পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - যুদ্ধাস্ত্রের প্রস্তুতিকরণ
৩৮৬১-[১] ’উকবা ইবনু ’আমির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে মসজিদে নববীর মিম্বারে দাঁড়িয়ে বলতে শুনেছি। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা শত্রুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাভিযানে সাধ্যমতো শক্তি সঞ্চয় কর। মনে রাখ, প্রকৃত শক্তি হলো তীর নিক্ষেপ করা। শোন! প্রকৃত শক্তি হলো তীর নিক্ষেপ করা। শোন! প্রকৃত শক্তি হলো তীর নিক্ষেপ করা। (মুসলিম)[1]
بَابُ إِعْدَادِ اٰلَةِ الْجِهَادِ
عَن عُقْبَةَ بْنِ عَامِرٍ قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهُوَ عَلَى الْمِنْبَرِ يَقُول: (وَأَعدُّوا لَهُ مَا استطَعْتُمْ منْ قُوَّةٍ)
أَلَا إِنَّ الْقُوَّةَ الرَّمْيُ أَلَا إِنَّ الْقُوَّةَ الرَّمْيُ أَلَا إِنَّ الْقُوَّةَ الرَّمْيُ)
رَوَاهُ مُسْلِمٌ
ব্যাখ্যা: উপরোল্লিখিত হাদীসে যুদ্ধের জন্য সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহণ করাকে আবশ্যককারী কুরআনের আয়াতটি বর্ণনা করতঃ রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, শক্তি হচ্ছে নিক্ষেপণ বস্তু।
وَأَعِدُّوْا لَهٗ مَا اسْتطَعْتُمْ مِنْ قُوَّةٍ এ অংশের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, যে সকল জিনিস দ্বারা যুদ্ধে আত্মরক্ষা করা যায় এবং অধিক শক্তিশালী হওয়া যায়, উল্লেখিত আয়াতে এ জাতীয় সকল উপকরণ যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত রাখার আদেশ দেয়া হয়েছে। যুদ্ধের জন্য প্রয়োজনীয় সবিকছুই এ আয়াতের বিধানের আওতাধীন। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উক্তি (أَلَا إِنَّ الْقُوَّةَ الرَّمْىُ) তথা ‘‘জেনে রাখ! শক্তি হচ্ছে নিক্ষেপণ বস্তু’’, এর দ্বারা তিনি মূলত যুদ্ধের প্রতি উৎসাহিত করেছেন। এতে বুঝানো হয়েছে বীরত্বের সাথে যুদ্ধ করার লক্ষ্যে যুদ্ধের যাবতীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে। অনুরূপভাবে যুদ্ধের পূর্বপ্রস্তুতিস্বরূপ ঘোড়াদৌড় প্রতিযোগিতা করা, শরীর চর্চা করা, প্রশিক্ষণ দেয়া এবং নেয়া সব কিছুই এর অন্তর্ভুক্ত। (শারহে মুসলিম ১৩শ খন্ড, হাঃ ১৯১৭)
পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - যুদ্ধাস্ত্রের প্রস্তুতিকরণ
৩৮৬২-[২] উক্ত রাবী [’উকবা ইবনু ’আমির (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, শীঘ্রই রোম সাম্রাজ্য তোমাদের হাতে পরাজিত হবে এবং তোমাদের সাহায্যের জন্য আল্লাহই যথেষ্ট। অতএব তোমাদের কেউ যেন তীর নিক্ষেপে অক্ষমতা প্রকাশ না করে। (মুসলিম)[1]
بَابُ إِعْدَادِ اٰلَةِ الْجِهَادِ
وَعَنْهُ قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «سَتُفْتَحُ عَلَيْكُمُ الرُّومُ وَيَكْفِيكُمُ اللَّهُ فَلَا يَعْجِزْ أَحَدُكُمْ أَنْ يَلْهُوَ بِأَسْهُمِهِ» . رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যা: আলোচ্য হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর একটি ভবিষ্যদ্বাণী উল্লেখ করা হয়েছে যে, মুসলিমরা রূম (রোম) সাম্রাজ্য জয় করবে। আর বাস্তবেই পরবর্তীতে মুসলিমরা তা জয় করেছিল।
(سَتُفْتَحُ عَلَيْكُمُ الرُّوْمُ) এ বাক্যের ভাবার্থ হলো আল্লাহ প্রদত্ত বিজয় ও সাহায্যের মাধ্যমে তোমরা অচিরেই রূম জয় করেব।
(فَلَا يَعْجِزْ أَحَدُكُمْ أَنْ يَلْهُوَ بِأَسْهُمِه) এ বাক্যে আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, সেই সময় তোমাদের কেউ যেন তীর-ধনুক বা অস্ত্র নিয়ে জিহাদের ময়দানে উক্ত শত্রুদের সাথে জিহাদ করতে অপারগ হয়ে না যায়। মুযহির (রহঃ) বলেনঃ এর ভাবার্থ হলো, রুমের অধিকাংশ সৈন্য তিরন্দাজ, অতএব তোমরাও তীর চালনা শিখে নিও, যাতে তোমরা তাদেরকে পরাজিত করতে পার। আর তোমরা অবশ্যই তাদেরকে পরাজিত করতে পারবে। আর আল্লাহ প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী তোমাদের দ্বারা রূমবাসীদের প্রতিহত করবেনই। অতএব তোমরা যখন রূম বিজয় করবে তখন তীর চালনো ছেড়ে দিও না; বরং অন্যদেরও তীর চালানোর প্রশিক্ষণ দিবে। তোমরা এমন মনে করবে না যে, আমরা রূম বিজয় করে ফেলেছি, অতএব এখন তো আর তীরের কোনো প্রয়োজন নেই; বরং তোমরা তীর চালানো ধরে রাখবে, কারণ এটা তোমাদের সব সময় প্রয়োজন হবে। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - যুদ্ধাস্ত্রের প্রস্তুতিকরণ
৩৮৬৩-[৩] উক্ত রাবী [’উকবা ইবনু ’আমির (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি তীরন্দাজী শিক্ষা গ্রহণ করে তা পরিহার (চর্চা না) করে, সে আমাদের দলভুক্ত নয়, অথবা সে নাফরমানি করল। (মুসলিম)[1]
بَابُ إِعْدَادِ اٰلَةِ الْجِهَادِ
وَعَنْهُ قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم يقولُ: «مَنْ علِمَ الرَّميَ ثمَّ تَرَكَهُ فَلَيْسَ مِنَّا أَوْ قَدْ عَصَى» . رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যা: আলোচ্য হাদীসে জিহাদের জন্য সব সময় প্রস্তুত থাকার জন্য উৎসাহিত করা হয়েছে এবং কেউ তীর নিক্ষেপ করা শিক্ষা করার পর পুনরায় তা ভুলে গেলে তার নিন্দা করা হয়েছে।
(مَنْ علِمَ الرَّمْىَ ثُمَّ تَرَكَه) এর ভাবার্থ হলো, কেউ তীর নিক্ষেপণ শিক্ষা করার পর তা ভুলে গেলে তার জন্য ইসলামে কঠিন ধমক ও সতর্কবাণী পেশ করা হয়েছে। কোনো ব্যক্তির বিনা কারণে এ শিক্ষা ভুলে যাওয়া ইসলামে খুবই অপছন্দনীয় বিষয়। (শারহে মুসলিম ১৩শ খন্ড, হাঃ ১৯১৯)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কথা (فَلَيْسَ مِنَّا) তথা ‘‘সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়’’, অর্থাৎ সে আমাদের দলের মধ্যে শামিল হবে না। তীর নিক্ষেপ না শিখার চেয়ে অনেক বেশী ভয়ংকর হলো তা শিখার পর ভুলে যাওয়া। কারণ যে তা শিখেনি সে ঐ দলের অন্তর্ভুক্ত হয়নি। কিন্তু যে শিখেছে সে (রসূল ও সাহাবীদের) তাদের দলে প্রবেশ করেছে, অতঃপর ভুলে গিয়ে সে যেন ঐ মহান ব্যক্তিদের দলের সাথে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করছে এবং প্রাপ্ত নি‘আমাত অস্বীকার করছে। তাই তার এ অন্যায় খুবই ভয়ঙ্কর। এজন্যই রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ কথা বলেছেন যে, সে আমাদের দলভুক্ত নয়। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - যুদ্ধাস্ত্রের প্রস্তুতিকরণ
