পরিচ্ছেদঃ
১৫০২। সম্প্রদায়ের সরদার হচ্ছে তাদের খাদেম।
হাদীসটি দুর্বল।
হাদীসটি আব্দুল্লাহ্ ইবনু আব্বাস (রাঃ), আনাস ইবনু মালেক (রাঃ) ও সাহল ইবনু সা’দ (রাঃ) এ তিনজন সাহাবী হতে বর্ণিত হয়েছে।
প্রথমতঃ আব্দুল্লাহ্ ইবনু আব্বাস (রাঃ)-এর হাদীস। এটিকে ইয়াহইয়া ইবনু আকসাম কাযী- আল-মামূন হতে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, আমাকে আমার পিতা তার দাদার সূত্রে মানসূর হতে, তিনি তার পিতার সূত্রে তার দাদা হতে, তিনি ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে মারফু হিসেবে বর্ণনা করেছেন। এর মধ্যে ঘটনা রয়েছে।
এটিকে আবুল কাসেম শাহরাযুরী “আল-আমলী” গ্রন্থে (কাফ ২/১৮০), আবু আব্দুর রহমান সুলামী "আদাবুস সুহবাহ" গ্রন্থে (কাফ ১/১৩৯-১০৭) ও আল-খাতীব “তারীখু বাগদাদ” গ্রন্থে (১০/১৮৭) বিভিন্ন সূত্রে ইয়াহইয়া হতে বর্ণনা করেছেন। তারা বর্ণনা করার ক্ষেত্রে মতভেদ করেছেন।
কেউ হাদীসটি এভাবে বর্ণনা করেছেন, আবার কেউ দাদার স্থলে ইকরিমাকে উল্লেখ করেছেন, আবার কেউ কেউ হাদিসটিকে উকবাহ ইবনু আমেরের মুসনাদের অন্তর্ভুক্ত করেছেন। এ কারণে ইমাম সাখাবী “আল মাকাসিদুল হাসানা” গ্রন্থে বলেছেনঃ হাদিসটির সনদে দুর্বলতা এবং বিচ্ছিন্নতা রয়েছে।
দ্বিতীয়তঃ আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত হাদীস। এটিকে হাম্মু ইবনু নূহ, সালাম ইবনু সালেম হতে, তিনি আবদুল্লাহ ইবনুল মুবারাক হতে, তিনি হুমায়েদ আত-ত্ববীল হতে, তিনি আনাস (রাঃ) হতে মারফু হিসেবে নিম্নের বাক্যে বর্ণনা করেছেনঃ
(خادم القوم سيدهم، وساقيهم آخرهم شربا)
সম্প্রদায়ের খাদেম হচ্ছে তাদের সরদার আর তাদের জন্য পানি পরিবেশনকারী হচ্ছে সর্বশেষে পানি পানকারী।
এ হাদীসটি আল-মুখাল্লেস “আল-ফাওয়াইদ” গ্রন্থে (২৮৪) এবং ইবনু আবী শুরায়হ আনসারী "জুযউ বীবা” গ্রন্থে (১/১৬৯) বর্ণনা করেছেন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ এ সনদটি খুবই দুর্বল। এর সমস্যা হচ্ছে সালম ইবনু সালেম তিনি হচ্ছেন বলখী আয-যাহেদ, তার দুর্বল হওয়ার ব্যাপারে সকলে ঐকমত্য পোষণ করেছেন যেমনটি খালীলী বলেছেন। আর ইবনু আবী হাতিম বলেনঃ তিনি সত্যবাদী নন।
আর ইবনু আবী হাতিম (১/২/৩১৯) হাম্মু ইবনু নূহ এর জীবনী বর্ণনা করে তার সম্পর্কে ভাল-মন্দ কিছুই বলেননি।
ইবনু মাজাহ (৩৪৩৪) এ হাদীসটির শেষাংশ [সম্প্রদায়ের জন্য পানি পরিবেশনকারী হচ্ছে সর্বশেষে পানি পানকারী] বর্ণনা করেছেন। (প্রথম অংশ) বৰ্ণনা করেননি। যদিও কেউ কেউ বলেছেনঃ ইবনু মাজাহ্ বর্ণনা করেছেন। তিনি (ইবনু মাজাহ) অন্য সূত্রে আবু কাতাদাহ হতে শেষাংশটি মারফু হিসেবে বর্ণনা করেছেন। এ শেষাংশটুকু সহীহ্, ইমাম মুসলিম (৬৮১), তিরমিযী (১৮৯৪) ও আহমাদ (২২০৪০, ২২০৭১) ও দারেমী (২১৩৫) বর্ণনা করেছেন।
