه زاهر بن حرام وكان يهدي النبي صلى الله عليه وسلم من البادية فيجهزه رسول الله صلى الله عليه وسلم إذا أراد أن يخرج فقال النبي صلى الله عليه وسلم: «إن زاهرا باديتنا ونحن حاضروه» . وكان النبي صلى الله عليه وسلم يحبه وكان دميما فأتى النبي صلى الله عليه وسلم يوما وهو يبيع متاعه فاحتضنه من خلفه وهو لا يبصره. فقال: أرسلني من هذا؟ فالتفت فعرف النبي صلى الله عليه وسلم فجعل لا يألوا ما ألزق ظهره بصدر النبي صلى الله عليه وسلم حين عرفه وجعل النبي صلى الله عليه وسلم يقول: «من يشتري العبد؟» فقال: يا رسول الله إذا والله تجدني كاسدا فقال النبي صلى الله عليه وسلم: «لكن عند الله لست بكاسد» رواه في «شرح السنة»

ব্যাখ্যাঃ (أَنَّ رَجُلًا مِنْ أَهْلِ الْبَادِيَةِ) ‘‘আল ইস্তী‘আব’’ গ্রন্থে আছে যে, লোকটি হিজাযের অধিবাসী ছিল, তবে তিনি বনভূমিতে বাস করতেন। ইবনু হাজার ‘আসকালানী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ আমার মনে হয় তিনি বাদর যুদ্ধে উপস্থিত ছিলেন। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)

(مِنَ الْبَادِيَةِ) অর্থাৎ বনভূমিতে যে সকল ফল-মূল, শাক-সবজি, সুগন্ধি ও অন্যান্য জিনিসপত্র পাওয়া যায় তা তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে উপঢৌকন বা হাদিয়া দিতেন। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)

(لَكِنْ عِنْدَ اللهِ لَسْتَ بِكَاسِدٍ) একজন মানুষ নিজেকে ছোট বা নগণ্য মনে করবে এটাই স্বাভাবিক। এই দৃষ্টিভঙ্গিতেই সাহাবী নিজেকে কম দামের মানুষ মনে করেছিলেন, কিন্তু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে সুসংবাদ ছিলেন যে, তুমি নিজেকে ছোট বা নগণ্য মনে করলেও আল্লাহর নিকট ঈমানদার হওয়ার কারণে তোমার মূল্য অনেক। তুমি তার নিকট অনেক সম্মানিত এক লোক। হাদীসটি আল্লাহর সৎ বান্দাদের মূল্য যে আল্লাহর নিকট কত দামী তার প্রমাণ বহন করে। [সম্পাদক]


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৫: শিষ্টাচার (كتاب الآداب)
৪৮৯০

পরিচ্ছেদঃ ১২. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - ঠাট্টা ও কৌতুক প্রসঙ্গে

৪৮৯০-[৭] ’আওফ ইবনু মালিক আল আশজা’ঈ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি তাবূকের যুদ্ধের সময় রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে উপস্থিত হলাম। তিনি একটি চামড়ার তাঁবুর মধ্যে অবস্থান করছিলেন। আমি সালাম প্রদান করলে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমার সালামের জবাব দিলেন এবং বললেন, ভিতরে চলে এসো। আমি বললামঃ হে আল্লাহর রসূল! আমার সম্পূর্ণ শরীরটি নিয়েই ভিতরে আসব? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ হ্যাঁ, সম্পূর্ণটা নিয়েই। তখন আমি ভিতরে প্রবেশ করলাম। ’উসমান ইবনু আবূ ’আতিকাহ্ বলেনঃ ’আওফ ইবনু মালিক-এর ’’আমি সম্পূর্ণ প্রবেশ করব?’’ বলে কৌতুক করার কারণ ছিল, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর তাঁবুটি ছোট ছিল। (আবূ দাঊদ)[1]

وَعَنْ عَوْفِ بْنِ مَالِكٍ الْأَشْجَعِيِّ قَالَ: أَتَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي غَزْوَةِ تَبُوكَ وَهُوَ فِي قُبَّةٍ مِنْ أَدَمٍ فَسَلَّمْتُ فَرَدَّ عَلَيَّ وَقَالَ: «ادْخُلْ» فَقُلْتُ: أَكُلِّي يَا رَسُولَ اللَّهِ؟ قَالَ: «كُلُّكَ» فَدَخَلْتُ. قَالَ عُثْمَان بن أبي عَاتِكَة: إِنَّمَا قَالَ أَدْخُلُ كُلِّي مِنْ صِغَرِ الْقُبَّةِ. رَوَاهُ أَبُو دَاوُد

وعن عوف بن مالك الأشجعي قال: أتيت رسول الله صلى الله عليه وسلم في غزوة تبوك وهو في قبة من أدم فسلمت فرد علي وقال: «ادخل» فقلت: أكلي يا رسول الله؟ قال: «كلك» فدخلت. قال عثمان بن أبي عاتكة: إنما قال أدخل كلي من صغر القبة. رواه أبو داود

ব্যাখ্যাঃ (أَكُلِّي يَا رَسُولَ اللهِ؟) সাহাবী (রাঃ) রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে এ কথা বলার কারণ হলো যে তাবুর মধ্যে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন, সে তাবুটি ছোট ছিল। যেমনটি সামনে বর্ণনা আসছে। আর অত্র হাদীসটি হতে বুঝা যাচ্ছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেরূপ সাহাবীদের সাথে ঠাট্টা-কৌতুক করতেন, ঠিক তেমনি সাহাবীরাও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে ঠাট্টা-কৌতুক করতেন। (‘আওনুল মা‘বূদ ৮ম খন্ড, হাঃ ৪৯৯২)

তাবূক যুদ্ধ : ৯ম হিজরীর রজব মাসে তাবূক যুদ্ধ সংগঠিত হয়। মুতার যুদ্ধে রোমকদের বিরুদ্ধে প্রথম অভিযানের ১৩ মাস পর এটি ছিল তাদের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় অভিযান। আর এটিই ছিল রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অংশগ্রহণে তার জীবনের শেষ যুদ্ধ।

এ অভিযানে মুসলিম বাহিনীতে সৈন্যসংখ্যা ছিল ৩০,০০০ (ত্রিশ হাজার) এবং রোমকদের সৈন্য সংখ্যা ছিল ৪০,০০০ (চল্লিশ হাজার)-এর বেশী। যাদের মধ্যে লাখাম ও জুযামসহ অন্যান্য ‘আরব খ্রিষ্টান গোত্রসমূহ ছিল। যারা ইতিমধ্যে শামের (بلقاء) ‘বালকা’ পর্যন্ত এসে গিয়েছিল। গত বছরে মুতার যুদ্ধের শোচনীয় পরাজয়ের প্রতিশোধ নেবার জন্য তারা সরাসরি মদীনায় হামলার এই গোপন প্রস্তুতি নেয়। তাতে মদীনার সর্বত্র রোমক ভীতির (خَوْفُ غَسَّانَ) সঞ্চার হয়। কিন্তু এতদসত্ত্বেও রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের প্রতিরোধে রোমান সীমান্ত অভিমুখে যাত্রা করলে তারা সংবাদ পেয়ে ভীত হয়ে পালিয়ে যায়। রমাযান মাসে মুসলিম বাহিনী বিনা যুদ্ধে জয়ী হয়ে মদীনায় ফিরে আসে। এ অভিযানকালে সূরাহ্ তাওবার অনেকগুলো আয়াত নাযিল হয়। পঞ্চাশ দিনের এ দীর্ঘ সফরে ৩০ দিন যাতায়াতে এবং ২০ দিন তাবূকে অবস্থানে ব্যয়িত হয়।ৎ

(ইবনু হিশাম ২/৫১৫-১৬, যাদুল মা‘আদ ৩/৪৬১, আর্ রা্হীক ৪২০, সীরাতুর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ৫৮৩ পৃঃ)

এ যুদ্ধে সাহাবীগণ প্রচুর পরিমাণে দান করেন। এ যুদ্ধের জন্য আবূ বকর (রাঃ) তার সমস্ত সম্পদ এনে পেশ করেন এবং ‘উমার ফারূক (রাঃ) তার অর্ধেক সম্পদ পেশ করেন। এ যুদ্ধ থেকে ফিরে (مسجد الضرار) ‘মসজিদে যিরার’ বা অনিষ্টকারী মসজিদকে ভেঙ্গে ফেলা হয়।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আউফ ইবনু মালিক (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৫: শিষ্টাচার (كتاب الآداب)
৪৮৯১

পরিচ্ছেদঃ ১২. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - ঠাট্টা ও কৌতুক প্রসঙ্গে

৪৮৯১-[৮] নু’মান ইবনু বাশীর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন আবূ বকর(রাঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ঘরে প্রবেশের অনুমতি চাইলেন, তখনই তিনি ’আয়িশাহ (রাঃ)-এর সুউচ্চ কণ্ঠস্বর শুনতে পেলেন। যখন তিনি ঘরে প্রবেশ করলেন, ’আয়িশাহ্ (রাঃ)-কে চড় মারার অভিপ্রায়ে তাঁর হাত ধরে ফেললেন এবং বললেনঃ সাবধান! ভবিষ্যতে যেন তোমাকে কখনো রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর স্বরের চেয়ে উচ্চস্বরে কথা বলতে না শুনি। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূ বকর (রাঃ)-কে থামাতে এবং শান্ত করতে চেষ্টা করতে লাগলেন। অতঃপর রাগান্বিতভাবেই আবূ বকর(রাঃ) বের হয়ে চলে গেলেন। যখন আবূ বকর চলে গেলেন তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ লোকটার হাত থেকে তোমাকে কিভাবে বাঁচালাম দেখলে? রাবী বর্ণনা করেন যে, এ ঘটনার পর কয়েকদিন আবূ বকর(রাঃ) রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে আসেননি। অতঃপর একদিন তিনি উপস্থিত হয়ে প্রবেশের অনুমতি চাইলেন এবং ঘরে প্রবেশ করে দেখলেন, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ও ’আয়িশাহ্ (রাঃ) উভয়েই পারস্পরিক সমঝোতার পরিবেশে রয়েছেন। তখন আবূ বকর(রাঃ) উভয়কে লক্ষ্য করে বললেনঃ যেভাবে তোমরা আমাকে তোমাদের যুদ্ধের অংশীদার করেছিলে, সেভাবে তোমাদের সন্ধি ও সমঝোতায়ও অংশীদার করো। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আমরা তা-ই করলাম। আমরা তা-ই করলাম। (আবূ দাঊদ)[1]