৩৮৬৪-[৪] সালামাহ্ ইবনুল আক্ওয়া’ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ’আসলাম’ সম্প্রদায়ের একদল লোকের কাছে আসলেন, তখন তারা বাজারের মধ্যে তীর নিক্ষেপ প্রতিযোগিতা করছিল। অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাদের লক্ষ্য করে বললেন, হে ইসমা’ঈল-এর বংশধর! তোমরা তীরন্দাজ হও। কেননা তোমাদের পিতামহ (ইসমা’ঈল (আঃ)) তীরন্দাজ ছিলেন। আমি অমুক দলের পক্ষে আছি। কিন্তু অপর পক্ষ থেকে তীর চালনা বন্ধ করে দিল। তখন (নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তোমাদের কি হলো? তারা বলল, আমরা কিরূপে তীর ছুঁড়তে পারি, আপনি যে অমুক দলের সঙ্গে রয়েছেন? এবার তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, আচ্ছা তোমরা তীর নিক্ষেপ করতে থাক, আমি তোমাদের সকলের সাথেই আছি। (বুখারী)[1]
بَابُ إِعْدَادِ اٰلَةِ الْجِهَادِ
وَعَن سلَمةَ بنِ الأكوَعِ قَالَ: خَرَجَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى قَوْمٍ مِنْ أَسْلَمَ يَتَنَاضَلُونَ بِالسُّوقِ فَقَالَ: «ارْمُوا بَنِي إِسْمَاعِيلَ فَإِنَّ أَبَاكُمْ كَانَ رَامِيًا وَأَنَا مَعَ بَنِي فُلَانٍ» لِأَحَدِ الْفَرِيقَيْنِ فَأَمْسَكُوا بِأَيْدِيهِمْ فَقَالَ: «مَا لَكُمْ؟» قَالُوا: وَكَيْفَ نَرْمِي وَأَنْتَ مَعَ بَنِي فُلَانٍ؟ قَالَ: «ارْمُوا وَأَنا مَعكُمْ كلكُمْ» . رَوَاهُ البُخَارِيّ
ব্যাখ্যা: এ হাদীসটিতেও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তীর নিক্ষেপের প্রশিক্ষণ নেয়ার প্রতি উৎসাহিত করেছেন।
(يَتَنَاضَلُوْنَ بِالسُّوْقِ) অর্থাৎ- তারা ‘সূক’ নামক স্থানে তীর নিক্ষেপের প্রতিযোগিতা করছিল। মূলত السوق শব্দের অর্থ হলো বাজার। কিন্তু হাদীসে বর্ণিত السوق শব্দটি সম্পর্কে ইবনু মালিক বলেন, ‘‘এটি একটি জায়গার নাম’’। মুল্লা ‘আলী কারী বলেনঃ তখন তারা পায়ে হেঁটে চলছিল; কোনো সওয়ারীতে আরোহী অবস্থায় ছিল না।
(وَكَيْفَ نَرْمِىْ وَأَنْتَ مَعَ بَنِىْ فُلَانٍ؟) এ বাক্যে তারা বলছে যে, আমরা কিভাবে তীর নিক্ষেপ করব, অথচ আপনি সাহায্য-সহযোগিতার দিক থেকে অমুক গোত্রের সাথে সাহায্য-সহযোগিতার দিক থেকে আছেন? অর্থাৎ- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বিপক্ষে অবস্থান নেয়াটি তারা কষ্টকর মনে করলেন। তখন রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি তোমাদের সকলেরই সাথে আছে, অতএব তোমরা তীর নিক্ষেপ কর। আর এটি ছিল একটি প্রতিযোগিতা। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - যুদ্ধাস্ত্রের প্রস্তুতিকরণ
৩৮৬৫-[৫] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবূ ত্বলহাহ্ (উহুদ যুদ্ধে) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে একই ঢালের আড়ালে আত্মরক্ষা করছিলেন। আর আবূ ত্বলহাহ্ একজন সুতীক্ষ্ণ তীরন্দাজ ছিলেন। যখন তিনি তীর নিক্ষেপ করতেন তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাথা উঁচু করে তীরের লক্ষ্যস্থল প্রত্যক্ষ করতেন। (বুখারী)[1]
بَابُ إِعْدَادِ اٰلَةِ الْجِهَادِ
وَعَن أنسٍ قَالَ: كَانَ أَبُو طَلْحَةَ يَتَتَرَّسُ مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِتُرْسٍ وَاحِدٍ وَكَانَ أَبُو طَلْحَةَ حَسَنَ الرَّمْيِ فَكَانَ إِذَا رَمَى تَشَرَّفَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَيَنْظُرُ إِلَى مَوضِع نبله. رَوَاهُ البُخَارِيّ
ব্যাখ্যা: এ হাদীসটিতেও তীর নিক্ষেপ করার প্রতি উৎসাহিত করা হয়েছে এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ কাজে খুবই আগ্রহী ছিলেন তার বর্ণনা তুলে ধরা হয়েছে।
(كَانَ أَبُوْ طَلْحَةَ يَتَتَرَّسُ مَعَ النَّبِىِّ ﷺ بِتُرْسٍ وَاحِدٍ) অর্থাৎ, আবূ ত্বলহাহ্ রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে একই ঢালের নীচে আড়াল হয়েছিলেন। সাধারণত যে ব্যক্তি তীর নিক্ষেপ করে তাকে শত্রুদের থেকে আড়াল করে রাখার জন্য অন্য একজন সৈন্যের প্রয়োজন হয়, কারণ তীর নিক্ষেপ করার সময় তার দুই হাতই ব্যস্ত থাকে। এ কারণেই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার ঢাল দ্বারা আবূ ত্বলহাকে আড়াল করে রেখেছিলেন। (ফাতহুল বারী ৬ষ্ঠ খন্ড, হাঃ ১৯০২)
(فَكَانَ إِذَا رَمٰى تَشَرَّفَ النَّبِىُّ ﷺ) অর্থাৎ- যখন আবূ ত্বলহাহ্ তীর নিক্ষেপ করত তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুব মনোযোগ সহকারে তীক্ষ্ণদৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখতেন। ‘‘ইস্তিশরাফ’’ বলা হয় চোখের ভ্রম্নতে হাত রেখে কোনো কিছু দেখাকে। যেমন সূর্য দেখার সময় আমরা ভ্রম্নতে হাত রেখে দেখি। এভাবে দেখলে কোনো বস্তু খুব সুন্দর ও পরিষ্কারভাবে দৃষ্টিগোচর হয়। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অত্যন্ত মনোযোগের সাথে আবূ ত্বলহার তীর নিক্ষেপ দেখছিলেন। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - যুদ্ধাস্ত্রের প্রস্তুতিকরণ
৩৮৬৬-[৬] উক্ত রাবী [আনাস (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ (যুদ্ধাস্ত্রের) ঘোড়ার কপালের মধ্যে বরকত ও কল্যাণ নিহিত। (বুখারী)[1]
بَابُ إِعْدَادِ اٰلَةِ الْجِهَادِ
وَعَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: (الْبَرَكَةُ فِي نَوَاصِي الْخَيل)
ব্যাখ্যা: আল্লাহর রাস্তায় জিহাদের ক্ষেত্রে বাহন হিসেবে ঘোড়ার ব্যবহারের জুড়ি নেই। ঘোড়ার মধ্যে কল্যাণ রয়েছে বলে সুসংবাদপ্রদান পূর্বক রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উল্লেখিত উক্তিটি করেছেন।
