৫৮৭১

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - মু'জিযার বর্ণনা

৫৮৭১-[৪] উক্ত রাবী [আনাস (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমাদের নিকট (কুরায়শ নেতা) আবূ সুফইয়ান-এর প্রত্যাবর্তনের সংবাদ পৌছলে রাসূলুল্লাহ (সা.) পরামর্শ করলেন, তখন (আনসার নেতা) সা’দ ইবনু উবায়দাহ্ (রাঃ) উঠে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! সে মহান সত্তার শপথ! যার হাতে আমার প্রাণ! আপনি যদি আমাদেরকে সওয়ারীসহ দরিয়াতে ঝাঁপিয়ে পড়তে নির্দেশ করেন, তবে আমরা ঝাপিয়ে পড়ব। আর যদি বারকুল গিমাদ’ পর্যন্তও আমাদের বাহনকে ছুটে যেতে আদেশ করেন, তা করতেও আমরা প্রস্তুত। বর্ণনাকারী [আনাস (রাঃ)] বলেন, এভাবে রাসূলুল্লাহ (সা.) লোকেদেরকে যুদ্ধের জন্য তৈরি করে নিলেন। এরপর তারা রওয়ানা হয়ে বদর’ নামক স্থানে এসে অবতরণ করলেন। এখানে পৌছে রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, এটা অমুক নিহত হওয়ার স্থান আর তা অমুকের আর তা অমুকের। এ সময় তিনি (সা.) (স্থান দেখিয়ে) স্বীয় হাত জমিনে রাখলেন। বর্ণনাকারী বলেন, (যুদ্ধ শেষে) দেখা গেল, রাসূলুল্লাহ (সা.) যার জন্য যে স্থানটি দেখিয়েছিলেন, তাদের একটিও এদিক-সেদিক সরে পড়েনি। (মুসলিম)

الفصل الاول (بَاب فِي المعجزا)

وَعنهُ قا ل: أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ شَاوَرَ حِينَ بَلَغَنَا إِقْبَالُ أَبِي سُفْيَانَ وَقَامَ سَعْدُ بْنُ عُبَادَةَ فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لَوْ أَمَرْتَنَا أَنْ نُخِيضَهَا الْبَحْرَ لَأَخَضْنَاهَا وَلَوْ أَمَرْتَنَا أَنْ نَضْرِبَ أَكْبَادَهَا إِلَى بَرْكِ الْغِمَادِ لَفَعَلْنَا. قَالَ: فَنَدَبَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ النَّاسُ فَانْطَلَقُوا حَتَّى نَزَلُوا بَدْرًا فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «هَذَا مَصْرَعُ فُلَانٍ» وَيَضَعُ يدَه على الأرضِ هَهُنَا وَهَهُنَا قا ل: فَمَا مَاطَ أَحَدُهُمْ عَنْ مَوْضِعِ يَدُ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ. رَوَاهُ مُسْلِمٌ

رواہ مسلم (83 / 1779)، (4621) ۔
(صَحِيح)

وعنه قا ل ان رسول الله صلى الله عليه وسلم شاور حين بلغنا اقبال ابي سفيان وقام سعد بن عبادة فقال يا رسول الله والذي نفسي بيده لو امرتنا ان نخيضها البحر لاخضناها ولو امرتنا ان نضرب اكبادها الى برك الغماد لفعلنا قال فندب رسول الله صلى الله عليه وسلم الناس فانطلقوا حتى نزلوا بدرا فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم هذا مصرع فلان ويضع يده على الارض ههنا وههنا قا ل فما ماط احدهم عن موضع يد رسول الله صلى الله عليه وسلم رواه مسلمرواہ مسلم 83 1779 4621 ۔صحيح

