মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) পর্ব-১৭: দণ্ডবিধি (كتاب الحدود)
৩৫৫৫

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

রাগিব বলেনঃ হাদ্দ তথা দণ্ড হলো দু’টি বস্তুর মাঝে বাধা প্রদানকারী যা একে অপরের সাথে মিশে বাধা প্রদান করে আর যিনা এবং মদপানের দণ্ডকে বাধা দানকারী। এজন্য বলা হয় দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে পুনরায় তা করতে বাধা দেয় এবং অন্যকেও ঐ অপরাধ করতে বাধা দেয়।

ইবনু হুমাম বলেনঃ সমাজে দণ্ডবিধির বাস্তবায়নে অপূর্ব সৌন্দর্য এসেছে যা বর্ণনা ও লিখে শেষ করা যাবে না। এজন্য ফাকীহ ও অন্যান্যরা দণ্ডবিধি পরিচয়ে একই মন্তব্য করেছেন যে, অবশ্যম্ভাবী বিপর্যয়মূলক কার্যক্রম থেকে বিরত রাখে। যিনাতে প্রজন্ম বিনাশের ভূমিকা রয়েছে তথা বংশনামায় সন্দেহের অবকাশ রয়েছে আর অন্যান্য দণ্ডগুলো জ্ঞান লোপ, সম্মানহানী এবং মানুষের সম্পদ অন্যায়ভাবে আত্মসাতের মধ্যে, এগুলো ’আমলের সাথে জড়িত। এজন্য অন্যায়ভাবে সম্পদ আত্মসাৎ, সম্মানের উপর আঘাত, যিনা, নেশা- এগুলা সকল যুগের ধর্মে বৈধ করা হয়নি। যদিও পানি পান করাকে বৈধ করা হয়েছে (পৃথিবীর) যে কোনো স্থানে আপনি অন্যের পানি গ্রহণ করলে আত্মসাৎ করা হবে না বা দণ্ডের আওতায় আসবে না।

ইসলামী শারী’আত এ দণ্ড প্রয়োগের মূল উদ্দেশ্য হলো তিরস্কার বা ধমকানো যা দ্বারা বান্দার কষ্ট হয়। আর কোনো কোনো শায়খরা বলেছেন, শারী’আতের দণ্ডবিধির জ্ঞান রাখার নির্যাস হলো ঐ সকল কাজে অগ্রগামী হওয়া থেকে বিরত থাকা এবং দণ্ড বাস্তবায়নের পরে পুনরায় তা করতে বাধা প্রদান।


৩৫৫৫-[১] আবূ হুরায়রাহ্ এবং যায়দ ইবনু খালিদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তারা উভয়ে বলেন, দুই বিবদমান ব্যক্তি তাদের অভিযোগ নিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট আসলো। তন্মধ্যে একজন বলল, আমাদের মধ্যে আল্লাহর কিতাব দ্বারা ইনসাফ করুন। অপরজনও বলল, হ্যাঁ, হে আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! অবশ্যই আমাদের মাঝে আল্লাহর কিতাব দ্বারা ইনসাফ করুন এবং আমাকে এতদসম্পর্কে বলার অনুমতি দিন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, আচ্ছা বল! লোকটি বলল, আমার ছেলে তার চাকর ছিল এবং সে তার স্ত্রীর সাথে যিনা করেছে। অতঃপর লোকেরা আমাকে বলল, আমার ছেলের শাস্তি হলো ’রজম’ (পাথর নিক্ষেপে হত্যা), কিন্তু আমি রজমের পরিবর্তে একশত ছাগল ও একটি দাসী ফিদ্ইয়াহ্ হিসেবে আদায় করেছি।

পরে আমি ’আলিমগণের নিকট জিজ্ঞেস করলে তারা জানালেন যে, আমার ছেলের শাস্তি হলো একশত চাবুক এবং এক বছরের জন্য দেশান্তর। আর তার স্ত্রীর শাস্তি হলো ’রজম’। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, জেনে রেখো! কসম ঐ আল্লাহর! যাঁর হাতে আমার প্রাণ, অবশ্যই আমি তোমাদের মাঝে আল্লাহর কিতাব অনুযায়ী বিচার-ফায়সালা করব। আর তা হলো, তোমার একশত ছাগল ও দাসী ফেরত নিয়ে তোমার ছেলেকে একশত চাবুক মারা হবে এবং এক বছরের জন্যে দেশান্তর করা হবে। আর হে উনায়স! তুমি সকালে তার স্ত্রীর নিকট যাও, যদি সে যিনায় লিপ্ত হওয়াকে স্বীকার করে, তাহলে তার প্রতি ’রজম’ অবধারিত কর। অতঃপর মহিলাটি স্বীকার করল এবং তিনি তাকে রজম করলেন। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

اَلْفَصْلُ الْأَوَّلُ

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ وَزَيْدِ بْنِ خَالِدٍ: أَنَّ رَجُلَيْنِ اخْتَصَمَا إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ أَحَدُهُمَا: اقْضِ بَيْنَنَا بِكِتَابِ اللَّهِ وَقَالَ الْآخَرُ: أَجَلْ يَا رَسُولَ اللَّهِ فاقْضِ بَيْننَا بكتابِ الله وائذَنْ لِي أَنْ أَتَكَلَّمَ قَالَ: «تَكَلَّمْ» قَالَ: إِنَّ ابْنِي كَانَ عَسِيفًا عَلَى هَذَا فَزَنَى بِامْرَأَتِهِ فَأَخْبرُونِي أنَّ على ابْني الرَّجْم فاقتديت مِنْهُ بِمِائَةِ شَاةٍ وَبِجَارِيَةٍ لِي ثُمَّ إِنِّي سَأَلْتُ أَهْلَ الْعِلْمِ فَأَخْبَرُونِي أَنَّ عَلَى ابْنِي جَلْدَ مِائَةٍ وَتَغْرِيبَ عَامٍ وَإِنَّمَا الرَّجْمُ عَلَى امْرَأَتِهِ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَمَا وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لَأَقْضِيَنَّ بَيْنَكُمَا بِكِتَابِ اللَّهِ أَمَّا غَنَمُكَ وَجَارِيَتُكَ فَرَدٌّ عَلَيْكَ وَأَمَّا ابْنُكَ فَعَلَيْهِ جَلْدُ مِائَةٍ وَتَغْرِيبُ عَامٍ وَأَمَّا أَنْتَ يَا أُنَيْسُ فَاغْدُ إِلَى امْرَأَةِ هَذَا فَإِن اعْترفت فارجمها» فَاعْترفت فرجمها

عن أبي هريرة وزيد بن خالد: أن رجلين اختصما إلى رسول الله صلى الله عليه وسلم فقال أحدهما: اقض بيننا بكتاب الله وقال الآخر: أجل يا رسول الله فاقض بيننا بكتاب الله وائذن لي أن أتكلم قال: «تكلم» قال: إن ابني كان عسيفا على هذا فزنى بامرأته فأخبروني أن على ابني الرجم فاقتديت منه بمائة شاة وبجارية لي ثم إني سألت أهل العلم فأخبروني أن على ابني جلد مائة وتغريب عام وإنما الرجم على امرأته فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «أما والذي نفسي بيده لأقضين بينكما بكتاب الله أما غنمك وجاريتك فرد عليك وأما ابنك فعليه جلد مائة وتغريب عام وأما أنت يا أنيس فاغد إلى امرأة هذا فإن اعترفت فارجمها» فاعترفت فرجمها

ব্যাখ্যা: (اِقْضِ بَيْنَنَا بِكِتَابِ اللّٰهِ) আমি অবশ্যই তোমাদেরকে আল্লাহর কিতাব দ্বারা ফায়সালা করবোঃ উদ্দেশ্য সম্ভাবনা রয়েছে আল্লাহর আইন দ্বারা।
কারো মতে আল্লাহ তা‘আলা এ আয়াতের প্রতি ইঙ্গিত বহন করে, ‘‘না আল্লাহ তা‘আলা অন্য কোনো পথ নির্দেশ বের করেন’’- (সূরা আন্ নিসা ৪ : ১৫)।
আর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে তাফসীর করেছেন বিবাহকারীদের রজম যা ইতিপূর্বে ‘উবাদাহ্ ইবনুস্ সামিত-এর হাদীসে আলোচনা গত হয়েছে।
কারো মতে এ আয়াতের প্রতি ইঙ্গিত বহন করে।

«الشَّيْخُ وَالشَّيْخَةُ إِذَا زَنَيَا فَارْجُمُوهُمَا» যখন বিবাহিত পুরুষ বা মহিলা যিনা করে তাদেরকে রজম করো (রজম হলো কোমর পর্যন্ত গেরে পাথর মেরে হত্যা করা) আয়াতটির তিলাওয়াত মানসূখ হয়েছে কিন্তু হুকুম এখনও অবশিষ্ট রয়েছে। এর উপর ভিত্তি করে বেত্রাঘাত গ্রহণ করা হয়েছে অত্র আয়াতে।

(الزانية والزاني) যিনাকারিণী ও যিনাকারী : কারো মতে উদ্দেশ্য হলো তাদের ছাগল গ্রহণের আপোষকে বাতিল করা।

(سَأَلْتُ أَهْلَ الْعِلْمِ) এতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ব্যতিরেকে তাঁর সময়কালে অন্য কারো কাছে ফতোয়া চাওয়া বৈধ, কেননা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিষয়টিকে অস্বীকার করেননি। (শারহে মুসলিম ১১শ খন্ড, হাঃ ১৬৯৭)

আরো বৈধতা প্রমাণিত হয় যে, বড় ‘আলিম থাকা সত্ত্বেও ছোট ‘আলিমের নিকট ফতোয়া চাওয়া বৈধ।

(فَإِنْ اِعْتَرَفَتْ) যদি মহিলা যিনার স্বীকৃতি দেয় কুসতুলানী বলেনঃ মহিলার নিকট উনায়সকে পাঠালে তাকে জানানো যে, এই লোকটি তার ছেলেকে দিয়ে তার দুর্নাম ছড়াচ্ছে। তাহলে মিথ্যা তুহমত দেয়ার জন্য তার হাদ্দ বা দণ্ড কার্যকর করা হবে যদি সে চায় অথবা ক্ষমা করবে তবে যদি সে স্বীকৃতি দেয় তাহলে মিথ্যা তহমতের হাদ্দ কার্যকর হবে না বরং মহিলার যিনার হাদ্দ কার্যকর হবে আর তা রজম যেহেতু সে বিবাহিত।

উনায়স গেলেন তার নিকট এবং জিজ্ঞেস করলে সে স্বীকার করে, ফলে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে রজমের আদেশ দিলেন। (‘আওনুল মা‘বূদ ৭ম খন্ড, হাঃ ৪৪৩৫)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৭: দণ্ডবিধি (كتاب الحدود) 17. Prescribed Punishments
৩৫৫৬

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

৩৫৫৬-[২] যায়দ ইবনু খালিদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে শুনেছি যে, অবিবাহিত লোক যিনা করলে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাকে একশত চাবুক মারার ও এক বছরের জন্য দেশান্তর করার হুকুম দেন। (বুখারী)[1]

اَلْفَصْلُ الْأَوَّلُ

وَعَنْ زَيْدِ بْنِ خَالِدٍ قَالَ: سَمِعْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَأْمُرُ فِيمَنْ زَنَى وَلَمْ يُحْصَنْ جَلْدَ مِائَةٍ وَتَغْرِيبَ عَامٍ. رَوَاهُ البُخَارِيّ

وعن زيد بن خالد قال: سمعت النبي صلى الله عليه وسلم يأمر فيمن زنى ولم يحصن جلد مائة وتغريب عام. رواه البخاري

ব্যাখ্যা: (لَمْ يُحْصَنْ) নিহায়াহ্ গ্রন্থে বলা হয়েছে, الاحصان তথা বাধা দেয়া আর মহিলা সুরক্ষিত হয় ইসলাম গ্রহণ, চারিত্রিক নিষ্কলুষতা, দাসত্ব থেকে আযাদ ও বিবাহের মাধ্যমে। এজন্য বিবাহিতা মহিলাকে মুহসানাহ্ বলা হয়। অনুরূপ বিবাহিত পুরুষকে মুহসন বলা হয়।

ইবনু হুমাম বলেনঃ

وَرَوَى عَبْدُ الرَّزَّاقِ عَنْ يَحْيَى بْنِ أَبِي كَثِيرٍ «أَنَّ رَجُلًا أَتَى النَّبِيَّ ﷺ، فَقَالَ : يَا رَسُولَ اللّٰهِ إِنِّي أَصَبْتُ حَدًّا فَأَقِمْهُ عَلَيَّ، فَدَعَا عَلَيْهِ الصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ بِسَوْطٍ، فَأُتِيَ بِسَوْطٍ شَدِيدٍ لَه ثَمَرَةٌ، فَقَالَ : سَوْطٌ دُونَ هٰذَا. فَأُتِيَ بِسَوْطٍ مَكْسُورٍ لَيِّنٍ، فَقَالَ : سَوْطٌ فَوْقَ هٰذَا. فَأَتٰى بِسَوْطٍ بَيْنَ سَوْطَيْنِ، فَقَالَ : هٰذَا. فَأَمَرَ بِه، فَجَلَدُوهُ

ইয়াহ্ইয়া ইবনু কাসীর বলেনঃ একজন ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে আসলেন এবং বললেন, হে আল্লাহর রসূল! আমি দণ্ডবিধির অপরাধের কাজ করেছি আমার ওপর শাস্তি প্রয়োগ করুন। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার জন্য একটি ডাল আনতে বললে নিয়ে আসা হলো। শক্ত ডাল যাতে ফল ছিল। তিনি বললেন, এর চেয়ে শক্ত কম নগ্ন এমন একটি ডাল নিয়ে আসো। অতঃপর নিয়ে আসা হলো ভাঙ্গা নরম ডাল। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এর একটু শক্ত। অতঃপর নিয়ে আসা হলো এই না শক্ত, না নরম এমন ডাল বা লাঠি। অতঃপর হ্যাঁ, এমন লাঠি দিয়ে তাকে প্রহার করো। ইবনু শায়বাহ্ যায়দ বিন আসলাম থেকেও বর্ণনা করেন। একজন লোক রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে আসলেন, অতঃপর অনুরূপ বর্ণনা। ইমাম মালিকও অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।