وَعَن النعمانِ بن بشيرٍ قَالَ: اسْتَأْذَنَ أَبُو بَكْرٍ عَلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَسَمِعَ صَوْتَ عَائِشَةَ عَالِيًا فَلَمَّا دَخَلَ تَنَاوَلَهَا لِيَلْطِمَهَا وَقَالَ: لَا أَرَاكِ تَرْفَعِينَ صَوْتَكِ عَلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَجَعَلَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم يحجزه وَأَبُو بَكْرٍ مُغْضَبًا. فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حِينَ خَرَجَ أَبُو بَكْرٍ: «كَيْفَ رَأَيْتِنِي أَنْقَذْتُكِ مِنَ الرَّجُلِ؟» . قَالَتْ: فَمَكَثَ أَبُو بَكْرٍ أَيَّامًا ثُمَّ اسْتَأْذَنَ فَوَجَدَهُمَا قَدِ اصْطَلَحَا فَقَالَ لَهُمَا: أَدْخِلَانِي فِي سِلْمِكُمَا كَمَا أَدْخَلْتُمَانِي فِي حَرْبِكُمَا فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «قَدْ فَعَلْنَا قَدْ فَعَلْنَا» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ

وعن النعمان بن بشير قال: استأذن أبو بكر على النبي صلى الله عليه وسلم فسمع صوت عائشة عاليا فلما دخل تناولها ليلطمها وقال: لا أراك ترفعين صوتك على رسول الله صلى الله عليه وسلم فجعل النبي صلى الله عليه وسلم يحجزه وأبو بكر مغضبا. فقال النبي صلى الله عليه وسلم حين خرج أبو بكر: «كيف رأيتني أنقذتك من الرجل؟» . قالت: فمكث أبو بكر أياما ثم استأذن فوجدهما قد اصطلحا فقال لهما: أدخلاني في سلمكما كما أدخلتماني في حربكما فقال النبي صلى الله عليه وسلم: «قد فعلنا قد فعلنا» . رواه أبو داود

ব্যাখ্যাঃ (كَيْفَ رَأَيْتِنِي أَنْقَذْتُكِ مِنَ الرَّجُلِ؟) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে বাড়ীর ভিতর মা ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) উচ্চৈঃস্বরে কথা বলতে শুনে তার পিতা ও রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর শ্বশুর আবূ বকর (রাঃ) অত্যন্ত রাগান্বিত হয়ে তার মেয়েকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে বেয়াদবির জন্য মারতে উদ্যত হলেন। তবে মা ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর প্রতি অত্যন্ত ভালোবাসা থাকার কারণে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে তার পিতার হাত থেকে রক্ষা করলেন তথা মারতে দিলেন না। মা ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর আচরণে ব্যথিত হয়ে আবূ বকর অত্যন্ত রাগান্বিত হয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে চলে গেলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মা ‘আয়িশাকে কৌতুক করার ছলে উল্লেখিত উক্তিটি করেন। যার অর্থ হলো দেখলে তো লোকটার হাত থেকে তোমাকে কিভাবে বাঁচালাম।’

(مِنَ الرَّجُلِ) বলার কারণ : নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মা ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-কে লক্ষ্য করে বললেন, ‘তোমাকে লোকটির হাত থেকে রক্ষা করেছি, কিন্তু তোমাকে তোমার পিতার হাত থেকে রক্ষা করেছি বললেন না কেন? এর জবাবে বলা যায়, যদি আবূ বকর (রাঃ) পিতা হিসেবে তোমাকে মারতে চাইতেন, তাহলে পিতৃস্নেহে মারা সম্ভব হতো না। কেননা পিতৃস্নেহ ও সন্তানকে মারধর করা পরস্পর বিরোধী। বস্তুত তিনি একজন পূর্ণ ঈমানদার ব্যক্তি হিসেবে আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে অন্যায় হচ্ছে দেখে সত্যি সত্যিই মারতে উদ্যত হয়েছিলেন। সুতরাং তোমার ওপর ক্রোধ ‘বাপ’ হিসেবে ছিল না, বরং ‘‘মর্দে মু’মিন’’ হিসেবে ছিল। তাই তিনি মারতে না পারায় রাগ করে চলে গেলেন। সেজন্য নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম مِنَ الرَّجُلِ ‘‘লোকটি থেকে’’ বলেছেন। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)

হাদীসটির শিক্ষা ও বাস্তবিক প্রয়োগ : অত্র হাদীসটিতে সহীহ মুসলিম এর ৫২নং হাদীসের প্রয়োগ লক্ষণীয়। তা হলো مَنْ رَأَى مِنْكُمْ مُنْكَرًا فَلْيُغَيِّرْهُ بِيَدِه، فَإِنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَبِلِسَانِه، فَإِنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَبِقَلْبِه، وَذٰلِكَ أَضْعَفُ الْإِيمَانِ তোমাদের মধ্যে যখন কেউ কোন খারাপ কাজ (শারী‘আতবিরোধী কাজ) দেখবে তখন সে যেন হাত দ্বারা তা প্রতিরোধ করে, ‘সম্ভব না হলে মুখ দিয়ে.....। পৃথিবীর ইতিহাসে শ্রেষ্ঠ একজন মহিলাকে তার স্বামীর সামনে যিনি শ্রেষ্ঠ রসূল তার পিতা যিনি নবী-রসূলদের পরে শ্রেষ্ঠ মানুষ, তিনি মারার জন্য উদ্দ্যত হচ্ছেন। আমার সামাজিকতায় কি এটা ভাবা যায়? আমাদের সমাজে অনেক মেয়েই তার স্বামী বা স্বামীর পরিবারস্থ লোকেদের সাথে মন্দ আচরণ করে,’ ফলে পরস্পর আত্মীয়দের মধ্যে নানা প্রকার বিবাদের সৃষ্টি হয়। অনেক সময় আত্মীয়তার সম্পর্কচ্ছেদ হয়ে যায়। কিন্তু যদি মেয়ের পক্ষপাতিত্ব না করে যথোপযুক্ত শাসন করে, তাহলে সেই বিবাদ বা বিপদ থেকে সহজেই রক্ষা পাওয়া সম্ভব। [সম্পাদক]


হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৫: শিষ্টাচার (كتاب الآداب)
৪৮৯২

পরিচ্ছেদঃ ১২. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - ঠাট্টা ও কৌতুক প্রসঙ্গে

৪৮৯২-[৯] ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ তুমি তোমার কোন মুসলিম ভাইয়ের সাথে ঝগড়া করো না, কৌতুক করো না এবং এমন ওয়া’দা করো না, যা রক্ষা করতে পারবে না। [তিরমিযী; আর ইমাম তিরমিযী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, এ হাদীসটি গরীব।][1]

وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «لَا تُمَارِ أَخَاكَ وَلَا تُمَازِحْهُ وَلَا تَعِدْهُ مَوْعِدًا فَتُخْلِفَهُ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَقَالَ: هَذَا حديثٌ غَرِيب
وَهَذَا الْبَابُ خَالٍ عَنِ الْفَصْلِ الثَّالِثِ

وعن ابن عباس عن النبي صلى الله عليه وسلم قال: «لا تمار أخاك ولا تمازحه ولا تعده موعدا فتخلفه» . رواه الترمذي وقال: هذا حديث غريب وهذا الباب خال عن الفصل الثالث

ব্যাখ্যাঃ (وَلَا تُمَازِحْهُ) এখানে কৌতুক দ্বারা নাজায়িয ও মনে কষ্টদায়ক কৌতুক করা থেকে নিষেধ করা হয়েছে, যে কৌতুকে মানুষের মান-সম্মান নষ্ট হয়। জায়িয ও সত্য কৌতুক করা নিষেধ করা হয়নি। (তুহফাতুল আহ্ওয়াযী ৫ম খন্ড, হাঃ ১৯৯৫; মিরক্বাতুল মাফাতীহ)

এ অধ্যায়ের শুরুতে যে শর্তগুলো উল্লেখ করা হয়েছে, সে অনুযায়ী কৌতুক করা যাবে। অন্য কোন কৌতুক করা যাবে না।


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৫: শিষ্টাচার (كتاب الآداب)
৪৮৯৩

পরিচ্ছেদঃ ১৩. প্রথম অনুচ্ছেদ - বংশগৌরব ও পক্ষপাতিত্ব

الْمُفَاخَرَةِ শব্দটি বাবে مفاعلة এর মাসদার। মূল অক্ষর فخر অর্থ গর্ব করা, গৌরব করা। এটা দু’ প্রকার : ১. নিন্দনীয়। যেমন- প্রতারণার উদ্দেশে বা পার্থিব কোন ব্যক্তির স্বার্থ চরিতার্থের জন্য মিথ্যা বংশ গৌরব করা। এটা অবৈধ। ২. প্রশংসনীয়। যেমন, কাফির মুশরিকদের সাথে যুদ্ধের সময় বীরত্ব প্রকাশের উদ্দেশে গৌরবের কথা প্রকাশ করা। এটা জায়িয। মহান আল্লাহ বলেন, وَأَمَّا بِنِعْمَةِ رَبِّكَ فَحَدِّثْ ’’তুমি তোমার রবের নি’আমাতের কথা বর্ণনা কর।’’ (সূরাহ্ আয্ যুহা- ৯৩ : ১১)

