৫৮৬৯

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - মু'জিযার বর্ণনা

৫৮৬৯-[২] বারা ইবনু ’আযিব (রাঃ) তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেন। একদিন (বারা ইবনু ’আযিব) আবূ বকর সিদ্দীক (রাঃ) লক্ষ্য-কে বললেন, হে আবূ বকর! আমাকে বলুন তো, যে রাত্রে আপনি রাসূলুল্লাহ (সা.) - এর সাথে (হিজরতের উদ্দেশে) ভ্রমণ করেছিলেন, সে ভ্রমণে আপনারা কিরূপ করেছিলেন? আবূ বকর (রাঃ) বললেন, আমরা এক রাত্র এবং পরবর্তী দিন পথ চলতে থাকি। পরিশেষে যখন দ্বিপ্রহর হলো এবং পথঘাট এতটা শূন্য হয়ে পড়ল যে, একটি প্রাণীও তাতে যাতায়াত ও চলাফেরা করছে না। এমন সময় বিশাল একটি লম্বা পাথর আমাদের দৃষ্টিতে পড়ল। তার একপার্শ্বে ছিল ছায়া। সেখানে সূর্যের রোদ পড়ত না। তখন আমরা সেখানে অবতরণ করলাম এবং আমি নিজ হাতে নবী (সা.) -এর জন্য কিছুটা জায়গা সমান করলাম যাতে তিনি শয়ন করতে পারেন। অতঃপর আমি একখানা (চামড়ার) চাদর বিছিয়ে দিয়ে বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি শুয়ে পড়ুন। আমি আপনার (নিরাপত্তার) জন্য এদিক-ঐদিক বিশেষভাবে খেয়াল রাখব। তখন নবী (সা.) শুয়ে পড়লেন। আমি বের হয়ে চতুর্দিক হতে তাঁকে পাহারা দিতে লাগলাম। হঠাৎ আমি দেখতে পেলাম, একজন মেষচালক তার বকরির পাল নিয়ে পাথরটির দিকে আগাচ্ছে। আমি বললাম, তুমি কি তা (আমাদের জন্য) দোহন করবে? সে বলল, হ্যাঁ। অতঃপর সে একটি বকরি ধরে আনল। তারপর সে একটি পাত্রে দুধ দোহন করল। এদিকে আমার কাছেও একটি পাত্র ছিল, যা আমি নবী (সা.) -এর জন্য সাথে করে নিয়ে এসেছিলাম, যেন তা দিয়ে তিনি তৃপ্তি সহকারে পানি পান এবং উযূ করতে পারেন। অতঃপর আমি (দুধের পেয়ালাটি হাতে করে) নবী (সা.) -এর কাছে আসালাম। কিন্তু তাকে ঘুম হতে জাগানো ভালো মনে করলাম না। কিছুক্ষণ পরে আমি তাকে জাগ্রত অবস্থায় পেলাম। ইতোমধ্যে আমি দুধের সাথে (তাড়াতাড়ি ঠাণ্ডা করার উদ্দেশে) কিছু পানি মিশ্রিত করলাম। তাতে দুধের নিম্নাংশ অবধি ঠাণ্ডা হয়ে গেল। তারপর আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! পান করুন। তিনি পান করলেন, এতে আমি খুবই খুশি হলাম। অতঃপর তিনি (সা.) বললেন, আমাদের রওয়ানা হওয়ার সময় কি এখনো হয়নি? আমি বললাম, হ্যাঁ, হয়েছে। আবূ বকর সিদ্দীক (রাঃ) বলেন, আমরা সূর্য ঢলে যাওয়ার পর রওয়ানা হলাম। এদিকে সুরাকাহ্ ইবনু মালিক আমাদের অনুসরণ করেছিল। আমি (তাকে দেখতে পেয়ে) বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! (শত্রু) আমাদের নিকট এসে পড়েছে।
তিনি (সা.) বললেন, চিন্তা করো না। মহান আল্লাহ তা’আলা আমাদের সাথে আছেন। এরপর নবী (সা.) সুরাকার জন্য বদদু’আ করলেন। ফলে তার ঘোড়াটি তাকে নিয়ে পেট পর্যন্ত শক্ত মাটিতে গেড়ে গেল। তখন সুরাকাহ্ বলে উঠল, আমার বিশ্বাস তোমরা আমার প্রতি বদদু’আ করেছ। অতএব তোমরা আল্লাহর কাছে আমার জন্য দু’আ কর, আল্লাহই তোমাদের সাহায্যকারী। আমি তোমাদেরকে ওয়াদা দিচ্ছি যে, তোমাদের অন্বেষণকারীদের ফিরিয়ে দেব। নবী (সা.) তখন তার জন্য দু’আ করলেন। ফলে সে মুক্তি পেল। তারপর যার সাথেই তার দেখা হত তাকে সে বলত, তোমাদের কাজ আমি সেরে এসেছি। তারা সেদিকে নেই। এমনিভাবে যার সাথে তার সাক্ষাৎ হত, তাকেই সে ফিরিয়ে দিত। (বুখারী ও মুসলিম)

