পরিচ্ছেদঃ ৩. তৃতীয় ‘অনুচ্ছেদ - তাকদীরের প্রতি ঈমান
১২১-[৪৩] ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) সূত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা ’আরাফার মাঠের সন্নিকটে না’মান নামে এক জায়গায় আদম (আঃ)-এর মেরুদণ্ড হতে তাঁর সন্তানদের বের করে শপথ গ্রহণ করিয়েছিলেন। তিনি আদম (আঃ)-এর মেরুদণ্ড হতে তাঁর প্রত্যেক সন্তানকে বের করেছিলেন। এ সকলকে পিঁপড়ার মতো আদম (আঃ)-এর সামনে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছিল। অতঃপর আল্লাহ তাদের সম্মুখপানে কথা বলেছিলেন- ’’আমি কি তোমাদের ’প্রভু’ নই? আদম সন্তানরা উত্তর দিয়েছিল, হ্যাঁ, অবশ্যই আপনি আমাদের ’প্রতিপালক’। এতে আমরা সাক্ষী থাকলাম যাতে তোমরা কিয়ামতের (কিয়ামতের) দিন এ কথা বলতে না পারো, আমরা জানতাম না কিংবা তোমরা এ কথাও বলতে না পারো, আমাদের পিতৃ-পুরুষগণ আমাদের পূর্বে মুশরিক হয়ে গিয়েছিল। আর আমরা তাদের পরবর্তী বংশধর। তুমি কি বাতিলধর্মীরা (পিতৃ-পুরুষগণ) যা করেছে সে ’আমলের কারণে আমাদেরকেও ক্ষতিগ্রস্ত করে দিবে’’- (সূরাহ্ আ’রাফ ১৭২-১৭৩)। (আহমাদ)[1]
باب الإيمان بالقدر - الفصل الثالث
وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: أَخذ الله الْمِيثَاق من ظهر آدم بنعمان يَعْنِي عَرَفَة فَأخْرج من صلبه كل ذُرِّيَّة ذَرَاهَا فَنَثَرَهُمْ بَيْنَ يَدَيْهِ كَالذَّرِّ ثُمَّ كَلَّمَهُمْ قِبَلًا قَالَ: (أَلَسْتُ بِرَبِّكُمْ قَالُوا بَلَى شَهِدْنَا أَنْ تَقُولُوا يَوْمَ الْقِيَامَةِ إِنَّا كُنَّا عَنْ هَذَا غافلين أَوْ تَقُولُوا إِنَّمَا أَشْرَكَ آبَاؤُنَا مِنْ قَبْلُ وَكُنَّا ذُرِّيَّةً مِنْ بَعْدِهِمْ أَفَتُهْلِكُنَا بِمَا فَعَلَ المبطلون)
رَوَاهُ أَحْمد
Chapter: Belief in the Divine Decree - Section 3
Ibn ‘Abbas reported the Prophet as saying:
God made the covenant from Adam’s back in Na‘man, i.e. ‘Arafa, and brought forth from his loins all his offspring whom He created and scattered before Him like small ants. He then spoke to them face to face saying, “Am I not your Lord?’ They replied, “Yes, we testify this.” [It was] lest you should say on the day of resurrection, “We were neglectful of this,” or should say, “Our fathers were polytheists before us and we were an offspring after them. Wilt Thou destroy us for what the workers of vanity did?” *
Ahmad transmitted it.
* Quran, 7:172-173
ব্যাখ্যা: (فَنَثَرَهُمْ بَيْنَ يَدَيْهِ كَالذَّرِّ) ‘‘অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা আদম (আঃ)-এর সন্তানদেরকে তাঁর সামনে পিপিলিকার মতো ছড়িয়ে দিলেন।’’ অর্থাৎ- আল্লাহ তা‘আলা আদম (আঃ)-এর পিঠ থেকে তার সন্তানদেরকে বের করলেন পিপিলিকার মতো ছোট আকারে এবং তাদেরকে আদম (আঃ)-এর সামনে উপস্থাপন করলেন।
(ثُمَّ كَلَّمَهُمْ قُبُلًا) ‘‘অতঃপর তাদের সাথে কথা বলেছিলেন সামনাসামনি’’। অর্থাৎ- আল্লাহ তা‘আলা সরাসরি তাদের সামনে উপস্থিত হয়ে কথা বলেছিলেন। এ কথার বিনিময় পর্দার অন্তরাল থেকে ছিল না এবং মালাকের (ফেরেশতার) মাধ্যমেও ছিল না।
(أَلَسْتُ بِرَبِّكُمْ؟) ‘‘আমি কি তোমাদের প্রভু নই?’’
(قَالُوا بَلى) ‘‘তারা বললঃ হ্যাঁ।’’ অর্থাৎ- হ্যাঁ, আপনিই আমাদের প্রভু, আপনি ব্যতীত অন্য কেউ আমাদের প্রভু নন।
প্রকৃতপক্ষে অর্থ হলো, নিজের তাওহীদের স্বীকৃতি দেয়ার পরেও এর মাধ্যমে তারা যেন যুক্তি স্থাপন না করতে পারে, এজন্যই আল্লাহ তা‘আলা ঐ স্বীকারোক্তি নিয়েছিলেন।
পরিচ্ছেদঃ ৩. তৃতীয় ‘অনুচ্ছেদ - তাকদীরের প্রতি ঈমান
১২২-[৪৪] উবাই ইবনু কা’ব (রাঃ) হতে মহামহিম আল্লাহর বাণী বর্ণিত। তিনি এ আয়াতের ’’তোমাদের রব যখন বানী আদমের মেরুদণ্ড থেকে তাদের সন্তানদের বের করলেন’’- (সূরাহ্ আ’রাফ ৭: ১৭২-১৭৩) এর তাফসীরে বলেন, আল্লাহ তা’আলা আদম সন্তানদের একত্রিত করলেন। তাদেরকে বিভিন্ন রকম করে গড়ার মনস্থ করলেন, এরপর তাদের আকার-আকৃতি দান করলেন। তারপর কথা বলার শক্তি দিলেন। এবার তারা কথা বলতে লাগলো। অতঃপর তাদের কাছ থেকে ওয়া’দা-অঙ্গীকার গ্রহণ করলেন এবং তাদের নিজের সাক্ষ্য গ্রহণ করলেন, ’আমি কি তোমাদের রব নই’? আদম সন্তানগণ বলল, হ্যাঁ, (নিশ্চয়ই আপনি আমাদের রব)।
তারপর আল্লাহ তা’আলা বললেন, আমি তোমাদের এ কথার উপর সাত আসমান ও সাত জমিনকে তোমাদের সম্মুখে সাক্ষী করছি এবং তোমাদের পিতা আদমকেও সাক্ষী বানাচ্ছি। তোমরা যেন কিয়ামতের (কিয়ামতের) দিন এ কথা বলার সুযোগ না পাও যে, আমরা তো এ ব্যাপারে কিছুই জানি না। তাই এখন তোমরা ভালো করে জেনে নাও, আমি ছাড়া তোমাদের কোন মা’বূদ নেই এবং আমি ছাড়া তোমাদের কোন প্রতিপালকও নেই। সুতরাং (সাবধান) আমার সাথে কাউকে শরীক করো না। আমি শীঘ্রই তোমাদের কাছে আমার রসূলগণকে প্রেরণ করবো, যারা তোমাদেরকে আমার ওয়া’দা-অঙ্গীকার স্মরণ করিয়ে দিবেন। অতঃপর তোমাদের ওপর আমি আমার কিতাবসমূহ নাযিল করবো।
তখন এ কথা শুনে আদম সন্তান বলল, আমরা এ কথার সাক্ষ্য দিচ্ছি, নিশ্চয়ই তুমি আমাদের রব ও আমাদের ইলাহ। তুমি ছাড়া আমাদের কোন রব নেই এবং তুমি ছাড়া আমাদের কোন ইলাহ নেই। বস্তুত আদম সন্তানদের সকলে এ কথা স্বীকার করে নিল। আদম (আঃ)-কে তাদের ওপর উঠিয়ে ধরা হলো। তিনি সকলকে প্রত্যক্ষ করলেন। তিনি দেখলেন, তাঁর সন্তানদের মধ্যে ধনী-দরিদ্রও আছে, সুন্দর-অসুন্দরও আছে। (এটা দেখে) তিনি বললেন, হে রব! তুমি তোমার বান্দাদের সকলকে যদি এক সমান করে বানাতে? আল্লাহ তা’আলা বললেন, আমি চাই আমার বান্দারা আমার প্রতি কৃতজ্ঞতার মধ্যে থাকুক।
এরপর আদম (আঃ) নবীদেরকে দেখলেন, তারা সকলেই যেন চেরাগের ন্যায়- তাদের ওপর আলো ঝলমল করছিল। তাদের কাছ থেকে বিশেষ করে নুবূওয়্যাতের ও রিসালাতের দায়িত্ব পালনের বিশেষ শপথও নেয়া হয়েছে। আল্লাহ তা’আলা বলছেন (অনুবাদঃ) ’’আমি নবীদের নিকট হতে যখন তাদের ওয়া’দা অঙ্গীকার গ্রহণ করলাম এবং আপনি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, নূহ (আঃ), ইবরাহীম (আঃ), মূসা (আঃ), ’ঈসা (আঃ) ইবনু মারইয়াম (আঃ) হতেও (অঙ্গীকার ও ওয়া’দা) নেয়া হয়েছে’’- (সূরাহ্ আল আহযাব ৩৩: ৭)। তিনি [উবাই (রাঃ)] বলেন, এ রূহদের মধ্যে ’ঈসা ইবনু মারইয়াম (আঃ) এর রূহ্ (আত্মা)-ও ছিল। অতঃপর আল্লাহ তা’আলা এ রূহকেই মারইয়াম (আঃ) এর প্রতি প্রেরণ করেছেন। উবাই বলেছেন, এ রূহ মারইয়াম (আঃ)-এর মুখ দিয়ে (তাঁর পেটে) প্রবেশ করেছে।[1] (আহমাদ)
باب الإيمان بالقدر - الفصل الثالث
عَن أبي بن كَعْب فِي قَوْلِ اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ (وَإِذْ أَخَذَ رَبُّكَ مِنْ بَنِي آدَمَ مِنْ ظُهُورهمْ ذرياتهم وأشهدهم على أنفسهم)
الْآيَة قَالَ جمعهم فجعلهم أرواحا ثُمَّ صَوَّرَهُمْ فَاسْتَنْطَقَهُمْ فَتَكَلَّمُوا ثُمَّ أَخَذَ عَلَيْهِمُ الْعَهْدَ وَالْمِيثَاقَ وَأَشْهَدَهُمْ عَلَى أَنْفُسِهِمْ أَلَسْتُ بِرَبِّكُمْ قَالَ فَإِنِّي أشهد عَلَيْكُم السَّمَوَات السَّبْعَ وَالْأَرَضِينَ السَّبْعَ وَأُشْهِدُ عَلَيْكُمْ أَبَاكُمْ آدَمَ عَلَيْهِ السَّلَام أَنْ تَقُولُوا يَوْمَ الْقِيَامَةِ لَمْ نَعْلَمْ بِهَذَا اعْلَمُوا أَنَّهُ لَا إِلَهَ غَيْرِي وَلَا رَبَّ غَيْرِي فَلَا تُشْرِكُوا بِي شَيْئا وَإِنِّي سَأُرْسِلُ إِلَيْكُمْ رُسُلِي يُذَكِّرُونَكُمْ عَهْدِي وَمِيثَاقِي وَأُنْزِلُ عَلَيْكُمْ كُتُبِي قَالُوا شَهِدْنَا بِأَنَّكَ رَبُّنَا وَإِلَهُنَا لَا رب لَنَا غَيْرُكَ فَأَقَرُّوا بِذَلِكَ وَرُفِعَ عَلَيْهِمْ آدَمُ يَنْظُرُ إِلَيْهِمْ فَرَأَى الْغَنِيَّ وَالْفَقِيرَ وَحَسَنَ الصُّورَةِ وَدُونَ ذَلِكَ فَقَالَ رَبِّ لَوْلَا سَوَّيْتَ بَيْنَ عِبَادِكَ قَالَ إِنِّي أَحْبَبْتُ أَنْ أَشْكُرَ وَرَأَى الْأَنْبِيَاءَ فِيهِمْ مِثْلَ السُّرُجِ عَلَيْهِمُ النُّورُ خُصُّوا بِمِيثَاقٍ آخَرَ فِي الرِّسَالَةِ وَالنُّبُوَّةِ وَهُوَ قَوْلُهُ تَعَالَى (وَإِذ أَخذنَا من النَّبِيين ميثاقهم)
إِلَى قَوْله (عِيسَى ابْن مَرْيَم)
كَانَ فِي تِلْكَ الْأَرْوَاحِ فَأَرْسَلَهُ إِلَى مَرْيَمَ فَحُدِّثَ عَنْ أُبَيٍّ أَنَّهُ دَخَلَ مِنْ فِيهَا. رَوَاهُ أَحْمد
Chapter: Belief in the Divine Decree - Section 3
On God’s words, “When your Lord took from the children of Adam from their backs their offspring,” * Ubayy b. Ka‘b said:
He gathered them and put them in pairs. Thereafter He fashioned them and endowed them with speech, and they spoke. He then made an agreement and covenant with them, calling them to witness regarding themselves, [saying] “Am I not your Lord?” They replied, “Yes.” He said, “I call the seven heavens and the seven earths to witness regarding you, and I call your father Adam to witness regarding you, lest you should say on the day of resurrection, ‘We did not know of this.’ Know that there is no god other than me and no lord other than me, and do not associate anything with me. I shall send to you my messengers to call to your remembrance my agreement and my covenant, and I shall send down my books to you. They replied, “We testify that Thou art our Lord and our God; we have no other lord and no other god but Thee.” So they confirmed that. Adam was raised above them and looked at them, and seeing the rich and the poor, the beautiful and those not so beautiful, he asked, “My Lord, why didst Thou not make Thy servants equal?” He replied, “I wanted to be thanked.” He also saw among them the prophets like lamps with light in them. They had another -special covenant concerning their mission and prophetic office, viz. His words, “And when we took from the prophets their covenant... Jesus son-of Mary.” ** He was among those spirits and He sent him to Mary. Ubayy is quoted as saying that he entered by her mouth.