নিন্দনীয় গর্ব করা থেকে সাবধান করতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ،إِنَّ اللهَ عَزَّ وَجَلَّ قَدْ أَذْهَبَ عَنْكُمْ عُبِّيَّةَ الْجَاهِلِيَّةِ، وَفَخْرَهَا بِالْآبَاءِ مُؤْمِنٌ تَقِيٌّ، وَفَاجِرٌ شَقِيٌّ، أَنْتُمْ بَنُو آدَمَ وَآدَمُ مِنْ تُرَابٍ، لَيَدَعَنَّ رِجَالٌ فَخْرَهُمْ بِأَقْوَامٍ، إِنَّمَا هُمْ فَحْمٌ مِنْ فَحْمِ جَهَنَّمَ، أَوْ لَيَكُونُنَّ أَهْوَنَ عَلَى اللهِ مِنَ الْجِعْلَانِ الَّتِي تَدْفَعُ بِأَنْفِهَا النَّتِنَ

আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মহান আল্লাহ তোমাদের জাহিলী যুগের মিথ্যা অহংকার ও পূর্বপুরুষদেরকে নিয়ে গর্ব করার প্রথাকে বিলুপ্ত করেছেন। মু’মিন হলো আল্লাহভীরু আর পাপী হলো দুর্ভাগা। তোমরা সকলে আদম সন্তান আর আদম (আ.) মাটির তৈরি। লোকেদের উচিত বিশেষ গোত্রেরভুক্ত হওয়াকে কেন্দ্র করে অহংকার না করা। এখন তো তারা জাহান্নামের কয়লায় পরিণত হয়েছে। অন্যথায় তোমরা মহান আল্লাহর নিকট ময়লার সেই কীটের চেয়ে জঘন্য হবে যে তার নাক দিয়ে ময়লা ঠেলে নিয়ে যায়। (আবূ দাঊদ ৫১১৬, তিরমিযী ৪২৩৩ : হাসান)

মির্’আতুল মাফাতীহ-এর মধ্যে ’আল্লামা মুবারকপূরী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ বংশীয় বা গোত্রীয় অহংকার বলা হয়, বাপ দাদার অথবা বংশের নাম উল্লেখ করে গর্ব করাকে। এ কাজ অন্যকে ছোট করে নিজের মর্তবাকে উঁচু করে তোলার জন্য করা হয়। সেজন্য এ কাজ জায়িয নেই। অন্যের গোত্রকে ছোট করে দেখার সুযোগ নেই। কারণ এ কাজে অন্যকে ছোট করা হয় বা লজ্জায় ফেলা হয়।

আর العصبية শব্দের অর্থ হলো-স্বজনপ্রীতি বা পক্ষপাতিত্ব করা। পরিভাষায় রক্তের বন্ধনে আবদ্ধতার অনুভূতি এবং সেই অনুভূতির কারণে অন্যের প্রতি বিদ্বেষভাব পোষণ করাকে العصبية বলা হয়। আধুনিক পরিভাষায় একে গোত্রবাদ বা সাম্প্রদায়িকতাও বলা যেতে পারে। এটি একটি জাহিলী প্রথা। এ ব্যাপারে হাদীসে রয়েছে, আল হাবিস আল আশ্’আরী হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ

وَمَنْ ادَّعٰى دَعْوَى الجَاهِلِيَّةِ فَإِنَّهٗ مِنْ جُثَا جَهَنَّمَ، فَقَالَ رَجُلٌ: يَا رَسُولَ اللهِ وَإِنْ صَلّٰى وَصَامَ؟ قَالَ: وَإِنْ صَلّٰى وَصَامَ، فَادْعُوا بِدَعْوَى اللهِ الَّذِي سَمَّاكُمُ المُسْلِمِينَ المُؤْمِنِينَ، عِبَادَ اللهِ

আর যে লোক জাহিলিয়্যাতের ’আমলের রীতি-নীতির দিকে আহবান করে সে জাহান্নামীদের দলভুক্ত। জনৈক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! সে সালাত আদায় করলেও, সিয়াম পালন করলেও? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ হ্যাঁ। সে সালাত আদায় করলেও, সিয়াম পালন করলেও। সুতরাং তোমরা সেই আল্লাহ তা’আলার ডাকেই নিজেদেরকে ডাকবে যিনি তোমাদেরকে মুসলিম, মু’মিন ও আল্লাহ তা’আলার বান্দা নাম রেখেছেন।

(তিরমিযী ২৮৬৩, মিশকাত ৩৬৯৪)

অন্য হাদীসে এসেছে-

عَنْ جَابِرٍ، قَالَ: اقْتَتَلَ غُلَامَانِ غُلَامٌ مِنَ الْمُهَاجِرِينَ، وَغُلَامٌ مِنَ الْأَنْصَارِ، فَنَادَى الْمُهَاجِرُ أَوِ الْمُهَاجِرُونَ، يَا لَلْمُهَاجِرِينَ وَنَادَى الْأَنْصَارِيُّ يَا لَلْأَنْصَارِ، فَخَرَجَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَ: مَا هٰذَا دَعْوٰى أَهْلِ الْجَاهِلِيَّةِ.

জাবির হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আনসার ও মুহাজিরদের দু’জন বালক মারামারি করলে মুহাজিরগণ তাদের মুহাজির ভাইদের এবং আনসারগণ তাদের আনসার ভাইদের ডাকলেন। তখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বের হয়ে এসে বললেন, এটা কি জাহিলী যুগের সেই (মারামারির) ডাকার মতো? (মুসলিম ৬২-[২৫৮৪]) [সম্পাদক]



৪৮৯৩-[১] আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করা হলো, কে সবচেয়ে সম্মানিত? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ আল্লাহ তা’আলার নিকট সবচেয়ে সম্মানিত সে ব্যক্তি, যে সবচেয়ে আল্লাহভীরু। সাহাবায়ে কিরাম (রাঃ)জিজ্ঞেস করলেনঃ আমরা এ দৃষ্টিকোণ থেকে জিজ্ঞেস করিনি। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ সকল মানুষের মধ্যে সম্মানিত ব্যক্তি ইউসুফ (আ.), যিনি আল্লাহর নবী এবং আল্লাহর নবীর পুত্র এবং আল্লাহর নবীর পৌত্র এবং আল্লাহর বন্ধু ইব্রাহীম (আ.)-এর প্রপৌত্র ছিলেন। সাহাবায়ে কিরাম (রাঃ)বললেনঃ আমরা এ দৃষ্টিকোণ থেকেও জিজ্ঞেস করিনি। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ ’আরবদের বংশ ও গোত্র সম্পর্কে কি জিজ্ঞেস করছ? সাহাবায়ে কিরাম (রাঃ)বললেনঃ জ্বী হ্যাঁ। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি অন্ধকার যুগে ভালো ছিল, সে ইসলামী যুগেও ভালো, যখন সে দীন ইসলামের সম্যক অবহিত। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

بَابُ الْمُفَاخَرَةِ وَالْعَصَبِيَّةِ

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: سُئِلَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: أَي النَّاس أكْرم؟ فَقَالَ: «أَكْرَمُهُمْ عِنْدَ اللَّهِ أَتْقَاهُمْ» . قَالُوا: لَيْسَ عَنْ هَذَا نَسْأَلُكَ. قَالَ: «فَأَكْرَمُ النَّاسِ يُوسُفُ نَبِيُّ اللَّهِ ابْنُ نَبِيِّ اللَّهِ ابْنِ خَلِيلِ اللَّهِ» . قَالُوا: لَيْسَ عَن هَذَا نَسْأَلك. قَالَ: «فَمِمَّنْ مَعَادِنِ الْعَرَبِ تَسْأَلُونِي؟» قَالُوا: نَعَمْ. قَالَ: فَخِيَارُكُمْ فِي الْجَاهِلِيَّةِ خِيَارُكُمْ فِي الْإِسْلَامِ إِذَا فَقُهُوا . مُتَّفق عَلَيْهِ

عن أبي هريرة قال: سئل رسول الله صلى الله عليه وسلم: أي الناس أكرم؟ فقال: «أكرمهم عند الله أتقاهم» . قالوا: ليس عن هذا نسألك. قال: «فأكرم الناس يوسف نبي الله ابن نبي الله ابن خليل الله» . قالوا: ليس عن هذا نسألك. قال: «فممن معادن العرب تسألوني؟» قالوا: نعم. قال: فخياركم في الجاهلية خياركم في الإسلام إذا فقهوا . متفق عليه

ব্যাখ্যাঃ (أَي النَّاس أكْرم؟) মানুষের মধ্যে কোন্ মানুষ বেশি মর্যাদার ও সম্মানের অধিকারী? ‘আল্লামা ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ এ বাক্যটি দ্বারা বংশের দিকে লক্ষ্য না করে সাধারণভাবে কোন্ মানুষ আল্লাহর নিকট সম্মানের অধিকারী তা বুঝার সম্ভাবনা আছে। একজন কালো-কুৎসিত দাসও আল্লাহর নিকট সম্মানের অধিকারী হতে পারে। আবার বংশ মর্যাদাও বুঝাতে পারে। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)

(أَكْرَمُهُمْ عِنْدَ اللهِ أَتْقَاهُمْ) রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ উত্তর প্রদান করেন মহান আল্লাহর বাণী থেকেই। তা হলো :

يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنَّا خَلَقْنَاكُمْ مِنْ ذَكَرٍ وَأُنْثٰى وَجَعَلْنَاكُمْ شُعُوبًا وَقَبَائِلَ لِتَعَارَفُوا إِنَّ أَكْرَمَكُمْ عِنْدَ اللهِ أَتْقَاكُمْ

‘‘হে মানুষ! আমি তোমাদেরকে এক নারী ও পুরুষ থেকে সৃষ্টি করেছি আর তোমাদের পরিচিতির জন্য বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে বিভক্ত করেছি। তোমাদের মধ্যে আল্লাহর কাছে সেই অধিক মার্যাদাবান যে তোমাদের মধ্যে অধিক তাকওয়াসম্পন্ন।’’ (সূরাহ্ আল হুজুরাত ৪৯ : ১৩)

এখানে গোত্র ও জাতিকে মহান আল্লাহ শুধুমাত্র পরিচিতির মাধ্যম হিসেবে উল্লেখ করলেন। আর মর্যাদা তাকওয়া ব্যতীত হবে না। কারণ শেষ পরিণাম মুত্তাক্বীদের জন্যই। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)

(إِذَا فَقُهُوا) অর্থাৎ যখন কোন ব্যক্তি শারী‘আতের আদব ও ইসলামের বিধি-বিধান আয়ত্ব করে পালন করবে, দীনে প্রবেশ করার পরে। তথা দীন শিখে তা পালন করবে। এ বাক্যটি দ্বারা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেন মুনাফিক ও যাদের অন্তর আকৃষ্ট হয়ে আছে।

ইসলামে (المؤلفة قلوبهم) তাদেরকে বাদ দিয়েছেন। তথা বংশ-মর্যাদার কারণে ইসলামে কেউ মর্যাদাশীল বলে গণ্য হয় না, বরং তাকে ইসলামে প্রবেশ করে জ্ঞান অর্জন করে মর্যাদা অর্জন করতে হয়। যে যত জ্ঞানী হতে পারবে তার মর্যাদা তত বেশি হবে। আর যে জ্ঞান অর্জন করতে পারবে না, তার মর্যাদা কমে যাবে, তথা স্তর নিচে নেমে যাবে। আর এই ‘ইলম ‘আমলের সাথে সম্পর্কিত তথা ‘ইলম অনুযায়ী ‘আমল করতে হবে। যার মূল কথা হলো তাকওয়া অর্জন। আল্লাহ বলেন, فَلَا تُزَكُّوا أَنْفُسَكُمْ هُوَ أَعْلَمُ بِمَنِ اتَّقٰى ‘‘কে তাকওয়া অবলম্বন করে তা তিনি ভালোভাবেই জানেন’’- (সূরাহ্ আন্ নাজ্ম ৫৩ : ৩২)। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৫: শিষ্টাচার (كتاب الآداب)
৪৮৯৪

পরিচ্ছেদঃ ১৩. প্রথম অনুচ্ছেদ - বংশগৌরব ও পক্ষপাতিত্ব

৪৮৯৪-[২] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সম্মানিত ব্যক্তি সম্মানিত ব্যক্তির পুত্র, সম্মানিত ব্যক্তির পৌত্র এবং সম্মানিত ব্যক্তির প্রপৌত্র হলেন ইবরাহীম (আ.)-এর প্রপৌত্র, ইসহক (আ.)-এর পৌত্র ও ইয়াকুব (আ.)-এর পুত্র ইউসুফ (আ.)। (বুখারী)[1]

بَابُ الْمُفَاخَرَةِ وَالْعَصَبِيَّةِ

وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «الْكَرِيمُ ابْنُ الْكَرِيمِ ابْنِ الْكَرِيمِ ابْنِ الْكَرِيمِ يُوسُفُ بْنُ يَعْقُوبَ بنِ إِسحاقَ بن إِبراهيمَ» . رَوَاهُ البُخَارِيّ

وعن ابن عمر قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «الكريم ابن الكريم ابن الكريم ابن الكريم يوسف بن يعقوب بن إسحاق بن إبراهيم» . رواه البخاري

ব্যাখ্যাঃ ইউসুফ (আ.)-এর সম্মানের কারণ : ইমাম নাবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, সম্মানিত হওয়ার মূল হলো অনেক কল্যানের মালিক হওয়া। আর নুবুওয়াতের পাশাপাশি ইউসুফ (আ.)-এর মধ্যে অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ গুণ একত্রিত হয়েছিল। যেমন- সচ্চরিত্র, ভদ্রচিত আচরণ, জ্ঞান, সৌন্দর্য, মর্যাদাসম্পন্ন পিতৃকুল, পরিশেষে বংশ পরম্পরায় চারজন নবীর মধ্যে চতুর্থ নবী। তিনি ছিলেন অত্যন্ত ধৈর্যশীল নবী যেমনটি সূরাহ্ ইউসুফ-এর ৮০ নং আয়াত থেকে জানা যায়। (তুহফাতুল আহ্ওয়াযী ৮ম খন্ড, হাঃ ৩১১৬)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৫: শিষ্টাচার (كتاب الآداب)
৪৮৯৫

পরিচ্ছেদঃ ১৩. প্রথম অনুচ্ছেদ - বংশগৌরব ও পক্ষপাতিত্ব

৪৮৯৫-[৩] বারা’ ইবনু ’আযিব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, হুনায়নের যুদ্ধের দিন আবূ সুফ্ইয়ান ইবনু হারিস নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খচ্চরে লাগাম ধরে রেখেছিলেন। যখন মুশরিকরা তাঁকে চতুর্দিক থেকে ঘিরে ফেলল, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খচ্চরের পৃষ্ঠ থেকে অবতরণ করলেন এবং বলতে লাগলেন, ’’আমি নবী, না মিথ্যার কোন সূত্র- আমি যে ’আবদুল মুত্ত্বালিব-এর পুত্র।’’ রাবী বলেন, সেদিন তাঁর চেয়ে অধিক বিক্রমপূর্ণ আর কাউকেও দেখা যায়নি। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

بَابُ الْمُفَاخَرَةِ وَالْعَصَبِيَّةِ

وَعَنِ الْبَرَاءِ بْنِ عَازِبٍ قَالَ: فِي يَوْمِ حُنَيْنٍ كَانَ أَبُو سُفْيَانَ بْنُ الْحَارِثِ آخِذًا بِعِنَانِ بَغْلَتِهِ يَعْنِي بَغْلَةَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَلَمَّا غَشِيَهُ الْمُشْرِكُونَ نَزَلَ فَجَعَلَ يَقُولُ «أَنَا النَّبِيُّ لَا كَذِبَ أَنَا ابْنُ عَبْدِ الْمُطَّلِبْ»
قَالَ: فَمَا رُئِيَ مِنَ النَّاسِ يَوْمَئِذٍ أَشَدُّ مِنْهُ. مُتَّفق عَلَيْهِ

وعن البراء بن عازب قال: في يوم حنين كان أبو سفيان بن الحارث آخذا بعنان بغلته يعني بغلة رسول الله صلى الله عليه وسلم فلما غشيه المشركون نزل فجعل يقول «أنا النبي لا كذب أنا ابن عبد المطلب» قال: فما رئي من الناس يومئذ أشد منه. متفق عليه

ব্যাখ্যাঃ

হুনায়ন যুদ্ধ : হুনায়ন যুদ্ধ ৮ম হিজরীর শাও্ওয়াল মাসে অনুষ্ঠিত হয়। হাওয়াযিন ও সাক্বীফ গোত্রের আত্মগর্বী নেতারা মক্কা হতে ‘আরাফাতের দিকে ১০ মাইলের কিছু বেশি দক্ষিণ-পূর্বে হুনায়ন উপত্যকায় মালিক ইবনু ‘আওফ-এর নেতৃত্বে ৪০০০ দুর্ধর্ষ সেনার সমাবেশ ঘটায়। ফলে মক্কা বিজয়ের ১৯তম দিনে ৬ই শাও্ওয়াল শনিবার আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কার ২০০০ নওমুসলিমসহ মোট ১২,০০০ সাথী নিয়ে হুনায়ন উদ্দেশে রওয়ানা হন এবং ১০ই শাও্ওয়াল বুধবার রাতে গিয়ে উপস্থিত হন।

(আর্ রাহীক ৪১৩-১৪ পৃঃ, ইবনু হিশাম ২/৪৩৭, যাদুল মা‘আদ ৩/৪০৮-১৮ পৃঃ, সীরাতুর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ৫৫৫পৃঃ)

হুনায়ন যুদ্ধে মুসলিম পক্ষ শাহীদের সংখ্যা ছিল ৪ জন এবং কাফির পক্ষ নিহতের সংখ্যা ছিল ৭২ জন- (সীরাহ্ সহীহাহ্ ২/৫০৩-০৪)। মানসূরপুরী কাফির পক্ষ ৭১ জন নিহত ও মুসলিম পক্ষ ৬ জন শহীদ বলেছেন- (রহমাতুল্লিল ‘আলামীন ২/২০১)। হুনায়ন যুদ্ধে বিপুল গনীমাত লাভ হয়। বন্দী : ৬০০০ (নারী-শিশুসহ)। উট : ২৪,০০০। দুম্বা-বকরী : ৪০,০০০-এর অধিক। রৌপ্য : ৪০০০ উক্বিয়া। এতদ্ব্যতীত ঘোড়া, গরু, গাধা ইত্যাদির কোন হিসাব পাওয়া যায়নি। (ইবনু সা‘দ ২/১১৬ পৃঃ, সীরাতুর্ রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ৫৬৪ পৃঃ)

