২২২২

পরিচ্ছেদঃ ২. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - কিরাআতের ভিন্নতা ও কুরআন সংকলন প্রসঙ্গে

২২২২-[১২] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি একবার খলীফা ’উসমানকে বললাম, কোন্ জিনিস আপনাদেরকে উদ্বুদ্ধ করল যে সূরা আনফাল, যা সূরা ’মাসানী’র অন্তর্ভুক্ত, সূরা বারাআত (আত্ তওবা্) যা ’মাঈন’-এর অন্তর্ভুক্ত? এ উভয় সূরাকে এক স্থানে একত্র করে দিলেন? এ দু’ সূরার মাঝে আবার বিসমিল্লা-হির রহমা-নির রহীম লাইনও লিখলেন না? আর এগুলোকে জায়গা দিলেন ’’সাব্’ইত্ব তুওয়াল’’-এর মধ্যে (অর্থাৎ- ৭টি দীর্ঘ সূরা)। কোন্ বিষয়ে আপনাদেরকে এ কাজ করতে উজ্জীবিত করল? ’উসমান জবাবে বললেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ওপর ওহী নাযিল হবার অবস্থা ছিল এমন যে, কোন কোন সময় দীর্ঘ দিন অতিবাহিত হত (তাঁর ওপর কোন সূরা নাযিল হত না) আবার কোন কোন সময় তাঁর ওপর বিভিন্ন সূরা (একত্রে) নাযিল হত। তাঁর ওপর কুরআনের কিছু নাযিল হলে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁর কোন না কোন সাহাবী ওহী লেখককে (কাতিবে ওহী) ডেকে বলতেন, এ আয়াতগুলোকে অমুক সূরার অন্তর্ভুক্ত করো। যেসব আয়াতে অমুক অমুক বর্ণনা রয়েছে এর, আর অন্য কোন আয়াত নাযিল হলে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলতেন, এ আয়াতকে অমুক সূরায় স্থান দাও।

মদীনায় প্রথম নাযিল হওয়া সূরাহসমূহের মধ্যে সূরা আল আনফাল অন্তর্ভুক্ত। আর সূরা ’বারাআত’ মদীনায় অবতীর্ণ হবার দিক দিয়ে শেষ সূরাগুলোর অন্তর্গত। অথচ ও দু’টি সূরার বিষয়বস্ত্ত প্রায় এক। এরপর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইন্তিকালের কারণে আমাদেরকে বলে যেতে পারেননি সূরা বারাআত, সূরা আনফাল-এর অন্তর্ভুক্ত কিনা। তাই (অর্থাৎ- উভয় সূরা মাদানী ও বিষয়বস্ত্তর মিল থাকার কারণে) আমি এ দু’ সূরাকে একত্রে মিলিয়ে দিয়েছি। ’বিসমিল্লা-হির রহমা-নির রহীম’ লাইনও (এ দু’ সূরার মধ্যে) লিখিনি এবং এ কারণেই এটাকে ’’সাব্’ইত্ব তুওয়াল’’-এর অন্তর্গত করে নিয়েছি। (আহমদ, তিরমিযী ও আবূ দাঊদ)[1]

وَعَن ابْن عَبَّاس قَالَ: قلت لعُثْمَان بن عَفَّان مَا حملكم أَنْ عَمَدْتُمْ إِلَى الْأَنْفَالِ وَهِيَ مِنَ الْمَثَانِي وَإِلَى بَرَاءَةٍ وَهِيَ مِنَ الْمَئِينِ فَقَرَنْتُمْ بَيْنَهُمَا وَلم تكْتبُوا بَينهمَا سَطْرَ بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ وَوَضَعْتُمُوهَا فِي السَّبع الطول مَا حملكم على ذَلِك فَقَالَ عُثْمَانُ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِمَّا يَأْتِي عَلَيْهِ الزَّمَان وَهُوَ تنزل عَلَيْهِ السُّور ذَوَات الْعدَد فَكَانَ إِذا نزل عَلَيْهِ الشَّيْء دَعَا بعض من كَانَ يَكْتُبُ فَيَقُولُ: «ضَعُوا هَؤُلَاءِ الْآيَاتِ فِي السُّورَةِ الَّتِي يُذْكَرُ فِيهَا كَذَا وَكَذَا» فَإِذَا نَزَلَتْ عَلَيْهِ الْآيَةُ فَيَقُولُ: «ضَعُوا هَذِهِ الْآيَةَ فِي السُّورَةِ الَّتِي يُذْكَرُ فِيهَا كَذَا وَكَذَا» . وَكَانَتِ الْأَنْفَالُ مِنْ أَوَائِلِ مَا نَزَلَتْ بِالْمَدِينَةِ وَكَانَتْ بَرَاءَة من آخر الْقُرْآن وَكَانَت قصَّتهَا شَبيهَة بِقِصَّتِهَا فَظَنَنْت أَنَّهَا مِنْهَا فَقُبِضَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَلَمْ يبين لنا أَنَّهَا مِنْهَا فَمِنْ أَجْلِ ذَلِكَ قَرَنْتُ بَيْنَهُمَا وَلِمَ أكتب بَينهمَا سَطْرَ بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ وَوَضَعْتُهَا فِي السَّبْعِ الطُّوَلِ. رَوَاهُ أَحْمَدُ وَالتِّرْمِذِيُّ وَأَبُو دَاوُدَ

