১০৯৭

পরিচ্ছেদঃ তন্দ্রার কারণে ওযূ অবধারিত হয় না বরং যে ঘুমের কারণে মানুষের জ্ঞান লোপ পায়, তাতে ওযূ অবধারিত হয়

১০৯৭. যির্র রহিমাহুল্লাহ বলেন, “একবার আমি সাফওয়ান বিন আস্সাল আল মুরাদী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর কাছে আসি, তিনি আমাকে বলেন, “আপনার কী প্রয়োজন?” আমি বললাম, “ইলম অন্বেষণে এসেছি।” তিনি বলেন, “নিশ্চয়ই ফেরেস্তাগণ তাদের পাখা বিছিয়ে দেন, ইলম অন্বেষনকারী যা অন্বেষন করে, তার প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে।” আমি বললাম, “পেশাব ও পায়খানা করার পর মোজার উপর মাসেহ করার ব্যাপারে আমার মনে কিছুটা দ্বিধার সৃষ্টি করে। আপনি তো রাসূল  সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর একজন সাহাবী, এজন্য আমি আপনার কাছে আসলাম এই ব্যাপারে জিজ্ঞেস করার জন্য। আপনি কি এই ব্যাপারে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছ থেকে কিছু শুনেছেন?” তিনি বলেন, “হ্যাঁ, যখন আমরা সফরে অথবা (রাবীর সন্দেহ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন) আমরা মুসাফির থাকতাম, তখন তিনি আমাদের আদেশ করতেন যেন আমরা আমাদের মোজাগুলো তিনদিন না খুলে ফেলি। তবে যদি আমরা জুনুবী তথা নাপাক হয়ে যাই (তাহলে খুলতে হবে) কিন্তু পেশাব, পায়খানা ও ঘুমের কারণে খুলতে হবে না।”[1]

আবূ হাতিম ইবনু হিব্বান রহিমাহুল্লাহ বলেন, “ঘুমের দুটি অবস্থা রয়েছে; শুরুর অব্স্থা এবং চূড়ান্ত অবস্থা। শুরুর অবস্থা হলো তন্দ্রা, এটা ঘুমের প্রাথমিক অবস্থা, এর বিবরণ হলো এই অবস্থায় কথা বলা হলে সে শুনতে পায়, বায়ু ত্যাগ করলে, সে জানতে পারে, তবে সে ক্রমান্বয়ে ঢলে পড়ে। আর চূড়ান্ত অবস্থা হলো জ্ঞান লোপ পাওয়া। এর বিবরণ হলো মানুষ এই অবস্থায় বায়ু ত্যাগ করলে জানতে পারে না, কথা বলা হলে সে বুঝতে পায় না।

কাজেই তন্দ্রা কম হোক কিংবা বেশি হোক, তন্দ্রাচ্ছন্ন ব্যক্তি যে অবস্থাতেই যাক না কেন তন্দ্রা ওযূ অবধারিত করে না। পক্ষান্তরে ঘুম ওযূ অবধারিত করে দেয়, ঘুমন্ত ব্যক্তি যে অবস্থাতেই থাকুক না কেন। বস্তুত আরবিতে ঘুম শব্দটি তন্দ্রা অর্থে এবং তন্দ্রা অর্থে ব্যবহৃত হয়। কিন্তু উভয়ের অর্থ ভিন্ন। মহান আল্লাহ উভয় শব্দের মাঝে পার্থক্য করেছেন। তিনি বলেছেন, لَا تَأْخُذُهُ سِنَةٌ وَلَا نَوْمٌ (তাঁকে তন্দ্রা ও ঘুম আচ্ছন্ন করে না - সূরা আল বাকারাহ: ২৫৫) যখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাফওয়ান রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর হাদীসে ওযূ ওয়াজিব হওয়ার ক্ষেত্রে ঘুম, পেশাব ও পায়খানাকে একত্রিত করেছেন আর পেশাব ও পায়খানার মাঝে কোন পার্থক্য নেই এবং এই দুটো অল্প পরিমাণে হোক, বেশি পরিমাণে হোক ওযূ অবধারিত হয়ে যাবে চাই পেশাবকারী ব্যক্তি দাঁড়ানো, বসা, রুকু বা সিজদারত অবস্থায় থাকুক।

অনুরুপভাবে যে ব্যক্তি জ্ঞান লোপ পায় এমন ঘুম ঘুমায়, তবে তার উপর ওযূ অবধারিত হয়ে যাবে, চাই তার অবস্থা বিভিন্ন রকম হয় অথবা এক রকম হয়। কেননা এখানে ওযূ ওয়াজিব হওয়ার কারণ হলো জ্ঞান লোপ পাওয়া; অবস্থার বিভিন্নতা নয়, যেমনভাবে পেশাব ও পায়খানার ক্ষেত্রে ওযূ ওয়াজিব হওয়ার কারণ হলো এই দুটি পাওয়া যাওয়া; পেশাবকারী ও পায়খানাকারীর অবস্থার বিভিন্নতা নয়"।