Ahmad transmitted it.
* ibid.
** Quran, 33:7.
পরিচ্ছেদঃ ৩. তৃতীয় ‘অনুচ্ছেদ - তাকদীরের প্রতি ঈমান
১২৩-[৪৫] আবুদ্ দারদা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা একদা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট বসেছিলাম এবং দুনিয়াতে যা কিছু সংঘটিত হচ্ছে- এ ব্যাপারে আলাপ-আলোচনা করছিলাম। তখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা যখন শুনবে যে, কোন পাহাড় তার নিজের জায়গা থেকে সরে গেছে তাতে তোমরা বিশ্বাস করতে পারো। কিন্তু যখন শুনবে যে, কোন মানুষের (সৃষ্টিগত) স্বভাব-চরিত্রের পরিবর্তন ঘটেছে তাতে বিশ্বাস স্থাপন করবে না। কেননা মানুষ সেদিকেই প্রত্যাবর্তন করবে যার উপর তার সৃষ্টি হয়েছে।[1] (আহমাদ)
باب الإيمان بالقدر - الفصل الثالث
وَعَنْ أَبِي الدَّرْدَاءِ قَالَ بَيْنَمَا نَحْنُ عِنْدَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَتَذَاكَرُ مَا يَكُونُ إِذْ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ:
إِذَا سَمِعْتُمْ بِجَبَلٍ زَالَ عَن مَكَانَهُ فصدقوا وَإِذَا سَمِعْتُمْ بِرَجُلٍ تَغَيَّرَ عَنْ خُلُقِهِ فَلَا تصدقوا بِهِ وَإنَّهُ يَصِيرُ إِلَى مَا جُبِلَ عَلَيْهِ . رَوَاهُ أَحْمَدُ
Chapter: Belief in the Divine Decree - Section 3
Abud Darda’ said:
While we were with God’s messenger discussing what would come to pass God’s messenger said, “When you hear that a mountain has moved from its place believe it; but when you hear that a man's nature has changed do not believe it, for he will remain true to his inborn disposition.”
Ahmad transmitted it.
ব্যাখ্যা: হাদীসের মর্মার্থ হলো কাজগুলো তার ভাগ্যে যা লিখা আছে তাই হবে। বুদ্ধিমত্তা হতে পারে, অপারগতা হতে পারে। অতএব তোমরা যখন শুনতে পাবে যে, কোন বুদ্ধিমান বোকা অথবা কোন বোকা বুদ্ধিমান হয়েছে তা সত্যায়ন করবে না। পাহাড় একস্থান থেকে অপরস্থানে সরে যাওয়া সম্ভব, তবে মানুষের চরিত্র যেটা তাক্বদীরে লিপিবদ্ধ তা পরিবর্তন হওয়া সম্ভব নয়।
‘আল্লামা মুল্লা ‘আলী কারী (রহঃ) বলেন, হাদীস মতে প্রকৃত চরিত্র পরিবর্তন হওয়া অসম্ভব। তবে গুণগতভাবে পরিবর্তন আসা সম্ভব বরং এটা করতে বান্দা আদিষ্ট, এটাকে আত্মসংশোধনী বা পরিমার্জন বলা হয়। এমনটাই আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেছেন,
قَدْ اَفْلَحَ مَنْ تَزَكّى
‘‘যে তার আত্মাকে পরিশুদ্ধ করলো সে সফল হলো।’’ (সূরাহ্ আল আ‘লা- ৮৭ঃ ১৪)
পরিচ্ছেদঃ ৩. তৃতীয় ‘অনুচ্ছেদ - তাকদীরের প্রতি ঈমান
১২৪-[৪৬] উম্মু সালামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমি (রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে) বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আপনি যে বিষ মিশানো ছাগলের মাংস (গোসত/গোস্ত) খেয়েছিলেন, তার বিষক্রিয়ার কারণে প্রতি বছরই আপনি এত কষ্ট অনুভব করছেন। তিনি বললেন, প্রতি বছরই আমার যে যন্ত্রণা বা অসুখ হয়, এটা আমার (নির্ধারিত) তাক্বদীরে লিপিবদ্ধ হয়েছিল, অথচ তখন আদম (আঃ) ভূগর্ভেই ছিলেন।[1] (ইবনু মাজাহ্)
باب الإيمان بالقدر - الفصل الثالث
وَعَن أم سَلمَة يَا رَسُول الله لَا يزَال يصيبك كُلِّ عَامٍ وَجَعٌ مِنَ الشَّاةِ الْمَسْمُومَةِ الَّتِي أَكَلْتَ قَالَ: «مَا أَصَابَنِي شَيْءٌ مِنْهَا إِلَّا وَهُوَ مَكْتُوبٌ عَلَيَّ وَآدَمُ فِي طِينَتِهِ» . رَوَاهُ ابْنُ مَاجَهْ
Chapter: Belief in the Divine Decree - Section 3
Umm Salama said, “Messenger of God, you continue to be afflicted annually with pain from the poisoned sheep you ate.” He replied, “I am afflicted by nothing due to it which was not decreed for me while Adam was still a lump of clay.”
Ibn Majah transmitted it.
পরিচ্ছেদঃ ৪. প্রথম অনুচ্ছেদ - কবরের ‘আযাব
এখানে কবর দ্বারা উদ্দেশ হচ্ছে ’’আলামুল বারযাখ’’। আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন,
وَمِنْ وَرَائِهِمْ بَرْزَخٌ اِلى يَوْمِ يُبْعَثُوْنَ
অর্থাৎ- ’’পুনরুত্থান দিবস পর্যন্ত তারা বারযাখে থাকবে।’’ (সূরাহ্ আল মু’মিনূন ২৩: ১০০)
আর বারযাখ হচ্ছে দুনিয়া ও আখিরাতের মাঝের এক পৃথিবী। এখানে কবর দ্বারা মৃত্যু বরণকারী লাশকে দাফন করার গর্ত উদ্দেশ্য নয়। কেননা, অনেক মৃত ব্যক্তি আছে। যেমন, পানিতে ডুবে যে মৃত্যুবরণ করেছে অথবা আগুনে পুড়ে অথবা প্রাণী তাকে খেয়ে ফেলেছে এগুলোকে দাফন করা হয় না অথচ এদেরকেও শাস্তি দেয়া হয় এবং নি’আমাতও দান করা হয়।
এখানেإثبات عذاب القبر বলে শুধুমাত্র শাস্তির কথা উল্লেখ করা হয়েছে দু’টি কারণে। এক- গুরুত্বারোপ করা। দুই- শাস্তি যাদেরকে দেয়া হবে সেই কাফির বেঈমানদের সংখ্যা বেশী।
১২৫-[১] বারা ইবনু ’আযিব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন মুসলিমকে যখন কবরে জিজ্ঞেস করা হয় তখন সে সাক্ষ্য দেয় যে, আল্লাহ ছাড়া প্রকৃত কোন মা’বূদ নেই এবং নিঃসন্দেহে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রসূল। ’’যারা ঈমান এনেছে আল্লাহ তা’আলা তাদেরকে দুনিয়া ও আখিরাতের জীবনে অটল ও অবিচল রাখেন’’- (সূরাহ্ ইবরাহীম ১৪: ২৭)। আল্লাহর এ বাণীর অর্থ হলো এটাই।
অপর এক বর্ণনায় আছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ’’ইউসাব্বিতুল্লা-হুল্লাযীনা আ-মানূ বিল ক্বওলিস্ সা-বিতি’’- এ আয়াত কবরের ’আযাব সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়েছে। কবরে মৃতকে জিজ্ঞেস করা হয়, তোমার রব কে? সে বলে, আমার রব মহান আল্লাহ তা’আলা। আর আমার নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।[1] (বুখারী, মুসলিম)
بَابُ اِثْبَاتِ عَذَابِ الْقَبْرِ
عَن الْبَرَاءِ بْنِ عَازِبٍ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: الْمُسْلِمُ إِذَا سُئِلَ فِي الْقَبْرِ يَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ فَذَلِكَ قَوْلُهُ (يُثَبِّتُ اللَّهُ الَّذِينَ آمَنُوا بِالْقَوْلِ الثَّابِتِ فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَفِي الْآخِرَة)
وَفِي رِوَايَةٍ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: (يُثَبِّتُ اللَّهُ الَّذِينَ آمَنُوا بِالْقَوْلِ الثَّابِت)
نَزَلَتْ فِي عَذَابِ الْقَبْرِ يُقَالُ لَهُ: مَنْ رَبك؟ فَيَقُول: رَبِّي الله ونبيي مُحَمَّد
Chapter: Confirmation of the Punishment in the Grave - Section 1
Al-Bara’ b. ‘Azib reported the Prophet as saying, “When a Muslim is questioned in the grave he testifies that there is no god but God and that Muhammad is God’s messenger.” That is verified by God’s words, “God establishes those who believe with the word that stands firm in this world and the next.” * In a version the Prophet said:
“God establishes those who believe with the word which stands firm” was revealed concerning the punishment in the grave. One will be asked who his Lord is and will reply that his Lord is God and his prophet is Muhammad.
(Bukhari and Muslim.)
* Quran, 14:27.