ইবনু আবী শায়বাতে আছে, আনাস বিন মালিক বলেনঃ তাকে গাছের ডাল আনতে বলা হয়েছিল তিনি ফল কেটে শুধু ডালটি নিয়েছেন এবং দু’ পাথরের মধ্যে পিশে নরম করেছিলেন। অতঃপর এটা দ্বারা প্রহার করা হয়েছিল আর তা ‘উমারের খিলাফাতকালে। মদ্য কথা হলো, এসব লাঠি দিয়ে প্রহার করা যাবে না যার দু’পাশেই শক্ত তাতে জখম ও রক্তাভ হবে।

হিদায়াহ্ প্রণেতা বলেনঃ শরীরের সকল অঙ্গে প্রহার করা যাবে তবে মাথা, চেহারা এবং লজ্জাস্থানে না। যেমন রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণী: (اتَّقِ الْوَجْهَ وَالْمَذَاكِيرَ) প্রহারের সময় চেহারা ও লজ্জাস্থানসমূহ থেকে বেঁচে থাকো। (মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৭: দণ্ডবিধি (كتاب الحدود) 17. Prescribed Punishments
৩৫৫৭

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

৩৫৫৭-[৩] ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নিশ্চয় আল্লাহ তা’আলা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সত্য দীনসহ পাঠিয়েছেন এবং তাঁর ওপর কিতাব নাযিল করেছেন, তন্মধ্যে ’রজমের’ আয়াত ছিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রজম করেছেন এবং তারপরে আমরাও রজম করেছি। আর রজমের দণ্ড আল্লাহর কিতাবের মাঝে অপরিহার্য সত্য ঐ সমস্ত পুরুষ ও নারীর ওপর যারা বৈবাহিক হওয়া সত্ত্বেও যিনা করে। যখন তা প্রমাণসাপেক্ষ হয় অথবা গর্ভধারিণী হয় অথবা স্বীকারোক্তি দেয়। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

اَلْفَصْلُ الْأَوَّلُ

وَعَنْ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: إِن الله بعث مُحَمَّدًا وَأَنْزَلَ عَلَيْهِ الْكِتَابَ فَكَانَ مِمَّا أَنْزَلَ اللَّهُ تَعَالَى آيَةُ الرَّجْمِ رَجَمَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَرَجَمْنَا بَعْدَهُ وَالرَّجْمُ فِي كِتَابِ اللَّهِ حَقٌّ عَلَى مَنْ زَنَى إِذَا أُحْصِنَ مِنَ الرِّجَالِ وَالنِّسَاءِ إِذَا قَامَتِ الْبَيِّنَةُ أَوْ كانَ الحَبَلُ أَو الِاعْتِرَاف

وعن عمر رضي الله عنه قال: إن الله بعث محمدا وأنزل عليه الكتاب فكان مما أنزل الله تعالى آية الرجم رجم رسول الله صلى الله عليه وسلم ورجمنا بعده والرجم في كتاب الله حق على من زنى إذا أحصن من الرجال والنساء إذا قامت البينة أو كان الحبل أو الاعتراف

ব্যাখ্যা: এ হাদীসের চেয়ে মুয়াত্ত্বা মালিকে আরো অতিরিক্ত হিসেবে বর্ণিত হয়েছে।

عَنْ يَحْيَى بْنِ سَعِيدٍ عَنْ سَعِيدِ بْنِ الْمُسَيَّبِ قَال لَمَّا صَدَرَ عُمَرُ مِنَ الْحَجِّ وَقَدِمَ الْمَدِينَةَ خَطَبَ النَّاسَ فَقَالَ أَيُّهَا النَّاسُ قَدْ سُنَّتْ لَكُمُ السُّنَنُ وَفُرِضَتْ لَكُمُ الْفَرَائِضُ وَتُرِكْتُمْ عَلَى الْوَاضِحَةِ ثُمَّ قَالَ إِيَّاكُمْ أَنْ تَهْلِكُوا عَنْ اٰيَةِ الرَّجْمِ أَنْ يَقُولَ قَائِلٌ لَا نَجِدُ حَدَّيْنِ فِي كِتَابِ اللّٰهِ فَقَدْ رَجَمَ رَسُولُ اللّٰهِ ﷺ وَرَجَمْنَا وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِه لَوْلَا أَنْ يَقُولَ النَّاسُ زَادَ عُمَرُ فِي كِتَابِ اللّٰهِ لَكَتَبْتُهَا بِيَدِي الشَّيْخُ وَالشَّيْخَةُ إِذَا زَنَيَا فَارْجُمُوهُمَا الْبَتَّةَ

ইয়াহ্ইয়া বিন সা‘ঈদ বিন মুসাইয়্যাব বলেনঃ ‘উমার যখন হজ্জ/হজ শেষে মদীনায় আসলেন তিনি জনগণের উদ্দেশে ভাষণ দিলেন, অতঃপর বললেন, হে লোকসকল! আমি তোমাদের জন্য সুন্নাহসমূহ প্রচলন করলাম এবং ফরযসমূহকে আবশ্যক করলাম। আর তোমাদেরকে রাখছি সুস্পষ্ট নীতিমালার উপর। অতঃপর বললেন, রজমের তথা পাথর দিয়ে নিক্ষেপ করে হত্যার আয়াতের ধ্বংস থেকে নিজেদেরকে হিফাযাত করবে।

কোনো ব্যক্তি বললো, আমরা তো আল্লাহর কিতাবে হাদ্দের আয়াত পাই না। জবাবে ‘উমার বললেন, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রজম করেছেন, আমরাও রজম করছি। ঐ সত্তার কসম যাঁর হাতে আমার জীবন মানুষেরা যদি এ কথা না বলতো যে, ‘উমার আল্লাহর কিতাবে অতিরিক্ত করেছে তাহলে অবশ্যই আমি আমার হাত দিয়ে লিখতাম:

الشَّيْخُ وَالشَّيْخَةُ إِذَا زَنَيَا فَارْجُمُوهُمَا الْبَتَّة

যখন বিবাহিত পুরুষ ও মহিলা যিনা করবে তাদেরকে তোমরা অবশ্য রজম করবে।

হাদীসে শিক্ষা হয় রজমের আয়াতের তিলাওয়াত মানসূখ হয়েছে এবং তার হুকুম এখনও অবশিষ্ট। (ফাতহুল বারী ১২ খন্ড, হাঃ ৬৮২৯)

নিঃসন্দেহে রজম আল্লাহর কিতাব দ্বারা ঐ বিবাহিত পুরুষ ও মহিলার ওপর প্রযোজ্য হবে যে যিনা করেছে। যখন যিনার দলীল প্রমাণিত হবে অথবা গর্ভবতী হবে অথবা স্বীকার করবে। ‘উলামারা ঐকমত্য হয়েছে, রজম শুধুমাত্র বিবাহিত যিনাকারীর ওপর প্রযোজ্য হবে। আরো ইজমা হয়েছে যিনার প্রমাণের জন্য ন্যায়পরায়ণ চারজন পুরুষ সাক্ষী লাগবে। আরো ইজমা হয়েছে রজম ওয়াজিব হওয়ার উপর যে স্বীকার করবে এবং যে বিবাহিত আর চারবার স্বীকৃতির ব্যাপারে মতবিরোধ রয়েছে।

আর শুধুমাত্র গর্ভবতী মহিলার ওপর ‘উমার -এর মতে হাদ্দ ওয়াজিব যদি তার স্বামী অথবা মুনীব না থাকে। অনুরূপ বক্তব্য মালিকও তার সাথীদের বলেন যখন গর্ভবতী হবে আর জানা যায় না তার স্বামী অথবা মুনীব আছে; আরো জানা যায় না যে, তাকে জোরপূর্বক করা হয়েছে তাহলে তার ওপর হাদ্দ অপরিহার্য হবে। তবে যদি অপরিচিত আগন্তুক মহিলা হয় তা স্বতন্ত্র বিষয় আর তার কাছে দাবী করা হবে কে তার স্বামী অথবা মুনীব বলপ্রয়োগ করে।

ইমাম শাফি‘ঈ এবং আবূ হানীফাহ্ সকল ‘উলামারা বলেন, শুধুমাত্র গর্ভবতী হওয়ার কারণে তার ওপর হাদ্দ প্রয়োগ হবে না চাই তার স্বামী বা মুনীব থাক না থাক, চাই অপরিচিত হোক না অন্য কিছু আর চাই বলপ্রয়োগ হোক বা না হোক ‘আমভাবে হাদ্দ প্রয়োগ হবে না সুস্পষ্ট যতক্ষণ না সুস্পষ্ট প্রমাণ অথবা স্বীকৃতি হবে। কেননা সন্দেহ হলেই হাদ্দ বাস্তবায়ন বাতিল বলে গণ্য হবে। (শারহে মুসলিম ১১ খন্ড, হাঃ ১৬৯১)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৭: দণ্ডবিধি (كتاب الحدود) 17. Prescribed Punishments
৩৫৫৮

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

৩৫৫৮-[৪] ’উবাদাহ্ ইবনুস্ সামিত (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমার থেকে গ্রহণ কর! আমার থেকে গ্রহণ কর! আল্লাহ তা’আলা রমণীদের জন্য ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। আর তা হলো, কোনো অবিবাহিত যুবক-যুবতী যিনা করলে একশত চাবুক মারা হবে এবং এক বছরের জন্য দেশান্তরিত হবে। আর কোনো বিবাহিতা নারী ও পুরুষ যিনা করলে একশত চাবুক মারা হবে এবং রজম (পাথর নিক্ষেপে হত্যা) করা হবে। (মুসলিম)[1]

اَلْفَصْلُ الْأَوَّلُ

وَعَنْ عُبَادَةَ بْنِ الصَّامِتِ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: خُذُوا عَنِّي خُذُوا عَنِّي قَدْ جَعَلَ اللَّهُ لَهُنَّ سَبِيلًا: الْبِكْرُ بالبكر جلد مائَة ووتغريب عَام وَالثَّيِّب بِالثَّيِّبِ جلد مائَة وَالرَّجم

وعن عبادة بن الصامت أن النبي صلى الله عليه وسلم قال: خذوا عني خذوا عني قد جعل الله لهن سبيلا: البكر بالبكر جلد مائة ووتغريب عام والثيب بالثيب جلد مائة والرجم

ব্যাখ্যা: (قَدْ جَعَلَ اللّٰهُ لَهُنَّ سَبِيْلًا) এ বাক্যটি এ আয়াতের দিকে ইঙ্গিত করে:

فَأَمْسِكُوْهُنَّ فِي الْبُيُوْتِ حَتّٰى يَتَوَفَّاهُنَّ الْمَوْتُ أَوْ يَجْعَلَ اللهُ لَهُنَّ سَبِيْلًا

‘‘তবে সংশ্লিষ্টদেরকে গৃহে আবদ্ধ করে রাখো যতক্ষণ না মৃত্যু তাদেরকে তুলে নেয় অথবা আল্লাহ তাদের জন্য অন্য কোনো পথ নির্দেশ না দেন।’’- (সূরা আন্ নিসা ৪ : ১৫)। অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ব্যাখ্যা করেছেন এটা সে পথে।

এ আয়াতের ব্যাপারে ‘উলামাগণ মতবিরোধ করেছেন এটা মুহকাম আয়াত আর এ হাদীস তা ব্যাখ্যা বা তাফসীরকারকের মতে সূরায় আন্ নূর-এর প্রথম আয়াত দিয়ে এটা মানসূখ। কারো মতে অবিবাহিতার ব্যাপারে সূরা নূর-এর আয়াত আর এই আয়াত বিবাহিত নারীদের ব্যাপারে আর ‘উলামার ইজমা হয়েছে অবিবাহিতা নারীর ব্যাপারে একশত বেত্রাঘাত আর বিবাহিত নারীর ব্যাপারে রজম। আহলে কিতাবরা কেউ এ ব্যাপারে মতানৈক্য করেনি। তবে কাযী ‘ইয়ায ও অন্যরা বর্ণনা করেছেন যে, খাওয়ারিজ আর কিছু মুতাযিলা সম্প্রদায় রজমকে অস্বীকার করেছে। মতানৈক্য হয়েছে বিবাহিত নারীদের ব্যাপারে রজমের সাথে বেত্রাঘাত। একদল ‘উলামাহ্ বলেন, দু‘টোই প্রয়োগ হবে প্রথমে বেত্রাঘাত পরে রজম। এ মতে আলী ইবনু আবূ ত্বালিব, হাসান বাসরী, ইসহক ইবনু রহাওয়াই, দাঊদ, আহলুয্ যাহির ও কিছু শাফি‘ঈরা। আর অধিকাংশ ‘উলামারা বলেন, শুধুমাত্র রজম প্রয়োগ হবে।

কাযী ‘ইয়ায আহলে ক্বিবলার (মুসলিম উম্মাহর) মত থেকে বর্ণনা করেন যে, দু’ এর মাঝে সমাধান হলো যদি বয়স্ক বিবাহিত পুরুষ হয় তাহলে বেত্রাঘাত ও রজম আর যদি বিবাহিত যুবক হয় তাহলে শুধুমাত্র রজম। এটা বাতিল মত যার কোনো ভিত্তি নেই।

আর জুমহূরদের দলীল হলো শুধুমাত্র রজম। এ ব্যাপারে প্রচুর হাদীসের ঘটনা এসেছে, যেমন মা‘ইয এবং গামিদী মহিলার ঘটনা। আর সমাধান হলো বেত্রাঘাত এবং রজম মানসূখ হয়েছে তা প্রথম দিকে ছিল।

