পরিচ্ছেদঃ
৮৭৯। নারীদের উপর আযান, ইকামাত, জুম’আর সালাত, জুম’আর দিনের গোসল ও কোন মহিলাকে ইমামতের জন্য তাদের সামনে এগিয়ে দেয়ার বিধান নেই। তবে ইমামতের জন্য মহিলা ইমাম তাদের মধ্যে দাঁড়াবে।
হাদীছটি জাল।
এটি ইবনু আদী “আল-কামিল” (১/৬৫) গ্রন্থে এবং ইবনু আসাকির (১৬/১৫৯/২) আল-হাকাম হতে তিনি আল-কাসেম হতে তিনি আসমা বিনতু ইয়াযীদ হতে মারফূ’ হিসাবে বর্ণনা করেছেন। ইবনু আদী এই হাকামের (ইবনু আবদিল্লাহ ইবনে সা’আদ আল-আয়লী) অন্যান্য হাদীছগুলো উল্লেখ করে বলেছেনঃ তার হাদীছগুলো সবই বানোয়াট। তার মধ্যে যেটি এ সনদে বর্ণিত হয়েছে সেটি বাতিল।
ইমাম আহমাদ বলেনঃ তার হাদীছগুলো সবই বানোয়াট। সা’আদী ও আবূ হাতিম বলেনঃ তিনি মিথ্যুক। নাসাঈ ও দারাকুতনী সহ একদল বলেনঃ তিনি মাতরূকুল হাদীছ যেমনটি "আল-মীযান" গ্রন্থে এসেছে। অতঃপর তিনি তার কতিপয় হাদীছ উল্লেখ করেছেন, এটি সেগুলোর একটি।
হাদীছটি বাইহাকী “আস-সুনানুল কুবরা” (১/৪০৮) গ্রন্থে ইবনু আদীর সূত্রে বর্ণনা করে বলেছেনঃ এ ভাবেই হাকাম ইবনু আবদিল্লাহ বর্ণনা করেছেন, তিনি দুর্বল। আমরা আনাস ইবনু মালেকের হাদীছ হতে আযান ও ইকামাত অধ্যায়ের মধ্যে মওকুফ এবং মারফু হিসাবে বর্ণনা করেছি। তবে মারফূ’ হিসাবে দুর্বল। এটি হাসান (বাসরী), ইবনুল মুসাইয়্যাব, ইবনু সীরীন ও নাখ’ঈর কথা।
সতর্কবাণীঃ
দু’জন সম্মানিত আলেম এ হাদীছটির ব্যাপারে ভুল করেছেনঃ তাদের একজন হচ্ছেন আবুল ফারাজ ইবনুল জাওযী। কারণ তিনি "আত-তাহকীক" (১/৭৯) গ্রন্থে বলেনঃ আমাদের সাথীগণ বর্ণনা করেছেন যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ নারীদের জন্য আযান ও ইকামাত নেই। আমরা এটিকে মারফু হিসাবে চিনি না। এটিকে সাঈদ ইবনু মানসূর হাসান, ইবরাহীম, শা’বী ও সুলায়মান ইবনু ইয়াসার হতে বর্ণনা করেছেন। আতা হতে বর্ণিত হয়েছে তিনি বলেনঃ তারা শুধু ইকামাত দিবে।
আমি (আলবানী) বলছিঃ ইবনুল জাওযী এটিকে মারফু হিসাবে চিনেন না।
আর দ্বিতীয়জন হচ্ছেনঃ শাইখ সুলায়মান ইবনু আবদিল্লাহ ইমাম মুহাম্মাদ ইবনু আব্দিল ওয়াহাবের নাতি। শাইখ সুলায়মান "আল-মুকনে" (১/৯৬) গ্রন্থের টীকায় বলেনঃ ইমাম বুখারী আসমা বিনতে ইয়াযীদ হতে বর্ণনা করেছেন!