ব্যাখ্যা: (قَالَ الْمُسْلِمُ) কোন বর্ণনায় الْمُؤْمِنُ এর উল্লেখ পাওয়া যায় এবং এর দ্বারা উদ্দেশ্য جنس তথা জাতি। তা পুরুষ মহিলা উভয়কেই অন্তর্ভুক্ত করবে। অথবা এমন হতে পারে যে, মহিলার হুকুম বুঝা যাবে পুরুষের অনুসারিণী হওয়ার দিক দিয়ে। এখানে কবরের কথা উল্লেখ করে নির্দিষ্ট করার কারণ হচ্ছে সাধারণত কবরেই প্রশ্ন করা হয়ে থাকে।
অথবা এটা প্রত্যেক ব্যক্তির থাকার স্থানের নামও কবর হতে পারে, এখানে যার সম্পর্কে প্রশ্ন করা হবে সে বিষয়গুলো অনুল্লেখিত আছে, সেগুলো হলো তার রব তার নাবী এবং তার ধর্ম সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে যেমনটা অন্য হাদীসে প্রমাণ পাওয়া যায়।
পরিচ্ছেদঃ ৪. প্রথম অনুচ্ছেদ - কবরের ‘আযাব
১২৬-[২] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ বান্দাকে যখন কবরে রেখে তার সঙ্গীগণ (আত্মীয়-স্বজন, পরিবার-পরিজন, বন্ধু-বান্ধব) সেখান থেকে চলে আসে, আর তখনও সে তাদের জুতার শব্দ শুনতে পায়। তার নিকট (কবরে) দু’জন মালাক (ফেরেশতা) পৌঁছেন এবং তাকে বসিয়ে প্রশ্ন করেন, তুমি দুনিয়াতে এই ব্যক্তির (মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর) ব্যাপারে কী জান? এ প্রশ্নের উত্তরে মু’মিন বান্দা বলে, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিঃসন্দেহে আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রসূল। তখন তাকে বলা হয়, ঐ দেখে নাও, তোমার ঠিকানা জাহান্নাম কিরূপ (জঘন্য) ছিল। তারপর আল্লাহ তা’আলা তোমার সে ঠিকানা (জাহান্নামকে) জান্নাতের সাথে পরিবর্তন করে দিয়েছেন। তখন সে বান্দা দু’টি ঠিকানা (জান্নাত-জাহান্নাম) একই সঙ্গে থাকবে। কিন্তু মুনাফিক্ব ও কাফিরকে যখন জিজ্ঞেস করা হয়, দুনিয়াতে এ ব্যক্তি (মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সম্পর্কে তুমি কী ধারণা পোষণ করতে? তখন সে উত্তর দেয়, আমি বলতে পারি না (প্রকৃত সত্য কী ছিল)। মানুষ যা বলতো আমিও তাই বলতাম। তখন তাঁকে বলা হয়, তুমি বিবেক-বুদ্ধি দিয়েও বুঝতে চেষ্টা করনি এবং (আল্লাহর কুরআন) পড়েও জানতে চেষ্টা করনি। এ কথা বলে তাকে লোহার হাতুড়ি দিয়ে কঠিনভাবে মারতে থাকে, এতে সে তখন উচ্চস্বরে চিৎকার করতে থাকে। এ চীৎকারের শব্দ (পৃথিবীর) জিন আর মানুষ ছাড়া নিকটস্থ সকলেই শুনতে পায়। (মুত্তাফাকুন ’আলায়হি, শব্দসমূহ বুখারীর)[1]
بَابُ اِثْبَاتِ عَذَابِ الْقَبْرِ
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ أَنه حَدثهمْ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «إِنَّ الْعَبْدَ إِذَا وُضِعَ فِي قَبْرِهِ وَتَوَلَّى عَنْهُ أَصْحَابُهُ وَإِنَّهُ لَيَسْمَعُ قَرْعَ نِعَالِهِمْ أَتَاهُ مَلَكَانِ فَيُقْعِدَانِهِ فَيَقُولَانِ مَا كُنْتَ تَقُولُ فِي هَذَا الرَّجُلِ لِمُحَمَّدٍ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَأَمَّا الْمُؤْمِنُ فَيَقُولُ أَشْهَدُ أَنَّهُ عَبْدُ اللَّهِ وَرَسُولُهُ فَيُقَالُ لَهُ انْظُرْ إِلَى مَقْعَدِكَ مِنَ النَّارِ قَدْ أَبْدَلَكَ اللَّهُ بِهِ مَقْعَدًا مِنَ الْجنَّة فَيَرَاهُمَا جَمِيعًا قَالَ قَتَادَة وَذكر لنا أَنه يفسح لَهُ فِي قَبره ثمَّ رَجَعَ إِلَى حَدِيث أنس قَالَ وَأَمَّا الْمُنَافِقُ وَالْكَافِرُ فَيُقَالُ لَهُ مَا كُنْتَ تَقُولُ فِي هَذَا الرَّجُلِ فَيَقُولُ لَا أَدْرِي كُنْتُ أَقُولُ مَا يَقُولُ النَّاسُ فَيُقَالُ لَا دَرَيْتَ وَلَا تَلَيْتَ وَيُضْرَبُ بِمَطَارِقَ مِنْ حَدِيدٍ ضَرْبَةً فَيَصِيحُ صَيْحَةً يَسْمَعُهَا مَنْ يَلِيهِ غَيْرَ الثقلَيْن» وَلَفظه للْبُخَارِيّ
Chapter: Confirmation of the Punishment in the Grave - Section 1
Anas reported God’s messenger as saying, “When a man is placed in his grave and his friends leave him, he hears the beat of their sandals. Then two angels come to him and, having made him sit up, they say, ‘What was your opinion of this man, of Muhammad?’ The believer replies, ‘I testify that he is God’s servant and messenger.’ He is then told to look at his abode in hell for which God has substituted for him an abode in paradise, and he sees them both. The hypocrite and infidel are asked, ‘What was your opinion of this man?’ and reply, ‘I do not know; I held the opinion others held.’ They will retort, ‘You neither knew nor did you follow [the believers].’ He will then be given a blow with iron hammers and will utter a shout which will be heard by all who are near him, with the exception of men and jinn.”
(Bukhari and Muslim. The wording is Bukhari’s.)
পরিচ্ছেদঃ ৪. প্রথম অনুচ্ছেদ - কবরের ‘আযাব
১২৭-[৩] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যখন মারা যায়, (কবরে) তাকে সকাল-সন্ধ্যায় তার (ভবিষ্যৎ) অবস্থান দেখানো হয়। যদি সে জান্নাতী হয়, তার অবস্থান জান্নাত আর যদি জাহান্নামী হয় তবে তার অবস্থান জাহান্নাম দেখানো হয়। আর তাকে বলা হয়, এটাই তোমার প্রকৃত অবস্থান। অতঃপর কিয়ামতের (কিয়ামতের) দিন আল্লাহ তা’আলা তোমাকে উঠিয়ে সেখানে প্রেরণ করবেন। (বুখারী, মুসলিম)[1]
بَابُ اِثْبَاتِ عَذَابِ الْقَبْرِ
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم قَالَ: «إِنَّ أَحَدَكُمْ إِذَا مَاتَ عُرِضَ عَلَيْهِ مَقْعَدُهُ بِالْغَدَاةِ وَالْعَشِيِّ إِنْ كَانَ مِنْ أَهْلِ الْجَنَّةِ فَمِنْ أَهْلِ الْجَنَّةِ وَإِنْ كَانَ مِنْ أَهْلِ النَّارِ فَمِنْ أَهْلِ النَّارِ فَيُقَالُ هَذَا مَقْعَدُكَ حَتَّى يَبْعَثك الله يَوْم الْقِيَامَة»
Chapter: Confirmation of the Punishment in the Grave - Section 1
‘Abdallah b. ‘Umar reported God’s messenger as saying, “When one of you dies, his abode among the inhabitants of paradise will be shown him morning and evening if he is to be one of them; but if he is to be one of the inhabitants of hell, his abode among them will be shown him. He will be told that this is his abode to which God will finally raise him on the day of resurrection.”
(Bukhari and Muslim.)
ব্যাখ্যা: তার নিকট তার রূহ ফিরিয়ে দেয়া হয় যাতে করে তার সাথে কথা বলা যায় এবং সে অনুধাবন করতে পারে।
প্রশ্ন হলো, প্রতিনিয়তই কি তার নিকট তার রূহ ফিরিয়ে দেয়া হয়, নাকি একবারই দেয়া হয়।
‘একবারই দেয়া হয়’ এ মতটিই বেশী গ্রহণযোগ্য, আনাস (রাঃ)-এর হাদীসের কারণে এবং অপরাপর কিছু হাদীছ রয়েছে যা তাই প্রমাণ করে।
সকাল-সন্ধ্যা দিনের দুই প্রান্তে অথবা উদ্দেশ্য সার্বক্ষণিকের জন্যও হতে পারে। রূহের সামনে তার আসল ঠিকানা পেশ করা এবং মু’মিনকে নি‘আমাত এবং কাফিরকে শাস্তি প্রদান করার মাধ্যমে প্রমাণ হয় কবরের শাস্তি সাব্যস্ত এবং শরীরের মতো রূহ শেষ হয়ে যায় না। কেননা কোন জিনিস পেশ করা জীবিত ছাড়া অসম্ভব। তাহলে বুঝা গেল রূহ শেষ হয় না।
পরিচ্ছেদঃ ৪. প্রথম অনুচ্ছেদ - কবরের ‘আযাব
১২৮-[৪] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা এক ইয়াহুদী নারী তাঁর কাছে এলো। সে কবরের ’আযাব প্রসঙ্গে কথা উঠাল এবং বলল, হে ’আয়িশাহ্! আল্লাহ তা’আলা তোমাকে কবরের ’আযাব থেকে মুক্তি দিন। অতঃপর ’আয়িশাহ্ (রাঃ) রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে কবরের ’আযাবের সত্যতা প্রসঙ্গে জিজ্ঞেস করলেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, হাঁ, কবরের ’আযাব সত্য। ’আয়িশাহ্ (রাঃ) বলেন, অতঃপর আমি কক্ষনো এমন দেখিনি যে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করেছেন অথচ কবরের ’আযাব হতে আল্লাহর নিকট মুক্তির দু’আ করেননি। (বুখারী, মুসলিম)[1]
بَابُ اِثْبَاتِ عَذَابِ الْقَبْرِ
وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا أَنَّ يَهُودِيَّةً دَخَلَتْ عَلَيْهَا فَذَكَرَتْ عَذَابَ الْقَبْرِ فَقَالَتْ لَهَا أَعَاذَكِ اللَّهُ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ فَسَأَلَتْ عَائِشَةُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنْ عَذَابِ الْقَبْرِ فَقَالَ: «نَعَمْ عَذَابُ الْقَبْر قَالَت عَائِشَة رَضِي الله عَنْهَا فَمَا رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بعد صلى صَلَاة إِلَّا تعوذ من عَذَاب الْقَبْر»
Chapter: Confirmation of the Punishment in the Grave - Section 1
‘A’isha told of a Jewess who visited her and mentioned the punishment in the grave adding, “May God preserve you from the punishment of the grave!” ‘A’isha asked God’s messenger about the subject and he said, “Yes, the punishment in the grave is real.” ‘A’isha said, “After that I never saw God’s messenger observing a prayer without seeking God’s protection from the punishment in the grave.”
(Bukhari and Muslim.)