وعن ابن عباس قال قلت لعثمان بن عفان ما حملكم ان عمدتم الى الانفال وهي من المثاني والى براءة وهي من المىين فقرنتم بينهما ولم تكتبوا بينهما سطر بسم الله الرحمن الرحيم ووضعتموها في السبع الطول ما حملكم على ذلك فقال عثمان كان رسول الله صلى الله عليه وسلم مما ياتي عليه الزمان وهو تنزل عليه السور ذوات العدد فكان اذا نزل عليه الشيء دعا بعض من كان يكتب فيقول ضعوا هولاء الايات في السورة التي يذكر فيها كذا وكذا فاذا نزلت عليه الاية فيقول ضعوا هذه الاية في السورة التي يذكر فيها كذا وكذا وكانت الانفال من اواىل ما نزلت بالمدينة وكانت براءة من اخر القران وكانت قصتها شبيهة بقصتها فظننت انها منها فقبض رسول الله صلى الله عليه وسلم ولم يبين لنا انها منها فمن اجل ذلك قرنت بينهما ولم اكتب بينهما سطر بسم الله الرحمن الرحيم ووضعتها في السبع الطول رواه احمد والترمذي وابو داود

ব্যাখ্যা: মুহাদ্দিসগণ কুরআনকে চারভাগে ভাগ করেছেন। আর প্রত্যেক ভাগের এক একটি নাম দিয়েছেন। তারা বলেন, কুরআনের প্রথম দিকের সূরার নাম السبع الطول ‘‘সাব্‘ইত্ব তুওয়াল’’। এ প্রকারের মধ্যে রয়েছে সূরা আল বাকারাহ্ থেকে সূরা আল আ‘রাফ পর্যন্ত ছয়টি সূরা। সপ্তম সূরা নিয়ে মতভেদ রয়েছে। কেউ বলেন, সূরা ফাতিহাহ্ যদিও এর আয়াত সংখ্যা কম কিন্তু এর অর্থের আধিক্যতা রয়েছে।

কেউ কেউ বলেন, সূরা আনফাল ও তাওবার সমষ্টি হচ্ছে সপ্তম সূরা। এ সূরা দু’টি যেন একটি সূরা। এ কারণে এই দু’টি সূরার মাঝে بسم الله দ্বারা পার্থক্য করা হয়নি।

* দ্বিতীয় প্রকার হলো ذوات مائية অর্থাৎ- যেসব সূরায় ১০০ বা ১০০ এর কম বেশি আয়াত রয়েছে, এ ধরনের সূরার সংখ্যা ১১ টি। এর আরেক নাম المئون

* তৃতীয় প্রকার হলো مثانى অর্থাৎ- যেসব সূরায় ১০০ এর কম আয়াত আছে। এ প্রকার সূরার সংখ্যা ২০ টি।

* চতুর্থ প্রকার হলো مفصل। আর এ নামে নামকরণের কারণ হলো بسم الله এর মাধ্যমে সূরাগুলোকে বেশি বেশি ভাগ করা হয়েছে।

ইবনু ‘আব্বাস ‘উসমান (রাঃ)-কে দু’টি প্রশ্ন করেছেন। (এক) আনফাল ছোট সূরা হওয়া সত্ত্বেও কেন الطول-এ এবং সূরা তাওবাকে طول -এর সমপর্যায়ের হওয়া সত্ত্বেও مئين এ আর দু’টির মাঝে بسم الله কেন লেখা হল না।

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) এর দু’টি প্রশ্নের জবাব ‘উসমান (রাঃ) প্রদান করেছেন, কারণ দু’টি বিষয়ের মাঝে সাদৃশ্য রয়েছে। কেননা তিনি মনে করেছেন যে, সূরা দু’টি একটিই সূরা। তাই এটাকে السبع الطول এর মাঝে রাখা হয়েছে। আর এ দু’টির মাঝে بسم الله লেখা হয়নি।