এটি মারাত্মক ভুল। জানি না এর উৎপত্তি স্থল কোথায়। তিনিই আমাকে হাদীছটির ব্যাপারে আলোচনা করতে তাড়িত করেছেন। বিশেষ করে নাজদী ভাইয়েরা যাতে তার কথায় ধোকায় না পড়েন সেই আশঙ্কায় আমি হাদীছটি সম্পর্কে আলোচনা করেছি।
অতঃপর আমার নিকট প্রকাশিত হয়েছে যে, বুখারীর উদ্ধৃতিতে বলাটা নাজ্জাদ কর্তৃক তাহরীফকৃত (উলট-পালটকৃত)। তিনি (নাজ্জাদ) হচ্ছেন আহমাদ ইবনু সুলায়মান ইবনিল হাসান আবু বাকর, হাম্বালী মাযহাবের এক মুহাদ্দিছ ও ফাকীহ (তার জন্ম ২৫৩ সনে আর মৃত্যু ৩৪৮ সনে)। যেমনটি আমাকে মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষক (১৭/৯/১৩৮১ হিঃ) বর্ণনা করেছেন।
হাদীছটির প্রথম অংশটি আব্দুর রাযযাক "আল-মুসান্নাফ" (৫০২২) গ্রন্থে এবং বাইহাকী আব্দুল্লাহ ইবনু উমার হতে তিনি নাফে’ হতে তিনি ইবনু উমার (রাঃ) হতে মওকুফ হিসাবে বর্ণনা করেছেন।
এ সনদটি মওকুফ হওয়া সত্ত্বেও দুর্বল। আব্দুল্লাহ ইবনু উমার হচ্ছেন উমারী আল-মুকাব্বির, তিনি দুর্বল।
শাওকানী যে "নাইলুল আওতার" (২/২৭) গ্রন্থে বলেছেনঃ সনদটি সহীহ। তার এ কথাটি সহীহ নয়। সম্ভবত তিনি তাকে উমারী আল-মুসান্নার মনে করে বলেছেন। কারণ মুসান্নার নির্ভরযোগ্য। কিন্তু এখানে মুসান্নারকে উল্লেখ করা হয়নি। কারণ তার নাম হচ্ছে ওবায়দুল্লাহ। তিনি এ মর্মে সন্দেহে ফেলেছেন যে, ইবনু উমার (রাঃ) সূত্রে হাদীছটি মারফু, অথচ হাদীছটি সেরূপ নয় যেমনটি আপনারা জেনেছেন।
ইবনু উমার (রাঃ) হতে তার বিপরীত বর্ণনা করা হয়েছে। আবু দাউদ তার “মাসায়েল” (২৯) গ্রন্থে বলেনঃ
মহিলাদের আযান ও ইকামাত দেয়ার বিষয়ে ইমাম আহমাদকে প্রশ্ন করা হলে তাকে আমি বলতে শুনেছিঃ ইবনু উমার (রাঃ)-কে মহিলা কর্তৃক আযান ও ইকামাত দেয়ার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেনঃ আমি আল্লাহকে স্মরণ করা হতে নিষেধ করবো? আমি আল্লাহকে স্মরণ করা হতে নিষেধ করবো?
যদিও এটির সনদ সম্পর্কে অবহিত হইনি তবুও এটি পূর্বেরটির চেয়ে উত্তম। আমার অধিকাংশ ধারণা এটি তার নিকট সাব্যস্ত না হলে তিনি এর দ্বারা দলীল গ্রহণ করতেন না। অতঃপর আমার ধারণাটি সত্যে পরিণত হয়েছে। উক্ত আছারটি ইবনু আবী শাইবাহ তার “আল-মাসান্নাফ” (১/২২৩) গ্রন্থে ইবনু উমার (রাঃ) হতে ভাল সনদে বর্ণনা করেছেন। তাকে শক্তিশালী করছে বাইহাকীর নিকট বর্ণিত আছার। তিনি লাইছ হতে তিনি আতা হতে তিনি আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন, তিনি (আয়েশা) আযান ও ইকামাত দিতেন এবং মহিলাদের মাঝে দাঁড়িয়ে তাদের ইমামত করতেন। এটি আব্দুর রাযযাক ও ইবনু আবি শাইবাহ সংক্ষিপ্তাকারে বর্ণনা করেছেন।
এই লাইছ হচ্ছেন ইবনু আবী সুলায়েম। তিনি দুর্বল।
বাইহাকী মাকহুল হতে বর্ণনা করেছেন- তিনি বলেনঃ যখন নারীরা আযান দিবে তখন ইকামাত দিবে এটিই উত্তম। ইকামাতের চেয়ে বেশী কিছু না করলেও তাদের পক্ষ হতে তাই যথেষ্ট হবে। ইবনু ছাওবান বলেনঃ যদি ইকামাত না দেয় তবুও (যথেষ্ট হয়ে যাবে)। কারণ যুহরী উরওয়াহ হতে তিনি আয়েশা হতে বর্ণনা করেছেন, তিনি [আয়েশা (রাঃ)] বলেনঃ আমরা সালাত আদায় করতাম ইকামাত ছাড়াই।