ব্যাখ্যা: এ হাদীস থেকে প্রমাণিত হয় যে, ইয়াহূদীরাও কবরের শাস্তিকে স্বীকার করে এবং তা সত্য বলে মানে।
উল্লেখিত রিওয়ায়াতগুলোর সমাধান হলো নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রথমে ইয়াহূদীকে সমর্থন করেন তার কাছে ওয়াহী অবতীর্ণ হওয়ার আগে। তারপরে তিনি ওয়াহী অবতীর্ণ হলে জানিয়ে দেন এবং সকলকে কবরের ‘আযাব থেকে আশ্রয় প্রার্থনার আদেশ দেন। (আল্লাহ ভালো জানেন)
পরিচ্ছেদঃ ৪. প্রথম অনুচ্ছেদ - কবরের ‘আযাব
১২৯-[৫] যায়দ ইবনু সাবিত (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বানী নাজ্জার গোত্রের একটি বাগানে তাঁর একটি খচ্চরের উপর আরোহী ছিলেন এবং আমরাও তাঁর সাথে ছিলাম। হঠাৎ খচ্চরটি লাফিয়ে উঠল এবং রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে প্রায় মাটিতে ফেলে দেবার উপক্রম করল। দেখা গেল, সামনে পাঁচ-ছয়টি কবর রয়েছে। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, এ কবরবাসীদের কে চেনে? এক ব্যক্তি বললো, আমি! তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জিজ্ঞেস করলেন, এরা কবে মারা গেছে? সে বললো, শির্কের যুগে। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, এ উম্মাত তথা কবরবাসীরা তাদের কবরে পরীক্ষায় পড়েছে (শাস্তির কবলে পড়েছে)। তোমরা মানুষকে ভয়ে কবর দেয়া ছেড়ে দিবে (এ আশংকা না থাকলে) আমি আল্লাহর কাছে দু’আ করতাম, তিনি যেন তোমাদেরকেও কবরের ’আযাব শুনান, যে কবরের ’আযাব আমি শুনতে পাচ্ছি।
অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাদের দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে বললেন, তোমরা সকলে জাহান্নামের ’আযাব হতে আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাও। সকলে একত্রে বললেন, আমরা জাহান্নামের ’আযাব হতে আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাচ্ছি। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তোমরা কবরের ’আযাব হতে আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাও। তারা সকলে একত্রে বললেন, আমরা কবরের ’আযাব হতে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাই। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তোমরা সকলে প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য ফিতনাহ্ (ফিতনা) হতে আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাও। তখন সকলে একত্রে বললেন, আমরা সকল প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য ফিতনাহ্ (ফিতনা) হতে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাই। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তোমরা দাজ্জালের সকল ফিতনাহ্ (ফিতনা) হতে আশ্রয় চাও। সকলে বললেন, আমরা দাজ্জালের ফিতনাহ্ (ফিতনা) হতেও আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাই। (মুসলিম)[1]
بَابُ اِثْبَاتِ عَذَابِ الْقَبْرِ
عَن زيد بن ثَابت قَالَ بَيْنَمَا النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي حَائِطٍ لِبَنِي النَّجَّارِ عَلَى بَغْلَةٍ لَهُ وَنَحْنُ مَعَهُ إِذْ حَادَتْ بِهِ فَكَادَتْ تُلْقِيهِ وَإِذَا أَقْبُرُ سِتَّةٍ أَو خَمْسَة أَو أَرْبَعَة قَالَ كَذَا كَانَ يَقُول الْجريرِي فَقَالَ: «من يعرف أَصْحَاب هَذِه الأقبر فَقَالَ رجل أَنا قَالَ فَمَتَى مَاتَ هَؤُلَاءِ قَالَ مَاتُوا فِي الْإِشْرَاك فَقَالَ إِنَّ هَذِهِ الْأُمَّةَ تُبْتَلَى فِي قُبُورِهَا فَلَوْلَا أَنْ لَا تَدَافَنُوا لَدَعَوْتُ اللَّهَ أَنْ يُسْمِعَكُمْ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ الَّذِي أَسْمَعُ مِنْهُ ثُمَّ أَقْبَلَ عَلَيْنَا بِوَجْهِهِ فَقَالَ تَعَوَّذُوا بِاللَّهِ مِنْ عَذَابِ النَّارِ قَالُوا نَعُوذُ بِاللَّهِ مِنْ عَذَاب النَّار فَقَالَ تَعَوَّذُوا بِاللَّهِ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ قَالُوا نَعُوذُ بِاللَّه من عَذَاب الْقَبْر قَالَ تَعَوَّذُوا بِاللَّهِ مِنَ الْفِتَنِ مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَمَا بَطَنَ قَالُوا نَعُوذُ بِاللَّهِ مِنَ الْفِتَنِ مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَمَا بَطَنَ قَالَ تَعَوَّذُوا بِاللَّهِ مِنْ فِتْنَةِ الدَّجَّالِ قَالُوا نَعُوذُ بِاللَّهِ مِنْ فِتْنَةِ الدَّجَّالِ» . رَوَاهُ مُسْلِمٌ
Chapter: Confirmation of the Punishment in the Grave - Section 1
Zaid b. Thabit said:
While we were accompanying God’s messenger who was riding a she-mule in a garden belonging to the B. an-Najjar, the animal shied and almost unseated him. It happened that there were five or six graves there, so he asked if anyone knew who were buried in them. A man replied that he did, and on being asked when they died said it was in the period when the people were polytheists. The Prophet then said, “These people are being afflicted in their graves, and were it not that you would cease to bury, I would ask God to let you hear the punishment in the grave which I am hearing.” Then he turned facing us and said, “Seek refuge in God from the punishment of the fire.” They said, “We seek refuge in God from the punishment of the fire.” He said, “Seek refuge in God from the punishment in the grave.” They said, “We seek refuge in God from the punishment in the grave.” He said, “Seek refuge in God from trials both open and secret.” They said, “We seek refuge in God from trials both open and secret.” He said, “Seek refuge in God from the trial of ad-Dajjal!” They said, “We seek refuge in God from the trial of ad-Dajjal.”
Muslim transmitted it.
ব্যাখ্যা: (حَادَتْ) ঝুঁকে গেল এবং ভেঙ্গে যেতে চাইল কবরবাসীদের শাস্তির আওয়াজ শুনে। চতুস্পদ জন্তু যে কবরের ‘আযাব শুনতে পায় তা সহীহ ভিত্তিতে প্রমাণিত। যেমন, আবূ সা‘ঈদ আল খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত ইমাম আহমাদের হাদীসঃ মানব-দানব বাদে সকলেই কবরের শাস্তি শুনতে পায়।
পরিচ্ছেদঃ ৪. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - কবরের ‘আযাব
১৩০-[৬] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মৃতকে যখন কবরে শায়িত করা হয় তখন তার নিকট নীল চোখবিশিষ্ট দু’জন কালো মালাক (ফেরেশতা) এসে উপস্থিত হন। তাদের একজনকে মুনকার, অপর একজনকে নাকীর বলা হয়। তারা মৃতকে (রসূলের প্রতি ইঙ্গিত করে) জিজ্ঞেস করে, এ ব্যক্তির ব্যাপারে দুনিয়াতে তুমি কি ধারণা পোষণ করতে? সে বলবে, তিনি আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রসূল। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোন ইলাহ নেই, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রসূল। তখন মালাক দু’জন বলবেন, আমরা আগেই জানতাম তুমি এ উত্তরই দিবে। অতঃপর তার কবরকে দৈর্ঘ্যে-প্রস্থে সত্তর হাত প্রশস্ত করে দেয়া হয় এবং সেখানে তার জন্য আলোর ব্যবস্থা করে দেয়া হয়। তারপর তাকে বলা হয়, ঘুমিয়ে থাক। তখন কবরবাসী বলবে, (না,) আমি আমার পরিবারের কাছে ফিরে যেতে চাই এবং তাদের এ সুসংবাদ দিতে চাই। মালায়িকাহ্ (ফেরেশতাগণ) বলবেন, তুমি এখানে বাসর ঘরের বরের ন্যায় ঘুমাতে থাক, যাকে তার পরিবারের সবচেয়ে প্রিয়জন ব্যতীত আর কেউ ঘুম ভাঙ্গাতে পারে না। অতঃপর সে কিয়ামতের (কিয়ামতের) দিন না আসা পর্যন্ত এভাবে ঘুমিয়ে থাকে। যদি মৃত ব্যক্তি মুনাফিক্ব হয় তাহলে সে বলবে, লোকেদেরকে তাঁর সম্পর্কে যা বলতে শুনতাম আমিও তাই বলতাম, কিন্তু আমি জানি না। তখন মালায়িকাহ্ বলেন, আমরা পূর্বেই জানতে পেরেছিলাম যে, তুমি এ কথাই বলবে। অতঃপর জমিনকে বলা হবে, তার উপর চেপে যাও। সুতরাং জমিন তার উপর এমনভাবে চেপে যাবে, যাতে তার এক দিকের হাড় অপর দিকে চলে যাবে। কবরে সে এভাবে ’আযাব ভোগ করতে থাকবে, যে পর্যন্ত (ক্বিয়ামাত (কিয়ামত) দিবসে) আল্লাহ তা’আলা তাকে কবর থেকে না উঠাবেন। (তিরমিযী)[1]
باب إثبات عذاب القبر - الفصل الثاني
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِذَا قُبِرَ الْمَيِّتُ أَتَاهُ مَلَكَانِ أَسْوَدَانِ أَزْرَقَانِ يُقَالُ لِأَحَدِهِمَا الْمُنْكَرُ وَالْآخَرُ النَّكِيرُ فَيَقُولَانِ مَا كُنْتَ تَقُولُ فِي هَذَا الرجل فَيَقُول مَا كَانَ يَقُول هُوَ عَبْدُ اللَّهِ وَرَسُولُهُ أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ فَيَقُولَانِ قَدْ كُنَّا نَعْلَمُ أَنَّكَ تَقُولُ هَذَا ثُمَّ يُفْسَحُ لَهُ فِي قَبْرِهِ سَبْعُونَ ذِرَاعًا فِي سَبْعِينَ ثُمَّ يُنَوَّرُ لَهُ فِيهِ ثُمَّ يُقَالُ لَهُ نَمْ فَيَقُولُ أَرْجِعُ إِلَى أَهْلِي فَأُخْبِرُهُمْ فَيَقُولَانِ نَمْ كَنَوْمَةِ الْعَرُوسِ الَّذِي لَا يُوقِظُهُ إِلَّا أَحَبُّ أَهْلِهِ إِلَيْهِ حَتَّى يَبْعَثَهُ اللَّهُ مِنْ مَضْجَعِهِ ذَلِكَ وَإِنْ كَانَ مُنَافِقًا قَالَ سَمِعت النَّاس يَقُولُونَ فَقُلْتُ مِثْلَهُ لَا أَدْرِي فَيَقُولَانِ قَدْ كُنَّا نَعْلَمُ أَنَّكَ تَقُولُ ذَلِكَ فَيُقَالُ لِلْأَرْضِ الْتَئِمِي عَلَيْهِ فتلتئم عَلَيْهِ فتختلف فِيهَا أَضْلَاعُهُ فَلَا يَزَالُ فِيهَا مُعَذَّبًا حَتَّى يَبْعَثَهُ الله من مضجعه ذَلِك» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ
Chapter: Confirmation of the Punishment in the Grave - Section 2
Abu Huraira reported God’s messenger as saying, “When the dead is buried two black and blue angels, one called al-Munkar and the other an-Nakir, come to him and ask him what opinion he held about this man. If he is a believer he replies, ‘He is the servant and messenger of God. I testify that there is no god but God and that Muhammad is His servant and apostle.’ They say that they knew he would say so. A space of 4900 square cubits is then made for him in his grave, it is illuminated for him, and he is told to sleep. He will then express a desire to return to his family to tell them, but will be told to sleep like one newly married who is wakened only by the member of his family who is dearest to him, until God resurrects him from that resting-place of his. But if he is a hypocrite he will say, ‘I heard men expressing a belief and I held the same, but I really do not know.’ They will tell him they knew he would say so; then the earth will be told to press in upon him and it will do so. His ribs will be pressed together and he will remain there suffering punishment till God resurrects him from that resting-place of his.”
Tirmidhi transmitted it.