অথবা দু’টি সূরা মনে করেছেন, তাই এ দু’টির মাঝে ফাঁকা সাদা জায়গা রাখা হয়েছে। এ ধরনের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে এটা সাদৃশ্য হওয়া বা অস্পষ্ট হওয়ায় এবং এ দু’টির একটি সূরা হওয়াতে অকাট্য প্রমাণ না থাকায়।

বর্তমানে কুরআনে যে অবস্থায় সূরার ধারাবাহিকতা দেখা যাচ্ছে এটা আল্লাহ কর্তৃক জিবরীল মারফত প্রাপ্ত না সাহাবীদের ইজতিহাদের মাধ্যমে হয়েছে, এ ব্যাপারে মতানৈক্য রয়েছে।

কেউ কেউ বলেন, এটা সাহাবীদের ইজতিহাদের মাধ্যমে। এ মতের প্রবক্তাদের মধ্যে কাযী আবূ বাকর (রহঃ) অন্যতম। তারা এ মতের প্রতি ঝুঁকেছেন এজন্যে যে, সাহাবীদের কুরআন নাযিলের কারণ এবং শব্দাবলীর অবস্থান স্থল সম্পর্কে জ্ঞান ছিল। মূলত তারা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট থেকে যা শুনতেন তা লিখে রাখতেন।

আবার কেউ বলেন, আয়াতের ধারাবাহিকতা ও সূরার ধারাবাহিকতা আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত বিধান।

ইমাম বায়হাক্বী (রহঃ) তাঁর مدخل গ্রন্থে বলেছেন, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যুগে সূরা আনফাল ও তাওবাহ্ ব্যতীত অন্য সব আয়াত ও সূরা এ ধারাতেই সাজানো ছিল। যা ‘উসমান (রাঃ) এর হাদীস থেকে বুঝা যাচ্ছে। ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূত্বী ও ‘উলামাগণের বিস্তারিত মতভেদের বর্ণনা উল্লেখ পূর্বক ইমাম বায়হাক্বীর মত সমর্থন করে ‘আলিমদের মতামতকে উল্লেখ করে বলেন, সূরা আনফাল ও তাওবাহ্ ছাড়া সমস্ত সূরার তারতীব আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত।

নির্ভরযোগ্য ও অগ্রাধিকারযোগ্য মত: ইমাম বাগাবী, ইবনুল আবারী, কিরমানী ও অন্যান্যদের মত হচ্ছে আমাদের সিদ্ধান্ত। তাদের মত হলো বর্তমানে কুরআনে সূরার এবং আয়াতের যে ধারাবাহিকতা রয়েছে এভাবে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পাদন করেছেন। যেমন জিবরীল (আঃ) আল্লাহর নিকট থেকে সংবাদ পেয়েছেন। সুতরাং সমস্ত সূরার ধারাবাহিকতা আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত। আর এর বিপক্ষে যেসব মত রয়েছে তা প্রত্যাখ্যানযোগ্য।

তিরমিযী ও মুসনাদে আহমাদে বর্ণিত হয়েছে যে, মদীনায় প্রথমদিকে সূরা আল আনফাল নাযিল হয়েছে এবং সূরা আত্ তাওবাহ্ কুরআন নাযিলের শেষের দিকে নাযিল হয়েছে।

কারী বলেন, সূরা আত্ তাওবাহ্ মাদানী সূরা। এ দু’টি সূরার মাঝে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ধারাবাহিক বিষয়বস্ত্তর সাদৃশ্য রয়েছে। আর এটাই হচ্ছে দু’টি সূরাকে একত্রিত করার একটি কারণ।

মোটকথা দু’টি সূরা হওয়ার ব্যাপারে স্পষ্ট দলীল না আসায় بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ উল্লেখ করা হয়নি, একটি সূরা হওয়ার ব্যাপারে স্পষ্ট না পাওয়ায় ফাঁকা জায়গা রাখা হয়েছে। আর দু’টি সূরা হলেও طول-এ রাখা বেঠিক হয়নি। কারণ مئين-এর ক্ষেত্রে কিছুটা ব্যতিক্রম দেখা যায়। যেমন সূরা র‘দ এবং সূরা ইব্রাহীম। আর যদি একটি সূরা হয় তাহলে তাকে সেখানে রাখা ঠিক হয়েছে। যাকে مثانى-এর স্থানে দিলে তা ঠিক হতো না ও সামঞ্জস্যপূর্ণ হতো না । তাই সাদৃশ্য থাকার কারণে طول-এর শেষে এবং مئين-এর প্রথমে স্থান দেয়া হয়েছে।


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৮: কুরআনের মর্যাদা (كتاب فضائل القراٰن)