আমি (আলবানী) বলছিঃ ইবনু ছাওবান হচ্ছেন আব্দুর রহমান ইবনু ছাবেত ইবনে ছওবান আল-আনাসী আদ-দামেস্কী। তিনি মুহাম্মাদ ইবনু আবদির রহমান ইবনে ছাওবান আমেরী আল-মাদানী নন। কারণ এই আমের আনাসীর পূর্বের, তিনি তাবেঈদের অন্তর্ভুক্ত। আর আনাসী তাবে তাবেঈদের একজন। তিনি হাদীছের ক্ষেত্রে ভাল। এ ছাড়া সনদের অন্যান্য বর্ণনাকারীগণ নির্ভরযোগ্য। অতএব সনদটি হাসান।
বাইহাকী এ বর্ণনা ও লাইছের বর্ণনাকে জমা করতে গিয়ে বলেছেনঃ শেষোক্তটি যদি সহীহ হয়, তাহলে কোন দ্বন্দ্ব নেই। কারণ আয়েশা (রাঃ) একবার এটা করেছেন আরেকবার ছেড়ে দিয়েছেন, উভয়টিই জায়েয তা দেখানোর জন্য। জাবের (রাঃ) হতে উল্লেখ করা হয়েছে, তাকে মহিলারা ইকামাত দিবে কি না জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল। তিনি উত্তরে বলেনঃ জি হ্যাঁ।
এ বিষয়ে আবুত তাইয়েব সিদিক হাসান খান "আর-রাওযাতুন নাদিয়াহ" (১/৭৯) গ্রন্থে যা বলেছেন তাই সঠিকঃ
’স্পষ্টত যা প্রমাণিত হচ্ছে তা এই যে, নারীরা পুরুষদের ন্যায়। কারণ তারা তাদেরই সহোদর। তাদেরকে নির্দেশ প্রদান করা হলে তা নারীদেরকেও সম্পূক্ত করে। তাদের (নারীদের) উপর আযান ও ইকামাত ওয়াজিব না হওয়ার মত কোন গ্রহণযোগ্য দলীল বর্ণিত হয়নি। কারণ সে বিষয়ে যা বর্ণিত হয়েছে, তার সনদগুলোতে মাতরূক বর্ণনাকারী রয়েছে। তাদের দ্বারা দলীল গ্রহণ করা যায় না। যদি এমন কোন গ্রহণযোগ্য দলীল বর্ণিত হয় যা তাদেরকে পুরুষদের আম হুকুম হতে বের করার উপযোগী তাহলে তা গৃহীত হবে। অন্যথায় তাদের (নারীদের) ক্ষেত্রে আযান ও ইকামতের বিষয়টি পুরুষদের ন্যায়।
ليس على النساء أذان ولا إقامة ولا جمعة ولا اغتسال جمعة ولا تقدمهن امرأة ولكن تقوم في وسطهن
موضوع
-
رواه ابن عدي في " الكامل " (65 / 1) وابن عساكر (16 / 159 / 2) عن الحكم عن القاسم عن أسماء (يعني بنت يزيد) ، مرفوعا
وقال ابن عدي بعد أن ساق أحاديث أخرى للحكم هذا وهو ابن عبد الله بن سعد الأيلي: " أحاديثه كلها موضوعة، وما هو منها معروف المتن فهو باطل بهذا الإسناد، وما أمليت للحكم عن القاسم بن محمد والزهري وغيرهم كلها مما لا يتابعه الثقات عليه، وضعفه بين على حديثه ". وقال أحمد: " أحاديثه كلها موضوعة ". وقال السعدي وأبو حاتم: " كذاب ". وقال النسائي والدارقطني وجماعة: " متروك الحديث ". كما في " الميزان " ثم ساق له أحاديث هذا منها
والحديث رواه البيهقي في " السنن الكبرى " (1 / 408) من طريق ابن عدي، ثم قال عقبه: " هكذا رواه الحكم بن عبد الله الأيلي، وهو ضعيف، ورويناه في الأذان والإقامة عن أنس بن مالك موقوفا ومرفوعا، ورفعه ضعيف، وهو قول الحسن وابن المسيب وابن سيرين والنخعي
(تنبيه) : أخطأ في هذا الحديث عالمان جليلان: أحدهما أبو الفرج ابن الجوزي فإنه قال في " التحقيق " (79 / 1) : " وقد حكى أصحابنا أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: " ليس على النساء أذان ولا إقامة
وهذا لا نعرفه مرفوعا، إنما رواه سعيد بن منصور عن الحسن وإبراهيم والشعبي وسليمان بن يسار، وحكى عن عطاء أنه قال: يقمن ". قلت: فلم يعرفه ابن الجوزي مرفوعا، وقد روي كذلك كما سبق
