৪৮৯১

পরিচ্ছেদঃ ১২. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - ঠাট্টা ও কৌতুক প্রসঙ্গে

৪৮৯১-[৮] নু’মান ইবনু বাশীর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন আবূ বকর(রাঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ঘরে প্রবেশের অনুমতি চাইলেন, তখনই তিনি ’আয়িশাহ (রাঃ)-এর সুউচ্চ কণ্ঠস্বর শুনতে পেলেন। যখন তিনি ঘরে প্রবেশ করলেন, ’আয়িশাহ্ (রাঃ)-কে চড় মারার অভিপ্রায়ে তাঁর হাত ধরে ফেললেন এবং বললেনঃ সাবধান! ভবিষ্যতে যেন তোমাকে কখনো রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর স্বরের চেয়ে উচ্চস্বরে কথা বলতে না শুনি। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূ বকর (রাঃ)-কে থামাতে এবং শান্ত করতে চেষ্টা করতে লাগলেন। অতঃপর রাগান্বিতভাবেই আবূ বকর(রাঃ) বের হয়ে চলে গেলেন। যখন আবূ বকর চলে গেলেন তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ লোকটার হাত থেকে তোমাকে কিভাবে বাঁচালাম দেখলে? রাবী বর্ণনা করেন যে, এ ঘটনার পর কয়েকদিন আবূ বকর(রাঃ) রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে আসেননি। অতঃপর একদিন তিনি উপস্থিত হয়ে প্রবেশের অনুমতি চাইলেন এবং ঘরে প্রবেশ করে দেখলেন, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ও ’আয়িশাহ্ (রাঃ) উভয়েই পারস্পরিক সমঝোতার পরিবেশে রয়েছেন। তখন আবূ বকর(রাঃ) উভয়কে লক্ষ্য করে বললেনঃ যেভাবে তোমরা আমাকে তোমাদের যুদ্ধের অংশীদার করেছিলে, সেভাবে তোমাদের সন্ধি ও সমঝোতায়ও অংশীদার করো। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আমরা তা-ই করলাম। আমরা তা-ই করলাম। (আবূ দাঊদ)[1]

وَعَن النعمانِ بن بشيرٍ قَالَ: اسْتَأْذَنَ أَبُو بَكْرٍ عَلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَسَمِعَ صَوْتَ عَائِشَةَ عَالِيًا فَلَمَّا دَخَلَ تَنَاوَلَهَا لِيَلْطِمَهَا وَقَالَ: لَا أَرَاكِ تَرْفَعِينَ صَوْتَكِ عَلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَجَعَلَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم يحجزه وَأَبُو بَكْرٍ مُغْضَبًا. فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حِينَ خَرَجَ أَبُو بَكْرٍ: «كَيْفَ رَأَيْتِنِي أَنْقَذْتُكِ مِنَ الرَّجُلِ؟» . قَالَتْ: فَمَكَثَ أَبُو بَكْرٍ أَيَّامًا ثُمَّ اسْتَأْذَنَ فَوَجَدَهُمَا قَدِ اصْطَلَحَا فَقَالَ لَهُمَا: أَدْخِلَانِي فِي سِلْمِكُمَا كَمَا أَدْخَلْتُمَانِي فِي حَرْبِكُمَا فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «قَدْ فَعَلْنَا قَدْ فَعَلْنَا» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ

وعن النعمان بن بشير قال استاذن ابو بكر على النبي صلى الله عليه وسلم فسمع صوت عاىشة عاليا فلما دخل تناولها ليلطمها وقال لا اراك ترفعين صوتك على رسول الله صلى الله عليه وسلم فجعل النبي صلى الله عليه وسلم يحجزه وابو بكر مغضبا فقال النبي صلى الله عليه وسلم حين خرج ابو بكر كيف رايتني انقذتك من الرجل قالت فمكث ابو بكر اياما ثم استاذن فوجدهما قد اصطلحا فقال لهما ادخلاني في سلمكما كما ادخلتماني في حربكما فقال النبي صلى الله عليه وسلم قد فعلنا قد فعلنا رواه ابو داود

