৫৮৭২

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - মু'জিযার বর্ণনা

৫৮৭২-[৫] ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। বদর যুদ্ধের দিন একটি তাঁবুর মাঝে থাকাবস্থায় নবী (সা.) দু’আ করেন, “হে আল্লাহ! আমি তোমার ওয়াদা ও প্রতিশ্রুতি পূরণ করার জন্য প্রার্থনা করছি। হে আল্লাহ! যদি তুমি চাও শত্রুদের হাতে এ মুসলিম দল ধ্বংস হয়ে যাক, তাহলে আজকের পর আর তোমার ’ইবাদত (এ পৃথিবীতে) হবে না।” এরপর আবূ বকর সিদ্দীক (রাঃ) তাঁর হাত ধরে বললেন, যথেষ্ট হয়েছে হে আল্লাহর রাসূল! আপনি আপনার প্রভুর কাছে খুব চেয়ে ফেলেছেন। অতঃপর তিনি (সা.) যুদ্ধবর্ম পরিহিত অবস্থায় দ্রুত বাইরে এসে এ আয়াতটি পড়লেন, “শত্রুদল অচিরেই পরাজিত হবে এবং পৃষ্ঠ প্রদর্শন করবে”(সূরাহ্ আল কামার ৫৪ : ৪৫)। (বুখারী)

الفصل الاول (بَاب فِي المعجزا)

وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ وَهُوَ فِي قُبَّةٍ يَوْمَ بَدْرٍ: «اللَّهُمَّ أَنْشُدُكَ عَهْدَكَ وَوَعْدَكَ اللَّهُمَّ إِنْ تَشَأْ لَا تُعْبَدْ بَعْدَ الْيَوْمِ» فَأَخَذَ أَبُو بَكْرٍ بيدِه فَقَالَ حَسْبُكَ يَا رَسُولَ اللَّهِ أَلْحَحْتَ عَلَى رَبِّكَ فَخَرَجَ وَهُوَ يَثِبُ فِي الدِّرْعِ وَهُوَ يقولُ: « [سيُهزَمُ الجمعُ ويُوَلُّونَ الدُّبُرَ] » . رَوَاهُ البُخَارِيّ

رواہ البخاری (4875) ۔
(صَحِيح)

وعن ابن عباس ان النبي صلى الله عليه وسلم قال وهو في قبة يوم بدر اللهم انشدك عهدك ووعدك اللهم ان تشا لا تعبد بعد اليوم فاخذ ابو بكر بيده فقال حسبك يا رسول الله الححت على ربك فخرج وهو يثب في الدرع وهو يقول سيهزم الجمع ويولون الدبر رواه البخاريرواہ البخاری 4875 ۔صحيح

ব্যাখ্যা: মুমিনদের সাহায্য করার ব্যাপারে আল্লাহর দেয়া প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের জন্য আল্লাহর কাছে রাসূলুল্লাহ (সা.) বদর যুদ্ধের সময় অনেক দু'আ করেছেন যা এ হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে।
মিরকাত প্রণেতা এ হাদীসের ব্যাখ্যায় একটি সুপ্ত প্রশ্ন সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। আর তা হলো, আল্লাহ তো মুমিনদেরকে সাহায্য করার ব্যাপারে ওয়াদাই করেছেন। তাহলে রাসূল (সা.) সাহায্যের জন্য আল্লাহর কাছে কেন এত দু'আ করলেন?
এই প্রশ্নের উত্তর মিরক্বাত প্রণেতা বিভিন্নভাবে দেয়ার চেষ্টা করেছেন। যেমন-
১) দুআ করাটা হলো মুস্তাহাব। এক্ষেত্রে দু'আকারী ব্যক্তি তার চাওয়া বিষয়টি অর্জিত হওয়ার ব্যাপারে অবগত থাকুক কিংবা না থাকুক। যেহেতু দু'আ করা মুস্তাহাব। তাই রাসূলুল্লাহ (সা.) দু'আ করেছেন।
২) আল্লাহর প্রতি যে জ্ঞান রাখে সে অবশ্যই আল্লাহকে ভয় করবে। আর এক্ষেত্রে নবীগণও ব্যতিক্রম নয়। বরং তারা আরো বেশি ভয় করেন। অতএব তাদেরকে যে উত্তম ফলাফলের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে, তা যেন নিজেদের কারণে কোনভাবেই এদিক-সেদিক হয়। সেজন্য তিনি আল্লাহর কাছে দু'আ করেছেন।
৩) তার কোন আশঙ্কা থাকতে পারে এই বিষয়ে যে, তাঁর অথবা তার পূর্বের জাতির কারণে সৃষ্ট কোন প্রতিবন্ধকতার। যেজন্য তাদের প্রতিশ্রুত সাহায্য আটকে যেতে পারে। এজন্যই রাসূল (সা.) এত দু'আ করেছেন।
৪) সম্ভবত এটিও হতে পারে যে, তাঁকে সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে কিন্তু সেই সাহায্যের জন্য সময় নির্ধারণ করে দেয়া হয়নি। তাই তিনি আল্লাহর কাছে দু'আ করেছেন যেন তিনি তাঁকে সেদিনই সাহায্য করেন।