আর تغريب سنة ‘এক বছর দেশান্তর’ শাফি‘ঈ ও জুমহূরের মতে চাই পুরুষ হোক বা নারী হোক। আর হাসান বলেন, দেশান্তর ওয়াজিব নয়। মালিক ও আওযা‘ঈ বলেন, মহিলাদের দেশান্তর নেই। অনুরূপ মত ‘আলী থেকে এবং তারা বলেন, নারী হলো পর্দার বিষয় আর দেশান্তরে তা নষ্ট হবে, এজন্য মহিলাদের মাহরাম ব্যতিরেকে সফর করা নিষেধ।

আর দাসী ও দাসের ক্ষেত্রে তিনটি মত। শাফি‘ঈদের মতে প্রথমতঃ হাদীসের ভাষ্যমতে প্রত্যেককে এক বৎসর দেশান্তর করতে হবে। এ ব্যাপারে সুফ্ইয়ান সাওরী, আবূ সাওর, দাঊদ ও ইবনু জারীর একমত প্রকাশ করেছেন।

দ্বিতীয়তঃ অর্ধেক বৎসর দেশান্তর করতে হবে। আল্লাহ তা‘আলার বাণী : ‘‘যদি তারা অশ্লীল কাজ করে তবে তাদেরকে স্বাধীন নারীদের অর্ধেক শাস্তি ভোগ করতে হবে’’- (সূরা আন্ নিসা ৪ : ২৫)। আর এটা সহীহ মত এবং এ আয়াতটি খাস ও ‘আম্ হাদীসের দৃষ্টিতে। (শারহে মুসলিম ১১ খন্ড, হাঃ ১৬৯০)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৭: দণ্ডবিধি (كتاب الحدود) 17. Prescribed Punishments
৩৫৫৯

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

৩৫৫৯-[৫] ’আব্দুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন কতিপয় ইয়াহূদীরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে জানালো যে, তাদের একজন পুরুষ ও একজন নারী যিনা করেছে। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে জিজ্ঞেস করলেন, ’রজমের’ ব্যাপারে তোমরা তাওরাতে কি জেনেছ? তারা বলল, আমরা দোষীকে অপমান করি এবং চাবুক মারা হয়। ’আব্দুল্লাহ ইবনু সালাম বললেন, তোমরা মিথ্যা বলছ। তাওরাতে অবশ্যই ’রজমের’ দণ্ড রয়েছে, তা নিয়ে আসো! অবশেষে তারা তা এনে খুলল ঠিকই কিন্তু তাদের একজন ’রজমের’ আয়াতের উপর স্বীয় হাত দিয়ে ঢেকে রেখে দিল এবং তারপর এর আগের ও পরের আয়াত পড়ল।

তখন ’আব্দুল্লাহ ইবনু সালাম বললেন, তোমার হাত উঠাও! সে হাত উঠাল। তখন দেখা গেল, সেখানে রজমের আয়াত বিদ্যমান রয়েছে। ইয়াহূদীরা বলল, হে মুহাম্মাদ! সে সত্য বলেছে। এখানে রজমের আয়াত বিদ্যমান আছে। সুতরাং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের দুজনকে রজম করে হত্যা করার নির্দেশ দিলেন। তখন তাদের উভয়কে ’’রজম’’ করা হলো। অন্য রিওয়ায়াতে আছে, ’আব্দুল্লাহ ইবনু সালাম বললেন, তোমার হাত উঠাও! সে হাত উঠাল। তখন সেখানে স্পষ্টভাবে রজমের আয়াত বিদ্যমান দেখা গেল। [আয়াত গোপনকারী] সেই লোকটি বলল, হে মুহাম্মাদ! সত্যিই তাওরাতে রজমের আয়াত বিদ্যমান আছে; কিন্তু আমরা নিজেদের মাঝে তা গোপন রাখতাম। এরপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের উভয়কে রজম করার নির্দেশ দিলেন। তখন তাদের উভয়কে রজম করা হলো। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

اَلْفَصْلُ الْأَوَّلُ

وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ: أَن الْيَهُود جاؤوا إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَذَكَرُوا لَهُ أَنَّ رَجُلًا مِنْهُمْ وَامْرَأَةً زَنَيَا فَقَالَ لَهُمْ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَا تَجِدُونَ فِي التَّوْرَاةِ فِي شَأْنِ الرَّجْمِ؟» قَالُوا: نَفْضَحُهُمْ وَيُجْلَدُونَ قَالَ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ سَلَامٍ: كَذَبْتُمْ إِنَّ فِيهَا الرَّجْمَ فَأْتُوا بِالتَّوْرَاةِ فَنَشَرُوهَا فَوَضَعَ أَحَدُهُمْ يَدَهُ عَلَى آيَةِ الرَّجْمِ فَقَرَأَ مَا قَبْلَهَا وَمَا بَعْدَهَا فَقَالَ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ سَلَامٍ: ارْفَعْ يَدَكَ فَرَفَعَ فإِذا فِيهَا آيةُ الرَّجم. فَقَالُوا: صدقَ يَا محمَّدُ فِيهَا آيَة الرَّجْم. فَأمر بهما النَّبِي صلى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَرُجِمَا. وَفِي رِوَايَةٍ: قَالَ: ارْفَعْ يَدَكَ فَرَفَعَ فَإِذَا فِيهَا آيَةُ الرَّجْمِ تَلُوحُ فَقَالَ: يَا مُحَمَّدُ إِنَّ فِيهَا آيَةَ الرَّجْمِ وَلِكِنَّا نَتَكَاتَمُهُ بَيْنَنَا فَأَمَرَ بِهِمَا فَرُجِمَا

وعن عبد الله بن عمر: أن اليهود جاؤوا إلى رسول الله صلى الله عليه وسلم فذكروا له أن رجلا منهم وامرأة زنيا فقال لهم رسول الله صلى الله عليه وسلم: «ما تجدون في التوراة في شأن الرجم؟» قالوا: نفضحهم ويجلدون قال عبد الله بن سلام: كذبتم إن فيها الرجم فأتوا بالتوراة فنشروها فوضع أحدهم يده على آية الرجم فقرأ ما قبلها وما بعدها فقال عبد الله بن سلام: ارفع يدك فرفع فإذا فيها آية الرجم. فقالوا: صدق يا محمد فيها آية الرجم. فأمر بهما النبي صلى الله عليه وسلم فرجما. وفي رواية: قال: ارفع يدك فرفع فإذا فيها آية الرجم تلوح فقال: يا محمد إن فيها آية الرجم ولكنا نتكاتمه بيننا فأمر بهما فرجما

ব্যাখ্যা: বায়হাক্বীর বর্ণনায় মহিলাটির নাম ‘‘বুসরাহ্’’ আর পুরুষের নাম উল্লেখ হয়নি। আবূ দাঊদ কারণ উল্লেখ করেছেন যুহরীর সানাদে। তিনি বলেন, অমি মাজিনা গোত্রের এক লোকের নিকট থেকে শুনেছি যিনি ‘ইলম অর্জন করেন আর তিনি সা‘ঈদ ইবনু মুসাইয়্যাব-এর গোলাম। তিনি হাদীস বর্ণনা করেন আবূ হুরায়রাহ্ থেকে। তিনি বলেন, ইয়াহূদী এক লোক কোনো এক মহিলার সাথে যিনা করে তখন তাদের একে অপরকে বলে চলো আমরা এই নাবীর কাছে যাই যিনি প্রেরিত হয়েছেন ঢিলেঢালা শারী‘আত নিয়ে তিনি যদি আমাদেরকে ফতোয়া দেন রজম ব্যতিরেকে তাহলে তা গ্রহণ করবো আর আল্লাহর নিকট এটা দলীল হিসেবে গ্রহণ করবো এবং বলবো, তোমার নাবীদের মধ্য থেকে নাবীর ফতোয়া গ্রহণ করেছি। রাবী বলেন, তারা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট আসলো। এমতাবস্থায় রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সাথীদের নিয়ে মসজিদে বসেছিলেন। তারা বললো, হে আবুল কাসিম! আপনার সিদ্ধান্ত কি এই মহিলা ও পুরুষের ব্যাপারে যারা যিনা করেছে?

অন্য বর্ণনায় এসেছে, তারা দু‘জন ছিল খায়বারের সম্মানিত অধিবাসী। আর খায়বারের যুদ্ধকালীন সময়ে এ ঘটনা ঘটেছিল।

«مَا تَجِدُوْنَ فِى التَّوْرَاةِ فِىْ شَأْنِ الرَّجْمِ؟» রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞেস করলেন : রজমের ব্যাপারে তাওরাতের মধ্যে তোমরা কি পেয়েছো? বাজী বলেনঃ সম্ভাবনা রয়েছে, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওয়াহীর মাধ্যমে জানতে পেরেছেন যে, রজমের হুকুম তাদের তাওরাতে এখনও অটুট রয়েছে, পরিবর্তন হয়নি। এও সম্ভাবনা রয়েছে, তিনি জেনেছেন ‘আবদুস্ সালাম ও অন্যান্যদের থেকে যারা ইসলাম গ্রহণ করেছে। ইয়াহূদী থেকে তাদের কাছে তিনি সঠিক তথ্য জেনেছিলেন।

অথবা এও সম্ভাবনা রয়েছে, তিনি তাদেরকে জিজ্ঞেস করেছিলেন যাতে তিনি জানতে পারেন তাদের শারী‘আতের বিধান কি? অতঃপর আল্লাহর নিকট থেকে তিনি এর সত্যতা জানতে পারেন।

(وَيُجْلَدُوْنَ) বেত্রাঘাত-এর বর্ণনা।

আইয়ূব (রহঃ) নাফি‘ থেকে অন্য বর্ণনায় এসেছে, (قَالُوا : نُسَوِّدُ وُجُوهَهُمَا، وَنُحَمِّلُهُمَا) তারা বললো, আমরা তাদের চেহারায় কালি মাখি এবং বাহনে চড়িয়ে ঘুরাই।

হাদীসের অন্যতম শিক্ষা হলো : যিম্মি কাফিরের ওপরে হাদ্দ বাস্তবায়ন করা ওয়াজিব যখন যিনা করবে আর এটা জুমহূরের মতে শাফি‘ঈরা বিরোধিতা করেছে। ইবনু ‘আবদুল বাব-এর মতে, মুসলিম বিবাহিতদের ওপর হাদ্দ বাস্তবায়ন শর্ত আর শাফি‘ঈ ও আহমাদ-এর নিকট কোনো শর্ত না। তারা দলীল হিসেবে পেশ করেন দু‘জন ইয়াহূদীর ওপর রজম বাস্তবায়ন। আর এ হাদীসের জবাব দিয়েছেন রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রজম করেছেন তাদের তাওরাতের আইন দিয়ে ইসলামের আইন দিয়ে নয়। বরং তা বাস্তবায়ন ছিল তাদের কিতাবের আইন দিয়ে আর তাওরাতে বিবাহিত হোক আর অবিবাহিত হোক উভয়ের জন্য রজম। আর এটা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্য মদীনার প্রথম জীবনে প্রযোজ্য ছিল। তিনি তাওরাত আইনের আদেশপ্রাপ্ত ছিলেন পরে তাঁর শারী‘আত সেটিকে মানসূখ করে দেয়। সুতরাং তিনি আইন অনুযায়ী দু’জন ইয়াহূদীকে রজম করেছেন। তা আল্লাহ তা‘আলা এ আয়াত দ্বারা মানসূখ করেন। (ফাতহুল বারী ১২ খন্ড, হাঃ ৬৮৪১)

وَاللَّاتِي يَأْتِينَ الْفَاحِشَةَ مِنْ نِسَائِكُمْ فاستشهدوا عَلَيْهِنَّ أَرْبَعَة مِنْكُم إِلٰى قَوْلِه أَوْ يَجْعَلَ اللّٰهُ لَهُنَّ سَبِيلًا

হাদীসে প্রমাণিত হয় যিনার দণ্ড কাফিরের ওপর প্রযোজ্য করা ওয়াজিব। আর তাদের বিবাহ পদ্ধতি সহীহ, কেননা রজম বিবাহিত ব্যতীত প্রয়োগ হয় না। যদি বিবাহ সহীহ না হতো তাহলে বিবাহিত বলে সাব্যস্ত হতো না এবং রজমও হতো না।

হাদীসে আরো সাব্যস্ত হয় যে, কাফিররাও শারী‘আতের শাখা-প্রশাখার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত।

হাদীসে আরো প্রমাণিত হয় : যখন কাফির বা আমাদের তথা মুসলিমদের নিকট বিচার চাইবে তখন আমাদের শারী‘আতের বিধানুযায়ী বিচার করতে হবে। (শারহে মুসলিম ১১শ খন্ড, হাঃ ১৬৯৯)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৭: দণ্ডবিধি (كتاب الحدود) 17. Prescribed Punishments
৩৫৬০

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

৩৫৬০-[৬] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন জনৈক লোক নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট আসলো। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মসজিদে ছিলেন। লোকটি উচ্চস্বরে বলল, হে আল্লাহর রসূল! আমি যিনা করেছি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেদিকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন লোকটি সেদিকে গিয়ে আবার বলল, আমি যিনা করেছি। তখনও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন। অবশেষে যখন লোকটি চারবার স্বীকারোক্তি দিল। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে ডেকে বললেন, তুমি কি পাগল? লোকটি (দৃঢ়তার সাথে) বলল, না। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তুমি কি বিবাহিত? সে বলল, হ্যাঁ, হে আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (সাহাবীদের উদ্দেশে) বললেন, একে নিয়ে যাও এবং ’রজম’ কর।

(হাদীসের এক বর্ণনাকারী) ইবনু শিহাব (রহঃ) বলেন, আমার নিকট এমন এক ব্যক্তি বর্ণনা করেছেন, যিনি জাবির ইবনু ’আব্দুল্লাহ থেকে শুনেছেন, আমরা তাকে মদীনাতেই ’রজম’ করেছি। অতঃপর যখন তার ওপর পাথর নিক্ষেপ করছিল (তীব্র যাতনা অনুভূত হয়ে) তখন সে পালিয়ে গেল। কিন্তু আমরা ’হাররাহ্’ নামক স্থানে তাকে পেলাম এবং সেখানেই তার ওপর পাথর নিক্ষেপ করলাম। পরিশেষে সে মৃত্যুবরণ করল। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