(اَلْبَرَكَةُ فِىْ نَوَاصِى الْخَيْلِ) তথা ‘‘ঘোড়ার কপালে কল্যাণ আছে’’ বলতে শুধুমাত্র ঘোড়ার কপাল উদ্দেশ্য নয়; বরং ঘোড়ার জাত বা পূর্ণ ঘোড়াই উদ্দেশ্য। যেমন ‘আরবরা বলে থাকে, فلان مبارك الناصية অর্থাৎ- অমুকের কপাল অনেক বরকতময়, যার ভাবার্থ হলো অমুক ব্যক্তি বরকতময়। সুতরাং আলোচ্য উক্তিটির ভাবার্থ হলো, ঘোড়ার মধ্যেই কল্যাণ রয়েছে। কারণ ঘোড়ার মাধ্যমে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করা হয়- যাতে ইহকালীন ও পরকালীন কল্যাণ নিহিত রয়েছে। মহান আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ অর্থাৎ- ‘‘তোমরা কাফিরদের মুকাবিলা করার জন্য যথাসাধ্য শক্তি ও সদা সজ্জিত অশ্ববাহিনী প্রস্তুত রাখবে, যা দ্বারা আল্লাহর শত্রু ও তোমাদের শত্রুদেরকে ভীত-সন্ত্রস্ত করবে, এছাড়া অন্যান্যদেরকেও, যাদেরকে তোমরা জান না; কিন্তু আল্লাহ জানেন’’- (সূরা আল আনফাল ৮ : ৬০)। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - যুদ্ধাস্ত্রের প্রস্তুতিকরণ
৩৮৬৭-[৭] জারীর ইবনু ’আব্দুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে দেখতে পেলাম যে, তিনি স্বহস্তে ঘোড়ার কপালের কেশরাজি মুছছিলেন এবং বলছিলেন, কিয়ামত পর্যন্ত ঘোড়ার কপালে কল্যাণ নিহিত রয়েছে। আর তা হলো (আখিরাতে) পুরস্কার ও (দুনিয়াতে) গনীমাতের মাল। (মুসলিম)[1]
بَابُ إِعْدَادِ اٰلَةِ الْجِهَادِ
وَعَن جَرِيرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ قَالَ: رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَلْوِي نَاصِيَةَ فرسٍ بأصبعِه ويقولُ: الْخَيْلُ مَعْقُودٌ بِنَوَاصِيهَا الْخَيْرُ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ: الأجْرُ والغَنيمةُ . رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যা: আলোচ্য হাদীসেও পূর্বোল্লিখিত হাদীসের অনুরূপ বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে, আর তা হলো ঘোড়ার মধ্যে কল্যাণ নিহিত রয়েছে। এটি পার্থিব ও পরকালীন কল্যাণ লাভের মাধ্যম। পার্থিব কল্যাণ হলো যুদ্ধলব্ধ সম্পদ তথা গনীমাত, আর পরকালীন কল্যাণ হলো জিহাদের সাওয়াব বা প্রতিদান।
(يَلْوِىْ نَاصِيَةَ فَرَسٍ بِأِصْبِعِه) এ অংশে বলা হয়েছে, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি ঘোড়ার কপালের চুলগুচ্ছতে মৃদুভাবে হাত ঘুরাচ্ছিলেন। ইমাম নববী বলেনঃ ‘‘এখানে ‘নাসিয়্যাহ্’ বলতে ঘোড়ার কপালের উপর থাকা কেশগুচ্ছ উদ্দেশ্য নেয়া হয়েছে। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
(اَلْخَيْلُ مَعْقُوْدٌ بِنَوَاصِيْهَا الْخَيْرُ) তথা ‘‘ঘোড়ার কপালে কল্যাণ বেঁধে দেয়া হয়েছে’’, এ বাক্যের ব্যাখ্যায় ইমাম খত্ত্বাবী বলেনঃ এখানে ‘নাসিয়্যাহ্’ বলতে ইঙ্গিতমূলকভাবে সম্পূর্ণ ঘোড়াকে বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ- ঘোড়ার মধ্যে কল্যাণ রয়েছে। যেমন ‘আরবরা বলে থাকে, (فلان مبارك الناصية) অর্থাৎ- অমুকের কপাল অনেক বরকতময়, যার ভাবার্থ হলো অমুক ব্যক্তি বরকতময়। সুতরাং আলোচ্য উক্তিটির ভাবার্থ হলো ঘোড়ার মধ্যেই কল্যাণ রয়েছে। কারণ ঘোড়ার মাধ্যমে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করা হয়- যাতে ইহকালীন ও পরকালীন কল্যাণ নিহিত রয়েছে। এখানে الْخَيْرُ তথা কল্যাণ বলতে গনীমাতের মাল এবং পরকালীন প্রতিদান উদ্দেশ্য। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
‘‘ঘোড়ার কপালে কল্যাণ বেঁধে দেয়া হয়েছে’’ এ বাক্যের ভাবার্থ সম্পর্কে ‘আল্লামা সিন্দী (রহঃ) বলেনঃ ‘‘অর্থাৎ ঘোড়ার মধ্যে অবশ্যই কল্যাণ নিহিত রয়েছে। আর এ কল্যাণ যেন ঘোড়ার সাথে বেঁধে দেয়া হয়েছে এরূপ বুঝায়। এ কথার উদ্দেশ্য হলো, ঘোড়া তার মালিকের জন্য কল্যাণ অর্জনের উপকরণসমূহের একটি। (নাসায়ী ৩য় খন্ড, হাঃ ৩৫৭৪)
পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - যুদ্ধাস্ত্রের প্রস্তুতিকরণ
৩৮৬৮-[৮] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে লোক আল্লাহর প্রতি ঈমান রাখে এবং তার প্রতিশ্রুতির উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস রেখে আল্লাহর পথে জিহাদের উদ্দেশে ঘোড়া লালন-পালন করে, কিয়ামতের দিন তার তৃপ্তিদায়ক খাদ্য ও প্রস্রাব-পায়খানা ঐ লোকের ’আমলের পাল্লায় ওযন করা হবে। (বুখারী)[1]
بَابُ إِعْدَادِ اٰلَةِ الْجِهَادِ
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنِ احْتَبَسَ فَرَسًا فِي سَبِيل الله إِيمَانًا وتصْديقاً بوَعْدِه فإِنَّ شِبَعَه ورِيَّه ورَوْثَه وبَوْلَه فِي مِيزَانه يَوْم الْقِيَامَة» . رَوَاهُ البُخَارِيّ
ব্যাখ্যা: (مَنِ احْتَبَسَ فَرَسًا فِىْ سَبِيلِ اللهِ) যে আল্লাহর পথে ঘোড়া আটকিয়ে রাখলো, অর্থাৎ যুদ্ধ হতে পারে এই আশংকায় যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করার জন্য ঘোড়া পালন করল। ‘আল্লামা তূরিবিশতী বলেন, সীমান্তে কোনো হামলা হতে পারে এই আশংকায় তা দমন করার জন্য যে ব্যক্তি ঘোড়া প্রতিপালন করল।
(إِيْمَانًا وَتَصْدِيْقًا بِوَعْدِه) আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস রেখে এবং তাঁর ওয়া‘দাকে সত্য জেনে, অর্থাৎ আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশে, তাঁর নির্দেশ পালনার্থে এবং তার কৃত ওয়া‘দা সত্য এটা বিশ্বাস করে। মোটকথা ঘোড়া প্রতিপালন করেছে আল্লাহর নির্দেশ পালন করার জন্য এবং সাওয়াবের আশায়। কেননা আল্লাহ ওয়া‘দা করেছেন যে, তাঁর পথে জিহাদের উদ্দেশে ঘোড়া প্রতিপালন করার জন্য সাওয়াব প্রদান করা হবে। তাই যিনি এ নিয়্যাতে ঘোড়া প্রতিপালন করল সে যেন বলল, তুমি যে ওয়া‘দা করেছ আমি তোমার সে ওয়া‘দাকে বিশ্বাস করি। (মিরকাতুল মাফাতীহ ৭ম খন্ড, ৩৯৩ পৃঃ)
(فإِنَّ شَبْعَه وَرِيَّه وَرَوْثَه وَبَوْلَه فِىْ مِيْزَانِه يَوْمَ الْقِيَامَةِ) ক্বিয়ামতের দিন সেই ব্যক্তির পাল্লায় ঘোড়ার খাদ্য, পানীয়, গোবর ও পেশাব ওজন করা হবে, অর্থাৎ উল্লেখিত বস্তুসমূহের সাওয়াব তার নেকীর পাল্লায় রাখা হবে। মুহাল্লাব বলেনঃ অত্র হাদীস প্রমাণ করে যে, মুসলিমদের শত্রুর মুকাবালা করার উদ্দেশে ঘোড়া ওয়াক্ফ করা বৈধ। ইবনু আবূ জামরাহ্ বলেনঃ অত্র হাদীস থেকে বুঝা যায় যে, হাদীসে বর্ণিত কর্ম সম্পাদনকারীর পক্ষ থেকে তা গ্রহণ করা হবে। তাই তা মীযানের পাল্লায় রাখা হবে। ইমাম ইবনু মাজাহ মারফূ‘ সূত্রে তামীম্ আদ্ দারী থেকে হাদীস বর্ণনা করেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে যুদ্ধ করার জন্য ঘোড়া পালন করে এবং নিজ হাতে তার খাবার খাওয়ায় এর প্রতিটি দানার বিনিময়ে তার একটি করে সাওয়াব অর্জিত হবে। (ফাতহুল বারী ৬ষ্ঠ খন্ড, হাঃ ২৮৫৩)