الفصل الاول (بَاب فِي المعجزا)

وَعَنِ الْبَرَاءِ بْنِ عَازِبٍ عَنْ أَبِيهِ أَنَّهُ قَالَ لِأَبِي بَكْرٍ: يَا أَبَا بَكْرٍ حَدِّثْنِي كَيْفَ صَنَعْتُمَا حِينَ سَرَيْتَ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: أَسْرَيْنَا لَيْلَتَنَا وَمِنَ الْغَدِ حَتَّى قَامَ قَائِمُ الظَّهِيرَةِ وَخَلَا الطَّرِيقُ لَا يَمُرُّ فِيهِ أَحَدٌ فَرُفِعَتْ لَنَا صَخْرَةٌ طَوِيلَةٌ لَهَا ظِلٌّ لَمْ يَأْتِ عَلَيْهَا الشَّمْسُ فَنَزَلْنَا عِنْدَهَا وَسَوَّيْتُ لِلنَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَكَانًا بِيَدَيَّ يَنَامُ عَلَيْهِ وَبَسَطْتُ عَلَيْهِ فَرْوَةً وَقُلْتُ نَمْ يَا رسولَ الله وَأَنَا أَنْفُضُ مَا حَوْلَكَ فَنَامَ وَخَرَجْتُ أَنْفُضُ مَا حَوْلَهُ فَإِذَا أَنَا بِرَاعٍ مُقْبِلٍ قُلْتُ: أَفِي غنمكَ لبنٌ؟ قَالَ: نعم قلتُ: أفتحلبُ؟ قَالَ: نَعَمْ. فَأَخَذَ شَاةً فَحَلَبَ فِي قَعْبٍ كُثْبَةً مِنْ لَبَنٍ وَمَعِي إِدَاوَةٌ حَمَلْتُهَا لِلنَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَرْتَوَى فِيهَا يَشْرَبُ وَيَتَوَضَّأُ فَأَتَيْتُ الْنَبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَكَرِهْتُ أَنْ أُوقِظَهُ فَوَافَقْتُهُ حَتَّى اسْتَيْقَظَ فَصَبَبْتُ مِنَ الْمَاءِ عَلَى اللَّبَنِ حَتَّى بَرَدَ أَسْفَلُهُ فَقُلْتُ: اشْرَبْ يَا رَسُولَ اللَّهِ فَشَرِبَ حَتَّى رضيت ثمَّ قَالَ: «ألم يَأن الرحيل؟» قلتُ: بَلى قَالَ: فارتحلنا بعد مَا مَالَتِ الشَّمْسُ وَاتَّبَعَنَا سُرَاقَةُ بْنُ مَالِكٍ فَقُلْتُ: أُتِينَا يَا رَسُولَ اللَّهِ فَقَالَ: «لَا تَحْزَنْ إِنَّ اللَّهَ مَعَنَا» فَدَعَا عَلَيْهِ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَارْتَطَمَتْ بِهِ فَرَسُهُ إِلَى بَطْنِهَا فِي جَلَدٍ مِنَ الْأَرْضِ فَقَالَ: إِنِّي أَرَاكُمَا دَعَوْتُمَا عَلَيَّ فَادْعُوَا لِي فَاللَّهُ لَكُمَا أَنْ أَرُدَّ عَنْكُمَا الطَّلَبَ فَدَعَا لَهُ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَنَجَا فَجَعَلَ لَا يلقى أحدا إِلا قَالَ كفيتم مَا هَهُنَا فَلَا يَلْقَى أَحَدًا إِلَّا رَدَّهُ. مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ

متفق علیہ ، رواہ البخاری (3615) و مسلم (75 / 2009)، (5238) ۔
(مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)