ব্যাখ্যা: আবূ সুফইয়ান-এর কাফেলা যখন সিরিয়া থেকে মক্কার উদ্দেশে বের হলো এবং সাহাবীগণের কাছে সেই সংবাদ পৌছল তখন মদীনাবাসীদের পরীক্ষা করার জন্য রাসূলুল্লাহ (সা.) তাদের সাথে পরামর্শ করলেন। সাহাবীদের মধ্য থেকে আবূ বাকর (রাঃ) কথা বললেন। কিন্তু রাসূল (সা.) তার থেকে অন্যদিকে মুখ ফিরালেন। তারপর ‘উমার (রাঃ) কথা বললেন। কিন্তু তার থেকেও তিনি অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন। তখন সা'দ ইবনু উবাদাহ দাঁড়িয়ে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি কি আমাদেরকেই চাচ্ছেন? অতঃপর সা'দ ইবনু 'উবাদাহ (রাঃ) আল্লাহর কসম করে বললেন, (وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لَوْ أَمَرْتَنَا أَنْ نُخِيضَهَا الْبَحْرَ) অর্থাৎ, এ সত্তার শপথ যার হাতে আমার প্রাণ। যদি আপনি আমাদেরকে ঘোড়া নিয়ে পানিতে ঝাঁপ দিতে আদেশ করেন, আমরা তাই করব।
‘উলামাগণ বলেন, রাসূল (সা.) আনসারদেরকে পরীক্ষা করার ইচ্ছা করেছিলেন। কারণ তিনি যখন আনসারদের থেকে বায়'আত গ্রহণ করেছিলেন তখন তাদের এই অঙ্গীকার ছিল যে, তারা রাসূল (সা.) -কে শত্রুদের থেকে রক্ষা করবে। কিন্তু এই অঙ্গীকার ছিল না যে, তারা তাঁর সাথে বের হয়ে শত্রুদের সাথে লড়াই করবে।
তাই যখন আবূ সুফইয়ান-এর কাফেলা আক্রমণের উদ্দেশে বের হওয়ার সময় আসলো তখন তিনি নিশ্চিতভাবে আনসারদের থেকে জানতে চাইলেন যে, তারা তাঁর সাথে একমত কিনা? তারপর তারা উত্তম জবাব দিল এবং রাসূল (সা.) -এর সাথে পরিপূর্ণ একাত্বতা ঘোষণা করল। (ফাতহুল বারী হা. ১২/১৭৭৯)

উক্ত হাদীসে সাথিদের সাথে এবং জ্ঞানী ও অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের সাথে পরামর্শ করার ব্যাপারে উৎসাহিত করা হয়েছে।
ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, কুরায়শরা বড় একটি ব্যবসায়ী কাফেলা নিয়ে সিরিয়া থেকে মক্কার উদ্দেশে বের হয়। সেই কাফেলায় ছিল চল্লিশ জন আরোহী এবং তাতে ছিল অনেক সম্পদ। আর কাফেলার নেতা ছিল আবূ সুফিয়ান। মুসলিমগণ সেই কাফেলার সাথে সাক্ষাতের আগ্রহী ছিল। কারণ তাতে লোক ছিল কম আর সম্পদ ছিল অনেক বেশি। তারপর যখন মুসলিমগণ কাফেলা আক্রমণের উদ্দেশে বের হলো তখন এই সংবাদ মক্কায় পৌছে গেল। সংবাদ শুনে আবূ জাহল কা'বার উপর দাঁড়িয়ে ডাক দিয়ে বলল, হে মক্কাবাসী! তোমরা মুক্তির পথ খোজ। মুক্তির পথ খোজ। তারপর আবূ জাহল মক্কার অধিবাসীদের নিয়ে বের হলো। তখন আবূ জাহল-কে বলা হলো, ব্যবসায়ী কাফেলা তো সমুদ্র উপকূলীয় পথ ধরে চলতে শুরু করেছে এবং আক্রান্ত হওয়া থেকে রক্ষা পেয়েছে। কাজেই আপনি লোকেদেরকে নিয়ে মক্কায় ফিরে চলুন। তখন সে ফিরে যাওয়ার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে আল্লাহর নামে কসম করল এবং লোকেদেরকে নিয়ে বদরের প্রান্তরে উপস্থিত হলো। ইতোমধ্যে জিবরীল আলায়হিস সালাম এসে রাসূল (সা.) -কে জানিয়ে গেলেন যে, আল্লাহ দু’টি দলের কোন একটির সাথে মুখোমুখি করার ওয়াদা করেছেন। তখন রাসূল (সা.) বললেন, কাফেলা তো সমুদ্র উপকূলীয় পথ ধরে চলে গেছে। আর এগিয়ে আসছে আবূ জাহল। তখন আনসারদের পক্ষ থেকে সা'দ ইবনু ‘উবাদাহ্ (রাঃ) দাঁড়িয়ে বললেন, হে আল্লাহ রাসূল। ঐ সত্তার শপথ যার হাতে আমার প্রাণ! যদি আপনি আমাদেরকে ঘোড়া নিয়ে পানিতে ঝাঁপ দিতে আদেশ করেন আমরা তাই করব। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)