সতর্কবাণীঃ আলোচ্য হাদীসটিকে দায়লামী তিরমিযী ও ইবনু মাজার উদ্ধৃতিতে উল্লেখ করেছেন। এটি ধারণা মাত্র। ইমাম সুয়ূতীও এ ক্ষেত্রে তার অন্ধ অনুসরণ করে “আল-জামেউস সাগীর” গ্রন্থে (২/৫১/২) বলেছেনঃ হাদীসটি ইবনু মাজাহ্ বর্ণনা করেছেন। ইমাম মানবীও এ ক্ষেত্রে তার অন্ধ অনুসরণ করেছেন। হাদিসটির আনাস (রাঃ) হতে মারফূ’ হিসেবে আরেকটি সুত্র রয়েছে, সেটিতে নিম্নের ভাষায় বর্ণনা করা হয়েছেঃ
يا ويح الخادم في الدنيا، هو سيد القوم في الآخرة
দুনিয়াতে হায় আফসুস খাদেমের জন্য, তিনি আখেরাতে সম্প্রদায়ের সরদার।
কিন্তু এ হাদীসটি বানোয়াট। হাদীসটিকে আবু নুয়াইম “আলহিলইয়াতুল আওলিয়্যাহ” গ্রন্থে (৮/৫৩) মু’আল্লাকু হিসেবে বর্ণনা করে বলেছেনঃ এটিকে আহমাদ ইবনু আব্দুল্লাহ ফারইয়ানানী শাকীক ইবনু ইবরাহীম হতে, তিনি ইবরাহীম ইবনু আদহাম হতে, তিনি আব্বাদ ইবনু কাসীর হতে, তিনি হাসান বাসরী হতে, তিনি আনাস (রাঃ) হতে ... বর্ণনা করেছেন। অতঃপর তিনি বলেনঃ এটিকে আহমাদ ফারইয়ানানীই বানিয়েছে। তিনি একজন জালকারী ছিলেন। তিনি জালকারী হিসেবে প্রসিদ্ধ।
ইবনু হিব্বানও তাকে জালকারী হিসেবে দোষারোপ করেছেন। হাফিয সাখাবী যে এ হাদীসটিকে শুধুমাত্র খুবই দুর্বল আখ্যা দিয়েছেন, তিনি তাতে শিথিলতা করেছেন। তিনি আরো উল্লেখ করেছেন যে, এর সনদে বিচ্ছিন্নতা রয়েছে, হাসান বাসরী আনাস (রাঃ) হতে শ্রবণ করেননি।
আমি (আলবানী) বলছিঃ আব্বাদ ইবনু কাসীর বাসরী। তার সম্পর্কে ইমাম বুখারী বলেনঃ তাকে মুহাদ্দিসগণ পরিত্যাগ করেছেন। ইমাম নাসাঈ বলেনঃ তিনি মাতরূক।
অন্য ভাষায় এসেছেঃ
إذا كان يوم القيامة نادى مناد على رؤوس الأولين والآخرين: من كان خادما للمسلمين في دار الدنيا، فليقم وليمض على الصراط، آمنا غير خائف، وادخلوا الجنة أنتم ومن شئتم من المؤمنين، فليس عليكم حساب، ولا عذاب
কিয়ামতের দিন (সৃষ্টির) প্রথম আর শেষের সকলের সামনে আহবানকারী আহবান করে বলবেঃ যে ব্যক্তি দুনিয়াতে মুসলিমদের খাদেম ছিল সে দাঁড়িয়ে যাও এবং পুলসিরাত অতিক্রম কর ভীতি ছাড়া নিরাপদে এবং তোমরা জান্নাতে প্রবেশ কর, মুমিনদের মধ্য থেকে যাকে চাও তাদেরকে সহকারে। তোমাদের কোন হিসাব নেই, আবার কোন শাস্তিও নেই।
আবূ নুয়াইম এ হাদীসটিকেও পূর্বোক্ত সনদে বর্ণনা করেছেন। সনদটি যে বানোয়াট সে সম্পর্কে আপনারা অবগত হয়েছেন। এটি সুস্পষ্ট বানোয়াট হাদীস।
তৃতীয়তঃ সাহল ইবনু সা’দ (রাঃ) হতে বর্ণিত হাদীস। এটিকে হাকিম “আত-তারীখ” গ্রন্থে দুর্বল সনদে বর্ণনা করেছেন। আমি এটি সম্পর্কে
“আল-মিশকাত” গ্রন্থে (৩৯২৫) টীকায় ব্যাখ্যা প্রদান করেছ।
سيد القوم خادمهم
ضعيف
-
روي من حديث ابن عباس وأنس بن مالك وسهل بن سعد.