‘আল্লামা সিন্দী বলেনঃ অত্র হাদীস প্রমাণ করে যে, মানুষের ‘আমলসমূহ যে রকম ওযন হবে তেমনি ঐ কাজের সাথে সংশ্লিষ্ট বস্তুসমূহও ওযন করা হবে। (শারহেন্ নাসায়ী ৩য় খন্ড, হাঃ ৫৭৭)
পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - যুদ্ধাস্ত্রের প্রস্তুতিকরণ
৩৮৬৯-[৯] উক্ত রাবী [আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘোড়ার মধ্যে ’শিকাল’ হওয়া ভালো দৃষ্টিতে দেখতেন না। ’শিকাল’ ঐ ঘোড়াকে বলা হয়, যার পিছনের ডান পায়ে এবং সামনের বাম পায়ে শ্বেতবর্ণ থাকে। অথবা সামনের ডান পায়ে এবং পিছনের বাম পায়ে। (মুসলিম)[1]
بَابُ إِعْدَادِ اٰلَةِ الْجِهَادِ
وَعَنْهُ قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم يكرَهُ الشَّكالَ فِي الْخَيْلِ وَالشِّكَالُ: أَنْ يَكُونَ الْفَرَسُ فِي رِجْلِهِ الْيُمْنَى بَيَاضٌ وَفِي يَدِهِ الْيُسْرَى أَوْ فِي يدِه اليُمنى ورِجلِه اليُسرى. رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যা: (كَانَ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ يَكْرَهُ الشِّكَالَ فِى الْخَيْلِ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শিকাল ঘোড়া অপছন্দ করতেন, শিকাল বলা হয় ঐ ঘোড়াকে যার সামনের ডান পা ও পিছনের বাম পা, অথবা সামনের বাম পা ও পিছনের ডান পা সাদা রঙের।
ইমাম নববী বলেনঃ এটি শিকালের ব্যাখ্যাসমূহের মধ্য হতে একটি ব্যাখ্যা। আবূ ‘উবায়দ ও জুমহূর ভাষাবিদগণের মতে শিকাল ঐ ঘোড়াকে বলা হয় যার তিনটি পা শ্বেতবর্ণ এবং এক পা ভিন্ন বর্ণের। একে শিকাল বলা হয় এজন্য যে, ঘোড়ার তিন পা বেঁধে এক পা খোলা রাখা হয় যাতে ঘোড়া পালাতে না পারে। আর তিন পা শ্বেতবর্ণ ঘোড়া ঐ বন্দি ঘোড়ার সদৃশ, তাই তাকে শিকাল বলা হয়। আবার কখনো এক পা শ্বেত বর্ণের এবং তিন পা ভিন্ন বর্ণের হয়ে থাকে তাকেও শিকাল বলা হয়। ইবনু দুরায়দ বলেনঃ একসাইটের পা শ্বেতবর্ণ ও অন্যসাইটের পা অন্য বর্ণের হলে তাকে শিকাল বলা হয়। আবূ ‘আমর আল মাওয বলেনঃ ঘোড়ার ডানদিকের সামনের ও পিছনের পা শ্বেতবর্ণ হলে অথবা বামদিকের সামনের ও পিছনের পা শ্বেত বর্ণের হলে তাকে শিকাল বলা হয়। ‘আলিমগণ বলেন, শিকাল অপছন্দ হওয়ার কারণ তা বন্দি ঘোড়ার ন্যায়। এও বলা হয়ে থাকে যে পরীক্ষা করে দেখা গেছে, এ ধরনের ঘোড়া তেজী হয় না। তাই তা অপছন্দনীয়। কিছু ‘আলিম বলেছেন, শিকাল ঘোড়ার কপাল যদি শ্বেতবর্ণ হয় তাহলে তার অপছন্দনীয়তা দূর হয়ে যায়। কারণ তাতে শিকালের সাদৃশ্যতা বিদূরিত হয়ে গেছে। (শারহে মুসলিম ১৩ খন্ড, হাঃ ১৮৭৫)
পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - যুদ্ধাস্ত্রের প্রস্তুতিকরণ
৩৮৭০-[১০] ’আব্দুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ’হাফ্ইয়া’ হতে ’সানিয়্যাতুল বিদা’ নামক স্থান পর্যন্ত দূরত্বের মাঝে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ঘোড়াসমূহের ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা করেছেন। আর এ স্থান দু’টির মধ্যকার ব্যবধান হলো ছয় মাইল। আর প্রশিক্ষণবিহীন ঘোড়াসমূহের ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা করেছেন ’সানিয়্যাতুল বিদা’ হতে ’বানী যুরইক’-এর মসজিদ পর্যন্ত, এ জায়গা দু’টির মধ্যকার ব্যবধান হলো এক মাইল। (বুখারী, মুসলিম)[1]
بَابُ إِعْدَادِ اٰلَةِ الْجِهَادِ
وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ: أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سابَقَ بينَ الخيلِ الَّتِي أُضمِرَتْ منَ الحَفْياءِ وَأَمَدُهَا ثَنِيَّةُ الْوَدَاعِ وَبَيْنَهُمَا سِتَّةُ أَمْيَالٍ وَسَابَقَ بَيْنَ الْخَيْلِ الَّتِي لَمْ تَضْمُرُ مِنَ الثِّنْيَةِ إِلَى مَسْجِد بني زُرَيْق وَبَينهمَا ميل
ব্যাখ্যা: (سَابَقَ بَيْنَ الْخَيْلِ الَّتِىْ أُضْمِرَتْ) যে ঘোড়া ইযমার করানো হয়েছে সেই ঘোড়ার মাঝে প্রতিযোগিতা করিয়েছেন।
ইমাম সুয়ূত্বী বলেনঃ ইযমার বলা হয় ঐ পদ্ধতিকে যে পদ্ধতিতে ঘোড়াকে প্রথমে খাইয়ে মোটা করা হয়, অতঃপর ঘোড়া মোটা ও শক্তিশালী হয়ে গেলে তার খাবার পরিমাণ কমিয়ে দেয়া হয়। এরপর ঐ ঘোড়াকে একটি ঘরে প্রবেশ করিয়ে তার গা চট দ্বারা ঢেকে দেয়া হয় যাতে গরম হয়ে ঘর্মাক্ত হয়, এরপর তার ঘাম শুকিয়ে তার মাংস কমে যায় এবং অধিক দৌড়াতে সক্ষম হয়। আল্লামা তূরিবিশতী বলেন, উপরিউক্ত পদ্ধতিতে ঘোড়াকে শক্তিশালী করতে চল্লিশদিন সময় লাগে। (মিরকাতুল মাফাতীহ ৭ম খন্ড, পৃঃ ৩৯৪)
(مِنَ الْحَفْيَاءِ وَأَمَدُهَا ثَنِيَّةُ الْوَدَاعِ وَبَيْنَهُمَا سِتَّةُ أَمْيَالٍ) হাফ্ইয়া হতে সানিয়্যাতুল বিদা‘ পর্যন্ত উভয়ের মাঝের দূরত্ব ছয় মাইল। হাফিয ইবনু হাজার বলেনঃ হাফ্ইয়া মদীনার বাহিরে একটি স্থানের নাম- (‘আওনুল মা‘বূদ ৫ম খন্ড, হাঃ ২৫৭২)। ‘আল্লামা সিন্দী বলেনঃ হাফ্ইয়া-কে হাইফাও বলা হয়- (শারহেন্ নাসায়ী ৩য় খন্ড, হাঃ ৩৫৮৫)।
ثَنِيَّةُ বলা হয় উঁচু টিলাকে। মদীনার নিকটবর্তী এই টিলাকে ثَنِيَّةُ الْوَدَاعِ এজন্য বলা হয় যে, মদীনাবাসী যখন কাউকে বিদায় জানায় তখন তারা বিদায়ীকে বিদায় জানানোর জন্য এ টিলা পর্যন্ত তার পশ্চাতে এসে থাকে।
(إِلٰى مَسْجِدِ بَنِىْ زُرَيْقٍ) বানী যুরায়ক-এর মসজিদ পর্যন্ত। যুরায়ক এক ব্যক্তির নাম- (মিরকাতুল মাফাতীহ ৭ম খন্ড, পৃঃ ৩৯৪)। এতে প্রমাণ পাওয়া যায় যে, কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর নামে মসজিদের নামকরণ করা বৈধ। ইমাম কুরতুবী বলেনঃ এতে কোনো মতভেদ নেই যে, ঘোড়া অথবা প্রাণীর মধ্যে প্রতিযোগিতা করা বৈধ। অনুরূপ তীর নিক্ষেপ ও অস্ত্র ব্যবহারের পদ্ধতি সংক্রান্ত প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত করা বৈধ। কেননা এতে যুদ্ধের প্রশিক্ষণ ও নিয়ম-কানুন শিখা যায়- (‘আওনুল মা‘বূদ ৫ম খন্ড, হাঃ ২৫৭২)।
পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - যুদ্ধাস্ত্রের প্রস্তুতিকরণ
৩৮৭১-[১১] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ’আযবা নামক একটি উষ্ট্রী ছিল। দৌড় প্রতিযোগিতায় কোনো উটই তাকে পরাজিত করতে পারত না। একবার জনৈক গ্রাম্য ’আরব একটি উটের পিঠে আরোহণ করে এলো এবং তাকে পিছনে ফেলে দিল। এটা মুসলিমদের জন্য বেদনাদায়ক হলো। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, দুনিয়াতে কোনো কিছুই সমুন্নত হয় না; আল্লাহ তা’আলার চিরন্তন সত্য কথা হলো তাকে (কোনো সময়) অবনত করে দেন। (বুখারী)[1]
بَابُ إِعْدَادِ اٰلَةِ الْجِهَادِ
وَعَن أنسٍ قَالَ: كَانَتْ نَاقَةٌ لِرَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ تُسَمَّى الْعَضْبَاءَ وَكَانَتْ لَا تُسْبَقُ فَجَاءَ أَعْرَابِيٌّ عَلَى قَعُودٍ لَهُ فَسَبَقَهَا فَاشْتَدَّ ذَلِكَ عَلَى الْمُسْلِمِينَ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ حَقًّا عَلَى اللَّهِ أَنْ لَا يَرْتَفِعَ شَيْءٌ مِنَ الدُّنْيَا إِلَّا وضَعه» . رَوَاهُ البُخَارِيّ
ব্যাখ্যা: (كَانَتْ نَاقَةٌ لِرَسُوْلِ اللّٰهِ ﷺ تُسَمَّى الْعَضْبَاءَ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর একটি উটনী ছিল, যার নাম ছিল ‘আযবা, মূলত ‘আযবা বলা হয় এমন উটকে যার কান ফাটা, কিন্তু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ উটনীর কান ফাটা ছিল না। বরং এ উটনীর নাম ছিল ‘আযবা।
(كَانَتْ لَا تُسْبَقُ) ‘‘তা প্রতিযোগিতায় পরাজিত হত না’’ অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর এ উট এত দ্রুতগামী ছিল যে, কোনো উট প্রতিযোগিতায় তাকে পিছে ফেলতে পারত না।
(فَجَاءَ أَعْرَابِىٌّ عَلٰى قَعُوْدٍ لَه فَسَبَقَهَا) এক বেদুঈন তার ক‘ঊদ নিয়ে আসলো আর তা প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হলো। অর্থাৎ এ ক‘ঊদটি প্রতিযোগিতায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘আযবা উটনী পিছে ফেলে দিয়ে তা বিজয়ী হয়ে গেল। قَعُوْدٍ (ক‘ঊদ) বলা হয় ঐ পুরুষ উটকে যার বয়স দুই বৎসর থেকে ছয় বৎসরের মধ্যে এবং যার বয়স ছয় বৎসরের বেশী হয়ে তাকে جمل (জামাল) বলা হয়। তেমনিভাবে قَعُوْدٌ ঐ উটকে বলা হয় যা বাহন হওয়ার উপযোগী এবং মাদী উটের উপর সওয়ার হতে সক্ষম। (‘আওনুল মা‘বূদ ৮ম খন্ড, হাঃ ৪৭৯৪)
জাওহারী বলেনঃ সওয়ার হওয়ার উপযোগী স্বল্প বয়সের উটকে قَعُوْدٌ বলা হয়। কমপক্ষে তার বয়স দুই বৎসর এবং ছয় বৎসর বয়সে উপনীত হলে তাকে جمل বলা হয়। আযহারী বলেনঃ একমাত্র পুরুষ উটকেই قَعُوْدٌ বলা হয়। মাদী উটকে বলা হয় قَلُوصٌ (কলূস)। (ফাতহুল বারী ৮ম খন্ড, হাঃ ২৮৭২)
(فَاشْتَدَّ ذٰلِكَ عَلَى الْمُسْلِمِيْنَ) বিষয়টি মুসলিমদের নিকট কষ্টকর মনে হলো, অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উটের এ পরাজয় মুসলিমদের হৃদয়ে কষ্টের কারণ হলো।
(إِنَّ حَقًّا عَلَى اللّٰهِ أَنْ لَّا يَرْتَفِعَ شَيْءٌ مِنَ الدُّنْيَا إِلَّا وَضَعَه) আল্লাহর কর্তব্য হলো দুনিয়াতে কোনো বস্তু বেশী মর্যাদাবান হলে তার মর্যাদা কমিয়ে দেয়া অর্থাৎ দুনিয়াতে কোনো বস্তুর মর্যাদা বেশী বেড়ে গেলে তার মর্যাদা কমিয়ে দেয়া আল্লাহ তা‘আলার স্থায়ী বিধান। (মিরকাতুল মাফাতীহ ৭ম খন্ড, পৃঃ ৩৯৫)
হাদীসের শিক্ষা:
১. প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহণের উদ্দেশে ঘোড়া পালন করা বৈধ।
২. বিনয় প্রকাশের প্রতি উৎসাহ প্রদান।
৩. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উত্তম চরিত্র এবং তাঁর বিনয় প্রকাশ।
৪. সাহাবীদের অন্তরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মর্যাদা।
পরিচ্ছেদঃ ১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - যুদ্ধাস্ত্রের প্রস্তুতিকরণ
৩৮৭২-[১২] ’উকবা ইবনু ’আমির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ নিশ্চয় আল্লাহ তা’আলা একটি তীরের বিনিময়ে তিন (শ্রেণীর) লোককে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। ১- তীর প্রস্তুতকারী, যে সাওয়াবের নিয়্যাতে তা প্রস্তুত করে। ২- তীর নিক্ষেপকারী ও ৩- তীর দানকারী। সুতরাং তোমরা তীর নিক্ষেপ ও সওয়ারীর (যুদ্ধযানের) প্রশিক্ষণ গ্রহণ কর। তবে তীর নিক্ষেপের প্রশিক্ষণ আমার নিকট তোমাদের সওয়ারীতে আরোহণ অপেক্ষা অধিক পছন্দনীয়। তিনটি খেলা ছাড়া সকল প্রকারের খেলা যা লোকেরা খেলে থাকে তা অন্যায় ও বাতিল। ১- ধনুকের সাহায্যে তীর নিক্ষেপ করা। ২- ঘোড়ার প্রশিক্ষণ ও ৩- স্ত্রীর সঙ্গে আমোদণ্ডপ্রমোদ করা। এগুলো শারী’আতে বৈধ ও স্বীকৃত। (তিরমিযী ও ইবনু মাজাহ)[1]
আর আবূ দাঊদ ও দারিমী অতিরিক্ত বর্ণনা করেছেন, যে ব্যক্তি তীর নিক্ষেপের শিক্ষা গ্রহণ করার পর অবহেলা বা অনীহা প্রকাশ করে তা বর্জন করে, প্রকৃতপক্ষে সে আল্লাহর একটি নি’আমাত পরিহার করল। অথবা বলেছেন, সে আল্লাহর নি’আমাতের অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করল।
عَن عُقْبَةَ بْنِ عَامِرٍ قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: إِنَّ اللَّهَ تَعَالَى يُدْخِلُ بِالسَّهْمِ الْوَاحِدِ ثَلَاثَةَ نَفَرٍ الْجَنَّةَ: صَانِعَهُ يَحْتَسِبُ فِي صَنْعَتِهِ الْخَيْرَ وَالرَّامِيَ بِهِ وَمُنَبِّلَهُ فَارْمُوا وَارْكَبُوا وَأَنْ تَرْمُوا أَحَبُّ إِلَيَّ مِنْ أَنْ تَرْكَبُوا كُلُّ شَيْءٍ يَلْهُو بِهِ الرَّجُلُ بَاطِلٌ إِلَّا رَمْيَهُ بِقَوْسِهِ وَتَأْدِيبَهُ فَرَسَهُ وَمُلَاعَبَتَهُ امْرَأَتَهُ فَإِنَّهُنَّ مِنَ الْحَقِّ . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَابْنُ مَاجَهْ وَزَادَ أَبُو دَاوُد والدارمي: «ومَنْ تركَ الرَّميَ بعدَ مَا عَلِمَهُ رَغْبَةً عَنْهُ فَإِنَّهُ نِعْمَةٌ تَرَكَهَا» . أَوْ قَالَ: «كفرها»
ব্যাখ্যা: (صَانِعَه يَحْتَسِبُ فِىْ صَنْعَتِهِ الْخَيْرَ) তা প্রস্তুতকারী যে তা প্রস্তুত করার মাধ্যমে কল্যাণের আশা করে, অর্থাৎ যে তীরের কারণে তিন শ্রেণীর লোক জান্নাতে যাবে তার মধ্যে এক শ্রেণীর লোক তারা যারা তীর তৈরি করে এবং এর দ্বারা কল্যাণের তথা সাওয়াবের আশা করে।