ব্যাখ্যা: (إِذَا اُقْبِرَ الْمَيِّتُ) ‘যখন মৃতকে কবর দেয়া হয়’ এটা বলা হয়েছে স্বাভাবিক নিয়মের উপর খেয়াল করে। নচেৎ মৃত ব্যক্তি বলতে তো সব মৃত ব্যক্তির মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হয়। অথচ সব মৃত্যুকে কবর দেয়া হয় না। এখানে কবর বলতে বারযাখী জীবনে পদার্পণ করা, চাই সে মাটিতে হোক কিংবা মাছের পেটে হোক অথবা আগুনেই পুড়ে যাক।
(الْمُنْكَرُ وَالْاۤخَرُ النَّكِيرُ) ‘‘মুনকার তাকে বলা হয় যে কাউকে চিনে না। আর নাকীর তাকে বলা হয় যাকে কেউ চিনে না। এ মালাক (ফেরেশতা) দু’জনের নাম মুনকার ও নাকীর এজন্য রাখা হয়েছে যে, মৃত ব্যক্তি তাদের কাউকেই চিনে না। তাদের ‘‘আকৃতির’’ মতো আকৃতি কখনো দেখেনি। কিছু কিছু ‘আলিমগণ বলেন যে, গুনাহগারদের প্রশ্নকারী মালাকের নাম মুনকার ও নাকীর। আর নেক্কার বান্দাদের প্রশ্নকারী মালায়িকাহ্’র নাম মুবাশ্বির ও বাশীর।
(فَيَقُوْلَانِ قَدْ كُنَّا نَعْلَمُ أَنَّكَ تَقُولُ هذَا) অর্থাৎ- মালায়িকাহ্’র কথাঃ ‘‘আমরা আগেই জানতাম যে, তুমি এ উত্তরই দিবে’’। প্রশ্ন হলো তারা কিভাবে জানতে পারলো যে, মৃত ব্যক্তি এই উত্তর দিবে? উত্তর হলো, আল্লাহ তা‘আলার জানানোর মাধ্যমে অথবা তার কপালে যে সৌভাগ্যের চিহ্ন আছে তা অবলোকন করে। যেমন ইমাম ইবনু হিব্বান (রহঃ) হাদীস নিয়ে এসেছেন ‘‘মু’মিন হলে তার সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) তার মাথার নিকট তার যাকাত তার ডানে, তার সওম তার বামে অবস্থান করে।’’
(يُفسَحُ لَهٗ فِيْ قَبْرِه سَبْعُونَ ذِرَاعًا فِي سَبْعِينَ) ‘‘তার কবরকে দৈর্ঘ্য ও প্রস্থে সত্তর গজ প্রশস্ত করে দেয়া হবে’’। বলা হয়ে থাকে যে, এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো যে, মৃতের কবর অনেক প্রশস্ত করে দেয়া হবে। যেমন- কোন কোন বর্ণনায় এসেছে- مد بصره‘‘তার চোখের দৃষ্টিসীমা পর্যন্ত প্রশস্ত করে দেয়া হবে।’’ এও হতে পারে যে, এ প্রশস্ততা ‘আমলকারীর ভিন্নতার কারণে ভিন্ন ভিন্ন হবে।
(سَمِعْتُ النَّاسَ يَقُولُونَ قَوْلًا فَقُلْتُ مِثْلَهٗ لَا أَدْرِى) ‘‘লোকেদেরকে তাঁর সম্পর্কে যা বলতে শুনতাম আমিও তাই বলতাম, কিন্তু আমি জানি না।’’ অর্থাৎ- লোকেদেরকে আমি বলতে শুনতাম যে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একজন নাবী তাই আমিও বলতাম যে, তিনি নাবী। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে আমি জানতাম না যে, তিনি নাবী কি-না।
(فَيُقَالُ لِلْأَرْضِ الْتَئِمِي عَلَيْهِ) ‘‘জমিনকে বলা হবে, তার উপর চেপে যাও।’’ অর্থাৎ- তুমি তার ওপর একত্রিত হয়ে সংকীর্ণ হয়ে যাও।
فَتَخْتَلِفُ أَضْلَاعُهٗ ‘‘তার এক দিকের হাড় অপর দিকে চলে যাবে।’’ অর্থাৎ- জমিন তার উপর এমনভাবে চাপ প্রয়োগ করবে যে, পাঁজরের হাড়গুলো যেভাবে ছিল সেভাবে আর থাকবে না। বরং চাপের আধিক্যের কারণে পাঁজরের এক পাশের হাড় অন্যপাশের পাঁজরের হাড়ের মধ্যে প্রবেশ করবে। আর এ চেপে যাওয়াটা বাস্তবেই ঘটবে তা কোন ধারণা বা কল্পনা নয়।
পরিচ্ছেদঃ ৪. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - কবরের ‘আযাব
১৩১-[৭] বারা ইবনু ’আযিব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কবরে মৃত ব্যক্তির (মু’মিনের) নিকট দু’জন মালাক (ফেরেশতা) আসেন। অতঃপর মালায়িকাহ্ (ফেরেশতাগণ) তাকে বসিয়ে দিয়ে জিজ্ঞেস করেন, ’’তোমার রব কে?’’ সে উত্তরে বলে, ’’আমার রব হলেন আল্লাহ।’’ তারপর মালায়িকাহ্ জিজ্ঞেস করেন, ’’তোমার দীন কী?’’ সে ব্যক্তি উত্তর দেয়, ’’আমার দীন হলো ইসলাম।’’ আবার মালায়িকাহ্ জিজ্ঞেস করেন, ’’তোমাদের নিকট আল্লাহর পক্ষ হতে যে ব্যক্তি প্রেরিত হয়েছিল, তিনি কে?’’ সে বলে, ’’তিনি হলেন আল্লাহর রসূল (মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)।’’ তারপর মালায়িকাহ্ তাকে জিজ্ঞেস করেন, ’’এ কথা তোমাকে কে বলেছে?’’ সে বলে, আমি আল্লাহর কিতাব পড়েছি এবং তার উপর ঈমান এনেছি ও তাঁকে সমর্থন করেছি। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, এটাই হলো আল্লাহ তা’আলার এ বাণীর ব্যাখ্যাঃ ’’আল্লাহ তা’আলা সেসব লোকেদেরকে (দীনের উপর) প্রতিষ্ঠিত রাখেন যারা প্রতিষ্ঠিত কথার (কালিমায়ে শাহাদাতের) উপর ঈমান আনে... আয়াতের শেষ পর্যন্ত- (সূরাহ্ ইবরাহীম ১৪: ২৭)।
অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, আকাশমণ্ডলী থেকে একজন আহবানকারী ঘোষণা দিয়ে বলেন, আমার বান্দা সত্য বলেছে। সুতরাং তার জন্য জান্নাতের বিছানা বিছিয়ে দাও, তাকে জান্নাতের পোশাক পরিয়ে দাও। আর তার জন্য জান্নাতের দিকে একটি দরজা খুলে দাও। অতএব তার জন্য জান্নাতের দিকে একটি দরজা খুলে দেয়া হবে। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ফলে তার দিকে জান্নাতের বাতাস ও সুগন্ধি দোলা দিতে থাকবে এবং দৃষ্টির শেষ সীমা পর্যন্ত তার কবরকে প্রশস্ত করে দেয়া হবে। অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কাফিরদের মৃত্যু প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, ’’তারপর তার রূহকে তার শরীরে ফিরিয়ে আনা হয় এবং তাকে দু’জন মালাক এসে তাকে উঠিয়ে বসান এবং বসিয়ে জিজ্ঞেস করেন, ’’তোমার রব কে?। তখন সে উত্তরে বলে, ’’হায়! হায়!! আমি তো কিছুই জানি না।’’ তারপর তারা তাকে পুনরায় জিজ্ঞেস করেন, ’’তোমার দীন কী?’’ সে বলে, হায়! হায়!! তাও তো আমার জানা নেই। তারপর তারা জিজ্ঞেস করেন, ’’এ ব্যক্তি কে যাকে তোমাদের নিকট প্রেরণ করা হয়েছিল?’’ সে বলে, ’’হায়! হায়!! এটাও তো জানি না।’’ তারপর আকাশ থেকে একজন ঘোষণাকারী ঘোষণা করে বলেন, এ ব্যক্তি মিথ্যা বলেছে। সুতরাং তার জন্য আগুনের বিছানা বিছিয়ে দাও এবং তাকে আগুনের পোশাক পরিয়ে দাও। আর জাহান্নামের দিকে তার জন্য একটি দরজা খুলে দাও। সে অনুযায়ী তার জন্য দরজা খুলে দেয়া হয়।
তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, তার কবরকে তার জন্য সঙ্কুচিত করে দেয়া হয়, যাতে তার একদিকের হাড় অপরদিকের হাড়ের মধ্যে প্রবেশ করে। এরপর একজন অন্ধ ও বধির মালাক নিযুক্ত করে দেয়া হয়, যার সাথে লোহার এক হাতুড়ি থাকে। সে হাতুড়ি দিয়ে যদি পাহাড়ের উপর আঘাত করা হয় তাহলে সে পাহাড় গুঁড়া গুঁড়া হয়ে মাটি হয়ে যাবে। সে অন্ধ মালাক এ হাতুড়ি দিয়ে সজোরে তাকে আঘাত করতে থাকে। (তার বিকট চীৎকারের শব্দ) পূর্ব হতে পশ্চিম পর্যন্ত জিন্ ও মানুষ ছাড়া সকল মাখলূক্বই শুনতে পাবে। এর সাথে সাথে সে মাটিতে মিশে যাবে। অতঃপর পুনরায় তার মধ্যে রূহ্ ফেরত দেয়া হবে (এভাবে অনবরত চলতে থাকবে)। (আহমাদ ও আবূ দাঊদ)[1]
باب إثبات عذاب القبر - الفصل الثاني
عَن الْبَرَاءِ بْنِ عَازِبٍ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «وَيَأْتِيهِ مَلَكَانِ فَيُجْلِسَانِهِ فَيَقُولَانِ لَهُ مَنْ رَبُّكَ فَيَقُولُ رَبِّيَ اللَّهُ فَيَقُولَانِ لَهُ مَا دِينُكَ فَيَقُولُ ديني الْإِسْلَام فَيَقُولَانِ لَهُ مَا هَذَا الرَّجُلُ الَّذِي بُعِثَ فِيكُمْ قَالَ فَيَقُول هُوَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَيَقُولَانِ وَمَا يُدْرِيكَ فَيَقُولُ قَرَأْتُ كِتَابَ اللَّهِ فَآمَنْتُ بِهِ وَصَدَّقْتُ زَاد فِي حَدِيث جرير فَذَلِك قَول الله عز وَجل (يثبت الله الَّذين آمنُوا بالْقَوْل الثَّابِت)
الْآيَة ثمَّ اتفقَا قَالَ فينادي مُنَاد من السَّمَاء أَن قد صدق عَبدِي فأفرشوه مِنَ الْجَنَّةِ وَافْتَحُوا لَهُ بَابًا إِلَى الْجَنَّةِ وألبسوه من الْجنَّة قَالَ فيأتيه من روحها وطيبها قَالَ وَيفتح لَهُ فِيهَا مد بَصَره قَالَ وَإِن الْكَافِر فَذكر مَوته قَالَ وتعاد رُوحُهُ فِي جَسَدِهِ وَيَأْتِيهِ مَلَكَانِ فَيُجْلِسَانِهِ فَيَقُولَانِ لَهُ مَنْ رَبُّكَ فَيَقُولُ هَاهْ هَاهْ لَا أَدْرِي فَيَقُولَانِ لَهُ مَا دِينُكَ فَيَقُولُ هَاهْ هَاهْ لَا أَدْرِي فَيَقُولَانِ مَا هَذَا الرَّجُلُ الَّذِي بُعِثَ فِيكُمْ فَيَقُولُ هَاهْ هَاهْ لَا أَدْرِي فَيُنَادِي مُنَادٍ مِنَ السَّمَاءِ أَنَّ كَذَبَ فَأَفْرِشُوهُ مِنَ النَّارِ وَأَلْبِسُوهُ مِنَ النَّارِ وَافْتَحُوا لَهُ بَابًا إِلَى النَّارِ قَالَ فَيَأْتِيهِ مِنْ حَرِّهَا وَسَمُومِهَا قَالَ وَيُضَيَّقُ عَلَيْهِ قَبْرُهُ حَتَّى تَخْتَلِفَ فِيهِ أَضْلَاعُهُ ثمَّ يقيض لَهُ أعمى أبكم مَعَهُ مِرْزَبَّةٌ مِنْ حَدِيدٍ لَوْ ضُرِبَ بِهَا جبل لصار تُرَابا قَالَ فَيَضْرِبُهُ بِهَا ضَرْبَةً يَسْمَعُهَا مَا بَيْنَ الْمَشْرِقِ وَالْمغْرب إِلَّا الثقلَيْن فَيصير تُرَابا قَالَ ثمَّ تُعَاد فِيهِ الرّوح» . رَوَاهُ أَحْمد وَأَبُو دَاوُد
Chapter: Confirmation of the Punishment in the Grave - Section 2
Al-Bara’ b. ‘Azib reported God’s messenger as saying, “Two angels will come to him, make him sit up, and ask him who his Lord is, to which he will reply that his Lord is God. They will ask him what his religion is, and he will reply that his religion is Islam. They will ask him about this man who was sent on a mission among his people, and he will reply that he is God’s messenger. They will ask him what made him aware of this, and he will reply that he read God’s Book, believed in it, and considered it true, which is verified by God’s words, ‘God establishes those who believe with the word that stands firm*...’ Then a crier will call from heaven, ‘My servant has spoken the truth, so spread a bed for him from paradise, clothe him from paradise, and open a door for him into paradise.’ A door will then be opened for him towards paradise, some of its air and perfume will come to him, and a space will be made for him in it as far as the eye can see.” He also mentioned the death of the infidel, saying, “His spirit will be restored to his body, two angels will come, make him sit up and ask him who his Lord is, to which he will reply, ‘Alas, alas, I do not know.’ They will ask him what his religion is, and he will reply, ‘Alas, alas, I do not know.’ They will ask him about this man who was sent on a mission among his people, and he will reply, ‘Alas, alas, I do not know.' Then a crier will call from heaven, ‘He has lied, so spread a bed for him from hell, clothe him from hell, and open a door for him into hell.' Then some of its heat and pestilential wind will come to him, and his grave will become restricted so that his ribs will be pressed together. One who is blind and dumb will then be placed in charge of him, having a sledgehammer such that if a mountain were struck with it it would become dust. He will give him a blow with it and he will utter a shout which will be heard by everything between the east and the west except by men and jinn, and he will become dust. Then his spirit will be restored to him."