এ যুদ্ধে বিজয় সম্পর্কে আল্লাহ বলেনঃ ‘‘আল্লাহ তোমাদের সাহায্য করেছেন অনেক স্থানে, বিশেষ করে হুনায়নের দিন। যখন তোমাদের সংখ্যাধিক্য তোমাদের গর্বিত করেছিল। কিন্তু তা তোমাদের কোনই কাজে আসেনি। বরং প্রশস্ত জমিন তোমাদের জন্য সংকীর্ণ হয়ে গিয়েছিল। ফলে তোমরা পিঠ ফিরে পালিয়ে গিয়েছিলে। আল্লাহ স্বীয় প্রশান্তি নাযিল করেন তার রসূল ও মু’মিনদের ওপর এবং নাযিল করেন এমন সেনাদল, যাদের তোমরা দেখেননি এবং কাফিরদের তিনি শাস্তি প্রদান করেন। আর এটি ছিল তাদের কর্মফল। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা করেন, তাওবার তাওফীক দেন। বস্তুত আল্লাহ অতীব ক্ষমাশীল ও দয়াবান।’’(সূরাহ্ আত্ তাওবাহ্ ৯ : ২৫-২৭)

(أَنَا النَّبِىُّ لَا كَذِبَ أَنَا ابْنُ عَبْدِ الْمُطَّلِبْ) যদি প্রশ্ন করা হয় : নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিভাবে বললেন, আমি ‘আবদুল মুত্ত্বালিব-এর ছেলে? তিনি নিজের পিতার নাম না বলে নিজের বংশের দিকে সম্পর্কিত করলেন যেটা জাহিলী যুগের অধিকাংশ মানুষের গর্বের প্রতি ইঙ্গিত করে? এর উত্তর হল- নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার দাদার নামেই বেশি পরিচিত ছিলেন। কারণ তার পিতা ‘আবদুল্লাহ যুবক বয়সেই মারা যান। সে কারণে তিনি বেশি প্রসিদ্ধ ছিলেন না। পক্ষান্তরে ‘আবদুল মুত্ত্বালিব মক্কাবাসীর নেতা হওয়ার কারণে অত্যন্ত প্রসিদ্ধ ছিলেন। সকলের নিকট তিনি ছিলেন পরিচিত মুখ। বহু মানুষ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে তার দাদার সাথে যুক্ত করে ডাকত। আর তারা এ কাজ করত দাদার প্রসিদ্ধতার কারণে। যেমন হুমাম ইবনু সা‘লাবাহ্-এর বর্ণিত হাদীসে আছে, أيكم ابْنُ عَبْدِ الْمُطَّلِبْ؟ তোমাদের মধ্যে ‘আবদুল মুত্ত্বালিব-এর ছেলে কে? ‘আরবদের নিকট এটা প্রসিদ্ধ ছিল যে, ‘আবদুল মুত্ত্বালিব নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সংবাদ দিয়েছিলেন। তিনি এও বলেছিলেন যে, অচিরেই তার মান-মর্যাদা বিরাট হবে। এও কথিত আছে যে, ‘আবদুল মুত্ত্বালিব রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আগমনের স্বপ্ন দেখেছিলেন। আর এটা ‘আরবদের নিকট সুপ্রসিদ্ধ ছিল। আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উল্লেখিত কথাটি বলে তাদেরকে সেটা স্মরণ করিয়ে দেয়ার ইচ্ছা করলেন যে, আমিই সেই সত্য নবী। আমিই সেই ‘আবদুল মুত্ত্বালিব-এর স্বপ্নের সুসংবাদপ্রাপ্ত সত্য নবী, এতে মিথ্যার কিছু নেই। (শারহুন নাবাবী ১২শ খন্ড, হাঃ ৭৮-[১৭৭৬])


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৫: শিষ্টাচার (كتاب الآداب)
৪৮৯৬

পরিচ্ছেদঃ ১৩. প্রথম অনুচ্ছেদ - বংশগৌরব ও পক্ষপাতিত্ব

৪৮৯৬-[৪] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, জনৈক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সমীপে উপস্থিত হয়ে জিজ্ঞেস করল, হে সৃষ্টির সেরা! রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ সৃষ্টির সেরা ব্যক্তি ছিলেন ইবরাহীম (আ.)। (মুসলিম)[1]

بَابُ الْمُفَاخَرَةِ وَالْعَصَبِيَّةِ

وَعَنْ أَنَسٍ قَالَ: جَاءَ رَجُلٌ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: يَا خَيْرَ الْبَرِيَّةِ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «ذَاكَ إِبْرَاهِيم» . رَوَاهُ مُسلم

وعن أنس قال: جاء رجل إلى النبي صلى الله عليه وسلم فقال: يا خير البرية فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «ذاك إبراهيم» . رواه مسلم

ব্যাখ্যাঃ ইবরাহীম (আ.)-কে (خَيْرَ الْبَرِيَّةِ) বলার কারণ : নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইবরাহীম (আ.)-কে সৃষ্টির সেরা বলে আখ্যায়িত করার কারণ কি? এ বিষয়ে ‘উলামাগণ বলেনঃ

১. নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অতিশয় বিনয় ও শিষ্টাচার প্রদর্শনার্থে এরূপ বলেছেন। মহান ব্যক্তিবর্গ অন্য কোন মহান ব্যক্তির উচ্ছ্বাসিত প্রশংসা করে থাকেন। এতদ্ব্যতীত ইবরাহীম (আ.) ছিলেন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আদি পিতা ও ঊর্ধ্বতন পুরুষ। অতএব, পিতার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনে এরূপ বলা হয়েছে।

২. নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর এ উক্তির মর্মার্থ এটাও হতে পারে যে, ইব্রাহীম (আ.) সমসাময়িক যুগের (خَيْرَ الْبَرِيَّةِ) বা সেরা ও উত্তম মানুষ ছিলেন।

৩. এও বলা হয়েছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম سَيِّدُ وَلَدِ آدَمَ তথা ‘আদম সন্তানদের নেতা’ এ কথা জানার পূর্বে ইবরাহীম (আ.) (خَيْرَ الْبَرِيَّةِ) বা সৃষ্টির সেরা মানুষ ছিলেন। (শারহুন নাবাবী ১৫শ খন্ড, হাঃ ১৫০-[২৩৬৯])


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৫: শিষ্টাচার (كتاب الآداب)
৪৮৯৭

পরিচ্ছেদঃ ১৩. প্রথম অনুচ্ছেদ - বংশগৌরব ও পক্ষপাতিত্ব

৪৮৯৭-[৫] ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ খ্রিষ্টানরা মারইয়াম-এর পুত্র ’ঈসা (আ.)-এর প্রশংসায় যেভাবে বাড়াবাড়ি করেছে, তোমরা সেভাবে আমার প্রশংসায় বাড়াবাড়ি করো না। আমি তো আল্লাহর বান্দা। তোমরা আমাকে আল্লাহর বান্দা এবং আল্লাহর রসূল বলো। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

بَابُ الْمُفَاخَرَةِ وَالْعَصَبِيَّةِ

وَعَنْ عُمَرَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: لَا تُطْرُونِي كَمَا أَطْرَتِ النَّصَارَى ابْنَ مَرْيَمَ فَإِنَّمَا أَنَا عَبْدُهُ فَقُولُوا: عبدُ الله ورسولُه . مُتَّفق عَلَيْهِ

وعن عمر قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: لا تطروني كما أطرت النصارى ابن مريم فإنما أنا عبده فقولوا: عبد الله ورسوله . متفق عليه

ব্যাখ্যাঃ (كَمَا أَطْرَتِ النَّصَارَى ابْنَ مَرْيَمَ) নাসারাগণ তথা খ্রিষ্টানগণ ‘ঈসা (আ.)-কে আল্লাহর বান্দা ও রসূল হিসেবে না মেনে আল্লাহ বা আল্লাহর পুত্র হিসেবে মান্য করত। এটা তারা করত সম্মান ও ভক্তির ক্ষেত্রে বাড়াবাড়ি করার কারণে। তাই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মু’মিনদেরকেও সতর্ক ও সাবধান করে বলেন, নাসারাগণ যেভাবে মারইয়াম-এর পুত্র ‘ঈসা (আ.)-কে নিয়ে প্রশংসার ক্ষেত্রে বাড়াবাড়ি করেছে, তোমরাও এভাবে আমার প্রশংসায় বাড়াবাড়ি করো না। বরং তোমরা আমাকে আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রসূল বল। (ফাতহুল বারী ৬ষ্ঠ খন্ড, হাঃ ৩৪৪৫)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৫: শিষ্টাচার (كتاب الآداب)
৪৮৯৮

পরিচ্ছেদঃ ১৩. প্রথম অনুচ্ছেদ - বংশগৌরব ও পক্ষপাতিত্ব

৪৮৯৮-[৬] ’ইয়ায ইবনু হিমার আল মুজাশি’ঈ (রাঃ) হতে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা আমাকে ওয়াহীর মাধ্যমে জানিয়েছেন যেন তোমরা পরস্পর বিনয়ী হও। এমনকি এক ব্যক্তি যেন অন্য ব্যক্তির ওপর গৌরব না করে এবং এক ব্যক্তি অপর ব্যক্তির ওপর অত্যাচার না করে। (মুসলিম)[1]

بَابُ الْمُفَاخَرَةِ وَالْعَصَبِيَّةِ

وَعَن عياضِ بن حمارٍ المجاشعيِّ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: إِنَّ اللَّهَ أَوْحَى إِلَيَّ: أَنْ تَوَاضَعُوا حَتَّى لَا يَفْخَرَ أَحَدٌ عَلَى أَحَدٍ وَلَا يبغيَ أحدٌ على أحد . رَوَاهُ مُسلم

وعن عياض بن حمار المجاشعي أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: إن الله أوحى إلي: أن تواضعوا حتى لا يفخر أحد على أحد ولا يبغي أحد على أحد . رواه مسلم