বুখারীর অপর বর্ণনাতে জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত, সে বলল, ’হ্যাঁ’। এরপর বর্ণিত আছে যে, অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাকে পাথর নিক্ষেপে হত্যার নির্দেশ করলেন। সুতরাং ঈদগাহের মাঠে তার ওপর পাথর নিক্ষেপ করা হয়। কিন্তু নিক্ষিপ্ত পাথরগুলো যখন তার দেহে আঘাত হানতে ছিল, তখন সে অসহ্য যন্ত্রণায় দৌড়ে পালিয়ে গেল। কিন্তু পরে তার নাগাল পাওয়া গেল ও রজম করা হলো। অতঃপর তার জানাযার সালাতও আদায় করালেন।

اَلْفَصْلُ الْأَوَّلُ

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: أَتَى النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَجُلٌ وَهُوَ فِي الْمَسْجِدِ فَنَادَاهُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنِّي زَنَيْتُ فَأَعْرَضَ عَنْهُ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَتَنَحَّى لِشِقِّ وَجْهِهِ الَّذِي أَعْرَضَ قِبَلَهُ فَقَالَ: إِنِّي زَنَيْتُ فَأَعْرَضَ عَنْهُ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَلَمَّا شَهِدَ أَرْبَعَ شَهَادَاتٍ دَعَاهُ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: «أَبِكَ جُنُونٌ؟» قَالَ: لَا فَقَالَ: «أُحْصِنْتَ؟» قَالَ: نَعَمْ يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ: «اذْهَبُوا بِهِ فَارْجُمُوهُ» قَالَ ابْنُ شِهَابٍ: فَأَخْبَرَنِي مَنْ سَمِعَ جَابِرَ بْنَ عَبْدِ اللَّهِ يَقُولُ: فَرَجَمْنَاهُ بِالْمَدِينَةِ فَلَمَّا أَذْلَقَتْهُ الْحِجَارَةُ هَرَبَ حَتَّى أَدْرَكْنَاهُ بِالْحَرَّةِ فرجمناه حَتَّى مَاتَ
وَفِي رِوَايَةٍ لِلْبُخَارِيِّ: عَنْ جَابِرٍ بَعْدَ قَوْلِهِ: قَالَ: نَعَمْ فَأَمَرَ بِهِ فَرُجِمَ بِالْمُصَلَّى فَلَمَّا أَذْلَقَتْهُ الْحِجَارَةُ فَرَّ فَأُدْرِكَ فَرُجِمَ حَتَّى مَاتَ. فَقَالَ لَهُ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ خيرا وَصلى عَلَيْهِ

وعن أبي هريرة قال: أتى النبي صلى الله عليه وسلم رجل وهو في المسجد فناداه: يا رسول الله إني زنيت فأعرض عنه النبي صلى الله عليه وسلم فتنحى لشق وجهه الذي أعرض قبله فقال: إني زنيت فأعرض عنه النبي صلى الله عليه وسلم فلما شهد أربع شهادات دعاه النبي صلى الله عليه وسلم فقال: «أبك جنون؟» قال: لا فقال: «أحصنت؟» قال: نعم يا رسول الله قال: «اذهبوا به فارجموه» قال ابن شهاب: فأخبرني من سمع جابر بن عبد الله يقول: فرجمناه بالمدينة فلما أذلقته الحجارة هرب حتى أدركناه بالحرة فرجمناه حتى مات وفي رواية للبخاري: عن جابر بعد قوله: قال: نعم فأمر به فرجم بالمصلى فلما أذلقته الحجارة فر فأدرك فرجم حتى مات. فقال له النبي صلى الله عليه وسلم خيرا وصلى عليه

ব্যাখ্যা: (رَجُلٌ) লোকটি কোনো সম্মানিত ও প্রসিদ্ধও না।

(زَنَيْتُ) আমি যিনা করেছি। সে মূলত নিজের বা অন্যের জন্য ফতোয়া জানার জন্য আসেনি। সে এসেছে যিনার স্বীকৃতি দেয়ার জন্য যাতে শারী‘আতের দণ্ড তার ওপর যেন প্রয়োগ করা হয়। হাদীসে আরো শিক্ষা আসে যে, পাগলের ওপর দণ্ড প্রয়োগ হবে না।

যিনাকারীকে তখন প্রশ্ন করা হবে যখন জানা যাবে না বিশুদ্ধ বিবাহ করেছে কিনা আর বিবাহিত জানা গেলে এ বিষয়ে প্রশ্ন করার কোনো প্রয়োজন নেই।

মালিকীর পক্ষ থেকে আলোচিত হয়েছে যখন জানা যাবে সে বিবাহ করেছে আর শুনা হয়নি সহবাসের স্বীকৃতি। (ফাতহুল বারী ১২শ খন্ড, হাঃ ৬৮২৫)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৭: দণ্ডবিধি (كتاب الحدود) 17. Prescribed Punishments
৩৫৬১

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

৩৫৬১-[৭] ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, মা’ইয ইবনু মালিক যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট আসলেন, তখন তিনি তাঁকে বললেন, তুমি কি (কোনো মহিলাকে) চুমু দিয়েছিলে, অথবা চোখ দ্বারা ইশারা দিয়েছিলে? সে বলল, না, হে আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তবে কি তুমি তার সাথে সঙ্গম করেছ? কথাটি তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কোনো ইশারা-ইঙ্গিতে বলেননি, বরং দৃঢ়কণ্ঠে বললেন। সে বলল, হ্যাঁ। অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাকে ’রজমের’ নির্দেশ করলেন। (বুখারী)[1]

اَلْفَصْلُ الْأَوَّلُ

وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: لَمَّا أَتَى مَاعِزُ بن مَالك النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ لَهُ: «لَعَلَّكَ قَبَّلْتَ أَوْ غَمَزْتَ أَوْ نَظَرْتَ؟» قَالَ: لَا يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ: «أَنِكْتَهَا؟» لَا يُكَنِّي قَالَ: نَعَمْ فَعِنْدَ ذَلِكَ أَمر رجمه. رَوَاهُ البُخَارِيّ

وعن ابن عباس قال: لما أتى ماعز بن مالك النبي صلى الله عليه وسلم فقال له: «لعلك قبلت أو غمزت أو نظرت؟» قال: لا يا رسول الله قال: «أنكتها؟» لا يكني قال: نعم فعند ذلك أمر رجمه. رواه البخاري

ব্যাখ্যা:

لَمَّا أَتٰى مَاعِزُ بْنُ مَالِكٍ فِي رِوَايَةِ خَالِدٍ الْحَذَّاءِ أَنَّ مَاعِزَ بْنَ مَالِكٍ أَتَى النَّبِيَّ ﷺ فَقَالَ إِنَّه زَنٰى فَأَعْرَضَ عَنْهُ فَأَعَادَ عَلَيْهِ مِرَارًا فَسَأَلَ قَوْمَه أَمَجْنُونٌ هُوَ قَالُوا لَيْسَ بِه بَأْسٌ

খালিদ আল হাযযা-এর বর্ণনায় মা‘ইয বিন মালিক নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এসে বললো, সে যিনা করেছে। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন, সে অনেকবার এর পুনরাবৃত্তি করলো। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তার জাতিকে প্রশ্ন করলেন : সে কি পাগল। তারা বললো, না, সে পাগল নয়। সানাদটি বুখারীর শর্তে সহীহ।

(قَالَ لَه : لَعَلَّكَ قَبَّلْتَ) সম্ভবত তুমি চুম্বন করেছো। চুম্বনকৃত মহিলার নাম উল্লেখ করা হয়নি এবং চুম্বনের স্থানকে নির্দিষ্ট করা হয়নি।

(أَوْ غَمَزْتَ) দ্বারা উদ্দেশ্য চোখ বা হাত দিয়ে তুমি ইঙ্গিত করেছো অথবা তুমি গোপন অঙ্গে তোমার হাত দিয়ে স্পর্শ করেছো অথবা অন্য কোনো অঙ্গের উপর হাত রেখেছো। এগুলো ইঙ্গিত করে لَمَسْتَ শব্দের উপর।

যা অন্য বর্ণনায় এসেছে, «لَعَلَّكَ قَبَّلْتَ أَوْ لَمَسْتَ» সম্ভবত তুমি চুম্বন করেছো, অথবা স্পর্শ করেছো। «أَوْ نَظَرْت» অথবা তুমি দেখেছো, এটা অন্য হাদীসের মর্মার্থের উপর ইঙ্গিত করে যা বুখারী ও মুসলিমে এসেছে আবূ হুরায়রাহ্ -এর হাদীস।

«الْعَيْنُ تَزْنِي وَزِنَاهَا النَّظَرُ» চক্ষু যিনা করে আর তার যিনা হলো দেখা।

«فَعِنْدَ ذٰلِكَ أَمَرَ بِرَجْمِه» অতঃপর তিনি তাকে রজম করার হুকুম দিলেন। খালিদ আল হামযা তার বর্ণনায় অতিরিক্ত করে বলেছেন, (فَانْطُلِقَ بِه فرجم وَلم يصل عَلَيْهِ) তাকে নিয়ে যাওয়া হলো, রজম করা হলো আর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার জানাযার সালাত আদায় করেছেন। (ফাতহুল বারী ১২শ খন্ড, হাঃ ৬৮২৪)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৭: দণ্ডবিধি (كتاب الحدود) 17. Prescribed Punishments
৩৫৬২

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

৩৫৬২-[৮] বুরায়দাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন মা’ইয ইবনু মালিক নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে বললেন, হে আল্লাহর রসূল! ’আমাকে পাক-পবিত্র করুন’। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তোমার ওপর আক্ষেপ হয়, ফিরে যাও এবং আল্লাহর নিকট মাফ চাও ও তওবা্ কর। বর্ণনাকারী বলেন, তিনি চলে গেলেন কিন্তু কিছু দূরে গিয়ে পুনরায় ফিরে এসে বললেন, হে আল্লাহর রসূল! ’আমাকে পাক-পবিত্র করুন’। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবারও তাকে পূর্বের ন্যায় বললেন। এভাবে যখন তিনি চতুর্থবার এসে বললেন, তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, আচ্ছা! তোমাকে আমি কি দিয়ে পবিত্র করব? তিনি বললেন, যিনা থেকে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (সাহাবীদের উদ্দেশে) বললেন, সে কি পাগলামী করছে? জানানো হলো, না সে পাগল নয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তবে কি সে মদ্যপায়িত? তখন জনৈক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে তার মুখ শুঁকলেন; কিন্তু মদের গন্ধ পাওয়া গেল না। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তাহলে কি তুমি সত্যিই যিনা করেছ? তিনি বললেন, জি, হ্যাঁ! অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাকে রজম করার নির্দেশ দিলেন। তখন তাকে রজম করা হলো। এ ঘটনার দুই-তিনদিন পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (সাহাবীদের উদ্দেশে) বললেন, তোমরা মা’ইয ইবনু মালিক (রাঃ)-এর জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর। অতঃপর তিনি এমনভাবে তওবা্ করেছেন যদি তা সকল উম্মাতের মাঝে বিলিয়ে দেয়া হয়, তাহলে সকলের জন্য যথেষ্ট হবে।

এ ঘটনার পর আয্দ বংশের গামিদী গোষ্ঠীর জনৈক নারী এসে বলল, হে আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! ’আমাকে পাক-পবিত্র করুন’। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তোমার ওপর আক্ষেপ হয়, ফিরে যাও! আল্লাহ তা’আলার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা কর এবং তওবা্ কর। তখন সে বলল, আপনি মা’ইয ইবনু মালিককে যেভাবে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন আমাকেও কি অনুরূপ ফিরিয়ে দিতে চান? অথচ আমি তো সেই নারী যা যিনার দ্বারা অন্তঃসত্ত্বা। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, সত্যি কি তুমি যিনার দ্বারা গর্ভবতী? নারীটি বলল, জি, হ্যাঁ! নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যাও! তোমার পেটের বাচ্চা প্রসব হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষায় থাকো। তখন এক আনসারী মহিলাটি বাচ্চার প্রসব হওয়া পর্যন্ত তাকে নিজ তত্ত্বাবধানে নিয়ে গেলেন। অতঃপর সন্তান হওয়ার পর ঐ লোকটি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে বলল, গামিদী গোষ্ঠীর নারীটি বাচ্চা প্রসব করেছে। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তার শিশু বাচ্চাটি রেখে এখন তাকে রজম করা যাবে না, কেননা বাচ্চাটির দুধ পান করানোর মতো কেউ থাকবে না। তখন আনসারদের থেকে জনৈক লোক দাঁড়িয়ে বলল, হে আল্লাহর নবী! তাকে দুধপান করানোর দায়িত্ব আমার ওপর। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাকে রজম করলেন।

অপর বর্ণনাতে আছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঐ নারীকে বললেন, তুমি চলে যাও এবং সন্তান প্রসব হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা কর। অতঃপর সন্তান প্রসব করার পর যখন আসলো, তখন বললেন, এবারও চলে যাও এবং দুধ পান করাও। আর দুধ ছাড়ানো পর্যন্ত অপেক্ষা কর। তারপর যখন বাচ্চাটির দুধ ছাড়ানো হয় তখন নারীটি বাচ্চা নিয়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট উপস্থিত হলো। তখন বাচ্চার হাতে এক টুকরা রুটি ছিল। এবার নারীটি বলল, হে আল্লাহর নবী! এই যে, আমি তার দুধ ছাড়িয়েছি এবং এখন সে অন্য খাদ্য খায়। এমতাবস্থায় তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বাচ্চাটিকে একজন মুসলিমের তত্ত্বাবধানে দিলেন এবং নারীটির জন্য একটি গর্ত খোঁড়ার নির্দেশ দিলেন, অতঃপর তার বক্ষদেশ পর্যন্ত একটি গর্ত খোঁড়া হলো। তখন লোকেদেরকে পাথর নিক্ষেপের নির্দেশ দিলেন। খালিদ ইবনু ওয়ালীদ সামনে অগ্রসর হয়ে তার মাথার উপর এক খন্ড পাথর নিক্ষেপ করলেন। ফলে রক্ত ছিঁটে খালিদ -এর মুখমণ্ডলে এসে পড়ল। তখন তিনি তাকে ভৎর্সনা করলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে খালিদ! থামো! কসম সেই আল্লাহর! যাঁর হাতে আমার প্রাণ। নিশ্চয় নারীটি এমন তওবা্ করেছে, যদি কোনো বড় যালিমও এ ধরনের তওবা্ করে তাহলে তাকেও ক্ষমা করা হবে। অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নির্দেশ দিলে, তার জানাযা আদায় করা হলো এবং দাফনকার্য সম্পন্ন হলো। (মুসলিম)[1]