Ahmad and Abu Dawud transmitted it.
* Quran, 14:27.
ব্যাখ্যা: মালাক মু’মিন ব্যক্তির নিকট আসবে। প্রশ্ন করবে, এই ব্যক্তির পরিচয় কি, তিনি কি রসূল? অথবা এ ব্যাপারে তোমার বিশ্বাস কি? তুমি যে আল্লাহর একত্ব, ইসলাম এবং রিসালাতের খবর দিলে এটা তুমি কিভাবে জেনেছ?
صَدَّقْتُ তিনি যা বলেছেন তা সত্যায়ন করেছি এবং কুরআনে যা পড়েছি তাও সত্যায়ন করেছি। অতএব কুরআনে পেয়েছি যে, আমি সহ সমগ্র সৃষ্টিকুলের স্রষ্টা এক অদ্বিতীয়, আর তিনি হলেন আল্লাহ। আর আল্লাহর নিকট গ্রহণীয় জীবন বিধান কেবল ইসলাম। আর মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তারই প্রেরিত নাবী।
মু’মিন ব্যক্তি এই যথাযথ উত্তর দিতে পারাই আল্লাহ তা‘আলার (সূরাহ্ ইবরাহীম ১৪ঃ ২৭) আয়াতের বাস্তবতা।
يُثَبِّتُ اللّهُ الَّذِيْنَ امَنُوْا بِالْقَوْلِ الثَّابِتِ
‘‘যারা ঈমান এনেছে তাদেরকে আল্লাহ শাশ্বত বাণীর অবলম্বনে প্রতিষ্ঠিত রাখবেন।’’
পরিচ্ছেদঃ ৪. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - কবরের ‘আযাব
১৩২-[৮] ’উসমান (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি যখন কোন কবরের নিকট দাঁড়াতেন, কেঁদে দিতেন, (আল্লাহর ভয়ে চোখের পানিতে) তার দাড়ি ভিজে যেত। একদা তাকে জিজ্ঞেস করা হলো, জান্নাত ও জাহান্নামের কথা স্মরণ হলে, আপনি কাঁদেন না। আর আপনি এ জায়গায় (কবরস্থানে) দাঁড়িয়ে কাঁদছেন? তিনি প্রত্যুত্তরে বললেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আখিরাতের মঞ্জীলসমূহের মধ্যে কবর হলো প্রথম মঞ্জীল। কেউ যদি এ মঞ্জীলে মুক্তি পেয়ে যায়, তাহলে পরের মঞ্জীলসমূহ অতিক্রম করা তার জন্য সহজসাধ্য হয়ে যায়। আর যে ব্যক্তি এ মঞ্জীলে মুক্তি লাভ করতে পারলো না, তার জন্য পরবর্তী মঞ্জীলসমূহ আরও কঠিন হয়ে পড়ে। অতঃপর তিনি [’উসমান (রাঃ)] বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এটাও বলেছেন, কবর থেকে বেশি কঠিন কোন ভয়ঙ্কর জায়গা আমি কক্ষনো দেখিনি। (তিরমিযী ও ইবনু মাজাহ; ইমাম তিরমিযী বলেন, হাদীসটি গরীব)[1]
باب إثبات عذاب القبر - الفصل الثاني
وَعَن عُثْمَان رَضِي الله عَنهُ أَنه إِذَا وَقَفَ عَلَى قَبْرٍ بَكَى حَتَّى يَبُلَّ لِحْيَتَهُ فَقِيلَ لَهُ تُذْكَرُ الْجَنَّةُ وَالنَّارُ فَلَا تَبْكِي وَتَبْكِي مِنْ هَذَا فَقَالَ إِنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «إِنَّ الْقَبْرَ أَوَّلُ مَنْزِلٍ مِنْ مَنَازِلِ الْآخِرَةِ فَإِنْ نَجَا مِنْهُ فَمَا بَعْدَهُ أَيْسَرُ مِنْهُ وَإِنْ لَمْ يَنْجُ مِنْهُ فَمَا بَعْدَهُ أَشَدُّ مِنْهُ قَالَ وَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَا رَأَيْت منْظرًا قطّ إِلَّا الْقَبْر أَفْظَعُ مِنْهُ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَابْنُ مَاجَهْ. وَقَالَ التِّرْمِذِيُّ هَذَا حَدِيث غَرِيب
Chapter: Confirmation of the Punishment in the Grave - Section 2
‘Uthman told that when he stood over a grave he would weep so sorely that the tears moistened his beard. Someone said to him, “You remember paradise and hell, without weeping, yet you are weeping over this." He replied that God’s messenger said, “The grave is the first stage of the next world ; if one escapes from it what follows is easier than it, but if one does not escape from it what follows is more severe than it." He further quoted God’s messenger as saying, “I have never seen a sight as horrible as the grave."
Tirmidhi and Ibn Majah transmitted it, and Tirmidhi said this is a gharib tradition.
ব্যাখ্যা : একটি প্রশ্ন এবং তার উত্তরঃ
প্রশ্নঃ ‘উসমান (রাঃ) তো জান্নাতের সানাদপ্রাপ্তদের একজন। এ সত্ত্বেও তিনি কবরের কাছে গিয়ে কান্নাকাটির কারণ কি?
এর উত্তর কয়েকটি হতে পারেঃ
১. জান্নাতের ঘোষণা হলেই কবরের ‘আযাব থেকে মুক্তি হয়ে গেল বিষয়টি এমন নয়।
২. হতে পারে পরিস্থিতি কঠিন হওয়ায় তিনি যে জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত এটা ভুলে গিয়েছিলেন।
৩. হতে পারে তিনি কবরের চাপ থেকে ভয় পেয়েছেন। যেমন সা‘দ (রাঃ)-এর হাদীসে এটাই প্রমাণ পাওয়া যায় যে, এই পাপ থেকে নাবীগণ ব্যতীত কেউই রেহাই পাবে না। মুল্লা ‘আলী কারী (রহঃ) এমনটাই বলেছেন।
৪। আল্লাহর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেও কবরের ‘আযাব থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করেছেন অথচ তিনি ছিলেন নাবী! আর যে যত আল্লাহর বেশী প্রিয় সে তত বেশী আল্লাহকে এবং আল্লাহর শাস্তিকে ভয় পেতেন। ‘উসমান (রাঃ)-এর ব্যাপারটি এমনি।
পরিচ্ছেদঃ ৪. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - কবরের ‘আযাব
১৩৩-[৯] উক্ত রাবী [’উসমান (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাইয়্যিতের দাফন সম্পন্ন করে অবসর গ্রহণকালে কবরের নিকট দাঁড়িয়ে উপস্থিত সকলকে লক্ষ্য করে বলতেন, তোমাদের ভাইয়ের জন্য (আল্লাহ তা’আলার নিকট) ক্ষমা প্রার্থনা কর ও দু’আ কর, যেন তাকে এখন (মালায়িকার প্রশ্নোত্তরে) ঈমানের উপর সুদৃঢ় থাকার শক্তি-সামর্থ্য দেন। কেননা এখনই তাকে প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে। (আবূ দাঊদ)[1]
باب إثبات عذاب القبر - الفصل الثاني
وَعَن عُثْمَان رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا فَرَغَ مِنْ دَفْنِ الْمَيِّتِ وَقَفَ عَلَيْهِ فَقَالَ: «اسْتَغْفِرُوا لِأَخِيكُمْ ثُمَّ سَلُوا لَهُ بِالتَّثْبِيتِ فَإِنَّهُ الْآنَ يُسْأَلُ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
Chapter: Confirmation of the Punishment in the Grave - Section 2
He [Uthman] also said that when the Prophet finished the burial of the dead he stood over it and said, “Ask forgiveness for your brother, then ask that he may be strengthened, for he is now being questioned."
Abu Dawud transmitted it.
ব্যাখ্যা: এ হাদীস থেকে আমরা বুঝতে পারি, দাফন শেষে মৃত ব্যক্তির জন্য দু‘আ করা এবং তার অবিচলতার জন্য আল্লাহর নিকট ফরিয়াদ করা শার‘ঈ নিয়ম বিদ্‘আত নয়। আর জীবিত ব্যক্তির দু‘আ মৃত ব্যক্তিদের উপকার দেয়।
পরিচ্ছেদঃ ৪. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - কবরের ‘আযাব
১৩৪-[১০] আবূ সা’ঈদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কাফিরদের জন্য তাদের কবরে নিরানব্বইটি সাপ নির্ধারণ করা হয়। এ সাপগুলো তাকে ক্বিয়ামাত (কিয়ামত) পর্যন্ত কামড়াতে ও দংশন করতে থাকবে। যদি তার কোন একটি সাপ জমিনে নিঃশ্বাস ফেলে, তবে এ জমিনে আর কোন ঘাস-তৃণলতা জন্মাবে না। (দারিমী) তিরমিযীও এ ধরনের হাদীস বর্ণনা করেছেন, কিন্তু তিনি নিরানব্বইটির স্থানে সত্তরের উল্লেখ করেছেন।[1]
تِنِّيْنٌ (তিন্নীন) অত্যধিক বিষধর বড় সাঁপ। ইমাম দারিমী হাদীসটি কিতাবুর রিক্বাকে বর্ণনা করেছেন। আর তার সানাদটি দুর্বল। কারণ তাতে দাররাজ আবুস্ সাম্হ নামক একজন মুনকার রাবী রয়েছে। ইমাম আহমাদ (রহঃ) দারিমী-এর সাথেই মুসনাদে আহমাদের ৩/৩৮ নং এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। আর ইমাম তিরমিযী (রহঃ) আবূ যায়দ (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত অন্য সূত্রে হাদীসটি আত্ তিরমিযীর ২/৭৫ নং এ বর্ণনা করেছেন। তবে সে সানাদেও দু’জন দুর্বল রাবী রয়েছে।
باب إثبات عذاب القبر - الفصل الثاني
عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم: «يُسَلط عَلَى الْكَافِرِ فِي قَبْرِهِ تِسْعَةٌ وَتِسْعُونَ تِنِّينًا تنهشه وتلدغه حَتَّى تقوم السَّاعَة وَلَو أَنَّ تِنِّينًا مِنْهَا نَفَخَ فِي الْأَرْضِ مَا أَنْبَتَتْ خَضِرًا» . رَوَاهُ الدَّارِمِيُّ وَرَوَى التِّرْمِذِيُّ نَحْوَهُ وَقَالَ: «سَبْعُونَ بدل تِسْعَة وَتسْعُونَ»
Chapter: Confirmation of the Punishment in the Grave - Section 2
Abu Sa'id reported God’s messenger as saying, “Ninety-nine dragons will be given power over an infidel in his grave, and will bite and sting him till the last hour comes. If one of those dragons were to breathe over the earth, it would bring forth no green thing."