ব্যাখ্যাঃ (وَلَا يَبْغِىَ أَحَدٌ عَلٰى أَحَدٍ) অহংকারী ব্যক্তি বলা হয় ঐ ব্যক্তিকে, যে নিজেকে সকলের চেয়ে বড় ভাবে। সকলের চেয়ে তার মান-সম্মান উপরে মনে করে। আর সে কারো আনুগত্য করে না। কাউকে পরোয়া করে না। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৫: শিষ্টাচার (كتاب الآداب)
৪৮৯৯

পরিচ্ছেদঃ ১৩. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - বংশগৌরব ও পক্ষপাতিত্ব

৪৮৯৯-[৭] আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ ঐসব লোকেরা যেন তাদের সেসব বাপ-দাদার গৌরব করা থেকে বিরত থাকে, যারা মরে জাহান্নামের অঙ্গারে পরিণত হয়েছে; অথবা আল্লাহ তা’আলার নিকট আবর্জনার কীট অপেক্ষা লাঞ্ছিত হবে, যে কীট আবর্জনাকে নিজের নাক দ্বারা দোলা দেয়। আল্লাহ তা’আলা তোমাদের থেকে জাহিলিয়্যাতের গর্ব-অহংকার ও বাপ-দাদার গৌরবের ব্যাধি দূর করেছেন। এখন চাই ধর্মভীরু মু’মিন হোক বা ধর্মহীন পাপী হোক, সমস্ত মানুষ আদম (আ.)-এর সন্তান, আর আদম (আ.) মাটি দ্বারা তৈরি। (তিরমিযী ও আবূ দাঊদ)[1]

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «لَيَنْتَهِيَنَّ أَقْوَامٌ يَفْتَخِرُونَ بِآبَائِهِمُ الَّذِينَ مَاتُوا إِنَّمَا هُمْ فَحْمٌ مِنْ جَهَنَّمَ أَوْ لَيَكُونُنَّ أَهْوَنَ عَلَى اللَّهِ مِنَ الْجُعَلِ الَّذِي يُدَهْدِهُ الْخِرَاءَ بِأَنْفِهِ إِنَّ اللَّهَ قَدْ أَذْهَبَ عَنْكُمْ عُبِّيَّةَ الْجَاهِلِيَّةِ وَفَخْرَهَا بِالْآبَاءِ إِنَّمَا هُوَ مُؤْمِنٌ تَقِيٌّ أَوْ فَاجِرٌ شَقِيٌّ النَّاسُ كُلُّهُمْ بَنُو آدَمَ وَآدَمُ مِنْ تُرَابٍ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ وَأَبُو دَاوُد

عن أبي هريرة عن النبي صلى الله عليه وسلم قال: «لينتهين أقوام يفتخرون بآبائهم الذين ماتوا إنما هم فحم من جهنم أو ليكونن أهون على الله من الجعل الذي يدهده الخراء بأنفه إن الله قد أذهب عنكم عبية الجاهلية وفخرها بالآباء إنما هو مؤمن تقي أو فاجر شقي الناس كلهم بنو آدم وآدم من تراب» . رواه الترمذي وأبو داود

ব্যাখ্যাঃ (النَّاسُ كُلُّهُمْ بَنُو آدَمَ وَآدَمُ مِنْ تُرَابٍ) কোন মানুষের পক্ষ গর্ব-অহংকার করা যে ঠিক নয়, তার প্রমাণস্বরূপ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ উক্তিটি করেন। যার মর্মার্থ হলো, সমস্ত মানুষ আদম (আ.)-এর সন্তান আর আদম (আ.) মাটি থেকে তৈরি। অত্র হাদীস হতে আমরা গর্ব না করার দু’টি সঙ্গত কারণ খুঁজে পাই। প্রথমত সমস্ত মানুষ যেহেতু আদম (আ.)-এর সন্তান, অতএব তারা সকলে পরস্পর ভাই ভাই। কাজেই এক ভাইয়ের ওপর অপর ভাইয়ের গর্ব করা বোকামি। দ্বিতীয়ত সমস্ত মানুষ মাটির তৈরি। অতএব মাটির তৈরি মানুষ মাটি নিয়ে কিভাবে গর্ব করতে পারে। [সম্পাদক]


হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৫: শিষ্টাচার (كتاب الآداب)
৪৯০০

পরিচ্ছেদঃ ১৩. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - বংশগৌরব ও পক্ষপাতিত্ব

৪৯০০-[৮] মুত্বাররিফ ইবনু ’আবদুল্লাহ আশ্ শিখখীর হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি বানূ ’আমির-এর প্রতিনিধিদলের সাথে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে গেলাম। আমরা তাঁকে বললামঃ আপনি আমাদের নেতা। তিনি বললেনঃ নেতা হলেন আল্লাহ। আমরা বললামঃ আপনি মর্যাদার দিক দিয়ে আমাদের তুলনায় অধিক মর্যাদাবান এবং দানের দিক দিয়ে আপনি সর্বাধিক সম্মানিত। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ এ কথা বলো অথবা তার চেয়ে কম বলো শয়তান যাতে তোমাদেরকে উকিল না বানাতে পারে। (আহমাদ ও আবূ দাঊদ)[1]

وَعَن مطرف بن عبد الله الشِّخّيرِ قَالَ: قَالَ أَبِي: انْطَلَقْتُ فِي وَفْدِ بَنِي عَامِرٍ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقُلْنَا: أَنْتَ سَيِّدُنَا. فَقَالَ: «السَّيِّدُ اللَّهُ» فَقُلْنَا وَأَفْضَلُنَا فَضْلًا وَأَعْظَمُنَا طَوْلًا. فَقَالَ: «قُولُوا قَوْلَكُمْ أَوْ بَعْضَ قَوْلِكُمْ وَلَا يَسْتَجْرِيَنَّكُمُ الشَّيْطَانُ» . رَوَاهُ أَحْمد وَأَبُو دَاوُد

وعن مطرف بن عبد الله الشخير قال: قال أبي: انطلقت في وفد بني عامر إلى رسول الله صلى الله عليه وسلم فقلنا: أنت سيدنا. فقال: «السيد الله» فقلنا وأفضلنا فضلا وأعظمنا طولا. فقال: «قولوا قولكم أو بعض قولكم ولا يستجرينكم الشيطان» . رواه أحمد وأبو داود

ব্যাখ্যাঃ (فَقَالَ: السَّيِّدُ اللهُ) অর্থাৎ এই নামের তিনিই প্রকৃত উপযুক্ত। মুল্লা ‘আলী কারী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ যিনি সৃষ্টিকুলের তাকদীরের মালিক এবং তাদের সার্বিক দায়িত্বশীল তিনি হলেন, আল্লাহ। তবে এটা মাজাযী বা রূপক সম্বন্ধনীয় নেতা হওয়াকে নিষেধ করে না। যেমন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, أَنَا سَيِّد وَلَد آدَم وَلَا فَخَرَ আমি আদম সন্তানদের শ্রেষ্ঠ (নেতা) তাতে কোন গর্ব নেই। অর্থাৎ আমি গর্ব করার জন্য বলছি না, বরং আমি আল্লাহর নি‘আমাতের কথা স্মরণ করছি। ইমাম বুখারী (রহিমাহুল্লাহ) জাবির (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন যে, ‘উমার (রাঃ) বলতেন, আবূ বকর (রাঃ) আমাদের নেতা আর তিনি আমাদের নেতাকে মুক্ত করেছেন তথা বিলাল (রাঃ)-কে। এখানে বিলাল (রাঃ)-এর কথা উল্লেখ করার কারণ হলো তার প্রতি বিনয় প্রকাশ করা। (‘আওনুল মা‘বূদ ৮ম খন্ড, হাঃ ৪৭৯৮)

(قُولُوا قَوْلَكُمْ) অর্থাৎ তোমরা তোমাদের শারী‘আত ও দীনের অনুসারীদের কথার মতো কথা বলো। তোমরা আমাকে নবী ও রসূল বলে ডাক যে নামে মহান আল্লাহ তার কিতাবে আমাকে ডেকেছেন। তোমরা আমাকে সাইয়েদ বা নেতা বলে ডাকবে না। যেমন তোমরা তোমাদের মাতব্বর-মোড়লকে সম্বোধন করে থাক। আর তোমরা আমাকে তোমাদের মতো মনে করবে না। কারণ আমি তোমাদের কারো মতো নয়। আমি তোমাদেরকে নুবুওয়াত দ্বারা ও রিসালাত দ্বারা পরিচালিত করি, অতএব তোমরা আমাকে নবী ও রসূল বলে সম্বোধন করবে। (‘আওনুল মা‘বূদ ৮ম খন্ড, হাঃ ৪৭৯৮)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৫: শিষ্টাচার (كتاب الآداب)
৪৯০১

পরিচ্ছেদঃ ১৩. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - বংশগৌরব ও পক্ষপাতিত্ব

৪৯০১-[৯] হাসান বাসরী (রহিমাহুল্লাহ) হতে বর্ণিত। তিনি সামুরাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ধন-সম্পদ হলো মান-মর্যাদা এবং আল্লাহভীরুতা দয়া-দাক্ষিণ্য। (তিরমিযী ও ইবনু মাজাহ)[1]

وَعَن الْحسن عَن سَمُرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «الْحَسَبُ الْمَالُ وَالْكَرَمُ التَّقْوَى» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وابنُ مَاجَه

وعن الحسن عن سمرة قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «الحسب المال والكرم التقوى» . رواه الترمذي وابن ماجه

ব্যাখ্যাঃ (الْحَسَبُ الْمَالُ) অর্থাৎ অধিকাংশ ক্ষেত্রে পার্থিব সম্পদ দুনিয়ায় মানুষের মর্যাদা-সম্মান বৃদ্ধির একটি উপায়। (وَالْكَرَمُ التَّقْوٰى) আখিরাতের মর্যাদা একান্তই তাকওয়া বা আল্লাহভীতির মধ্যে নিহিত। মহান আল্লাহ বলেন,