اَلْفَصْلُ الْأَوَّلُ

وَعَنْ بُرَيْدَةَ قَالَ: جَاءَ مَاعِزُ بْنُ مَالِكٍ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ طَهِّرْنِي فَقَالَ: «وَيْحَكَ ارْجِعْ فَاسْتَغْفر الله وَتب إِلَيْهِ» . فَقَالَ: فَرَجَعَ غَيْرَ بَعِيدٍ ثُمَّ جَاءَ فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ طَهِّرْنِي. فَقَالَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِثْلَ ذَلِكَ حَتَّى إِذَا كَانَتِ الرَّابِعَة قَالَه لَهُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «فِيمَ أُطَهِّرُكَ؟» قَالَ: مِنَ الزِّنَا قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَبِهِ جُنُونٌ؟» فَأُخْبِرَ أَنَّهُ لَيْسَ بِمَجْنُونٍ فَقَالَ: «أَشَرِبَ خَمْرًا؟» فَقَامَ رَجُلٌ فَاسْتَنْكَهَهُ فَلَمْ يَجِدْ مِنْهُ رِيحَ خَمْرٍ فَقَالَ: «أَزَنَيْتَ؟» قَالَ: نَعَمْ فَأَمَرَ بِهِ فَرُجِمَ فَلَبِثُوا يَوْمَيْنِ أَوْ ثَلَاثَةً ثُمَّ جَاءَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: «اسْتَغْفِرُوا لِمَاعِزِ بْنِ مَالِكٍ لَقَدْ تَابَ تَوْبَةً لَوْ قُسِّمَتْ بَيْنَ أُمَّةٍ لَوَسِعَتْهُمْ» ثُمَّ جَاءَتْهُ امْرَأَةٌ مِنْ غَامِدٍ مِنَ الْأَزْدِ فَقَالَتْ: يَا رَسُولَ اللَّهِ طَهِّرْنِي فَقَالَ: «وَيَحَكِ ارْجِعِي فَاسْتَغْفِرِي اللَّهَ وَتُوبِي إِلَيْهِ» فَقَالَتْ: تُرِيدُ أَنْ تَرْدُدَنِي كَمَا رَدَدْتَ مَاعِزَ بْنَ مَالِكٍ: إِنَّهَا حُبْلَى مِنَ الزِّنَا فَقَالَ: «أَنْتِ؟» قَالَتْ: نَعَمْ قَالَ لَهَا: «حَتَّى تَضَعِي مَا فِي بَطْنِكِ» قَالَ: فكَفَلَها رَجُلٌ مِنَ الْأَنْصَارِ حَتَّى وَضَعَتْ فَأَتَى النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: قَدْ وَضَعَتِ الغامديَّةُ فَقَالَ: «إِذاً لَا نرجُمها وندعُ وَلَدَهَا صَغِيرًا لَيْسَ لَهُ مَنْ يُرْضِعُهُ» فَقَامَ رَجُلٌ مِنَ الْأَنْصَارِ فَقَالَ: إِلَيَّ رَضَاعُهُ يَا نَبِيَّ اللَّهِ قَالَ: فَرَجَمَهَا. وَفِي رِوَايَةٍ: أَنَّهُ قَالَ لَهَا: «اذْهَبِي حَتَّى تَلِدِي» فَلَمَّا وَلَدَتْ قَالَ: «اذْهَبِي فَأَرْضِعِيهِ حَتَّى تَفْطِمِيهِ» فَلَمَّا فَطَمَتْهُ أَتَتْهُ بِالصَّبِيِّ فِي يَدِهِ كِسْرَةُ خُبْزٍ فَقَالَتْ: هَذَا يَا نَبِيَّ اللَّهِ قَدْ فَطَمْتُهُ وَقَدْ أَكَلَ الطَّعَامَ فَدَفَعَ الصَّبِيَّ إِلَى رَجُلٍ مِنَ الْمُسْلِمِينَ ثُمَّ أَمَرَ بِهَا فَحُفِرَ لَهَا إِلَى صَدْرِهَا وَأَمَرَ النَّاسَ فَرَجَمُوهَا فَيُقْبِلُ خَالِدُ بْنُ الْوَلِيدِ بِحَجْرٍ فَرَمَى رَأْسَهَا فَتَنَضَّحَ الدَّمُ عَلَى وَجْهِ خَالِدٍ فَسَبَّهَا فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم: «مهلا يَا خَالِد فو الَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لَقَدْ تَابَتْ تَوْبَةً لَوْ تَابَهَا صَاحِبُ مَكْسٍ لَغُفِرَ لَهُ» ثُمَّ أَمَرَ بِهَا فصلى عَلَيْهَا ودفنت. رَوَاهُ مُسلم

وعن بريدة قال: جاء ماعز بن مالك إلى النبي صلى الله عليه وسلم فقال: يا رسول الله طهرني فقال: «ويحك ارجع فاستغفر الله وتب إليه» . فقال: فرجع غير بعيد ثم جاء فقال: يا رسول الله طهرني. فقال النبي صلى الله عليه وسلم مثل ذلك حتى إذا كانت الرابعة قاله له رسول الله صلى الله عليه وسلم: «فيم أطهرك؟» قال: من الزنا قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «أبه جنون؟» فأخبر أنه ليس بمجنون فقال: «أشرب خمرا؟» فقام رجل فاستنكهه فلم يجد منه ريح خمر فقال: «أزنيت؟» قال: نعم فأمر به فرجم فلبثوا يومين أو ثلاثة ثم جاء رسول الله صلى الله عليه وسلم فقال: «استغفروا لماعز بن مالك لقد تاب توبة لو قسمت بين أمة لوسعتهم» ثم جاءته امرأة من غامد من الأزد فقالت: يا رسول الله طهرني فقال: «ويحك ارجعي فاستغفري الله وتوبي إليه» فقالت: تريد أن ترددني كما رددت ماعز بن مالك: إنها حبلى من الزنا فقال: «أنت؟» قالت: نعم قال لها: «حتى تضعي ما في بطنك» قال: فكفلها رجل من الأنصار حتى وضعت فأتى النبي صلى الله عليه وسلم فقال: قد وضعت الغامدية فقال: «إذا لا نرجمها وندع ولدها صغيرا ليس له من يرضعه» فقام رجل من الأنصار فقال: إلي رضاعه يا نبي الله قال: فرجمها. وفي رواية: أنه قال لها: «اذهبي حتى تلدي» فلما ولدت قال: «اذهبي فأرضعيه حتى تفطميه» فلما فطمته أتته بالصبي في يده كسرة خبز فقالت: هذا يا نبي الله قد فطمته وقد أكل الطعام فدفع الصبي إلى رجل من المسلمين ثم أمر بها فحفر لها إلى صدرها وأمر الناس فرجموها فيقبل خالد بن الوليد بحجر فرمى رأسها فتنضح الدم على وجه خالد فسبها فقال النبي صلى الله عليه وسلم: «مهلا يا خالد فو الذي نفسي بيده لقد تابت توبة لو تابها صاحب مكس لغفر له» ثم أمر بها فصلى عليها ودفنت. رواه مسلم

ব্যাখ্যা: যদি প্রশ্ন করা হয়, মা‘ইয এবং গামিদী কেন তারা তাওবায় সন্তুষ্ট হয়নি অথচ তাওবাহ্ দ্বারা তাদের উদ্দেশ্য অর্জিত হতো আর তা গুনাহ মাফ হওয়ার দণ্ডের মাধ্যমে পরিপূর্ণভাবে গুনাহ থেকে মুক্ত হওয়ার দৃঢ় বিশ্বাস অর্জন হয়। তাছাড়াও এটা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নির্দেশ। আর তাওরাতে পাপ থেকে খাঁটিভাবে মুক্ত হওয়ার শংকা রয়েছে। সুতরাং শংকা থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য দৃঢ়-বিশ্বাসভাবে পাপ থেকে পরিচ্ছন্ন হওয়ার জন্য হাদ্দকে বেছে নিয়েছে। আল্লাহই বেশী ভালো জানেন। (শারহে মুসলিম ১১শ খন্ড, ১৬৯৫)

(ثُمَّ جَاءَ فَقَالَ : يَا رَسُوْلَ اللّٰهِ! طَهِّرْنِىْ) অতঃপর আসলো এবং বললো, আমাকে পবিত্র করুন। সম্ভবত সে তাওরাতের মাধ্যমে নিজকে পবিত্র করতে সক্ষম ছিল না।

(اسْتَغْفِرُوْا لِمَاعِزِ بْنِ مَالِكٍ) তোমরা তার জন্য ক্ষমার আধিক্য আর উন্নত মর্যাদা কামনা করো।

(لَوَسِعَتْهُمْ) যথেষ্ট হতো। তিনি বলেন, তার তাওবাহ্ এমন ছিল যা অপরিহার্য করে তোলে ক্ষমা ও রহমাত তা বিশাল সংখ্যক জনগোষ্ঠীর ওপর বণ্টন করা যাবে অনুরূপ গামিদী (মহিলার) তাওবার বিষয়টি প্রমাণ করে।

(لَقَدْ تَابَتْ تَوْبَةً لَوْ تَابَهَا صَاحِبُ مَكْسٍ لَغُفِرَ لَه) মহিলাটি এমন খালেস তাওবাহ্ করেছে, যদি কোনো ট্যাক্স আদায়কারী যালিমও এ ধরনের তাওবাহ্ করে অবশ্যই আল্লাহর তার গুনাহ ক্ষমা করবেন।

(اسْتَغْفِرُوْا لِمَاعِزِ) তোমরা মা‘ইয-এর জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করো। এমন বক্তব্যের রহস্য বা উপকার কি? যদি তুমি প্রশ্ন করো আমি ভাষ্যকার জবাবে বলি : অনুরূপ বক্তব্যের রহস্যের মতো।

‘‘আল্লাহর সাহায্য আসবে ও বিজয় আসবে এবং আপনি মানুষকে দলে দলে আল্লাহর দীনে প্রবেশ করতে দেখবেন। তখন আপনি আপনার পালনকর্তার পবিত্রতা বর্ণনা করুন এবং তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করুন, নিশ্চয় তিনি ক্ষমাকারী।’’ (সূরা আন্ নাস্র ১১০ : ১-৫)

আল্লাহর আরো বক্তব্য : ‘‘নিশ্চয় আমি আপনার জন্য একটা ফায়সালা করে দিয়েছি যা সুস্পষ্ট, যাতে আল্লাহ আপনার অতীত ও ভবিষ্যৎ ত্রুটিসমূহ মার্জনা করে দেন।’’ (সূরা আল ফাতহ ৪৮ : ১-২)

আর তার জন্য ক্ষমা তলব করার মধ্যে তার সম্মান ও মর্যাদা কামনা করো।

ইমাম নববী বলেনঃ শেষ বর্ণনাটি প্রথম বর্ণনার বিপরীত। প্রথম বর্ণনায় বাচ্চা প্রসবের পর রজম করা হয়েছে। দ্বিতীয়টি দুধ ছাড়ানোর পর রজম করা হয়েছে। দ্বিতীয়টিই সঠিক, প্রথম বর্ণনার ব্যাখ্যা দ্বিতীয় বর্ণনা, কেননা একটাই ঘটনা।

কারো মতে সম্ভাবনা, ঘটনা দু’টি দু’ মহিলার ক্ষেত্রে প্রথম বর্ণনার মহিলার ইজদ গোত্রের আর দ্বিতীয় বর্ণনার মহিলা জুহায়নাহ্ গোত্রের। (মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৭: দণ্ডবিধি (كتاب الحدود) 17. Prescribed Punishments
৩৫৬৩

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

৩৫৬৩-[৯] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ যদি তোমাদের কারও বাঁদী যিনা করে আর তা প্রকাশ হয়ে পড়ে, তখন তাকে চাবুক মারো। কিন্তু তাকে হেয়-প্রতিপন্ন করো না। যদি পুনরায় যিনা করে তাহলে এবারও তার ওপর দণ্ডিত কর, তবুও তাকে হেয়-প্রতিপন্ন করা যাবে না। কিন্তু এরপরও যদি সে তৃতীয়বার যিনা করে আর তা উন্মোচিত হয়, তখন চুলের একটি রশির বিনিময় হলেও তাকে বিক্রি করে দাও। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

اَلْفَصْلُ الْأَوَّلُ

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: سَمِعْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «إِذَا زَنَتْ أَمَةُ أَحَدِكُمْ فَتَبَيَّنَ زِنَاهَا فَلْيَجْلِدْهَا الحدَّ وَلَا يُثَرِّبْ عَلَيْهَا ثمَّ إِنْ زنَتْ فلْيجلدْها الحدَّ وَلَا يُثَرِّبْ ثُمَّ إِنْ زَنَتِ الثَّالِثَةَ فَتَبَيَّنَ زِنَاهَا فَلْيَبِعْهَا ولوْ بحبْلٍ منْ شعرٍ»

وعن أبي هريرة قال: سمعت النبي صلى الله عليه وسلم يقول: «إذا زنت أمة أحدكم فتبين زناها فليجلدها الحد ولا يثرب عليها ثم إن زنت فليجلدها الحد ولا يثرب ثم إن زنت الثالثة فتبين زناها فليبعها ولو بحبل من شعر»