Darimi transmitted it, and Tirmidhi transmitted something similar, but he said seventy instead of ninety-nine.
ব্যাখ্যা: এখানে সংখ্যাটি নির্দিষ্ট আর তা হলো ৯৯। যা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে ওয়াহীর মাধ্যমে জানানো হয়েছে।
تِنِّيْنًا অত্যধিক বিষধর সাপ। এদের বিষের তীব্রতা এত অধিক যে, যদি এগুলোর থেকে কোন একটি সাপের শ্বাস-প্রশ্বাস জমিনে পৌঁছে তাহলে জমিন তার উর্বরতা হারিয়ে ফেলবে। তাতে কোন সবুজ ফসলাদি ফলাবে না।
কোন বর্ণনায় ৯৯ আর কোন বর্ণনায় ৭০। এ দুই বর্ণনার সামাধান এভাবে দেয়া হয়েছে যে, ৯৯ হলো অনুসৃত কাফির আর ৭০ হলো অনুসরণকারী কাফিরগণের জন্য প্রযোজ্য।
পরিচ্ছেদঃ ৪. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - কবরের ‘আযাব
১৩৫-[১১] জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, সা’দ ইবনু মু’আয (রাঃ) যখন ইন্তিকাল করেন, তখন আমরা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে তাঁর জানাযায় হাযির হলাম। জানাযার সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করে তাকে যখন কবরে রাখা হলো ও মাটি সমান করে দেয়া হলো, তখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেখানে (দীর্ঘক্ষণ) আল্লাহর তাসবীহ পাঠ করলেন। আমরাও তাঁর সাথে অনেক সময় তাসবীহ পড়লাম। তারপর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকবীর বললেন। আমরাও (তাঁর সাথে) তাকবীর বললাম। অতঃপর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করা হলো, হে আল্লাহর রসূল! আপনি কেন এভাবে তাসবীহ পড়লেন ও তাকবীর বললেন? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) উত্তরে বললেন, এ নেক ব্যক্তির কবর খুব সংকীর্ণ হয়ে গিয়েছিল (তাই আমি তাসবীহ ও তাকবীর পড়লাম)। এতে আল্লাহ তা’আলা তার কবরকে প্রশস্ত করে দিলেন। (আহমাদ)[1]
باب إثبات عذاب القبر - الفصل الثالث
عَن جَابر بن عبد الله قَالَ خَرَجْنَا مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَى سَعْدِ بْنِ مُعَاذٍ حِينَ توفّي قَالَ فَلَمَّا صَلَّى عَلَيْهِ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَوُضِعَ فِي قَبْرِهِ وَسُوِّيَ عَلَيْهِ سَبَّحَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَسَبَّحْنَا طَوِيلًا ثُمَّ كَبَّرَ فَكَبَّرْنَا فَقِيلَ يَا رَسُولَ اللَّهِ لِمَ سَبَّحَتْ ثُمَّ كَبَّرْتَ قَالَ: «لقد تضايق على هَذَا العَبْد الصَّالح قَبره حَتَّى فرجه الله عز وَجل عَنهُ» . رَوَاهُ أَحْمد
ব্যাখ্যা: (إِلى سَعْدِ بْنِ مُعَاذٍ) তার জানাযার দিকে, তিনি হচ্ছেন সা‘দ বিন মু‘আয বিন নুমান আল্ আনসারী আল্ আশহালী, আবূ ‘আমর আওস গোত্রের নেতা মদীনায় ইসলাম গ্রহণ করেন। দুই আক্বাবার মধ্যবর্তী সময়ে। তার ইসলামের কারণে বানু ‘আবদ আশহাল-এর সকলেই ইসলাম গ্রহণ করেন। তাকে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘সাইয়্যিদুল আনসার’ উপাধি দিয়েছেন। তিনি বাদ্র (বদর) এবং উহুদ যুদ্ধে অংশ নেন। খন্দাকের যুদ্ধে তীরবিদ্ধ হয়ে রক্ত ঝরতে ঝরতে এক মাসের মাথায় হিজরী ৫ সনে যিলক্বদ মাসে শাহাদাত বরণ করেন। তখন তার বয়স হয়েছিল ৩৭ বছর, বাক্বী গোরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। সহীহুল বুখারীতে তার বর্ণিত দু’টি হাদীস রয়েছে।
পরিচ্ছেদঃ ৪. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - কবরের ‘আযাব
১৩৬-[১২] ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ এই [সা’দ ইবনু মু’আয (রাঃ)] সে ব্যক্তি যার মৃত্যুতে ’আর্শ (আরশ)-ও কেঁপেছিল (তার পবিত্র রূহ্ ’আর্শে পৌঁছলে ’আর্শের নিকটতম মালায়িকাহ্ খুশীতে আত্মহারা হয়ে গিয়েছিল) এবং আসমানের দরজা খুলে দিয়েছিল। তার জানাযায় সত্তর হাজার মালাক উপস্থিত হয়েছিলেন। অথচ তার কবর সংকীর্ণ হয়েছিল। (রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দু’আর বারাকাতে) পরে তা প্রশস্ত হয়ে গিয়েছিল। (নাসায়ী)[1]
باب إثبات عذاب القبر - الفصل الثالث
وَعَن ابْنِ عُمَرَ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «هَذَا الَّذِي تَحَرَّكَ لَهُ الْعَرْشُ وَفُتِحَتْ لَهُ أَبْوَابُ السَّمَاءِ وَشَهِدَهُ سَبْعُونَ أَلْفًا مِنَ الْمَلَائِكَةِ لَقَدْ ضُمَّ ضَمَّةً ثُمَّ فُرِّجَ عَنْهُ» . رَوَاهُ النَّسَائِيّ
ব্যাখ্যা: (هذَا الَّذِيْ) সা‘দ বিন মু‘আয-এর প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। এটা তা‘যীমের জন্য ব্যবহৃত হয়েছে।
(تَحَرَّكَ لَهُ الْعَرْشُ) অন্য বর্ণনায় إهْتَزَّ উল্লেখ আছে। অর্থাৎ- লাফিয়ে উঠেছে এবং তার সম্মানের সুসংবাদ তার রবের নিকটে দিয়েছে। কেননা ‘আর্শ (আরশ) যদিও সেটা জড় পদার্থ কিন্তু আল্লাহ চাইলে যা ইচ্ছা তাই করতে পারেন। এ হাদীসে সা‘দ বিন মু‘আয (রাঃ)-এর ফাযীলাত বর্ণনা আছে এবং এটাও বর্ণনা করছে যে, কবরের চাপ থেকে কোন মানুষই মুক্তি পাবে না। যেমন- সা‘দ (রাঃ) পাননি, তবে আম্বিয়ায়ে কিরামের কথা ভিন্ন।
ইমাম হাকিম আত্ তিরমিযী (রহঃ) বলেন, এ চাপের কারণ হলো প্রতিটি মানুষই কিছু না কিছু পাপের সাথে জড়িত হয়, এই পাপ মোচনের জন্য এই চাপ দেয়া হয়, তারপর আবার তাকে রহমাত করা হয়। সা‘দ বিন মু‘আয-এর চাপ সম্বন্ধে বলা হয়ে থাকে যে, প্রস্রাবের পরে পবিত্রতার প্রতি অসতর্ক থাকার দরুন তার এই চাপ হয়েছে।
পরিচ্ছেদঃ ৪. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - কবরের ‘আযাব
১৩৭-[১৩] আসমা বিনতু আবূ বকর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের উদ্দেশে নাসীহাত করার জন্য দাঁড়ালেন এবং কবরের ফিত্নাহ্ (ফিতনা) সম্পর্কে বর্ণনা করলেন। মানুষ কবরে যে ফিতনার সম্মুখীন হয় তা শুনে লোকজন ভয়ে চিৎকার দিয়ে কাঁদতে শুরু করল। ইমাম বুখারী এ পর্যন্ত বর্ণনা করেছেন।
আর ইমাম নাসায়ীর বর্ণনায় আরো রয়েছেঃ (কবরের ফিতনার কথা শুনে ভয়ে ভীত বিহ্বল হয়ে) মুসলিমরা চীৎকারের কারণে আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর (মুখ থেকে বের হওয়া) কথাগুলো বুঝতে পারিনি। চীৎকার বন্ধ হবার পর অবস্থা শান্ত হলে আমি আমার নিকটে বসা এক লোককে জিজ্ঞেস করলাম, আল্লাহ তোমায় কল্যাণ দান করুন, শেষের দিকে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কী বলেছেন? সে ব্যক্তি উত্তরে বলল, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, আমার ওপর এ ওয়াহী এসেছে যে, তোমাদেরকে কবরে ফিতনায় ফেলা হবে। আর এ ফিতনাহ্ দাজ্জালের ফিতনার মতো হবে।[1]
باب إثبات عذاب القبر - الفصل الثالث
عَن أَسْمَاءَ بِنْتِ أَبِي بَكْرٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا تَقول قَامَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ خَطِيبًا فَذكر فتْنَة الْقَبْر الَّتِي يفتتن فِيهَا الْمَرْءُ فَلَمَّا ذَكَرَ ذَلِكَ ضَجَّ الْمُسْلِمُونَ ضَجَّةً. رَوَاهُ الْبُخَارِيُّ هَكَذَا وَزَادَ النَّسَائِيُّ: حَالَتْ بَيْنِي وَبَيْنَ أَنْ أَفْهَمَ كَلَامَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَلَمَّا سَكَنَتْ ضَجَّتُهُمْ قُلْتُ لِرَجُلٍ قَرِيبٍ مِنِّي: أَيْ بَارَكَ اللَّهُ فِيكَ مَاذَا قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي آخِرِ قَوْلِهِ؟ قَالَ: «قَدْ أُوحِيَ إِلَيَّ أَنَّكُمْ تُفْتَنُونَ فِي الْقُبُورِ قَرِيبًا من فتْنَة الدَّجَّال»
পরিচ্ছেদঃ ৪. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - কবরের ‘আযাব
১৩৮-[১৪] জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন (মু’মিন) মৃতকে কবরে দাফন করা হয়, তার নিকট মনে হয় যেন সূর্য ডুবছে। তখন সে হাত দিয়ে চোখ মুছতে মুছতে উঠে বসে এবং বলে যে, আমাকে ছেড়ে দাও। আমি সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করে নেই। (সালাতের প্রতি একাগ্রতার কারণে এরূপ বলবে) (ইবনু মাজাহ্)[1]