ব্যাখ্যাঃ (كَيْفَ رَأَيْتِنِي أَنْقَذْتُكِ مِنَ الرَّجُلِ؟) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে বাড়ীর ভিতর মা ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) উচ্চৈঃস্বরে কথা বলতে শুনে তার পিতা ও রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর শ্বশুর আবূ বকর (রাঃ) অত্যন্ত রাগান্বিত হয়ে তার মেয়েকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে বেয়াদবির জন্য মারতে উদ্যত হলেন। তবে মা ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর প্রতি অত্যন্ত ভালোবাসা থাকার কারণে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে তার পিতার হাত থেকে রক্ষা করলেন তথা মারতে দিলেন না। মা ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর আচরণে ব্যথিত হয়ে আবূ বকর অত্যন্ত রাগান্বিত হয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে চলে গেলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মা ‘আয়িশাকে কৌতুক করার ছলে উল্লেখিত উক্তিটি করেন। যার অর্থ হলো দেখলে তো লোকটার হাত থেকে তোমাকে কিভাবে বাঁচালাম।’

(مِنَ الرَّجُلِ) বলার কারণ : নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মা ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-কে লক্ষ্য করে বললেন, ‘তোমাকে লোকটির হাত থেকে রক্ষা করেছি, কিন্তু তোমাকে তোমার পিতার হাত থেকে রক্ষা করেছি বললেন না কেন? এর জবাবে বলা যায়, যদি আবূ বকর (রাঃ) পিতা হিসেবে তোমাকে মারতে চাইতেন, তাহলে পিতৃস্নেহে মারা সম্ভব হতো না। কেননা পিতৃস্নেহ ও সন্তানকে মারধর করা পরস্পর বিরোধী। বস্তুত তিনি একজন পূর্ণ ঈমানদার ব্যক্তি হিসেবে আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে অন্যায় হচ্ছে দেখে সত্যি সত্যিই মারতে উদ্যত হয়েছিলেন। সুতরাং তোমার ওপর ক্রোধ ‘বাপ’ হিসেবে ছিল না, বরং ‘‘মর্দে মু’মিন’’ হিসেবে ছিল। তাই তিনি মারতে না পারায় রাগ করে চলে গেলেন। সেজন্য নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম مِنَ الرَّجُلِ ‘‘লোকটি থেকে’’ বলেছেন। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)

হাদীসটির শিক্ষা ও বাস্তবিক প্রয়োগ : অত্র হাদীসটিতে সহীহ মুসলিম এর ৫২নং হাদীসের প্রয়োগ লক্ষণীয়। তা হলো مَنْ رَأَى مِنْكُمْ مُنْكَرًا فَلْيُغَيِّرْهُ بِيَدِه، فَإِنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَبِلِسَانِه، فَإِنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَبِقَلْبِه، وَذٰلِكَ أَضْعَفُ الْإِيمَانِ তোমাদের মধ্যে যখন কেউ কোন খারাপ কাজ (শারী‘আতবিরোধী কাজ) দেখবে তখন সে যেন হাত দ্বারা তা প্রতিরোধ করে, ‘সম্ভব না হলে মুখ দিয়ে.....। পৃথিবীর ইতিহাসে শ্রেষ্ঠ একজন মহিলাকে তার স্বামীর সামনে যিনি শ্রেষ্ঠ রসূল তার পিতা যিনি নবী-রসূলদের পরে শ্রেষ্ঠ মানুষ, তিনি মারার জন্য উদ্দ্যত হচ্ছেন। আমার সামাজিকতায় কি এটা ভাবা যায়? আমাদের সমাজে অনেক মেয়েই তার স্বামী বা স্বামীর পরিবারস্থ লোকেদের সাথে মন্দ আচরণ করে,’ ফলে পরস্পর আত্মীয়দের মধ্যে নানা প্রকার বিবাদের সৃষ্টি হয়। অনেক সময় আত্মীয়তার সম্পর্কচ্ছেদ হয়ে যায়। কিন্তু যদি মেয়ের পক্ষপাতিত্ব না করে যথোপযুক্ত শাসন করে, তাহলে সেই বিবাদ বা বিপদ থেকে সহজেই রক্ষা পাওয়া সম্ভব। [সম্পাদক]


হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৫: শিষ্টাচার (كتاب الآداب)