ذِكْرُ الْخَبَرِ الدَّالِّ عَلَى أَنَّ الرُّقَادَ الَّذِي هُوَ النُّعَاسُ لَا يُوجِبُ عَلَى مَنْ وُجِدَ فِيهِ وُضُوءًا وَأَنَّ النَّوْمَ الَّذِي هُوَ زَوَالُ الْعَقْلِ يُوجِبُ عَلَى مَنْ وُجِدَ فِيهِ وُضُوءًا

1097 - أَخْبَرَنَا أَبُو يَعْلَى حَدَّثَنَا هَارُونُ بْنُ مَعْرُوفٍ حَدَّثَنَا سُفْيَانُ عَنْ عَاصِمٍ عَنْ زِرٍّ قَالَ: أَتَيْتُ صَفْوَانَ بْنَ عَسَّالٍ الْمُرَادِيَّ فَقَالَ لِي: مَا حَاجَتُكَ؟ قُلْتُ لَهُ: ابْتِغَاءُ الْعِلْمِ قَالَ: فَإِنَّ الْمَلَائِكَةَ تَضَعُ أَجْنِحَتَهَا لِطَالِبِ الْعِلْمِ رِضًا بِمَا يَطْلُبُ قُلْتُ: حَكَّ فِي نَفْسِي الْمَسْحُ على الخفين بعد الغائط والبول وكنت امرءاً مِنْ أَصْحَابِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَأَتَيْتُكَ أَسْأَلُكَ: هَلْ سمعتَ مِنْهُ فِي ذَلِكَ شَيْئًا؟ قَالَ: نَعَمْ كَانَ يَأْمُرُنَا إِذَا كُنَّا فِي سَفَرٍ - أَوْ مُسَافِرِينَ - أَنْ لَا نَنْزِعَ خفافنا ثلاثة أيام ولياليهن ـ إلا من جنابة ـ لكن من غائط وبول ونوم.
الراوي : زِرّ | المحدث : العلامة ناصر الدين الألباني | المصدر : التعليقات الحسان على صحيح ابن حبان
الصفحة أو الرقم: 1097 | خلاصة حكم المحدث:. حسن صحيح.
قَالَ أَبُو حَاتِمٍ: الرُّقَادُ لَهُ بِدَايَةٌ وَنِهَايَةٌ فَبِدَايَتُهُ النُّعَاسُ الَّذِي هُوَ أَوَائِلُ النَّوْمِ وَصِفَتُهُ أَنَّ الْمَرْءَ إِذَا كُلِّم فِيهِ يَسْمَعُ وَإِنْ أَحْدَثَ عَلِمَ إِلَّا أَنَّهُ يَتَمَايَلُ تَمَايُلًا وَنِهَايَتُهُ زَوَالُ الْعَقْلِ وَصِفَتُهُ أَنَّ الْمَرْءَ إِذَا أَحْدَثَ فِي تِلْكَ الْحَالَةِ لَمْ يَعْلَمْ وَإِنْ تَكَلَّمَ لَمْ يَفْهَمْ فَالنُّعَاسُ لَا يُوجِبُ الْوُضُوءَ عَلَى أَحَدٍ قَلِيلُهُ وَكَثِيرُهُ عَلَى أَيِّ حَالَةٍ كَانَ النَّاعِسُ وَالنَّوْمُ يُوجِبُ الْوُضُوءَ عَلَى مَنْ وُجِدَ عَلَى أَيِّ حَالَةٍ كَانَ النَّائِمُ عَلَى أَنَّ اسْمَ النَّوْمِ قَدْ يَقَعُ عَلَى النُّعَاسِ وَالنُّعَاسُ عَلَى النَّوْمِ وَمَعْنَاهُمَا مُخْتَلِفَانِ وَاللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ فَرَّقَ بَيْنَهُمَا بِقَوْلِهِ {لَا تَأْخُذُهُ سِنَةٌ وَلَا نَوْمٌ} [البقرة: 255] وَلَمَّا قَرَنَ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي خَبَرِ صَفْوَانَ بَيْنَ النَّوْمِ وَالْغَائِطِ وَالْبَوْلِ فِي إِيجَابِ الْوُضُوءِ مِنْهَا وَلَمْ يَكُنْ بَيْنَ الْبَوْلِ وَالْغَائِطِ فَرْقَانِ وَكَانَ كُلُّ وَاحِدٍ مِنْهُمَا قَلِيلُ أَحَدِهِمَا أَوْ كَثِيرُهُ أَوْجَبَ عَلَيْهِ الطَّهَارَةَ سَوَاءً كَانَ الْبَائِلُ قَائِمًا أَوْ قَاعِدًا أَوْ رَاكِعًا أَوْ سَاجِدًا كَانَ كُلُّ مَنْ نَامَ بِزَوَالِ الْعَقْلِ وَجَبَ عَلَيْهِ الْوُضُوءُ سَوَاءً اخْتَلَفَتْ أَحْوَالُهُ أَوِ اتَّفَقَتْ لِأَنَّ الْعِلَّةَ فِيهِ زَوَالُ الْعَقْلِ لَا تَغَيُّر الْأَحْوَالِ عَلَيْهِ كَمَا أَنَّ الْعِلَّةَ فِي الْغَائِطِ وَالْبَوْلِ وُجُودُهُمَا لَا تَغَيُّرُ أَحْوَالِ الْبَائِلِ وَالْمُتَغَوِّطِ فِيهِ.