إِنَّ أَكْرَمَكُمْ عِنْدَ اللَّهِ أَتْقَاكُمْ ‘‘তোমাদের মধ্যে আল্লাহর নিকট সেই লোকই অধিক সম্মানীয় যে লোক অধিক মুত্তাক্বী’’- (সূরাহ্ আল হুজুরাত ৪৯ : ১৩; আয়াত)। (তুহফাতুল আহ্ওয়াযী ৮ম খন্ড, হাঃ ৩২৭১)

হাদীসটির বাস্তবিক প্রয়োগ : প্রত্যেক মুসলিমের জন্য আবশ্যক হলো, দুনিয়ার সম্মানের পাশাপাশি আখিরাতের জীবনও যেন সুখের হয়, মুক্তি লাভ হয় তা ভাবা উচিত। সে অনুপাতে ‘আমল করা উচিত। যেমনটি আল্লাহ আমাদেরকে শিক্ষা দিয়েছেন-

رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَّفِي الْآخِرَةِ حَسَنَةً وَّقِنَا عَذَابَ النَّارِ ‘‘হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি আমাদেরকে দুনিয়াতে কল্যাণ দান করুন এবং পরকালেও আমাদেরকে কল্যাণ দান করবেন আর আমাদেরকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচান’’- (সূরাহ্ আল বাকারাহ্ ২ : ২০১)। [সম্পাদক]


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ হাসান বাসরী (রহঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৫: শিষ্টাচার (كتاب الآداب)
৪৯০২

পরিচ্ছেদঃ ১৩. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - বংশগৌরব ও পক্ষপাতিত্ব

৪৯০২-[১০] উবাই ইবনু কা’ব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি নিজেকে জাহিলিয়্যাতের গৌরবে গৌরবান্বিত করে, তার দ্বারা তার পিতৃ-পুরুষের লজ্জাস্থানকে কর্তন করাও। আর এ কথাগুলো তাকে ইঙ্গিতে নয়; বরং পরিষ্কার ভাষায় বলে দাও। (শারহুস্ সুন্নাহ্)[1]

وَعَن أُبيِّ
بن كعبٍ قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «مَنْ تَعَزَّى بِعَزَاءِ الْجَاهِلِيَّةِ فَأَعِضُّوهُ بِهَنِ أَبِيهِ وَلَا تُكَنُّوا» . رَوَاهُ فِي «شَرْحِ السّنة»

وعن أبي بن كعب قال: سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول: «من تعزى بعزاء الجاهلية فأعضوه بهن أبيه ولا تكنوا» . رواه في «شرح السنة»

ব্যাখ্যাঃ (فَأَعِضُّوهُ بِهَنِ أَبِيهِ) যে ব্যক্তি তাঁর সেসব পিতৃপুরুষদেরকে নিয়ে গর্ব করে। যারা জাহিলিয়্যাতের যুগে মারা গেছে, তাকে বল যে, তুমি তোমার মৃত পিতৃপুরুষদের লজ্জাস্থানকে কর্তন করে মুখে তুলে নাও। অর্থাৎ তাদের ব্যাপারে গর্ব করা, আর তাদের লজ্জাস্থান কর্তন করে মুখে তুলে চিবানো একই কথা। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)

(وَلَا تُكَنُّوا) অর্থাৎ এ কথাগুলো অস্পষ্ট বা ইঙ্গিত দিয়ে নয়, বরং স্পষ্টভাবে তাদেরকে জানিয়ে দাও। যাতে করে তাদের শিক্ষা হয় যে, এটা কত জঘন্য কাজ। যাতে তারা বিরত থাকে। এও বলা হয়েছে যে, এর অর্থ হলো, যে ব্যক্তি জাহিলী যুগের নিয়ম-নীতি, কৃষ্টি-কালচার যেমন গালি দেয়া, অভিসম্পাত করা ও মানুষের মান-সম্মান নষ্ট করার মতো কাজ চালু করতে চায়। এছাড়াও নির্লজ্জতা, বেহায়াপনা, অহংকার ছড়িয়ে দিতে চায় তাকে স্মরণ করিয়ে দাও যে, তার পিতা মূর্তি পূজা করত, যিনা করত, মদ পান করত। এছাড়াও অনেক খারাপ কাজ করত। আর তাকে এ কথাগুলো স্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দিবে। কোন প্রকারের ইঙ্গিত করে নয়। যাতে সে মানুষের সামনে লজ্জিত হয়ে ফিরে আসে। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ উবাই ইবনু কা‘ব (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৫: শিষ্টাচার (كتاب الآداب)
৪৯০৩

পরিচ্ছেদঃ ১৩. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - বংশগৌরব ও পক্ষপাতিত্ব

৪৯০৩-[১১] ’আবদুর রহমান ইবনু আবূ ’উকবাহ্ (রহিমাহুল্লাহ) হতে বর্ণিত। তিনি আবূ ’উকবাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন। আবূ ’উকবাহ্(রাঃ) মুক্ত দাস ছিলেন এবং পারস্যের অধিবাসী ছিলেন। তিনি বলেন, আমি উহুদের যুদ্ধে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে উপস্থিত ছিলাম। মুশরিকদের মধ্য হতে এক ব্যক্তিকে তরবারি বা বর্শা দ্বারা আঘাত করলাম এবং বললামঃ আমার তরফ থেকে আঘাত গ্রহণ করো, আমি পারস্যের দাস। এটা শুনে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার দিকে দৃষ্টিপাত করলেন এবং বললেনঃ তুমি কেন এ কথা বললে না যে, আমার তরফ থেকে আঘাত গ্রহণ করো, আমি আনসারীদের দাস? (আবূ দাঊদ)[1]

وَعَنْ
عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ أَبِي عُقْبَةَ عَنْ أبي عُقبةَ وَكَانَ مَوْلًى مِنْ أَهْلِ فَارِسَ قَالَ: شَهِدْتُ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أُحُدًا فَضَرَبْتُ رَجُلًا مِنَ الْمُشْرِكِينَ فَقُلْتُ خُذْهَا مِنِّي وَأَنَا الْغُلَامُ الْفَارِسِيُّ فَالْتَفَتَ إِلَيَّ فَقَالَ: هَلَّا قُلْتَ: خُذْهَا مِنِّي وَأَنَا الْغُلَامُ الْأَنْصَارِيُّ؟ . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد

وعن عبد الرحمن بن أبي عقبة عن أبي عقبة وكان مولى من أهل فارس قال: شهدت مع رسول الله صلى الله عليه وسلم أحدا فضربت رجلا من المشركين فقلت خذها مني وأنا الغلام الفارسي فالتفت إلي فقال: هلا قلت: خذها مني وأنا الغلام الأنصاري؟ . رواه أبو داود

ব্যাখ্যাঃ (خُذْهَا مِنِّي وَأَنَا الْغُلَامُ الْفَارِسِيُّ) এর কারণ হলো, কোন সম্প্রদায়ের মুক্ত দাস সেই সম্প্রদায়েরই অন্তর্ভুক্ত। মুল্লা ‘আলী কারী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ যখন তুমি কাউকে আঘাত করে গর্ব করবে তখন তুমি নিজেকে আনসারদের সাথে সম্পৃক্ত করবে। যাদের নিকট আমি হিজরত করেছি এবং যারা আমাকে সাহায্য করেছে। আর তৎকালীন সময়ে পারস্য কাফির রাষ্ট্র ছিল। তাই রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীকে তাদের দিকে সম্পৃক্ত করাকে অপছন্দ করেছেন। আর তাকে আনসারদের সাথে সম্পৃক্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন যাতে করে সে মুসলিমদের সাথে সম্পৃক্ত হয়। বুঝা যায় যে, সে একজন মুসলিম বীর পুরুষ। (‘আওনুল মা‘বূদ ৮ম খন্ড, হাঃ ৫১১৪)

উহুদ যুদ্ধ : ৩য় হিজরীর ৭ই শাও্ওয়াল শনিবার সকালে উহুদ যুদ্ধ সংগঠিত হয়। কুরায়শরা আবূ সুফ্ইয়ান-এর নেতৃত্বে ৩০০০ সৈন্যের সুসজ্জিত বাহিনী নিয়ে মদীনার তিন মাইল উত্তরে উহুদ পাহাড়ের পাদদেশে শিবির সন্নিবেশ করে। এই বাহিনীর সাথে আবূ সুফ্ইয়ান-এর স্ত্রী হিন্দ বিনতু ‘উতবাহ্-এর নেতৃত্বে ১৫ জনের একটি মহিলা দল ছিল, যারা নেচে-গেয়ে ও উত্তেজক কবিতা পাঠ করে তাদের সৈন্যদের উত্তেজিত করে। এ যুদ্ধে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নেতৃত্বে প্রায় ৭০০ সৈন্য ছিল। প্রচণ্ড যুদ্ধ শেষে একটি ভুলের জন্য মুসলিমদের সাক্ষ্য বিজয় অবশেষে বিপর্যয়ে পরিণত হয়। মুসলিম পক্ষ ৭০ জন শাহীদ ৩৮০ জন আহত হয়। তার মধ্যে মুহাজির ৪ জন, আনসার ৬৫ জন। কুরায়শ পক্ষ ৩৭ জন নিহত হয়। তবে এই হিসাব চূড়ান্ত নয়। বরং কুরায়শ পক্ষ হতাহতের সংখ্যা ছিল অনেক বেশি, এই যুদ্ধে মুসলিমরা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও কুরায়শরা বিজয়ী হয়নি। বরং তারা ভীত হয়ে ফিরে যায়। এ যুদ্ধ প্রসঙ্গে সূরাহ্ আ-লি ‘ইমরান-এর ১২১-১৭৯ পর্যন্ত ৬০টি আয়াত নাযিল হয়। (সীরাতুর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ৩৩৯ পৃঃ)