والآخر الشيخ سليمان بن عبد الله حفيد الإمام محمد بن عبد الوهاب رحمهم الله تعالى فقال الشيخ سليمان في حاشيته على " المقنع " (1 / 96) : " رواه البخاري عن أسماء بنت يزيد "! وهذا خطأ فاحش لا أدري منشأه، وهو الذي حملني على تحقيق القول في هذا الحديث ونشره على الناس، وخاصة إخواننا النجديين، خشية أن يغتروا بهذا القول ثقة منهم بالشيخ رحمه الله تعالى، والعصمة لله وحده
ثم تبين أن البخاري محرف من " النجاد " فقد عزاه إليه بعض الحنابلة كما حدثني أحد أساتذة الجامعة الإسلامية في المدينة في (17 / 9 / 1381) . و" النجاد " هذا أحد محدثي فقهاء الحنابلة وحفاظهم، واسمه أحمد بن سلمان بن الحسن أبو بكر الفقيه، ولد سنة 253، وتوفي سنة 348
ثم إن الحديث أخرج الشطر الأول منه عبد الرزاق في " المصنف " (5022) والبيهقي من طريق عبد الله بن عمر عن نافع عن ابن عمر أنه قال: فذكره موقوفا
وهذا سند ضعيف مع وقفه، فإن عبد الله بن عمر هذا هو العمري المكبر وهو ضعيف. وأما قول الشوكاني في " النيل " (2 / 27) : " إسناد صحيح " فليس بصحيح. ولعله توهم أن العمري هذا هو المصغر، فإن ثقة وليس به، فإن اسمه عبيد الله، على أنه أوهم أن الحديث مرفوع عن ابن عمر، وليس كذلك كما عرفت. وقد روي عن ابن عمر خلافه، فقال أبو داود في " مسائله " (29) : " سمعت أحمد سئل عن المرأة تؤذن وتقيم؟ قال: سئل ابن عمر عن المرأة تؤذن وتقيم؟ قال: أنا أنهى عن ذكر الله عز وجل؟! أنا أنهى عن ذكر الله عز وجل؟! استفهام
وهذا أولى من الذي قبله وإن كنت لم أقف على إسناده، وغالب الظن أنه لو لم يكن ثابتا عند أحمد لما احتج به. ثم صدق ظني، فقد وجدت الأثر المذكور أخرجه ابن أبي شيبة في " مصنفه " (1 / 223) بسند جيد عن ابن عمر، ويؤيده، ما عند البيهقي عن ليث عن عطاء عن عائشة أنها كانت تؤذن وتقيم، وتؤم النساء وتقوم وسطهن. ورواه عبد الرزاق وابن أبي شيبة مختصرا. وليث هو ابن أبي سليم، وهو ضعيف. ثم روى البيهقي عن عمرو بن أبي سلمة قال: سألت ابن ثوبان: هل على النساء إقامة؟ فحدثني أن أباه حدثه قال: سألت مكحولا؟ فقال: إذا أذن فأقمن فذلك أفضل، وإن لم يزدن على الإقامة أجزأت عنهن، قال ابن ثوبان: وإن لم يقمن فإن الزهري حدث عن عروة عن عائشة قالت: " كنا نصلي بغير إقامة
قلت: وابن ثوبان هو عبد الرحمن بن ثابت بن ثوبان العنسي الدمشقي وليس هو محمد بن عبد الرحمن بن ثوبان كما ذكر المعلق على " سنن البيهقي "، وهو العامري المدني، فإن هذا العامري متقدم على العنسي هذا من التابعين، والعنسي من أتباع التابعين، وهو حسن الحديث، وبقية الرجال ثقات، فالسند حسن، وقد جمع البيهقي بين هذا وبين رواية ليث المقدمة بقوله: " وهذا إن صح مع الأول، فلا يتنافيان، لجواز أنها فعلت ذلك مرة، وتركته أخرى لبيان الجواز، والله أعلم
ويذكر عن جابر بن عبد الله أنه قيل له: أتقيم المرأة؟ قال: نعم ". والحق في هذه المسألة ما قاله أبو الطيب صديق خان في " الروضة الندية " (1 / 79) : " ثم الظاهر أن النساء كالرجال لأنهن شقائقهن، والأمر لهم أمر لهن، ولم يرد ما ينتهض للحجة في عدم الوجوب عليهن، فإن الوارد في ذلك في أسانيده متروكون لا يحل الاحتجاج بهم، فإن ورد دليل يصلح لإخراجهن فذاك، وإلا فهن كالرجال