1097 - اخبرنا ابو يعلى حدثنا هارون بن معروف حدثنا سفيان عن عاصم عن زر قال: اتيت صفوان بن عسال المرادي فقال لي: ما حاجتك؟ قلت له: ابتغاء العلم قال: فان الملاىكة تضع اجنحتها لطالب العلم رضا بما يطلب قلت: حك في نفسي المسح على الخفين بعد الغاىط والبول وكنت امرءا من اصحاب النبي صلى الله عليه وسلم فاتيتك اسالك: هل سمعت منه في ذلك شيىا؟ قال: نعم كان يامرنا اذا كنا في سفر - او مسافرين - ان لا ننزع خفافنا ثلاثة ايام ولياليهن ـ الا من جنابة ـ لكن من غاىط وبول ونوم. الراوي : زر | المحدث : العلامة ناصر الدين الالباني | المصدر : التعليقات الحسان على صحيح ابن حبان الصفحة او الرقم: 1097 | خلاصة حكم المحدث:. حسن صحيح. قال ابو حاتم: الرقاد له بداية ونهاية فبدايته النعاس الذي هو اواىل النوم وصفته ان المرء اذا كلم فيه يسمع وان احدث علم الا انه يتمايل تمايلا ونهايته زوال العقل وصفته ان المرء اذا احدث في تلك الحالة لم يعلم وان تكلم لم يفهم فالنعاس لا يوجب الوضوء على احد قليله وكثيره على اي حالة كان الناعس والنوم يوجب الوضوء على من وجد على اي حالة كان الناىم على ان اسم النوم قد يقع على النعاس والنعاس على النوم ومعناهما مختلفان والله عز وجل فرق بينهما بقوله {لا تاخذه سنة ولا نوم} [البقرة: 255] ولما قرن صلى الله عليه وسلم في خبر صفوان بين النوم والغاىط والبول في ايجاب الوضوء منها ولم يكن بين البول والغاىط فرقان وكان كل واحد منهما قليل احدهما او كثيره اوجب عليه الطهارة سواء كان الباىل قاىما او قاعدا او راكعا او ساجدا كان كل من نام بزوال العقل وجب عليه الوضوء سواء اختلفت احواله او اتفقت لان العلة فيه زوال العقل لا تغير الاحوال عليه كما ان العلة في الغاىط والبول وجودهما لا تغير احوال الباىل والمتغوط فيه.


[1] মুসান্নাফ আব্দুর রাযযাক: ৭৫৯; মুসনাদ শাফেঈ: ১/৩৩; মুসান্নাফ ইবনু আবী শায়বাহ: ১/১৭৭; হুমাইদী: ৮৮১; মুসনাদ আহমাদ: ৪/২৩৯; নাসাঈ: ১/৮৩; ইবনু মাজাহ: ৪৭৮; শারহু মা‘আনিল আসার: ১/৮২; সুনান বাইহাকী: ১/২৭৬; তাবারানী: ৭৩৫৩; সহীহ ইবনু খুযাইমাহ: ১৭; বাগাবী, শারহুস ‍সুন্নাহ: ১৬১; দারাকুতনী: ১/১৯৬; আত তায়ালিসী: ১১৬৬; তিরমিযী: ৯৬।

আল্লামা শুআইব আল আরনাঊত রহিমাহুল্লাহ হাদীসটিকে হাসান বলেছেন। আল্লামা নাসিরুদ্দিন আলবানী রহিমাহুল্লাহ হাদীসটিকে হাসান-সহীহ বলেছেন। (আত তা‘লীকুর রাগীব: ১/৬২।)


হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
বর্ণনাকারীঃ যির ইবন হুবায়শ (রহঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
সহীহ ইবনু হিব্বান (হাদিসবিডি)
৮. পবিত্রতা অর্জন (كِتَابُ الطَّهَارَةِ)