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৫: শিষ্টাচার (كتاب الآداب)
৪৯০৪

পরিচ্ছেদঃ ১৩. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - বংশগৌরব ও পক্ষপাতিত্ব

৪৯০৪-[১২] ’আবদুল্লাহ ইবনু মাস্’ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি অন্যায়ভাবে নিজের সম্প্রদায়ের সাহায্য করে, তার তুলনা সে উটের মতো, যা কূপে পতিত হয়েছে, অতঃপর সেটার লেজ ধরে উদ্ধারের জন্য টানা হচ্ছে। (আবূ দাঊদ)[1]

وَعَنِ
ابْنِ مَسْعُودٍ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «مَنْ نَصَرَ قَوْمَهُ عَلَى غَيْرِ الْحَقِّ فَهُوَ كَالْبَعِيرِ الَّذِي رَدَى فَهُوَ يُنزَعُ بذنَبِه» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد

وعن ابن مسعود عن النبي صلى الله عليه وسلم قال: «من نصر قومه على غير الحق فهو كالبعير الذي ردى فهو ينزع بذنبه» . رواه أبو داود

ব্যাখ্যাঃ (يُنزَعُ بذنَبِه) অর্থাৎ সেটার পিছন ধরে টানা হচ্ছে। ইমাম খত্ত্বাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ এর অর্থ হলো নিশ্চয় সে পাপে লিপ্ত হলো এবং ধ্বংস হলো। ঐ উটের মতো যে কুয়ায় পড়ে গেলে তাকে উদ্ধারের জন্য তার পিছন দিক থেকে তথা লেজ ধরে উদ্ধারের চেষ্টা করা হচ্ছে তবে তাকে সম্পূর্ণরূপে মুক্ত করা সম্ভবপর হচ্ছে না। (‘আওনুল মা‘বূদ ৮ম খন্ড, হাঃ ৫১০৮)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৫: শিষ্টাচার (كتاب الآداب)
৪৯০৫

পরিচ্ছেদঃ ১৩. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - বংশগৌরব ও পক্ষপাতিত্ব

৪৯০৫-[১৩] ওয়াসিলাহ্ ইবনুল আসক্বা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করলামঃ হে আল্লাহর রসূল! ’’আসাবিয়্যাহ্’’ কি? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ ’আসাবিয়্যাহ্ হলো তোমার গোত্রকে অন্যায়ের কাজে সাহায্য করা। (আবূ দাঊদ)[1]

وَعَن
واثلةَ بن الأسقَعِ قَالَ: قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ مَا الْعَصَبِيَّةُ؟ قَالَ: «أَنْ تُعِينَ قَوْمَكَ عَلَى الظُّلْمِ» رَوَاهُ أَبُو دَاوُد

وعن واثلة بن الأسقع قال: قلت: يا رسول الله ما العصبية؟ قال: «أن تعين قومك على الظلم» رواه أبو داود

ব্যাখ্যাঃ (أَنْ تُعِينَ قَوْمَكَ عَلٰى الظُّلْمِ) অর্থাৎ তোমার কর্তব্য হলো হাকের প্রতিনিধিত্ব করা। যার মাঝে হক আছে কোন চিন্তা-ভাবনা না করেই তাকে সমর্থন করা। এ বিষয়ে জাবির  হতে মারফূ‘ সূত্রে একটি হাদীস বর্ণিত হয়েছে-

انْصُرْ أَخَاكَ ظَالِمًا أَوْ مَظْلُومًا إِنْ يَكُ ظَالِمًا فَارْدُدْهُ عَنْ ظُلْمِهِ، وَإِنْ يَكُ مَظْلُومًا، فَانْصُرْهُ

‘‘তুমি তোমার ভাইকে সাহায্য কর সে যালিম হোক বা মাযলূম হোক। যদি সে যালিম হয় তবে তাকে জুলুম করা থেকে বিরত রাখ। আর যদি সে মাযলূম হয় তবে তুমি তাকে সাহায্য কর’’- (আবূ দাঊদ)। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৫: শিষ্টাচার (كتاب الآداب)
৪৯০৬

পরিচ্ছেদঃ ১৩. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - বংশগৌরব ও পক্ষপাতিত্ব

৪৯০৬-[১৪] সুরাকাহ্ ইবনু মালিক ইবনু জু’শুম (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের উদ্দেশে ভাষণ দিলেন এবং বললেনঃ তোমাদের মধ্যে উত্তম সেই ব্যক্তি, যে নিজে অপরাধ না করা পর্যন্ত নিজের গোত্রের অন্যায়-অত্যাচার দমন করে। (আবূ দাঊদ)[1]

وَعَن
سُراقَة بن مالكِ بن جُعْشُم قَالَ: خَطَبَنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: «خير كم الْمُدَافِعُ عَنْ عَشِيرَتِهِ مَا لَمْ يَأْثَمْ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد

وعن سراقة بن مالك بن جعشم قال: خطبنا رسول الله صلى الله عليه وسلم فقال: «خير كم المدافع عن عشيرته ما لم يأثم» . رواه أبو داود

ব্যাখ্যাঃ (مَا لَمْ يَأْثَمْ) যে ব্যক্তি গোত্রীয় অন্যায়-অত্যাচার দমন করতে গিয়ে নিজেই যদি কোন অপরাধ করে বসে, তবে সে ব্যক্তি উত্তম নয়। অতএব জুলুম অন্যায় দমন করতে গিয়ে যতক্ষণ পর্যন্ত সে এ দমন কার্যে অপরাধ না করবে, ততক্ষণ সে উত্তম ব্যক্তি বলে বিবেচিত হবে। (‘আওনুল মা‘বূদ ৮ম খন্ড, হাঃ ৫১১১)


হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৫: শিষ্টাচার (كتاب الآداب)
৪৯০৭

পরিচ্ছেদঃ ১৩. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - বংশগৌরব ও পক্ষপাতিত্ব

৪৯০৭-[১৫] জুবায়র ইবনু মুত্ব’ইম (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি ’’আসাবিয়্যাহ্’’-এর দিকে লোকেদেরকে আহবান করে, নিজে ’’আসাবিয়্যাহ্’’-এর উপর যুদ্ধ করে এবং ’’আসাবিয়্যাহ্’’-এর উপর মৃত্যুবরণ করে, সে আমাদের দলভুক্ত নয়। (আবূ দাঊদ)[1]

وَعَن
جُبَيْرُ بْنُ مُطْعِمٍ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «لَيْسَ مِنَّا مَنْ دَعَا إِلَى عَصَبِيَّةٍ وَلَيْسَ مِنَّا مَنْ قَاتَلَ عَصَبِيَّةً وَلَيْسَ مِنَّا من مَاتَ علىعصبية» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد

وعن جبير بن مطعم أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: «ليس منا من دعا إلى عصبية وليس منا من قاتل عصبية وليس منا من مات علىعصبية» . رواه أبو داود

ব্যাখ্যাঃ (إِلٰى عَصَبِيَّةٍ) ‘আল্লামা মানবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ এর অর্থ হলো, যে ব্যক্তি ‘আসাবিয়্যাতের জন্য লোকেদেরকে সুসংগঠিত করল। আর তা হলো যালিমকে সাহায্য-সহযোগিতা করার জন্য। মুল্লা ‘আলী কারী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, অর্থাৎ যালিমকে সাহায্য সহযোগিতা করার জন্য ‘আসাবিয়্যাতের দিকে একত্রিত হলো। ‘আসাবিয়্যাহ্ সম্পর্কে ‘আন্ নিহায়াহ্’ গ্রন্থকার বলেনঃ এটা তাদের কথা ছিল যে, হে অমুকের বংশধর। তারা কোন নতুন বিষয় নিয়ে একজন অন্যকে আহবান করত।

হাদীসটির বাস্তবিক প্রয়োগ : বর্তমানে আমাদের দেশে যে রাজনৈতিক অবস্থা বিরাজমান, ‘আসাবিয়্যাহ্ বুঝতে আমাদের বেশি বেগ পেতে হবে না। কারণ দলের লোক যতই অন্যায় করুক, বিভিন্ন দিক থেকে অন্যায়ভাবে তাকে সাহায্য-সহযোগিতা দিয়ে মুক্ত করা হয়। পক্ষান্তরে শুধু নিজের দলকে ঠিক রাখার জন্য অন্যের ওপর জুলুম-নির্যাতন এমনকি হত্যা পর্যন্ত করা হয়। নিজের দলকে ঠিক রাখার জন্য বা নিজের ক্ষমতাকে টিকিয়ে রাখার জন্য অন্যের ওপর যে জুলুম-অন্যায় করা হয় একেই বলে ‘আসাবিয়্যাহ্। জাহিলী যুগে এ ‘আসারিয়্যাতের শিকার হয়ে ন্যায়-অন্যায় বিচার-বিবেচনা না করে শুধু নিজ গোত্রীয় পক্ষপাতিত্বের মনোভাব নিয়ে ‘আরবগণ বছরের পর বছর ধরে এক গোত্র অন্য গোত্রের সাথে মারামারি-কাটাকাটিতে লিপ্ত থাকত। যা বর্তমানে বাংলাদেশে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মধ্যে পরিলক্ষিত হচ্ছে। [সম্পাদক]


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৫: শিষ্টাচার (كتاب الآداب)
দেখানো হচ্ছেঃ ২৬১ থেকে ২৮০ পর্যন্ত, সর্বমোট ৫২৭ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে পাতা নাম্বারঃ « আগের পাতা 1 2 3 4 · · · 11 12 13 14 15 · · · 24 25 26 27 পরের পাতা »