(الرَّامِىَ بِه) তা নিক্ষেপকারী, অর্থাৎ তীর নিক্ষেপকারী যিনি তার তীর নিক্ষেপের দ্বারা সাওয়াবের আশা করে তিনিও জান্নাতে যাবেন।
(وَمُنَبِّلَه) তাকে তীর প্রদানকারী অর্থাৎ যিনি তীর নিক্ষেপকারীর হাতে তীর তুলে দেন সাওয়াবের প্রত্যাশায় তিনিও জান্নাতে প্রবেশ করবেন। (মিরকাতুল মাফাতীহ ৭ম খন্ড, পৃঃ ৩৯৫)
(ارْمُوْا وَارْكَبُوْا) তোমরা তীর নিক্ষেপ কর এবং (বাহনে) আরোহণ কর, শুধুমাত্র পায়ে হেঁটে তীর নিক্ষেপের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না বরং বাহনে আরোহণ করেও তীর নিক্ষেপ করবে। অর্থাৎ তোমরা যেমন তীর নিক্ষেপ করা শিখবে অনুরূপভাবে বাহনে আরোহণ করাও শিখবে যাতে বাহনে আরোহণ করে তীর নিক্ষেপ করতে পার।
ত্বীবী (রহ) বলেনঃ وَارْكَبُوْا দ্বারা উদ্দেশ্য বাহনে আরোহণ করে বর্শা নিক্ষেপ করা। অতএব হাদীসের পরবর্তী অংশ। (وَأَنْ تَرْمُوْا أَحَبُّ إِلَىَّ مِنْ أَنْ تَرْكَبُوْا) বর্শা নিক্ষেপ করার চাইতে তীর নিক্ষেপ করা আমার নিকট অধিক পছন্দনীয়। তবে হাদীসের প্রকাশমান অর্থ হলো তীর নিক্ষেপের প্রশিক্ষণ, বাহনে আরোহণের প্রশিক্ষণের চাইতে উত্তম। কেননা বাহনে আরোহণের প্রশিক্ষণের মধ্যে অহংকারিতা রয়েছে বিপরীতে শুধুমাত্র তীর নিক্ষেপের মধ্যে এ অহংকার নেই অথচ এর উপকারিতা ব্যাপক।
(মিরকাতুল মাফাতীহ ৭ম খন্ড, পৃঃ ৩৯৬; তুহফাতুল আহ্ওযাযী ৫ম খন্ড, হাঃ ১৬৩৭)
(كُلُّ شَيْءٍ يَلْهُوْ بِهِ الرَّجُلُ بَاطِلٌ إِلَّا) হাদীসে উল্লেখিত তিন প্রকার খেল-তামাশা বৈধ। তাছাড়া যত প্রকার খেলা আছে তা সবই বাতিল। অর্থাৎ তাতে কোনো সাওয়াব নেই। পক্ষান্তরে তীর নিক্ষেপ করা, যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করার উদ্দেশে ঘোড়দৌড় শিক্ষা এবং স্ত্রীর সাথে খেল-তামাশা করার মধ্যে পূর্ণ সাওয়াব বিদ্যমান।
(مَنْ تَرَكَ الرَّمْىَ بَعْدَ مَا عَلِمَه رَغْبَةً عَنْهُ) যে ব্যক্তি তীর চালনা শিখার পর তা হতে বিমুখ হয়ে তা পরিত্যাগ করল, অর্থাৎ এ বিদ্যার প্রতি অমনোযোগী হয়ে তা ছেড়ে দিল।
(فَإِنَّه نِعْمَةٌ تَرَكَهَا) সে একটি নি‘আমাত ছেড়ে দিল অথবা সে এ নি‘আমাতের প্রতি অকৃতজ্ঞ হলো। আল্লাহর দেয়া নি‘আমাতকে অবহেলা করল। (মিরকাতুল মাফাতীহ ৭ম খন্ড, পৃঃ ৩৯৬)
পরিচ্ছেদঃ ১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - যুদ্ধাস্ত্রের প্রস্তুতিকরণ
৩৮৭৩-[১৩] আবূ নাজীহ আস্ সুলামী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ যে লোক আল্লাহর পথে তীর নিক্ষেপের মাধ্যমে (কোনো শত্রুর উপর) আঘাত হানলো, তার জন্য জান্নাতে বিশেষ মর্যাদা নির্ধারিত রয়েছে। আর যে লোক আল্লাহর পথে তীর নিক্ষেপ করল (শত্রুর গায়ে বিদ্ধ হোক বা না হোক) তার জন্য একটি গোলাম মুক্তি করার সমপরিমাণ সাওয়াব রয়েছে। আর যে লোক ইসলামের কাজে নিয়োজিত থেকে বার্ধক্যে পৌঁছেছে, কিয়ামতের দিন তার জন্য তা উজ্জ্বল নূরে পরিণত হবে। (বায়হাক্বী- শু’আবুল ঈমান)[1]
আবূ দাঊদ এ হাদীসটির শুধুমাত্র প্রথম অংশটি, নাসায়ী প্রথম ও দ্বিতীয় অংশটি এবং তিরমিযী দ্বিতীয় ও তৃতীয় অংশটি বর্ণনা করেছেন। তবে বায়হাক্বী ও তিরমিযীর বর্ণনার মধ্যে ’’ইসলামে’’ এর স্থলে ’’আল্লাহর পথে’’ বর্ণিত হয়েছে।
وَعَن أبي نَجِيحٍ السُّلَميِّ قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «مَنْ بَلَغَ بِسَهْمٍ فِي سَبِيلِ اللَّهِ فَهُوَ لَهُ دَرَجَةٌ فِي الْجَنَّةِ وَمَنْ رَمَى بِسَهْمٍ فِي سَبِيلِ اللَّهِ فَهُوَ لَهُ عِدْلُ مُحَرِّرٍ وَمَنْ شَابَ شَيْبَةً فِي الْإِسْلَامِ كَانَتْ لَهُ نُورًا يَوْمَ الْقِيَامَةِ» . رَوَاهُ الْبَيْهَقِيُّ فِي شُعَبِ الْإِيمَانِ. وَرَوَى أَبُو دَاوُدَ الْفَصْلَ الْأَوَّلَ وَالنَّسَائِيُّ الْأَوَّلَ وَالثَّانِيَ وَالتِّرْمِذِيُّ الثَّانِيَ وَالثَّالِثَ وَفِي رِوَايَتِهِمَا: «مَنْ شَابَ شَيْبَةً فِي سَبِيلِ الله» بدَلَ «فِي الْإِسْلَام»
ব্যাখ্যা: (مَنْ بَلَغَ بِسَهْمٍ فِىْ سَبِيلِ اللّٰهِ) যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে একটি তীর পৌঁছালো, তা তার জন্য জান্নাতের মর্যাদা বৃদ্ধির কারণ বলে গণ্য হবে। অর্থাৎ যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে কাফিরের প্রতি তীর নিক্ষেপ করে এবং উক্ত তীর কাফিরের শরীরে আঘাত করে, এর বিনিময়ে আল্লাহ তা‘আলা জান্নাতে উক্ত তীর নিক্ষেপকারীর মর্যাদা বাড়িয়ে দিবেন। (মিরকাতুল মাফাতীহ; ‘আওনুল মা‘বূদ ৭ম খন্ড, হাঃ ৩৯৬০; শারহেন্ নাসায়ী ৩য় খন্ড, হাঃ ৩১৪৬)
(وَمَنْ رَمٰى بِسَهْمٍ فِىْ سَبِيلِ اللّٰهِ فَهُوَ لَه عِدْلُ مُحَرِّرٍ) আর যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে তীর নিক্ষেপ করল তা তার জন্য একটি দাসমুক্ত করার সাওয়াবের সমান বলে গণ্য হবে। অর্থাৎ- আল্লাহর পথে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে তীর নিক্ষেপ করার পর তা যদি কাফিরের শরীরে আঘাত করতে ব্যর্থ হয় তাহলেও আল্লাহ তা‘আলা তাকে সাওয়াব থেকে বঞ্চিত করবেন না। বরং তাকে একটি গোলাম মুক্ত করার সমান সাওয়াব দিবেন। (মিরকাতুল মাফাতীহ; তুহফাতুল আহওয়াযী ৫ম খন্ড, হাঃ ১৬৩৮; শারহেন্ নাসায়ী ৩য় খন্ড, হাঃ ৩১৪৩)
(مَنْ شَابَ شَيْبَةً فِى الْإِسْلَامِ كَانَتْ لَه نُوْرًا يَوْمَ الْقِيَامَةِ) যে ব্যক্তি ইসলামে অটলে থেকে (বৃদ্ধ হলো) চুল ও দাড়ি শুভ্র হলো কিয়ামতের দিবসে তার এই শুভ্রতা আলোকময় হবে, অর্থাৎ কোনো ব্যক্তি ইসলামে অটল থেকে বার্ধক্য উপনীত হলে চাই সে জিহাদে অংশগ্রহণ করুক আর নাই করুক হাদীসৈ বর্ণিত মর্যাদা তার প্রাপ্য। এতে সাদা চুল বা দাড়ি উঠিয়ে ফেলতে নিষেধের প্রতি ইঙ্গিত রয়েছে এবং এ শুভ্রতাকে অপছন্দ না করে তাকে স্বাগত জানানোর প্রতি উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - যুদ্ধাস্ত্রের প্রস্তুতিকরণ
৩৮৭৪-[১৪] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তীরন্দাজী অথবা উট কিংবা ঘোড়দৌড়ের প্রতিযোগিতা ছাড়া অন্য কোনো প্রতিযোগিতার আয়োজন করা জায়িয নয়। (তিরমিযী, আবূ দাঊদ, নাসায়ী)[1]