1 - أما حديث ابن عباس، فيرويه يحيى بن أكثم القاضي عن المأمون قال: حدثني أبي عن جده عن المنصور عن أبيه عن جده عن ابن عباس مرفوعا. وفيه قصة. أخرجه أبو القاسم الشهرزوري في " الأمالي " (ق 180 / 2) وأبو عبد الرحمن السلمي في " آداب الصحبة " (ق 139 / 1 مجموع 107) والخطيب في " تاريخ بغداد " (10 / 187) من طرق عن يحيى به. وقد اختلفوا عليه، فبعضهم رواه هكذا، وبعضهم جعل عكرمة مكان الجد، وبعضهم جعله من مسند عقبة بن عامر. ولهذا قال الحافظ السخاوي في " المقاصد الحسنة ": " وفي سنده ضعف وانقطاع ".
2 - وأما حديث أنس، فيرويه حم بن نوح: حدثنا سلم بن سالم عن عبد الله بن المبارك عن حميد الطويل عن أنس مرفوعا بلفظ: " خادم القوم سيدهم، وساقيهم آخرهم شربا ". أخرجه المخلص في قطعة من " الفوائد " (284) وابن أبي شريح الأنصاري في " جزء بيبى " (169 / 1) . قلت: وهذا إسناد ضعيف جدا، علته سلم بن سالم وهو البلخي الزاهد، أجمعوا على ضعفه كما قال الخليلي. وقال ابن حاتم: " لا يصدق ". وحم بن نوح، ترجمة ابن أبي حاتم (1 / 2 / 319) ولم يذكر فيه جرحا ولا تعديلا. والحديث قال السيوطي في " الجامع الصغير ": " رواه أبو نعيم في " الأربعين الصوفية " عن أنس ". فتعقبه المناوي بقوله: " في صنيعه إشعار بأن الحديث لا يوجد مخرجا لأحد من الستة، وإلا لما أبعد النجعة، وهو ذهول، فقد خرجه ابن ماجه باللفظ المذكور عن أبي قتادة، ورواه أيضا الديلمي ". وأقول: ليس هو عند ابن ماجه بتمامه، وإنما له منه: " ساقي القوم آخرهم شربا ".
أخرجه (3434) من طريق أخرى عن أبي قتادة مرفوعا. وهذا القدر منه صحيح، فقد أخرجه مسلم أيضا (2 / 140) من هذا الوجه في حديث نومهم عن صلاة الفجر في السفر. ويبدو لي أن المناوي قلد الديلمي في هذا العزو، فقد قال السخاوي في آخر الكلام على حديث الترجمة:
" (تنبيه) : قد عزاه الديلمي للترمذي وابن ماجه عن أبي قتادة فوهم ". وقلده السيوطي أيضا، فعزاه في " الجامع الكبير " (2 / 51 / 2) لابن ماجه عن أبي قتادة. وأما في " الجامع الصغير " فبيض له، فإنه قال: " عن أبي قتادة "! ولم يذكر مصدره، فقال المناوي: " وعزاه في " الدرر المشتهرة " لابن ماجة من حديث قتادة. وفي " درر البحار " للترمذي! وللحديث طريق أخرى عن أنس مرفوعا بلفظ: " يا ويح الخادم في الدنيا، هو سيد القوم في الآخره ". وهو موضوع.
أخرجه أبو نعيم في " الحلية " معلقا، فقال (8 / 53) : " وحدث أحمد بن عبد الله الفارياناني: حدثنا شقيق بن إبراهيم عن إبراهيم بن أدهم عن عباد ابن كثير عن الحسن عن أنس قال: سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول: فذكره "، وقال: " هذا مما تفرد به الفارياناني بوضعه، وكان وضاعا، مشهورا بالوضع ". واتهمه ابن حبان أيضا بالوضع، فاقتصار الحافظ السخاوي على قوله: " وإسناده ضعيف جدا "، لا يخلومن تساهل، وذكر أنه منقطع أيضا، يعني بين الحسن وأنس قلت: وعباد بن كثير هو البصري، وقال البخاري: " تركوه ". وقال النسائي: " متروك ".
وفي لفظ آخر: " إذا كان يوم القيامة نادى مناد على رؤوس الأولين والآخرين: من كان خادما للمسلمين في دار الدنيا، فليقم وليمض على الصراط، آمنا غير خائف، وادخلوا الجنة أنتم ومن شئتم من المؤمنين، فليس عليكم حساب، ولا عذاب
رواه أبو نعيم بإسناده السابق وهو موضوع كما عرفت، ولوائح الوضع عليه لائحة، وإني لأشم منه أن واضعه صوفي مقيت! 3 - وأما حديث سهل بن سعد، فقد أخرجه الحاكم في " التاريخ " بسند ضعيف كما حققته في تعليقي على " المشكاة " (3925)