এক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো যে উত্তরটি হতে পারে তা হলো, আল্লাহর প্রতি নবী (সা.) -এর পূর্ণ আস্থা ও দৃঢ় বিশ্বাস থাকার পরেও তিনি তার কাছে অনেক দু'আ করেছেন সাহাবীদেরকে উৎসাহিত করার জন্য এবং তাদের হৃদয়কে সুদৃঢ় করার জন্য। কারণ তারা জানত যে, নবী (সা.) -এর দু'আ অবশ্যই কবুল হবে। বিশেষ করে তিনি যখন আরো বেশি করে দু'আ করবেন।
উক্ত হাদীসে আরো একটি বিষয়ের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। তা হলো, যে ব্যক্তি যুদ্ধ করতে সক্ষম না। অথবা যাকে যুদ্ধের জন্য আদেশ করা হয়নি সে যেন তখন সাহায্যের জন্য দু'আ করে। যাতে সে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করার সাওয়াব অর্জন করতে পারে। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)

ফাতহুল বারীতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, সুহায়ল বলেন, নবী (সা.) আল্লাহর কাছে অনেক বেশি দু'আ করেছেন। কারণ তিনি মালায়িকাকে (ফেরেশতাদেরকে) দেখেছেন যে, তারা যুদ্ধের মাঠে দাঁড়িয়ে আছেন। আর আনসার সাহাবীরা মৃত্যুর মতো কষ্টের দিকে ঝাপিয়ে পড়ছে।
তাছাড়াও জিহাদ কখনো অস্ত্রের মাধ্যমে হয়। আবার কখনো দু'আর দ্বারাই জিহাদ হয়ে যায় ।
আর সুন্নাত হলো, ইমাম সেনাবাহিনীর পিছনে থাকবেন। তিনি তাদের সাথে যুদ্ধ করবেন না। যেন তিনি নিজেকে শান্ত রাখতে পারেন এবং আল্লাহর কাছে দু'আ করতে পারেন।
(اللَّهُمَّ إِنْ تَشَأْ لَا تُعْبَدْ) অর্থাৎ হে আল্লাহ! (আপনি যদি না) চান, তাহলে আর আপনার ‘ইবাদত করা হবে না। ‘উমার (রাঃ)-এর একটি হাদীসে রয়েছে, হে আল্লাহ! আপনি যদি এই ইসলামী দলকে ধ্বংস করে দেন। তাহলে জমিনে আর আপনার ইবাদত করা হবে না।
তিনি এ কথা বলেছিলেন, কারণ মুহাম্মাদ (সা.) হলেন সর্বশেষ নবী। অতএব যদি তিনি ও তাঁর সাথিরা ধ্বংস হয়ে যায় তাহলে ইসলামের এখানেই সমাপ্তি ঘটবে। যেহেতু তার পরে আর কাউকে দাওয়াত দেয়ার জন্য আল্লাহ নবী হিসেবে পাঠাবেন না। আর তখন মুশরিকরা গায়রুল্লাহর ইবাদত করতেই থাকবে। তারপর এই পৃথিবীতে আর এই শারী'আত অনুযায়ী ‘ইবাদত করা হবে না।
খত্ত্বাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, এটি মনে করার কোনই কারণ নেই যে, বদর যুদ্ধের সময় রাসূল (সা.)-এর দু'আ করা অবস্থায় আল্লাহর প্রতি আবূ বাকর (রাঃ)-এর আস্থা ও বিশ্বাস রাসূল (সা.) -এর থেকে বেশি ছিল।
রাসূল (সা.) সেই সময় তাঁর সাহাবীদের প্রতি দরদ প্রকাশ করেছেন এবং তাদের হৃদয়কে সুদৃঢ় করেছেন। কারণ এটি ছিল তাদের সর্বপ্রথম সম্মুখ যুদ্ধ। তাই রাসূল (সা.) বেশি বেশি দু'আ করেছেন যেন তাদের অন্তর যুদ্ধের সময় স্থির থাকে।
তারপর আবূ বাকর (রাঃ) রাসূল (সা.) -কে যা বলার বললেন, তখন তিনি দু'আ করা থেকে বিরত হলেন এবং জানতে পারলেন যে, অবশ্যই তাঁর দু'আ কবুল করা হয়েছে। অতঃপর রাসূল (সা.) এই আয়াত (سَیُهۡزَمُ الۡجَمۡعُ وَ یُوَلُّوۡنَ الدُّبُرَ) “শত্রুদল অচিরেই পরাজিত হবে এবং পৃষ্ঠপ্রদর্শন করবে”- (সূরাহ্ আল কামার ৫৪ : ৪৫); পাঠ করতে করতে বের হলেন। যার অর্থ, অবশ্যই বাহিনী পরাজিত হবে এবং পৃষ্ঠপ্রদর্শন করে পালিয়ে যাবে। (ফাতহুল বারী ৭/৩৯৫৩)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৯: চারিত্রিক গুণাবলি ও মর্যাদাসমূহ (كتاب الْفَضَائِل وَالشَّمَائِل)