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَا سَبَقَ إِلَّا فِي نَصْلٍ أَوْ خُفٍّ أَوْ حَافِرٍ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ وَأَبُو دَاوُد وَالنَّسَائِيّ
ব্যাখ্যা: (لَا سَبَقَ إِلَّا فِىْ نَصْلٍ) প্রতিযোগিতা করা বৈধ নয় তীরন্দাজী উট ও ঘোড়দৌড় ব্যতীত। অর্থাৎ- হাদীসে বর্ণিত তিন প্রকারের বস্তুর মধ্যে প্রতিযোগিতা বৈধ। ইবনু মালিক (রহঃ) বলেনঃ প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহণ করে তাতে জিতে গিয়ে মাল গ্রহণ করা বৈধ নয় হাদীসে উল্লেখিত তিন প্রকার প্রতিযোগিতা ব্যতীত। (মিরকাতুল মাফাতীহ ৫ম খন্ড, পৃঃ ৩৯৮; শারহেন্ নাসায়ী ৩য় খন্ড, হাঃ ৩৫৮৭)
ইমাম খত্ত্বাবী বলেনঃ হাদীসে উল্লেখিত প্রতিযোগিতা এজন্য বৈধ তাতে শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্রস্ততি এবং জিহাদের জন্য উৎসাহ প্রদান রয়েছে। কিন্তু যে প্রতিযোগিতায় যুদ্ধের প্রস্ততি নেই তাতে অংশগ্রহণ করে মাল গ্রহণ করা নিষিদ্ধ জুয়ার অন্তর্ভুক্ত। তাই তা বৈধ নয়- (‘আওনুল মা‘বূদ ৫ম খন্ড, হাঃ ২৫৭১)। সা‘ঈদ ইবনুল মুসাইয়্যাব -এর অভিমতও এটাই- (তুহফাতুল আহওয়াযী ৫ম খন্ড, হাঃ ১৭০০)।
পরিচ্ছেদঃ ১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - যুদ্ধাস্ত্রের প্রস্তুতিকরণ
৩৮৭৫-[১৫] উক্ত রাবী [আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে লোক ঘোড়দৌড়ের প্রতিযোগিতায় দু’টি ঘোড়ার মধ্যে আরেকটি ঘোড়া সংযোজন করে। এমতাবস্থায় যদি এ বিশ্বাস থাকে যে, তার ঘোড়া আগে যেতে পারবেই, তখন তাতে কোনো কল্যাণ নেই। আর যদি এ বিশ্বাস না থাকে যে, তার ঘোড়া আগে যেতে পারবে, তখন তাতে কোনো অপরাধ নয়। (শারহুস্ সুন্নাহ্)[1]
আর আবূ দাঊদ-এর বর্ণনাতে আছে, যে লোক প্রতিযোগিতায় দুই ঘোড়ার মধ্যে আরেকটি ঘোড়া প্রবেশ করায়, অথচ তা আগে যাবে কিনা কোনো আস্থা নেই, তখন তা জুয়া হবে না। আর যে লোক এ বিশ্বাসে তার ঘোড়া প্রবেশ করায় যে, তা নিশ্চিত আগে যাবেই, তখন তা জুয়া হবে তথা তা হারাম।
وَعَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ أَدْخَلَ فَرَسًا بَيْنَ فَرَسَيْنِ فَإِنْ كَانَ يُؤْمَنُ أَنْ يَسْبِقَ فَلَا خَيْرَ فِيهِ وَإِنْ كَانَ لَا يُؤْمَنُ أَنْ يَسْبِقَ فَلَا بَأْسَ بِهِ» . رَوَاهُ فِي شَرْحِ السُّنَّةِ وَفِي رِوَايَةِ أَبِي دَاوُدَ: قَالَ: «مَنْ أَدْخَلَ فَرَسًا بَيْنَ فَرَسَيْنِ يَعْنِي وَهُوَ لَا يَأْمَنُ أَنْ يَسْبِقَ فَلَيْسَ بِقِمَارٍ وَمَنْ أَدْخَلَ فَرَسًا بَيْنَ فَرَسَيْنِ وَقَدْ أَمِنَ أَنْ يَسْبِقَ فَهُوَ قمار»
ব্যাখ্যা: (مَنْ أَدْخَلَ فَرَسًا بَيْنَ فَرَسَيْنِ) যে ব্যক্তি ঘোড়ার মাঝে তৃতীয় ব্যক্তি হিসেবে প্রবেশ করালো। অর্থাৎ দুই ব্যক্তি পরস্পরের ঘোড়ার মাঝে প্রতিযোগিতার ব্যবস্থা করল এভাবে যে, উভয়েই নির্দিষ্ট পরিমাণে মাল জমা করলো। অতঃপর উভয়ে শর্ত করলো যে, যদি আমার ঘোড়া প্রতিযোগিতায় বিজয় লাভ করে তাহলে সমুদয় মাল আমার তোমার কিছুই নেই। আর যদি তোমার ঘোড়া বিজয় লাভ করে তাহলে সমস্ত মাল তোমার আমার কিছুই নেই। এ শর্তে প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহণ করা বৈধ নয়। কেননা এটি জুয়া। এ অবস্থায় তৃতীয় কোনো ব্যক্তি যদি তার নিজস্ব ঘোড়া নিয়ে এসে এ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে তাহলে হাদীসে বর্ণিত পরবর্তী শর্তসাপেক্ষে তা বৈধ এবং ঐ তৃতীয় ব্যক্তিকে বলা হয় মুহাল্লিল। কেননা তার অংশ গ্রহণ করার কারণে এ প্রতিযোগিতা বৈধ বলে গণ্য হবে। (মিরকাতুল মাফাতীহ ৭ম খন্ড, পৃঃ ৩৯৯; ‘আওনুল মা‘বূদ ৫ম খন্ড, হাঃ ২৫৭৬)
শর্তটি নিম্নরূপ- (إِنْ كَانَ يُؤْمِنُ أَنْ يُسْبِقَ فَلَا خَيْرَ فِيهِ) যদি যে নিশ্চিত হয় যে, তার ঘোড়া পরাজিত হবে না তাহলে এতে কোনো কল্যাণ নেই। অর্থাৎ সে জানে তার ঘোড়াটি অন্য দু’জনের ঘোড়ার চেয়ে অধিক দ্রুতগামী, ফলে সে নিশ্চিতভাবে জানে যে তার ঘোড়া অবশ্যই জয়লাভ করবে তাহলে তার জন্য এ প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহণ করা বৈধ নয়।
(وَإِنْ كَانَ لَا يُؤْمِنُ أَنْ يَسْبِقَ فَلَا بَأْسَ بِه) আর সে যদি তার ঘোড়া অপরাজিত হওয়ার ক্ষেত্রে নিশ্চিত না হয় তাতে কোনো ক্ষতি নেই। অর্থাৎ সে নিশ্চিত নয় যে, তার ঘোড়াটি অন্য দু’জনের ঘোড়ার চাইতে অধিক দ্রুতগামী। বরং সে মনে করে যে, তাঁর ঘোড়া বিজয়ও লাভ করতে পারে অথবা পরাজয়ও হতে পারে এমনটি হলে তার জন্য প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহণ করা বৈধ এবং তার অংশগ্রহণের ফলে এ প্রতিযোগিতাও বৈধ। সে যদি বিজয় লাভ করে তাহলে তার জন্য উভয়ের মাল নেয়া বৈধ। (প্রাগুক্ত)
পরিচ্ছেদঃ ১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - যুদ্ধাস্ত্রের প্রস্তুতিকরণ
৩৮৭৬-[১৬] ’ইমরান ইবনু হুসায়ন (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ’জালাব’ (টানা বা হাঁকা) ও ’জানাব’ (পার্শ্ব বা পিছন থেকে হাঁকা-হাঁকি করে ঘোড়াটিকে তাড়াতে থাকা) বৈধ নয় (অর্থাৎ- কোনো লোকের দ্বারা ঘোড়াকে হাঁকিয়ে নেয়া ও ঘোড়া ক্লান্ত হয়ে পড়লে অতিরিক্ত ঘোড়া সাথে রাখা)। ইয়াহ্ইয়া অত্র হাদীসে বৃদ্ধি করে বলেছেন, ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতায়। (আবূ দাঊদ, নাসায়ী)[1]
وَعَنْ عِمْرَانَ بْنِ حُصَيْنٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَا جَلَبَ وَلَا جَنَبَ» . زَادَ يَحْيَى فِي حَدِيثِهِ: «فِي الرِّهَانِ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ وَالنَّسَائِيُّ وَرَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ مَعَ زِيَادَة فِي بَاب «الْغَضَب»
ব্যাখ্যা: (لَا جَلَبَ وَلَا جَنَبَ فِى الرِّهَانِ) ঘোড়া প্রতিযোগিতার মধ্যে ঘোড়ার উপরে চিৎকার করা বৈধ নয়, ঘোড়ার পাশে অন্য ঘোড়া রাখাও বৈধ নয়। ইমাম মালিক বলেনঃ جَلَبَ এর অর্থ হলো ঘোড়ার উপরে চড়ে চিৎকার করা যাতে ঘোড়া দ্রুত দৌড়ায়।