ব্যাখ্যা: হাদীসে দলীল সাব্যস্ত হয় যে, দাস-দাসীর ওপর হাদ্দ বাস্তবায়ন করা ওয়াজিব। আরো প্রমাণিত হয় যে, মুনীব তার দাস বা দাসীর হাদ্দ প্রয়োগ করতে পারবে- এটা মালিক, আহমাদ সকল ‘উলামাহ্, সাহাবী ও তাবি‘ঈদের মতো আর হানাফীদের একটি দল বলে এমনটি প্রযোজ্য হবে না তথা মুনীব শাস্তি দিতে পারবে না। তবে এ হাদীস জুমহূর ‘উলামাদের জন্য সুস্পষ্ট দলীল।

হাদীসে আরো দলীল হিসেবে সাব্যস্ত হয় যে, দাস এবং দাসীকে রজম করে হত্যা করা যাবে না, চাই সে বিবাহিত হোক বা না হোক, কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বক্তব্য: (فَلْيَجْلِدْهَا الْحَدَّ) তাকে যেন চাবুক মারে। সেখানে বিবাহিত, অবিবাহিত পার্থক্য করেননি।

আরো প্রমাণিত হয়, যিনাকারী দাসকে দেশান্তর করা হবে না শুধুমাত্র হাদ্দ প্রয়োগ করা হবে। হাদীসে আরো সাব্যস্ত হয়, যিনাকারী দাসকে প্রথমবার যিনা করার কারণে চাবুক মারা হলো দ্বিতীয়বার করলেও অবশ্যই মারা হবে, তৃতীয়বার করলেও অবশ্যই মারা হবে। পুনরায় করলে অবশ্যই হাদ্দ প্রয়োগ করা হবে অনুরূপ চলবে। আর যদি অনেকবার যিনা করে এবং তার হাদ্দ প্রয়োগ হয়নি তাহলে সর্বশেষ যিনার হাদ্দ প্রয়োগই সকল যিনার হাদ্দের যথেষ্ট হবে।

হাদীসে আরো সাব্যস্ত হয় যে, ফাসিক, গুনাহগার ব্যক্তিদের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করা এবং তাদের থেকে দূরে থাকা। আর এ ধরনের বিক্রয়ের নির্দেশের বিষয়টি মুস্তাহাব, ওয়াজিব না। জুমহূরদের নিকট আবূ দাঊদ বলেন, আহলুয্ যাহিরের নিকট ওয়াজিব। হাদীসে প্রমাণিত হয় যে, পছন্দনীয় বস্তু স্বল্পমূল্যে বিক্রয় করা বৈধ- এ ব্যাপারে সবই একমত যখন বিক্রেতা ব্যক্তি ‘আলিম আর যদি মূর্খ ব্যক্তি হয় তবুও জুমহূরদের নিকট বৈধ। তবে মালিকীরা বিরোধিতা করেছে। আল্লাহই ভালো জানেন। আর এ ধরনের ক্রয়-বিক্রয়ে বিক্রেতা ব্যক্তি অবশ্যই ক্রেতাকে বিক্রিত বস্তুর ত্রুটি উল্লেখ করবে। আর ত্রুটি উল্লেখ করা ওয়াজিব। যদি প্রশ্ন করা হয় কিভাবে বিক্রয় করা বৈধ, কারণ এমন বস্তু নিজের জন্য সে অপছন্দ করে যা অপর মুসলিম ভাইয়ের জন্য সন্তুষ্টি প্রকাশ করে? (শারহে মুসলিম ১১শ খন্ড, হাঃ ১৭০৩)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৭: দণ্ডবিধি (كتاب الحدود) 17. Prescribed Punishments
৩৫৬৪

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

৩৫৬৪-[১০] ’আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, হে লোক সকল! তোমরা তোমাদের গোলাম-বাঁদীদের ওপর দণ্ড কার্যকর কর, বিবাহিত হোক বা অবিবাহিত হোক। একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর এক বাঁদী যিনা করেছিল। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাকে তার ওপর দণ্ড প্রয়োগের নির্দেশ করলেন। অতঃপর যখন আমি জানতে পারলাম, দাসীটি সদ্য প্রসূতি। তখন আমার সংশয় হলো, যদি আমি তাকে চাবুক মারি তাহলে আমার দ্বারাই তার মৃত্যু হবে। সুতরাং আমি বিষয়টি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জানালে তিনি বললেন, তুমি উত্তমই করেছ। (মুসলিম)[1]

আবূ দাঊদ-এর এক বর্ণনাতে আছে, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ তার নিফাসের রক্তস্রাব বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত তুমি তাকে ছেড়ে দাও, তারপর তার ওপর ’’হাদ্দ’’ কার্যকর কর। আর তোমরা তোমাদের গোলাম-বাঁদীদের ওপর ’’হাদ্দ’ প্রয়োগ কর।

اَلْفَصْلُ الْأَوَّلُ

وَعَنْ عَلِيٍّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: يَا أَيُّهَا النَّاسُ أَقِيمُوا عَلَى أَرِقَّائِكُمُ الْحَدَّ مَنْ أُحْصِنَ مِنْهُمْ وَمَنْ لَمْ يُحْصَنْ فَإِنَّ أَمَةً لِرَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ زَنَتْ فَأَمَرَنِي أَنْ أَجْلِدَهَا فَإِذَا هِيَ حَدِيثُ عَهْدٍ بِنِفَاسٍ فَخَشِيتُ إِنْ أَنَا جَلَدْتُهَا أَنْ أَقْتُلَهَا فَذَكَرْتُ ذَلِكَ لِلنَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: «أَحْسَنْتَ» . رَوَاهُ مُسْلِمٌ. وَفِي رِوَايَةِ أَبِي دَاوُدَ: قَالَ: «دَعْهَا حَتَّى يَنْقَطِعَ دَمُهَا ثُمَّ أَقِمْ عَلَيْهَا الْحَدَّ وَأَقِيمُوا الْحُدُودَ عَلَى مَا مَلَكَتْ أَيْمَانكُم»

وعن علي رضي الله عنه قال: يا أيها الناس أقيموا على أرقائكم الحد من أحصن منهم ومن لم يحصن فإن أمة لرسول الله صلى الله عليه وسلم زنت فأمرني أن أجلدها فإذا هي حديث عهد بنفاس فخشيت إن أنا جلدتها أن أقتلها فذكرت ذلك للنبي صلى الله عليه وسلم فقال: «أحسنت» . رواه مسلم. وفي رواية أبي داود: قال: «دعها حتى ينقطع دمها ثم أقم عليها الحد وأقيموا الحدود على ما ملكت أيمانكم»

ব্যাখ্যা: এ হাদীস থেকে স্পষ্ট বুঝা যায় যে, ঋতুবতী, গর্ভবতী ও প্রসূতি এ সব অবস্থায় তাদের ওপর হাদ্দ প্রয়োগ করা যায় না। অবশ্য পরে তা প্রয়োগ করতে হবে। কোনো অবস্থাতেই রহিত বা দেরী করা যাবে না এসব থেকে পবিত্র হওয়ার পর। (শারহে মুসলিম ১১শ খন্ড, হাঃ ১৭০৫)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৭: দণ্ডবিধি (كتاب الحدود) 17. Prescribed Punishments
৩৫৬৫

পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ

৩৫৬৫-[১১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, মা’ইয আল আসলামী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে বললেন, তিনি যিনা করেছেন। এটা শুনে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন। তখন তিনি সেদিকে যেয়ে বললেন, তিনি যিনা করেছেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এবারও তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন। তখন তিনি পুনরায় সেদিকে গিয়ে বললেন, হে আল্লাহর রসূল! আমি যিনা করেছি। পরিশেষে চতুর্থবার (স্বীকারেক্তিতে) তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাকে ’রজমের’ নির্দেশ দিলেন। অতঃপর তাকে ’হাররাহ্’ নামক এলাকায় নিয়ে তাকে রজম করা হলো। কিন্তু যখন তার শরীরে পাথর নিক্ষেপ করছিল তখন (অসহ্য যন্ত্রণায়) তিনি দৌড়িয়ে পালিয়ে গেলেন এবং এমন এক ব্যক্তির নিকট দিয়ে যাচ্ছিলেন যার হাতে উটের চোয়ালের হাড্ডি ছিল। তিনি তা দিয়ে তাকে আঘাত করল এবং অন্য লোকের আঘাতে সে মৃত্যুবরণ করল। অতঃপর লোকেরা ঘটনাটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট বলল যে, তিনি পাথরের আঘাতে মৃত্যু ভয়ে পালাচ্ছিলেন। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা তাকে কেন ছেড়ে দিলে না? (তিরমিযী, ইবনু মাজাহ)[1]

অন্য এক বর্ণনায় আছে, তোমরা কেন তাকে ছেড়ে ছিলে না? হতে পারে সে তওবা্ করত আর আল্লাহ তা’আলা তার তওবা্ কবুল করতেন।

اَلْفَصْلُ الثَّانِىْ

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: جَاءَ مَاعِزٌ الْأَسْلَمِيُّ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: إِنَّه قدْ زَنى فأعرضَ عَنهُ ثمَّ جَاءَ مِنْ شِقِّهِ الْآخَرِ فَقَالَ: إِنَّهُ قَدْ زنى فَأَعْرض عَنهُ ثمَّ جَاءَ من شقَّه الْآخَرِ فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّهُ قَدْ زَنى فَأَمَرَ بِهِ فِي الرَّابِعَةِ فَأُخْرِجَ إِلَى الْحَرَّةِ فَرُجِمَ بِالْحِجَارَةِ فَلَمَّا وَجَدَ مَسَّ الْحِجَارَةِ فَرَّ يَشْتَدُّ حَتَّى مَرَّ بِرَجُلٍ مَعَهُ لَحْيُ جَمَلٍ فَضَرَبَهُ بِهِ وَضَرَبَهُ النَّاسُ حَتَّى مَاتَ. فَذَكَرُوا ذَلِكَ لِرَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنه فرحين وَجَدَ مَسَّ الْحِجَارَةِ وَمَسَّ الْمَوْتِ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «هَلَّا تَرَكْتُمُوهُ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَابْنُ مَاجَهْ وَفِي رِوَايَةٍ: «هَلَّا تَرَكْتُمُوهُ لَعَلَّه أَن يَتُوب الله عَلَيْهِ»

عن أبي هريرة قال: جاء ماعز الأسلمي إلى رسول الله صلى الله عليه وسلم فقال: إنه قد زنى فأعرض عنه ثم جاء من شقه الآخر فقال: إنه قد زنى فأعرض عنه ثم جاء من شقه الآخر فقال: يا رسول الله إنه قد زنى فأمر به في الرابعة فأخرج إلى الحرة فرجم بالحجارة فلما وجد مس الحجارة فر يشتد حتى مر برجل معه لحي جمل فضربه به وضربه الناس حتى مات. فذكروا ذلك لرسول الله صلى الله عليه وسلم أنه فرحين وجد مس الحجارة ومس الموت فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «هلا تركتموه» . رواه الترمذي وابن ماجه وفي رواية: «هلا تركتموه لعله أن يتوب الله عليه»

ব্যাখ্যা: ইবনুল মালিক বলেনঃ যে লোক যিনার স্বীকারোক্তি করেছে যদি সে পরে এই কথা বলে যে, আমি পূর্বে মিথ্যা বলেছি বা আমি যিনা করিনি তখন তার ওপর থেকে ‘‘হাদ্দ’’ রহিত হয়ে যাবে। আর যদি শাস্তি দেয়ার সময় অস্বীকার করে তখন তার অবশিষ্ট শাস্তি দেয়া যাবে না। কিছু কিছু সংখ্যক ‘উলামাহ্ বলেন, ‘‘হাদ্দ’’ রহিত হবে না, অন্যথায় মা‘ইয সম্বন্ধে এ কথা বলতে হবে যে, তার পলায়নের পরেও তাকে হত্যা করাটা (قتل خطاء) তথা ভুলবশত হয়েছে যাতে হত্যাকারীদের আত্মীয়দের ওপর দিয়াত (রক্তমূল্য) ওয়াজিব হয়। এর উত্তর এই যে, এ ক্ষেত্রে সে তার স্বীকারোক্তি থেকে ফিরে গেছে বলে প্রকাশ পায়নি বরং পাথরের আঘাত অসহ্য হওয়ায় পলায়ন করেছে এবং হাদ্দ প্রয়োগের সময় পলায়ন করলে অবশিষ্ট হাদ্দ রহিত হয় না।

«هَلَّا تَرَكْتُمُوهُ» তোমরা তাকে ছেড়ে দিলে না কেন? মূলত এর রূপক অর্থ হলো: যে তার বিষয়টি লক্ষ্য করতো যে, সে পাথরের আঘাতে পলায়ন করছে না তার যিনার স্বীকারোক্তি থেকে ফিরে আসছে।

শারহুস্ সুন্নাহয় এসেছে: হাদীসে দলীল সাব্যস্ত হয় যে, যে ব্যক্তি যিনা করার স্বীকৃতি দেয় নিজের ওপর, অতঃপর হাদ্দ প্রয়োগের সময় স্বীকারোক্তি থেকে ফিরে আসে আর সে বলে আমি মিথ্যা বলেছি, আমি যিনা করিনি, তাহলে অবশিষ্ট হাদ্দ রহিত হয়ে যাবে। (তুহফাতুল আহওয়াযী ৪র্থ খন্ড, হাঃ ১৪২৮)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৭: দণ্ডবিধি (كتاب الحدود) 17. Prescribed Punishments
৩৫৬৬

পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ

৩৫৬৬-[১২] ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মা’ইয ইবনু মালিক (রাঃ)-কে বললেন, তোমার ব্যাপারে আমার কাছে যে সংবাদ এসেছে, তা কি সত্য, তুমি কি অমুকের সাথে যিনা করেছ? তিনি বললেন, হ্যাঁ, আর তিনি তা চারবার স্বীকারোক্তি প্রদান করলেন। এরপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাকে ’রজমের’ নির্দেশ দিলেন। অতঃপর তাকে রজম করা হয়। (মুসলিম)[1]