(إِلَى بَرْكِ الْغِمَادِ) অর্থাৎ বারকুল গিমাদ পর্যন্ত। এ কথার মাধ্যমে দূরবর্তী স্থানের উপমা দেয়া হয়েছে। তবে (بَرْكِ الْغِمَادِ) -এর পরিচয় দিতে গিয়ে শারহুন নাবাবীর গ্রন্থকার কয়েকটি মত উল্লেখ করেছেন। যেমন কেউ কেউ বলেন, এটি হলো মক্কার পিছন দিকে একটি উপকূলীয় স্থান। যার দূরত্ব মক্কা থেকে পাঁচ দিনের পথ।
হাযিমী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, এটি হলো দু’টি শহরের নাম। ক্বাযী ‘ইয়ায (রহিমাহুল্লাহ) এবং অন্যান্যরা বলেন, এটি হলো অনেক দূরবর্তী পরিত্যক্ত একটি স্থান।
ইবরাহীম আল হারিবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, (بَرْكِ الْغِمَادِ) এবং (سَعَفَاتُ) বলার মাধ্যমে দূরবর্তী স্থানের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়।
(وَرَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَائِمٌ يُصَلِّىْ فَلَمَّا رَأَي ذَلِكَ انْصَرَفَ) অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ (সা.) দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করছিলেন। যখন তিনি তা দেখতে পান তখন সালাত শেষ করেন। হাদীসের এই বাক্য থেকে প্রমাণিত হয় যে, সালাতরত অবস্থায় যদি কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ঘটে যায় তাহলে সালাত হালকা করে আদায় করা মুস্তাহাব।
উক্ত হাদীসে রাসূল (সা.) -এর বিশেষভাবে দুটি মু'জিযাহ্ প্রকাশ পেয়েছে। আর সে দুটি হলো।

১) যুদ্ধের আগেই রাসূল (সা.) বলে দিয়েছিলেন যে, অমুক অমুক ব্যক্তি অমুক অমুক স্থানে মরে পড়ে থাকবে। আর যুদ্ধের পর দেখা যায় যে, ঠিক ঠিক জায়গায় তারা মরে পড়ে আছে। একটুও ব্যতিক্রম হয়নি।

২) বালকটি যখন আবূ সুফইয়ান-এর ব্যাপারে সত্য কথা বলছিল তখন তারা তাকে প্রহার করছিল। আর যখন সে তার ব্যাপারে মিথ্যা কথা বলছিল তখন তারা তাকে ছেড়ে দিচ্ছিল। বালকটির সত্য-মিথ্যা বলার বিষয়টি আল্লাহর রাসূল (সা.) বলে দিয়েছেন। এটিও ছিল তাঁর বিশেষ মু'জিযা। (শারহুন নাবাবী ১২/১৭৭৯)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৯: চারিত্রিক গুণাবলি ও মর্যাদাসমূহ (كتاب الْفَضَائِل وَالشَّمَائِل)