وعن البراء بن عازب عن ابيه انه قال لابي بكر يا ابا بكر حدثني كيف صنعتما حين سريت مع رسول الله صلى الله عليه وسلم قال اسرينا ليلتنا ومن الغد حتى قام قاىم الظهيرة وخلا الطريق لا يمر فيه احد فرفعت لنا صخرة طويلة لها ظل لم يات عليها الشمس فنزلنا عندها وسويت للنبي صلى الله عليه وسلم مكانا بيدي ينام عليه وبسطت عليه فروة وقلت نم يا رسول الله وانا انفض ما حولك فنام وخرجت انفض ما حوله فاذا انا براع مقبل قلت افي غنمك لبن قال نعم قلت افتحلب قال نعم فاخذ شاة فحلب في قعب كثبة من لبن ومعي اداوة حملتها للنبي صلى الله عليه وسلم يرتوى فيها يشرب ويتوضا فاتيت النبي صلى الله عليه وسلم فكرهت ان اوقظه فوافقته حتى استيقظ فصببت من الماء على اللبن حتى برد اسفله فقلت اشرب يا رسول الله فشرب حتى رضيت ثم قال الم يان الرحيل قلت بلى قال فارتحلنا بعد ما مالت الشمس واتبعنا سراقة بن مالك فقلت اتينا يا رسول الله فقال لا تحزن ان الله معنا فدعا عليه النبي صلى الله عليه وسلم فارتطمت به فرسه الى بطنها في جلد من الارض فقال اني اراكما دعوتما علي فادعوا لي فالله لكما ان ارد عنكما الطلب فدعا له النبي صلى الله عليه وسلم فنجا فجعل لا يلقى احدا الا قال كفيتم ما ههنا فلا يلقى احدا الا رده متفق عليهمتفق علیہ رواہ البخاری 3615 و مسلم 75 2009 5238 ۔متفق عليه

ব্যাখ্যা: (حَتَّى قَامَ قَائِمُ الظَّهِيرَةِ) অর্থাৎ দ্বিপ্রহর পর্যন্ত। মিরকাত প্রণেতা বলেন, দ্বিপ্রহর মানে হলো সূর্য যখন মধ্যাকাশে উঠে যায়। এখানে উক্ত বাক্য দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, সূর্য যখন মধ্যাকাশে পৌছে যায় তখন থেকে নিয়ে চলে যাওয়া পর্যন্ত তার ছায়া থেমে থাকে। তখন মানুষেরা তা দেখে মনে করে যে, সূর্য যেন একেবারে স্থির হয়ে গেছে। আর নড়াচড়া করছে না। অথচ তা চলমান রয়েছে। কিন্তু তার চলমানের দৃশ্যটা পরিলক্ষিত হচ্ছে না। যেমন পরিলক্ষিত হত সে সময়ের আগে বা পরে। তাই এ বিষয়টি আরবরা এভাবে বলে থাকে (قَامَ قَائِمُ الظَّهِيرَةِ) অর্থাৎ দ্বিপ্রহর হলো।
(فَاللَّهُ لَكُمَا) অর্থাৎ আল্লাহ তোমাদের দুজনের জন্য রয়েছেন। মিরক্বাত প্রণেতা বলেন, এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, আল্লাহ তোমাদের দুজনের জন্য রক্ষাকারী ও সাহায্যকারী হিসেবে থাকবেন যতক্ষণ না তোমরা নিরাপত্তার সাথে তোমাদের উদ্দিষ্ট স্থানে পৌঁছবে।
অথবা এটিও উদ্দেশ্য হতে পারে যে, তোমরা দুজন আমার জন্য দু'আ করো, যেন আমি তোমাদের থেকে ফিরে যেতে পারি। আর অবশ্যই আল্লাহ তোমাদেরকে আমার থেকে রক্ষা করার দায়িত্ব নিয়েছেন এবং তোমাদের কাছে পৌছা থেকে আমাকে আটকে দিয়েছেন।
ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো তোমরা দুজন আমার জন্য দু'আ করো যেন আমি এই বিপদ থেকে মুক্তি পাই। কেননা যদি তোমরা তা করো তাহলে আল্লাহই দেখবেন যে, আমি তোমাদের থেকে অনুসন্ধানকারীদেরকে ফিরিয়ে দিবো।
(أَنْ أَرُدَّ عَنْكُمَا الطَّلَبَ) অর্থাৎ আমি তোমাদের থেকে অনুসন্ধান ফিরিয়ে দিবো। এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, যে সকল কাফির তোমাদের দু'জনকে খুঁজতে আসবে আমি তাদেরকে ফিরিয়ে দিতে চাইবো।
ইমাম নবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, এ হাদীসে বিভিন্নভাবে নবী (সা.) -এর জন্য রয়েছে প্রকাশ্য মু'জিযাহ্ আর আবূ বাকর (রাঃ) -এর জন্য রয়েছে উত্তম ফযীলত। এতে রয়েছে অনুসরণীয় ব্যক্তিকে অনুসারী ব্যক্তির পক্ষ থেকে উত্তমরূপে সেবা করার একটি মূল্যবান শিক্ষা। এতে আরো আছে যে, পবিত্রতা অর্জন করার জন্য এবং পান করার জন্য সফরে সাথে ছোট পাত্র রাখা ভালো। আর বিশেষ করে এ হাদীস থেকে যে বিষয়টি প্রতীয়মান হয়েছে তা হলো, আল্লাহর প্রতি ভরসা করার উত্তম ফযীলত ও কল্যাণকর পরিণতি। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৯: চারিত্রিক গুণাবলি ও মর্যাদাসমূহ (كتاب الْفَضَائِل وَالشَّمَائِل)