اَلْفَصْلُ الثَّانِىْ

وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ لِمَاعِزِ بْنِ مَالِكٍ: «أَحَقٌّ مَا بَلَغَنِي عَنْكَ؟» قَالَ: وَمَا بَلَغَكَ عَنِّي؟ قَالَ: «بَلَغَنِي أَنَّكَ قَدْ وَقَعْتَ عَلَى جَارِيَةِ آلِ فُلَانٍ» قَالَ: نَعَمْ فَشَهِدَ أَرْبَعَ شَهَادَاتٍ فَأمر بهِ فرجم. رَوَاهُ مُسلم

وعن ابن عباس أن النبي صلى الله عليه وسلم قال لماعز بن مالك: «أحق ما بلغني عنك؟» قال: وما بلغك عني؟ قال: «بلغني أنك قد وقعت على جارية آل فلان» قال: نعم فشهد أربع شهادات فأمر به فرجم. رواه مسلم

ব্যাখ্যা: ত্বীবী বলেনঃ এ হাদীস থেকে বুঝা যাচ্ছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পূর্ব থেকে মা‘ইয-এর ঘটনা সম্পর্কে অবহিত ছিলেন এবং পরে তাকে জিজ্ঞেস করলে তিনি অকপটে তা স্বীকার করেছিল। কিন্তু পূর্বে বুরায়দাহ্ থেকে বর্ণিত হাদীসে পরিষ্কারভাবে বুঝা গেছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিছুই অবগত ছিলেন না। সুতরাং এ বিরোধের উত্তর হলো এ বর্ণনাকারীগণ কখনো ঘটনা আদ্যোপান্ত বর্ণনা করেন আবার কখনো শুরু ও শেষাংশটি বর্ণনা করে ক্ষ্যান্ত হন। এ পর্যায়ে ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)-এর ঘটনা কেবল শুরু ও শেষ বর্ণনা করে ক্ষ্যান্ত হয়েছেন। বিস্তারিত ঘটনার অবতারণা করেননি। সুতরাং উভয় হাদীসের মধ্যে কোনো বিরোধ নেই। (মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৭: দণ্ডবিধি (كتاب الحدود) 17. Prescribed Punishments
৩৫৬৭

পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ

৩৫৬৭-[১৩] ইয়াযীদ ইবনু নু’আয়ম (রহঃ) তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, মা’ইয নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে যিনায় লিপ্ত হওয়ার কথা চারবার স্বীকারোক্তি প্রদান করলেন। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাকে ’রজমের’ নির্দেশ দিলেন। অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) হায্যাল-কে বললেন, তুমি যদি মা’ইয (রাঃ)-কে তোমার কাপড় দ্বারা আড়াল করতে (অপরাধ প্রকাশ না করতে), তবে তা তোমার জন্য উত্তম হতো। ইবনুল মুনকাদির বলেন, হাযযাল-ই মা’ইয (রাঃ)-কে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে এতদসম্পর্কে জানাতে বলেছিলেন। (আবূ দাঊদ)[1]

اَلْفَصْلُ الثَّانِىْ

وَعَنْ يَزِيدَ بْنِ نُعَيْمٍ عَنْ أَبِيهِ أَنَّ مَاعِزًا أَتَى النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَأَقَرَّ عِنْدَهُ أَرْبَعَ مَرَّاتٍ فَأَمَرَ بِرَجْمِهِ وَقَالَ لِهَزَّالٍ: «لَوْ سَتَرْتَهُ بِثَوْبِكَ كَانَ خَيْرًا لَكَ» قَالَ ابْنُ الْمُنْكَدِرِ: إِنَّ هَزَّالًا أَمَرَ مَاعِزًا أَنْ يَأْتِيَ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فيخبره. رَوَاهُ أَبُو دَاوُد

وعن يزيد بن نعيم عن أبيه أن ماعزا أتى النبي صلى الله عليه وسلم فأقر عنده أربع مرات فأمر برجمه وقال لهزال: «لو سترته بثوبك كان خيرا لك» قال ابن المنكدر: إن هزالا أمر ماعزا أن يأتي النبي صلى الله عليه وسلم فيخبره. رواه أبو داود

ব্যাখ্যা: (إِنَّ هَزَّالًا أَمَرَ مَاعِزًا أَنْ يَّأْتِىَ النَّبِىَّ ﷺ فَيُخْبِرَه) এই হায্যাল মা‘ইয -কে আদেশ করেছিল নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খিদমাতে এসে উক্ত ঘটনাটি বর্ণনা করার জন্য। আর এটা এজন্য যে, মা‘ইয যে মেয়েটির সাথে যিনা করেছিল তার নাম ফাত্বিমাহ্ আর সে মুক্ত দাস ছিল। অতঃপর হাযযাল-এর বিষয়টি জানলে মা‘ইয-কে পরামর্শ দিলো রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট আসার। মূলত সে চেয়েছে তার অপমান ও লাঞ্ছনা কিসাস স্বরূপ তার আযাদকৃত দাসীর সাথে এ আচরণের জন্য। কারো মতে এবং এটা অধিক গ্রহণযোগ্য এটা তার জন্য উপদেশ ছিল হায্যাল-এর পক্ষ থেকে যা তৃতীয় অনুচ্ছেদে আসবে দ্বিতীয় হাদীসে।

ইবনু হুমাম বলেনঃ বুখারী বর্ণনা করেছেন আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে মারফূ‘ সূত্রে।

مَنْ نَفَّسَ عَنْ مُسْلِمٍ كُرْبَةً مِنْ كُرَبِ الدُّنْيَا نَفَّسَ اللّٰهُ عَنْهُ كُرْبَةً مِنْ كُرَبِ الْاٰخِرَةِ، وَمَنْ سَتَرَ مُسْلِمًا سَتَرَهُ اللّٰهُ فِي الدُّنْيَا وَالْاٰخِرَةِ وَاللّٰهُ فِي عَوْنِ الْعَبْدِ مَا دَامَ الْعَبْدُ فِي عَوْنِ أَخِيهِ

যে ব্যক্তি কোনো মুসলিম ভাই-এর দুনিয়ার কোনো দুঃখ কষ্ট লাঘবে করে, আল্লাহ তা‘আলা তার থেকে আখিরাতে দুঃখ কষ্ট লাঘব করবেন। আর যে ব্যক্তি কোনো মুসলিম ভাই-এর দোষ-ত্রুটি গোপন করবে তার দুনিয়া ও আখিরাতে আল্লাহ তার দোষ-ত্রুটি গোপন রাখবেন। আল্লাহ সর্বদাই ঐ বান্দার সহযোগিতায় থাকেন যে বান্দা অপর ভাই এর সহযোগিতায় থাকেন।

আর আবূ দাঊদ ও নাসায়ীতে ‘উকবা বিন ‘আমির (রাঃ) থেকে বর্ণিত:

أَنَّ النَّبِيُّ ﷺ مَنْ رَأَى أَيَّ عَوْرَةٍ فَسَتَرَهَا كَانَ كَمَا أَحْيَا مَوْءُودَةً

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কোনো গোপন দোষ ত্রুটি দেখলো আর তা গোপন করলো, সে যেন প্রোথিত সন্তানকে জীবন দান করলো।

তবে গোপন করার বিষয়টি তখন প্রযোজ্য হবে যখন যিনাটা গোপন হবে আর সে এ ব্যাপারে সীমালঙ্ঘনকারিণী যদি প্রকাশ্যভাবে করে এবং প্রচারণা চালায় তাহলে সমাজ থেকে পাপাচারের কর্মকা- উপড়ে ফেলার জন্য হাদ্দ বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন, এক্ষেত্রে গোপন না করে সাক্ষ্য প্রদান করাই ওয়াজিব। (মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৭: দণ্ডবিধি (كتاب الحدود) 17. Prescribed Punishments
৩৫৬৮

পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ

৩৫৬৮-[১৪] ’আমর ইবনু শু’আয়ব তাঁর পিতার মাধ্যমে তাঁর দাদা ’আব্দুল্লাহ ইবনু ’আমর ইবনুল ’আস (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের মাঝে সংঘটিত দণ্ডযোগ্য বিষয়সমূহ পরস্পরের মধ্যে ক্ষমা করে দাও এবং মিটিয়ে ফেল। কেননা যখন আমার নিকট দণ্ডের বিষয়টি পৌঁছবে তখন তা বাস্তবায়ন করা অবধারিত হয়ে যাবে। (আবূ দাঊদ ও নাসায়ী)[1]

اَلْفَصْلُ الثَّانِىْ

وَعَنْ عَمْرِو بْنِ شُعَيْبٍ عَنْ أَبِيهِ عَنْ جَدِّهِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو بْنِ الْعَاصِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «تَعَافَوُا الْحُدُودَ فِيمَا بَيْنَكُمْ فَمَا بَلَغَنِي مِنْ حَدٍّ فَقَدْ وَجَبَ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد وَالنَّسَائِيّ

وعن عمرو بن شعيب عن أبيه عن جده عبد الله بن عمرو بن العاص رضي الله عنهما أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: «تعافوا الحدود فيما بينكم فما بلغني من حد فقد وجب» . رواه أبو داود والنسائي

ব্যাখ্যা: হাদীসে সাব্যস্ত হয় যে, শাসকের জন্য হাদ্দ যা মাওকূফ করা বৈধ নয় যখন তার কাছে উপস্থাপন করা হয়। আর মুনীবের জন্য হাদ্দ প্রয়োগ করা তার দাসের ওপর বরং ক্ষমা করে দিবে অথবা বিষয়টি শাসকের নিকট উপস্থাপন করবে। (‘আওনুল মা‘বূদ ৭ম খন্ড, হাঃ ৪৩৬৮)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৭: দণ্ডবিধি (كتاب الحدود) 17. Prescribed Punishments
৩৫৬৯

পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ

৩৫৬৯-[১৯] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সম্মানিত লোকেদের দণ্ডযোগ্য অপরাধ ব্যতীত সাধারণ ভুল-ত্রুটি ক্ষমা করে দাও। (আবূ দাঊদ)[1]

اَلْفَصْلُ الثَّانِىْ

وَعَنْ عَائِشَةَ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «أقيلوا ذَوي الهيآت عثراتهم إِلَّا الْحُدُود» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد

وعن عائشة أن النبي صلى الله عليه وسلم قال: «أقيلوا ذوي الهيآت عثراتهم إلا الحدود» . رواه أبو داود

ব্যাখ্যা: (أَقِيْلُوْا) ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখো, (ذَوِى الْهَيْئَاتِ) সম্মানিত ব্যক্তি ও প্রশংসিত স্বভাবের অধিকারী ইবনু মালিক বলেনঃ যে সকল মানুষ সুন্দর চরিত্রের উপর প্রতিষ্ঠিত।

(إِلَّا الْحُدُوْدَ) ‘যা হাদ্দকে ওয়াজিব করে’ সম্বন্ধে ব্যক্তিরা হলো শাসক ও অন্যান্যরা যাদের ওপর শাস্তি ও বিচার প্রয়োগ করা অপরিহার্য।

(عَثَرَاتِ) দ্বারা উদ্দেশ্য পদস্খলনের কারণে আল্লাহর অধিকারসমূহের কোনো অধিকার নষ্ট করার মাধ্যমে বা মানুষের কোনো অধিকার নষ্টের মাধ্যমে। আবার কারো মতে সগীরাহ্ গুনাহ বা ছোট গুনাহ উদ্দেশ্য। (‘আওনুল মা‘বূদ ৭ম খন্ড, হাঃ ৪৩৬৮)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৭: দণ্ডবিধি (كتاب الحدود) 17. Prescribed Punishments
৩৫৭০

পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ

৩৫৭০-[১৬] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মুসলিমদের যথাসম্ভব দণ্ডযোগ্য শাস্তি থেকে যদি সামান্যতম অব্যাহতির উপায় থাকে, তাহলে তাকে ছেড়ে দাও। কেননা শাসকের ক্ষমা করার ক্ষেত্রে ভুল করা শাস্তি দেয়ার ক্ষেত্রে ভুল করার চেয়ে উত্তম। (তিরমিযী)[1]

اَلْفَصْلُ الثَّانِىْ

وَعَنْهَا قَالَتْ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم: «ادرؤا الْحُدُودَ عَنِ الْمُسْلِمِينَ مَا اسْتَطَعْتُمْ فَإِنْ كَانَ لَهُ مَخْرَجٌ فَخَلُّوا سَبِيلَهُ فَإِنَّ الْإِمَامَ أَنْ يُخْطِئَ فِي الْعَفْوِ خَيْرٌ مِنْ أَنْ يُخْطِئَ فِي الْعُقُوبَةِ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَقَالَ: قَدْ رُوِيَ عَنْهَا وَلم يرفع وَهُوَ أصح

وعنها قالت: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «ادرؤا الحدود عن المسلمين ما استطعتم فإن كان له مخرج فخلوا سبيله فإن الإمام أن يخطئ في العفو خير من أن يخطئ في العقوبة» . رواه الترمذي وقال: قد روي عنها ولم يرفع وهو أصح

ব্যাখ্যা: মুযহির বলেনঃ তোমাদের সাধ্যানুযায়ী হাদ্দ মাওকূফ করো আমার (মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর) নিকট পৌঁছানোর পূর্বে। কেননা শাসকের ক্ষমা প্রদর্শনের ব্যাপারে ভুল করা শাস্তি দেয়ার ব্যাপারে ভুল করা থেকে উত্তম অধিক আর যখন শাসকের নিকট পৌঁছবে হাদ্দ বাস্তবায়ন তার ওপর ওয়াজিব।

ত্বীবী বলেনঃ হাদীসের ভাবার্থ মূলত تَعَافَوْا الْحُدُودَ فِيمَا بَيْنَكُمْ فَمَا بَلَغَنِي مِنْ حَدٍّ فَقَدْ وَجَبَ

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমার কাছে পৌঁছানোর পূর্বে তোমাদের সংঘটিত হাদ্দযোগ্য অপরাধ নিজেদের মধ্যে মীমাংসা করে ফেলো কেননা সে হাদ্দের ব্যাপার আমার নিকট পৌঁছবে তা বাস্তবায়ন করা ওয়াজিব হবে। এ হাদীসের ব্যাখ্যা স্বরূপ।