باب إثبات عذاب القبر - الفصل الثالث
وَعَنْ جَابِرٌ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: إِذَا أُدْخِلَ الْمَيِّتُ الْقَبْرَ مَثَلَتْ لَهُ الشَّمْسُ عِنْدَ غُرُوبِهَا فَيَجْلِسُ يَمْسَحُ عَيْنَيْهِ وَيَقُولُ: دَعونِي أُصَلِّي . رَوَاهُ ابْن مَاجَه
ব্যাখ্যা: হাফিয ইবনু হাজার (রহঃ) বলেন, সূর্য ডুবে যাওয়ার ক্ষণে এই অবস্থা শুধুমাত্র মু’মিনেরই হবে। কারণ হাদীসে যদিও বিষয়টি ব্যাপক আছে তথাপি সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায়ের ইচ্ছা তো কাফিরের আসতে পারে না বরং সেটা মু’মিনেরই শোভা পায়।
পরিচ্ছেদঃ ৪. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - কবরের ‘আযাব
১৩৯-[১৫] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) সূত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ মৃত যখন কবরের ভিতরে পৌঁছে, তখন (নেক) বান্দা কবরের ভিতর ভয়-ভীতিহীন ও শঙ্কামুক্ত হয়ে উঠে বসে। অতঃপর তাকে জিজ্ঞেস করা হয়, তুমি কোন্ দীনে ছিলে? তখন সে বলে, আমি দীন ইসলামে ছিলাম। তারপর তাকে জিজ্ঞেস করা হয়, এ ব্যক্তি (মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে? সে বলে, এ ব্যক্তি হলেন মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, আল্লাহর রসূল। আল্লাহর নিকট হতে আমাদের কাছে (হিদায়াতের জন্য) স্পষ্ট দলীল নিয়ে এসেছেন এবং আমরাও তাঁকে (পরিপূর্ণ) বিশ্বাস করেছি। পুনরায় তাকে প্রশ্ন করা হয়, তুমি আল্লাহকে কক্ষনো দেখেছ কি? সে উত্তরে বলে, দুনিয়াতে আল্লাহকে দেখা কারো পক্ষে সম্ভব নয়। অতঃপর জাহান্নামের দিকে তার জন্য একটি ছিদ্রপথ খুলে দেয়া হয়। সে সেদিকে তাকায় এবং দেখে, আগুনের লেলিহান শিখা একে অপরকে দলিত-মথিত করে তোলপাড় করছে। তখন তাকে বলা হয়, দেখ! তোমাকে কি কঠিন বিপদ হতে আল্লাহ হিফাযাত করেছেন। তারপর তার জন্য জান্নাতের দিকে একটি ছিদ্রপথ খুলে দেয়া হয়। এখন সে জান্নাতের শোভা সৌন্দর্য ও এর ভোগ-বিলাসের প্রতি তাকায়। তাকে তখন বলা হয়, এটা তোমার (প্রকৃত) স্থান। কেননা তুমি দুনিয়ায় ঈমানের সাথে ছিলে, ঈমান নিয়ে মৃত্যুবরণ করেছ। ইন-শা-আল্লাহ, ঈমানের সাথেই তুমি কিয়ামতের (কিয়ামতের) দিন উঠবে।
অপরদিকে বদকার বান্দা তার কবরের মধ্যে ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে উঠে বসবে। তখন তাকে জিজ্ঞেস করা হবে, তুমি কোন্ দীনে ছিলে? উত্তরে সে বলবে, আমি তো কিছুই জানি না। পুনরায় তাকে জিজ্ঞেস করা হবে, এ ব্যক্তি (মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে? উত্তরে সে বলবে, আমি মানুষদেরকে যা বলতে শুনেছি তা-ই আমি বলেছি। অতঃপর তার জন্য জান্নাতের দিকে একটি ছিদ্রপথ খুলে দেয়া হবে। এ পথ দিয়ে সে জান্নাতের সৌন্দর্য ও এতে যা (সুখ-শান্তির উপায়-উপকরণ, সাজ-সরঞ্জাম) রয়েছে তা দেখবে। তখন তাকে বলা হবে, এসব জিনিসের প্রতি দৃষ্টি দাও যেসব জিনিস হতে আল্লাহ তোমাকে ফিরিয়ে রেখেছেন। তারপর তার জন্য আর একটি দরজা খুলে দেয়া হবে। আর সে সেদিকে দেখবে আগুনের লেলিহান শিখা একে অপরকে দলিত-মথিত করে তোলপাড় করছে। তাকে তখন বলা হবে, এটা তোমার (প্রকৃত) অবস্থান। তুমি সন্দেহের উপরেই ছিলে, সন্দেহের উপরই তুমি মৃত্যুবরণ করেছ। ইনশা-আল্লা-হ, এ সন্দেহের উপরই ক্বিয়ামাত (কিয়ামত) দিবসে তোমাকে উঠানো হবে। (ইবনু মাজাহ্)[1]
باب إثبات عذاب القبر - الفصل الثالث
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «إِنَّ الْمَيِّتَ يَصِيرُ إِلَى الْقَبْرِ فَيَجْلِسُ الرَّجُلُ الصَّالح فِي قَبره غير فزع وَلَا مشعوف ثمَّ يُقَال لَهُ فِيمَ كُنْتَ فَيَقُولُ كُنْتُ فِي الْإِسْلَامِ فَيُقَالُ لَهُ مَا هَذَا الرَّجُلُ فَيَقُولُ مُحَمَّدٌ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ جَاءَنَا بِالْبَيِّنَاتِ مِنْ عِنْدِ اللَّهِ فَصَدَّقْنَاهُ فَيُقَالُ لَهُ هَلْ رَأَيْتَ اللَّهَ فَيَقُولُ مَا يَنْبَغِي لِأَحَدٍ أَنْ يَرَى اللَّهَ فَيُفْرَجُ لَهُ فُرْجَةً قِبَلَ النَّارِ فَيَنْظُرُ إِلَيْهَا يُحَطِّمُ بَعْضُهَا بَعْضًا فَيُقَالُ لَهُ انْظُرْ إِلَى مَا وَقَاكَ اللَّهُ ثمَّ يفرج لَهُ قِبَلَ الْجَنَّةِ فَيَنْظُرُ إِلَى زَهْرَتِهَا وَمَا فِيهَا فَيُقَال لَهُ هَذَا مَقْعَدك وَيُقَال لَهُ عَلَى الْيَقِينِ كُنْتَ وَعَلَيْهِ مِتَّ وَعَلَيْهِ تُبْعَثُ إِن شَاءَ الله وَيجْلس الرجل السوء فِي قَبره فَزعًا مشعوفا فَيُقَال لَهُ فِيمَ كُنْتَ فَيَقُولُ لَا أَدْرِي فَيُقَالُ لَهُ مَا هَذَا الرَّجُلُ فَيَقُولُ سَمِعْتُ النَّاسَ يَقُولُونَ قولا فقلته فيفرج لَهُ قِبَلَ الْجَنَّةِ فَيَنْظُرُ إِلَى زَهْرَتِهَا وَمَا فِيهَا فَيُقَالُ لَهُ انْظُرْ إِلَى مَا صَرَفَ اللَّهُ عَنْك ثمَّ يفرج لَهُ فُرْجَةً قِبَلَ النَّارِ فَيَنْظُرُ إِلَيْهَا يُحَطِّمُ بَعْضُهَا بَعْضًا فَيُقَالُ لَهُ هَذَا مَقْعَدُكَ عَلَى الشَّك كنت وَعَلِيهِ مت وَعَلِيهِ تبْعَث إِن شَاءَ اللَّهُ تَعَالَى» . رَوَاهُ ابْنُ مَاجَهْ
ব্যাখ্যা: (انْظُرْ إِلى مَا وَقَاكَ اللّهُ) ‘‘দেখো! আল্লাহ তোমাকে কি কঠিন বিপদ হতে রক্ষা করেছেন।’’ অর্থাৎ- তুমি ঐ শাস্তির দিকে তাকিয়ে দেখো যে শাস্তি থেকে আল্লাহ তোমাকে রক্ষা করেছেন স্বীয় কৃপায় তোমাকে কুফরী ও পাপ থেকে বিরত রেখে। যে পাপ মানুষকে ঐ শাস্তির মধ্যে নিক্ষেপ করে তথা শাস্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
(فَيَنْظُرُ إِلى زَهْرَتِهَا وَمَا فِيهَا) ‘‘অতঃপর সে জান্নাতের সৌন্দর্য ও ভোগ-বিলাসের দিকে তাকায়।’’ অর্থাৎ- মু’মিন ব্যক্তি তখন জান্নাতের দিকে তাকিয়ে জান্নাতের যে নি‘আমাত সেটার মধ্যে যে দালান-কোঠা এবং হূর গেলেমান আছে সব দেখতে পাবে।
(فَيُقَالُ لَه هذَا مَقْعَدُكَ) ‘‘অতঃপর তাকে বলা হবে এটাই তোমার আবাসস্থল।’’ অর্থাৎ- কবর থেকে পুনরুত্থানের পর বান্দাদের হিসাব-নিকাশের পর এ জান্নাতই হবে তোমার আবাসস্থল, এখানেই তুমি অনন্তকাল থাকবে যার শুরু আছে কিন্তু শেষ নেই।
(إِنْ شَآءَ اللهُ تَعَالى) সন্দেহ সৃষ্টির উদ্দেশে বলা হয়নি। বলার কারণ দু’টি হতে পারে।
১. বারাকাতের উদ্দেশে।
২. নিশ্চয়তা বুঝানোর উদ্দেশে।
পরিচ্ছেদঃ ৫. প্রথম অনুচ্ছেদ - কিতাব ও সুন্নাহকে সুদৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরা
১৪০-[১] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আমাদের এ দীনে নতুন কিছু উদ্ভাবন করেছে যা এতে নেই, তা প্রত্যাখ্যাত। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
بَابُ الْإِعْتِصَامِ بِالْكِتَابِ وَالسُّنَّةِ
عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ أَحْدَثَ فِي أَمْرِنَا هَذَا مَا لَيْسَ مِنْهُ فَهُوَ رد»
ব্যাখ্যা: যে ব্যক্তি ইসলামের মধ্যে নিজের মনগড়া কিছু সংযোজন করবে যার স্বপক্ষে সুস্পষ্ট বা অস্পষ্ট কোন প্রকার দলীল কুরআন ও সুন্নাহ'য় থাকবে না তা প্রত্যাখ্যাত। অর্থাৎ- ঐ বিষয়টি প্রত্যাখ্যান করা মানুষের জন্য একান্তই আবশ্যক। ঐ বিষয়ে তাকলীদ করা এবং তার অনুসরণ করা কোনক্রমেই জায়িয হবে না। এ হাদীসটি ইসলামের মৌলিক নীতিমালার মূল এবং সকল প্রকার বিদ্‘আতকে প্রত্যাখ্যান করার সুস্পষ্ট দলীল। ইমাম নাবাবী বলেছেনঃ অশ্লীল ও অপছন্দকর বিষয়কে বর্জন করার ব্যাপারে এ হাদীসটিকে দলীল হিসেবে গ্রহণ করার জন্য হাদীসটির সংরক্ষণ একান্তই প্রয়োজন।
সহীহ মুসলিম-এর বর্ণনায় রয়েছে যে, (مَنْ عَمِلَ عَمَلًا لَيْسَ عَلَيْهِ أَمْرُنَا فَهُوَ رَدُّ) অর্থাৎ- যে ব্যক্তি এমন কাজ করলো যা দীনের অন্তর্ভুক্ত নয় এবং যাতে আল্লাহ ও তাঁর রসূলের অনুমোদন নেই, তা দীন বহির্ভূত এবং পরিত্যাজ্য।
হাফিয ইবনু হাজার বলেছেনঃ নিষেধকৃত সকল বিষয় বাতিল বলে গণ্য হওয়া এবং বিষয়টির ফলাফল বাস্তবায়ন না হওয়ার উপর হাদীসটি প্রমাণ করে। কেননা নিষেধকৃত বস্ত্রসমূহ দীনের অন্তর্ভুক্ত নয়, তাই তা প্রত্যাখ্যান একান্তই আবশ্যক।