নিহায়াহ্ গ্রন্থকার বলেনঃ প্রতিযোগিতার মধ্যে جَلَبَ এর অর্থ হলো কোনো প্রতিযোগিতার ঘোড়ার পিছনে অন্য কোনো লোক রাখবে চিৎকার করার জন্য যাতে ঘোড়া দ্রুত দৌড়ায়। আর جَنَبَ এর অর্থ হলো প্রতিযোগিতার স্বীয় ঘোড়ার পাশে আরেকটি ঘোড়া রাখবে যখন তার স্বীয় ঘোড়াটি দুর্বল হয়ে যাবে তখন সে পাশের ঘোড়ার উপর আরোহণ করবে। ইসলামে প্রতিযোগিতার জন্য এরূপ করা বৈধ নয়। (মিরকাতুল মাফাতীহ ৭ম খন্ড, পৃঃ ৩৯৯; ‘আওনুল মা‘বূদ ৫ম খন্ড, হাঃ ২৫৭৮)
পরিচ্ছেদঃ ১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - যুদ্ধাস্ত্রের প্রস্তুতিকরণ
৩৮৭৭-[১৭] আবূ কাতাদাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সে ঘোড়াই সর্বোত্তম, যে ঘোড়ার সারা দেহ কালো এবং কপালে ও নাকের দিকে কিছুটা সাদা চিহ্ন আছে। অতঃপর সেটাও উত্তম, যে ঘোড়ার কপালে সামান্য সাদা চিহ্নসহ পায়ের দিকেও সাদা থাকে, কিন্তু ডান পা যেন সাদা বর্ণের না হয়। অতঃপর যদি জমকালো কালো বর্ণের ঘোড়া না হয়, তবে উক্ত চিহ্নসহ খয়েরী রংয়ের ঘোড়াই উত্তম। (তিরমিযী, দারিমী)[1]
وَعَن أبي قَتَادَة عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «خَيْرُ الْخَيْلِ الْأَدْهَمُ الْأَقْرَحُ الْأَرْثَمُ ثُمَّ الْأَقْرَحُ الْمُحَجَّلُ طُلُقُ الْيَمِينِ فَإِنْ لَمْ يَكُنْ أَدْهَمَ فَكُمَيْتٌ عَلَى هَذِهِ الشِّيَةِ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَالدَّارِمِيُّ
ব্যাখ্যা: (خَيْرُ الْخَيْلِ الْأَدْهَمُ الْأَقْرَحُ الْأَرْثَمُ) কালো রং-এর ঘোড়া সর্বোত্তম যার কপাল ও উপরের ঠোট সাদা।
তূরিবিশ্তী বলেনঃ কালো কুচকুচে রং-কে বলা হয় أَدْهَمُ। আর যে ঘোড়ার চেহারা অল্প সাদা তাকে বলা হয় أَقْرَحُ। যে ঘোড়ার উপরের ঠোট সাদা তাকে বলা হয় الْأَرْثَمُ। আবার এও বলা হয় যে ঘোড়ার নাক সাদা তাকে বলা হয় الْأَرْثَمُ।
(الْأَقْرَحُ الْمُحَجَّلُ طُلُقُ الْيَمِينِ) ডান পা ব্যতীত অন্য পাগুলো সাদা বর্ণের ঘোড়া। كُمَيْتٌ লাল-কালো বর্ণের মিশ্রিত ঘোড়া। (মিরকাতুল মাফাতীহ ৭ম খন্ড, পৃঃ ৪০০)
পরিচ্ছেদঃ ১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - যুদ্ধাস্ত্রের প্রস্তুতিকরণ
৩৮৭৮-[১৮] আবূ ওয়াহব আল জুশামী হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ নিশ্চয় তোমরা এমন ঘোড়া বাছাই করবে যা খয়েরী রংয়ের এবং কপাল ও হাত-পা কিছুটা সাদা অথবা লালবর্ণের, যার কপাল মিশকালো ও হাত-পা সাদা। (আবূ দাঊদ, নাসায়ী)[1]
وَعَنْ أَبِي وَهَبٍ الْجُشَمِيِّ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «عَلَيْكُمْ بِكُلِّ كُمَيْتٍ أَغَرَّ مُحَجَّلٍ أَوْ أَشْقَرَ أَغَرَّ مُحَجَّلٍ أَوْ أَدْهَمَ أَغَرَّ مُحَجَّلٍ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ وَالنَّسَائِيّ
ব্যাখ্যা: (أَغَرَّ) যে ঘোড়ার কপাল সাদা বর্ণের তাকে أَغَرَّ বলা হয়। مُحَجَّلٍ বলা হয় ঐ ঘোড়াকে যার পাগুলো সাদা বর্ণের। (عَلَيْكُمْ بِكُلِّ كُمَيْتٍ أَغَرَّ مُحَجَّلٍ) ঐ লাল-কালো বর্ণের মিশ্রিত ঘোড়া গ্রহণ করবে যার কপাল ও পাগুলো সাদা বর্ণের।
(أَشْقَرَ) ‘‘লাল বর্ণ’’। ত্বীবী বলেন, كُمَيْت ও أَشْقَرَ এ দুই এর মধ্যে পার্থক্য হলো, যে ঘোড়ার লাল বর্ণ কালো বর্ণের উপর প্রাধান্য পায় তাকে বলা হয় أَشْقَرَ। আর যে ঘোড়ার ঝুটি ও লেজ কালো বর্ণের তাকে বলা كُمَيْت (أَدْهَمَ) কালো বর্ণ। (أَدْهَمَ أَغَرَّ مُحَجَّلٍ) অর্থাৎ- যে ঘোড়া কালো বর্ণের কিন্তু তার কপাল ও পাগুলো সাদা। (‘আওনুল মা‘বূদ ৫ম খন্ড, হাঃ ২৫৪০; মিরকাতুল মাফাতীহ ৭ম খন্ড, পৃঃ ৪০১)
পরিচ্ছেদঃ ১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - যুদ্ধাস্ত্রের প্রস্তুতিকরণ
৩৮৭৯-[১৯] ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ লাল রংয়ের ঘোড়ার মধ্যেই কল্যাণ ও বরকত রয়েছে। (তিরমিযী, আবূ দাঊদ)[1]
وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «يُمْنُ الْخَيْلِ فِي الشُّقْرِ» . رَوَاهُ الترمذيُّ وَأَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যা: (يُمْنُ الْخَيْلِ فِى الشُّقْرِ) ‘‘লাল ঘোড়ার মধ্যেই বরকত আছে’’।
মুখতারুস্ সিহ্তাহ্-এর লেখক বলেন, الشُّقْرِ (আশকার) অর্থ রং। যে মানুষের চামড়া লাল-সাদা রং-এ মিশ্রিত ঐ মানুষকে বলা হয় الشُّقْرِ। আর ঘোড়া যদি ঝুটি ও তার লেজসহ সম্পূর্ণ লাল রং-এর হয় তাকে বলা হয় আশকার। আর ঝুটি ও লেজ যদি কালো হয় তাকে বলা হয় كُمَيْت (কুমায়ত)। (তুহফাতুল আহওয়াযী ৫ম খন্ড, হাঃ ১৬৯৫)
পরিচ্ছেদঃ ১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - যুদ্ধাস্ত্রের প্রস্তুতিকরণ
৩৮৮০-[২০] ’উতবাহ্ ইবনু ’আব্দুস সুলামী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা ঘোড়ার কপালের ও ঘাড়ের চুল এবং লেজের চুল কেটো না। কেননা লেজ হলো তার পাখা এবং ঘাড়ের চুল হলো উষ্ণতা রক্ষার উপকরণ, আর তার কপালের চুলের মধ্যে কল্যাণ নিহিত রয়েছে। (আবূ দাঊদ)[1]
وَعَن عُتبةَ بن عبدٍ السُّلميِّ أَنَّهُ سَمِعَ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «لَا تَقُصُّوا نَوَاصِيَ الْخَيْلِ وَلَا مَعَارِفَهَا وَلَا أَذْنَابَهَا فَإِنَّ أَذْنَابَهَا مَذَابُّهَا وَمَعَارِفَهَا دِفاءُها وَنَوَاصِيهَا مَعْقُودٌ فِيهَا الْخَيْرُ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ
ব্যাখ্যা: (نَوَاصِىَ الْخَيْلِ) ঘোড়ার কপালের লোমকে বলা হয় نَوَاصِى। আর ঘাড়ের লোমকে বলা হয় (أَذْنَابَهَا مَعَارِفَ مَذَابُّهَا) লেজ তার পাখা, যা দ্বারা সে পোকা মাকড়, মাশা-মাছি তাড়ায়। অর্থাৎ মানুষ যেমন পাখা দ্বারা বাতাস করে এবং তা দ্বারা কোনো কিছু তাড়ায়, অনুরূপ ঘোড়া তার লেজ দ্বারা তার ওপর পতিত পোকা-মাকড় মশা-মাছি তাড়ায়।
(وَمَعَارِفَهَا دِفَاءُهَا) ঘাড়ের ঝুটি তার কাপড় যা দ্বারা সে তাপ ও শীত নিবারণ করে। মানুষ যেমন রোদ্রের তাপ থেকে বাঁচার জন্য মাথার উপর ছাতা অথবা কাপড় ব্যবহার করে এবং শীত নিবারণের জন্য জামা কাপড় পরিধান করে ঘোড়ার কাঁধের ঝুটিও তেমন গরম ও শীত নিবারণের জন্য সহায়ক। তাই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা কাটতে বারণ করেছেন। (মিরকাতুল মাফাতীহ ৭ম খন্ড, পৃঃ ৪০১; ‘আওনুল মা‘বূদ ৫ম খন্ড, হাঃ২৫৩৯)