আর হাদীসে সম্বোধন মূলত সাধারণ মুসলিমের ওপর। আর সম্ভাবনা রয়েছে: আবূ হুরায়রাহ্-এর হাদীস। কোনো এক ব্যক্তির সাথে সংশ্লিষ্ট আর বুরায়দাহ্-এর হাদীস মা‘ইয-এর ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্ট। তাহলে সম্বোধন হবে শাসকের প্রতি যেমন রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বক্তব্য লোকটির জন্য أَبِكَ جُنُونٌ তুমি কি পাগল? অতঃপর বলেছেন, তুমি কি বিবাহ করেছো? আর মা‘ইয-এর ব্যাপারে বলেছেনঃ أَبِه جُنُونٌ সে কি পাগল? আরো বলেছেনঃ أَشَرِب সে কি মদ পান করেছে? কেননা এসব সতর্ক করে দেয়া শাসককে তিনি সন্দেহের ক্ষেত্রে হাদ্দকে যেন মাওকূফ করে।

সঠিক হলো: সম্বোধন হলো, শাসকের উদ্দেশে তাদের উচিত হবে আসামীকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেয়ার মাধ্যমে হাদ্দকে মাওকূফ করবে, যেমনটি মা‘ইয ও অন্যান্য ব্যক্তির ক্ষেত্রে প্রায় বার স্মরণ করে দিয়েছেন আত্মপক্ষ সমর্থনে তথা তা পেশ করার জন্য। (তুহফাতুল আহওয়াযী ৪র্থ খন্ড, হাঃ ১৪২৪)


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৭: দণ্ডবিধি (كتاب الحدود) 17. Prescribed Punishments
৩৫৭১

পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ

৩৫৭১-[১৭] ওয়ায়িল ইবনু হুজর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যুগে এক মহিলার সাথে জোরপূর্বক যিনা করা হয়েছিল, যিনার অভিযোগে জনৈকা নারীর ওপর দণ্ড ক্ষমা করে; কিন্তু পুরুষের ওপর দণ্ড প্রয়োগ করেছিলেন। তবে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নারীটির জন্য মোহর ধার্য করেছিলেন কিনা বর্ণনাকারী তা উল্লেখ করেননি। (তিরমিযী)[1]

اَلْفَصْلُ الثَّانِىْ

وَعَنْ وَائِلِ بْنِ حُجْرٍ قَالَ: اسْتُكْرِهَتِ امْرَأَةٌ عَلَى عَهْدِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَدَرَأَ عَنْهَا الْحَدَّ وَأَقَامَهُ عَلَى الَّذِي أَصَابَهَا وَلَمْ يُذْكَرْ أَنَّهُ جَعَلَ لَهَا مَهْرًا. رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ

وعن وائل بن حجر قال: استكرهت امرأة على عهد النبي صلى الله عليه وسلم فدرأ عنها الحد وأقامه على الذي أصابها ولم يذكر أنه جعل لها مهرا. رواه الترمذي

ব্যাখ্যা: মুযহির এবং ইবনু মালিক বলেনঃ এ হাদীস মোহর ওয়াজিব না এমনটি প্রমাণিত হয় না, কেননা অন্য হাদীস দ্বারা মোহর ওয়াজিব এটি প্রমাণিত হয়। (তুহফাতুল আহওয়াযী ৪র্থ খন্ড, হাঃ ১৪৫৩)


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৭: দণ্ডবিধি (كتاب الحدود) 17. Prescribed Punishments
৩৫৭২

পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ

৩৫৭২-[১৮] উক্ত রাবী [ওয়ায়িল ইবনু হুজর (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যুগে জনৈকা মহিলা সালাতের উদ্দেশে বের হলো। এমন সময় এক ব্যক্তি তাকে ধরে নিয়ে জোরপূর্বক যিনা করলে মহিলাটির চিৎকারে পুরুষটি পালিয়ে যায়। তখন মুহাজিরদের একটি দল সেখান দিয়ে যাচ্ছিল। তখন মহিলাটি বলল, ঐ লোকটি আমার সাথে এরূপ এরূপ করেছে। তারা তখন ঐ লোকটিকে গ্রেফতার করে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট উপস্থিত করল। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ঐ মহিলাটিকে বললেন, চলে যাও আল্লাহ তা’আলা তোমাকে ক্ষমা করে দিয়েছেন। আর যে লোকটি মহিলাটির সাথে যিনা করেছিল। যিনাকারীর ব্যাপারে হুকুম করলেন, একে পাথর নিক্ষেপে হত্যা কর। অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, লোকটি এমনভাবে তওবা্ করেছে যদি মদীনার সকল লোক এরূপ তওবা্ করত, তাহলে তাদের সকলের পক্ষ থেকে তা কবুল করা হতো। (তিরমিযী ও আবূ দাঊদ)[1]

اَلْفَصْلُ الثَّانِىْ

وَعَنْهُ: أَنَّ امْرَأَةً خَرَجَتْ عَلَى عَهْدِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ تُرِيدُ الصَّلَاةَ فَتَلَقَّاهَا رَجُلٌ فَتَجَلَّلَهَا فَقَضَى حَاجَتَهُ مِنْهَا فَصَاحَتْ وَانْطَلَقَ وَمَرَّتْ عِصَابَةٌ مِنَ الْمُهَاجِرِينَ فَقَالَتْ: إِنَّ ذَلِكَ الرَّجُلَ فَعَلَ بِي كَذَا وَكَذَا فَأَخَذُوا الرَّجُلَ فَأَتَوْا بِهِ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ لَهَا: «اذْهَبِي فَقَدْ غَفَرَ اللَّهُ لَكِ» وَقَالَ لِلرَّجُلِ الَّذِي وَقَعَ عَلَيْهَا: «ارْجُمُوهُ» وَقَالَ: «لَقَدْ تَابَ تَوْبَةً لَوْ تَابَهَا أَهْلُ الْمَدِينَةِ لَقُبِلَ مِنْهُمْ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَأَبُو دَاوُدَ

وعنه: أن امرأة خرجت على عهد النبي صلى الله عليه وسلم تريد الصلاة فتلقاها رجل فتجللها فقضى حاجته منها فصاحت وانطلق ومرت عصابة من المهاجرين فقالت: إن ذلك الرجل فعل بي كذا وكذا فأخذوا الرجل فأتوا به رسول الله صلى الله عليه وسلم فقال لها: «اذهبي فقد غفر الله لك» وقال للرجل الذي وقع عليها: «ارجموه» وقال: «لقد تاب توبة لو تابها أهل المدينة لقبل منهم» . رواه الترمذي وأبو داود

ব্যাখ্যা: (فَقَضٰى حَاجَتَه مِنْهَا) ‘‘তার প্রয়োজন পূরণ করেছে’’ শব্দটি রূপক অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। অর্থাৎ তাকে ডেকে নিয়েছে এবং তার সাথে যিনা করেছে।

(اذْهَبِىْ فَقَدْ غَفَرَ اللّٰهُ لَكِ) তুমি চলে যাও আল্লাহ তোমাকে ক্ষমা করবেন, কেননা তোমাকে জোর করে তথা তোমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে তোমার সাথে এ আচরণ করা হয়েছে।

(لِلرَّجُلِ الَّذِىْ وَقَعَ عَلَيْهَا : ارْجُمُوْهُ) আর লোকটি যিনার কথা স্বীকার করেছে এবং তাকে রজম করার আদেশ দিয়েছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, যেহেতু সে বিবাহিত।

(لَقُبِلَ مِنْهُمْ) লোকটির তাওবার পরিমাণ এতো বেশি তা যদি মদীনাবাসীকে বন্টন করে দেয়া হতো তাহলে তা যথেষ্ট হতো। (মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৭: দণ্ডবিধি (كتاب الحدود) 17. Prescribed Punishments
৩৫৭৩

পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ

৩৫৭৩-[১৯] জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, জনৈক ব্যক্তি এক নারীর সাথে যিনা করেছিল। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে চাবুক মারার হুকুম করলেন। কিন্তু চাবুক মারার পর জানা গেল সে বিবাহিত, তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাকে পাথর নিক্ষেপে হত্যার নির্দেশ দিলেন। অতঃপর তা কার্যকর করা হলো। (আবূ দাঊদ)[1]

اَلْفَصْلُ الثَّانِىْ

وَعَنْ جَابِرٍ: أَنَّ رَجُلًا زَنَى بِامْرَأَةٍ فَأَمَرَ بِهِ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَجُلِدَ الْحَدَّ ثُمَّ أُخْبِرَ أَنَّهُ مُحْصَنٌ فَأَمَرَ بِهِ فرجم. رَوَاهُ أَبُو دَاوُد

وعن جابر: أن رجلا زنى بامرأة فأمر به النبي صلى الله عليه وسلم فجلد الحد ثم أخبر أنه محصن فأمر به فرجم. رواه أبو داود

ব্যাখ্যা: হাদীসে সাব্যস্ত হয় চাবুক মারা এবং পাথর নিক্ষেপ করা উভয়ই হাদ্দ বা শাস্তি হলেও একটি অপরটির স্থলাভিষিক্ত হবে না। সুতরাং অবগতির পর আসল ও প্রকৃত শাস্তি প্রয়োগ করা ওয়াজিব হয়ে যায় আর পাথর নিক্ষেপ করলে চাবুকের শাস্তির অবকাশ থাকে না এটাই স্থলাভিষিক্ত, এমনটি বলেছেন আশরাফ ও ইবনু মালিক। (মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৭: দণ্ডবিধি (كتاب الحدود) 17. Prescribed Punishments
৩৫৭৪

পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ

৩৫৭৪-[২০] সা’ঈদ ইবনু সা’দ ইবনু ’উবাদাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন সা’দ ইবনু ’উবাদাহ্(রাঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এমন ব্যক্তিকে ধরে আনলেন, যে ছিল বিকলাঙ্গ ও ব্যাধিগ্রস্ত। তাকে এলাকার এক বাঁদীর সাথে যিনাগ্রস্ত অবস্থায় দেখা যায়। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এমন একটি খেজুরের বড় ছড়া নিয়ে আসো যার মধ্যে ছোট ছোট একশত শাখা রয়েছে এবং তা দ্বারা লোকটিকে একবার আঘাত কর। (শারহুস্ সুন্নাহ্; ইবনু মাজাহ্-তে অনুরূপ একটি বর্ণনা আছে)[1]

اَلْفَصْلُ الثَّانِىْ

وَعَنْ سَعِيدِ بْنِ سَعْدِ بْنِ عُبَادَةَ أَنَّ سَعْدَ بْنَ عُبَادَةَ أَتَى النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِرَجُلٍ كَانَ فِي الْحَيِّ مُخْدَجٍ سقيم فَوجدَ على أمة من إمَائِهِمْ بخبث بِهَا فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «خُذُوا لَهُ عِثْكَالًا فِيهِ مِائَةُ شِمْرَاخٍ فَاضْرِبُوهُ ضَرْبَة» . رَوَاهُ فِي شَرْحِ السُّنَّةِ وَفِي رِوَايَةِ ابْنِ مَاجَه نَحوه

وعن سعيد بن سعد بن عبادة أن سعد بن عبادة أتى النبي صلى الله عليه وسلم برجل كان في الحي مخدج سقيم فوجد على أمة من إمائهم بخبث بها فقال النبي صلى الله عليه وسلم: «خذوا له عثكالا فيه مائة شمراخ فاضربوه ضربة» . رواه في شرح السنة وفي رواية ابن ماجه نحوه

ব্যাখ্যা: (سَقِيْمٍ) এমন অসুস্থ যা সুস্থ হওয়ার আশা করা যায় না।

ইবনু মালিক বলেনঃ এ হাদীসটি ‘আমলযোগ্য না কেননা তা সরাসরি কুরআনের বিরোধী, কেননা আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ وَلَا تَأْخُذْكُمْ بِهِمَا رَأْفَةٌ فِي دِينِ اللّٰهِ

অর্থাৎ- ‘‘আল্লাহর বিধান কার্যকরের কারণে তাদের প্রতি যেন তোমাদের মনে দয়ার উদ্রেক না হয়’’- (সূরা আন্ নূর ২৪ : ২)। আর হাদীসের ভাষ্যমতে প্রহার করা দয়ার উদ্রেক হওয়া তবে এটা ভুল ব্যাখ্যা, তাফসীরে হাদীস ও ফিক্হী দৃষ্টিভঙ্গিতে। তাফসীরের দৃষ্টিতে অর্থ হলো : দয়ার উদ্রেক না হয় তবে আনুগত্য ও হাদ্দ বাস্তবায়নে। অতঃপর তোমরা সে হাদ্দকে বাতিল করবে বা ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবে। এজন্য রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ لَوْ سَرَقَتْ فَاطِمَةُ بِنْتُ مُحَمَّدٍ لَقَطَعْتُ يَدَهَا মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মেয়ে ফাত্বিমাও চুরি করে তাহলে আমি তার হাত অবশ্যই কেটে দিবো। অনুরূপ ভাবার্থ বায়যাভীও বলেছেন।

কাযী ‘ইয়ায বলেনঃ হাদীসে দলীল হিসেবে সাব্যস্ত হয় যে, শাসক শাস্তি প্রয়োগকৃত ব্যক্তির প্রতি খেয়াল রাখবে এবং তার জীবন সংরক্ষণ করবে। আর যদিও রোগী ব্যক্তির ওপর হাদ্দ প্রয়োগ করে হদ প্রয়োগ দেরী করবে না তবে যদি গর্ভবতী হয় তাহলে গর্ভপাত পর্যন্ত অপেক্ষা করবে। যা ‘আলী (রাঃ)-এর হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। (মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৭: দণ্ডবিধি (كتاب الحدود) 17. Prescribed Punishments
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ২০ পর্যন্ত, সর্বমোট ১০৬ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে পাতা নাম্বারঃ 1 2 3 4 5 6 পরের পাতা »